
সরকার পতনের এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনের মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির স্থায়ী কমিটির একাধিক জ্যেষ্ঠ সদস্য সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। সেখানে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেতাদের বৈঠকের গুঞ্জন ছড়িয়েছে রাজনীতিতে। বিএনপি নেতারা সিঙ্গাপুরে থাকাবস্থায় জাতীয় পার্টির এক শীর্ষ নেতা সিঙ্গাপুরে গেছেন, যিনি বিগত কয়েক মাস ধরে সরকারবিরোধী নানা বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এর আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ভারত সফর করে এসেছেন। ফলে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির ওই নেতার বৈঠকের গুঞ্জন ডালপালা ছড়াচ্ছে।
এমনও গুজব ছড়িয়েছে যে, বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে আগামীতে যে সরকার আসতে যাচ্ছে, সে সরকারে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা জিএম কাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে ভারত সরকার তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সরকারের ভিত কাঁপাতে বিএনপি-জাতীয় পার্টির এ যৌথ ‘বিদেশ মিশন’ এমন গুজবও রয়েছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের কয়েকজন কথা বললেও বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না সরকার।
অবশ্য বিএনপি নেতারা বলছেন, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রাজপথে রাজনৈতিক কর্মসূচিকেন্দ্রিক ব্যস্ততা বাড়বে। এরই ফাঁকে জ্যেষ্ঠ নেতারা আগেভাগেই শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিতে চান। এ কারণেই নেতাদের সিঙ্গাপুর-যাত্রা।
এর বাইরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আরও গুঞ্জন রয়েছে যে, সিঙ্গাপুরে তারেক রহমানের বিশেষ প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করবেন সেখানে চিকিৎসার জন্য যাওয়া বিএনপি নেতারা। এমনও গুঞ্জন চলছে যে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমানের সঙ্গে বিএনপি নেতারা বৈঠক করছেন।
আপাতত এসব গুঞ্জন চললেও হয়তো সময়ের ব্যবধানে পরিষ্কার হবে বিএনপির বৈঠকের গুঞ্জন ‘নেতাদের সিঙ্গাপুর গমন স্রেফ চিকিৎসা নাকি কোনো ষড়যন্ত্রের মিশন’।
গত ২৪ আগস্ট চিকিৎসার জন্য মির্জা ফখরুল তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম ও তার ছোট মেয়েসহ সিঙ্গাপুরে যান। সেখানে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে তার চিকিৎসা হয়। সিঙ্গাপুরের র্যাফেলস হাসপাতালে রাহাত আরা বেগমের অস্ত্রোপচার হয়েছিল। ফলোআপের জন্য তাকেও ওই হাসপাতালে যেতে হয়।
এরপর ২৬ আগস্ট সিঙ্গাপুরে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। তার আগে হঠাৎ করে মস্তিষ্কে টিউমার ধরা পড়ায় গত ২৭ জুন সিঙ্গাপুর যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সেখানে তার অস্ত্রোপচার হয়েছে। এখন চলছে রেডিওথেরাপি। সবার আগে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যান স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। সেখান থেকে লন্ডন হয়ে বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন তিনি। তার চিকিৎসা চলমান থাকায় আপাতত দেশে ফেরার সম্ভাবনা খুবই কম।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির সদস্য আবদুল আউয়াল মিন্টু বর্তমানে থাইল্যান্ডে অবস্থান করছেন। দলের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা চেকআপের জন্য সিঙ্গাপুরে যাওয়ার পর গুঞ্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে ফোনে দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘মানুষের অসুস্থতা ও চিকিৎসা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যা করছে তা নোংরামি ও অপকৌশল। খুন, গুম, হামলা, মামলা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পর এখন সরকার বিএনপি নেতাদের চরিত্র হননে নেমেছে।’
ভারতের ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে মিন্টু বলেন, ‘এখন পুরো বিশ্ব হাতের মুঠোয়। আমরা যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করি তার মাধ্যমে সারা বিশে^র সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব। এজন্য বিদেশে যেতে হয় না। দেশে বসেই ভার্চুয়ালি আলোচনা করা সম্ভব। তাছাড়া ভারতসহ বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ঢাকায় অফিস রয়েছে। তাদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত বৈঠক হয়। তারা তাদের সরকারের হয়ে বিএনপির মনোভাব জানতে চান। আমরা তাদের সর্বশেষ পরিস্থিতি অবহিত করি। বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো আগামী নির্বাচন নিয়ে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন স্পষ্টভাবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হয়ে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষাকারী প্রবাসী বিএনপির এক নেতা ফোনে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আলোচনা হতেই পারে। কিন্তু আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভারত তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। তাই তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ কিংবা জাতীয় পার্টির মতো বিদেশে বৈঠক করার প্রয়োজন নেই। তাছাড়া ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার রয়েছেন। আগামী নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থানের বিষয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বিএনপি নেতাদের দাওয়াত দিয়ে পরিষ্কার করেছেন।’
