
রাজধানীর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করবে আগামী ২০ অক্টোবর থেকে। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই পথে মেট্রোরেল উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এ তথ্য জানান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মেট্রোরেলে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ উদ্বোধন উপলক্ষে ২০ অক্টোবর বিকেল ৩টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।’
প্রাথমিকভাবে ফার্মগেট-সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশন চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্রে জানা গেছে। তবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয় বলে জানিয়েছেন ডিএমটিসিএলের জনসংযোগ কর্মকর্তা আফতাব মাহমুদ গালিব।
সেতুমন্ত্রী বলেন, আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর এমআরটি লাইন-৫ নদ্দা-ভাটারা রুটের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এ উপলক্ষে সাভারে সুধী সমাবেশ হবে। আর ২২ অক্টোবর নবনির্মিত সড়ক ভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪০টি সেতুর উদ্বোধন করবেন। একই সঙ্গে উদ্বোধন করা হবে ১২টি ওভারপাস। এর সঙ্গে যানবাহনের ফিটনেস ভেহিকেল ইন্সপেকশন সেন্টার (ভিওসি) উদ্বোধন করা হবে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের (অ্যানেক্স ভবন) চারতলায় মনিরুজ্জামান মনির (৪৩) নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয় গত ৩০ জুলাই দুপুর দেড়টার দিকে। দুর্বল রোগা শরীরের এই ব্যক্তি বিচারপ্রাথী। চোখে-মুখে ক্লান্তি আর হতাশার ছাপ।
জানতে চাইলে দেশ রূপান্তরকে মনির বলেন, পেশায় সামান্য আয়ের টাইলস মিস্ত্রি তিনি। বরিশালের দক্ষিণ সাগরদী এলাকায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে মামলার কাজে প্রায়ই উচ্চ আদালতে আসতে হয় তাকে। প্রতিবেশীর সঙ্গে ৬০ বছরের জমির বিরোধে ৪৬ বছরই কেটে গেছে মামলায়। দাদার সময়ের মামলার জের ধরে তার (মনির) বাবা মামলায় জড়িয়েছেন, তিনি নিজেও এখন মামলা টানছেন। ইতিমধ্যে তার দাদা, বাবা মারা গেলেও মামলা আর নিষ্পত্তি হয়নি। বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও দুই শিশুকন্যাকে নিয়ে সামান্য আয়ের সংসার। অন্যদিকে মামলা চালাতে গিয়ে তিনি নিঃস্ব হচ্ছেন।
জমির বিরোধে দেওয়ানি মামলার জেরে বাদী-বিবাদী হয়ে আদালতে আসা মানুষের ভোগান্তি ও হতাশার নিত্য চিত্র এটি। এক দেওয়ানি মামলা থেকে আরও মামলার উৎপত্তি। অধস্তন আদালত থেকে হাইকোর্ট। হাইকোর্ট থেকে আপিল বিভাগ। আবারও অধস্তন আদালত। দশকের পর দশক এভাবেই চলতে থাকে মামলা। এর মধ্যে মারা যান বাদী-বিবাদী। পক্ষ হয় তার ওয়ারিশরা। কিন্তু মামলা শেষ হয় না। বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে মারামারি, খুনখারাবি হয়। মামলা থেকে মামলা বাড়ে, সমস্যা আরও জটিল হয়। ভুক্তভোগী মনিরের তথ্য অনুযায়ী, তাদের বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে অধস্তন ও উচ্চ আদালত মিলিয়ে দেওয়ানি মামলা ৫টি। আর ফৌজদারি মামলা হয়েছে ৫টি।
সুপ্রিম কোর্টের তথ্যমতে, উচ্চ ও অধস্তন আদালতে বিচারাধীন দেওয়ানি মামলার সংখ্যা পৌনে ১৭ লাখের বেশি।
বরিশালের মনিরের মতো গত কয়েক মাসে উচ্চ আদালতে আসা বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। অন্যদিকে নিয়মিত দেওয়ানি মামলা পরিচালনা করেন এমন ছয়জন আইনজীবী তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে অভিন্ন সুরে বলেন, খুন, মারামারি, পারিবারিক বিরোধের সবচেয়ে বড় কারণ জমির মালিকানার বিরোধ। জমির দাগ, খতিয়ানসহ বিভিন্ন জরিপের অস্পষ্টতা ও ধোঁয়াশাও এর কারণ। এই পরিস্থিতির প্রতিকার নিয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যতই মানুষ বাড়ছে, জমি নিয়ে বিরোধও বাড়ছে। কিন্তু নিষ্পত্তি যত হচ্ছে মামলা বাড়ছে তার চেয়ে বেশি। মামলাজট কিংবা অনিষ্পন্ন
থাকার বহুবিদ কারণ আছে। অনেক ক্ষেত্রে বিচারক ও আইনজীবীরাও দায়ী। কোনো কোনো পক্ষ তাদের মামলাটা দুর্বল মনে করে যে কোনোভাবে হোক সময়ক্ষেপণ করতে চায়। আবার আইনে অনেক কিছু থাকলেও আইন দেখিয়ে সেখানেও বিলম্ব।’ তিনি আরও বলেন, ‘মামলার জট নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক চিন্তাভাবনা, গবেষণা হচ্ছে। কিন্তু এগুলোও তো বাস্তবায়ন খুব বেশি হচ্ছে না।’
তিন বছরে দেওয়ানি মামলা বেড়েছে ২ লাখের বেশি সুপ্রিম কোর্ট থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ (গত মার্চ পর্যন্ত) তথ্য অনুযায়ী, দেশে দেওয়ানি, ফৌজদারি ও অন্যান্য বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৪২ লাখ ৮ হাজার ৯৮৭। এর মধ্যে আপিল বিভাগে বিচারাধীন দেওয়ানি মামলা ১৩ হাজার ৪৪২, হাইকোর্টে ৯১ হাজার ৬৩৮ এবং অধস্তন আদালতে ১৫ লাখ ৮৪ হাজার ১৬০ বিচারাধীন মামলা। মার্চ পর্যন্ত উচ্চ ও অধস্তন আদালতে বিচারাধীন দেওয়ানি মামলার সংখ্যা ১৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৪০টি।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত উচ্চ ও অধস্তন আদালতে ১৪ লাখ ৭৮ হাজার ৪২৭ দেওয়ানি মামলা বিচারাধীন ছিল। তিন বছর তিন মাস পর উচ্চ ও অধস্তন আদালতে অনিস্পন্ন দেওয়ানি মামলা বেড়েছে ২ লাখ ১০ হাজার ৮১৩ মামলা। এর মধ্যে গত বছরের জুলাই থেকে মাত্র ৯ মাসে (চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত) মামলা বেড়েছে ৩৬ হাজার ৭৭৪টি।
গত দুই বছরে সুপ্রিম কোর্টের উদ্যোগে ফৌজদারি পুরনো মামলাসহ গুরুতর অপরাধের মামলা নিষ্পত্তিতে আশানুরূপ গতি এসেছে। কিন্তু দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে সেটি আশানুরূপ হচ্ছে না।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা মনে করেন, দেওয়ানি মামলার বাদী ও বিবাদীদের অনেকটা জটিল আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। মোটা দাগে এর কারণ ১১৫ বছরের বেশি পুরনো দেওয়ানি কার্যবিধির সংস্কার না হওয়া, অধস্তন আদালতে মামলা চালানোর প্রক্রিয়া আধুনিকীকরণ না হওয়া, ঘন ঘন শুনানির আবেদন ও মুলতবি, অধস্তন আদালতের কোনো আদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ হয়ে উচ্চ আদালতে যাওয়া ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে অমনোযোগিতা।
মনিরদের দুঃখ ঘোচে না
