
দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়া ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগসহ অধিভুক্ত সাত কলেজ শাখার নিয়ন্ত্রণ চায় সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। তাদের দাবি, এতে অ্যাকাডেমিক মানের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক মানেরও উন্নয়ন ঘটবে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের। তবে এতে সম্মতি জানায়নি আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম এ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি।
সাত কলেজ শাখা ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অন্তর্ভুক্ত হলে বিশৃঙ্খলা বাড়ার আশঙ্কা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সংগঠনের একাধিক নেতাকর্মী।
জানা যায়, গত ১৭ জুলাই ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত। এ সময় তারা অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নানান সংকট সমাধানের আশ্বাস দিয়ে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। এরপরই সংগঠনের সাত কলেজ শাখার নিয়ন্ত্রণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের হাতে যাওয়ার খবর চাউর হয়। তবে এক দিন পরই কলেজ ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীদের থেকে বায়োডাটা আহ্বান করে সে আলোচনায় ঘি ঢেলে দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর জল গড়িয়েছে অনেকদূর। শেষ পর্যন্ত বিষয়টির মীমাংসা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকায় সাত কলেজ ছাত্রলীগ ভালো অবস্থান রয়েছে। ঢাকায় আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এই ইউনিটগুলোকে সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অধিভুক্ত করা সম্ভব হলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আধিপত্য বাড়বে। একই সঙ্গে কেন্দ্রের আধিপত্য কমবে। এ কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ জোরেশোরেই এ দাবিটি জানাচ্ছে। তবে কেন্দ্র এটা কখনোই চাইবে না বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রলীগ নেতা জানিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হল ছাত্রলীগের সঙ্গে ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা সংবাদপত্রে শিরোনাম হয়েছে বেশ কয়েকবার। সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শহীদদের স্মরণে’ আলোচনা সভায় সামনে বসা নিয়ে হাতাহাতিতে জড়ান বিশ^বিদ্যালয় ও ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের নেত্রীরা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ছাত্রলীগের এক নেত্রীকে কারণ দর্শানোর নোটিসও দেওয়া হয়। সাত কলেজের সংগঠনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অধিভুক্ত করা হলে এ সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করেছেন অনেকে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা যখন হলে পরীক্ষা দিই তখন পাশেই মধুতে ছাত্রলীগের সেøাগান আর হাততালির কারণে খুব বিরক্ত হই। সেটা সহ্য করেই পরীক্ষা দিতে হয়। এরই মধ্যে যদি আবার সাত কলেজের ইউনিটগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠনের অধীনে এনে বহিরাগতদের আখড়া বানানো হয়, তা হবে শিক্ষার পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।’ তিনি বলেন, ‘যেখানে বুয়েট (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) তাদের ক্যাম্পাসের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে, সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের টিকে থাকা পরিবেশটুকুও ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে।’
নাম প্রকাশ না করা শর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হল ছাত্রলীগের সভাপতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র চাইলে দিতে পারে। তবে সাত কলেজকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি হবে। শিক্ষার্থীরা যেমনি বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়বে তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বও চলে যেতে পারে সাত কলেজের হাতে। আমি মনে করি সাত কলেজ স্বতন্ত্র ইউনিট হিসেবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে থাকায় ভালো হবে।’
ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা হয় দেশ রূপান্তরের। কমিটি না হওয়ার ক্ষোভে কয়েকজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অধিভুক্ত হতে চাইলেও বেশিরভাগই কেন্দ্রের সঙ্গে থাকার পক্ষে মত দিয়েছেন। ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা বলেন, ‘সাংগঠনিকভাবে আমরা এখন জেলা মর্যাদায় আছি। আমরা কখনোই চাইব না উপজেলা মর্যাদায় যেতে। বরং সুপার ইউনিট হতে চাইব। সুতরাং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা চাইলেও আমরা এটা মানব না।’
ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ নেতা শেখ মিঠুন বলেন, ‘ঢাকা কলেজের নিয়ন্ত্রণ চাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কা-জ্ঞানহীন কাজ। এটা নিয়ন্ত্রণ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা কেন্দ্রের সঙ্গে থাকতে চাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারে যাওয়ার ইচ্ছে আমাদের নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাদ্দাম-ইনান ভাইয়ের সঙ্গে থাকার জন্য যদি আন্দোলনও করা লাগে আমরা করতে রাজি আছি। আমরা কেন্দ্রের সঙ্গে অনেক ভালো আছি। আমাদের বিশ্বাস নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ আমাদের সুন্দর একটি কমিটি উপহার দেবে।’
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ তাদের দেখভাল করি, এটা সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও চায়। তাদের নানা ধরনের জটিলতা রয়েছে। সেগুলো নিয়ে তারা আমাদের কাছে আসে সবসময়। তাদের কমিটিগুলো আমরা করি, তাদের সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়াই এটা তারাও চায়।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামীয় লীগের সভাপতি ও আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার কাছে বিষয়টি গেছে। তিনি বিবেচনা করবেন এবং আওয়ামী লীগের নেতারাও এটি বিবেচনায় রাখবেন।’
ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে সৈকত বলেন, ‘আমরা দেখি যে মাঝেমধ্যে কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সঙ্গে সাত কলেজের ঝামেলা হয়। আমি মনে করি, এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে যদি সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আন্ডারে হয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, ‘সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের যাবতীয় কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পরিচালিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ যেমনিভাবে হলগুলোতে কার্যক্রম পরিচালনা করে, একইভাবে যদি সাত কলেজের ছাত্রলীগ পরিচালনা করা হয় তাহলে তাদের যে রাজনৈতিক মান সেটিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো হবে। শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হবে এবং তাদের যেকোনো ধরনের অধিকার আদায়ের জন্য রাজনৈতিকভাবেও সহায়ক হবে।’
তবে সাত কলেজের সংগঠনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে কোনো ভাবনা নেই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের। শুরু থেকেই এসব কলেজ শাখা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে কেন্দ্র। আপাতত পরিবর্তনের ভাবনাও নেই তাদের।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজসহ সাত কলেজের সংগঠনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে দেওয়া হলে বরং বিশৃঙ্খলা আরও বাড়বে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাত কলেজের কমিটি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ দীর্ঘদিন ধরে করছে। এ বিষয়ে আপাতত আমাদের পরিবর্তনের সুযোগ কিংবা অবকাশ নেই।’
তবে এ বিষয়ে মুখ খোলেননি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন। জানতে চাইলে দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে অবগত নই।’
অন্যের থিসিস পেপার চুরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পিএইচডি ডিগ্রি হাতিয়ে নেওয়া এখন পুরনো খবর। থিসিস পেপার চুরি তো নৈতিকতাবিবর্জিত অপরাধ, কিন্তু এখন শিক্ষকরা নানা ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারিতেও নিজেদের কলুষিত করছেন। সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠের শিক্ষকরা এখন নির্ধারিত ছুটি শেষে কাজে যোগ না দিয়েও বেতন-ভাতা তুলে নিচ্ছেন। গবেষণার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সুবিধা ভোগ করলেও তাদের কাছ থেকে নির্ধারিত হারে বাড়ি ভাড়া কাটা হচ্ছে না। অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি ভাতা দেওয়া হচ্ছে তাদের। তবে শিক্ষকরা যতটা না অবৈধ সুবিধা নিচ্ছেন, তার চেয়ে বেশি অনিয়ম করছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ। ভবন নির্মাণে অনিয়ম, ভর্তি পরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়াসহ নানাভাবে লুটপাট চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। নানা অনিয়মের মাধ্যমে দুই বছরে রাষ্ট্রের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সরকারি ২৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি বাংলাদেশের মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) অধীন শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষিত প্রতিবেদনে বিশ^বিদ্যালয়গুলোর লুটপাটের এ চিত্র পাওয়া গেছে। ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারি এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়-ব্যয় নিরীক্ষা করেছে তারা।
নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন প্রোগ্রামে অননুমোদিতভাবে শিক্ষা ছুটিতে বিদেশে অবস্থান করছেন। এসব শিক্ষকের অনেকেই শিক্ষাছুটি শেষে কাজে যোগ দেননি। তবে তাদের বেতন-ভাতা দিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। শিক্ষকরা ছুটি শেষে কাজে যোগদান না করায় এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
সিএজির নিরীক্ষা প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১০ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক ও কর্মকর্তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে বসবাস করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের বেতন থেকে নির্ধারিত হারে বাড়ি ভাড়া কেটে রাখেনি। এতে করে সরকারের ২৫ কোটি ৯০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সিন্ডিকেট কিংবা অর্থ কমিটি কিংবা রিজেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাড়ি ভাড়া কাটা হয়। নিরীক্ষায় নির্ধারিত বাড়ি ভাড়ার অর্থ আদায় করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন বিভাগ, অনুষদ, ডিন অফিস ও রিসার্চ সেন্টারের বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া নিজস্ব আয়সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে না দেখানোয় ৩৭ কোটি ১৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ আয় বাজেটে প্রদর্শন না করা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ২০১৯ সালের নির্দেশনার লঙ্ঘন।
নানা অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হাফিজা খাতুন ফোনে কোনো বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।
২০২১-২২ অর্থবছরে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাঁচটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উন্নয়ন প্রকল্পের অব্যয়িত অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত না দিয়ে নিজেদের ব্যাংক হিসাবে রেখে দিয়েছে। যদিও অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, অর্থবছর শেষে উন্নয়ন ব্যয়ের অব্যয়িত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। কিন্তু ওই পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয় তা জমা না দেওয়ায় সরকারের ১৬২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদালয় ২০২১-২২ অর্থবছরে স্নাতক (সম্মান) প্রথমবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা থেকে ১৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা আয় করলেও তা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসাবে দেখায়নি। এমনকি ওই আয় এবং সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র নিরীক্ষায় উপস্থাপন করতে বললেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিরীক্ষা দলকে কোনো জবাব বা সহযোগিতা দেয়নি। এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটি খুবই বিব্রতকর ও অগ্রহণযোগ্য। তবে আমি অবাক হইনি। কারণ কয়েক বছর আগে আমরাও দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে জরিপ চালিয়েছিলাম। সেখানেও এমন অনেক অনিয়ম পেয়েছিলাম। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠগুলোতে এমন অনিয়ম অনৈতিক ও দুঃখজনক।’
তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের সরকারি বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে এ ধরনের অনৈতিক চর্চা চলছে। শিক্ষকদের একাংশের যোগসাজশে তা হচ্ছে, যা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। সরকারি প্রতিষ্ঠান সিএজির নিরীক্ষাটি প্রশংসনীয়। এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে আমরা আশা করছি।’
নিরীক্ষা প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ও গবেষণার চেয়ে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নজর অর্থের দিকে বেশি। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকল্পের টাকা যথেচ্ছ লুটপাট কিংবা শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি নিয়েও অনিয়মে পিছপা হননি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তাব্যক্তিরা।
সিএজির প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গাড়ি কিনতে ২০২২ সালের মে মাসে ইউজিসি ৮৭ লাখ টাকা ও তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) সামগ্রী কেনার জন্য ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু গাড়ি ও আইসিটি সামগ্রী না কিনে অন্য একটি ব্যাংক হিসাবে এ ১ কোটি ৭ লাখ টাকা পাঠানো হয়েছে। শিক্ষকদের প্রাপ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ইন্টারনেট ভাতা হিসেবে ৫৬৪ জন শিক্ষককে মাসে ১ হাজার টাকা এবং ৩২৪ জন কর্মকর্তাকে ৫০০ টাকা করে মোট ৮৭ লাখ ১২ হাজার টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এভাবে বিল দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নিরীক্ষকদের প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিল দেওয়া হয়েছে। নিরীক্ষকরা বলছেন, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে শিক্ষকদের ইন্টারনেট ভাতা দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই।
একই বিশ্ববিদ্যালয় কাল্পনিক বিভিন্ন কোটেশন দেখিয়ে এক ঠিকাদারকে ৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করেছে। একই ব্যক্তি কাল্পনিক কোটেশন কাগজ তৈরি করে বিল উত্তোলন করেছেন। নিরীক্ষকরা জবাব চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলেছেন, ‘কোটেশন জমাদানকারীর হাতের লেখা যাচাইয়ের বিষয়টি ভুলবশত নজরে আসেনি।’
বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বিল পরিশোধ করা হয়েছে কিন্তু তার কোনো ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা দেয়নি। এ ভ্যাটের পরিমাণ ৫৬ লাখ ১৬ হাজার টাকা। তবে নিরীক্ষা দলের নজরে আসায় বিশ্ববিদ্যালয় এ অর্থ জমা দেওয়ার কথা জানিয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন দিবস কেন্দ্র করে হলগুলোতে উন্নতমানের খাবার ও আলোকসজ্জার নাম করে ৮৯ লাখ ৮৪ হাজার টাকার বেশি বিল পরিশোধ করেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিলের সমর্থনে কোনো ভাউচার নেই। বিল ভাউচার না থাকার কোনো স্পষ্ট জবাবও দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারা।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলমের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার রাশেদা আখতার মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোস্তফা ফিরোজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমার জানার কথা নয়। এ বিষয়ে কোষাধ্যক্ষ ও কম্পট্রোলার বলতে পারবেন।’ কম্পট্রোলার মো. মোসানুল কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সিএজি তাদের মতো অবজারভেশন দিয়েছে। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সপক্ষে জবাব দিচ্ছি। তবে এটুকু বলতে পারি, আমরা বিধিসম্মতভাবে কাজ করি।’
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রি করে আয় হয়েছে ৩ কোটি ১৮ লাখ ২২ হাজার টাকা। এর মধ্যে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা করেনি কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, এ আয়ের ৬০ শতাংশ টাকা বিভিন্ন অনুষদে ব্যয় করা হয়েছে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সময়কালে গবেষণায় অনুদান বরাদ্দ ছিল ৩ কোটি ৬৩ লাখ ৫০ হাজার। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো গবেষণা না করে বিভিন্ন মালামাল কিনেছে। মালামাল কেনার জন্য ৬৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা খরচ করেছে। কিন্তু বিধি অনুযায়ী যে উদ্দেশ্যে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়, সে উদ্দেশ্যেই খরচ করার নিয়ম রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরীক্ষকদের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছে, গবেষণা কাজের উদ্দেশ্যেই এসব মালামাল কেনা হয়েছে। নিরীক্ষা জবাবে বলা হয়েছে, গবেষণা অনুদানের বরাদ্দ শুধু গবেষণার জন্যই দেওয়া হয়। মালামাল কেনার সুযোগ নেই।
ইউজিসি তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন সেবার নামে অনিয়মিতভাবে ৯২ লাখ ৭২ হাজার টাকা কেটে রেখেছে। এ অর্থ কী করা হয়েছে নিরীক্ষকরা জানতে চাইলে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ই বলেছে, সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে তথ্য-প্রমাণ নিয়ে তারা জানাবেন। কিন্তু নিরীক্ষক দল জবাবে বলেছে, কোনো প্রকার আইনি ভিত্তি ছাড়াই ইউজিসিকে অর্থ দেওয়া হয়েছে।
হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোদন ছাড়াই ১ কোটি টাকায় পাজেরো জিপ কেনা হয়েছে। অডিট নিষ্পত্তির জন্য জবাব চাইলে নিরীক্ষকদের এ বিষয়ে কোনো জবাব দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়টি।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারা ২০২১-২২ অর্থবছরে ‘অবকাঠামো ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ’ প্রকল্পে মন্ত্রিসভার কোনো ধরনের দরপত্র প্রস্তাব অনুমোদন ছাড়াই বৈজ্ঞানিক ল্যাব যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ৫৮ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয় করেছে।
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসিসি রাস্তা নির্মাণের জন্য প্রকল্প প্রস্তাবে প্রতি মিটার রাস্তার জন্য অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৪ হাজার ৬০০ টাকা। কিন্তু তারা অনুমোদিত ব্যয় উপেক্ষা করে প্রতি মিটারে খরচ করেছে ১০ হাজার ৬২১ টাকা। অর্থাৎ প্রকল্প প্রস্তাবে দেওয়া বাজেটের চেয়ে অতিরিক্ত খরচ হয়েছে ৩ কোটি টাকার বেশি।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই প্রকল্পের বিপরীতে অনিয়মের ফিরিস্তি আরও বেশি। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা যায়, এ প্রকল্পে বাজেট ছাড়াই বিভিন্ন খাত দেখিয়ে ৩৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছে। আরেকটি আরসিসি রাস্তার নামে দরবহির্ভূত আইটেমের বিপরীতে খরচ করা হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা আরও ভয়াবহ। সরকারের কোনো অনুমোদন এবং প্রকল্প প্রস্তাব ছাড়াই ১৬০ কোটি টাকার পূর্ত কাজ করেছে তারা। এ বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুর ক্যাম্পাসে দুটি ভবন বানানোর জন্য মেসার্স মজিদ কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে ১৬০ কোটি টাকার চুক্তি করে। পরিকল্পনা কমিশনের বিধি অনুযায়ী, ঘটনাত্তোর কোনো কাজের অনুমোদন পরিকল্পনা কমিশন দেয় না। তাছাড়া অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেল থেকেও কোনো ছাড়পত্র নেয়নি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কর্তৃপক্ষ কোনো অডিটেরও জবাব দেয়নি।