এরই মধ্যে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আজকে বিএনপি নেতারা দল বেঁধে গেছেন সিঙ্গাপুরে। আবার শুনেছি জাতীয় পার্টির এক গ্রুপও গেছে। ভালো, আলাপ-আলোচনা করুক। রাজনৈতিক আলোচনা দেশে হোক, বিদেশে হোক করবে এটা তাদের অধিকার। তবে ২০১৩-১৪ সালের মতো আগুন নিয়ে বাস পোড়ানো, মানুষ পোড়ানো, রাস্তা পোড়ানো, গাছ পোড়ানো এ রাজনীতি থেকে বিরত থাকুন।’ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি নেতারা কি আদৌ চিকিৎসা নিতে গেলেন নাকি আবার কোনো ষড়যন্ত্র করতে একসঙ্গে সিঙ্গাপুর গেলেন এটি এখন অনেকের প্রশ্ন।
আওয়ামী লীগের দুই নেতার এ বক্তব্যের জবাবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ গত ১৪ বছর ধরে বিরোধী নেতাকর্মীদের খুন, গুম, হামলা, মামলাসহ নানা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছে। এখন অসুস্থ নেতাদের চরিত্র হননে নেমেছে। আমি নিজেও অসুস্থ। গত কয়েক দিন আগে ভারতে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলাম সস্ত্রীক।’ সরকার শিগগিরই মিথ্যাবাদী রাখালের পরিণতি ভোগ করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
‘সিঙ্গাপুরে জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক হয়েছে’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এমন মন্তব্যের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উনি যদি জেনেই থাকেন সিঙ্গাপুরে জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে; তাহলে কখন, কোথায়, কার কার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে তা স্পষ্ট করুক। ছবি প্রকাশ করুক।’
এদিকে মুজিবুল হক চুন্নুসহ জাতীয় পার্টির দুই নেতা সিঙ্গাপুর গেছেন। সেখানে তাদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক হয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলছেন, চুন্নু সস্ত্রীক থাইল্যান্ড গিয়েছিলেন। সোমবার তিনি চলে এসেছেন। অবশ্য এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করে চুন্নুর বক্তব্য জানা যায়নি।
সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির কূটনৈতিক সম্পর্ক এখনো এত শক্তিশালী হয়ে ওঠেনি যে, চাইলেই সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দিতে পারবে। কূটনীতি বোঝা ও বিদেশ লবি মেইনটেইন করার নেতারও অভাব রয়েছে দল দুটিতে। তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাতারাতি পরিস্থিতি বদলে দিতে পারে যে কেউ, সেই দুর্বল পরিস্থিতিতেও নেই সরকার। তারা মনে করেন, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির বিদেশ সফর ঘিরে মূলত বিভিন্ন মহল গুজব ছড়ানোর কৌশল গ্রহণ করেছে। দল দুটির বিদেশ সফর এর বাইরে আর কিছুই নয়।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, সরকারবিরোধী সব মহলের কর্মকা-ের ওপর সরকারের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভারত সফর নিয়ে দলটির গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে এসে সফরসংক্রান্ত কোনো আলোচনা রাজনৈতিক সহকর্মীদের সঙ্গে করেননি কাদের। তবে তাকে যে মুডে দেখা যাচ্ছে তাতে তিনি যে খুবই ভালো মেজাজে আছেন সেটা বোঝা যায়।
দলটির ওই নেতারা বলেন, তারা যতটা বুঝতে পারছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও জাতীয় পার্টির অবস্থান নিয়ে ভারত সরকারের প্রতিনিধির সঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে জিএম কাদের এ নিশ্চয়তা দিয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সরকারের যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, সেটা ভারত সরকারকে অবহিত করেছেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের ভারত সফর সম্পর্কে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারাও মনে করেন, প্রতিবেশী দেশের সরকার বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতেই জিএম কাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। পাশাপাশি সংসদের বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে ভারত পরামর্শ দিয়েছে তাকে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জাতীয় পার্টিকে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতেও পরামর্শ দিয়েছে ভারত সরকার। তিনি বলেন, এটি সরকারের জন্য ইতিবাচক।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেকোনো দলের নেতা বিদেশ সফরে যেতেই পারেন। তবে সব সফরই যে অর্থবহ, এটা আমি মানি না। ফলে কারা কোথায় গেল তা নিয়ে সরকার ততটা কৌতূহলী বলে মনে করি না।’