প্রতিবেদনের শুরুতে ভুক্তভোগী মনিরের আইনজীবীদের তথ্যমতে, ১৯৬৩ সালে বরিশাল সদরের সাগরদী মৌজায় ২৬ শতক জমি স্থানীয় আব্দুল লতিফের কাছ থেকে কিনে নেন একই এলাকার আব্দুল গফুর নামে এক ব্যক্তি। তবে জমি কেনাবেচা হয় দলিল ছাড়া, মৌখিকভাবে। ১৯৭২ সালে আব্দুল লতিফ লিখিতভাবে গফুরকে জমি বুঝিয়ে দেন। ইতিমধ্যে গফুর সেখানে বসবাস করতে শুরু করেন। বাদীপক্ষের আইনজীবীদের ভাষ্য, ২৬ শতকের জায়গায় ১৩ শতক জমি বুঝে পান গফুর। লতিফ সেই জমি তার দুই স্ত্রীকে দান করে দেন ১৯৭৭ সালে। এরপর দুই স্ত্রী জিন্নাতুন্নেসা ও জহুরা খাতুন দলিল পেয়ে গফুরের বিরুদ্ধে ওই বছর উচ্ছেদের মামলা করেন। ইতিমধ্যে গফুর মারা যাওয়ায় এ মামলার বিবাদী হন তার ছেলে মজিবুর রহমান। কিন্তু বাদী উচ্ছেদের মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই জমির কিছু অংশ (পাঁচ শতাংশ) আরেক পক্ষের (মো. শামীম ও তার মা রোকেয়া খাতুন) কাছে বিক্রি করেন। পরে মজিবুর রহমান দখলজনিত স্বত্বের মামলা করেন ১৯৮৭ সালে। মামলা চলাকালীন ২০০১ সালের এপ্রিলে মারা যান মজিবুর রহমান। এরপর এই মামলার বাদী হন তার ছেলে মনিরুজ্জামান মনির ও অন্য ওয়ারিশরা। ২০০৯ সালের ১২ অক্টোবর বরিশালের যুগ্ম জেলা জজ আদালত এক রায়ে ১৩ শতক জমির মালিকানা মনিরকে বুঝিয়ে দিতে রায় দেয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে বরিশাল জেলা জজ আদালতে আপিল করে অপরপক্ষ। অধস্তন আপিল আদালত রায় খারিজ করে মামলাটি পুনর্বিচারের জন্য পাঠায়। জেলা জজ আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে বাদীপক্ষ (মনির) ২০১২ সালের জুলাই মাসে হাইকোর্টে রিভিশন মামলা করে। ইতিমধ্যে এই জমি কেনাবেচা ও মামলায় পক্ষভুক্ত বাদী-বিবাদীপক্ষের অন্তত পাঁচজন মারা গেছেন।
মনিরের আইনজীবী মো. শামীম সরদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, কিছুদিন আগে তিনি মামলাটি পেয়েছেন। এর আগে বেঞ্চ পুনর্নির্ধারণ হওয়া, বিচারক কিংবা এখতিয়ার পরিবর্তনে প্রায় এক যুগেও শুনানি সম্ভব হয়নি। গত জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে মামলাটি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে আংশিক শুনানি শুরু হয়।
তিনি বলেন, ‘মামলাটি নিজ উদ্যোগে নিয়েছিলাম। জমি নিয়ে প্রায় সব দেওয়ানি মামলার পরিস্থিতিই এমন। অন্য মামলার মতো নিকট ভবিষ্যতে এ মামলার নিষ্পত্তি হবে কি না, এ নিয়ে সংশয় আছেই।’
ভুক্তভোগী মনির বলেন, আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধপূর্ণ জমিতেই বসবাস করছেন। জমির বিরোধে তার বাবা ও তার নামে বিভিন্ন সময়ে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, লুটপাটের অভিযোগে চারটি মামলা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। অন্যদিকে হামলার জেরে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তারাও একটি মামলা করেছেন।
বিবাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ আলী খান বলেন, ‘বিরোধপূর্ণ জমি কিনে বিবাদীরাও ভুগছেন। এখন গুরুতর ফৌজদারি মামলার বড় কারণও এই জমি। দাগ নম্বর খতিয়ানের ঝামেলা তো আছেই। আমার মনে হয়, শুধু দুই পক্ষকে ছাড় দিয়ে নমনীয় হয়ে সমঝোতা বা মধ্যস্থতায় আসতে হবে।’
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও আইন সাময়িকী ডিএলআরের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘এখন যে পরিস্থিতি তাতে মামলা নিষ্পত্তিতে আইনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা থাকতেই হবে। আর যদি মামলার দুই পক্ষ নমনীয় না হয়, শুধু সময় নিতে থাকে, তাহলে সংগত কারণেই মামলায় বিলম্ব হবে। আন্তরিক না হলে আইনটি যথাযথভাবে প্রয়োগ না হলে সমাধান হবে না।’
জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নানা উদ্যোগের পরেও দেওয়ানি মামলায় সুফল মিলছে না। বিচারক স্বল্পতা তো আছেই। বিচারঙ্গনে প্রযুক্তির ব্যবহারও আশানুরূপ হয়নি। শুনানিকালে বিচারকদের অনেকে এখনো সাক্ষীদের (জেরা) বক্তব্য হাতে লেখেন। এতেই দিনের একটা সময় চলে যায়।’
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি যা, তাতে দেওয়ানি মামলায় সুফল পেতে অবশ্যই মেডিয়েশনের (দুই পক্ষের মধ্যস্থতা) ব্যবহার বাড়াতে হবে। পুরো বিচার বিভাগকে প্রযুক্তির আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজনে পুরনো আইনের সংস্কারও হতে পারে।’
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দুই দশক হতে চলল। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় ওই হামলার ঘটনায় ২৪ জন নিহত হন। আহত অনেকে পরে মারা যান। অনেক কষ্ট নিয়ে এখনো বেঁচে আছেন অনেকে। ২১ আগস্ট এলেই ভয়াল স্মৃতি জাপটে ধরে তাদের। আবেগাপ্লুত হন স্বজনহারানো পরিবারের সদস্যরা। আজ সেই দিন। আজ ওই ঘটনার ১৯তম বার্ষিকী।
ভয়ংকর ও ন্যক্কারজনক ঘটনাটি ঘটেছিল ২১ আগস্ট, ২০০৪ সালে। বিএনপি-জামায়াত জোট তখন ক্ষমতাসীন ছিল। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চে দলটির সন্ত্রাসবিরোধী জনসভা চলছিল। প্রধান অতিথি ছিলেন তখনকার বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
সভার একপর্যায়ে প্রধান অতিথি মঞ্চে উঠলেন, বক্তৃতাও করলেন। বক্তৃতা শেষ হতে না হতেই বিকেল ৫টা ১৮ মিনিটে (মামলার নথি অনুযায়ী) ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয় সেখানে। সভামঞ্চের আশপাশে উপর্যুপরি আর্জেস গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সন্ত্রাসবিরোধী জনসভা পরিণত হয় মৃত্যুকূপে।
২৪ জন নেতাকর্মীর জীবন ও শত শত নেতাকর্মীর আহত হওয়ার মধ্য দিয়ে সেদিন রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। রক্তস্নাত হয়েছিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়ক, ঢাকার কালো রাজপথ। আজ সেই বীভৎস ও নারকীয় ঘটনার দিন। শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই চালানো হয়েছিল বর্বরোচিত, ভয়াবহ ওই গ্রেনেড হামলা। গুলিও চালানো হয়েছিল সেদিন। মঞ্চে থাকা নেতারা মানবঢাল হয়ে রক্ষা করেছিলেন শেখ হাসিনাকে। ডজনখানেক গুলি ছোড়া হয়েছিল। গুলিতে নিহত হন আওয়ামী লীগ সভাপতির ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ।
