
সঞ্চয়পত্রের মুনাফাসহ তিন খাতের আয়ের ওপর কর অব্যাহতি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গতকাল বুধবার এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম স্বাক্ষরিত এক এসআরও জারির মাধ্যমে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
অন্য দুই কর অব্যাহতি খাতের মধ্যে রয়েছে মধ্যে রয়েছে সঞ্চয়ী আমানত ও স্থায়ী আমানত থেকে পাওয়া মুনাফা ও রপ্তানির বিপরীতে পাওয়া নগদ ভর্তুকি।
এনবিআরের ওই এসআরওতে বলা হয়েছে, এ তিন উৎস থেকে অর্জিত আয়ের বিপরীতে উৎসে কেটে নেওয়া করের পরিমাণকে চূড়ান্ত করদায় হিসেবে নির্ধারণ করা হবে এবং উৎস থেকে অর্জিত আয়ের বিপরীতে অতিরিক্ত কোনো কর পরিশোধ করতে হবে না।
চট্টগ্রাম মহানগরীর কৈবল্যধাম বিশ্ব কলোনির উত্তরে নন্দন হাউজিং। ২০০০ সালের স্যাটেলাইট ম্যাপে দেখা যায়, পুরো এলাকাটি পাহাড়ি আর সবুজ বনানীতে ছাওয়া ছিল। কিন্তু এখন সেখানে উঁচু-নিচু অসংখ্য ভবন। আর সব ভবন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা সিডিএর অনুমোদন নিয়েই গড়ে উঠেছে। শুধু এই এলাকাই নয়, মহানগরীর ভেতরে ও আশপাশের পাহাড়-জঙ্গল এলাকায় এখন যত আবাসিক বা বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে উঠেছে, সবগুলোর ক্ষেত্রেই একই ঘটনা। নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়েই পাহাড়-জঙ্গল সাবাড় করে বানানো হচ্ছে কংক্রিটের ভবন।
অথচ এই সিডিএর জন্মই হয়েছে প্রতি ২০ বছর পরপর একটি করে মাস্টারপ্ল্যান করে সেই অনুযায়ী বন্দরনগরীর উন্নয়ন সাধন করা। কিন্তু কদিন আগেই বিশ^বাসী দেখেছে, কীভাবে দেশের দ্বিতীয় রাজধানী বলেখ্যাত চট্টগ্রাম জলাবদ্ধতায় হাবুডুবু খেয়েছে। পাশাপাশি গ্রীষ্ম-বর্ষা জুড়ে অসহ্য গরম সহ্য করতে হচ্ছে মানুষকে।
অথচ শান্ত-স্নিগ্ধ-সুখী জীবনের সব আয়োজন ছিল এ নগরে। যেমন ছিল অনুকূলসমৃদ্ধ এক প্রকৃতি; তেমনি ছিল এবং এখনো আছে বিশাল এক সরকারি কর্তৃপক্ষ সিডিএ। নগরীর উন্নয়নে নগরবাসীর অর্থ দিয়েই করা হয় সিডিএর মাস্টারপ্ল্যান। ১৯৯৫ সালের মাস্টারপ্ল্যান তৈরিতে লেগেছিল ১৩ কোটি টাকা। পরে মাস্টারপ্ল্যানের গাইডলাইনের জন্য ২০০৮ সালে আরও প্রায় ৬ কোটি টাকায় প্রণয়ন করা হয়েছিল ড্যাপ। আর এখন ২০২০-৪১ মেয়াদের জন্য মাস্টারপ্ল্যান করতে খরচ ধরা হয়েছে ৩৩ কোটি টাকা। এত টাকা খরচ করে পরিকল্পনাবিদদের নিয়ে তৈরি হয় মাস্টারপ্ল্যান, তবু কেন এত দুর্দশা-ভোগান্তি চট্টগ্রামবাসীর?
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে সেই নেপথ্যের খলনায়কের মুখোশ রক্ষকই হয়েছে ভক্ষক। বন্দরনগরীর রক্ষক সংস্থা সিডিএই করেছে এ সর্বনাশ। আইনের মধ্যে থেকেই প্রচলিত আইন ব্যবহার করে, আইনের সংশোধনীর সুযোগ নিয়ে, আইনের ফাঁকফোকর খুঁজে বের করে, কখনোবা নিজস্ব ক্ষমতাবলে বিশেষ সিদ্ধান্ত নিয়েই উন্নয়নের অজুহাতে প্রকৃতি ধ্বংসের অনুমোদন দিয়ে গেছে সিডিএ। শুধু অন্যদের অনুমোদন দেওয়া নয়, সিডিএ নিজেও সড়ক নির্মাণের নামে বিধিলঙ্ঘন করে সারি সারি পাহাড়-বনানী সাবাড় করেছে।
অনুসন্ধানকালে বারবার মনে হয়েছে, সিডিএ হলো সেই হাতুড়ে ডাক্তারের মতো, যে কি না ভুল চিকিৎসা দিতে দিতে রোগীর ক্যানসার বানিয়ে ফেলে এখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে জ্বর মাপার কাজে। সিডিএ এবার সত্যি সত্যিই ‘অতীতের ভুল সংশোধন করে বিজ্ঞানসম্মত’ মাস্টারপ্ল্যান তৈরির জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বন্দরনগরীর অন্দরের কোথায় কত ডিগ্রি তাপমাত্রা বেড়েছে, সেটা মেপে বের করার জন্য স্যাটেলাইট উপাত্ত ব্যবহার করে চট্টগ্রাম মহানগরীর একটা ‘তাপমাত্রা মানচিত্র’ তৈরি করেছে তারা। সেখানে গত ২২ বছরে নগরীর কোথাও কোথাও সাড়ে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা বেড়েছে দেখে সিডিএ নিজেও চমকে উঠেছে।
আইনের ফাঁদেই সর্বনাশ : ১৯৫৯ সালে জন্ম নিয়ে ১৯৬১ সালেই চট্টগ্রামকে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন করতে প্রথম মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে সিডিএ। পরের মাস্টারপ্ল্যানটি ১৯৯৫ সালে হয়ে অনুমোদন পায় ১৯৯৯-এ এবং মেয়াদ শেষ হয় ২০১৫-তে। সর্বশেষ নতুন মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ ২০২০ সালে শুরু হয়, শেষ হবে আগামী বছর। এর মেয়াদ থাকবে ২০৪১ পর্যন্ত। প্রশ্ন হলো, এসব মাস্টারপ্ল্যান সত্ত্বেও সিডিএ পাহাড়ি এলাকায় পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণের অনুমোদন দিল কীভাবে?
