
কোরআন অবমাননা ঠেকাতে একটি আইন প্রস্তাব করতে যাচ্ছে ডেনমার্ক সরকার। বাকস্বাধীনতার নামে প্রকাশ্যে কোরআন পোড়ানোর ফলে মুসলিম দেশগুলোতে যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে, তা কমাতেই এ উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি। গত শুক্রবার ডেনমার্কের বিচারমন্ত্রী পিটার হামেলগার্ড বলেন, সরকার একটি প্রস্তাব পেশ করবে, যা একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য উল্লেখযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ বস্তুর প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ নিষিদ্ধ করবে। প্রকাশ্যে কোরআন পোড়ানো অবমাননাকর ও সহানুভূতিহীন কাজ, যা ডেনমার্ক ও এর স্বার্থের ক্ষতি করে। তিনি আরও বলেন, নতুন আইনটি ডেনমার্কের দণ্ডবিধির ১২ অধ্যায়ে অন্তর্ভুক্ত হবে, যা জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা করার পাশাপাশি আরও শক্তিশালী করবে। এ আইনের মাধ্যমে প্রকাশ্যে কোরআন, বাইবেল অথবা তোরাহ পোড়ানোর মতো কাজ দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোককে রাসমুসেন বলেন, ‘আমাদের এ পদক্ষেপ বাকি বিশ্বকে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা দেয়। নতুন আইনে কোরআন পোড়ানোর শাস্তি হবে জরিমানা বা দুই বছরের কারাদণ্ড।’
নিষেধাজ্ঞার জন্য জাতীয় নিরাপত্তা প্রধান অনুপ্রেরণা উল্লেখ করে ড্যানিশ বিচারমন্ত্রী বলেন, ‘যখন কিছু ব্যক্তির কারণে পুরো ডেনমার্কের প্রতি সহিংস প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, তখন আমরা চুপচাপ বসে থাকতে পারি না।’
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ডেনমার্ক ও সুইডেনে অতি-ডানপন্থিরা একাধিকবার পবিত্র কোরআনের অনুলিপি পুড়িয়েছে। এতে পুরো মুসলিম বিশ্ব চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। বাকস্বাধীনতার নামে এ দুই দেশে ইসলামের বিরুদ্ধে এমন বিদ্বেষমূলক আচরণ বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন মুসলিম নেতারা।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের উত্তাপ ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে দেখা যাচ্ছে। মূল দলগুলোও নিজেদের ছাত্রসংগঠনগুলোকে মাঠে নামতে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে।
যদিও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, ছাত্রসংগঠনগুলো স্বতন্ত্র সংগঠন হিসেবে থাকবে। কোনো দলের সহযোগী হওয়া যাবে না। কাগজে-কলমে এটা থাকলেও লেজুড়বৃত্তির সেই পুরনো চর্চার কারণে ছাত্ররাজনীতি এখনো জাতীয় রাজনীতির প্রাণ।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। অন্যদিকে রাজনীতির মাঠ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও নানা কর্মসূচি পালন করছে। এসব কর্মসূচিতে দুটি দলের সমর্থক ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে। এ দুটি দলকে ঘিরে জাতীয় রাজনীতির যে উত্তাপ তাতে যোগ হয়েছে তাদের ছাত্রসংগঠনগুলো; বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ ও বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল যথাক্রমে নির্বাচন ও আন্দোলনমুখী বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে মাঠের উত্তাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া সরকারের পক্ষে-বিপক্ষে ক্যাম্পেইন, জোট গঠনসহ নানাভাবে আলোচনায় থাকছে ছাত্রসংগঠনগুলো।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে প্রায়ই বৈঠক করছেন। ছাত্রলীগকে মাঠ ধরে রাখতে ও নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণায় যেমন নেমে যেতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তেমনি ছাত্রদলকেও বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা মাঠে থেকে সর্বোচ্চ আন্দোলন গড়ে তুলতে নির্দেশনা দিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাজনৈতিক সব কর্মকা-েই নিজ নিজ দলের ছাত্রসংগঠনগুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচন ঘনিয়ে এলে রাজনৈতিক অঙ্গনের উত্তাপ ছাত্রসংগঠনগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে।
আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে প্রায় নিয়মিত। সমাবেশ থেকে বিরোধীদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্যও দিতে দেখা যায় সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের। এ ছাড়া তারা তরুণ প্রজন্মকে শেখ হাসিনার পক্ষে রায় দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন নিয়মিত। স্মার্ট বাংলাদেশ, শেখ হাসিনার পক্ষে দেশব্যাপী ক্যাম্পেইন ও ছাত্র সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। তরুণ প্রজন্মের ব্যালট বিপ্লবের ওপর ভিত্তি করে জাতীয় নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মহাকাব্যিক বিজয় উপহার দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এরই অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের মাঠ দখলে রাখার পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ। এই কর্মসূচিতে লাখ লাখ লোকের সমাগম ঘটিয়ে মাঠ দখলে আছে ক্ষমতাসীনদের তার প্রমাণ দেখাতে চায় সংগঠনটি।
সরকার পতন, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠায় এককাট্টা বিএনপির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলসহ সমমনা প্রায় সব কটি ছাত্রসংগঠন। পুরোপুরি দলীয় এক দফায় মনোনিবেশ করেছে ছাত্রদল। দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী, সরকার পতনের দাবিতে রাজপথে নিয়মিত কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে কঠোর বিএনপির হাইকমান্ডও। দায়িত্ব অবহেলার কারণে পদও হারাতে হচ্ছে ছাত্রদল নেতাদের। কেন্দ্রীয় ইউনিট ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় সব বিশ্বিবদ্যালয়-কলেজ শাখা ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক কর্মসূচি বাদ দিয়ে সরকার পতনের আন্দোলনকেই মূল কর্মসূচি হিসেবে পালন করছে। ভোটাধিকার নিশ্চিত ও সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে তবেই ঘরে ফেরার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘ভোটাধিকারের দাবিতে ছাত্র সমাজ’ নামে একটি প্ল্যাটফরম। সারা দেশের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ বিষয়ে জনমত তৈরি করতে চান তারা। এ ছাড়া ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য’ নামে আরেকটি ছাত্রসংগঠনের যাত্রা শুরুর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে ছাত্রদল, ছাত্র অধিকার পরিষদসহ কয়েকটি সংগঠন ঘরোয়া সভায় অংশ নিয়েছে বলে জানা গেছে। শেষ পর্যন্ত এটি আত্মপ্রকাশ করলে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বৃহৎ ছাত্র আন্দোলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্যদিকে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী হাফেজ রেজাউল হত্যাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ইসলামিক কয়েকটি ছাত্রসংগঠন নিয়ে ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ নামে আরেকটি জোট। গত শুক্রবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদ গেটে সমাবেশ করেছে এই জোট। সমাবেশ থেকে এই হত্যার সঙ্গে ছাত্রলীগের জড়িত থাকার অভিযোগ এনে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন তারা। অন্যথায় বৃহত্তর ছাত্র আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বাধীন এই জোট। ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, ইসলামী ছাত্রসমাজ, ইসলামী ছাত্র মজলিস, খেলাফত ছাত্র মজলিস, কওমি ছাত্র ফোরামসহ কয়েকটি সংগঠন রয়েছে এই জোটে।
তা ছাড়া সরকারের পদত্যাগসহ ১৩ দফা দাবিতে সমাবেশ করেছে বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনোভাবেই নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন জোটের নেতারা। তাদের দাবি, মানুষ গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, কিন্তু সেটা এখন নেই। এখন ডিজিটাল আইনের পরিবর্তে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হচ্ছে। সংগ্রামের মাধ্যমে জনগণের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে গঠিত এই জোটে রয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলসহ কয়েকটি বাম ঘরানার ছাত্রসংগঠন।
‘ভোটাধিকারের দাবিতে ছাত্র সমাজের’ সংগঠক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আরমানুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটা রাষ্ট্রে যখন জনগণের ভোটাধিকার থাকে না, তখন সেই শাসন দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে ফেলে। ভোটাধিকার না থাকলে সমাজে গণতান্ত্রিক পরিসর ক্রমাগত সংকুচিত হতে থাকে। আমরা যদি স্থায়ীভাবে জনগণের ভোটাধিকার কায়েম করতে পারি তাহলে দেশে গণতান্ত্রিক পরিসর বৃদ্ধি পাবে।’
গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের সমন্বয়ক ও ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি রাগীব নাঈম বলেন, ‘ছাত্রসমাজ থেকে শুরু করে দেশের সব মানুষ কোনো না কোনোভাবে এই সরকারের অপকর্মের ভুক্তভোগী হচ্ছে। সেই জায়গা থেকে আমরা মনে করি এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা খুবই জরুরি। তাই আমরা এ বিষয়ে ছাত্রদের মাঝে জনমত গড়ার চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে আগামীতেও যাতে এসব কাজ না হয়, সেদিকেও আমরা সচেষ্ট আছি।’
ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ‘আমরা সর্বাত্মকভাবে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আছি। সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০ জুলাই প্রথম “স্টেপডাউন হাসিনা” কর্মসূচি বাস্তবায়ন করি। হামলা-মামলা-নির্যাতন উপেক্ষা করেই সারা দেশের জেলা-মহানগর, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ নব্বইয়ের অধিক ইউনিট নিয়ে আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। নিরাপদ ক্যাম্পাস ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে সব ছাত্রসংগঠনের অংশগ্রহণে আমরা ছাত্র ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছি।’
