
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পরিধি বা আয়তন বাড়ানোর চিন্তা করছে সরকার। রাজউকের সীমানা বিস্তৃত হবে মেঘনাপাড় থেকে পদ্মাপাড় পর্যন্ত। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা ওই জনপদে পরিকল্পিত ও টেকসই উন্নয়নের কথা ভাবছে সরকার।
বিশেষজ্ঞদের অনেকের ভিন্নমতও রয়েছে এ বিষয়ে। তারা মনে করেন, রাজউক বিদ্যমান পরিধি বা আয়তনের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ফলে এ সংস্থার আয়তন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কতটুকু যৌক্তিক হবে তা ভেবে দেখা দরকার।
তাদের মতে, ঢাকা ও আশপাশের এলাকার জলাশয়, পুকুর-ডোবা-নালা রক্ষার দায়িত্ব ছিল রাজউকের। জনবল স্বল্পতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাবে তারা সে দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে পারছে না। রাজউকের বিদ্যমান সীমার মধ্যে ব্যক্তি উদ্যোগে জলাভূমি, নিচুজমি, কৃষিজমি ভরাট করে নানা স্থাপনা গড়ে উঠেছে, উঠছে। রাজউক সেসব নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজউকের আওতাধীন সাভার, কেরানীগঞ্জ, ভাটারা, দক্ষিণগাঁও, উত্তরখান, দক্ষিণখান, তুরাগ, ডেমরা প্রভৃতি এলাকায় রাজউক নজর দেয়নি। এ অবস্থায় আয়তন বাড়ানো হলে সেখানেও তারা সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে পারবে না। রাজউকের সংস্কার করে সক্ষমতা বাড়ানো গেলে বিদ্যমান ও নতুন এলাকায় কার্যকারিতা দেখানো সম্ভব হবে। রাজউকের বিস্তারণের ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।
চলতি বছরের শুরু থেকে রাজউকের আয়তন বাড়ানোর বিষয়টি আলোচনায় আসে। তবে বিষয়টি স্পষ্ট হয় জুনে। গত ২০ জুন জাতীয় সংসদে গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ জানান, ঢাকার পুবে মেঘনা নদী ও পশ্চিমে (বাস্তবে দক্ষিণ-পশ্চিমে) পদ্মা সেতু পর্যন্ত রাজউকের সীমানা বিস্তৃত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সরকারের অনুশাসন পেলে রাজউক এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নেবে। রাজউক বর্তমানে ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বিস্তৃত। এখানে প্রশাসনিক অঞ্চল রয়েছে আটটি। এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকা, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, কেরানীগঞ্জ ও গাজীপুর। সম্প্রতি গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (গাউক) চেয়ারম্যান নিয়োগ করে ওই প্রতিষ্ঠানকে সক্রিয় করেছে সরকার। গাজীপুরের ৫৯০ বর্গকিলোমিটার এলাকা ছেড়ে দিয়েছে রাজউক। এখন রাজউকের আওতায় রয়েছে ৯৩৮ বর্গকিলোমিটার।
পরিকল্পিত ও টেকসই নগর উন্নয়ন এবং নাগরিক সেবার বিশাল দায়িত্ব পালন করছে রাজউক। কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে রাজউকের অনেক বদনামও হচ্ছে। তবে প্রশাসন বলছে, তারা এ ব্যাপারে কঠোর। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) রাজউক বিষয়ক এক গবেষণা-প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজউক আর দুর্নীতি সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। রাজউক মুনাফা অর্জনকারী ও লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, কিন্তু জনবান্ধব হতে পারেনি।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজউকে ঘুষ ছাড়া সেবা বিরল। ইমারত নির্মাণের নকশার অনুমোদন পেতে ৫০ হাজার থেকে ২ কোটি টাকা ঘুষ দিতে হয়। রাজউক কর্মকর্তা, দালাল ও সেবাগ্রহীতাদের একাংশÑ ত্রিপক্ষীয় আঁতাত নির্দিষ্ট হারে ঘুষ নেয়। এসব দুর্বলতা রাজউককে অনেক সময় যথাদায়িত্ব পালন করতে দেয় না। অংশীদের পরামর্শÑ রাজউককে এর থেকে বের করে আনতে হবে।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) প্রেসিডেন্ট আলমগীর সামসুল আলামিন (কাজল) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজউকের আয়তন বাড়ানো যেতে পারে। তাহলে অন্যান্য এলাকায়ও পরিকল্পিত উন্নয়ন ঘটবে। ঢাকা শহরের ওপর চাপ কমবে। এজন্য দক্ষ জনবল লাগবে।’
এফবিসিসিআইয়ের আবাসন-সংক্রান্ড স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজউক পরিকল্পিত ও টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে আয়তন বাড়াতে পারে। এজন্য আগে রাজউকের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। দক্ষ জনবল লাগবে। এরপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
নগরপরিকল্পনাবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মেঘনা থেকে পদ্মাপাড় পর্যন্ত পরিকল্পিত উন্নয়নের চিন্তা ইতিবাচক। রাজউকের আয়তন না বাড়িয়ে উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের সক্ষমতা বাড়িয়েও তা করা সম্ভব।’
ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজউক বিদ্যমান আয়তনের মধ্যেই তার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে পারছে না। ফলে রাজউকের সীমানা বাড়ানোর চিন্তা করা যায় না। প্রতিষ্ঠানটির সংস্কার করে সক্ষমতা বাড়ালে তা সম্ভব হতে পারে।’
রাজউক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজউক আয়তন বাড়াতে চায় না। তবে সরকার বাড়াতে বললে তাতে সম্মত থাকবে। ঢাকার আশপাশে রাজউক এলাকার কাছাকাছি এলাকায় পরিকল্পিত নগরায়ণের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। সেসব এলাকা রাজউকের আওতায় এলে সেখানেও পরিকল্পিত উন্নয়ন করা সম্ভব। ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের দুপাশে পাল্লা দিয়ে অপরিকল্পিত উন্নয়ন হচ্ছে, এর নিয়ন্ত্রণ দরকার। সরকার দায়িত্ব দিলে রাজউক তা পালনে আগ্রহী।’
বিদ্যমান আয়তনের পরিকল্পিত উন্নয়ন ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালনে সফল না হলেও আয়তন বাড়াতে আগ্রহ কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ‘রাজউককে সেভাবে গড়ে তোলা হলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হতো না। এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে। নতুন অনেক জনবল নিয়োগ হচ্ছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে রাজউকের জনবল দাঁড়াবে প্রায় দেড় হাজারে।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজউকের আয়তন বাড়ানোর বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে আলোচনা হচ্ছে। যেসব এলাকা রাজউকের আওতায় আনার আলোচনা চলছে, ওইসব এলাকাকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’
প্রসঙ্গত, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ শহরের উন্নয়নের জন্য ১৯৫৬ সালে ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (ডিআইটি) করা হয়। টাউন ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্ট-১৯৫৩ অনুসরণ করে এটা করা হয়। ১৯৭০ ও ১৯৮০ সালের দিকে ঢাকা ও আশপাশে দ্রুত নগরায়ণ হয়। তখন ডিআইটির সংশোধনের জন্য সরকার প্রশাসনিক ও আইনগত কাঠামো সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। ফলে টাউন ইমপ্রুভমেন্ট (সংশোধনী) আইন ১৯৮৭ হয়, যার মাধ্যমে ডিআইটি রাজউকে রূপান্তরিত হয়। ১৯৯১ সালে রাজউকের আয়তন ৩২০ থেকে ৫৯০ বর্গমাইল (১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার) করা হয়। গাজীপুর অংশ ছেড়ে দেওয়ার পর বর্তমান রাজউকের আয়তন ৯৩৮ বর্গকিলোমিটার।
নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে বিএনপির দেওয়া সংস্কারের রূপরেখার পাশাপাশি অন্য কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে তোলা আরেকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা আছে। এ বিষয়টি হচ্ছে সংসদে ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা’। ওই দলগুলোর কয়েকটি বলেছে, তারা নির্বাচন কমিশনেও এ প্রস্তাব দিয়েছে। সেসব দলের মধ্যে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও আছে।
‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থায়’ কোনো দল সারা দেশে মোট প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে সংসদে আসন পাবে। বাংলাদেশের সংসদ ৩০০ আসনের। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে ভোট হলে প্রতি ১ শতাংশ ভোটের জন্য তিনটি আসন পাওয়া যাবে। যে দল ৫০ শতাংশ ভোট পাবে, তারা সংসদে আসন পাবে ১৫০টি।
এ ব্যবস্থায় ছোট-বড় সব রাজনৈতিক দল প্রাপ্ত ভোট অনুযায়ী দলগুলো সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। জাতীয় সংসদ হয়ে উঠবে সর্বদলীয়। এতে দেশের রাজনীতি যে দ্বিদলীয় বৃত্তে আটকে গেছে সেখান থেকে যেমন বেরিয়ে আসবে, তেমনি নির্বাচন ঘিরে কালো টাকা ও পেশিশক্তির দৌরাত্ম্য কমবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ার নেপাল, শ্রীলঙ্কা; ইউরোপের নেদারল্যান্ডস ও স্পেনসহ প্রায় ৯৫টি দেশে কয়েক ধরনের সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা চালু আছে। বিশ্বের একশর মতো দেশে সংসদীয় ব্যবস্থা রয়েছে।
প্রায় তিন দশক ধরে দেশে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধি ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের মুখ থেকে পক্ষে-বিপক্ষে কোনো কথা শোনা যায়নি। তবে সম্প্রতি দুই জোটের সঙ্গে থাকা কয়েকটি দলকে পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। বর্তমান সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরও সংসদে এ বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। অন্যদিকে গত বছর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংলাপে কমিশনের কাছে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের সুপারিশ করেছে বেশ কয়েকটি দল।
