
৫৪ বছর আগে বিক্রি হওয়া জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে চাচা-ভাতিজা। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকে। সামান্য কথা থেকে বিবাদ মারামারিতে গড়ায়। এভাবে কৃষক পরিবার দুটি বিভিন্ন সময় মামলা-মোকদ্দমায় গিয়েও সমাধান খুঁজে পায়নি। ভাতিজার অভিযোগ, জালিয়াতির মাধ্যমে তার বাবার জমি আত্মসাৎ করেছেন চাচা। অন্যদিকে চাচা ওই জমি কিনে নেওয়ার প্রমাণ হিসেবে একটি দলিল উপস্থাপন করেন। তবে মামলার তদন্তভার পেয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাইয়ের মাধ্যমে বিবদমান বিরোধের সমাধান হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডির মুখপাত্র অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান মামলাটি তদন্তের কথা জানিয়ে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আদালত সিআইডিকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার পর যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। তদন্তে বিবাদীর দলিল ও দলিলে থাকা ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাইয়ের পর দেখা যায় জমিটি আগেই তার কাছে বিক্রি করা হয়েছে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, গাজীপুরের সদর এলাকার লাবিব উদ্দিন ও ইনাম উদ্দিন দুই ভাই। লাবিব উদ্দিনের মৃত্যুর পর তার ছেলে মো. নজরুল ইসলাম (৫০) অভিযোগ করেন, তার বাবার পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে পাওয়া ৯ শতাংশ জমি তার চাচা ইনাম উদ্দিন হস্তান্তর করেননি। লাবিব উদ্দিনের মৃত্যুর পর ইনাম উদ্দিন অন্য লোককে লাবিব উদ্দিন সাজিয়ে নিজে দলিল গ্রহীতা হিসেবে একটি দলিল তৈরি করে ৯ শতাংশ জমি আত্মসাৎ করেছেন।
নজরুল ইসলাম এই অভিযোগ নিয়ে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন। মামলায় তার চাচা ইনাম উদ্দিন, চাচাতো ভাই মো. জহিরুল ইসলাম ও মো. আবু বকর (৪৫) নামে এক ব্যক্তিকে আসামি করেন।
মামলাটি আদালত সিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার পর বাদীর বাবা লাবিব উদ্দিনের টিপসই পরীক্ষার জন্য আদালতে পাঠায়। পরে ওই দলিল ও টিপসই পরীক্ষার জন্য সিআইডির ফরেনসিক শাখায় পাঠায়। সিআইডির হস্তরেখা বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে দেখতে পান আলোচিত ৯ শতাংশ জমির দাতা হিসেবে দেওয়া আঙুলের ছাপ বাদীর বাবা লাবিব উদ্দিনেরই।
সিআইডির তদন্তে আরও জানা যায়, লাবিব উদ্দিন সাংসারিক কারণে টাকার দরকার হওয়ায় তিনি ওই জমিটি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সশরীরে উপস্থিত হয়ে বাদীপক্ষের সবার জ্ঞাতসারে জমি বিক্রি করে বিবাদীপক্ষের কাছে জমির মালিকানা ও দখল বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।
ওই সময় জমির বাজারমূল্য কম ছিল। বর্তমানে জমির বাজারমূল্য বহুগুণে বেড়েছে। ফলে স্থানীয় কিছু ব্যক্তির পরামর্শে এবং বাদীপক্ষ কৌশল অবলম্বন করে মামলা করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই হারুনুর রশীদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ১৯৬৯ সালে বাদীর বাবা এই জমি তার আর্থিক প্রয়োজনে চাচার কাছে বিক্রি করেন। ২০২০ সালে তিনি মারা যাওয়ার পর তার দখলে থাকা ওই জমিটির দলিল দেখিয়ে মালিকানা দাবি করেন বিবাদী। ৯ শতাংশের ওই জায়গাটির বর্তমান দাম প্রায় ২৭ লাখ টাকা। ওই এলাকায় ক্রমশ জমির দাম বাড়তে থাকায় বাদীপক্ষ ছাড়তে নারাজ ছিল। ফলে তাদের মধ্যে বিবাদ থেকে একাধিক মামলাও হয়।
বাদী মো. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, সিআইডির করা এই তদন্তে সঠিকভাবে হয়নি। জায়গাটি প্রকৃতপক্ষে আমাদেরই। এই মামলার তদন্ত আবার করার জন্য আদালতে নারাজি দেব।
তিনি আরও বলেন, বাবা বেঁচে থাকাকালে এই জমি বিক্রি করেছেন এমন কোনো কথা আমাদের বলেননি। এই জায়গা আমরা দীর্ঘদিন ধরে ভোগ করে আসছি। কিন্তু চাচা প্রভাব খাটিয়ে আমাদের এই জমি নেওয়ার জন্য ভুয়া দলিল দেখাচ্ছেন। এখন এ ঘটনায় মামলা দেওয়ার পরও তিনি নানাভাবে রায় তার পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
ক্ষমতা ধরে রাখতে আওয়ামী লীগ ১০টি বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। দলটির নেতাকর্মীরা বিশ্বাস করছেন, এসব পরিকল্পনা ঠিকঠাক বাস্তবায়ন করতে পারলে টানা চতুর্থ দফায় ক্ষমতায় আসা সম্ভব।
এসব পরিকল্পনার অন্যতম হলো রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে সরব থাকা। এ ছাড়া দলীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে তৃণমূল নেতাকর্মীদের দূরত্ব দূর করা ও সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে দলে সুদৃঢ় ঐক্য গড়ে তোলার কাজটি যথাযথভাবে করা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশিদের সঙ্গে সম্পর্ক যে জায়গায় গেছে সেখান থেকে সম্পর্ক পুরোপুরি পুনরুদ্ধার করার সুযোগ কম। এটা ধরেই নিয়েছেন তারা। ফলে নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগকে অনেক কিছুই মোকাবিলা করতে হবে। কিন্তু ক্ষমতার টানা ১৫ বছরে অসংখ্য সফলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেও সাংগঠনিক শক্তিতে অনেকাংশে গরমিল ধরা পড়েছে। যে কারণে সাংগঠনিকভাবে পিছিয়ে আছে আওয়ামী লীগ।
দলটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করা ও ঐক্যবদ্ধ রাখাই অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা বারবার দলের ঐক্যের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ আওয়ামী লীগকে হারাতে পারে না। তিনি বলেন, ‘সাংগঠনিক কিছু গ্যাঞ্জাম আছে সেগুলো মীমাংসা করার কাজ চলছে।’
মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি গত বছরের মাঝামাঝি থেকে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে জোরালো আন্দোলন শুরু করে। ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সমমনা ৩৬টি দল স্বতন্ত্রভাবে এবং জোটবদ্ধ হয়ে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত হয়। বিএনপিসহ এই ৩৭ দলের আলাদা আলাদা দাবি এখন এক দফায় পরিণত হয়েছে। সেই দাবির অন্যতম সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান।
বিরোধীদের আন্দোলনের জবাবে আওয়ামী লীগও সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচন করার এক দফা ঘোষণা করেছে। দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির পাশাপাশি সংঘাতের ঘটনাও ঘটছে।
