
গত ২৬ দিনে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে। ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজার ৩৫২ জন, যা এ বছর মোট ভর্তি রোগীর ৫৪ শতাংশ। অর্থাৎ এ সময় দৈনিক ২ হাজার ৩২১ জন করে রোগী ভর্তি হয়েছে। অথচ আগের মাসেও ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন। সে সময় দৈনিক ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪১৫ জন। সে হিসেবে এ মাসের আরও পাঁচ দিন বাকি থাকতেই রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে গত মাসের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি।
একইভাবে এ মাসে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ২৮৬ জন। এ সংখ্যা মোট মৃত্যুর ৫৩ শতাংশ। অর্থাৎ গত ২৬ দিনে দৈনিক ১১ জন করে ডেঙ্গুতে মারা গেছে। গত মাসে মৃত্যু ছিল ২০৪ জন ও সেই মাসে দৈনিক গড় মৃত্যু ছিল সাতজন করে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে সারা দেশে নয়জন মারা গেছে। তাদের মধ্যে ঢাকায় পাঁচজন এবং বাকি চারজন ঢাকার বাইরে। এ নিয়ে এই বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৫৩৭ জন মারা গেল। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৩৯৬ ও ঢাকার বাইরে ১৪১ জন রয়েছে। এখন পর্যন্ত মৃত্যুহার শুন্য দশমিক ৫ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৯৬০ জন। এ নিয়ে এই বছর ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ১২ হাজার ১৮৪ জনে। এই সংখ্যা দেশে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। রোগীদের মধ্যে এ বছর এখন পর্যন্ত বেশি ভর্তি হয়েছে ঢাকার বাইরে ৫৮ হাজার ৬৯৫ জন, যা মোট রোগীর ৫২ শতাংশ। বাকি ৫৩ হাজার ৪৮৯ জন ভর্তি হয়েছে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের উত্তাপ ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে দেখা যাচ্ছে। মূল দলগুলোও নিজেদের ছাত্রসংগঠনগুলোকে মাঠে নামতে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে।
যদিও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, ছাত্রসংগঠনগুলো স্বতন্ত্র সংগঠন হিসেবে থাকবে। কোনো দলের সহযোগী হওয়া যাবে না। কাগজে-কলমে এটা থাকলেও লেজুড়বৃত্তির সেই পুরনো চর্চার কারণে ছাত্ররাজনীতি এখনো জাতীয় রাজনীতির প্রাণ।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। অন্যদিকে রাজনীতির মাঠ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও নানা কর্মসূচি পালন করছে। এসব কর্মসূচিতে দুটি দলের সমর্থক ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে। এ দুটি দলকে ঘিরে জাতীয় রাজনীতির যে উত্তাপ তাতে যোগ হয়েছে তাদের ছাত্রসংগঠনগুলো; বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ ও বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল যথাক্রমে নির্বাচন ও আন্দোলনমুখী বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে মাঠের উত্তাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া সরকারের পক্ষে-বিপক্ষে ক্যাম্পেইন, জোট গঠনসহ নানাভাবে আলোচনায় থাকছে ছাত্রসংগঠনগুলো।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে প্রায়ই বৈঠক করছেন। ছাত্রলীগকে মাঠ ধরে রাখতে ও নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণায় যেমন নেমে যেতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তেমনি ছাত্রদলকেও বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা মাঠে থেকে সর্বোচ্চ আন্দোলন গড়ে তুলতে নির্দেশনা দিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাজনৈতিক সব কর্মকা-েই নিজ নিজ দলের ছাত্রসংগঠনগুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচন ঘনিয়ে এলে রাজনৈতিক অঙ্গনের উত্তাপ ছাত্রসংগঠনগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে।
আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে প্রায় নিয়মিত। সমাবেশ থেকে বিরোধীদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্যও দিতে দেখা যায় সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের। এ ছাড়া তারা তরুণ প্রজন্মকে শেখ হাসিনার পক্ষে রায় দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন নিয়মিত। স্মার্ট বাংলাদেশ, শেখ হাসিনার পক্ষে দেশব্যাপী ক্যাম্পেইন ও ছাত্র সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। তরুণ প্রজন্মের ব্যালট বিপ্লবের ওপর ভিত্তি করে জাতীয় নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মহাকাব্যিক বিজয় উপহার দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এরই অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের মাঠ দখলে রাখার পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ। এই কর্মসূচিতে লাখ লাখ লোকের সমাগম ঘটিয়ে মাঠ দখলে আছে ক্ষমতাসীনদের তার প্রমাণ দেখাতে চায় সংগঠনটি।
সরকার পতন, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠায় এককাট্টা বিএনপির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলসহ সমমনা প্রায় সব কটি ছাত্রসংগঠন। পুরোপুরি দলীয় এক দফায় মনোনিবেশ করেছে ছাত্রদল। দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী, সরকার পতনের দাবিতে রাজপথে নিয়মিত কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে কঠোর বিএনপির হাইকমান্ডও। দায়িত্ব অবহেলার কারণে পদও হারাতে হচ্ছে ছাত্রদল নেতাদের। কেন্দ্রীয় ইউনিট ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় সব বিশ্বিবদ্যালয়-কলেজ শাখা ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক কর্মসূচি বাদ দিয়ে সরকার পতনের আন্দোলনকেই মূল কর্মসূচি হিসেবে পালন করছে। ভোটাধিকার নিশ্চিত ও সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে তবেই ঘরে ফেরার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘ভোটাধিকারের দাবিতে ছাত্র সমাজ’ নামে একটি প্ল্যাটফরম। সারা দেশের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ বিষয়ে জনমত তৈরি করতে চান তারা। এ ছাড়া ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য’ নামে আরেকটি ছাত্রসংগঠনের যাত্রা শুরুর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে ছাত্রদল, ছাত্র অধিকার পরিষদসহ কয়েকটি সংগঠন ঘরোয়া সভায় অংশ নিয়েছে বলে জানা গেছে। শেষ পর্যন্ত এটি আত্মপ্রকাশ করলে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বৃহৎ ছাত্র আন্দোলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্যদিকে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী হাফেজ রেজাউল হত্যাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ইসলামিক কয়েকটি ছাত্রসংগঠন নিয়ে ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ নামে আরেকটি জোট। গত শুক্রবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদ গেটে সমাবেশ করেছে এই জোট। সমাবেশ থেকে এই হত্যার সঙ্গে ছাত্রলীগের জড়িত থাকার অভিযোগ এনে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন তারা। অন্যথায় বৃহত্তর ছাত্র আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বাধীন এই জোট। ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, ইসলামী ছাত্রসমাজ, ইসলামী ছাত্র মজলিস, খেলাফত ছাত্র মজলিস, কওমি ছাত্র ফোরামসহ কয়েকটি সংগঠন রয়েছে এই জোটে।
তা ছাড়া সরকারের পদত্যাগসহ ১৩ দফা দাবিতে সমাবেশ করেছে বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনোভাবেই নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন জোটের নেতারা। তাদের দাবি, মানুষ গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, কিন্তু সেটা এখন নেই। এখন ডিজিটাল আইনের পরিবর্তে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হচ্ছে। সংগ্রামের মাধ্যমে জনগণের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে গঠিত এই জোটে রয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলসহ কয়েকটি বাম ঘরানার ছাত্রসংগঠন।
‘ভোটাধিকারের দাবিতে ছাত্র সমাজের’ সংগঠক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আরমানুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটা রাষ্ট্রে যখন জনগণের ভোটাধিকার থাকে না, তখন সেই শাসন দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে ফেলে। ভোটাধিকার না থাকলে সমাজে গণতান্ত্রিক পরিসর ক্রমাগত সংকুচিত হতে থাকে। আমরা যদি স্থায়ীভাবে জনগণের ভোটাধিকার কায়েম করতে পারি তাহলে দেশে গণতান্ত্রিক পরিসর বৃদ্ধি পাবে।’
গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের সমন্বয়ক ও ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি রাগীব নাঈম বলেন, ‘ছাত্রসমাজ থেকে শুরু করে দেশের সব মানুষ কোনো না কোনোভাবে এই সরকারের অপকর্মের ভুক্তভোগী হচ্ছে। সেই জায়গা থেকে আমরা মনে করি এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা খুবই জরুরি। তাই আমরা এ বিষয়ে ছাত্রদের মাঝে জনমত গড়ার চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে আগামীতেও যাতে এসব কাজ না হয়, সেদিকেও আমরা সচেষ্ট আছি।’
ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ‘আমরা সর্বাত্মকভাবে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আছি। সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০ জুলাই প্রথম “স্টেপডাউন হাসিনা” কর্মসূচি বাস্তবায়ন করি। হামলা-মামলা-নির্যাতন উপেক্ষা করেই সারা দেশের জেলা-মহানগর, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ নব্বইয়ের অধিক ইউনিট নিয়ে আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। নিরাপদ ক্যাম্পাস ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে সব ছাত্রসংগঠনের অংশগ্রহণে আমরা ছাত্র ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছি।’
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের সবচেয়ে বেশি ফোকাসের জায়গা দেশের মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচার সরকারকে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে সরিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকার আনা। যার মাধ্যমে দেশের মানুষ নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে এবং তাদের মৌলিক অধিকার ফিরে পায়।’
তিনি বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনে দেশের সাধারণ জনগণ নির্ভয়ে যেন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে তার ব্যবস্থা করার জন্য ছাত্রদল সমন্বয় সেল গঠন করেছে। নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ দিতে হবে। সেই নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ছাত্রদল সম্পৃক্ত আছে। আমরা তৃণমূল নেতাকর্মীদের বার্তা দিয়েছি, প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান করেছি।’
ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রতি তারুণ্যের যে মমত্ববোধ রয়েছে আমরা মনে করি এটি একটি বড় অ্যাডভান্টেজ। সে জায়গা থেকে আমরা আগামী ১ সেপ্টেম্বর স্মরণকালের সর্ববৃহৎ ছাত্র সমাবেশ আয়োজন করেছি।’ তিনি বলেন, এই সমাবেশের মাধ্যমে তারা একদিকে অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ঘোষণা করবে, একই সঙ্গে স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে আগমনী রায় প্রদান করবে তরুণ প্রজন্ম। তরুণ প্রজন্ম দল-মতনির্বিশেষে শেখ হাসিনার পক্ষে, স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে রয়েছে, সেটির একটি প্রমাণ তারা দেখতে পাবেন। এ ছাড়া আগামীতে সরাসরি তরুণদের সঙ্গে আলাপনের অনুষ্ঠানসহ তারুণ্যকে সম্পৃক্ত করে তারা বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করবেন।
ছাত্রলীগের এই নেতা বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে ক্যাম্পেইন করে দেশব্যাপী আমরা গণজোয়ার তৈরি করতে চাই। সে সুর আমরা ইতিমধ্যে প্রতিধ্বনিত করে যাচ্ছি। তরুণ প্রজন্মের ব্যালট বিপ্লবের ওপর ভিত্তি করে জাতীয় নির্বাচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনাকে অসাধারণ, মহাকাব্যিক বিজয় উপহার দেব।’
মোবাইল ফোন ডিভাইসের কারণে এখন আর আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপাত্ত কেউ মানতেই চায় না। আবহাওয়া অধিদপ্তর যদি কোনো এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করে, মোবাইল ফোন অনুভূত তাপমাত্রা দেখায় এর চেয়ে ৪-৫ ডিগ্রি বেশি; অর্থাৎ বাস্তব অবস্থার সঙ্গে আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপাত্তের ব্যাপক ফারাক। যদিও দিন শেষে আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপাত্তই স্বীকৃত।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া উপাত্তে দেখা যায়, ২০০০ সালের মার্চ মাসে চট্টগ্রাম নগরীতে গড়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৩০ দশমিক ৯ এবং সর্বনি¤œ ২০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই বছরের এপ্রিলে সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ছিল ৩২ দশমিক ৬ এবং সর্বনিম্ন ২২ দশমিক ৭ আর মে মাসে সর্বোচ্চ ৩২ দশমিক ১ ও সর্বনিম্ন ২৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চলতি বছর, অর্থাৎ ২০২৩ সালের মার্চে আবহাওয়া অধিদপ্তর সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৩১ দশমিক ৯ এবং সর্বনিম্ন ২১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এপ্রিলে গড়ে সর্বোচ্চ ৩৪ দশমিক ১ ও সর্বনিম্ন ২৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর মে মাসে গড়ে সর্বোচ্চ ৩৩ দশমিক ২ ও সর্বনিম্ন ২৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে।
উপাত্তগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, গত ২২ বছরে গড়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ব্যবধান এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। যেহেতু দেশে মার্চ থেকে মে মাস সময়কাল সবচেয়ে উষ্ণ, তাই এই তিন মাসের উপাত্তকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু গরমের বাস্তব অবস্থা কি তা সমর্থন করে? এই প্রশ্ন সাধারণের মধ্যে যেমন রয়েছে, তেমনি বিভিন্ন পেশাজীবী ও গবেষকদের মধ্যেও রয়েছে। আর এই প্রশ্নের উত্তর পেতে ‘সঠিক চিত্র’ জানার উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সরকারি এ সংস্থাটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে ১৯৯৫ সালে। ২০১৫ সালে ২০ বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন আরেকটি মাস্টারপ্ল্যান করার কথা। কিন্তু তার অনুমোদন পেতেই পার হয়ে যায় প্রায় পাঁচ বছর। ২০২০ সালে অনুমোদন পাওয়ার পর মাস্টারপ্ল্যানের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান সিডিএর উপপ্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আবু ঈসা আনসারী। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর অঞ্চল বিভাগ থেকে স্নাতক এবং সৌদি আরবের কিং ফাহাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করা এই পরিকল্পনাবিদ সিডিএতে কাজ করছেন ২০০৫ সাল থেকে। প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পাওয়ার পরই পরিবেশ ও জলবায়ু ইস্যুকে গুরুত্ব দিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়-গাছপালা এবং পুকুর-জলাশয়ের গত ৩০ বছরের উপাত্ত তৈরির উদ্যোগ নেন তিনি। আধুনিক প্রযুক্তিতে স্যাটেলাইট চিত্র ব্যবহার করে এ বিষয়ক মানচিত্র তৈরির কাজ শুরু করেন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে। একপর্যায়ে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী চট্টগ্রামের সন্তান মোহাম্মদ সাইমুন ইসলামের খোঁজ পান। আবু ঈসা আনসারী চট্টগ্রামের তাপমাত্রা কেমন বেড়েছে, তা নিয়ে একটি মানচিত্র তৈরি করে দিতে বলেন সাইমুনকে। একই সঙ্গে ধাপে ধাপে সবুজায়ন কীভাবে কমেছে, সেই ম্যাপও তৈরি করার দায়িত্ব দেন। নতুন মাস্টারপ্ল্যান যুগোপযোগী করতেই মানচিত্র করার উদ্যোগ নেন তিনি। এ ছাড়া চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো ৩০ বছরে কীভাবে বিলীন হয়েছে তা নিয়ে গবেষণার জন্য মাস্টারপ্ল্যানের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেন। এই গবেষণার কাজটি করছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিল্লুর রহমান।
সাইমুন ইসলাম স্যাটেলাইট প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে ২২ বছর আগে ২০০০ সালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার তাপমাত্রা, ২০১০ সালের তাপমাত্রা এবং ২০২২ সালের তাপমাত্রার মানচিত্র তৈরি করেন। সেই মানচিত্রে উঠে আসে চোখ কপালে ওঠার মতো সব উপাত্ত। দেখা যায়, ২২ বছরের ব্যবধানে চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও কোথাও তাপমাত্রা সাড়ে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়েছে।
কী আছে সেই ম্যাপে
এই তাপমাত্রা মানচিত্রের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সিডিএর আওতাধীন এলাকার ল্যান্ড সারফেস টেম্পারেচার’ (এলএসটি)। মানচিত্রে পাঁচটি রঙে পাঁচটি অঞ্চলের তাপমাত্রার সীমা চিহ্নিত করা হয়েছে। সবুজ রঙের অঞ্চলে সবচেয়ে কম তাপমাত্রা; তার চেয়ে বেশি হালকা সবুজ; আরেকটু বেশি হলুদ; তারও বেশি কমলা এবং সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রার অঞ্চলকে লাল রং দিয়ে দেখানো হয়েছে। স্যাটেলাইট থেকে তাপমাত্রার এই উপাত্ত নেওয়া হয়েছে মূলত মার্চ, এপ্রিল ও মে এই তিন মাসের।
সিডিএর এই তাপমাত্রা মানচিত্র বলছে, ২০০০ সালের মার্চ-এপ্রিল-মে সময়কালে নগরীর পাথরঘাটা, ফিরিঙ্গীবাজার, সদরঘাট, পাঠানটুলি, আগ্রাবাদ, গোসাইলডাঙ্গা, পাহাড়তলী, সিডিএ মার্কেট, অলংকার, মাদারবাড়ীর বেশিরভাগ এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৪ দশমিক শূন্য ১ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। ২০২২ সালে এসব এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখা যাচ্ছে ৩০ দশমিক ৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৮ দশমিক ৬২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত, অর্থাৎ ২২ বছরের ব্যবধানে এসব এলাকার তাপমাত্রা ৬ থেকে সাড়ে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়েছে।
মানচিত্র অনুযায়ী, নগরীর হালিশহর, ছোটপুল, বড়পুল, নয়াবাজার, চকবাজার, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট ও ইপিজেড এলাকায় ২০০০ সালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২১ দশমিক শূন্য ৮ থেকে ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। ২০২২ সালে গ্রীষ্ম ঋতুর ওই তিন মাসে এসব এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখাচ্ছে ২৮ দশমিক ৯৩ থেকে ৩০ দশমিক ৯১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।
এ ছাড়া নগরীর প্রান্তীয় এলাকায় ২২ বছর আগে তাপমাত্রা ১৬ দশমিক ১ থেকে ২১ দশমিক শূন্য ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকলেও ২০২২ সালে এসে ২৭ দশমিক ৩৭ থেকে ২৮ দশমিক ৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত রেকর্ড হয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরীতে স্থানভেদে তাপমাত্রার এমন অস্বাভাবিক বৃদ্ধির স্যাটেলাইট উপাত্ত তুলে ধরে মন্তব্য চাইলে অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ^বিদ্যালয়ের স্কুল অব আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্সেসের গবেষক ড. আশরাফ দেওয়ান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সারা বিশ্বেই তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ছে। বিশ্বে ১০০ বছরে গড় তাপমাত্রা যেখানে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে, সেখানে চট্টগ্রামে গত ২২ বছরে সাড়ে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি খুবই সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। এটা ঠিক, নগরায়ণের কারণে তাপমাত্রা বেড়েছে। তাই বলে এত বেশি বাড়তে পারে না।’
পাহাড়-গাছ-পানি কমে, তাপমাত্রা বাড়ে
তাপমাত্রার এমন বৃদ্ধি স্বাভাবিক, না অস্বাভাবিক তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সংশয় থাকলেও সিডিএর মানচিত্রটা বিশ্লেষণ করলে একটা বিষয় পরিষ্কার বোঝা যায়। সেটা হলো, বন্দরনগরীর যে এলাকাগুলোয় প্রকৃতি ধ্বংস করা হয়েছে বেশি, সেখানেই তাপমাত্রার বৃদ্ধি অস্বাভাবিক। যেমন পুরনো চট্টগ্রাম বলে খ্যাত আন্দরকিল্লা, আলকরণ, পাথরঘাটা, ফিরিঙ্গীবাজার, সদরঘাট, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ প্রভৃতি এলাকায় পাহাড়-জঙ্গল-গাছগাছালি নেই; দীঘি-পুকুর-জলাশয়ের সংখ্যাও কম। এসব এলাকায় ২২ বছরে তাপমাত্রার বৃদ্ধিও মানচিত্রে অনেক বেশি দেখাচ্ছে। অন্যদিকে বায়েজীদ, খুলশী কিংবা আকবরশাহ এলাকা ২০০০ সালের দিকে পাহাড়ঘেরা ছিল, তাই সবুজের পরিমাণও বেশি ছিল। আর সিডিএর মানচিত্রে ২০০০ সালে এই এলাকায় ২১ দশমিক শূন্য ৮ থেকে ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়। পরে পাহাড়-জলাশয় কমে আসার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ২০১০ সালে এসে তাপমাত্রা বেড়ে ২৩ দশমিক ৬৭ থেকে ২৪ দশমিক ৯৪ ডিগ্রি পর্যন্ত রেকর্ড হয়। তবে তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বেশি বৃদ্ধি পায় পরের ১২ বছরে। এই এলাকাতেই পাহাড় কেটে বানানো হয়েছে প্রায় ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ ডিটি-বায়েজীদ সংযোগ সড়ক। ২০২২ সালে এসে এই সব এলাকার প্রকৃতি পুরো ধ্বংস হওয়ার আর বেশি বাকি দেখা যায় না। আর সিডিএর মানচিত্রেও তাপমাত্রা ৩০ দশমিক ৯২ থেকে ৩৮ দশমিক ৬২ ডিগ্রি সেলসিয়াস দেখাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত মানুষের অবৈজ্ঞানিক কর্মকান্ডের ফলাফল হলো আজকের আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং তার বিরূপ প্রভাব।’