সেদিনের সেই মানবঢাল রাজনীতির ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। থাকবে তা অনন্তকাল। বাংলাদেশের রাজনীতিতে গৌরবান্বিত এক মানবঢাল, যা রক্ষা করেছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জীবন। সেদিন মঞ্চে থাকা নেতাদের উদ্যোগকে বিস্ময়কর অভিহিত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘বিস্ময়কর বলছি এ কারণে যে, তারা নিজের জীবনের কথা না ভেবে নেতাকে বাঁচাতে হবে- এ কথা আগে ভেবেছিলেন। এমন সিদ্ধান্ত সত্যিই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবনা, স্মরণীয় ঘটনা। তারা নিশ্চয়ই জানতেন না যে, নেতাকে বাঁচালে অনেক কিছু পাবেন। এ কারণে ঝুঁকি নেননি তারা। তারা দেখতে পাচ্ছিলেন, তাদের সামনে বিকল্প কিছুই নেই তাদের নেতা শেখ হাসিনাকে রক্ষা করার জন্য।’
শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘নেতাকর্মীদের মধ্যে আবেগের বন্ধন ছিল। রাজনৈতিক দলে এটা থাকা উচিতও। আওয়ামী লীগে নেতাকর্মীর এ বন্ধন নিঃস্বার্থ বন্ধনের দৃষ্টান্ত; পদ-পদবির ঊর্ধ্বে এ বন্ধন। সেদিনের ঘটনা তারই প্রমাণ।’
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তি মিছিলের আয়োজন করে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। শান্তি মিছিলের উদ্বোধক ছিলেন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনা। কর্মসূচি কেন্দ্র করে শেখ হাসিনার প্রাণনাশের নীলনকশা আঁকে ষড়যন্ত্রীরা। যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার্য আর্জেস গ্রেনেড দিয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। শান্তি সমাবেশের শেষদিকে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান শেষ হওয়ার আগেই ছোড়া হয় সে গ্রেনেড। গ্রেনেড হামলায় আক্রান্ত হন শেখ হাসিনা। শান্তি মিছিল শেষে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সভামঞ্চে দলের সব কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন। তারাও আক্রান্ত হন। নেতারা নিজেদের জীবনের চিন্তা না করে শেখ হাসিনার জীবনরক্ষায় রচনা করেন মানবঢাল।
সেদিন মঞ্চে উপস্থিত সব নেতা গ্রেনেডের স্প্লিন্টার নিজের শরীরে ধারণ করে অক্ষত রাখেন বঙ্গবন্ধুকন্যাকে। বাঁচিয়ে রাখেন তাদের আশা-ভরসার প্রতীক শেখ হাসিনাকে। যদিও হামলার শিকার আওয়ামী লীগ সভাপতির শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। সেদিন জীবন নিয়েছেন দলের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী। কেন্দ্রীয় একাধিক নেতাসহ পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন, পঙ্গুত্ব বরণ করেন।
শেখ হাসিনার শরীরের ওপর নিজের শরীর বিছিয়ে দিয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও ঢাকার মেয়র মোহাম্মদ হানিফ অসংখ্য স্প্লিন্টার নিজের শরীরে বিঁধিয়েছেন। দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়েও সুস্থ হয়ে রাজনীতির মাঠ আর ফিরে আসা হয়নি তার।
মানবঢাল রচনা করে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবং প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীসহ অন্য নেতারা স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা নিয়ে জীবন পার করছেন। মানবঢাল একটি গৌরবের নাম। মানবঢাল এখন সম্মানের, নেতৃত্বের প্রতি আস্থা-বিশ্বাসের প্রতীক। পৃথিবীতে নেতাকে রক্ষার জন্য মানবঢাল রচনার দ্বিতীয় নজির কেউ স্মরণ করতে পারে না।
এ ঘটনার মাধ্যমে বোঝা যায়, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তার দলে কতটা জনপ্রিয়, কতটা আস্থার আর বিশ্বাসের। দলের শীর্ষসারির নেতাদের প্রাণপণ চেষ্টায় নির্মিত মানবঢালে রক্ষা পেয়েছে শেখ হাসিনার জীবন। কীভাবে নিজের জীবনের কথা না ভেবে, পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্ততির পরোয়া না করে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে নেত্রীর জীবনরক্ষায় মরিয়া হয়ে ওঠেন নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুকন্যাকে রক্ষায় মানবঢাল করে মঞ্চেই থাকেন কিছুক্ষণ। পরে পরিস্থিতি বুঝে তাকে ট্রাক থেকে নামিয়ে তার বুলেটপ্রুফ মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। ওই গাড়ি লক্ষ্য করেও গুলি ছুড়েছিল হামলাকারীরা।
মানবঢাল রচনাকারী নেতা আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নেতাকর্মীরা মানবঢাল তৈরি করে গ্রেনেড হামলা থেকে নেত্রীকে (শেখ হাসিনা) রক্ষা করেন। আমরা যখন নেত্রীর জীবনরক্ষায় মরিয়া তখন অন্যরকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন তিনি। বললেন, আমি সুধা সদন যাব না, সবাইকে দেখে তারপর যাব। ধানমণ্ডির সুধা সদনে পৌঁছানো পর্যন্ত পথে বারবার তিনি বলছিলেন, “গাড়ি থামাও, আমি যাব না, সবাইকে দেখে তারপর যাব”।’ রাস্তায় আবারও হামলা হয় কি না, সে আশঙ্কাও তাড়া করছিল বলে জানান মায়া।
আওয়ামী লীগের ডেটাবেজ টিমের এবং সংস্কৃতিবিষয়ক উপকমিটির সদস্য নুরুল আলম পাঠান মিলন বলেন, ‘রাজনীতিতে, কী তত্ত্বে কী প্রয়োগে, ব্যক্তি ম্যাটার করে। রাজনীতিতে নেতার প্রতি, নেতৃত্বের প্রতি প্রশ্নহীন আনুগত্য কর্মীদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এ দীক্ষাই একজন কর্মীকে উদ্বুদ্ধ করে নেতাকে নিরাপদ রাখতে এবং নেতার বিপন্ন জীবনকে সুরক্ষা দিতে। ২১ আগস্ট মানবঢাল তৈরি করে আমাদের বাতিঘর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার জীবনরক্ষার মাধ্যমে আমরা গৌরবের অধিকারী হয়েছি। এমন গৌরবের ভাগীদার হওয়া সৌভাগ্যের বিষয়।’
মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, শেখ হাসিনার তখনকার নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও বর্তমান সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মেজর সোয়েব, মামুন ও জাহাঙ্গীর শেখ হাসিনাকে সেদিন সুধা সদনে রেখে আসেন। ২১ আগস্ট মানবঢাল রচনা বাংলাদেশের ইতিহাসে অনন্য এক ঘটনা। সম্ভবত বিশ্বের ইতিহাসেও।
হঠাৎ করে বিএনপির নেতাকর্মীদের ধড়পাকড়, হামলা ও মামলায় নতুন করে চাপে পড়েছে দলটি। সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে। কারণ ছাত্রদলের ছয় নেতাকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়ে পুলিশ দাবি করেছে, নির্বাচনের সময় সহিংসতার জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের পরামর্শে তারা অস্ত্র সংগ্রহ করছিল।
