
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মো. ইদ্রিস মোল্লার মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করছে বিএনপি। দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরীকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্য দুই সদস্য হলেন দলের মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান ও আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। কমিটি ইতিমধ্যে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছে। আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। এরপর বিষয়টি দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।
বিএনপির দপ্তর সংশ্লিষ্ট নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এত দিন বিবৃতির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো হলেও এই প্রথম তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। রাজধানী ঢাকার প্রবেশপথে মাতুয়াইলে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন ইদ্রিস মোল্লা। রাতেই তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। আদালতে ইদ্রিস মোল্লার পক্ষে জামিন চেয়ে আবেদন করা হলেও আদালত তার জামিন দেয়নি। দলের নেতার মৃত্যুর পর দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ, গ্রেপ্তার, জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানো, অতঃপর বন্দি অবস্থায় মৃত্যুর ঘটনাকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয় বিএনপি। স্থায়ী কমিটির সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে গ্রেপ্তার থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত সব ঘটনা তুলে আনার জন্য কমিটি গঠন করা হয়। পাশাপাশি অন্য যেসব নেতা কারাগারে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন, তাদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার উদ্যোগ নিয়েছে দলটি।
বিএনপি গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও দলটির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী গতকাল সোমবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৮ আগস্ট দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ স্বাক্ষরিত চিঠি পাই। আমরা ইদ্রিস মোল্লার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। পরিবারের পাশাপাশি আশপাশের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছি। গ্রেপ্তার থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত সার্বিক বিষয় জানার চেষ্টা করেছি। আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে রিপোর্ট লিখিত আকারে দপ্তরে জমা দেব।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যতদূর জেনেছি, গ্রেপ্তারের পর থানায় ইদ্রিস মোল্লার ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। অসুস্থ হওয়ার পর চিকিৎসা না দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সভায় বিস্তারিত আলোচনার পর এ বিষয়ে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’
নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, ‘আমরা তদন্ত করলেও ঢাকার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, দেশীয় মানবাধিকার সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে নিজেরা এ-সংক্রান্ত তালিকা তৈরি করে। বিভিন্ন সময়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে, কিংবা বিবৃতির মাধ্যমে তা প্রকাশ করে গণমাধ্যমের সামনে।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘ইদ্রিস মোল্লার পর আবুল বাসার নামে আরেকজন কারাবন্দি নেতার মৃত্যু হয়েছে গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। বাসার মালিবাগ ১৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি যুগ্ম সম্পাদক ও মালিবাগ পশ্চিম ইউনিট বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।’
ইদ্রিস মোল্লার মৃত্যুর বিষয়ে তার বড় ভাই আক্কাস মোল্লা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইদ্রিস মোল্লার দুই ছেলে। বড় ছেলে এবার এসএসসি পাস করেছে। কলেজে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল। এরই মধ্যে নাবালক ছেলের বাবার মৃত্যুর ঘটনা পুরো পরিবারকে দুর্ভোগের মধ্যে নিপতিত করেছে। সংসার চালানোর সামর্থ্য তাদের নেই। শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে অবস্থান নেওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা করে কারাগারে নেওয়া হয়। অথচ তার নামে কোনো মামলা ছিল না।’
ইদ্রিস মোল্লার মৃত্যু ‘অস্বাভাবিক’ দাবি করে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিবৃতিতে তিনি অভিযোগ করে বলেছিলেন, ‘চিকিৎসায় কারা কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। সরকারি নির্যাতন ও কারা কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে কারাগারে বিএনপির নেতা-কর্মীরা অসুস্থ হচ্ছেন এবং অহরহ কারাগারে মারা যাচ্ছেন। কারাগারে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মৃত্যুর জন্য বর্তমান সরকারই দায়ী। বর্তমানে বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে বলেই কারাগারের ভেতর বিএনপির নেতা-কর্মীদের মৃত্যু হলেও কারা কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহির আওতায় আনা হয় না।’
