
অস্ত্রসহ ছাত্রদলের ছয় নেতাকে গ্রেপ্তারের পর সংবাদ সম্মেলন করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার খোন্দকার নূরুন্নবী। একপর্যায়ে সরকারি দলের অনেক নেতাকর্মীকে অস্ত্রসহ অনেক সময় দেখা যায়, তাদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেন না কেন? এখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন কি না বা নিচ্ছেন কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে চলে যান তিনি।
গতকাল রবিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ডিবির এই যুগ্ম কমিশনার নিখোঁজ ছাত্রদল নেতাদের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের তথ্য জানান। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন কেন্দ্র করে সহিংসতা ও নাশকতার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করেছিলেন গ্রেপ্তারকৃত এ ছয়জন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে তারা অস্ত্র সংগ্রহ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সূত্র ধরে কাদের কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করা হয়েছে, সে তথ্যও ডিবি জানতে পেরেছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম ওরফে জিসান (৩১), সহসভাপতি মো. হাসানুর রহমান ওরফে হাসান (৩২), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল্লাহ আর রিয়াদ (২৯), বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ (৩০), ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহাদত হোসেন (৩১) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর (৩২)।
ছাত্রদলের এসব নেতাকে ডিবি তুলে নিয়েছিল বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে খোন্দকার নুরুন্নবী বলেন, ‘মামলার এজাহারে যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, সেভাবেই আমরা তাদের গ্রেপ্তার করেছি এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আসন্ন নির্বাচন কেন্দ্র করে তারা নাশকতামূলক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করছিল। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনেসহ দুটি মামলা হয়েছে।’
ডিবির এ কর্মকর্তা আরও বলেন, গতকাল (শনিবার) রাতে নাইটিংগেল মোড়ে অভিযান চালিয়ে বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন আহমেদের ছেলে তানভীর আহমেদ রবিনসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আগে থাকা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হবে।
এর আগে শনিবার রাতে পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিএনপির ১৫ নেতাকর্মীকে আটকের দাবি জানায় দলটি। তবে রবিনের নাম জানালেও বাকি ১১ জনের নাম জানায়নি ডিবি।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের (অ্যানেক্স ভবন) চারতলায় মনিরুজ্জামান মনির (৪৩) নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয় গত ৩০ জুলাই দুপুর দেড়টার দিকে। দুর্বল রোগা শরীরের এই ব্যক্তি বিচারপ্রাথী। চোখে-মুখে ক্লান্তি আর হতাশার ছাপ।
জানতে চাইলে দেশ রূপান্তরকে মনির বলেন, পেশায় সামান্য আয়ের টাইলস মিস্ত্রি তিনি। বরিশালের দক্ষিণ সাগরদী এলাকায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে মামলার কাজে প্রায়ই উচ্চ আদালতে আসতে হয় তাকে। প্রতিবেশীর সঙ্গে ৬০ বছরের জমির বিরোধে ৪৬ বছরই কেটে গেছে মামলায়। দাদার সময়ের মামলার জের ধরে তার (মনির) বাবা মামলায় জড়িয়েছেন, তিনি নিজেও এখন মামলা টানছেন। ইতিমধ্যে তার দাদা, বাবা মারা গেলেও মামলা আর নিষ্পত্তি হয়নি। বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও দুই শিশুকন্যাকে নিয়ে সামান্য আয়ের সংসার। অন্যদিকে মামলা চালাতে গিয়ে তিনি নিঃস্ব হচ্ছেন।
জমির বিরোধে দেওয়ানি মামলার জেরে বাদী-বিবাদী হয়ে আদালতে আসা মানুষের ভোগান্তি ও হতাশার নিত্য চিত্র এটি। এক দেওয়ানি মামলা থেকে আরও মামলার উৎপত্তি। অধস্তন আদালত থেকে হাইকোর্ট। হাইকোর্ট থেকে আপিল বিভাগ। আবারও অধস্তন আদালত। দশকের পর দশক এভাবেই চলতে থাকে মামলা। এর মধ্যে মারা যান বাদী-বিবাদী। পক্ষ হয় তার ওয়ারিশরা। কিন্তু মামলা শেষ হয় না। বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে মারামারি, খুনখারাবি হয়। মামলা থেকে মামলা বাড়ে, সমস্যা আরও জটিল হয়। ভুক্তভোগী মনিরের তথ্য অনুযায়ী, তাদের বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে অধস্তন ও উচ্চ আদালত মিলিয়ে দেওয়ানি মামলা ৫টি। আর ফৌজদারি মামলা হয়েছে ৫টি।
সুপ্রিম কোর্টের তথ্যমতে, উচ্চ ও অধস্তন আদালতে বিচারাধীন দেওয়ানি মামলার সংখ্যা পৌনে ১৭ লাখের বেশি।
বরিশালের মনিরের মতো গত কয়েক মাসে উচ্চ আদালতে আসা বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। অন্যদিকে নিয়মিত দেওয়ানি মামলা পরিচালনা করেন এমন ছয়জন আইনজীবী তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে অভিন্ন সুরে বলেন, খুন, মারামারি, পারিবারিক বিরোধের সবচেয়ে বড় কারণ জমির মালিকানার বিরোধ। জমির দাগ, খতিয়ানসহ বিভিন্ন জরিপের অস্পষ্টতা ও ধোঁয়াশাও এর কারণ। এই পরিস্থিতির প্রতিকার নিয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যতই মানুষ বাড়ছে, জমি নিয়ে বিরোধও বাড়ছে। কিন্তু নিষ্পত্তি যত হচ্ছে মামলা বাড়ছে তার চেয়ে বেশি। মামলাজট কিংবা অনিষ্পন্ন
থাকার বহুবিদ কারণ আছে। অনেক ক্ষেত্রে বিচারক ও আইনজীবীরাও দায়ী। কোনো কোনো পক্ষ তাদের মামলাটা দুর্বল মনে করে যে কোনোভাবে হোক সময়ক্ষেপণ করতে চায়। আবার আইনে অনেক কিছু থাকলেও আইন দেখিয়ে সেখানেও বিলম্ব।’ তিনি আরও বলেন, ‘মামলার জট নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক চিন্তাভাবনা, গবেষণা হচ্ছে। কিন্তু এগুলোও তো বাস্তবায়ন খুব বেশি হচ্ছে না।’
তিন বছরে দেওয়ানি মামলা বেড়েছে ২ লাখের বেশি সুপ্রিম কোর্ট থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ (গত মার্চ পর্যন্ত) তথ্য অনুযায়ী, দেশে দেওয়ানি, ফৌজদারি ও অন্যান্য বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৪২ লাখ ৮ হাজার ৯৮৭। এর মধ্যে আপিল বিভাগে বিচারাধীন দেওয়ানি মামলা ১৩ হাজার ৪৪২, হাইকোর্টে ৯১ হাজার ৬৩৮ এবং অধস্তন আদালতে ১৫ লাখ ৮৪ হাজার ১৬০ বিচারাধীন মামলা। মার্চ পর্যন্ত উচ্চ ও অধস্তন আদালতে বিচারাধীন দেওয়ানি মামলার সংখ্যা ১৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৪০টি।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত উচ্চ ও অধস্তন আদালতে ১৪ লাখ ৭৮ হাজার ৪২৭ দেওয়ানি মামলা বিচারাধীন ছিল। তিন বছর তিন মাস পর উচ্চ ও অধস্তন আদালতে অনিস্পন্ন দেওয়ানি মামলা বেড়েছে ২ লাখ ১০ হাজার ৮১৩ মামলা। এর মধ্যে গত বছরের জুলাই থেকে মাত্র ৯ মাসে (চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত) মামলা বেড়েছে ৩৬ হাজার ৭৭৪টি।
গত দুই বছরে সুপ্রিম কোর্টের উদ্যোগে ফৌজদারি পুরনো মামলাসহ গুরুতর অপরাধের মামলা নিষ্পত্তিতে আশানুরূপ গতি এসেছে। কিন্তু দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে সেটি আশানুরূপ হচ্ছে না।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা মনে করেন, দেওয়ানি মামলার বাদী ও বিবাদীদের অনেকটা জটিল আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। মোটা দাগে এর কারণ ১১৫ বছরের বেশি পুরনো দেওয়ানি কার্যবিধির সংস্কার না হওয়া, অধস্তন আদালতে মামলা চালানোর প্রক্রিয়া আধুনিকীকরণ না হওয়া, ঘন ঘন শুনানির আবেদন ও মুলতবি, অধস্তন আদালতের কোনো আদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ হয়ে উচ্চ আদালতে যাওয়া ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে অমনোযোগিতা।
মনিরদের দুঃখ ঘোচে না