প্রায় একই সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা জানিয়ে আসছে। তাদের কূটনৈতিক তৎপরতাও লক্ষণীয়। প্রতিবেশী ভারত এ বিষয়ে তার অবস্থান জানিয়ে বলেছে, বাংলাদেশের জনগণই ঠিক করবে তারা কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। এর মধ্যে ভারতের সংবাদমাধ্যমেই বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যু নিয়ে খবর প্রকাশ হচ্ছে। পাশাপাশি জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশে সভা-সমাবেশের অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে সরব। এর মধ্যে গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমর্থনে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। এই ভিসানীতিকে এক ধরনের হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। এরপর দেশটির প্রতিনিধিদের সফরও বেড়েছে।
চলতি বছরের শেষের দিকে কিংবা আগামী জানুয়ারির প্রথম দিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। তার আগে বিদেশিদের নজিরবিহীন তৎপরতা ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির আন্দোলনে এবার টালমাটাল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ আওয়ামী লীগের সামনে। সে কারণে আন্দোলন সামলানো ও বিদেশিদের তৎপরতা কমাতে এত দিন ভিন্নপথে হাঁটলেও এবার নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে আনতে নিজের দলের শক্তির দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। সভা-সমাবেশে প্রকাশ্যেই তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে, তাহলে দলটিকে হারানোর শক্তি কারও নেই।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার এ বক্তব্যের গুরুত্ব তুলে ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীর বেশ কয়েকজন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে দলের ব্যাপারে তেমন কোনো নির্দেশনা ছিল না দলীয় সভাপতির। এবার বারবার একই ধরনের নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, সারা দেশে সুবিধাভোগী ও ত্যাগীদের নেতাকর্মীদের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। সুবিধাভোগী ও ত্যাগী উভয় পক্ষের রক্তাক্ত সংঘাতের ঘটনাও ঘটছে। ক্ষমতার ১৫ বছরে সর্বত্র সুবিধাভোগীদের দেখা গেলেও এখন মাঠে-ঘাটে নজরে পড়েন না তারা। মাঠ দখলে রাখার রাজনীতিতে অদৃশ্য হয়ে গেছেন সুবিধাভোগী ও সুযোগসন্ধানী নেতাকর্মীরা।
ওই নেতারা বলেন, দলের নানা দুর্বলতা চিহ্নিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০টি করণীয় নির্ধারণ করেছেন। এসব করণীয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করে আগামী নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে আনতে চান শেখ হাসিনা।
দলের সভাপতি শেখ হাসিনা গত ৬ আগস্ট তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডাকেন সারা দেশের নেতাকর্মীদের। সেদিন বিশেষ বর্ধিত সভায় সারা দেশের অন্তত ৫০ নেতার বক্তব্য শোনেন তিনি। বিভিন্ন গবেষণা ও বর্ধিত সভায় দেওয়া নেতাদের বক্তব্যের নির্যাস নিয়ে ১০টি পরিকল্পনা ঠিক করেছেন। বিভিন্ন পরামর্শক মহলও আওয়ামী লীগ সভাপতিকে এ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পরামর্শ দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজে নেমে গেছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ যাচাই-বাছাই করে দেখেছেন, নির্বাচনী মাঠে দলকে শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে এবং দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে হলে পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
এসব পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, সরকার ও দলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ঠেকাতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা, মসজিদ-মাদ্রাসা ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে সচেতনতামূলক বক্তব্য দেওয়া। রয়েছে, সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড ঘটা করে প্রচার করা, যেকোনো মূল্যে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা, দ্রব্যমূল্য সহনীয় ও স্থিতিশীল পর্যায়ে রাখা, কোনোভাবেই সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে না দেওয়া, মন্ত্রী-এমপিদের লাগামহীন কথাবার্তা বন্ধ করা, বড় কয়েকজন দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি হতে পারেন মন্ত্রী-এমপি ও নেতা, তাদের বিচারের আওতায় আনা, সম্পর্ক টালমাটাল থাকলেও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সম্পর্কোন্নয়ন ও দলের ভেতরের অন্তর্দ্বন্দ্ব-কোন্দল দূর করা ও দলকে সংঘাতমুক্ত রাখা। মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের (এমপি) সম্পদ ও আয়ের উৎস জনসমক্ষে প্রকাশ করার অঙ্গীকার থাকলেও বন্ধ থাকা সেই কাজটি নির্বাচনের আগে শুরু করতে চান প্রধানমন্ত্রী।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনের আগে একাধিক পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে সংগঠন শক্তিশালী করা, ত্যাগী নেতাকর্মী যারা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন তাদের মাঠে নামানো, সরকারের উন্নয়ন প্রচার ও মাঠ নিয়ন্ত্রণে রাখা এগুলো নির্বাচন পর্যন্ত বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতার ১৫ বছরে দলে সুবিধাভোগী বেড়েছে, এটা সত্যি কথা। এর ফলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নির্বাচনের আগে তা পুষিয়ে নিতে কাজ চলছে।’
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, দলের পুরনো ও ত্যাগী নেতাদের সম্মান দেওয়া, পদে রাখা ও মাঠে নামানোর জন্য দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতির মামলা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি পাঠিয়েছেন বিশ্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বস্থানীয় দেড় শতাধিক ব্যক্তি। তাদের মধ্যে শতাধিক নোবেল বিজয়ী রয়েছেন। গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোভিত্তিক জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান সিজিয়ন পিআর নিউজওয়্যার তাদের ওয়েবসাইটে এই চিঠি প্রকাশ করেছে।
চিঠিদাতাদের মধ্যে বারাক ওবামা, শিরিন এবাদি, ওরহান পামুক, জোসেফ স্টিগলিৎজসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শতাধিক নোবেল বিজয়ী আছেন। এ ছাড়া জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, যুক্তরাজ্যের ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ধনকুবের স্যার রিচার্ড ব্রানসনসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি রয়েছেন চিঠিদাতাদের তালিকায়।
