
১৫তম ব্রিকস সম্মেলনে যোগদান শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি নিয়মিত ফ্লাইট গতকাল শনিবার বেলা ২টায় (স্থানীয় সময়) জোহানেসবার্গের ওআর টাম্বো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাত্রা করে। প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা ও একমাত্র মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ তার সঙ্গে রয়েছেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক ঘণ্টা যাত্রাবিরতির পর আজ রবিবার সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময়) ফ্লাইটটি ঢাকার হযরত শাহজাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী ২২-২৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন। তিনি ২২ আগস্ট রাতে জোহানেসবার্গে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে দক্ষিণ আফ্রিকা আওয়ামী লীগ নেতারা তার সঙ্গে তার সফরকালীন আবাসস্থল জোহানেসবার্গের হোটেল হিলটন স্যান্ডটনে সাক্ষাৎ করেন।
দক্ষিণ আফ্রিকা আয়োজিত ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা যোগদান করে।
কভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাব এবং পরে বিশ্বব্যাপী বিধিনিষেধের পর এটিই প্রথম সশরীরে উপস্থিতির ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ সম্মেলনে যোগ দেন।
২৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড বিজনেস সামিট’-এ প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেন। পরে তিনি আফ্রিকার দেশগুলোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ দূত সম্মেলনে’ যোগ দেন।
বিকেলে তিনি হোটেল হিলটন স্যান্ডটনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ব্রিকসের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট আয়োজিত ‘রাষ্ট্রীয় ভোজে’ যোগ দেন।
২৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী ৭০টি দেশের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ‘ব্রিকসের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক’ ফ্রেন্ডস অব ব্রিকস লিডারস ডায়ালগের (ব্রিকস-আফ্রিকা আউটরিচ এবং ব্রিকস প্লাস ডায়ালগ) সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে ভাষণ দেন।
ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে গত বৃহস্পতিবার স্যান্ডটন কনভেনশন সেন্টারে শেখ হাসিনা ও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা, মোজাম্বিকের প্রেসিডেন্ট ফিলিপে জ্যাকিন্টো নিউসি, তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট ডক্টর সাইমা সুল্লুহু এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। একই স্থানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট দিলমা ভানা রুসেফের মধ্যেও বৈঠক হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, বৈঠকে গণ্যমান্য ব্যক্তিরা শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
একই দিন সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বাসস
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের উত্তাপ ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে দেখা যাচ্ছে। মূল দলগুলোও নিজেদের ছাত্রসংগঠনগুলোকে মাঠে নামতে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে।
যদিও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, ছাত্রসংগঠনগুলো স্বতন্ত্র সংগঠন হিসেবে থাকবে। কোনো দলের সহযোগী হওয়া যাবে না। কাগজে-কলমে এটা থাকলেও লেজুড়বৃত্তির সেই পুরনো চর্চার কারণে ছাত্ররাজনীতি এখনো জাতীয় রাজনীতির প্রাণ।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। অন্যদিকে রাজনীতির মাঠ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও নানা কর্মসূচি পালন করছে। এসব কর্মসূচিতে দুটি দলের সমর্থক ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে। এ দুটি দলকে ঘিরে জাতীয় রাজনীতির যে উত্তাপ তাতে যোগ হয়েছে তাদের ছাত্রসংগঠনগুলো; বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ ও বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল যথাক্রমে নির্বাচন ও আন্দোলনমুখী বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে মাঠের উত্তাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া সরকারের পক্ষে-বিপক্ষে ক্যাম্পেইন, জোট গঠনসহ নানাভাবে আলোচনায় থাকছে ছাত্রসংগঠনগুলো।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে প্রায়ই বৈঠক করছেন। ছাত্রলীগকে মাঠ ধরে রাখতে ও নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণায় যেমন নেমে যেতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তেমনি ছাত্রদলকেও বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা মাঠে থেকে সর্বোচ্চ আন্দোলন গড়ে তুলতে নির্দেশনা দিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাজনৈতিক সব কর্মকা-েই নিজ নিজ দলের ছাত্রসংগঠনগুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচন ঘনিয়ে এলে রাজনৈতিক অঙ্গনের উত্তাপ ছাত্রসংগঠনগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে।
আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে প্রায় নিয়মিত। সমাবেশ থেকে বিরোধীদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্যও দিতে দেখা যায় সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের। এ ছাড়া তারা তরুণ প্রজন্মকে শেখ হাসিনার পক্ষে রায় দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন নিয়মিত। স্মার্ট বাংলাদেশ, শেখ হাসিনার পক্ষে দেশব্যাপী ক্যাম্পেইন ও ছাত্র সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। তরুণ প্রজন্মের ব্যালট বিপ্লবের ওপর ভিত্তি করে জাতীয় নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মহাকাব্যিক বিজয় উপহার দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এরই অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের মাঠ দখলে রাখার পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ। এই কর্মসূচিতে লাখ লাখ লোকের সমাগম ঘটিয়ে মাঠ দখলে আছে ক্ষমতাসীনদের তার প্রমাণ দেখাতে চায় সংগঠনটি।