প্রতিবেদনের শুরুতে ভুক্তভোগী মনিরের আইনজীবীদের তথ্যমতে, ১৯৬৩ সালে বরিশাল সদরের সাগরদী মৌজায় ২৬ শতক জমি স্থানীয় আব্দুল লতিফের কাছ থেকে কিনে নেন একই এলাকার আব্দুল গফুর নামে এক ব্যক্তি। তবে জমি কেনাবেচা হয় দলিল ছাড়া, মৌখিকভাবে। ১৯৭২ সালে আব্দুল লতিফ লিখিতভাবে গফুরকে জমি বুঝিয়ে দেন। ইতিমধ্যে গফুর সেখানে বসবাস করতে শুরু করেন। বাদীপক্ষের আইনজীবীদের ভাষ্য, ২৬ শতকের জায়গায় ১৩ শতক জমি বুঝে পান গফুর। লতিফ সেই জমি তার দুই স্ত্রীকে দান করে দেন ১৯৭৭ সালে। এরপর দুই স্ত্রী জিন্নাতুন্নেসা ও জহুরা খাতুন দলিল পেয়ে গফুরের বিরুদ্ধে ওই বছর উচ্ছেদের মামলা করেন। ইতিমধ্যে গফুর মারা যাওয়ায় এ মামলার বিবাদী হন তার ছেলে মজিবুর রহমান। কিন্তু বাদী উচ্ছেদের মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই জমির কিছু অংশ (পাঁচ শতাংশ) আরেক পক্ষের (মো. শামীম ও তার মা রোকেয়া খাতুন) কাছে বিক্রি করেন। পরে মজিবুর রহমান দখলজনিত স্বত্বের মামলা করেন ১৯৮৭ সালে। মামলা চলাকালীন ২০০১ সালের এপ্রিলে মারা যান মজিবুর রহমান। এরপর এই মামলার বাদী হন তার ছেলে মনিরুজ্জামান মনির ও অন্য ওয়ারিশরা। ২০০৯ সালের ১২ অক্টোবর বরিশালের যুগ্ম জেলা জজ আদালত এক রায়ে ১৩ শতক জমির মালিকানা মনিরকে বুঝিয়ে দিতে রায় দেয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে বরিশাল জেলা জজ আদালতে আপিল করে অপরপক্ষ। অধস্তন আপিল আদালত রায় খারিজ করে মামলাটি পুনর্বিচারের জন্য পাঠায়। জেলা জজ আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে বাদীপক্ষ (মনির) ২০১২ সালের জুলাই মাসে হাইকোর্টে রিভিশন মামলা করে। ইতিমধ্যে এই জমি কেনাবেচা ও মামলায় পক্ষভুক্ত বাদী-বিবাদীপক্ষের অন্তত পাঁচজন মারা গেছেন।
মনিরের আইনজীবী মো. শামীম সরদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, কিছুদিন আগে তিনি মামলাটি পেয়েছেন। এর আগে বেঞ্চ পুনর্নির্ধারণ হওয়া, বিচারক কিংবা এখতিয়ার পরিবর্তনে প্রায় এক যুগেও শুনানি সম্ভব হয়নি। গত জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে মামলাটি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে আংশিক শুনানি শুরু হয়।
তিনি বলেন, ‘মামলাটি নিজ উদ্যোগে নিয়েছিলাম। জমি নিয়ে প্রায় সব দেওয়ানি মামলার পরিস্থিতিই এমন। অন্য মামলার মতো নিকট ভবিষ্যতে এ মামলার নিষ্পত্তি হবে কি না, এ নিয়ে সংশয় আছেই।’
ভুক্তভোগী মনির বলেন, আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধপূর্ণ জমিতেই বসবাস করছেন। জমির বিরোধে তার বাবা ও তার নামে বিভিন্ন সময়ে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, লুটপাটের অভিযোগে চারটি মামলা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। অন্যদিকে হামলার জেরে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তারাও একটি মামলা করেছেন।
বিবাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ আলী খান বলেন, ‘বিরোধপূর্ণ জমি কিনে বিবাদীরাও ভুগছেন। এখন গুরুতর ফৌজদারি মামলার বড় কারণও এই জমি। দাগ নম্বর খতিয়ানের ঝামেলা তো আছেই। আমার মনে হয়, শুধু দুই পক্ষকে ছাড় দিয়ে নমনীয় হয়ে সমঝোতা বা মধ্যস্থতায় আসতে হবে।’
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও আইন সাময়িকী ডিএলআরের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘এখন যে পরিস্থিতি তাতে মামলা নিষ্পত্তিতে আইনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা থাকতেই হবে। আর যদি মামলার দুই পক্ষ নমনীয় না হয়, শুধু সময় নিতে থাকে, তাহলে সংগত কারণেই মামলায় বিলম্ব হবে। আন্তরিক না হলে আইনটি যথাযথভাবে প্রয়োগ না হলে সমাধান হবে না।’
জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নানা উদ্যোগের পরেও দেওয়ানি মামলায় সুফল মিলছে না। বিচারক স্বল্পতা তো আছেই। বিচারঙ্গনে প্রযুক্তির ব্যবহারও আশানুরূপ হয়নি। শুনানিকালে বিচারকদের অনেকে এখনো সাক্ষীদের (জেরা) বক্তব্য হাতে লেখেন। এতেই দিনের একটা সময় চলে যায়।’
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি যা, তাতে দেওয়ানি মামলায় সুফল পেতে অবশ্যই মেডিয়েশনের (দুই পক্ষের মধ্যস্থতা) ব্যবহার বাড়াতে হবে। পুরো বিচার বিভাগকে প্রযুক্তির আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজনে পুরনো আইনের সংস্কারও হতে পারে।’
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দুই দশক হতে চলল। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় ওই হামলার ঘটনায় ২৪ জন নিহত হন। আহত অনেকে পরে মারা যান। অনেক কষ্ট নিয়ে এখনো বেঁচে আছেন অনেকে। ২১ আগস্ট এলেই ভয়াল স্মৃতি জাপটে ধরে তাদের। আবেগাপ্লুত হন স্বজনহারানো পরিবারের সদস্যরা। আজ সেই দিন। আজ ওই ঘটনার ১৯তম বার্ষিকী।
ভয়ংকর ও ন্যক্কারজনক ঘটনাটি ঘটেছিল ২১ আগস্ট, ২০০৪ সালে। বিএনপি-জামায়াত জোট তখন ক্ষমতাসীন ছিল। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চে দলটির সন্ত্রাসবিরোধী জনসভা চলছিল। প্রধান অতিথি ছিলেন তখনকার বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
সভার একপর্যায়ে প্রধান অতিথি মঞ্চে উঠলেন, বক্তৃতাও করলেন। বক্তৃতা শেষ হতে না হতেই বিকেল ৫টা ১৮ মিনিটে (মামলার নথি অনুযায়ী) ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয় সেখানে। সভামঞ্চের আশপাশে উপর্যুপরি আর্জেস গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সন্ত্রাসবিরোধী জনসভা পরিণত হয় মৃত্যুকূপে।
২৪ জন নেতাকর্মীর জীবন ও শত শত নেতাকর্মীর আহত হওয়ার মধ্য দিয়ে সেদিন রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। রক্তস্নাত হয়েছিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়ক, ঢাকার কালো রাজপথ। আজ সেই বীভৎস ও নারকীয় ঘটনার দিন। শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই চালানো হয়েছিল বর্বরোচিত, ভয়াবহ ওই গ্রেনেড হামলা। গুলিও চালানো হয়েছিল সেদিন। মঞ্চে থাকা নেতারা মানবঢাল হয়ে রক্ষা করেছিলেন শেখ হাসিনাকে। ডজনখানেক গুলি ছোড়া হয়েছিল। গুলিতে নিহত হন আওয়ামী লীগ সভাপতির ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ।
সেদিনের সেই মানবঢাল রাজনীতির ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। থাকবে তা অনন্তকাল। বাংলাদেশের রাজনীতিতে গৌরবান্বিত এক মানবঢাল, যা রক্ষা করেছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জীবন। সেদিন মঞ্চে থাকা নেতাদের উদ্যোগকে বিস্ময়কর অভিহিত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘বিস্ময়কর বলছি এ কারণে যে, তারা নিজের জীবনের কথা না ভেবে নেতাকে বাঁচাতে হবে- এ কথা আগে ভেবেছিলেন। এমন সিদ্ধান্ত সত্যিই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবনা, স্মরণীয় ঘটনা। তারা নিশ্চয়ই জানতেন না যে, নেতাকে বাঁচালে অনেক কিছু পাবেন। এ কারণে ঝুঁকি নেননি তারা। তারা দেখতে পাচ্ছিলেন, তাদের সামনে বিকল্প কিছুই নেই তাদের নেতা শেখ হাসিনাকে রক্ষা করার জন্য।’
শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘নেতাকর্মীদের মধ্যে আবেগের বন্ধন ছিল। রাজনৈতিক দলে এটা থাকা উচিতও। আওয়ামী লীগে নেতাকর্মীর এ বন্ধন নিঃস্বার্থ বন্ধনের দৃষ্টান্ত; পদ-পদবির ঊর্ধ্বে এ বন্ধন। সেদিনের ঘটনা তারই প্রমাণ।’
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তি মিছিলের আয়োজন করে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। শান্তি মিছিলের উদ্বোধক ছিলেন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনা। কর্মসূচি কেন্দ্র করে শেখ হাসিনার প্রাণনাশের নীলনকশা আঁকে ষড়যন্ত্রীরা। যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার্য আর্জেস গ্রেনেড দিয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। শান্তি সমাবেশের শেষদিকে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান শেষ হওয়ার আগেই ছোড়া হয় সে গ্রেনেড। গ্রেনেড হামলায় আক্রান্ত হন শেখ হাসিনা। শান্তি মিছিল শেষে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সভামঞ্চে দলের সব কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন। তারাও আক্রান্ত হন। নেতারা নিজেদের জীবনের চিন্তা না করে শেখ হাসিনার জীবনরক্ষায় রচনা করেন মানবঢাল।
সেদিন মঞ্চে উপস্থিত সব নেতা গ্রেনেডের স্প্লিন্টার নিজের শরীরে ধারণ করে অক্ষত রাখেন বঙ্গবন্ধুকন্যাকে। বাঁচিয়ে রাখেন তাদের আশা-ভরসার প্রতীক শেখ হাসিনাকে। যদিও হামলার শিকার আওয়ামী লীগ সভাপতির শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। সেদিন জীবন নিয়েছেন দলের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী। কেন্দ্রীয় একাধিক নেতাসহ পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন, পঙ্গুত্ব বরণ করেন।
