
অন্যের থিসিস পেপার চুরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পিএইচডি ডিগ্রি হাতিয়ে নেওয়া এখন পুরনো খবর। থিসিস পেপার চুরি তো নৈতিকতাবিবর্জিত অপরাধ, কিন্তু এখন শিক্ষকরা নানা ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারিতেও নিজেদের কলুষিত করছেন। সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠের শিক্ষকরা এখন নির্ধারিত ছুটি শেষে কাজে যোগ না দিয়েও বেতন-ভাতা তুলে নিচ্ছেন। গবেষণার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সুবিধা ভোগ করলেও তাদের কাছ থেকে নির্ধারিত হারে বাড়ি ভাড়া কাটা হচ্ছে না। অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি ভাতা দেওয়া হচ্ছে তাদের। তবে শিক্ষকরা যতটা না অবৈধ সুবিধা নিচ্ছেন, তার চেয়ে বেশি অনিয়ম করছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ। ভবন নির্মাণে অনিয়ম, ভর্তি পরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়াসহ নানাভাবে লুটপাট চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। নানা অনিয়মের মাধ্যমে দুই বছরে রাষ্ট্রের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সরকারি ২৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি বাংলাদেশের মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) অধীন শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষিত প্রতিবেদনে বিশ^বিদ্যালয়গুলোর লুটপাটের এ চিত্র পাওয়া গেছে। ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারি এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়-ব্যয় নিরীক্ষা করেছে তারা।
নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন প্রোগ্রামে অননুমোদিতভাবে শিক্ষা ছুটিতে বিদেশে অবস্থান করছেন। এসব শিক্ষকের অনেকেই শিক্ষাছুটি শেষে কাজে যোগ দেননি। তবে তাদের বেতন-ভাতা দিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। শিক্ষকরা ছুটি শেষে কাজে যোগদান না করায় এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
সিএজির নিরীক্ষা প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১০ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক ও কর্মকর্তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে বসবাস করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের বেতন থেকে নির্ধারিত হারে বাড়ি ভাড়া কেটে রাখেনি। এতে করে সরকারের ২৫ কোটি ৯০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সিন্ডিকেট কিংবা অর্থ কমিটি কিংবা রিজেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাড়ি ভাড়া কাটা হয়। নিরীক্ষায় নির্ধারিত বাড়ি ভাড়ার অর্থ আদায় করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন বিভাগ, অনুষদ, ডিন অফিস ও রিসার্চ সেন্টারের বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া নিজস্ব আয়সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে না দেখানোয় ৩৭ কোটি ১৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ আয় বাজেটে প্রদর্শন না করা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ২০১৯ সালের নির্দেশনার লঙ্ঘন।
নানা অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হাফিজা খাতুন ফোনে কোনো বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।
২০২১-২২ অর্থবছরে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাঁচটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উন্নয়ন প্রকল্পের অব্যয়িত অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত না দিয়ে নিজেদের ব্যাংক হিসাবে রেখে দিয়েছে। যদিও অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, অর্থবছর শেষে উন্নয়ন ব্যয়ের অব্যয়িত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। কিন্তু ওই পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয় তা জমা না দেওয়ায় সরকারের ১৬২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদালয় ২০২১-২২ অর্থবছরে স্নাতক (সম্মান) প্রথমবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা থেকে ১৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা আয় করলেও তা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসাবে দেখায়নি। এমনকি ওই আয় এবং সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র নিরীক্ষায় উপস্থাপন করতে বললেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিরীক্ষা দলকে কোনো জবাব বা সহযোগিতা দেয়নি। এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটি খুবই বিব্রতকর ও অগ্রহণযোগ্য। তবে আমি অবাক হইনি। কারণ কয়েক বছর আগে আমরাও দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে জরিপ চালিয়েছিলাম। সেখানেও এমন অনেক অনিয়ম পেয়েছিলাম। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠগুলোতে এমন অনিয়ম অনৈতিক ও দুঃখজনক।’
তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের সরকারি বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে এ ধরনের অনৈতিক চর্চা চলছে। শিক্ষকদের একাংশের যোগসাজশে তা হচ্ছে, যা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। সরকারি প্রতিষ্ঠান সিএজির নিরীক্ষাটি প্রশংসনীয়। এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে আমরা আশা করছি।’
নিরীক্ষা প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ও গবেষণার চেয়ে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নজর অর্থের দিকে বেশি। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকল্পের টাকা যথেচ্ছ লুটপাট কিংবা শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি নিয়েও অনিয়মে পিছপা হননি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তাব্যক্তিরা।
সিএজির প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গাড়ি কিনতে ২০২২ সালের মে মাসে ইউজিসি ৮৭ লাখ টাকা ও তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) সামগ্রী কেনার জন্য ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু গাড়ি ও আইসিটি সামগ্রী না কিনে অন্য একটি ব্যাংক হিসাবে এ ১ কোটি ৭ লাখ টাকা পাঠানো হয়েছে। শিক্ষকদের প্রাপ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ইন্টারনেট ভাতা হিসেবে ৫৬৪ জন শিক্ষককে মাসে ১ হাজার টাকা এবং ৩২৪ জন কর্মকর্তাকে ৫০০ টাকা করে মোট ৮৭ লাখ ১২ হাজার টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এভাবে বিল দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নিরীক্ষকদের প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিল দেওয়া হয়েছে। নিরীক্ষকরা বলছেন, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে শিক্ষকদের ইন্টারনেট ভাতা দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই।
একই বিশ্ববিদ্যালয় কাল্পনিক বিভিন্ন কোটেশন দেখিয়ে এক ঠিকাদারকে ৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করেছে। একই ব্যক্তি কাল্পনিক কোটেশন কাগজ তৈরি করে বিল উত্তোলন করেছেন। নিরীক্ষকরা জবাব চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলেছেন, ‘কোটেশন জমাদানকারীর হাতের লেখা যাচাইয়ের বিষয়টি ভুলবশত নজরে আসেনি।’
বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বিল পরিশোধ করা হয়েছে কিন্তু তার কোনো ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা দেয়নি। এ ভ্যাটের পরিমাণ ৫৬ লাখ ১৬ হাজার টাকা। তবে নিরীক্ষা দলের নজরে আসায় বিশ্ববিদ্যালয় এ অর্থ জমা দেওয়ার কথা জানিয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন দিবস কেন্দ্র করে হলগুলোতে উন্নতমানের খাবার ও আলোকসজ্জার নাম করে ৮৯ লাখ ৮৪ হাজার টাকার বেশি বিল পরিশোধ করেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিলের সমর্থনে কোনো ভাউচার নেই। বিল ভাউচার না থাকার কোনো স্পষ্ট জবাবও দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারা।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলমের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার রাশেদা আখতার মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোস্তফা ফিরোজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমার জানার কথা নয়। এ বিষয়ে কোষাধ্যক্ষ ও কম্পট্রোলার বলতে পারবেন।’ কম্পট্রোলার মো. মোসানুল কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সিএজি তাদের মতো অবজারভেশন দিয়েছে। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সপক্ষে জবাব দিচ্ছি। তবে এটুকু বলতে পারি, আমরা বিধিসম্মতভাবে কাজ করি।’
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রি করে আয় হয়েছে ৩ কোটি ১৮ লাখ ২২ হাজার টাকা। এর মধ্যে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা করেনি কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, এ আয়ের ৬০ শতাংশ টাকা বিভিন্ন অনুষদে ব্যয় করা হয়েছে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সময়কালে গবেষণায় অনুদান বরাদ্দ ছিল ৩ কোটি ৬৩ লাখ ৫০ হাজার। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো গবেষণা না করে বিভিন্ন মালামাল কিনেছে। মালামাল কেনার জন্য ৬৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা খরচ করেছে। কিন্তু বিধি অনুযায়ী যে উদ্দেশ্যে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়, সে উদ্দেশ্যেই খরচ করার নিয়ম রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরীক্ষকদের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছে, গবেষণা কাজের উদ্দেশ্যেই এসব মালামাল কেনা হয়েছে। নিরীক্ষা জবাবে বলা হয়েছে, গবেষণা অনুদানের বরাদ্দ শুধু গবেষণার জন্যই দেওয়া হয়। মালামাল কেনার সুযোগ নেই।
ইউজিসি তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন সেবার নামে অনিয়মিতভাবে ৯২ লাখ ৭২ হাজার টাকা কেটে রেখেছে। এ অর্থ কী করা হয়েছে নিরীক্ষকরা জানতে চাইলে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ই বলেছে, সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে তথ্য-প্রমাণ নিয়ে তারা জানাবেন। কিন্তু নিরীক্ষক দল জবাবে বলেছে, কোনো প্রকার আইনি ভিত্তি ছাড়াই ইউজিসিকে অর্থ দেওয়া হয়েছে।
হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোদন ছাড়াই ১ কোটি টাকায় পাজেরো জিপ কেনা হয়েছে। অডিট নিষ্পত্তির জন্য জবাব চাইলে নিরীক্ষকদের এ বিষয়ে কোনো জবাব দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়টি।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারা ২০২১-২২ অর্থবছরে ‘অবকাঠামো ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ’ প্রকল্পে মন্ত্রিসভার কোনো ধরনের দরপত্র প্রস্তাব অনুমোদন ছাড়াই বৈজ্ঞানিক ল্যাব যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ৫৮ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয় করেছে।
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসিসি রাস্তা নির্মাণের জন্য প্রকল্প প্রস্তাবে প্রতি মিটার রাস্তার জন্য অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৪ হাজার ৬০০ টাকা। কিন্তু তারা অনুমোদিত ব্যয় উপেক্ষা করে প্রতি মিটারে খরচ করেছে ১০ হাজার ৬২১ টাকা। অর্থাৎ প্রকল্প প্রস্তাবে দেওয়া বাজেটের চেয়ে অতিরিক্ত খরচ হয়েছে ৩ কোটি টাকার বেশি।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই প্রকল্পের বিপরীতে অনিয়মের ফিরিস্তি আরও বেশি। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা যায়, এ প্রকল্পে বাজেট ছাড়াই বিভিন্ন খাত দেখিয়ে ৩৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছে। আরেকটি আরসিসি রাস্তার নামে দরবহির্ভূত আইটেমের বিপরীতে খরচ করা হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা আরও ভয়াবহ। সরকারের কোনো অনুমোদন এবং প্রকল্প প্রস্তাব ছাড়াই ১৬০ কোটি টাকার পূর্ত কাজ করেছে তারা। এ বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুর ক্যাম্পাসে দুটি ভবন বানানোর জন্য মেসার্স মজিদ কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে ১৬০ কোটি টাকার চুক্তি করে। পরিকল্পনা কমিশনের বিধি অনুযায়ী, ঘটনাত্তোর কোনো কাজের অনুমোদন পরিকল্পনা কমিশন দেয় না। তাছাড়া অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেল থেকেও কোনো ছাড়পত্র নেয়নি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কর্তৃপক্ষ কোনো অডিটেরও জবাব দেয়নি।
এ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন খাতে দেনা দেখিয়ে ৩০ কোটি ৩১ লাখ টাকা খরচ করেছে। কিন্তু এ অর্থ কত বছর ধরে, কেন, কীভাবে বকেয়া পাওনা হয়েছে তার কোনো ব্যাখ্যা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি প্রকল্পে একই ঠিকাদার মজিদ কনস্ট্রাকশনকে কয়েক ধাপে ১০১ কোটি ৪৯ লাখ টাকার বিল দিয়ে অনিয়ম করা হয়েছে। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে কোনো প্রকল্প হলে সে ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভার অনুমোদন লাগে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কোনো নিয়মের ধার ধারেননি। নিরীক্ষকরা জবাব চাইলে, বিশ্ববিদ্যালয় এ কাজের জন্য কোনো জবাব দেয়নি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়মের মধ্যে আরও রয়েছে পছন্দের ঠিকাদার নাভানা ও মিলিনিয়াম সার্ভিস সেন্টারকে কোনো কোটেশন ছাড়াই ৪৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকার কাজ দেওয়া হয়েছে। ক্রয়সীমার চেয়ে বেশি দরে তাদের কাছ থেকে সেবা নেওয়া হয়েছে। এ অডিটেরও তারা কোনো জবাব দেয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়টির কারিগরি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোনো নিয়মের বালাই না করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে ডিপোজিট ওয়ার্ক হিসেবে ৮০ কোটি টাকা দিয়েছে।
ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) আলোচিত এই দুই অর্থবছরে রাজস্ব তহবিল থেকে অনিয়মিতভাবে ১০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা অন্য তহবিলে স্থানান্তর করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জবাবে বলেছে, প্রমাণ সংগ্রহ করে তারা জবাব দেবে। নিরীক্ষক দলের দাবি, এটি গ্রহণযোগ্য নয়।
নির্ধারিত চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও রাজশাহী, চট্টগ্রাম, ইসলামী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে সেশন বেনিফিটের নামে অতিরিক্ত সময়ে চাকরির সুযোগ নিয়েছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষতি হয়েছে ৪ কোটি ২৮ লাখ টাকার বেশি।
অর্থ বিভাগের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা অনুবিভাগের আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ ২০১৫ সালের স্মারক অনুযায়ী, কোনো ক্ষেত্রেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় না করা এবং বাজেটে বিভিন্ন কোডের বিপরীতে বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যেই প্রকৃত ব্যয় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ওই নির্দেশনা না মেনে দুই বছরে ৩৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করেছে। এর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদালয় ২০২১-২২ অর্থবছরে বরাদ্দ করা বাজেটের অতিরিক্ত ৩১ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। আর ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অতিরিক্ত ব্যয় করেছে ৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা। একই সময়ে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাদ্দকৃত বাজেটের অতিরিক্ত ব্যয় করেছে ৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণ দর্শানোর নোটিসের কোনো জবাব দেয়নি পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ভবিষ্যতে বরাদ্দকৃত বাজেটের মধ্যে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ কঠোরভাবে পরিপালনের কথা জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। আর অতিরিক্ত ব্যয় করলেও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাজেটে বরাদ্দপত্রে উল্লিখিত কোডের বিপরীতে মূল খাতের বরাদ্দের মধ্যে ব্যয় সীমাবদ্ধ রয়েছে।
এসব অনিয়মিত ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে সিএজির অধীন শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষিত প্রতিবেদনে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে মূল পদের বাইরে বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে (প্রক্টর/প্রভোস্ট/চেয়ারম্যান/তত্ত্বাবধায়ক/ছাত্র উপদেষ্টা প্রভৃতি) অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এসব পদে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত দায়িত্বভাতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী, মূল বেতনের ১০ শতাংশ অথবা দেড় হাজার টাকার মধ্যে যেটা কম তা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় বেতন স্কেল লঙ্ঘন করে ১৬টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দায়িত্ব ভাতার অতিরিক্ত দেওয়ায় রাষ্ট্রের প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
অতিরিক্ত দায়িত্বভাতা প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদলয় কর্তৃপক্ষ নিরীক্ষা দলকে জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কমিটির সুপারিশ ও সিন্ডিকেটের অনুমোদনক্রমে অতিরিক্ত দায়িত্ব ভাতা দেওয়া হয়েছে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, দেড় হাজার টাকা দায়িত্ব ভাতা দিলে কোনো শিক্ষক নিজ পদের অতিরিক্ত প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবেন না। তবে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের দেওয়া অতিরিক্ত দায়িত্ব ভাতা জেনারেল ফান্ডে ফেরত নিয়ে এসেছে।
অতিরিক্ত দায়িত্ব ভাতা প্রসঙ্গে নিরীক্ষা দল তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে, বেতন ও ভাতা-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত প্রদানের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় ক্ষমতাপ্রাপ্ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কমিটি কিংবা সিন্ডিকেট নয়। দায়িত্ব ভাতা হিসেবে প্রদান করা অতিরিক্ত অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা করার সুপারিশ জানিয়েছে সিএজি।
ইউজিসির অনুমোদন না থাকার পরও পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় বিধিবহির্ভূতভাবে চুক্তিভিত্তিক জনবল নিয়োগের মাধ্যমে ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি করেছে। এসব নিয়োগ বাতিলের সুপারিশ করেছে নিরীক্ষা দল।
২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতাধীন ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ১৮ কোটি টাকা অগ্রিম হিসেবে দিলেও নিরীক্ষাকাল পর্যন্ত তা সমন্বয় করেনি।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত আগামী ২ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এতে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত আসতে ১২ মিনিট লাগবে। তবে মহাখালী র্যাম্পের সামনেই মহাখালী বাস টার্মিনাল। এতে সেখানকার যানজটের জন্য বিমানবন্দর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে ১০ মিনিট সময় লাগলেও এখানে এসে আধা কিলোমিটার পাড়ি দিতে ঘণ্টা পার হয়ে যাবে। আর ফার্মগেট অংশে তেজগাঁও কলেজের সামনে দিয়ে নেমে সেখানকার যানজটের জন্য ইন্দিরা রোড পাড়ি দিতেই ৩০ মিনিটের মতো সময় লেগে যাবে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত খুললে পুরো প্রকল্প সুবিধা পাওয়া যাবে না। পুরো কাজ শেষ হলে মূলত এটি যে লক্ষ্যে করা হয়েছিল তার সুফল মিলবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেটের বনানী-৪, মহাখালী-৩, বিজয় সরণি-২ ও ফার্মগেট-১ র্যাম্পগুলোতে উদ্বোধনের লক্ষ্যে পুরোদমে কাজ করছেন শ্রমিকরা। তবে মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে গাড়ির তীব্র যানজটের দৃশ্য দেখা যায়। এই অংশের র্যাম্প চালু হলে এই রোডের গাড়ির চাপ আরও বাড়বে। ফার্মগেটের দিকেও তীব্র যানজট দেখা যায়। আর বিজয় সরণির দিকে দীর্ঘ সারির গাড়ি বসে থাকতে দেখা যায়। মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে ইসলাম পরিবহনের এক চালক মো. সিরাজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিমানবন্দর থেকে ১০ থেকে ১২ মিনিটের মধ্যে গাড়িগুলো এসে এখানকার যানজটের জন্য এক ঘণ্টার মতো বসে থাকতে হবে। ইউটার্ন নিয়ে আধা কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতেই বসে থাকতে হবে যানজটে। আর এমনিতে এই এলাকায় অনেক যানজট তার মধ্যে এই জায়গা দিয়ে সামনে গাড়ি চাপ আরও বাড়বে।
তুরাগ গাড়ির আরেক চালক জাকির হোসেন বলেন, আমাদের গাড়িগুলো তো আর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যাবে না। এখনই এই রোডে এলে অনেক সময় ধরে বসে থাকতে হয় যানজটে। নতুন করে এই দিক দিয়ে সামনে আরও ভোগান্তি পোহাতে হবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (কাওলা) থেকে শুরু করে মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার হয়ে কুতুবখালী গিয়ে শেষ হবে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ। ২০২৪ সালের জুনে শেষ হবে কাজ। এটা মাথায় রেখে কাজ করা হচ্ছে পুরোদমে। বর্তমানে প্রকল্পটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশ যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। এ অংশের মেইন লাইনের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৫ কিমি এবং র্যাম্পের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক শূন্য কিমি। র্যাম্পসহ মোট দৈর্ঘ্য ২২ দশমিক ৫ কিমি। এ অংশে ওঠানামার জন্য ১৫টি র্যাম্প (এয়ারপোর্ট-২, কুড়িল-৩, বনানী-৪, মহাখালী-৩, বিজয় সরণি-২ ও ফার্মগেট-১) রয়েছে। এরমধ্যে ১৩টি র্যাম্প যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
প্রকল্প সূত্রে আরও জানা গেছে, এই এক্সপ্রেসওয়ের ওপর পথচারী, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, থ্রি-হুইলার চলাচল করবে না। এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা ৬০ কিমি। প্রকল্পটি থাইল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইটালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড (৫১ শতাংশ) এবং চায়নাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান শেনডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপ (৩৪ শতাংশ) ও সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডের (১৫ শতাংশ) যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা, যার ২৭ শতাংশ বাংলাদেশ সরকার ভিজিএফ হিসেবে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে দেবে। প্রকল্পের মূল দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিমি। র্যাম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিমি.।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখন যে অংশটুকু চালু হচ্ছে এই অংশ চালু হলে এই প্রকল্প যে উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়েছিল সেটির পুরো সুফল পাওয়া যাবে না। আর তাছাড়া এখন যে র্যাম্পগুলো দিয়ে গাড়ি নামবে সেখানে সিটিতে আগের থেকে গাড়ির চাপ বাড়বে। আর ট্রাফিক ব্যবস্থা যদি আরও ভালোভাবে মনিটরিং করা না হয় তাহলে বড় ধরনের ভোগান্তি হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ঢাকা শহরের যানজট নিরসনসহ ভ্রমণে সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ের লক্ষ্যে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। পুরো প্রকল্পটি শেষ হলে ঢাকা শহরের উত্তর-দক্ষিণ করিডরের সড়কপথের ধারণক্ষমতা বাড়াবে। এ ছাড়া প্রকল্পটি ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হলে ঢাকা ইপিজেড ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের যোগাযোগ সহজতর হবে।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এখন বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট অংশ আগামী ২ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করা হবে। পুরোদমে এই অংশের শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। আর এখন এই অংশ চালু হলে আগের থেকে যানজট কমবে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ হয়েছে।
দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়া ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগসহ অধিভুক্ত সাত কলেজ শাখার নিয়ন্ত্রণ চায় সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। তাদের দাবি, এতে অ্যাকাডেমিক মানের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক মানেরও উন্নয়ন ঘটবে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের। তবে এতে সম্মতি জানায়নি আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম এ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি।
সাত কলেজ শাখা ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অন্তর্ভুক্ত হলে বিশৃঙ্খলা বাড়ার আশঙ্কা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সংগঠনের একাধিক নেতাকর্মী।
জানা যায়, গত ১৭ জুলাই ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত। এ সময় তারা অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নানান সংকট সমাধানের আশ্বাস দিয়ে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। এরপরই সংগঠনের সাত কলেজ শাখার নিয়ন্ত্রণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের হাতে যাওয়ার খবর চাউর হয়। তবে এক দিন পরই কলেজ ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীদের থেকে বায়োডাটা আহ্বান করে সে আলোচনায় ঘি ঢেলে দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর জল গড়িয়েছে অনেকদূর। শেষ পর্যন্ত বিষয়টির মীমাংসা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকায় সাত কলেজ ছাত্রলীগ ভালো অবস্থান রয়েছে। ঢাকায় আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এই ইউনিটগুলোকে সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অধিভুক্ত করা সম্ভব হলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আধিপত্য বাড়বে। একই সঙ্গে কেন্দ্রের আধিপত্য কমবে। এ কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ জোরেশোরেই এ দাবিটি জানাচ্ছে। তবে কেন্দ্র এটা কখনোই চাইবে না বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রলীগ নেতা জানিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হল ছাত্রলীগের সঙ্গে ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা সংবাদপত্রে শিরোনাম হয়েছে বেশ কয়েকবার। সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শহীদদের স্মরণে’ আলোচনা সভায় সামনে বসা নিয়ে হাতাহাতিতে জড়ান বিশ^বিদ্যালয় ও ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের নেত্রীরা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ছাত্রলীগের এক নেত্রীকে কারণ দর্শানোর নোটিসও দেওয়া হয়। সাত কলেজের সংগঠনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অধিভুক্ত করা হলে এ সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করেছেন অনেকে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা যখন হলে পরীক্ষা দিই তখন পাশেই মধুতে ছাত্রলীগের সেøাগান আর হাততালির কারণে খুব বিরক্ত হই। সেটা সহ্য করেই পরীক্ষা দিতে হয়। এরই মধ্যে যদি আবার সাত কলেজের ইউনিটগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠনের অধীনে এনে বহিরাগতদের আখড়া বানানো হয়, তা হবে শিক্ষার পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।’ তিনি বলেন, ‘যেখানে বুয়েট (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) তাদের ক্যাম্পাসের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে, সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের টিকে থাকা পরিবেশটুকুও ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে।’