একাদশ জাতীয় সংসদ ও তার আগের কয়েকটি নির্বাচন ভোটচিত্র দেখলে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি আরও বোধগম্য হবে। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ৩৯টি দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্র দলগুলো ২৮৮ আসন পায়। তারা মোট প্রদত্ত ভোটের ৭৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ পেয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ১২ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পেয়ে মাত্র আটটি আসন পায়। সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা বা ভোটের অনুপাতে আসন বণ্টন পদ্ধতি থাকলে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট আরও ২৮টি আসন বেশি পেত। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা পেত ২২৩টি আসন।
এ নির্বাচনের পর বিএনপি ও মিত্র দলগুলোসহ সরকারবিরোধীরা দলীয় সরকারের অধীনে আর নির্বাচন করবে না বলে জানিয়ে দেয়। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন বিএনপি ও তার মিত্রদের এখন এক দফা দাবিতে পরিণত হয়েছে।
গত ছয়টি জাতীয় নির্বাচন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, যারাই সরকার গঠন করেছে কেউই ৫০ শতাংশ ভোট পায়নি। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ ভোটে আসন পেয়েছিল ১৪০টি। আওয়ামী লীগ ৩০ দশমিক ১ শতাংশ ভোটে পেয়েছিল ৮৮টি। ভোটের শতাংশের ভিত্তিতে আসন নির্ধারিত হলে বিএনপি আসন পেত ৯৩টি। আওয়ামী লীগ পেত ৯০টি।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ ভোটে ১৪৬টি ও বিএনপি ৩৩ দশমিক ৬ শতাংশ ভোটে ১১৬টি আসন পেয়েছিল। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি হলে আওয়ামী লীগ আসন পেত ১১৩টি আর বিএনপি পেত ১০১টি।
২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৭৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। বিএনপি ৪০ দশমিক ৪১ শতাংশ ভোট পেয়ে সরকার গঠন করে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ৪০ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ ভোট পেয়ে মাত্র ৬২টি আসন পায়। অথচ ভোটের আনুপাতিক হার হিসাব করলে বিএনপি আসন পেত ১২৪টি আর আওয়ামী লীগ পেত ১২০টি।
একইভাবে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ৪৯ শতাংশ ভোট পেয়ে সরকার গঠন করে। এ সময় দলটি ২৩০টি আসন পায়। অন্যদিকে বিএনপি ৩৩ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় মাত্র ৩০টি। আনুপাতিক হার হিসাবে আওয়ামী লীগ আসন পেত ১৪৭টি, বিএনপি পেত ৯৯টি।
দেশে বিদ্যমান ‘ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট’ ব্যবস্থায় অনেকে বিনা ভোটেই নির্বাচিত হচ্ছেন। বিশেষ করে ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে ভোট ছাড়াই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। এমন ঘটনা ’৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনেও ঘটেছে। কোথাও আবার প্রদত্ত ভোটের অর্ধেকেরও কম ভোট পেয়ে নির্বাচিত হচ্ছেন।
ভোটের এমন পদ্ধতি পরিবর্তে সংখ্যানুপাতিক ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাসদ, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনসহ ডজনের বেশি দল।
দলগুলোর নেতারা বলছেন, প্রচলিত নির্বাচন ব্যবস্থায় দেখা যায়, ১০-২০ শতাংশ ভোট পেয়েও নির্বাচিত হয়ে যাচ্ছে। এভাবে প্রতিবারেই ‘সংখ্যালঘিষ্ঠের সরকার’ গঠিত হয় যারা কিনা আসনে জয়ী হলেও আদতে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ ৮০ শতাংশ যারা ভোট দেয়নি তাদের প্রতিনিধিত্ব করে না।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম নেতা ও বাসদ সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা মনে করি, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে ভোট হলে প্রাপ্ত ভোটের হারে সংসদে দলগুলোর প্রতিনিধি থাকবে। এতে করে একতরফাভাবে যেভাবে দুটি দল দেশ পরিচালনা করছে, কারও কথা শোনে না, কোনো কিছুর দায় থাকে না সেটা আর করতে পারবে না।’ তিনি বলেন, বড় দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের হিসাবই বলছে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে কোনো দলের পক্ষেই একা সরকার গঠন করা সম্ভব হবে না। তখন অন্য দলগুলোর কথা শুনতে হবে। অন্যদিকে প্রার্থী নিজেও জানবেন না যে সংসদে যেতে পারবেন কি না। তখন আর টাকা দিয়ে ভোট কেনাবেচার সুযোগ থাকবে না। নির্বাচনটাও অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ব্যবস্থায় অযোগ্য লোকদের নির্বাচিত হয়ে আসার সুযোগও বন্ধ হয়ে যাবে। রাজনৈতিক দলগুলো দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসবে। উদাহরণ হিসেবে তারা বলছেন, সংসদে এখন সংরক্ষিত নারী আসনের বণ্টনও এ আনুপাতিক হারে হয়। অর্থাৎ সংসদে যে দল যতটি আসন পায় সে অনুপাতেই দলগুলো ৫০টি সংরক্ষিত আসন পায়। তাই এটা কোনো নতুন নির্বাচনী পদ্ধতিও নয়। দরকার শুধু সব রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছা।
সম্প্রতি ইসলামী আন্দোলনকে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে সরব হতে দেখা গেছে। দলটির মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা দুটো বিষয় সামনে রেখে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছি। প্রথমত সব নিবন্ধিত দলকে নিয়ে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠন। অন্যটি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি। এ দুটি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হলে চলমান সংকট দূর হবে, অন্যদিকে সবার অংশগ্রহণে একটি কার্যকর সংসদ গঠন হবে।’
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে কথা বলছি। নির্বাচন কমিশনকেও বলেছি। আমরা আমাদের ঘোষণাপত্রেও রাখব। এ বিষয়ে আমাদের দলগতভাবেও সিদ্ধান্ত আছে।’
বিএনপির সমমনা গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা দলীয়ভাবে যে দফা দিয়েছি সেখানেও সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া গণতন্ত্র মঞ্চও এই নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। কিন্তু বিএনপি এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে একমত হয়নি। তারা এ বিষয়ে এখনই কথা বলতে চায় না।’
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতিতে সংসদে ছোট ছোট দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যায়। শুধু তাই নয়, নির্বাচন কেন্দ্র করে এলাকাভিত্তিক যে সহিংসতা তাও রোধ করা সম্ভব। কারণ তখন কালো টাকা বা পেশিওয়ালারা কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগে উৎসাহী হবেন না। মনোনয়ন-বাণিজ্যও কমবে। নির্বাচন ও রাজনীতিতে সৎ ও ত্যাগী মানুষের অংশগ্রহণ বাড়বে।’ রাজনৈতিক দলগুলোকে এ বিষয়ে আরও বেশি সোচ্চার হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
সুজন সম্পাদক জানান, সব রাজনৈতিক দলকে একটি প্ল্যাটফর্মে এনে এ বিষয়ে তাদের মতামত জানতে তারাও চেষ্টা করবেন।
জাতীয় পার্টিতে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদকে ঘিরে যে বিরোধ চলছিল, তাতে একটি নতুন অধ্যায় যুক্ত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রওশন এরশাদ নিজেকে জাতীয় পাটির চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এ নিয়ে দিনভর ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে।
গণমাধ্যমে পাঠানো রওশন এরশাদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমি বেগম রওশন এরশাদ, এমপি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা কো-চেয়ারম্যান এ মর্মে ঘোষণা করছি যে, পার্টির সিনিয়র নেতাদের পরামর্শে ও সিদ্ধান্তক্রমে দলের গতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করলাম।’ এ ধরনের একটি সিদ্ধান্তের উল্লেখ রয়েছে গত বছর ২২ জুলাই হওয়া সভার কার্যবিবরণীতে। সেই কার্যবিবরণীর নিচে রওশনের স্বাক্ষর রয়েছে। তবে তারিখ দেওয়া হয়েছে ২২/৮/২০২৩। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, এক বছর এক মাসের আগের সভার প্রস্তাবে কেন গতকাল রওশন এরশাদ স্বাক্ষর করলেন।
এদিকে রওশন এরশাদ যাদের অনুরোধে দলটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন বলে দাবি করছেন, তারা হলেন জাতীয় পার্টির চার কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এবং সালমা ইসলাম।
তবে এ ধরনের কোনো প্রস্তাব করেননি জানিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাল্টা বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না এবং প্রস্তাবকারী হিসেবে তার নাম ব্যবহার করার ঘটনায় নিন্দা জানান।
রওশন এমন একসময় নিজেকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করলেন যখন দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের তিন দিনের সফরে ভারত রয়েছেন। তিনি গত রবিবার ভারত যান এবং গতকাল দেশে ফেরার কথা। রওশনের নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণার বিষয়ে ভারত সফরে থাকা জিএম কাদেরের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে তিনি দেশ রূপান্তরকে তার অফিসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
রওশন এরশাদের বিজ্ঞপ্তির সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার জন্য এ প্রতিবেদক গতকাল একাধিকবার রওশনকে ফোন করলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তার মোবাইলে বার্তা পাঠিয়ে বিজ্ঞপ্তির সত্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
