
সম্প্রতি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে ৩৪ নাগরিকের বিবৃতি প্রসঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বুদ্ধি লোপ নাকি বুদ্ধি খাটিয়ে শ্রমিকদের ঠকানোর জন্য তারা বিবৃতিটা দিয়েছেনÑ সেটিই প্রশ্ন।
তিনি গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর পান্থপথে সামারাই কনভেনশন সেন্টারে টেলিভিশন ক্যামেরা-জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (টিসিএ) আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস-২০২৩ উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কথা বলেন। পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম প্রধান আলোচকের বক্তব্য দেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘৩৪ জন বুদ্ধিজীবীর বিবৃতি দেখলাম ড. ইউনূস সাহেবের পক্ষে। ড. ইউনূস সাহেবের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই বলতে চাই কেন না তিনি একজন জ্যেষ্ঠ নাগরিক এবং নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনি শ্রমিকের পাওনা বুঝিয়ে দেন নাই। তার প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের দেওয়ার কথা ছিল ৫ শতাংশ, যা ১২০০ কোটি টাকারও বেশি। সেই ১২০০ কোটি টাকাকে জালিয়াতির মাধ্যমে ঘুষ দিয়ে ৪০০ কোটি টাকা করা হয় এবং সেটাও তিনি দেন নাই। এ জন্য মামলা হয়েছে, তারপর জরিমানা হয়েছে। এখন মামলা বিচারাধীন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে ৩৪ জন বুদ্ধিজীবীকে বলতে চাই আপনারা যে বিবৃতি দিলেন, শ্রমিকদের পক্ষে আপনাদের কোনো বক্তব্য নাই কেন? ১২০০ কোটি টাকা শ্রমিকদের পাওনা ছিল, সেই পাওনা না দিয়ে সেটা জালিয়াতির মাধ্যমে কমিয়ে ৪০০ কোটি টাকা করা হলো আর আপনারা সেটার পক্ষে বিবৃতি দিলেন! আপনাদের বুদ্ধিটা কি এখানে লোপ পেয়েছে, না কি বুদ্ধি খাটিয়ে শ্রমিকদের ঠকানোর জন্য বিবৃতিটা দিয়েছেন এটি হচ্ছে আমার প্রশ্ন।’
এ সময় টিভি ক্যামেরা-জার্নালিস্টদের উদ্দেশে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, প্রকৃতপক্ষে টেলিভিশনের প্রাণ হচ্ছে ক্যামেরা সাংবাদিকরা। তারা যদি শুট না করে তাহলে তো টেলিভিশনে নিউজ যাবে না, সেটা নিউজের শুটিং হোক কিম্বা প্রোগ্রামের শুটিং। তারা শুট না করলে প্রযোজক, পরিচালক, নিউজ এডিটর, নিউজ কাস্টারদের কোনো কাজ নাই।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ক্যামেরা সাংবাদিকদের কষ্ট করে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। অনেক সময় অনেকে তেড়ে আসে, ক্যামেরা ভেঙে দেয়। অনেক ক্যামেরা সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হন। এ সমস্ত ঝুঁকি নিয়ে তারা কাজটা করেন। এ জন্য তথ্যমন্ত্রী হিসেবে তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এ ক্যামেরা সাংবাদিকরা যাতে ঠিকভাবে বেতন পায় সে দিকে নজর দেওয়া ও তাদের প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনার জন্য সব টেলিভিশন চ্যানেলের কর্র্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছেন।
পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম তার বক্তৃতায় বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই সেই অনন্য নেতা ছিলেন, রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান হওয়ার আগেই পুরো বাঙালি জাতি যার কথা ও আদেশ মন থেকে মান্য করত।’
টিসিএ সভাপতি শেখ মাহাবুব আলমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক জীবনের সঞ্চালনায় সভায় ইঞ্জিনিয়ার মো. এনামুল হক এমপি, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়া, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব শাকিল আহমেদ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার নেপথ্য কুশীলবদের বিচার দাবি করেন।
ক্ষমতা ধরে রাখতে আওয়ামী লীগ ১০টি বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। দলটির নেতাকর্মীরা বিশ্বাস করছেন, এসব পরিকল্পনা ঠিকঠাক বাস্তবায়ন করতে পারলে টানা চতুর্থ দফায় ক্ষমতায় আসা সম্ভব।
এসব পরিকল্পনার অন্যতম হলো রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে সরব থাকা। এ ছাড়া দলীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে তৃণমূল নেতাকর্মীদের দূরত্ব দূর করা ও সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে দলে সুদৃঢ় ঐক্য গড়ে তোলার কাজটি যথাযথভাবে করা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশিদের সঙ্গে সম্পর্ক যে জায়গায় গেছে সেখান থেকে সম্পর্ক পুরোপুরি পুনরুদ্ধার করার সুযোগ কম। এটা ধরেই নিয়েছেন তারা। ফলে নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগকে অনেক কিছুই মোকাবিলা করতে হবে। কিন্তু ক্ষমতার টানা ১৫ বছরে অসংখ্য সফলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেও সাংগঠনিক শক্তিতে অনেকাংশে গরমিল ধরা পড়েছে। যে কারণে সাংগঠনিকভাবে পিছিয়ে আছে আওয়ামী লীগ।
দলটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করা ও ঐক্যবদ্ধ রাখাই অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা বারবার দলের ঐক্যের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ আওয়ামী লীগকে হারাতে পারে না। তিনি বলেন, ‘সাংগঠনিক কিছু গ্যাঞ্জাম আছে সেগুলো মীমাংসা করার কাজ চলছে।’
মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি গত বছরের মাঝামাঝি থেকে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে জোরালো আন্দোলন শুরু করে। ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সমমনা ৩৬টি দল স্বতন্ত্রভাবে এবং জোটবদ্ধ হয়ে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত হয়। বিএনপিসহ এই ৩৭ দলের আলাদা আলাদা দাবি এখন এক দফায় পরিণত হয়েছে। সেই দাবির অন্যতম সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান।
বিরোধীদের আন্দোলনের জবাবে আওয়ামী লীগও সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচন করার এক দফা ঘোষণা করেছে। দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির পাশাপাশি সংঘাতের ঘটনাও ঘটছে।
প্রায় একই সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা জানিয়ে আসছে। তাদের কূটনৈতিক তৎপরতাও লক্ষণীয়। প্রতিবেশী ভারত এ বিষয়ে তার অবস্থান জানিয়ে বলেছে, বাংলাদেশের জনগণই ঠিক করবে তারা কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। এর মধ্যে ভারতের সংবাদমাধ্যমেই বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যু নিয়ে খবর প্রকাশ হচ্ছে। পাশাপাশি জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশে সভা-সমাবেশের অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে সরব। এর মধ্যে গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমর্থনে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। এই ভিসানীতিকে এক ধরনের হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। এরপর দেশটির প্রতিনিধিদের সফরও বেড়েছে।
