
দেশের জন্য অস্ত্র ধরেছিলেন নুর ইসলাম। দেশ স্বাধীন করেছেন। তবে এ গৌরব নিয়ে বসে থাকেননি তিনি। মন দিয়েছিলেন সামাজিক, সাংগঠনিক নানা কাজে। অকস্মাৎ তার কর্মযজ্ঞে ভাটা পড়ে। এক সকালে ফজরের নামাজ পড়ে বাসায় ফেরার পথে এক দানবীয় বাহন রক্তাক্ত করে তাকে। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তার ওপর রুক্ষতা এঁটে দিয়েছে দেশের বেসরকারি চিকিৎসাব্যবস্থা। হয়তো অনেক অভিযোগ নিয়ে অনন্তযাত্রা হয়েছে এ মুক্তিযোদ্ধার।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পরিবারের সদস্যরা দেশ রূপান্তরকে জানান, নুর ইসলাম (৭০) গত ৭ আগস্ট ফজরের নামাজ শেষে ফেরার পথে যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। ঘটনাস্থলে থাকা কয়েকজন যুবক মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে নিয়ে যান স্থানীয় স্পেশালাইজড মেডিকেল কেয়ার হাসপাতালে। সেখানে তাকে ৪০ মিনিটের বেশি সময় রাখা হলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। পরে এক আত্মীয় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। পথেই তার মৃত্যু হয়।
মুক্তিযোদ্ধা নুর ইসলামের মতো সারা দেশে অসংখ্য মানুষের প্রাণ নিভছে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর দায়িত্বহীন কান্ডে। ‘পুলিশ কেস’, ‘আইনি ঝামেলা আছে’ প্রভৃতি কথা বলে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে মুমূর্ষু রোগীদের। সর্বোচ্চ আদালতের আদেশের পরও বদলায়নি তারা। নানা অজুহাতে দুর্ঘটনায় আহত বা অপরাধীদের আক্রমণে মারাত্মক আহত রোগীদেরও ফিরিয়ে দিচ্ছে তারা দ্বিধা ছাড়াই।
মুক্তিযোদ্ধা নুর ইসলামের চিকিৎসাবিষয়ক কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি স্পেশালাইজড মেডিকেল কেয়ার হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ। তবে একাধিকবার চেষ্টার পর কথা হয় মার্কেটিং ম্যানেজার মো. শরীফের সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা তাকে ফিরিয়ে দিইনি। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরিবারের ইচ্ছায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়।’
ওই হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় আহত রোগীরা এখানেই চিকিৎসার জন্য আসেন। কম আহত রোগীদের এখানে চিকিৎসা দেওয়া হয়। গুরুতর আহত রোগীকে দেওয়া হয় না, বরং তাকে অন্য হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।’ ওই ঘটনায় হাসপাতালটির বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে নুর ইসলামের পরিবার।
বেসরকারি সব হাসপাতালের এক চিত্র আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেসরকারি হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়টি যাচাই করা হয়। দেখা যায়, প্রায় সব হাসপাতালেই রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীতে ৫২০টি বৈধ জেনারেল হাসপাতাল আছে। সবটিতেই আহত রোগীকে চিকিৎসা করার প্রাথমিক সক্ষমতা আছে। কিন্তু চিকিৎসা পায় না গুরুতর আহতরা।
রাজধানীর হাতিরঝিলে গত ১৩ জুলাই ভিক্টর পরিবহনের বাসের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন কলেজ শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান (২৪)। তাকে নেওয়া হয় পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে। তাকে চিকিৎসা না দিয়ে ঢামেক হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। ততক্ষণে তিনি মারা যান। জাহিদ চীনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং দ্বিতীয় বর্ষে অনলাইনে ক্লাস করতেন। ২৫ আগস্টের আগেই চীনে যাওয়ার কথা ছিল তার। তাকে এবং দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা না দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন জেনারেল ম্যানেজার নুরুল ইসলাম তুহিন। তিনি বলেন, ‘প্রচুর ডেঙ্গু রোগী আসছে। আমরা অন্যদের জায়গা দিতে পারছি না। সমস্যায় না পড়লে আমরা সাধারণত রোগী ফিরিয়ে দিই না।’
১৭ জুলাই রাতে খিলক্ষেত ৩০০ ফিট এলাকায় মোটরসাইকেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আহত হয় দুই কিশোর। দুজনের একজন গুরুতর আহত হয়। পাশের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আরও একটি বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে তাদের যেতে হয় ঢামেক হাসপাতালে। তবে যথাসময়ে চিকিৎসার অভাবে সেখানে যাওয়ার আগেই মারা যায় রাতুল কাজী।
হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দুর্ঘটনায় আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসার বিষয়টি তারা বিবেচনা করেন। গুরুতর আহতদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে নানা জটিলতায় পড়তে হয় তাদের। গুরুতর আহত রোগী মারা গেলে পরিবারের সদস্যরা অনেক ক্ষেত্রে ভুল বুঝে হাসপাতাল ভাঙচুর করে। টাকা পরিশোধ করতে চায় না। এসব ঘটনায় মামলা হলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কখনো চিকিৎসা দিতে পুলিশের অনুমতি নিতে হয়। ফলে জটিলতা এড়াতে চিকিৎসাদানে মালিকপক্ষ কড়াকড়ি আরোপ করে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গুরুতর আহত রোগীদের পাঠানো হয় ঢামেক হাসপাতালে। যানজটের কারণে হাসপাতালে যাওয়ার আগেই অসংখ্য প্রাণ নিভছে। ঢামেক হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, আহত রোগীদের অধিকাংশই স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে যায়নি চিকিৎসা পাবে না বলে। যারা গিয়েছে তাদের বলা হয়েছে, দুর্ঘটনার চিকিৎসা সরকারি হাসপাতালে ভালো হয়। তাদের কাছে আহত রোগীর চিকিৎসা নেই।
ঢামেকে রাজধানী ও আশপাশের জেলা ছাড়াও দূরবর্তী জেলার রোগীরা রয়েছে। ওইসব এলাকার বেসরকারি হাসপাতালগুলোও তাদের একই কথা বলেছে। গত সপ্তাহে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া এলাকায় ছিনতাইকারীর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হন স্থানীয় ব্যবসায়ী দিল মোহাম্মদ। ওই এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে পুলিশ কেস বলে ঢামেকে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। তিনি ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
চিকিৎসা দিতে সমস্যা কোথায়?
