
ব্রিকসকে বহুমুখী বিশ্বের বাতিঘর হিসেবে আবির্ভূত হতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাদের এ বহুমুখী বিশ্বে ব্রিকসকে একটি বাতিঘর হিসেবে প্রয়োজন। আমরা আশা করি, আমাদের প্রতি প্রতিক্রিয়ার সময় এটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আবির্ভূত হবে। আমাদের শিশু ও যুবকদের কাছে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে আমাদের জাতিগুলো সংকটে পড়তে পারে, কিন্তু কখনই পরাজিত হবে না।’
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী জোহানেসবার্গের স্যান্ডটন কনভেনশন সেন্টারে ৭০টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে ফ্রেন্ডস অব ব্রিকস লিডারস ডায়ালগ (ব্রিকস-আফ্রিকা আউটরিচ অ্যান্ড দ্য ব্রিকস প্লাস ডায়ালগ) ‘নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব ব্রিকস’-এর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে ভাষণ প্রদানকালে এ কথা বলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসাও এ সংলাপে বক্তব্য রাখেন।
ব্রিকস প্লাস ডায়ালগের ফাঁকে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, উগান্ডার ভাইস প্রেসিডেন্ট, দক্ষিণ আফ্রিকার উপপ্রধানমন্ত্রী, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী কুশল বিনিময় করেন।
প্রধানমন্ত্রী ১৫তম ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে জোহানেসবার্গে আসা রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে একটি ফটোসেশনেও যোগ দেন।
গ্লোবাল সাউথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া তথাকথিত পছন্দ ও বিভাজনকে “না” বলা উচিত। সার্বজনীন নিয়ম ও মূল্যবোধকে অস্ত্রে পরিণত করার প্রচেষ্টাকে আমাদের অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করতে হবে। আমাদের নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার চক্র বন্ধ করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে একসঙ্গে অবশ্যই আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ও প্রযুক্তির জন্য প্রত্যেকের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে এবং জলবায়ু, ন্যায়বিচার, অভিবাসীদের অধিকার, ডিজিটাল ইক্যুইটি এবং ঋণ স্থায়িত্বের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহারের সুযোগসহ নিয়মভিত্তিক বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থা সংরক্ষণ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান ব্রিকস চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার আমন্ত্রণে ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ২২ আগস্ট জোহানেসবার্গে পৌঁছান।
প্রধানমন্ত্রী রামাফোসাকে তার আমন্ত্রণের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ম্যান্ডেলার স্নেহ ও আশীর্বাদ উপভোগ করার জন্য আমি দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ব্যক্তিগত সংযুক্তি অনুভব করছি। আমি ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ২৫তম বার্ষিকীতে আমাদের উদযাপনে তার যোগদানের কথা স্মরণ করছি।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার অনুসরণ করে ‘গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে আমাদের সংহতি পুনঃনিশ্চিত করতে আমরা এখানে ব্রিকস আউটরিচে এসেছি। আমরা বিশ্বের সব জাতির সঙ্গে বন্ধুত্বের মনোভাব বজায় রাখি, কারও প্রতি বিদ্বেষ নয়।’
দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখেছে, এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে বাংলাদেশের শেয়ারের যথেষ্ট যোগ্যতা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কন্যা ও ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের থিম্যাটিক অ্যাম্বাসাডর এবং অটিজম অ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
নারীদের পরিবর্তনের কারিগর হিসেবে গড়তে প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ প্রস্তাব : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী ও বালিকাদের পরিবর্তনের কারিগর হিসেবে গড়ে তুলতে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে এ লক্ষ্যে পাঁচ দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন। ব্রিকস সম্মেলন উপলক্ষে গতকাল জোহানেসবার্গের স্যান্ডটন কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এক মধ্যাহ্নভোজে ভাষণদানকালে তিনি এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্লোবাল সাউথে, আমাদের নারী ও বালিকাদের পরিবর্তনের কারিগর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এসডিজি ৫ অর্জনের জন্য আমাদের সবার হাতে হাত রেখে চলা উচিত।’ ব্রিকসের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে জোহানেসবার্গে আসা রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সম্মানে এ মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন। কর্মসূচিতে শেখ হাসিনা এ অঞ্চলের নারী ও বালিকাদের পরিবর্তনের কারিগর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি গ্লোবাল সাউথ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী তার প্রথম প্রস্তাবে বলেন, আমাদের নারী ও মেয়েদের পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চলমান খাদ্য, শক্তি ও আর্থিক সংকটের বিরূপ প্রভাব প্রশমিত করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, তিনি মেয়েদের স্কুলে রাখতে, তাদের সাইবার অপরাধ থেকে সুরক্ষিত রাখতে ও তাদের ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল বিভাজন কমানোর জন্য প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, অনেক মেয়েই এ সমস্যার সম্মুখীন হয়।
শেখ হাসিনার তৃতীয় প্রস্তাবে নারীদের লাভজনক কর্মসংস্থান, শালীন কাজ, মজুরি সমতা ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সুযোগ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
চতুর্থ ও পঞ্চম প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী একটি সক্রিয় এবং টেকসই রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য নারীদের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির পাশাপাশি জলবায়ুর প্রভাবের কারণে নারীদের সুরক্ষা ও টিকে থাকার ব্যবস্থা গ্রহণে প্রয়োজনীতার ওপর গভীরভাবে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহুও অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন।
চার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক : ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে গতকাল জোহানেসবার্গে চার দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা, মোজাম্বিকের প্রেসিডেন্ট ফিলিপে জ্যাকিন্টো নিউসি, তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট ড. সাইমা সুল্লুহু, ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির আলাদা আলাদা দ্বিপক্ষীয় বৈঠক স্যান্ডটন কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী পারস্পরিক স্বার্থে দ্বিপক্ষীয় ও বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে দেশগুলো থেকে ব্যাপক বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।
একই স্থানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট দিলমা ভানা রুসেফের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাসস
পাঁচ দেশের জোট ব্রিকসের এবারের শীর্ষ সম্মেলনের শেষ দিনে ছয়টি দেশকে সদস্য হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ নেই। ছয় মাস ধরে বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়টি জোরালোভাবে আলোচনায় ছিল। প্রভাবশালী দেশ চীনেরও জোরালো সমর্থন ছিল। নির্বাচনের আগে পশ্চিমা চাপের মধ্যে ব্রিকসের সদস্যপদ লাভের ব্যাপারে সরকারের আগ্রহ ও প্রত্যাশা ছিল। ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্রিকসের সদস্য হতে পারলে তাতে নতুন মাত্রা যোগ হতো। সেই প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় কেউ কেউ মনে করছেন, কূটনৈতিকভাবে হোঁচট খেয়েছে বাংলাদেশ।
তবে কারও কারও মত হলো, বাংলাদেশ শেষ মুহূর্তে আবেদন করেছে। তাছাড়া এমন একটি ফোরামে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে যে ধরনের কূটনৈতিক প্রয়াস চালাতে হয়, সেটা করেনি। হতে পারে, এবার বাংলাদেশ সদস্যপদ পাবে ভাবেনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে তিন দিনের ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন শেষ হয়। ১৫তম শীর্ষ সম্মেলনে এ জোটে ছয় দেশকে সদস্য করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ ছয়টি দেশ হলো সৌদি আরব, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, ইথিওপিয়া ও আর্জেন্টিনা। আগামী বছর ১ জানুয়ারি থেকে তাদের সদস্যপদ কার্যকর হবে। অর্থাৎ পাঁচ দেশ থেকে এগারো দেশের জোটে পরিণত হবে ব্রিকস।
৪০টিরও বেশি দেশ এবার ব্রিকসে যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। এর মধ্যে ২২টি দেশ এ জোটে যোগ দেওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিক আবেদন করে।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ব্রিকসে সম্প্রসারণ বিষয়ে ঘোষণা এলেও নীতিমালা, মানদ- ও প্রক্রিয়া নিয়ে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে দ্বিমত ছিল। শেষ পর্যন্ত গতকাল এসব বিষয়ে সবাই একমত হওয়ার পর ছয়টি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
গত জুনে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) একটি অনুষ্ঠানের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার বৈঠক হয়। এরপর ব্রিকসে যোগ দেওয়ার বিষয়টি জোরালোভাবে সামনে আসে। দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বাংলাদেশ আগস্টে ব্রিকসের সদস্য হিসেবে যুক্ত হতে পারে। তবে ওই বৈঠকের পর, অর্থাৎ ১৪ জুনের পরই বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিকসের সদস্যপদের জন্য আবেদন করে। বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশ আবেদন করেছে চলতি বছর।