চিঠিতে যা লিখেছেন : নোবেল বিজয়ী, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের নেতৃত্বস্থানীয় এবং বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে আমরা আপনার কাছে লিখছি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে আপনার দেশ যেভাবে প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে, তা আমরা স্বীকার করছি। অবশ্য সম্প্রতি বাংলাদেশে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রতি যে হুমকি দেখা গেছে, তা নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা বিশ্বাস করি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু এবং দেশের প্রথম সারির দলগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়াটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিগত দুটি নির্বাচনের বৈধতার ঘাটতি রয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে মানবাধিকারের প্রতি যেসব হুমকি রয়েছে, তার মধ্যে একটি আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। সেটি হলো শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা। আমরা এ কারণে শঙ্কিত যে সম্প্রতি তাকে নিশানা করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তিনি ধারাবাহিক বিচারিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে আমরা মনে করি। তার নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে ৪০ জন বিশ্বনেতা আপনার কাছে যে চিঠি লিখেছিলেন, তার ওপর ভিত্তি করেই এই চিঠি লেখা হয়েছে।
আমরা সম্মানের সঙ্গে আপনার প্রতি অবিলম্বে অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিতের আহ্বান জানাচ্ছি। এরপর আন্তর্জাতিকভাবে আইন বিশেষজ্ঞ হিসেবে স্বীকৃত ব্যক্তিদের নিয়ে একটি নিরপেক্ষ বিচারক প্যানেলের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো পর্যালোচনা করা হোক। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে তার বিরুদ্ধে দুদক ও শ্রম আইনে যেসব মামলা চলছে, সেগুলো পর্যালোচনা করলে তার দোষ খুঁজে পাওয়া যাবে না।
আপনি জানেন অধ্যাপক ইউনূস যে কাজ করেন, তা আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক। সামাজিক ব্যবসা কীভাবে আন্তর্জাতিক অগ্রগতি আনতে পারে, তা তিনি দেখিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে শতভাগ দারিদ্র্য বিমোচন, বেকারত্ব দূর করা এবং কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে অগ্রগতির বিষয় রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশিরা কীভাবে বৈশ্বিক অগ্রগতিতে অবদান রাখছে, তার নেতৃত্বস্থানীয় দৃষ্টান্ত তিনি। কোনো ধরনের নিপীড়ন ও হয়রানি ছাড়া স্বাধীনভাবে তিনি তার পথপ্রদর্শনমূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে পারবেন বলে আমরা আশা করছি।
আমরা আশা করি, আপনি এসব আইনগত বিষয়ের যথাযথ, নিরপেক্ষ ও ন্যায্যতা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখবেন। পাশাপাশি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করবেন। একই সঙ্গে সব ধরনের মানবাধিকার রক্ষার প্রতি সম্মান দেখানো নিশ্চিত করবেন। আগামী দিনগুলোতে এসব বিষয়ের সুরাহা কীভাবে হবে, তা দেখার জন্য বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ নজর রাখছে। আমরাও সেই সব মানুষের কাতারে রয়েছি।
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আরও ১৮ মামলা : শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ও গ্রামীণ টেলিকমের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ১৮ বাদীর পক্ষে ১৮টি মামলা হয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়েছে। মামলায় ওই প্রতিষ্ঠানের সাবেক ১৭ জন এবং বর্তমানে কর্মরত ১ জনের ২১ কোটি ৪১ লাখ ১৭ হাজার ১৬৩ টাকা পাওনা দাবি করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে এ মামলাগুলো হয়। শুনানি নিয়ে শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান (জেলা ও দায়রা জজ) বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন। ১৮ মামলার মধ্যে প্রথম ৯ বাদীর মামলায় আগামী ১৬ অক্টোবর এবং পরবর্তী ৯ বাদীর মামলায় ১৮ অক্টোবর ড. ইউনূসকে সমনের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালতে বাদীপক্ষে এই মামলাগুলো করেন অ্যাডভোকেট মশিউর মালেক ও অ্যাডভোকেট মো. হেলালউদ্দিন। শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে করা একটি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে।
আইনজীবী হেলালউদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৮ বাদীর মধ্যে ১৭ জন ইতিমধ্যে অবসরে গেছেন। ১ জন এখনো কর্মরত রয়েছেন। তারা ২০০৬ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। শ্রম আইন, ২০০৬ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের বুঝিয়ে দিতে হয়। কিন্তু ড. ইউনূস ও তার প্রতিষ্ঠান ১৭ বছরেও তা করেননি। এতে শ্রম আইনের ২১৩ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আদালত সমন জারি করেছেন।’
ড. ইউনূসের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তারা লভ্যাংশ দাবি করলেও ২০০৬ সালের আইনের ২৩২ ধারায় শিল্প সম্পর্কিত কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের কথা বলা হয়েছে। গ্রামীণ টেলিকম তো শিল্প সম্পর্কিত কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। তাই তাদের দাবি সঠিক নয়। আমরা মামলার বিষয়টি শুনেছি। সমনের অনুলিপি পেলে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করে শ্রম আইনের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ এনে ড. ইউনূসসহ প্রতিষ্ঠানের চারজনের বিরুদ্ধে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার শ্রম আদালতে মামলা করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর। এরপর এ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ড. ইউনূসের পক্ষে উচ্চ আদালতে আবেদন করলেও তা টেকেনি। এ মামলায় ২২ আগস্ট ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন ঘটিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে এক দফার আন্দোলন করছে বিএনপি ও সমমনা প্রায় ৩৬টি দল। সমস্যা হচ্ছে, তাদের আন্দোলনে প্রারম্ভিক গতি এখন নেই। ১২ জুলাই এক দফার আন্দোলন শুরু হয়েছিল। গত এক মাসে সেটি পথ হারিয়েছে। ২৮ জুলাইয়ের মহাসমাবেশের পর রাজপথে বিএনপির ধারাবাহিক আন্দোলনের কর্মসূচি থাকলেও অনেকের মতে, তাতে রাজনৈতিক স্পৃহার (স্পিড) বড্ড অভাব।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে অবস্থান কর্মসূচি সফল করতে না পারায় বিএনপির এ দশা। তাদের শরিকরা কর্মসূচির গতি হারানোর বিষয়টি স্বীকার করে সমন্বয়হীনতা ও কিছু কারণের কথা উল্লেখ করেছেন। তারা মনে করেন, ২৯ জুলাইয়ের কর্মসূচিতে সমন্বয় না থাকায় আন্দোলনে ধাক্কা লেগেছে। ঝড়-বৃষ্টিও একটা কারণ, ১৫ আগস্টকেন্দ্রিক ঘটনাবলির কারণেও যুগপৎ কর্মসূচিতে গতি ছিল না। এ সুযোগে রাজপথে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক কর্মকান্ড বাড়িয়েছে। ক্ষমতাসীনরা তাদের শক্তি প্রদর্শন করে যাচ্ছে।