সিডিএর ইমারত নির্মাণ আইন ১৯৫২ এর ৩গ ধারায় বলা আছে, ‘কোনো ব্যক্তি অথরাইজড অফিসারের বিনা আগাম মঞ্জুরিতে, অত্র আইনের আওতাভুক্ত এলাকায় কোনো পাহাড় কর্তন বা ধ্বংস করিতে পারিবে না এবং এইরূপ মঞ্জুরি অথরাইজড অফিসার যেইরূপ সমীচীন মনে করেন, সেইরূপ শর্ত সাপেক্ষে হইবে।’
অর্থাৎ শর্তসাপেক্ষে পাহাড় কাটার অনুমোদন দিতে পারবেন অথরাইজড অফিসার। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘পাহাড় কর্তন বা ধ্বংস করা হইলে উহার সন্নিহিত কিংবা আশেপাশের কোনো পাহাড়, ইমারত, স্থাপনা বা ভূমির মারাত্মক ক্ষতি হইবে না বা পাহাড়টি কর্তন বা ধ্বংসের কারণে নর্দমা প্রবাহ বা নদী পলিযুক্ত হইবে না বা বাধাগ্রস্ত হইবে না প্রভৃতি।
অর্থাৎ অথরাইজড অফিসার যদি মনে করেন, তিনি পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিতে পারবেন। নগরীর আমিরবাগ আবাসিক এলাকা, জিইসি মোড়ের ওআর নিজাম রোড আবাসিক এলাকা, খুলশী (উত্তর) আবাসিক এলাকাসহ অনেক এলাকা আশির দশকে গড়ে উঠেছে। এই এলাকাগুলো একসময় পাহাড় ছিল। তাহলে দেখা যাচ্ছে, সিডিএর আইনের আলোকেই এসব ভবন গড়ে উঠেছে।
তবে ১৯৯৬ সালের ইমারত নির্মাণ আইনে পাহাড় কাটা ও অনুমোদনের বিষয়টি আরও স্পষ্ট করা হয়েছে। সেই আইনের বিধি-৩ এর (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘পাহাড় কর্তন বা ধ্বংস সাধনের অনুমোদনের জন্য অথরাইজড অফিসারের নিকট নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে।’ একই আইনের বিধি-৪(৩)-এ বলা হয়েছে, ‘পাহাড় কর্তন বা ধ্বংস সাধন অনুমোদনের জন্য ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা বা আয়তন অনুসারে বিঘাপ্রতি ১০ হাজার টাকা হারে ফি প্রদান করিতে হইবে।’
১৯৯৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত এই বিধির আলোকেই বন্দরনগরীতে পাহাড় কাটার অনুমোদন দেওয়া হতো। ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত দায়িত্বে থাকা সিডিএর একাধিক অথরাইজড অফিসারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ সময়ে ‘পাহাড় কর্তন ও মোচন কমিটি’ নামে একটি কমিটি ছিল। এ কমিটি চট্টগ্রামে পাহাড় কাটার অনুমোদন দিত। সিডিএর চেয়ারম্যান ছিলেন সেই কমিটির প্রধান। ২০১০ সাল পর্যন্ত এ কমিটি চট্টগ্রামে পাহাড় কাটার অনুমোদন দিয়ে আসছিল। ২০১০ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন সংশোধন করা হয়। সেই সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন, দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করা যাইবে না। তবে শর্ত থাকে যে, অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণক্রমে কোনো পাহাড় বা টিলা কর্তন বা মোচন করা যাইতে পারে।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ২০১০ সালের এ আইনের পর পরিবেশ অধিদপ্তর কোনো পাহাড় কর্তনের অনুমোদন দেয়নি। শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পের আওতায় সীতাকুন্ড ও মিরসরাই এলাকার ১২টি পাহাড় কাটার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এমনকি সিডিএ ১৬টি পাহাড় কেটে ডিটি-বায়েজীদ সংযোগ সড়ক নামে যে চার লেনের সড়ক নির্মাণ করেছে, সেই পাহাড়গুলো কাটার অনুমোদন কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর এখনো দেয়নি। কিন্তু সিডিএ পাহাড়-জঙ্গল সাবাড় করে সড়ক বানিয়ে ফেলেছে। সিডিএকে এজন্য ২০২০ সালে ১০ কোটি টাকা এবং রাস্তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্সকে ৫ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর।
২০১০ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রামের পরিচালকের দায়িত্বে থাকা জাফর আলম (বর্তমানে অবসরে) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবেশ আইনের সংশোধনীর গেজেট দেখিয়ে সিডিএকে বলেছিলাম, পাহাড়ের বিষয়ে আপনারা কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। আর তখন থেকেই পাহাড় কর্তন ও মোচন কমিটির কার্যক্রম বিলুপ্ত হয়।’ তিনি বলেন, ‘২০১০ সালের পরিবেশ আইন সংশোধনের ফলে পাহাড় কাটা পুরোপুরি নিষিদ্ধ হয়েছে।’
স্যাটেলাইট উপাত্ত এবং চট্টগ্রাম শহরের পাহাড়ি এলাকার বসতিগুলোর দিকে তাকালে জাফর আলমের বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায়। উপাত্তে দেখা যায়, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের স্থায়ী ক্যাম্পাস কিন্তু বায়েজীদ এলাকার গহিন পাহাড়ি এলাকায় ছিল। এ ক্যাম্পাসের অনুমোদনও কিন্তু দিয়েছিল পাহাড় কর্তন ও মোচন কমিটি। এটাই ছিল ওই কমিটির সর্বশেষ অনুমোদন। ২০০৬-০৭ সালে পাহাড় কেটে গড়ে তোলা সিটি করপোরেশনের লেকসিটি আবাসিক এলাকা এবং অনুমোদনের পর তারা (এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন) ২০১০ সালের শেষদিকে ব্যাপক হারে পাহাড় কেটেছিল। আর এর পরপরই ওই এলাকা জুড়ে ব্যাপক হারে পাহাড় কাটা শুরু হয়।
ওই সময় যে ১৬টি পাহাড় কেটে সিডিএ রাস্তা করেছিল, সেই পাহাড়গুলোর অধিকাংশের মালিক ছিল জেলা প্রশাসন। এ বিষয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘সিডিএ এভাবে পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ করতে পারে না। তবু তারা কাজটি করেছে।’
থেমে নেই পাহাড় কাটা
২০১০ সালের পরও কিন্তু পাহাড় কেটে সাবাড় করা হয়েছে নগরীর বিভিন্ন এলাকায়। আকবর শাহ থানাধীন শাপলা আবাসিক এলাকা, পশ্চিম খুলশী কৃষ্ণচূড়া আবাসিক এলাকার উত্তরের লোহাগাড়া হাউজিং, গোল্ডেন ভিউ, বায়েজীদ, চন্দ্রনগর, বায়েজীদ ব্রিকফিল্ড রোড, রূপসী হাউজিং, আরেফিন নগরসহ প্রভৃতি এলাকায় পাহাড় কাটা হয় ২০১০ সালের পর। শুধু গত বছরেই পাহাড় কাটা মামলা হয়েছে ২০টি।
‘পরিবেশের আওতায় তো গিয়েছিল ২০১০ সালে। এর আগের পাহাড়গুলো কীভাবে কাটা হয়েছিল’ জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরীর পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস বলেন, ‘তখন কীভাবে কাটা হয়েছিল সেটা আমি কীভাবে বলব? তখন কারা দায়িত্বে ছিলেন, তাও আমার জানা নেই।’
চট্টগ্রামে পাহাড় কর্তন ও মোচন কমিটি নামে একটি কমিটি ছিল, তখন আপনার চেয়ার (উপপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর) ছিল সেই কমিটির সদস্য। এর জবাবে হিল্লোল বলেন, ‘তাহলে তখনকার সময়ে পাহাড়গুলো কর্তনের অনুমোদন ওই মোচন কমিটি দিয়েছে। আমাদের পরিবেশ ভবনের পাশেই ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের অনুমোদনও ওই কমিটি দিয়েছে হয়তো।’ উল্লেখ্য, বর্তমান পরিবেশ ভবনটিও পাহাড় কেটে গড়ে উঠেছিল ২০০৫ সালে।
২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অথরাইজড অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি দায়িত্বে থাকাকালে পাহাড় কর্তন ও মোচন কমিটির সুপারিশে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনকে পাহাড় কাটার অনুমোদন দিয়েছিলাম।’
সিডিএর প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদের পদ থেকে গত বছর অবসরে যাওয়া স্থপতি শাহীনুল ইসলাম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-১৯৯৬ এর আওতায় সিডিএতে ভূমি ব্যবহার কমিটি নামে একটি কমিটি ছিল। এই কমিটি ভূমি কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে এবং সেখানে কোনো ধরনের ভবন নির্মাণ করা যাবে, তার অনুমোদন দিত। ১৯৯৫ সালের মাস্টারপ্ল্যানে চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো চিহ্নিত করে তা সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছিল। সেই মাস্টারপ্ল্যানটি ১৯৯৯ সালের এপ্রিলে অনুমোদন পাওয়ার পর পাহাড়ি এলাকায় আর কোনো ভবনের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছিল না।’