চলতি বছরের শেষের দিকে কিংবা আগামী জানুয়ারির প্রথম দিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। তার আগে বিদেশিদের নজিরবিহীন তৎপরতা ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির আন্দোলনে এবার টালমাটাল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ আওয়ামী লীগের সামনে। সে কারণে আন্দোলন সামলানো ও বিদেশিদের তৎপরতা কমাতে এত দিন ভিন্নপথে হাঁটলেও এবার নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে আনতে নিজের দলের শক্তির দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। সভা-সমাবেশে প্রকাশ্যেই তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে, তাহলে দলটিকে হারানোর শক্তি কারও নেই।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার এ বক্তব্যের গুরুত্ব তুলে ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীর বেশ কয়েকজন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে দলের ব্যাপারে তেমন কোনো নির্দেশনা ছিল না দলীয় সভাপতির। এবার বারবার একই ধরনের নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, সারা দেশে সুবিধাভোগী ও ত্যাগীদের নেতাকর্মীদের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। সুবিধাভোগী ও ত্যাগী উভয় পক্ষের রক্তাক্ত সংঘাতের ঘটনাও ঘটছে। ক্ষমতার ১৫ বছরে সর্বত্র সুবিধাভোগীদের দেখা গেলেও এখন মাঠে-ঘাটে নজরে পড়েন না তারা। মাঠ দখলে রাখার রাজনীতিতে অদৃশ্য হয়ে গেছেন সুবিধাভোগী ও সুযোগসন্ধানী নেতাকর্মীরা।
ওই নেতারা বলেন, দলের নানা দুর্বলতা চিহ্নিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০টি করণীয় নির্ধারণ করেছেন। এসব করণীয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করে আগামী নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে আনতে চান শেখ হাসিনা।
দলের সভাপতি শেখ হাসিনা গত ৬ আগস্ট তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডাকেন সারা দেশের নেতাকর্মীদের। সেদিন বিশেষ বর্ধিত সভায় সারা দেশের অন্তত ৫০ নেতার বক্তব্য শোনেন তিনি। বিভিন্ন গবেষণা ও বর্ধিত সভায় দেওয়া নেতাদের বক্তব্যের নির্যাস নিয়ে ১০টি পরিকল্পনা ঠিক করেছেন। বিভিন্ন পরামর্শক মহলও আওয়ামী লীগ সভাপতিকে এ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পরামর্শ দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজে নেমে গেছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ যাচাই-বাছাই করে দেখেছেন, নির্বাচনী মাঠে দলকে শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে এবং দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে হলে পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
এসব পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, সরকার ও দলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ঠেকাতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা, মসজিদ-মাদ্রাসা ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে সচেতনতামূলক বক্তব্য দেওয়া। রয়েছে, সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড ঘটা করে প্রচার করা, যেকোনো মূল্যে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা, দ্রব্যমূল্য সহনীয় ও স্থিতিশীল পর্যায়ে রাখা, কোনোভাবেই সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে না দেওয়া, মন্ত্রী-এমপিদের লাগামহীন কথাবার্তা বন্ধ করা, বড় কয়েকজন দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি হতে পারেন মন্ত্রী-এমপি ও নেতা, তাদের বিচারের আওতায় আনা, সম্পর্ক টালমাটাল থাকলেও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সম্পর্কোন্নয়ন ও দলের ভেতরের অন্তর্দ্বন্দ্ব-কোন্দল দূর করা ও দলকে সংঘাতমুক্ত রাখা। মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের (এমপি) সম্পদ ও আয়ের উৎস জনসমক্ষে প্রকাশ করার অঙ্গীকার থাকলেও বন্ধ থাকা সেই কাজটি নির্বাচনের আগে শুরু করতে চান প্রধানমন্ত্রী।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনের আগে একাধিক পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে সংগঠন শক্তিশালী করা, ত্যাগী নেতাকর্মী যারা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন তাদের মাঠে নামানো, সরকারের উন্নয়ন প্রচার ও মাঠ নিয়ন্ত্রণে রাখা এগুলো নির্বাচন পর্যন্ত বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতার ১৫ বছরে দলে সুবিধাভোগী বেড়েছে, এটা সত্যি কথা। এর ফলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নির্বাচনের আগে তা পুষিয়ে নিতে কাজ চলছে।’
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, দলের পুরনো ও ত্যাগী নেতাদের সম্মান দেওয়া, পদে রাখা ও মাঠে নামানোর জন্য দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতির মামলা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি পাঠিয়েছেন বিশ্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বস্থানীয় দেড় শতাধিক ব্যক্তি। তাদের মধ্যে শতাধিক নোবেল বিজয়ী রয়েছেন। গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোভিত্তিক জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান সিজিয়ন পিআর নিউজওয়্যার তাদের ওয়েবসাইটে এই চিঠি প্রকাশ করেছে।
চিঠিদাতাদের মধ্যে বারাক ওবামা, শিরিন এবাদি, ওরহান পামুক, জোসেফ স্টিগলিৎজসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শতাধিক নোবেল বিজয়ী আছেন। এ ছাড়া জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, যুক্তরাজ্যের ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ধনকুবের স্যার রিচার্ড ব্রানসনসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি রয়েছেন চিঠিদাতাদের তালিকায়।
চিঠিতে যা লিখেছেন : নোবেল বিজয়ী, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের নেতৃত্বস্থানীয় এবং বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে আমরা আপনার কাছে লিখছি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে আপনার দেশ যেভাবে প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে, তা আমরা স্বীকার করছি। অবশ্য সম্প্রতি বাংলাদেশে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রতি যে হুমকি দেখা গেছে, তা নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা বিশ্বাস করি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু এবং দেশের প্রথম সারির দলগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়াটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিগত দুটি নির্বাচনের বৈধতার ঘাটতি রয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে মানবাধিকারের প্রতি যেসব হুমকি রয়েছে, তার মধ্যে একটি আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। সেটি হলো শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা। আমরা এ কারণে শঙ্কিত যে সম্প্রতি তাকে নিশানা করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তিনি ধারাবাহিক বিচারিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে আমরা মনে করি। তার নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে ৪০ জন বিশ্বনেতা আপনার কাছে যে চিঠি লিখেছিলেন, তার ওপর ভিত্তি করেই এই চিঠি লেখা হয়েছে।
আমরা সম্মানের সঙ্গে আপনার প্রতি অবিলম্বে অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিতের আহ্বান জানাচ্ছি। এরপর আন্তর্জাতিকভাবে আইন বিশেষজ্ঞ হিসেবে স্বীকৃত ব্যক্তিদের নিয়ে একটি নিরপেক্ষ বিচারক প্যানেলের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো পর্যালোচনা করা হোক। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে তার বিরুদ্ধে দুদক ও শ্রম আইনে যেসব মামলা চলছে, সেগুলো পর্যালোচনা করলে তার দোষ খুঁজে পাওয়া যাবে না।