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের সবচেয়ে বেশি ফোকাসের জায়গা দেশের মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচার সরকারকে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে সরিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকার আনা। যার মাধ্যমে দেশের মানুষ নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে এবং তাদের মৌলিক অধিকার ফিরে পায়।’
তিনি বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনে দেশের সাধারণ জনগণ নির্ভয়ে যেন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে তার ব্যবস্থা করার জন্য ছাত্রদল সমন্বয় সেল গঠন করেছে। নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ দিতে হবে। সেই নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ছাত্রদল সম্পৃক্ত আছে। আমরা তৃণমূল নেতাকর্মীদের বার্তা দিয়েছি, প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান করেছি।’
ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রতি তারুণ্যের যে মমত্ববোধ রয়েছে আমরা মনে করি এটি একটি বড় অ্যাডভান্টেজ। সে জায়গা থেকে আমরা আগামী ১ সেপ্টেম্বর স্মরণকালের সর্ববৃহৎ ছাত্র সমাবেশ আয়োজন করেছি।’ তিনি বলেন, এই সমাবেশের মাধ্যমে তারা একদিকে অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ঘোষণা করবে, একই সঙ্গে স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে আগমনী রায় প্রদান করবে তরুণ প্রজন্ম। তরুণ প্রজন্ম দল-মতনির্বিশেষে শেখ হাসিনার পক্ষে, স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে রয়েছে, সেটির একটি প্রমাণ তারা দেখতে পাবেন। এ ছাড়া আগামীতে সরাসরি তরুণদের সঙ্গে আলাপনের অনুষ্ঠানসহ তারুণ্যকে সম্পৃক্ত করে তারা বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করবেন।
ছাত্রলীগের এই নেতা বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে ক্যাম্পেইন করে দেশব্যাপী আমরা গণজোয়ার তৈরি করতে চাই। সে সুর আমরা ইতিমধ্যে প্রতিধ্বনিত করে যাচ্ছি। তরুণ প্রজন্মের ব্যালট বিপ্লবের ওপর ভিত্তি করে জাতীয় নির্বাচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনাকে অসাধারণ, মহাকাব্যিক বিজয় উপহার দেব।’
মোবাইল ফোন ডিভাইসের কারণে এখন আর আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপাত্ত কেউ মানতেই চায় না। আবহাওয়া অধিদপ্তর যদি কোনো এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করে, মোবাইল ফোন অনুভূত তাপমাত্রা দেখায় এর চেয়ে ৪-৫ ডিগ্রি বেশি; অর্থাৎ বাস্তব অবস্থার সঙ্গে আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপাত্তের ব্যাপক ফারাক। যদিও দিন শেষে আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপাত্তই স্বীকৃত।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া উপাত্তে দেখা যায়, ২০০০ সালের মার্চ মাসে চট্টগ্রাম নগরীতে গড়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৩০ দশমিক ৯ এবং সর্বনি¤œ ২০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই বছরের এপ্রিলে সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ছিল ৩২ দশমিক ৬ এবং সর্বনিম্ন ২২ দশমিক ৭ আর মে মাসে সর্বোচ্চ ৩২ দশমিক ১ ও সর্বনিম্ন ২৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চলতি বছর, অর্থাৎ ২০২৩ সালের মার্চে আবহাওয়া অধিদপ্তর সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৩১ দশমিক ৯ এবং সর্বনিম্ন ২১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এপ্রিলে গড়ে সর্বোচ্চ ৩৪ দশমিক ১ ও সর্বনিম্ন ২৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর মে মাসে গড়ে সর্বোচ্চ ৩৩ দশমিক ২ ও সর্বনিম্ন ২৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে।
উপাত্তগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, গত ২২ বছরে গড়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ব্যবধান এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। যেহেতু দেশে মার্চ থেকে মে মাস সময়কাল সবচেয়ে উষ্ণ, তাই এই তিন মাসের উপাত্তকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু গরমের বাস্তব অবস্থা কি তা সমর্থন করে? এই প্রশ্ন সাধারণের মধ্যে যেমন রয়েছে, তেমনি বিভিন্ন পেশাজীবী ও গবেষকদের মধ্যেও রয়েছে। আর এই প্রশ্নের উত্তর পেতে ‘সঠিক চিত্র’ জানার উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সরকারি এ সংস্থাটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে ১৯৯৫ সালে। ২০১৫ সালে ২০ বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন আরেকটি মাস্টারপ্ল্যান করার কথা। কিন্তু তার অনুমোদন পেতেই পার হয়ে যায় প্রায় পাঁচ বছর। ২০২০ সালে অনুমোদন পাওয়ার পর মাস্টারপ্ল্যানের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান সিডিএর উপপ্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আবু ঈসা আনসারী। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর অঞ্চল বিভাগ থেকে স্নাতক এবং সৌদি আরবের কিং ফাহাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করা এই পরিকল্পনাবিদ সিডিএতে কাজ করছেন ২০০৫ সাল থেকে। প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পাওয়ার পরই পরিবেশ ও জলবায়ু ইস্যুকে গুরুত্ব দিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়-গাছপালা এবং পুকুর-জলাশয়ের গত ৩০ বছরের উপাত্ত তৈরির উদ্যোগ নেন তিনি। আধুনিক প্রযুক্তিতে স্যাটেলাইট চিত্র ব্যবহার করে এ বিষয়ক মানচিত্র তৈরির কাজ শুরু করেন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে। একপর্যায়ে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী চট্টগ্রামের সন্তান মোহাম্মদ সাইমুন ইসলামের খোঁজ পান। আবু ঈসা আনসারী চট্টগ্রামের তাপমাত্রা কেমন বেড়েছে, তা নিয়ে একটি মানচিত্র তৈরি করে দিতে বলেন সাইমুনকে। একই সঙ্গে ধাপে ধাপে সবুজায়ন কীভাবে কমেছে, সেই ম্যাপও তৈরি করার দায়িত্ব দেন। নতুন মাস্টারপ্ল্যান যুগোপযোগী করতেই মানচিত্র করার উদ্যোগ নেন তিনি। এ ছাড়া চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো ৩০ বছরে কীভাবে বিলীন হয়েছে তা নিয়ে গবেষণার জন্য মাস্টারপ্ল্যানের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেন। এই গবেষণার কাজটি করছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিল্লুর রহমান।
সাইমুন ইসলাম স্যাটেলাইট প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে ২২ বছর আগে ২০০০ সালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার তাপমাত্রা, ২০১০ সালের তাপমাত্রা এবং ২০২২ সালের তাপমাত্রার মানচিত্র তৈরি করেন। সেই মানচিত্রে উঠে আসে চোখ কপালে ওঠার মতো সব উপাত্ত। দেখা যায়, ২২ বছরের ব্যবধানে চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও কোথাও তাপমাত্রা সাড়ে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়েছে।
কী আছে সেই ম্যাপে
এই তাপমাত্রা মানচিত্রের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সিডিএর আওতাধীন এলাকার ল্যান্ড সারফেস টেম্পারেচার’ (এলএসটি)। মানচিত্রে পাঁচটি রঙে পাঁচটি অঞ্চলের তাপমাত্রার সীমা চিহ্নিত করা হয়েছে। সবুজ রঙের অঞ্চলে সবচেয়ে কম তাপমাত্রা; তার চেয়ে বেশি হালকা সবুজ; আরেকটু বেশি হলুদ; তারও বেশি কমলা এবং সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রার অঞ্চলকে লাল রং দিয়ে দেখানো হয়েছে। স্যাটেলাইট থেকে তাপমাত্রার এই উপাত্ত নেওয়া হয়েছে মূলত মার্চ, এপ্রিল ও মে এই তিন মাসের।
সিডিএর এই তাপমাত্রা মানচিত্র বলছে, ২০০০ সালের মার্চ-এপ্রিল-মে সময়কালে নগরীর পাথরঘাটা, ফিরিঙ্গীবাজার, সদরঘাট, পাঠানটুলি, আগ্রাবাদ, গোসাইলডাঙ্গা, পাহাড়তলী, সিডিএ মার্কেট, অলংকার, মাদারবাড়ীর বেশিরভাগ এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৪ দশমিক শূন্য ১ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। ২০২২ সালে এসব এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখা যাচ্ছে ৩০ দশমিক ৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৮ দশমিক ৬২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত, অর্থাৎ ২২ বছরের ব্যবধানে এসব এলাকার তাপমাত্রা ৬ থেকে সাড়ে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়েছে।
মানচিত্র অনুযায়ী, নগরীর হালিশহর, ছোটপুল, বড়পুল, নয়াবাজার, চকবাজার, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট ও ইপিজেড এলাকায় ২০০০ সালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২১ দশমিক শূন্য ৮ থেকে ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। ২০২২ সালে গ্রীষ্ম ঋতুর ওই তিন মাসে এসব এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখাচ্ছে ২৮ দশমিক ৯৩ থেকে ৩০ দশমিক ৯১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।
এ ছাড়া নগরীর প্রান্তীয় এলাকায় ২২ বছর আগে তাপমাত্রা ১৬ দশমিক ১ থেকে ২১ দশমিক শূন্য ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকলেও ২০২২ সালে এসে ২৭ দশমিক ৩৭ থেকে ২৮ দশমিক ৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত রেকর্ড হয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরীতে স্থানভেদে তাপমাত্রার এমন অস্বাভাবিক বৃদ্ধির স্যাটেলাইট উপাত্ত তুলে ধরে মন্তব্য চাইলে অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ^বিদ্যালয়ের স্কুল অব আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্সেসের গবেষক ড. আশরাফ দেওয়ান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সারা বিশ্বেই তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ছে। বিশ্বে ১০০ বছরে গড় তাপমাত্রা যেখানে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে, সেখানে চট্টগ্রামে গত ২২ বছরে সাড়ে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি খুবই সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। এটা ঠিক, নগরায়ণের কারণে তাপমাত্রা বেড়েছে। তাই বলে এত বেশি বাড়তে পারে না।’
পাহাড়-গাছ-পানি কমে, তাপমাত্রা বাড়ে