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রথমত পুলিশে কেস হতে পারে বা পুলিশ কেস হয় সেসব রোগীর বিষয় সাধারণত দীর্ঘকাল ধরে চলে। বেসরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যারা কর্মরত থাকেন তাদের এতবার নানা জায়গায় হাজিরা দিতে হয়, যা তাদের জন্য ঝামেলাপূর্ণ। দেখা যায়, কোনো মামলা ১৫ বছরেও গড়িয়েছে; ডাক্তার এ সময়ে অন্য কোনো বা দূরের কোনো হাসপাতালে যোগ দিয়েছে। কোর্টে হাজিরা দেওয়া তার জন্য কঠিন হয়ে যায়। আবার হাজিরার খরচও তাকে দেওয়া হয় না। এ কারণে তারা আহত রোগীর চিকিৎসায় আগ্রহী হয় না। দ্বিতীয়ত যাদের দ্বারা দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যদি তারা রাজনৈতিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে বা পেশিশক্তিতে বলীয়ান থাকে তাহলে নানা চাপ তৈরি হয়। এসব কারণে বেসরকারি হাসপাতালে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়। তবে মুমূর্ষু কাউকে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত নয়; তার চিকিৎসা করা দরকার। চিকিৎসকরা হয়রানির মুখোমুখি না হলে এ প্রবণতা কমে যাবে।’
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনা, অপরাধীর আক্রমণ বা সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা বা জিডিতে বেসরকারি হাসপাতালের তথ্য গ্রহণ করে না পুলিশ। ফলে বাধ্য হয়ে সরকারি হাসপাতালে যেতে হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘দুর্ঘটনায় শিকার কেউ অভিযোগ করতে চাইলে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার তথ্য দিতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী আমরা সরকারি হাসপাতালের তথ্য চেয়ে থাকি।’
আইনও নেই আহতের পাশে
সারা দেশে আগের তুলনায় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে বেপরোয়া পরিবহন, যান্ত্রিক ত্রুটি প্রভৃতি কারণে। ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে দ্রুত কাছের হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিতে বলা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে হাসপাতালের প্রতি কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এর আগে একই বছর দুর্ঘটনায় আহতের চিকিৎসার নীতিমালার গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। তবে এখনো কার্যকরী হয়নি সে নির্দেশ।
দুর্ঘটনাস্থলের কাছের থানা এবং ক্ষেত্রমত ফায়ার সার্ভিস, চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র বা হাসপাতালকে জানাতে বলা হয়েছে ওই আইনে। আহতের চিকিৎসা না করালে তা আইনের লঙ্ঘন হবে এবং এজন্য অনধিক এক মাসের কারাদ- বা অনধিক ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থদ- বা উভয় দ- হবে এবং চালকের ১ পয়েন্ট কাটা যাবে।
২০১৬ সালে গুরুতর আহত ব্যক্তির জরুরি চিকিৎসাসেবা দিতে সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালকে নির্দেশ দিয়ে রুল জারি করেছিল হাইকোর্ট। ২০১৮ সালের আগস্টে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির জরুরি স্বাস্থ্যসেবা ও সহায়তাকারীর সুরক্ষায় প্রণীত নীতিমালার দুটি অংশে আদালতের পর্যবেক্ষণ যুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করতে বলে হাইকোর্ট। নতুন আইন না হওয়া পর্যন্ত এটাই আইন গণ্য হবে।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) সিনিয়র অ্যাডভোকেসি অফিসার আয়েশা আক্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে নীতিমালাটা যথাযথভাবে এসেছে। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে স্বাস্থ্য সচিবকে গেজেট প্রকাশ করতে বলা হয়। এটার গুরুত্ব চিকিৎসকরাও বুঝতে পারবে যখন তাদের গাইডলাইনে এটা যুক্ত হবে। সরকার যখন এটাকে গেজেট আকারে প্রকাশ করবে তখন তারা বুঝতে পারবে যে এটা করতে হবে। গেজেট না হওয়ায় নীতিমালার উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে না।’
সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে জানার চেষ্টা করা হলেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পাঁচ দেশের জোট ব্রিকসের এবারের শীর্ষ সম্মেলনের শেষ দিনে ছয়টি দেশকে সদস্য হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ নেই। ছয় মাস ধরে বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়টি জোরালোভাবে আলোচনায় ছিল। প্রভাবশালী দেশ চীনেরও জোরালো সমর্থন ছিল। নির্বাচনের আগে পশ্চিমা চাপের মধ্যে ব্রিকসের সদস্যপদ লাভের ব্যাপারে সরকারের আগ্রহ ও প্রত্যাশা ছিল। ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্রিকসের সদস্য হতে পারলে তাতে নতুন মাত্রা যোগ হতো। সেই প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় কেউ কেউ মনে করছেন, কূটনৈতিকভাবে হোঁচট খেয়েছে বাংলাদেশ।
তবে কারও কারও মত হলো, বাংলাদেশ শেষ মুহূর্তে আবেদন করেছে। তাছাড়া এমন একটি ফোরামে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে যে ধরনের কূটনৈতিক প্রয়াস চালাতে হয়, সেটা করেনি। হতে পারে, এবার বাংলাদেশ সদস্যপদ পাবে ভাবেনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে তিন দিনের ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন শেষ হয়। ১৫তম শীর্ষ সম্মেলনে এ জোটে ছয় দেশকে সদস্য করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ ছয়টি দেশ হলো সৌদি আরব, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, ইথিওপিয়া ও আর্জেন্টিনা। আগামী বছর ১ জানুয়ারি থেকে তাদের সদস্যপদ কার্যকর হবে। অর্থাৎ পাঁচ দেশ থেকে এগারো দেশের জোটে পরিণত হবে ব্রিকস।
৪০টিরও বেশি দেশ এবার ব্রিকসে যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। এর মধ্যে ২২টি দেশ এ জোটে যোগ দেওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিক আবেদন করে।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ব্রিকসে সম্প্রসারণ বিষয়ে ঘোষণা এলেও নীতিমালা, মানদ- ও প্রক্রিয়া নিয়ে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে দ্বিমত ছিল। শেষ পর্যন্ত গতকাল এসব বিষয়ে সবাই একমত হওয়ার পর ছয়টি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
গত জুনে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) একটি অনুষ্ঠানের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার বৈঠক হয়। এরপর ব্রিকসে যোগ দেওয়ার বিষয়টি জোরালোভাবে সামনে আসে। দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বাংলাদেশ আগস্টে ব্রিকসের সদস্য হিসেবে যুক্ত হতে পারে। তবে ওই বৈঠকের পর, অর্থাৎ ১৪ জুনের পরই বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিকসের সদস্যপদের জন্য আবেদন করে। বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশ আবেদন করেছে চলতি বছর।
বাংলাদেশকে সদস্য করার ক্ষেত্রে জোটের অন্যতম শক্তিশালী দেশ চীনের জোরালো সমর্থনের বিষয়টি গত দুই মাস ধরেই আলোচনায় ছিল। এমনকি সম্মেলনের সাইড লাইনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ব্রিকসের সদস্য হতে চীন বাংলাদেশকে সমর্থন দেবে।
কূটনৈতিক পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চীনের বেশি আগ্রহের ফলেই হয়তো শেষ পর্যন্ত সমর্থন পায়নি বাংলাদেশ। কারণ চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সাপে-নেউলে অবস্থায় যাচ্ছে কয়েক বছর ধরে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক চরম খারাপ। আবার ব্রিকসের পাঁচ দেশের মধ্যে ভারত এবং ব্রাজিলের সঙ্গে পশ্চিমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকাও শুরুতে বাংলাদেশকে চাইলেও শেষ পর্যন্ত তেমন কোনো ভূমিকা রাখেনি। ব্রিকস জোটের বর্তমান সদস্যরাও চাইছিল নিজেদের জোটে আবার নতুন কেউ যেন প্রভাবশালী হয়ে না ওঠে। সে বিষয়ে সম্মেলনের আগে থেকেই সতর্ক ছিল দেশগুলো। ফলে ধারণা করা হচ্ছে ভারত ও ব্রাজিলের সমর্থন পায়নি বাংলাদেশ। আর দক্ষিণ আফ্রিকাও ছিল নীরব।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা চাপে রয়েছে সরকারপক্ষ। ব্রিকসের সদস্যপদকে পশ্চিমা চাপের বিপরীতে একটি শক্তি হিসেবে দেখেছিল সরকারের নীতিনির্ধারকরা। তাই হয়তো চলতি বছরের জুনেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এ জোটে সদস্য হওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। জুনেই বাংলাদেশ সদস্যপদের জন্য আবেদন করে।
তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, সাধারণত এ ধরনের কোনো ফোরামে যোগ দিতে শুধু আবেদন করে বসে থাকলেই হয় না। কারণ সদস্য দেশগুলোর নতুন কোনো দেশকে যুক্ত করার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হয়। ফলে ওইসব দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের কাছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানোর পাশাপাশি সেসব দেশে বিশেষ দূত পাঠানোর মতো প্রয়াস চালাতে হয়। কিন্তু আবেদন করা ছাড়া সদস্য দেশগুলোর প্রধানদের সঙ্গে কোনো ধরনের সুপারিশ বা তদবির করেনি বাংলাদেশ।
সূত্রের দাবি, ব্রিকসে যুক্ত হতে বাংলাদেশের যতটা না আগ্রহ ছিল, তার থেকে বেশি আগ্রহ চীনের। পশ্চিমা আধিপত্য খর্ব করতে চীন ও রাশিয়া এ জোটের সম্প্রসারণ চেয়েছে। বাংলাদেশ সদস্যপদ না পেলেও যে ছয়টি দেশ সদস্যপদ লাভ করেছে, তাতেও চীন ও রাশিয়ার নেতৃত্বে ভূরাজনৈতিক মেরূকরণ ক্রমেই বাড়বে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এবার না পেলেও পরেরবার বাংলাদেশ ব্রিকস জোটের সদস্যপদ পাবে। তবে সে ক্ষেত্রে ভারতের সমর্থন জরুরি। তারা বলেন, ভারত আঞ্চলিক ভারসাম্যের কথা ভেবেই এবার বাংলাদেশের পক্ষে হয়তো জোরালো সমর্থন দেয়নি। কারণ ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক অন্য যেকোনো সময়ের থেকে এখন বেশি বৈরী। তাই তারা ব্রিকসে চীনের সমর্থনে বাংলাদেশকে চায় না। একই সঙ্গে ভারতের অন্যতম মিত্র যুক্তরাষ্ট্র চায় না বাংলাদেশ চীনের বলয়ে ঢুকে পড়–ক। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক মিত্র ব্রাজিলের নজরেও বিষয়টি এসেছে। তবে এখানে বড় সমীকরণটি হতে পারে, এশিয়া অঞ্চলে চীনের আধিপত্য নিয়ে ভারতের আপত্তি। কারণ নতুন যে ছয়টি দেশকে সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে তিনটিই চীন ও রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, জোটের সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কিছু মানদণ্ড প্রস্তাব করেন। শেষ মুহূর্তে গতকাল জোটের সদস্য বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। এবারের ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের শুরু থেকেই মূল আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে জোটের সম্প্রসারণ।
গত বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নালেদি প্যানডর তাদের রাষ্ট্রীয় রেডিও স্টেশনকে বলেছিলেন, ‘আমরা এই জোট সম্প্রসারণের বিষয়ে একমত হয়েছি। আমাদের কাছে একটি নথি রয়েছে, যা আমরা গ্রহণ করেছি। এতে ব্রিকসের সদস্য হতে চায়, এমন দেশগুলোকে বিবেচনায় নেওয়ার জন্য নির্দেশিকা, নীতিমালা ও প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা আছে। ...বিষয়টি খুবই ইতিবাচক।’
জোটের ভারসাম্য নিয়ে ভারতের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক হর্ষ পন্ত সম্প্রতি এক নিবন্ধে লিখেছেন, চীন সমমনা দেশগুলোকে ব্রিকসে স্বাগত জানানোর কথা বললেও ভারতের নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে সতর্ক।
এ বিষয়ে ভারতের গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ব্রিকসের পরিধি বাড়ানোর প্রশ্নে জোটের অন্যতম সদস্য ভারতের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য হলো জোটে নিশ্চয়ই নতুন নতুন দেশকে স্বাগত জানানো দরকার। কিন্তু জোটের ভেতরে ‘আঞ্চলিক ভারসাম্য’ যাতে রক্ষিত হয় সেটাও দেখাটা খুব জরুরি। ব্রিকসে যাতে চীনের প্রভাব বলয়ে থাকা বেশি বেশি দেশ ঢুকে গিয়ে জোটের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্যটা নষ্ট না হয়ে যায়, ভারত সেদিকেও সতর্ক।
ভারতের সাবেক শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিবিদ পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী একাধিক গণমাধ্যমকে বলেছেন, চীন বা রাশিয়া উভয়ই চেয়েছে তাদের ঘনিষ্ঠ দেশগুলো ব্রিকসে আসুক। কারণ তাতে জোটের ভেতরে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তাদের পাল্লা শক্ত হবে। আবার ভারত নিশ্চিত হতে চেয়েছে ব্রিকস যাতে আরও বেশি চীনের দিকে ঝুঁকে না পড়ে। সেজন্য চীনের অনুমোদন নিয়ে যেসব দেশ ব্রিকসের সদস্য হতে চেয়েছে ভারত তাদের ব্যাপারে সাবধানী মনোভাব নিয়েছে। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ যদিও পুরোপুরি এর মধ্যে পড়ে না। বাংলাদেশ সরাসরি ব্রিকসেও আসুক, এটা কিন্তু কখনো ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশের সদস্যপদ চাওয়া অবশ্যই ইতিবাচক হয়েছে। সদস্যপদ না পাওয়াকে কূটনৈতিক ব্যর্থতা বলা যাবে না।’
তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত সপ্তাহে বলেছিলেন, এবার সদস্য হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অবশ্য তিনি বলেছিলেন, ব্রিকস জোট সম্প্রসারণ নাও হতে পারে। সেই হিসেবে বাংলাদেশের প্রত্যাশাও ছিল না।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালি উর রহমান বলেন, ‘সদস্যপদ পেলে বেশি ভালো হতো। তবে আমি যতদূর জানি সদস্যপদ নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তেমন কোনো তাড়া নেই বা ছিল না।’
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ব্রিকস জোটে নতুন যেসব দেশকে সদস্য করা হয়েছে তার মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে সবকটি দেশ বাংলাদেশ থেকে অগ্রসরমাণ। কাজেই এবার সদস্য না হওয়ার বিষয়টি কূটনৈতিক ব্যর্থতা বলা যাবে না। কারণ বাংলাদেশ এখনো স্বল্পোন্নত দেশের কাতারেই আছে। আর ব্রিকসে যারা আছে তারা আরও ওপরে।’ তিনি বলেন, ‘বিকল্প একটা অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করার মতো সক্ষমতা রাখে এমন দেশকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো সেই ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারবে কি না, তাও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।’
নতুন সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন ব্রিকসের বর্তমান চেয়ারম্যান দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এ ঘোষণার সময় রামাফোসার পাশে ছিলেন। ইউক্রেন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন সম্মেলনে অংশ নেননি। তার প্রতিনিধিত্ব করেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।
পাঁচ সদস্য ছাড়াও এ জোটে যুক্ত হতে আগ্রহী দেশগুলোর প্রতিনিধিরাসহ বিশ্বের ৫০টি দেশ যোগ দিয়েছে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে।
ব্রিকস হলো উন্নয়নশীল অর্থনীতির পাঁচটি দেশ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও সাউথ আফ্রিকার জোট। জোটের নামকরণ হয়েছে সদস্য দেশগুলোর নামের প্রথম অক্ষর মিলিয়ে। সর্বশেষ ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আগে এই জোট ‘ব্রিক’ নামে পরিচিত ছিল।
২০২১ সালে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক নামে পরিচিত ব্রিকসের ব্যাংকে যুক্ত হয় বাংলাদেশ।
এবারের ব্রিকস সম্মেলনে পাঁচ দেশের এই জোটের সদস্যপদ লাভের ব্যাপারে অনেকটা নিশ্চিত ছিল বাংলাদেশ। ব্রিকস সভাপতি সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এ জোটে এবারই ঢুকবে বাংলাদেশ সেই প্রস্তুতি গ্রহণ করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনে যোগ দিতে গেছেন। কিন্তু বাংলাদেশকে সদস্যপদের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সদস্যপদ না পাওয়ার খবর প্রকাশের পর এ নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। তবে সরাসরি বা আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য কেউ দেয়নি। ক্ষমতাসীন দল ও জোটের নেতারা মনে করছেন, জোটে আধিপত্যের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে প্রতিবেশী ভারতের অনীহা থাকতে পারে। যে কারণে বাংলাদেশকে সদস্য হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। আবার আফ্রিকায় নিজেদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার ব্যাপারে ভারতের আগ্রহ থাকার কারণেও হতে পারে।