এ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন খাতে দেনা দেখিয়ে ৩০ কোটি ৩১ লাখ টাকা খরচ করেছে। কিন্তু এ অর্থ কত বছর ধরে, কেন, কীভাবে বকেয়া পাওনা হয়েছে তার কোনো ব্যাখ্যা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি প্রকল্পে একই ঠিকাদার মজিদ কনস্ট্রাকশনকে কয়েক ধাপে ১০১ কোটি ৪৯ লাখ টাকার বিল দিয়ে অনিয়ম করা হয়েছে। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে কোনো প্রকল্প হলে সে ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভার অনুমোদন লাগে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কোনো নিয়মের ধার ধারেননি। নিরীক্ষকরা জবাব চাইলে, বিশ্ববিদ্যালয় এ কাজের জন্য কোনো জবাব দেয়নি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়মের মধ্যে আরও রয়েছে পছন্দের ঠিকাদার নাভানা ও মিলিনিয়াম সার্ভিস সেন্টারকে কোনো কোটেশন ছাড়াই ৪৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকার কাজ দেওয়া হয়েছে। ক্রয়সীমার চেয়ে বেশি দরে তাদের কাছ থেকে সেবা নেওয়া হয়েছে। এ অডিটেরও তারা কোনো জবাব দেয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়টির কারিগরি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোনো নিয়মের বালাই না করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে ডিপোজিট ওয়ার্ক হিসেবে ৮০ কোটি টাকা দিয়েছে।
ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) আলোচিত এই দুই অর্থবছরে রাজস্ব তহবিল থেকে অনিয়মিতভাবে ১০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা অন্য তহবিলে স্থানান্তর করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জবাবে বলেছে, প্রমাণ সংগ্রহ করে তারা জবাব দেবে। নিরীক্ষক দলের দাবি, এটি গ্রহণযোগ্য নয়।
নির্ধারিত চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও রাজশাহী, চট্টগ্রাম, ইসলামী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে সেশন বেনিফিটের নামে অতিরিক্ত সময়ে চাকরির সুযোগ নিয়েছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষতি হয়েছে ৪ কোটি ২৮ লাখ টাকার বেশি।
অর্থ বিভাগের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা অনুবিভাগের আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ ২০১৫ সালের স্মারক অনুযায়ী, কোনো ক্ষেত্রেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় না করা এবং বাজেটে বিভিন্ন কোডের বিপরীতে বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যেই প্রকৃত ব্যয় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ওই নির্দেশনা না মেনে দুই বছরে ৩৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করেছে। এর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদালয় ২০২১-২২ অর্থবছরে বরাদ্দ করা বাজেটের অতিরিক্ত ৩১ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। আর ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অতিরিক্ত ব্যয় করেছে ৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা। একই সময়ে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাদ্দকৃত বাজেটের অতিরিক্ত ব্যয় করেছে ৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণ দর্শানোর নোটিসের কোনো জবাব দেয়নি পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ভবিষ্যতে বরাদ্দকৃত বাজেটের মধ্যে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ কঠোরভাবে পরিপালনের কথা জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। আর অতিরিক্ত ব্যয় করলেও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাজেটে বরাদ্দপত্রে উল্লিখিত কোডের বিপরীতে মূল খাতের বরাদ্দের মধ্যে ব্যয় সীমাবদ্ধ রয়েছে।
এসব অনিয়মিত ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে সিএজির অধীন শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষিত প্রতিবেদনে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে মূল পদের বাইরে বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে (প্রক্টর/প্রভোস্ট/চেয়ারম্যান/তত্ত্বাবধায়ক/ছাত্র উপদেষ্টা প্রভৃতি) অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এসব পদে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত দায়িত্বভাতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী, মূল বেতনের ১০ শতাংশ অথবা দেড় হাজার টাকার মধ্যে যেটা কম তা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় বেতন স্কেল লঙ্ঘন করে ১৬টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দায়িত্ব ভাতার অতিরিক্ত দেওয়ায় রাষ্ট্রের প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
অতিরিক্ত দায়িত্বভাতা প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদলয় কর্তৃপক্ষ নিরীক্ষা দলকে জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কমিটির সুপারিশ ও সিন্ডিকেটের অনুমোদনক্রমে অতিরিক্ত দায়িত্ব ভাতা দেওয়া হয়েছে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, দেড় হাজার টাকা দায়িত্ব ভাতা দিলে কোনো শিক্ষক নিজ পদের অতিরিক্ত প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবেন না। তবে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের দেওয়া অতিরিক্ত দায়িত্ব ভাতা জেনারেল ফান্ডে ফেরত নিয়ে এসেছে।
অতিরিক্ত দায়িত্ব ভাতা প্রসঙ্গে নিরীক্ষা দল তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে, বেতন ও ভাতা-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত প্রদানের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় ক্ষমতাপ্রাপ্ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কমিটি কিংবা সিন্ডিকেট নয়। দায়িত্ব ভাতা হিসেবে প্রদান করা অতিরিক্ত অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা করার সুপারিশ জানিয়েছে সিএজি।