এ ছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনকে যেভাবে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে, তাতে দলটির দায়িত্বশীল নেতারা মনে করছেন, রাজপথের কর্মসূচিতে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী তরুণ নেতাদের ওপর সরকারের আক্রমণ বাড়তে পারে। তাদের দাবি, ছাত্রদল নেতাদের তুলে নেওয়ার পর অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার দেখানো আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি দেওয়ার দাবিতে বিএনপি শনিবার সারা দেশে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায়ও মামলার মুখোমুখি হচ্ছেন নেতাকর্মীরা। এর আগে শুক্রবার ঢাকাসহ দেশের সব মহানগরে গণমিছিল কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। দলটির নেতারা দাবি করেন, ওই দিন রাতে সকালে ছাত্রদলের নিখোঁজ এক নেতাকে খুঁজতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে সংগঠনের আরও পাঁচ নেতাকে। শনিবার সকালে এ বিষয়ে দলটি বিবৃতি দেয়। এরপর রাতেই এই ছয়জনকে অস্ত্রসহ আটকের কথা জানায় পুলিশ। গতকাল তাদের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানায় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ।
এ ছাড়া শনিবার রাতে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের নিচ থেকে রবিনসহ আরও ১২ জনকে আটকের তথ্য জানায় পুলিশ।
এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল রবিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হঠাৎ করে ধরপাকড় বৃদ্ধি হয়েছে বলতে চাই না। মূলত ধরপাকড় শুরু হয়েছে গত ২৮ জুলাইয়ের পর থেকে। এরপর দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে গত শনিবার হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, জামালপুর ও নারায়ণগঞ্জে দলের ঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অতীতের মতো যৌথভাবে হামলা, মামলা শুরু করেছে।’
তবে এ ঘটনা নিয়ে তারা চিন্তিত নন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আন্দোলনের মাত্রা যতই বাড়বে, সরকারের নির্যাতন, হামলা, মামলা ততই বাড়বে। আমরা বিষয়টি আগেই আঁচ করতে পেরেছি। সেভাবেই আগামীর পরিকল্পনা করছি। কর্মসূচিতে সাধারণ জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে।’
গতকাল বিকেলে গুলশানে দলটির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের ছয় নেতাকে তুলে নেওয়া এবং অস্ত্র মামলার প্রসঙ্গে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘নির্বাচনের আগে তারা নিজেরাই কিছু পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। পুরনো কায়দায় তার দায় বিএনপির ওপর চাপাবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলছেন, সন্ত্রাস হবে, আরেকজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তিনি বলেছেন যে সন্ত্রাস করতে দেব না। সন্ত্রাসটা হলো কোথায়? আমরা কোথায় করলাম। যা কিছু সন্ত্রাস তো করছ তোমরা। বন্দুক তোমাদের হাতে, পিস্তল তোমাদের হাতে, আইন তোমাদের হাতে। রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে সন্ত্রাস করছ। এটা পুরোপুরি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস করছে।’
ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকারপ্রধানের নির্দেশে কিছুসংখ্যক অতিউৎসাহী দলবাজ পুলিশ কর্মকর্তা এহেন বেআইনি কর্মকান্ড চালানোর জন্য মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। এ ছাড়া বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে গায়েবি মামলায় বিএনপিসহ বিরোধী মতের নেতাকর্মী, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষকে সাজা দিচ্ছে। উচ্চতর আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর নিম্ন আদালতে হাজির হলে জামিন নামঞ্জুর করে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হচ্ছে। আবার জামিন লাভের পর নতুন আসামি বানিয়ে জেলগেটেই অনেককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আটক রাখা হচ্ছে, যা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, ‘হঠাৎ করে পুলিশের ধরপাকড়, হামলা ও মামলা দেওয়ার ঘটনায় নেতাকর্মীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কাকে কখন কোথা থেকে তুলে নিয়ে যাবে, সে বিষয়ে চিন্তিত নেতাকর্মীরা।’
তবে বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে সম্প্রতি নেতাকর্মীরা যেভাবে সাহসী ভূমিকা নিয়ে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে যুক্ত রয়েছেন, তা থামানো যাবে না বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
সালাম বলেন, ‘আরেকটি বিষয় নিয়ে আমরা চিন্তিত সেটা হচ্ছে ছাত্রদলের নেতাদের খালি হাতে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিদেশি অস্ত্র দিয়ে গ্রেপ্তারের ঘটনা সামনের দিনগুলোতে বাড়তে পারে। কারণ সরকার অতীতের মতো সামনের দিনগুলোতে আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে বিতর্কিত করতে অপচেষ্টা চালিয়ে যাবে। আমাদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের পাশাপাশি সারা দেশের তৃণমূলের লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। নতুন করে আরও মামলা হবে। এসব নিয়ে চিন্তা থাকলেও উদ্বিগ্ন নই আমরা।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের পুরনো মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার পাশাপাশি রাজপথে সক্রিয় তরুণ নেতাকর্মীদের কারারুদ্ধ করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনকে গ্রেপ্তার করেছে সাদাপোশাকের পুলিশ। এর আগে দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এগুলো সরকারের পুরনো কৌশল।’
এর বিপরীতে বিএনপিরও কৌশল রয়েছে জানিয়ে ওই নেতা বলেন, ‘সম্প্রতি কয়েকজন তরুণ নেতাকে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৫ বছর ধরে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের যৌথ হামলা, মামলা, নির্যাতন সহ্য করে টিকে আছি। এগুলো এখন আর ভয় পাই না। আমাদের নেতাকর্মীরাও ভয় পায় না।’