গত শনিবার দুপুরে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন রওশন এরশাদ। সেই বৈঠকে দেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আগামী নির্বাচন নিয়েও তারা আলোচনা করেন বলে গণমাধ্যমকে জানান প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব কেএম শাখাওয়াত মুন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের তিন দিনের মাথায় রওশন এরশাদের এ ঘোষণা রাজনীতিতে একটা নতুন গুঞ্জন সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি দলটির ভাঙনের সম্ভাবনা আরও জোরালো হলো বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. মুজিবুল হক চুন্নু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি গণমাধ্যমে রওশন এরশাদের বিজ্ঞপ্তি দেখেছি। কিন্তু এটা আদৌ ম্যাডাম (রওশন এরশাদ) স্বাক্ষর করেছেন কি না, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে। যারা অসুস্থ রওশন এরশাদকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন দীর্ঘদিন ধরে, এটা তাদের কোনো চক্রান্ত হতেও পারে। জাতীয় পার্টির যে কয়জন কো-চেয়ারম্যানের নাম ব্যবহার করে নিউজটি করা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা কেউ এ বিষয়ে জানেন না বলে আমাকে জানিয়েছেন।’
দলের মহাসচিব হিসেবে আপনি রওশন এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিনিয়র এ রাজনীতিক বলেন, ‘আমি মনে করি না তার প্রয়োজন আছে। জাতীয় পার্টি একটা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালিত হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী রওশন এরশাদের কাউকে বহিষ্কার করা কিংবা নিজে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণার সুযোগ নেই।’
শুধু এবারই প্রথম নয়, এর আগেও রওশন ও জিএম কাদেরের মধ্যে যারা সম্পর্কে দেবর-ভাবি, তাদের দ্বন্দ্ব নিয়ে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ হয়। গত বছর থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় রওশন এরশাদ অনেকটা হঠাৎ করেই জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সম্মেলন আহ্বান করেন। যদিও পরে তা স্থগিত ঘোষণা করা হয়। আবার এ লড়াই শুরু হওয়ার পর রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠ মশিউর রহমান রাঙ্গাসহ একাধিক নেতাকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করেন জিএম কাদের। এমনকি রওশন এরশাদকে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরিয়ে দিতে স্পিকারের কাছে চিঠি পর্যন্ত পাঠানো হয়।
অন্যদিকে রওশনপন্থিরাও কম যান না। তারা জিএম কাদেরের চেয়ারম্যান পদ নিয়ে আদালতে মামলা করেন। একপর্যায়ে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আদালত। যদিও পরবর্তীকালে উচ্চ আদালত তা স্থগিত করে।
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর কাদের-রওশন লড়াইয়ের শুরু। তারা দুজনই নিজেকে দলটির চেয়ারম্যান বলে ঘোষণা দেন। এরপর নানা আলোচনা-সমালোচনা ও দেন-দরবারের পর একপর্যায়ে সমঝোতা হয় যে, জিএম কাদের দলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। অন্যদিকে রওশন এরশাদ দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক পদের পাশাপাশি সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবেই থাকবেন।
জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নয়, মালিক ছিলেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। আমি মনে করি, বর্তমান সংকট তাদের পারিবারিক কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ। যতদিন দলের মালিক এরশাদ জীবিত ছিলেন, ততদিন এ সমস্যা মাথাচাড়া দেয়নি। দল যেহেতু পারিবারিক সংঘটন হিসেবে চলেছে, স্বাভাবিকভাবে মালিকের অনুপস্থিতিতে এর মালিকানা বা দখলদারিত্ব কার হবে তা নিয়ে উভয়পক্ষের দুশ্চিন্তা রয়েছে।’ তার ধারণা, আগামী নির্বাচনে দলের কৌশল নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে মতভেদ আছে। তারই বহিঃপ্রকাশ রওশনের নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা। জিএম কাদের ফিরে এসে এর একটা পাল্টাা অবস্থান নেবেন। আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দখলদারিত্ব চাঙ্গা হচ্ছে।
জাতীয় পার্টির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলটি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের একটা বড় অংশের সমর্থন রয়েছে রওশনের পেছনে। আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী হিসেবে তারা আগামী নির্বাচনেও জোটে থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে আসন পাকাপোক্ত করতে চান। পাশাপাশি তারা মনে করেন, জাতীয় পার্টিকে বিএনপি মূল্যায়ন করবে না। পক্ষান্তরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের সরকারবিরোধীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। একাধিক সভা-সেমিনারে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছেন। তার সঙ্গে দলটির সিনিয়র নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বড় অংশের সমর্থন রয়েছে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির এক সিনিয়র নেতা জানান, আপাতদৃষ্টিতে দলের সমর্থন এবং নিয়ন্ত্রণ জিএম কাদেরের হাতে থাকলেও অধিকাংশ সংসদ সদস্যরা রওশন এরশাদের সঙ্গে গোপনে আঁতাত রাখছেন। যদি এমন হয়, নির্বাচনের আগমুহূর্তে দেখা যায় যে সরকার তার পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্বাচন করে ফেলতে পারে, তাহলে জিএম কাদের দলকে সামাল দিতে পারবেন না এবং তখন দলে তার কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। কেননা জাতীয় পার্টির ছোট-বড় সব নেতাই ক্ষমতার আশপাশে থাকতেই পছন্দ করেন।
জাপার কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিজ্ঞপ্তিটা দেখেছি। আমি উভয়পক্ষের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। সবার সঙ্গে কথা বলব। তাছাড়া জিএম কাদের ও আগামীকাল দেশে ফিরবেন। তাই আপাতত এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেক দিন ধরে জাতীয় পার্টিতে জিএম কাদের ও রওশনের দূরত্ব চলছে। এবারই কিন্তু প্রথম না, মাঝেমধ্যেই এরকম অবাক করার মতো বিষয় কিন্তু আমরা দেখছি। যেহেতু তারা একই পরিবারের সদস্য তারা যদি আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করতেন, তাহলে নেতাকর্মীদের হতাশ হতে হতো না। আর এরকম অবাক করার মতো সংবাদ দুদিন পরপর পেতে হতো না। দীর্ঘদিন ধরে দলের নাজুক অবস্থা, সামনে নির্বাচন। এভাবে তো চলতে পারে না।’
দলটির আরেক কো-চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমাদের মহাসচিব দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। এ দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়, দীর্ঘদিন ধরে দেবর-ভাবির মধ্যে দূরত্ব ও দ্বন্দ্ব লেগে আছে।’
রওশন নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণার মধ্য দিয়ে এ দ্বন্দ্ব স্থায়ী রূপ লাভ করল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী ফিরোজ বলেন, ‘এখনই এ বিষয়ে বলা যাচ্ছে না। অপেক্ষা করতে হবে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে আরও অনেক কিছু ঘটবে।’
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানির পুরনো কারখানার স্ক্র্যাপ মালামাল বিক্রির নিলামে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রভাবশালীদের বাধার কারণে গত সোমবার দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে একটি দরপত্রও জমা পড়েনি। ১১টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র কিনলেও কেউই দরপত্র জমা দিতে পারেনি। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো নিলাম প্রক্রিয়া স্থগিত হলো।
তবে কর্র্তৃপক্ষ বলছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো দরপত্র জমা না পড়ায় আইন অনুযায়ী নিলাম প্রক্রিয়া বাতিল হয়েছে। কর্র্তৃপক্ষ আবার দরপত্র আহ্বান করবে।
বাধাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, প্রভাবশালীদের কারণে ওই স্থানে দরপত্র জমা দিতে তারা বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন। ফলে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ ঠেকাতে একাধিক জায়গায় দরপত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
গত সোমবার সকালে দরপত্র জমা দিতে বাধাপ্রাপ্ত হন সেনাকল্যাণ সংস্থার প্রতিনিধিরা। এ বিষয়ে তারা শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন।
সংস্থার ট্রেডিং ডিভিশনের উপব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) মো. আলিমুজ্জামান মুন্সী স্বাক্ষরিত ওই আবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষা বিভাগের আওতাধীন সংস্থাগুলো এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন বিজিবি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের প্রতিনিধিরা দরপত্র জমা দিতে সোমবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে শিডিউলে উল্লিখিত স্থানে প্রবেশ করেন, যা কারখানা-ফটকে লিপিবদ্ধ আছে। কিন্তু দরপত্র জমা দেওয়ার স্থানে কিছু দুষ্কৃতকারী তাতে বাধা দেয়। যে কারণে যথাসময়ে উপস্থিত হয়েও এবং উপযুক্ত দামে দরপত্র জমা করতে পারেননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ফেঞ্চুগঞ্জে বিসিআইসির অধীনে শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি নামে নতুন সার কারখানা প্রতিষ্ঠার পর পুরনো কারখানা ন্যাচারাল গ্যাস ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেডকে (এনজিএফএফএল) বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। পুরনো এই কারখানার যন্ত্রপাতি স্ক্র্যাপ মালামাল হিসেবে বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর প্রথমবার নিলাম আহ্বান করা হয়। ওই নিলামে সিলেটের মেসার্স আতাউল্লাহ গ্রুপ সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ১০৩ কোটি ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে স্ক্র্যাপ কারখানা কিনে নেয়। কিন্তু নিয়মমাফিক টাকা জমা দিতে না পারায় বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এরপর আদালতের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেও টাকা জমা দিতে পারেনি মেসার্স আতাউল্লাহ। এরপর আবার নিলামের সিদ্ধান্ত নেয় বিসিআইসি। সে অনুযায়ী ২০২১ সালের ২৫ মে দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান করে কর্র্তৃপক্ষ।