তিনি বলেন, ‘সরকার তো এত দুর্বল নয় যে, কেউ বিদেশ গেল আর দেশে ফিরে সব ওলটপালট করে দিল। বিএনপির নেতাদের সিঙ্গাপুর সফর ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের ভারত সফর কোনোটাকে গুরুত্বপূর্ণ সফর ভাবে না আওয়ামী লীগ।’
দলটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ সফর কেন, কী, কিছুই জানি না। জানতে চাইও না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারে সেটাই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে জনগণ ভালো পরিবেশে ভোট দিয়েছে, ভবিষ্যতে ভালোভাবে ভোট দিতে পারবে। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো চাপ নেই। জনগণ যাকে ভোট দেবে তারাই ক্ষমতায় আসবে।
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে চলা শ্রম আদালতের মামলার বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শতাধিক নোবলজয়ীসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তির পাঠানো চিঠি প্রসঙ্গেও কথা বলেন শেখ হাসিনা। ড. ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, নিজের প্রতি এত আত্মবিশ্বাস থাকলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়ান কেন? তাদের বিবৃতি না দিয়ে বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবী পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দলিল-দস্তাবেজ, কাগজপত্র ঘেঁটে দেখুন অন্যায় আছে কি না। এক্সপার্টরা দেখুক, অনেক কিছু পাবেন। সদ্য সমাপ্ত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের নতুন সদস্যপদ না পাওয়ার বিষয়ে শেখ হাসিনার স্পষ্ট বক্তব্য, এখনই ব্রিকসের সদস্যপদ পেতে হবে সেই ধরনের কোনো চিন্তা ছিল না। সদস্যপদ পেতে সেই ধরনের চেষ্টাও করা হয়নি।
দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দেওয়াসহ কোন কোন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন, কার কার সঙ্গে বৈঠক করেছেন, সফরের অর্জন কী এসব নিয়ে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এরপরই সাংবাদিকদের জন্য প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হয়। এ সময় তিনি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সিন্ডিকেটের ভূমিকা ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও প্রশ্নের জবাব দেন।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন : অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অংশগ্রহণ বলতে কাদের অংশগ্রহণ? যারা দুর্নীতিবাজ, খুনি, ভোট চোর, ভোট ডাকাত, গ্রেনেড হামলাকারী, জাতির পিতার হত্যাকারী, যুদ্ধাপরাধী তাদের অশংগ্রহণ? এটা কি জনগণ চায়? তারা অংশগ্রহণ করলেই নির্বাচন বৈধ হবে, অন্য কেউ করলে হবে না, এটা তো হতে পারে না। কারণ তাদের প্রতি রয়েছে মানুষের ঘৃণা।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘এটা মাথায় রাখতে হবে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ৩০টি সিট পেয়েছিল। তারপর থেকে বিএনপি তো ইলেকশন করে না। তারা শুধু বাণিজ্য করে, নমিনেশন বেচে। কিছু টাকা গুলশান অফিস পাবে, পুরানা পল্টন পাবে আর মোটা অঙ্কের টাকা যাবে লন্ডনে। এই তো তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিজেরাই নির্বাচনে গণ্ডগোল করবে, মারামারি করবে আর বলবে ইলেকশন করতে পারলাম না। বর্জন করলাম।’
বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশে যখন গেলাম, যার সঙ্গে দেখা হয়েছে বলে, কী করে বাংলাদেশ এত উন্নতি করল? আর দেশের এরা এটা বলে না। তারা পরশ্রীকাতরতায় ভোগে। আমি ওটা নিয়ে চিন্তা করি না। যতক্ষণ আছি, দেশের জন্য কাজ করে যাব।’
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা : প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। সবকিছুই আইনমতো চলে। কেউ যদি ট্যাক্স না দেয় আর যদি শ্রমিকের অর্থ আত্মসাৎ করে, শ্রমিকদের পক্ষ থেকে যদি মামলা করা হয়... আমাদের কি সেখানে হাত আছে, যে মামলা বন্ধ করে দেব? মামলা তো আমরা করিনি। এনবিআর থেকে আয়কর ফাঁকির মামলা করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত লেবাররা মামলা করেছেন।’
সরকারপ্রধান বলেন, দুর্নীতি খুঁজে বেড়াচ্ছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান করতে বলেছেন, কিন্তু দুর্নীতিবাজ পছন্দের লোক হলে আবার এগুলো নিয়ে কথা আসছে কেন? আইন তো তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
নোবেলজয়ী বলে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না এমন প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীতে এমন বহু নোবেল বিজয়ী আছেন, পরবর্তী সময়ে তাদের কাজের জন্য কারাগারে আছেন (যেতে হয়েছে)।
বিবৃতির ফলে আদালত প্রভাবিত হবে কি না, স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, পারবে না কেন? আদালত স্বাধীনভাবে চলবে। ভয় পেলে চলবে না। শ্রমিকদের পাওনা তাদের দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘এখন যদি জিজ্ঞেস করি, গ্রামীণ ব্যাংক কিন্তু সরকারি (নিয়মে চলে)। ড. ইউনূস তার এমডি। তাহলে সরকারি বেতনভুক একজন এমডি কীভাবে বিদেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেন? কীভাবে তিনি এগুলো করেন?’