সরকার পতন, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠায় এককাট্টা বিএনপির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলসহ সমমনা প্রায় সব কটি ছাত্রসংগঠন। পুরোপুরি দলীয় এক দফায় মনোনিবেশ করেছে ছাত্রদল। দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী, সরকার পতনের দাবিতে রাজপথে নিয়মিত কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে কঠোর বিএনপির হাইকমান্ডও। দায়িত্ব অবহেলার কারণে পদও হারাতে হচ্ছে ছাত্রদল নেতাদের। কেন্দ্রীয় ইউনিট ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় সব বিশ্বিবদ্যালয়-কলেজ শাখা ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক কর্মসূচি বাদ দিয়ে সরকার পতনের আন্দোলনকেই মূল কর্মসূচি হিসেবে পালন করছে। ভোটাধিকার নিশ্চিত ও সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে তবেই ঘরে ফেরার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘ভোটাধিকারের দাবিতে ছাত্র সমাজ’ নামে একটি প্ল্যাটফরম। সারা দেশের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ বিষয়ে জনমত তৈরি করতে চান তারা। এ ছাড়া ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য’ নামে আরেকটি ছাত্রসংগঠনের যাত্রা শুরুর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে ছাত্রদল, ছাত্র অধিকার পরিষদসহ কয়েকটি সংগঠন ঘরোয়া সভায় অংশ নিয়েছে বলে জানা গেছে। শেষ পর্যন্ত এটি আত্মপ্রকাশ করলে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বৃহৎ ছাত্র আন্দোলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্যদিকে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী হাফেজ রেজাউল হত্যাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ইসলামিক কয়েকটি ছাত্রসংগঠন নিয়ে ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ নামে আরেকটি জোট। গত শুক্রবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদ গেটে সমাবেশ করেছে এই জোট। সমাবেশ থেকে এই হত্যার সঙ্গে ছাত্রলীগের জড়িত থাকার অভিযোগ এনে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন তারা। অন্যথায় বৃহত্তর ছাত্র আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বাধীন এই জোট। ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, ইসলামী ছাত্রসমাজ, ইসলামী ছাত্র মজলিস, খেলাফত ছাত্র মজলিস, কওমি ছাত্র ফোরামসহ কয়েকটি সংগঠন রয়েছে এই জোটে।
তা ছাড়া সরকারের পদত্যাগসহ ১৩ দফা দাবিতে সমাবেশ করেছে বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনোভাবেই নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন জোটের নেতারা। তাদের দাবি, মানুষ গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, কিন্তু সেটা এখন নেই। এখন ডিজিটাল আইনের পরিবর্তে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হচ্ছে। সংগ্রামের মাধ্যমে জনগণের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে গঠিত এই জোটে রয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলসহ কয়েকটি বাম ঘরানার ছাত্রসংগঠন।
‘ভোটাধিকারের দাবিতে ছাত্র সমাজের’ সংগঠক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আরমানুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটা রাষ্ট্রে যখন জনগণের ভোটাধিকার থাকে না, তখন সেই শাসন দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে ফেলে। ভোটাধিকার না থাকলে সমাজে গণতান্ত্রিক পরিসর ক্রমাগত সংকুচিত হতে থাকে। আমরা যদি স্থায়ীভাবে জনগণের ভোটাধিকার কায়েম করতে পারি তাহলে দেশে গণতান্ত্রিক পরিসর বৃদ্ধি পাবে।’
গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের সমন্বয়ক ও ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি রাগীব নাঈম বলেন, ‘ছাত্রসমাজ থেকে শুরু করে দেশের সব মানুষ কোনো না কোনোভাবে এই সরকারের অপকর্মের ভুক্তভোগী হচ্ছে। সেই জায়গা থেকে আমরা মনে করি এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা খুবই জরুরি। তাই আমরা এ বিষয়ে ছাত্রদের মাঝে জনমত গড়ার চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে আগামীতেও যাতে এসব কাজ না হয়, সেদিকেও আমরা সচেষ্ট আছি।’
ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ‘আমরা সর্বাত্মকভাবে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আছি। সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০ জুলাই প্রথম “স্টেপডাউন হাসিনা” কর্মসূচি বাস্তবায়ন করি। হামলা-মামলা-নির্যাতন উপেক্ষা করেই সারা দেশের জেলা-মহানগর, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ নব্বইয়ের অধিক ইউনিট নিয়ে আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। নিরাপদ ক্যাম্পাস ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে সব ছাত্রসংগঠনের অংশগ্রহণে আমরা ছাত্র ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছি।’
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের সবচেয়ে বেশি ফোকাসের জায়গা দেশের মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচার সরকারকে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে সরিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকার আনা। যার মাধ্যমে দেশের মানুষ নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে এবং তাদের মৌলিক অধিকার ফিরে পায়।’
তিনি বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনে দেশের সাধারণ জনগণ নির্ভয়ে যেন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে তার ব্যবস্থা করার জন্য ছাত্রদল সমন্বয় সেল গঠন করেছে। নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ দিতে হবে। সেই নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ছাত্রদল সম্পৃক্ত আছে। আমরা তৃণমূল নেতাকর্মীদের বার্তা দিয়েছি, প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান করেছি।’
ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রতি তারুণ্যের যে মমত্ববোধ রয়েছে আমরা মনে করি এটি একটি বড় অ্যাডভান্টেজ। সে জায়গা থেকে আমরা আগামী ১ সেপ্টেম্বর স্মরণকালের সর্ববৃহৎ ছাত্র সমাবেশ আয়োজন করেছি।’ তিনি বলেন, এই সমাবেশের মাধ্যমে তারা একদিকে অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ঘোষণা করবে, একই সঙ্গে স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে আগমনী রায় প্রদান করবে তরুণ প্রজন্ম। তরুণ প্রজন্ম দল-মতনির্বিশেষে শেখ হাসিনার পক্ষে, স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে রয়েছে, সেটির একটি প্রমাণ তারা দেখতে পাবেন। এ ছাড়া আগামীতে সরাসরি তরুণদের সঙ্গে আলাপনের অনুষ্ঠানসহ তারুণ্যকে সম্পৃক্ত করে তারা বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করবেন।