আগামী নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে আওয়ামী লীগ প্যাকেজ কৌশল গ্রহণ করেছে। এসব কৌশলে চমকও থাকতে পারে বলে ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের প্যাকেজ কৌশলের মধ্যে রয়েছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপিকে প্রতিদিন কর্মসূচি পালন করতে না দেওয়া, দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রাখা, বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি সৃষ্টি করা। শীর্ষ নেতৃত্বে সংশয় সৃষ্টি করা। সেই সঙ্গে যেকোনো মূল্যে মাঠ নিয়ন্ত্রণে বিএনপির সব চেষ্টা সামাল দেওয়া।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতে প্রতিরোধের মুখে বিএনপির অনেকটাই উত্তাপহীন হয়ে পড়ে। তাদের সেদিনের শক্তি দেখে মূলত আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কৌশল থেকে সরে এসেছে। বিএনপির কর্মসূচির পরে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি পালন থেকে বিরত থাকে প্রায় তিন সপ্তাহ।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত এক দিনও বিএনপিকে কর্মসূচির বাইরে রাখা গেলে, দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রাখা গেলে সেটাও এক ধরনের উপকারে আসবে। তিনি বলেন, নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের এবারের লক্ষ্য বিএনপির ভেতরের নেতাকর্মীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি সৃষ্টি করা। শীর্ষ নেতৃত্বে সংশয় সৃষ্টি করা। সেই সঙ্গে মাঠ নিয়ন্ত্রণে বিএনপির সব চেষ্টা নস্যাৎ করে দেওয়া।
ক্ষমতাসীন দলটির নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি বাধার মুখে পড়ার পরে দলটির পরবর্তী কর্মসূচি অনেকটা গতিহীন হয়ে গেছে। আর এটা সক্ষম হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কর্মকৌশলের কারণে। ফলে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কৌশল থেকে বিরতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আবার শোকের মাসও পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে থাকতে না চাওয়ার কারণ ছিল। শোকের মাস উপলক্ষে কিছু কর্মসূচি থাকলেও সেগুলোতে তেমন ‘অ্যাকশনমুডে’ থাকছে না আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আসছে সেপ্টেম্বর মাস থেকে আবারও পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে থাকার কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। তারা বলেন, এটা মূলত আওয়ামী লীগের ওই নীতিরই অংশ ‘প্রয়োজনে কঠোর, প্রয়োজনে ছাড়’।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ১ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ মাঠে নামছে। ওই দিন প্রায় পাঁচ লাখ লোকের জনসমাবেশ ঘটাতে চায় তারা। এর মধ্য দিয়ে দেশে-বিদেশে জানান দিতে চায় আওয়ামী লীগ সরকারের যেমন শক্ত অবস্থান রয়েছে, তেমনি মাঠে ও জনগণের ভেতরেও জনপ্রিয়তায় এগিয়ে আছে ক্ষমতাসীনরা।
শোকের মাসের শেষদিনে ছাত্রলীগের আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে মাসব্যাপী শোক দিবসের কর্মসূচির ইতি টানা হয়। কিন্তু এবারই প্রথম তার ব্যত্যয় ঘটছে। ছাত্রলীগের এ অনুষ্ঠান এর আগে কখনো সেপ্টেম্বর মাসে আয়োজন করা হয়নি। বরাবরই শোকের মাসের শেষদিন এ কর্মসূচি পালন করে আসছিল ছাত্রলীগ। কারণ, দেখিয়েছে শুক্রবার হওয়ায় কর্মসূচির তারিখ পাল্টেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা কখনোই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির গ্রহণ করি না। আওয়ামী লীগ মনেও করে না এগুলো পাল্টাপাল্টি কিছু একটা।’
সভাপতিমন্ডলীর অন্য সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা আগেও বলেছি, এখনো বলছি, আবারও বলছি, বিএনপির কর্মসূচির দিন এ দেশের মানুষ ভয়ে থাকে কখন কী ঘটে? নিরাপত্তাহীনতায় থাকে। আমরা সরকারে আছি। জনগণের সেই ভয় কাটিয়ে জনগণকে ভয়হীন করা, নিরাপদে রাখতে শান্তি সমাবেশ করি।’
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপিকে ভয়ডরহীনভাবে মাঠে থাকতে দেওয়া যাবে না। তাতে দলটির নেতাকর্মীরা প্রচুর আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে। ফলে নির্বাচন পর্যন্ত মাঠ ফাঁকা রাখা হবে না। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, বিএনপির কর্মসূচিতে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে।
মাঠপর্যায়ের কর্মসূচিতে সব সময়ই থাকেন এমন একজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঢাকার প্রবেশমুখে বিএনপি প্রতিরোধের মুখে পড়েছে বলেই সরকারের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন অল্প কিছুদিনের জন্য গতিহারা হয়। কর্মসূচি নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় পড়ে যায় বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। এটা আওয়ামী লীগের জন্য সুফল বয়ে এনেছে।
ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক আরোপের ঘোষণার পরপরই দেশের বাজারে পণ্যটির দাম বাড়তে শুরু করেছে। এক রাতের ব্যবধানে বাজারে কেজিপ্রতি অন্তত ২০ টাকা বেড়ে গেছে। কিন্তু শুল্কযুক্ত পেঁয়াজ এখনো আমদানি হয়নি। এর জন্য বাজার সিন্ডিকেটের প্রভাবকে দায়ী করেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
খবর নিয়ে জানা যায়, এতদিন ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে কোনো শুল্ক দিতে হতো না বাংলাদেশকে। গতকাল হঠাৎ পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় দেশটি। ফলে এক রাতের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ১৫-২০ টাকা বেড়ে গেছে। সব থেকে বেশি দাম বেড়েছে ভারতীয় পেঁয়াজের। বাজারে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকায়। যা একদিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৫৫-৬০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজের মধ্যে ফরিদপুরের পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকায় ও পাবনার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকায়।
এদিকে আমদানিকারকরা জানান, গতকাল রবিবার পর্যন্ত শুল্কযুক্ত পেঁয়াজ দেশের বাজারে প্রবেশ করেনি। তবে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণায় পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