শেখ হাসিনার শরীরের ওপর নিজের শরীর বিছিয়ে দিয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও ঢাকার মেয়র মোহাম্মদ হানিফ অসংখ্য স্প্লিন্টার নিজের শরীরে বিঁধিয়েছেন। দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়েও সুস্থ হয়ে রাজনীতির মাঠ আর ফিরে আসা হয়নি তার।
মানবঢাল রচনা করে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবং প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীসহ অন্য নেতারা স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা নিয়ে জীবন পার করছেন। মানবঢাল একটি গৌরবের নাম। মানবঢাল এখন সম্মানের, নেতৃত্বের প্রতি আস্থা-বিশ্বাসের প্রতীক। পৃথিবীতে নেতাকে রক্ষার জন্য মানবঢাল রচনার দ্বিতীয় নজির কেউ স্মরণ করতে পারে না।
এ ঘটনার মাধ্যমে বোঝা যায়, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তার দলে কতটা জনপ্রিয়, কতটা আস্থার আর বিশ্বাসের। দলের শীর্ষসারির নেতাদের প্রাণপণ চেষ্টায় নির্মিত মানবঢালে রক্ষা পেয়েছে শেখ হাসিনার জীবন। কীভাবে নিজের জীবনের কথা না ভেবে, পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্ততির পরোয়া না করে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে নেত্রীর জীবনরক্ষায় মরিয়া হয়ে ওঠেন নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুকন্যাকে রক্ষায় মানবঢাল করে মঞ্চেই থাকেন কিছুক্ষণ। পরে পরিস্থিতি বুঝে তাকে ট্রাক থেকে নামিয়ে তার বুলেটপ্রুফ মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। ওই গাড়ি লক্ষ্য করেও গুলি ছুড়েছিল হামলাকারীরা।
মানবঢাল রচনাকারী নেতা আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নেতাকর্মীরা মানবঢাল তৈরি করে গ্রেনেড হামলা থেকে নেত্রীকে (শেখ হাসিনা) রক্ষা করেন। আমরা যখন নেত্রীর জীবনরক্ষায় মরিয়া তখন অন্যরকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন তিনি। বললেন, আমি সুধা সদন যাব না, সবাইকে দেখে তারপর যাব। ধানমণ্ডির সুধা সদনে পৌঁছানো পর্যন্ত পথে বারবার তিনি বলছিলেন, “গাড়ি থামাও, আমি যাব না, সবাইকে দেখে তারপর যাব”।’ রাস্তায় আবারও হামলা হয় কি না, সে আশঙ্কাও তাড়া করছিল বলে জানান মায়া।
আওয়ামী লীগের ডেটাবেজ টিমের এবং সংস্কৃতিবিষয়ক উপকমিটির সদস্য নুরুল আলম পাঠান মিলন বলেন, ‘রাজনীতিতে, কী তত্ত্বে কী প্রয়োগে, ব্যক্তি ম্যাটার করে। রাজনীতিতে নেতার প্রতি, নেতৃত্বের প্রতি প্রশ্নহীন আনুগত্য কর্মীদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এ দীক্ষাই একজন কর্মীকে উদ্বুদ্ধ করে নেতাকে নিরাপদ রাখতে এবং নেতার বিপন্ন জীবনকে সুরক্ষা দিতে। ২১ আগস্ট মানবঢাল তৈরি করে আমাদের বাতিঘর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার জীবনরক্ষার মাধ্যমে আমরা গৌরবের অধিকারী হয়েছি। এমন গৌরবের ভাগীদার হওয়া সৌভাগ্যের বিষয়।’
মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, শেখ হাসিনার তখনকার নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও বর্তমান সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মেজর সোয়েব, মামুন ও জাহাঙ্গীর শেখ হাসিনাকে সেদিন সুধা সদনে রেখে আসেন। ২১ আগস্ট মানবঢাল রচনা বাংলাদেশের ইতিহাসে অনন্য এক ঘটনা। সম্ভবত বিশ্বের ইতিহাসেও।
হঠাৎ করে বিএনপির নেতাকর্মীদের ধড়পাকড়, হামলা ও মামলায় নতুন করে চাপে পড়েছে দলটি। সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে। কারণ ছাত্রদলের ছয় নেতাকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়ে পুলিশ দাবি করেছে, নির্বাচনের সময় সহিংসতার জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের পরামর্শে তারা অস্ত্র সংগ্রহ করছিল।
এ ছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনকে যেভাবে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে, তাতে দলটির দায়িত্বশীল নেতারা মনে করছেন, রাজপথের কর্মসূচিতে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী তরুণ নেতাদের ওপর সরকারের আক্রমণ বাড়তে পারে। তাদের দাবি, ছাত্রদল নেতাদের তুলে নেওয়ার পর অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার দেখানো আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি দেওয়ার দাবিতে বিএনপি শনিবার সারা দেশে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায়ও মামলার মুখোমুখি হচ্ছেন নেতাকর্মীরা। এর আগে শুক্রবার ঢাকাসহ দেশের সব মহানগরে গণমিছিল কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। দলটির নেতারা দাবি করেন, ওই দিন রাতে সকালে ছাত্রদলের নিখোঁজ এক নেতাকে খুঁজতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে সংগঠনের আরও পাঁচ নেতাকে। শনিবার সকালে এ বিষয়ে দলটি বিবৃতি দেয়। এরপর রাতেই এই ছয়জনকে অস্ত্রসহ আটকের কথা জানায় পুলিশ। গতকাল তাদের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানায় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ।
এ ছাড়া শনিবার রাতে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের নিচ থেকে রবিনসহ আরও ১২ জনকে আটকের তথ্য জানায় পুলিশ।
এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল রবিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হঠাৎ করে ধরপাকড় বৃদ্ধি হয়েছে বলতে চাই না। মূলত ধরপাকড় শুরু হয়েছে গত ২৮ জুলাইয়ের পর থেকে। এরপর দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে গত শনিবার হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, জামালপুর ও নারায়ণগঞ্জে দলের ঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অতীতের মতো যৌথভাবে হামলা, মামলা শুরু করেছে।’
তবে এ ঘটনা নিয়ে তারা চিন্তিত নন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আন্দোলনের মাত্রা যতই বাড়বে, সরকারের নির্যাতন, হামলা, মামলা ততই বাড়বে। আমরা বিষয়টি আগেই আঁচ করতে পেরেছি। সেভাবেই আগামীর পরিকল্পনা করছি। কর্মসূচিতে সাধারণ জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে।’
গতকাল বিকেলে গুলশানে দলটির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের ছয় নেতাকে তুলে নেওয়া এবং অস্ত্র মামলার প্রসঙ্গে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘নির্বাচনের আগে তারা নিজেরাই কিছু পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। পুরনো কায়দায় তার দায় বিএনপির ওপর চাপাবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলছেন, সন্ত্রাস হবে, আরেকজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তিনি বলেছেন যে সন্ত্রাস করতে দেব না। সন্ত্রাসটা হলো কোথায়? আমরা কোথায় করলাম। যা কিছু সন্ত্রাস তো করছ তোমরা। বন্দুক তোমাদের হাতে, পিস্তল তোমাদের হাতে, আইন তোমাদের হাতে। রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে সন্ত্রাস করছ। এটা পুরোপুরি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস করছে।’
ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকারপ্রধানের নির্দেশে কিছুসংখ্যক অতিউৎসাহী দলবাজ পুলিশ কর্মকর্তা এহেন বেআইনি কর্মকান্ড চালানোর জন্য মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। এ ছাড়া বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে গায়েবি মামলায় বিএনপিসহ বিরোধী মতের নেতাকর্মী, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষকে সাজা দিচ্ছে। উচ্চতর আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর নিম্ন আদালতে হাজির হলে জামিন নামঞ্জুর করে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হচ্ছে। আবার জামিন লাভের পর নতুন আসামি বানিয়ে জেলগেটেই অনেককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আটক রাখা হচ্ছে, যা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, ‘হঠাৎ করে পুলিশের ধরপাকড়, হামলা ও মামলা দেওয়ার ঘটনায় নেতাকর্মীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কাকে কখন কোথা থেকে তুলে নিয়ে যাবে, সে বিষয়ে চিন্তিত নেতাকর্মীরা।’