ছাত্রলীগের এই নেতা বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে ক্যাম্পেইন করে দেশব্যাপী আমরা গণজোয়ার তৈরি করতে চাই। সে সুর আমরা ইতিমধ্যে প্রতিধ্বনিত করে যাচ্ছি। তরুণ প্রজন্মের ব্যালট বিপ্লবের ওপর ভিত্তি করে জাতীয় নির্বাচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনাকে অসাধারণ, মহাকাব্যিক বিজয় উপহার দেব।’
মোবাইল ফোন ডিভাইসের কারণে এখন আর আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপাত্ত কেউ মানতেই চায় না। আবহাওয়া অধিদপ্তর যদি কোনো এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করে, মোবাইল ফোন অনুভূত তাপমাত্রা দেখায় এর চেয়ে ৪-৫ ডিগ্রি বেশি; অর্থাৎ বাস্তব অবস্থার সঙ্গে আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপাত্তের ব্যাপক ফারাক। যদিও দিন শেষে আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপাত্তই স্বীকৃত।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া উপাত্তে দেখা যায়, ২০০০ সালের মার্চ মাসে চট্টগ্রাম নগরীতে গড়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৩০ দশমিক ৯ এবং সর্বনি¤œ ২০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই বছরের এপ্রিলে সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ছিল ৩২ দশমিক ৬ এবং সর্বনিম্ন ২২ দশমিক ৭ আর মে মাসে সর্বোচ্চ ৩২ দশমিক ১ ও সর্বনিম্ন ২৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চলতি বছর, অর্থাৎ ২০২৩ সালের মার্চে আবহাওয়া অধিদপ্তর সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৩১ দশমিক ৯ এবং সর্বনিম্ন ২১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এপ্রিলে গড়ে সর্বোচ্চ ৩৪ দশমিক ১ ও সর্বনিম্ন ২৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর মে মাসে গড়ে সর্বোচ্চ ৩৩ দশমিক ২ ও সর্বনিম্ন ২৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে।
উপাত্তগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, গত ২২ বছরে গড়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ব্যবধান এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। যেহেতু দেশে মার্চ থেকে মে মাস সময়কাল সবচেয়ে উষ্ণ, তাই এই তিন মাসের উপাত্তকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু গরমের বাস্তব অবস্থা কি তা সমর্থন করে? এই প্রশ্ন সাধারণের মধ্যে যেমন রয়েছে, তেমনি বিভিন্ন পেশাজীবী ও গবেষকদের মধ্যেও রয়েছে। আর এই প্রশ্নের উত্তর পেতে ‘সঠিক চিত্র’ জানার উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সরকারি এ সংস্থাটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে ১৯৯৫ সালে। ২০১৫ সালে ২০ বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন আরেকটি মাস্টারপ্ল্যান করার কথা। কিন্তু তার অনুমোদন পেতেই পার হয়ে যায় প্রায় পাঁচ বছর। ২০২০ সালে অনুমোদন পাওয়ার পর মাস্টারপ্ল্যানের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান সিডিএর উপপ্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আবু ঈসা আনসারী। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর অঞ্চল বিভাগ থেকে স্নাতক এবং সৌদি আরবের কিং ফাহাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করা এই পরিকল্পনাবিদ সিডিএতে কাজ করছেন ২০০৫ সাল থেকে। প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পাওয়ার পরই পরিবেশ ও জলবায়ু ইস্যুকে গুরুত্ব দিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়-গাছপালা এবং পুকুর-জলাশয়ের গত ৩০ বছরের উপাত্ত তৈরির উদ্যোগ নেন তিনি। আধুনিক প্রযুক্তিতে স্যাটেলাইট চিত্র ব্যবহার করে এ বিষয়ক মানচিত্র তৈরির কাজ শুরু করেন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে। একপর্যায়ে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী চট্টগ্রামের সন্তান মোহাম্মদ সাইমুন ইসলামের খোঁজ পান। আবু ঈসা আনসারী চট্টগ্রামের তাপমাত্রা কেমন বেড়েছে, তা নিয়ে একটি মানচিত্র তৈরি করে দিতে বলেন সাইমুনকে। একই সঙ্গে ধাপে ধাপে সবুজায়ন কীভাবে কমেছে, সেই ম্যাপও তৈরি করার দায়িত্ব দেন। নতুন মাস্টারপ্ল্যান যুগোপযোগী করতেই মানচিত্র করার উদ্যোগ নেন তিনি। এ ছাড়া চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো ৩০ বছরে কীভাবে বিলীন হয়েছে তা নিয়ে গবেষণার জন্য মাস্টারপ্ল্যানের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেন। এই গবেষণার কাজটি করছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিল্লুর রহমান।
সাইমুন ইসলাম স্যাটেলাইট প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে ২২ বছর আগে ২০০০ সালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার তাপমাত্রা, ২০১০ সালের তাপমাত্রা এবং ২০২২ সালের তাপমাত্রার মানচিত্র তৈরি করেন। সেই মানচিত্রে উঠে আসে চোখ কপালে ওঠার মতো সব উপাত্ত। দেখা যায়, ২২ বছরের ব্যবধানে চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও কোথাও তাপমাত্রা সাড়ে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়েছে।
কী আছে সেই ম্যাপে
এই তাপমাত্রা মানচিত্রের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সিডিএর আওতাধীন এলাকার ল্যান্ড সারফেস টেম্পারেচার’ (এলএসটি)। মানচিত্রে পাঁচটি রঙে পাঁচটি অঞ্চলের তাপমাত্রার সীমা চিহ্নিত করা হয়েছে। সবুজ রঙের অঞ্চলে সবচেয়ে কম তাপমাত্রা; তার চেয়ে বেশি হালকা সবুজ; আরেকটু বেশি হলুদ; তারও বেশি কমলা এবং সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রার অঞ্চলকে লাল রং দিয়ে দেখানো হয়েছে। স্যাটেলাইট থেকে তাপমাত্রার এই উপাত্ত নেওয়া হয়েছে মূলত মার্চ, এপ্রিল ও মে এই তিন মাসের।
সিডিএর এই তাপমাত্রা মানচিত্র বলছে, ২০০০ সালের মার্চ-এপ্রিল-মে সময়কালে নগরীর পাথরঘাটা, ফিরিঙ্গীবাজার, সদরঘাট, পাঠানটুলি, আগ্রাবাদ, গোসাইলডাঙ্গা, পাহাড়তলী, সিডিএ মার্কেট, অলংকার, মাদারবাড়ীর বেশিরভাগ এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৪ দশমিক শূন্য ১ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। ২০২২ সালে এসব এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখা যাচ্ছে ৩০ দশমিক ৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৮ দশমিক ৬২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত, অর্থাৎ ২২ বছরের ব্যবধানে এসব এলাকার তাপমাত্রা ৬ থেকে সাড়ে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়েছে।