এর আগে কী অনুমোদন দেওয়া হতো এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এর আগে ১৯৫২ সালের ইমারত নির্মাণ আইনে অথরাইজড অফিসারের অনুমোদনক্রমে পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণ করা যেত। তাই ১৯৯৫ সালের মাস্টারপ্ল্যান ১৯৯৯-এ অনুমোদনের পর পাহাড়ি এলাকায় ভবন নির্মাণের চাপ বাড়তে থাকে। পরে ২০০১ সালে সিডিএর তৎকালীন চেয়ারম্যান কর্নেল এম এম কে জেড জালালাবাদী থাকার সময়ে ভূমি ব্যবহার কমিটির সভায় একটি সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্তে বলা হয়, মাস্টারপ্ল্যানে যেসব পাহাড়কে চিহ্নিত করা হয়েছে সেসব পাহাড়ি এলাকা যদি আংশিক বা সম্পূর্ণ কাটা অবস্থায় থাকে, তাহলে সেসব এলাকায় সীমিত আকারে আবাসিক ভবনের অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে।’
শাহীনুল ইসলাম খান বলেন, ‘এই সীমিত আকারে ব্যবহারের অনুমোদনের যে আদেশ দেওয়া হয়েছে, সেই আদেশকে ভিত্তি করেই চট্টগ্রাম শহরের সব পাহাড়ি এলাকায় ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ২০০৯ সাল পর্যন্ত।’
২০০৯ সালের পর অনুমোদন দেওয়া হয় কীভবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তখন ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০০৮ অনুমোদন পাওয়ার পর পাহাড়ি এলাকায় ১০ থেকে ৩০ শতাংশ ভূমি ব্যবহার করে একক পরিবারের ভবন নির্মাণ করতে পারবে এমন শর্তে আমরা অনুমোদন দিয়েছি।’
কিন্তু বাস্তবে তো কোনো পাহাড়েই তা মানা হয়নি। প্রসঙ্গটি তুললে শাহীনুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা ইমারত নির্মাণ কমিটি অনুমোদন না দিলে আবেদনকারী নগর উন্নয়ন কমিটি বা চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করে। তখন নগর উন্নয়ন কমিটি শর্ত শিথিল করে ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয়। আর এতেই নগরীর পাহাড়ি এলাকাগুলোতে বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে।’
২০০০ সালের দিকে যে পাহাড় কাটা বেড়ে গিয়েছিল তা প্রমাণ করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রে। ২০০১ সালের ১৬ জুলাই সিনিয়র সহকারী সচিব আজিজুল হক স্বাক্ষরিত সেই পরিপত্রে বলা হয়েছে, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে অননুমোদিত ও অবৈধভাবে পাহাড় কর্তন ও মোচন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিবেশ সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত পাহাড় ও পাহাড়ি ভূমি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা একান্ত প্রয়োজন। পাহাড় কর্তন ও মোচন কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য সিডিএ আওতাধীন এলাকার জন্য চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। সেই কমিটিকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’
কমিটিতে কারা ছিলেন
২০০২ সালের ২৫ নভেম্বর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে করা পাহাড় কর্তন ও মোচন কমিটির তালিকায় দেখা যায়, সিডিএ চেয়ারম্যান ছিলেন সেই কমিটির চেয়ারম্যান এবং সিডিএর ইমারত নির্মাণ কমিটির সদস্য সচিব (অথরাইজড অফিসার) ছিলেন সেই কমিটির সদস্য সচিব। সদস্য হিসেবে ছিলেন সিডিএর বোর্ড সদস্যবৃন্দ, সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী, চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের একজন প্রতিনিধি, মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন প্রতিনিধি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক।
পাহাড় বিনাশকারী আরও সংস্থা
শুধু সিডিএ নয়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম ওয়াসা, গণপূর্ত অধিদপ্তর, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ রেলওয়ে, মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং বিভিন্ন শিল্প গ্রুপও পাহাড় বিনাশ করেছে। সিটি করপোরেশন দক্ষিণ খুলশীতে পাহাড় কেটে ভিআইপি আবাসিক এলাকা এবং কৈবল্যধাম বিশ্ব কলোনির উত্তর-পূর্বে লেকসিটি আবাসিক এলাকা গড়ে তুলেছে।
একইভাবে হারিয়েছে পুকুর-জলাশয়গুলো
চট্টগ্রামে গত ১৫ বছরে হারিয়ে গেছে তিন হাজার পুকুর ও জলাশয়। পুকুর ও জলাশয় কমে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে সিডিএর উপপ্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পের পরিচালক আবু ঈসা আনসারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ২০০৮ সালের ড্যাপে রেকর্ড হয়েছিল ৫ হাজার ৩১টি পুকুর ও জলাশয়। কিন্তু সম্প্রতি আমাদের প্রিলিমিনারি সার্ভেতে পাওয়া গেছে দুই হাজার। অর্থাৎ এ সময়ের মধ্যে এসব পুকুর ও জলাশয় ভরাট হয়ে গেছে।’
জলাশয় সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী পুকুর-দীঘি ভরাট নিষিদ্ধ। ভূমির রেকর্ডে (আরএস, বিএস) কোনো জলাশয় থাকলে তা কোনোভাবেই ভরাট করা যাবে না। অন্যদিকে সিডিএর ড্যাপে পুকুর ভরাট বন্ধ করার জন্য একটি নির্দেশনা আছে। সেই নির্দেশনায় শূন্য দশমিক ৫ একর (আধা একর বা ৩০ কাঠা) আয়তনের বা এর চেয়ে বড় আয়তনের পুকুর ও জলাশয়গুলো অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে।
এ আয়তনের কম পুকুর ও জলাশয়গুলো সম্পর্কে নির্দেশনা কী জানতে চাইলে সিডিএর সাবেক প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহীনুল ইসলাম খান বলেন, ‘জলাশয় সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী পুকুর ও জলাশয় ভরাট করা যাবে না। তবে ৩০ কাঠা আয়তনের নিচের পুকুর ও জলাশয়গুলো পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় কাউন্সিলরের অনুমোদনক্রমে ভবনের নকশা অনুমোদন করা হতো। কিন্তু ২০১৩ সালে তৎকালীন সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম ৪০৫তম বোর্ডসভায় এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেন। সেই সিদ্ধান্তে বলা হয়, শূন্য দশমিক ২৫ একরের (২৫ শতাংশ বা ১৫ কাঠা) পুকুর ও জলাশয়গুলোতে ভবনের নকশা অনুমোদন দেওয়া যাবে। আর শূন্য দশমিক ২৫ একর থেকে শূন্য দশমিক ৫ একর আয়তনের (১৫ থেকে ৩০ কাঠা) পুকুর বা জলাশয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় কাউন্সিলরের ছাড়পত্র গ্রহণ সাপেক্ষে ভবনের নকশা অনুমোদন দেওয়া যাবে।’
আর এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতেই নগরীতে পুকুর-জলাশয় ভরাটের ধুম পড়ে যায়। অনুসন্ধানে যে কৌশলের কথা জানা যায়, সেটা হলো পুকুর-জলাশয়গুলো ময়লা-আবর্জনা ও পাহাড় কাটা মাটি দিয়ে রাতের আঁধারে ধীরে ধীরে ভরাট করা হতে থাকে। পরে তা আয়তনে ছোট হয়ে এলে সিডিএতে ভবন নির্মাণের অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হতো। আর এ প্রক্রিয়ায় নগরীর অনেক পুকুরে ভবনের নকশা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে সিডিএ সূত্রে জানা যায়।