নাম প্রকাশ না করা শর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হল ছাত্রলীগের সভাপতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র চাইলে দিতে পারে। তবে সাত কলেজকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি হবে। শিক্ষার্থীরা যেমনি বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়বে তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বও চলে যেতে পারে সাত কলেজের হাতে। আমি মনে করি সাত কলেজ স্বতন্ত্র ইউনিট হিসেবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে থাকায় ভালো হবে।’
ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা হয় দেশ রূপান্তরের। কমিটি না হওয়ার ক্ষোভে কয়েকজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অধিভুক্ত হতে চাইলেও বেশিরভাগই কেন্দ্রের সঙ্গে থাকার পক্ষে মত দিয়েছেন। ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা বলেন, ‘সাংগঠনিকভাবে আমরা এখন জেলা মর্যাদায় আছি। আমরা কখনোই চাইব না উপজেলা মর্যাদায় যেতে। বরং সুপার ইউনিট হতে চাইব। সুতরাং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা চাইলেও আমরা এটা মানব না।’
ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ নেতা শেখ মিঠুন বলেন, ‘ঢাকা কলেজের নিয়ন্ত্রণ চাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কা-জ্ঞানহীন কাজ। এটা নিয়ন্ত্রণ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা কেন্দ্রের সঙ্গে থাকতে চাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারে যাওয়ার ইচ্ছে আমাদের নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাদ্দাম-ইনান ভাইয়ের সঙ্গে থাকার জন্য যদি আন্দোলনও করা লাগে আমরা করতে রাজি আছি। আমরা কেন্দ্রের সঙ্গে অনেক ভালো আছি। আমাদের বিশ্বাস নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ আমাদের সুন্দর একটি কমিটি উপহার দেবে।’
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ তাদের দেখভাল করি, এটা সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও চায়। তাদের নানা ধরনের জটিলতা রয়েছে। সেগুলো নিয়ে তারা আমাদের কাছে আসে সবসময়। তাদের কমিটিগুলো আমরা করি, তাদের সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়াই এটা তারাও চায়।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামীয় লীগের সভাপতি ও আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার কাছে বিষয়টি গেছে। তিনি বিবেচনা করবেন এবং আওয়ামী লীগের নেতারাও এটি বিবেচনায় রাখবেন।’
ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে সৈকত বলেন, ‘আমরা দেখি যে মাঝেমধ্যে কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সঙ্গে সাত কলেজের ঝামেলা হয়। আমি মনে করি, এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে যদি সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আন্ডারে হয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, ‘সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের যাবতীয় কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পরিচালিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ যেমনিভাবে হলগুলোতে কার্যক্রম পরিচালনা করে, একইভাবে যদি সাত কলেজের ছাত্রলীগ পরিচালনা করা হয় তাহলে তাদের যে রাজনৈতিক মান সেটিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো হবে। শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হবে এবং তাদের যেকোনো ধরনের অধিকার আদায়ের জন্য রাজনৈতিকভাবেও সহায়ক হবে।’
তবে সাত কলেজের সংগঠনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে কোনো ভাবনা নেই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের। শুরু থেকেই এসব কলেজ শাখা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে কেন্দ্র। আপাতত পরিবর্তনের ভাবনাও নেই তাদের।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজসহ সাত কলেজের সংগঠনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে দেওয়া হলে বরং বিশৃঙ্খলা আরও বাড়বে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাত কলেজের কমিটি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ দীর্ঘদিন ধরে করছে। এ বিষয়ে আপাতত আমাদের পরিবর্তনের সুযোগ কিংবা অবকাশ নেই।’
তবে এ বিষয়ে মুখ খোলেননি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন। জানতে চাইলে দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে অবগত নই।’
দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রবিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি নিয়মিত ফ্লাইট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী গত মঙ্গলবার থেকে এই সম্মেলনে যোগ দেন। এই সফরে প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ তার সফরসঙ্গী ছিলেন। ১৫তম ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে গত মঙ্গলবার রাতে জোহানেসবার্গে পৌঁছেন প্রধানমন্ত্রী। পরদিন বুধবার প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড বিজনেস সামিট’-এ প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেন।
পরে তিনি আফ্রিকার দেশগুলোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ দূত সম্মেলনে’ যোগ দেন। এদিন বিকেলে শেখ হাসিনা হোটেল হিলটন স্যান্ডটনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ব্রিকসের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট আয়োজিত ‘রাষ্ট্রীয় ভোজ’-এ যোগ দেন।
গত বৃহস্পতিবার তিনি ৭০টি দেশের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ‘ব্রিকসের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক’- ফ্রেন্ডস অফ ব্রিকস লিডারস ডায়ালগ (ব্রিকস-আফ্রিকা আউটরিচ এবং ব্রিকস প্লাস ডায়ালগ)-এর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে ভাষণ দেন।
ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে এদিন স্যান্ডটন কনভেনশন সেন্টারে শেখ হাসিনা ও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা, মোজাম্বিকের প্রেসিডেন্ট ফিলিপে জ্যাকিন্টো নিউসি, তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট ডক্টর সাইমা সুল্লুহু এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
একই স্থানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট দিলমা ভানা রুসেফের মধ্যেও বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এদিন সন্ধ্যায় তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
১৫তম ঐতিহাসিক ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা যোগদান করে। কভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাব এবং পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী বিধিনিষেধের পর এটিই প্রথম সশরীরে উপস্থিতির ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাপোসা, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই সম্মেলনে যোগ দেন।
দেশে গত সপ্তাহে (২০-২৬ আগস্ট) সরকারি হাসপাতালে যত ডেঙ্গু রোগী মারা গেছে, তাদের ৭৯ শতাংশের মৃত্যু ঘটেছে ভর্তির তিন দিনের মধ্যে। বাকি ১০ শতাংশ মারা গেছে ভর্তির ৬-১০ দিন, ৮ শতাংশ ৪-৫ দিন ও ৩ শতাংশ ১০ দিনের অধিক সময়ের মধ্যে।
এমনকি ৭৯ শতাংশ মৃত্যু হয়েছে শক সিনড্রোম ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে। বাকি ১৪ শতাংশ মারা গেছে এক্সপান্ডেড ডেঙ্গু সিনড্রোমে (নতুন উপসর্গ), ৪ শতাংশ ডেঙ্গুর সঙ্গে অন্যান্য রোগ থাকায় ও ৩ শতাংশ মারা গেছে রক্তক্ষরণ ডেঙ্গুতে। ২৬ আগস্ট পর্যন্ত এক সপ্তাহের ডেঙ্গুর তথ্য বিশ্লেষণ করে এ পরিসংখ্যান জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, গত সাত দিনে রোগী পাওয়া গেছে ১৪ হাজার ৩২৪ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছে ৮ হাজার ৫০৬ ও ঢাকায় ৫ হাজার ৮১৮ জন। রোগীদের মধ্যে নারী ৫ হাজার ৪৭৪ ও পুরুষ ৮ হাজার ৮৫০ জন। এ সময় মারা গেছে ৭১ জন। তাদের মধ্যে নারী ৪৫ ও পুরুষ ২৬ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঢাকার ১০টি এলাকাকে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৭ শতাংশ রোগী পাওয়া গেছে যাত্রাবাড়ীতে ও সবুজবাগে ১৩ শতাংশ। এরপর কদমতলীতে ৮ শতাংশ, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও, কেরানীগঞ্জ ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ৪ শতাংশ করে এবং উত্তরা, ধানমন্ডি ও পল্লবীতে ৩ শতাংশ করে রোগী পাওয়া গেছে।
এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ রোগী পাওয়া গেছে ঢাকা জেলায়, যা মোট রোগী ৪৯ শতাংশ। ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম ও বরিশাল জেলায় ৫ শতাংশ করে। এরপর পটুয়াখালী, ফরিদপুর, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, পিরোজপুর, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ জেলায় প্রায় ২ শতাংশ করে রোগী পাওয়া গেছে।
ডেঙ্গু রোগী ও মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতি এখনো অব্যাহত রয়েছে। তবে আগের সপ্তাহের (৩৩তম সপ্তাহ) তুলনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু কিছুটা কমেছে। এ সময় রোগী কমেছে ৭ শতাংশ ও মৃত্যু ১০ শতাংশ। তবে ৩৩তম সপ্তাহে তার আগের সপ্তাহের (৩২তম) তুলনায় রোগী বেশি কমেছিল ১৭ শতাংশ।
গত সপ্তাহে মোট রোগীর ৬২ শতাংশই ছিল পুরুষ ও নারী ৩৮ শতাংশ। কিন্তু নারী মৃত্যু ছিল মোট মৃত্যুর ৬৩ শতাংশ ও পুরুষ মৃত্যু ৩৭ শতাংশ। এ সময় নারী মৃত্যুর হার ছিল শূন্য দশমিক ৮২ শতাংশ ও পুরুষ মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ২৯ শতাংশ।
গত সপ্তাহে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ২১-২৫ বছর বয়সী, যা মোট আক্রান্তের ১৬ শতাংশ ও বেশি মারা গেছে ৩৬-৪০ বছর বয়সী মানুষ, যা মোট মৃত্যুর ১১ শতাংশ। এরপর ১০ শতাংশ মৃত্যু হয়েছে ৩১-৩৫ বছর বয়সীদের।
আরও ১১ মৃত্যু, ভর্তি ২৩২৭ : গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) দেশে ডেঙ্গুতে আরও ১১ জন মারা গেছে এবং এ সময় ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৩২৭ জন। এ নিয়ে চলতি বছর মারা গেল ৫৪৮ ও ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ১৪ হাজার ৫১১ জন। নতুন মৃত ১১ জনের মধ্যে ৮ জন ঢাকার এবং ৩ জন ঢাকার বাইরের বাসিন্দা।
বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন প্রত্যাশা করে যুক্তরাজ্য। সেই প্রত্যাশার কথা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছেন বাংলাদেশে দেশটির হাইকমিশনার সারাহ কুক। গতকাল রবিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কেও জানতে চেয়েছেন। সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে তাকে আশ্বস্ত করেছেন সিইসি। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সিইসির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার। বৈঠকে সিইসির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান ও কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের পর সারাহ কুক সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উৎসাহিত করে; যাতে বাংলাদেশের জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা করতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাধীন, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ এবং নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং তার দলের সঙ্গে আমার এটি প্রথম সৌজন্য সাক্ষাৎ। গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে।’
সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘বিভিন্ন বিষয় আলাপচারিতার মধ্যে নির্বাচন প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। উনি (সারাহ কুক) জানতে চেয়েছিলেন আমাদের প্রস্তুতি কেমন। আমরা বলেছি, নির্বাচন সম্পর্কে আশাবাদী। সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।’
সিইসি বলেন, ‘উনি (সরাহ কুক) অতিরিক্ত যেটা বলেছেন নির্বাচনটা যেন পার্টিসিপেটরি (অংশগ্রহণমূলক) এবং ক্রেডিবেল (বিশ্বাসযোগ্য) হয়। এ ক্ষেত্রে আমরা আমাদের পক্ষ থেকে কী ভূমিকা পালন করব? ইলেকশন ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার হতে হলে যারা পোলিং এজেন্ট তাদের ভূমিকাটা গুরুত্বপূর্ণ।’