মানচিত্র অনুযায়ী, নগরীর হালিশহর, ছোটপুল, বড়পুল, নয়াবাজার, চকবাজার, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট ও ইপিজেড এলাকায় ২০০০ সালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২১ দশমিক শূন্য ৮ থেকে ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। ২০২২ সালে গ্রীষ্ম ঋতুর ওই তিন মাসে এসব এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখাচ্ছে ২৮ দশমিক ৯৩ থেকে ৩০ দশমিক ৯১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।
এ ছাড়া নগরীর প্রান্তীয় এলাকায় ২২ বছর আগে তাপমাত্রা ১৬ দশমিক ১ থেকে ২১ দশমিক শূন্য ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকলেও ২০২২ সালে এসে ২৭ দশমিক ৩৭ থেকে ২৮ দশমিক ৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত রেকর্ড হয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরীতে স্থানভেদে তাপমাত্রার এমন অস্বাভাবিক বৃদ্ধির স্যাটেলাইট উপাত্ত তুলে ধরে মন্তব্য চাইলে অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ^বিদ্যালয়ের স্কুল অব আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্সেসের গবেষক ড. আশরাফ দেওয়ান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সারা বিশ্বেই তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ছে। বিশ্বে ১০০ বছরে গড় তাপমাত্রা যেখানে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে, সেখানে চট্টগ্রামে গত ২২ বছরে সাড়ে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি খুবই সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। এটা ঠিক, নগরায়ণের কারণে তাপমাত্রা বেড়েছে। তাই বলে এত বেশি বাড়তে পারে না।’
পাহাড়-গাছ-পানি কমে, তাপমাত্রা বাড়ে
তাপমাত্রার এমন বৃদ্ধি স্বাভাবিক, না অস্বাভাবিক তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সংশয় থাকলেও সিডিএর মানচিত্রটা বিশ্লেষণ করলে একটা বিষয় পরিষ্কার বোঝা যায়। সেটা হলো, বন্দরনগরীর যে এলাকাগুলোয় প্রকৃতি ধ্বংস করা হয়েছে বেশি, সেখানেই তাপমাত্রার বৃদ্ধি অস্বাভাবিক। যেমন পুরনো চট্টগ্রাম বলে খ্যাত আন্দরকিল্লা, আলকরণ, পাথরঘাটা, ফিরিঙ্গীবাজার, সদরঘাট, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ প্রভৃতি এলাকায় পাহাড়-জঙ্গল-গাছগাছালি নেই; দীঘি-পুকুর-জলাশয়ের সংখ্যাও কম। এসব এলাকায় ২২ বছরে তাপমাত্রার বৃদ্ধিও মানচিত্রে অনেক বেশি দেখাচ্ছে। অন্যদিকে বায়েজীদ, খুলশী কিংবা আকবরশাহ এলাকা ২০০০ সালের দিকে পাহাড়ঘেরা ছিল, তাই সবুজের পরিমাণও বেশি ছিল। আর সিডিএর মানচিত্রে ২০০০ সালে এই এলাকায় ২১ দশমিক শূন্য ৮ থেকে ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়। পরে পাহাড়-জলাশয় কমে আসার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ২০১০ সালে এসে তাপমাত্রা বেড়ে ২৩ দশমিক ৬৭ থেকে ২৪ দশমিক ৯৪ ডিগ্রি পর্যন্ত রেকর্ড হয়। তবে তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বেশি বৃদ্ধি পায় পরের ১২ বছরে। এই এলাকাতেই পাহাড় কেটে বানানো হয়েছে প্রায় ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ ডিটি-বায়েজীদ সংযোগ সড়ক। ২০২২ সালে এসে এই সব এলাকার প্রকৃতি পুরো ধ্বংস হওয়ার আর বেশি বাকি দেখা যায় না। আর সিডিএর মানচিত্রেও তাপমাত্রা ৩০ দশমিক ৯২ থেকে ৩৮ দশমিক ৬২ ডিগ্রি সেলসিয়াস দেখাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত মানুষের অবৈজ্ঞানিক কর্মকান্ডের ফলাফল হলো আজকের আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং তার বিরূপ প্রভাব।’
দেশে গত বছর স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। শীতের মৌসুমেও শীত তেমন দেখা যায়নি। এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ কামরুল হাসান বলেন, ‘আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের জন্য প্রকৃতি না যতটুকু দায়ী, মানুষ তার চেয়ে বেশি দায়ী।’ তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রধান মাপকাঠি হলো তাপমাত্রা। আমরা অধিকহারে জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন কয়লা, পেট্রোল, ডিজেল ব্যবহার করছি। এসির ব্যবহার বেড়েছে। এতে বায়ুমন্ডল দ্রুত উত্তপ্ত হচ্ছে; তাপমাত্রা বাড়ছে এবং আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে।’
নগরগুলোতে তাপমাত্রা কমিয়ে আনার জন্য উন্মুক্ত স্থান সংরক্ষণের কথা বলা হলেও তা রাখা হয় না বলে উল্লেখ করেন নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি জেরিনা হোসেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রামের ড্যাপ তৈরির সময় আধা একরের সমান বা বেশি আয়তনের পুকুর বা জলাশয় ভরাট না করা, প্রতিটি ভবনের সামনে-পেছনে পর্যাপ্ত খালি জায়গা রাখা এবং সেখানে সবুজায়ন করার কথা বলেছিলাম। পাহাড় সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এগুলো মেনে না চলার কারণে ক্রমান্বয়ে নগরে তাপমাত্রা বাড়ছে।’
তিনি আরও বলেন, এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি আমাদের নাগরিকদেরও সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন ছিল।
তাপমাত্রা মানচিত্র নিয়ে সিডিএর ভাষ্য
সিডিএর উপপ্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পের পরিচালক আবু ঈসা আনসারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করতে গিয়ে চট্টগ্রামের তাপমাত্রা পরিবর্তনের চিত্রটি তুলে আনতে উদ্যোগ নিই। স্যাটেলাইট ম্যাপের সাহায্যে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২০০০ সাল থেকে বিভিন্ন বছরের উপাত্ত ব্যবহার করে তাপমাত্রার মানচিত্রটি তৈরি করেছি।’
এর সঙ্গে কি আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপাত্তের মিল আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া অধিদপ্তরের কাছে শুধু পুরো শহরের কিংবা যেখানে তাদের যন্ত্র বসানো রয়েছে, সেখানকার তাপমাত্রার উপাত্ত আছে। আর আমরা প্রতিটি পয়েন্টের তাপমাত্রার রেকর্ড নিয়েছি স্যাটেলাইট থেকে। এতে করে শহরের বিভিন্ন এলাকার পৃথক পৃথক তাপমাত্রার উপাত্ত পাওয়া গেছে এবং সেই অনুযায়ী জিআইএস ম্যাপ (জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম ম্যাপ তৈরির একটি সফটওয়্যার) তৈরি করা হয়েছে।’
এই মানচিত্র তৈরির মূল দায়িত্ব পালনকারী সাইমুন ইসলামের কাছে প্রশ্ন ছিল তাপমাত্রা বৃদ্ধি এত বেশি কেন? মানচিত্র কি ঠিক আছে? জবাবে তিনি বলেন, ‘মানচিত্র পুরোপুরি ঠিক আছে। ২০০০, ২০১০ ও ২০২২ সালের মানচিত্র পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যাবে যেখানে একসময় সবুজায়ন ছিল, সেখানে প্রথম দিকে তাপমাত্রা কম ছিল। পরে সবুজ ধ্বংস করায় ২০ বছর পর তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। এটাই প্রমাণ করে, মানচিত্রটি সঠিক।’