আপনি জানেন অধ্যাপক ইউনূস যে কাজ করেন, তা আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক। সামাজিক ব্যবসা কীভাবে আন্তর্জাতিক অগ্রগতি আনতে পারে, তা তিনি দেখিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে শতভাগ দারিদ্র্য বিমোচন, বেকারত্ব দূর করা এবং কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে অগ্রগতির বিষয় রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশিরা কীভাবে বৈশ্বিক অগ্রগতিতে অবদান রাখছে, তার নেতৃত্বস্থানীয় দৃষ্টান্ত তিনি। কোনো ধরনের নিপীড়ন ও হয়রানি ছাড়া স্বাধীনভাবে তিনি তার পথপ্রদর্শনমূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে পারবেন বলে আমরা আশা করছি।
আমরা আশা করি, আপনি এসব আইনগত বিষয়ের যথাযথ, নিরপেক্ষ ও ন্যায্যতা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখবেন। পাশাপাশি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করবেন। একই সঙ্গে সব ধরনের মানবাধিকার রক্ষার প্রতি সম্মান দেখানো নিশ্চিত করবেন। আগামী দিনগুলোতে এসব বিষয়ের সুরাহা কীভাবে হবে, তা দেখার জন্য বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ নজর রাখছে। আমরাও সেই সব মানুষের কাতারে রয়েছি।
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আরও ১৮ মামলা : শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ও গ্রামীণ টেলিকমের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ১৮ বাদীর পক্ষে ১৮টি মামলা হয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়েছে। মামলায় ওই প্রতিষ্ঠানের সাবেক ১৭ জন এবং বর্তমানে কর্মরত ১ জনের ২১ কোটি ৪১ লাখ ১৭ হাজার ১৬৩ টাকা পাওনা দাবি করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে এ মামলাগুলো হয়। শুনানি নিয়ে শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান (জেলা ও দায়রা জজ) বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন। ১৮ মামলার মধ্যে প্রথম ৯ বাদীর মামলায় আগামী ১৬ অক্টোবর এবং পরবর্তী ৯ বাদীর মামলায় ১৮ অক্টোবর ড. ইউনূসকে সমনের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালতে বাদীপক্ষে এই মামলাগুলো করেন অ্যাডভোকেট মশিউর মালেক ও অ্যাডভোকেট মো. হেলালউদ্দিন। শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে করা একটি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে।
আইনজীবী হেলালউদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৮ বাদীর মধ্যে ১৭ জন ইতিমধ্যে অবসরে গেছেন। ১ জন এখনো কর্মরত রয়েছেন। তারা ২০০৬ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। শ্রম আইন, ২০০৬ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের বুঝিয়ে দিতে হয়। কিন্তু ড. ইউনূস ও তার প্রতিষ্ঠান ১৭ বছরেও তা করেননি। এতে শ্রম আইনের ২১৩ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আদালত সমন জারি করেছেন।’
ড. ইউনূসের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তারা লভ্যাংশ দাবি করলেও ২০০৬ সালের আইনের ২৩২ ধারায় শিল্প সম্পর্কিত কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের কথা বলা হয়েছে। গ্রামীণ টেলিকম তো শিল্প সম্পর্কিত কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। তাই তাদের দাবি সঠিক নয়। আমরা মামলার বিষয়টি শুনেছি। সমনের অনুলিপি পেলে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করে শ্রম আইনের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ এনে ড. ইউনূসসহ প্রতিষ্ঠানের চারজনের বিরুদ্ধে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার শ্রম আদালতে মামলা করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর। এরপর এ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ড. ইউনূসের পক্ষে উচ্চ আদালতে আবেদন করলেও তা টেকেনি। এ মামলায় ২২ আগস্ট ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন ঘটিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে এক দফার আন্দোলন করছে বিএনপি ও সমমনা প্রায় ৩৬টি দল। সমস্যা হচ্ছে, তাদের আন্দোলনে প্রারম্ভিক গতি এখন নেই। ১২ জুলাই এক দফার আন্দোলন শুরু হয়েছিল। গত এক মাসে সেটি পথ হারিয়েছে। ২৮ জুলাইয়ের মহাসমাবেশের পর রাজপথে বিএনপির ধারাবাহিক আন্দোলনের কর্মসূচি থাকলেও অনেকের মতে, তাতে রাজনৈতিক স্পৃহার (স্পিড) বড্ড অভাব।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে অবস্থান কর্মসূচি সফল করতে না পারায় বিএনপির এ দশা। তাদের শরিকরা কর্মসূচির গতি হারানোর বিষয়টি স্বীকার করে সমন্বয়হীনতা ও কিছু কারণের কথা উল্লেখ করেছেন। তারা মনে করেন, ২৯ জুলাইয়ের কর্মসূচিতে সমন্বয় না থাকায় আন্দোলনে ধাক্কা লেগেছে। ঝড়-বৃষ্টিও একটা কারণ, ১৫ আগস্টকেন্দ্রিক ঘটনাবলির কারণেও যুগপৎ কর্মসূচিতে গতি ছিল না। এ সুযোগে রাজপথে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক কর্মকান্ড বাড়িয়েছে। ক্ষমতাসীনরা তাদের শক্তি প্রদর্শন করে যাচ্ছে।
বিএনপির শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতে আমাদের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি ছিল। ফলে আন্দোলন কিছুটা শ্লথ হয়েছে। আগস্টের টার্গেটও আমরা পূরণ করতে পারিনি। এখন আমাদের আন্দোলনের কৌশল পুনর্বিন্যস্ত করতে হচ্ছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতার মতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ও বিভিন্ন এলাকায় সংঘাত-সহিংসতায় দলের দুর্বলতা আবারও স্পষ্ট হয়েছে। অবস্থান কর্মসূচির এক সপ্তাহের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে দুদকের মামলায় সাজা, আরও অনেক নেতাকর্মীর আসামি হওয়া প্রভৃতি কারণে বিএনপির আন্দোলন মন্থর হয়েছে।
আগামী ১ সেপ্টেম্বর দলটির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীতে বর্ণাঢ্য র্যালি রয়েছে। তাতে নেতাকর্মীদের ব্যাপক অংশগ্রহণের পরিকল্পনা করছে হাইকমান্ড। এতেও নরম কর্মসূচির ঘোষণা আসছে বলে দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি সতর্কভাবে এগোচ্ছে। সেপ্টেম্বরে আন্দোলনের গতি বাড়বে। এর ধরন নিয়ে দলে আলোচনা চলছে। আন্দোলনে থাকা নেতারাও পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে বিএনপি শান্তিপূর্ণ পথেই এগোবে। জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তা কঠোর হতে পারে।’
বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে এক দফার আন্দোলনে গতি বাড়াতে চায় বিএনপি। ঢাকায় ফের মহাসমাবেশ, গণসমাবেশ বা বড় ধরনের কর্মসূচির চিন্তা রয়েছে হাইকমান্ডের। চূড়ান্ত আন্দোলনের ‘শেষ ধাপ’ শুরু হবে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তা চলবে। তখন কর্মসূচি হবে শুধু রাজধানীকেন্দ্রিক। বিচারালয়ের সামনে অবস্থান ছাড়াও নির্বাচন কমিশন, গণভবন, সচিবালয় প্রভৃতি ঘেরাও এবং টানা অবস্থান কর্মসূচির চিন্তা রয়েছে। শরিকদের সঙ্গে আলোচনাও চলছে। এ সপ্তাহেই বিএনপির সঙ্গে লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হবে।
সাইফুল হক বলেন, ‘সেপ্টেম্বরে আন্দোলনে গতি বাড়াতেই হবে। অবস্থান কর্মসূচি, বিক্ষোভ-অবরোধ, ঘেরাও নিয়ে আলোচনা হয়েছে। লাগাতার হরতাল দেওয়ার বিষয়ে শরিকদের পরামর্শ ও চাপ রয়েছে।’
গত ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ করেছিল বিএনপি। তখন পরিকল্পনা ছিল ঢাকাকেন্দ্রিক লাগাতার কর্মসূচির মাধ্যমে দ্রুত লক্ষ্যে পৌঁছানো। কারণ মহাসমাবেশ ঘিরে সারা দেশের লাখ লাখ নেতাকর্মী তখন ঢাকায় ছিল। কিন্তু পরদিন ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি দলের চাহিদা অনুযায়ী না হওয়ায় লাগাতার কর্মসূচি থেকে সরে গিয়ে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত নরম কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। ২৯ জুলাইয়ের কর্মসূচিতে গাফিলতির দায়ে নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়েছে দলটি। অনেককে মৌখিকভাবে শাসানো হয়েছে।