বিভিন্ন সময়ে কারাগারে বিএনপির যেসব নেতাকর্মী মারা গেছেন : ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ শামীম আরজু। এরপর থেকে তিনি কারাবন্দি ছিলেন। বিএনপির পক্ষ থেকে তখন অভিযোগ করে বলা হয়েছিল কারাভ্যন্তরে আরজুর মৃত্যু স্বাভাবিক নয়, বরং এটি একটি হত্যা। এ ছাড়া ২০১৮ সালে জাকির হোসেন মিলন, ২০১৫ সালে মতিঝিল থানা বিএনপির নেতা মো. মোসলেহ উদ্দিন, ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে মিরসরাই পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক ৬২ বছর বয়সী ফকির আহমেদ, ২০১৫ সালের মে মাসে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথম মারা যান শ্রমিক দল নেতা বি এম বাকির হোসেন।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অধীন ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) উৎপাদিত বিটুমিনের চাহিদা অনেক বেশি থাকায় সিন্ডিকেটের বাইরে গিয়ে কিনতে পারা কঠিন হয়ে গেছে। মানসম্মত এ বিটুমিনের ব্যবসায় সিন্ডিকেটের এ দাপটের চিত্র উঠে এসেছে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ও দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বিপিসি পরিচালক (মার্কেটিং) অনুপম বড়ুয়া এবং প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদের খালাতো ভাই মোহাম্মদ ইউসুফ ওরফে ইউসুফ আলী এ সিন্ডিকেটের অন্যতম নিয়ন্ত্রক। এর বাইরে আরও অন্তত চারজন রয়েছেন, যারা আলাদা কিংবা কখনো এ সিন্ডিকেটের সঙ্গে মিলে বিটুমিন কারসাজি করেন। তারা হলেন চট্টগ্রামের মোহাম্মদ আলী লিটন, মোহাম্মদ কামরুল, মোহাম্মদ কামাল হোসেন এবং মোহাম্মদ পারভেজ।
এসব বিষয়ে বিপিসির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদের সঙ্গে কথা হয় দেশ রূপান্তরের। ইউসুফকে নিজের খালাতো ভাই স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘দুই বছর আগে তার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়ার পর তাকে সতর্ক করেছি। এরপরও আমার নাম ভাঙিয়ে ব্যবসা করার প্রমাণ মিললে ব্যবস্থা নেব।’
পরিচালক অনুপম বড়ুয়ার বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, তার বিষয়ে তদন্ত চলছে। তাই এখনই কোনো মন্তব্য করার সুযোগ নেই। তিন মাসেও তদন্তকাজ শেষ না হওয়ার বিষয়ে তার মন্তব্য এটা সময়সাপেক্ষ। বাংলাদেশে কোনো তদন্তই তো আলোর মুখ দেখে না। তিনি বলেন, ‘বিটুমিন নিয়ে অনেক কথা শোনা যায়। এতে বিপিসির ইমেজ নষ্ট হয়। কিন্তু এর উৎপাদন বন্ধ হলেও বিপিসির কোনো ক্ষতি নেই।’
সূত্রমতে, বছর দেড়েক আগে বিপিসির পরিচালক হিসেবে যোগ দেন অনুপম বড়ুয়া। এর কিছুদিন পর থেকেই তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ আসতে থাকে। সরকারি বিটুমিন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ঠিকাদারদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আদায়ের অভিযোগ এনে ভুক্তভোগীরা তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে।
গত ১৩ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়ে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগকে বিষয়টি অবহিত করে। এরপর অনুপম বড়ুয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও জ্বালানি বিভাগকে অবহিত করার জন্য ৩০ এপ্রিল বিপিসির চেয়ারম্যানকে চিঠি দেওয়া হয়।
জ্বালানি বিভাগের উপসচিব একেএম মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই চিঠি পাওয়ার পর বিষয়টি তদন্ত করতে বিপিসির পরিচালক (অর্থ) কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হককে দায়িত্ব দেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান। এ বিষয়ে মোজাম্মেল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করে বিপিসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
অন্যদিকে অনুপম বড়ুয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে আমার বক্তব্য দিয়েছি। এর বাইরে কোনো মন্তব্য নেই।’
যার বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং যিনি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন তারা দুজনই সরকারের যুগ্ম সচিব। তিন মাস পরও তদন্ত প্রতিবেদন না দেওয়ায় এ নিয়ে নানারকম প্রশ্নও উঠেছে।
সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রতি বছর দেশে বিটুমিনের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৮ থেকে ৯ লাখ টন। ইআরএলের বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা ৭০ হাজার টন। কিন্তু গড়ে উৎপাদন হয় ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টন। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, যমুনা অয়েল, এশিয়াটিক স্ট্যান্ডার্ড অয়েল ও ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ব্লেন্ডার্স লিমিটেডের মাধ্যমে এ বিটুমিন বিক্রি করে ইআরএল।
অভিযোগ রয়েছে, অনেক সময় নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে কারসাজির মাধ্যমে সরকারি বিটুমিন বরাদ্দ নেয়। পরে তার সঙ্গে নিম্নমানের আমদানিকৃত বিটুমিন মিশিয়ে বেশি দামে বিক্রি করে। অনেকে আবার সংযুক্ত আরব আমিরাত, দুবাই থেকে উন্নত মানের বিটুমিন আমদানির কথা বলে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তবে বাস্তবে সেখানে বিটুমিন কারখানা নেই।
সরকারি বিটুমিন কিনতে সরকারের যে দপ্তরের কাজ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে সেই কার্যালয়ের কার্যাদেশসহ অন্যান্য কাগজপত্র জমা দিয়ে আবেদন করতে হয়। যাচাই-বাছাই শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত যেকোনো বিতরণ কোম্পানির নামে পে-অর্ডারের মাধ্যমে বিটুমিনের দাম পরিশোধ করতে হয়। সব প্রক্রিয়া শেষে সিরিয়াল অনুযায়ী বিটুমিন সরবরাহ করার কথা থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত লেগে যায়। এজন্য অনেকেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাড়তি টাকা দিয়ে বিটুমিন কেনেন। কয়েকজন মধ্যস্বত্বভোগী, বিপিসি ও এর অধীন প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মিলেমিশে বাড়তি টাকার ভাগ নেন।
ঠিক কী পরিমাণ অবৈধ অর্থ লেনদেন হয় তার সুনির্দিষ্ট চিত্র পাওয়া না গেলেও বিভিন্ন সূত্রে কথা বলে যে ধারণা মিলেছে, তাতে এর পরিমাণ বছরে গড়ে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকা।
জ্বালানি বিভাগের একাধিক সূত্রমতে, বিপিসি এবং এর অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্য হিসেবে ইউসুফকে দেখা যায়। সামনের দিকে পরিবারের জন্য নির্ধারিত সারিতেই তার বসার ব্যবস্থা থাকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন, দুই বছর আগে ইউসুফকে সতর্ক করেছেন বলে চেয়ারম্যানের যে দাবি সেটি যদি সত্যি হয় তাহলে এরপরও তিনি কীভাবে এ অপকর্ম করে যাচ্ছেন? এর পেছনে রহস্য থাকতে পারে বলে ধারণা তাদের।
সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে বিটুমিন কেনার সিরিয়াল দ্রুত পাইয়ে দিতে ইউসুফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘সিরিয়াল পেতে সমস্যা হবে না। তবে যমুনা থেকে নেওয়া যাবে না। কারণ ওরা একটা ফরম্যাটে চলে গেছে। যদি পদ্মা থেকে মাল নিতে চান তাহলে এমডির সঙ্গে কথা বলব। ঢাকার মালিবাগ এলাকায় আবুল হোটেলের কাছে আমার অফিস। আসেন, সরাসরি কথা হবে।’
বাড়তি খরচ কেমন? জবাবে হাসি দিয়ে ইউসুফ বললেন, ‘আমার কাছ থেকে অনেকেই মাল নেয়। যেমন কর্ণফুলী টানেলে আমি অনেক মাল দিয়েছি। টনপ্রতি একটা হিসাব করে আমাকে টাকা দিয়েছে তারা। এখানে তো আমি একা (আবার হাসি) করতে পারব না। যে কোম্পানি থেকে নেবেন সেই কোম্পানির এমডি, ইআরএলের লোকজন আছে। তাদের সঙ্গে আমি আগে একটু কথা বলি।’
আলাপচারিতার একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘ইআরএল এবং বিভিন্ন কোম্পানিকে ম্যানেজ করে বিপিসি। তারা তো বিপিসির কথা ছাড়া সিরিয়ালে হাত দিতে চায় না। এ ক্ষেত্রে আমি কাকে ব্যবহার করব সেটা আমার বিষয়।’
আপনি তো বিপিসির চেয়ারম্যানের ভাই, তাই না? আবার হাসি দিয়ে ইউসুফ বলেন, ‘আপনি আমাকে খুঁজে বের করেছেন। আপনিই জানেন আমি কে? আসলে এর আগে নানারকম ঝামেলা হয়েছে। ব্যাপারটা খুব সেনসিটিভ (স্পর্শকাতর)। আপনারা যদি বেশি পরিমাণে মাল নেন, তাহলে আপনাকে সহযোগিতা করব।’
একপর্যায়ে নিজেকে চেয়ারম্যানের আপন খালাতো ভাই পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘অনেক বছর ধরে ব্যবসা করছি। তা প্রায় চার-পাঁচ বছর। এর মধ্যে উনি (চেয়ারম্যান) আসছেন। এতে প্লাস পয়েন্ট হয়েছে। ব্যবসা বড় করতে চাইলে সুযোগ আছে।’
ব্যবসা বড় করতে বিপিসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে বসানোর প্রস্তাবে ইউসুফ বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে আগে আমার বসতে হবে। জ্বালানি খাতে আমাদের আরও অনেক ব্যবসা আছে। চাইলে আপনারাও করতে পারবেন। চেয়ারম্যান আগামী এপ্রিল পর্যন্ত আছেন।’ এপ্রিলের পর এ চেয়ারম্যান না থাকলে তখন কী হবে? অভয় দিয়ে বললেন, ‘আপনার পথ আমিই বাতলে দেব। ইআরএলের অনেক কর্মকর্তা, বিপিসির পরিচালকরা আছেন, যারা আমার পরিচিত। আমি উনার (বিপিসির চেয়ারম্যান) ভাই হলেও সবাইকে ম্যানেজ করেই চলি।’
ইউসুফের সহযোগী হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ আলী লিটন। তাকে ফোন দিয়ে ইআরএলের বিটুমিন কেনার আগ্রহ প্রকাশ করতেই সাবলীল ভঙ্গিতে বললেন, ‘দেওয়া যাবে। আমার নম্বর কি ইউসুফ ভাই দিয়েছেন?’ কোন ইউসুফ? জবাবে বললেন, ‘বিপিসির চেয়ারম্যান স্যারের ভাই। তার সঙ্গে আমার ভালো রিলেশন। একসঙ্গেই ব্যবসা করি। উনি যেহেতু আছেন ইনশা আল্লাহ সিরিয়াল নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। বাকি আল্লাহ ভরসা।’
একটা হাসি দিয়ে এবার লিটন বললেন, ‘ব্যবসা আরেকটা আছে। যেমন সড়ক ও জনপথ এবং এলজিইডির ডকুমেন্ট থাকলে সেটা দেখিয়ে আপনার নামে বিটুমিন নিয়ে অন্য জায়গায় বাড়তি দামে বিক্রি করে দিলেন। এতে সবাই মিলে কিছু টাকা পাওয়া যাবে। আমরা যাদের মাল দিই তারা অধিকাংশই ব্যবসা করে এভাবে। অনেকে গুদামজাত করে বেশি দামে বিক্রি করে।’
‘প্রত্যেকটা ডিপার্টমেন্টে টাকা লাগে। টাকা না দিলে কী কাজ হয় ভাইজান? ২৩ বছর ধরে ব্যবসা করছি। এ লাইনে ব্যবসা করে অনেকে আজ কোটিপতি। কিন্তু আমি এখনো ফকির। চিটারি, বাটপারি করি না। কাউকে খারাপ পরামর্শ দিই না’ যোগ করেন লিটন।
তিনি বলেন, ‘বিপিসির তিনজন পরিচালকের মধ্যে একজনকে ম্যানেজ করতে হবে। এটা নিয়ে সমস্যা হবে না। ডকুমেন্ট ছাড়া মাল নিতে হলে আমার অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেবেন। যেকোনো একটা কোম্পানি থেকে আপনাকে মাল দেওয়া হবে।’
ইউসুফ-লিটন সিন্ডিকেটের বাইরে আরেক হোতা মোহাম্মদ কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘যারা সরকারি দামের অতিরিক্ত টাকা দেয় তাদের কোনো সিরিয়াল লাগে না। যেদিন পে-অর্ডার দেবেন ওইদিনই মাল পাবেন। সরকারি দরের অতিরিক্ত কত টাকা দেবেন, সেটা মাল নেওয়ার আগে জানাব।’
বিটুমিন কিনতে এবার যোগাযোগ হয় মোহাম্মদ পারভেজ নামে আরেকজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পে-অর্ডারের টাকা জমা দিয়ে গাড়ি নম্বর দেবেন, মাল চলে যাবে। সিরিয়াল নিয়ে ভাববেন না। সবাইকে ম্যানেজ করেই কাজ করি। বাড়তি টাকা আলাদা অ্যাকাউন্টে দেবেন। এ টাকা শুধু আমরা একা নিই না, কিছু ম্যানেজারদেরও দেওয়া লাগে।’
বিটুমিন কারসাজির আরেক হোতা মোহাম্মদ কামরুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও আশ্বাস দিলেন, বাড়তি টাকা দিলে সিরিয়াল পেতে কোনোরকম সমস্যা নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই বাংলাদেশে খুনিদের রাজত্ব আর চলবে না। সাহস থাকলে তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনুন। জিয়া পরিবার খুনি পরিবার। বাংলাদেশের মানুষ ওই খুনিকে ছাড়বে না। বাংলাদেশের মানুষ ওদের ছাড়বে না। গতকাল সোমবার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৯তম বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখার আগে সেখানে নির্মিত ২১ আগস্টে নিহত নেতাকর্মীদের স্মরণে অস্থায়ী শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি।
২১ হামলার গ্রেনেড হামলার বিচারের রায়ের প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এ হত্যাকা-ের বিচার হয়েছে। রায় হয়েছে। কাজেই এ রায় কার্যকর করা উচিত। কিছু আছে কারাগারে। কিন্তু মূলহোতা (তারেক রহমান) তো বাইরে। সে তো মুচলেকা দিয়ে বাইরে চলে গেছে। সাহস থাকলে আসে না কেন বাংলাদেশে? আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, সেই সুযোগ নিয়ে বিদেশে বসে লম্বা লম্বা কথা বলে। আর কত হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করে চলে গেছে সেই টাকা খরচ করে। তো সাহস থাকলে বাংলাদেশে আসুক। ওদের কর্মসূচিতে কিছু লোক হয়, সেই দেখে লম্ফঝম্ফ; কিন্তু বাংলাদেশের মানুষকে চেনেনি। এই বাংলাদেশে খুনিদের রাজত্ব আর চলবে না।’