ব্রিকসে বাংলাদেশের সদস্যপদ না পাওয়া নিয়ে আলোচনায় ভূ-রাজনৈতিক উপাদানও যোগ হয়েছে। ‘বাংলাদেশ চীনের পেটে ঢুকে গেছে’ যুক্তরাষ্ট্রের মতোই কি অন্যতম মিত্র ও প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত মনে করে? চীন বলয়ের ভেবেই কি ব্রিকসে বাংলাদেশকে নিয়ে আপত্তি তুলেছে ভারত, এমন সব আলোচনা রয়েছে। এমন আলোচনায় আগ্রহী যারা তারা বলছে, ভারতের বিরোধিতার কারণ বাংলাদেশ যুক্ত হলে ব্রিকসে চীন শক্তিশালী হয়ে উঠবে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভারতও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে কিছুটা বাঁকা চোখেই দেখছে। তবে বাংলাদেশ অবশ্য এই জোটে ঢুকবে, দুদিন আগে আর পরে, জোটে থাকা দেশগুলোই বাংলাদেশকে টানবে এমন প্রত্যাশা করছেন রাজনীতিকরা। এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষমতাসীন দলের ও জোটের বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ থাকলে চীন সুবিধা পাবে, এতে ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে আশঙ্কা করে প্রতিবেশী দেশটি।
ক্ষমতাসীন দল ও জোটের নেতারা বলেন, ইথিওপিয়া দিয়ে আফ্রিকায় ঢোকার পথ সৃষ্টি করতে চায় ভারত। ফলে আপত্তি তোলেনি দেশটি। এ নেতারা বলেন, যে দেশগুলোই ব্রিকসে যুক্ত হয়েছে কোনো না কোনো স্বার্থের কারণে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্রিকসে যোগদান করতে না পারার কারণ আমার কাছেও মনে হয় ভারত। ব্রিকসে এবারই সদস্যপদ পাবে সেটা প্রায় নিশ্চিতই ছিল বলা যায়। জোটের সভাপতি দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বাংলাদেশকে আমন্ত্রণও জানিয়েছেন। তবে ভারত এখনই চায়নি বলে সুযোগ বঞ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ।’
তিবি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে ভারত বড় ভূমিকা রেখেছে, বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চেয়েছে। তবে এই মুহূর্তে প্রতিবেশী দেশটি চায় না স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিনিধিত্ব করুক। তবে কখনো না কখনো বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত হবে এ জোটে। এই জোটে থাকা দেশগুলোই টেনে নেবে বাংলাদেশকে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ফারুক খান বলেন, ‘ব্রিকস উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা জন্য জোট। এই জোটে অন্তর্ভুক্ত হলে সব কিছু অর্জন হবে, অন্তর্ভুক্ত হতে পারিনি বলে সব শেষ হয়ে যাবে ব্যাপারটা এ রকম নয়। বিষয়টি মিডিয়ায় পুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তো বলেছি, ব্রিকসে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আমন্ত্রণ পেলে আমরা যাব। তাই হয়েছে। সরকার বলেনি যে, আমরা ব্রিকসে যোগ দেব।’
ফারুক খান মনে করেন, ‘এখন হয়নি তো কী হয়েছে? আগামীতে হবে। বিষয়টি রাজনীতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে বলে মনে করি না।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশে ফিরে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করবেন বলে জানান ফারুক খান।
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত না হলেও সুবিধা পাবে। ব্রিকস সম্প্রসারণ হবে এ নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সুতরাং কখনো না কখনো অন্তর্ভুক্ত হবে কোনো সন্দেহ নেই।’
ব্রিকস বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারসাম্য সৃষ্টি করবে জানিয়ে ইনু বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ঋণ সুবিধা গ্রহণে দর কষাকষির সুযোগ সৃষ্টি করবে ব্রিকস। এখনই অন্তর্ভুক্ত হতে না পারা কোনো রকম পিছিয়ে পড়া বলে মনে করেন না জাসদ সভাপতি।
দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ শহরে ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে এর সদস্য বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ব্রিকস যুক্তরাষ্ট্র ও ধনী দেশগুলোর জোট জি-৭ বা শিল্পোন্নত ও বিকাশমান অর্থনীতির জোট জি-২০-এর বিরোধী কোনো শিবির নয়। এর লক্ষ্য, কথিত তৃতীয় বিশ্ব, ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর উন্নয়ন। ব্রিকসে যোগ দিতে ৪০টি দেশ আগ্রহ প্রকাশ করলেও মাত্র ৬টি দেশ এ সুযোগ পেয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগরীর জাকির হোসেন রোডের উভয় পাশেই পাহাড় ছিল। নব্বইয়ের দশকে দিনের বেলায়ও এ রোড দিয়ে চলতে ভয় পেত মানুষ। সরকারি মহিলা কলেজের উল্টো পাশে নাসিরাবাদ প্রপার্টিজ নামে আবাসিক এলাকা গড়ে উঠলেও আগে পুরোটা পাহাড়ি এলাকা ছিল। দক্ষিণ খুলশী, পাহাড়িকা আবাসিক এলাকা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ভিআইপি আবাসিক এলাকা সব হয়েছে পাহাড়-জঙ্গল কেটে। পুকুর-দীঘি-জলাশয়, খেলার মাঠ, কৃষিজমি ভরাট করেও উঠেছে আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক জি এন তানজিনা হাসনাত ও একই বিভাগের মোহাম্মদ আলী বাবু ‘আরবান ল্যান্ডস্কেপ চেঞ্জ ডিটেকশন ইউজিং জিআইএস অ্যান্ড আর এস’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন ২০২২ সালে। তাতে বলা হয়েছে, গত ৩০ বছরে চট্টগ্রামে পাহাড়-জঙ্গলের সবুজ কমেছে ২১ দশমিক ৮২ শতাংশ আর পুকুর-জলাশয় কমেছে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ১৯৯০ সালে নগরীর মাত্র ১৯ শতাংশ এলাকায় বসতি থাকলেও এখন ৪৫ শতাংশ এলাকায় বিস্তৃত হয়েছে।
সারা দেশের ভৌগোলিক পরিবর্তনের বিভিন্ন মানচিত্রের গবেষণা করে বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো)। এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নূর হোসাইন শরীফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উন্নয়ন ও সবুজায়ন সাংঘর্ষিক। তার পরও উন্নয়ন চালিয়ে যেতে হবে। উন্নয়ন প্রকল্পের কারণেই সবুজ কমছে। এ চিত্র সারা বিশে^ই; কোথাও কম, কোথাও বেশি। এতে বাড়ছে উষ্ণতা।’
আবাসনে বিলীন পাহাড় গাছ পানি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক অলক পাল বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরে স্থাপনার (আবাসিক ও বাণিজ্যিক) সংখ্যা বাড়ছে। পতিত জমি, সবুজাচ্ছাদিত ভূমি ও জলাশয় ভরাট হচ্ছে। একদিকে বাড়ছে আবাসন, অন্যদিকে কমছে সবুজ।’
নিজেদের গবেষণার একটি মানচিত্র দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘স্যাটেলাইটের উপাত্তে দেখা যায়, নগরীর যেসব এলাকায় আগে পাহাড় ছিল, সেখানে এখন বসতি। আগে যেখানে পুকুর বা জলাশয় ছিল, এখন সেগুলো ভরাট হয়ে গড়ে উঠেছে স্থাপনা।’
অধ্যাপক জি এন তানজিনা হাসনাত বলেন, ‘শহরমুখো মানুষের আবাসনের চাহিদা মেটাতে বিলীন হচ্ছে চট্টগ্রামের পাহাড়, জলাশয় ও খোলামাঠ। নগরীর প্রান্তীয় এলাকাগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।’
৪০ বছরে সাবাড় ১২০ পাহাড়
গত বছরের ৩০ মে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক খালেদ মিসবাহ উজ্জামান বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার এক সেমিনারে ‘হিল কাটিং ইন চিটাগাং সিটি’ প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম মহানগরীতে গত ৪০ বছরে হারিয়ে গেছে ১২০টি পাহাড়। একটি মাত্র সড়ক নির্মাণেই চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) কেটে ফেলেছে ১৬টি পাহাড়। সবচেয়ে বেশি পাহাড় বিনষ্ট হয়েছে আবাসিক এলাকা নির্মাণে। এক-দুই বছরে নয়, অনেক বছরে পর্যায়ক্রমে। অবশিষ্টগুলোও সাবাড় হওয়ার পথে। সম্প্রতি পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার ফখরুজ্জামান বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিদের ছত্রছায়ায় চট্টগ্রামের পাহাড় সাবাড় হচ্ছে।’
পশ্চিম খুলশীর জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটির উত্তরে কৃষ্ণচূড়া আবাসিক এলাকার পরের জায়গাটি সমতল হয়ে গেছে। সেখানে প্লট বিক্রি হচ্ছে। পাঁচ বছর আগেও এখানে পাহাড় ছিল। ২০১৮ সালেও এখানে পাহাড়ের ঢালে ছড়া প্রবাহিত ছিল। এখন সেখানে কংক্রিটের রাস্তা। পাহাড়ের দিকে আরও প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় যাওয়া যায় সে রাস্তা ধরে। উভয় পাশের পাহাড়গুলো আগের অবস্থায় নেই। স্থানীয় এক দোকানি বলেন, ‘এলাকাটি প্রধান সড়ক থেকে তিন-চার কিলোমিটার ভেতরে। তাই প্রশাসনের কেউ আসে না। মোড়ে মোড়ে পাহারাদার বসিয়ে ভেতরে চলে পাহাড় কাটা।’