ইউজিসির অনুমোদন না থাকার পরও পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় বিধিবহির্ভূতভাবে চুক্তিভিত্তিক জনবল নিয়োগের মাধ্যমে ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি করেছে। এসব নিয়োগ বাতিলের সুপারিশ করেছে নিরীক্ষা দল।
২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতাধীন ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ১৮ কোটি টাকা অগ্রিম হিসেবে দিলেও নিরীক্ষাকাল পর্যন্ত তা সমন্বয় করেনি।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত আগামী ২ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এতে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত আসতে ১২ মিনিট লাগবে। তবে মহাখালী র্যাম্পের সামনেই মহাখালী বাস টার্মিনাল। এতে সেখানকার যানজটের জন্য বিমানবন্দর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে ১০ মিনিট সময় লাগলেও এখানে এসে আধা কিলোমিটার পাড়ি দিতে ঘণ্টা পার হয়ে যাবে। আর ফার্মগেট অংশে তেজগাঁও কলেজের সামনে দিয়ে নেমে সেখানকার যানজটের জন্য ইন্দিরা রোড পাড়ি দিতেই ৩০ মিনিটের মতো সময় লেগে যাবে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত খুললে পুরো প্রকল্প সুবিধা পাওয়া যাবে না। পুরো কাজ শেষ হলে মূলত এটি যে লক্ষ্যে করা হয়েছিল তার সুফল মিলবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেটের বনানী-৪, মহাখালী-৩, বিজয় সরণি-২ ও ফার্মগেট-১ র্যাম্পগুলোতে উদ্বোধনের লক্ষ্যে পুরোদমে কাজ করছেন শ্রমিকরা। তবে মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে গাড়ির তীব্র যানজটের দৃশ্য দেখা যায়। এই অংশের র্যাম্প চালু হলে এই রোডের গাড়ির চাপ আরও বাড়বে। ফার্মগেটের দিকেও তীব্র যানজট দেখা যায়। আর বিজয় সরণির দিকে দীর্ঘ সারির গাড়ি বসে থাকতে দেখা যায়। মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে ইসলাম পরিবহনের এক চালক মো. সিরাজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিমানবন্দর থেকে ১০ থেকে ১২ মিনিটের মধ্যে গাড়িগুলো এসে এখানকার যানজটের জন্য এক ঘণ্টার মতো বসে থাকতে হবে। ইউটার্ন নিয়ে আধা কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতেই বসে থাকতে হবে যানজটে। আর এমনিতে এই এলাকায় অনেক যানজট তার মধ্যে এই জায়গা দিয়ে সামনে গাড়ি চাপ আরও বাড়বে।
তুরাগ গাড়ির আরেক চালক জাকির হোসেন বলেন, আমাদের গাড়িগুলো তো আর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যাবে না। এখনই এই রোডে এলে অনেক সময় ধরে বসে থাকতে হয় যানজটে। নতুন করে এই দিক দিয়ে সামনে আরও ভোগান্তি পোহাতে হবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (কাওলা) থেকে শুরু করে মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার হয়ে কুতুবখালী গিয়ে শেষ হবে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ। ২০২৪ সালের জুনে শেষ হবে কাজ। এটা মাথায় রেখে কাজ করা হচ্ছে পুরোদমে। বর্তমানে প্রকল্পটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশ যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। এ অংশের মেইন লাইনের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৫ কিমি এবং র্যাম্পের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক শূন্য কিমি। র্যাম্পসহ মোট দৈর্ঘ্য ২২ দশমিক ৫ কিমি। এ অংশে ওঠানামার জন্য ১৫টি র্যাম্প (এয়ারপোর্ট-২, কুড়িল-৩, বনানী-৪, মহাখালী-৩, বিজয় সরণি-২ ও ফার্মগেট-১) রয়েছে। এরমধ্যে ১৩টি র্যাম্প যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
প্রকল্প সূত্রে আরও জানা গেছে, এই এক্সপ্রেসওয়ের ওপর পথচারী, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, থ্রি-হুইলার চলাচল করবে না। এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা ৬০ কিমি। প্রকল্পটি থাইল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইটালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড (৫১ শতাংশ) এবং চায়নাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান শেনডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপ (৩৪ শতাংশ) ও সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডের (১৫ শতাংশ) যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা, যার ২৭ শতাংশ বাংলাদেশ সরকার ভিজিএফ হিসেবে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে দেবে। প্রকল্পের মূল দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিমি। র্যাম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিমি.।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখন যে অংশটুকু চালু হচ্ছে এই অংশ চালু হলে এই প্রকল্প যে উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়েছিল সেটির পুরো সুফল পাওয়া যাবে না। আর তাছাড়া এখন যে র্যাম্পগুলো দিয়ে গাড়ি নামবে সেখানে সিটিতে আগের থেকে গাড়ির চাপ বাড়বে। আর ট্রাফিক ব্যবস্থা যদি আরও ভালোভাবে মনিটরিং করা না হয় তাহলে বড় ধরনের ভোগান্তি হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ঢাকা শহরের যানজট নিরসনসহ ভ্রমণে সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ের লক্ষ্যে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। পুরো প্রকল্পটি শেষ হলে ঢাকা শহরের উত্তর-দক্ষিণ করিডরের সড়কপথের ধারণক্ষমতা বাড়াবে। এ ছাড়া প্রকল্পটি ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হলে ঢাকা ইপিজেড ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের যোগাযোগ সহজতর হবে।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এখন বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট অংশ আগামী ২ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করা হবে। পুরোদমে এই অংশের শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। আর এখন এই অংশ চালু হলে আগের থেকে যানজট কমবে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রবিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি নিয়মিত ফ্লাইট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী গত মঙ্গলবার থেকে এই সম্মেলনে যোগ দেন। এই সফরে প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ তার সফরসঙ্গী ছিলেন। ১৫তম ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে গত মঙ্গলবার রাতে জোহানেসবার্গে পৌঁছেন প্রধানমন্ত্রী। পরদিন বুধবার প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড বিজনেস সামিট’-এ প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেন।