কিন্তু আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপাত্তের সঙ্গে পার্থক্য বেশি মনে হচ্ছে। এ বিষয়ে সাইমুন বলেন, ‘তাপমাত্রা বেশি রেকর্ড হওয়ার সুযোগ নেই। তবে স্যাটেলাইট ম্যাপ থেকে তাপমাত্রার উপাত্ত নেওয়া হলে ভূমির তাপমাত্রার তথ্যের কিছুটা পার্থক্য হয়ে থাকে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংশয়
চট্টগ্রাম মহানগরীর কোনো কোনো এলাকার তাপমাত্রা ২২ বছরে ১২-১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তরও। অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কামরুল হাসান বলেন, ‘সবুজ কমে যাওয়া, জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়া কিংবা অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে, এ কথা সত্যি। কিন্তু সিডিএর মানচিত্রে বৃদ্ধির উপাত্তটা একটু বেশি মনে হচ্ছে।’
তাপমাত্রার ক্ষেত্রে স্যাটেলাইট উপাত্ত অনেক সময় সঠিক তথ্য দিতে পারে না উল্লেখ করে কামরুল হাসান বলেন, ‘স্যাটেলাইট উপাত্ত থেকে বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে তাপমাত্রা বের করা হয়। এতে অনেক সময় কিছু ত্রুটি থাকে। সে ক্ষেত্রে আমরা ভূপৃষ্ঠস্থ উপাত্তকে সঠিক বলে মনে করি।’ তবে এলাকাভেদে তাপমাত্রা কোথাও কোথাও বেশি বাড়তে পারে বলে জানান এই আবহাওয়াবিদ।
বিশেষজ্ঞ মত
যুক্তরাজ্য থেকে ‘ল্যান্ড সারফেস টেম্পারেচার অ্যান্ড হিউম্যান থার্মাল কমফোর্ট রেসপন্স টু ল্যান্ড ইউজ ডায়নামিকস ইন চিটাগাং সিটি অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ প্রকাশ হয়েছে গত বছর। সেই প্রবন্ধের সাতজন লেখকের একজন ন্যাশনাল ওশেনোগ্রাফিক অ্যান্ড মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের (নোয়ামি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোহন কুমার দাস। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা গবেষণায় দেখেছি, ১৯৯৩ সালে চট্টগ্রামে গ্রীষ্মে (মার্চ, এপ্রিল ও মে) গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক শূন্য ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২০ সালে সেটা ৪৩ দশমিক ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে; অর্থাৎ ২৭ বছরে চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
দেশে স্যাটেলাইট উপাত্ত নিয়ে গবেষণা করেন বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো)। এ বিষয়ে স্পারসোর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নূর হোসাইন শরীফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কোনো এলাকায় সবুজ ও জলাধার কমে গেলে এবং কংক্রিটের স্থাপনা বেড়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই ওই এলাকায় তাপমাত্রা বাড়বে।’
আইনি মোড়কের আড়ালে চট্টগ্রাম মহানগরীর ‘মোড়ল’ সিডিএ শুধু কি অজ্ঞতা, মূর্খতা, আনারিপনা বা গাফিলতির কারণেই পাহাড়-জঙ্গল-জলাশয়ের সর্বনাশ করেছে? দেশ রূপান্তরের কাছে তা মনে হয় না। অনুসন্ধানকালে এমন কিছু আলামত পাওয়া গেছে, যাতে বোঝা যায়, অনেক ক্ষেত্রে টাকার বিনিময়েও প্রকৃতি ধ্বংসের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে অশুভ চক্রকে। সর্বগ্রাসী ঘুষ-সংস্কৃতির বাইরে নয় এই সংস্থাটিও।
ভুয়া বিলে কর্মীদের পোশাকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বাগান পরিষ্কারের টাকা তুলে পকেট ভরেছেন। খাতায় কর্মচারী দেখিয়ে ৩০ জনের টাকা তুলে নিয়েছেন। আর ঠিকাদারের সঙ্গে আঁতাত করে চারা রোপণ, সীমানাপ্রাচীর তৈরি, হেজবেড ও ফুলের বেড প্রস্তুতের বরাদ্দ হাওয়া করে দিয়েছেন। এসব ঘটনার নায়ক গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান বৃক্ষপালনবিদ শেখ মো. কুদরত-ই খুদা।
গণপূর্তের এই কর্মকর্তার দুর্নীতির বিষয়ে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই সময় তার দুর্নীতির বিষয়ে মুখ খোলেন এক কর্মকর্তা ও কয়েক জন কর্মচারী। তারা হলেন উপবিভাগীয় বৃক্ষপালনবিদ মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, মেকানিক মো. সোলেমান, পাওয়ার লেন মেশিন অপারেটর মো. মিজানুর রহমান, মালি মো. নয়ন মোল্লাহ, সামছু বিশ্বাস, জালাল আহমেদ ও শহিদ মিয়া এবং ফরাশম্যান মো. ইব্রাহিম। এ ঘটনার পর প্রধান বৃক্ষপালনবিদ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দুর্নীতির প্রতিবাদকারীদের একজনকে চাকরিচ্যুত করেন। আর বাকিদের শাস্তিমূলক বদলি করেন। ৭ বছর ধরে চেপে রেখেছেন দুর্নীতির তদন্ত; আর এটা করতে বিপুল অর্থও খরচ করতে হয়েছে তাকে। বার্ষিক বরাদ্দের রক্ষণাবেক্ষণের টাকা নয়ছয় করে সেসব করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় প্রতিবাদকারীরা শাস্তি পেলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধান বৃক্ষপালনবিদের দুর্নীতির বিষয়ে বেশ কিছু অভিযোগ ছিল। সেসবের সবশেষ কী অবস্থা, সেটা আমি যাচাই-বাছাই করে দেখব। দুর্নীতির ঘটনার পরও যদি তদন্তকাজে কোনো বিচ্যুতি থেকে থাকে, তাহলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি দুদক গণপূর্তের বৃক্ষপালন শাখার ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ব্যয়ের সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে তদন্তকাজ শুরু করে। দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত-২ গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী বরাবর এই চিঠি ইস্যু করা হয়। ওই সময় দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা গণপূর্তের বৃক্ষপালন শাখার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা দুদকের কাছে প্রধান বৃক্ষপালনবিদের দুর্নীতির বিষয়ে তথ্য দেন। পরে দুদক একজন কর্মকর্তা ও দুজন কর্মচারীকে চিঠি দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন। এরপর দুদক গণপূর্তের ওই শাখার বেশ কিছু ফাইল তলব করে। কিন্তু তিনি দুদককে সেই সব ফাইল জমা দেননি। পরে দুদক গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে চিঠির মাধ্যমে ওই সব অভিযোগের তদন্ত করে দেখার সুপারিশ করে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার ভিত্তিতে গণপূর্ত অধিদপ্তর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির কাছেও ওই সব ফাইলের তথ্য দেয়নি। এর প্রমাণ পাওয়া যায় ২০১৬ সালের ১৯ জুন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের শাখা-১ থেকে ইস্যু করা এক চিঠিতে। তৎকালীন উপসচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের সার্কেল-১-এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জামিলুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেশ আগের ঘটনা। তা ছাড়া তার ব্যাপারে কয়েকটি অভিযোগের তদন্ত হয়েছে। কোনোটার তথ্য-উপাত্ত দিয়েছে, আর কোনোটির দেননি। সেটা মনে করতে পারছি না।’