তাপমাত্রার এমন বৃদ্ধি স্বাভাবিক, না অস্বাভাবিক তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সংশয় থাকলেও সিডিএর মানচিত্রটা বিশ্লেষণ করলে একটা বিষয় পরিষ্কার বোঝা যায়। সেটা হলো, বন্দরনগরীর যে এলাকাগুলোয় প্রকৃতি ধ্বংস করা হয়েছে বেশি, সেখানেই তাপমাত্রার বৃদ্ধি অস্বাভাবিক। যেমন পুরনো চট্টগ্রাম বলে খ্যাত আন্দরকিল্লা, আলকরণ, পাথরঘাটা, ফিরিঙ্গীবাজার, সদরঘাট, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ প্রভৃতি এলাকায় পাহাড়-জঙ্গল-গাছগাছালি নেই; দীঘি-পুকুর-জলাশয়ের সংখ্যাও কম। এসব এলাকায় ২২ বছরে তাপমাত্রার বৃদ্ধিও মানচিত্রে অনেক বেশি দেখাচ্ছে। অন্যদিকে বায়েজীদ, খুলশী কিংবা আকবরশাহ এলাকা ২০০০ সালের দিকে পাহাড়ঘেরা ছিল, তাই সবুজের পরিমাণও বেশি ছিল। আর সিডিএর মানচিত্রে ২০০০ সালে এই এলাকায় ২১ দশমিক শূন্য ৮ থেকে ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়। পরে পাহাড়-জলাশয় কমে আসার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ২০১০ সালে এসে তাপমাত্রা বেড়ে ২৩ দশমিক ৬৭ থেকে ২৪ দশমিক ৯৪ ডিগ্রি পর্যন্ত রেকর্ড হয়। তবে তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বেশি বৃদ্ধি পায় পরের ১২ বছরে। এই এলাকাতেই পাহাড় কেটে বানানো হয়েছে প্রায় ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ ডিটি-বায়েজীদ সংযোগ সড়ক। ২০২২ সালে এসে এই সব এলাকার প্রকৃতি পুরো ধ্বংস হওয়ার আর বেশি বাকি দেখা যায় না। আর সিডিএর মানচিত্রেও তাপমাত্রা ৩০ দশমিক ৯২ থেকে ৩৮ দশমিক ৬২ ডিগ্রি সেলসিয়াস দেখাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত মানুষের অবৈজ্ঞানিক কর্মকান্ডের ফলাফল হলো আজকের আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং তার বিরূপ প্রভাব।’
দেশে গত বছর স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। শীতের মৌসুমেও শীত তেমন দেখা যায়নি। এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ কামরুল হাসান বলেন, ‘আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের জন্য প্রকৃতি না যতটুকু দায়ী, মানুষ তার চেয়ে বেশি দায়ী।’ তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রধান মাপকাঠি হলো তাপমাত্রা। আমরা অধিকহারে জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন কয়লা, পেট্রোল, ডিজেল ব্যবহার করছি। এসির ব্যবহার বেড়েছে। এতে বায়ুমন্ডল দ্রুত উত্তপ্ত হচ্ছে; তাপমাত্রা বাড়ছে এবং আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে।’
নগরগুলোতে তাপমাত্রা কমিয়ে আনার জন্য উন্মুক্ত স্থান সংরক্ষণের কথা বলা হলেও তা রাখা হয় না বলে উল্লেখ করেন নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি জেরিনা হোসেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রামের ড্যাপ তৈরির সময় আধা একরের সমান বা বেশি আয়তনের পুকুর বা জলাশয় ভরাট না করা, প্রতিটি ভবনের সামনে-পেছনে পর্যাপ্ত খালি জায়গা রাখা এবং সেখানে সবুজায়ন করার কথা বলেছিলাম। পাহাড় সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এগুলো মেনে না চলার কারণে ক্রমান্বয়ে নগরে তাপমাত্রা বাড়ছে।’
তিনি আরও বলেন, এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি আমাদের নাগরিকদেরও সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন ছিল।
তাপমাত্রা মানচিত্র নিয়ে সিডিএর ভাষ্য
সিডিএর উপপ্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পের পরিচালক আবু ঈসা আনসারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করতে গিয়ে চট্টগ্রামের তাপমাত্রা পরিবর্তনের চিত্রটি তুলে আনতে উদ্যোগ নিই। স্যাটেলাইট ম্যাপের সাহায্যে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২০০০ সাল থেকে বিভিন্ন বছরের উপাত্ত ব্যবহার করে তাপমাত্রার মানচিত্রটি তৈরি করেছি।’
এর সঙ্গে কি আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপাত্তের মিল আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া অধিদপ্তরের কাছে শুধু পুরো শহরের কিংবা যেখানে তাদের যন্ত্র বসানো রয়েছে, সেখানকার তাপমাত্রার উপাত্ত আছে। আর আমরা প্রতিটি পয়েন্টের তাপমাত্রার রেকর্ড নিয়েছি স্যাটেলাইট থেকে। এতে করে শহরের বিভিন্ন এলাকার পৃথক পৃথক তাপমাত্রার উপাত্ত পাওয়া গেছে এবং সেই অনুযায়ী জিআইএস ম্যাপ (জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম ম্যাপ তৈরির একটি সফটওয়্যার) তৈরি করা হয়েছে।’
এই মানচিত্র তৈরির মূল দায়িত্ব পালনকারী সাইমুন ইসলামের কাছে প্রশ্ন ছিল তাপমাত্রা বৃদ্ধি এত বেশি কেন? মানচিত্র কি ঠিক আছে? জবাবে তিনি বলেন, ‘মানচিত্র পুরোপুরি ঠিক আছে। ২০০০, ২০১০ ও ২০২২ সালের মানচিত্র পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যাবে যেখানে একসময় সবুজায়ন ছিল, সেখানে প্রথম দিকে তাপমাত্রা কম ছিল। পরে সবুজ ধ্বংস করায় ২০ বছর পর তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। এটাই প্রমাণ করে, মানচিত্রটি সঠিক।’
কিন্তু আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপাত্তের সঙ্গে পার্থক্য বেশি মনে হচ্ছে। এ বিষয়ে সাইমুন বলেন, ‘তাপমাত্রা বেশি রেকর্ড হওয়ার সুযোগ নেই। তবে স্যাটেলাইট ম্যাপ থেকে তাপমাত্রার উপাত্ত নেওয়া হলে ভূমির তাপমাত্রার তথ্যের কিছুটা পার্থক্য হয়ে থাকে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংশয়
চট্টগ্রাম মহানগরীর কোনো কোনো এলাকার তাপমাত্রা ২২ বছরে ১২-১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তরও। অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কামরুল হাসান বলেন, ‘সবুজ কমে যাওয়া, জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়া কিংবা অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে, এ কথা সত্যি। কিন্তু সিডিএর মানচিত্রে বৃদ্ধির উপাত্তটা একটু বেশি মনে হচ্ছে।’
তাপমাত্রার ক্ষেত্রে স্যাটেলাইট উপাত্ত অনেক সময় সঠিক তথ্য দিতে পারে না উল্লেখ করে কামরুল হাসান বলেন, ‘স্যাটেলাইট উপাত্ত থেকে বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে তাপমাত্রা বের করা হয়। এতে অনেক সময় কিছু ত্রুটি থাকে। সে ক্ষেত্রে আমরা ভূপৃষ্ঠস্থ উপাত্তকে সঠিক বলে মনে করি।’ তবে এলাকাভেদে তাপমাত্রা কোথাও কোথাও বেশি বাড়তে পারে বলে জানান এই আবহাওয়াবিদ।
বিশেষজ্ঞ মত
যুক্তরাজ্য থেকে ‘ল্যান্ড সারফেস টেম্পারেচার অ্যান্ড হিউম্যান থার্মাল কমফোর্ট রেসপন্স টু ল্যান্ড ইউজ ডায়নামিকস ইন চিটাগাং সিটি অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ প্রকাশ হয়েছে গত বছর। সেই প্রবন্ধের সাতজন লেখকের একজন ন্যাশনাল ওশেনোগ্রাফিক অ্যান্ড মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের (নোয়ামি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোহন কুমার দাস। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা গবেষণায় দেখেছি, ১৯৯৩ সালে চট্টগ্রামে গ্রীষ্মে (মার্চ, এপ্রিল ও মে) গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক শূন্য ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২০ সালে সেটা ৪৩ দশমিক ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে; অর্থাৎ ২৭ বছরে চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
দেশে স্যাটেলাইট উপাত্ত নিয়ে গবেষণা করেন বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো)। এ বিষয়ে স্পারসোর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নূর হোসাইন শরীফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কোনো এলাকায় সবুজ ও জলাধার কমে গেলে এবং কংক্রিটের স্থাপনা বেড়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই ওই এলাকায় তাপমাত্রা বাড়বে।’
আইনি মোড়কের আড়ালে চট্টগ্রাম মহানগরীর ‘মোড়ল’ সিডিএ শুধু কি অজ্ঞতা, মূর্খতা, আনারিপনা বা গাফিলতির কারণেই পাহাড়-জঙ্গল-জলাশয়ের সর্বনাশ করেছে? দেশ রূপান্তরের কাছে তা মনে হয় না। অনুসন্ধানকালে এমন কিছু আলামত পাওয়া গেছে, যাতে বোঝা যায়, অনেক ক্ষেত্রে টাকার বিনিময়েও প্রকৃতি ধ্বংসের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে অশুভ চক্রকে। সর্বগ্রাসী ঘুষ-সংস্কৃতির বাইরে নয় এই সংস্থাটিও।
ভুয়া বিলে কর্মীদের পোশাকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বাগান পরিষ্কারের টাকা তুলে পকেট ভরেছেন। খাতায় কর্মচারী দেখিয়ে ৩০ জনের টাকা তুলে নিয়েছেন। আর ঠিকাদারের সঙ্গে আঁতাত করে চারা রোপণ, সীমানাপ্রাচীর তৈরি, হেজবেড ও ফুলের বেড প্রস্তুতের বরাদ্দ হাওয়া করে দিয়েছেন। এসব ঘটনার নায়ক গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান বৃক্ষপালনবিদ শেখ মো. কুদরত-ই খুদা।
গণপূর্তের এই কর্মকর্তার দুর্নীতির বিষয়ে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই সময় তার দুর্নীতির বিষয়ে মুখ খোলেন এক কর্মকর্তা ও কয়েক জন কর্মচারী। তারা হলেন উপবিভাগীয় বৃক্ষপালনবিদ মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, মেকানিক মো. সোলেমান, পাওয়ার লেন মেশিন অপারেটর মো. মিজানুর রহমান, মালি মো. নয়ন মোল্লাহ, সামছু বিশ্বাস, জালাল আহমেদ ও শহিদ মিয়া এবং ফরাশম্যান মো. ইব্রাহিম। এ ঘটনার পর প্রধান বৃক্ষপালনবিদ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দুর্নীতির প্রতিবাদকারীদের একজনকে চাকরিচ্যুত করেন। আর বাকিদের শাস্তিমূলক বদলি করেন। ৭ বছর ধরে চেপে রেখেছেন দুর্নীতির তদন্ত; আর এটা করতে বিপুল অর্থও খরচ করতে হয়েছে তাকে। বার্ষিক বরাদ্দের রক্ষণাবেক্ষণের টাকা নয়ছয় করে সেসব করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় প্রতিবাদকারীরা শাস্তি পেলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধান বৃক্ষপালনবিদের দুর্নীতির বিষয়ে বেশ কিছু অভিযোগ ছিল। সেসবের সবশেষ কী অবস্থা, সেটা আমি যাচাই-বাছাই করে দেখব। দুর্নীতির ঘটনার পরও যদি তদন্তকাজে কোনো বিচ্যুতি থেকে থাকে, তাহলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি দুদক গণপূর্তের বৃক্ষপালন শাখার ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ব্যয়ের সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে তদন্তকাজ শুরু করে। দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত-২ গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী বরাবর এই চিঠি ইস্যু করা হয়। ওই সময় দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা গণপূর্তের বৃক্ষপালন শাখার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা দুদকের কাছে প্রধান বৃক্ষপালনবিদের দুর্নীতির বিষয়ে তথ্য দেন। পরে দুদক একজন কর্মকর্তা ও দুজন কর্মচারীকে চিঠি দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন। এরপর দুদক গণপূর্তের ওই শাখার বেশ কিছু ফাইল তলব করে। কিন্তু তিনি দুদককে সেই সব ফাইল জমা দেননি। পরে দুদক গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে চিঠির মাধ্যমে ওই সব অভিযোগের তদন্ত করে দেখার সুপারিশ করে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার ভিত্তিতে গণপূর্ত অধিদপ্তর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির কাছেও ওই সব ফাইলের তথ্য দেয়নি। এর প্রমাণ পাওয়া যায় ২০১৬ সালের ১৯ জুন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের শাখা-১ থেকে ইস্যু করা এক চিঠিতে। তৎকালীন উপসচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের সার্কেল-১-এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জামিলুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেশ আগের ঘটনা। তা ছাড়া তার ব্যাপারে কয়েকটি অভিযোগের তদন্ত হয়েছে। কোনোটার তথ্য-উপাত্ত দিয়েছে, আর কোনোটির দেননি। সেটা মনে করতে পারছি না।’