পরে তিনি আফ্রিকার দেশগুলোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ দূত সম্মেলনে’ যোগ দেন। এদিন বিকেলে শেখ হাসিনা হোটেল হিলটন স্যান্ডটনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ব্রিকসের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট আয়োজিত ‘রাষ্ট্রীয় ভোজ’-এ যোগ দেন।
গত বৃহস্পতিবার তিনি ৭০টি দেশের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ‘ব্রিকসের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক’- ফ্রেন্ডস অফ ব্রিকস লিডারস ডায়ালগ (ব্রিকস-আফ্রিকা আউটরিচ এবং ব্রিকস প্লাস ডায়ালগ)-এর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে ভাষণ দেন।
ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে এদিন স্যান্ডটন কনভেনশন সেন্টারে শেখ হাসিনা ও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা, মোজাম্বিকের প্রেসিডেন্ট ফিলিপে জ্যাকিন্টো নিউসি, তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট ডক্টর সাইমা সুল্লুহু এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
একই স্থানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট দিলমা ভানা রুসেফের মধ্যেও বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এদিন সন্ধ্যায় তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
১৫তম ঐতিহাসিক ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা যোগদান করে। কভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাব এবং পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী বিধিনিষেধের পর এটিই প্রথম সশরীরে উপস্থিতির ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাপোসা, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই সম্মেলনে যোগ দেন।
দেশে গত সপ্তাহে (২০-২৬ আগস্ট) সরকারি হাসপাতালে যত ডেঙ্গু রোগী মারা গেছে, তাদের ৭৯ শতাংশের মৃত্যু ঘটেছে ভর্তির তিন দিনের মধ্যে। বাকি ১০ শতাংশ মারা গেছে ভর্তির ৬-১০ দিন, ৮ শতাংশ ৪-৫ দিন ও ৩ শতাংশ ১০ দিনের অধিক সময়ের মধ্যে।
এমনকি ৭৯ শতাংশ মৃত্যু হয়েছে শক সিনড্রোম ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে। বাকি ১৪ শতাংশ মারা গেছে এক্সপান্ডেড ডেঙ্গু সিনড্রোমে (নতুন উপসর্গ), ৪ শতাংশ ডেঙ্গুর সঙ্গে অন্যান্য রোগ থাকায় ও ৩ শতাংশ মারা গেছে রক্তক্ষরণ ডেঙ্গুতে। ২৬ আগস্ট পর্যন্ত এক সপ্তাহের ডেঙ্গুর তথ্য বিশ্লেষণ করে এ পরিসংখ্যান জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, গত সাত দিনে রোগী পাওয়া গেছে ১৪ হাজার ৩২৪ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছে ৮ হাজার ৫০৬ ও ঢাকায় ৫ হাজার ৮১৮ জন। রোগীদের মধ্যে নারী ৫ হাজার ৪৭৪ ও পুরুষ ৮ হাজার ৮৫০ জন। এ সময় মারা গেছে ৭১ জন। তাদের মধ্যে নারী ৪৫ ও পুরুষ ২৬ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঢাকার ১০টি এলাকাকে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৭ শতাংশ রোগী পাওয়া গেছে যাত্রাবাড়ীতে ও সবুজবাগে ১৩ শতাংশ। এরপর কদমতলীতে ৮ শতাংশ, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও, কেরানীগঞ্জ ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ৪ শতাংশ করে এবং উত্তরা, ধানমন্ডি ও পল্লবীতে ৩ শতাংশ করে রোগী পাওয়া গেছে।
এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ রোগী পাওয়া গেছে ঢাকা জেলায়, যা মোট রোগী ৪৯ শতাংশ। ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম ও বরিশাল জেলায় ৫ শতাংশ করে। এরপর পটুয়াখালী, ফরিদপুর, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, পিরোজপুর, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ জেলায় প্রায় ২ শতাংশ করে রোগী পাওয়া গেছে।
ডেঙ্গু রোগী ও মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতি এখনো অব্যাহত রয়েছে। তবে আগের সপ্তাহের (৩৩তম সপ্তাহ) তুলনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু কিছুটা কমেছে। এ সময় রোগী কমেছে ৭ শতাংশ ও মৃত্যু ১০ শতাংশ। তবে ৩৩তম সপ্তাহে তার আগের সপ্তাহের (৩২তম) তুলনায় রোগী বেশি কমেছিল ১৭ শতাংশ।
গত সপ্তাহে মোট রোগীর ৬২ শতাংশই ছিল পুরুষ ও নারী ৩৮ শতাংশ। কিন্তু নারী মৃত্যু ছিল মোট মৃত্যুর ৬৩ শতাংশ ও পুরুষ মৃত্যু ৩৭ শতাংশ। এ সময় নারী মৃত্যুর হার ছিল শূন্য দশমিক ৮২ শতাংশ ও পুরুষ মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ২৯ শতাংশ।
গত সপ্তাহে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ২১-২৫ বছর বয়সী, যা মোট আক্রান্তের ১৬ শতাংশ ও বেশি মারা গেছে ৩৬-৪০ বছর বয়সী মানুষ, যা মোট মৃত্যুর ১১ শতাংশ। এরপর ১০ শতাংশ মৃত্যু হয়েছে ৩১-৩৫ বছর বয়সীদের।
আরও ১১ মৃত্যু, ভর্তি ২৩২৭ : গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) দেশে ডেঙ্গুতে আরও ১১ জন মারা গেছে এবং এ সময় ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৩২৭ জন। এ নিয়ে চলতি বছর মারা গেল ৫৪৮ ও ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ১৪ হাজার ৫১১ জন। নতুন মৃত ১১ জনের মধ্যে ৮ জন ঢাকার এবং ৩ জন ঢাকার বাইরের বাসিন্দা।
বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন প্রত্যাশা করে যুক্তরাজ্য। সেই প্রত্যাশার কথা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছেন বাংলাদেশে দেশটির হাইকমিশনার সারাহ কুক। গতকাল রবিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কেও জানতে চেয়েছেন। সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে তাকে আশ্বস্ত করেছেন সিইসি। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সিইসির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার। বৈঠকে সিইসির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান ও কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের পর সারাহ কুক সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উৎসাহিত করে; যাতে বাংলাদেশের জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা করতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাধীন, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ এবং নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং তার দলের সঙ্গে আমার এটি প্রথম সৌজন্য সাক্ষাৎ। গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে।’
সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘বিভিন্ন বিষয় আলাপচারিতার মধ্যে নির্বাচন প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। উনি (সারাহ কুক) জানতে চেয়েছিলেন আমাদের প্রস্তুতি কেমন। আমরা বলেছি, নির্বাচন সম্পর্কে আশাবাদী। সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।’