জাকির হোসেন রোডে খুলশী থানার বিপরীতে জাকির হোসেনের বাংলোর চারপাশে পাহাড় ছিল। এখন সেখানে পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হয়েছে জাকির হোসেন সোসাইটি। সোসাইটির পশ্চিম পাশে নিউ ঝাউতলা রেলওয়ে কলোনি ও ডিজেল কলোনি। নিউ ঝাউতলার ২৩ নম্বর ভবনে ১৯৮৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বসবাস করেছেন আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘যখন এ কলোনিতে বাসা বরাদ্দ পাই, তখন জানালা দিয়ে জাকির হোসেনের পাহাড় ও গাছ-গাছালি দেখা যেত। চোখের সামনে সেখানে একের পর এক ভবন উঠতে দেখলাম।’
জাকির হোসেন রোডের হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালের (বর্তমানে বন্ধ) পাশ দিয়ে দক্ষিণে হাতের বাম পাশে পাহাড়িকা আবাসিক এলাকা। সেখানকার পাহাড়ে এখন সুউচ্চ ভবনের ভিড়। আরও একটু দক্ষিণে বাম পাশের সড়ক দিয়ে দক্ষিণ খুলশী যাওয়া যায়। সড়কে ওঠার পথে বাম পাশে একটি উঁচু এবং অনেকগুলো মাঝারি পাহাড় ছিল। অনেক দূর থেকে বড় পাহাড়টি দেখা যেত। এর পাশেই একটি ভবনে ফ্ল্যাট কিনে বসবাস করছেন ব্যবসায়ী ফরিদ আহমেদ। তার মুখেও শোনা গেল এলাকাটির একসময়কার পাহাড়ি চিত্রের বর্ণনা।
একসময় সর্দার বাহাদুরনগর থেকে লালখান বাজারের বাঘঘোনায় আসার জন্য পাহাড়ের ভেতর দিয়ে হাঁটাপথ ছিল। পথের উভয় দিকেই ছিল পাহাড়। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার পাশে পাহাড়ের ঢাল থাকলেও ভেতরে কোনো পাহাড় নেই। সমান করে গড়ে তোলা হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভিআইপি আবাসিক এলাকা।
জাকির হোসেন রোডে সরকারি মহিলা কলেজের বিপরীত দিকে নব্বইয়ের দশকেও পাহাড় ছিল। ২০১০ সালের পর এ এলাকায় পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণ শুরু হয়। এখনো চলছে। সিডিএ এ এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমোদন না দিলেও ২০০৮ সালের ইমারত নির্মাণ বিধিমালার পর পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণের হিড়িক পড়ে।
এ ছাড়া, চট্টগ্রাম টেলিভিশন কেন্দ্রের উল্টো পাশে রোজভ্যালি আবাসিক এলাকা, লেকভ্যালি আবাসিক এলাকা, ফয়’স লেকে চিড়িয়াখানার আগে আবদুল হামিদ সড়কের আবাসিক এলাকা, কৈবল্যধামের বিশ্বকলোনি, নন্দন হাউজিং, সিটি করপোরেশনের লেকসিটি আবাসিক এলাকা, বায়েজীদ চন্দ্রনগরসহ অনেক এলাকার পাহাড় কেটে আবাসন বিস্তৃত হয়েছে।
১৫ বছরে ভরাট ৩ হাজার পুকুর-জলাশয়
সিডিএর হিসাব মতেই, চট্টগ্রামে গত ১৫ বছরে হারিয়ে গেছে তিন হাজার পুকুর ও জলাশয়। ২০০৮ সালের ডিটেইলড এরিয়াপ্ল্যান (ড্যাপ) অনুযায়ী চট্টগ্রামে ৫ হাজার ৩১টি পুকুর ও জলাশয় ছিল। এখন নেমেছে প্রায় দুই হাজারে। সিডিএর উপ-প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পের পরিচালক আবু ঈসা আনসারী দেশ রূপান্তরকে এমন তথ্য দেন।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ রাশেদুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কোনো নগরীর ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ জায়গায় খেলার মাঠ, পার্ক, উন্মুক্ত স্থান, পুকুর, দীঘি ও জলাশয় থাকা প্রয়োজন। আমাদের দেশের শহরগুলোতে এর অর্ধেকও নেই। ফলে নগরীতে বসবাসের পরিবেশ যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি বিভিন্ন ঝুঁকি বাড়ছে।’
একসময় বন্দরনগরীর পরীর পাহাড়ের নিচে বিশাল জলাধার ছিল। সেখানে গড়ে উঠেছে আজকের জহুর হকার্স মার্কেট। চকবাজার অলি খাঁ মসজিদের পাশে কমলদহ নামে যে বিশাল দীঘি ছিল সেটি ভরাট করে গড়ে উঠেছে কিশলয় কমিউনিটি সেন্টার। বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল নির্মাণের সময় ভরাট করা হয়েছে মাইল্যার দীঘি। আন্দরকিল্লায় রাজাপুকুর লেইন আছে; কুসুমবাগে আছে দেওয়ানজী পুকুর লেইন, কিন্তু পুকুর দুটি আর নেই। কাট্টলী নুরুল হক চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয়ের পেছনে বিশাল কাট্টলী দীঘির ওপর গড়ে উঠেছে প্রশান্তি আবাসিক এলাকা।
নগরীতে আগে এলাকাভিত্তিক ছোট অনেক পুকুর ছিল, এখন ভরাট। পাহাড়তলী, হালিশহর, রামপুরা, পতেঙ্গা, চান্দগাঁও প্রভৃতি এলাকার প্রতিটি বাড়ির সঙ্গে পুুকুর ছিল, এখন নেই।
উধাও হচ্ছে খোলামাঠ
নগরীর খোলামাঠগুলোও ফুরানোর পথে। আউটার স্টেডিয়ামে মাঠের অর্ধেক দখল করে গড়ে উঠেছে স্থাপনা। ষোলশহরে বিপ্লব উদ্যান বিপন্ন করে গড়ে তোলা হয়েছে খাবারের দোকান। আগ্রাবাদে জাম্বুরি মাঠের অর্ধেক দখল করে হয়েছে শিশুপার্ক। আগ্রাবাদ সরকারি কলোনিতে একাধিক খেলার মাঠ ছিল, সেগুলোতে এখন গড়ে উঠছে বহুতল ভবন।
জলাধার, কৃষিজমিতেও আবাসন
বন্দরনগরীর প্রাকৃতিক জলাধার বাকলিয়া বগার বিল ভরাট করে বহুতল ভবন গড়ে তোলার হিড়িক পড়েছে। সিডিএ বাকলিয়ায় কর্ণফুলী নদীর তীরের কৃষিজমিতে কল্পলোক আবাসিক এলাকা প্রথম পর্যায় ও দ্বিতীয় পর্যায় নামে দুটো প্রকল্প নিয়েছে। অক্সিজেন-কুয়াইশ রোডে কৃষিজমি ভরাট করে অনন্যা আবাসিক এলাকা প্রকল্প নেয় সিডিএ। বর্ষাকালে এলাকাটি ছিল চান্দগাঁও, অক্সিজেন, কুয়াইশ, কালুরঘাট এলাকার প্রাকৃতিক জলাধার। বিবিরহাট সুন্নীয় মাদ্রাসার পেছনের এলাকায় এখন আবাসন গড়ে উঠছে। হালিশহরে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার জায়গাটি ছিল কৃষিজমি এবং বর্ষায় প্রাকৃতিক জলাধার। হালিশহর থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সাগর পাড়ে একসময় প্রচুর কৃষিজমি ছিল। এখন গড়ে উঠছে আবাসন ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্থাপনা।
পাহাড়-জঙ্গল-বনানী, পুকুর-দীঘি-জলাশয়, কৃষিভূমি-খোলা মাঠ কেন হারিয়ে গেল? জানতে চাইলে সিডিএর সাবেক প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি শাহীনুল ইসলাম খান বলেন, ‘এসব রক্ষার দায়িত্ব অবশ্যই আমাদের ছিল। কিন্তু আইনের সঠিক প্রয়োগ না হওয়ায় তা বিলীন হয়ে গেছে। ১৯৯৫ সালের মাস্টারপ্ল্যান ১৯৯৯ সালে অনুমোদনের পর এক আদেশে অর্ধকাটা পাহাড়গুলোতে ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল ২০০১ সালের দিকে। সে সিদ্ধান্তে নগরীতে পাহাড় কাটার ধুম পড়ে যায়। ২০০৮ সালের ডিটেইলড এরিয়াপ্ল্যান প্রণয়ন এবং ২০০৮ সালের নতুন ইমারত নির্মাণ বিধিমালার আগ পর্যন্ত সাবাড় হয় অধিকাংশ পাহাড়।’
দেশে ডেঙ্গুতে আরও একজন চিকিৎসক মারা গেছেন। ডা. বায়েজিদ আহমেদ নামে এই চিকিৎসক গত বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি এই কলেজের পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
হাসপাতাল পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান দেশ রূপান্তরকে জানান, ডা. বায়েজিদ আহমেদ রাজধানীর জাপান বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবস্থা সংকটাপন্ন হলে তাকে সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছিল। পরে সেখান থেকে গত মঙ্গলবার রাতে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের আইসিইউতে আনা হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়। তিনি ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
এ নিয়ে এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে পাঁচ চিকিৎসক ও একজন মেডিকেল শিক্ষার্থী মারা গেলেন। ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া পাঁচ চিকিৎসক হলেন ডা. এম আরিফুর রহমান, ডা. শরীফা বিনতে আজিজ, ডা. আলমিনা দেওয়ান মিশু, ডা. ফাতেমা-তুজ-জোহরা রওনক ও ডা. বায়েজিদ আহমেদ এবং একজন মেডিকেল শিক্ষার্থী হলেন সৈয়দা সাদিয়া ইয়াসমিন রাইসা।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ২ হাজার ২০১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে এ বছর রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ৮ হাজার ৬৩০ জনে। এ সময় ডেঙ্গুতে আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এ বছর মারা গেল ৫১৪ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, নতুন রোগীদের মধ্যে ৯২৬ জন ঢাকায় এবং ১ হাজার ২৭৫ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৭ হাজার ৯৪২ রোগী ভর্তি আছে। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৩ হাজার ৭৬৩ জন ও ৪১৭৯ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলার।