প্রসঙ্গত, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে চলা শ্রম আদালতের মামলার বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন শতাধিক নোবলজয়ীসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
ব্রিকস সদস্যপদ : ব্রিকসের সদস্যপদ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন, সদস্যপদ চাইলে পাব না সেই অবস্থাটা নেই। প্রত্যেকটা কাজের একটা নিয়ম থাকে। আমরা সেই নিয়ম মেনেই চলি। আমরা কাউকে বলতে যাইনি আমাদের এখনই সদস্য করেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেখানে তো আমার সব রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধানের সঙ্গে দেখা হয়েছে। কথা হয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট, ইন্ডিয়ার প্রাইম মিনিস্টার থেকে শুরু করে সবার সঙ্গে। লাঞ্চের সময় ব্রাজিল ও সাউথ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট, নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও জাতিসংঘের মহাসচিব আমার পাশে ছিলেন। ওই সময় আলোচনা হয় যে, আমরা এই কয়জন নেব। এরপর ধাপে ধাপে সদস্যপদ বাড়াবে।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে আমার দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো, আমাকে আমন্ত্রণ জানালেন ব্রিকস সম্মেলন করবেন। আমাকে আসতে বললেন এবং তখন আমাকে এও বললেন, তারা কিছু সদস্যপদ বাড়াবেন। সেই বিষয়ে আমার মতামতও জানতে চাইলেন। আমি বললাম এটা খুবই ভালো হবে।’
ব্রিকসের ব্যাংক নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে যোগদানের বিষয়ে বাংলাদেশ আগে থেকেই আগ্রহী ছিল বলে উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
ব্রিকস নিয়ে বিরোধী দলের বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘জানি যে এই প্রশ্নটা আসবে। বাংলাদেশ কিছু চেয়ে পাবে না, এটা কিন্তু ঠিক নয়। অন্তত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমরা তো দেশের মর্যাদাটা তুলে ধরেছি। সেখানে আমাদের সেই সুযোগটা আছে। তারা বলতে পারে কারণ বিএনপির আমলে ওটাই ছিল। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের কোনো অবস্থানই ছিল না। সেই সময় বাংলাদেশ মানে ছিল দুর্ভিক্ষের দেশ, ঝড়ের দেশ, ভিক্ষার দেশ। হাত পেতে চলার দেশ। এখন সবাই জানে, বাংলাদেশ ভিক্ষা চাওয়ার দেশ নয়।’
এ সফরের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে গেছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বর্তমান স্যাংশন ও কাউন্টার স্যাংশনের এ যুগে এই সফরের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণসহ বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক দক্ষিণের অবস্থানকারী দেশগুলোর ওপর আরোপিত কৃত্রিম সিদ্ধান্ত এবং বিভাজনের নীতিকে না বলার এখন উপযুক্ত সময়। সর্বজনীন নিয়ম ও মূল্যবোধকে অস্ত্রে পরিণত করার প্রচেষ্টাকে আমাদের অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করতে হবে। আমাদের নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার চক্র বন্ধ করতে হবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘দক্ষিণের দেশগুলোর ওপর আরোপিত কৃত্রিম সিদ্ধান্তের কারণে আমরা আর ক্ষতিগ্রস্ত হতে রাজি নই। সর্বজনীন নিয়মের নামে আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া অসমনীতিকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য আমি দক্ষিণের দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েছি।’
বাজারের সিন্ডিকেট : দেশে সিন্ডিকেট করে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কে কত বড় শক্তিশালী আমি দেখব। সিন্ডিকেট ভাঙা যাবে না এটা কোনো কথা নয়। সিন্ডিকেট ভাঙা যাবে না এমন কিছু বাণিজ্যমন্ত্রী বললে তাকে আমি ধরব।’ এ সময় নিত্যপণ্যের সিন্ডিকেট প্রতিরোধে পণ্য সরবরাহ ও সংরক্ষণে বিকল্প পদ্ধতি নেওয়ার কথা জানান তিনি। এ ক্ষেত্রে বাড়িতে শাকসবজি উৎপাদন ও সেগুলো নিজেরাই সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী।
দাম বাড়া প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, ‘কিছুদিন আগে ডিমের দাম বাড়ল। ডিম সেদ্ধ করে রেখে দিলে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। পরে (দাম বাড়লে) সেগুলো ভর্তা করে বা রান্না করে খাওয়া যায়।’
সর্বজনীন পেনশন নিয়ে অপপ্রচার : সর্বজনীন পেনশন নিয়ে অপপ্রচার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিমের টাকা নিয়ে ইলেকশন ফান্ড গঠন করতে হবে আওয়ামী লীগ এত দীনতায় পড়েনি। সাধারণ মানুষ নিজের খেয়ে নৌকায় ভোট দেয়, এটাই হলো বাস্তবতা। তিনি বলেন, সরকারি কর্মচারীরা পেনশন পান। কিন্তু বেসরকারি চাকরিজীবী বা সাধারণ মানুষ পেনশন পায় না। তাদের কথা চিন্তা করেই এটা করা হয়েছে। পেনশন স্কিমে স্পষ্ট বলা হয়েছে, এই স্কিমে এখন যে টাকা রাখবে পরবর্তীকালে নির্দিষ্ট বয়সসীমার পর সে টাকা পাবেন। অথবা মাঝখানে কেউ তুলে নিতে চাইলে সেটাও নিতে পারবে।