ওই নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে মেসার্স সাইদুর রহমান নামের প্রতিষ্ঠান ২১১ কোটি ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকায় স্ক্র্যাপ মালামাল কিনে নেয়। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানও নিয়মমাফিক টাকা পরিশোধ না করায় দরপত্র বাতিল করা হয়। এরপর ওই নিলামে ১৩১ কোটি টাকা দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স আল মামুন ট্রেডার্স ক্রেতা হিসেবে তাদের কার্যাদেশ প্রদানের জন্য উচ্চ আদালতে রিট করেন। কিন্তু কারখানা কর্র্তৃপক্ষ তৃতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান করে ২০২২ সালের অক্টোবরে। ওই বছরের ১৯ অক্টোবর দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে উচ্চ আদালতের নির্দেশে নিলাম প্রক্রিয়া আবারও স্থগিত হয়। আল মামুন ট্রেডার্সের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই স্থগিতাদেশ দেয়। ওই নিলামে ২২টি দরপত্র বিক্রি হয় এবং শেষ দিন বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ৩টি দরপত্র জমা পড়ে। এর মধ্যে মেসার্স এমএম বিল্ডার্স সর্বোচ্চ ২৭৫ কোটি টাকা দর প্রদান করে। এ ছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মেসার্স মোস্তফা গ্রুপ ১৪৫ কোটি টাকা ও তৃতীয় সর্বোচ্চ রফিক অ্যান্ড ব্রাদার্স ১৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা দর প্রদান করে। তবে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ওই নিলাম স্থগিত করা হয়। এরপর চতুর্থ দফায় গত ১ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু গতকাল সোমবার দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে ঘটেছে প্রভাবশালীদের বাধা দেওয়ার ঘটনা।
এ ব্যাপারে শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানির ডিজিএম (অ্যাডমিন) এটিএম বাকী জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো দরপত্র জমা না পড়ায় আইন অনুযায়ী নিলাম প্রক্রিয়া বাতিল হয়েছে। কর্র্তৃপক্ষ আবার দরপত্র আহ্বান করবে।
দুই দিন জ্বরে আক্রান্ত থাকার পর চিকিৎসকের কাছে যান ইমরান হোসেন। জ্বর ও লক্ষণ দেখে চিকিৎসক তাকে ডেঙ্গু পরীক্ষা করার কথা বলেন। এরপর সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্তের জন্য এনএস-১ পরীক্ষা করান। তবে ডেঙ্গু নেগেটিভ আসে। এরপর বাড়িতে ফিরে যান। কিন্তু জ¦র কমে না। ফের হাসপাতালে গিয়ে সিবিসি টেস্ট করান। এতে দেখা যায়, তার প্লাটিলেট কমে ৮৭ হাজারে নেমেছে। সঙ্গে বমি ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথার মতো ডেঙ্গুর অন্যান্য উপসর্গও রয়েছে। তখন চিকিৎসকের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি হন।
ইমরান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হাসপাতালে ভর্তির একদিন পর আবার আমার প্লাটিলেট বাড়তে থাকে। তখন ডাক্তার বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা নিতে বলেন। আমি ছাড়পত্র নিয়ে বাড়িতে চলে যাই।’ শুধু ইমরান নন, উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করালে ডেঙ্গু নেগেটিভ এসেছে, কিন্তু প্লাটিলেট অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে এমন রোগীর সংখ্যা কম নয়।
রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আবু নোমান হাদী জ¦রে আক্রান্ত হন গত ১৮ আগস্ট। পরদিন রাজধানীর মগবাজারের ইনসাফ বারাকা কিডনি হাসপাতালে এনএস-১ টেস্ট করান। সেখানে তার ডেঙ্গু নেগেটিভ এলেও প্লাটিলেট পাওয়া যায় ১ লাখ ৪৫ হাজার। এখন ইস্কাটনে বাড়িতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন। তার শরীরেও ব্যথার মতো ডেঙ্গুর উপসর্গ রয়েছে।
হাসপাতালে ইমরান কিংবা নোমানের মতো রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, বর্তমানে ডেঙ্গুর মৌসুম চলছে। এর পাশাপাশি অন্যান্য ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। জ¦রে আক্রান্ত হয়ে কারও প্লাটিলেট আশঙ্কাজনক হারে কমে গেলে সেটিকে ডেঙ্গু ধরেই চিকিৎসা দিচ্ছেন তারা।
জনস্বাস্থ্যবিদদের মতে, প্লাটিলেটের স্বাভাবিক রেঞ্জ দেড় লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ। বর্তমানে ডেঙ্গু ছাড়াও বিভিন্ন ভাইরাস জ¦রের কারণে প্লাটিলেট কমছে। তবে ডেঙ্গুর নমুনা পরীক্ষায় শতভাগ নির্ভুল ফলাফল আসে না।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, রিপোর্ট নেগেটিভ এলেই যে ডেঙ্গু হয়নি এই ভেবে বসে থাকলে জটিলতা আরও বাড়বে এবং মৃত্যুর আশঙ্কা তৈরি হবে। লক্ষণ ও উপসর্গ থাকলে কালক্ষেপণ না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বিলম্বে সেবা নিতে আসার কারণে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু বাড়ছে বলে মনে করছেন তারা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্লাটিলেট কমা মানেই ডেঙ্গু নয়। বেশ কিছু কারণে রক্তে প্লাটিলেট কমতে পারে। সাধারণত ভাইরাস জ্বরে প্লাটিলেট কমে থাকে। এখন করোনা, ডেঙ্গু এবং সিজনাল সাধারণ জ্বর এই তিন ধরনের ভাইরাস জ্বর দেখা যাচ্ছে। কারও কিছু শারীরিক জটিলতার কারণেও প্লাটিলেট কমে। আবার কেউ বেশ কিছু ওষুধ খান, এজন্য প্লাটিলেট কমে। তাই জ্বর হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং জ্বরের কারণ অনুসন্ধান করতে হবে।
চিকিৎসকরা বলছেন, এনএস-১ পরীক্ষা মূলত ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার বা লক্ষণ দেখা দেওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে করতে হয়। এ সময়ের মধ্যে এনএস-১ পরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গু শনাক্ত করা যেতে পারে। এরপর এটি আর কার্যকর হয় না। পঞ্চম দিন থেকে এনএস-১ নেগেটিভ হয়ে যেতে পারে। জ্বরের প্রথম তিন দিনের মধ্যে পরীক্ষা করলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। সপ্তম দিনে আইজিএম পরীক্ষা করলে ডেঙ্গুর সঠিক ফলাফল পাওয়া যাবে। এরপর থেকে আইজিপি পরীক্ষা করতে হবে। এভাবে রোগীকে ধাপে ধাপে পরীক্ষা করে দেখতে হবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কি না। একই সঙ্গে প্লাটিলেট কাউন্ট পরীক্ষা চালিয়ে যেতে হবে। নিজেরা কোনো একটি পরীক্ষা করে নেগেটিভ রিপোর্ট পেয়ে বসে থাকলে হবে না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, অন্যান্য ভাইরাস জ্বরে প্লাটিলেট সামান্য কমতে পারে। কিন্তু যদি কোনো রোগীর প্লাটিলেট ১ লাখ বা ১ লাখ ২০ হাজারের নিচে নেমে যায়, তাহলে তাকে ডেঙ্গু রোগীর মতোই চিকিৎসা নিতে হবে। ধরে নিতে হবে তার ডেঙ্গু হয়েছে। কারণ ডেঙ্গু পরীক্ষার ক্ষেত্রে এনএস-১ টেস্টে শতভাগ নির্ভুলভাবে ফলাফল পাওয়া যায় না। এই টেস্টের মাধ্যমে ৮০ শতাংশ সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়। এখন ডেঙ্গুর মৌসুম চলছে। তাই যদি কারও প্লাটিলেট আশঙ্কাজনভাবে কমে যায়, তাহলে তাকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে, কোনোরকম কালক্ষেপণ করা যাবে না। আমরা এটা বারবার বলছি, রিপোর্ট নেগেটিভ হলেও যদি লক্ষণ ও উপসর্গ থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসাসেবা নিতে হবে। তা নাহলে বিপদ বাড়বে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকব্যবস্থায় তারল্য সংকট থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারকে সবচেয়ে বেশি ধার দেওয়া হয়েছে। এতে টাকার সরবরাহ বেড়ে গিয়ে মূল্যস্ফীতি উসকে দিলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাপক মুনাফা হয়েছে। সরকারকে রেকর্ড ঋণ দিয়ে সাত হাজার কোটি টাকা সুদ আয় করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা সংস্থাটির আয়ের প্রায় ৪৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। শুধু সরকারকে ঋণের সুদ নয়, বিপুল পরিমাণের ডলার বিক্রির আয়ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মুনাফায় উল্লম্ফন ঘটিয়েছে। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ডলার বিক্রি করে ছয় হাজার কোটি টাকা আয় করেছে। সরকারকে দেওয়া ঋণ ও ডলার বিক্রি থেকে ব্যাপক আয়ের কারণে বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক নিট ১০ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ২৬৭ শতাংশ বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০২২-২৩ হিসাব বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব গতকাল মঙ্গলবার অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালন পর্ষদ। পর্ষদের সভাপতিত্ব করেন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। এ সময় সব পরিচালক উপস্থিত ছিলেন। সভা সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১-২২ হিসাব বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট মুনাফা ছিল ২ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা। এর আগে ২০২০-২১ হিসাব বছরে বাংলাদেশ ব্যাংক নিট মুনাফা ছিল ৫ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা।