দেশে গত বছর স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। শীতের মৌসুমেও শীত তেমন দেখা যায়নি। এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ কামরুল হাসান বলেন, ‘আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের জন্য প্রকৃতি না যতটুকু দায়ী, মানুষ তার চেয়ে বেশি দায়ী।’ তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রধান মাপকাঠি হলো তাপমাত্রা। আমরা অধিকহারে জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন কয়লা, পেট্রোল, ডিজেল ব্যবহার করছি। এসির ব্যবহার বেড়েছে। এতে বায়ুমন্ডল দ্রুত উত্তপ্ত হচ্ছে; তাপমাত্রা বাড়ছে এবং আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে।’
নগরগুলোতে তাপমাত্রা কমিয়ে আনার জন্য উন্মুক্ত স্থান সংরক্ষণের কথা বলা হলেও তা রাখা হয় না বলে উল্লেখ করেন নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি জেরিনা হোসেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রামের ড্যাপ তৈরির সময় আধা একরের সমান বা বেশি আয়তনের পুকুর বা জলাশয় ভরাট না করা, প্রতিটি ভবনের সামনে-পেছনে পর্যাপ্ত খালি জায়গা রাখা এবং সেখানে সবুজায়ন করার কথা বলেছিলাম। পাহাড় সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এগুলো মেনে না চলার কারণে ক্রমান্বয়ে নগরে তাপমাত্রা বাড়ছে।’
তিনি আরও বলেন, এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি আমাদের নাগরিকদেরও সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন ছিল।
তাপমাত্রা মানচিত্র নিয়ে সিডিএর ভাষ্য
সিডিএর উপপ্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পের পরিচালক আবু ঈসা আনসারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করতে গিয়ে চট্টগ্রামের তাপমাত্রা পরিবর্তনের চিত্রটি তুলে আনতে উদ্যোগ নিই। স্যাটেলাইট ম্যাপের সাহায্যে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২০০০ সাল থেকে বিভিন্ন বছরের উপাত্ত ব্যবহার করে তাপমাত্রার মানচিত্রটি তৈরি করেছি।’
এর সঙ্গে কি আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপাত্তের মিল আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া অধিদপ্তরের কাছে শুধু পুরো শহরের কিংবা যেখানে তাদের যন্ত্র বসানো রয়েছে, সেখানকার তাপমাত্রার উপাত্ত আছে। আর আমরা প্রতিটি পয়েন্টের তাপমাত্রার রেকর্ড নিয়েছি স্যাটেলাইট থেকে। এতে করে শহরের বিভিন্ন এলাকার পৃথক পৃথক তাপমাত্রার উপাত্ত পাওয়া গেছে এবং সেই অনুযায়ী জিআইএস ম্যাপ (জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম ম্যাপ তৈরির একটি সফটওয়্যার) তৈরি করা হয়েছে।’
এই মানচিত্র তৈরির মূল দায়িত্ব পালনকারী সাইমুন ইসলামের কাছে প্রশ্ন ছিল তাপমাত্রা বৃদ্ধি এত বেশি কেন? মানচিত্র কি ঠিক আছে? জবাবে তিনি বলেন, ‘মানচিত্র পুরোপুরি ঠিক আছে। ২০০০, ২০১০ ও ২০২২ সালের মানচিত্র পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যাবে যেখানে একসময় সবুজায়ন ছিল, সেখানে প্রথম দিকে তাপমাত্রা কম ছিল। পরে সবুজ ধ্বংস করায় ২০ বছর পর তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। এটাই প্রমাণ করে, মানচিত্রটি সঠিক।’
কিন্তু আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপাত্তের সঙ্গে পার্থক্য বেশি মনে হচ্ছে। এ বিষয়ে সাইমুন বলেন, ‘তাপমাত্রা বেশি রেকর্ড হওয়ার সুযোগ নেই। তবে স্যাটেলাইট ম্যাপ থেকে তাপমাত্রার উপাত্ত নেওয়া হলে ভূমির তাপমাত্রার তথ্যের কিছুটা পার্থক্য হয়ে থাকে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংশয়
চট্টগ্রাম মহানগরীর কোনো কোনো এলাকার তাপমাত্রা ২২ বছরে ১২-১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তরও। অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কামরুল হাসান বলেন, ‘সবুজ কমে যাওয়া, জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়া কিংবা অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে, এ কথা সত্যি। কিন্তু সিডিএর মানচিত্রে বৃদ্ধির উপাত্তটা একটু বেশি মনে হচ্ছে।’
তাপমাত্রার ক্ষেত্রে স্যাটেলাইট উপাত্ত অনেক সময় সঠিক তথ্য দিতে পারে না উল্লেখ করে কামরুল হাসান বলেন, ‘স্যাটেলাইট উপাত্ত থেকে বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে তাপমাত্রা বের করা হয়। এতে অনেক সময় কিছু ত্রুটি থাকে। সে ক্ষেত্রে আমরা ভূপৃষ্ঠস্থ উপাত্তকে সঠিক বলে মনে করি।’ তবে এলাকাভেদে তাপমাত্রা কোথাও কোথাও বেশি বাড়তে পারে বলে জানান এই আবহাওয়াবিদ।
বিশেষজ্ঞ মত
যুক্তরাজ্য থেকে ‘ল্যান্ড সারফেস টেম্পারেচার অ্যান্ড হিউম্যান থার্মাল কমফোর্ট রেসপন্স টু ল্যান্ড ইউজ ডায়নামিকস ইন চিটাগাং সিটি অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ প্রকাশ হয়েছে গত বছর। সেই প্রবন্ধের সাতজন লেখকের একজন ন্যাশনাল ওশেনোগ্রাফিক অ্যান্ড মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের (নোয়ামি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোহন কুমার দাস। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা গবেষণায় দেখেছি, ১৯৯৩ সালে চট্টগ্রামে গ্রীষ্মে (মার্চ, এপ্রিল ও মে) গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক শূন্য ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২০ সালে সেটা ৪৩ দশমিক ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে; অর্থাৎ ২৭ বছরে চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
দেশে স্যাটেলাইট উপাত্ত নিয়ে গবেষণা করেন বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো)। এ বিষয়ে স্পারসোর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নূর হোসাইন শরীফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কোনো এলাকায় সবুজ ও জলাধার কমে গেলে এবং কংক্রিটের স্থাপনা বেড়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই ওই এলাকায় তাপমাত্রা বাড়বে।’
আইনি মোড়কের আড়ালে চট্টগ্রাম মহানগরীর ‘মোড়ল’ সিডিএ শুধু কি অজ্ঞতা, মূর্খতা, আনারিপনা বা গাফিলতির কারণেই পাহাড়-জঙ্গল-জলাশয়ের সর্বনাশ করেছে? দেশ রূপান্তরের কাছে তা মনে হয় না। অনুসন্ধানকালে এমন কিছু আলামত পাওয়া গেছে, যাতে বোঝা যায়, অনেক ক্ষেত্রে টাকার বিনিময়েও প্রকৃতি ধ্বংসের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে অশুভ চক্রকে। সর্বগ্রাসী ঘুষ-সংস্কৃতির বাইরে নয় এই সংস্থাটিও।
ভুয়া বিলে কর্মীদের পোশাকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বাগান পরিষ্কারের টাকা তুলে পকেট ভরেছেন। খাতায় কর্মচারী দেখিয়ে ৩০ জনের টাকা তুলে নিয়েছেন। আর ঠিকাদারের সঙ্গে আঁতাত করে চারা রোপণ, সীমানাপ্রাচীর তৈরি, হেজবেড ও ফুলের বেড প্রস্তুতের বরাদ্দ হাওয়া করে দিয়েছেন। এসব ঘটনার নায়ক গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান বৃক্ষপালনবিদ শেখ মো. কুদরত-ই খুদা।
গণপূর্তের এই কর্মকর্তার দুর্নীতির বিষয়ে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই সময় তার দুর্নীতির বিষয়ে মুখ খোলেন এক কর্মকর্তা ও কয়েক জন কর্মচারী। তারা হলেন উপবিভাগীয় বৃক্ষপালনবিদ মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, মেকানিক মো. সোলেমান, পাওয়ার লেন মেশিন অপারেটর মো. মিজানুর রহমান, মালি মো. নয়ন মোল্লাহ, সামছু বিশ্বাস, জালাল আহমেদ ও শহিদ মিয়া এবং ফরাশম্যান মো. ইব্রাহিম। এ ঘটনার পর প্রধান বৃক্ষপালনবিদ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দুর্নীতির প্রতিবাদকারীদের একজনকে চাকরিচ্যুত করেন। আর বাকিদের শাস্তিমূলক বদলি করেন। ৭ বছর ধরে চেপে রেখেছেন দুর্নীতির তদন্ত; আর এটা করতে বিপুল অর্থও খরচ করতে হয়েছে তাকে। বার্ষিক বরাদ্দের রক্ষণাবেক্ষণের টাকা নয়ছয় করে সেসব করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় প্রতিবাদকারীরা শাস্তি পেলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধান বৃক্ষপালনবিদের দুর্নীতির বিষয়ে বেশ কিছু অভিযোগ ছিল। সেসবের সবশেষ কী অবস্থা, সেটা আমি যাচাই-বাছাই করে দেখব। দুর্নীতির ঘটনার পরও যদি তদন্তকাজে কোনো বিচ্যুতি থেকে থাকে, তাহলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি দুদক গণপূর্তের বৃক্ষপালন শাখার ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ব্যয়ের সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে তদন্তকাজ শুরু করে। দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত-২ গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী বরাবর এই চিঠি ইস্যু করা হয়। ওই সময় দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা গণপূর্তের বৃক্ষপালন শাখার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা দুদকের কাছে প্রধান বৃক্ষপালনবিদের দুর্নীতির বিষয়ে তথ্য দেন। পরে দুদক একজন কর্মকর্তা ও দুজন কর্মচারীকে চিঠি দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন। এরপর দুদক গণপূর্তের ওই শাখার বেশ কিছু ফাইল তলব করে। কিন্তু তিনি দুদককে সেই সব ফাইল জমা দেননি। পরে দুদক গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে চিঠির মাধ্যমে ওই সব অভিযোগের তদন্ত করে দেখার সুপারিশ করে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার ভিত্তিতে গণপূর্ত অধিদপ্তর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির কাছেও ওই সব ফাইলের তথ্য দেয়নি। এর প্রমাণ পাওয়া যায় ২০১৬ সালের ১৯ জুন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের শাখা-১ থেকে ইস্যু করা এক চিঠিতে। তৎকালীন উপসচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের সার্কেল-১-এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জামিলুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেশ আগের ঘটনা। তা ছাড়া তার ব্যাপারে কয়েকটি অভিযোগের তদন্ত হয়েছে। কোনোটার তথ্য-উপাত্ত দিয়েছে, আর কোনোটির দেননি। সেটা মনে করতে পারছি না।’