২১ আগস্ট আহতদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা মানুষের কাছে যান। বলেন কী করে ওই খালেদা জিয়া-তারেক জিয়া আপনাদের জীবনটাকে ধ্বংস করেছে। কীভাবে দেশ লুটপাট করেছে। স্বাধীনতার চেতনা ধ্বংস করেছে। নিজেরা অর্থসম্পদের মালিক হয়েছে।’
দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মানুষ সজাগ থাকবে। ওই খুনিদের হাতে যেন এ দেশের মানুষ আর নিগৃহীত হতে না পারে। অগ্নিসন্ত্রাস আর জুলুমবাজি করে এ দেশের মানুষকে হত্যা করতে না পারে। মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। খুনি, দুষ্কৃতকারী, অস্ত্র চোরাকারবারি, ঘুষখোররা যেন মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। ওই খুনিদের প্রতি ঘৃণা সব জনগণের। চাই সবাই তাদের ঘৃণা জানাবে। সবাই নিরাপদ থাকেন, ভালো থাকেন। যতক্ষণ বেঁচে আছি, এ দেশের মানুষের সেবা করে উন্নত জীবন দিয়ে যাব। মর্যাদা নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।’
বিএনপি-জামায়াতের প্রতি অভিযোগ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা আমাদের নেতাকর্মীদের তো হামলা করেছেই। সাধারণ মানুষও ওদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। ঘাতক-ঘাতকই। ওরা তো জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। ওরা তো জনগণকে হত্যা করেছে। বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারছে। পেট্রোল ঢেলে আগুন দিচ্ছে। হাত-পা ধরে কান্নাকাটি করলেও ছাড়ে না। এটাই তো বিএনপির আসল চেহারা। এটাই বিএনপির চরিত্র।’
বাংলাদেশের নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে তারা ভোটের অধিকারের কথা বলে, আর কিছু আছে তাদের ভাড়া করাÑ তারা মানবাধিকারের কথা বলে। যারা বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলে তাদের কাছে আমার প্রশ্নÑ আমরা যারা আপনজন হারিয়েছিÑ আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী তাদের আপনজন হারিয়েছে, বিএনপি-জামায়াতের কাছে তাদের মানবাধিকার কোথায়? আমরা বিচার পাইনি। আমরা কেন বিচার-বঞ্চিত ছিলাম। আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থা দেখি বাংলাদেশের মানবাধিকারের কথা বলে। তাদের কাছে আমার প্রশ্নÑ তাদের শেখানো বুলি যারা বলেন, এ দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বারবার হয়েছে, যার মূলহোতা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া-তারেক জিয়াসহ জামায়াত যুদ্ধাপরাধীর। তারা এখনো করে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কিন্তু বিচার পাইনি। কেন ৩৩ বছর সময় লেগেছে বিচার পেতে। কী অপরাধ করেছিলাম যে আমরা বিচার পাইনি। বিচারের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। এ সময় তিনি আবেগে-আপ্লুত হয়ে পড়েন।’
২১ আগস্টের ঘটনা বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে র্যালি করছিলাম। আর সেখানেই প্রকাশ্য দিবালোকে হাজার হাজার মানুষের মধ্যে আর্জেস গ্রেনেড হামলা হয়, যে গ্রেনেড ছোড়া হয় যুদ্ধের সময়, যেটা সেখানে ছোড়া হলো। যখন আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছি মানুষের নিরাপত্তার জন্য, সেই মিছিলের ওপর ১৩টি গ্রেনেড হামলা হলো। আর কতগুলো যে ওদের হাতে ছিল কে জানে? সেদিন যে বেঁচে গিয়েছিলাম সেটাই অবাক বিস্ময়।’
২১ আগস্ট ঘটনার বর্ণনা করে হামলার অন্যতম লক্ষ্য শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যখন ৫ নম্বরে (সুধা সদনে) ফিরি, আমার সারা শরীরে রক্ত। রেহানা দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। আমি বলি আমার কিছু হয়নি। আমি চলে এসেছি কিন্তু ওখানে কী অবস্থা, আমি জানি না! সেখানে লাশের ওপর লাশ পড়ে আছে। আমি লোক পাঠাই। গাড়ি পাঠাই যত পারা যায় সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো। বাসার সবাইকে পাঠিয়ে দিই।’
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘তখন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী। কী ভূমিকা সে পালন করেছিল সেটাই প্রশ্ন? সে কেন বাধা দিল পুলিশকে? কেন সে কোনো রকম উদ্যোগ নিল না আলামত রক্ষা করতে। এতে কী প্রমাণ হয়? এই গ্রেনেড হামলার সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে খালেদা, তারেক গং জড়িত এতে কোনো সন্দেহ নেই। এবং তদন্তেও সেটা বেরিয়েছে।’
হত্যা-খুনের রাজনীতিটাই বিএনপি জানে এমন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুনের রাজনীতি করা, মানুষ হত্যা, একটি দলকে নিশ্চিহ্ন বা পরিবারকে হত্যা করাÑ এই রাজনীতি তো বিএনপি করে। খালেদা জিয়া করে। এটা তো মানুষের কাছে স্পষ্ট। ২১ আগস্ট তো আমাদের চোখের সামনে। বারবারই তো তারা আঘাত হেনেছে। বাংলাদেশ আসার পর থেকেই তো আমার ওপর বারবার হামলা। বেঁচে গেছি আমি বারবার। জানি না কেন? এটা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জানেন। তারা হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে। চক্রান্ত করেছে। যে রাজনৈতিক দলের উত্থান হয়েছে, হত্যা-ক্যু ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে। তাদের মিথ্যাচার মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন। তাদের হাতে তো রক্ত।’
সম্প্রতি একটি মামলায় সাংবাদিক শফিক রহমান ও মাহমুদুর রহমানের সাজার প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, ‘২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে তারা এত অর্থ-সম্পদ বানায় যে এফবিআইয়ের অফিসারকে হায়ার করে জয়ের (সজীব ওয়াজেদ জয়) বিরুদ্ধে। জয়কে কিডন্যাপ করে হত্যার চেষ্টা করে। আমরা তো জানতেও পারিনি কোনো দিন। জানতে পেরেছি কীভাবে? ওই এফবিআইয়ের অফিসারের বিরুদ্ধে আমেরিকায় মামলা হয় দুর্নীতির জন্য। আর ওই মামলা করতে গিয়ে ওই কোর্টে বেরিয়ে আসে সে বিএনপির এজেন্টদের থেকে টাকা খেয়েছে, জয়কে কিডন্যাপের চেষ্টা করেছে। সেই মামলার রায়ে বেরিয়ে আসে শফিক রেহমান আর মাহমুদুর রহমানের নাম।