সিডিএর এই ‘চতুর’ নির্দেশনার পর পরিবেশ অধিদপ্তর বা ফায়ার সার্ভিস কোনো পুকুর বা জলাশয় ভরাটের অনুমোদন দিয়েছে কি না, প্রশ্ন করলে পরিবেশের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস বলেন, ‘সিডিএর ওই সিদ্ধান্তের কারণে নগরীর অনেক পুকুর-জলাশয় ভরাট হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর কখনো পুকুর ভরাটের অনুমোদন দেয়নি।’
একইরকম মন্তব্য করে ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের উপপরিচালক মোহাম্মদ আবদুল হালিম বলেন, ‘জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০ হওয়ার পর থেকে আমরা কোনো পুকুর, জলাশয় বা মজা পুকুর ভরাটের কোনো অনুমোদন দিইনি; তা ৫ কাঠা হোক বা ৩০ কাঠাই হোক।’
এমন একটি সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হলো জানতে চাইলে সিডিএর তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুকুর ও জলাশয়গুলো রক্ষার জন্য আমি সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলাম। সেখানে পুকুরের কিছু সাইজও উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছিল।’ কিন্তু আপনার এ সিদ্ধান্তের সুযোগে তো যেকোনো পুকুর-জলাশয়ে নকশা অনুমোদনের অরাজক সর্বনাশা প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। জবাবে তিনি বলেন, ‘বাস্তবায়নে কী হচ্ছে সেটা তো আমি বলতে পারব না।’
পাহাড় কাটা ও জলাশয় ভরাট বিষয়ে পূর্ববর্তী সিডিএ চেয়ারম্যানদের সময়ের দায়ভার নিতে রাজি নন বর্তমান সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ। তিনি বলেন, ‘পাহাড় না কেটেও ভবন নির্মাণ করা যেত। আমরা এখন যেসব ভবনের অনুমোদন দিই, সেগুলোতে পাহাড় রেখেই ভবন নির্মাণের কথা বলা হচ্ছে। পার্বত্য এলাকায় পাহাড় রেখেই ভবন হচ্ছে।’
একই মন্তব্য করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘পাহাড়গুলো না কেটেও ভবন নির্মাণ করা যেত। কিন্তু পাহাড় কাটার অনুমোদন দিয়ে নগরীকে শ্রীহীন করেছে সিডিএ।’
আগামীকাল পড়ুন : পাহাড় জঙ্গল জলাশয়ে এখন শুধুই কংক্রিট
দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ শহরে চলছে ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন। গত মঙ্গলবার থেকে সম্মেলন শুরু হলেও গতকাল বুধবার জোটটির নেতারা তাদের মূল বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন। সম্মেলন শুরুর আগে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার সমন্বয়ে গঠিত অর্থনৈতিক জোটির সম্প্রসারণ ও নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হবে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক ছিল; বিশেষ করে ভারত ও ব্রাজিল সম্প্রসারণের পক্ষে থাকবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল। তবে গতকাল সব সংশয়ের অবসান হয়। জোটের পাঁচ দেশের নেতারাই সদস্য বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছেন। এতে করে সৌদি আরব, আর্জেন্টিনা, ভেনেজুয়েলা, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অন্তত ডজনখানেক দেশের এ জোটে যোগ দেওয়ার পথ সুগম হলো। ভারতের সায় মেলায় জোটটিতে সদস্যপদ পাওয়া পথ সুমগ হলো বাংলাদেশেরও। তবে দেশগুলো কবে নাগাদ জোটের সদস্য হতে পারে, সে বিষয়ে এখনো কোনো ঘোষণা আসেনি।
গত মঙ্গলবার এ সম্মেলন শুরু হয়েছে। ব্রিকসের সদস্য দেশ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার নেতারা এ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। এজন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং জোহানেসবার্গে পৌঁছেছেন। রাশিয়া থেকে সেখানে গেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। এ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছেন তিনি। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে যে নতুন মেরূকরণের সূচনা হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে চীন-রাশিয়া প্রভাবিত জোটটির এবারের সম্মেলন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এখনই সদস্য নেওয়া হোক বা না হোক, সদস্য নেওয়ার বিষয়ে একমত হওয়াই জোটে যোগ দিতে ইচ্ছুক দেশগুলোর জন্যও স্বস্তির খবর।
রয়টার্স এক প্রতিবেদনে বলেছে, ৪০টির বেশি দেশ ব্রিকসে যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অনেক দেশই এ জোটে যোগ দিতে তাদের প্রতিনিধিদল সেখানে পাঠিয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্তত ১০টি দেশের শীর্ষ নেতা অবস্থান করছেন জোহানেসবার্গ।
গতকাল সম্মেলনের পর দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নালেদি প্যান্ডর বলেন, জোটটি সম্প্রসারণের বিষয়ে আমরা একমত হতে পেরেছি। নতুন সদস্যদের যোগদানের নীতিমালা, নির্দেশিকা ও প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়েছে। বিষয়টি দারুণ।
গত জুনে অনুষ্ঠিত জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে জানানো হয়েছিল, ইউক্রেন যুদ্ধ-পরবর্তী ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক বিভাজনের প্রেক্ষাপটে পশ্চিমের আধিপত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চায় ব্রিকস। সেজন্য তারা তেল উৎপাদনকারী দেশসহ নতুন সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করতে আগ্রহী।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোতে এখনো বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ সম্পদ রয়েছে। পাশাপাশি বৈশ্বিক জিডিপির এক-তৃতীয়াংশ এখনো ব্রিকস দেশগুলোর। একদিকে শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে থাকা, অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া জোটে অন্তর্ভুক্তের বড় একটা কারণ। সম্প্রতি চায়না ডেইলিতে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, অন্যান্য অনেক দেশ তাদের নিজস্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করার উপায় হিসেবে ব্রিকসের দিকে তাকিয়ে আছে।
এদিকে শুরু থেকে খুব একটা সক্রিয় না থাকলেও সম্প্রতি সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক জোরদারে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে ব্রিকস। এসব উদ্যোগে চীন ও রাশিয়ার প্রভাব বড় করে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ইতিমধ্যেই উন্নয়নশীল বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির একটি বড় অংশ নিয়ে গঠিত ব্রিকস সম্প্রসারণের নীতিতে একটি চুক্তিও জি-৭-এর ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্লকের জন্য রাশিয়ান ও চীনা দৃষ্টিভঙ্গির একটি নৈতিক বিজয়।
গত মঙ্গলবার সাইডলাইন বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা ব্রিকসের প্রসারের ক্ষেত্রে একমত হন। পরে তারা দুজন পৃথকভাবে ঘোষণাও দেন। রামাফোসা বলেন, বহুত্ববাদের প্রসার, বিশ্বজুড়ে সহযোগিতা; বৈশ্বিক যে ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, তাতে পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ব্রিকস।
সংশয় কাটিয়ে ব্রাজিলও বুধবার জানায়, জোটের সম্প্রসারণে আপত্তি নেই তাদেরও। দেশটির প্রেসিডেন্ট লুলা তার প্রতিবেশী দেশ আর্জেন্টিনাকে প্রথম দফায়ই সদস্য করার পক্ষে প্রস্তাব ও যুক্তি তুলে ধরেন।