দলটির দুজন ভাইস চেয়ারম্যান ও যুগ্ম মহাসচিব পর্যায়ের নেতা জানান, নভেম্বরে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হতে পারে। সে হিসাবে দুই মাসের সময় রয়েছে। বিএনপির মধ্যে সরকারের উসকানিতে পা না দিয়ে ওই সময়টাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় সে আলোচনাই চলছে। নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে সহসাই কোনো সমঝোতা হতে পারে। সরকারের মনোভাব সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে বিএনপি। মার্কিন ভিসানীতিসহ গণতান্ত্রিক বিশ্বের অব্যাহত চাপের মুখে সরকার তাদের অবস্থান বদলাবে নাকি বিরোধী দলকে কোণঠাসা করার চেষ্টাই করবে তা দেখা হচ্ছে। বিএনপি মনে করে আগের মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে আন্দোলন দমনের পথে হাঁটবে সরকার। এটি ধরে নিয়েই আন্দোলনের নতুন রোডম্যাপ সাজাচ্ছে বিএনপি। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু চিকিৎসার জন্য এখন সিঙ্গাপুরে আছেন। তারা ফিরলে আন্দোলনসংক্রান্ত পর্যালোচনা সিদ্ধান্তের রূপ নেবে। রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা আছে, আন্দোলন পরিকল্পনা নিয়ে সিঙ্গাপুরে আলোচনা হলেও হতে পারে।’
এখন বিএনপির পরিকল্পনা হচ্ছে, এক দফা দাবি আদায় করেই নির্বাচনে যাবে তারা। সরকার যদি এ দাবি উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়, তাহলে বিএনপি সে নির্বাচনে যাবে না বরং তা প্রতিহত করবে। যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত সব দলের অবস্থান একই। যেসব দল যুগপতে নেই, কিন্তু অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন চায় তারাও ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন বর্জন করবে।
বিএনপি মনে করে মহাসমাবেশে ও অবস্থান কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা, সরকারি দলের হামলা-সন্ত্রাস ব্যাপকভাবে দেশ-বিদেশে সমালোচিত। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও যুক্তরাষ্ট্র সংঘাতের নিন্দা জানিয়েছে। এত সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে। এটা বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে আন্দোলন সফল করতে কাজে দেবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরও চাপ তৈরি হবে।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চারটি বিষয়ের ওপর বিএনপির আন্দোলন নির্ভর করবে। আন্দোলন এখন কিছুটা গতিহীন। এর দুটি কারণ হতে পারে। প্রথমত, ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতে সাফল্য না পাওয়া। দ্বিতীয়ত, আগস্ট মাস শোকের মাস। সম্ভবত এ কারণে তারা কর্মসূচিতে গতি যুক্ত করতে পারেনি।’
তিনি বলেন, বিএনপির আগামীর আন্দোলন নির্ভর করবে দুটি বিষয়ের ওপর। প্রথমত, অক্টোবর-নভেম্বরে নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। পরিবেশ তখন আন্দোলনের পক্ষে থাকবে। তাই সেপ্টেম্বরে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে মাঠে থাকার। এটি নির্ভর করবে দলটির নেতাকর্মী ও দেশের জনগণ কতটুকু তাদের সঙ্গে রয়েছে। দ্বিতীয়ত, ভোটের আগে বিএনপির মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটির ওপর আন্দোলনের গতি নির্ভর করবে।’
রাজপথে আন্দোলনে সিনিয়র নেতাদের অনুপস্থিতি বিএনপির সব পর্যায়ে ভাবাচ্ছে। রাজপথে নেতৃত্ব সংকট দৃশ্যমান। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সক্রিয়তা বা উপস্থিতির আশা করছে তৃণমূলের একটা বড় অংশ। তৃণমূলের নেতারা মনে করেন, চেয়ারপারসন যদি আন্দোলনে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখেন তাহলে সেটি সারা দেশের নেতাকর্মীদের উৎসাহিত করবে। বাস্তবতা হচ্ছে, অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে থাকায় তার পক্ষে সক্রিয় সম্ভব নয়। তাকে বাসায়ও নেওয়ার অবস্থা নেই। গত ১৮ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে জানান, মহাসচিব ২৮ জুলাই তার মেডিকেল রিপোর্টের ফলোআপ দেখাবেন। আর তার স্ত্রী রাহাত বেগমের ২৯ আগস্ট চিকিৎসক শিডিউল রয়েছে। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে মহাসচিবের দেখা হয়েছে। তিনি আগের চেয়ে সুস্থ। মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী মহিলা দল সভাপতি আফরোজা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সিঙ্গাপুরে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকের ফলোআপ করিয়ে আগামী মাসের প্রথম দিকে দেশে ফিরতে পারেন।
মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার ব্যবহার করতে পারে, সে জন্য ৩০০ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে চার শতাধিক স্কুলে স্বাস্থ্যসম্মত ওয়াশব্লক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। ছয় মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার টার্গেট নিয়ে ২০১২ সাল থেকে শুরু হয় প্রকল্প। কিছু স্কুলে কাজ শেষে ওয়াশব্লক হস্তান্তর করা হলেও সেগুলো নিয়ে রয়েছে নানান অভিযোগ। কয়েকটিতে করোনা মহামারীর আগে শুরু হওয়ায় নির্মাণকাজ এখনো চলছে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ ওঠায় কাজ বন্ধ রেখেছেন কয়েকজন ঠিকাদার। অনেক ওয়াশব্লকে একটি বা দুটি ছাদ ঢালাই দিয়েই ঠিকাদার উধাও! স্কুল বন্ধ থাকলে নির্মাণাধীন এসব ওয়াশব্লক মাদকসেবীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। দীর্ঘ সময়েও প্রকল্পের কাজ যথাযথভাবে শেষ না হওয়া এর সুফল পাচ্ছে না শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
যেসব জায়গায় প্রকল্প : মাদারীপুর সদর, রাজৈর, শিবচর, কালকিনি ও ডাসার (নতুন উপজেলা) এই পাঁচ উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৭১৯টি। এর মধ্যে ৪৩৬টি স্কুলে ওয়াশব্লক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ব্যয় ধরা হয় ৩০৫ কোটি ৬২ লাখ ৩ হাজার ৪৩৮ টাকা। কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় মাদারীপুর জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
মাদারীপুর জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (জিপিএস) ওয়াশব্লক নির্মাণকাজ হাতে নেওয়া হয় ৩৮টি, যার প্রতিটির খরচ ১৪ লাখ ১৩ হাজার ৮৪৪ টাকা ৫২ পয়সা। নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (এনএনজিপিএস) তৈরি করা হচ্ছে পুরো জেলায় ২৭টি, যার খরচ প্রতিটির ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩৩৬ টাকা ৪৪ পয়সা। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি বা পিইডিপি-৪-এর আওতায় পুরো জেলায় বিভিন্ন স্কুলে ওয়াশব্লক তৈরি হয়েছে ৬৭টি, যার প্রতিটির খরচ ১৮ লাখ টাকা। এ ছাড়া পিইডিপি-৩, যার কাজ অনেক আগেই সমাপ্ত হয়েছে; তবে সেই ওয়াশব্লকগুলো একই ছাদের নিচে ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা। এই প্রকল্পে পুরো জেলায় ছেলেদের জন্য ১৩৪ ও মেয়েদের জন্য ১৭৪টি ওয়াশব্লক, যার প্রতিটির খরচ ৩ লাখ ৮৬৬ টাকা করে।
জানা গেছে, পিইডিপি-৩-এর আওতায় কাজ শুরু হয় ২০১২ থেকে ২০১৩ সালে এবং শেষ হয় ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বা জিপিএস ও নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বা এনএনজিপিএসের আওতায় ২০১৮ থেকে ২০১৯ সালে কাজ শুরু হয় এবং এখনো চলমান। পিইডিপি-৪-এর কাজ শুরু হয় ২০১৯-২০ সালে, সেই কাজও চলছে।