বাংলাদেশকে সদস্য করার ক্ষেত্রে জোটের অন্যতম শক্তিশালী দেশ চীনের জোরালো সমর্থনের বিষয়টি গত দুই মাস ধরেই আলোচনায় ছিল। এমনকি সম্মেলনের সাইড লাইনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ব্রিকসের সদস্য হতে চীন বাংলাদেশকে সমর্থন দেবে।
কূটনৈতিক পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চীনের বেশি আগ্রহের ফলেই হয়তো শেষ পর্যন্ত সমর্থন পায়নি বাংলাদেশ। কারণ চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সাপে-নেউলে অবস্থায় যাচ্ছে কয়েক বছর ধরে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক চরম খারাপ। আবার ব্রিকসের পাঁচ দেশের মধ্যে ভারত এবং ব্রাজিলের সঙ্গে পশ্চিমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকাও শুরুতে বাংলাদেশকে চাইলেও শেষ পর্যন্ত তেমন কোনো ভূমিকা রাখেনি। ব্রিকস জোটের বর্তমান সদস্যরাও চাইছিল নিজেদের জোটে আবার নতুন কেউ যেন প্রভাবশালী হয়ে না ওঠে। সে বিষয়ে সম্মেলনের আগে থেকেই সতর্ক ছিল দেশগুলো। ফলে ধারণা করা হচ্ছে ভারত ও ব্রাজিলের সমর্থন পায়নি বাংলাদেশ। আর দক্ষিণ আফ্রিকাও ছিল নীরব।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা চাপে রয়েছে সরকারপক্ষ। ব্রিকসের সদস্যপদকে পশ্চিমা চাপের বিপরীতে একটি শক্তি হিসেবে দেখেছিল সরকারের নীতিনির্ধারকরা। তাই হয়তো চলতি বছরের জুনেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এ জোটে সদস্য হওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। জুনেই বাংলাদেশ সদস্যপদের জন্য আবেদন করে।
তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, সাধারণত এ ধরনের কোনো ফোরামে যোগ দিতে শুধু আবেদন করে বসে থাকলেই হয় না। কারণ সদস্য দেশগুলোর নতুন কোনো দেশকে যুক্ত করার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হয়। ফলে ওইসব দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের কাছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানোর পাশাপাশি সেসব দেশে বিশেষ দূত পাঠানোর মতো প্রয়াস চালাতে হয়। কিন্তু আবেদন করা ছাড়া সদস্য দেশগুলোর প্রধানদের সঙ্গে কোনো ধরনের সুপারিশ বা তদবির করেনি বাংলাদেশ।
সূত্রের দাবি, ব্রিকসে যুক্ত হতে বাংলাদেশের যতটা না আগ্রহ ছিল, তার থেকে বেশি আগ্রহ চীনের। পশ্চিমা আধিপত্য খর্ব করতে চীন ও রাশিয়া এ জোটের সম্প্রসারণ চেয়েছে। বাংলাদেশ সদস্যপদ না পেলেও যে ছয়টি দেশ সদস্যপদ লাভ করেছে, তাতেও চীন ও রাশিয়ার নেতৃত্বে ভূরাজনৈতিক মেরূকরণ ক্রমেই বাড়বে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এবার না পেলেও পরেরবার বাংলাদেশ ব্রিকস জোটের সদস্যপদ পাবে। তবে সে ক্ষেত্রে ভারতের সমর্থন জরুরি। তারা বলেন, ভারত আঞ্চলিক ভারসাম্যের কথা ভেবেই এবার বাংলাদেশের পক্ষে হয়তো জোরালো সমর্থন দেয়নি। কারণ ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক অন্য যেকোনো সময়ের থেকে এখন বেশি বৈরী। তাই তারা ব্রিকসে চীনের সমর্থনে বাংলাদেশকে চায় না। একই সঙ্গে ভারতের অন্যতম মিত্র যুক্তরাষ্ট্র চায় না বাংলাদেশ চীনের বলয়ে ঢুকে পড়–ক। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক মিত্র ব্রাজিলের নজরেও বিষয়টি এসেছে। তবে এখানে বড় সমীকরণটি হতে পারে, এশিয়া অঞ্চলে চীনের আধিপত্য নিয়ে ভারতের আপত্তি। কারণ নতুন যে ছয়টি দেশকে সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে তিনটিই চীন ও রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, জোটের সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কিছু মানদণ্ড প্রস্তাব করেন। শেষ মুহূর্তে গতকাল জোটের সদস্য বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। এবারের ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের শুরু থেকেই মূল আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে জোটের সম্প্রসারণ।
গত বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নালেদি প্যানডর তাদের রাষ্ট্রীয় রেডিও স্টেশনকে বলেছিলেন, ‘আমরা এই জোট সম্প্রসারণের বিষয়ে একমত হয়েছি। আমাদের কাছে একটি নথি রয়েছে, যা আমরা গ্রহণ করেছি। এতে ব্রিকসের সদস্য হতে চায়, এমন দেশগুলোকে বিবেচনায় নেওয়ার জন্য নির্দেশিকা, নীতিমালা ও প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা আছে। ...বিষয়টি খুবই ইতিবাচক।’
জোটের ভারসাম্য নিয়ে ভারতের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক হর্ষ পন্ত সম্প্রতি এক নিবন্ধে লিখেছেন, চীন সমমনা দেশগুলোকে ব্রিকসে স্বাগত জানানোর কথা বললেও ভারতের নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে সতর্ক।
এ বিষয়ে ভারতের গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ব্রিকসের পরিধি বাড়ানোর প্রশ্নে জোটের অন্যতম সদস্য ভারতের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য হলো জোটে নিশ্চয়ই নতুন নতুন দেশকে স্বাগত জানানো দরকার। কিন্তু জোটের ভেতরে ‘আঞ্চলিক ভারসাম্য’ যাতে রক্ষিত হয় সেটাও দেখাটা খুব জরুরি। ব্রিকসে যাতে চীনের প্রভাব বলয়ে থাকা বেশি বেশি দেশ ঢুকে গিয়ে জোটের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্যটা নষ্ট না হয়ে যায়, ভারত সেদিকেও সতর্ক।
ভারতের সাবেক শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিবিদ পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী একাধিক গণমাধ্যমকে বলেছেন, চীন বা রাশিয়া উভয়ই চেয়েছে তাদের ঘনিষ্ঠ দেশগুলো ব্রিকসে আসুক। কারণ তাতে জোটের ভেতরে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তাদের পাল্লা শক্ত হবে। আবার ভারত নিশ্চিত হতে চেয়েছে ব্রিকস যাতে আরও বেশি চীনের দিকে ঝুঁকে না পড়ে। সেজন্য চীনের অনুমোদন নিয়ে যেসব দেশ ব্রিকসের সদস্য হতে চেয়েছে ভারত তাদের ব্যাপারে সাবধানী মনোভাব নিয়েছে। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ যদিও পুরোপুরি এর মধ্যে পড়ে না। বাংলাদেশ সরাসরি ব্রিকসেও আসুক, এটা কিন্তু কখনো ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশের সদস্যপদ চাওয়া অবশ্যই ইতিবাচক হয়েছে। সদস্যপদ না পাওয়াকে কূটনৈতিক ব্যর্থতা বলা যাবে না।’
তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত সপ্তাহে বলেছিলেন, এবার সদস্য হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অবশ্য তিনি বলেছিলেন, ব্রিকস জোট সম্প্রসারণ নাও হতে পারে। সেই হিসেবে বাংলাদেশের প্রত্যাশাও ছিল না।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালি উর রহমান বলেন, ‘সদস্যপদ পেলে বেশি ভালো হতো। তবে আমি যতদূর জানি সদস্যপদ নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তেমন কোনো তাড়া নেই বা ছিল না।’
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ব্রিকস জোটে নতুন যেসব দেশকে সদস্য করা হয়েছে তার মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে সবকটি দেশ বাংলাদেশ থেকে অগ্রসরমাণ। কাজেই এবার সদস্য না হওয়ার বিষয়টি কূটনৈতিক ব্যর্থতা বলা যাবে না। কারণ বাংলাদেশ এখনো স্বল্পোন্নত দেশের কাতারেই আছে। আর ব্রিকসে যারা আছে তারা আরও ওপরে।’ তিনি বলেন, ‘বিকল্প একটা অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করার মতো সক্ষমতা রাখে এমন দেশকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো সেই ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারবে কি না, তাও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।’
নতুন সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন ব্রিকসের বর্তমান চেয়ারম্যান দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এ ঘোষণার সময় রামাফোসার পাশে ছিলেন। ইউক্রেন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন সম্মেলনে অংশ নেননি। তার প্রতিনিধিত্ব করেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।
পাঁচ সদস্য ছাড়াও এ জোটে যুক্ত হতে আগ্রহী দেশগুলোর প্রতিনিধিরাসহ বিশ্বের ৫০টি দেশ যোগ দিয়েছে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে।
ব্রিকস হলো উন্নয়নশীল অর্থনীতির পাঁচটি দেশ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও সাউথ আফ্রিকার জোট। জোটের নামকরণ হয়েছে সদস্য দেশগুলোর নামের প্রথম অক্ষর মিলিয়ে। সর্বশেষ ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আগে এই জোট ‘ব্রিক’ নামে পরিচিত ছিল।
২০২১ সালে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক নামে পরিচিত ব্রিকসের ব্যাংকে যুক্ত হয় বাংলাদেশ।
এবারের ব্রিকস সম্মেলনে পাঁচ দেশের এই জোটের সদস্যপদ লাভের ব্যাপারে অনেকটা নিশ্চিত ছিল বাংলাদেশ। ব্রিকস সভাপতি সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এ জোটে এবারই ঢুকবে বাংলাদেশ সেই প্রস্তুতি গ্রহণ করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনে যোগ দিতে গেছেন। কিন্তু বাংলাদেশকে সদস্যপদের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সদস্যপদ না পাওয়ার খবর প্রকাশের পর এ নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। তবে সরাসরি বা আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য কেউ দেয়নি। ক্ষমতাসীন দল ও জোটের নেতারা মনে করছেন, জোটে আধিপত্যের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে প্রতিবেশী ভারতের অনীহা থাকতে পারে। যে কারণে বাংলাদেশকে সদস্য হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। আবার আফ্রিকায় নিজেদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার ব্যাপারে ভারতের আগ্রহ থাকার কারণেও হতে পারে।