আলোচনায় গণমাধ্যমের ভূমিকা উঠে এসেছে জানিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, পর্যবেক্ষকের বিষয়টা আলোচনা হয়েছে। তারা বলেছেন, নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছতার ওপর জোর দেবে। এ জন্য পর্যবেক্ষক এবং গণমাধ্যমের কাছ থেকে খুব বস্তুনিষ্ঠ সহায়তা চাইবেন তারা। কারণ নির্বাচনের যে একটা দর্পণ তা প্রতিফলিত হবে গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে।
সিইসি জানান, সারাহ কুক বলেছেন গণমাধ্যমের জন্য যে নীতিমালা হয়েছে, সেখানে ভোটকক্ষে পারমিশন (অনুমতি) নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তারা বলেছেন, পারমিশন বলে কিছু ছিল না। শেষ পর্যন্ত গণমাধ্যম থেকে যে দাবিটা আসছে, সেটা হলো মোটরসাইকেলের বিষয়। একটা কারণে তারা মোটরসাইকেল বাদ দিয়েছিলেন। কারণ মোটরসাইকেলের অপব্যবহার হয়। যারা মাসলম্যান (পেশিশক্তি ব্যবহারকারী), তারা মোটরসাইকেল ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে সংকট তৈরি করে। একই সঙ্গে বলেছেন, গণমাধ্যমের যে দাবি, সেটাও যৌক্তিক। মোটরসাইকেল ছাড়া তাদের নির্বাচনের খবর সংগ্রহ কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। সে জন্য এ বিষয়টা বিবেচনাধীন রেখেছেন। এ-সংক্রান্ত নীতি তারা যথাযথভাবে পরিবর্তন করবেন।
১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর ফ্রান্সের প্যারিসে শিক্ষকদের অবস্থা নিয়ে আন্তঃসরকার সম্মেলন হয়েছিল। সেখানেই শিক্ষকদের কথা চিন্তা করে ইউনেস্কো এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন (আইএলও) কিছু পরামর্শে স্বাক্ষর করে। এতে শিক্ষকদের অধিকার, দায়িত্ব এবং বিশ্বব্যাপী শিক্ষকতা পেশার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা ছিল। ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর শিক্ষক দিবস বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি পালনে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল (ইআই) ও তার সহযোগী ৪০১টি সদস্য সংগঠন মূল ভূমিকা রাখে। দিবসটি উপলক্ষে ইআই প্রতি বছর একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে থাকে, যা জনসচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকতা পেশার অবদানকেও স্মরণ করিয়ে দেয়।
বিশ্বের ১০০টি দেশে শিক্ষক দিবস পালিত হয়ে থাকে। অনেক দেশে দিবসটি ভিন্ন ভিন্ন তারিখে পালিত হয়। যেমন, ভারতে শিক্ষক দিবস পালিত হয় ৫ সেপ্টেম্বর। অস্ট্রেলিয়ায় অক্টোবর মাসের শেষ শুক্রবার। শেষ শুক্রবার যদি ৩১ অক্টোবর হয়, তা হলে ৭ নভেম্বর শিক্ষক দিবস পালিত হয়। ভুটান শিক্ষক দিবস পালন করে ২ মে, ইন্দোনেশিয়া ২৫ নভেম্বর, মালয়েশিয়া ১৬ মে, ইরান ২ মে, ইরাক ১ মার্চ, আর্জেন্টিনা ১১ সেপ্টেম্বর, ব্রাজিল ১৫ অক্টোবর, চীন ১০ সেপ্টেম্বর, তাইওয়ান ২৮ সেপ্টেম্বর, থাইল্যান্ড ১৬ জানুয়ারি, সিঙ্গাপুর সেপ্টেম্বরের প্রথম শুক্রবার দিবসটি পালন করে। ইউনেস্কো কর্র্তৃক নির্ধারিত এ বছরের বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘ÔThe teachers we need for the education we want : The global imperative to reverse the teacher shortage’। অর্থাৎ, ‘কাক্সিক্ষত শিক্ষা পেতে যেমন শিক্ষক চাই : শিক্ষক সংকট ঠেকাতে বৈশি^ক উদ্যোগ।’ প্রতিপাদ্যটি বেশ চমৎকার ও বর্তমান সময়ের সঙ্গে খুবই প্রাসঙ্গিক। কারণ আমরা যে ধরনের শিক্ষা চাই আমাদের সে ধরনের শিক্ষকই দরকার। তাই প্রথমত বুঝতে হবে যে আমরা আমাদের ভবিষৎ প্রজন্মকে কী শিক্ষা দিতে চাই। শিক্ষার যথাযথ বিকাশের কাজটি শিক্ষকদেরই। আর এর জন্য শিক্ষকদের হতে হবে দক্ষ ও যোগ্য। পাশাপাশি দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষকের যে ঘাটতি সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
শিক্ষাকে যদি জাতির মেরুদণ্ড ধরা হয়, তবে সেক্ষেত্রে শিক্ষকরা হলেন শিক্ষার মেরুদণ্ড। কিন্তু শিক্ষকদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে দেখা যায়। শিক্ষকরা সমস্যায় থাকলে শিক্ষার গুণগত মান এবং কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে কিছু প্রস্তাবনা করা যেতে পারে। প্রথমত শিক্ষকতা পেশার সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ পেশায় সামগ্রিক নিরাপত্তা না থাকার ফলে শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের অনেকে আসতে চায় না এবং এভাবে চলতে থাকলে আগামীতেও আসতে চাইবে না। আমাদের এখনই সময় এসেছে, এই পেশার সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। শিক্ষকরা আগামীতেও যাতে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে, সেই জন্য বিভিন্ন বীমা, বিশেষ ঋণ সহায়তা দিয়ে পেশার সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী শিক্ষকদের বেতন সুনির্দিষ্ট করে কেন্দ্রীয়ভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শিক্ষকরা যেন বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন তা ভাবতে হবে। সময়ের সঙ্গে জীবন ও জীবিকার কথা বিবেচনা করে তাদের বেতনের মানদণ্ড মানসম্মত করতে হবে। দেখা যায়, শিক্ষকতা দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পেশা হলেও দেশের মেধাবীরা এ পেশায় আসতে চান না অন্য পেশার মতো এ পেশায় সামগ্রিক নিরাপত্তা নেই বলে। অথচ মেধাবীদেরই এ পেশায় বেশি বেশি আসার কথা ছিল। এতে দেশ ও জাতি উপকৃত হতো। শিক্ষকতাকে মহান পেশা বলা হলেও কার্যত এ পেশা অনেকটা অবহেলিত। অন্য পেশার মতো এ পেশায় সামগ্রিক নিরাপত্তা নেই। এ কারণে মেধাবীরা এ পেশায় আসতে চান না। তাই এ পেশার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত এখন সময়ের দাবি।
শিক্ষা খাত সময়ের সেরা বিনিয়োগের ক্ষেত্র। সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট বা দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের জন্য শিক্ষায় বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। ভারতের নোবেল বিজয়ী শিক্ষাবিদ কৈলাশ সত্যার্থী বলছেন, শিক্ষায় ১ ডলার বিনিয়োগ করলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে ১৫ গুণ রিটার্ন পাওয়া সম্ভব। ফলে শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়িয়ে শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের আগ্রহ বাড়াতে হবে। আগ্রহী শিক্ষার্থীদের স্বচ্ছ ও যুগোপযোগী মূল্যায়নের মাধ্যমে এই পেশায় আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে হবে।
শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা শিক্ষার উন্নয়নে এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তথ্যপ্রযুক্তির বদৌলতে পৃথিবী প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে শিক্ষকদেরও বদলাতে হবে প্রতিনিয়ত। এক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষকরা কতটা পিছিয়ে সেটা দেশে মহামারী করোনা আসার পর আমরা লক্ষ করেছি। একজন শিক্ষক আজই আগামী দশকের সুযোগ ও সমস্যা মোকাবিলার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করছেন। ফলে শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য যুগোপযোগী ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ, সিম্পোজিয়াম ও কর্মশালার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকদের আত্মোন্নয়নের জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষকদের গড়ে তুলতে হবে আন্তর্জাতিক মানের।
শিক্ষক সংকট ও শিক্ষকদের প্রমোশনজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দেখা যায়, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচুর শিক্ষক সংকট। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রমোশন যেন সোনার হরিণ। শত শত প্রধান শিক্ষকের পদ খালি পড়ে আছে। কিন্তু প্রমোশন নেই। সহকারী প্রধান শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক হিসেবে প্রমোশন হলে সিনিয়র শিক্ষকদের সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদে প্রমোশন পাওয়ার সুযোগ হবে। প্রমোশন হলে কাজে গতি বাড়বে। তাছাড়া সিলেকশন গ্রেড, টাইম স্কেল, যথাসময়ে পদোন্নতি ইত্যাদির জটিলতা নিরসনেও কাজ করতে হবে। শিক্ষার প্রাথমিক স্তর হলো শিক্ষার্থীদের জীবনের ফাউন্ডেশন বা ভিত্তি। এ স্তরে শিক্ষকরা যদি যোগ্য ও যথাযথ দক্ষতাসম্পন্ন হন, তাহলে শিক্ষার্থীদের ভিত্তি মজবুত হবে। জ্ঞানে-মানে একটি শক্তিশালী প্রজন্ম গড়ে উঠবে। এজন্য প্রাথমিক স্তরে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। আর শিক্ষার মান উন্নয়নে এখন এটা বড় চ্যালেঞ্জ। শিক্ষকদের কাজের স্বীকৃতি দিতে হবে। শিক্ষকতায় স্বীকৃতি খুব গুরুত্বপূর্ণ মোটিভেশন হিসেবে কাজ করে। সুতরাং, শিক্ষকদের প্রতিটি কাজের স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ইদানীং অনেক প্রতিষ্ঠানই শিক্ষকদের কাজের স্বীকৃতি প্রদান করে থাকে। যেমন: বছর শেষে ‘সেরা শিক্ষক’ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এই বছর সরকারের এটুআই ও গ্রামীণফোনের উদ্যোগে ‘সংকটে নেতৃত্বে’ শিরোনামে শিক্ষকদের সম্মাননা প্রদান করেছে। শিক্ষকদের ক্লাসের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের থেকে মূল্যায়ন নিয়ে শিক্ষককে স্বীকৃতি দিতে হবে। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠান সবাই সফলকাম হবে।
দাবি ছিল শিক্ষক দিবসটিকে সরকারিভাবে পালন করা। অবশেষে গত বছর প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে দিবসটি ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। এর আগে এত দিন ধরে এ দিবসটি সরকারিভাবে পালিত হতো না। এখন থেকে পালিত হবে। এ বছর জাতীয় শিক্ষক দিবসের পরিবর্তে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালনেরও উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই দিবসটি এখন সরকারিভাবে পালিত হলে শিক্ষকরা অবশ্যই নিজেদের সম্মানিত বোধ করবেন, যা তাদের জন্য বড় ধরনের একটা প্রণোদনা হিসেবে কাজ করবে। শিক্ষকতা একটি মহান ও গুরুত্বপূর্ণ পেশা। জাতি গঠনে শিক্ষকদের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু সাম্প্রতিককালে শিক্ষকদের ওপর হামলা ও অপমানের ঘটনা আমাদের ব্যথিত করে। পাশাপাশি বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষকদের নৈতিক ও আদর্শিক বিচ্যুতিও আমাদের সমানভাবে ব্যথিত করে। কারণ, শিক্ষকরাই জাতি গড়ার কারিগর। তারা যদি এমন হন তাহলে আমাদের কেমন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে উঠবে, সে প্রশ্ন না উঠে পারে না। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, শিক্ষকতা পেশার যথাযথ মূল্যায়ন ও শিক্ষকদের মানোন্নয়ন ছাড়া শিক্ষার সামগ্রিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
লেখক : লেখক
ছুটির দিন নয়, এমনি একটা দিনে টাঙ্গাইলের উদ্দেশে রওনা হলাম সকাল ১০টার দিকে। ধারণা করলাম টাঙ্গাইল যেতে কমপক্ষে পাঁচ ঘণ্টা লাগবে। কারণ ঢাকা-টাঙ্গাইলের পথে পাঁচ ঘণ্টার ভ্রমণ করার অভিজ্ঞতা আমার আছে। শুধু পাঁচ ঘণ্টা নয়, আট ঘণ্টার অভিজ্ঞতাও আছে। কিন্তু যে জায়গাটা খুবই জটিলতাপূর্ণ সেই গাবতলী গিয়ে দেখলাম রাস্তা ফাঁকা আর কয়েকটি সাইনবোর্ড যেখানে লেখা ‘দাঁড়ালেই দণ্ড’। খুবই নির্বিঘ্নে আমিন বাজার সেতু পার হয়ে গেলাম। ভাবলাম এর পরের জায়গাটা হচ্ছে সাভার বাসস্ট্যান্ড। ওখানে ঘণ্টাখানেক লাগবেই। কিন্তু রহস্যজনকভাবে দেখলাম সেখানেও একই সাইনবোর্ড ‘দাঁড়ালেই দণ্ড’ এবং রাস্তা ফাঁকা। গেলাম নবীনগর সেখানেও একই অবস্থা, রাস্তা ফাঁকা। গাড়ি চলছে কোথাও কোনো বাধা নেই। তিন ঘণ্টার মাথায় আমি টাঙ্গাইলের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছালাম। কী করে সম্ভব হলো! হঠাৎ মনে পড়ল এ হচ্ছে সদ্য নির্বাচিত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র বন্ধুবর আনিসুল হক এবং প্রিয়ভাজন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমানের পদক্ষেপ।
এরপর ঈদের ছুটিতে টাঙ্গাইল যেতে খুব কষ্টভোগ করেছি। কিন্তু একবার ড্রাইভার জানাল, স্যার কালকে টাঙ্গাইল যেতে আমাদের কোনো অসুবিধা হবে না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কোনো ম্যাজিক হচ্ছে কি? ড্রাইভার বলল, হ্যাঁ, হচ্ছে। কালকে স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে বসবেন এবং তিনি সারা দেশের ট্রাফিক সিস্টেমের পরিস্থিতি দেখবেন। সত্যিকারের ম্যাজিক ঘটে গেল। ঈদের আগের দিন আড়াই ঘণ্টার মধ্যে মায়ের কাছে পৌঁছে গেলাম। এই ঘটনাগুলোতে কি মনে হয়? আমরা পারি। শুধু প্রয়োজন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার একটু হাল ধরা। কখনো হাল ধরেন মেয়র আনিসুল হক, কখনো জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান। কখনো বড় ধরনের সংকটে হাল ধরেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যথায় যা হওয়ার তাই হচ্ছে। কিন্তু সমগ্র ব্যবস্থাটাকে একটা নিয়ন্ত্রণে আনা কি সম্ভব নয়? প্রযুক্তির এই অভাবনীয় উন্নতির ফলে এটা তো কোনো বিষয়ই নয়। কেমন করে বিষয় নয় তাও জানি।
প্রাচ্যদেশীয় লোকগুলো বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের মানুষ আইন মানতে চায় না। আইনের ব্যাপারে তাদের এক ধরনের ক্ষোভ আছে। কেন আইন মানব? এই জন্যই লাখ লাখ মামলার স্তূপ জমে ওঠে আদালতগুলোতে। আজ থেকে ষাট-সত্তর বছর আগে জেলা শহরগুলোতে আদালতের সংখ্যা ছিল খুবই সীমিত। এখন সেখানে ছয়তলা থেকে আটতলা পর্যন্ত ভবনে বিভিন্ন আদালত গড়ে তোলা হয়েছে। একটি জেলা শহরেও অনেক বিচারক রাখতে হচ্ছে এবং ছয় সাত এমনকি আটতলা ভবন নির্মাণ করতে হচ্ছে শুধু আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য। দেশের স্বাধীনতা কি শুধু আদালত নির্মাণের কাজ করবে না কি মানুষে মানুষে সংঘাত কমিয়ে রাষ্ট্রীয় আইন লঙ্ঘনকারীর সংখ্যা কমিয়ে নিয়ে আসবে?