তবে বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে সম্প্রতি নেতাকর্মীরা যেভাবে সাহসী ভূমিকা নিয়ে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে যুক্ত রয়েছেন, তা থামানো যাবে না বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
সালাম বলেন, ‘আরেকটি বিষয় নিয়ে আমরা চিন্তিত সেটা হচ্ছে ছাত্রদলের নেতাদের খালি হাতে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিদেশি অস্ত্র দিয়ে গ্রেপ্তারের ঘটনা সামনের দিনগুলোতে বাড়তে পারে। কারণ সরকার অতীতের মতো সামনের দিনগুলোতে আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে বিতর্কিত করতে অপচেষ্টা চালিয়ে যাবে। আমাদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের পাশাপাশি সারা দেশের তৃণমূলের লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। নতুন করে আরও মামলা হবে। এসব নিয়ে চিন্তা থাকলেও উদ্বিগ্ন নই আমরা।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের পুরনো মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার পাশাপাশি রাজপথে সক্রিয় তরুণ নেতাকর্মীদের কারারুদ্ধ করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনকে গ্রেপ্তার করেছে সাদাপোশাকের পুলিশ। এর আগে দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এগুলো সরকারের পুরনো কৌশল।’
এর বিপরীতে বিএনপিরও কৌশল রয়েছে জানিয়ে ওই নেতা বলেন, ‘সম্প্রতি কয়েকজন তরুণ নেতাকে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৫ বছর ধরে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের যৌথ হামলা, মামলা, নির্যাতন সহ্য করে টিকে আছি। এগুলো এখন আর ভয় পাই না। আমাদের নেতাকর্মীরাও ভয় পায় না।’
আগামী নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে আওয়ামী লীগ প্যাকেজ কৌশল গ্রহণ করেছে। এসব কৌশলে চমকও থাকতে পারে বলে ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের প্যাকেজ কৌশলের মধ্যে রয়েছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপিকে প্রতিদিন কর্মসূচি পালন করতে না দেওয়া, দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রাখা, বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি সৃষ্টি করা। শীর্ষ নেতৃত্বে সংশয় সৃষ্টি করা। সেই সঙ্গে যেকোনো মূল্যে মাঠ নিয়ন্ত্রণে বিএনপির সব চেষ্টা সামাল দেওয়া।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতে প্রতিরোধের মুখে বিএনপির অনেকটাই উত্তাপহীন হয়ে পড়ে। তাদের সেদিনের শক্তি দেখে মূলত আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কৌশল থেকে সরে এসেছে। বিএনপির কর্মসূচির পরে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি পালন থেকে বিরত থাকে প্রায় তিন সপ্তাহ।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত এক দিনও বিএনপিকে কর্মসূচির বাইরে রাখা গেলে, দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রাখা গেলে সেটাও এক ধরনের উপকারে আসবে। তিনি বলেন, নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের এবারের লক্ষ্য বিএনপির ভেতরের নেতাকর্মীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি সৃষ্টি করা। শীর্ষ নেতৃত্বে সংশয় সৃষ্টি করা। সেই সঙ্গে মাঠ নিয়ন্ত্রণে বিএনপির সব চেষ্টা নস্যাৎ করে দেওয়া।
ক্ষমতাসীন দলটির নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি বাধার মুখে পড়ার পরে দলটির পরবর্তী কর্মসূচি অনেকটা গতিহীন হয়ে গেছে। আর এটা সক্ষম হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কর্মকৌশলের কারণে। ফলে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কৌশল থেকে বিরতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আবার শোকের মাসও পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে থাকতে না চাওয়ার কারণ ছিল। শোকের মাস উপলক্ষে কিছু কর্মসূচি থাকলেও সেগুলোতে তেমন ‘অ্যাকশনমুডে’ থাকছে না আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আসছে সেপ্টেম্বর মাস থেকে আবারও পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে থাকার কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। তারা বলেন, এটা মূলত আওয়ামী লীগের ওই নীতিরই অংশ ‘প্রয়োজনে কঠোর, প্রয়োজনে ছাড়’।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ১ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ মাঠে নামছে। ওই দিন প্রায় পাঁচ লাখ লোকের জনসমাবেশ ঘটাতে চায় তারা। এর মধ্য দিয়ে দেশে-বিদেশে জানান দিতে চায় আওয়ামী লীগ সরকারের যেমন শক্ত অবস্থান রয়েছে, তেমনি মাঠে ও জনগণের ভেতরেও জনপ্রিয়তায় এগিয়ে আছে ক্ষমতাসীনরা।
শোকের মাসের শেষদিনে ছাত্রলীগের আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে মাসব্যাপী শোক দিবসের কর্মসূচির ইতি টানা হয়। কিন্তু এবারই প্রথম তার ব্যত্যয় ঘটছে। ছাত্রলীগের এ অনুষ্ঠান এর আগে কখনো সেপ্টেম্বর মাসে আয়োজন করা হয়নি। বরাবরই শোকের মাসের শেষদিন এ কর্মসূচি পালন করে আসছিল ছাত্রলীগ। কারণ, দেখিয়েছে শুক্রবার হওয়ায় কর্মসূচির তারিখ পাল্টেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা কখনোই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির গ্রহণ করি না। আওয়ামী লীগ মনেও করে না এগুলো পাল্টাপাল্টি কিছু একটা।’
সভাপতিমন্ডলীর অন্য সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা আগেও বলেছি, এখনো বলছি, আবারও বলছি, বিএনপির কর্মসূচির দিন এ দেশের মানুষ ভয়ে থাকে কখন কী ঘটে? নিরাপত্তাহীনতায় থাকে। আমরা সরকারে আছি। জনগণের সেই ভয় কাটিয়ে জনগণকে ভয়হীন করা, নিরাপদে রাখতে শান্তি সমাবেশ করি।’
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপিকে ভয়ডরহীনভাবে মাঠে থাকতে দেওয়া যাবে না। তাতে দলটির নেতাকর্মীরা প্রচুর আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে। ফলে নির্বাচন পর্যন্ত মাঠ ফাঁকা রাখা হবে না। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, বিএনপির কর্মসূচিতে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে।
মাঠপর্যায়ের কর্মসূচিতে সব সময়ই থাকেন এমন একজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঢাকার প্রবেশমুখে বিএনপি প্রতিরোধের মুখে পড়েছে বলেই সরকারের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন অল্প কিছুদিনের জন্য গতিহারা হয়। কর্মসূচি নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় পড়ে যায় বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। এটা আওয়ামী লীগের জন্য সুফল বয়ে এনেছে।
ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক আরোপের ঘোষণার পরপরই দেশের বাজারে পণ্যটির দাম বাড়তে শুরু করেছে। এক রাতের ব্যবধানে বাজারে কেজিপ্রতি অন্তত ২০ টাকা বেড়ে গেছে। কিন্তু শুল্কযুক্ত পেঁয়াজ এখনো আমদানি হয়নি। এর জন্য বাজার সিন্ডিকেটের প্রভাবকে দায়ী করেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
খবর নিয়ে জানা যায়, এতদিন ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে কোনো শুল্ক দিতে হতো না বাংলাদেশকে। গতকাল হঠাৎ পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় দেশটি। ফলে এক রাতের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ১৫-২০ টাকা বেড়ে গেছে। সব থেকে বেশি দাম বেড়েছে ভারতীয় পেঁয়াজের। বাজারে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকায়। যা একদিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৫৫-৬০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজের মধ্যে ফরিদপুরের পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকায় ও পাবনার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকায়।
এদিকে আমদানিকারকরা জানান, গতকাল রবিবার পর্যন্ত শুল্কযুক্ত পেঁয়াজ দেশের বাজারে প্রবেশ করেনি। তবে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণায় পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