জানতে চাইলে হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক মোবারক হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভারত থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ ভাগ শুল্ক আরোপের নতুন সিদ্ধান্তটি কার্যকর হয়েছে। এর ফলে কেজিপ্রতি কত টাকা করে শুল্ক পড়ছে সেটি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। পেঁয়াজের কেজিপ্রতি শুল্ক কাস্টমস ৫ টাকা নেবে নাকি ৬ টাকা নেবে নাকি ৯ টাকা নেবে এ বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় কাস্টমসের সঙ্গে রপ্তানিকারকদের দেনদরবার চলছে। তবে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য ভারতের কাস্টমসে আসেনি। এ সংক্রান্ত চিঠি আসার কথা। এটি আসার পরই বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু হবে। বিকেল ৪টা নাগাদ যদি এ সংক্রান্ত মেসেজ ভারতীয় কাস্টমসে আসে তবেই বিকেল থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু হতে পারে। আর যদি এর মধ্যে না আসে আরও দেরি হয় তাহলে রপ্তানি শুরু হতে দেরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন সিদ্ধান্তে এখনো পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়নি।
শুল্ক আরোপের খবরে দেশের বাজারে পেঁয়াজের অস্বাভবিক মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে শ্যামবাজার পেঁয়াজ আমদানিকারক ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি মো. হাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশের বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে অনেক। সেই অনুযায়ী দেশটিতে পেঁয়াজের দাম বাড়লে আমাদের দেশের বাজারে এর একটা প্রভাব পড়ে। তবে গতকাল দেশটির ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের খবরে দেশের বাজারে হুট করে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। প্রতি মণ পেঁয়াজে ৬শ টাকা বেড়েছে। গতকাল পর্যন্ত একমণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৪শ টাকায়। তবে এটি বেশিদিন স্থায়ী হবে না। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে এটি সমন্বয় হয়ে আসবে।
পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের ভাষ্য অনুযায়ী, সরবরাহ কম থাকায় বাড়তি দামে বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। মূলত শনিবার রাত থেকে এই পণ্যটির দাম বেড়েছে। পাল্লাপ্রতি ২০-৩০ টাকা ও কেজি প্রতি ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। এর মধ্যে দেশি পেঁয়াজের পাল্লা ২০ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজের পাল্লায় ৪০ টাকা বেড়েছে।
কারওয়ান বাজারের নূর মোহাম্মদ নামের এক পাইকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রতিদিন ১০০ কেজির বেশি পেঁয়াজের দরকার হয়। তার জোগান আসে শ্যামবাজার থেকে। বর্তমানে বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হয় বলে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। গতকাল মণপ্রতি ৬০০ টাকা বাড়তি দামে পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে। যা এর আগের দিনেও প্রতি মণ পেঁয়াজ কিনেছি ২ হাজার ৪শ টাকায়।
একই কারণে চট্টগ্রামের বাজারেও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। শনিবার যেখানে প্রতি কেজি ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে, একদিনের ব্যবধানে এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। আর তা খুচরা ব্যবসায়ীরা ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি করছে।
কেবল শুল্ক আরোপের খবরে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ে অরাজকতার বিষয় কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের স্বভাব এমনই। তাদের অতিমুনফা লোভের জন্য দেশের মানুষের কষ্ট হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার খবরে তাদের স্টকের ভোগ্যপণ্যের সংকট দেখা দিতে শুরু করে। অথচ, যখন পণ্যের দাম কমে তখন দাম কমানো বিষয় তাদের খবর থাকে না। তাদের সে সময়কার অজুহাত থাকে, বাড়তি দামে পণ্য কেনায় কম দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।
মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের হটাতে দেশের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করার সরকারের দায়িত্ব থাকলেও তারা তা করছে না। এর জন্য জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের বাজারে যেসব পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে তা ব্যবহার কমিয়ে আনলে অসাধু ব্যবসায়ীদের থামানো সম্ভব বলে ভোক্তাদের এই নেতা মনে করেন।
যাতায়াত সুবিধা ভালো থাকায় মসলাসহ কয়েক ধরনের কাঁচা সবজি ভারত থেকে আমদানি করে থাকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। আমদানি করা পণ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম পেঁয়াজ। ফলে প্রতি বছরই আমদানি করা পেঁয়াজের সিংহভাগ ভারত থেকে আসে। এর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি করা হয় ৭ লাখ ৪৩ হাজার টন পেঁয়াজ। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয় ৬ লাখ ৬৫ হাজার টন। এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ লাখ ৫৩ হাজার টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ লাখ ৭১ হাজার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১০ লাখ ৭ হাজার ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি করা হয় ৮ লাখ ৬৩ হাজার টন পেঁয়াজ।
বর্তমানে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৮-৩০ লাখ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ লাখ ৪১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করা হয়। এতে উৎপাদন হয় ৩৪ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ। তবে সংগ্রহ থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছতে বিভিন্ন ধাপে পণ্যটির ২৫-৩০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। যার প্রভাবে দেশের বাজারে প্রায় তিনগুণ হারে পণ্যটির দাম বাড়ে। বাজার স্থিতিশীল করতে তাই গত ৫ জুন থেকে কৃষি মন্ত্রণালয় আবার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস দেশ রূপান্তরকে বলেন, চাহিদার থেকে আমাদের উৎপাদন অনেক বেশি হচ্ছে। তবে প্রাকৃতিক দিক থেকে একটু বেশি বৃষ্টি হলেই আমাদের দেশের পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। যেহেতু ছোট দেশ, সামান্য ক্ষতি হলে অনেক বেশি সমস্যায় পড়তে হয় আমাদের। কমবেশি এই সমস্যা আমাদের থাকবেই।
পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে কোনো বাধা নেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, যেহেতু ভারতের বাজারে এখন পেঁয়াজের দাম বেশি। তার প্রভাবে আমাদের দেশেও এই পণ্যটির দাম বেড়েছে। সেই ক্ষেত্রে যে কেউ চাইলে অন্য যেকোনো দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিতে পারবেন। সেই ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকবে না।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।