জানা গেছে, মোট ১১৬টি ওয়াশব্লকের কাজ তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলছে। উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিসের সূত্র অনুযায়ী, যে কাজগুলো চলমান রয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগ বন্ধ রয়েছে করোনা মহামারীর পর থেকে। ঠিকাদারদের বারবার বলার পরও কাজ হচ্ছে না।
যা থাকার কথা
প্রকল্প অনুযায়ী, প্রতিটি ওয়াশব্লক ২৬ ফুট দীর্ঘ ও ১৩ ফুট প্রস্থের হওয়ার কথা। আধুনিক ওয়াশব্লকে উন্নতমানের দুটি কমোড, চারটি সাধারণ প্যান, দুটি বেসিন, দুটি প্রস্রাবখানা, দুটি ফুটওয়াশ, সাবমারসিবল পাম্পসহ পানির ট্যাংক, সেপটিক ট্যাংক এবং ভেতরে পুরোটাই উন্নতমানের টাইলসযুক্ত হওয়ার কথা। ভেতরে অন্যান্য প্রয়োজনীয় ফিটিংস ও সরঞ্জাম থাকার কথা।
সরেজমিনে ওয়াশব্লক
পাঁচ উপজেলার ২০টি সরকারি ও নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পিইডিপি-৩-এর আওতায় যেসব স্কুলে ওয়াশব্লক নির্মাণ করা হচ্ছিল, সেগুলো বেশ আগেই হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে সেগুলোর বেশিরভাই অপরিষ্কার ও অস্বাস্থ্যকর। কয়েকটি স্কুলে ওয়াশব্লক নিয়ে শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী (ইট, কংকর, রড) ব্যবহার; জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর অনুপস্থিতিতে বেইজ, পিলার ও ছাদ ঢালাই; নকশা মোতাবেক কাজ না করা; সময়মতো কিউরিং (পানি দিয়ে ভেজানো) করা হয়নি।
রাজৈর উপজেলার আলমদস্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজ শেষ করা ওয়াশব্লকে গিয়ে দেখা যায়, কমোড ভাঙা, ফ্লাশ অকেজো, কিছু স্থানে ভাঙা টাইলস লাগানো, সাবানদানির কারণে পানির কল চালানোয় অসুবিধা, দরজার কারণে হাই কমোডে যাওয়ায় অসুবিধা, প্রস্রাবখানা উল্টো দিকে বসানো। টাইলসের ফ্লোরে পানি জমে আছে।
মাদারীপুর সদর উপজেলার ‘উত্তরঝিকরহাটি ও পশ্চিম ঘটমাঝি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’-এর সহকারী শিক্ষক মাসুদা খানম বলেন, ‘আমি স্কুলে আসি সকাল ৮টার মধ্যে। সাড়ে ৪টা পর্যন্ত আমাদের স্কুলে থাকতে হয়। স্কুলে ওয়াশরুম থাকতেও আমাদের অন্যের বাড়িতে যেতে হয়। এতে তারা বিরক্ত হয়। কী করব। এরপরও যেতে হয়।’
রাজৈর উপজেলার সামছুল হক মোল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিন বছর আগে ওয়াশব্লকের কাজ শুরু হয়। কিন্তু একটি ছাদ ও চারটি পিলার ছাড়া আর কিছুই হয়নি। এ কাজ শেষ না করায় অন্য কোনো ওয়াশব্লক তৈরির সুযোগও হচ্ছে না। সেখানে পানি জমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে; মশা-পোকামাকড় জন্ম নিচ্ছে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে ওয়াশব্লকের ভবন আছে কিন্তু এর কোনো সুবিধা নিতে পারছে না পশ্চিম শ্রীনাথদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
এ ছাড়া টেকেরহাট পুপলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ওয়াশব্লকের কাজ কোনো রকম করে শেষ করা হয়েছে। এখন চলছে রঙের কাজ। তবে শিক্ষকদের অভিযোগ, তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে কমোড, সাধারণ প্যান, প্রস্রাবখানা সবই উল্টো লাগানো হয়েছে (পশ্চিমমুখী করে; মুসলিমপ্রধান দেশে যেটা করা হয় না)।
উত্তরঝিকরহাটি ও পশ্চিম ঘটমাঝি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সাফিয়া আক্তার বলেন, ‘আমার স্কুলে তিন বছর আগে কাজ শুরু হয়েছে। তারা আড়াই বছর ধরে একটু একটু করে কাজ করেছে। তারপরও সুন্দর করে কাজগুলো করে নাই। কমোডের ফ্লাশ, বেসিনের কল কাজ করে না। গ্লাস ভেঙে পড়েছে, পেছনের ট্যাংক ভেঙে পড়েছে। মূল ওয়াশব্লকে পানির সংযোগও দেওয়া হয় নাই। আমাদের ওয়াশব্লকের সঙ্গে একটি গভীর নলকূপ দেওয়ার কথা, সেটাও দেয়নি। তারা যে কাজ করে চলে গেছে, সেটা আমাকে বুঝিয়েও দিয়ে যায়নি। আমার কাছ থেকে কোনো ধরনের স্বাক্ষর নেয়নি। আমি একাধিকবার পাবলিক হেলথে জানিয়েছি! আমাদের শিক্ষা অফিসেও জানিয়েছি! কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের ও ছাত্রছাত্রীদের অনেক কষ্ট হয়। অন্যের বাড়িতে যেতে হয়। তারা অনেক কথা শোনায়। কী আর করার? তারপরও যেতে হয়।’
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অন্যের বাড়িতে গেলে অনেক সময় তাদের কাছ থেকে নানান কথা শুনতে হয়। অনেক সময় তারা বাথরুম চেপে রাখে, বাসায় গিয়ে সারে। এতে তাদের অনেক কষ্ট হয়। কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে।
অন্য আরেকটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা বলে, তাদের নামেমাত্র ওয়াশব্লক। অনেক পুরনো একটি শৌচাগার, যেটা ছেলে ও মেয়েরা সবাই ব্যবহার করে। অনেক সময় এতটাই অপরিষ্কার থাকে যে আশপাশেই যাওয়া যায় না।
ডাসার উপজেলার পূর্ব মাইজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পিইডিপি-৩ প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল চলছে, কিন্তু ওয়াশব্লক তালাবদ্ধ। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. শাহজালাল মিয়ার যুক্তি, স্কুলের শৌচাগার অন্যরা ব্যবহার করে, তাই তালা মারা থাকে। যখন যার প্রয়োজন হয়, চাবি নিয়ে যায়। না করা যায় না। এতে ছোট ছোট শিক্ষার্থীর অনেক কষ্ট হয়।
শিক্ষা অফিস থেকেও অভিযোগ
জানতে চাইলে রাজৈর উপজেলা শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি যে স্কুলগুলো ভিজিট করেছি, এর মধ্যে ১৫টির কাজ মোটামুটি সন্তোষজনক। বাকিগুলোর কাজ চলমান থাকার কথা থাকলেও বেশিরভাগই বন্ধ আছে দীর্ঘদিন।’
রাজৈর উপজেলায় মোট বিদ্যালয় ১৩৮টি। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮৬টি, নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫২টি। ৩৪টি স্কুলের ওয়াশব্লক তৈরির জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। কাজ শেষ করার পর ব্যবহার হচ্ছে ১৩টি এবং কাজ চলমান রয়েছে ২১টির। এরপর আর কোনো প্রস্তাব পাঠানো হয়নি।
শিবচর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মুন্সী রুহুল আসলাম বলেন, ‘এখানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২৪টি, জাতীয়করণ করা বিদ্যালয় ৫৬টি। এই ১৮০টি স্কুলের সবগুলোতে ওয়াশব্লক তৈরির প্রস্তাব পাঠাই। সেখানে ১১০টির প্রস্তাব পাস হয়ে ১০৪টির কাজ হচ্ছে। আর নদীভাঙনকবলিত এলাকায় ওয়াশব্লক হচ্ছে না। কারণ সেখানে স্কুলভবনই নাই।’
তিনি আরও জানান, ভদ্রাসন সরদারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় দেড় বছর আগে কাজ শুরু হলেও এখনো তা হস্তান্তর করা হয়নি। এ ছাড়া অনেকগুলোর কাজ ভালো হয়নি। ঠিকাদারের গাফিলতি রয়েছে।
কালকিনি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বদিউজ্জামান জানান, তার উপজেলায় মোট বিদ্যালয় ১৯৯টি। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক ১২২টি, নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭৭টি। এগুলোর মধ্যে ওয়াশব্লকের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল ৪৮টির, সবগুলোই পাস হয়েছে। এর মধ্যে ২৪টির কাজ চলমান রয়েছে এবং কাজ শেষে ব্যবহার হচ্ছে ২৪টি। যেগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে, সেগুলো মানের দিক থেকে মোটামুটি।
ঠিকাদারপক্ষের যুক্তি
ঠিকাদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যে এলাকায় তারা কাজ করেন, সেখানে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে হয়; কাজের টাকার অঙ্ক থেকে তাদের ২ থেকে ৩ শতাংশ দিতে হয়। আবার বিল পাওয়ার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন ভিজিটে ও বিভিন্ন দিবসে তদারককারী কর্মকর্তাদের ‘খুশি’ করতে হয়। সব মিলিয়ে বরাদ্দের একটা বড় অংশ চলে যায়। এসব কারণেই প্রকল্পে অনিয়ম বেশি হয়। বরাদ্দের সব টাকা হাতে আসবে না জেনে তারা নিজেদের খেয়ালখুশিমতো কাজ করেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ঠিকাদার।