বিএনপির শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতে আমাদের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি ছিল। ফলে আন্দোলন কিছুটা শ্লথ হয়েছে। আগস্টের টার্গেটও আমরা পূরণ করতে পারিনি। এখন আমাদের আন্দোলনের কৌশল পুনর্বিন্যস্ত করতে হচ্ছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতার মতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ও বিভিন্ন এলাকায় সংঘাত-সহিংসতায় দলের দুর্বলতা আবারও স্পষ্ট হয়েছে। অবস্থান কর্মসূচির এক সপ্তাহের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে দুদকের মামলায় সাজা, আরও অনেক নেতাকর্মীর আসামি হওয়া প্রভৃতি কারণে বিএনপির আন্দোলন মন্থর হয়েছে।
আগামী ১ সেপ্টেম্বর দলটির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীতে বর্ণাঢ্য র্যালি রয়েছে। তাতে নেতাকর্মীদের ব্যাপক অংশগ্রহণের পরিকল্পনা করছে হাইকমান্ড। এতেও নরম কর্মসূচির ঘোষণা আসছে বলে দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি সতর্কভাবে এগোচ্ছে। সেপ্টেম্বরে আন্দোলনের গতি বাড়বে। এর ধরন নিয়ে দলে আলোচনা চলছে। আন্দোলনে থাকা নেতারাও পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে বিএনপি শান্তিপূর্ণ পথেই এগোবে। জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তা কঠোর হতে পারে।’
বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে এক দফার আন্দোলনে গতি বাড়াতে চায় বিএনপি। ঢাকায় ফের মহাসমাবেশ, গণসমাবেশ বা বড় ধরনের কর্মসূচির চিন্তা রয়েছে হাইকমান্ডের। চূড়ান্ত আন্দোলনের ‘শেষ ধাপ’ শুরু হবে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তা চলবে। তখন কর্মসূচি হবে শুধু রাজধানীকেন্দ্রিক। বিচারালয়ের সামনে অবস্থান ছাড়াও নির্বাচন কমিশন, গণভবন, সচিবালয় প্রভৃতি ঘেরাও এবং টানা অবস্থান কর্মসূচির চিন্তা রয়েছে। শরিকদের সঙ্গে আলোচনাও চলছে। এ সপ্তাহেই বিএনপির সঙ্গে লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হবে।
সাইফুল হক বলেন, ‘সেপ্টেম্বরে আন্দোলনে গতি বাড়াতেই হবে। অবস্থান কর্মসূচি, বিক্ষোভ-অবরোধ, ঘেরাও নিয়ে আলোচনা হয়েছে। লাগাতার হরতাল দেওয়ার বিষয়ে শরিকদের পরামর্শ ও চাপ রয়েছে।’
গত ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ করেছিল বিএনপি। তখন পরিকল্পনা ছিল ঢাকাকেন্দ্রিক লাগাতার কর্মসূচির মাধ্যমে দ্রুত লক্ষ্যে পৌঁছানো। কারণ মহাসমাবেশ ঘিরে সারা দেশের লাখ লাখ নেতাকর্মী তখন ঢাকায় ছিল। কিন্তু পরদিন ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি দলের চাহিদা অনুযায়ী না হওয়ায় লাগাতার কর্মসূচি থেকে সরে গিয়ে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত নরম কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। ২৯ জুলাইয়ের কর্মসূচিতে গাফিলতির দায়ে নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়েছে দলটি। অনেককে মৌখিকভাবে শাসানো হয়েছে।
দলটির দুজন ভাইস চেয়ারম্যান ও যুগ্ম মহাসচিব পর্যায়ের নেতা জানান, নভেম্বরে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হতে পারে। সে হিসাবে দুই মাসের সময় রয়েছে। বিএনপির মধ্যে সরকারের উসকানিতে পা না দিয়ে ওই সময়টাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় সে আলোচনাই চলছে। নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে সহসাই কোনো সমঝোতা হতে পারে। সরকারের মনোভাব সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে বিএনপি। মার্কিন ভিসানীতিসহ গণতান্ত্রিক বিশ্বের অব্যাহত চাপের মুখে সরকার তাদের অবস্থান বদলাবে নাকি বিরোধী দলকে কোণঠাসা করার চেষ্টাই করবে তা দেখা হচ্ছে। বিএনপি মনে করে আগের মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে আন্দোলন দমনের পথে হাঁটবে সরকার। এটি ধরে নিয়েই আন্দোলনের নতুন রোডম্যাপ সাজাচ্ছে বিএনপি। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু চিকিৎসার জন্য এখন সিঙ্গাপুরে আছেন। তারা ফিরলে আন্দোলনসংক্রান্ত পর্যালোচনা সিদ্ধান্তের রূপ নেবে। রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা আছে, আন্দোলন পরিকল্পনা নিয়ে সিঙ্গাপুরে আলোচনা হলেও হতে পারে।’
এখন বিএনপির পরিকল্পনা হচ্ছে, এক দফা দাবি আদায় করেই নির্বাচনে যাবে তারা। সরকার যদি এ দাবি উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়, তাহলে বিএনপি সে নির্বাচনে যাবে না বরং তা প্রতিহত করবে। যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত সব দলের অবস্থান একই। যেসব দল যুগপতে নেই, কিন্তু অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন চায় তারাও ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন বর্জন করবে।
বিএনপি মনে করে মহাসমাবেশে ও অবস্থান কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা, সরকারি দলের হামলা-সন্ত্রাস ব্যাপকভাবে দেশ-বিদেশে সমালোচিত। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও যুক্তরাষ্ট্র সংঘাতের নিন্দা জানিয়েছে। এত সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে। এটা বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে আন্দোলন সফল করতে কাজে দেবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরও চাপ তৈরি হবে।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চারটি বিষয়ের ওপর বিএনপির আন্দোলন নির্ভর করবে। আন্দোলন এখন কিছুটা গতিহীন। এর দুটি কারণ হতে পারে। প্রথমত, ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতে সাফল্য না পাওয়া। দ্বিতীয়ত, আগস্ট মাস শোকের মাস। সম্ভবত এ কারণে তারা কর্মসূচিতে গতি যুক্ত করতে পারেনি।’
তিনি বলেন, বিএনপির আগামীর আন্দোলন নির্ভর করবে দুটি বিষয়ের ওপর। প্রথমত, অক্টোবর-নভেম্বরে নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। পরিবেশ তখন আন্দোলনের পক্ষে থাকবে। তাই সেপ্টেম্বরে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে মাঠে থাকার। এটি নির্ভর করবে দলটির নেতাকর্মী ও দেশের জনগণ কতটুকু তাদের সঙ্গে রয়েছে। দ্বিতীয়ত, ভোটের আগে বিএনপির মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটির ওপর আন্দোলনের গতি নির্ভর করবে।’