গতকাল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদিও সদস্য বাড়ানোর বিষয়ে মত দেন। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ব্রিকস জোটের সম্প্রসারণ নিয়ে ভারতের সমর্থনের কথা ঘোষণা করেন মোদিও। তিনি বলেন, সদস্য দেশগুলোর সম্মতি নিয়ে ব্রিকসের সম্প্রসারণ স্বাগত জানাচ্ছে ভারত। গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। জি-২০ সম্মেলনেও গ্লোবাল সাউথকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। আফ্রিকান ইউনিয়নকে জি-২০ সদস্য করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আশা করি ব্রিকসের সদস্যরাও এ বিষয়টি সমর্থন করবে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, চীন-ঘনিষ্ঠ দেশগুলোকে যেন ব্রিকসের সদস্যপদ না দেওয়া হয়, সেই নিয়ে সাউথ ব্লক সুর চড়াতে পারে বলেই মনে করে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোত্রা জানিয়েছেন, ইতিবাচক মানসিকতা নিয়েই ব্রিকসের সম্প্রসারণ করতে চায় ভারত। তবে এ জোট যেন কোনোমতেই যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী বা চীন-রাশিয়াপন্থি হিসেবে চিহ্নিত না হয়ে যায়, সেদিকেও কড়া নজর রাখা হবে।
দেশের সব প্রাপ্তবয়স্ক জনগণকে পেনশনের আওতায় আনার উদ্দেশ্যে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু করেছে সরকার। ১৭ আগস্ট এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্থানীয়দের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিরাও এই স্কিমে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন। প্রবাসীদের স্কিমের নাম ‘প্রবাস’। তবে এই স্কিমের বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে, উঠেছে নানা প্রশ্ন। এ ক্ষেত্রে প্রবাসীদের আয়ের ভারসাম্য ও প্রবাসকালীন স্কিম বাস্তবায়নের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তথ্য বলছে, প্রবাস স্কিমের মাসিক চাঁদার হার ধরা হয়েছে ৫ হাজার, সাড়ে ৭ হাজার ও ১০ হাজার টাকা করে। এই তিন পরিমাণের যেকোনো পরিমাণ চাঁদা দিয়ে স্কিমে যুক্ত হওয়া যাবে। একজন প্রবাসী ১৮ বছর বয়সে এ স্কিমে যুক্ত হয়ে ৪২ বছর ধরে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিলে ৬০ বছর বয়স পর তিনি সরকারি তহবিলে মোট ৫০ লাখ ৪০ হাজার টাকার চাঁদা দেবেন। এরপর ৬০ বছর থেকে ন্যূনতম ৭৫ বছর পর্যন্ত মাসিক ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫৫ টাকা করে পাবেন। ফলে তার মোট পাওয়া পেনশনের পরিমাণ দাঁড়াবে ৬ কোটি ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৯০০ টাকা, যা মোট চাঁদার প্রায় ১২ দশমিক ৩১ গুণ। একই স্কিমে যোগ দিয়ে কেউ ৪২ বছর ধরে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দিলে তিনি ৬০ বছর বয়স থেকে প্রতি মাসে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা পেনশন পাবেন। আবার একই মেয়াদে প্রতি মাসে সাড়ে ৭ হাজার টাকা চাঁদা দিলে প্রবাসীরা মাসিক ২ লাখ ৫৮ হাজার ৪৯১ টাকা করে আজীবন পেনশন পাবেন। তবে যদি কেউ এই স্কিমের আওতায় সর্বনি¤œ ১০ বছর ধরে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে চাঁদা দেন, তাহলে তিনি মোট জমা দেবেন ৬ লাখ টাকা। বিনিময়ে ৬০ বছর বয়সের পর থেকে তিনি প্রতি মাসে ৭ হাজার ৬৫১ টাকা করে মোট ১৩ লাখ ৭৭ হাজার ১৮০ কোটি টাকার পেনশন পাবেন। এ ক্ষেত্রে মোট চাঁদার তুলনায় ২ দশমিক ৩০ গুণ বেশি পেনশন পাওয়া যাবে।
সৌদি আরবপ্রবাসী আবৃত্তিশিল্পী বাছির দুলাল বলেন, ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাংলাদেশ সরকারের একটি অসাধারণ উদ্যোগ। উন্নত দেশগুলোতে এ রকম স্কিম চালু রয়েছে। আমাদের দেশে প্রথমবারের মতো এই সেবা চালু হচ্ছে। যেহেতু এটা একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, এখানে মানুষের সেবায় ও কার্যক্রমে যেন ত্রুটি না হয় তা সরকারের কাছে আশা করছি।’
লক্ষ্মীপুরের বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের আবদুস সাত্তার ৭ বছর থেকে সৌদি আরবে বসবাস করছেন। সেখানে থাকা অবস্থায় তিনি দেশের একাধিক ব্যাংকে স্থায়ী আমানত হিসেবে প্রায় ১০ লাখ টাকা জমা রেখেছেন। পেনশন স্কিম নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা সরকারের ভালো উদ্যোগ। কিন্তু আমরা যারা প্রবাসে থাকি, তাদের আয় সব সময় সমান থাকে না। এ জন্য প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা জমা দেওয়া আমাদের জন্য কঠিন। এ ছাড়া প্রবাসকালীনও নির্দিষ্ট করা থাকে না। অধিকাংশ সময়ে প্রবাসীরা দেশে ফেরার পর আয় বন্ধ হয়ে যায়। ওই স্কিম চালানো দুরূহ হয়ে যায়। পাশাপাশি টাকারও দরকার হয়। ব্যাংকে টাকা রাখলে আমি তো যেকোনো সময় টাকা ওঠাতে পারব। কিন্তু স্কিমের টাকা ওঠাতে জটিলতা তৈরি হবে কি না? যদি টাকা ফেরত পেতে জটিলতায় না পড়তে হয় তাহলে অনেক প্রবাসীই এই স্কিমে যুক্ত হব।’
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাসার দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রবাসীদের অনেকের চাকরি এবং আয়ের ক্ষেত্রে ভারসাম্য থাকে না। এ ক্ষেত্রে তারা ওই পেনশন স্কিমের কিস্তি সচল রাখতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এমন পরিস্থিতিতে কী হবে তা এখনো উল্লেখ করা হয়নি। পেনশন স্কিম চালু হলে বলা যাবে তা কতটুকু কার্যকর করা যাচ্ছে। তবে যদি কার্যকর করা যায় তাহলে সাধারণ প্রবাসীরা উপকৃত হবেন।
প্রবাস স্কিম বাস্তবায়ন বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ^ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তকে বলেন, এই স্কিম যদি বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে প্রবাসীরা বিনিয়োগের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য জায়গা পাবেন। কিন্তু পেনশনব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য সরকার কাদের দায়িত্ব দেবে, তা-ও দেখতে হবে। যদি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কাছে এই দায়িত্ব না দেওয়া হয় তাহলে এই অর্থ সরকারের বাজেট বাস্তবায়নে খরচ হবে। এ ক্ষেত্রে ১০-২০ বছর পর কোনো সরকার ক্ষমতায় থাকবে বা তারা এই অর্থ দেওয়ার ক্ষেত্রে কতটা মনোযোগী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়। আবার এসব অর্থের দিকে কোনো সুবিধাভোগীর চোখ পড়বে কি না বা পড়লে সেটি ঠেকাতে সরকার কী পদক্ষেপ নেবে, তা-ও দেখতে হবে। কারণ একটি মহল দেশের ব্যাংক ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এ ছাড়া বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীদের তাদের পেনশনের অর্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ওই সময় এটি সমাধানে কী ব্যবস্থা হবে, তাও স্পষ্ট করতে হবে সরকারকে। তিনি আরও বলেন, প্রবাসীরা বিদেশে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করার সুযোগ থাকে। সে ক্ষেত্রে দেশের সরকারি কাজে যে ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, সেটিতে তারা পড়তে চাইবেন না। এ ছাড়া পেনশন স্কিমে একজন প্রবাসী কয়েক বছর অর্থ দিয়ে দেশে ফিরে আসার পর তার জমা দেওয়া অর্থের কী হবে তার ব্যাখ্যা নেই। সাধারণত প্রবাসীরা দেশে ফিরলে ৫-১০ হাজার টাকার স্কিমের অর্থ পরিশোধের সক্ষমতা হারান। এ ক্ষেত্রে তারা এই প্রশ্নের সঠিক জবাব না পেলে এ স্কিমে বিনিয়োগ করবেন না।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নিয়ন্ত্রণ) বিলকিস জাহান রিমি দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো প্রবাসী যদি দেশে ফিরে আসেন, তাহলে তিনি আবেদনের মাধ্যমে অন্য স্কিমে চলে যেতে পারবেন; অর্থাৎ তিনি প্রবাস স্কিমে আগে ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করতেন। এখন আয় কমে যাওয়ায় তিনি সুরক্ষা স্কিমে গিয়ে ১ হাজার টাকা পরিশোধ করবেন। নির্দিষ্ট সময় পর তিনি যেই পরিমাণ অর্থ জমা দিয়েছেন তার ওপর মুনাফা পাবেন।