আমার মনে পড়ে ছোটবেলায় দেখতাম একটা লোক ছোট্ট একটা গাড়ি চালিয়ে চলাচল করত। পাঁচ-ছয় গজ দূরের একটা জায়গায় যেতেন। একটু বড় হয়ে জেনেছি তিনি জেলার মুন্সেফ। বাসা থেকে আদালতে যান। তার চেহারা কখনো দেখিনি। কিন্তু একটা ছোট্ট এলাকায় তিনি এসব আইন আদালতের বিচার করেন। আর বাকিটা করেন ম্যাজিস্ট্রেটরা। সেটাও খুব বড় কিছু নয়।
সম্প্রতি ব্যাংকের একজন ডিজিএমের স্ত্রীর সঙ্গে পুলিশের একজন অফিসারের দ্বন্দ্ব হয়েছে। কারণ উনি ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে গাড়ি পার্ক করেছিলেন। কিন্তু ডিজিএমের স্ত্রী বলছেন তিনি আইন ভঙ্গ করেননি। তার নামতে যতটুকু সময় লেগেছে ততটুকু সময়ই তিনি নিয়েছেন। এসব ব্যাপারে অনেক বাহাস হতে পারে, কে ভুল আর কে ঠিক? কিন্তু ট্রাফিক আইন তো মানতে হবে। যেখানে ট্রাফিক আইন সম্পূর্ণভাবে যন্ত্র বিবর্জিত আধুনিককালে সমস্ত ব্যবস্থা উপেক্ষিত, যে শহরে সবুজ, হলুদ এবং লালবাতির সংকেত জ¦লে না সেই শহরে ট্রাফিক আইন কী করে বাস্তবায়ন করা যায়? অধিকাংশ সময়ে হস্ত নির্দেশিত ট্রাফিক সিগন্যাল দেখা যায় অথবা নির্দেশকারী একেবারেই তার অভিজ্ঞতাপ্রসূত ট্রাফিক সিগন্যাল দিয়ে যাচ্ছেন। তখন তা মেনে চলাও কি নাগরিক অধিকারের মধ্যে পড়ে? এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ঢাকাবাসী এই যে আদিম অবস্থার মধ্যে পড়ে আছে তার জন্য তাদের কোনো আক্ষেপ নেই?
স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা একটি আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, যেটা ছিল আমাদের একটা আদর্শ ব্যবস্থা। সেই ব্যবস্থাকে কেমন করে ধ্বংস করা হলো তা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। স্কুলের ওই শিশুরা মন্ত্রীদের, পুলিশ অফিসারদের হাঁটতে বাধ্য করেছিল। তারা ওই ব্যবস্থাকে কিন্তু মেনেও নিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে বিষয়টি রাজনৈতিক হয়ে দাঁড়ায়।
দেশের রাজনীতিবিদদের কি করে বোঝাব সব কিছু রাজনৈতিক করবেন না! সব কিছুকে রাজনৈতিক করতে গেলে অনেক বড় বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। দয়া করে শিক্ষাকে নিয়ে রাজনীতি করবেন না। দুর্নীতিকে নিয়ে রাজনীতি করবেন না। শিক্ষাকে রাজনীতি করতে গেলে কীভাবে দুর্নীতি এসে যায় সেটা আপনারা জানেন। তদবিরে নিয়োগ বাণিজ্যের লাখ লাখ টাকায় শুধু কিছু অশিক্ষিত লোকরা চাকরি পেয়ে যায়। চাকরি পেয়ে তারা শিশুদের মননকে যে কীভাবে ধ্বংস করে দেয় তা রাজনীতিকরা একটিবারও ভাবেন না।
ঢাকা শহরের নাগরিকরা ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে তেমন কিছু বলেন না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়েও কিছু বলেন না। প্রথমটায় বলেন না তার কারণ রিকশায় চড়তে তারা খুবই আনন্দ পান এবং অনেক শিক্ষিত লোককে পরিবার-পরিজনকে নিয়ে রিকশায় করে রাস্তার রংসাইড দিয়ে ঢুকে পড়েন তারা রিকশাচালককে মানা তো করেনই না, অনেক সময় উৎসাহ এমনকি রংসাইডে ঢুকে পড়ার পরামর্শও দেন। আমি এই প্রসঙ্গে তেমন বেশি কিছু বলতে চাই না। কারণ শহরগুলোতে গণপরিবহনের কোনো ব্যবস্থা নেই। অনেক দূর হেঁটে এসে তারা যে গণপরিবহনে চড়ার একটা সুবন্দোবস্ত পাবেন, সেই ব্যবস্থা আমরা রাখতে পারিনি। পৃথিবীর প্রতিটি বড় বড় শহরে নাগরিকদের অনেক পথ হাঁটতে হয়। কারণ তারা গণপরিবহনে উঠবেন হেঁটেই, কাজেই তাদের স্বাস্থ্যও অত্যন্ত ভালো থাকে। এ দেশেও হয়তো রিকশা বন্ধ করে দিলে মধ্যবিত্তদের একটা আন্দোলনও শুরু হয়ে যাবে। যার নাম হবে অলস বাঙালিদের আন্দোলন।
কিন্তু আবার এও দেখেছি, উত্তরা বা মিরপুরের নাগরিকরা খুব স্বতঃস্ফূর্তভাবে ট্রেনে উঠছেন। কিন্তু ধানম-িবাসীর কী হবে? এখানে তো গণপরিবহনের কোনো ব্যবস্থা নেই, একমাত্র বাসই ভরসা। মালিবাগ চৌধুরী পাড়ায় একই ব্যবস্থা। তাদের জন্যও কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এসব সমস্যা মিলে রাষ্ট্রের বায়ান্ন বছর হয়ে গেল, কোনো সুশৃঙ্খল আধুনিক গণপরিবহনের ব্যবস্থা হলো না। অতএব যা হওয়ার তাই হচ্ছে।
দেখা যাচ্ছে আমাদের নগরগুলোতে সামান্য বৃষ্টি হলে ঢাকা, চট্টগ্রামের রাস্তায় পানি জমে যায়। সেখানে তখন মানুষ মারা পড়বে এক্ষেত্রে রাষ্ট্র এটার কোনো দায়দায়িত্বও নেবে না? দুটি সিটি করপোরেশন নিবিড় ঘুমে রাত্রিযাপন করবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বলে একটি মন্ত্রণালয় আছে। তারা বৃষ্টিতে ঘুম উপভোগ করবে আর মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় বিপদসঙ্কুল সময় অতিক্রম করবে। এসব সমস্যা দীর্ঘদিন যাবৎ চলে আসছে। কিন্তু এর যে সমাধান সম্ভব তা কিন্তু অনেকেই জানেন না। আনিসুল হক জানতেন। ঢাকার বর্তমান মেট্রোপলিটন কমিশনার হাবিবুর রহমান জানেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও জানেন। জানেন অনেক নাগরিক। কিন্তু সমস্যা সমাধানের সুযোগ অত্যন্ত কম। তাদের ক্ষমতা যদি বাড়ানো যায় তাহলে অনেক কিছু ঘটানো সম্ভব। সেই দিকটায় আমরা কি যেতে পারি? লেখক: নাট্যকার, অভিনেতা ও কলামিস্ট
‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩’ শীর্ষক একটি প্রকল্প ২০২০ সালে অনুমোদন করিয়ে নিয়েছিলেন সংসদ সদস্যরা (এমপি)। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় তালিকা অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা তাদের চাহিদার পরিবর্তন আনেন। তারা ইউনিয়ন পর্যায়ে রাস্তা না করে সেতু তৈরির ওপর জোর দেন। কিছু ক্ষেত্রে খাতভিত্তিক ব্যয় না চেয়ে থোক বরাদ্দও চাওয়া হয়েছিল। চাহিদার জটিলতায় ধীরগতিতে চলে প্রকল্পের বাস্তবায়ন। ঠিক সময়ে প্রকল্পটি শেষ করতে না পারার শঙ্কায় ফের সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
যদিও একই রকম আরেকটি প্রকল্পের কাজ তখনো চলমান ছিল। চলমান একটি প্রকল্প শেষ না হতেই সংসদ সদস্যদের জন্য আরেকটি প্রকল্প নিয়ে তখন বেশ আলোচনা-সমালোচনাও হয়েছিল।
প্রকল্প-৩-এর মেয়াদ আছে আর এক বছর। অথচ কাজ চলছে ঢিমেতালে। নির্বাচনের আগে তাদের চাহিদার পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৬ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকার প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের পর ধীরে ধীরে এগোতে থাকে। এর বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। গত আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি ৪১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
এ প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে প্রত্যেক সংসদ সদস্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছিলেন। সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট নির্মাণে বছরে পাঁচ কোটি টাকা করে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়।
প্রতি বছর পাঁচ কোটি করে চার বছরে এ অর্থে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা তাদের। সিটি করপোরেশন এলাকার ২০ সংসদ সদস্য এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্যরা এ বরাদ্দের বাইরে রয়েছেন।
নিজ এলাকার উন্নয়নে এমন সুযোগ পেলেও সংসদ সদস্যরা কাজে লাগাতে পারেননি। প্রকল্পের মেয়াদ প্রায় শেষ। অথচ প্রকল্প বাস্তবায়ন অর্ধেকেরও কম হয়েছে। অধিকাংশ সংসদ সদস্যই তাদের প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারেননি। কিন্তু তারা বলছেন, যে চাহিদা তারা দিয়েছিলেন তার অধিকাংশ পেয়েছেন।
জানতে চাইলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার আসনে যেসব চাহিদা দিয়েছিলাম সবগুলোই পেয়েছি। কিন্তু এ মুহূর্তে এসে বাস্তবায়নের অগ্রগতি ৪১ শতাংশ বলা হচ্ছে, এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। পরিকল্পনা কমিশনে কীসের ভিত্তিতে এই সংশোধনী প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা জানি না।’
সংসদ সদস্যরা যে চাহিদা পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছেন সে বিষয়ে ইনু বলেন, ‘কোনো এমপি চাহিদা পরিবর্তন করার কথা নয়। আমার এলাকায় যা চেয়েছি তাই তো পুরোটা তারা দিতে পারেননি। প্রতি বছর পাঁচ কোটির বরাদ্দ, তার বাইরে তো তারা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না।’ পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা (পিইসি) অনুষ্ঠিত হয়েছে। পিইসি সভায় প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ রুহুল আমিন খানের কাছে সংশোধনের যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। সেখানে তিনি বলেন, এ প্রকল্পে জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে ইতিমধ্যে বেশ কিছু সড়ক ও সেতু-কালভার্ট নতুনভাবে নির্মাণের প্রস্তাব পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত স্কিমগুলোর গুরুত্ব বিবেচনায় বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। স্কিমগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পে অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রয়োজন।
পিইসি সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, এ বিষয়ে কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. ছায়েদুজ্জামান বলেন, যেসব স্কিম অতীব জনগুরুত্বপূর্ণ সেগুলোর যৌক্তিকতাসহ সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (আরডিপিপি) অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তবে, নতুনভাবে গৃহীত স্কিমগুলো বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দ ৫০ কোটি টাকার কম করতে হবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তৃতীয় দফার এ প্রকল্পের আওতায় নতুন করে উপজেলা সড়ক নির্মাণ করা হবে ৩০৫ দশমিক ২১ কিলোমিটার। ইউনিয়ন সড়ক নির্মাণ করা হবে ৬৬০ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার। গ্রাম সড়ক উন্নয়ন হবে ৫ হাজার ৭৫ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার। গ্রামীণ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ হবে ১ হাজার ৯০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার। গ্রামীণ সড়কে ১০০ মিটারের কম দৈর্ঘ্যরে সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হবে ৭ হাজার ৯৯২ দশমিক ২২ মিটার।
এসব প্রস্তাব সংসদ সদস্যদের চাহিদার ভিত্তিতেই করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবায়নের সময় ফের বাদ সাধেন তারাই। পরে মূল প্রকল্প প্রস্তাব থেকে প্রস্তাবিত প্রথম সংশোধনে ১৯৩ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক, ৮৩ দশমিক ৯১ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক, ৫০৫ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার গ্রাম সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম বাদ দেওয়ার আবদার করেছেন তারা। এর বিপরীতে ৩৯২ দশমিক শূন্য ১ কিলোমিটার গ্রাম সড়ক ও ২ হাজার ৬৭৪ দশমিক ৫১ মিটার সেতু-কালভার্টের প্রস্তাব এসেছে তাদের কাছ থেকে। সে অনুযায়ী সংশোধনী প্রস্তাব তৈরি করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ রুহুল আমিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা চিন্তা করেছি এ রাস্তাটি আজকে করব, কিন্তু দেখা গেল অন্য কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে এ রাস্তাটি হয়ে গেছে। এমপিরা যেভাবে ডিও দেন প্রকল্পটি সেভাবে চলে, আমাদের ফ্রেমওয়ার্কটিই সেভাবে তৈরি করা।’
এ মুহূর্তে প্রকল্পটি সংশোধনের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে পরিবেশের জন্য ড্রেনেজ সুবিধা রাখতে হবে। একটি রাস্তা করতে গিয়ে দেখা গেল, একটি কালভার্ট বা সেতুর প্রয়োজন হয়েছে। এটি এখন প্রথম প্রায়োরিটি (অগ্রাধিকার)। এটি প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন হিসেবে কাজ করছে।’
বাস্তবায়নের ধীরগতির কারণ হিসেবে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘যখন প্রকল্পটি অনুমোদন হয়েছিল তখন করোনা মহামারী ছিল। করোনার কারণে প্রকল্পটির কাজ দেরিতে শুরু হয়েছিল, যার ফলে এ মুহূর্তে বাস্তবায়ন অগ্রগতি এ পর্যায়ে এসেছে।
পিইসি সভায় সংশোধনের কারণ জানতে চাওয়া হলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ১১তম জাতীয় সংসদ সদস্যদের প্রাথমিক চাহিদাপত্র (ডিও) গ্রহণ করে স্কিমের তালিকা প্রণয়ন করা হয়। তবে বাস্তবায়ন পর্যায়ে বিশেষ পরিস্থিতি ও অগ্রাধিকার ক্রমপরিবর্তনের ফলে আরডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত স্কিম তালিকা পরিবর্তন করে ডিওর মাধ্যমে সংশোধিত নতুন স্কিম তালিকা করা হয়েছে। পরিবর্তিত স্কিম তালিকা অনুযায়ী গ্রাম সড়ক ও সেতু-কালভার্টের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং উপজেলা-ইউনিয়ন সড়কের পরিমাণ কমেছে।