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, প্রধান বৃক্ষপালনবিদ শেখ মো. কুদরত-ই খুদাকে ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি ওই সব কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছিল। দুদকের চাহিদার বিষয়ের মধ্যে ছিল ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ভুয়া পোশাক ভাতা বিলের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা উত্তোলন, কাজ না করে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নতা খাতের ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৩৯৯ টাকা আত্মসাৎ, সীমানাপ্রাচীর ও বহিঃবিভাগে হেজবেড এবং ফুলের বেড প্রস্তুত, চারা রোপণসহ বিভিন্ন খাতের ১৩ লাখ ৭৭ হাজার ৭২ টাকার কাজ না করে বিল উত্তোলন, ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঘাস কর্তন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং নার্সারির উন্নয়ন কার্যক্রম এবং শিখা চিরন্তন এলাকায় ফুলের বেড প্রস্তুত ও চারা রোপণের হিসাব, বাংলাদেশ সচিবালয়ের ১ নম্বর ভবন, ২ নম্বর ভবন, ৩ নম্বর ভবন, ৪ নম্বর ভবন, ৮ নম্বর ভবন, ৯ নম্বর ভবনসংলগ্ন মাঠে গ্রীষ্ম ও শীতকালীন মৌসুমি ফুলের বেড প্রস্তুত ও চারা রোপণের তথ্য-উপাত্ত, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের আরবরিকালচার (বৃক্ষপালন শাখার) কর্মীদের পোশাকের নথি এবং বাংলাদেশ সচিবালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর দিকের সীমানাপ্রাচীরের বহিঃবিভাগ হেজবেড প্রস্তুত ও চারা রোপণ এবং শাখাতে চারা কলম উৎপাদনের হিসাব, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটের ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন প্রাঙ্গণে গ্রীষ্ম ও শীতকালীন মৌসুমের ফুলের বেড প্রস্তুত ও চারা রোপণ এবং পূর্ত ভবন প্রাঙ্গণের ফুলের বেড প্রস্তুত ও চারা রোপণ ও শোভাবর্ধন গাছ সরবরাহকরণ এবং ইস্কাটন গার্ডেনে উচ্চপদস্থ সরকারি বাড়ির আঙিনায় শীতকালীন মৌসুমি ফুলের বেড প্রস্তুত ও চারা রোপণের খরচের হিসাব।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, দুদকের কাছে প্রধান বৃক্ষপালনবিদের বিষয়ে দুর্নীতির তথ্য দেওয়ায় নানা হয়রানির শিকার হয়েছেন গণপূর্ত উপবিভাগ-১-এর আরবরিকালচারের মেকানিক মো. সোলেমান। ২০১৬ সালের ৩ মে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ। কিছুদিন পর তাকে ঢাকা থেকে চাঁদপুরে বদলি করা হয়। তার পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় বসবাস করায় ২০১৯ সালের আগস্টে বদলি হয়ে ঢাকায় আসেন। আগের আক্রোশে ২০২২ সালের মার্চে পুনরায় তাকে সাতক্ষীরায় বদলির আদেশ করেন। এ ঘটনার প্রতিকার পেতে শ্রম আদালতে মামলা করেন মেকানিক সোলেমান। এরপর আদালত থেকে নোটিস ইস্যু হলে প্রধান প্রকৌশলীর হস্তক্ষেপে তার বদলির আদেশ স্থগিত করা হয়েছে।
জানতে চাইলে মেকানিক মো. সোলেমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ প্রধান বৃক্ষপালনবিদ দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অনেক দুর্নীতি করেছেন। কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দকৃত পোশাক, জুতা, ছাতাসহ অন্যান্য বরাদ্দ মেরে দিয়েছেন। দপ্তরের জনবল দিয়ে কাজ করিয়ে সেসব কাজ বাবদ ঠিকাদারকে দিয়ে বিল করিয়ে টাকা তুলে নিয়েছেন। তার দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ হয়ে অধীন কর্মচারী হয়েও তার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছি। তিনি বলেন, দুদকে সাক্ষ্য দেওয়ার পর কেটে গেছে প্রায় ৭ বছর। কিন্তু যিনি দুর্নীতি করলেন তার কিছুই হলো না; যারা প্রতিবাদ করলাম, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে সাক্ষ্য দিলাম, আমরা হয়রানির শিকার হচ্ছি। আর দুর্নীতিবাজ স্বপদে রয়েছেন বহাল তবিয়তে। ’
তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা যায়, গণপূর্তের বৃক্ষপালন বিভাগে মালি হিসেবে কর্মরত ছিলেন মো. নয়ন মোল্লা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের কর্মী হিসেবে অবসরে গেছেন। প্রধান বৃক্ষপালনবিদের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে দুদকে সাক্ষ্য দিয়েছেন। মো. নয়ন মোল্লা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা কয়েকজন দুদকের কাছে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেছিলাম। এরপর দুদক ডেকেছিল, সেখানেও সত্য ঘটনা বলে এসেছি। কিন্তু প্রধান বৃক্ষপালনবিদকে দুদক চিঠি দেয় ফাইল দিতে; কিন্তু তিনি তা দেননি। পরে দুদক মন্ত্রণালয়কে তদন্ত করার সুপারিশ করে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গণপূর্ত অধিদপ্তর তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেখানেও ফাইলপত্র জমা দেয়নি। এরপরও তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।’
২০১৬ সালে গণপূর্তের বৃক্ষপালন শাখার রমনা এলাকার পাওয়ার লন মেশিন অপারেটরের দায়িত্বে ছিলেন মিজানুর রহমান। প্রধান বৃক্ষপালনবিদের দুর্নীতির তথ্য দুদকের প্রতিনিধির কাছে বলে দেওয়ায় তাকে গোপালগঞ্জে বদলি করেন। চলতি বছরের জুন মাসে ঢাকায় বদলি হয়েছেন। ঢাকায় পরিবার-পরিজন রেখে সাত বছর গোপালগঞ্জে কেটেছে তার। দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় শাস্তি পাওয়া এই কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি সে সময় গণপূর্ত বৃক্ষপালন শাখা শ্রমিক লীগের সভাপতি ছিলাম। আমি নিজ থেকে দুদকে কোনো কিছু জানাইনি। দুদকের প্রতিনিধি এলে আমরা তার কাছে সত্য তুলে ধরেছি।’
গণপূর্তের বৃক্ষপালন শাখার উপবিভাগীয় বৃক্ষপালনবিদ মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। বর্তমান চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৬ সালে দুদক অনুসন্ধানে নেমে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছিল। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধান বৃক্ষপালনবিদ তার অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবহার করে এই কর্মকর্তাকে রাজশাহীতে বদলি করেন।