রাজপথে আন্দোলনে সিনিয়র নেতাদের অনুপস্থিতি বিএনপির সব পর্যায়ে ভাবাচ্ছে। রাজপথে নেতৃত্ব সংকট দৃশ্যমান। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সক্রিয়তা বা উপস্থিতির আশা করছে তৃণমূলের একটা বড় অংশ। তৃণমূলের নেতারা মনে করেন, চেয়ারপারসন যদি আন্দোলনে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখেন তাহলে সেটি সারা দেশের নেতাকর্মীদের উৎসাহিত করবে। বাস্তবতা হচ্ছে, অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে থাকায় তার পক্ষে সক্রিয় সম্ভব নয়। তাকে বাসায়ও নেওয়ার অবস্থা নেই। গত ১৮ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে জানান, মহাসচিব ২৮ জুলাই তার মেডিকেল রিপোর্টের ফলোআপ দেখাবেন। আর তার স্ত্রী রাহাত বেগমের ২৯ আগস্ট চিকিৎসক শিডিউল রয়েছে। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে মহাসচিবের দেখা হয়েছে। তিনি আগের চেয়ে সুস্থ। মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী মহিলা দল সভাপতি আফরোজা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সিঙ্গাপুরে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকের ফলোআপ করিয়ে আগামী মাসের প্রথম দিকে দেশে ফিরতে পারেন।
মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার ব্যবহার করতে পারে, সে জন্য ৩০০ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে চার শতাধিক স্কুলে স্বাস্থ্যসম্মত ওয়াশব্লক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। ছয় মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার টার্গেট নিয়ে ২০১২ সাল থেকে শুরু হয় প্রকল্প। কিছু স্কুলে কাজ শেষে ওয়াশব্লক হস্তান্তর করা হলেও সেগুলো নিয়ে রয়েছে নানান অভিযোগ। কয়েকটিতে করোনা মহামারীর আগে শুরু হওয়ায় নির্মাণকাজ এখনো চলছে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ ওঠায় কাজ বন্ধ রেখেছেন কয়েকজন ঠিকাদার। অনেক ওয়াশব্লকে একটি বা দুটি ছাদ ঢালাই দিয়েই ঠিকাদার উধাও! স্কুল বন্ধ থাকলে নির্মাণাধীন এসব ওয়াশব্লক মাদকসেবীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। দীর্ঘ সময়েও প্রকল্পের কাজ যথাযথভাবে শেষ না হওয়া এর সুফল পাচ্ছে না শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
যেসব জায়গায় প্রকল্প : মাদারীপুর সদর, রাজৈর, শিবচর, কালকিনি ও ডাসার (নতুন উপজেলা) এই পাঁচ উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৭১৯টি। এর মধ্যে ৪৩৬টি স্কুলে ওয়াশব্লক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ব্যয় ধরা হয় ৩০৫ কোটি ৬২ লাখ ৩ হাজার ৪৩৮ টাকা। কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় মাদারীপুর জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
মাদারীপুর জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (জিপিএস) ওয়াশব্লক নির্মাণকাজ হাতে নেওয়া হয় ৩৮টি, যার প্রতিটির খরচ ১৪ লাখ ১৩ হাজার ৮৪৪ টাকা ৫২ পয়সা। নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (এনএনজিপিএস) তৈরি করা হচ্ছে পুরো জেলায় ২৭টি, যার খরচ প্রতিটির ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩৩৬ টাকা ৪৪ পয়সা। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি বা পিইডিপি-৪-এর আওতায় পুরো জেলায় বিভিন্ন স্কুলে ওয়াশব্লক তৈরি হয়েছে ৬৭টি, যার প্রতিটির খরচ ১৮ লাখ টাকা। এ ছাড়া পিইডিপি-৩, যার কাজ অনেক আগেই সমাপ্ত হয়েছে; তবে সেই ওয়াশব্লকগুলো একই ছাদের নিচে ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা। এই প্রকল্পে পুরো জেলায় ছেলেদের জন্য ১৩৪ ও মেয়েদের জন্য ১৭৪টি ওয়াশব্লক, যার প্রতিটির খরচ ৩ লাখ ৮৬৬ টাকা করে।
জানা গেছে, পিইডিপি-৩-এর আওতায় কাজ শুরু হয় ২০১২ থেকে ২০১৩ সালে এবং শেষ হয় ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বা জিপিএস ও নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বা এনএনজিপিএসের আওতায় ২০১৮ থেকে ২০১৯ সালে কাজ শুরু হয় এবং এখনো চলমান। পিইডিপি-৪-এর কাজ শুরু হয় ২০১৯-২০ সালে, সেই কাজও চলছে।
জানা গেছে, মোট ১১৬টি ওয়াশব্লকের কাজ তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলছে। উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিসের সূত্র অনুযায়ী, যে কাজগুলো চলমান রয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগ বন্ধ রয়েছে করোনা মহামারীর পর থেকে। ঠিকাদারদের বারবার বলার পরও কাজ হচ্ছে না।
যা থাকার কথা
প্রকল্প অনুযায়ী, প্রতিটি ওয়াশব্লক ২৬ ফুট দীর্ঘ ও ১৩ ফুট প্রস্থের হওয়ার কথা। আধুনিক ওয়াশব্লকে উন্নতমানের দুটি কমোড, চারটি সাধারণ প্যান, দুটি বেসিন, দুটি প্রস্রাবখানা, দুটি ফুটওয়াশ, সাবমারসিবল পাম্পসহ পানির ট্যাংক, সেপটিক ট্যাংক এবং ভেতরে পুরোটাই উন্নতমানের টাইলসযুক্ত হওয়ার কথা। ভেতরে অন্যান্য প্রয়োজনীয় ফিটিংস ও সরঞ্জাম থাকার কথা।
সরেজমিনে ওয়াশব্লক
পাঁচ উপজেলার ২০টি সরকারি ও নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পিইডিপি-৩-এর আওতায় যেসব স্কুলে ওয়াশব্লক নির্মাণ করা হচ্ছিল, সেগুলো বেশ আগেই হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে সেগুলোর বেশিরভাই অপরিষ্কার ও অস্বাস্থ্যকর। কয়েকটি স্কুলে ওয়াশব্লক নিয়ে শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী (ইট, কংকর, রড) ব্যবহার; জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর অনুপস্থিতিতে বেইজ, পিলার ও ছাদ ঢালাই; নকশা মোতাবেক কাজ না করা; সময়মতো কিউরিং (পানি দিয়ে ভেজানো) করা হয়নি।
রাজৈর উপজেলার আলমদস্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজ শেষ করা ওয়াশব্লকে গিয়ে দেখা যায়, কমোড ভাঙা, ফ্লাশ অকেজো, কিছু স্থানে ভাঙা টাইলস লাগানো, সাবানদানির কারণে পানির কল চালানোয় অসুবিধা, দরজার কারণে হাই কমোডে যাওয়ায় অসুবিধা, প্রস্রাবখানা উল্টো দিকে বসানো। টাইলসের ফ্লোরে পানি জমে আছে।
মাদারীপুর সদর উপজেলার ‘উত্তরঝিকরহাটি ও পশ্চিম ঘটমাঝি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’-এর সহকারী শিক্ষক মাসুদা খানম বলেন, ‘আমি স্কুলে আসি সকাল ৮টার মধ্যে। সাড়ে ৪টা পর্যন্ত আমাদের স্কুলে থাকতে হয়। স্কুলে ওয়াশরুম থাকতেও আমাদের অন্যের বাড়িতে যেতে হয়। এতে তারা বিরক্ত হয়। কী করব। এরপরও যেতে হয়।’