এ প্রকল্পের তথ্য-বিশ্লেষণে দেখা যায়, এতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৭৫ কিলোমিটারের গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নের জন্য। এতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪ হাজার ৬০ কোটি টাকা। ৬৬০ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক উন্নয়নের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫২৮ কোটি টাকা, ৩০৫ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক উন্নয়নের জন্য ২৯০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। তা ছাড়া ১ হাজার ৯০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক সংরক্ষণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৮১ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, এর আগে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রথম সরকার গঠনের পর প্রত্যেক সংসদ সদস্য নিজ আসনের অবকাঠামো উন্নয়নে ১৫ কোটি টাকা করে পেয়েছিলেন। সে সময় প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৪ হাজার ৮৯২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এটি ২০১০ সালের মার্চ থেকে ২০১৬ সালের জুনে শেষ হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে সংসদ সদস্যদের ২০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এ পর্যায়ে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৬ হাজার ৭৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়ন হয়েছে। এ প্রকল্পটি শেষ না করেই তৃতীয় মেয়াদে আবার ২০ কোটি টাকা করে দেওয়া হয়। এই উদ্যোগের কারণে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় প্রশ্নের মুখে পড়ে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এ প্রকল্পের আওতায় সংসদ সদস্যরা সরাসরি টাকা পাবেন না। তারা শুধু তাদের নির্বাচনী আসনে পছন্দ মোতাবেক প্রকল্পের নাম দেবেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আবার সরকারকে বলব, রাজনৈতিকভাবে প্রতিপক্ষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার পরিণতি ভালো হয় না। যত দ্রুত সম্ভব খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিন। নাগরিক হিসেবে তাকে সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেওয়া হোক। তা না হলে একজন গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রিয় প্রবীণ নাগরিকের প্রতি বেআইনি, অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণের জন্য সরকারই দায়ী থাকবে।’
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, ‘সুচিকিৎসা পাওয়া নাগরিকের মৌলিক অধিকার। বেগম জিয়া দেশের একজন সিনিয়র সিটিজেন। সংবিধান তার বেঁচে থাকার জন্য চিকিৎসা গ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করেছে। যে রোগের চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়, সামর্থ্য অনুযায়ী দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে বাধা দেওয়া সংবিধানকে অবজ্ঞা করা। দেশনেত্রীকে চিকিৎসা-সুরক্ষার সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, যা অন্যায়। এটা অমানবিক। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে আইনের দোহাই দিয়ে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত রাখার সুযোগ নেই। সরকার হীন উদ্দেশ্যে আইনের দোহাই দিয়ে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
চেয়ারপারসনের চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উনার (খালেদা জিয়া) যারা চিকিৎসা করছেন এটা তাদের বিষয়। চিকিৎসকরা তার বেস্ট ট্রিটমেন্ট করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। আমরা তো জোর করে তাকে নিয়ে যেতে পারব না বিদেশে। আমাদের পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। আমরা যা আছে সে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করে যাব। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন হবে এবং খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা হবে।’
ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য খন্ডন করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সত্য হলো, জিয়াউর রহমানের শাসনামলে দন্ডপ্রাপ্ত আসামি তৎকালীন জাসদের সাধারণ সম্পাদক আ স ম আবদুর রবকে চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। একইভাবে ১৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমকে ১/১১’র সরকার ২০০৮ সালে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে। এ রকম দৃষ্টান্ত আরও আছে। শেখ হাসিনাও এমন সুযোগ (বিদেশে চিকিৎসা) নিয়েছেন ২০০৮ সালে। জরুরি আইনের সরকারের সময়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বেশ কয়েকটি চাঁদাবাজির মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল। ওই অবস্থায় নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হলে তিনি দুই/তিনদিনের মধ্যে বিদেশে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। তিনি বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছিলেন একজন ওয়ারেন্টি আসামি হিসেবে; প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথও নিয়েছিলেন। সুতরাং আইনের দোহাই দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই।’
আপনারা এ অবস্থায় কি গণতান্ত্রিক পথে হাঁটবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রের বাইরে যেতে পারি না। এরপরও যদি কেউ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বাধা দেয় সে বাধাও আমরা গণতান্ত্রিকভাবে অতিক্রম করব। তার (শেখ হাসিনা) বক্তব্য তো আপনারা শুনেছেন। উনি তো বিদেশে যেতে দেবেন না বলেছেন। তারপরও আমরা আপিল করছি শুভবুদ্ধির কাছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তার (খালেদা জিয়ার) পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শর্তসাপেক্ষে উনি বিদেশে যাবেন না।’
খালেদা জিয়াকে অসুস্থ অবস্থায় রেখে নির্বাচনে যাবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রশ্নই ওঠে না। বেগম জিয়াকে এ অবস্থায় রেখে, হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। আমাদের পরিষ্কার কথা।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন।
দুর্গাপূজার আগে পরে সরকারকে আলটিমেটাম দেবে বিএনপি : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একদফার আন্দোলনের শেষ ধাপে সরকারকে আলটিমেটাম দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুগপৎ আন্দোলনে নেতৃত্বে থাকা দল বিএনপি। সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান দুর্গাপূজার আগে বা পরে এই আলটিমেটাম ঘোষণার সিদ্ধান্ত থাকলেও পূজার কয়েকদিন কর্মসূচি রাখবে না দলটি। এর আগে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৫ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় বিএনপির রোডমার্চ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে বিএনপি। সেটি না হলে প্রথম ধাপের কর্মসূচি শেষে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে আলটিমেটাম দেওয়ার আগে চূড়ান্ত ধাপের আংশিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এর আগে সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে যুগপতের শরিকদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করা হবে। তাদের দেওয়া বিভিন্ন প্রস্তাবনা সমন্বয় করে আন্দোলন পরিকল্পনা প্রণয়ন চূড়ান্ত হবে। গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে ওই সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা অংশ নেন।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা একদফার আন্দোলনে রয়েছি। প্রতিদিনই আমাদের কর্মসূচি থাকছে। নতুন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা সরকারকে আর সময় দিতে চাই না। এবারের কর্মসূচি হবে রাজধানীকেন্দ্রিক। এই কর্মসূচির মধ্য দিয়েই সরকার পতন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে।’
বৈঠক সূত্রগুলো বলছে, প্রথম ধাপের কর্মসূচি শেষে ৭ অক্টোবর থেকে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি শুরু হতে পারে। এর এক পর্যায়ে ১৮ অক্টোবরের দিকে সরকারকে পদত্যাগে আলটিমেটাম ঘোষণা করা হতে পারে। এর আগ পর্যন্ত রাজধানীর পাশাপাশি বাইরেও কিছু কর্মসূচি হবে। তবে আলটিমেটামের পর সব কর্মসূচি হবে ঢাকাকেন্দ্রিক। তখন সারা দেশের নেতাকর্মীদের রাজধানীর কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার নির্দেশনা দেবে বিএনপি।
জানা গেছে, চলতি অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে একদফার যুগপৎ আন্দোলন বেগবান করার আগে যুব ও ছাত্র কনভেনশন করবে বিএনপি। ছাত্র কনভেনশনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনের বটতলায় করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এজন্য গত ২৯ সেপ্টেম্বর ১৫টি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রঐক্য’র আত্মপ্রকাশ হয়েছে। একদফার আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্পৃক্ত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দলটির নেতারা মনে করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে পারলে চূড়ান্ত সফলতা আরও সহজ হবে। এছাড়াও যুব কনভেনশন সফল করতে জাতীয়তাবাদী যুবদলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যুব সংগঠনের সমন্বয়ে শিগগির ‘যুব ঐক্যজোট’-এর আত্মপ্রকাশ ঘটবে।
বৈঠক সূত্র আরও জানায়, ১৮ অক্টোবরের আগেই পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) বরাবর স্মারকলিপি দিতে পারে বিএনপি। স্মারকলিপিতে পুলিশকে চলমান হামলা-মামলা-গ্রেপ্তার বন্ধ এবং ইসিকে সম্ভাব্য একতরফা নির্বাচনের উদ্যোগ না নেওয়ার আহ্বান জানানো হবে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা করতে পারেন, সেজন্য আগামী ২০ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত পূজা চলাকালীন বড় কোনো কর্মসূচি রাখবে না যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো।
সূত্রগুলো বলছে, সরকার আলটিমেটাম মেনে পদত্যাগ না করলে, দুর্গাপূজার পরে ঘেরাও কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে আলটিমেটামের কর্মসূচি শুরু হবে। এই আন্দোলনের শুরুতেই সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এরপর পর্যায়ক্রমে গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ঘেরাওসহ টানা অবস্থান কর্মসূচিতে যেতে পারে তারা। পাশাপাশি রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধের মতো কর্মসূচিও আসতে পারে। একেবারে বাধ্য না হলে হরতালের মতো কর্মসূচিতে যাবে না বিএনপি।
থাইগ্লাস আর লাল ইটে চকচক করছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতাল ভবন। কার্যক্রম পরিচালনায় রুটিন করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের। অথচ ভবনটির ভেতরে চিকিৎসা-সংক্রান্ত যন্ত্রপাতির অস্তিত্ব নেই। নেই চেয়ার-টেবিল ও অন্যান্য আসবাব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০১৬ সালে ৫ কোটিরও বেশি টাকা খরচ করে একটি ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালের অনুমোদন দেওয়া হয়। ঢাকাবাসীর গৃহপালিত বিভিন্ন পশুপাখির চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতে হাতে-কলমে এ বিষয়ে ধারণা পান, সে উদ্দেশ্যেই এটি করা হয়।
নানা জটিলতা পেরিয়ে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন আর ২০২৩ সালের মে মাসে ঘটা করে উদ্বোধন করা হয় হাসপাতালটির। এতে দীর্ঘদিনের আশা পূরণ হলো বলে দাবি করা হয়। উদ্বোধনের পর প্রায় ৫ মাস পার হয়ে গেছে; হাসপাতালে চিকিৎসার যন্ত্রপাতি নেই।
সরজমিনে দেখা গেছে, তিনতলাবিশিষ্ট ভবনের কোনো রুমেই চিকিৎসার যন্ত্রপাতি বলতে গেলে নেই; চেয়ার-টেবিল বা অন্যান্য আসবাবও নেই। নিচতলায় গেটের সামনে প্যাকেট করা কিছু চেয়ারের পাশে বসে আছেন গার্ড। প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এখানে কোনো স্যার (ডাক্তার) বসেন না। কেউ সেবা নিতে এলে স্যারদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করিয়ে দিই। স্যারেরা তাদের শেখ কামাল ভবনে নিয়ে সেবা দেন।’
হাসপাতালে সেবার ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীরা যেমন ব্যবহারিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নগরবাসীও। সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন, তাহলে কী কাজে লাগছে ৫ কোটি টাকার এ ভবন?