জানতে চাইলে মো. মোয়াজ্জেম হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বছরে এই বিভাগে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকে। এই বরাদ্দের বড় একটি অংশ তিনি ভুয়া বিল-ভাউচার করে লুটপাট করছেন। কুদরত সাহেব টাকা-পয়সা খরচ করে দুর্নীতির তদন্ত ধামাচাপা দিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন। আর আমাকেসহ দুর্নীতির প্রতিবাদকারীদের নানাভাবে হয়রানি করছেন।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে গত জুলাই ও চলতি আগস্ট মাসে ৩ দিন প্রধান বৃক্ষপালনবিদ শেখ মো. কুদরত-ই খুদার কার্যালয়ে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার অফিসের কর্মীরা জানান, তিনি দিনে একবার অফিসে আসেন। ১০ থেকে ৩০ মিনিট অফিসে থাকেন; এরপর চলে যান। কোনো দিন কখন আসবেন তা কেউ বলতে পারে না। এরপর তার ব্যক্তিগত নম্বর সংগ্রহ করে কয়েক দিন ফোনে চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনের বিষয়গুলো তুলে ধরলে তিনি কোনো ব্যাখ্যা না দিয়ে প্রতিবেদনটি না করার অনুরোধ জানান।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের মিরপুরের পরিদর্শন বাংলো সংস্কারকাজ না করলেও ঠিকাদারকে পুরো বিল পরিশোধ করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী। ঠিকাদার ও প্রকৌশলীর আঁতাতে এমন ঘটনা ঘটেছে। এতে সরকারের গচ্চা গেছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। এ তুঘলকি-কা-ের নায়ক গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নু।
দুর্নীতির খবর জানাজানি হলে মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এরপর তড়িঘড়ি করে ওই প্রকৌশলী ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নতুন করে বাংলোর সংস্কারকাজ শুরু করে। বিষয়টি বুঝতে পেরে গণপূর্ত বিভাগ ওই বাংলো সিলগালা করে দেয়। পরে ওই চক্র প্রভাবশালী মহলের মাধ্যমে চাপ দিয়ে বাংলোর সিলগালা খুলে দিতে আবেদন করায় গত বৃহস্পতিবার এক অফিস আদেশ জারি করেছে। শুক্র ও শনিবার সরকারি বন্ধ থাকায় আজ সিলগালা খুলে দিতে পারে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গণপূর্তের মিরপুর ডিভিশনের পূর্ত সার্কেলের আওতায় পরিদর্শন বাংলো সংস্কারে সরকারি অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে শহীদুল খন্দকার নামে এক ব্যক্তি মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে মন্ত্রণালয় ঘটনাস্থল অনুসন্ধান করতে এক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন। গত ২১ আগস্ট তিনি ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি দেখতে পান, বাংলোর সংস্কারে কোনো কাজ হয়নি। দরপত্রের শর্ত মোতাবেক ওই ভবনের দোতলায় অবস্থিত সিঁড়ির পূর্বপাশে পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত কক্ষ ৭ ও ৮ নম্বর রুমকে পরিদর্শন বাংলোয় রূপান্তরের কথা। আর তা করতে আনুষঙ্গিক সংস্কার ও মেরামত ২০২২-২৩ অর্থবছরে অর্থ বরাদ্দ করা হয়। তবে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত করার বিষয়টি জানতে পেরে দুজন শ্রমিক নিয়োজিত করেছেন তারা। তাদের তড়িঘড়ি করে কাজ করতে দেখেন। সেসব দৃশ্যের ভিডিও চিত্রও ধারণ করেছেন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। মৌখিকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তদন্তকাজ শেষ হওয়ার আগে আর কোনো কাজ না করতে নির্দেশনাও দেওয়া হয়। এরপরও গোপনে ওই পরিদর্শন বাংলোর সংস্কার ও মেরামতের কাজ চলমান ছিল বলে জানতে পারে মন্ত্রণালয়। পরে বাধ্য হয়ে মন্ত্রণালয় ওই কক্ষগুলো সিলগালা করে দেয়। মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যু করা ২৩ আগস্টের এক পত্রে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (সংস্থাপন) আহমেদ আব্দুল্লাহ নূর ও নির্বাহী প্রকৌশলী (ই/এম) পবিত্র কুমার দাশের উপস্থিতি ওই পরিদর্শন বাংলোর কক্ষগুলো সিলগালা করা হয়। প্রভাব খাটিয়ে পরিদর্শন বাংলোর সিলগালা খুলে দেওয়ার চিঠি ইস্যু করেছে মন্ত্রণালয়। ওই দিনও অর্থাৎ, আজ রবিবার তাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গণপূর্তের সংস্থাপন শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ আব্দুল্লাহ নূর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মিরপুরের পরিদর্শন বাংলোয় সিলগালা করার সময় আমি উপস্থিত ছিলাম। বৃহস্পতিবার আবার সিলগালা খুলে দেওয়ার চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি থাকায় হয়তো রবিবারে সিলগালা খুলে দেওয়া হতে পারে।’
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার সময় মিরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে ছিলেন সাইফুজ্জামান চুন্নু। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। বিগত অর্থবছরের মাঝামাঝি সময় কোনো কাজ ছাড়াই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পুরো বিল পরিশোধ করেন তিনি। বর্তমানে গণপূর্তের ঢাকা ডিভিশন-৪-এর দায়িত্ব পালন করছেন। জানতে চাইলে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিছু ভুল বোঝাবুঝির কারণে মিরপুর পরিদর্শন বাংলো সিলগালা করেছিল মন্ত্রণালয়। পরে আবার আরেক আদেশে সিলগালা খুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কাজ শেষের আগে বিল পরিশোধ করেছিলেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে কিছু না বলেই সংযোগ কেটে দেন তিনি।’
গণপূর্ত সূত্রে জানা গেছে, সরকারি সব ধরনের দরপত্রে কাজ শেষে বিল দেওয়া হয়ে থাকে। এটা কার্যাদেশের শর্তেও লেখা থাকে। কাজ না করে বিল দেওয়া আইনত দ-নীয় অপরাধ। সে হিসেবে প্রকৌশলী চুন্নু ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উভয়ই শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে। মন্ত্রণালয় সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পরও কোনোভাবে এটি এড়িয়ে যেতে পারেন না।
গণপূর্তের সদর দপ্তর ও মিরপুর কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন প্রকৌশলীর কাছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে চাইলে কেউ নাম বলতে রাজি হননি। ওই সময়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নুর কাছে জানতে চাইলেও তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম বলেননি। এ বিষয়ে জানতে মিরপুর গণপূর্তের বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ আহসানের ব্যক্তিগত নম্বরে ফোন করে এবং খুদেবার্তা (এসএমএস) পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি। মিরপুর গণপূর্তের উপসহকারী প্রকৌশলী এবং পরিদর্শন বাংলো এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের ব্যক্তি নম্বরে একাধিকবার ফোন করে এবং খুদেবার্তা (এসএমএস) পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।