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, প্রধান বৃক্ষপালনবিদ শেখ মো. কুদরত-ই খুদাকে ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি ওই সব কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছিল। দুদকের চাহিদার বিষয়ের মধ্যে ছিল ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ভুয়া পোশাক ভাতা বিলের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা উত্তোলন, কাজ না করে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নতা খাতের ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৩৯৯ টাকা আত্মসাৎ, সীমানাপ্রাচীর ও বহিঃবিভাগে হেজবেড এবং ফুলের বেড প্রস্তুত, চারা রোপণসহ বিভিন্ন খাতের ১৩ লাখ ৭৭ হাজার ৭২ টাকার কাজ না করে বিল উত্তোলন, ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঘাস কর্তন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং নার্সারির উন্নয়ন কার্যক্রম এবং শিখা চিরন্তন এলাকায় ফুলের বেড প্রস্তুত ও চারা রোপণের হিসাব, বাংলাদেশ সচিবালয়ের ১ নম্বর ভবন, ২ নম্বর ভবন, ৩ নম্বর ভবন, ৪ নম্বর ভবন, ৮ নম্বর ভবন, ৯ নম্বর ভবনসংলগ্ন মাঠে গ্রীষ্ম ও শীতকালীন মৌসুমি ফুলের বেড প্রস্তুত ও চারা রোপণের তথ্য-উপাত্ত, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের আরবরিকালচার (বৃক্ষপালন শাখার) কর্মীদের পোশাকের নথি এবং বাংলাদেশ সচিবালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর দিকের সীমানাপ্রাচীরের বহিঃবিভাগ হেজবেড প্রস্তুত ও চারা রোপণ এবং শাখাতে চারা কলম উৎপাদনের হিসাব, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটের ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন প্রাঙ্গণে গ্রীষ্ম ও শীতকালীন মৌসুমের ফুলের বেড প্রস্তুত ও চারা রোপণ এবং পূর্ত ভবন প্রাঙ্গণের ফুলের বেড প্রস্তুত ও চারা রোপণ ও শোভাবর্ধন গাছ সরবরাহকরণ এবং ইস্কাটন গার্ডেনে উচ্চপদস্থ সরকারি বাড়ির আঙিনায় শীতকালীন মৌসুমি ফুলের বেড প্রস্তুত ও চারা রোপণের খরচের হিসাব।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, দুদকের কাছে প্রধান বৃক্ষপালনবিদের বিষয়ে দুর্নীতির তথ্য দেওয়ায় নানা হয়রানির শিকার হয়েছেন গণপূর্ত উপবিভাগ-১-এর আরবরিকালচারের মেকানিক মো. সোলেমান। ২০১৬ সালের ৩ মে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ। কিছুদিন পর তাকে ঢাকা থেকে চাঁদপুরে বদলি করা হয়। তার পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় বসবাস করায় ২০১৯ সালের আগস্টে বদলি হয়ে ঢাকায় আসেন। আগের আক্রোশে ২০২২ সালের মার্চে পুনরায় তাকে সাতক্ষীরায় বদলির আদেশ করেন। এ ঘটনার প্রতিকার পেতে শ্রম আদালতে মামলা করেন মেকানিক সোলেমান। এরপর আদালত থেকে নোটিস ইস্যু হলে প্রধান প্রকৌশলীর হস্তক্ষেপে তার বদলির আদেশ স্থগিত করা হয়েছে।
জানতে চাইলে মেকানিক মো. সোলেমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ প্রধান বৃক্ষপালনবিদ দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অনেক দুর্নীতি করেছেন। কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দকৃত পোশাক, জুতা, ছাতাসহ অন্যান্য বরাদ্দ মেরে দিয়েছেন। দপ্তরের জনবল দিয়ে কাজ করিয়ে সেসব কাজ বাবদ ঠিকাদারকে দিয়ে বিল করিয়ে টাকা তুলে নিয়েছেন। তার দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ হয়ে অধীন কর্মচারী হয়েও তার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছি। তিনি বলেন, দুদকে সাক্ষ্য দেওয়ার পর কেটে গেছে প্রায় ৭ বছর। কিন্তু যিনি দুর্নীতি করলেন তার কিছুই হলো না; যারা প্রতিবাদ করলাম, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে সাক্ষ্য দিলাম, আমরা হয়রানির শিকার হচ্ছি। আর দুর্নীতিবাজ স্বপদে রয়েছেন বহাল তবিয়তে। ’
তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা যায়, গণপূর্তের বৃক্ষপালন বিভাগে মালি হিসেবে কর্মরত ছিলেন মো. নয়ন মোল্লা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের কর্মী হিসেবে অবসরে গেছেন। প্রধান বৃক্ষপালনবিদের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে দুদকে সাক্ষ্য দিয়েছেন। মো. নয়ন মোল্লা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা কয়েকজন দুদকের কাছে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেছিলাম। এরপর দুদক ডেকেছিল, সেখানেও সত্য ঘটনা বলে এসেছি। কিন্তু প্রধান বৃক্ষপালনবিদকে দুদক চিঠি দেয় ফাইল দিতে; কিন্তু তিনি তা দেননি। পরে দুদক মন্ত্রণালয়কে তদন্ত করার সুপারিশ করে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গণপূর্ত অধিদপ্তর তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেখানেও ফাইলপত্র জমা দেয়নি। এরপরও তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।’
২০১৬ সালে গণপূর্তের বৃক্ষপালন শাখার রমনা এলাকার পাওয়ার লন মেশিন অপারেটরের দায়িত্বে ছিলেন মিজানুর রহমান। প্রধান বৃক্ষপালনবিদের দুর্নীতির তথ্য দুদকের প্রতিনিধির কাছে বলে দেওয়ায় তাকে গোপালগঞ্জে বদলি করেন। চলতি বছরের জুন মাসে ঢাকায় বদলি হয়েছেন। ঢাকায় পরিবার-পরিজন রেখে সাত বছর গোপালগঞ্জে কেটেছে তার। দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় শাস্তি পাওয়া এই কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি সে সময় গণপূর্ত বৃক্ষপালন শাখা শ্রমিক লীগের সভাপতি ছিলাম। আমি নিজ থেকে দুদকে কোনো কিছু জানাইনি। দুদকের প্রতিনিধি এলে আমরা তার কাছে সত্য তুলে ধরেছি।’
গণপূর্তের বৃক্ষপালন শাখার উপবিভাগীয় বৃক্ষপালনবিদ মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। বর্তমান চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৬ সালে দুদক অনুসন্ধানে নেমে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছিল। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধান বৃক্ষপালনবিদ তার অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবহার করে এই কর্মকর্তাকে রাজশাহীতে বদলি করেন।
জানতে চাইলে মো. মোয়াজ্জেম হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বছরে এই বিভাগে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকে। এই বরাদ্দের বড় একটি অংশ তিনি ভুয়া বিল-ভাউচার করে লুটপাট করছেন। কুদরত সাহেব টাকা-পয়সা খরচ করে দুর্নীতির তদন্ত ধামাচাপা দিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন। আর আমাকেসহ দুর্নীতির প্রতিবাদকারীদের নানাভাবে হয়রানি করছেন।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে গত জুলাই ও চলতি আগস্ট মাসে ৩ দিন প্রধান বৃক্ষপালনবিদ শেখ মো. কুদরত-ই খুদার কার্যালয়ে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার অফিসের কর্মীরা জানান, তিনি দিনে একবার অফিসে আসেন। ১০ থেকে ৩০ মিনিট অফিসে থাকেন; এরপর চলে যান। কোনো দিন কখন আসবেন তা কেউ বলতে পারে না। এরপর তার ব্যক্তিগত নম্বর সংগ্রহ করে কয়েক দিন ফোনে চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনের বিষয়গুলো তুলে ধরলে তিনি কোনো ব্যাখ্যা না দিয়ে প্রতিবেদনটি না করার অনুরোধ জানান।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের মিরপুরের পরিদর্শন বাংলো সংস্কারকাজ না করলেও ঠিকাদারকে পুরো বিল পরিশোধ করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী। ঠিকাদার ও প্রকৌশলীর আঁতাতে এমন ঘটনা ঘটেছে। এতে সরকারের গচ্চা গেছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। এ তুঘলকি-কা-ের নায়ক গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নু।