সংশ্লিষ্ট অনুষদের একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২০১২ সাল থেকে অ্যানিমেল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে একটি প্রাণী হাসপাতালের দাবি করা হচ্ছে। বরাদ্দ হলেও অজানা কারণে এগোয় না কাজ। এক যুগের বেশি সময় পর স্থাপনা হলেও কোনো সরঞ্জাম সেখানে নেই। এভাবেই চলবে; এই হাসপাতাল কখনো কর্মচঞ্চল হবে না। কারণ এই অনুষদের বেশিরভাগ শিক্ষক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো না কোনো বেসরকারি পশুক্লিনিকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তারা চান না হাসপাতালটি জনপ্রিয় হোক।
হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা অ্যানিমেল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. কে বি এম সাইফুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগের যন্ত্রপাতি চুরি হয়ে যাওয়ায় আমাদের এ হাসপাতালে যন্ত্রপাতি নেই। বিভাগের যন্ত্রপাতি দিয়ে কোনোমতে কাজ চালাচ্ছি। নতুন যন্ত্রপাতি, আসবাব আর লোকবল পেলে হাসপাতাল পুরোদমে চালু হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের কোনো ক্লিনিকে কাজ করা বাধা হবে না।’
যন্ত্রপাতি কেনার বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিফ ইঞ্জিনিয়ার মো. মোমেনুল আহসানের সঙ্গে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর ফ্রান্সের প্যারিসে শিক্ষকদের অবস্থা নিয়ে আন্তঃসরকার সম্মেলন হয়েছিল। সেখানেই শিক্ষকদের কথা চিন্তা করে ইউনেস্কো এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন (আইএলও) কিছু পরামর্শে স্বাক্ষর করে। এতে শিক্ষকদের অধিকার, দায়িত্ব এবং বিশ্বব্যাপী শিক্ষকতা পেশার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা ছিল। ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর শিক্ষক দিবস বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি পালনে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল (ইআই) ও তার সহযোগী ৪০১টি সদস্য সংগঠন মূল ভূমিকা রাখে। দিবসটি উপলক্ষে ইআই প্রতি বছর একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে থাকে, যা জনসচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকতা পেশার অবদানকেও স্মরণ করিয়ে দেয়।
বিশ্বের ১০০টি দেশে শিক্ষক দিবস পালিত হয়ে থাকে। অনেক দেশে দিবসটি ভিন্ন ভিন্ন তারিখে পালিত হয়। যেমন, ভারতে শিক্ষক দিবস পালিত হয় ৫ সেপ্টেম্বর। অস্ট্রেলিয়ায় অক্টোবর মাসের শেষ শুক্রবার। শেষ শুক্রবার যদি ৩১ অক্টোবর হয়, তা হলে ৭ নভেম্বর শিক্ষক দিবস পালিত হয়। ভুটান শিক্ষক দিবস পালন করে ২ মে, ইন্দোনেশিয়া ২৫ নভেম্বর, মালয়েশিয়া ১৬ মে, ইরান ২ মে, ইরাক ১ মার্চ, আর্জেন্টিনা ১১ সেপ্টেম্বর, ব্রাজিল ১৫ অক্টোবর, চীন ১০ সেপ্টেম্বর, তাইওয়ান ২৮ সেপ্টেম্বর, থাইল্যান্ড ১৬ জানুয়ারি, সিঙ্গাপুর সেপ্টেম্বরের প্রথম শুক্রবার দিবসটি পালন করে। ইউনেস্কো কর্র্তৃক নির্ধারিত এ বছরের বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘ÔThe teachers we need for the education we want : The global imperative to reverse the teacher shortage’। অর্থাৎ, ‘কাক্সিক্ষত শিক্ষা পেতে যেমন শিক্ষক চাই : শিক্ষক সংকট ঠেকাতে বৈশি^ক উদ্যোগ।’ প্রতিপাদ্যটি বেশ চমৎকার ও বর্তমান সময়ের সঙ্গে খুবই প্রাসঙ্গিক। কারণ আমরা যে ধরনের শিক্ষা চাই আমাদের সে ধরনের শিক্ষকই দরকার। তাই প্রথমত বুঝতে হবে যে আমরা আমাদের ভবিষৎ প্রজন্মকে কী শিক্ষা দিতে চাই। শিক্ষার যথাযথ বিকাশের কাজটি শিক্ষকদেরই। আর এর জন্য শিক্ষকদের হতে হবে দক্ষ ও যোগ্য। পাশাপাশি দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষকের যে ঘাটতি সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
শিক্ষাকে যদি জাতির মেরুদণ্ড ধরা হয়, তবে সেক্ষেত্রে শিক্ষকরা হলেন শিক্ষার মেরুদণ্ড। কিন্তু শিক্ষকদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে দেখা যায়। শিক্ষকরা সমস্যায় থাকলে শিক্ষার গুণগত মান এবং কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে কিছু প্রস্তাবনা করা যেতে পারে। প্রথমত শিক্ষকতা পেশার সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ পেশায় সামগ্রিক নিরাপত্তা না থাকার ফলে শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের অনেকে আসতে চায় না এবং এভাবে চলতে থাকলে আগামীতেও আসতে চাইবে না। আমাদের এখনই সময় এসেছে, এই পেশার সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। শিক্ষকরা আগামীতেও যাতে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে, সেই জন্য বিভিন্ন বীমা, বিশেষ ঋণ সহায়তা দিয়ে পেশার সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী শিক্ষকদের বেতন সুনির্দিষ্ট করে কেন্দ্রীয়ভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শিক্ষকরা যেন বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন তা ভাবতে হবে। সময়ের সঙ্গে জীবন ও জীবিকার কথা বিবেচনা করে তাদের বেতনের মানদণ্ড মানসম্মত করতে হবে। দেখা যায়, শিক্ষকতা দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পেশা হলেও দেশের মেধাবীরা এ পেশায় আসতে চান না অন্য পেশার মতো এ পেশায় সামগ্রিক নিরাপত্তা নেই বলে। অথচ মেধাবীদেরই এ পেশায় বেশি বেশি আসার কথা ছিল। এতে দেশ ও জাতি উপকৃত হতো। শিক্ষকতাকে মহান পেশা বলা হলেও কার্যত এ পেশা অনেকটা অবহেলিত। অন্য পেশার মতো এ পেশায় সামগ্রিক নিরাপত্তা নেই। এ কারণে মেধাবীরা এ পেশায় আসতে চান না। তাই এ পেশার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত এখন সময়ের দাবি।
শিক্ষা খাত সময়ের সেরা বিনিয়োগের ক্ষেত্র। সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট বা দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের জন্য শিক্ষায় বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। ভারতের নোবেল বিজয়ী শিক্ষাবিদ কৈলাশ সত্যার্থী বলছেন, শিক্ষায় ১ ডলার বিনিয়োগ করলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে ১৫ গুণ রিটার্ন পাওয়া সম্ভব। ফলে শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়িয়ে শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের আগ্রহ বাড়াতে হবে। আগ্রহী শিক্ষার্থীদের স্বচ্ছ ও যুগোপযোগী মূল্যায়নের মাধ্যমে এই পেশায় আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে হবে।
শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা শিক্ষার উন্নয়নে এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তথ্যপ্রযুক্তির বদৌলতে পৃথিবী প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে শিক্ষকদেরও বদলাতে হবে প্রতিনিয়ত। এক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষকরা কতটা পিছিয়ে সেটা দেশে মহামারী করোনা আসার পর আমরা লক্ষ করেছি। একজন শিক্ষক আজই আগামী দশকের সুযোগ ও সমস্যা মোকাবিলার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করছেন। ফলে শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য যুগোপযোগী ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ, সিম্পোজিয়াম ও কর্মশালার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকদের আত্মোন্নয়নের জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষকদের গড়ে তুলতে হবে আন্তর্জাতিক মানের।
শিক্ষক সংকট ও শিক্ষকদের প্রমোশনজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দেখা যায়, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচুর শিক্ষক সংকট। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রমোশন যেন সোনার হরিণ। শত শত প্রধান শিক্ষকের পদ খালি পড়ে আছে। কিন্তু প্রমোশন নেই। সহকারী প্রধান শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক হিসেবে প্রমোশন হলে সিনিয়র শিক্ষকদের সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদে প্রমোশন পাওয়ার সুযোগ হবে। প্রমোশন হলে কাজে গতি বাড়বে। তাছাড়া সিলেকশন গ্রেড, টাইম স্কেল, যথাসময়ে পদোন্নতি ইত্যাদির জটিলতা নিরসনেও কাজ করতে হবে। শিক্ষার প্রাথমিক স্তর হলো শিক্ষার্থীদের জীবনের ফাউন্ডেশন বা ভিত্তি। এ স্তরে শিক্ষকরা যদি যোগ্য ও যথাযথ দক্ষতাসম্পন্ন হন, তাহলে শিক্ষার্থীদের ভিত্তি মজবুত হবে। জ্ঞানে-মানে একটি শক্তিশালী প্রজন্ম গড়ে উঠবে। এজন্য প্রাথমিক স্তরে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। আর শিক্ষার মান উন্নয়নে এখন এটা বড় চ্যালেঞ্জ। শিক্ষকদের কাজের স্বীকৃতি দিতে হবে। শিক্ষকতায় স্বীকৃতি খুব গুরুত্বপূর্ণ মোটিভেশন হিসেবে কাজ করে। সুতরাং, শিক্ষকদের প্রতিটি কাজের স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ইদানীং অনেক প্রতিষ্ঠানই শিক্ষকদের কাজের স্বীকৃতি প্রদান করে থাকে। যেমন: বছর শেষে ‘সেরা শিক্ষক’ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এই বছর সরকারের এটুআই ও গ্রামীণফোনের উদ্যোগে ‘সংকটে নেতৃত্বে’ শিরোনামে শিক্ষকদের সম্মাননা প্রদান করেছে। শিক্ষকদের ক্লাসের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের থেকে মূল্যায়ন নিয়ে শিক্ষককে স্বীকৃতি দিতে হবে। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠান সবাই সফলকাম হবে।