রাজৈর উপজেলার সামছুল হক মোল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিন বছর আগে ওয়াশব্লকের কাজ শুরু হয়। কিন্তু একটি ছাদ ও চারটি পিলার ছাড়া আর কিছুই হয়নি। এ কাজ শেষ না করায় অন্য কোনো ওয়াশব্লক তৈরির সুযোগও হচ্ছে না। সেখানে পানি জমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে; মশা-পোকামাকড় জন্ম নিচ্ছে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে ওয়াশব্লকের ভবন আছে কিন্তু এর কোনো সুবিধা নিতে পারছে না পশ্চিম শ্রীনাথদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
এ ছাড়া টেকেরহাট পুপলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ওয়াশব্লকের কাজ কোনো রকম করে শেষ করা হয়েছে। এখন চলছে রঙের কাজ। তবে শিক্ষকদের অভিযোগ, তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে কমোড, সাধারণ প্যান, প্রস্রাবখানা সবই উল্টো লাগানো হয়েছে (পশ্চিমমুখী করে; মুসলিমপ্রধান দেশে যেটা করা হয় না)।
উত্তরঝিকরহাটি ও পশ্চিম ঘটমাঝি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সাফিয়া আক্তার বলেন, ‘আমার স্কুলে তিন বছর আগে কাজ শুরু হয়েছে। তারা আড়াই বছর ধরে একটু একটু করে কাজ করেছে। তারপরও সুন্দর করে কাজগুলো করে নাই। কমোডের ফ্লাশ, বেসিনের কল কাজ করে না। গ্লাস ভেঙে পড়েছে, পেছনের ট্যাংক ভেঙে পড়েছে। মূল ওয়াশব্লকে পানির সংযোগও দেওয়া হয় নাই। আমাদের ওয়াশব্লকের সঙ্গে একটি গভীর নলকূপ দেওয়ার কথা, সেটাও দেয়নি। তারা যে কাজ করে চলে গেছে, সেটা আমাকে বুঝিয়েও দিয়ে যায়নি। আমার কাছ থেকে কোনো ধরনের স্বাক্ষর নেয়নি। আমি একাধিকবার পাবলিক হেলথে জানিয়েছি! আমাদের শিক্ষা অফিসেও জানিয়েছি! কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের ও ছাত্রছাত্রীদের অনেক কষ্ট হয়। অন্যের বাড়িতে যেতে হয়। তারা অনেক কথা শোনায়। কী আর করার? তারপরও যেতে হয়।’
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অন্যের বাড়িতে গেলে অনেক সময় তাদের কাছ থেকে নানান কথা শুনতে হয়। অনেক সময় তারা বাথরুম চেপে রাখে, বাসায় গিয়ে সারে। এতে তাদের অনেক কষ্ট হয়। কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে।
অন্য আরেকটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা বলে, তাদের নামেমাত্র ওয়াশব্লক। অনেক পুরনো একটি শৌচাগার, যেটা ছেলে ও মেয়েরা সবাই ব্যবহার করে। অনেক সময় এতটাই অপরিষ্কার থাকে যে আশপাশেই যাওয়া যায় না।
ডাসার উপজেলার পূর্ব মাইজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পিইডিপি-৩ প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল চলছে, কিন্তু ওয়াশব্লক তালাবদ্ধ। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. শাহজালাল মিয়ার যুক্তি, স্কুলের শৌচাগার অন্যরা ব্যবহার করে, তাই তালা মারা থাকে। যখন যার প্রয়োজন হয়, চাবি নিয়ে যায়। না করা যায় না। এতে ছোট ছোট শিক্ষার্থীর অনেক কষ্ট হয়।
শিক্ষা অফিস থেকেও অভিযোগ
জানতে চাইলে রাজৈর উপজেলা শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি যে স্কুলগুলো ভিজিট করেছি, এর মধ্যে ১৫টির কাজ মোটামুটি সন্তোষজনক। বাকিগুলোর কাজ চলমান থাকার কথা থাকলেও বেশিরভাগই বন্ধ আছে দীর্ঘদিন।’
রাজৈর উপজেলায় মোট বিদ্যালয় ১৩৮টি। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮৬টি, নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫২টি। ৩৪টি স্কুলের ওয়াশব্লক তৈরির জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। কাজ শেষ করার পর ব্যবহার হচ্ছে ১৩টি এবং কাজ চলমান রয়েছে ২১টির। এরপর আর কোনো প্রস্তাব পাঠানো হয়নি।
শিবচর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মুন্সী রুহুল আসলাম বলেন, ‘এখানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২৪টি, জাতীয়করণ করা বিদ্যালয় ৫৬টি। এই ১৮০টি স্কুলের সবগুলোতে ওয়াশব্লক তৈরির প্রস্তাব পাঠাই। সেখানে ১১০টির প্রস্তাব পাস হয়ে ১০৪টির কাজ হচ্ছে। আর নদীভাঙনকবলিত এলাকায় ওয়াশব্লক হচ্ছে না। কারণ সেখানে স্কুলভবনই নাই।’
তিনি আরও জানান, ভদ্রাসন সরদারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় দেড় বছর আগে কাজ শুরু হলেও এখনো তা হস্তান্তর করা হয়নি। এ ছাড়া অনেকগুলোর কাজ ভালো হয়নি। ঠিকাদারের গাফিলতি রয়েছে।
কালকিনি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বদিউজ্জামান জানান, তার উপজেলায় মোট বিদ্যালয় ১৯৯টি। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক ১২২টি, নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭৭টি। এগুলোর মধ্যে ওয়াশব্লকের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল ৪৮টির, সবগুলোই পাস হয়েছে। এর মধ্যে ২৪টির কাজ চলমান রয়েছে এবং কাজ শেষে ব্যবহার হচ্ছে ২৪টি। যেগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে, সেগুলো মানের দিক থেকে মোটামুটি।
ঠিকাদারপক্ষের যুক্তি
ঠিকাদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যে এলাকায় তারা কাজ করেন, সেখানে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে হয়; কাজের টাকার অঙ্ক থেকে তাদের ২ থেকে ৩ শতাংশ দিতে হয়। আবার বিল পাওয়ার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন ভিজিটে ও বিভিন্ন দিবসে তদারককারী কর্মকর্তাদের ‘খুশি’ করতে হয়। সব মিলিয়ে বরাদ্দের একটা বড় অংশ চলে যায়। এসব কারণেই প্রকল্পে অনিয়ম বেশি হয়। বরাদ্দের সব টাকা হাতে আসবে না জেনে তারা নিজেদের খেয়ালখুশিমতো কাজ করেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ঠিকাদার।
জনস্বাস্থ্য বিভাগের ভাষ্য
রাজৈর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ইসহাক আলী বলেন, একজন ঠিকাদার একটি প্যাকেজে ছয়টি কাজ করে থাকেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় পাঁচটি শেষ হয়েছে, কিন্তু একটি কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারেননি। তখন দেখা যায়, একটু সময় বেশি লাগে। যারা কাজ অসম্পূর্ণ রেখেছেন বা কাজ করছেন না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চিঠি দেওয়া হয়েছে এবং সেই কাজগুলো পুনরায় টেন্ডার দিয়ে শুরু করা হবে।