সবাই সবকিছু সহজে ভুলে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পেনশন স্কিমটি আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল, এখন সেটি বাস্তবায়ন করছি। এটা আওয়ামী লীগ সরকারের জনকল্যাণমুখী কাজ। যারা পরশ্রীকাতর, সবসময় অন্যের দোষ খোঁজে, হতাশায় ভোগে, তারাই ভালো কাজের নেতিবাচক প্রচারণা চালায়।’ জনগণকে এসব মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী।
মৌলভীবাজারের লাঠিটিলা পুরোটাই বন। এখানে নানান প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বসবাস। আছে বিরল প্রজাতিও। ভারত সীমান্তের এ বনে নির্দ্বিধায় বেঁচে থাকে তারা। কিন্তু বন্যপ্রাণীদের এ নিরবচ্ছিন্ন পথচলায় বাধা তৈরি করে মানুষের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই বনের ৫ হাজার ৬৩১ একর এলাকায় হবে সাফারি পার্ক। এতে ৩ হাজার মিটার অভ্যন্তরীণ বাউন্ডারি, ৩ হাজার বর্গমিটারে গাড়ি পার্কিং, ১ হাজার ৫৮৮ বর্গমিটারে প্রাণী হাসপাতাল ভবন, ৪ হাজার মিটারের সীমানাপ্রাচীরসহ নানা অবকাঠামো হবে। যে বন অধিদপ্তরের দায়িত্ব বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করা, সেই অধিদপ্তরই শুধু ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করার উদ্যোগ নিয়েছে।
সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে ‘বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, মৌলভীবাজার, প্রথম পর্যায়’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি পাঁচ বছরে তিন পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হবে। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ২৫ কোটি টাকা। প্রথম পর্যায়ের এ প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৮২ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, লাঠিটিলার চিরসবুজ বনভূমিকে দখলমুক্ত করে বন্যপ্রাণীর বসবাস উপযোগী প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করা। অথচ প্রকল্পের মূল কার্যক্রমগুলোর একটি হলো ৪ হাজার মিটারের বাউন্ডারি ওয়াল ও ৩ হাজার মিটারের অভ্যন্তরীণ বাউন্ডারি তৈরি করা। এ ছাড়া চিত্তবিনোদনের জন্য বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ তো আছেই। প্রশ্ন উঠেছে, বাউন্ডারির ভেতরে এত মানুষের চলাচল ও অবকাঠামোর মধ্যে বন্যপ্রাণী অবাধে বিচরণ করবে কীভাবে? বাস্তুতন্ত্র স্বাভাবিকভাবে চলবে কীভাবে? লাঠিটিলা নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করা প্রাণীবিদরা বলছেন, এ এলাকার বন ধ্বংস হওয়ার শুরু এখন থেকে নয়। আরও আগে থেকেই বন সংরক্ষণকর্মীরা সেখানে বসতি গড়েছেন, সেখানে এখন ৩ শতাধিক ঘরবাড়ি হয়েছে। সবগুলোই বনের জায়গা। সরকারের উচিত ছিল বনে সাফারি পার্ক তো নয়ই; বরং সেখানে যেসব মানুষ বসবাস করছে, তাদের উচ্ছেদ করা।
গবেষণা বলছে, দেশের উত্তর-পূর্ব বনাঞ্চলে ৩৬টি ভিন্ন পরিবারের ১২৬টি স্থলজ স্তন্যপায়ী প্রাণীর তথ্য মিলেছে। গত দুই বছরে এই অঞ্চলে ব্যাঙের দুটি নতুন প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। ২০২১ সালে ক্যামেরায় ছোট নখযুক্ত ভোঁদড় (বিশ্বব্যাপী ঝুঁকিতে) ধরা পড়েছে। ঢোল বা বন্য কুকুর (বিশ্বব্যাপী বিপন্ন) এবং কালো ভালুক, সোনালি বিড়াল ও হগ ব্যাজার নামের এক প্রজাতির শূকরের (বিশ্বব্যাপী ঝুঁকিতে থাকা এই তিন প্রজাতি) উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এই বন নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করে আসছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ আজিজ। তার মতে, এখন যেখানে সাফারি পার্ক করার কথা বলা হচ্ছে, সেখানে মানুষের বসবাস বেড়ে গেছে। প্রতিনিয়ত সেখানে ঘরবাড়ি হচ্ছে, পাকা বিল্ডিংও করা হচ্ছে। প্রাণী যা ছিল তা আগেই বন ছেড়ে চলে গেছে। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘যেহেতু সেখানে অবৈধভাবে ঘরবাড়ি হয়ে গেছে, সেখানে বন্যপ্রাণীর আসা-যাওয়া খুব কম। আমি কখনোই চাই না কোনো প্রাণী বন্দিদশায় থাকুক। আমাদের ইতিমধ্যে দুইটা সাফারি পার্ক আছে, বিভিন্ন চিড়িয়াখানা আছে। সেখানে নানান ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। সেগুলোর ব্যবস্থাপনা ভালো নয়, প্রাণীর প্রতি যে আচরণ করা দরকার তা করতে না পারায় একপর্যায়ে প্রাণী মারা যায়। বন্দিদশায় বন্যপ্রাণী রেখে আনন্দ পাওয়ার দিন শেষ। আর সাফারি পার্ক হলে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ হবে না, শুধু বিনোদন হবে।’
তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, সরকার সেখানে সাফারি পার্কও করার দরকার নেই, মানুষের বসবাসের সুযোগ দেওয়ারও দরকার নেই, সেখানে মানুষের বসবাসের ব্যবস্থাপনা কমিয়ে তাদের পুনর্বাসন করা দরকার।
এই প্রকল্পের যখন সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়, তখন এর বিরোধিতা করে আন্দোলন করেছিল পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। লাঠিটিলার মতো উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্যপূর্ণ সংরক্ষিত বনে সাফারি পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনার বিপক্ষে পরিবেশকর্মীরা দাবি করেছিরেন, লাঠিটিলা একটি সংরক্ষিত বনভূমি। এখানে কেবল সাফারি পার্কই নয়, কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণেরই সুযোগ নেই। এখানে সাফারি পার্ক করা হলে বনের উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্য শুধু ক্ষতিগ্রস্তই হবে না, অনেক বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী হারিয়ে যাবে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, নির্মাণকাজের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত ড্রইং বা ডিজাইন ডিপিপিতে সংযুক্ত করা হয়নি। সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকা অনুযায়ী নির্মাণকাজের অনুমোদিত স্থাপত্য নকশা, প্রয়োজনীয় অন্যান্য ডিজাইন এবং প্রাসঙ্গিক বিষয় বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনাপূর্বক প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলন চূড়ান্ত করা প্রয়োজন।
তারা বলছেন, প্রকল্পটি গ্রহণের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পাদন করা হয়েছে, কিন্তু সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকা অনুযায়ী নির্ধারিত ছকে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার প্রণয়ন করে ডিপিপিতে সংযুক্ত করা হয়নি।
এর আগে গত বছরের জুনে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল সার্ভিসেস লিমিটেড (বিইটিএস) সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক করার পক্ষে মতামত দিয়েছে। বিইটিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক করা অযৌক্তিক হবে না।
এই প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ৫ হাজার ৬৩১ একর এলাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বনভূমি সুরক্ষা করে একটি আন্তর্জাতিক মানের সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠা করা। এ ছাড়া ২৭০ একর এলাকায় কোর সাফারি পার্ক ও সাফারি কিংডম স্থাপন করা; বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর জন্য বিভিন্ন মাংসাশী ও তৃণভোজী প্রাণীর জন্য পরিবেশবান্ধব বেষ্টনী নির্মাণ করা; কোর সাফারি ও সাফারি কিংডম এলাকার বাইরে লাঠিটিলার সমৃদ্ধ চিরসবুজ বনভূমিকে জবরদখলমুক্ত করে বন্যপ্রাণী, বিশেষ করে হাতি, মেছোবিড়াল, বনরুই, খাটোলেজি বানর, আসামি বানর, গন্ধগকুল, মায়া হরিণ, চশমাপরা হনুমান, ভালুক, শজারু ইত্যাদির বসবাস উপযোগী প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করে বায়োডাইভার্সিটি পার্ক স্থাপন।
এ ছাড়া বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করা; অসহায় এতিম ও উদ্ধারকৃত মহা-বিপন্ন হাতি চিকিৎসা ও সেবা প্রদানের মাধ্যমে ৮ একর এলাকায় হাতি উদ্ধার কেন্দ্র স্থাপন করা; ২৫ হেক্টর এলাকায় চারণভূমি স্থাপন; বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ প্রজাতির সংরক্ষণের জন্য ২৫ হাজারটি চারা রোপণের কার্যক্রমও রয়েছে এ প্রকল্পে।
মৌলভীবাজারের বন কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক মোহাম্মদ নাজমুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে বন কেটে সাফারি পার্ক করা হচ্ছে। কিন্তু মূল জায়গায় বনটি বনের জায়গাতেই থাকবে। আর কোর সাফারি পার্ক বলা হচ্ছে। কারণ সেটি রিজার্ভ ফরেস্টের ভেতরেই হচ্ছে। তবে পুরোটাই বন এলাকা। তিনি বলেন, যে জায়গাটি সাফারি পার্কের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানে এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যাতে গাছ কাটতে না হয়।
কিন্তু প্রকল্পের ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রকল্পের জন্য প্রায় কোটি টাকা ব্যয় হবে শুধু কাটার নিয়োগের জন্যই। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দুই ধাপে ২৬ জন বৈদ্যুতিক কাটার নিয়োগের জন্য ৬৪ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এ ছাড়া কাটারের বাকি ব্যয়গুলোর মধ্যে ঘাস কাটার ও তিন ধরনের ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ধরনগুলো স্পষ্ট করা হয়নি।