দুর্নীতির খবর জানাজানি হলে মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এরপর তড়িঘড়ি করে ওই প্রকৌশলী ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নতুন করে বাংলোর সংস্কারকাজ শুরু করে। বিষয়টি বুঝতে পেরে গণপূর্ত বিভাগ ওই বাংলো সিলগালা করে দেয়। পরে ওই চক্র প্রভাবশালী মহলের মাধ্যমে চাপ দিয়ে বাংলোর সিলগালা খুলে দিতে আবেদন করায় গত বৃহস্পতিবার এক অফিস আদেশ জারি করেছে। শুক্র ও শনিবার সরকারি বন্ধ থাকায় আজ সিলগালা খুলে দিতে পারে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গণপূর্তের মিরপুর ডিভিশনের পূর্ত সার্কেলের আওতায় পরিদর্শন বাংলো সংস্কারে সরকারি অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে শহীদুল খন্দকার নামে এক ব্যক্তি মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে মন্ত্রণালয় ঘটনাস্থল অনুসন্ধান করতে এক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন। গত ২১ আগস্ট তিনি ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি দেখতে পান, বাংলোর সংস্কারে কোনো কাজ হয়নি। দরপত্রের শর্ত মোতাবেক ওই ভবনের দোতলায় অবস্থিত সিঁড়ির পূর্বপাশে পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত কক্ষ ৭ ও ৮ নম্বর রুমকে পরিদর্শন বাংলোয় রূপান্তরের কথা। আর তা করতে আনুষঙ্গিক সংস্কার ও মেরামত ২০২২-২৩ অর্থবছরে অর্থ বরাদ্দ করা হয়। তবে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত করার বিষয়টি জানতে পেরে দুজন শ্রমিক নিয়োজিত করেছেন তারা। তাদের তড়িঘড়ি করে কাজ করতে দেখেন। সেসব দৃশ্যের ভিডিও চিত্রও ধারণ করেছেন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। মৌখিকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তদন্তকাজ শেষ হওয়ার আগে আর কোনো কাজ না করতে নির্দেশনাও দেওয়া হয়। এরপরও গোপনে ওই পরিদর্শন বাংলোর সংস্কার ও মেরামতের কাজ চলমান ছিল বলে জানতে পারে মন্ত্রণালয়। পরে বাধ্য হয়ে মন্ত্রণালয় ওই কক্ষগুলো সিলগালা করে দেয়। মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যু করা ২৩ আগস্টের এক পত্রে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (সংস্থাপন) আহমেদ আব্দুল্লাহ নূর ও নির্বাহী প্রকৌশলী (ই/এম) পবিত্র কুমার দাশের উপস্থিতি ওই পরিদর্শন বাংলোর কক্ষগুলো সিলগালা করা হয়। প্রভাব খাটিয়ে পরিদর্শন বাংলোর সিলগালা খুলে দেওয়ার চিঠি ইস্যু করেছে মন্ত্রণালয়। ওই দিনও অর্থাৎ, আজ রবিবার তাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গণপূর্তের সংস্থাপন শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ আব্দুল্লাহ নূর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মিরপুরের পরিদর্শন বাংলোয় সিলগালা করার সময় আমি উপস্থিত ছিলাম। বৃহস্পতিবার আবার সিলগালা খুলে দেওয়ার চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি থাকায় হয়তো রবিবারে সিলগালা খুলে দেওয়া হতে পারে।’
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার সময় মিরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে ছিলেন সাইফুজ্জামান চুন্নু। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। বিগত অর্থবছরের মাঝামাঝি সময় কোনো কাজ ছাড়াই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পুরো বিল পরিশোধ করেন তিনি। বর্তমানে গণপূর্তের ঢাকা ডিভিশন-৪-এর দায়িত্ব পালন করছেন। জানতে চাইলে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিছু ভুল বোঝাবুঝির কারণে মিরপুর পরিদর্শন বাংলো সিলগালা করেছিল মন্ত্রণালয়। পরে আবার আরেক আদেশে সিলগালা খুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কাজ শেষের আগে বিল পরিশোধ করেছিলেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে কিছু না বলেই সংযোগ কেটে দেন তিনি।’
গণপূর্ত সূত্রে জানা গেছে, সরকারি সব ধরনের দরপত্রে কাজ শেষে বিল দেওয়া হয়ে থাকে। এটা কার্যাদেশের শর্তেও লেখা থাকে। কাজ না করে বিল দেওয়া আইনত দ-নীয় অপরাধ। সে হিসেবে প্রকৌশলী চুন্নু ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উভয়ই শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে। মন্ত্রণালয় সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পরও কোনোভাবে এটি এড়িয়ে যেতে পারেন না।
গণপূর্তের সদর দপ্তর ও মিরপুর কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন প্রকৌশলীর কাছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে চাইলে কেউ নাম বলতে রাজি হননি। ওই সময়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নুর কাছে জানতে চাইলেও তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম বলেননি। এ বিষয়ে জানতে মিরপুর গণপূর্তের বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ আহসানের ব্যক্তিগত নম্বরে ফোন করে এবং খুদেবার্তা (এসএমএস) পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি। মিরপুর গণপূর্তের উপসহকারী প্রকৌশলী এবং পরিদর্শন বাংলো এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের ব্যক্তি নম্বরে একাধিকবার ফোন করে এবং খুদেবার্তা (এসএমএস) পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।
এ প্রসঙ্গে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মিরপুর বাংলোর সংস্কারকাজ না করিয়ে বিল পরিশোধের একটি অভিযোগ এসেছে মন্ত্রণালয়ে। সেটা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বরিশালের শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে (শেবাচিম) র্যাগিংয়ের নামে ছাত্রী নির্যাতনের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। গতকাল শনিবার সকালে কলেজ অধ্যক্ষের কাছে বিচার চাইতে গিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে বক্তব্য দিচ্ছিলেন নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রীর মা। এ সময় কলেজের অধ্যক্ষ ফয়জুল বাশার, মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ বাকী বিল্লাহ ও প্যাথলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রবীর কুমার সাহা সাংবাদিকদের মারধর করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হামলার শিকার সাংবাদিকরা হলেন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের স্টাফ রিপোর্টার কাওছার হোসেন রানা ও ক্যামেরা পারসন রুহুল আমিন, এশিয়ান টেলিভিশনের রিপোর্টার ফিরোজ মোস্তফা ও ক্যামেরা পারসন আজিম শরিফ, বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ব্যুরোপ্রধান মুশফিক সৌরভ, সময় টেলিভিশনের রিপোর্টার শাকিল মাহমুদ ও ক্যামেরা পারসন সুমন হাসান।
জানা গেছে, শেবাচিমের ছাত্রী হলের ৬০৬ নম্বর কক্ষে তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে গত বৃহস্পতিবার রাতে র্যাগিংয়ের নামে দুই দফায় নির্যাতন করা হয়। তাকে কক্ষে ডেকে নিয়ে দীর্ঘ সময় দাঁড় করিয়ে রেখে গালাগাল, হুমকি এবং মোবাইল ফোন তল্লাশি করা হয়। এতে ওই ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কলেজের ডেন্টাল সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাহমিদা রওশন ওরফে প্রভা এবং ৫০তম ব্যাচের নীলিমা হোসেন ওরফে জুঁইয়ের
নেতৃত্বে এই নির্যাতন চলে বলে অভিযোগ করেন নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর মা। নির্যাতনের সময় তারা নিজেদের ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে পরিচয় দেন। এ ঘটনার বিচার দাবিতে নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর মা গতকাল সকালে কলেজ অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এ সময় হঠাৎ গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলা হয়। হামলার শিকার সাংবাদিকদের অভিযোগ, কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ফয়জুল বাশারের নির্দেশে এ হামলায় অংশ নেন কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ বাকী বিল্লাহ ও প্যাথলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রবীর কুমার সাহা। একপর্যায়ে ক্লাস থেকে ছাত্রদের ডেকে এনে সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি গায়ে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয় অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে। আর অধ্যক্ষের কার্যালয়ের গেট বন্ধ করে নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর অভিভাবককে প্রায় এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। অন্যদিকে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তি দাবি জানিয়ে সাংবাদিকরা অবস্থান করেন অধ্যক্ষের কার্যালয়ের গেটের সামনে। পরে দুপুর ১টার দিকে অধ্যক্ষের কার্যালয়ের গেট খুলে ভেতরে ঢোকেন পুলিশ সদস্যরা। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, সাংবাদিক সংগঠনের প্রতিনিধি ও চিকিৎসকদের মধ্যে সমঝোতা বৈঠক হয়। বৈঠকে অধ্যক্ষ ফয়জুল বাশার ক্ষমাপ্রার্থনা করেন।
নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর মা সাংবাদিকদের বলেন, ‘কলেজের সিনিয়র আপু নীলিমা হোসেন জুঁই তার রুমে আমার মেয়েকে ডেকে নিয়ে এক রাতে র্যাগিংয়ের নামে দুবার নির্যাতন করেছে। হাতের মোবাইলটা পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছে। প্রথম ৯টায় ডেকে নিয়ে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত নির্যাতন করেছে। পরে আবার মধ্যরাতে ডেকে নিয়েছে। শেষ পর্যন্ত মেয়েটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আর আমাকেও কলেজের মধ্যে বসিয়ে রাখা হয়েছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। আর কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে যেন এমন না হয়।’
হামলার শিকার সময় টেলিভিশনের রিপোর্টার শাকিল মাহমুদ বলেন, ‘এক ছাত্রী র্যাগিংয়ের শিকার হয়েছেন। তার মা কলেজ অধ্যক্ষের কাছে বিচার চাইতে গিয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ায় উল্টো সাংবাদিকদের পেটানো হয়েছে। অকথ্য ভাষায় গালাগাল, গায়ে হাত তোলা হয় সাংবাদিকের। পেটানো হয় চেয়ার দিয়ে।’
হামলার শিকার আরেক সাংবাদিক এশিয়ান টিভির ফিরোজ মোস্তফা বলেন, ‘দুই শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের অভিযোগ ওঠে। আমরা আজ (গতকাল) ক্যাম্পাসে সংবাদ সংগ্রহে আসি। একপর্যায়ে জানতে পারি ওই দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবকও কলেজে অবস্থান করছেন। পরে অভিভাবকদের কথা শুনতে গেলেই কলেজ অধ্যক্ষ ডা. ফয়জুল বাশারসহ তার দলবল আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।’
হামলার শিকার সাংবাদিক কাওসার হোসেন রানা বলেন, ‘আমরা কলেজে সংবাদ সংগ্রহে আসি। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আমাদের ওপর কলেজ অধ্যক্ষ ও দুই শিক্ষক হামলা চালায়। ক্যামেরার ট্রাইপড ও ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়েছে।’
চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ক্যামেরা পারসন রুহুল আমিন বলেন, ‘আমাকে চেয়ার দিয়ে মারা হয়েছে। এতে আমার ক্যামেরা ও ট্রাইপড ভেঙে গেছে।’
এদিকে এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বরিশালের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন। পাশাপাশি ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শেবাচিমের অধ্যক্ষ ফয়জুল বাশার বলেন, ‘সাংবাদিকদের সঙ্গে যে বিষয়টি ঘটেছে তা অনাকাক্সিক্ষত। ভুল বোঝাবুঝির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। সাংবাদিক ভাইদের সঙ্গে বসে বৈঠকে বিষয়টির সমাধান হয়ে গেছে। আর র্যাগিংয়ের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার মো. আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, ‘এমন একটি ঘটনা ভুল বোঝাবুঝির কারণে হয়েছে। আমরা দুপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি সমাধান করেছি। কেউ কোনো আইনি পদক্ষেপে যায়নি।’
দেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকার অভিযোগে কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কারও নাম উল্লেখ করা না হলেও যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তাদের বিষয়ে বলা হয়, তারা সরকারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বিচার বিভাগের সদস্য এবং নিরাপত্তা সংস্থার সদস্য।
যাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে, সেসব ব্যক্তি বা তাদের পরিবারের সদস্যরা হয়তো যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
সেখানে আরও বলা হয়, ভবিষ্যতে আরও কোনো ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া ক্ষুন্ন করা বা এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেলে তারাও একই ভিসানীতির আওতায় পড়তে পারেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপ বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যের প্রতি সমর্থনকে প্রতিফলিত করে। একই সঙ্গে এ পদক্ষেপ যারা সারা বিশ্বে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চান তাদের প্রতিও সমর্থন।’
সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন সমর্থন জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে। ওই সময় দেওয়া বিবৃতিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বাধা হওয়া ব্যক্তি ও তাদের আত্মীয়স্বজনরা এ নীতির আওতায় পড়বে বলে জানানো হয়েছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তিন মাস আগে মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ শুরুর কথা জানাল।
ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা দেওয়ার পর ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা যখন এ ভিসানীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা এসব ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি।’
ব্রায়ান শিলারকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকাদের সঠিক সংখ্যা না জানালেও এটি খুব বড় নয় বলে গণমাধ্যমকে বলেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। গতকাল রাতে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসায় তার সঙ্গে কথা বলেন সাংবাদিকরা। এ সময় শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘এটার বিষয়ে দুদিন আগেই জানিয়েছিল। এটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও তারা কথা বলেছে। আমাদের সংখ্যা সম্বন্ধে একটা ধারণা দেওয়া হয়েছে। তারা যদি না বলেন, মার্কিন দূতাবাস হয়তো বলতে পারবে। তবে সংখ্যাটি বড় নয়, ছোট এটা বলতে পারি।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, আমরা আশা করব সেটা সঠিক তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করেই নেওয়া হয়েছে। আমাদের সরকারের কেউ এটার আওতায় পড়লে আমরা এটা জানব। এতে সরকারের কাজে সমস্যা তৈরি হলে পরবর্তী সময়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আমরা কথা বলব। এর আগেও, অন্তত তিনজনের বিষয়ে আমাদের কাজ করতে হয়েছে। আমরা সাকসেসফুল হয়েছি। কাজেই এ নীতির ফলে কার্যক্রমে সমস্যা হলে, সেগুলো আমরা জানলে, সেটা নিয়ে মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা কথা বলব।’
আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আর কোনো নিষেধাজ্ঞা আসবে না বলে মনে করছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আরও নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে কি না, এক সাংবাদিকের এ প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মনে করি না যে নির্বাচনের আগে আর কোনো ধরনের বিবৃতিও আপনারা দেখতে পাবেন। কারণ, আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি যে, এ সেনসেটিভ (স্পর্শকাতর) সময়ে এই ধরনের পদক্ষেপ বা বিবৃতি ইন্টারফারেন্স (হস্তক্ষেপ) হিসেবে মনে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্র না চাইলেও বাংলাদেশে ভোটের আগে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তাদের এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্রভাব ফেলবে সে বিষয়টি তাদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান শাহরিয়ার আলম। এরপর এ বিষয়ে মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছেন বলে জানান তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছেন। এ বিষয়ে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উল্লেখ্য, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের গতকালের বিবৃতি সরকারের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করল। এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন চিঠি দিয়ে নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি দল আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পৃথিবীব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি রয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচন বাধাগ্রস্তের বিষয়ে যে কথা বলেছে, এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। তাদের এখতিয়ারের ব্যাপার। এটাকে খারাপ বা ভালো হিসেবে নেওয়ার সুযোগ আমাদের নেই।’
ভিসানীতি প্রয়োগের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে যেহেতু সরকারি দল, সরকারি কর্মকর্তা এবং বিরোধী দল রয়েছে, তাই শুধু আমরা চাপ অনুভব করব কেন? আর এখানে চাপ অনুভব করার কারণ নেই। তারা যদি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এ নীতিমালা প্রয়োগ করতে চায় বা করে, তাদের চাওয়া এবং আমাদের চাওয়ার মধ্যে তো কোনো পার্থক্য নেই। কারণ আমরা তো সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমেরিকা যেমন স্যাংশন দিতে পারে, চাইলে আমরাও তো দিতে পারি। নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে তাতে আওয়ামী লীগের বা সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। এখানে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমেরিকা চায় অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। আমরাও তাই চাই।’
ভিসানীতি প্রয়োগের ঘোষণার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে কি না, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় না কোনো চাপ আমাদের ওপর আছে। কারণ আমাদের একটাই কথা আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। আমরা সেটাই করব।’
শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমি মনে করি এমন ভিসানীতি তারা যদি ২০১৪ ও ’১৮ সালে সংসদ নির্বাচনের আগে দিত, তাহলে বিএনপি দেশজুড়ে জ¦ালাও-পোড়াও করতে পারত না। করতে ভয় পেত।’
বিএনপি নেতারা বলেছেন, তারা সবসময় সরকারকে সতর্ক করে আসছেন। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছেন। কিন্তু সরকার তাতে গুরুত্ব না দিয়ে আবারও একতরফা নির্বাচনের পথে হাঁটছে। তার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার এ পদক্ষেপ নিয়েছে।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শুধুই নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়টি শুনেছি। কার কার বিরুদ্ধে দিয়েছে, সে বিষয়টি তারা স্পষ্ট করেনি। খোঁজখবর নিয়ে পরে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাব।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় যাদের নাম রয়েছে, তাদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রয়েছে বলে শুনেছি। চলতি মাসে আরও নাম আসবে বলে শুনতে পাচ্ছি।’
বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক ও পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির সদস্য মো. আসাদুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা যতদূর জানতে পেরেছি ভিসা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়েছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দল।’
যে শহরে উপমহাদেশের প্রথম টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও দেশের আমদানি-রপ্তানির ৯২ শতাংশ কার্যক্রম হয়, সেই শহরে ৫৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের একটিরও প্রধান কার্যালয় নেই। বাণিজ্য ও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের সরকারি সিদ্ধান্তের জন্য ব্যবসায়ীদের ঢাকায় দৌড়াতে হয়। সে কারণে একসময় অনেক বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান কার্যালয় চট্টগ্রামে থাকলেও এখন আর নেই। বাণিজ্যিক রাজধানী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকলেও বন্দরনগরী ক্রমেই জৌলুস হারাচ্ছে। যদিও চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী ঘোষণা করার কথা হয়েছিল।
সাগর-নদী-পাহাড়ের চট্টগ্রাম শহরে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বাড়বে কি, নালায় পড়ে মারা যায় মানুষ। সামান্য বৃষ্টিতে পানি জমে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বৃষ্টি ছাড়াও নালা আটকে গুরুত্বপূর্ণ জিইসি মোড়ে দুদিন রাস্তায় পানি জমে থাকে। পাহাড় কাটা, সবুজ বিনাশ, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, পুকুর ও জলাশয় ভরাটের মাধ্যমে চট্টগ্রাম যেমন প্রাকৃতিকভাবে শ্রীহীন হয়ে পড়ছে, তেমনিভাবে অর্থনৈতিকভাবেও পিছিয়ে পড়ছে।
এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি জেরিনা হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের সদিচ্ছার অভাব কিংবা তাদের অবহেলাও হতে পারে। এ শহরের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই। একটি শহরের নাগরিক সুযোগ-সুবিধাগুলো দিন দিন তলানিতে চলে যাচ্ছে। আমাদের কর্তৃপক্ষগুলো চেয়ারে বসে কিছুই করতে পারছে না। অপরিকল্পিত উন্নয়নের বলি হচ্ছে চট্টগ্রাম।’
জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ১০ হাজার ৮০২ কোটি টাকার তিনটি প্রকল্প চলমান থাকলেও বৃষ্টি হলেই কেন নগরবাসীকে ডুবতে হবে? এ তিন প্রকল্পের মধ্যে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে হওয়ার পরও জলাবদ্ধতার তেমন কোনো উন্নতি নেই। এখন প্রশ্ন উঠছে সমন্বয়হীনতার কথা। এ সমন্বয় কে করবে?