ব্রিকসে বাংলাদেশের সদস্যপদ না পাওয়া নিয়ে আলোচনায় ভূ-রাজনৈতিক উপাদানও যোগ হয়েছে। ‘বাংলাদেশ চীনের পেটে ঢুকে গেছে’ যুক্তরাষ্ট্রের মতোই কি অন্যতম মিত্র ও প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত মনে করে? চীন বলয়ের ভেবেই কি ব্রিকসে বাংলাদেশকে নিয়ে আপত্তি তুলেছে ভারত, এমন সব আলোচনা রয়েছে। এমন আলোচনায় আগ্রহী যারা তারা বলছে, ভারতের বিরোধিতার কারণ বাংলাদেশ যুক্ত হলে ব্রিকসে চীন শক্তিশালী হয়ে উঠবে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভারতও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে কিছুটা বাঁকা চোখেই দেখছে। তবে বাংলাদেশ অবশ্য এই জোটে ঢুকবে, দুদিন আগে আর পরে, জোটে থাকা দেশগুলোই বাংলাদেশকে টানবে এমন প্রত্যাশা করছেন রাজনীতিকরা। এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষমতাসীন দলের ও জোটের বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ থাকলে চীন সুবিধা পাবে, এতে ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে আশঙ্কা করে প্রতিবেশী দেশটি।
ক্ষমতাসীন দল ও জোটের নেতারা বলেন, ইথিওপিয়া দিয়ে আফ্রিকায় ঢোকার পথ সৃষ্টি করতে চায় ভারত। ফলে আপত্তি তোলেনি দেশটি। এ নেতারা বলেন, যে দেশগুলোই ব্রিকসে যুক্ত হয়েছে কোনো না কোনো স্বার্থের কারণে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্রিকসে যোগদান করতে না পারার কারণ আমার কাছেও মনে হয় ভারত। ব্রিকসে এবারই সদস্যপদ পাবে সেটা প্রায় নিশ্চিতই ছিল বলা যায়। জোটের সভাপতি দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বাংলাদেশকে আমন্ত্রণও জানিয়েছেন। তবে ভারত এখনই চায়নি বলে সুযোগ বঞ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ।’
তিবি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে ভারত বড় ভূমিকা রেখেছে, বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চেয়েছে। তবে এই মুহূর্তে প্রতিবেশী দেশটি চায় না স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিনিধিত্ব করুক। তবে কখনো না কখনো বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত হবে এ জোটে। এই জোটে থাকা দেশগুলোই টেনে নেবে বাংলাদেশকে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ফারুক খান বলেন, ‘ব্রিকস উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা জন্য জোট। এই জোটে অন্তর্ভুক্ত হলে সব কিছু অর্জন হবে, অন্তর্ভুক্ত হতে পারিনি বলে সব শেষ হয়ে যাবে ব্যাপারটা এ রকম নয়। বিষয়টি মিডিয়ায় পুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তো বলেছি, ব্রিকসে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আমন্ত্রণ পেলে আমরা যাব। তাই হয়েছে। সরকার বলেনি যে, আমরা ব্রিকসে যোগ দেব।’
ফারুক খান মনে করেন, ‘এখন হয়নি তো কী হয়েছে? আগামীতে হবে। বিষয়টি রাজনীতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে বলে মনে করি না।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশে ফিরে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করবেন বলে জানান ফারুক খান।
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত না হলেও সুবিধা পাবে। ব্রিকস সম্প্রসারণ হবে এ নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সুতরাং কখনো না কখনো অন্তর্ভুক্ত হবে কোনো সন্দেহ নেই।’
ব্রিকস বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারসাম্য সৃষ্টি করবে জানিয়ে ইনু বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ঋণ সুবিধা গ্রহণে দর কষাকষির সুযোগ সৃষ্টি করবে ব্রিকস। এখনই অন্তর্ভুক্ত হতে না পারা কোনো রকম পিছিয়ে পড়া বলে মনে করেন না জাসদ সভাপতি।
দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ শহরে ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে এর সদস্য বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ব্রিকস যুক্তরাষ্ট্র ও ধনী দেশগুলোর জোট জি-৭ বা শিল্পোন্নত ও বিকাশমান অর্থনীতির জোট জি-২০-এর বিরোধী কোনো শিবির নয়। এর লক্ষ্য, কথিত তৃতীয় বিশ্ব, ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর উন্নয়ন। ব্রিকসে যোগ দিতে ৪০টি দেশ আগ্রহ প্রকাশ করলেও মাত্র ৬টি দেশ এ সুযোগ পেয়েছে।
দেশের জন্য অস্ত্র ধরেছিলেন নুর ইসলাম। দেশ স্বাধীন করেছেন। তবে এ গৌরব নিয়ে বসে থাকেননি তিনি। মন দিয়েছিলেন সামাজিক, সাংগঠনিক নানা কাজে। অকস্মাৎ তার কর্মযজ্ঞে ভাটা পড়ে। এক সকালে ফজরের নামাজ পড়ে বাসায় ফেরার পথে এক দানবীয় বাহন রক্তাক্ত করে তাকে। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তার ওপর রুক্ষতা এঁটে দিয়েছে দেশের বেসরকারি চিকিৎসাব্যবস্থা। হয়তো অনেক অভিযোগ নিয়ে অনন্তযাত্রা হয়েছে এ মুক্তিযোদ্ধার।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পরিবারের সদস্যরা দেশ রূপান্তরকে জানান, নুর ইসলাম (৭০) গত ৭ আগস্ট ফজরের নামাজ শেষে ফেরার পথে যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। ঘটনাস্থলে থাকা কয়েকজন যুবক মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে নিয়ে যান স্থানীয় স্পেশালাইজড মেডিকেল কেয়ার হাসপাতালে। সেখানে তাকে ৪০ মিনিটের বেশি সময় রাখা হলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। পরে এক আত্মীয় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। পথেই তার মৃত্যু হয়।
মুক্তিযোদ্ধা নুর ইসলামের মতো সারা দেশে অসংখ্য মানুষের প্রাণ নিভছে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর দায়িত্বহীন কান্ডে। ‘পুলিশ কেস’, ‘আইনি ঝামেলা আছে’ প্রভৃতি কথা বলে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে মুমূর্ষু রোগীদের। সর্বোচ্চ আদালতের আদেশের পরও বদলায়নি তারা। নানা অজুহাতে দুর্ঘটনায় আহত বা অপরাধীদের আক্রমণে মারাত্মক আহত রোগীদেরও ফিরিয়ে দিচ্ছে তারা দ্বিধা ছাড়াই।
মুক্তিযোদ্ধা নুর ইসলামের চিকিৎসাবিষয়ক কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি স্পেশালাইজড মেডিকেল কেয়ার হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ। তবে একাধিকবার চেষ্টার পর কথা হয় মার্কেটিং ম্যানেজার মো. শরীফের সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা তাকে ফিরিয়ে দিইনি। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরিবারের ইচ্ছায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়।’
ওই হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় আহত রোগীরা এখানেই চিকিৎসার জন্য আসেন। কম আহত রোগীদের এখানে চিকিৎসা দেওয়া হয়। গুরুতর আহত রোগীকে দেওয়া হয় না, বরং তাকে অন্য হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।’ ওই ঘটনায় হাসপাতালটির বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে নুর ইসলামের পরিবার।
বেসরকারি সব হাসপাতালের এক চিত্র আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেসরকারি হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়টি যাচাই করা হয়। দেখা যায়, প্রায় সব হাসপাতালেই রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীতে ৫২০টি বৈধ জেনারেল হাসপাতাল আছে। সবটিতেই আহত রোগীকে চিকিৎসা করার প্রাথমিক সক্ষমতা আছে। কিন্তু চিকিৎসা পায় না গুরুতর আহতরা।
রাজধানীর হাতিরঝিলে গত ১৩ জুলাই ভিক্টর পরিবহনের বাসের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন কলেজ শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান (২৪)। তাকে নেওয়া হয় পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে। তাকে চিকিৎসা না দিয়ে ঢামেক হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। ততক্ষণে তিনি মারা যান। জাহিদ চীনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং দ্বিতীয় বর্ষে অনলাইনে ক্লাস করতেন। ২৫ আগস্টের আগেই চীনে যাওয়ার কথা ছিল তার। তাকে এবং দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা না দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন জেনারেল ম্যানেজার নুরুল ইসলাম তুহিন। তিনি বলেন, ‘প্রচুর ডেঙ্গু রোগী আসছে। আমরা অন্যদের জায়গা দিতে পারছি না। সমস্যায় না পড়লে আমরা সাধারণত রোগী ফিরিয়ে দিই না।’
১৭ জুলাই রাতে খিলক্ষেত ৩০০ ফিট এলাকায় মোটরসাইকেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আহত হয় দুই কিশোর। দুজনের একজন গুরুতর আহত হয়। পাশের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আরও একটি বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে তাদের যেতে হয় ঢামেক হাসপাতালে। তবে যথাসময়ে চিকিৎসার অভাবে সেখানে যাওয়ার আগেই মারা যায় রাতুল কাজী।
হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দুর্ঘটনায় আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসার বিষয়টি তারা বিবেচনা করেন। গুরুতর আহতদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে নানা জটিলতায় পড়তে হয় তাদের। গুরুতর আহত রোগী মারা গেলে পরিবারের সদস্যরা অনেক ক্ষেত্রে ভুল বুঝে হাসপাতাল ভাঙচুর করে। টাকা পরিশোধ করতে চায় না। এসব ঘটনায় মামলা হলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কখনো চিকিৎসা দিতে পুলিশের অনুমতি নিতে হয়। ফলে জটিলতা এড়াতে চিকিৎসাদানে মালিকপক্ষ কড়াকড়ি আরোপ করে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গুরুতর আহত রোগীদের পাঠানো হয় ঢামেক হাসপাতালে। যানজটের কারণে হাসপাতালে যাওয়ার আগেই অসংখ্য প্রাণ নিভছে। ঢামেক হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, আহত রোগীদের অধিকাংশই স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে যায়নি চিকিৎসা পাবে না বলে। যারা গিয়েছে তাদের বলা হয়েছে, দুর্ঘটনার চিকিৎসা সরকারি হাসপাতালে ভালো হয়। তাদের কাছে আহত রোগীর চিকিৎসা নেই।
ঢামেকে রাজধানী ও আশপাশের জেলা ছাড়াও দূরবর্তী জেলার রোগীরা রয়েছে। ওইসব এলাকার বেসরকারি হাসপাতালগুলোও তাদের একই কথা বলেছে। গত সপ্তাহে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া এলাকায় ছিনতাইকারীর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হন স্থানীয় ব্যবসায়ী দিল মোহাম্মদ। ওই এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে পুলিশ কেস বলে ঢামেকে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। তিনি ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
চিকিৎসা দিতে সমস্যা কোথায়?