পেনশন স্কিমের টাকায় কোথায় বিনিয়োগ করা হবে এবং এই টাকা বাজেট বাস্তবায়নে চলে যাবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মানুষের টাকা বাজেট বাস্তবায়নে যাওয়ার সুযোগ নেই। মানুষ যে টাকা জমা দেবেন, সেগুলো সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের অধীনে আসবে। এরপর সেই অর্থ আমরা প্রাথমিকভাবে সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ করব। এরপর ভবিষ্যতে সময় অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
পেনশনে অর্থ উত্তোলনে মানুষ হয়রানির স্বীকার হবে কি না জানতে চাইলে এই অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের পেনশনে আগে যেসব অভিযোগ ছিল, সেগুলো এখন অনেকটাই কমে গেছে। আর ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে সর্বজনীন পেনশন বাস্তবায়ন হবে বিধায় এখানে মানুষের ইন্টারভেনশন কম থাকবে। সুতরাং দীর্ঘসূত্রতার যেই চিন্তা করা হচ্ছে, তা হওয়ার আশঙ্কা নেই। কারও স্কিমের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরই অটোমেটিকভাবে তার অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হওয়া শুরু হবে।
সব শঙ্কা কাটিয়ে সফলভাবেই চাঁদের মাটি ছুঁল ভারতের মহাকাশযান চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম। গতকাল ভারতের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে। এর মধ্য দিয়ে চাঁদে মহাকাশযান অবতরণকারী চতুর্থ দেশ হলো ভারত। তবে চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে অবতরণের দিক থেকে প্রথম দেশ ভারত।
গতকাল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) চন্দ্রযান-৩-এর অবতরণের দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করে। লাখো মানুষ এই সম্প্রচারের সাক্ষী হয়েছে। এ উপলক্ষে দেশটির সব স্কুল খোলা রাখা হয়। ব্রিকস সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভার্চুয়ালি ইসরোর আয়োজনে যুক্ত হন।
গত ১৪ জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটায় সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে চন্দ্রযান-৩-এর এই যাত্রা শুরু হয়েছিল। গতকালই তার চাঁদে নামার কথা ছিল। সে জন্য সন্ধ্যায় অবতরণের নির্ধারিত মুহূর্তটি সফলভাবে পার হয় কি না, তার জন্য কোটি কোটি ভারতবাসী অধীর উৎকণ্ঠা নিয়ে টেলিভিশনের সামনে অপেক্ষা করছিলেন, যেখানে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর দেওয়া অভিযানের প্রতিটি মুহূর্তের আপডেট লাইভ সম্প্রচার করা হচ্ছিল। ভারত সন্ধ্যা ৬টা বাজার মিনিট কয়েক পরেই সেই সফট ল্যান্ডিং সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার ঘোষণা হতেই সারা দেশ উল্লাসে ফেটে পড়ে। রাস্তায় রাস্তায় আতশবাজি ফাটানো ও মিষ্টি বিলি করা শুরু হয়ে যায় অনেকেই তেরঙা জাতীয় পতাকা নাড়াতে শুরু করে দেন।
দক্ষিণ অফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এদিন লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে ইসরোর মিশন সেন্টারে চন্দ্রযান অভিযানে যুক্ত বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন।
সফট ল্যান্ডিং সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী মোদি ইসরোর বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানান এবং বলেন, এই মুহূর্তটি হলো নতুন ভারতের নতুন উড়ান! তিনি বলেন, আজ নিউ ইন্ডিয়ার বিজয় ঘোষিত হলো। এই মুহূর্তটি আসলে ১৪০ কোটি ভারতীয়র হৃদস্পন্দনের শক্তি!
বিবিসি বলছে, ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন সংস্থা দূরদর্শন, প্রায় সবগুলো বেসরকারি টিভি চ্যানেল, ইসরোর ওয়েবসাইট, তাদের ফেসবুক ও ইউটিউব পেজে বিকেল সাড়ে ৫টার আগে থেকেই চন্দ্রযান-৩-এর শেষ ধাপের যাত্রার প্রতিটি মুহূর্ত লাইভ টেলিকাস্ট করা হচ্ছিল। বিক্রম নামের ল্যান্ডারটি চাঁদের বুকে সফলভাবে নামতেই ইসরোর মিশন সেন্টারে বিজ্ঞানীরা আনন্দে চিৎকার করে ওঠেন, পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে তারা অভিনন্দন জানাতে থাকেন। সোশ্যাল মিডিয়া ভেসে যায় শুভেচ্ছা আর অভিনন্দনের বার্তায়।
এর আগে ২০১৯ সালে ভারতের চন্দ্রযান-২ মহাকাশযান চাঁদের বুকে সফট ল্যান্ডিংয়ের লক্ষ্য অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছিল। প্রায় চার বছর পর এসে চন্দ্রযান-৩ সেই লক্ষ্যে পুরোপুরি সফল হলো। বিবিসি বলছে, এই অভিযানের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এটি অবতরণ করেছে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে, যেখানে সম্প্রতি জলের অস্তিত্ব প্রমাণিত হওয়ার পর পৃথিবীজুড়ে বিজ্ঞানীদের আগ্রহ ও মনোযোগ এখন চন্দ্রপৃষ্ঠের ওই অঞ্চলটিতেই। এই সফট ল্যান্ডিংয়ের পর এখন পরবর্তী ১৪ দিন (যেটা এক চান্দ্র দিবসের সমান) ধরে চন্দ্রযান-থ্রির মুন রোভার ‘প্রজ্ঞান’ চাঁদের বুক থেকে নানা ছবি ও ডেটা পাঠাতে থাকবে। এরপর প্রজ্ঞান রোভারের সক্রিয়তা ধীরে ধীরে কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর কারণ এটির শক্তির উৎস হলো সৌরশক্তিচালিত সোলার সেলআরেকটা পর্যায়ের পর ওই সেলগুলো সূর্যালোকের আড়ালে চলে যাবে।
এই দুই সপ্তাহের মধ্যে চন্দ্রযান-৩ পর্যায়ক্রমিকভাবে একটার পর একটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে। যার মধ্যে চন্দ্রপৃষ্ঠে কী কী ধরনের খনিজ পদার্থ আছে, তার একটি স্পেক্ট্রোমিটার অ্যানালিসিসও থাকবে।
ইসরোর বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত চাঁদের অভিমুখে মোট তিনটি মহাকাশযান পাঠিয়েছেন। ২০০৩ সালে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ি প্রথমবারের মতো ভারতের লুনার এক্সপ্লোরেশন বা চন্দ্র অভিযানের কথা ঘোষণা করেন। এরপর ২০০৮ সালে উৎক্ষেপণ করা হয় চন্দ্রযান-১, যা সফলভাবে চাঁদের কক্ষপথে বা লুনার অরবিটে প্রবেশ করেছিল। তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিং।
এরপর চন্দ্রযান-২ চাঁদে অবতরণের চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়েছিল। ২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর চন্দ্রযান-টুর ল্যান্ডার বিক্রম যখন টাচডাউনের চেষ্টা করে, তখন ব্রেকিং সিস্টেমে কিছু অসংগতির কারণে সেটি চাঁদের বুকে ক্র্যাশ করে। এর ফলোআপ হিসেবেই চন্দ্রযান-থ্রির পরিকল্পনা করা হয় ।
ইসরোর তথ্য অনুসারে, চন্দ্রযান-৩ অভিযানে মোট ৬১৫ কোটি ভারতীয় রুপি বা ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো খরচ হয়েছে, যা চন্দ্রযান-২-এর খরচের চেয়েও অনেকটা কম। বিবিসি বলছে, এত কম খরচে পৃথিবীতে কোনো সফল মহাকাশ অভিযান লঞ্চ করার নজির খুব কমই আছে।
ইসরোপ্রধান মহাকাশবিজ্ঞানী এস সোমনাথ বলেন, ‘আমাদের প্ল্যান এ কোনো কারণে বানচাল হলে তার জন্য প্ল্যান বি প্রস্তুত ছিল। এমনকি সেই ব্যাকআপেরও ব্যাকআপ তৈরি ছিল!
জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদের একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ঘিরে দলটির সম্মেলন নিয়ে জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন করে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।
গত মঙ্গলবার রওশন এরশাদ নিজেকে দলটির চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দিয়ে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠান। যদিও সেদিন দিনভর নাটকীয়তা শেষে রওশন এরশাদ রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি দলের নন, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু ভুলে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়টি গণমাধ্যমে চলে গেছে।
আসলে কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে আলোচনা আছে। ধারণা করা হচ্ছে, রওশন এরশাদ দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের দেশের বাইরে থাকার সুযোগে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দল ও দলের বাইরে তীব্র সমালোচনা দেখে তিনি সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।
রওশন এরশাদের সর্বশেষ বক্তব্য স্পষ্টই জানান দিচ্ছে যে, জাতীয় পার্টির চলমান সংকটের মধ্যে সম্মেলন আয়োজন নতুন মাত্রা যোগ করতে চলেছে। দলটির সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে। সে সম্মেলনে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান জিএম কাদের। অন্যদিকে রওশন এরশাদের জন্য প্রধান পৃষ্ঠপোষক নামে একটা পদ তৈরি করা হয়। দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পরপর সম্মেলন আয়োজনের কথা। সে অনুযায়ী জাতীয় পার্টির সম্মেলন আয়োজনের কথা ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর। কিন্তু তা হয়নি।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের ভারত সফর শেষ করে দেশে ফিরেছেন। ‘রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছেন’ গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘রওশন এরশাদের সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। কিছু লোক তার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। তাদের উদ্দেশ্য জাতীয় পার্টিকে দুর্বল করা।’ তিনি আরও বলেন, ‘রওশন এরশাদ আমার ভাবি। আমাদের সবচেয়ে বড় ভাইয়ের স্ত্রী। বড় ভাই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে আমরা পিতার মতো দেখতাম। ভাবিকেও আমরা সব ভাইবোন সেভাবেই দেখি।’
ভারত সফরের বিষয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জিএম কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি সুন্দর নির্বাচন চায় ভারত। দেশটি চায়, নির্বাচনের আগে এবং পরে বাংলাদেশে যাতে কোনোক্রমেই সহিংসতা, অরাজকতা না হয়।’ এ ক্ষেত্রে ভারতীয় কর্মকর্তারা জাতীয় পার্টিকে উদ্যোগী ভূমিকা নেওয়ার কথাও বলেছেন বলে জানান জিএম কাদের।
এর আগে দলের মহাসচিব ও কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. মুজিবুল হক চুন্নু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে সম্মেলন আয়োজনের সময় পেরিয়ে গেছে। আমরা নির্বাচন কমিশন বরাবর চিঠি দিয়ে সম্মেলন আয়োজনের বিষয়ে আরও এক বছর সময় চেয়েছি। সামনে নির্বাচন, তাছাড়া অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যার কারণে এই মুহূর্তে সম্মেলন আয়োজন সম্ভব নয়।’
রওশন এরশাদের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একদিনে একাধিক বক্তব্য আসছে। এর সত্য-মিথ্যা নির্ণয় করা কঠিন। আমরা মনে করি না, এসব বক্তব্যের কোনো ভিত্তি আছে। জাতীয় পার্টির সম্মেলনের তারিখ আমাদের দলের বৈঠকের মাধ্যমে চূড়ান্ত করে সঠিক সময়ে চেয়ারম্যান জিএম কাদের দেশ ও জনগণকে জানাবেন।’
গত শনিবার দুপুরে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন রওশন এরশাদ। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে রওশন সঙ্গে নিয়েছিলেন ছেলে সাদ এরশাদ, রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ ও মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশীদকে।
বৈঠকের পরদিন রবিবার রওশনপন্থিরা সভা করে আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেই সম্মেলন আয়োজনের ঘোষণা দেন। রাজধানীর গুলশানে বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সভায় এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
জাতীয় পার্টির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও রওশন এরশাদের মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশীদ বলেছেন, শিগগির দলের দশম জাতীয় সম্মেলন হবে। এর পরপরই হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। আপাতত তারা সম্মেলনের প্রস্তুতিই নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্মেলন করতে চান ম্যাডাম, কেননা এরপর নির্বাচনের ব্যস্ততা চলে আসবে। সবাইকে নিয়েই ম্যাডাম সম্মেলন করবেন। আমরা মনে করি, ম্যাডাম ডাকলে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের আসবেন।’
অতিরিক্ত মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘জিএম কাদের কিংবা চুন্নুকে ছাড়া কেউ কাউন্সিল করলে সেই কাউন্সিল গ্রহণযোগ্য হবে না। এরকম কেউ কাউন্সিল আহ্বান করলে তা খণ্ডিত এবং বিকৃত কাউন্সিল হবে।’
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটা কথা বলা হয়ে থাকে, যখনই জাতীয় পার্টির ভেতরে কোন্দল বাড়বে বা রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে থাকবে, বুঝতে হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। ইতিমধ্যে আগামী নভেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা রওশন এরশাদ হঠাৎ রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পেছনে নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা টনিক হিসেবে কাজ করেছে। রওশন চাচ্ছেন, আগামী দিনের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির ভূমিকা কী হবে তা তিনি ঠিক করবেন। তিনি চান, আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে আসন ভাগাভাগি করে নিজেদের সুবিধাজনক অবস্থানে রাখা। তিনি সরকারবিরোধী জোটে গিয়ে ঝুঁকি নিতে চান না।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জিএম কাদের সরকারবিরোধী বক্তব্য দিয়ে দলকে চাঙ্গা রেখে ইমেজ বৃদ্ধি করা ও জাতীয় রাজনীতিতে সরকারবিরোধী অবস্থান ধরে রাখতে চান। যাতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে জাতীয় পার্টি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে পারে। তাছাড়া সরকারের সমালোচনার ফলে সাধারণ মানুষের কাছে যেমন তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে, তেমনি দেশি-বিদেশি শক্তির কাছেও তার গুরুত্ব বাড়ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শান্তনু মজুমদার এখনই রওশনকে ভিলেন কিংবা কাদেরকে হিরো ভাবতে রাজি নন। এর উল্টোটা হওয়ার আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলে তিনি মনে করছেন। তার ভাষ্য, গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এ দুজনই সঠিক রাজনীতি করছেন না। জাতীয় পার্টি কিন্তু কোনো আদর্শিক রাজনৈতিক দল নয়।
শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, একটা রাজনৈতিক দল যেভাবে পরিচালিত হয়, এই দলটি কখনই সেরকম ছিল না। এতদিন বিষয়টি সেভাবে সাধারণ মানুষের নজরে পড়েনি। দলটির মালিক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একক মালিকানায় ছিলেন। তিনি একাই নাটক মঞ্চস্থ করতেন, ফলে আর কারও অভিনয় দেখার সুযোগ হতো না।’
এরশাদের জীবদ্দশাতেই দলটি তিনবার ভেঙে যায়। প্রথমবার লাঙ্গল ছেড়ে আলাদা দল গঠন করেন জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা ও মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তিনি গঠন করেন জাতীয় পার্টি (জেপি), এরপর দল ছাড়েন নাজিউর রহমান মঞ্জু। তিনি নতুন দল বানান বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি। সর্বশেষ সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদ জাপা থেকে বের হয়ে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি করেন।
সাত বছর পর ভারতের মাটিতে অবতরণ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তারা গিয়েছিল সেখানে। তারপর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে। টুর্নামেন্ট শুরুর এক সপ্তাহ আগে তারা পৌঁছালেন দেশটিতে। সেখানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোটেলে।
বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাবর আজমরা সেখানে পৌঁছানো মাত্রই উচ্ছ্বসিত জনতা ভিড় করেন। হায়দ্রবাদের বিমানবন্দরের বাইরে তাদের দেখে অনেকেই চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। বাবরের নাম উচ্চারণ করতও শোনা গেছে এসময়। পুলিশ উৎসুক জনতাকে আটকে রেখেছিল।
রাজনৈতিক বৈরি সম্পর্কের কারণে দুই দলের দেখা হয় না দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে। বিশ্ব মাতানো ক্রিকেটার থাকলেও পাকিস্তানিরা খেলতে পারে না আইপিএলে। কারণ ঐ একটাই। তবে বৈশ্বিক বা মহাদেশীয় ইভেন্টে তাদের ঘিরে আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। সেটা দেখা গেছে এশিয়া কাপেও।
বিশ্বকাপ খেলতে আজ বাংলাদেশ উড়াল দিয়েছে ভারতে। সেই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখে টাইগাররা। তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছাড়ার পর সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের ভার। আর আজই জানা গেল, বিশ্বকাপের পর একদিনও তিনি অধিনায়কত্ব করবেন না।
গত ১১ আগস্ট তৃতীয় দফায় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান। তখনই বলা হয়েছিল, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ও ভারত বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এই বিশ্বকাপই শেষ। এরপর একদিনও (অধিনায়কত্ব) করবো না। যে কারণে আমি এশিয়া কাপের আগে নিতে চাইনি। এরপরও এটা না। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হাসতে চাই, খেলতে চাই, পারফর্ম করতে চাই। এই একটা কারণে আমি করতে চাইনি।’
সাকিব যোগ করেন, ‘আর কোনে কারণ নেই। বেস্ট হয় যদি অধিনায়ক না থাকি। অধিনায়কত্ব কি আমার কোনো ভেল্যু এড করতেছে ক্যারিয়ারে এই স্টেজে এসে? আমি তো মনে করি না।’
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
বিশ্বকাপে তামিম ইকবালকে ওপেন থেকে সরিয়ে মিডল অর্ডারে ব্যাট করার প্রস্তাব দিয়ে ফোন করেছিলেন, তামিমের ভাষায় 'বোর্ডের টপ লেভেল' এবং 'ক্রিকেটের সাথে বেশ ইনভলভড' একজন।
তিনি তামিমকে বলেন, ''তুমি তো বিশ্বকাপে যাবা, তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলতে হবে। তুমি এক কাজ করো। তুমি প্রথম ম্যাচ খেলো না আফগানিস্তানের সঙ্গে।'
তিনি আবার বলেন, আচ্ছা তুমি যদি খেলোও, আমরা এমন একটা পরিকল্পনা করছি, তুমি যদি খেলোও, তাহলে নিচে ব্যাট করবে।''
তামিমের এমন বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠেছে, কেই সেই বোর্ড কর্মকর্তা? এক টিভি সাক্ষাৎকারে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'আমি এটা জানিনা।'
পরক্ষণেই তিনি বলেন, 'তবে যদি কেউ বলে থাকে, আমি সিউর তিনি অথোরাইজড পার্সন। আর এরকম কিছু বলে থাকলে আমি খারাপ কিছু বলেছে বলে আমি মনে করিনা। টিমের কথা চিন্তা করেই বলেছে। টিম কম্বিনেশন নিয়ে কথা বলে থাকলে দোষের কি আছে। আমার তো মনে হয় না দোষের কিছু আছে। নাকি এরকম কোনো প্রস্তাব দেয়া যাবে না। নাকি আপনি যা চাইবেন তাই করতে পারবেন?।'
বিশ্বমঞ্চে দেশের ক্রিকেটের দূত বলা যায় সাকিব আল হাসানকে। বর্ণিল এক ক্যারিয়ার গড়েছেন তিনি। তিন ফরম্যাটেই তিনি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। দেশের এই তারকা ক্রিকেটার নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপে যাচ্ছেন দলের অধিনায়ক হিসেবে। সেই টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই জানা গেল কবে তিনি অবসর নিচ্ছেন।
দেশের একটি ক্রীড়াভিত্তিক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের অবসরের সময় জানিয়েছেন। তার ইচ্ছে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর অবসর ঘোষণা করার। একইসঙ্গে তিন ফরম্যাটকে বিদায় জানাতে চান দেশের ক্রিকেটের এই তারা।
নেতৃত্ব ছাড়া ও অবসরের প্রসঙ্গ টেনে সাকিব বলেন, ‘আজকে এখন এই অবস্থায় বলছি, ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত ওয়ানডে খেলবো। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে টি-টোয়েন্টিকে বিদায় দেবো। টেস্টের অবসর শিগগিরই। তবে একেক ফরমেট একেক সময় ছাড়লেও আনুষ্ঠানিক অবসর ঘোষণা করবো ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর।’
অধিনায়কত্ব নিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপের আগে একাধিক সিরিজে বিশ্রামের কথা বলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দলের বাইরে রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত এশিয়া কাপেও দলে ফেরানো হয়নি তাকে। যেহেতু সাকিবের নেতৃত্বে সেই আসরে খেলেছে বাংলাদেশ, তাই অনেকের ধারণা সাকিবের চাওয়াতেই দলের বাইরে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
তবে সাকিব এসব কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়ক ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দল পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলারও ছিল না! কারন পরের দিন সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকি রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা!'
দলের ভেতরের কথা ভালোভাবে না জেনেই মানুষ যেভাবে সমালোচনা করে সেটাকে হাস্যকর বলেছেন সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়ক সমালোচকদের মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, 'মানুষের সাইলকোলজি এমন কেন! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!'
অধিনায়ক একা যে দল নির্বাচন করেন না সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন সাকিব। তিনি বলেন, 'রিয়াদ ভাইয়ের যে ডেডিকেশন ছিল তার দলের প্রতি যে অবদান ছিল। দলের হয়ে খেলার যে ইচ্ছে ছিল, সবকিছু সবাই দেখতে পেরেছে। আমার দায়িত্বতো পুরো দলটা নির্বাচন করার না। এমনটা হলে এশিয়া কাপের একদিন পরেই এনাউন্স করে দল দিয়ে দিতে পারতাম। এটা অনেক প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। অনেক বিষয় চিন্তা করতে হয়। অনেক কিছু চিন্তা করে দলটা গড়তে হয়।'
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।