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, প্রধান বৃক্ষপালনবিদ শেখ মো. কুদরত-ই খুদাকে ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি ওই সব কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছিল। দুদকের চাহিদার বিষয়ের মধ্যে ছিল ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ভুয়া পোশাক ভাতা বিলের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা উত্তোলন, কাজ না করে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নতা খাতের ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৩৯৯ টাকা আত্মসাৎ, সীমানাপ্রাচীর ও বহিঃবিভাগে হেজবেড এবং ফুলের বেড প্রস্তুত, চারা রোপণসহ বিভিন্ন খাতের ১৩ লাখ ৭৭ হাজার ৭২ টাকার কাজ না করে বিল উত্তোলন, ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঘাস কর্তন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং নার্সারির উন্নয়ন কার্যক্রম এবং শিখা চিরন্তন এলাকায় ফুলের বেড প্রস্তুত ও চারা রোপণের হিসাব, বাংলাদেশ সচিবালয়ের ১ নম্বর ভবন, ২ নম্বর ভবন, ৩ নম্বর ভবন, ৪ নম্বর ভবন, ৮ নম্বর ভবন, ৯ নম্বর ভবনসংলগ্ন মাঠে গ্রীষ্ম ও শীতকালীন মৌসুমি ফুলের বেড প্রস্তুত ও চারা রোপণের তথ্য-উপাত্ত, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের আরবরিকালচার (বৃক্ষপালন শাখার) কর্মীদের পোশাকের নথি এবং বাংলাদেশ সচিবালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর দিকের সীমানাপ্রাচীরের বহিঃবিভাগ হেজবেড প্রস্তুত ও চারা রোপণ এবং শাখাতে চারা কলম উৎপাদনের হিসাব, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটের ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন প্রাঙ্গণে গ্রীষ্ম ও শীতকালীন মৌসুমের ফুলের বেড প্রস্তুত ও চারা রোপণ এবং পূর্ত ভবন প্রাঙ্গণের ফুলের বেড প্রস্তুত ও চারা রোপণ ও শোভাবর্ধন গাছ সরবরাহকরণ এবং ইস্কাটন গার্ডেনে উচ্চপদস্থ সরকারি বাড়ির আঙিনায় শীতকালীন মৌসুমি ফুলের বেড প্রস্তুত ও চারা রোপণের খরচের হিসাব।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, দুদকের কাছে প্রধান বৃক্ষপালনবিদের বিষয়ে দুর্নীতির তথ্য দেওয়ায় নানা হয়রানির শিকার হয়েছেন গণপূর্ত উপবিভাগ-১-এর আরবরিকালচারের মেকানিক মো. সোলেমান। ২০১৬ সালের ৩ মে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ। কিছুদিন পর তাকে ঢাকা থেকে চাঁদপুরে বদলি করা হয়। তার পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় বসবাস করায় ২০১৯ সালের আগস্টে বদলি হয়ে ঢাকায় আসেন। আগের আক্রোশে ২০২২ সালের মার্চে পুনরায় তাকে সাতক্ষীরায় বদলির আদেশ করেন। এ ঘটনার প্রতিকার পেতে শ্রম আদালতে মামলা করেন মেকানিক সোলেমান। এরপর আদালত থেকে নোটিস ইস্যু হলে প্রধান প্রকৌশলীর হস্তক্ষেপে তার বদলির আদেশ স্থগিত করা হয়েছে।
জানতে চাইলে মেকানিক মো. সোলেমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ প্রধান বৃক্ষপালনবিদ দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অনেক দুর্নীতি করেছেন। কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দকৃত পোশাক, জুতা, ছাতাসহ অন্যান্য বরাদ্দ মেরে দিয়েছেন। দপ্তরের জনবল দিয়ে কাজ করিয়ে সেসব কাজ বাবদ ঠিকাদারকে দিয়ে বিল করিয়ে টাকা তুলে নিয়েছেন। তার দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ হয়ে অধীন কর্মচারী হয়েও তার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছি। তিনি বলেন, দুদকে সাক্ষ্য দেওয়ার পর কেটে গেছে প্রায় ৭ বছর। কিন্তু যিনি দুর্নীতি করলেন তার কিছুই হলো না; যারা প্রতিবাদ করলাম, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে সাক্ষ্য দিলাম, আমরা হয়রানির শিকার হচ্ছি। আর দুর্নীতিবাজ স্বপদে রয়েছেন বহাল তবিয়তে। ’
তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা যায়, গণপূর্তের বৃক্ষপালন বিভাগে মালি হিসেবে কর্মরত ছিলেন মো. নয়ন মোল্লা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের কর্মী হিসেবে অবসরে গেছেন। প্রধান বৃক্ষপালনবিদের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে দুদকে সাক্ষ্য দিয়েছেন। মো. নয়ন মোল্লা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা কয়েকজন দুদকের কাছে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেছিলাম। এরপর দুদক ডেকেছিল, সেখানেও সত্য ঘটনা বলে এসেছি। কিন্তু প্রধান বৃক্ষপালনবিদকে দুদক চিঠি দেয় ফাইল দিতে; কিন্তু তিনি তা দেননি। পরে দুদক মন্ত্রণালয়কে তদন্ত করার সুপারিশ করে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গণপূর্ত অধিদপ্তর তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেখানেও ফাইলপত্র জমা দেয়নি। এরপরও তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।’
২০১৬ সালে গণপূর্তের বৃক্ষপালন শাখার রমনা এলাকার পাওয়ার লন মেশিন অপারেটরের দায়িত্বে ছিলেন মিজানুর রহমান। প্রধান বৃক্ষপালনবিদের দুর্নীতির তথ্য দুদকের প্রতিনিধির কাছে বলে দেওয়ায় তাকে গোপালগঞ্জে বদলি করেন। চলতি বছরের জুন মাসে ঢাকায় বদলি হয়েছেন। ঢাকায় পরিবার-পরিজন রেখে সাত বছর গোপালগঞ্জে কেটেছে তার। দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় শাস্তি পাওয়া এই কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি সে সময় গণপূর্ত বৃক্ষপালন শাখা শ্রমিক লীগের সভাপতি ছিলাম। আমি নিজ থেকে দুদকে কোনো কিছু জানাইনি। দুদকের প্রতিনিধি এলে আমরা তার কাছে সত্য তুলে ধরেছি।’
গণপূর্তের বৃক্ষপালন শাখার উপবিভাগীয় বৃক্ষপালনবিদ মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। বর্তমান চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৬ সালে দুদক অনুসন্ধানে নেমে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছিল। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধান বৃক্ষপালনবিদ তার অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবহার করে এই কর্মকর্তাকে রাজশাহীতে বদলি করেন।
জানতে চাইলে মো. মোয়াজ্জেম হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বছরে এই বিভাগে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকে। এই বরাদ্দের বড় একটি অংশ তিনি ভুয়া বিল-ভাউচার করে লুটপাট করছেন। কুদরত সাহেব টাকা-পয়সা খরচ করে দুর্নীতির তদন্ত ধামাচাপা দিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন। আর আমাকেসহ দুর্নীতির প্রতিবাদকারীদের নানাভাবে হয়রানি করছেন।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে গত জুলাই ও চলতি আগস্ট মাসে ৩ দিন প্রধান বৃক্ষপালনবিদ শেখ মো. কুদরত-ই খুদার কার্যালয়ে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার অফিসের কর্মীরা জানান, তিনি দিনে একবার অফিসে আসেন। ১০ থেকে ৩০ মিনিট অফিসে থাকেন; এরপর চলে যান। কোনো দিন কখন আসবেন তা কেউ বলতে পারে না। এরপর তার ব্যক্তিগত নম্বর সংগ্রহ করে কয়েক দিন ফোনে চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনের বিষয়গুলো তুলে ধরলে তিনি কোনো ব্যাখ্যা না দিয়ে প্রতিবেদনটি না করার অনুরোধ জানান।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের মিরপুরের পরিদর্শন বাংলো সংস্কারকাজ না করলেও ঠিকাদারকে পুরো বিল পরিশোধ করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী। ঠিকাদার ও প্রকৌশলীর আঁতাতে এমন ঘটনা ঘটেছে। এতে সরকারের গচ্চা গেছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। এ তুঘলকি-কা-ের নায়ক গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নু।
দুর্নীতির খবর জানাজানি হলে মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এরপর তড়িঘড়ি করে ওই প্রকৌশলী ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নতুন করে বাংলোর সংস্কারকাজ শুরু করে। বিষয়টি বুঝতে পেরে গণপূর্ত বিভাগ ওই বাংলো সিলগালা করে দেয়। পরে ওই চক্র প্রভাবশালী মহলের মাধ্যমে চাপ দিয়ে বাংলোর সিলগালা খুলে দিতে আবেদন করায় গত বৃহস্পতিবার এক অফিস আদেশ জারি করেছে। শুক্র ও শনিবার সরকারি বন্ধ থাকায় আজ সিলগালা খুলে দিতে পারে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গণপূর্তের মিরপুর ডিভিশনের পূর্ত সার্কেলের আওতায় পরিদর্শন বাংলো সংস্কারে সরকারি অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে শহীদুল খন্দকার নামে এক ব্যক্তি মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে মন্ত্রণালয় ঘটনাস্থল অনুসন্ধান করতে এক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন। গত ২১ আগস্ট তিনি ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি দেখতে পান, বাংলোর সংস্কারে কোনো কাজ হয়নি। দরপত্রের শর্ত মোতাবেক ওই ভবনের দোতলায় অবস্থিত সিঁড়ির পূর্বপাশে পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত কক্ষ ৭ ও ৮ নম্বর রুমকে পরিদর্শন বাংলোয় রূপান্তরের কথা। আর তা করতে আনুষঙ্গিক সংস্কার ও মেরামত ২০২২-২৩ অর্থবছরে অর্থ বরাদ্দ করা হয়। তবে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত করার বিষয়টি জানতে পেরে দুজন শ্রমিক নিয়োজিত করেছেন তারা। তাদের তড়িঘড়ি করে কাজ করতে দেখেন। সেসব দৃশ্যের ভিডিও চিত্রও ধারণ করেছেন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। মৌখিকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তদন্তকাজ শেষ হওয়ার আগে আর কোনো কাজ না করতে নির্দেশনাও দেওয়া হয়। এরপরও গোপনে ওই পরিদর্শন বাংলোর সংস্কার ও মেরামতের কাজ চলমান ছিল বলে জানতে পারে মন্ত্রণালয়। পরে বাধ্য হয়ে মন্ত্রণালয় ওই কক্ষগুলো সিলগালা করে দেয়। মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যু করা ২৩ আগস্টের এক পত্রে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (সংস্থাপন) আহমেদ আব্দুল্লাহ নূর ও নির্বাহী প্রকৌশলী (ই/এম) পবিত্র কুমার দাশের উপস্থিতি ওই পরিদর্শন বাংলোর কক্ষগুলো সিলগালা করা হয়। প্রভাব খাটিয়ে পরিদর্শন বাংলোর সিলগালা খুলে দেওয়ার চিঠি ইস্যু করেছে মন্ত্রণালয়। ওই দিনও অর্থাৎ, আজ রবিবার তাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গণপূর্তের সংস্থাপন শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ আব্দুল্লাহ নূর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মিরপুরের পরিদর্শন বাংলোয় সিলগালা করার সময় আমি উপস্থিত ছিলাম। বৃহস্পতিবার আবার সিলগালা খুলে দেওয়ার চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি থাকায় হয়তো রবিবারে সিলগালা খুলে দেওয়া হতে পারে।’
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার সময় মিরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে ছিলেন সাইফুজ্জামান চুন্নু। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। বিগত অর্থবছরের মাঝামাঝি সময় কোনো কাজ ছাড়াই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পুরো বিল পরিশোধ করেন তিনি। বর্তমানে গণপূর্তের ঢাকা ডিভিশন-৪-এর দায়িত্ব পালন করছেন। জানতে চাইলে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিছু ভুল বোঝাবুঝির কারণে মিরপুর পরিদর্শন বাংলো সিলগালা করেছিল মন্ত্রণালয়। পরে আবার আরেক আদেশে সিলগালা খুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কাজ শেষের আগে বিল পরিশোধ করেছিলেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে কিছু না বলেই সংযোগ কেটে দেন তিনি।’