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রথমত পুলিশে কেস হতে পারে বা পুলিশ কেস হয় সেসব রোগীর বিষয় সাধারণত দীর্ঘকাল ধরে চলে। বেসরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যারা কর্মরত থাকেন তাদের এতবার নানা জায়গায় হাজিরা দিতে হয়, যা তাদের জন্য ঝামেলাপূর্ণ। দেখা যায়, কোনো মামলা ১৫ বছরেও গড়িয়েছে; ডাক্তার এ সময়ে অন্য কোনো বা দূরের কোনো হাসপাতালে যোগ দিয়েছে। কোর্টে হাজিরা দেওয়া তার জন্য কঠিন হয়ে যায়। আবার হাজিরার খরচও তাকে দেওয়া হয় না। এ কারণে তারা আহত রোগীর চিকিৎসায় আগ্রহী হয় না। দ্বিতীয়ত যাদের দ্বারা দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যদি তারা রাজনৈতিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে বা পেশিশক্তিতে বলীয়ান থাকে তাহলে নানা চাপ তৈরি হয়। এসব কারণে বেসরকারি হাসপাতালে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়। তবে মুমূর্ষু কাউকে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত নয়; তার চিকিৎসা করা দরকার। চিকিৎসকরা হয়রানির মুখোমুখি না হলে এ প্রবণতা কমে যাবে।’
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনা, অপরাধীর আক্রমণ বা সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা বা জিডিতে বেসরকারি হাসপাতালের তথ্য গ্রহণ করে না পুলিশ। ফলে বাধ্য হয়ে সরকারি হাসপাতালে যেতে হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘দুর্ঘটনায় শিকার কেউ অভিযোগ করতে চাইলে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার তথ্য দিতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী আমরা সরকারি হাসপাতালের তথ্য চেয়ে থাকি।’
আইনও নেই আহতের পাশে
সারা দেশে আগের তুলনায় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে বেপরোয়া পরিবহন, যান্ত্রিক ত্রুটি প্রভৃতি কারণে। ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে দ্রুত কাছের হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিতে বলা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে হাসপাতালের প্রতি কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এর আগে একই বছর দুর্ঘটনায় আহতের চিকিৎসার নীতিমালার গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। তবে এখনো কার্যকরী হয়নি সে নির্দেশ।
দুর্ঘটনাস্থলের কাছের থানা এবং ক্ষেত্রমত ফায়ার সার্ভিস, চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র বা হাসপাতালকে জানাতে বলা হয়েছে ওই আইনে। আহতের চিকিৎসা না করালে তা আইনের লঙ্ঘন হবে এবং এজন্য অনধিক এক মাসের কারাদ- বা অনধিক ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থদ- বা উভয় দ- হবে এবং চালকের ১ পয়েন্ট কাটা যাবে।
২০১৬ সালে গুরুতর আহত ব্যক্তির জরুরি চিকিৎসাসেবা দিতে সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালকে নির্দেশ দিয়ে রুল জারি করেছিল হাইকোর্ট। ২০১৮ সালের আগস্টে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির জরুরি স্বাস্থ্যসেবা ও সহায়তাকারীর সুরক্ষায় প্রণীত নীতিমালার দুটি অংশে আদালতের পর্যবেক্ষণ যুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করতে বলে হাইকোর্ট। নতুন আইন না হওয়া পর্যন্ত এটাই আইন গণ্য হবে।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) সিনিয়র অ্যাডভোকেসি অফিসার আয়েশা আক্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে নীতিমালাটা যথাযথভাবে এসেছে। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে স্বাস্থ্য সচিবকে গেজেট প্রকাশ করতে বলা হয়। এটার গুরুত্ব চিকিৎসকরাও বুঝতে পারবে যখন তাদের গাইডলাইনে এটা যুক্ত হবে। সরকার যখন এটাকে গেজেট আকারে প্রকাশ করবে তখন তারা বুঝতে পারবে যে এটা করতে হবে। গেজেট না হওয়ায় নীতিমালার উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে না।’
সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে জানার চেষ্টা করা হলেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম মহানগরীর জাকির হোসেন রোডের উভয় পাশেই পাহাড় ছিল। নব্বইয়ের দশকে দিনের বেলায়ও এ রোড দিয়ে চলতে ভয় পেত মানুষ। সরকারি মহিলা কলেজের উল্টো পাশে নাসিরাবাদ প্রপার্টিজ নামে আবাসিক এলাকা গড়ে উঠলেও আগে পুরোটা পাহাড়ি এলাকা ছিল। দক্ষিণ খুলশী, পাহাড়িকা আবাসিক এলাকা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ভিআইপি আবাসিক এলাকা সব হয়েছে পাহাড়-জঙ্গল কেটে। পুকুর-দীঘি-জলাশয়, খেলার মাঠ, কৃষিজমি ভরাট করেও উঠেছে আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক জি এন তানজিনা হাসনাত ও একই বিভাগের মোহাম্মদ আলী বাবু ‘আরবান ল্যান্ডস্কেপ চেঞ্জ ডিটেকশন ইউজিং জিআইএস অ্যান্ড আর এস’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন ২০২২ সালে। তাতে বলা হয়েছে, গত ৩০ বছরে চট্টগ্রামে পাহাড়-জঙ্গলের সবুজ কমেছে ২১ দশমিক ৮২ শতাংশ আর পুকুর-জলাশয় কমেছে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ১৯৯০ সালে নগরীর মাত্র ১৯ শতাংশ এলাকায় বসতি থাকলেও এখন ৪৫ শতাংশ এলাকায় বিস্তৃত হয়েছে।
সারা দেশের ভৌগোলিক পরিবর্তনের বিভিন্ন মানচিত্রের গবেষণা করে বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো)। এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নূর হোসাইন শরীফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উন্নয়ন ও সবুজায়ন সাংঘর্ষিক। তার পরও উন্নয়ন চালিয়ে যেতে হবে। উন্নয়ন প্রকল্পের কারণেই সবুজ কমছে। এ চিত্র সারা বিশে^ই; কোথাও কম, কোথাও বেশি। এতে বাড়ছে উষ্ণতা।’
আবাসনে বিলীন পাহাড় গাছ পানি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক অলক পাল বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরে স্থাপনার (আবাসিক ও বাণিজ্যিক) সংখ্যা বাড়ছে। পতিত জমি, সবুজাচ্ছাদিত ভূমি ও জলাশয় ভরাট হচ্ছে। একদিকে বাড়ছে আবাসন, অন্যদিকে কমছে সবুজ।’
নিজেদের গবেষণার একটি মানচিত্র দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘স্যাটেলাইটের উপাত্তে দেখা যায়, নগরীর যেসব এলাকায় আগে পাহাড় ছিল, সেখানে এখন বসতি। আগে যেখানে পুকুর বা জলাশয় ছিল, এখন সেগুলো ভরাট হয়ে গড়ে উঠেছে স্থাপনা।’
অধ্যাপক জি এন তানজিনা হাসনাত বলেন, ‘শহরমুখো মানুষের আবাসনের চাহিদা মেটাতে বিলীন হচ্ছে চট্টগ্রামের পাহাড়, জলাশয় ও খোলামাঠ। নগরীর প্রান্তীয় এলাকাগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।’
৪০ বছরে সাবাড় ১২০ পাহাড়
গত বছরের ৩০ মে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক খালেদ মিসবাহ উজ্জামান বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার এক সেমিনারে ‘হিল কাটিং ইন চিটাগাং সিটি’ প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম মহানগরীতে গত ৪০ বছরে হারিয়ে গেছে ১২০টি পাহাড়। একটি মাত্র সড়ক নির্মাণেই চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) কেটে ফেলেছে ১৬টি পাহাড়। সবচেয়ে বেশি পাহাড় বিনষ্ট হয়েছে আবাসিক এলাকা নির্মাণে। এক-দুই বছরে নয়, অনেক বছরে পর্যায়ক্রমে। অবশিষ্টগুলোও সাবাড় হওয়ার পথে। সম্প্রতি পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার ফখরুজ্জামান বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিদের ছত্রছায়ায় চট্টগ্রামের পাহাড় সাবাড় হচ্ছে।’
পশ্চিম খুলশীর জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটির উত্তরে কৃষ্ণচূড়া আবাসিক এলাকার পরের জায়গাটি সমতল হয়ে গেছে। সেখানে প্লট বিক্রি হচ্ছে। পাঁচ বছর আগেও এখানে পাহাড় ছিল। ২০১৮ সালেও এখানে পাহাড়ের ঢালে ছড়া প্রবাহিত ছিল। এখন সেখানে কংক্রিটের রাস্তা। পাহাড়ের দিকে আরও প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় যাওয়া যায় সে রাস্তা ধরে। উভয় পাশের পাহাড়গুলো আগের অবস্থায় নেই। স্থানীয় এক দোকানি বলেন, ‘এলাকাটি প্রধান সড়ক থেকে তিন-চার কিলোমিটার ভেতরে। তাই প্রশাসনের কেউ আসে না। মোড়ে মোড়ে পাহারাদার বসিয়ে ভেতরে চলে পাহাড় কাটা।’
জাকির হোসেন রোডে খুলশী থানার বিপরীতে জাকির হোসেনের বাংলোর চারপাশে পাহাড় ছিল। এখন সেখানে পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হয়েছে জাকির হোসেন সোসাইটি। সোসাইটির পশ্চিম পাশে নিউ ঝাউতলা রেলওয়ে কলোনি ও ডিজেল কলোনি। নিউ ঝাউতলার ২৩ নম্বর ভবনে ১৯৮৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বসবাস করেছেন আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘যখন এ কলোনিতে বাসা বরাদ্দ পাই, তখন জানালা দিয়ে জাকির হোসেনের পাহাড় ও গাছ-গাছালি দেখা যেত। চোখের সামনে সেখানে একের পর এক ভবন উঠতে দেখলাম।’
জাকির হোসেন রোডের হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালের (বর্তমানে বন্ধ) পাশ দিয়ে দক্ষিণে হাতের বাম পাশে পাহাড়িকা আবাসিক এলাকা। সেখানকার পাহাড়ে এখন সুউচ্চ ভবনের ভিড়। আরও একটু দক্ষিণে বাম পাশের সড়ক দিয়ে দক্ষিণ খুলশী যাওয়া যায়। সড়কে ওঠার পথে বাম পাশে একটি উঁচু এবং অনেকগুলো মাঝারি পাহাড় ছিল। অনেক দূর থেকে বড় পাহাড়টি দেখা যেত। এর পাশেই একটি ভবনে ফ্ল্যাট কিনে বসবাস করছেন ব্যবসায়ী ফরিদ আহমেদ। তার মুখেও শোনা গেল এলাকাটির একসময়কার পাহাড়ি চিত্রের বর্ণনা।
একসময় সর্দার বাহাদুরনগর থেকে লালখান বাজারের বাঘঘোনায় আসার জন্য পাহাড়ের ভেতর দিয়ে হাঁটাপথ ছিল। পথের উভয় দিকেই ছিল পাহাড়। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার পাশে পাহাড়ের ঢাল থাকলেও ভেতরে কোনো পাহাড় নেই। সমান করে গড়ে তোলা হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভিআইপি আবাসিক এলাকা।
জাকির হোসেন রোডে সরকারি মহিলা কলেজের বিপরীত দিকে নব্বইয়ের দশকেও পাহাড় ছিল। ২০১০ সালের পর এ এলাকায় পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণ শুরু হয়। এখনো চলছে। সিডিএ এ এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমোদন না দিলেও ২০০৮ সালের ইমারত নির্মাণ বিধিমালার পর পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণের হিড়িক পড়ে।