জানতে চাইলে হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক মোবারক হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভারত থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ ভাগ শুল্ক আরোপের নতুন সিদ্ধান্তটি কার্যকর হয়েছে। এর ফলে কেজিপ্রতি কত টাকা করে শুল্ক পড়ছে সেটি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। পেঁয়াজের কেজিপ্রতি শুল্ক কাস্টমস ৫ টাকা নেবে নাকি ৬ টাকা নেবে নাকি ৯ টাকা নেবে এ বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় কাস্টমসের সঙ্গে রপ্তানিকারকদের দেনদরবার চলছে। তবে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য ভারতের কাস্টমসে আসেনি। এ সংক্রান্ত চিঠি আসার কথা। এটি আসার পরই বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু হবে। বিকেল ৪টা নাগাদ যদি এ সংক্রান্ত মেসেজ ভারতীয় কাস্টমসে আসে তবেই বিকেল থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু হতে পারে। আর যদি এর মধ্যে না আসে আরও দেরি হয় তাহলে রপ্তানি শুরু হতে দেরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন সিদ্ধান্তে এখনো পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়নি।
শুল্ক আরোপের খবরে দেশের বাজারে পেঁয়াজের অস্বাভবিক মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে শ্যামবাজার পেঁয়াজ আমদানিকারক ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি মো. হাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশের বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে অনেক। সেই অনুযায়ী দেশটিতে পেঁয়াজের দাম বাড়লে আমাদের দেশের বাজারে এর একটা প্রভাব পড়ে। তবে গতকাল দেশটির ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের খবরে দেশের বাজারে হুট করে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। প্রতি মণ পেঁয়াজে ৬শ টাকা বেড়েছে। গতকাল পর্যন্ত একমণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৪শ টাকায়। তবে এটি বেশিদিন স্থায়ী হবে না। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে এটি সমন্বয় হয়ে আসবে।
পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের ভাষ্য অনুযায়ী, সরবরাহ কম থাকায় বাড়তি দামে বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। মূলত শনিবার রাত থেকে এই পণ্যটির দাম বেড়েছে। পাল্লাপ্রতি ২০-৩০ টাকা ও কেজি প্রতি ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। এর মধ্যে দেশি পেঁয়াজের পাল্লা ২০ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজের পাল্লায় ৪০ টাকা বেড়েছে।
কারওয়ান বাজারের নূর মোহাম্মদ নামের এক পাইকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রতিদিন ১০০ কেজির বেশি পেঁয়াজের দরকার হয়। তার জোগান আসে শ্যামবাজার থেকে। বর্তমানে বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হয় বলে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। গতকাল মণপ্রতি ৬০০ টাকা বাড়তি দামে পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে। যা এর আগের দিনেও প্রতি মণ পেঁয়াজ কিনেছি ২ হাজার ৪শ টাকায়।
একই কারণে চট্টগ্রামের বাজারেও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। শনিবার যেখানে প্রতি কেজি ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে, একদিনের ব্যবধানে এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। আর তা খুচরা ব্যবসায়ীরা ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি করছে।
কেবল শুল্ক আরোপের খবরে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ে অরাজকতার বিষয় কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের স্বভাব এমনই। তাদের অতিমুনফা লোভের জন্য দেশের মানুষের কষ্ট হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার খবরে তাদের স্টকের ভোগ্যপণ্যের সংকট দেখা দিতে শুরু করে। অথচ, যখন পণ্যের দাম কমে তখন দাম কমানো বিষয় তাদের খবর থাকে না। তাদের সে সময়কার অজুহাত থাকে, বাড়তি দামে পণ্য কেনায় কম দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।
মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের হটাতে দেশের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করার সরকারের দায়িত্ব থাকলেও তারা তা করছে না। এর জন্য জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের বাজারে যেসব পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে তা ব্যবহার কমিয়ে আনলে অসাধু ব্যবসায়ীদের থামানো সম্ভব বলে ভোক্তাদের এই নেতা মনে করেন।
যাতায়াত সুবিধা ভালো থাকায় মসলাসহ কয়েক ধরনের কাঁচা সবজি ভারত থেকে আমদানি করে থাকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। আমদানি করা পণ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম পেঁয়াজ। ফলে প্রতি বছরই আমদানি করা পেঁয়াজের সিংহভাগ ভারত থেকে আসে। এর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি করা হয় ৭ লাখ ৪৩ হাজার টন পেঁয়াজ। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয় ৬ লাখ ৬৫ হাজার টন। এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ লাখ ৫৩ হাজার টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ লাখ ৭১ হাজার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১০ লাখ ৭ হাজার ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি করা হয় ৮ লাখ ৬৩ হাজার টন পেঁয়াজ।
বর্তমানে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৮-৩০ লাখ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ লাখ ৪১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করা হয়। এতে উৎপাদন হয় ৩৪ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ। তবে সংগ্রহ থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছতে বিভিন্ন ধাপে পণ্যটির ২৫-৩০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। যার প্রভাবে দেশের বাজারে প্রায় তিনগুণ হারে পণ্যটির দাম বাড়ে। বাজার স্থিতিশীল করতে তাই গত ৫ জুন থেকে কৃষি মন্ত্রণালয় আবার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস দেশ রূপান্তরকে বলেন, চাহিদার থেকে আমাদের উৎপাদন অনেক বেশি হচ্ছে। তবে প্রাকৃতিক দিক থেকে একটু বেশি বৃষ্টি হলেই আমাদের দেশের পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। যেহেতু ছোট দেশ, সামান্য ক্ষতি হলে অনেক বেশি সমস্যায় পড়তে হয় আমাদের। কমবেশি এই সমস্যা আমাদের থাকবেই।
পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে কোনো বাধা নেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, যেহেতু ভারতের বাজারে এখন পেঁয়াজের দাম বেশি। তার প্রভাবে আমাদের দেশেও এই পণ্যটির দাম বেড়েছে। সেই ক্ষেত্রে যে কেউ চাইলে অন্য যেকোনো দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিতে পারবেন। সেই ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকবে না।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আইন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি বলছে, আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে। সরকারের এমন নেতিবাচক সিদ্ধান্তের পর এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি। তবে এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে যোগ হতে পারে বলে জানা গেছে।