সিইসি বলেন, ‘উনি (সরাহ কুক) অতিরিক্ত যেটা বলেছেন নির্বাচনটা যেন পার্টিসিপেটরি (অংশগ্রহণমূলক) এবং ক্রেডিবেল (বিশ্বাসযোগ্য) হয়। এ ক্ষেত্রে আমরা আমাদের পক্ষ থেকে কী ভূমিকা পালন করব? ইলেকশন ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার হতে হলে যারা পোলিং এজেন্ট তাদের ভূমিকাটা গুরুত্বপূর্ণ।’
আলোচনায় গণমাধ্যমের ভূমিকা উঠে এসেছে জানিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, পর্যবেক্ষকের বিষয়টা আলোচনা হয়েছে। তারা বলেছেন, নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছতার ওপর জোর দেবে। এ জন্য পর্যবেক্ষক এবং গণমাধ্যমের কাছ থেকে খুব বস্তুনিষ্ঠ সহায়তা চাইবেন তারা। কারণ নির্বাচনের যে একটা দর্পণ তা প্রতিফলিত হবে গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে।
সিইসি জানান, সারাহ কুক বলেছেন গণমাধ্যমের জন্য যে নীতিমালা হয়েছে, সেখানে ভোটকক্ষে পারমিশন (অনুমতি) নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তারা বলেছেন, পারমিশন বলে কিছু ছিল না। শেষ পর্যন্ত গণমাধ্যম থেকে যে দাবিটা আসছে, সেটা হলো মোটরসাইকেলের বিষয়। একটা কারণে তারা মোটরসাইকেল বাদ দিয়েছিলেন। কারণ মোটরসাইকেলের অপব্যবহার হয়। যারা মাসলম্যান (পেশিশক্তি ব্যবহারকারী), তারা মোটরসাইকেল ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে সংকট তৈরি করে। একই সঙ্গে বলেছেন, গণমাধ্যমের যে দাবি, সেটাও যৌক্তিক। মোটরসাইকেল ছাড়া তাদের নির্বাচনের খবর সংগ্রহ কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। সে জন্য এ বিষয়টা বিবেচনাধীন রেখেছেন। এ-সংক্রান্ত নীতি তারা যথাযথভাবে পরিবর্তন করবেন।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
মূল লড়াইয়ের আগে গা গরমের খেলা। সেখানে ব্যাটসম্যানরা ছিলেন আগ্রাসী। তাতে পাকিস্তান পায় ৩৪৫ রানের বড় সংগ্রহ। তারপরও জিততে পারল না। নিউজিল্যান্ড জয় তুলে নিয়েছে ৩৮ বল হাতে রেখেই।
পাকিস্তানের ব্যাটারদের মধ্যে সেঞ্চুরি পেয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৯৪ বলে ১০৩ রান করে অবসর নেন তিনি। এছাড়া বাবর আজম ৮০ ও সৌদ শাকিল ৭৫ রান সংগ্রহ করেছেন।
পাকিস্তানের দেয়া ৩৪৬ রানের জবাব দিতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে নিউজিল্যান্ড।
কিউই ব্যাটারদের মধ্যে ওপেনিংয়ে নামা রাচিন রবীন্দ্র ৭২ বলে ৯৭ রান সংগ্রহ করে দলের জয়ে বড় অবদান রাখেন। এছাড়া দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা কেন উইলিয়ামসন ৫৪, ড্যারেল মিচেল ৫৯ আর মার্ক চাপম্যান ৬৫ রান করে দলকে ৫ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
গোটা দেশ এখন দুই ভাগে বিভক্ত। একদল সাকিব আল হাসানকে শূলে চড়াচ্ছে, অন্যরা তামিম ইকবালকে। অথচ জাতীয় ক্রিকেট দল ভারতে গেছে বিশ্বকাপ খেলতে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে খোঁচাখুঁচি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে। যে উদ্বোধনী জুটি নিয়ে এত দ্বিধা আর সংকোচ, যে কারণে তামিম না থাকায় এত হাহাকার, সেখানেই কিনা বাজিমাত করে পুরো জাতিকে অন্য এক বার্তা দিলেন তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস।
বিশ্বকাপের দলে যে তামিম ইকবাল থাকছেন না, সেটা জানা গিয়েছিল আগের দিনেই। তবু ক্রিকেট ভক্তদের মনের এক কোণে ক্ষীণ আশা ছিল। ওপেনারদের টানা ব্যর্থতার কথা বিবেচনায় হলেও এই ব্যাটসম্যান থাকবেন বলে ছিল তাদের। কিন্তু সেই আশার গুড়ে বালি। তাকে দলে না রাখায় অবশ্য রাস্তায় জনতার ঢল নামেনি, রাজপথে হয়নি কোনো সভা-সমাবেশ। তবে নতুন যুগের দেয়ালে দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদী নিন্দার বাণী। হাল জামানায় যাকে ‘টাইমলাইন’ বলে সম্বোধন করা হয়।
সেই সব প্রতিবাদী স্ট্যাটাসও দুই ভাগে বিভক্ত। কেউ সাকিব আল হাসানের পক্ষে, কেউবা তামিম ইকবালের। একদল পরিসংখ্যান-পর্যালোচনা দিয়ে বোঝাতে ব্যস্ত যে এই যুগে তামিমের কৌশল ‘ওল্ড স্কুল’। ওসব এখন আর চলে না। অন্য দল ১৭ বছরের ইতিহাস আর আবেগ নিয়ে হাজির। তাদের কাছেও আছে পরিসংখ্যান। সেটা গত কয়েক বছরের তামিমের ওপেনার সঙ্গীদের একটা তালিকা। তারাই শূলে চড়াচ্ছেন সাকিব-হাথুরু থেকে শুরু করে বিসিবির শীর্ষ কর্তাদের।
বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে সাকিব ক্রীড়াভিত্তিক একটি টিভি চ্যানেলকে দিয়ে গেছেন সাক্ষাৎকার। সেখানে তিনি সরাসরি তামিমের সমালোচনা করেছেন। এই ওপেনার যে দলের প্রয়োজনে পজিশন পরিবর্তনে রাজি হতে চান না, সেই মানসিকতা বাচ্চাদের মতো বলে সমালোচনা করেছেন টাইগার অধিনায়ক। এমনকি তার স্পোর্টসম্যানশিপ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তার আগে তামিম নিজে একটা ভিডিও বার্তায় বলেছেন তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা। মাশারফী বিন মোর্ত্তজাও ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। তাতে করে ক্রিকেটাঙ্গনে এখন যেন ভিডিও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ক্রিকেট নিয়ে জাতির অবস্থা যখন এমন, তখন ভারতের গোয়াহাটিতে বাংলাদেশের ক্রিকেট দল। আসাম রাজ্যের রাজধানীর বরষাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম উদ্বোধনী ম্যাচ খেলতে নেমেছিল তারা। ছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, নাজমুল হোসেন শান্তও ছিলেন না থাকার মতো করেই। প্রথম গা গরমের ম্যাচে তাই নেতৃত্ব দেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
টসভাগ্যে মিরাজের পরাজয়ের পর বল হাতে নামে বাংলাদেশ। টানা ৪০ ওভার টাইগারদের বোলারদের যেন শাসন করছিলেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। ঐ সময় পর্যন্ত ৫ উইকেট হারালেও তারা করে ২০২ রান। তারপরই যেন ঘুরে দাঁড়ান টাইগার বোলাররা। শেষ ১০ ওভারের ৫ বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় লঙ্কানরা। ২৬৩ রানের বেশি তারা করতে পারেনি।
২৬৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নামা বাংলাদেশের হালটা যে সুখকর হবে না, মুহূর্তেই ধসে পড়বে ব্যাটিং লাইনআপ। সিনিয়রদের কাউকে এসে হাল ধরে নিয়ে টেনে নিয়ে যেতে হবে দলকে। খাঁদের কিনারা থেকে টেনে তুলে হয় জয়, নয়তো সম্মানজনক হার! এমনটাই ছিল অনুমিত। আমরা যে এতেই অভ্যস্ত।
কিন্তু তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস সব অনুমান ভুল প্রমাণ করে দেন। যে ওপেনিং জুটি বাংলাদেশকে ভোগাচ্ছিল, যে সমস্যার কারণে চোট প্রবণ তামিম ইকবালকেও সবাই চাইছিলেন দলে। সেটাই কিনা তারা প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে ভুলিয়ে দিলেন! উদ্বোধনীতে তারা গড়েন ১৩১ রানের জুটি। তাতে ১৩ ম্যাচ পর বাংলাদেশ ওপেনিংয়ে শতরানের জুটি দেখতে পেয়েছে। হোক সেটা প্রস্তুতি ম্যাচ, তবুও তো লড়াই!