গণপূর্ত সূত্রে জানা গেছে, সরকারি সব ধরনের দরপত্রে কাজ শেষে বিল দেওয়া হয়ে থাকে। এটা কার্যাদেশের শর্তেও লেখা থাকে। কাজ না করে বিল দেওয়া আইনত দ-নীয় অপরাধ। সে হিসেবে প্রকৌশলী চুন্নু ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উভয়ই শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে। মন্ত্রণালয় সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পরও কোনোভাবে এটি এড়িয়ে যেতে পারেন না।
গণপূর্তের সদর দপ্তর ও মিরপুর কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন প্রকৌশলীর কাছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে চাইলে কেউ নাম বলতে রাজি হননি। ওই সময়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নুর কাছে জানতে চাইলেও তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম বলেননি। এ বিষয়ে জানতে মিরপুর গণপূর্তের বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ আহসানের ব্যক্তিগত নম্বরে ফোন করে এবং খুদেবার্তা (এসএমএস) পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি। মিরপুর গণপূর্তের উপসহকারী প্রকৌশলী এবং পরিদর্শন বাংলো এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের ব্যক্তি নম্বরে একাধিকবার ফোন করে এবং খুদেবার্তা (এসএমএস) পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।
এ প্রসঙ্গে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মিরপুর বাংলোর সংস্কারকাজ না করিয়ে বিল পরিশোধের একটি অভিযোগ এসেছে মন্ত্রণালয়ে। সেটা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বরিশালের শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে (শেবাচিম) র্যাগিংয়ের নামে ছাত্রী নির্যাতনের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। গতকাল শনিবার সকালে কলেজ অধ্যক্ষের কাছে বিচার চাইতে গিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে বক্তব্য দিচ্ছিলেন নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রীর মা। এ সময় কলেজের অধ্যক্ষ ফয়জুল বাশার, মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ বাকী বিল্লাহ ও প্যাথলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রবীর কুমার সাহা সাংবাদিকদের মারধর করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হামলার শিকার সাংবাদিকরা হলেন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের স্টাফ রিপোর্টার কাওছার হোসেন রানা ও ক্যামেরা পারসন রুহুল আমিন, এশিয়ান টেলিভিশনের রিপোর্টার ফিরোজ মোস্তফা ও ক্যামেরা পারসন আজিম শরিফ, বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ব্যুরোপ্রধান মুশফিক সৌরভ, সময় টেলিভিশনের রিপোর্টার শাকিল মাহমুদ ও ক্যামেরা পারসন সুমন হাসান।
জানা গেছে, শেবাচিমের ছাত্রী হলের ৬০৬ নম্বর কক্ষে তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে গত বৃহস্পতিবার রাতে র্যাগিংয়ের নামে দুই দফায় নির্যাতন করা হয়। তাকে কক্ষে ডেকে নিয়ে দীর্ঘ সময় দাঁড় করিয়ে রেখে গালাগাল, হুমকি এবং মোবাইল ফোন তল্লাশি করা হয়। এতে ওই ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কলেজের ডেন্টাল সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাহমিদা রওশন ওরফে প্রভা এবং ৫০তম ব্যাচের নীলিমা হোসেন ওরফে জুঁইয়ের
নেতৃত্বে এই নির্যাতন চলে বলে অভিযোগ করেন নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর মা। নির্যাতনের সময় তারা নিজেদের ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে পরিচয় দেন। এ ঘটনার বিচার দাবিতে নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর মা গতকাল সকালে কলেজ অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এ সময় হঠাৎ গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলা হয়। হামলার শিকার সাংবাদিকদের অভিযোগ, কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ফয়জুল বাশারের নির্দেশে এ হামলায় অংশ নেন কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ বাকী বিল্লাহ ও প্যাথলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রবীর কুমার সাহা। একপর্যায়ে ক্লাস থেকে ছাত্রদের ডেকে এনে সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি গায়ে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয় অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে। আর অধ্যক্ষের কার্যালয়ের গেট বন্ধ করে নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর অভিভাবককে প্রায় এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। অন্যদিকে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তি দাবি জানিয়ে সাংবাদিকরা অবস্থান করেন অধ্যক্ষের কার্যালয়ের গেটের সামনে। পরে দুপুর ১টার দিকে অধ্যক্ষের কার্যালয়ের গেট খুলে ভেতরে ঢোকেন পুলিশ সদস্যরা। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, সাংবাদিক সংগঠনের প্রতিনিধি ও চিকিৎসকদের মধ্যে সমঝোতা বৈঠক হয়। বৈঠকে অধ্যক্ষ ফয়জুল বাশার ক্ষমাপ্রার্থনা করেন।
নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর মা সাংবাদিকদের বলেন, ‘কলেজের সিনিয়র আপু নীলিমা হোসেন জুঁই তার রুমে আমার মেয়েকে ডেকে নিয়ে এক রাতে র্যাগিংয়ের নামে দুবার নির্যাতন করেছে। হাতের মোবাইলটা পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছে। প্রথম ৯টায় ডেকে নিয়ে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত নির্যাতন করেছে। পরে আবার মধ্যরাতে ডেকে নিয়েছে। শেষ পর্যন্ত মেয়েটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আর আমাকেও কলেজের মধ্যে বসিয়ে রাখা হয়েছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। আর কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে যেন এমন না হয়।’
হামলার শিকার সময় টেলিভিশনের রিপোর্টার শাকিল মাহমুদ বলেন, ‘এক ছাত্রী র্যাগিংয়ের শিকার হয়েছেন। তার মা কলেজ অধ্যক্ষের কাছে বিচার চাইতে গিয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ায় উল্টো সাংবাদিকদের পেটানো হয়েছে। অকথ্য ভাষায় গালাগাল, গায়ে হাত তোলা হয় সাংবাদিকের। পেটানো হয় চেয়ার দিয়ে।’
হামলার শিকার আরেক সাংবাদিক এশিয়ান টিভির ফিরোজ মোস্তফা বলেন, ‘দুই শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের অভিযোগ ওঠে। আমরা আজ (গতকাল) ক্যাম্পাসে সংবাদ সংগ্রহে আসি। একপর্যায়ে জানতে পারি ওই দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবকও কলেজে অবস্থান করছেন। পরে অভিভাবকদের কথা শুনতে গেলেই কলেজ অধ্যক্ষ ডা. ফয়জুল বাশারসহ তার দলবল আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।’
হামলার শিকার সাংবাদিক কাওসার হোসেন রানা বলেন, ‘আমরা কলেজে সংবাদ সংগ্রহে আসি। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আমাদের ওপর কলেজ অধ্যক্ষ ও দুই শিক্ষক হামলা চালায়। ক্যামেরার ট্রাইপড ও ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়েছে।’
চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ক্যামেরা পারসন রুহুল আমিন বলেন, ‘আমাকে চেয়ার দিয়ে মারা হয়েছে। এতে আমার ক্যামেরা ও ট্রাইপড ভেঙে গেছে।’
এদিকে এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বরিশালের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন। পাশাপাশি ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শেবাচিমের অধ্যক্ষ ফয়জুল বাশার বলেন, ‘সাংবাদিকদের সঙ্গে যে বিষয়টি ঘটেছে তা অনাকাক্সিক্ষত। ভুল বোঝাবুঝির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। সাংবাদিক ভাইদের সঙ্গে বসে বৈঠকে বিষয়টির সমাধান হয়ে গেছে। আর র্যাগিংয়ের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার মো. আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, ‘এমন একটি ঘটনা ভুল বোঝাবুঝির কারণে হয়েছে। আমরা দুপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি সমাধান করেছি। কেউ কোনো আইনি পদক্ষেপে যায়নি।’
ভারতের ভিসা পাওয়া নিয়ে পাকিস্তান দল যে জটিলতার মধ্যে ছিল সেটার অবসান হয়েছে। অবশেষে ভারতের সরকার পাকিস্তান দলের জন্য ভিসা অনুমোদন করেছে।
সোমবার ক্রিকেট বিষয়ক ভারতীয় ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ এই খবর জানিয়েছে। ভিসা অনুমোদনের ফলে বাবর আজমের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান দল এখন বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার জন্য ভারতে ভ্রমণ করতে পারবে। আগামী ৫ অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া ১০ দলের আসরে শেষ দল হিসেবে ভিসা পেয়েছে পাকিস্তান।
ওয়ানডে বিশ্বকাপ অংশ নিতে আগামী বুধবার ভারতের উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার কথা রয়েছে পাকিস্তান দলের। তবে যাত্রার ৪৮ ঘণ্টা আগেও ভিসা না পাওয়াকে 'অস্বাভাবিক দেরি' হিসেবে উল্লেখ করে উদ্বেগ জানায় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তারা বিষয়টি নিয়ে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির দ্বারস্থও হয়। এর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এসেছে ভিসা অনুমোদনের খবর।
ক্রিকবাজ জানিয়েছে, আইসিসির একটি সূত্র তাদেরকে পাকিস্তান দলের ভারতের ভিসা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ভিসা পেতে দেরি হওয়াকে স্বাভাবিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করেছে ওই সূত্র।
সবশেষ এশিয়া কাপের মূল আয়োজক ছিল পাকিস্তান। তবে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে দেশটিতে যেতে চায়নি ভারত। ওই আসরে ভারতের সবগুলো ম্যাচ হয় শ্রীলঙ্কায়। একটি বাদে সুপার ফোরের বাকি সব ম্যাচ আর ফাইনালও অনুষ্ঠিত হয় দ্বীপ দেশটিতে।
ভারত নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকায় হাইব্রিড মডেলে এশিয়া কাপ আয়োজনের প্রস্তাব আসে পাকিস্তানের কাছ থেকেই। এর আগে ভারত দল পাকিস্তানে না গেলে পাকিস্তানও ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে যাবে না বলে হুমকি দিয়েছিল পিসিবি। যদিও নিজেদের সেই সিদ্ধান্ত থেকে পরে সরে আসে তারা।
বিশ্বকাপের আগে আগামী শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে মাঠে নামবে পাকিস্তান। তিনদিন পর তাদের আরেকটি প্রস্তুতি ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপে বাবরদের প্রথম ম্যাচ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। আগামী ৬ অক্টোবর হায়দ্রাবাদে অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচটি।