২০২২-২৩ অর্থবছর বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে রেকর্ড পরিমাণের ঋণ দেয়। ওই সময় সরকার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ২২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যার মধ্যে ৯৭ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকার ঋণের জোগান দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সময়ে দেশে বিদেশি মুদ্রার সংকটেও রেকর্ড পরিমাণের ডলার বিক্রি করতে হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। এতে করে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেলেও ডলার বিক্রি থেকে ভালো আয় হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গতকালের বোর্ডসভা শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ২০২২-২৩ হিসাব বছরে ১৫ হাজার কোটি টাকা পরিচালন আয় করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে সরকারকে ঋণ দিয়ে সাত হাজার কোটি টাকা, ডলার বিক্রি থেকে ছয় হাজার কোটি টাকা ও বাণিজ্যিক ব্যাংকে ঋণ দিয়ে দুই হাজার কোটি টাকা আয় হয়েছে। বিপরীতে সর্বশেষ হিসাব বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। আর নিট মুনাফা হয়েছে ১০ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের কোষাগারে জমা দিয়েছে ১০ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা।
এদিকে মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানের নগদ লিমিটেডের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হিসেবে নগদ ফাইন্যান্স পিএলসিকে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল, তা প্রত্যাহারের আবেদন করেছিল প্রতিষ্ঠানটি, যা গতকাল মঙ্গলবারের বোর্ডসভায় গৃহীত হয়েছে। এর আগে গত ১ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নগদ ফাইন্যান্স পিএলসির চূড়ান্ত লাইসেন্স অনুমোদন করা হয়। তবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করার আগেই নগদ ফাইন্যান্স পিএলসি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স সমর্পণের আবেদন করে চিঠি পাঠায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে ব্যাংকিং প্রফেশনাল পরীক্ষা যে বাধ্যবাধকতা ছিল, তা এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে বলে সভা সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া সভায় বৈদেশিক মুদ্রাবাজার পর্যবেক্ষণ ও আমদানি মূল্যের সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ থেকে ব্লুমবার্গ টার্মিনাল স্থাপনে বিষয়টি এজেন্ডভুক্ত থাকলেও আলোচনা হয়নি। পরবর্তী সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমদানির বিষয়ে আরও কঠোর নজরদারি করার জন্য ব্লুমবার্গের সঙ্গে একটি চুক্তি দরকার। যাতে পণ্যের দর সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করা যায়। পণ্যের দর সাশ্রয়ী করার ক্ষেত্রে এটা ভূমিকা রাখবে।
অন্যদিকে সভায় এজেন্ডা হিসেবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের অনুকূলে পুনঃ অর্থসংস্থান বাবদ এক হাজার কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুরি, বাণিজ্যিক ব্যাংকের কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ এবং আদায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেডকে অর্থায়নের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক সোনালী ব্যাংকে রাখা আমানতের সুদহার হিসাবায়নের ক্ষেত্রে লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফার রেটের (লাইবর) পরিবর্তে বেঞ্চমার্ক সুদহার ও মার্জিন নির্ধারণের বিষয়ে আলোচনা করা হয়। তবে এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যায়নি।
ভারতের ভিসা পাওয়া নিয়ে পাকিস্তান দল যে জটিলতার মধ্যে ছিল সেটার অবসান হয়েছে। অবশেষে ভারতের সরকার পাকিস্তান দলের জন্য ভিসা অনুমোদন করেছে।
সোমবার ক্রিকেট বিষয়ক ভারতীয় ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ এই খবর জানিয়েছে। ভিসা অনুমোদনের ফলে বাবর আজমের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান দল এখন বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার জন্য ভারতে ভ্রমণ করতে পারবে। আগামী ৫ অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া ১০ দলের আসরে শেষ দল হিসেবে ভিসা পেয়েছে পাকিস্তান।
ওয়ানডে বিশ্বকাপ অংশ নিতে আগামী বুধবার ভারতের উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার কথা রয়েছে পাকিস্তান দলের। তবে যাত্রার ৪৮ ঘণ্টা আগেও ভিসা না পাওয়াকে 'অস্বাভাবিক দেরি' হিসেবে উল্লেখ করে উদ্বেগ জানায় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তারা বিষয়টি নিয়ে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির দ্বারস্থও হয়। এর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এসেছে ভিসা অনুমোদনের খবর।
ক্রিকবাজ জানিয়েছে, আইসিসির একটি সূত্র তাদেরকে পাকিস্তান দলের ভারতের ভিসা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ভিসা পেতে দেরি হওয়াকে স্বাভাবিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করেছে ওই সূত্র।
সবশেষ এশিয়া কাপের মূল আয়োজক ছিল পাকিস্তান। তবে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে দেশটিতে যেতে চায়নি ভারত। ওই আসরে ভারতের সবগুলো ম্যাচ হয় শ্রীলঙ্কায়। একটি বাদে সুপার ফোরের বাকি সব ম্যাচ আর ফাইনালও অনুষ্ঠিত হয় দ্বীপ দেশটিতে।
ভারত নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকায় হাইব্রিড মডেলে এশিয়া কাপ আয়োজনের প্রস্তাব আসে পাকিস্তানের কাছ থেকেই। এর আগে ভারত দল পাকিস্তানে না গেলে পাকিস্তানও ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে যাবে না বলে হুমকি দিয়েছিল পিসিবি। যদিও নিজেদের সেই সিদ্ধান্ত থেকে পরে সরে আসে তারা।
বিশ্বকাপের আগে আগামী শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে মাঠে নামবে পাকিস্তান। তিনদিন পর তাদের আরেকটি প্রস্তুতি ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপে বাবরদের প্রথম ম্যাচ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। আগামী ৬ অক্টোবর হায়দ্রাবাদে অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচটি।
বাংলাদেশে ফৌজদারি অপরাধে আইনের যে ধারায় শাস্তি দেওয়ার হয়, দণ্ডবিধি বা পেনাল কোড নামে আইনটি ১৬৩ বছরের পুরনো। বিচারের দিক-নির্দেশক হিসেবে ফৌজদারি কার্যবিধি (দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর বা সিআরপিসি) নামে পদ্ধতিগত আইনটিও ১২৫ বছর আগের তৈরি। এ ছাড়া ১৫১ বছরের বেশি পুরনো (১৮৭২ সাল থেকে প্রচলিত) সাক্ষ্য আইন (অ্যাভিডেন্স অ্যাক্ট)। ব্রিটিশ আমলে তখনকার প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতিতে তৈরি এ আইনগুলোর কাঠামো নিয়ে আপত্তি না থাকলেও আইন ও বিচারসংশ্লিষ্ট বেশিরভাগ মানুষের প্রশ্ন আছে সময়, পরিস্থিতি ও প্রয়োজনে আইনগুলোর সংস্কার এবং যুগোপযোগী না করা নিয়ে। বাংলাদেশসহ এ উপমহাদেশে ৭৬ বছর আগে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয়েছে। আইনের সংস্কার নিয়ে বছরের পর বছর দাবি উঠেছে জোরেশোরে। স্বাধীনতার ৫২ বছরে এসব আইনের আলোকে, অনেক বিশেষ আইন হয়েছে। সেগুলোর অনেক ধারাতেও অসংগতি ও অস্পষ্টতার বিষয়টি নানা সময়ে আলোচনায় এসেছে। কিন্তু সংস্কারের বিষয়টি এখনো উপেক্ষিত।
১৮৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত দণ্ডবিধিতে ৫১১ ধারার ৪৫৯টি শাস্তিসংক্রান্ত। এর মধ্যে আটটি ধারায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। ১৮৯৮ সালে তৈরি হওয়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬৫ ধারার বেশিরভাগই বিচারের লক্ষ্যে দিকনির্দেশনা সংক্রান্ত। এ ছাড়া ১৫১ বছরের বেশি পুরনো (১৮৭২ সাল থেকে প্রচলিত) ও ১৬৬টি ধারা সংবলিত সাক্ষ্য আইনে (অ্যাভিডেন্স অ্যাক্ট) ধর্ষণের শিকার নারীদের জন্য অবমাননাকর একটি ধারা গত বছর নভেম্বরে বাতিলসহ এ আইনে ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণ আমলে নেওয়ার সুযোগ রাখা হয় সংশোধনীতে। আইন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, সাক্ষ্য আইনটিকে আরও যুগোপযোগী ও সংস্কারের অংশ হিসেবে চলতি বছরেই তারা সুপারিশসংক্রান্ত প্রতিবেদন দেবেন।
আইনের সংস্কার প্রশ্নে পাঁচজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে তাদের মতামত নিয়েছে দেশ রূপান্তর। প্রায় অভিন্ন সুরে তারা বলেন, আইনের প্রতিষ্ঠিত নীতিবাক্য হলো ‘দশজন অপরাধী খালাস পেলেও একজন নিরপরাধ ব্যক্তি যেন সাজা না পান’। ফলে বিচারে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ এবং আইনের ভাষা হতে হয় সহজ ও অযান্ত্রিক। একই সঙ্গে বিচারপ্রত্যাশীর ভোগান্তি লাঘবে দ্রুত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হয়। তাদের মতে, প্রায় ২০০ বছরের ঔপনিবেশিক সময়ে মানুষকে প্রজা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এর প্রভাব পড়েছে ওই সময়ে তৈরি আইনগুলোতে। যেখানে শুধু শাস্তিকেই লক্ষ্য করা হয়েছে। অন্যদিকে একশ, দেড়শ বছরে অপরাধের ধরন, ভিন্নতা, অপরাধে প্রযুক্তিগত ব্যবহারসহ বদলেছে অনেক কিছু। বিপরীতে আইনগুলোতে নগণ্য কিছু সংশোধনী ছাড়া সংস্কার হয়নি।
পুরনো আইনের সংস্কার না হওয়াকে মামলাজটের কারণ উল্লেখ করে আইনজীবীরা আরও বলেন, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি, আদালতের সময়সহ বিচারপ্রত্যাশীর অর্থ ও সময় সাশ্রয়, অপরাধীর পুনর্বাসন, সংশোধন ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তেমন কিছুই নেই আইনগুলোতে। অন্যদিকে আইনের অপপ্রয়োগ কিংবা দুর্বলতায় প্রায়ই নির্দোষ ব্যক্তিকে নির্যাতন, জেলে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) ট্রাস্টি অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের জন্য আইন। কিন্তু ব্রিটিশরা কর্তৃত্ব ও নিপীড়নমূলক অনেক আইন করেছে মানুষকে শোষণ, শাসন ও লুণ্ঠন করতে। তখন তো আর নাগরিক ও মানবাধিকার নিয়ে এত কথা হতো না। তাদের লক্ষ্যই ছিল কথায় কথায় স্বাধীনতাকামীদের বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেওয়া। তিনি বলেন, ‘এখন তো আমরা ব্রিটিশদের উপনিবেশে নেই। কিন্তু ৫৪ (বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার) ১৬৭ ধারার (রিমান্ড) মতো নিপীড়নমূলক আইনগুলোসহ আরও অনেক কিছু রয়ে গেছে। ১৯৭২ সালে মাত্র কয়েক দিনে একটি ভালো সংবিধান হলে এখন মানুষের জন্য যুগোপযোগী আইন কেন হবে না?’