এ ছাড়া, চট্টগ্রাম টেলিভিশন কেন্দ্রের উল্টো পাশে রোজভ্যালি আবাসিক এলাকা, লেকভ্যালি আবাসিক এলাকা, ফয়’স লেকে চিড়িয়াখানার আগে আবদুল হামিদ সড়কের আবাসিক এলাকা, কৈবল্যধামের বিশ্বকলোনি, নন্দন হাউজিং, সিটি করপোরেশনের লেকসিটি আবাসিক এলাকা, বায়েজীদ চন্দ্রনগরসহ অনেক এলাকার পাহাড় কেটে আবাসন বিস্তৃত হয়েছে।
১৫ বছরে ভরাট ৩ হাজার পুকুর-জলাশয়
সিডিএর হিসাব মতেই, চট্টগ্রামে গত ১৫ বছরে হারিয়ে গেছে তিন হাজার পুকুর ও জলাশয়। ২০০৮ সালের ডিটেইলড এরিয়াপ্ল্যান (ড্যাপ) অনুযায়ী চট্টগ্রামে ৫ হাজার ৩১টি পুকুর ও জলাশয় ছিল। এখন নেমেছে প্রায় দুই হাজারে। সিডিএর উপ-প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পের পরিচালক আবু ঈসা আনসারী দেশ রূপান্তরকে এমন তথ্য দেন।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ রাশেদুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কোনো নগরীর ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ জায়গায় খেলার মাঠ, পার্ক, উন্মুক্ত স্থান, পুকুর, দীঘি ও জলাশয় থাকা প্রয়োজন। আমাদের দেশের শহরগুলোতে এর অর্ধেকও নেই। ফলে নগরীতে বসবাসের পরিবেশ যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি বিভিন্ন ঝুঁকি বাড়ছে।’
একসময় বন্দরনগরীর পরীর পাহাড়ের নিচে বিশাল জলাধার ছিল। সেখানে গড়ে উঠেছে আজকের জহুর হকার্স মার্কেট। চকবাজার অলি খাঁ মসজিদের পাশে কমলদহ নামে যে বিশাল দীঘি ছিল সেটি ভরাট করে গড়ে উঠেছে কিশলয় কমিউনিটি সেন্টার। বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল নির্মাণের সময় ভরাট করা হয়েছে মাইল্যার দীঘি। আন্দরকিল্লায় রাজাপুকুর লেইন আছে; কুসুমবাগে আছে দেওয়ানজী পুকুর লেইন, কিন্তু পুকুর দুটি আর নেই। কাট্টলী নুরুল হক চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয়ের পেছনে বিশাল কাট্টলী দীঘির ওপর গড়ে উঠেছে প্রশান্তি আবাসিক এলাকা।
নগরীতে আগে এলাকাভিত্তিক ছোট অনেক পুকুর ছিল, এখন ভরাট। পাহাড়তলী, হালিশহর, রামপুরা, পতেঙ্গা, চান্দগাঁও প্রভৃতি এলাকার প্রতিটি বাড়ির সঙ্গে পুুকুর ছিল, এখন নেই।
উধাও হচ্ছে খোলামাঠ
নগরীর খোলামাঠগুলোও ফুরানোর পথে। আউটার স্টেডিয়ামে মাঠের অর্ধেক দখল করে গড়ে উঠেছে স্থাপনা। ষোলশহরে বিপ্লব উদ্যান বিপন্ন করে গড়ে তোলা হয়েছে খাবারের দোকান। আগ্রাবাদে জাম্বুরি মাঠের অর্ধেক দখল করে হয়েছে শিশুপার্ক। আগ্রাবাদ সরকারি কলোনিতে একাধিক খেলার মাঠ ছিল, সেগুলোতে এখন গড়ে উঠছে বহুতল ভবন।
জলাধার, কৃষিজমিতেও আবাসন
বন্দরনগরীর প্রাকৃতিক জলাধার বাকলিয়া বগার বিল ভরাট করে বহুতল ভবন গড়ে তোলার হিড়িক পড়েছে। সিডিএ বাকলিয়ায় কর্ণফুলী নদীর তীরের কৃষিজমিতে কল্পলোক আবাসিক এলাকা প্রথম পর্যায় ও দ্বিতীয় পর্যায় নামে দুটো প্রকল্প নিয়েছে। অক্সিজেন-কুয়াইশ রোডে কৃষিজমি ভরাট করে অনন্যা আবাসিক এলাকা প্রকল্প নেয় সিডিএ। বর্ষাকালে এলাকাটি ছিল চান্দগাঁও, অক্সিজেন, কুয়াইশ, কালুরঘাট এলাকার প্রাকৃতিক জলাধার। বিবিরহাট সুন্নীয় মাদ্রাসার পেছনের এলাকায় এখন আবাসন গড়ে উঠছে। হালিশহরে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার জায়গাটি ছিল কৃষিজমি এবং বর্ষায় প্রাকৃতিক জলাধার। হালিশহর থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সাগর পাড়ে একসময় প্রচুর কৃষিজমি ছিল। এখন গড়ে উঠছে আবাসন ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্থাপনা।
পাহাড়-জঙ্গল-বনানী, পুকুর-দীঘি-জলাশয়, কৃষিভূমি-খোলা মাঠ কেন হারিয়ে গেল? জানতে চাইলে সিডিএর সাবেক প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি শাহীনুল ইসলাম খান বলেন, ‘এসব রক্ষার দায়িত্ব অবশ্যই আমাদের ছিল। কিন্তু আইনের সঠিক প্রয়োগ না হওয়ায় তা বিলীন হয়ে গেছে। ১৯৯৫ সালের মাস্টারপ্ল্যান ১৯৯৯ সালে অনুমোদনের পর এক আদেশে অর্ধকাটা পাহাড়গুলোতে ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল ২০০১ সালের দিকে। সে সিদ্ধান্তে নগরীতে পাহাড় কাটার ধুম পড়ে যায়। ২০০৮ সালের ডিটেইলড এরিয়াপ্ল্যান প্রণয়ন এবং ২০০৮ সালের নতুন ইমারত নির্মাণ বিধিমালার আগ পর্যন্ত সাবাড় হয় অধিকাংশ পাহাড়।’
দেশে ডেঙ্গুতে আরও একজন চিকিৎসক মারা গেছেন। ডা. বায়েজিদ আহমেদ নামে এই চিকিৎসক গত বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি এই কলেজের পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
হাসপাতাল পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান দেশ রূপান্তরকে জানান, ডা. বায়েজিদ আহমেদ রাজধানীর জাপান বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবস্থা সংকটাপন্ন হলে তাকে সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছিল। পরে সেখান থেকে গত মঙ্গলবার রাতে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের আইসিইউতে আনা হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়। তিনি ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
এ নিয়ে এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে পাঁচ চিকিৎসক ও একজন মেডিকেল শিক্ষার্থী মারা গেলেন। ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া পাঁচ চিকিৎসক হলেন ডা. এম আরিফুর রহমান, ডা. শরীফা বিনতে আজিজ, ডা. আলমিনা দেওয়ান মিশু, ডা. ফাতেমা-তুজ-জোহরা রওনক ও ডা. বায়েজিদ আহমেদ এবং একজন মেডিকেল শিক্ষার্থী হলেন সৈয়দা সাদিয়া ইয়াসমিন রাইসা।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ২ হাজার ২০১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে এ বছর রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ৮ হাজার ৬৩০ জনে। এ সময় ডেঙ্গুতে আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এ বছর মারা গেল ৫১৪ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, নতুন রোগীদের মধ্যে ৯২৬ জন ঢাকায় এবং ১ হাজার ২৭৫ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৭ হাজার ৯৪২ রোগী ভর্তি আছে। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৩ হাজার ৭৬৩ জন ও ৪১৭৯ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলার।
মারা গেলেন পাঁচ চিকিৎসক, এক মেডিকেল শিক্ষার্থী : ডা. বায়েজিদ আহমেদকে নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন পাঁচ চিকিৎসক। তাদের মধ্যে মাত্র ২৭ বছর বয়সী ডা. শরীফা বিনতে আজিজ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১১ আগস্ট ভোর ৫টার দিকে মারা যান। তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছিলেন এবং মৃত্যুর সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজে এফসিপিএস পার্ট-২ করছিলেন। ডা. শরীফা দোহার উপজেলার লটাখোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল আজিজের একমাত্র মেয়ে। এক ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়।
এর ঠিক তিন দিন আগে গত ৭ আগস্ট রাত ১টা ১৫ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. আলমিনা দেওয়ান মিশু। তিনি সর্বশেষ বাংলাদেশ শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে (আইসিএমএইচ) গাইনি অ্যান্ড অবস বিভাগে রেসিডেন্ট (৩৯ ব্যাচ) হিসেবে অধ্যয়নরত ছিলেন।
এই চিকিৎসকের মৃত্যুর ব্যাপারে আইসিএমএইচের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ মান্নান জানান, ডা. মিশু সেখানে এমএস কোর্সের শিক্ষার্থী ছিলেন। আসছে জানুয়ারিতে তার চূড়ান্ত পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। জুনের পর থেকে বিএসএমএমইউতে পড়ালেখা করছিলেন তিনি, সেখানে তার প্লেসমেন্ট ছিল। গত ২৪ জুলাই তার জ্বর আসে, ডেঙ্গু ধরা পড়লে প্রথমে বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। অবস্থা খারাপ হলে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে এভারকেয়ার থেকে তার পরিবারকে জানানো হয় তিনি অলরেডি ব্রেইন ডেড। চিকিৎসা চালিয়ে যেতে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে আসেন তার পরিবারের সদস্যরা। রাতে সেখানেই মারা যান।
১৫ মাসের সন্তান রেখে মারা গেছেন ডা. ফাতেমা-তুজ-জোহরা। গত ২২ জুলাই সন্ধ্যার দিকে সাভারের সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এই চিকিৎসক রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ডা. রওনক ছিলেন সমাজভিত্তিক মেডিকেলের এমবিবিএস ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৩২ বছর। তিনি ১৫ মাস বয়সী একটি শিশু ছেলে রেখে গেছেন।
গত ২২ জুন ভোর সাড়ে ৫টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ডা. এম আরিফুর রহমান। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) কর্মরত ছিলেন। ডা. এম আরিফুর রহমান বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের ৩৯তম ব্যাচের কর্মকর্তা জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাবেক মেডিকেল অফিসার ছিলেন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন ডা. আরিফুর রহমান। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনে এমডি ফেইজ-এ-তে অধ্যয়নরত ছিলেন।
ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত একজন মেডিকেল শিক্ষার্থী মারা গেছেন। রাজধানীর ধানম-িতে অবস্থিত আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজের অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থী সৈয়দা সাদিয়া ইয়াসমিন রাইসা গত ২৫ জুলাই সকালে আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি এমবিবিএস শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
তামিম ইকবাল দলে না থাকাতে যেন অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে! আবার বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অন্তর্ভুক্তিতেও অনেকের চোখ কপালে! দল ঘোষণার পর যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা এলেন সংবাদ সম্মেলনে, তখন আলোচনায় শুধু ছিলেন এই দুজনেই। তাদের এই বিরহ বেদনায় চাপা পড়ে যায় অনেক প্রশ্ন। লিটন দাসকে বাদ দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত কেন সহ-অধিনায়ক! বাড়তি কোনো ওপেনার ছাড়া কিংবা পাঁচ পেসারকে নিয়ে কেন দল গড়া?