বাংলাদেশে ফৌজদারি অপরাধে আইনের যে ধারায় শাস্তি দেওয়ার হয়, দণ্ডবিধি বা পেনাল কোড নামে আইনটি ১৬৩ বছরের পুরনো। বিচারের দিক-নির্দেশক হিসেবে ফৌজদারি কার্যবিধি (দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর বা সিআরপিসি) নামে পদ্ধতিগত আইনটিও ১২৫ বছর আগের তৈরি। এ ছাড়া ১৫১ বছরের বেশি পুরনো (১৮৭২ সাল থেকে প্রচলিত) সাক্ষ্য আইন (অ্যাভিডেন্স অ্যাক্ট)। ব্রিটিশ আমলে তখনকার প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতিতে তৈরি এ আইনগুলোর কাঠামো নিয়ে আপত্তি না থাকলেও আইন ও বিচারসংশ্লিষ্ট বেশিরভাগ মানুষের প্রশ্ন আছে সময়, পরিস্থিতি ও প্রয়োজনে আইনগুলোর সংস্কার এবং যুগোপযোগী না করা নিয়ে। বাংলাদেশসহ এ উপমহাদেশে ৭৬ বছর আগে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয়েছে। আইনের সংস্কার নিয়ে বছরের পর বছর দাবি উঠেছে জোরেশোরে। স্বাধীনতার ৫২ বছরে এসব আইনের আলোকে, অনেক বিশেষ আইন হয়েছে। সেগুলোর অনেক ধারাতেও অসংগতি ও অস্পষ্টতার বিষয়টি নানা সময়ে আলোচনায় এসেছে। কিন্তু সংস্কারের বিষয়টি এখনো উপেক্ষিত।
১৮৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত দণ্ডবিধিতে ৫১১ ধারার ৪৫৯টি শাস্তিসংক্রান্ত। এর মধ্যে আটটি ধারায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। ১৮৯৮ সালে তৈরি হওয়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬৫ ধারার বেশিরভাগই বিচারের লক্ষ্যে দিকনির্দেশনা সংক্রান্ত। এ ছাড়া ১৫১ বছরের বেশি পুরনো (১৮৭২ সাল থেকে প্রচলিত) ও ১৬৬টি ধারা সংবলিত সাক্ষ্য আইনে (অ্যাভিডেন্স অ্যাক্ট) ধর্ষণের শিকার নারীদের জন্য অবমাননাকর একটি ধারা গত বছর নভেম্বরে বাতিলসহ এ আইনে ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণ আমলে নেওয়ার সুযোগ রাখা হয় সংশোধনীতে। আইন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, সাক্ষ্য আইনটিকে আরও যুগোপযোগী ও সংস্কারের অংশ হিসেবে চলতি বছরেই তারা সুপারিশসংক্রান্ত প্রতিবেদন দেবেন।
আইনের সংস্কার প্রশ্নে পাঁচজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে তাদের মতামত নিয়েছে দেশ রূপান্তর। প্রায় অভিন্ন সুরে তারা বলেন, আইনের প্রতিষ্ঠিত নীতিবাক্য হলো ‘দশজন অপরাধী খালাস পেলেও একজন নিরপরাধ ব্যক্তি যেন সাজা না পান’। ফলে বিচারে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ এবং আইনের ভাষা হতে হয় সহজ ও অযান্ত্রিক। একই সঙ্গে বিচারপ্রত্যাশীর ভোগান্তি লাঘবে দ্রুত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হয়। তাদের মতে, প্রায় ২০০ বছরের ঔপনিবেশিক সময়ে মানুষকে প্রজা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এর প্রভাব পড়েছে ওই সময়ে তৈরি আইনগুলোতে। যেখানে শুধু শাস্তিকেই লক্ষ্য করা হয়েছে। অন্যদিকে একশ, দেড়শ বছরে অপরাধের ধরন, ভিন্নতা, অপরাধে প্রযুক্তিগত ব্যবহারসহ বদলেছে অনেক কিছু। বিপরীতে আইনগুলোতে নগণ্য কিছু সংশোধনী ছাড়া সংস্কার হয়নি।
পুরনো আইনের সংস্কার না হওয়াকে মামলাজটের কারণ উল্লেখ করে আইনজীবীরা আরও বলেন, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি, আদালতের সময়সহ বিচারপ্রত্যাশীর অর্থ ও সময় সাশ্রয়, অপরাধীর পুনর্বাসন, সংশোধন ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তেমন কিছুই নেই আইনগুলোতে। অন্যদিকে আইনের অপপ্রয়োগ কিংবা দুর্বলতায় প্রায়ই নির্দোষ ব্যক্তিকে নির্যাতন, জেলে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) ট্রাস্টি অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের জন্য আইন। কিন্তু ব্রিটিশরা কর্তৃত্ব ও নিপীড়নমূলক অনেক আইন করেছে মানুষকে শোষণ, শাসন ও লুণ্ঠন করতে। তখন তো আর নাগরিক ও মানবাধিকার নিয়ে এত কথা হতো না। তাদের লক্ষ্যই ছিল কথায় কথায় স্বাধীনতাকামীদের বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেওয়া। তিনি বলেন, ‘এখন তো আমরা ব্রিটিশদের উপনিবেশে নেই। কিন্তু ৫৪ (বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার) ১৬৭ ধারার (রিমান্ড) মতো নিপীড়নমূলক আইনগুলোসহ আরও অনেক কিছু রয়ে গেছে। ১৯৭২ সালে মাত্র কয়েক দিনে একটি ভালো সংবিধান হলে এখন মানুষের জন্য যুগোপযোগী আইন কেন হবে না?’
সম্প্রতি ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নিয়োগ পাওয়ার পরদিন গত ১৩ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি মামলাজটকে তার প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন। এ লক্ষ্যে আইনের সংস্কার বড় বিষয় উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘মানুষের দুর্গতি ও কষ্ট লাঘবে সরকার নিশ্চয়ই এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করবে।’ নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা।
আইন সাময়িকী ডিএলআরের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি যথার্থই বলেছেন। আমরাও আইনের সংস্কার চাই। শুধু ফৌজদারি কিংবা দণ্ডবিধি নয়, এসব আইনের আলোকে আর্থিক অপরাধ, মানি লন্ডারিংসহ এমন কিছু আইন আছে যেগুলোর অনেক কিছুর সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে।’
কিছুদিন আগে ভারত সরকার ব্রিটিশদের তৈরি ফৌজদারি আইন ব্যাপক সংস্কারে উদ্যোগ নিয়েছে।
সংস্কারের রূপরেখা আলোর মুখ দেখেনি : পুরনো ফৌজদারি আইনের সংস্কার নিয়ে ২০১১ সালে একটি রূপরেখা তৈরি করে আইন মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রতিবেদন দিয়েছিল আইন কমিশন। এতে আইনের প্রতিষ্ঠিত নীতিবাক্যটিকে একটু ভিন্নভাবে উপস্থান করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘একজন নির্দোষ ব্যক্তি যাতে সাজা না পায় এবং একজন অপরাধীও যাতে খালাস না পায়।’ আইনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে প্রশ্নের অবতারণা করে সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধানে ৩৩টি সুপারিশ করে কমিশন। এর মধ্যে তদন্ত ও বিচারের ত্রুটি কাটাতে ফৌজদারি অপরাধের তদন্ত করতে স্থায়ী, পেশাদার ও দক্ষ পৃথক তদন্ত সংস্থা গঠন, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য শুধু হাতেকলমে না লিখে টেপ রেকর্ডার, ভিডিওতে রাখা, ১৬৪ ধারায় আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সঙ্গে সাক্ষীর বক্তব্য রেকর্ড করা, মিথ্যা ও তুচ্ছ অভিযোগকারীকে জরিমানা, ক্ষতিপূরণ বা কারাদণ্ড দিতে ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি দায়রা জজকেও ক্ষমতা দেওয়া, বিচারকাজের দীর্ঘসূত্রতা কমাতে মুলতবির সময় সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া, মামলার কার্যক্রম স্থগিতের সময়সীমা ৩০ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনের তাগিদ দেয় কমিশন। এ ছাড়া কারাগারের চাপ কমানো এবং আসামিকে সংশোধনের লক্ষ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও অভিযোগ গঠনের সময় দোষ স্বীকার করলে সাজা রেয়াত দেওয়া, যুক্তিতর্কের কারণে মামলার কার্যক্রম বিলম্বিত হওয়ায় তা লিখিত আকারে জমা দেওয়া, আদালতের সংখ্যা অনুপাতে আপিল আদালত প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে কমিশন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কমিশনের ওই সুপারিশ আলোর মুখ দেখেনি।
কমিশনের মুখ্য গবেষণা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোর্শেদ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রতিবেদন দেওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে কমিশন অবহিত নয়।
দণ্ডবিধির অনেক ধারার অসংগতি ও অস্পষ্টতা নিয়ে আইন ও বিচার সংশ্লিষ্টরা বলেন, এই আইনে অনেক কিছুই আছে। কিন্তু গণপিটুনিতে মৃত্যু, অর্থনৈতিক অপরাধের মতো আরও কিছু বিষয়ে আইনে কিছু নেই। অন্যদিকে পুরনো এ আইনে এখনো ১০ টাকা, ১০০ টাকা ও ২০০ টাকার মতো অর্থদণ্ডের বিধান রয়ে গেছে। জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার তিনজন (একজন অবসরে) বিচারক এসব আইনে তাদের বিচারিক অভিজ্ঞতার বিষয়টি দেশ রূপান্তরের কাছে তুলে ধরেন। সংগতকারণে তারা তাদের নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানান। একজন বিচারক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আদালত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রসিকিউশনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার সমন্বয়ে একটি ফৌজদারি মামলার বিচার কার্যক্রম হয়। কিন্তু বিচারের দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে শুধু বিচার বিভাগকে শুনতে হয়। পুরনো আইনগুলোতে এমন অনেক কিছু আছে, যা একটু আধুনিক হলে বিচারকাজে আরও গতিশীল হবে।’ অন্য একজন বিচারক বলেন, ‘বিচারকাজের সময় টাইম (আদালত ও বিচারপ্রার্থীর সময়), কস্ট (বিচারপ্রার্থীর খরছ) এবং ভিজিট (বিচারপ্রত্যাশীর আদালতে আসা-যাওয়া) এ তিনটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আইনগুলোতে এসব বিষয়ে স্পষ্ট কিছু দিকনির্দেশনা নেই। সংগতকারণে বিচারপ্রার্থীর প্রতি সিমপ্যাথি (সহানুভূতি) ও ইমপ্যাথি (সহানুভূতির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু করা) থাকা সমীচীন।’
আইন সংস্কারের উদ্যোগ থমকে দুই বছর ধরে : ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফৌজদারি আইন সংস্কার ও আইনটি বাংলা ভাষায় প্রণয়ন করতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হককে নির্দেশ দেন। দুদিন পর ফৌজদারি আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন করে আইনটি যুগোপযোগী, আধুনিক ও বাংলা ভাষায় প্রণয়নের উদ্দেশ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এতে চেয়ারপারসন করা হয় মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব মো. মইনুল কবিরকে। কমিটিকে অন্যান্য দেশের আইন বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা করে সমস্যা চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তবে মন্ত্রণালয়ের ওয়াকিবহাল একটি সূত্রের তথ্য বলছে, দুই বছর পার হলেও এ বিষয়ে কার্যকর কোনো অগ্রগতি নেই।
এ বিষয়ে জানতে সচিব ময়নুল কবিরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল ধরেননি। সার্বিক বিষয়ে জানতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও তার সাড়া মেলেনি। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এএম আমিন উদ্দিন মনে করেন, পুরনো আইনগুলোর আমূল পরিবর্তন কিংবা পুরো সংস্কার নয়, যতটুকু করলে বিচারপ্রার্থীর দ্রুত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে সেটি হতে পারে। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আইনগুলোর প্রসিডিউরে (কার্যপ্রণালি) তেমন ভুল নেই। যেসব ক্ষেত্রে অসংগতি বা অস্পষ্টতা আছে শুধু সেগুলোই আলোচনার মাধ্যমে সংশোধন করা উচিত। এ ক্ষেত্রে অংশীজন হিসেবে অন্যদের সঙ্গে অবশ্যই আইনজীবীদের সম্পৃক্ত রাখা উচিত।’
ন্যায্য পারিশ্রমিক ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার সীমিত করার দাবি নিয়ে পাঁচ মাস আগে হলিউডে শুরু হওয়া হট্টগোলের অবসান হচ্ছে। আন্দোলনকারী লেখকরা প্রযোজকদের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর পর ধর্মঘট তুলে নেওয়ার কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানাচ্ছে, পাঁচ মাস আগে লেখক বা চিত্রনাট্যকারদের আন্দোলনের সঙ্গে যোগ দেন অভিনয়শিল্পীরা। যার কারণে হলিউডে একধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। বন্ধ হয়ে যায় অনেক সিনেমার নির্মাণকাজ। তবে স্থানীয় সময় গত রবিবার হলিউডের লেখক ইউনিয়ন বড় স্টুডিওগুলোর সঙ্গে একটি প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছেছে।