সম্প্রতি ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নিয়োগ পাওয়ার পরদিন গত ১৩ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি মামলাজটকে তার প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন। এ লক্ষ্যে আইনের সংস্কার বড় বিষয় উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘মানুষের দুর্গতি ও কষ্ট লাঘবে সরকার নিশ্চয়ই এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করবে।’ নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা।
আইন সাময়িকী ডিএলআরের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি যথার্থই বলেছেন। আমরাও আইনের সংস্কার চাই। শুধু ফৌজদারি কিংবা দণ্ডবিধি নয়, এসব আইনের আলোকে আর্থিক অপরাধ, মানি লন্ডারিংসহ এমন কিছু আইন আছে যেগুলোর অনেক কিছুর সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে।’
কিছুদিন আগে ভারত সরকার ব্রিটিশদের তৈরি ফৌজদারি আইন ব্যাপক সংস্কারে উদ্যোগ নিয়েছে।
সংস্কারের রূপরেখা আলোর মুখ দেখেনি : পুরনো ফৌজদারি আইনের সংস্কার নিয়ে ২০১১ সালে একটি রূপরেখা তৈরি করে আইন মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রতিবেদন দিয়েছিল আইন কমিশন। এতে আইনের প্রতিষ্ঠিত নীতিবাক্যটিকে একটু ভিন্নভাবে উপস্থান করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘একজন নির্দোষ ব্যক্তি যাতে সাজা না পায় এবং একজন অপরাধীও যাতে খালাস না পায়।’ আইনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে প্রশ্নের অবতারণা করে সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধানে ৩৩টি সুপারিশ করে কমিশন। এর মধ্যে তদন্ত ও বিচারের ত্রুটি কাটাতে ফৌজদারি অপরাধের তদন্ত করতে স্থায়ী, পেশাদার ও দক্ষ পৃথক তদন্ত সংস্থা গঠন, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য শুধু হাতেকলমে না লিখে টেপ রেকর্ডার, ভিডিওতে রাখা, ১৬৪ ধারায় আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সঙ্গে সাক্ষীর বক্তব্য রেকর্ড করা, মিথ্যা ও তুচ্ছ অভিযোগকারীকে জরিমানা, ক্ষতিপূরণ বা কারাদণ্ড দিতে ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি দায়রা জজকেও ক্ষমতা দেওয়া, বিচারকাজের দীর্ঘসূত্রতা কমাতে মুলতবির সময় সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া, মামলার কার্যক্রম স্থগিতের সময়সীমা ৩০ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনের তাগিদ দেয় কমিশন। এ ছাড়া কারাগারের চাপ কমানো এবং আসামিকে সংশোধনের লক্ষ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও অভিযোগ গঠনের সময় দোষ স্বীকার করলে সাজা রেয়াত দেওয়া, যুক্তিতর্কের কারণে মামলার কার্যক্রম বিলম্বিত হওয়ায় তা লিখিত আকারে জমা দেওয়া, আদালতের সংখ্যা অনুপাতে আপিল আদালত প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে কমিশন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কমিশনের ওই সুপারিশ আলোর মুখ দেখেনি।
কমিশনের মুখ্য গবেষণা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোর্শেদ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রতিবেদন দেওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে কমিশন অবহিত নয়।
দণ্ডবিধির অনেক ধারার অসংগতি ও অস্পষ্টতা নিয়ে আইন ও বিচার সংশ্লিষ্টরা বলেন, এই আইনে অনেক কিছুই আছে। কিন্তু গণপিটুনিতে মৃত্যু, অর্থনৈতিক অপরাধের মতো আরও কিছু বিষয়ে আইনে কিছু নেই। অন্যদিকে পুরনো এ আইনে এখনো ১০ টাকা, ১০০ টাকা ও ২০০ টাকার মতো অর্থদণ্ডের বিধান রয়ে গেছে। জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার তিনজন (একজন অবসরে) বিচারক এসব আইনে তাদের বিচারিক অভিজ্ঞতার বিষয়টি দেশ রূপান্তরের কাছে তুলে ধরেন। সংগতকারণে তারা তাদের নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানান। একজন বিচারক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আদালত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রসিকিউশনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার সমন্বয়ে একটি ফৌজদারি মামলার বিচার কার্যক্রম হয়। কিন্তু বিচারের দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে শুধু বিচার বিভাগকে শুনতে হয়। পুরনো আইনগুলোতে এমন অনেক কিছু আছে, যা একটু আধুনিক হলে বিচারকাজে আরও গতিশীল হবে।’ অন্য একজন বিচারক বলেন, ‘বিচারকাজের সময় টাইম (আদালত ও বিচারপ্রার্থীর সময়), কস্ট (বিচারপ্রার্থীর খরছ) এবং ভিজিট (বিচারপ্রত্যাশীর আদালতে আসা-যাওয়া) এ তিনটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আইনগুলোতে এসব বিষয়ে স্পষ্ট কিছু দিকনির্দেশনা নেই। সংগতকারণে বিচারপ্রার্থীর প্রতি সিমপ্যাথি (সহানুভূতি) ও ইমপ্যাথি (সহানুভূতির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু করা) থাকা সমীচীন।’
আইন সংস্কারের উদ্যোগ থমকে দুই বছর ধরে : ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফৌজদারি আইন সংস্কার ও আইনটি বাংলা ভাষায় প্রণয়ন করতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হককে নির্দেশ দেন। দুদিন পর ফৌজদারি আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন করে আইনটি যুগোপযোগী, আধুনিক ও বাংলা ভাষায় প্রণয়নের উদ্দেশ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এতে চেয়ারপারসন করা হয় মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব মো. মইনুল কবিরকে। কমিটিকে অন্যান্য দেশের আইন বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা করে সমস্যা চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তবে মন্ত্রণালয়ের ওয়াকিবহাল একটি সূত্রের তথ্য বলছে, দুই বছর পার হলেও এ বিষয়ে কার্যকর কোনো অগ্রগতি নেই।
এ বিষয়ে জানতে সচিব ময়নুল কবিরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল ধরেননি। সার্বিক বিষয়ে জানতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও তার সাড়া মেলেনি। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এএম আমিন উদ্দিন মনে করেন, পুরনো আইনগুলোর আমূল পরিবর্তন কিংবা পুরো সংস্কার নয়, যতটুকু করলে বিচারপ্রার্থীর দ্রুত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে সেটি হতে পারে। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আইনগুলোর প্রসিডিউরে (কার্যপ্রণালি) তেমন ভুল নেই। যেসব ক্ষেত্রে অসংগতি বা অস্পষ্টতা আছে শুধু সেগুলোই আলোচনার মাধ্যমে সংশোধন করা উচিত। এ ক্ষেত্রে অংশীজন হিসেবে অন্যদের সঙ্গে অবশ্যই আইনজীবীদের সম্পৃক্ত রাখা উচিত।’
ন্যায্য পারিশ্রমিক ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার সীমিত করার দাবি নিয়ে পাঁচ মাস আগে হলিউডে শুরু হওয়া হট্টগোলের অবসান হচ্ছে। আন্দোলনকারী লেখকরা প্রযোজকদের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর পর ধর্মঘট তুলে নেওয়ার কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানাচ্ছে, পাঁচ মাস আগে লেখক বা চিত্রনাট্যকারদের আন্দোলনের সঙ্গে যোগ দেন অভিনয়শিল্পীরা। যার কারণে হলিউডে একধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। বন্ধ হয়ে যায় অনেক সিনেমার নির্মাণকাজ। তবে স্থানীয় সময় গত রবিবার হলিউডের লেখক ইউনিয়ন বড় স্টুডিওগুলোর সঙ্গে একটি প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছেছে।
সিএনএন বলছে, এই চুক্তির ফলে হলিউডের ইতিহাসের বড় দুটি ধর্মঘটের মধ্যে একটি পক্ষ কাজে ফিরতে সম্মত হলো। এই ধর্মঘটের ফলে প্রায় পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে বেশিরভাগ ফিল্ম ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানের চিত্রায়ণ। ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতিতে এর প্রভাব বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের। তাই এবার আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে লেখক ও অভিনয়শিল্পীদের কাজে ফেরাতে সচেষ্ট হচ্ছে হলিউডের স্টুডিওগুলো।
লেখকদের সঙ্গে নিষ্পত্তি হলেও এখনই হলিউডের স্টুডিওগুলোর আলো জ্বলছে না। অভিনেতাদের সংগঠন এসএজি-এএফটিআরএ এখনো পারিশ্রমিক ও এআই ইস্যুতে ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছে। এসব দাবির পাশাপাশি লেখকদের পারিশ্রমিক ও লভ্যাংশ ইস্যুতে সংহতি প্রকাশ করে ২ মে থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। এসব বিষয়ে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে বার্তা সংস্থার আহ্বানে সাড়া দেয়নি দ্য অ্যালায়েন্স অব মোশন পিকচার অ্যান্ড টেলিভিশন প্রডিউসারস, ওয়াল্ট ডিজনি, নেটফ্লিক্স, ওয়ার্নার ব্রস ডিসকভারিসহ অন্যান্য প্রতিনিধিত্বকারী বাণিজ্যিক গোষ্ঠী।
চলতি বছরের ২ মে থেকে শুরু হওয়া ধর্মঘটে ১১ হাজারেরও ফিল্ম এবং টিভি লেখক অংশগ্রহণ করেন, যারা স্ট্রিমিং যুগে উচ্চ বেতন এবং আরও ভালো কাজের দাবি করছেন। তারা যুক্তি দিয়েছেন যে স্টুডিওগুলো স্ট্রিমিং প্ল্যাটফরম থেকে যে আয় করেছে, সেই তুলনায় তাদের ক্ষতিপূরণ মিলছে না। লেখকরা নতুন নিয়মও চান, যাতে এসব স্টুডিও টিভি শোগুলোর জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্টসংখ্যক লেখক নিয়োগ করতে হবে। একই সঙ্গে বড় স্টুডিওগুলোর কাছ থেকে বেশি পারিশ্রমিক চেয়ে একটি চুক্তি করতে চেয়েছিল লেখকদের সংগঠন রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা (ডব্লিউজিএ)। সেই চুক্তির চেষ্টা ব্যর্থ হওয়াতেই মূলত ধর্মঘটের ডাক দেন লেখকেরা। হলিউড আন্দোলনের কারণে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে টেলিভিশন শো ও হলিউডের নির্মাণাধীন সিনেমাগুলো।