প্রাচীন সময় থেকে মানুষের খাদ্যতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে চীজ বা পনির। গরুর দুধের তৈরি পনিরে শরীরকে সুস্থ রাখার প্রয়োজনীয় সব উপাদান পাওয়া যায়।
বর্তমানে সময়ের সাথে সাথে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পনিরের ব্যবহার। আর তাই বিস্কিট থেকে শুরু করে পাউরুটি, পাস্তা, পিৎজা অনেক কিছুতেই পনির ব্যবহার হয়।
পনিরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের মতে, ১০০ গ্রাম পনিরের মধ্যে রয়েছে:
শক্তি - ৩৬২ কিলোক্যালরি
প্রোটিন – ৫.১৭ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট - ৫০ গ্রাম
ক্যালসিয়াম - ৬৯ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম - ১৮১ মিলিগ্রাম
স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড – ৩.৪৫ গ্রাম
কোলেস্টেরল - ৩৪ মিলিগ্রাম
এটি প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস। পনিরের বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে।
পনির ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এবং প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এটি বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অনেক উপকারি। পনিরে থাকা ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পনির খেলে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করা যায়।
পনির ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা শক্তিশালী ও মজবুত দাঁত তৈরিতে অবদান রাখে। পনিরে থাকা কেসিন ফসফোপেপটাইড উপাদান দাঁতের গহ্বর কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া চিউইং চিজ মুখের পিএইচ মাত্রা বাড়াতে পারে এবং সামগ্রিক মৌখিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
পনিরে অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড যেমন কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস। কোরিয়া ইউনিভার্সিটি এবং ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ফ্যাটি অ্যাসিডে ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ ছাড়া এই ফ্যাটি অ্যাসিড এথেরোস্ক্লেরোসিস এর বিকাশ রোধ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে।
পনিরে কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড এবং স্ফিংগোলিপিড রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে স্ফিংগোলিপিড মানুষের কোলন ক্যান্সারকে বাধা দিতে পারে।
এ ছাড়া পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে খাদ্যতালিকাগত ক্যালসিয়াম কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ উপকারি।
পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই উপকারি। এটি প্রসবের সময় সংকোচনকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া উকের দুধ পান করানোর সময় ক্যালসিয়াম পুষ্টির ঘাটতিও পূরণ করে পনির। এটি গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রূণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে।
কিছু ধরণের পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যকারিতা বাড়াতে পরিচিত। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে পনির শরীরের প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটি অসুস্থতা এবং রোগ কমাতে পারে।
প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সুরক্ষিত পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। এটি বয়স্কদেরমধ্যে ইমিউনোসেনেসেন্স (প্রতিরোধ ব্যবস্থার ধীরে ধীরে দুর্বল হওয়া) প্রতিরোধ করতে পারে।
পনির সেলেনিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা থাইরয়েড ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সেলেনিয়ামের থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করে ভাইরাসের বিকাশকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে।
চেডার পনির হল এক ধরনের হার্ড পনির। এটি খাদ্যতালিকায় যোগ করলে তা থাইরয়েড রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
পনিরের আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলির মধ্যে একটি হল মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করা। বিশেষ করে ক্যামেমবার্ট জাতের পনির এই ধরনের কাজ করে থাকে। ক্যামেমবার্ট পনির প্রদাহজনক সাইটোকাইনের মাত্রা কমাতে পারে। এটি আলঝাইমার রোগের ঝুঁকি কমায় এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।
পনির ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। এতে থাকা ভিটামিন বি কোষের বিপাক এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে এটি উজ্জ্বল ত্বকের পাশাপাশি ত্বকের দাগ কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
যাদের গরুর দুধে অ্যালার্জি আছে তাদের পনির এড়ানো উচিত। এটি অ্যালার্জি, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথার কারণ ও হতে পারে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (অতিরিক্ত পনির খাওয়া) কার্ডিওভাসকুলার রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
পনিরের স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ও রয়েছে। যেমন,
কিছু লোকের দুধের প্রোটিন যেমন কেসিনে অ্যালার্জি থাকে। এটি সারা শরীর জুড়ে একটি প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং ত্বকে ফুসকুড়ি, সাইনাস কনজেশন এবং ব্রণ জ্বলতে পারে।
অনেকের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা থাকে। সেক্ষেত্রে তাদের পনির না খাওয়াই শ্রেয়। কারণ ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা গ্যাস, পেট ফোলাভাব এবং ডায়রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। অনেক সময় এর কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে।
প্রচুর পরিমাণে পনির খাওয়ার ফলে মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথা হতে পারে। পুরনো পনিরে থাকা টাইরামিন উপাদান কিছু ব্যক্তির মধ্যে মাইগ্রেনকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