প্রায় মিনিট পনেরোর সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে এসেছে একই প্রশ্ন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও ঘুরেফিরে বন্দী ছিলেন একই কথার বৃত্তে। প্রশ্নোত্তর শেষে বেরিয়ে যান তিন নির্বাচক। যেতে যেতে কথা হয় তাদেরই একজন হাবিবুল বাশারের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল চাপা পড়া সেইসব প্রশ্নের উত্তর।
শুরুতেই জানতে চাওয়া হয় লিটনকে বাদ দিয়ে শান্তকে কেন সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ একটা কারণ। আর লিটনের অনাগ্রহও তাকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর একটি কারণ। লিটন নিজেও চায় না নেতৃত্বের চাপ নিতে। সে একটু ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চায়।’
বিশ্বকাপ দলে বিকল্প ওপেনার না থাকার কারণও জানা গেল এই নির্বাচকের কথায়। তিনি জানালেন, ‘আমরা ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে মিরাজকে ভাবছি।’
বিকল্প ওপেনার হিসেবে বিশেষজ্ঞ কাউকে না নেওয়ায় একজন বাড়তি বোলার দলে রাখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে শেখ মেহেদি হাসান সুযোগ পেয়েছেন সে কারণে। পাশাপাশি জায়গা হয়েছে পাঁচ পেসারেরও। এর পেছনে বাশার ভারতের কন্ডিশনের কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারতে এখন আর্লি সিজন। উইকেট সতেজ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই পাঁচজন পেসার দরকার হবে।’
যেতে যেতে আরও বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মুখোমুখি হলেন, এই দলটা বিশ্বকাপে কেমন করবে? এই প্রশ্নটা শুনেই ঘুরে দাঁড়ালেন হাবিবুল। উত্তরে মজা করে বললেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হবে এই দল।’ এরপর একটু গাম্ভীর্য ফিরিয়ে এনে যোগ করলেন, ‘আমি এদের অনেক দিন ধরে দেখছি। ওরা কয়টা ম্যাচ জিতবে জানি না। তবে বিশ্বকাপে প্রতিটি দলকে ভোগাবে, এটা জানি।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের কারণে চলমান রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে নতুন করে উত্তাপ তৈরি হয়েছে। দুই দলের এ পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের মূল টার্গেট ঢাকা দখলে নেওয়া। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসা নিতে বিদেশ পাঠাতে রবিবার বিএনপি ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে। পাল্টা জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও একই পথে হেঁটেছে। বিএনপিকে ‘আগুন সন্ত্রাস, অপরাজনীতি ও নাশকতার রাজনীতি’ ছাড়ার জন্য সোমবার ৩৬ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এরপর পাল্টা ৩৬ ঘণ্টার হুঁশিয়ারি এসেছে বিএনপির কাছ থেকে।
তার আগে গত শনিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে আবেদন করলে অনুমতির বিষয়টি দেখা যাবে। তবে তার কাছে এরকম কোনো কাগজপত্র আসেনি। ওইদিনই খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার বলেছেন, সরকারের মনোভাব ইতিবাচক হলে তারা আবারও আবেদন করবেন।
পরদিন রবিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আলটিমেটাম দেন। ওইদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে বিএনপি বলছে, সরকার চাইলে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে পারে।
দুই দলের রাজনীতি ও ঘোষিত আলটিমেটাম মাঠের রাজনীতিতে কোনো পরিবর্তন আনবে কি না, সে সম্পর্কে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। বিএনপির আলটিমেটামের ফল কী হবে আর আওয়ামী লীগেরও দীর্ঘ ৩৬ দিনের আলটিমেটাম কেন এ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভেতর বেশ কৌতূহল দেখা দিয়েছে।
দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত রাজধানী ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এমন পাল্টাপাল্টি আলটিমেটাম। ঢাকায় বিএনপির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার কৌশলের অংশ হিসেবেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইস্যুতে দলটি আলটিমেটাম দিয়েছে। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতেই তার পাল্টা জবাব দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
দুই দলের ওই নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির রাজনীতির মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা। ঢাকার রাজনীতি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের করে আনতে না পারলে রাজনীতিতে জুতসই অবস্থান সৃষ্টি করতে পারবে না বিএনপি।
সারা দেশের নিয়ন্ত্রণে রাখা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেয়ে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রাজনৈতিক জয়-পরাজয় নির্ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিএনপির ওই শীর্ষসারির নেতারা। তাই বিএনপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসাকে ইস্যু করে নেতাকর্মীদের ঢাকায় ডেকে পাঠানোর কৌশল গ্রহণ করেছে। পর্যাপ্ত নেতাকর্মী ঢাকায় ঢুকে গেলে অবস্থা বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তাই ইস্যু খালেদার চিকিৎসা, কিন্তু লক্ষ্য ঢাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ৩৬ দিনের আলটিমেটামের পেছনে রয়েছে নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার আগপর্যন্ত ঢাকায় নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখা। সেই সঙ্গে নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে নির্দেশনা দিয়ে রাখা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে ততই ষড়যন্ত্রের নীল নকশা আঁকছে।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের শান্তি যেন বিঘিœত না হয়, সেজন্যই আমরা বিএনপির কর্মসূচির দিন মাঠে থাকি। বিএনপিকে জনগণ বিশ্বাস করে না। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে সত্যিই নিতে চাইলে আলটিমেটাম কেন দেবে বিএনপি? আইনি জটিলতা নিরসন করে বিদেশ নেওয়ার চেষ্টা করবে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘বিএনপি সন্ত্রাস-সহিংসতানির্ভর রাজনীতি করে, বিশ্বাস করে। তারা পাকিস্তানের প্রেতাত্মা।’ তিনি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করাতে চাইলে কেন বিএনপি আইনি প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে না? তার কিছু হলে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দায় নিতে হবে।’
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দুই দলের ঘোষিত আলটিমেটামকে কথার বাকযুদ্ধ হিসেবে নিয়েছেন। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এগুলো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের অবস্থান ধরে নেওয়া যায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে তাদের কোনো গা নেই। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিভিন্ন বক্তব্যে সেটাই স্পষ্ট করেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে হলে আইনগতভাবে যেতে হবে। নির্বাহী কোনো সিদ্ধান্তে এ সুযোগ দেওয়া হবে না। ফলে আলটিমেটাম মূলত নিষ্ফল হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দাবি আদায় করার জন্য জনগণ থেকে দাবি উঠতে হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণকে রাস্তায় নামাতে পারবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘এখন যেসব বক্তব্য এগুলো মঞ্চের বাকযুদ্ধ।’
বিএনপির আলটিমেটাম নিয়ে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারব না। আমি (গতকাল মঙ্গলবার) সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষ করে এসেছি।’ আলটিমেটামের পেছনে ঢাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় তো আমরা সভা-সমাবেশ করছিই।’
জানতে চাইলে বিএনপির আরেক নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আলটিমেটাম সম্পর্কে ক্লিয়ার কিছু জানি না।’
বিএনপিকে ‘অপরাজনীতি’ ছাড়তে ৩৬ দিন সময় বেঁধে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ সময়ের মধ্যে ‘সঠিক পথে’ না এলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির ‘অপরাজনীতির কালো হাত’ গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে আলটিমেটাম দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এটি বিএনপির জন্য শেষ বার্তা।’ গত সোমবার রাজধানীর উত্তরায় এবং যাত্রাবাড়ীতে পৃথক সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। উত্তরার সমাবেশে ওবায়দুল কাদের এ আলটিমেটাম দেন।
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপি দুই সপ্তাহের কর্মসূচি নিয়ে এখন রাজপথে আছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও ২১ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ঢাকায় গত সোমবার দুটি সমাবেশ হয়।
এর আগে থেকেই ঢাকায় বিএনপির কর্মসূচির দিন শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীনরা বিএনপির সভা-সমাবেশের বিষয়ে নমনীয়তা প্রদর্শন করলেও মাঠের নিয়ন্ত্রণ ছাড়েনি।
নেক সন্তান আল্লাহর অপূর্ব নেয়ামত। পবিত্র কোরআনে সন্তান-সন্ততিকে জীবনের শোভা বলা হয়েছে। হাদিসের ভাষায় তাদের আখ্যা দেওয়া হয়েছে সদকায়ে জারিয়া হিসেবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন কোনো লোক মারা যায়, তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিন প্রকার আমল (জারি থাকে)। (প্রথম) সদকায়ে জারিয়া; (দ্বিতীয়) ওই ইলম, যা দ্বারা অন্য লোক উপকৃত হয়; (তৃতীয়) নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে। -সুনানে নাসায়ি : ৩৬৫১
সন্তানকে নেক সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে ছোটবেলা থেকেই তাকে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায় এই সন্তানই মা-বাবার ইহকাল-পরকালের অশান্তির কারণ হতে পারে। এখানে কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো- যা সন্তানকে সঠিকভাবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োগ করা যেতে পারে।
গোনাহমুক্ত পরিবেশ : শিশুদের নেক সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে ছোটবেলা থেকেই তার প্রতি যতœবান হতে হবে। তার মানসিক বিকাশে গুরুত্ব দিতে হবে। তার জন্য গোনাহমুক্ত পবিত্র পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদাররা! তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন থেকে রক্ষা করো।’ -সুরা তাহরিম : ৬
একটি শিশু যখন বড় হয়, তখন চারদিকের পরিবেশ তাকে অনেক বেশি প্রভাবিত করে এবং এর প্রতিফলন ঘটে তার বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে। শিশুর সামগ্রিক বিকাশের সঙ্গে পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা নিবিড়ভাবে জড়িত।