মাদারীপুর জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, টেন্ডার হওয়ার পরে ছয় মাসের ভেতরে কাজ সমাপ্ত করে হস্তান্তর করার কথা বলা আছে। এর মধ্যে যদি কেউ কাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয় বা হস্তান্তর করা না হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা কাজগুলো অসম্পূর্ণ রেখেছে, তাদের জরিমানা করা হবে এবং সেই কাজের নতুন করে টেন্ডার দেওয়া হবে। এ ছাড়া তাদের চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় এক বছর ধরে কারাবন্দি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে বাংলাদেশ কর্র্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টির অন্তর্বর্তীকালীন দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক উপপরিচালক নাদিয়া রহমান এ আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ কর্র্তৃপক্ষের প্রতি অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে খাদিজাকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে যারা শুধু শান্তিপূর্ণভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ মানবাধিকারের চর্চার জন্য এভাবে বন্দি আছেন, তাদেরও মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।’
খাদিজার ঘটনাকে বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘনের একটি নিদারুণ ঘটনা উল্লেখ করে বিবৃতিতে নাদিয়া রহমান বলেন, ‘খাদিজাতুল কুবরার বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা এবং ডিগ্রির জন্য পড়াশোনা করার কথা, কারাগারে বসে একটি দমনমূলক আইনের মাধ্যমে ভাগ্যে কী ঘটবে, সেজন্য অপেক্ষায় থাকার কথা নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘খাদিজার এ আটকাবস্থা এমন এক সময়ে ঘটেছে যখন বাংলাদেশে কর্র্তৃপক্ষের সমালোচনাকারী ব্যক্তিদের কথা বলার সুযোগ সংকুচিত করা হচ্ছে এবং কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে ভিন্নমতের ব্যক্তিদের জন্য খারাপ নজির তৈরি হচ্ছে।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় খাদিজাতুল কুবরাকে গত বছর ২৭ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয়। তখন তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন। গত এক বছরে তার আর জামিন হয়নি।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে চলতি বছর মে মাসে। গত শুক্রবার ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে দেশটি। নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে এ নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করার ঘোষণার তিন দিন পার হলেও কারও নাম প্রকাশ হয়নি। তবে বিভিন্ন মহলে নানা দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের নামে আলোচনা এখন সর্বত্র।
কারা যুক্তরাষ্ট্রের এ ভিসা নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন বা পড়তে যাচ্ছেন তা নিয়ে রাজনৈতিক, কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ ও ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্বকারী একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, যেহেতু নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে এর লক্ষ্য নির্বাচনী ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারাই। তারাই ভিসানীতির আওতায় পড়বেন, এটাই স্পষ্ট।
তারা আরও বলেন, ভিসানীতি প্রয়োগের কথা জানালেও যুক্তরাষ্ট্র কারও নাম প্রকাশ করেনি। তবুও বলা যেতে পারে, কাদের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ করবে পশ্চিমা এ প্রভাবশালী দেশটি।
এ ব্যক্তিরা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়ই একটা তালিকার বেশিরভাগ নামই চূড়ান্ত করে ফেলেছে। অল্পসংখ্যক বাকি থাকতে পারে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে সেগুলোরও চূড়ান্ত করা হবে। যেখানে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জড়িত প্রতিষ্ঠান, দপ্তর, অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা থাকতে পারেন।
বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে ধারণা পাওয়া গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির উদ্দেশ্যই যেহেতু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে, ফলে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা যারা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকবেন তারাই ভিসানীতির আওতায় আসবেন। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারাও থাকতে পারেন। থাকতে পারেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রাজনৈতিক নেতা, তারা যেকোনো দলের হতে পারেন। অল্পসংখ্যক ব্যবসায়ীও থাকতে পারেন।
জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন,‘ভিসানীতির বিষয়টি আমেরিকা প্রশাসন পরিষ্কার করে ঘোষণা না করলেও বুঝিয়ে দিয়েছে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারেন, এমন যে কেউ এ ভিসানীতির আওতায় পড়তে পারেন। যেমন রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাহী প্রশাসন, জুডিশিয়ারি অর্থাৎ যারাই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট থাকবেন, অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যাহত করবেন তারাই এর আওতায় আসবেন।’ তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের এর আওতায় পড়ার সুযোগ নেই। তবে হ্যাঁ, নির্বাচন ব্যাহত করার ছোট্ট সুযোগ তাদের হাতেও থাকে, তারা যদি জড়িত হন, ভিসানীতির আওতায় পড়বেন।’
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ভিসানীতির চেয়েও আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে নেগোশিয়েশন জরুরি। কে ভিসানীতির আওতায় পড়ল, কে পড়ল না এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঐক্য।’ তিনি বলেন, ‘ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়ায় কারা রয়েছেন সেটা আমেরিকা প্রশাসন ঘোষণা না করলেও বোঝা খুব জটিল কিছু নয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘আমেরিকা যেহেতু ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে তাদের ভিসানীতি, ফলে পরিষ্কার হয়ে গেছে কারা পড়তে পারেন এর আওতায়। যারা নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, নিশ্চয়ই তারাই এর আওতায়।’