জনস্বাস্থ্য বিভাগের ভাষ্য
রাজৈর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ইসহাক আলী বলেন, একজন ঠিকাদার একটি প্যাকেজে ছয়টি কাজ করে থাকেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় পাঁচটি শেষ হয়েছে, কিন্তু একটি কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারেননি। তখন দেখা যায়, একটু সময় বেশি লাগে। যারা কাজ অসম্পূর্ণ রেখেছেন বা কাজ করছেন না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চিঠি দেওয়া হয়েছে এবং সেই কাজগুলো পুনরায় টেন্ডার দিয়ে শুরু করা হবে।
মাদারীপুর জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, টেন্ডার হওয়ার পরে ছয় মাসের ভেতরে কাজ সমাপ্ত করে হস্তান্তর করার কথা বলা আছে। এর মধ্যে যদি কেউ কাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয় বা হস্তান্তর করা না হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা কাজগুলো অসম্পূর্ণ রেখেছে, তাদের জরিমানা করা হবে এবং সেই কাজের নতুন করে টেন্ডার দেওয়া হবে। এ ছাড়া তাদের চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হবে।
৫৪ বছর আগে বিক্রি হওয়া জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে চাচা-ভাতিজা। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকে। সামান্য কথা থেকে বিবাদ মারামারিতে গড়ায়। এভাবে কৃষক পরিবার দুটি বিভিন্ন সময় মামলা-মোকদ্দমায় গিয়েও সমাধান খুঁজে পায়নি। ভাতিজার অভিযোগ, জালিয়াতির মাধ্যমে তার বাবার জমি আত্মসাৎ করেছেন চাচা। অন্যদিকে চাচা ওই জমি কিনে নেওয়ার প্রমাণ হিসেবে একটি দলিল উপস্থাপন করেন। তবে মামলার তদন্তভার পেয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাইয়ের মাধ্যমে বিবদমান বিরোধের সমাধান হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডির মুখপাত্র অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান মামলাটি তদন্তের কথা জানিয়ে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আদালত সিআইডিকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার পর যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। তদন্তে বিবাদীর দলিল ও দলিলে থাকা ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাইয়ের পর দেখা যায় জমিটি আগেই তার কাছে বিক্রি করা হয়েছে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, গাজীপুরের সদর এলাকার লাবিব উদ্দিন ও ইনাম উদ্দিন দুই ভাই। লাবিব উদ্দিনের মৃত্যুর পর তার ছেলে মো. নজরুল ইসলাম (৫০) অভিযোগ করেন, তার বাবার পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে পাওয়া ৯ শতাংশ জমি তার চাচা ইনাম উদ্দিন হস্তান্তর করেননি। লাবিব উদ্দিনের মৃত্যুর পর ইনাম উদ্দিন অন্য লোককে লাবিব উদ্দিন সাজিয়ে নিজে দলিল গ্রহীতা হিসেবে একটি দলিল তৈরি করে ৯ শতাংশ জমি আত্মসাৎ করেছেন।
নজরুল ইসলাম এই অভিযোগ নিয়ে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন। মামলায় তার চাচা ইনাম উদ্দিন, চাচাতো ভাই মো. জহিরুল ইসলাম ও মো. আবু বকর (৪৫) নামে এক ব্যক্তিকে আসামি করেন।
মামলাটি আদালত সিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার পর বাদীর বাবা লাবিব উদ্দিনের টিপসই পরীক্ষার জন্য আদালতে পাঠায়। পরে ওই দলিল ও টিপসই পরীক্ষার জন্য সিআইডির ফরেনসিক শাখায় পাঠায়। সিআইডির হস্তরেখা বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে দেখতে পান আলোচিত ৯ শতাংশ জমির দাতা হিসেবে দেওয়া আঙুলের ছাপ বাদীর বাবা লাবিব উদ্দিনেরই।
সিআইডির তদন্তে আরও জানা যায়, লাবিব উদ্দিন সাংসারিক কারণে টাকার দরকার হওয়ায় তিনি ওই জমিটি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সশরীরে উপস্থিত হয়ে বাদীপক্ষের সবার জ্ঞাতসারে জমি বিক্রি করে বিবাদীপক্ষের কাছে জমির মালিকানা ও দখল বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।
ওই সময় জমির বাজারমূল্য কম ছিল। বর্তমানে জমির বাজারমূল্য বহুগুণে বেড়েছে। ফলে স্থানীয় কিছু ব্যক্তির পরামর্শে এবং বাদীপক্ষ কৌশল অবলম্বন করে মামলা করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই হারুনুর রশীদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ১৯৬৯ সালে বাদীর বাবা এই জমি তার আর্থিক প্রয়োজনে চাচার কাছে বিক্রি করেন। ২০২০ সালে তিনি মারা যাওয়ার পর তার দখলে থাকা ওই জমিটির দলিল দেখিয়ে মালিকানা দাবি করেন বিবাদী। ৯ শতাংশের ওই জায়গাটির বর্তমান দাম প্রায় ২৭ লাখ টাকা। ওই এলাকায় ক্রমশ জমির দাম বাড়তে থাকায় বাদীপক্ষ ছাড়তে নারাজ ছিল। ফলে তাদের মধ্যে বিবাদ থেকে একাধিক মামলাও হয়।
বাদী মো. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, সিআইডির করা এই তদন্তে সঠিকভাবে হয়নি। জায়গাটি প্রকৃতপক্ষে আমাদেরই। এই মামলার তদন্ত আবার করার জন্য আদালতে নারাজি দেব।
তিনি আরও বলেন, বাবা বেঁচে থাকাকালে এই জমি বিক্রি করেছেন এমন কোনো কথা আমাদের বলেননি। এই জায়গা আমরা দীর্ঘদিন ধরে ভোগ করে আসছি। কিন্তু চাচা প্রভাব খাটিয়ে আমাদের এই জমি নেওয়ার জন্য ভুয়া দলিল দেখাচ্ছেন। এখন এ ঘটনায় মামলা দেওয়ার পরও তিনি নানাভাবে রায় তার পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ১৮ আগস্ট ৯ বছরের শিশু আরাফাতের মৃত্যু হয়। সপ্তাহ না যেতেই ২৫ আগস্ট মারা যায় আরাফাতের ছোট বোন ৬ বছরের রাইদা। রাজধানীর মধ্যপাইকপাড়ার ছাপাখানা মোড়ের একটি বাসায় দুই সন্তান আরাফাত ও রাইদাকে নিয়ে থাকতেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও রাবেয়া আক্তার দম্পতি। সন্তানদের মৃত্যুর পর জীবনটাই বদলে গেছে তাদের। তছনছ হয়ে গেছে সাজানো সংসার। ইব্রাহিম ও রাবেয়া দম্পতির মতো বহু পরিবার এবার সর্বস্বান্ত হয়েছে ডেঙ্গুজ¦রের থাবায়। সন্তান হারানো এমন বাবা-মায়েরা পাগলপ্রায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর ডেঙ্গুতে শূন্য থেকে ২০ বছর বয়সী ১৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ১৮ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ ৮৬ এবং নারী ৯১ জন। এবার শুধু শহর নয়, গ্রামেও ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। সেখানেও মারা গেছে অনেক শিশু। এ বছর ডেঙ্গুতে শিশুমৃত্যু নিয়মিত ঘটনা হয়ে দেখা দিয়েছে। এই রোগে এত শিশুর মৃত্যু আগে কখনো হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ বছর শূন্য থেকে ২০ বছর বয়সীরা আক্রান্ত হয়েছে ৬৩ হাজার ৯১৯ জন; যা মোট আক্রান্তের ৩২ শতাংশ। এর মধ্যে নারী ২৩ হাজার ৬১৭ এবং পুরুষ ৪০ হাজার ৩০২ জন। ডেঙ্গুতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। তথ্য বলছে, ডেঙ্গুতে শিশুদের আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার কম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া শিশুদের যারা সুস্থ হয়ে উঠছে, তাদের মধ্যে ভবিষ্যতে শারীরিক জটিলতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডেঙ্গুর বর্তমান সংক্রমণের মধ্য দিয়ে শিশুদের জন্য নতুন ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তাদের মানসিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ডেঙ্গুর এই পরিস্থিতি শিশুদের নতুন বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার বিরূপ প্রভাব শিশুদের মধ্যে ভবিষ্যতে দেখা যেতে পারে। মস্তিষ্ক ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে এর প্রভাব থাকতে পারে। এতে তাদের মেধাবিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাদের যদি কিডনি কিংবা লিভারের মতো অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে সেই ভার সারা জীবন বহন করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শিশুদের মৃত্যু নিয়ে ভালোভাবে অ্যানালাইসিস করতে পারছি না। এসব মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে অটোপসি করতে পারলে ভালো হতো। বিভিন্ন দেশে মৃত্যু নিয়ে ডেথ রিভিউ বা অটোপসি করা হয়। এটি করতে পারলে বাংলাদেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যেত।’
এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। কোনো শিশুর শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হলে পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, ১ মাস থেকে ১২ বছর বয়সী মুমূর্ষু শিশু রোগীদের পৃথক পিআইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দিতে হয়। তবে দেশে পিআইসিইউ সংকট রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে পিআইসিইউর জন্য স্বজনদের হাহাকার করতে দেখা গেছে। হাসপাতালগুলোতে দেখা গেছে ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ শিশুকে সেবা দিতে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যেমন বেশি, সেখানে শিশু রোগীও উল্লেখযোগ্য। এই দুটি হাসপাতালে একেকটি শয্যায় একাধিক শিশু রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। ঢামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড খুলেছে কর্তৃপক্ষ। ৭০ থেকে ৮০ জনের সেবা পাওয়ার কথা, কিন্তু সেখানে প্রতিদিন সেবা নিচ্ছে প্রায় ৩০০ শিশু। ঢামেক হাসপাতালের ২৫ শিশুকে একসঙ্গে পিআইসিইউতে সেবা দেওয়ার সক্ষমতা আছে। কিন্তু মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোনো পিআইসিইউ নেই।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখানে শিশুদের ওয়ার্ডেই ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পিআইসিইউ নেই, তবে এনআইসিইউ (নিউনেটাল আইসিইউ বা নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) আছে।
এদিকে শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের শরীরে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু শনাক্তে পরীক্ষা করা প্রয়োজন। শিশুদের ডেঙ্গুর চিকিৎসা প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামীমা ইয়াসমীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিশুদের জ্বর আসার তিন দিনের মধ্যে পরীক্ষা করাতে হবে। এবার অনেকের মধ্যে হঠাৎ করে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। ফলে তারা দেরিতে চিকিৎসা নিতে আসছে। দেখা গেছে, ডেঙ্গুজ্বরে যেসব শিশু মারা গেছে, তারা বাড়ি থেকেই জটিলতা নিয়ে এসেছে। এখানে একটি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে, শুধু প্লাটিলেট কমা আশঙ্কার নয়, রক্তচাপ কমে যাওয়া প্লাটিলেট কমার চেয়ে ভয়ের। তাই আমাদের শিশুদের রক্তচাপ নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে।’
স্যাংশন নিয়ে ভয় না পাওয়ার বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার মেথডিস্ট সেন্ট্রাল হলে নাগরিক সংবর্ধনায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি পাল্টা স্যাংশন দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
সংবিধান অনুযায়ী সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে জানান তিনি। খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা ইস্যু সম্পর্কে প্রশ্ন রাখেন, সাজাপ্রাপ্ত কাউকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠায় কোন দেশ?
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখে বলেন, পৃথিবীর কোন দেশের সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠায় বলতে পারেন? কোনো দেশে পাঠায়? তারা এটা দাবি করে। আমাদের কেউ কেউ আঁতেল আছে। তারা বলে, একটু কী সহানুভূতি দেখাতে পারেন না! সে এভারকেয়ার, বাংলাদেশের সবথেকে দামি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। আর রোজই শুনি এই মরে মরে, এই যায় যায়। বয়সতো আশির ওপর। মৃত্যুর সময় তো হয়ে গেছে। তার মধ্যে অসুস্থ। এখানে এত কান্নাকাটি করে লাভ নাই।
স্যাংশনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। আপনাদেরও বলব, স্যাংশন নিয়ে মাথা ঘামাবেন না।
বিএনপি চেয়ারপারসন ‘অসুস্থ’ খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে শর্ত দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সেই শর্তের অন্যতম ইস্যু হচ্ছে, বিএনপিকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। এমন ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিদেশে যাওয়ার অনুমতি মিলবে। কিন্তু সরকারের সেই শর্তে রাজি নন খালেদা জিয়া। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কোনো শর্তের বিনিময়ে তিনি মুক্তি চান না। ফলে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার সরকারের যে চেষ্টা, সেটা এ দফায় সফল হচ্ছে না বলে মনে করছেন আন্দোলনে থাকা নেতারা। তাদের মতে, সরকার ফাঁদ পাতলেও এতে পা না দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে বেগম জিয়ার। বরং আন্দোলনে এ সরকারকে বিদায় করে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলতে চান তারা। একই সঙ্গে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করেই আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন। এ লক্ষ্যে প্রায় অর্ধশত দল নিয়ে গত প্রায় এক বছর ধরে আন্দোলনে রয়েছেন তারা।
শর্তের বিনিময়ে মুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে গত রবিবার রাতে কিশোরগঞ্জে বিএনপির রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে দলটির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে শর্ত দেওয়া হয়েছিল তিনি যদি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চান, তাহলে বিএনপিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আসতে হবে। বিএনপি থেকে উত্তর দেওয়ার আগেই অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতাল থেকে খালেদা জিয়া বিদ্রোহ করে বলেছেন, তার জীবনে গণতন্ত্রের জন্য কোনো শর্ত নেই। ভোটের অধিকারের জন্য, এই দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য কোনো শর্ত নেই। কোনো শর্ত খালেদা জিয়ার নামের সঙ্গে যায় না এবং আমরাও তা মানি না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খালেদা জিয়া ৫৪ দিন ধরে টানা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিতই খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। এ সময় বেশ কয়েকবার শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়লে দলের কয়েকজন নেতার মাধ্যমে মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের দেওয়ার বক্তব্যের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি দলের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির কয়েকজন সম্পাদক ও সদস্য খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন। সূত্রগুলো বলছে, একজন ভাইস চেয়ারম্যান ও স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য কথা প্রসঙ্গে এ ধরনের প্রসঙ্গেও ইঙ্গিত দিলে খালেদা জিয়ার শর্ত দিয়ে মুক্ত হতে চান না বলে পুনর্ব্যক্ত করেন। যদিও এর আগে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথা নেতাদের আগেই বলে রেখেছিলেন একসময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া এ নেত্রী। কোনো অবস্থায় শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়া যাবে না এবং এ ব্যাপারে কোনো ধরনের সমঝোতাও নয়Ñ এ ব্যাপারেও খালেদা জিয়ার স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে হাসপাতালে দেখা করেন। সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে এসে মঞ্চের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের এ আন্দোলনে উনার সমর্থন আছে। আমাদের একজন নেতা (ওই বৈঠকে) বলেছেন, সরকার একটা নির্বাচনের জাল বিছানোর চেষ্টা করছে। উনি (খালেদা জিয়া) বলেছেন, কোনো অবস্থায় এ সরকারের অধীনে নির্বাচনী ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।’