সিএনএন বলছে, এই চুক্তির ফলে হলিউডের ইতিহাসের বড় দুটি ধর্মঘটের মধ্যে একটি পক্ষ কাজে ফিরতে সম্মত হলো। এই ধর্মঘটের ফলে প্রায় পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে বেশিরভাগ ফিল্ম ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানের চিত্রায়ণ। ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতিতে এর প্রভাব বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের। তাই এবার আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে লেখক ও অভিনয়শিল্পীদের কাজে ফেরাতে সচেষ্ট হচ্ছে হলিউডের স্টুডিওগুলো।
লেখকদের সঙ্গে নিষ্পত্তি হলেও এখনই হলিউডের স্টুডিওগুলোর আলো জ্বলছে না। অভিনেতাদের সংগঠন এসএজি-এএফটিআরএ এখনো পারিশ্রমিক ও এআই ইস্যুতে ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছে। এসব দাবির পাশাপাশি লেখকদের পারিশ্রমিক ও লভ্যাংশ ইস্যুতে সংহতি প্রকাশ করে ২ মে থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। এসব বিষয়ে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে বার্তা সংস্থার আহ্বানে সাড়া দেয়নি দ্য অ্যালায়েন্স অব মোশন পিকচার অ্যান্ড টেলিভিশন প্রডিউসারস, ওয়াল্ট ডিজনি, নেটফ্লিক্স, ওয়ার্নার ব্রস ডিসকভারিসহ অন্যান্য প্রতিনিধিত্বকারী বাণিজ্যিক গোষ্ঠী।
চলতি বছরের ২ মে থেকে শুরু হওয়া ধর্মঘটে ১১ হাজারেরও ফিল্ম এবং টিভি লেখক অংশগ্রহণ করেন, যারা স্ট্রিমিং যুগে উচ্চ বেতন এবং আরও ভালো কাজের দাবি করছেন। তারা যুক্তি দিয়েছেন যে স্টুডিওগুলো স্ট্রিমিং প্ল্যাটফরম থেকে যে আয় করেছে, সেই তুলনায় তাদের ক্ষতিপূরণ মিলছে না। লেখকরা নতুন নিয়মও চান, যাতে এসব স্টুডিও টিভি শোগুলোর জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্টসংখ্যক লেখক নিয়োগ করতে হবে। একই সঙ্গে বড় স্টুডিওগুলোর কাছ থেকে বেশি পারিশ্রমিক চেয়ে একটি চুক্তি করতে চেয়েছিল লেখকদের সংগঠন রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা (ডব্লিউজিএ)। সেই চুক্তির চেষ্টা ব্যর্থ হওয়াতেই মূলত ধর্মঘটের ডাক দেন লেখকেরা। হলিউড আন্দোলনের কারণে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে টেলিভিশন শো ও হলিউডের নির্মাণাধীন সিনেমাগুলো।
বিশ্বকাপ যত এগিয়ে আসছে, বাংলাদেশে বিশ্বকাপ নিয়ে নাটক ততই জমে উঠেছে। একদিন পর দল বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছাড়বে, অথচ এখনো ঘোষণা হয়নি বিশ্বকাপের দল।
এমন অবস্থায় সোমবার মাঝরাতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় বৈঠকে বসেছিলেন ওয়ানডে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
বিকেলে বিসিবি সভাপতির পেশাগত কার্যালয়, বেক্সিমকোতে নির্বাচক কমিটির সদস্যসহ বিসিবির বেশ কয়েকজন পরিচালকের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন বিসিবি সভাপতি। তারপর সন্ধ্যার দিকে দেশের কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দাবী করা হয় সাকিব ও তামিম ইকবালের ভেতর নতুন দ্বন্দের খবর।
গণমাধ্যমগুলোর দাবী, তামিম ইকবাল জানিয়েছেন বিশ্বকাপে তিনি পাঁচটি ম্যাচে খেলতে পারবেন। অন্যদিকে তামিমের এই দাবী মানলে বিশ্বকাপে না খেলার হুমকি দিয়ে রাখেন সাকিব।
২০১৯ বিশ্বকাপে চোটজর্জর মাশরাফী বিন মর্তুজা দলে থাকায় এবং সবগুলো ম্যাচে খেলায় অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের পরও দলকে বিশ্বকাপে অষ্টম হতে দেখেছেন সাকিব, তাই এই শর্তে তার নেতৃত্বে না থাকার আশংকাই প্রবল। এই দুই জনকে সমঝোতা করার জন্য মাশরাফীকে পাপন দায়িত্ব দিয়েছেন এমন একটা খবরই দাবী করা হয়। যদিও এসবের পক্ষে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
ধোঁয়া থাকলে আগুন থাকবেই। তাই মধ্যরাতে, পৌনে ১২টায় সাকিবের বিসিবি সভাপতির বাসভবনে ছুটে যাওয়া আর সিডনি থেকে বাংলাদেশে পা রাখার ঘণ্টা তিনেকের মাথায় তাকে গুলশানের আইভি লেগেসিতে ছুটে আসতে দেখার মাধ্যমেই বোঝা যায়, চূড়ান্ত দল ঘোষণার আগে শেষ মুহূর্তে কোনো মারপ্যাঁচ লেগেছে।
প্রায় ৩ মাস পর আন্তর্জাতিক ম্যাচে ব্যাট করতে নেমে তামিম খেলেছিলেন ৪৪ রানের ইনিংস। পরের ম্যাচে আবার তিনি বিশ্রামে, যেটা বিসিবির মেডিক্যাল বিভাগেরই সুপারিশে।
তাই বিশ্বকাপে তামিম কতটা ফিট হয়ে খেলতে পারবেন, আদৌ খেলতে পারবেন কি না এসব নিয়েই হয়তো হয়েছে শেষ মুহুর্তে মধ্যরাতের আলোচনা।
অধিনায়ক, কোচ আর বিসিবি প্রধান মিলে মিনিট চল্লিশেক বৈঠক করেছেন। আগে বের হয়েছেন হাথুরুসিংহে, তার মিনিট দশেক পর সাকিব। কেউই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি, গাড়ির কাঁচটাও নামাননি। আর পাপনের বাসায় যখন এসব চলছে, তখন এক বন্ধুর সঙ্গে বাসায় বসে চাউমিন খাচ্ছেন তামিম!
সাকিব-তামিম একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা বলেন না, এই খবর পুরাতন। শোনা গেছে সম্প্রতি একটি মোবাইলে আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপণের কাজে দুজনের ভেতর সম্পর্কে তিক্ততা বেড়েছে। তামিমের খেলা, না খেলা এসব নিয়েও জলঘোলা হওয়ার কারণেই নাকি সাকিবের বিরক্তি বেড়েছে।
তবে দুজনের কারো কাছ থেকেই এসব নিয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তামিম অধিনায়ক থাকা অবস্থায় ইংল্যান্ড সিরিজের আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন 'নাথিং এলস ম্যাটার্স'। সাকিবও স্বভাবসুলভ ভাবেই পাশ কাটিয়ে গেছেন এসব প্রসঙ্গ।
দল ঘোষণার আগের দিনে, মাঝরাতে বিসিবি প্রেসিডেন্টের বাসভবনে কোচ ও অধিনায়কের বৈঠক হতে পারে শেষ মুহূর্তের বোঝাপড়া। যেহেতু একদিন বাদেই উড়াল দিতে হবে। অথবা তামিম সংক্রান্ত ব্যপারে চূড়ান্ত ফয়সালা। উত্তরটা পেতে অপেক্ষা মাত্র কয়েক ঘণ্টার।
২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনকেন্দ্রিক সক্রিয় অবস্থানের পর দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের বড় কোনো কর্মসূচি নেই। কর্মসূচি পালন করতে চাইলেও ছাত্রলীগের হামলার মুখে দাঁড়াতেই পারছেন না সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। মাঝেমধ্যে ক্যাম্পাসের আশপাশে ছোটখাটো ঝটিকা মিছিল করেই সারছে দলীয় কর্মসূচি। তবে বিএনপির এক দফা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আবারও ক্যাম্পাসে সরব হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।
জানা যায়, ক্যাম্পাসে সক্রিয় হওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিভিন্ন উপদলে ভাগ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত আড্ডা এবং কর্মী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা। আগামীতে ঢাবি ছাত্রদলের নেতৃত্বপ্রত্যাশী নেতারা এসব কর্মকা- পরিচালনা করছেন বলে জানা যায়। আড্ডা দিতে গিয়ে শনিবার রাতে ছাত্রলীগের হামলার শিকারও হন কয়েক জন ছাত্রদল নেতা। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ সক্রিয় দেখা যাচ্ছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের। ‘আমরা দ্রুত ফিরছি, মাত্র কয়দিনের অপেক্ষা’ লিখে স্ট্যাটাস দিতে দেখা যায় তাদের।
এদিকে রবিবার ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের দেয়ালে ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ সে্লাগান লিখে আলোচনা তৈরি করে ঢাবি ছাত্রদল। ছাত্রদল নেতা আনিসুর রহমান খন্দকার অনিকের নেতৃত্বে মধুর ক্যানটিন ছাড়াও ডাকসু ক্যাফেটেরিয়া, কলা ভবনসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দেয়ালে ২০টির বেশি দেয়াল লিখন করেছে তারা। এসব দেয়ালে ‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’, ‘ঘুরে দাঁড়াও বাংলাদেশ’, ‘তারেক রহমান বীরের বেশে আসবে ফিরে বাংলাদেশে’ সে্লাগান লেখা হয়। যদিও এদিন দুপুরের দিকে মধুর ক্যানটিনের লেখা মুছে দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ঢাবি ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশব্যাপী বিএনপির লংমার্চ শেষে অক্টোবরে ঢাকাকেন্দ্রিক টানা আন্দোলন চলবে। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও পুরোদমে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ছাত্রদল। যত বাধাই আসুক ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক কর্মসূচি ও আন্দোলন করতে চান তারা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত স্যাংশন ও বিএনপির সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি চূড়ান্ত রূপ লাভের অপেক্ষা থাকায় নেতাকর্মীরা বেশ উজ্জীবিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও তাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন বলে দাবি ছাত্রদলের নেতাদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। অক্টোবরে তা চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আপাতত বিভিন্ন ভাগ হয়ে হয়ে আড্ডা, দেয়াল লিখনসহ নানান কর্মসূচি চলছে। নতুন শিক্ষার্থীরাও আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। ছাত্রলীগের দখলদারিত্বের বিনাশ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। দেশনায়ক তারেক রহমানের চূড়ান্ত নির্দেশের অপেক্ষায় আছি আমরা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গতকালও ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমরা হামলার জবাব হামলা দিয়ে নয়, কাজের মাধ্যমে জবাব দিতে চাই। সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিনাশ করতে চাই। ক্যাম্পাস কারও একার সম্পত্তি নয়, যেকোনো সময় আমরা আসব। শুধু সময়ের অপেক্ষা। আমরা দেশনায়ক তারেক রহমানের আগমনী বার্তা দিতে চাই।’
ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেহেতু সামনে নির্বাচন, নির্বাচনকেন্দ্রিক আমাদের কর্মসূচি চলছে। সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ দিতে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসব। আমরা খুব দ্রুতই আসব। হাইকমান্ডের নির্দেশের অপেক্ষায় আছি। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল প্রস্তুত আছি। ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে, দাবি আদায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে অচিরেই ক্যাম্পাস থেকে আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে আমরা বিজয় নিয়েই ঘরে ফিরব ইনশা আল্লাহ।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ক্যাম্পাস থেকে হারিয়ে যায়নি। হামলা-মামলার শিকার হয়েও আমরা নিয়মিত পদচারণা অব্যাহত রেখেছি। আগামীতেও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এই ক্যাম্পাসে সরব অবস্থানে থাকবে। ছাত্রলীগের দখলদারিত্বের অবসান ঘটবে শিগগিরই। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পেলে আমরা চূড়ান্ত কর্মসূচিতে যাব। আমরা প্রস্তুত ইনশা আল্লাহ।’