৫৩ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও দলীয় নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। বিদেশে নেওয়া ছাড়া তার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে তার ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। এতে মতামত দিতে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় আইন মন্ত্রণালয় এতে মতামত দেয়। এ বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেছেন, তার সাময়িক মুক্তির আদেশটা বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে নেওয়া হলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বাসায় চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না এমন দুটো শর্ত সাপেক্ষে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে দন্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। দরখাস্তটা নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে আটবার দন্ড স্থগিত করা হয়েছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো সুযোগ আইনে থাকে না। আমরা ৪০১ ধারার উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ ব্যাখ্যা করে মতামত পাঠিয়েছি। আমাদের মতামত হলো, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেটা অতীত এবং মীমাংসিত। এটা আর খোলার কোনো উপায় নেই।’
এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) সাজা স্থগিত রেখে যে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেটা বাতিল করে তারপর পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই উপমহাদেশে ৪০১ ধারার ক্ষমতা যখন প্রয়োগ করে, তখন এটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলে সিদ্ধান্তের নজির আছে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন যে আদেশটা আছে, সেটা যদি বাতিল করা হয়, বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) যদি আবার কারাগারে নেওয়া হয়, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু এ অবস্থায় আদালতে যেতে পারবেন না।’ খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের বিষয়টি বাতিল করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা অমানবিক হবে, বাতিল করব না।’
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এক বার্তায় বলেন, ‘আজকের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, দেশে আইনের শাসন নেই। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক ভয়ংকর তামাশা করা হচ্ছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, নির্বাহী বিভাগ চাইলেই কাউকে মুক্তি দিতে পারে।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় বিএনপি কী এখন ভাবছে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে।’
আর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর নীলনকশার অংশ। মানবতাবিরোধী ও সরকারের বর্বর ইচ্ছা পূরণের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।’
দলটির নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা না করে, রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করতে না পারলে বিএনপিপ্রধানের মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমেই এই ইস্যুর সুরাহা করতে চায় দলটি।
কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। কিন্তু দেশে চিকিৎসা গ্রহণের শর্তারোপ করা হলে তা যে চিকিৎসার বিবেচনায় না করে রাজনীতির বিবেচনায় করা হবে, সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি সাধারণ মানুষের আছে।’
অসুস্থতার কারণে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের মার্চে করোনার সময় টানা দুই বছর কারাভোগের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরেছিলেন খালেদা জিয়া। পরে এ পর্যন্ত তার মুক্তির মেয়াদ আটবার বাড়িয়েছে সরকার।
এরই মধ্যে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ দিতে পরিবারের পক্ষে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এ বিষয়ে আইনি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি পাঠায়।
বিএনপিপ্রধানকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি সরকার ইতিবাচকভাবে দেখতে পারে’। কিন্তু সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘বিদেশে যাওয়ার আবেদন করতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত গিয়ে করতে হবে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের পর সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় এবারও ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না। গত শনিবার এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ শঙ্কাই প্রকাশ করেছিলেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা আছে, যেকোনো মূল্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকার মরিয়া। সে কারণে হয়তো খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি ঝুঁলিয়ে রাখতে চাইছে এমনটাই মনে করছে সরকারবিরোধীরা। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিলেই সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলেও বিরোধী নেতাদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। তবে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথাই নেতাদের বলে রেখেছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির হাইকমান্ড মনে করছেন, এ অবস্থায় চলমান এক দফার আন্দোলনে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়টি থাকলেও সেটাকে আরও জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে; যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নেয়।
জানা গেছে, এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটি। আজ সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক রয়েছে। সূত্র বলছে, জোটগত ছাড়াও দলীয়ভাবেও কর্মসূচি আসতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক চিকিৎসক জানান, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তার কেবিনে এক্স-রে মেশিন নেওয়া হয়েছিল গতকাল ভোরে। শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে না এলে সিসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ ছিল। দুপুরে তার ইসিজি ও ইকো ডায়াগ্রাম করানো হয়েছে। ফুসফুসের পানি অপসারণের জন্য তার ডান পাশে যে ক্যাথেটার লাগানো ছিল, সেটা আপাতত খুলে ফেলা হয়েছে।
লিভার জটিলতা ছাড়াও ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ফুসফুস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। গত ৯ আগস্ট ফিরোজায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দলীয় মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সেটআপে কেবিনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে।
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘ওনার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সে জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানো দরকার।’
হতাশায় শেষ খালেদার অপেক্ষা
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
সাড়ে ৩ বছরে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স
দেশের বিদেশি মুদ্রা আয়ের অন্যতম হাতিয়ার প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে। সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধপথে ও ব্যাংকের মাধ্যমে মাত্র ১৩৪ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। গত সাড়ে তিন বছরে এটি সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স। ৪১ মাস আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এর চেয়ে কম ১০৯ কোটি ডলার সমপরিমাণের রেমিট্যান্স এসেছিল। রেমিট্যান্স-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দামের ব্যবধান বেশি হলে হুন্ডিতে লেনদেন বেড়ে যায়। আর যখন হুন্ডির চাহিদা বাড়ে তখন রেমিট্যান্স কমে যায়। গত মাসে ব্যাংকের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দাম ৬ থেকে ৭ টাকা বেশি ছিল। তাই বেশি লাভের আশায় বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজার ছাড়াল
এ বছর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে ডেঙ্গু। গতকাল রবিবার ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজারের কোটা ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) সারা দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬ জনে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৮৮২ জন।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