এর আগে ৮ মে রাতে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় সাক্ষাৎ শেষে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছিলেন, কেউ কেউ বলছেন আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাওয়া উচিত। এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া তাদের বলেছেন, প্রশ্নই আসে না। এ বিষয়ে আমি কোনো অনুমতি দেব না।
এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি মনে করছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনে এ সরকারকে বিদায় করতে না পারলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমে এ ইস্যুর সমাধান করবে তারা। এজন্য চলমান এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে এখন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসা ইস্যুটি জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে চান তারা। এতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নিতে পারে বলে তাদের বিশ্বাস।
গতকাল সোমবার স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে সভায় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। আগামী ৫ অক্টোবর বিএনপি ঘোষিত রোডমার্চ কর্মসূচি শেষ হবে। এর আগেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি।
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু বলেন, ‘দাবার ঘুঁটি হিসেবে খালেদা জিয়াকে ব্যবহারের চিন্তা তারা কীভাবে করে সেটাই বোধগম্য নয়। সরকারের এ ধরনের চিন্তা বা পরিকল্পনা কোনো কাজে আসবে না।’
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে বিএনপিপ্রধানের পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদনের ওপর গত রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই। যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আবার গতকাল নিজ কার্যালয়ে সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি কিংবা আপিল বিভাগে আবেদন করতে পারেন। তবে তার আগে তাকে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জেলে যেতে হবে। রাষ্ট্রপতি বা আপিল বিভাগের খালেদা জিয়ার পরিবার আবেদন করবে না বলে দলীয় আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন নেই বলেই বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে ভয়ংকর তামাশা করা হয়েছে। যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। এর বাইরে দলের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেই।’
এদিকে চিকিৎসক সূত্র জানা গেছে, বর্তমানে খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। গতকাল তার আলট্রাসনোগ্রাম ও ইকো করা হয়েছে।
তিনি জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য প্রণীত আইনের অধীনে ধানমন্ডিতে যে বাড়ি পেয়েছিলেন শেখ রেহানা, বিএনপি ক্ষমতায় এসে সে বাড়ি উচ্ছেদ করে। সেখানে পুলিশ ফাঁড়ি করছে আর ‘লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে’ সেই পুলিশ ফাঁড়ি উদ্বোধন করেছে খালেদা জিয়া। ছেলে কোকোর মৃত্যুর পর তাকে (শেখ হাসিনা) খালেদা জিয়ার বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা কীভাবে খালেদা জিয়ার জন্য আমার কাছ থেকে আরও সহানুভূতি আশা করে।’
লন্ডনের মেথোডিস্ট সেন্ট্রাল হল ওয়েস্টমিনস্টারে তার সম্মানে আয়োজিত একটি কমিউনিটি সংবর্ধনায় তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলা বিএনপির পক্ষে শোভা পায় না কারণ তারা জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে ধোকাবাজি খেলেছে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি একটি প্রহসনমূলক নির্বাচন করে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার দেড় মাসের মধ্যেই দেশের জনগণ তাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে। তিনি বলেন, দেশের জনগণ কখনই ভোট কারচুপিকারীদের ক্ষমতায় বসতে দেয় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রধান হিসেবে তার ওপর ন্যস্ত নির্বাহী ক্ষমতা দিয়ে এতিমদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড স্থগিত করার পর খালেদা জিয়াকে তিনি বাড়িতে থাকতে দিয়েছেন। খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে তার কিছুই করার নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি আইন অনুযায়ী যা করতে পারেন তাই করেছেন। অনেকেই এখন যুক্তি দিচ্ছেন, ‘আইন নিজের গতিতে চললেও খালেদা জিয়ার প্রতি আমি বেশি সহানুভূতি দেখাতে পারি’।
অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজেদুর রহমান ফারুক।
উত্তর-পূর্ব পাকিস্তানে একটি অঙ্গ পাচারকারী চক্রের আট সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, পুলিশ বলছে। চক্রটির নেতা ফাওয়াদ মুখতারের বিরুদ্ধে ৩০০ জনেরও বেশি মানুষের কিডনি চুরি করে বের করে ধনী গ্রাহকদের মধ্যে প্রতিস্থাপন করার অভিযোগ রয়েছে।
মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা বিবিসি নিউজ।
বিবিসি জানায়, অস্ত্রোপচারের সময় রোগীর দেহ থেকে কিডনি সরিয়ে ফেলা এবং ধনী গ্রাহকদের কাছে বিক্রির অভিযোগে ফাওয়াদ মুখতার নামের এক চিকিৎসক ও তার দলের আট সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছে পাকিস্তান পুলিশ। ফাওয়াদ এ পর্যন্ত তিন শতাধিক রোগীর কিডনি চুরি করেছেন।
এমনকি অস্ত্রোপচারকালে কিডনি চুরির সময় তার হাতে অন্তত তিনজন রোগী মারা গেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ফাওয়াদ এর আগে পাঁচবার অসদাচরণের জন্য গ্রেপ্তার হলেও প্রতিবারই জামিন নিয়ে মুক্তি পেয়ে যান। রোববার (১ অক্টোবর) পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানায় পাকিস্তান পুলিশ। চক্রটি পূর্ব পাঞ্জাব প্রদেশের পাশাপাশি পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরে কাজ করছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মহসিন নকভি রবিবার একটি সংবাদ সম্মেলনে জানান, “কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টগুলি বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবনকে ক্লিনিক আকারে সাজিয়ে সেখানে রোগীদের অস্ত্রোপচার করার সময় রোগীদের অজান্তেই কিডনি সরিয়ে নেয়া হত।“
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফাওয়াদ মুখতার জানিয়েছেন, তার নেতৃত্বাধীন চক্র এখন পর্যন্ত মোট ৩২৮ রোগীর দেহ থেকে কিডনি চুরি করেছে। প্রতিটি কিডনি বিক্রি হয়েছে ১ কোটি রুপি করে।
২০১০ সালে মানবদেহের প্রত্যঙ্গ ব্যবসা নিষিদ্ধ করে পাকিস্তান। এ অপরাধের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও মোটা অঙ্কের জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।