দাবি ছিল শিক্ষক দিবসটিকে সরকারিভাবে পালন করা। অবশেষে গত বছর প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে দিবসটি ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। এর আগে এত দিন ধরে এ দিবসটি সরকারিভাবে পালিত হতো না। এখন থেকে পালিত হবে। এ বছর জাতীয় শিক্ষক দিবসের পরিবর্তে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালনেরও উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই দিবসটি এখন সরকারিভাবে পালিত হলে শিক্ষকরা অবশ্যই নিজেদের সম্মানিত বোধ করবেন, যা তাদের জন্য বড় ধরনের একটা প্রণোদনা হিসেবে কাজ করবে। শিক্ষকতা একটি মহান ও গুরুত্বপূর্ণ পেশা। জাতি গঠনে শিক্ষকদের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু সাম্প্রতিককালে শিক্ষকদের ওপর হামলা ও অপমানের ঘটনা আমাদের ব্যথিত করে। পাশাপাশি বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষকদের নৈতিক ও আদর্শিক বিচ্যুতিও আমাদের সমানভাবে ব্যথিত করে। কারণ, শিক্ষকরাই জাতি গড়ার কারিগর। তারা যদি এমন হন তাহলে আমাদের কেমন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে উঠবে, সে প্রশ্ন না উঠে পারে না। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, শিক্ষকতা পেশার যথাযথ মূল্যায়ন ও শিক্ষকদের মানোন্নয়ন ছাড়া শিক্ষার সামগ্রিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
লেখক : লেখক
ছুটির দিন নয়, এমনি একটা দিনে টাঙ্গাইলের উদ্দেশে রওনা হলাম সকাল ১০টার দিকে। ধারণা করলাম টাঙ্গাইল যেতে কমপক্ষে পাঁচ ঘণ্টা লাগবে। কারণ ঢাকা-টাঙ্গাইলের পথে পাঁচ ঘণ্টার ভ্রমণ করার অভিজ্ঞতা আমার আছে। শুধু পাঁচ ঘণ্টা নয়, আট ঘণ্টার অভিজ্ঞতাও আছে। কিন্তু যে জায়গাটা খুবই জটিলতাপূর্ণ সেই গাবতলী গিয়ে দেখলাম রাস্তা ফাঁকা আর কয়েকটি সাইনবোর্ড যেখানে লেখা ‘দাঁড়ালেই দণ্ড’। খুবই নির্বিঘ্নে আমিন বাজার সেতু পার হয়ে গেলাম। ভাবলাম এর পরের জায়গাটা হচ্ছে সাভার বাসস্ট্যান্ড। ওখানে ঘণ্টাখানেক লাগবেই। কিন্তু রহস্যজনকভাবে দেখলাম সেখানেও একই সাইনবোর্ড ‘দাঁড়ালেই দণ্ড’ এবং রাস্তা ফাঁকা। গেলাম নবীনগর সেখানেও একই অবস্থা, রাস্তা ফাঁকা। গাড়ি চলছে কোথাও কোনো বাধা নেই। তিন ঘণ্টার মাথায় আমি টাঙ্গাইলের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছালাম। কী করে সম্ভব হলো! হঠাৎ মনে পড়ল এ হচ্ছে সদ্য নির্বাচিত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র বন্ধুবর আনিসুল হক এবং প্রিয়ভাজন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমানের পদক্ষেপ।
এরপর ঈদের ছুটিতে টাঙ্গাইল যেতে খুব কষ্টভোগ করেছি। কিন্তু একবার ড্রাইভার জানাল, স্যার কালকে টাঙ্গাইল যেতে আমাদের কোনো অসুবিধা হবে না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কোনো ম্যাজিক হচ্ছে কি? ড্রাইভার বলল, হ্যাঁ, হচ্ছে। কালকে স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে বসবেন এবং তিনি সারা দেশের ট্রাফিক সিস্টেমের পরিস্থিতি দেখবেন। সত্যিকারের ম্যাজিক ঘটে গেল। ঈদের আগের দিন আড়াই ঘণ্টার মধ্যে মায়ের কাছে পৌঁছে গেলাম। এই ঘটনাগুলোতে কি মনে হয়? আমরা পারি। শুধু প্রয়োজন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার একটু হাল ধরা। কখনো হাল ধরেন মেয়র আনিসুল হক, কখনো জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান। কখনো বড় ধরনের সংকটে হাল ধরেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যথায় যা হওয়ার তাই হচ্ছে। কিন্তু সমগ্র ব্যবস্থাটাকে একটা নিয়ন্ত্রণে আনা কি সম্ভব নয়? প্রযুক্তির এই অভাবনীয় উন্নতির ফলে এটা তো কোনো বিষয়ই নয়। কেমন করে বিষয় নয় তাও জানি।
প্রাচ্যদেশীয় লোকগুলো বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের মানুষ আইন মানতে চায় না। আইনের ব্যাপারে তাদের এক ধরনের ক্ষোভ আছে। কেন আইন মানব? এই জন্যই লাখ লাখ মামলার স্তূপ জমে ওঠে আদালতগুলোতে। আজ থেকে ষাট-সত্তর বছর আগে জেলা শহরগুলোতে আদালতের সংখ্যা ছিল খুবই সীমিত। এখন সেখানে ছয়তলা থেকে আটতলা পর্যন্ত ভবনে বিভিন্ন আদালত গড়ে তোলা হয়েছে। একটি জেলা শহরেও অনেক বিচারক রাখতে হচ্ছে এবং ছয় সাত এমনকি আটতলা ভবন নির্মাণ করতে হচ্ছে শুধু আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য। দেশের স্বাধীনতা কি শুধু আদালত নির্মাণের কাজ করবে না কি মানুষে মানুষে সংঘাত কমিয়ে রাষ্ট্রীয় আইন লঙ্ঘনকারীর সংখ্যা কমিয়ে নিয়ে আসবে?
আমার মনে পড়ে ছোটবেলায় দেখতাম একটা লোক ছোট্ট একটা গাড়ি চালিয়ে চলাচল করত। পাঁচ-ছয় গজ দূরের একটা জায়গায় যেতেন। একটু বড় হয়ে জেনেছি তিনি জেলার মুন্সেফ। বাসা থেকে আদালতে যান। তার চেহারা কখনো দেখিনি। কিন্তু একটা ছোট্ট এলাকায় তিনি এসব আইন আদালতের বিচার করেন। আর বাকিটা করেন ম্যাজিস্ট্রেটরা। সেটাও খুব বড় কিছু নয়।
সম্প্রতি ব্যাংকের একজন ডিজিএমের স্ত্রীর সঙ্গে পুলিশের একজন অফিসারের দ্বন্দ্ব হয়েছে। কারণ উনি ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে গাড়ি পার্ক করেছিলেন। কিন্তু ডিজিএমের স্ত্রী বলছেন তিনি আইন ভঙ্গ করেননি। তার নামতে যতটুকু সময় লেগেছে ততটুকু সময়ই তিনি নিয়েছেন। এসব ব্যাপারে অনেক বাহাস হতে পারে, কে ভুল আর কে ঠিক? কিন্তু ট্রাফিক আইন তো মানতে হবে। যেখানে ট্রাফিক আইন সম্পূর্ণভাবে যন্ত্র বিবর্জিত আধুনিককালে সমস্ত ব্যবস্থা উপেক্ষিত, যে শহরে সবুজ, হলুদ এবং লালবাতির সংকেত জ¦লে না সেই শহরে ট্রাফিক আইন কী করে বাস্তবায়ন করা যায়? অধিকাংশ সময়ে হস্ত নির্দেশিত ট্রাফিক সিগন্যাল দেখা যায় অথবা নির্দেশকারী একেবারেই তার অভিজ্ঞতাপ্রসূত ট্রাফিক সিগন্যাল দিয়ে যাচ্ছেন। তখন তা মেনে চলাও কি নাগরিক অধিকারের মধ্যে পড়ে? এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ঢাকাবাসী এই যে আদিম অবস্থার মধ্যে পড়ে আছে তার জন্য তাদের কোনো আক্ষেপ নেই?
স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা একটি আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, যেটা ছিল আমাদের একটা আদর্শ ব্যবস্থা। সেই ব্যবস্থাকে কেমন করে ধ্বংস করা হলো তা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। স্কুলের ওই শিশুরা মন্ত্রীদের, পুলিশ অফিসারদের হাঁটতে বাধ্য করেছিল। তারা ওই ব্যবস্থাকে কিন্তু মেনেও নিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে বিষয়টি রাজনৈতিক হয়ে দাঁড়ায়।
দেশের রাজনীতিবিদদের কি করে বোঝাব সব কিছু রাজনৈতিক করবেন না! সব কিছুকে রাজনৈতিক করতে গেলে অনেক বড় বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। দয়া করে শিক্ষাকে নিয়ে রাজনীতি করবেন না। দুর্নীতিকে নিয়ে রাজনীতি করবেন না। শিক্ষাকে রাজনীতি করতে গেলে কীভাবে দুর্নীতি এসে যায় সেটা আপনারা জানেন। তদবিরে নিয়োগ বাণিজ্যের লাখ লাখ টাকায় শুধু কিছু অশিক্ষিত লোকরা চাকরি পেয়ে যায়। চাকরি পেয়ে তারা শিশুদের মননকে যে কীভাবে ধ্বংস করে দেয় তা রাজনীতিকরা একটিবারও ভাবেন না।
ঢাকা শহরের নাগরিকরা ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে তেমন কিছু বলেন না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়েও কিছু বলেন না। প্রথমটায় বলেন না তার কারণ রিকশায় চড়তে তারা খুবই আনন্দ পান এবং অনেক শিক্ষিত লোককে পরিবার-পরিজনকে নিয়ে রিকশায় করে রাস্তার রংসাইড দিয়ে ঢুকে পড়েন তারা রিকশাচালককে মানা তো করেনই না, অনেক সময় উৎসাহ এমনকি রংসাইডে ঢুকে পড়ার পরামর্শও দেন। আমি এই প্রসঙ্গে তেমন বেশি কিছু বলতে চাই না। কারণ শহরগুলোতে গণপরিবহনের কোনো ব্যবস্থা নেই। অনেক দূর হেঁটে এসে তারা যে গণপরিবহনে চড়ার একটা সুবন্দোবস্ত পাবেন, সেই ব্যবস্থা আমরা রাখতে পারিনি। পৃথিবীর প্রতিটি বড় বড় শহরে নাগরিকদের অনেক পথ হাঁটতে হয়। কারণ তারা গণপরিবহনে উঠবেন হেঁটেই, কাজেই তাদের স্বাস্থ্যও অত্যন্ত ভালো থাকে। এ দেশেও হয়তো রিকশা বন্ধ করে দিলে মধ্যবিত্তদের একটা আন্দোলনও শুরু হয়ে যাবে। যার নাম হবে অলস বাঙালিদের আন্দোলন।
কিন্তু আবার এও দেখেছি, উত্তরা বা মিরপুরের নাগরিকরা খুব স্বতঃস্ফূর্তভাবে ট্রেনে উঠছেন। কিন্তু ধানম-িবাসীর কী হবে? এখানে তো গণপরিবহনের কোনো ব্যবস্থা নেই, একমাত্র বাসই ভরসা। মালিবাগ চৌধুরী পাড়ায় একই ব্যবস্থা। তাদের জন্যও কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এসব সমস্যা মিলে রাষ্ট্রের বায়ান্ন বছর হয়ে গেল, কোনো সুশৃঙ্খল আধুনিক গণপরিবহনের ব্যবস্থা হলো না। অতএব যা হওয়ার তাই হচ্ছে।
দেখা যাচ্ছে আমাদের নগরগুলোতে সামান্য বৃষ্টি হলে ঢাকা, চট্টগ্রামের রাস্তায় পানি জমে যায়। সেখানে তখন মানুষ মারা পড়বে এক্ষেত্রে রাষ্ট্র এটার কোনো দায়দায়িত্বও নেবে না? দুটি সিটি করপোরেশন নিবিড় ঘুমে রাত্রিযাপন করবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বলে একটি মন্ত্রণালয় আছে। তারা বৃষ্টিতে ঘুম উপভোগ করবে আর মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় বিপদসঙ্কুল সময় অতিক্রম করবে। এসব সমস্যা দীর্ঘদিন যাবৎ চলে আসছে। কিন্তু এর যে সমাধান সম্ভব তা কিন্তু অনেকেই জানেন না। আনিসুল হক জানতেন। ঢাকার বর্তমান মেট্রোপলিটন কমিশনার হাবিবুর রহমান জানেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও জানেন। জানেন অনেক নাগরিক। কিন্তু সমস্যা সমাধানের সুযোগ অত্যন্ত কম। তাদের ক্ষমতা যদি বাড়ানো যায় তাহলে অনেক কিছু ঘটানো সম্ভব। সেই দিকটায় আমরা কি যেতে পারি? লেখক: নাট্যকার, অভিনেতা ও কলামিস্ট
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।