তাই তাদের সামনে কোনো ধরনের অসৌজন্যমূলক কথা ও কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তাদের সামনে ঝগড়াঝাটি, পরনিন্দা ইত্যাদি কাজ থেকেও বিরত থাকতে হবে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি রাখা : ছোটবেলা থেকেই শিশুদের পরিচ্ছন্নতার প্রতি সচেতন করে তুলতে হবে। মানুষের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য পরিচ্ছন্নতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) পরিচ্ছন্নতাকে ইমানের অঙ্গ বলেছেন। ছোট মানুষ বলে তাদের যেনতেনভাবে লালন-পালন করা উচিত নয়। কারণ এটিও ব্যক্তিত্ব গঠনে জোরালো ভূমিকা পালন করে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বলেন, ‘রাসুল (সা.) দিনের এক অংশে বের হন, তিনি আমার সঙ্গে কথা বলেননি এবং আমিও তার সঙ্গে কথা বলিনি। অবশেষে তিনি বনু কাইনুকা বাজারে এলেন (সেখান থেকে ফিরে এসে) ফাতেমা (রা.)-এর ঘরের আঙিনায় বসলেন। অতঃপর বলেন, এখানে খোকা [হাসান (রা.)] আছে কি? এখানে খোকা আছে কি? হজরত ফাতেমা (রা.) তাকে কিছুক্ষণ সময় দিলেন। আমার ধারণা হলো, তিনি তাকে পুঁতির মালা, সোনা-রুপা ছাড়া যা বাচ্চাদের পরানো হতো, পরাচ্ছিলেন (সাজিয়ে দিচ্ছিলেন)। তারপর তিনি দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং চুমু খেলেন। তখন তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি তাকে (হাসানকে) ভালোবাসো এবং তাকে যে ভালোবাসে তাকেও ভালোবাসো।’ -সহিহ বোখারি : ২১২২
সৃজনশীল খেলনা : শিশুর খেলনা হতে হবে আবিষ্কারধর্মী ও সৃজনশীল। বয়সভেদে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ উপযোগী খেলনা নির্বাচন করতে হবে গুরুত্বের সঙ্গে। ঘরে ও বাইরে দুই জায়গায়ই খেলা যায়- এমন খেলনা শিশুর মানসিক বিকাশে বেশি সহায়ক। শিশুকে এমন ধরনের খেলনা দিতে হবে, যা তার বুদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ খেলনা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
অনেকে সন্তানকে ঘরে নিরাপদে রাখতে ভিডিও গেম বা কার্টুনের প্রতি আকৃষ্ট করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিনিয়ত ভিডিও গেম খেললে শরীরে এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ হয়। এতে শিশু সব কিছু নিয়েই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। মা-বাবার অবাধ্য হয়ে যায়। মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গেমিংয়ে আসক্ত ব্যক্তি মূলত অন্য সব কিছুর প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে। এ ছাড়া কারও সঙ্গে মিশতে না পারা, ঘুম, খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম তো রয়েছেই।
দীনি ইলম শিক্ষা দেওয়া : দীনি ইলম শিক্ষা করা সব মুসলমানের ওপর ফরজ। তাই সন্তানকে তার দৈনন্দিন ইবাদতের জন্য যতটুকু ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা দরকার, কমপক্ষে ততটুকু ইলম শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতেই হবে। তাকে পবিত্রতা শিক্ষা দিতে হবে, আল্লাহ-রাসুল ও ইসলামের সাধারণ জ্ঞানগুলো অল্প অল্প করে শেখাতে হবে। কোরআন শিক্ষা দিতে হবে, প্রয়োজনীয় মাসয়ালা-মাসায়েল শিক্ষা দিতে হবে। পাশাপাশি তাকে আস্তে আস্তে বিভিন্ন গোনাহ সম্পর্কে সতর্ক করাও মা-বাবার দায়িত্ব।
নামাজে অভ্যস্ত করা : শৈশব থেকে সন্তানকে নামাজে অভ্যস্ত করে না তুললে ভবিষ্যতে সে নামাজের প্রতি যতœবান হতে পারবে না। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘তোমরা সন্তানদের নামাজের প্রতি যতœবান হও এবং তাদের ভালো কাজে অভ্যস্ত করো। কেননা কল্যাণ লাভ অভ্যাসের ব্যাপার।’ -সুনানে বায়হাকি : ৫০৯৪
উল্লেখ্য, ১০ বছর বয়সে সন্তানের বিছানা আলাদা করে দেওয়ার বিষয়টিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারা ঘুমিয়ে গেলেও তাদের অবচেতন মন বড়দের অনেক কার্যক্রমই অনুসরণ করতে পারে।
এক কথায় সন্তানকে দীনদার হিসেবে গড়ে তুলতে হলে, মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদেরও অত্যন্ত সচেতনভাবে চলতে হবে। ঘরে আমলের পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, যাতে পরিবেশের কারণে তাদের মধ্যে আমল করার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়।
প্রত্যেক মানুষ কোনো না কোনো বয়সে ঘাড়, পিঠ বা কোমরের বাত-ব্যথা ভোগেন। কোনো আঘাত পাওয়া ছাড়াই মেরুদণ্ডের এসব অংশে ব্যথা হতে পারে।
ব্যথার উৎস : মেরুদণ্ডের হাড়গুলোর ভেতর দিয়ে মাথার খুলি থেকে নেমে আসা নার্ভে বা স্পাইনাল কর্ডে দুই হাড়ের মধ্যবর্তী ডিস্কের কিছু অংশ বের হয়ে গিয়ে চাপের সৃষ্টি করলে ওই স্নায়ুমূলে ও সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়া নার্ভের বিচরণ অঙ্গে ব্যথা হয়। এ জাতীয় ব্যথার নাম মেরুদণ্ড হাড়ের ক্ষয়। হাড়ের ফাঁক হয়ে যাওয়া বা হাড়ের বৃদ্ধিও বলা হয়। চিকিৎসাশাস্ত্রে এ জটিলতা ডিস্ক প্রোল্যাপ্স, হার্নিয়েটেড ডিস্ক বা স্পাইনাল স্টেনোসিস বলা হয়। ডিস্কের সরে যাওয়া মাত্রার ওপর নির্ভর করে ডিস্ক প্রোল্যাপ্স বা পিএলআইডি রোগের জটিলতা।
লক্ষণ : দাঁড়ানো বা বসা অবস্থায় ঘাড়ে ব্যথা অনুভূত হওয়া, ঘাড় থেকে ব্যথা হাতে ছড়িয়ে পড়া, প্রাথমিক পর্যায়ে কাঁধ ও হাতে ব্যথা, হাতের বিভিন্ন অংশে ঝিনঝিন, শিনশিন করা, হাতের বোধশক্তি কমে আসা, পর্যায়ক্রমে হাতের অসাড়তা, ধীরে ধীরে হাত দুর্বল হয়ে হাতের কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়া এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে পঙ্গুত্ব বরণ করা। মেরুদণ্ডের পিঠের অংশে ব্যথার লক্ষণের মধ্যে রয়েছে বসা ও দাঁড়ানো অবস্থায় পিঠব্যথা ও পিঠ থেকে বুকের চারপাশে ব্যথা ছড়িয়ে পড়া। আর কোমরের দিকের মেরুদণ্ডে ব্যথার লক্ষণ হলো দাঁড়ানো বা বসা অবস্থায় কোমর ব্যথা অনুভূত হওয়া, কোমর থেকে উৎপন্ন ব্যথা পায়ে ছড়িয়ে পড়া, নিতম্ব ও পায়ের মাংসপেশিতে ব্যথা, পায়ের বিভিন্ন অংশে ঝিনঝিন, শিনশিন করা, পায়ের বোধশক্তি কমে আসা, পর্যায়ক্রমে পায়ের অসাড়তা, ক্রমে পা দুর্বল হয়ে কার্যক্ষমতা হারানো।
চিকিৎসা : ব্যথায় রোগী সাধারণত ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে উপশমের চেষ্টা করে থাকেন। কিন্তু এ ধরনের ওষুধ নিয়মিত ও দীর্ঘদিন খেলে কিডনিতে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ব্যথা বাড়লে অপারেশনের মাধ্যমে ব্যথা নিবারণের ব্যবস্থা করা হয়। লেজার চিকিৎসার মাধ্যমে মেরুদণ্ডের ব্যথা নিরাময়ের ব্যবস্থা করা যায়।
ভারতের বিপক্ষেই খেলেছিলেন বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। এবার বিশ্বকাপটাই ভারতে, যে ধর্মশালা দিয়ে শুরু হবে বিশ্বকাপ অভিযান, সেখানেই আছে বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির কৃতিত্ব। হিমালয়ের কোলে, ছবির মতো সুন্দর সেই মাঠে আবারও খেলবে বাংলাদেশ, কিন্তু খেলবেন না তামিম ইকবাল।
অনেক নাটকীয়তার পর অবশেষে বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বরাবরের মতো সংবাদ সম্মেলনে নিরাবেগ কণ্ঠে একের পর এক নাম পড়ে শোনাননি প্রধান নির্বাচক, গভীর রাতে কোনো ইমেইলেও আসেনি খেলোয়াড় তালিকা। বিশ্বকাপগামী ১৫ ক্রিকেটারের প্রত্যেকের হাতে হাতে সুন্দর করে বাক্সবন্দি বিশ্বকাপ জার্সি তুলে দেওয়ার ভিডিও নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে ২০২৩ বিশ্বকাপের জন্য নির্বাচিতদের পরিচিত করেছে বিসিবি। এজন্য বিসিবির সংশ্লিষ্টরা বাহবা পেতেই পারেন, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড যেমনটা হৃদয় জিতে নিয়েছে ক্রিকেটারদের পরিবারের আপনজনদের দিয়ে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করিয়ে।
কারা থাকছেন আর কারা থাকছেন না, তা নিয়ে খুব বড় কোনো চমক ছিল না বিশ্বকাপ দলে। সবাই শুধু একটাই কোটি টাকার প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলেন। তামিম ইকবাল শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ দলে আছেন নাকি নেই। অবসর, প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে প্রত্যাবর্তন, ব্যক্তিগত কাজে দুবাই ভ্রমণ, ইংল্যান্ডে ইনজেকশন, দেশে অনুশীলন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক ইনিংসে ব্যাট করে ৪৪ রান এবং পরে নিজেকে আবারও পুরোপুরি ফিট নয় বলে পরের ম্যাচে বিশ্রাম। স্বভাবতই এই তামিম ইকবালকে বিশ্বকাপে দেখতে চাইবেন না কোনো কোচ এবং অধিনায়ক। সোমবার গভীর রাতে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় সাকিবের ছুটে যাওয়া এবং সিডনি থেকে নেমে তড়িঘড়ি করে বোর্ড সভাপতির বাসায় কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের পা রাখাই প্রমাণ করে, বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করতেই তাদের এ তৎপরতা।
তামিমের মতো ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা সহজ নয়। নিঃসন্দেহে দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান, ওয়ানডেতে ১৪টা সেঞ্চুরি। হুট করে অবসর নিলে যাকে ফিরিয়ে আনেন স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী। সাক্ষাৎকারেও তামিম বলেছেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগের কথাও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেশাদারির কাছে হার মেনেছে আবেগ, যুক্তির কাছে হেরে গেছে অতীত। তামিম নামটা আছে বিশ্বকাপ দলে, তবে পদবিটা ইকবাল নয়। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তানজিদ হাসান তামিমকে নিয়েই বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান, যার বয়স আর তামিম ইকবালের ক্যারিয়ারের বয়স প্রায় কাছাকাছি।
২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিবের পারফরম্যান্স ছিল অতিমানবীয়। ৬০৬ রান আর ১১ উইকেট। তবু দল হলো অষ্টম। গোটা আসর চোটজর্জর অধিনায়ককে বইল দল। প্রতিটি সকাল শুরু হতো এক অনিশ্চয়তা নিয়ে, খেলতে পারবেন তো মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা? শুরুর দিকে নতুন বলে কোনো উইকেট ফেলতে পারেনি বাংলাদেশ, প্রতিপক্ষ গড়েছে রানের পাহাড়। সেই অভিজ্ঞতা কী করে ভুলবেন সাকিব। অস্ট্রেলিয়ান জেমি সিডন্স আর অধিনায়ক সাকিব এজন্যই ২০১১ সালের বিশ্বকাপে দলে রাখেননি চোটগ্রস্ত মাশরাফীকে। হাথুরুসিংহে জাতীয়তায় শ্রীলঙ্কান হলেও অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে থাকতে হয়ে গেছেন তাদের মতোই পেশাদার। তাই তো কঠিন সিদ্ধান্তটা নেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন।
কাল বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডের পর সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন জাতীয় নির্বাচকরা। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন এবং দুই নির্বাচক হাবিবুল বাশার ও আবদুর রাজ্জাক। তামিমকে বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে মিনহাজুল শুনিয়েছেন মুখস্থ কথাই, ‘আপনারা তো এবারের বিশ্বকাপের দলটা এরই মধ্যে পেয়ে গেছেন। তামিম ইকবালের তো অনেক দিন ধরেই ইনজুরি নিয়ে চিন্তা আছে। নিউজিল্যান্ড সিরিজের পর... সবকিছু বিবেচনা করেই, সবাই আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া। বিশ্বকাপে অনেক দিনের ব্যাপার। অনেক ম্যাচ আছে।’