জনজীবনে নানাবিধ ব্যয়ের চাপ কীভাবে কমানো যায় তা নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন। এর মধ্যেই গ্যাসের মিটারের ভাড়া দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দিয়েছে তিতাস গ্যাস। গ্রাহকের পকেট কেটে মুনাফা আরও বাড়াতে চাইছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিতাস গ্যাস অনিয়মের চূড়ান্তে উঠেছে। তারা তুঘলকি কর্মকান্ডের স্মারক।
তিতাসের পক্ষ থেকে গ্রাহকদের ৬ লাখ ৫০ হাজার প্রিপেইড মিটার দেওয়ার জন্য ২ হাজার ২৮৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। ‘স্মার্ট মিটারিং এনার্জি এফিসিয়েন্সি ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’ নামের প্রকল্পে প্রতি মাসে গ্রাহকের জন্য মিটার ভাড়া ধরা হয়েছে ২০০ টাকা। অথচ তিতাসেরই আরেক প্রকল্পে মিটার ভাড়া ধরা হয়েছে ১০০ টাকা। নতুন ভাড়ায় আপত্তি তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
যদি ১০০ টাকা ভাড়া ধরা হয়, তাহলে এ প্রকল্পে সাড়ে ছয় লাখ মিটারে প্রতি মাসে ভাড়া আসবে ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০০ টাকা হলে ভাড়া আসবে ১৩ কোটি টাকা। বছরে ভাড়া আদায় হবে ১৫৬ কোটি টাকা। পুরোটাই যাবে গ্রাহকের পকেট থেকে।
মিটার ভাড়া দ্বিগুণ করার যুক্তি কী জানতে চাইলে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মিটারের দাম ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। ১০ বছরের লাইফ। তাহলে কত ভাড়া ধরব? শুধু মিটারের চুক্তিমূল্যই হিসাব করা হয় না, এটার সার্ভারের চার্জ আছে, অন্য চার্জও আছে।’
প্রকল্পের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জালালাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশনের একটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। এ প্রকল্পের প্রি-পেইড মিটারের চুক্তিমূল্য ছিল ১৫ হাজার ৮৭৩ টাকা। তিতাসের প্রস্তাবিত প্রকল্পে মিটারের চুক্তিমূল্য ১০ শতাংশ বেশি ধরা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশে তুঘলকি কান্ড চলছে। এর আগে রাষ্ট্রপতি মিটারের ভাড়া বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছিলেন। এখন আবার পরিকল্পনা কমিশনের কাছে আবদার করা হয়েছে। রামরাজত্বেও এসব ঘটেনি।’
তিনি বলেন, ‘তিতাসের আর আয়ের দরকার নেই। তার আয় বেশি হয়ে গেছে। মন্ত্রণালয়, সচিবসহ সবাই তাদের মদদ দেয়। কারও কাছে তাদের কোনো জবাবদিহি নেই। আইন থাকুক আর না থাকুক, ভাড়া বাড়িয়ে তার আরও বেশি আয় করতে হবে। মন্ত্রণালয়ও হাত-পা গুটিয়ে রেখেছে।’
পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প শক্তি বিভাগের উপপ্রধান বলেছেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পের ১০ শতাংশ অতিরিক্ত চুক্তিমূল্য বাদ দিতে হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি মোট ২ হাজার ২৮৩ কোটি টাকার। এর মধ্যে সরকার দেবে ৩২৩ কোটি, বৈদেশিক ঋণ ১ হাজার ৯৪৫ কোটি ও নিজস্ব অর্থায়ন ১৫ কোটি টাকা। এটি বাস্তবায়িত হবে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে থেকে ২০২৮ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে। গত ২ আগস্ট প্রকল্পটির ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা (পিইসি) হয়েছে।
পিইসি সভায়, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (টিজিটিডিসিএল) ব্যবস্থাপক প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, ‘বিদ্যমান সিস্টেমে আবাসিক গ্রাহক পর্যায়ে বিভিন্নভাবে প্রাকৃতিক গ্যাসের অপচয় হচ্ছে। কিছু অসৎ গ্রাহক অননুমোদিত সরঞ্জামের মাধ্যমে অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহারের সঙ্গেও জড়িত। এটি গ্যাসের অপচয় ও সিস্টেম লসের গুরুত্বপূর্ণ কারণ। প্রিপেইড গ্যাস মিটার ব্যবহার করে দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আবাসিক খাতে গ্যাসের অপচয় রোধ করে সিস্টেম লস কমানো সম্ভব হবে।’
সভায় জানতে চাওয়া হয়, তিতাস অধিভুক্ত এলাকায় সিস্টেম লস কত শতাংশ। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কী পরিমাণ সিস্টেম লস কমানো যাবে। এমন প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি তিতাস।
তিতাসের উপমহাব্যবস্থাপক জানান, সিস্টেম লস-সংক্রান্ত কোনো জরিপ করা হয়নি। হালনাগাদ তথ্যও তিতাসের হাতে নেই। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রতি গ্রাহকে মাসে ২৬ ঘনমিটার গ্যাস সাশ্রয় হবে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পে গ্রাহক পর্যায়ে মাসিক মিটার ভাড়া ধরা হয়েছে ২০০ টাকা। পিইসি সভায় সিদ্ধান্ত হয়, চলমান অন্য প্রকল্পে ১০০ টাকা ভাড়া ধরা হয়েছিল, এ প্রকল্পেও তা-ই করতে হবে।
তিতাস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিতাসের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ ৬৩ হাজার। পর্যায়ক্রমে সব গ্রাহককেই মিটারিংয়ের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। বর্তমানে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ও জাপানের জাইকার অর্থায়নে দুটি প্রকল্পে মিটারিং কাজ চলমান আছে। এডিবির অর্থায়নে ইতিমধ্যে ৮ হাজার ৬০০টি ও জাইকার অর্থায়নে বসানো হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার মিটার। জাইকার অর্থায়নে চলমান প্রকল্পের আওতায় আরও ১ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের লক্ষ্যে প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। জাইকার অর্থায়নে আরও ১১ লাখ মিটার স্থাপন প্রক্রিয়াধীন।
কর্মকর্তারা আরও জানান, নতুন প্রস্তাবিত প্রকল্পটিতে মিটার স্থাপনের মাধ্যমে আবাসিক এলাকার ৮১ দশমিক ৭৯ শতাংশ গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারিংয়ের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