বিভিন্ন পর্যায়ের ও পেশার নিয়োজিত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনৈতিক নেতারা ভিসানীতিকে তেমন আমলে না নিলেও বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা ও সিভিল প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ভেতরে আমেরিকার ভিসানীতি ভীষণ ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে এর নানা কারণ জানা গেছে। এর মধ্যে বিদেশে টাকা পাচার, ব্যবসাবাণিজ্য, পরিবারের সদস্যদের বিদেশে থাকা এসব কারণে বেশি ভীতিতে ফেলেছে তাদের। আবার একটা অংশ বিদেশে কিছু না থাকলেও ভিসানীতির আওতায় পড়লে ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়ার ভয় পাচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করায় যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে পারেন এমন দুুশ্চিন্তা যেমন কারও কারও মনে ভর করেছে, তেমনি ভিসানীতিতে পড়ার সুযোগ নেই তারাও দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। কারণ এই শ্রেণির লোকজন মনে করছেন, কখনো যদি যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান, তখন যদি ভিসা না হয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন এমন নামের তালিকাও চারদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে। আরও অগ্রসর হয়ে কোনো কোনো মহল লম্বা তালিকা হাতে নিয়ে ঘুরছে। তবে এসব নামের তালিকার উৎস বা সূত্র নিশ্চিত নয় বলে কেউ কেউ বিষয়টি গুজব মনে করছেন। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের বাইরে প্রায় সবাই ভিসানীতি আতঙ্কে ভুগছেন।
একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ভিসানীতিকে জয়-পরাজয় হিসেবে প্রচার করে এলেও ভেতরে ভীতি সবারই রয়েছে। কারণ পশ্চিমা দেশে তাদের অনেকেই ইতিমধ্যে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছেন। ফলে রাজনীতির বাইরেও ব্যক্তিজীবনের প্রয়োজনে ভিসানীতি তাদের ওপর যদি প্রভাব ফেলে, সে আশঙ্কা তো আছেই।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সব বিষয়ে আমি কথা বলি না। আমি একটাই কথা বলব, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আওয়ামী লীগ সে কাজই করছে।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘ভিসানীতি আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এর সঙ্গে গণতন্ত্র ও নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।’ তিনি বলেন, গণতন্ত্রের বিষয়ে বলতে হলে আরও অনেক বিষয় রয়েছে। এ ভিসানীতি কারা লক্ষ্যবস্তু জানতে চাইলে ইনু বলেন, ‘এটি নিয়ে মাথাব্যথা নেই আমাদের। তারাই বলতে পারবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কারও পরামর্শে সরকার কোনো প্রতিষ্ঠান অদলবদল করবে না, পরিবর্তনও আনবে না।’
আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সংস্থাটি বলছে, আজ রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ ছাড়া বর্ধিত পাঁচ দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
আজ সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সকাল ৯টা থেকে আজ রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়; ঢাকা ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুই এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত) দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে সৈয়দপুরে ২৫৯ মিলিমিটার। এ ছাড়া দেশের উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাতের মধ্যে দিনাজপুরে ১৯১, রংপুর ১৩৮, ডিমলায় ৯৯, তেঁতুলিয়ায় ৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সীতাকুণ্ডে ৩৫.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়া ও রাজারহাটে ২৩.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঝাল খেতে অনেকেই পছন্দ করেন আবার অনেকেই অল্প ঝালও সহ্য করতে পারেন না। সে যাই হোক বেশি ঝাল লাগলে আমরা পানি পান করে উপশম করার চেষ্টা করি। তবে পানি কিন্তু ঝাল লাগা কমায় না, বরং বাড়ায়! কথাটা শুনে অবাক লাগছে? বিষয়টি বুঝতে হলে আমাদের জানতে হবে ঝাল কেন লাগে।
ঝাল খাবারে ক্যাপাসাইসিন নামক এক ধরনের উপাদান থাকে। সেই উপাদানে এক ধরনের প্রাকৃতিক তেল পাওয়া যায়। আর তেল ও পানি কখনও মেশে না। যা আপনার কোষঝিল্লি থেকে ক্যাপসিসিন তাড়ানোর বদলে মুখের ভেতরের অন্য অংশে ছড়িয়ে দেয়। এতে করে মুখের ভেতর আরও ঝাল লাগা অনুভূত হয়।
পানির পরিবর্তে কিছু খাবার আছে সেগুলো খেলে ঝাল লাগা থেকে দ্রুত স্বস্তি পাওয়া যায়।
টমেটো ও লেবু
টমেটো ও লেবু মুখের ঝালভাব কমাতে দারুণ কাজে দেয়। ঝালের যে অ্যাসিড থাকে তা কমাতে দারুন কার্যকর টমেটো ও লেবু। ঝাল লাগলে তাই দ্রুত এক টুকরো টমেটো মুখে দিতে পারেন। কমলা, আনারস ও লেবুর রসেও একই ধরনের উপাদান আছে। যদি তরকারি খুব বেশি ঝাল হয় তাহলে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন। ঝাল দ্রুত কমে যাবে।
দুগ্ধজাতীয় খাবার
ঝাল লাগলে দুগ্ধজাত খাবার দ্রুত যাদুর মতো কাজ করে। ঠাণ্ডা এক চুমুক দুধ বা এক চামচ দই মুখের জ্বালা জুড়াতে পারে। দই মুখে দিলে দ্রুত মুখের জ্বলুনি কমবে। দুগ্ধজাত খাবারে ক্যাপসিসিন নামক এক উপাদান থাকে, যা ঝালে থাকা ক্যাপসিসিনকে ভেঙে ফেলে ও এর প্রভাব থেকে মুক্তি দেয়।
চিনি ও মধু
মুখে বেশি ঝাল লাগলে একটু চিনি বা এক চামচ মধু খেয়ে নিতে পারেন। তেলজাতীয় ক্যাপসিসিনকে চিনি বা মধু শোষণ করে নেয় এবং মুখের জ্বলা ভাব দ্রুত দূর করে।
ভাত বা রুটি
মুখে বেশি ঝাল লাগলে দ্রুত ফোলা রুটি বা একগাল ভাত খেয়ে নিতে পারেন। ক্যাপসিসিন ও মুখের মধ্যে প্রাকৃতিক বাধা দেয় শ্বেতসার। এতে কিছুটা ক্যাপসিসিন শোষিত হয়। এছাড়া ঝোলজাতীয় কোনো তরকারিতে ঝাল বেশি হলে তখন আলুর কয়েক টুকরা দিয়ে দেবেন। এতে করে তরকারিতে ঝাল অনেকটা কমবে। একইভাবে স্যুপেও ঝাল হলেও একই পদ্ধতি কাজে লাগাতে পারেন।
টক দই
মেদ ঝরানো থেকে ঝাল কমানো— টক দই । ঝাল কমাতে এই দইয়ের জুড়ি মেলা ভার। তবে সবচেয়ে ভাল হয় যদি ঝাল কোনও খাবার খেয়ে এক চামচ টক দই খেয়ে নিতে পারেন। দইয়ে থাকা উপকারী উপাদান মুখের ভিতরে একটা স্তর তৈরি করে। যা ঝালের সঙ্গে লড়াই করে।
লিকার চা
মশলাদার খাবার খেয়ে ঝালের চোটে প্রাণ ওষ্ঠাগত? সুস্থ হতে কিন্তু চুমুক দিতে পারেন চায়ের কাপে। চায়ে থাকা ট্যানিন ক্যাপাসাইসিনের সক্রিয়তা ধীরে ধীরে কমাতে থাকে। তবে এই সময়ে খুব গরম চা খাওয়ার দরকার নেই। তাতে সমস্যা হতে পারে। তার চেয়ে ঈষদুষ্ণ গরমজলে চা ফুটিয়ে নিতে পারেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের উদ্যোগে আজ রাজধানীর উত্তরা ও যাত্রাবাড়ীতে দুটি শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটায় সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে যাত্রাবাড়ী মোড়সংলগ্ন শহীদ ফারুক সড়কে শান্তি সমাবেশ শুরু হবে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুরুল আমিন রুহুল এমপির সভাপতিত্বে সমাবেশে কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
বিকেল ৩টায় উত্তরা আজমপুর আমির কমপ্লেক্সের সামনে শুরু হবে আরেকটি শান্তি সমাবেশ। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের এ সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন।
এতে সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। সঞ্চালনা করবেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’