মারা গেলেন পাঁচ চিকিৎসক, এক মেডিকেল শিক্ষার্থী : ডা. বায়েজিদ আহমেদকে নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন পাঁচ চিকিৎসক। তাদের মধ্যে মাত্র ২৭ বছর বয়সী ডা. শরীফা বিনতে আজিজ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১১ আগস্ট ভোর ৫টার দিকে মারা যান। তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছিলেন এবং মৃত্যুর সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজে এফসিপিএস পার্ট-২ করছিলেন। ডা. শরীফা দোহার উপজেলার লটাখোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল আজিজের একমাত্র মেয়ে। এক ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়।
এর ঠিক তিন দিন আগে গত ৭ আগস্ট রাত ১টা ১৫ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. আলমিনা দেওয়ান মিশু। তিনি সর্বশেষ বাংলাদেশ শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে (আইসিএমএইচ) গাইনি অ্যান্ড অবস বিভাগে রেসিডেন্ট (৩৯ ব্যাচ) হিসেবে অধ্যয়নরত ছিলেন।
এই চিকিৎসকের মৃত্যুর ব্যাপারে আইসিএমএইচের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ মান্নান জানান, ডা. মিশু সেখানে এমএস কোর্সের শিক্ষার্থী ছিলেন। আসছে জানুয়ারিতে তার চূড়ান্ত পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। জুনের পর থেকে বিএসএমএমইউতে পড়ালেখা করছিলেন তিনি, সেখানে তার প্লেসমেন্ট ছিল। গত ২৪ জুলাই তার জ্বর আসে, ডেঙ্গু ধরা পড়লে প্রথমে বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। অবস্থা খারাপ হলে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে এভারকেয়ার থেকে তার পরিবারকে জানানো হয় তিনি অলরেডি ব্রেইন ডেড। চিকিৎসা চালিয়ে যেতে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে আসেন তার পরিবারের সদস্যরা। রাতে সেখানেই মারা যান।
১৫ মাসের সন্তান রেখে মারা গেছেন ডা. ফাতেমা-তুজ-জোহরা। গত ২২ জুলাই সন্ধ্যার দিকে সাভারের সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এই চিকিৎসক রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ডা. রওনক ছিলেন সমাজভিত্তিক মেডিকেলের এমবিবিএস ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৩২ বছর। তিনি ১৫ মাস বয়সী একটি শিশু ছেলে রেখে গেছেন।
গত ২২ জুন ভোর সাড়ে ৫টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ডা. এম আরিফুর রহমান। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) কর্মরত ছিলেন। ডা. এম আরিফুর রহমান বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের ৩৯তম ব্যাচের কর্মকর্তা জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাবেক মেডিকেল অফিসার ছিলেন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন ডা. আরিফুর রহমান। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনে এমডি ফেইজ-এ-তে অধ্যয়নরত ছিলেন।
ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত একজন মেডিকেল শিক্ষার্থী মারা গেছেন। রাজধানীর ধানম-িতে অবস্থিত আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজের অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থী সৈয়দা সাদিয়া ইয়াসমিন রাইসা গত ২৫ জুলাই সকালে আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি এমবিবিএস শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক নারী কর্মকর্তাকে অপহরণ করে গ্যারেজে আটকে নির্যাতন ও অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার সাবেক গাড়িচালক ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে। ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে ওই নারীকে অপহরণ করে নির্যাতনের এ ঘটনায় মামলার পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিন অভিযুক্তকে।
মামলয় ছয়জন অভিযুক্তের নাম উল্লেখ করেছেন ভুক্তভোগী। তারা হলেন, ভুক্তভোগীর সাবেক প্রাইভেটকারের চালক মো. মাসুদ। তার সহযোগী সাইফুল ইসলাম, আবু বক্কর সিদ্দিক অরফে সাব্বির, ইয়াসিন আরাফাত রাজু, শান্ত, পনু ও শাহিন। এদের মধ্যে ইয়াসিন, সাইফুল ও আবু বকর গ্রেপ্তার আছেন। তাদের এক দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ওই দিন বড় মগবাজার থেকে নিজের গাড়িতে করে সিদ্ধেশ্বরীর বাসায় ফিরছিলেন এই কর কর্মকর্তা। ওই সময় ঘটনাস্থলে পৌঁছালে একটি মোটরসাইকেল তার বহনকৃত গাড়িতে ধাক্কা দেয়। চালক গাড়ি থেকে নামলে সংঘবদ্ধ কয়েকজন চাবি কেড়ে নিয়ে গাড়িচালক আনোয়ার ও মালিক মাসুমাকে মারধর শুরু করে। এরপর আনোয়ারকে রেখে মাসুমা ও তার গাড়ি সবুজবাগের একটি গ্যারেজে নিয়ে যায় অপহরকারীরা। এ সময় মাসুমার মুখ টেপ দিয়ে আটকে রাতভর মারধর করা হয়। পরদিন দুপুর ২টা পর্যন্ত তাকে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। এতে তার এক পা ভেঙে গেছে এবং চোখ-মুখের আঘাত গুরুতর।
ভুক্তভোগী মাসুমা বলেন, আমার ব্যক্তিগত গাড়ির সাবেক চালক মো. মাসুদের চারিত্রিক সমস্যা থাকায় তাকে চলতি মাসের শুরুতে চাকরিচ্যুত করা হয়। তার পর থেকে বিভিন্নভাবে পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল। সর্বশেষ গত ১৭ আগস্ট মাসুদসহ ১০ থেকে ১২ জনের একটি অপহরণকারী দল নিয়ে আমাকে মারধর ও অপহরণ করে সবুজবাগ নন্দিপাড়া কবরস্থানের পাশে একটি বাসার গ্যারেজে গাড়ির মধ্যে আটকে রাখে। পরের দিন ১৮ আগস্ট মাসুদসহ কয়জন খাবার কিনতে যায়। বাকিরা গাড়ির পাহারায় ছিলেন। এই সুযোগে আমি গাড়ি থেকে বেরিয়ে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এসে আমাকে (মাসুমা) উদ্ধার করে। সে সময় সেখান থেকে আমার ব্যক্তিগত গাড়ি ও মাসুদের তিন সহযোগীকে আটক করে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা।
পুলিশ বলছে, ঘটনার দিন রাত ৮টার দিকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে মাসুমা ও তার গাড়িচালক আনোয়ারকে মারধর করে কয়েকজন। এরপর সেখান থেকে মাসুমাকে তুলে নিয়ে সবুজবাগ থানা এলাকার একটি গ্যারেজে ১৮ ঘণ্টা আটকে রাখে তারা। সে সময় নির্যাতনে এই কর্মকর্তার পা ভেঙে যায়। তার চোখও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নির্যাতনের শিকার মাসুমা খাতুন এনবিআরের যুগ্ম-কমিশনার (ট্যাক্স)। কর অঞ্চল-২-এ কর্মরত তিনি। গ্রিন রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন।
রমনা থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, অপহরণের রাতে যুগ্ম কমিশনার মাসুমার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা এবং তার মোবাইল ছিনিয়ে নেয় চক্রটি। তাকে অপহরণ করতে পারলে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা যাবে, এমন আশ্বাস মাসুদ দিয়েছিল তার সহযোগীদের।
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সহিদুল ওসমান মাসুম বলেন, গ্রেপ্তার তিনজনের বাসা সবুজবাগের দক্ষিণগাঁও এলাকায়। মাসুদও ওই এলাকায় বসবাস করে। ভুক্তভোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তথ্য নেওয়া হয়েছে। এছাড়া আসামিদের একদিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে বেশ তথ্য মিলেছে। এখন পরিকল্পনাকারী মাসুদকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত অপহরণের পেছনে মূল ঘটনা কী, কিছুই বলা যাচ্ছে না।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের উদ্যোগে আজ রাজধানীর উত্তরা ও যাত্রাবাড়ীতে দুটি শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটায় সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে যাত্রাবাড়ী মোড়সংলগ্ন শহীদ ফারুক সড়কে শান্তি সমাবেশ শুরু হবে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুরুল আমিন রুহুল এমপির সভাপতিত্বে সমাবেশে কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
বিকেল ৩টায় উত্তরা আজমপুর আমির কমপ্লেক্সের সামনে শুরু হবে আরেকটি শান্তি সমাবেশ। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের এ সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন।
এতে সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। সঞ্চালনা করবেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি।
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে চলতি বছর মে মাসে। গত শুক্রবার ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে দেশটি। নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে এ নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করার ঘোষণার তিন দিন পার হলেও কারও নাম প্রকাশ হয়নি। তবে বিভিন্ন মহলে নানা দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের নামে আলোচনা এখন সর্বত্র।