২০২২ সালের জুলাই মাসে প্রিপেইড মিটারের ভাড়া ৬০ থেকে ৪০ টাকা বাড়িয়ে এক লাফে ১০০ টাকা করেছিল তিতাস। বাসাবাড়িতে গ্যাসের প্রিপেইড মিটার স্থাপন শুরু হয় ২০১৭ সালে। ২০১১ সালে পরীক্ষামূলকভাবে তা শুরু হয়েছিল। শুরুতে সরকারের গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর বেশ আগ্রহ ছিল মিটার স্থাপনে; আস্তে আস্তে মিটার স্থাপনে দীর্ঘসূত্রতা শুরু হয়। এখন আবেদন করেও মিটার পায় না গ্রাহক।
প্রিপেইড মিটারে গ্যাসের অপচয় রোধ, গ্রাহকের খরচ কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন সুবিধার কথা প্রায় প্রতিষ্ঠিত। এ কারণেই জাইকার সহায়তায় প্রিপেইড মিটার বসানো শুরু করে তিতাস গ্যাস।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের স্থায়ী বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬০তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এ এইচ এম আলী হাসান। বহিষ্কৃতরা হলেন পরিসংখ্যান বিভাগের ১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের হালিমা আক্তার ঊর্মি, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম ও মুয়াবিয়া জাহান। ২৩ আগস্ট এ সিদ্ধান্তটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ভুক্তভোগী ফুলপরী খাতুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এতে আমি সঠিক বিচার পেয়েছি। তারা আমার সঙ্গে যে নির্যাতন করেছে তার উপযুক্ত শাস্তি পেয়েছে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই। এই বিচার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতন ও ভিডিও ধারণের অভিযোগ ওঠে পাঁচ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। তারা হলেন পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম ও মুয়াবিয়া জাহান। তাদের মধ্যে সানজিদা চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও অন্যরা কর্মী ছিলেন।
এ ঘটনার সংবাদ প্রকাশ হলে দেশ জুড়ে আলোচিত হয়ে ওঠে। ওই সময় ফুলপরী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হলের প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন।
ঘটনা তুলে ধরে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী গাজী মো. মহসিন। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট গ্রহণ করে এ বিষয়ে ওই আইনজীবীর কাছে লিখিত ব্যাখ্যা চান।
এ ঘটনায় রিট হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের পাশাপাশি কিছু নির্দেশনা দেয় হাইকোর্ট। মোট তিনটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। যার দুটি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও একটি কমিটি গঠিত হয় হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী।
তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য হাইকোর্ট ১ মার্চ নির্দেশনা দেয়। সেই নির্দেশনা মেনে পাঁচ শিক্ষার্থীকে ১৫ জুলাই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটি ও হাইকোর্টের গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস কোড অব কন্ডাক্ট-১৯৮৭ এর পার্ট-২ ধারা-৮ মোতাবেক ১২ মাসের জন্য তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি। এ শাস্তি চলাকালীন তারা ক্লাস-পরীক্ষাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
বিষয়টি পুনরায় আদালতের দৃষ্টিতে আনেন রিটকারী আইনজীবী গাজী মো. মহসিন। তিনি আদালতকে জানান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি প্রাসঙ্গিক পদ্ধতি লঙ্ঘন করে পাঁচ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে।
আদালতকে আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি নয়, বরং কোনো অপরাধের জন্য কোনো শিক্ষার্থীকে শাস্তি দিতে পারেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ফলে এই শাস্তির বৈধতা যদি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয় তবে তা বাতিল হয়ে যাবে। এরপর হাইকোর্ট নির্যাতনের দায়ে পাঁচ শিক্ষার্থীকে কোন পদ্ধতিতে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে তা জানতে চায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় তাদের আজীবন বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ডিমের বাজারে প্রায় দুই সপ্তাহের অস্থিরতা শেষে কমতে শুরু করেছে দাম। কিন্তু এই সময়ে ডিম সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। ডিমের দাম বাড়ার যৌক্তিক কোনো উত্তর ব্যবসায়ীরা দিতে না পারলেও তাদের টার্গেট অনুযায়ী তা বেড়েছে। পরে সরকারের আমদানির হুমকি ও বিভিন্ন সংস্থার বাজার তদারকিতে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে ডিমের দাম কিছুটা কমাতে বাধ্য হয়েছে ডিম সিন্ডিকেট।
তবে এখনো মূল পাইকারি বাজারে (মিলগেটে) প্রতিটি ডিমের দাম বিক্রি হচ্ছে ১১ টাকা ৫০ পয়সা। ফলে পরিবহন খরচ, ড্যামেজ, আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা লাভ শেষে সরকার নির্ধারিত দামে বাজারে ডিম বিক্রি সম্ভব হচ্ছে না, অর্থাৎ এখনো বাজারে সরকার নির্ধারিত ১২ টাকা রেটে প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে না। এতে নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের প্রোটিনের মূল উৎস ডিম অধরাই থেকে যাচ্ছে। প্রতিটি পরিবারই আগের চেয়ে ডিম কেনা অর্ধেক বা এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, দেশে প্রতিদিন সব ধরনের ডিমের মোট চাহিদা ৪ দশমিক ৭০ কোটি থেকে ৪ দশমিক ৮০ কোটি। আগে উৎপাদন ছিল ৪ দশমিক ৪০ থেকে ৪ দশমিক ৪৫ কোটি। তবে কিছুদিন আগে এই উৎপাদন কমে গিয়ে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৯০ থেকে ৪ দশমিক ১০ কোটির মধ্যে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে, প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ৫০ পয়সা। ফলে সব ধরনের হাত ঘুরলেও কোনোভাবেই খুচরা পর্যায়ে একটি ডিমের দাম ১২ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। অথচ প্রায় ১৪ দিন খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫ টাকা। আর পাইকারিতে সে দাম ছিল ১২ দশমিক ৪০ থেকে ১২ দশমিক ৫০ টাকা; অর্থাৎ প্রতিটি ডিম থেকে সিন্ডিকেট অতিরিক্ত বাণিজ্য করেছে ২ টাকা। সেই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে বাণিজ্য হয়েছে ৮ কোটি টাকা। আর ১৪ দিনে সিন্ডিকেটের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১১২ কোটি টাকা।