অকাজের ৩৭০০ কোটির সেতু
সেতু হয়। কিন্তু সড়ক হয় না। সেতু করার জন্য নানান প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু সেসব সেতু করেই দায়সারা বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়। ভোগান্তি সাধারণ মানুষের। আবার যতগুলো সেতু করার কথা ততগুলো না করেও প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করার প্রতিবেদনও দেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সারা দেশের গ্রামের রাস্তাগুলোতে সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে। প্রকল্পের এসব অনিয়ম উঠে এসেছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবি আ.লীগ নেতার
আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার। গত শনিবার রাতে তার ফেসবুকে এ দাবি জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন তিনি।
মুহূর্তেই স্ট্যাটাসটি ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিএনপির অসংখ্য নেতা, কর্মী-সমর্থক তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রশংসা করেন। অন্যদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিন্দা জানিয়ে দলীয় সব পদ থেকে তার বহিষ্কারের দাবি জানান।
আবদুল মোতালেব হাওলাদার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘রাজনৈতিক কারণে আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়া হউক।’
স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন অধরাই
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
ফুটপাত থেকে মদের বার সবখানে চাঁদাবাজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের কমিটি পার করেছে পাঁচ বছরের বেশি সময়। মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। কিছু নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে। সর্বশেষ মদের বার ভাঙচুর ও লুট করে আবারও আলোচনায় এ কমিটির নেতাকর্মীরা।
নতুন কমিটি না হওয়ায় নেতারা বেপরোয়া আচরণের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছেন বলে মনে করেন সাধারণ কর্মীরা। তারা বলেন, সংগঠনের কর্মকাণ্ডও স্থবির হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মো. রিপন মিয়াকে সভাপতি ও মাহমুদুল হক জুয়েল মোড়লকে সাধারণ সম্পাদক করে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের জন্য আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে গত বছর ১২ জুন ৩২১ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য।
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী, দেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১১৯। এ তালিকায় রয়েছে যারা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মাজার, ফুটপাত, সিঁড়ি, ওভারব্রিজের নিচে, লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাট, মার্কেটের বারান্দায় দিন কাটান। আর বস্তিতে বসবাস করছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। তারা মূলত শহর ও উপশহর এলাকায় টিনের ঘর, সেমিপাকা ঘর বা ঘিঞ্জি পাকা ঘরে বাস করে। তবে বস্তিবাসী কারা সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৬ সালে সরকার আবাসন নীতিমালা করেছে। আবাসন উন্নয়ন তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আবাসন সংকট নিরসন করতে হলে সরকারকে আবাসন তহবিল করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বস্তিবাসী, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কারা তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। না হলে বোঝা যাবে না কত মানুষ বস্তিতে থাকে।’
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে আবাসন সংকট কাটছে না। স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আবাসন।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ৯ লাখ গৃহহীন মানুষকে চিহ্নিত করে। ইতিমধ্যে আট লাখ মানুষের গৃহের ব্যবস্থা করেছে; প্রায় ৪০ লাখ মানুষের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বাকিদের জন্যও শেখ হাসিনা ব্যবস্থা করবেন। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও আবাসনের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা তার সৈনিক হিসেবে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জানা যায়, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার সবার জন্য আবাসন। অঙ্গীকার পূরণে সরকার নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সারা দেশে ৩০টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, নোয়াখালী, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, শরীয়তপুর, নড়াইল, খুলনা, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব প্রকল্পে ৬ হাজার ৪৩২টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৩০টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে। শেরপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, হবিগঞ্জ, সিলেট, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ১৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৩৫টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় রাজউক পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় আবাসন প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলো উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। পূর্বাচল, ঝিলমিল ও উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনেও বিভিন্ন সংস্থা আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন শহরে বসবাসরত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্পদশালী ব্যক্তিরা। যাদের অনেক ফ্ল্যাট আছে তারা আরও ফ্ল্যাট কিনছেন। কিন্তু বাস্তুহারা, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত সরকারি এসব আবাসনের সুবিধা পাচ্ছেন না। অল্প দামে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার আবাসন প্রকল্প তৈরি করে যাদের নামে বরাদ্দ দিচ্ছে তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত।
জাতিসংঘ ১৯৮৫ সালে বিশ্ব বসতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশে^ অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার এ দিবসটি পালিত হয়।
বিশ্বজুড়ে বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউ এয়ারের তথ্য অনুযায়ী আজ সোমবার (০২ অক্টোবর) ঢাকার বাতাসের মান ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’। এদিন সকাল ১০টার দিকে ১২৯ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে ঢাকা।
এসময় ১৮৩ স্কোর নিয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকার প্রথম স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর। ১৬২ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা। ১৬০ স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি। ১৫৬ স্কোর নিয়ে চতুর্থ ভারতের আরেক শহর করাচি। ১৫৩ স্কোর নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে ইতালির মিলানো।
এ ছাড়া একইসময়ে একিউআই স্কোর ১১৭ স্কোর নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে চীনের উহান। ১১৩ স্কোর নিয়ে অষ্টম স্থানে রয়েছে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর। ১১২ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। ১০৯ স্কোর নিয়ে দশম স্থানে রয়েছে সৌদি আরবের রিয়াদ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের এ তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই স্কোর একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে কি না, তা জানায়।
একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকলে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়।
অপেক্ষা আর মাত্র ৩ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই।
শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে। কিং খানের ‘জাওয়ান’ কাঁপাচ্ছে পর্দা, কাটতি বাড়ছে বক্স অফিসে; বিশ্বকাপে আইসিসির পকেট ভরবে তো?