বিশ্বকাপ যত এগিয়ে আসছে, বাংলাদেশে বিশ্বকাপ নিয়ে নাটক ততই জমে উঠেছে। একদিন পর দল বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছাড়বে, অথচ এখনো ঘোষণা হয়নি বিশ্বকাপের দল।
এমন অবস্থায় সোমবার মাঝরাতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় বৈঠকে বসেছিলেন ওয়ানডে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
বিকেলে বিসিবি সভাপতির পেশাগত কার্যালয়, বেক্সিমকোতে নির্বাচক কমিটির সদস্যসহ বিসিবির বেশ কয়েকজন পরিচালকের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন বিসিবি সভাপতি। তারপর সন্ধ্যার দিকে দেশের কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দাবী করা হয় সাকিব ও তামিম ইকবালের ভেতর নতুন দ্বন্দের খবর।
গণমাধ্যমগুলোর দাবী, তামিম ইকবাল জানিয়েছেন বিশ্বকাপে তিনি পাঁচটি ম্যাচে খেলতে পারবেন। অন্যদিকে তামিমের এই দাবী মানলে বিশ্বকাপে না খেলার হুমকি দিয়ে রাখেন সাকিব।
২০১৯ বিশ্বকাপে চোটজর্জর মাশরাফী বিন মর্তুজা দলে থাকায় এবং সবগুলো ম্যাচে খেলায় অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের পরও দলকে বিশ্বকাপে অষ্টম হতে দেখেছেন সাকিব, তাই এই শর্তে তার নেতৃত্বে না থাকার আশংকাই প্রবল। এই দুই জনকে সমঝোতা করার জন্য মাশরাফীকে পাপন দায়িত্ব দিয়েছেন এমন একটা খবরই দাবী করা হয়। যদিও এসবের পক্ষে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
ধোঁয়া থাকলে আগুন থাকবেই। তাই মধ্যরাতে, পৌনে ১২টায় সাকিবের বিসিবি সভাপতির বাসভবনে ছুটে যাওয়া আর সিডনি থেকে বাংলাদেশে পা রাখার ঘণ্টা তিনেকের মাথায় তাকে গুলশানের আইভি লেগেসিতে ছুটে আসতে দেখার মাধ্যমেই বোঝা যায়, চূড়ান্ত দল ঘোষণার আগে শেষ মুহূর্তে কোনো মারপ্যাঁচ লেগেছে।
প্রায় ৩ মাস পর আন্তর্জাতিক ম্যাচে ব্যাট করতে নেমে তামিম খেলেছিলেন ৪৪ রানের ইনিংস। পরের ম্যাচে আবার তিনি বিশ্রামে, যেটা বিসিবির মেডিক্যাল বিভাগেরই সুপারিশে।
তাই বিশ্বকাপে তামিম কতটা ফিট হয়ে খেলতে পারবেন, আদৌ খেলতে পারবেন কি না এসব নিয়েই হয়তো হয়েছে শেষ মুহুর্তে মধ্যরাতের আলোচনা।
অধিনায়ক, কোচ আর বিসিবি প্রধান মিলে মিনিট চল্লিশেক বৈঠক করেছেন। আগে বের হয়েছেন হাথুরুসিংহে, তার মিনিট দশেক পর সাকিব। কেউই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি, গাড়ির কাঁচটাও নামাননি। আর পাপনের বাসায় যখন এসব চলছে, তখন এক বন্ধুর সঙ্গে বাসায় বসে চাউমিন খাচ্ছেন তামিম!
সাকিব-তামিম একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা বলেন না, এই খবর পুরাতন। শোনা গেছে সম্প্রতি একটি মোবাইলে আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপণের কাজে দুজনের ভেতর সম্পর্কে তিক্ততা বেড়েছে। তামিমের খেলা, না খেলা এসব নিয়েও জলঘোলা হওয়ার কারণেই নাকি সাকিবের বিরক্তি বেড়েছে।
তবে দুজনের কারো কাছ থেকেই এসব নিয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তামিম অধিনায়ক থাকা অবস্থায় ইংল্যান্ড সিরিজের আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন 'নাথিং এলস ম্যাটার্স'। সাকিবও স্বভাবসুলভ ভাবেই পাশ কাটিয়ে গেছেন এসব প্রসঙ্গ।
দল ঘোষণার আগের দিনে, মাঝরাতে বিসিবি প্রেসিডেন্টের বাসভবনে কোচ ও অধিনায়কের বৈঠক হতে পারে শেষ মুহূর্তের বোঝাপড়া। যেহেতু একদিন বাদেই উড়াল দিতে হবে। অথবা তামিম সংক্রান্ত ব্যপারে চূড়ান্ত ফয়সালা। উত্তরটা পেতে অপেক্ষা মাত্র কয়েক ঘণ্টার।
২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনকেন্দ্রিক সক্রিয় অবস্থানের পর দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের বড় কোনো কর্মসূচি নেই। কর্মসূচি পালন করতে চাইলেও ছাত্রলীগের হামলার মুখে দাঁড়াতেই পারছেন না সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। মাঝেমধ্যে ক্যাম্পাসের আশপাশে ছোটখাটো ঝটিকা মিছিল করেই সারছে দলীয় কর্মসূচি। তবে বিএনপির এক দফা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আবারও ক্যাম্পাসে সরব হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।
জানা যায়, ক্যাম্পাসে সক্রিয় হওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিভিন্ন উপদলে ভাগ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত আড্ডা এবং কর্মী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা। আগামীতে ঢাবি ছাত্রদলের নেতৃত্বপ্রত্যাশী নেতারা এসব কর্মকা- পরিচালনা করছেন বলে জানা যায়। আড্ডা দিতে গিয়ে শনিবার রাতে ছাত্রলীগের হামলার শিকারও হন কয়েক জন ছাত্রদল নেতা। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ সক্রিয় দেখা যাচ্ছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের। ‘আমরা দ্রুত ফিরছি, মাত্র কয়দিনের অপেক্ষা’ লিখে স্ট্যাটাস দিতে দেখা যায় তাদের।
এদিকে রবিবার ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের দেয়ালে ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ সে্লাগান লিখে আলোচনা তৈরি করে ঢাবি ছাত্রদল। ছাত্রদল নেতা আনিসুর রহমান খন্দকার অনিকের নেতৃত্বে মধুর ক্যানটিন ছাড়াও ডাকসু ক্যাফেটেরিয়া, কলা ভবনসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দেয়ালে ২০টির বেশি দেয়াল লিখন করেছে তারা। এসব দেয়ালে ‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’, ‘ঘুরে দাঁড়াও বাংলাদেশ’, ‘তারেক রহমান বীরের বেশে আসবে ফিরে বাংলাদেশে’ সে্লাগান লেখা হয়। যদিও এদিন দুপুরের দিকে মধুর ক্যানটিনের লেখা মুছে দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ঢাবি ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশব্যাপী বিএনপির লংমার্চ শেষে অক্টোবরে ঢাকাকেন্দ্রিক টানা আন্দোলন চলবে। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও পুরোদমে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ছাত্রদল। যত বাধাই আসুক ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক কর্মসূচি ও আন্দোলন করতে চান তারা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত স্যাংশন ও বিএনপির সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি চূড়ান্ত রূপ লাভের অপেক্ষা থাকায় নেতাকর্মীরা বেশ উজ্জীবিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও তাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন বলে দাবি ছাত্রদলের নেতাদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। অক্টোবরে তা চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আপাতত বিভিন্ন ভাগ হয়ে হয়ে আড্ডা, দেয়াল লিখনসহ নানান কর্মসূচি চলছে। নতুন শিক্ষার্থীরাও আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। ছাত্রলীগের দখলদারিত্বের বিনাশ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। দেশনায়ক তারেক রহমানের চূড়ান্ত নির্দেশের অপেক্ষায় আছি আমরা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গতকালও ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমরা হামলার জবাব হামলা দিয়ে নয়, কাজের মাধ্যমে জবাব দিতে চাই। সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিনাশ করতে চাই। ক্যাম্পাস কারও একার সম্পত্তি নয়, যেকোনো সময় আমরা আসব। শুধু সময়ের অপেক্ষা। আমরা দেশনায়ক তারেক রহমানের আগমনী বার্তা দিতে চাই।’
ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেহেতু সামনে নির্বাচন, নির্বাচনকেন্দ্রিক আমাদের কর্মসূচি চলছে। সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ দিতে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসব। আমরা খুব দ্রুতই আসব। হাইকমান্ডের নির্দেশের অপেক্ষায় আছি। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল প্রস্তুত আছি। ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে, দাবি আদায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে অচিরেই ক্যাম্পাস থেকে আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে আমরা বিজয় নিয়েই ঘরে ফিরব ইনশা আল্লাহ।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ক্যাম্পাস থেকে হারিয়ে যায়নি। হামলা-মামলার শিকার হয়েও আমরা নিয়মিত পদচারণা অব্যাহত রেখেছি। আগামীতেও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এই ক্যাম্পাসে সরব অবস্থানে থাকবে। ছাত্রলীগের দখলদারিত্বের অবসান ঘটবে শিগগিরই। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পেলে আমরা চূড়ান্ত কর্মসূচিতে যাব। আমরা প্রস্তুত ইনশা আল্লাহ।’
এদিকে ক্যাম্পাস দখল ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করলে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভোররাতে এসে কেউ যদি দেয়াল লিখন করে, এটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলে আমরা মনে করি না। আদালত কর্তৃক ঘোষিত অপরাধীকে তারা দেশনায়ক বলছে, তাদের কর্মকাণ্ড দ্বারা বোঝা যায় তারা কতটা অথর্ব। বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানচর্চার একটি কেন্দ্র, এখানে দখলদারিত্বের কোনো বিষয় নেই। যেটি ছাত্রদল বলার চেষ্টা করছে দখল করবে, এই চিন্তা-ভাবনা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক যায় না। এসবে আমরা বিশ্বাস করি না। শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য যা যা করার দরকার, আমরা তা করতে রাজি আছি। ক্যাম্পাসকে কেউ অস্থিতিশীল করতে চাইলে তা প্রতিহত করা হবে।’