আর ডিমের বড় ধরনের দাম বাড়ানোর আগে আস্তে আস্তে দাম বাড়ানো হয়েছে। আবার ১৪ দিন শেষে আস্তে আস্তে কমানো হচ্ছে। ফলে সেখানেও আরও ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে। ফলে এই আগস্ট মাসে ডিম সিন্ডিকেট অতিরিক্ত বাণিজ্য করেছে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মুহাম্মদ মহসিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডিমের দাম বাড়ার মূল সমস্যা ঘাটতি। আমাদের ৩৯ ভাগ খামার বন্ধ। নানা কারণে চালু থাকা খামারেও উৎপাদন কমে গেছে। অথচ কথায় কথায় ভারতের সঙ্গে তুলনা করা হয়। তারা আমাদের চেয়ে ৫০ বছর এগিয়ে। তাদের সরকার পোলট্রি খাতে বড় ধরনের সাবসিডি দেয়। এ ছাড়া তাদের ডিমের সাইজ আমাদের চেয়ে ছোট। ফলে তারা কিছুটা কম দামে ডিম বিক্রি করতে পারে।’
খন্দকার মুহাম্মদ মহসিন আরও বলেন, ‘আমাদের বেশির ভাগ পোলট্রি পণ্য আমদানি করতে হয়। প্রথমে করোনায় সব থমকে যায়। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ডলারের দাম ৩০ টাকা বেড়ে যায়। এতে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের বড় ধরনের খরচ বেড়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি বৈরী আবহাওয়া, বিশেষ করে প্রচ- গরম, এরপর আবার বৃষ্টি এতে অনেক মুরগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার আড়তদাররাও কিছুটা অতিরিক্ত মুনাফা করে। সব মিলিয়ে ডিমের দাম বেড়ে যায়। তবে এখন আবার উৎপাদন বাড়ায় ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। তবে এর চেয়ে দাম কমাতে হলে সরকারকে সাবসিডি দিতে হবে; বিশেষ করে আমদানি করা পোলট্রির সব পণ্য কম দামে খামারিদের দিতে হবে।’
সূত্র জানায়, গত বছরের আগস্টেও একইভাবে ডিমের বাজারে কারসাজি করে দাম বাড়ানো হয়। তখন ভোক্তা অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর প্রমাণ পায়। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলাও হয়। কিন্তু সেই মামলার আর অগ্রগতি হয়নি। ফলে এ বছর আগস্টেও আগের চেয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে ডিমের দাম বাড়াল সিন্ডিকেট। ভোক্তা অধিদপ্তর ছাড়াও গত বছর আগস্টে কাজী ফার্মস, প্যারাগন, সিপি, ডায়মন্ড এগ, পিপলস ফিডসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করে প্রতিযোগিতা কমিশন।
জানা যায়, বাংলাদেশে এখন পোলট্রি খামারি আছেন ৬০ হাজার। তাদের মধ্যে ২০ হাজার খামারি ডিম উৎপাদন করেন। আর ৪০ হাজার খামারি মুরগি উৎপাদন করেন। ডিম উৎপাদনকারী বেশিরভাগ খামারিকে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের আওতায় নিয়ে গেছে কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান। তাদের আগাম টাকা দিয়ে ডিম ও মুরগির দাম বেঁধে দেওয়া হয়। সারা বছর সেই একই দামে ডিম ও মুরগি কেনে কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান। তাই করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সহজেই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাদের আবার নিজস্ব ফার্মও আছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রতিদিন সকালে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকজন নির্দিষ্ট এজেন্টদের মাধ্যমে সকাল ১০টার মধ্যে মোবাইল ফোনে এসএমসএস, ফেসবুক পেজের মাধ্যমে সারা দেশে ডিমের দাম জানিয়ে দেয়। আর সেই দামেই ডিম বিক্রি হয়। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। এর সঙ্গে উৎপাদন বা চাহিদার তেমন সম্পর্ক থাকে না।
অথচ ডিমের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সম্প্রতি সরকারের ডাকা একাধিক বৈঠকে বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, পাইকারি বাজারের বড় ব্যবসায়ী বা ক্ষুদ্র খামারির কেউই দায় নিতে চাননি। দাম বৃদ্ধির জন্য একে অপরের ওপর দায় চাপিয়েছেন। কেউ কেউ উচ্চহারে খাবারের দাম বৃদ্ধির কথা বলেছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মুরগির খাবারের দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। সেটা হিসাব করেই এখন ডিম উৎপাদন খরচ সাড়ে ১০ টাকা নির্ধারণ করেছে মন্ত্রণালয়। ফলে খাবারের দাম বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে ডিমের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই। যদি খাবারের দাম না বাড়ত তাহলে ডিম উৎপাদন খরচ সাত থেকে আট টাকার মধ্যেই থাকত। দেশে একটা ডিমের খুচরা দাম ১৪ থেকে ১৫ টাকা হলেও পাশর্^বর্তী দেশ ভারতের বিভিন্ন শহরে একটি ডিমের খুচরা দাম বাংলাদেশি টাকায় আট টাকার মধ্যেই বিক্রি হচ্ছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনো মিলগেটে ১১ দশমিক ৩০ টাকা করে প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে। এতে নির্ধারিত ১২ টাকা দামে ভোক্তার হাতে ডিম পৌঁছাচ্ছে না। ডিমের দাম কমাতে হলে মিলগেটে দাম কমাতে হবে। আমরা এ ব্যাপারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট জমা দিয়েছি। মুরগির খাবারের দাম কেমন হওয়া উচিত, সেটাও নির্ধারণের জন্য আমরা বলেছি। এ ছাড়া রসিদ ছাড়া যেন ডিম ক্রয়-বিক্রয় না হয়, সেটা আমরা মনিটরিং করছি। যা সামনে আরও জোরদার হবে।’
সাত বছর পর ভারতের মাটিতে অবতরণ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তারা গিয়েছিল সেখানে। তারপর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে। টুর্নামেন্ট শুরুর এক সপ্তাহ আগে তারা পৌঁছালেন দেশটিতে। সেখানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোটেলে।
বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাবর আজমরা সেখানে পৌঁছানো মাত্রই উচ্ছ্বসিত জনতা ভিড় করেন। হায়দ্রবাদের বিমানবন্দরের বাইরে তাদের দেখে অনেকেই চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। বাবরের নাম উচ্চারণ করতও শোনা গেছে এসময়। পুলিশ উৎসুক জনতাকে আটকে রেখেছিল।
রাজনৈতিক বৈরি সম্পর্কের কারণে দুই দলের দেখা হয় না দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে। বিশ্ব মাতানো ক্রিকেটার থাকলেও পাকিস্তানিরা খেলতে পারে না আইপিএলে। কারণ ঐ একটাই। তবে বৈশ্বিক বা মহাদেশীয় ইভেন্টে তাদের ঘিরে আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। সেটা দেখা গেছে এশিয়া কাপেও।
বিশ্বকাপ খেলতে আজ বাংলাদেশ উড়াল দিয়েছে ভারতে। সেই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখে টাইগাররা। তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছাড়ার পর সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের ভার। আর আজই জানা গেল, বিশ্বকাপের পর একদিনও তিনি অধিনায়কত্ব করবেন না।
গত ১১ আগস্ট তৃতীয় দফায় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান। তখনই বলা হয়েছিল, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ও ভারত বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এই বিশ্বকাপই শেষ। এরপর একদিনও (অধিনায়কত্ব) করবো না। যে কারণে আমি এশিয়া কাপের আগে নিতে চাইনি। এরপরও এটা না। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হাসতে চাই, খেলতে চাই, পারফর্ম করতে চাই। এই একটা কারণে আমি করতে চাইনি।’
সাকিব যোগ করেন, ‘আর কোনে কারণ নেই। বেস্ট হয় যদি অধিনায়ক না থাকি। অধিনায়কত্ব কি আমার কোনো ভেল্যু এড করতেছে ক্যারিয়ারে এই স্টেজে এসে? আমি তো মনে করি না।’
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
বিশ্বকাপে তামিম ইকবালকে ওপেন থেকে সরিয়ে মিডল অর্ডারে ব্যাট করার প্রস্তাব দিয়ে ফোন করেছিলেন, তামিমের ভাষায় 'বোর্ডের টপ লেভেল' এবং 'ক্রিকেটের সাথে বেশ ইনভলভড' একজন।
তিনি তামিমকে বলেন, ''তুমি তো বিশ্বকাপে যাবা, তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলতে হবে। তুমি এক কাজ করো। তুমি প্রথম ম্যাচ খেলো না আফগানিস্তানের সঙ্গে।'
তিনি আবার বলেন, আচ্ছা তুমি যদি খেলোও, আমরা এমন একটা পরিকল্পনা করছি, তুমি যদি খেলোও, তাহলে নিচে ব্যাট করবে।''
তামিমের এমন বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠেছে, কেই সেই বোর্ড কর্মকর্তা? এক টিভি সাক্ষাৎকারে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'আমি এটা জানিনা।'
পরক্ষণেই তিনি বলেন, 'তবে যদি কেউ বলে থাকে, আমি সিউর তিনি অথোরাইজড পার্সন। আর এরকম কিছু বলে থাকলে আমি খারাপ কিছু বলেছে বলে আমি মনে করিনা। টিমের কথা চিন্তা করেই বলেছে। টিম কম্বিনেশন নিয়ে কথা বলে থাকলে দোষের কি আছে। আমার তো মনে হয় না দোষের কিছু আছে। নাকি এরকম কোনো প্রস্তাব দেয়া যাবে না। নাকি আপনি যা চাইবেন তাই করতে পারবেন?।'
বিশ্বমঞ্চে দেশের ক্রিকেটের দূত বলা যায় সাকিব আল হাসানকে। বর্ণিল এক ক্যারিয়ার গড়েছেন তিনি। তিন ফরম্যাটেই তিনি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। দেশের এই তারকা ক্রিকেটার নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপে যাচ্ছেন দলের অধিনায়ক হিসেবে। সেই টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই জানা গেল কবে তিনি অবসর নিচ্ছেন।
দেশের একটি ক্রীড়াভিত্তিক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের অবসরের সময় জানিয়েছেন। তার ইচ্ছে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর অবসর ঘোষণা করার। একইসঙ্গে তিন ফরম্যাটকে বিদায় জানাতে চান দেশের ক্রিকেটের এই তারা।
নেতৃত্ব ছাড়া ও অবসরের প্রসঙ্গ টেনে সাকিব বলেন, ‘আজকে এখন এই অবস্থায় বলছি, ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত ওয়ানডে খেলবো। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে টি-টোয়েন্টিকে বিদায় দেবো। টেস্টের অবসর শিগগিরই। তবে একেক ফরমেট একেক সময় ছাড়লেও আনুষ্ঠানিক অবসর ঘোষণা করবো ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর।’
অধিনায়কত্ব নিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপের আগে একাধিক সিরিজে বিশ্রামের কথা বলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দলের বাইরে রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত এশিয়া কাপেও দলে ফেরানো হয়নি তাকে। যেহেতু সাকিবের নেতৃত্বে সেই আসরে খেলেছে বাংলাদেশ, তাই অনেকের ধারণা সাকিবের চাওয়াতেই দলের বাইরে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
তবে সাকিব এসব কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়ক ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দল পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলারও ছিল না! কারন পরের দিন সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকি রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা!'
দলের ভেতরের কথা ভালোভাবে না জেনেই মানুষ যেভাবে সমালোচনা করে সেটাকে হাস্যকর বলেছেন সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়ক সমালোচকদের মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, 'মানুষের সাইলকোলজি এমন কেন! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!'
অধিনায়ক একা যে দল নির্বাচন করেন না সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন সাকিব। তিনি বলেন, 'রিয়াদ ভাইয়ের যে ডেডিকেশন ছিল তার দলের প্রতি যে অবদান ছিল। দলের হয়ে খেলার যে ইচ্ছে ছিল, সবকিছু সবাই দেখতে পেরেছে। আমার দায়িত্বতো পুরো দলটা নির্বাচন করার না। এমনটা হলে এশিয়া কাপের একদিন পরেই এনাউন্স করে দল দিয়ে দিতে পারতাম। এটা অনেক প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। অনেক বিষয় চিন্তা করতে হয়। অনেক কিছু চিন্তা করে দলটা গড়তে হয়।'
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।