এদিকে ক্যাম্পাস দখল ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করলে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভোররাতে এসে কেউ যদি দেয়াল লিখন করে, এটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলে আমরা মনে করি না। আদালত কর্তৃক ঘোষিত অপরাধীকে তারা দেশনায়ক বলছে, তাদের কর্মকাণ্ড দ্বারা বোঝা যায় তারা কতটা অথর্ব। বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানচর্চার একটি কেন্দ্র, এখানে দখলদারিত্বের কোনো বিষয় নেই। যেটি ছাত্রদল বলার চেষ্টা করছে দখল করবে, এই চিন্তা-ভাবনা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক যায় না। এসবে আমরা বিশ্বাস করি না। শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য যা যা করার দরকার, আমরা তা করতে রাজি আছি। ক্যাম্পাসকে কেউ অস্থিতিশীল করতে চাইলে তা প্রতিহত করা হবে।’
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনে রদবদলের সুযোগ নেই সরকারের। তাই এর আগেই নির্বাচনী প্রশাসনে ধাপে ধাপে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রশাসনে চলছে পদোন্নতি ও রদবদল। ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রশাসন সাজাতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে বদলি-পদায়ন হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে বড় পদোন্নতি হয়েছে। নির্বাচনের আগে অবসরে যাওয়া কয়েকজন সচিবেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২০ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৮ জন ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিসিএসের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৫ সালে, ২৫তম ব্যাচ ২০০৬ সালে এবং ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৮ সালে।
জানা যায়, নির্বাচনের সময় ডিসিরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকেন। তাদের যে কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে বাতিলের ক্ষমতাও থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও থাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা ডিসির অধীনে। নির্বাচনের সময় সমন্বয়কারীর ভূমিকায়ও থাকেন ডিসিরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন তাদের দুটি ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে। আর সে সময় বিসিএস নিয়ে বেশ বিতর্ক ছিল। বিসিএসে ছিল নানা ধরনের তদবির। ২৪ ও ২৫তম ব্যাচ দুটি বিএনপির সময়ে নিয়োগ পেলেও ২৭তম ব্যাচ নিয়োগ পেয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। কারণ বিএনপির শেষ সময়ে ২৭তম ব্যাচের নিয়োগে বড় ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকায় তা বাতিল হয়। পরে ফের পরীক্ষা নিয়ে ২০০৮ সালে এ ব্যাচের নিয়োগ দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল ২৪তম ব্যাচের নিয়োগ নিয়ে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২৪তম ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডিসির পদ থেকে তুলে আনা হতে পারে। নির্বাচনের সময় যারা ডিসির দায়িত্বে থাকবেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তাদের সবার ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে পরিবার ও নিকট আত্মীয়স্বজনদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো যাচাই করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে আর ডিসির পদে রাখা হবে না।
এ ছাড়া নির্বাচনে অন্যতম ভূমিকা পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। বর্তমানে ৩৩, ৩৪ ও ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা রয়েছেন ইউএনও পদে, যারা আসন্ন নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এখন ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ইউএনওর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে; এ ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারের ২৯১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
জানতে চাইলে সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ইকরাম আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষা হয় যোগ্যতা, মেধা ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে। সেখানে ছাত্রজীবনে কে কোন পার্টি করেছিলেন, কোন দল ক্ষমতায় আছে তা বিবেচনা করা হয় না। বিসিএস কর্মকর্তাদের যে ফাউন্ডেশন ট্রেনিং হয়, তাতে তাকে একজন অফিসার হিসেবেই গড়ে তোলা হয়। এরপর এসিআর, সুপিরিয়রের মতামত, সুনাম, দক্ষতা, যোগ্যতার ভিত্তিতেই একজন কর্মকর্তাকে উচ্চতর পদে দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তবে সরকার যে দল পরিচালনা করে তাদের কিছু নীতিমালা ও উদ্দেশ্য থাকে। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সরকারের নেওয়া বৈধ ও জনকল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা। তিনি প্রলুব্ধ হবেন না, নিরপেক্ষ থেকে তার দায়িত্ব পালন করবেন। যদি কোনো নির্বাচনী দায়িত্বও দেওয়া হয়, সেটাও নিরপেক্ষভাবে তিনি পালন করবেন।’
গত মে মাসে অতিরিক্ত সচিব পদে ১১৪ জনের পদোন্নতি হয়। জুলাই মাসে পাঁচ বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসেই বদলি ও নতুন মিলিয়ে ৩০টি জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উপসচিব পদমর্যাদার এই ডিসি পদে এবারও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আটজন পিএসকে পদায়ন দেওয়া হয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ২২১ কর্মকর্তা। এ পদোন্নতিতে মূল বিবেচনায় এসেছে ২২তম ব্যাচ। বর্তমানে যুগ্ম সচিবের স্থায়ী পদ ৫০২টি। এর বিপরীতে পদোন্নতি পাওয়ার পর যুগ্ম সচিবের সংখ্যা হলো ৯৪৬ জন। এর আগে সর্বশেষ গত বছর ২ নভেম্বর ১৭৫ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। আর গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২৭০ জন সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই অন্তত ১০ জন সচিবের স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার কথা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন আগামী ১৩ অক্টোবর অবসরে যেতে পারেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান ১৪ সেপ্টেম্বর, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আবদুস সালামের ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে আবদুস সালামের চাকরি এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ৯ অক্টোবর, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক ৩০ অক্টোবর, ইআরডি সচিব শরিফা খান ২৪ নভেম্বর, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহসানে এলাহী ২৫ নভেম্বর এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল হোসেন ২৯ নভেম্বর অবসরে যাবেন। ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম এবং ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম। এ ১০ জনের মধ্যে কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন।
গত কয়েক বছরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মুখ্য সচিব পদে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই স্বাভাবিক অবসরের মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। সর্বশেষ সাবেক চার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মধ্যে একমাত্র কবির বিন আনোয়ার ছাড়া বাকি তিনজনই স্বাভাবিক মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। তারা হলেন মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, মোহাম্মদ শফিউল আলম ও খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিনের মধ্যে অন্যতম ভিটামিন ডি। অতি প্রয়োজনীয় এই ভিটামিনের প্রধান উৎস সূর্যের আলো। তবে আমাদের ব্যস্ত জীবনে রোদ পোহানের সময় কই। অফিস থেকে বাসা, বাসা থেকে অফিস। এসির ভেতর থাকতে থাকতে শরীরে তৈরি হচ্ছে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি। ফলে কম বয়সে হাড়ক্ষয়, পিঠে-কাঁধে ব্যথা, চুল ঝরে যাওয়া, ঘা শুকোতে দেরি হওয়া, হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা যায়।
রেগুলার অফিসযাত্রীরা ভিটামিন ডি-এর অভাবে সবচেয়ে বেশি ভোগে। এরা রোদে বসার সময় পান না। যে কারণে এদের মধ্যে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি খুব বেশি দেখা যায়। ৫০ বছরের বেশি বয়সের পর শরীরে অনেক ধরনের ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দেয়, যার মধ্যে ভিটামিন ডিও একটি। এই বয়সে শরীর সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি তৈরি করতে সক্ষম হয় না। যে কারণে এই বয়সের মানুষের শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণ করতে হয় অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে। এনআইএইচ-এর একটি রিপোর্ট অনুসারে, যাদের বডি মাস ইনডেক্স ৩০-এর বেশি বা তাদের শরীরে চর্বির পরিমাণ বেশি তারাও ভিটামিন ডি-এর অভাবের সম্মুখীন হতে পারেন।
কীভাবে বাড়াবেন ভিটামিন ডি?
মাশরুম
মাশরুমে ভিটামিন ডি থাকে। মাশরুম ইউভি রশ্মির সংস্পর্শে এলে ভিটামিন ডি তৈরি করে। এটি খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। কম তেলে রান্না করলে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
সি ফুড
কিছু মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে। রিপোর্ট অনুযায়ী, স্যামন, টুনা এবং ম্যাকেরেল মাছে ভিটামিন ডি থাকে। যদি আমিষভোজী হন তবে আপনি তাদের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
দুধ
এছাড়াও দুধে অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এতে ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি বেশি পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে। বিশেষ করে গরুর দুধে, এটা স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। এর পাশাপাশি সহজে হজম হয়। দই দইয়ে ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকে। দই হাড় মজবুত করে এবং হার্ট ভাল রাখে।
ভিটামিন ডি পাওয়ার সেরা উপায় কি?
রিপোর্ট অনুযায়ী, ভিটামিন ডি পাওয়ার সবচেয়ে ভালো উৎস হল চর্বিযুক্ত মাছ এবং মাছের তেল। ডিমের কুসুম এবং পনিরে অল্প পরিমাণে পাওয়া যায়। উপরন্তু, কিছু মাশরুমে কিছু ভিটামিন ডি২ থাকে।
ভিটামিন ডি এর জন্য রোদে বসার সঠিক সময় কোনটি?
অনেক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে সকাল ও বিকেল হল রোদে বসার সেরা সময়। দুপুরে ইউভিবি রশ্মি সবচেয়ে শক্তিশালী হয়। এর মানে হল আপনি কম সময়ে বেশি ভিটামিন ডি পাবেন। কমপক্ষে ১০ মিনিট এবং সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট রোদে বসলে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।