এ প্রসঙ্গে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মিরপুর বাংলোর সংস্কারকাজ না করিয়ে বিল পরিশোধের একটি অভিযোগ এসেছে মন্ত্রণালয়ে। সেটা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বরিশালের শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে (শেবাচিম) র্যাগিংয়ের নামে ছাত্রী নির্যাতনের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। গতকাল শনিবার সকালে কলেজ অধ্যক্ষের কাছে বিচার চাইতে গিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে বক্তব্য দিচ্ছিলেন নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রীর মা। এ সময় কলেজের অধ্যক্ষ ফয়জুল বাশার, মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ বাকী বিল্লাহ ও প্যাথলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রবীর কুমার সাহা সাংবাদিকদের মারধর করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হামলার শিকার সাংবাদিকরা হলেন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের স্টাফ রিপোর্টার কাওছার হোসেন রানা ও ক্যামেরা পারসন রুহুল আমিন, এশিয়ান টেলিভিশনের রিপোর্টার ফিরোজ মোস্তফা ও ক্যামেরা পারসন আজিম শরিফ, বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ব্যুরোপ্রধান মুশফিক সৌরভ, সময় টেলিভিশনের রিপোর্টার শাকিল মাহমুদ ও ক্যামেরা পারসন সুমন হাসান।
জানা গেছে, শেবাচিমের ছাত্রী হলের ৬০৬ নম্বর কক্ষে তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে গত বৃহস্পতিবার রাতে র্যাগিংয়ের নামে দুই দফায় নির্যাতন করা হয়। তাকে কক্ষে ডেকে নিয়ে দীর্ঘ সময় দাঁড় করিয়ে রেখে গালাগাল, হুমকি এবং মোবাইল ফোন তল্লাশি করা হয়। এতে ওই ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কলেজের ডেন্টাল সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাহমিদা রওশন ওরফে প্রভা এবং ৫০তম ব্যাচের নীলিমা হোসেন ওরফে জুঁইয়ের
নেতৃত্বে এই নির্যাতন চলে বলে অভিযোগ করেন নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর মা। নির্যাতনের সময় তারা নিজেদের ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে পরিচয় দেন। এ ঘটনার বিচার দাবিতে নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর মা গতকাল সকালে কলেজ অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এ সময় হঠাৎ গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলা হয়। হামলার শিকার সাংবাদিকদের অভিযোগ, কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ফয়জুল বাশারের নির্দেশে এ হামলায় অংশ নেন কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ বাকী বিল্লাহ ও প্যাথলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রবীর কুমার সাহা। একপর্যায়ে ক্লাস থেকে ছাত্রদের ডেকে এনে সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি গায়ে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয় অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে। আর অধ্যক্ষের কার্যালয়ের গেট বন্ধ করে নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর অভিভাবককে প্রায় এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। অন্যদিকে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তি দাবি জানিয়ে সাংবাদিকরা অবস্থান করেন অধ্যক্ষের কার্যালয়ের গেটের সামনে। পরে দুপুর ১টার দিকে অধ্যক্ষের কার্যালয়ের গেট খুলে ভেতরে ঢোকেন পুলিশ সদস্যরা। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, সাংবাদিক সংগঠনের প্রতিনিধি ও চিকিৎসকদের মধ্যে সমঝোতা বৈঠক হয়। বৈঠকে অধ্যক্ষ ফয়জুল বাশার ক্ষমাপ্রার্থনা করেন।
নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর মা সাংবাদিকদের বলেন, ‘কলেজের সিনিয়র আপু নীলিমা হোসেন জুঁই তার রুমে আমার মেয়েকে ডেকে নিয়ে এক রাতে র্যাগিংয়ের নামে দুবার নির্যাতন করেছে। হাতের মোবাইলটা পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছে। প্রথম ৯টায় ডেকে নিয়ে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত নির্যাতন করেছে। পরে আবার মধ্যরাতে ডেকে নিয়েছে। শেষ পর্যন্ত মেয়েটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আর আমাকেও কলেজের মধ্যে বসিয়ে রাখা হয়েছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। আর কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে যেন এমন না হয়।’
হামলার শিকার সময় টেলিভিশনের রিপোর্টার শাকিল মাহমুদ বলেন, ‘এক ছাত্রী র্যাগিংয়ের শিকার হয়েছেন। তার মা কলেজ অধ্যক্ষের কাছে বিচার চাইতে গিয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ায় উল্টো সাংবাদিকদের পেটানো হয়েছে। অকথ্য ভাষায় গালাগাল, গায়ে হাত তোলা হয় সাংবাদিকের। পেটানো হয় চেয়ার দিয়ে।’
হামলার শিকার আরেক সাংবাদিক এশিয়ান টিভির ফিরোজ মোস্তফা বলেন, ‘দুই শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের অভিযোগ ওঠে। আমরা আজ (গতকাল) ক্যাম্পাসে সংবাদ সংগ্রহে আসি। একপর্যায়ে জানতে পারি ওই দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবকও কলেজে অবস্থান করছেন। পরে অভিভাবকদের কথা শুনতে গেলেই কলেজ অধ্যক্ষ ডা. ফয়জুল বাশারসহ তার দলবল আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।’
হামলার শিকার সাংবাদিক কাওসার হোসেন রানা বলেন, ‘আমরা কলেজে সংবাদ সংগ্রহে আসি। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আমাদের ওপর কলেজ অধ্যক্ষ ও দুই শিক্ষক হামলা চালায়। ক্যামেরার ট্রাইপড ও ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়েছে।’
চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ক্যামেরা পারসন রুহুল আমিন বলেন, ‘আমাকে চেয়ার দিয়ে মারা হয়েছে। এতে আমার ক্যামেরা ও ট্রাইপড ভেঙে গেছে।’
এদিকে এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বরিশালের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন। পাশাপাশি ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শেবাচিমের অধ্যক্ষ ফয়জুল বাশার বলেন, ‘সাংবাদিকদের সঙ্গে যে বিষয়টি ঘটেছে তা অনাকাক্সিক্ষত। ভুল বোঝাবুঝির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। সাংবাদিক ভাইদের সঙ্গে বসে বৈঠকে বিষয়টির সমাধান হয়ে গেছে। আর র্যাগিংয়ের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার মো. আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, ‘এমন একটি ঘটনা ভুল বোঝাবুঝির কারণে হয়েছে। আমরা দুপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি সমাধান করেছি। কেউ কোনো আইনি পদক্ষেপে যায়নি।’
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।