সবচেয়ে বড় স্বস্তি লিটন-তানজিদের রানে ফেরা। এশিয়া কাপের আগে জ্বরে ভুগছিলেন লিটন। সেই জ্বরের ধকল কাটিয়ে উঠতে তার সময় লেগেছে। মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে যেতে হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর চোটের কারণে। কিন্তু নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। এই টুর্নামেন্টে ২ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তানজিদ। কিন্তু তিনিও প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজেও।
তাই বিশ্বকাপের দলে তামিম ইকবালকে বাদ দেওয়াতে ঝড় উঠেছিল। সেই ঝড় চলমান ছিল আজ দুপুর অবধি। অনেকেই ভেবে রেখেছিলেন, এই জুটি ব্যর্থ হবে। যা ধারাবাহিক থাকবে টুর্নামেন্টের শুরুতেও। তারপর বিশ্বকাপের মাঝপথে আচমকা ডাক পেয়ে তামিম ইকবাল উড়াল দেবেন ভারতে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলে। সেবার জাভেদ মিয়াঁদাদকে ছাড়াই তারা বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতার কারণে তাকে মাঝপথে উড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল, এবং বিশ্বকাপ জিতেছিল।
এমন স্বপ্ন বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটভক্তরাও দেখতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তানজিদ তামিম আর লিটনের জুটি বদলে দিয়েছে সব হিসেব-নিকেশ। তামিমের ফেরার প্রত্যাশায় যারা গুনছিলেন প্রহর, তাদের মাথায় যেন এবার আকাশ ভেঙে পড়েছে। কারণ তারা যে রানে ফিরেছেন। যুববিশ্বকাপজয়ী তামিম খেলেছেন ৮৪ রানের একটি ইনিংস। ৮৮ বলে যা সাজানো ছিল ১০টি চার ও ২টি ছক্কায়। অন্যপ্রান্তে লিটন ৫৬ বলে ১০ চারে খেলেছেন ৬১ রানের ইনিংস। শুধু কি তাই! এদিন তিনে নেমেছিলেন মিরাজ। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬৭ রান। ৬৪ বলের হার না মানা ইনিংসটি সাজানো ছিল ৫ চার ও ২ ছক্কায়।
পঞ্চপান্ডবের পরের প্রজন্ম তো তারাই। যাদের ব্যাটে শুক্রবার বরষাপাড়ায় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তাদের রানে ফেরা যেন নতুন দিনের বার্তা দেয়। যে বার্তা আগামীর পথচলার। যেখানে পুরনোকে আকড়ে ধরে রাখার প্রবণতা ক্ষীণ হয়ে আসার বার্তা। সহজ কথায়, তরুণদের রানে ফেরাতে মিয়াঁদাদ হওয়ার সুযোগ আর হচ্ছে না তামিম ইকবালের।
আল নাসরে প্রথম মৌসুমটা ভালো না কাটলেও দ্বিতীয় মৌসুমের শুরু থেকেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আছেন দারুণ ছন্দে। নিজে গোল করে দলকে জেতাচ্ছেন, সতীর্থদের দিয়ে গোল করাচ্ছেন।
শুক্রবারও সৌদি প্রো লিগে আল তা’য়ির বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতেছে আল নাসর। এ ম্যাচেও রোনালদো গোল করেছেন এবং করিয়েছেন। তবে তাঁকে নিয়ে বেশি আলোচনা তালিসকার গোলটিতে অসাধারণ এক অ্যাসিস্টের জন্য। অ্যাসিস্টটিতে যে সবার মন ভরিয়ে দিয়েছেন রোনালদো।
তা’য়ির মাঠে আল নাসর গতকাল শুরুটা করেছে দারুণ। একের পর এক আক্রমণে স্বাগতিক দলের রক্ষণ করে দিয়েছে এলোমেলো। ম্যাচের শুরুর দিকেই রোনালদোর দুর্দান্ত একটি প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দেন তা’য়ির গোলকিপার। এ ছাড়া রোনালদোও খুব কাছ থেকে পাওয়া একটি সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি।
তবে ৩২ মিনিটে এগিয়ে যায় আল নাসর। গোলটি করেছেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার অ্যান্ডারসন তালিসকা। গোলটিতে রোনালদো অ্যাসিস্ট করেছেন অসাধারণ এক বাই-সাইকেল কিকে। সৌদি প্রো লিগে এ মৌসুমে এটা রোনালদোর পঞ্চম অ্যাসিস্ট।
খেলার স্রোতের বিপরীতে ৭৯ মিনিটে সমতায় ফেরে তা’য়ি। কিন্তু সমতা বেশিক্ষণ থাকেনি। ৩ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে আল নাসরের জয়সূচক গোলটি করেছেন রোনালদো। সৌদি প্রো লিগে এ মৌসুমে এটা ৭ ম্যাচে তার ১০ নম্বর গোল। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৫ ম্যাচ খেলে করেছেন ১৬ গোল।
এই জয়ের পর ৮ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে আল নাসর। আল ফেইহার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করা আল ইত্তিহাদ সমান ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে শীর্ষে। ৮ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে আল তা’য়ি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। নির্বাচনে কী উপায়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তবে সরকারের হাইকমান্ড থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে তথ্য এসেছে, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য সরকারবিরোধীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে। পুলিশের একটি প্রতিবেদনেও তথ্য এসেছে সারা দেশে অন্তত আড়াইশো কর্মকর্তা আছেন তারা সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাদের পুরো কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিকে, চলতি মাস ও আগামী মাসের মধ্যে পুলিশে আরও বড় ধরনের রদবদল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তালিকাও করা হয়েছে। পাশাপাশি উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদিও কেনার চেষ্টা করছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, সামনের দিনগুলোতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এ নিয়ে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা আগাম সতর্কবার্তাও দিয়েছে। যেকোনো বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করতে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিট প্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের মধ্যে কোনো সদস্য সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার তথ্য পেলে জানাতে বলা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশেই সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনকালীন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পেশাদার সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু সদস্যের কর্মকান্ড নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এই সংখ্যা প্রায় আড়াইশো মতো হবে। সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে। ইতিমধ্যে তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিতও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশে উদ্বেগ আছে। বৈধ অস্ত্রের সংখ্যার খোঁজ নেওয়া, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্র কারবারিদের গ্রেপ্তার করতে বিশেষ অভিযান চালাতে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযানের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। হুট করেই আমরা বিশেষ অভিযান শুরু করব। কেপিআই স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন যথাসময়ে হবে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো মহল বা চক্র নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে না পারে সে জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সতর্ক আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের সবধরনের প্রস্তুতি আছে। দাগি সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।
পুলিশ সূত্র জানায়, আড়াইশো পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকান্ড নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাদের মোবাইল নম্বর সার্বক্ষণিক ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও খোঁজ রাখা হচ্ছে। নজরদারির মধ্যে থাকা বেশ কয়েকজন পুলিশ সুপার, অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর আছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতাদের সাপোর্ট দেওয়া আমাদের কাজ না। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের জন্য উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্র ও যানবাহন ক্রয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৫০ লাখের মতো রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড কেনা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে এসব সরঞ্জাম বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করছি। ডিএমপি, সিএমপি, কেএমপি, আরএমপি, বিএমপি, এসএমপি, আরপিএমপি, জিএমপি কমিশনার, বিশেষ শাখা (এসবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), অপরাধ তদন্ত বিভাগ, পিবিআই, টুরিস্ট পুলিশ, এটিইউ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ, এপিবিএন, হাইওয়ে, শিল্পাঞ্চল পুলিশ প্রধান, সব অ্যাডিশনাল আইজিপি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও রংপুর রেঞ্জে নতুন আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে ইউনিট প্রধানরা পুলিশ সদর দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন। বিষয়টি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্র করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। বিএনপি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে। যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। আর এসব মোকাবিলা করতে পুলিশকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।