জিইসি মোড় বর্তমানে চট্টগ্রামের ব্যস্ততম এলাকাগুলোর একটি। এ মোড়েই গত ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর টানা দুদিন পানি জমা ছিল। সামান্য বৃষ্টিতেই এ শহরের রাস্তাঘাট ডুবে যায়, অনেক এলাকায় টানা কয়েক দিন পানিবন্দি থাকে মানুষ। চলতি বছর একাধিকবার ডুবেছে নগরী।
পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি থাকায় প্রতি বছর পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঘটছে। গত কয়েক বছরে ছয়জনের প্রাণহানি ও নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে নালা ও খালে পড়ে। এসব সমস্যা কে সমাধান করবে তা নিয়ে নগরীর দুই প্রধান সংস্থা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) একে অন্যকে দোষারোপ করতেই ব্যস্ত।
পরিবেশকর্মী শরীফ চৌহান বলেন, ‘এ শহরের পাহাড় কাটা বন্ধ করা গেলে চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেমন অটুট থাকবে, তেমনিভাবে জলাবদ্ধতা দুর্ভোগও কমে আসবে। কারণ পাহাড় কাটা মাটি নালা ও খালে গিয়ে তা ভরাট করে ফেলছে। ভরাট হয়ে যাচ্ছে কর্ণফুলী নদী। ফলে পানি নামতে পারছে না।’
কিন্তু পাহাড় কাটা তো বন্ধ হয় না, গত ৪০ বছরে সাবাড় হয়েছে ১২০টি পাহাড়। এর মধ্যে সিডিএ নিজেই কেটেছে ১৬টি পাহাড়।
চট্টগ্রামের সমুদ্র উপকূলকে ব্যবহার করে গড়ে উঠেছিল শিপব্রেকিং ইয়ার্ড। কিন্তু জাহাজ কাটতে পরিবেশ অধিদপ্তর, বিস্ফোরক অধিদপ্তর ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য ঢাকায় যেতে হয়। এতে সময়ের পাশাপাশি অর্থেরও অপচয় হয়ে থাকে। যত আগে জাহাজ কাটা যায়, অর্থনৈতিকভাবে ততই লাভবান হওয়া যায়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিপব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট-৩ এবং পিএইচপি রিসাইক্লিং ইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল ইসলাম রিংকু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৮ সালের শিপ রি সাইক্লিং অ্যাক্ট অনুযায়ী, শিপ রিসাইক্লিং বোর্ড চট্টগ্রামে হওয়ার কথা। আর এটা হলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা এ বোর্ডে থাকবেন। তখন আর অনুমোদনের জন্য ঢাকায় বিভিন্ন সংস্থার কাছে যেতে হবে না।’
শুধু শিপ রি সাইক্লিং ক্ষেত্রই নয়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের ৯২ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সম্পন্ন হলেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত, কাস্টমসের বিভিন্ন কায়িক পরীক্ষা, বিএসটিআইয়ের বিভিন্ন পরীক্ষা ঢাকা থেকে করাতে হয়। এ বিষয়ে চিটাগাং চেম্বারের পরিচালক এবং নাহার অ্যাগ্রোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাকিবুর রহমান টুটুল বলেন, ‘চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক হাব হলেও সবকিছু অনুমোদন ঢাকা থেকে নিতে হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাংকিং লেনদেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সব ব্যাংকের সদর দপ্তর ঢাকায়। যথারীতি অবহেলিত চট্টগ্রাম।’
ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রামে কেউ ব্যবসা-বাণিজ্য বা শিল্পকারখানা স্থাপন করতে চাইলে তাকে বারবার ঢাকায় যেতে হয়। ব্যাংকঋণ থেকে শুরু করে আমদানি-রপ্তানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনুমোদনের জন্য ব্যবসায়ীদের এ দৌড় এখনো থামেনি। একটিরও ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় চট্টগ্রামে নেই। একসময় পূবালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় চট্টগ্রামে থাকলেও এখন নেই। এ ছাড়া বিদেশি ব্যাংক এএনজেড গ্রিন্ডলেজ ব্যাংকের প্রথম শাখাও ছিল চট্টগ্রামে। বহুজাতিক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রথম শাখা ছিল চট্টগ্রামে। বহুজাতিক কোম্পানি ইস্পাহানি গ্রুপ কলকাতা থেকে প্রথম চট্টগ্রামেই তাদের ব্যবসা স্থানান্তর করেছিল। বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, বার্জার, ডানকান ব্রাদার্সসহ অনেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় ছিল চট্টগ্রামে। শুধু বহুজাতিক কোম্পানি নয়, আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের সদর দপ্তর ছিল চট্টগ্রামের সিআরবিতে। এখন পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের প্রধান অফিস চট্টগ্রামে থাকলেও রেলওয়ের প্রধান অফিস ঢাকায়। অর্থাৎ সরকারি ও বেসরকারি সবদিক দিয়েই পিছিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম।
দেশে পোশাক খাতের যাত্রা এ চট্টগ্রামের কালুরঘাটের দেশ গার্মেন্টসের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সুবিধার অভাবের কারণে পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা এখন ঢাকাকেন্দ্রিক। এ ছাড়া রড তৈরির প্রথম কারখানাও ১৯৫২ সালে চট্টগ্রামে হয়েছিল। ঢেউটিন তৈরির জন্য কোল্ড রোল মিলস, বিলেটসহ ইস্পাত কারখানা চিটাগং স্টিল মিলস ছিল চট্টগ্রামেই। মোটরগাড়ি, ফ্রিজ, পেপার মিলস অনেক কারখানার গোড়াপত্তন চট্টগ্রাম থেকে হলেও এখন সেই সুদিন আর নেই।
সম্ভাবনার চট্টগ্রাম : ৩০ হাজার একর জায়গায় গড়ে উঠছে মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর। এখানে প্রায় ১৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। জাপান ও চীনের সরাসরি বিনিয়োগ থাকছে এ শিল্পনগরে। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর দেশের আগামীর অর্থনীতির ভিত্তি। এখানে চীন ও জাপান সরাসরি বিনিয়োগ করছে। এ ছাড়া অন্যান্য দেশও এগিয়ে আসছে। চালু হচ্ছে কর্ণফুলীর নিচ দিয়ে টানেল। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামে বিশাল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।’
চট্টগ্রামকে উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, বে টার্মিনাল, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে যে অর্থনৈতিক কর্মকা- হচ্ছে, এতে বিনিয়োগকারীদের চট্টগ্রামে আসতেই হবে। এখন আমাদের প্রয়োজন কানেকটিভিটি বাড়ানো।’
একই মন্তব্য করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মইনুল ইসলাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মিরসরাইয়ে যে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর হচ্ছে এর সঙ্গে সাগরের পাড় ঘেঁষে টানেল হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়কটি বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে চট্টগ্রামের কার্যকারিতা বাড়বে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে চট্টগ্রাম, আনোয়ারা, মহেশখালী ও কক্সবাজার ঘিরে যে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, সেগুলো চালু হলে চট্টগ্রামই হবে দেশের আগামীর অর্থনীতির ভিত্তি।’
আকাশপথে পিছিয়ে চট্টগ্রাম : দেশের দ্বিতীয় প্রধান নগরী চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিকমানের বিমানবন্দর থাকলেও চট্টগ্রাম থেকে মাত্র সাতটি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট চলাচল করছে। এর মধ্যে কলকাতা ছাড়া বাকি সব গন্তব্য মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক। কিন্তু আগে এখান থেকে ভারতের একাধিক গন্তব্যে সরাসরি ফ্লাইট ছিল। এ ছাড়া সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ব্যাংকক রুটেও ফ্লাইট চলাচল করত। বর্তমানে সরাসরি ফ্লাইট কমে যাওয়ায় ঢাকা হয়েই চট্টগ্রামে আসতে হয় ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের। আবার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ছাড়া অভ্যন্তরীণ অন্য রুটেও যাতায়াত করা যায় না। এতে পিছিয়ে পড়ছে চট্টগ্রাম। দেশের দ্বিতীয় প্রধান নগরী হলেও একমাত্র র্যাডিসন ব্লু বে ভিউ ছাড়া অন্য কোনো পাঁচতারকা হোটেল নেই এ শহরে।
চট্টগ্রাম পিছিয়ে থাকা প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইর প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের কানেকটিভিটি বাড়াতে হবে। কানেকটিভিটি না বাড়ালে বিদেশি ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীরা সহজে আসা-যাওয়া করতে পারবে না। বিশেষ করে জাপান ও চীনের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট চালু করা দরকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য অনেক অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দকৃত অর্থের কার্যকর বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আর এতেই বিভিন্ন নাগরিক দুর্ভোগ দেখা যাচ্ছে।’
আগামী ২৮ অক্টোবর উপমহাদেশের প্রথম টানেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে চালু হতে যাওয়া বঙ্গবন্ধু টানেলকে কেন্দ্র করে নদীর ওপারকে চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে যুক্ত করার প্রক্রিয়া নেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘আমরা নদীর ওপারকে নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা করছি। এজন্য ওই এলাকায় ডিটেইল সার্ভে করা হয়েছে। আবাসন, বাণিজ্যিক ও শিল্পায়নের হাবও করা যায় কি না, সেটাও বিবেচনা করছি।’
দেশের অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব বিবেচনায় চট্টগ্রাম নামের আগে নানা বিশেষণ জুড়ে দেওয়া হয়। বলা হয় বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, দেশের অর্থনীতির সিংহদ্বার, প্রাচ্যের সৌন্দর্যের রানী, বাণিজ্যিক রাজধানী ইত্যাদি। নদী-পাহাড়-সমুদ্রবেষ্টিত এবং প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদে ভরপুর চট্টগ্রাম পর্যটন ও শিল্প-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দেশ-বিদেশের সবার কাছেই দারুণ আকর্ষণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর এ চট্টগ্রামেই। তাই চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে দেশের আগামীর অর্থনীতির ভিত্তি, এটাই আশা করে চট্টগ্রামের মানুষ।
রান্না সুস্বাদু করে তুলতে লবণ হল অপরিহার্য উপাদান। তবে খাবারে লবণের পরিমাণটাও সঠিক হওয়া অনেক জরুরি। একটু এদিক-সেদিক হলেই অনেক স্বাধের রান্না বিফলে যায়।
তবে অনেক সময়ে দেখা যায় মাংস রান্নায় পরিমাণে বেশি লবণ পড়ে যায় বেকায়দায়। পরবর্তীতে স্বাধের মাংসটা নোনতা বা তেতো হয়ে যায়, দেখা যায় যে খাবারটা খাওয়ারই উপযোগী থাকে না। তবে রান্নায় লবণ কমানোর কয়েকটি কৌশল জেনে নিলেই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন।
চলুন জেনে নেওয়া যাক মাংস রান্নায় লবণ কমানোর কয়েকটি পদ্ধতি,