প্রস্তুতি বলছে, ভরবে। উইকেটে হবে রান উৎসব, লড়াই হবে ধুন্ধুমার। তাতেই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে এক ব্লকবাস্টার মেগা হিট।
মাস তিনেক আগে, বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচগুলো যে ১০ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সেই ভেন্যুগুলোর কিউরেটরদের সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের একটাই মন্ত্র, রান চাই।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলেছে সেই ম্যাচগুলো যদিও বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হয়নি তবে সেই সব ম্যাচেও রানের বন্যা বয়েছে।
প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার করা ২৭৬ রান অনায়াসে তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ঠেঙিয়ে তুলেছেন ৩৯৯ রান। তিন নম্বর ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৫২ রান, যা তাড়া করে ভারতও গিয়েছিল ২৮৬ অবধি।
উদ্বোধনী ম্যাচ হবে গুজরাতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। ম্যাচে শুভমান গিল করেন সেঞ্চুরি, ভারত করে ৪ উইকেটে ২৩৪ রান আর জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৬৬ রানে।
বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের ধরন বুঝে ব্যাট করতে পারলে ৫০ ওভারে এখানে রানবন্যা হবে। বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুই দল এখানে মুখোমুখি হয়েছে বহুবার, পোশাকের রঙ কখনো রঙিন কিংবা কখনো সাদা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কমেনি। এই মাঠে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রান করে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে সবশেষ ম্যাচে।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠে সবশেষ মৌসুমে ধোনির ‘ইয়েলো আর্মি’ ৮ ম্যাচ খেলে ২০০ রানের ওপরে করেছে দুইবার, একবার জিতেছে অন্যবার হেরেছে। তবে দুই ইনিংসেই ২০০’র বেশি রান হয়েছে দুটো ম্যাচেই। অর্থাৎ চাইলে চেন্নাইকেও ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত করা সম্ভব।
বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর টানা তিন ওয়ানডে জিতে সিরিজ তো নিশ্চিত করেছেই, টানা তিন ম্যাচে ৩০০’র ওপর রান করেছে। চতুর্থ ওয়ানডেতে তো ৪০০ পার করেছে প্রোটিয়ারা। ব্যাটিং উইকেটে তারাও যে কোনো প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। হেনরিক ক্লাসেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ বলে খেলেছেন ১৭৪ রানের ইনিংস। বিধ্বংসী রূপে ফিরছেন ডেভিড মিলারও।
প্রোটিয়ারা প্রথম ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। সেখানে অবশ্য সবশেষ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচেও খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৯ রানে। দিল্লির মাঠটা হয়তো খানিকটা স্পিনারদের দিকেই ঝুঁকবে, তবে অন্য মাঠগুলোতে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবে মেতে উঠতে দেখার সম্ভাবনা জোরালো। তাই অনেক সাবেক ক্রিকেটারই প্রোটিয়াদের দেখছেন শেষ চারে।
বিশ্বকাপের আগে ক্লাসেন ছাড়াও ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস খেলেছেন ১৮২ রানের ইনিংস, দারুণ ছন্দে ইংল্যান্ডের ডাভিড মালানও। তবে সেরা ছন্দে নিঃসন্দেহে শুভমান গিল। সবশেষ ৫ ইনিংসে দুটো শতরান আর একটা হাফসেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলও আছেন দারুণ ছন্দে। দুটো হাফসেঞ্চুরি আর একটা সেঞ্চুরি সবশেষ ৫ ইনিংসে। হায়দ্রাবাদে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের ৩৪৫ রান কিউইরা তাড়া করেছে ৩৮ বল হাতে রেখে।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, এই বারের বিশ্বকাপে রানবন্যায় বোলারদের জন্য কাজটা হবে কঠিন। দেশ রূপান্তরকে আশরাফুল বলেন, ‘আমাদের পেসাররা গত এক দেড় বছর ধরে খুবই ভালো করছে। তবে যেহেতু ভারতের মাটিতে খেলা, আমরা দেখেছি যে সাড়ে ৩০০’র বেশি রান হচ্ছে প্রতিটা ম্যাচে। কেউ যদি ভালো না করে, তাকে মনে রাখতে হবে যে টুর্নামেন্টে পরের ম্যাচে ফিরে আসতে হবে। একজনের দিন খারাপ যেতেই পারে, কোনো ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান উঠেই যেতে পারে। ৯টা ম্যাচের ভেতর ৪-৫টা ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান হতে পারে। তাই বোলারদের ফিরে আসার মানসিকতা থাকতে হবে।’
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বলেছেন যে দেড় মাসের আসরে প্রস্তুত থাকতে হবে যে কোনো কিছুর জন্যই, ‘দেড় মাসের আসর, ৯টা ম্যাচ এই সময়ে খেলতে হবে বা তারও বেশি। অনেক উত্থান-পতন হবে। যে কোনো কিছুর জন্যই তৈরি থাকতে হবে।’
রান উৎসবের বিশ্বকাপ যে হতে যাচ্ছে, তার সব রসদই মজুদ। মাঠগুলোকে করা হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ, বিশ্বকাপে আসার আগে সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরাও আছেন ছন্দে। শুধু প্রশ্ন এটাই, রান উৎসবের এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রান করবেন কে? সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিংয়ের ছবিটা যে মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।