তামিমের চোটটা তো নতুন নয়। অনেক দিন ধরেই এ চোট নিয়ে তিনি ভুগছেন, নিজের ইচ্ছামতো ভারতের বিপক্ষে সিরিজ, আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ এসব থেকে নিজেকে সরিয়েও রেখেছিলেন। চিকিৎসাও করিয়ে আনা হয়েছে। সবকিছু জেনেশুনে কেন তাকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে সুযোগ দেওয়া এবং ম্যাচ খেলিয়ে বাদ দেওয়া এ প্রসঙ্গে মিনহাজুলের উত্তর, ‘দেখুন, কিছু কিছু ইনজুরি আছে আপনি ঝুঁকি নিতে পারেন না। টিম ম্যানেজমেন্ট কিন্তু বেকায়দায় পড়বে। আপনি দেখুন, নিউজিল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলার পর দ্বিতীয় ম্যাচে... প্রথম ম্যাচ খেলেছে, দ্বিতীয় ম্যাচটা খেলেছে... এরপর কিন্তু শেষ ম্যাচে বিশ্রাম দিতে হয়েছে।’
‘তামিম অন্যতম সেরা। কিন্তু চোটের দুশ্চিন্তা থাকলে নিজেকে মেলে ধরা কঠিন। মেডিকেলের সঙ্গে আলোচনা করেছি, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। এটা আগেই বলেছি, এখন দল ঘোষণা করা হয়েছে’বলছিলেন প্রধান নির্বাচক। বিসিবি সভাপতি বা সাকিব ও কোচের সঙ্গে আলাপ হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কী আলাপ হয়েছে সেটা তো এখানে প্রকাশ করব না।’
১০ দলের বিশ্বকাপে দশম দল হিসেবে বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। কেন এত দেরি, ফ্লাইটে ওঠার ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে বিশ্বকাপের দল দেওয়া হলো কেন এ নিয়ে হাবিবুল বাশারের ব্যাখ্যা, ‘আমাদের সঙ্গে কী হয়েছে সেটা তো আমাদের সঙ্গের ব্যাপার। দল নির্বাচন করতে যখন বসি... খেলোয়াড় হিসেবে তামিমের... আমরা সুস্থ-সবল তামিমকে পেতে... এটা নিয়ে আমাদের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত ভাবতে হয়েছে। তাই দেরি হয়েছে।’
তামিমের বাদ পড়ার ডামাডোলে হারিয়ে গেছে মাহমুদউল্লাহর ফেরাটাও। সেই ইংল্যান্ড সিরিজের পর বিশ্রামের মোড়কে বাদ পড়েছিলেন। তার বদলে অনেক বিকল্প খুঁজেও শেষ পর্যন্ত ঘুরেফিরে আবার তার কাছেই ফিরলেন নির্বাচকরা। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ৪৯ আর ২১ রানের দুটো ইনিংসেই হয়ে গেছে বিশ্বকাপের টিকিট। প্রধান নির্বাচক বললেন, ‘আগেই বলেছি, বিশ্বকাপের আগে যেকোনো খেলোয়াড়কে যেকোনো সিরিজে দেখব। ও পরিকল্পনাতেই ছিল। নিউজিল্যান্ড সিরিজে দেখেছি।’
২০১৫ সালের বিশ্বকাপের আগে, মাত্র দুই ম্যাচ দেখে সৌম্য সরকারকে দলে নিয়েছিলেন হাথুরুসিংহে। তানজিদ তামিম আর তানজিম সাকিব নিজেদের ভাগ্যবান ভাবতে পারেন। যথাক্রমে মাত্র পাঁচ আর দুই ম্যাচ খেলে তারা বিশ্বকাপ যাত্রার সঙ্গী হয়েছেন। এমন নয় যে, এ স্বল্প সময়ে দারুণ কিছু করে দেখিয়েছেন, প্রধান কারণ বিকল্পের অভাব।
শুধু তামিম ইকবালই নয়, দলের লজিস্টিক ম্যানেজারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তার বড় ভাই ও সাবেক খেলোয়াড় নাফিস ইকবালকেও। তামিমের অবসর-কা-ে তিনি বিসিবি সভাপতির মেসেজের জবাব দেননি, যা পাপন নিজে বলেছেন গণমাধ্যমে। হয়তো তারই প্রতিশোধ, সেই সঙ্গে ড্রেসিংরুমের সঙ্গে তামিমের সব সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া।
অবসর ভেঙে ফিরেছিলেন তামিম, দুটি ম্যাচ খেললেন। কিন্তু যেভাবে বাদ পড়লেন, তাতে মনে হতে পারে অবসরের সিদ্ধান্তটাই ছিল সঠিক। বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগামীতেও তামিমের দলে ফেরাটা বোধহয় অনিশ্চিতই হয়ে গেল।
তামিম প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে দলটা কেমন হয়েছে দেখা যাক। পাঁচ পেসার, দুই অফ স্পিনার, দুই বাঁহাতি স্পিনার মিলিয়ে বোলিং আক্রমণটা নেহায়েত খারাপ নয়। লিটন দাসের সঙ্গে তানজিদ তামিম অথবা মেকশিফট ওপেনার মিরাজ। সহঅধিনায়কের পদ থেকে বাদ পড়েছেন লিটন, সেটা করা হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তকে। সাকিব, মুশফিক, তাওহীদ হৃদয়দের নিয়ে মিডল অর্ডারের পর ফিনিশার রোলে মাহমুদউল্লাহ। এ নিয়েই ধর্মশালায় আফগানদের বিপক্ষে লড়াইয়ের শুরু। প্রত্যাশা অনেক বড়, প্রস্তুতি গোলমেলে। ভরসা একটাই, শুরুর আগে পরিস্থিতি এমন গোলমেলে হলেই কেন যেন ভালো করে বাংলাদেশ!
বিশ্বকাপ দল : সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন (সহঅধিনায়ক), তাওহীদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, শরীফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, মেহেদি হাসান, তানজিদ হাসান, তানজিম হাসান ও মাহমুদউল্লাহ।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনে রদবদলের সুযোগ নেই সরকারের। তাই এর আগেই নির্বাচনী প্রশাসনে ধাপে ধাপে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রশাসনে চলছে পদোন্নতি ও রদবদল। ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রশাসন সাজাতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে বদলি-পদায়ন হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে বড় পদোন্নতি হয়েছে। নির্বাচনের আগে অবসরে যাওয়া কয়েকজন সচিবেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২০ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৮ জন ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিসিএসের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৫ সালে, ২৫তম ব্যাচ ২০০৬ সালে এবং ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৮ সালে।
জানা যায়, নির্বাচনের সময় ডিসিরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকেন। তাদের যে কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে বাতিলের ক্ষমতাও থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও থাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা ডিসির অধীনে। নির্বাচনের সময় সমন্বয়কারীর ভূমিকায়ও থাকেন ডিসিরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন তাদের দুটি ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে। আর সে সময় বিসিএস নিয়ে বেশ বিতর্ক ছিল। বিসিএসে ছিল নানা ধরনের তদবির। ২৪ ও ২৫তম ব্যাচ দুটি বিএনপির সময়ে নিয়োগ পেলেও ২৭তম ব্যাচ নিয়োগ পেয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। কারণ বিএনপির শেষ সময়ে ২৭তম ব্যাচের নিয়োগে বড় ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকায় তা বাতিল হয়। পরে ফের পরীক্ষা নিয়ে ২০০৮ সালে এ ব্যাচের নিয়োগ দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল ২৪তম ব্যাচের নিয়োগ নিয়ে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২৪তম ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডিসির পদ থেকে তুলে আনা হতে পারে। নির্বাচনের সময় যারা ডিসির দায়িত্বে থাকবেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তাদের সবার ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে পরিবার ও নিকট আত্মীয়স্বজনদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো যাচাই করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে আর ডিসির পদে রাখা হবে না।
এ ছাড়া নির্বাচনে অন্যতম ভূমিকা পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। বর্তমানে ৩৩, ৩৪ ও ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা রয়েছেন ইউএনও পদে, যারা আসন্ন নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এখন ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ইউএনওর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে; এ ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারের ২৯১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
জানতে চাইলে সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ইকরাম আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষা হয় যোগ্যতা, মেধা ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে। সেখানে ছাত্রজীবনে কে কোন পার্টি করেছিলেন, কোন দল ক্ষমতায় আছে তা বিবেচনা করা হয় না। বিসিএস কর্মকর্তাদের যে ফাউন্ডেশন ট্রেনিং হয়, তাতে তাকে একজন অফিসার হিসেবেই গড়ে তোলা হয়। এরপর এসিআর, সুপিরিয়রের মতামত, সুনাম, দক্ষতা, যোগ্যতার ভিত্তিতেই একজন কর্মকর্তাকে উচ্চতর পদে দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তবে সরকার যে দল পরিচালনা করে তাদের কিছু নীতিমালা ও উদ্দেশ্য থাকে। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সরকারের নেওয়া বৈধ ও জনকল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা। তিনি প্রলুব্ধ হবেন না, নিরপেক্ষ থেকে তার দায়িত্ব পালন করবেন। যদি কোনো নির্বাচনী দায়িত্বও দেওয়া হয়, সেটাও নিরপেক্ষভাবে তিনি পালন করবেন।’
গত মে মাসে অতিরিক্ত সচিব পদে ১১৪ জনের পদোন্নতি হয়। জুলাই মাসে পাঁচ বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসেই বদলি ও নতুন মিলিয়ে ৩০টি জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উপসচিব পদমর্যাদার এই ডিসি পদে এবারও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আটজন পিএসকে পদায়ন দেওয়া হয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ২২১ কর্মকর্তা। এ পদোন্নতিতে মূল বিবেচনায় এসেছে ২২তম ব্যাচ। বর্তমানে যুগ্ম সচিবের স্থায়ী পদ ৫০২টি। এর বিপরীতে পদোন্নতি পাওয়ার পর যুগ্ম সচিবের সংখ্যা হলো ৯৪৬ জন। এর আগে সর্বশেষ গত বছর ২ নভেম্বর ১৭৫ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। আর গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২৭০ জন সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই অন্তত ১০ জন সচিবের স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার কথা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন আগামী ১৩ অক্টোবর অবসরে যেতে পারেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান ১৪ সেপ্টেম্বর, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আবদুস সালামের ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে আবদুস সালামের চাকরি এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ৯ অক্টোবর, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক ৩০ অক্টোবর, ইআরডি সচিব শরিফা খান ২৪ নভেম্বর, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহসানে এলাহী ২৫ নভেম্বর এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল হোসেন ২৯ নভেম্বর অবসরে যাবেন। ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম এবং ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম। এ ১০ জনের মধ্যে কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন।
গত কয়েক বছরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মুখ্য সচিব পদে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই স্বাভাবিক অবসরের মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। সর্বশেষ সাবেক চার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মধ্যে একমাত্র কবির বিন আনোয়ার ছাড়া বাকি তিনজনই স্বাভাবিক মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। তারা হলেন মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, মোহাম্মদ শফিউল আলম ও খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।