যারা মোনোমাইন অক্সিডেস ইনহিবিটরস (MOIs) গ্রহণ করছেন তাদের পনির খাওয়া এড়ানো উচিত। এই ওষুধগুলি হতাশার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এসব ওষুধ পুরনো বা বয়স্ক পনিরে থাকা উপাদান টাইরামিনের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হবে ২ নভেম্বর। পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন তা নিয়ে এখন চলছে আলোচনা, কানাঘুষা; শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ।
বর্তমান উপাচার্যই আবার দায়িত্ব পাবেন নাকি নতুন কাউকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে এ আলোচনাই চলছে এখন। আলোচিত হচ্ছে কয়েকজন শিক্ষকের নামও। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন কানাঘুষারও অবসান হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ পদে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের মধ্য থেকেই কাউকে বাছাই করার বিষয়টি একপ্রকার নিশ্চিত। বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের এ বিষয়ে আগ্রহ নেই। গুণী কোনো শিক্ষক উপাচার্যবিষয়ক আলোচনার মধ্যে নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা হবে কি না, এ বিষয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের ১১(১) ধারা অনুযায়ী, উপাচার্য নিয়োগে তিন সদস্যবিশিষ্ট প্যানেল নির্বাচনের দায়িত্ব সিনেটের। সিনেট নির্বাচিত তিনজনের মধ্য থেকে একজনকে উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এবং রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রপতি তাকে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেন।
রীতি অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের জন্য সিনেটের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা হয়। কিন্তু এবার সিনেট অধিবেশন হওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। উপাচার্য অধিবেশন ডাকবেন কি ডাকবেন না; ওপর মহলের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কেউ কিছু জানেন না। উপাচার্য নিজেও বিষয়টি খোলাসা করছেন না।
অধ্যাদেশের ১১(২) ধারা অনুযায়ী, কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যেমন অসুস্থতা, ছুটি, অপসারণ বা অন্য কোনো কারণে উপাচার্যের পদ শূন্য হলে একজনকে অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা বলছেন, অধ্যাদেশের নিয়ম অনুসরণ করে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করা হোক। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং আগামী নির্বাচনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। নতুন উপাচার্যের গ্রহণযোগ্যতাও বাড়বে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, ‘ভিসি প্যানেল নিয়ে আলোচনা নেই। উপাচার্যও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে আমাদের জানা নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট সদস্য ও শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল সবচেয়ে বেশি আলোচিত। তাদের মধ্য থেকেই কারোর পরবর্তী উপাচার্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম এ বিষয়ক আলোচনায় রয়েছেন।
অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পান। পরে প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর উপাচার্য পদে পুনর্নিয়োগ পান তিনি। সাত বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সামলাচ্ছেন তিনি। দুই মেয়াদের বেশি উপাচার্য থাকার নজির নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই তার দায়িত্ব পালনের শেষ দেখছেন অনেকে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষকদের মধ্যেও তাকে নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে পুনরায় নিয়োগ পেতে পারেন তিনি।
ইমেরিটাস অধ্যাপক বা অন্য কোনো গুণী শিক্ষক নেই উপাচার্য নিয়োগের আলোচনায়। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গুণী শিক্ষকদের সামনে আনার যে ধরনের কাঠামো থাকা উচিত তা নেই। যারা তোশামোদ করতে পারে, অন্ধ আনুগত্য প্রকাশ করতে পারে, তাদেরই প্রশাসনের শীর্ষ পদে নিয়ে আসা হয়। সত্যিকারের গুণী শিক্ষক এবং অনেক ভালো গবেষক আছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারা কখনো প্রশাসনের দায়িত্বে আসতে পারেন না। তারা ব্যক্তিত্বের জলাঞ্জলি দিতেও রাজি নন।’
অতীতে উপাচার্যদের মধ্যে অ্যাকাডেমিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে একটা ভারসাম্য ছিল। এখন তা নেই। এখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও আনুগত্যের ভিত্তিতে প্রশাসনিক পদগুলো দেওয়া হয়।
পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন বা ভিসি প্যানেল নিয়ে আগ্রহ নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের। বিএনপিঘোষিত এক দফাতেই তারা মগ্ন। যদিও সিনেটে তিনজন প্রতিনিধি থাকায় সুযোগ তাদেরও রয়েছে। সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার পরিবর্তন না হলে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিষয়ে ভাবছি না। এ বিষয়ে আমাদের ফোকাস নেই। আমাদের ফোকাস হচ্ছে এ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। জাতীয় রাজনীতিতে পরিবর্তন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও পরিবর্তন আসবে।’
শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও সাংগঠনিকভাবে আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমরা নীল দল এখনো এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করিনি। যথাসময়ে দলের সভায় এ নিয়ে কথা হবে। মনোনয়ন কে পাবেন, তার আলোচনাও সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে। বর্তমান প্রশাসনের শীর্ষ তিনজন বিশেষভাবে আলোচনায় থাকবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই দায়িত্ব দেবেন। আমরা উনাদের সমর্থন করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ীই সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।’
বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনের গতি অনুযায়ীই সব চলবে। এ বিষয়ে যাদের ভাবা প্রয়োজন তারা অবশ্যই ভাববেন।’ সিনেটের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশেষ অধিবেশন ডাকার প্রয়োজন হলে আমরা ডাকি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।