একটি পেঁয়াজ খোসা ছাড়িয়ে কেটে দুই টুকরা করে নিন। তারপর সেগুলি রান্নায় দিয়ে দিন। পেঁয়াজ রান্নার অতিরিক্ত লবণ টেনে নেবে। অবশ্য ভাজা পেঁয়াজও ব্যবহার করতে পারেন। তাতে রান্না সুস্বাদু হবে।
বাড়িতে টক দই থাকলে রান্নায় লবণ বেশি পড়ে গেলেও চিন্তা নেই। একটি ছোট্ট পাত্রে দই ভাল করে ফেটিয়ে নিন। তার পর সেটা রান্নায় দিয়ে দিন। রান্নার নোনতা স্বাদ কেটে যাবে। ঝোলেও অন্য রকম স্বাদ আসবে।
রান্নায় বেশি লবণ হয়ে গেলে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। বরং চিনি এবং সামান্য ভিনিগার মিশিয়ে নিন। লেবুর রসও দিতে পারেন ভিনিগারের বদলে। এগুলো খাবারের নোনতা ভাব কাটাতে সাহায্য করে।
মাংসের পাতলা ঝোল রেঁধেছেন, কিন্তু লবণ বেশি পড়ে গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে লবণ বেশি হলে একটি সহজ উপায় রয়েছে। কিছু আলুর খোসা অথবা বড় বড় আলুর টুকরা রান্নায় দিয়ে দিন। নিমেষে সব বাড়তি লবণ টেনে নেবে। স্বাদ স্বাভাবিক হয়ে গেলে আলুর খোসাগুলো তুলে ফেলে দিন।
ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগ শুরু
দেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকার অভিযোগে কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কারও নাম উল্লেখ করা না হলেও যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তাদের বিষয়ে বলা হয়, তারা সরকারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বিচার বিভাগের সদস্য এবং নিরাপত্তা সংস্থার সদস্য।
অতীত বঞ্চনার আগামী সম্ভাবনার
যে শহরে উপমহাদেশের প্রথম টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও দেশের আমদানি-রপ্তানির ৯২ শতাংশ কার্যক্রম হয়, সেই শহরে ৫৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের একটিরও প্রধান কার্যালয় নেই। বাণিজ্য ও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের সরকারি সিদ্ধান্তের জন্য ব্যবসায়ীদের ঢাকায় দৌড়াতে হয়। সে কারণে একসময় অনেক বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান কার্যালয় চট্টগ্রামে থাকলেও এখন আর নেই। বাণিজ্যিক রাজধানী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকলেও বন্দরনগরী ক্রমেই জৌলুস হারাচ্ছে। যদিও চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী ঘোষণা করার কথা হয়েছিল।
আইনের শাসন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের সংবিধান সবার মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করে। সবাইকে আইনগত সুরক্ষা প্রদান ও সুবিচার নিশ্চিতকরণে গত এক দশকে বাংলাদেশের আইনি ব্যবস্থার তাৎপর্যপূর্ণ সংশোধন করা হয়েছে। একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে, জনগণের মানবাধিকার রক্ষায় আমরা সম্পূর্ণরূপে অঙ্গীকারাবদ্ধ। জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে আমরা সারা বিশ্বের আপামর জনগণের মানবাধিকার সংরক্ষণে অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। আজ এ অধিবেশনে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করতে চাই যে, বাংলাদেশের সংবিধানের আলোকে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে যাব।
এত খরচ তবু কেন ডুবছে ঢাকা
ছুটির দিন তো বটেই, রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় অন্যান্য দিনেও থাকে মানুষের ভিড়। তবে গতকাল শুক্রবার ক্রেতা-বিক্রেতার বদলে সেখানে ছিল হাঁটুপানি। আগের দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত হওয়া বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা গতকালও ভুগিয়েছে রাজধানীবাসীকে। বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক-গলিতে জমে থাকা পানি নামেনি। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কুইক রেসপন্স টিম জলাবদ্ধতা নিরসনের চেষ্টা করলেও গতকাল বিকেলে রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় মূল সড়কে হাঁটুসমান বা তার চেয়েও বেশি পানি দেখা গেছে। এ ছাড়া পুরান ঢাকাসহ নিচু এলাকার অলিগলি এবং ঘরের ভেতরেও পানি আটকে থাকতে দেখা গেছে।
বাবা-মা-বোনকে হারিয়ে বেঁচে আছে ৭ মাসের শিশু
রাজধানীর মিরপুরে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধ সড়কের ফুটপাত ধরে বাসার পথে হেঁটে যাচ্ছিল এক পরিবারের তিন সদস্য। তাদের সঙ্গে ছিল পরিবারটির আরেক সদস্য সাত মাস বয়সী শিশু হোসাইন। কিন্তু বিদ্যুতের ছেঁড়া তার পড়েছিল ওই পথে। সেখানে আচমকাই বিদ্যুতায়িত হন তারা। এ সময় তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন এক তরুণ। তিনিও বিদ্যুতায়িত হয়ে প্রাণ হারান। তবে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় সবাইকে অবাক করে প্রাণে বেঁচে গেছে শিশু হোসাইন। জানা গেছে, বিদ্যুতায়িত হওয়ার পর হোসাইনের মা যখন পানিতে পড়ে যান তখন হোসাইন মায়ের কোল থেকে ছিটকে কিছুটা দূরে পড়ে যায়। তা দেখে তাদের সাহায্য করতে আসা ওই তরুণ হোসাইনকে উদ্ধার করে এক নারীর কাছে রেখে আবার এগিয়ে গিয়ে প্রাণ হারান।
আইন-সন্দেহে আটকা বিদেশযাত্রা
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য আবার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাকে উন্নত চিকিৎসা দিতে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দাবি করে আসছে দলটি। সেই সঙ্গে তার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় চিকিৎসকদের বোর্ডও দাবি করছে, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা বিদেশে ছাড়া সম্ভব নয়। কিন্তু তার বিদেশযাত্রা আটকে আছে আইনের প্যাঁচে। আবার ক্ষমতাসীন দলও মনে করছে, সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি নেত্রীকে বিদেশ যেতে দিলে সেখানে বসেই তিনি সরকারবিরোধী রাজনীতি করবেন। তাই যত ঝুঁকিই থাকুক, বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিতে চায় না সরকার।
সাহিত্যের ছাত্রের প্রযুক্তিতে মন
পড়াশোনা বাংলা সাহিত্যে, কিন্তু প্রযুক্তির প্রতি অসম্ভব টান। কম্পিউটারে বাংলায় লিখতে বিজয় বাংলা কি-বোর্ড ও সফটওয়্যার তৈরি করেছেন তিনি। ইন্টারনেটে সহজে বাংলা লেখার সুযোগ তৈরির পাশাপাশি শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার, ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণা, কর্মসূচির প্রকাশ এবং এই ধারণা কার্যকর করায় ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে তার বিশেষ অবদান রয়েছে। তিনি হলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম এই কারিগর। তার উদ্ভাবিত বিজয় ডিজিটাল শিক্ষা আন্তর্জাতিক উইটসা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক লেখক, কলামিস্ট ও সমাজকর্মী মোস্তাফা জব্বার ২৯টির বেশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন।
নদী ছিল দুই সেতুই সাক্ষী
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার হরি নদীতে পলি পড়ে এখন মৃতপ্রায়। অথচ ৩০ বছর আগেও এই নদীতে জাহাজ আসত। হামকুড়া নদী নেই। কিন্তু দুটি সেতু এখনো সাক্ষ্য দেয় একসময় নদীটি প্রবহমান ছিল।
শুধু এই দুই নদী নয়, নাব্য হারিয়ে অস্তিত্ব-সংকটের মুখে পড়েছে খুলনার ১২ নদী। আর সেই সঙ্গে দখল ও দূষণে ধুঁকে ধুঁকে মরছে জেলার ৪৮৭টি সরকারি খাল।
নদী-খালের মৃত্যুদশা সামান্য বর্ষায় ডেকে আনছে জলাবদ্ধতা। তলিয়ে যাচ্ছে সড়ক ও ঘরবাড়ি। চরম ভোগান্তিতে পড়ছে মানুষ। ক্ষতির মুখে পড়ছে ফসলি জমি ও মৎস্যঘের।
আক্রান্ত সুমি দেখল মায়াহীন বাস্তব
‘মালিকের বাসায় কাজ করতাম। যখন যে কাজ বলত তা-ই করতে হতো। ওই বাসার কেউ আমাকে আদর করত না। কোনো ভুল করলেই ম্যাডাম আমাকে গালাগালি করত। একদিন রাতে ঠান্ডা লাগে। তারপর জ¦র আসলে একজনকে দিয়ে আমাকে ডাক্তারের কাছে পাঠিয়ে দেয়। এখানে আমাকে যে নিয়ে আসছিল, তাকে আর পাইনি। আমার খুব ভয় লাগছিল, হাসপাতালে একা একা প্রতিদিন কান্নাকাটি করতাম। আম্মারে কেউ জানায়নি।’ রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আটতলার শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ১০ বছরের সুমি এভাবেই বলছিল তার দুর্দশার কথা।
জব্দ ৪৬ খন্ড রেলপাত উধাও
দিনাজপুরের পার্বতীপুরে রেল পুলিশ ও রেল নিরাপত্তা বাহিনীর জব্দ করা ভবানীপুর-মধ্যপাড়া রেললাইন পথের প্রতিটি ৮ ফুট দৈর্ঘ্যরে ৪৬টি রেলপাত উধাও হয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর দায় অন্যের ওপর চাপানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে রেলের একজন কর্মকর্তা দাবি করেছেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার দুপুরে পার্বতীপুর প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন রেলের জ্যেষ্ঠ উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) মো. আল আমিন। এ সময় পার্বতীপুরে রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগের কি-ম্যান, ওয়েম্যান, মেটসহ অর্ধশতাধিক কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।
বাবার শনাক্তের পরও ছেলের লাশ ‘বেওয়ারিশ’
চট্টগ্রামে জাহাজভাঙা কারখানার এক শ্রমিকের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। ওই শ্রমিকের বাবা মো. ইউনুচের অভিযোগ, মর্গে গিয়ে শনাক্তের পরও নৌপুলিশ তার ছেলে রাসেলের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করেছে। ৩ সেপ্টেম্বর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি ওই শ্রমিকের মরদেহ চট্টগ্রাম নগরীর চৈতন্যগলি করবস্থানে দাফনও করে ফেলেছে।
এর আগে ২ সেপ্টেম্বর রাতে সীতাকুণ্ড থানা এলাকার বাড়বকুণ্ড বেড়িবাঁধ থেকে ২৮-৩০ বছর বয়সী অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে কুমিরা নৌপুলিশ ফাঁড়ির একটি দল। পরদিন এই লাশের ময়নাতদন্ত করা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গে।
সারা দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৯ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ সময় আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি।শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় ২৯ হাজার ৪৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং শনাক্তের সংখ্যা ২০ লাখ ৪৫ হাজার ৬৬১ জনে পৌঁছেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৬৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ সময়ে শনাক্তের হার ১ দশমিক ১৭ শতাংশ। মোট পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১৯ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৩ হাজার ২৬০ জনে।
শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৪২ শতাংশ।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’