কারা যুক্তরাষ্ট্রের এ ভিসা নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন বা পড়তে যাচ্ছেন তা নিয়ে রাজনৈতিক, কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ ও ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্বকারী একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, যেহেতু নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে এর লক্ষ্য নির্বাচনী ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারাই। তারাই ভিসানীতির আওতায় পড়বেন, এটাই স্পষ্ট।
তারা আরও বলেন, ভিসানীতি প্রয়োগের কথা জানালেও যুক্তরাষ্ট্র কারও নাম প্রকাশ করেনি। তবুও বলা যেতে পারে, কাদের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ করবে পশ্চিমা এ প্রভাবশালী দেশটি।
এ ব্যক্তিরা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়ই একটা তালিকার বেশিরভাগ নামই চূড়ান্ত করে ফেলেছে। অল্পসংখ্যক বাকি থাকতে পারে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে সেগুলোরও চূড়ান্ত করা হবে। যেখানে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জড়িত প্রতিষ্ঠান, দপ্তর, অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা থাকতে পারেন।
বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে ধারণা পাওয়া গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির উদ্দেশ্যই যেহেতু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে, ফলে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা যারা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকবেন তারাই ভিসানীতির আওতায় আসবেন। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারাও থাকতে পারেন। থাকতে পারেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রাজনৈতিক নেতা, তারা যেকোনো দলের হতে পারেন। অল্পসংখ্যক ব্যবসায়ীও থাকতে পারেন।
জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন,‘ভিসানীতির বিষয়টি আমেরিকা প্রশাসন পরিষ্কার করে ঘোষণা না করলেও বুঝিয়ে দিয়েছে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারেন, এমন যে কেউ এ ভিসানীতির আওতায় পড়তে পারেন। যেমন রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাহী প্রশাসন, জুডিশিয়ারি অর্থাৎ যারাই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট থাকবেন, অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যাহত করবেন তারাই এর আওতায় আসবেন।’ তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের এর আওতায় পড়ার সুযোগ নেই। তবে হ্যাঁ, নির্বাচন ব্যাহত করার ছোট্ট সুযোগ তাদের হাতেও থাকে, তারা যদি জড়িত হন, ভিসানীতির আওতায় পড়বেন।’
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ভিসানীতির চেয়েও আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে নেগোশিয়েশন জরুরি। কে ভিসানীতির আওতায় পড়ল, কে পড়ল না এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঐক্য।’ তিনি বলেন, ‘ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়ায় কারা রয়েছেন সেটা আমেরিকা প্রশাসন ঘোষণা না করলেও বোঝা খুব জটিল কিছু নয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘আমেরিকা যেহেতু ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে তাদের ভিসানীতি, ফলে পরিষ্কার হয়ে গেছে কারা পড়তে পারেন এর আওতায়। যারা নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, নিশ্চয়ই তারাই এর আওতায়।’
বিভিন্ন পর্যায়ের ও পেশার নিয়োজিত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনৈতিক নেতারা ভিসানীতিকে তেমন আমলে না নিলেও বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা ও সিভিল প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ভেতরে আমেরিকার ভিসানীতি ভীষণ ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে এর নানা কারণ জানা গেছে। এর মধ্যে বিদেশে টাকা পাচার, ব্যবসাবাণিজ্য, পরিবারের সদস্যদের বিদেশে থাকা এসব কারণে বেশি ভীতিতে ফেলেছে তাদের। আবার একটা অংশ বিদেশে কিছু না থাকলেও ভিসানীতির আওতায় পড়লে ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়ার ভয় পাচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করায় যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে পারেন এমন দুুশ্চিন্তা যেমন কারও কারও মনে ভর করেছে, তেমনি ভিসানীতিতে পড়ার সুযোগ নেই তারাও দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। কারণ এই শ্রেণির লোকজন মনে করছেন, কখনো যদি যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান, তখন যদি ভিসা না হয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন এমন নামের তালিকাও চারদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে। আরও অগ্রসর হয়ে কোনো কোনো মহল লম্বা তালিকা হাতে নিয়ে ঘুরছে। তবে এসব নামের তালিকার উৎস বা সূত্র নিশ্চিত নয় বলে কেউ কেউ বিষয়টি গুজব মনে করছেন। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের বাইরে প্রায় সবাই ভিসানীতি আতঙ্কে ভুগছেন।
একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ভিসানীতিকে জয়-পরাজয় হিসেবে প্রচার করে এলেও ভেতরে ভীতি সবারই রয়েছে। কারণ পশ্চিমা দেশে তাদের অনেকেই ইতিমধ্যে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছেন। ফলে রাজনীতির বাইরেও ব্যক্তিজীবনের প্রয়োজনে ভিসানীতি তাদের ওপর যদি প্রভাব ফেলে, সে আশঙ্কা তো আছেই।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সব বিষয়ে আমি কথা বলি না। আমি একটাই কথা বলব, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আওয়ামী লীগ সে কাজই করছে।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘ভিসানীতি আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এর সঙ্গে গণতন্ত্র ও নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।’ তিনি বলেন, গণতন্ত্রের বিষয়ে বলতে হলে আরও অনেক বিষয় রয়েছে। এ ভিসানীতি কারা লক্ষ্যবস্তু জানতে চাইলে ইনু বলেন, ‘এটি নিয়ে মাথাব্যথা নেই আমাদের। তারাই বলতে পারবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কারও পরামর্শে সরকার কোনো প্রতিষ্ঠান অদলবদল করবে না, পরিবর্তনও আনবে না।’
সৌরজগতের সবচেয়ে ভয়ংকর গ্রহাণু হিসেবে পরিচিত বেন্নু। প্রতি ছয় বছরে একবার করে এটি ঢুকে পড়ে পৃথিবীর কক্ষপথে। কখনো কখনো পৃথিবীর বিপজ্জনক দূরত্বেও চলে আসে। গবেষকদের আশঙ্কা, আগামী ২০০ বছরের মধ্যে সেটি আছড়ে পড়তে পারে পৃথিবীতে। তাই এই গ্রহাণু ঘিরে বিজ্ঞানীদের আগ্রহও ছিল তুমুল। গ্রহাণুটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে তাই ২০১৬ সালে সেখানে পাঠানো হয়েছিল নাসার মহাকাশযান ওসিরিস রেক্সকে। সাত বছর পর গ্রহাণুর নুড়ি-পাথর কুড়িয়ে গতকাল পৃথিবীতে ফিরেছে ওসিরিস রেক্স।
বিবিসি জানাচ্ছে, গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৫২ মিনিটে দেশটির উতাহ মরুভূমিতে সফলভাবে অবতরণ করে ওসিরিস রেক্স থেকে ছেড়ে দেওয়া ক্যাপসুলটি। অবতরণের সময় রাইফেলের বুলেটের চেয়ে ১৫ গুণ বেশি গতিতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে সেটি। প্রচণ্ড এই গতির কারণে শঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বেন্নুর বুক থেকে তুলে আনা নমুনা নিয়ে নিরাপদেই সেটি পৃথিবীর মাটি ছুঁয়েছে।
বিবিসি বলছে, পৃথিবীর যাবতীয় প্রাণের উৎস কী, বিজ্ঞানীদের সেই গভীরতম প্রশ্নের জবাব মিলতে পারে ওই নমুনা থেকে। অভিযানের সঙ্গে যুক্ত দান্তে লরেত্তা বলেন, ‘উপাদানগুলো পৃথিবী তৈরির আগের। তার মধ্যে কিছু নমুনা থাকতে পারে, যা এমনকি আমাদের সৌরজগতেরও আগের। পৃথিবী কীভাবে গঠিত হলো, কেন এটি প্রাণের বসবাসযোগ্য, আবহমণ্ডলের বায়ু বা মহাসাগরের পানি কোথা থেকে এলো এবং সর্বোপরি পৃথিবীর সব প্রাণ গঠনে প্রয়োজনীয় জৈব অণুর উৎস কী এসব জটিল প্রশ্নের জবাব খোঁজা হবে ওই নমুনা থেকে।
বিজ্ঞানীদের বিদ্যমান ধারণা হলো, প্রাণের জন্য সহায়ক উপাদানগুলোর অনেকই পৃথিবীর আদিকালের দিকে মহাকাশ থেকে ছুটে এসে আছড়ে পড়া গ্রহাণু থেকে পাওয়া। তার মধ্যে অনেকই হয়তো বেন্নুর মতো।