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনে রদবদলের সুযোগ নেই সরকারের। তাই এর আগেই নির্বাচনী প্রশাসনে ধাপে ধাপে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রশাসনে চলছে পদোন্নতি ও রদবদল। ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রশাসন সাজাতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে বদলি-পদায়ন হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে বড় পদোন্নতি হয়েছে। নির্বাচনের আগে অবসরে যাওয়া কয়েকজন সচিবেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২০ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৮ জন ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিসিএসের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৫ সালে, ২৫তম ব্যাচ ২০০৬ সালে এবং ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৮ সালে।
জানা যায়, নির্বাচনের সময় ডিসিরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকেন। তাদের যে কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে বাতিলের ক্ষমতাও থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও থাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা ডিসির অধীনে। নির্বাচনের সময় সমন্বয়কারীর ভূমিকায়ও থাকেন ডিসিরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন তাদের দুটি ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে। আর সে সময় বিসিএস নিয়ে বেশ বিতর্ক ছিল। বিসিএসে ছিল নানা ধরনের তদবির। ২৪ ও ২৫তম ব্যাচ দুটি বিএনপির সময়ে নিয়োগ পেলেও ২৭তম ব্যাচ নিয়োগ পেয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। কারণ বিএনপির শেষ সময়ে ২৭তম ব্যাচের নিয়োগে বড় ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকায় তা বাতিল হয়। পরে ফের পরীক্ষা নিয়ে ২০০৮ সালে এ ব্যাচের নিয়োগ দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল ২৪তম ব্যাচের নিয়োগ নিয়ে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২৪তম ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডিসির পদ থেকে তুলে আনা হতে পারে। নির্বাচনের সময় যারা ডিসির দায়িত্বে থাকবেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তাদের সবার ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে পরিবার ও নিকট আত্মীয়স্বজনদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো যাচাই করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে আর ডিসির পদে রাখা হবে না।
এ ছাড়া নির্বাচনে অন্যতম ভূমিকা পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। বর্তমানে ৩৩, ৩৪ ও ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা রয়েছেন ইউএনও পদে, যারা আসন্ন নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এখন ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ইউএনওর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে; এ ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারের ২৯১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
জানতে চাইলে সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ইকরাম আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষা হয় যোগ্যতা, মেধা ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে। সেখানে ছাত্রজীবনে কে কোন পার্টি করেছিলেন, কোন দল ক্ষমতায় আছে তা বিবেচনা করা হয় না। বিসিএস কর্মকর্তাদের যে ফাউন্ডেশন ট্রেনিং হয়, তাতে তাকে একজন অফিসার হিসেবেই গড়ে তোলা হয়। এরপর এসিআর, সুপিরিয়রের মতামত, সুনাম, দক্ষতা, যোগ্যতার ভিত্তিতেই একজন কর্মকর্তাকে উচ্চতর পদে দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তবে সরকার যে দল পরিচালনা করে তাদের কিছু নীতিমালা ও উদ্দেশ্য থাকে। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সরকারের নেওয়া বৈধ ও জনকল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা। তিনি প্রলুব্ধ হবেন না, নিরপেক্ষ থেকে তার দায়িত্ব পালন করবেন। যদি কোনো নির্বাচনী দায়িত্বও দেওয়া হয়, সেটাও নিরপেক্ষভাবে তিনি পালন করবেন।’
গত মে মাসে অতিরিক্ত সচিব পদে ১১৪ জনের পদোন্নতি হয়। জুলাই মাসে পাঁচ বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসেই বদলি ও নতুন মিলিয়ে ৩০টি জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উপসচিব পদমর্যাদার এই ডিসি পদে এবারও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আটজন পিএসকে পদায়ন দেওয়া হয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ২২১ কর্মকর্তা। এ পদোন্নতিতে মূল বিবেচনায় এসেছে ২২তম ব্যাচ। বর্তমানে যুগ্ম সচিবের স্থায়ী পদ ৫০২টি। এর বিপরীতে পদোন্নতি পাওয়ার পর যুগ্ম সচিবের সংখ্যা হলো ৯৪৬ জন। এর আগে সর্বশেষ গত বছর ২ নভেম্বর ১৭৫ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। আর গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২৭০ জন সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই অন্তত ১০ জন সচিবের স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার কথা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন আগামী ১৩ অক্টোবর অবসরে যেতে পারেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান ১৪ সেপ্টেম্বর, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আবদুস সালামের ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে আবদুস সালামের চাকরি এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ৯ অক্টোবর, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক ৩০ অক্টোবর, ইআরডি সচিব শরিফা খান ২৪ নভেম্বর, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহসানে এলাহী ২৫ নভেম্বর এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল হোসেন ২৯ নভেম্বর অবসরে যাবেন। ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম এবং ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম। এ ১০ জনের মধ্যে কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন।
গত কয়েক বছরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মুখ্য সচিব পদে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই স্বাভাবিক অবসরের মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। সর্বশেষ সাবেক চার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মধ্যে একমাত্র কবির বিন আনোয়ার ছাড়া বাকি তিনজনই স্বাভাবিক মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। তারা হলেন মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, মোহাম্মদ শফিউল আলম ও খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিনের মধ্যে অন্যতম ভিটামিন ডি। অতি প্রয়োজনীয় এই ভিটামিনের প্রধান উৎস সূর্যের আলো। তবে আমাদের ব্যস্ত জীবনে রোদ পোহানের সময় কই। অফিস থেকে বাসা, বাসা থেকে অফিস। এসির ভেতর থাকতে থাকতে শরীরে তৈরি হচ্ছে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি। ফলে কম বয়সে হাড়ক্ষয়, পিঠে-কাঁধে ব্যথা, চুল ঝরে যাওয়া, ঘা শুকোতে দেরি হওয়া, হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা যায়।
রেগুলার অফিসযাত্রীরা ভিটামিন ডি-এর অভাবে সবচেয়ে বেশি ভোগে। এরা রোদে বসার সময় পান না। যে কারণে এদের মধ্যে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি খুব বেশি দেখা যায়। ৫০ বছরের বেশি বয়সের পর শরীরে অনেক ধরনের ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দেয়, যার মধ্যে ভিটামিন ডিও একটি। এই বয়সে শরীর সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি তৈরি করতে সক্ষম হয় না। যে কারণে এই বয়সের মানুষের শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণ করতে হয় অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে। এনআইএইচ-এর একটি রিপোর্ট অনুসারে, যাদের বডি মাস ইনডেক্স ৩০-এর বেশি বা তাদের শরীরে চর্বির পরিমাণ বেশি তারাও ভিটামিন ডি-এর অভাবের সম্মুখীন হতে পারেন।
কীভাবে বাড়াবেন ভিটামিন ডি?
মাশরুম
মাশরুমে ভিটামিন ডি থাকে। মাশরুম ইউভি রশ্মির সংস্পর্শে এলে ভিটামিন ডি তৈরি করে। এটি খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। কম তেলে রান্না করলে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
সি ফুড
কিছু মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে। রিপোর্ট অনুযায়ী, স্যামন, টুনা এবং ম্যাকেরেল মাছে ভিটামিন ডি থাকে। যদি আমিষভোজী হন তবে আপনি তাদের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
দুধ
এছাড়াও দুধে অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এতে ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি বেশি পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে। বিশেষ করে গরুর দুধে, এটা স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। এর পাশাপাশি সহজে হজম হয়। দই দইয়ে ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকে। দই হাড় মজবুত করে এবং হার্ট ভাল রাখে।
ভিটামিন ডি পাওয়ার সেরা উপায় কি?
রিপোর্ট অনুযায়ী, ভিটামিন ডি পাওয়ার সবচেয়ে ভালো উৎস হল চর্বিযুক্ত মাছ এবং মাছের তেল। ডিমের কুসুম এবং পনিরে অল্প পরিমাণে পাওয়া যায়। উপরন্তু, কিছু মাশরুমে কিছু ভিটামিন ডি২ থাকে।
ভিটামিন ডি এর জন্য রোদে বসার সঠিক সময় কোনটি?
অনেক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে সকাল ও বিকেল হল রোদে বসার সেরা সময়। দুপুরে ইউভিবি রশ্মি সবচেয়ে শক্তিশালী হয়। এর মানে হল আপনি কম সময়ে বেশি ভিটামিন ডি পাবেন। কমপক্ষে ১০ মিনিট এবং সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট রোদে বসলে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।