নাসা বেন্নু থেকে নমুনা সংগ্রহের অভিযান শুরু করে ২০১৬ সালে। ৫০০ মিটার চওড়া কাঠামোতে পৌঁছাতে ওসিরিসের লাগে দুই বছর। আরও দুই বছর লাগে নমুনা সংগ্রহের সঠিক স্থান বাছাই করতে। সাত বছরে যেতে-আসতে অনুসন্ধানযানটি ভ্রমণ করেছে ৭০০ কোটি কিলোমিটার পথ।
নাসার বরাতে বিবিসি জানাচ্ছে, নমুনা সংগ্রহের মুহূর্তটি ছিল চমকে দেওয়ার মতো। তিন মিটার দীর্ঘ হাতটি ওসিরিসের মাটিতে রাখতেই সেখানকার উপাদান তরল পদার্থের মতো ভাগ হয়ে যায়। কারণ বেন্নুতে সম্ভবত প্রচুর পানি রয়েছে। তা আছে এর খনিজ উপাদানের মধ্যে। এর পরিমাণ হতে পারে গ্রহাণুটির ওজনের ১০ শতাংশ।
এখন বিজ্ঞানীরা খতিয়ে দেখবেন এর বিভিন্ন ধরনের হাইড্রোজেন অণুর অনুপাত পৃথিবীর সাগরের পানির মতোই কি না। পৃথিবীর শুরুর দিকের অতি তাপের জন্য বেশির ভাগ পানিই শুকিয়ে গিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। এখন যদি দেখা যায়, বেন্নু ও পৃথিবীর পানির ধরন এক, তাহলে এ ধারণাটা জোরদার হবে যে পরবর্তীকালে এসে আছড়ে পড়া গ্রহাণুই পৃথিবীর পানির উৎস।
নাসার তথ্য বলছে, বেন্নুতে সম্ভবত এর ওজনের ৫ থেকে ১০ শতাংশ কার্বনও আছে। আর এ বিষয়টিও খুব কৌতূহলকর। জানা মতে, পৃথিবীর প্রাণ জৈব রাসায়নিক উপাদানে তৈরি। তাহলে কি নবীন পৃথিবীতে জীবনের জাগরণের জন্য পানির পাশাপাশি জটিল অণুও মহাকাশ থেকে আসতে হয়েছিল? বেন্নু হয়তো এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজে পেতে অনেকটাই সাহায্য করবে।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) চলতি মেয়াদ আর দেড় বছর। ইতিমধ্যে অন্তত ২ পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি) ও এক জেলা প্রশাসক (ডিসি) দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটারদের কাছে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়েছেন। ইসি এসব কর্মকর্তার শাস্তির সুপারিশ করেছে এবং প্রাপ্য দ- নিশ্চিত করতে বলেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে কয়েক মাসের মধ্যে হতে যাওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এক শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তার রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে কেন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নিতে না পারাই এর মূল কারণ। যদিও সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচনে ডিসি-ওসিদের পক্ষপাতমূলক আচরণ কাক্সিক্ষত নয়।
ইসির বিভিন্ন সূত্র বলছে, জাতীয় নির্বাচনে বিতর্ক এড়াতে এ বিষয়ে আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২২ অক্টোবর পুলিশ ও প্রশাসনের মাঠ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
প্রথমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শুরু হবে। পরে ধাপে ধাপে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি ও পুলিশ কমিশনারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনী আইনে কিছু পরিবর্তন আসায় বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের অবগত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর অংশ হিসেবে প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ১৮ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।’
সূত্র বলছে, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বারবার বলা হলেও সরকারি কর্মকর্তাদের অতি তৎপরতায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছে তারা। এর সুযোগ নিচ্ছে বিরোধী দলগুলো। সাধারণ মানুষের কাছেও নির্বাচনের আগে এমন বক্তব্য নেতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে। ‘এ প্রশাসন দিয়ে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়’ বিরোধী দলের এমন অভিযোগের সঙ্গে বিদেশিদের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগিদ আসছে। সার্বিক বিবেচনায় কঠোর বার্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। যেসব কর্মকর্তা এ ধরনের কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকবেন তাদের গুরুদ-সহ ভবিষ্যতে নির্বাচনী দায়িত্বে না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
ইসির এক কর্মকর্তা জানান, তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত যেহেতু সরকারি কর্মকর্তারা তাদের অধীনে থাকেন না তাই সরাসরি শাস্তির নির্দেশ তারা দিতে পারেন না। সম্প্রতি যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তার প্রত্যেকটির বিষয়ে ইসির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়ে শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে। সর্বশেষ জামালপুর জেলার ডিসি মো. ইমরান আহমেদের বিরুদ্ধে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে চিঠি দিয়ে বদলির কথা বলা হয়। তাকে যেন আগামীতে কোনো ধরনের নির্বাচনী দায়িত্ব দেওয়া না হয় সে কথাও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসির চিঠিতে বলা হয়, সরকার, গণতন্ত্র, নির্বাচনব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনের ওপর জনমানুষের আস্থা অক্ষুণœ রাখার স্বার্থে একই সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের এ ধরনের আচরণের বিষয়ে সতর্কবার্তা দেওয়া প্রয়োজন।
সূত্রমতে, কমিশনের মিটিংয়ে সিদ্ধান্তের পর এ চিঠি ইস্যু করা হয়। কমিশনের সিদ্ধান্ত হচ্ছে কোনো ঘটনার পরই চিঠি ইস্যু করে শাস্তির ব্যবস্থা করা ও ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনে তাদের দায়িত্বে না রাখা নিশ্চিত করা। এ ধরনের বিষয়গুলোর মনিটরিংয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১১ সেপ্টেম্বর জামালপুরের মাদারগঞ্জ পৌরসভার নতুন ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের উপস্থিতিতে জেলা প্রশাসক ইমরান আহমেদ নৌকায় ভোট চান। গত ১৫ আগস্ট জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানার ওসি শ্যামল চন্দ্র ধর আওয়ামী লীগকে ‘নিজের দল’ উল্লেখ করে আগামী নির্বাচনে দলকে জেতাতে কাজ করার আহ্বান জানান। একই দিন কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফারুক হোসেন অর্থমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আ হ ম মুস্তফা কামালকে আবারও নির্বাচনে জয়ী করতে স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতি ‘মিনতি’ জানিয়ে বক্তব্য দেন।
এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট শরীয়তপুরের সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচিতে পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্তার হোসেন দলীয় সেøাগান দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটারদের নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে বলেছিলেন সাতক্ষীরার কলারোয়া থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ আহম্মেদ।
সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার ১৯৭৯-এর ২৫(৩) ধারায় বলা আছে, সরকারি কর্মচারী বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অথবা অন্য কোনো আইনসভার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে অথবা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে বা অন্য কোনোভাবে হস্তক্ষেপ করতে বা প্রভাব খাটাতে পারবেন না। ১৯৭৩-এর বিধিমালার (৫) ধারায়ও এর বিহিতের কথা বলা আছে।
ইসি সূত্র বলছে, ইতিমধ্যে সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে প্রশিক্ষণের জন্য তিন হাজার ২শ প্রশিক্ষক তৈরির প্রশিক্ষণ গত ২ সেপ্টেম্বর শুরু করেছে ইসি। পরে মাঠ পর্যায়ের প্রায় দশ লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পুলিশ ও প্রশাসনের প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইউএনও এবং নির্বাচন কর্মকর্তাদের ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৪১টি ব্যাচে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের আগামী ৭ থেকে ২২ অক্টোবরের মধ্যে ৯টি ব্যাচে দুদিনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘জামালপুরের ডিসির মতো প্রশাসন দিয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচন হলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না। এদের বিষয়ে যেমন কঠোর হতে হবে, তেমনি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচনের মাঠকে ‘সমতল’ করতে হবে।’
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’