এই প্রকল্পে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের যেসব ব্যয়ের সুপারিশ করা হয়েছিল তার ধারেকাছেই নেই ডিপিপির ব্যয়। যেমন সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সুপারিশ করা হয়েছিল ৩ ধাপে বিদ্যুৎ ব্যয় প্রয়োজন হবে ২০ লাখ টাকা, কিন্তু ধরা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। সুপারিশে ছিল তিন ধাপে পেট্রোল খরচ হবে ১৫ লাখ টাকা, কিন্তু ডিপিপিতে তা ধরা হয়েছে ৪০ লাখ টাকা। তা ছাড়া সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বন্যপ্রাণীর খাদ্য সরবরাহের জন্য ব্যয়ের সুপারিশ ছিল ১ কোটি টাকা, কিন্তু ডিপিপিতে তা ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
এই প্রকল্প প্রস্তাবে কিছু ব্যয় অস্বাভাবিক দেখা গেছে। যেমন একজন ব্যক্তির জন্য বৈদেশিক প্রশিক্ষণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ লাখ টাকা, আরেক ব্যক্তির জন্য অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। শুধু দুই ধাপে দুজনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
প্রথম ধাপের এই প্রকল্পে ১৬৬ জন আউটসোর্সিংয়ের জন্য ব্যয় হবে ২২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ওই এলাকার ৩৫টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পুনর্বাসন ও স্থানান্তরের জন্য প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
এই প্রকল্পের জন্য দুই ধাপে পরামর্শক ব্যয় ধরা হয়েছে। ব্যবস্থাপনা ইউনিটের জন্য ২৪০ জনের পরামর্শক সেবা নেওয়া হবে। এতে ব্যয় হবে ৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আবার নকশা পর্যালোচনার জন্য পরামর্শক সেবার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
অধ্যাপক এম এ আজিজ বলেন, যে জায়গায় সাফারি পার্কের প্রস্তাব করা হয়েছে, সেখানে প্রায় ৩০০ মানুষের ঘরবাড়ি আছে। যারা সেখানে থাকছেন তারা একসময় ফরেস্ট ভিলেজার ছিলেন। যারা একসময় বন বিভাগকে সহযোগিতা করতেন, সেখানে এখন সত্যিকারার্থে বন বলতে যা বোঝায়, এখন তা আর নেই।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ছয়টি প্রস্তাব দিয়েছেন। একই সঙ্গে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করতে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে গণফোরামের উদ্যোগে ‘গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় আসুন ঐক্যবদ্ধ হই’ শীর্ষক সে্লাগানে দলের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ড. কামাল তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, ‘৩০ বছর ধরে আমরা এই সংগঠন চালিয়ে আসছি। আজকে জনগণের ঐক্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। আমার একটাই আবেদন, আজকে আমরা জাতীয় ঐক্যের জন্য সবাই একত্রে কাজ করি। ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারব। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই।’
সভাপতির লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘২০১৪ সালে ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন হয়েছে। ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়েছে। এ অবস্থায় আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জাতি চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। সংবিধানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। জনগণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তার ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকার গঠন করতে চায়। অথচ এই স্বাধীন রাষ্ট্রে জনগণের মৌলিক ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আজ সংগ্রাম করতে হচ্ছে, যা খুবই দুঃখজনক।’
তিনি বলেন, ‘জাতির জন্য আজকে সবচেয়ে বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে গণতন্ত্রহীনতা। বাংলাদেশের জন্মের মূল কথা ছিল গণতন্ত্র। কিন্তু এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্র কায়েমি স্বার্থে তা আজ বিপন্ন। এজন্য সামরিক শাসকদের দ্বারা গণতন্ত্র ধ্বংসের কর্মযজ্ঞ কম দেয় নাই। তবে মানুষ আশা করেছিল দেশের সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থা ফিরে আসবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে জাতি লক্ষ করল দেশে গণতন্ত্র না বরং “বলতন্ত্র” কায়েম হয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর মানুষ আশায় বুক বাঁধে। কিন্তু এবারও হতাশ হয়। প্রায় ১৫ বছরে দেশবাসী ক্রমহ্রাসমান গণতন্ত্র প্রত্যক্ষ করছে।’
সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে গণফোরাম যে ৬ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন সেগুলো হলো ১. একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন করা; ২. গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা; ৩. নির্বাচন সামনে রেখে বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্র, ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সব রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে বাধা না দেওয়া; ৪. নির্বাচনে লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে নির্বাচনকালীন সরকার বাধ্য থাকবে; ৫. বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা এবং ৬. নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
সভাপতির বক্তব্যের শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনী সংঘাত থেকে বের হয়ে আসার জন্য আমি এই ৬ দফা প্রস্তাব করছি।’
এর আগে বেলা ১১টার দিকে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। গণফোরামের সঙ্গে থাকার জন্য উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান ড. কামাল হোসেন। এর আগে সভাপতির লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।
স্বাগত বক্তব্যে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘৩০ বছর আগে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, কালো টাকা ও রুগ্ণ রাজনীতির বিপরীতে একটি সুস্থ ধারার রাজনীতির জন্য গণফোরাম সৃষ্টি হয়েছিল। গণফোরাম থেকে বেরিয়ে অনেক নেতা সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু ক্ষমতার প্রশ্নে ড. কামাল হোসেন কখনো আপস করেননি।’
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, ‘দেশে অসুস্থ ধারার রাজনীতি চালু হয়েছে। সারা বিশ্বের মানুষ ড. ইউনূস ও ড. কামাল হোসেনকে শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু আমাদের দেশে তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হয়।’ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বীর-প্রতীক বলেন, ‘যে গণতন্ত্রের জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, আজকে দেশে সেই গণতন্ত্র নেই।’
উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. মাহফুজুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ শাহ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান জাহাঙ্গীর, যুব ফোরামের নেতা সাইফুল ইসলাম সজল, প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, মোস্তাক আহমেদ, সভাপতি পরিষদের সদস্য মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, সভাপতি পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট এসএম আলতাফ হোসেন, মফিজুল ইসলাম খান কামাল প্রমুখ।
আবদুল কাদের মাসুম। পড়ালেখা করতেন সরকারি তিতুমীর কলেজের ফাইন্যান্স বিভাগে। ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর নাখালপাড়ার বাসার সামনে থেকে সাদা পোশাকে একদল লোক তাকে অপহরণ করে। বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করে আজও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। ছাত্রজীবনে মাসুম রাজনীতি করত না। নিখোঁজের বিষয়টি তার পরিবার থানায় সাধারণ ডায়েরি করে। ‘দেখছি’ বা ‘খোঁজা হচ্ছে’ এসব আশ্বাস দিচ্ছে পুলিশ। এর মধ্যেই তাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে একটি প্রতারক চক্র দুই দফায় ১ লাখ টাকা নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একইভাবে নিখোঁজ হন মিরপুরে সেলিম রেজা পিন্টু নামে ছাত্রদলের এক নেতা। পরিবারের সদস্যরা থানায় অভিযোগ দিলেও কাজ হয়নি। উল্টো প্রতারকরা তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে অর্থ। এ দুটি ঘটনার মতোই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের কাছ থেকে একশ্রেণির প্রতারক অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। মূলত তাদের ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে পুলিশের কাছে প্রতারণার বিষয়টি পরিবারের সদস্যরা জানাননি।
২০০৯ থেকে গত ১৪ বছরে সারা দেশে ৬৪৫ জনের মতো ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছে। আবার তাদের মধ্য অন্তত অর্ধশত ব্যক্তি ফিরে এসেছে। সাদা পোশাকে লোকজন তাদের ধরে নিয়ে গেছে বলে ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করেছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী। বছরের পর বছর ধরে তারা নিখোঁজ। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে। অবশ্য চলতি বছর গুমের সংখ্যা কমে এসেছে। গত সাত মাসে ১০টি গুমের ঘটনা ঘটেছে।
আজ ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস। সারা পৃথিবীতে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস পালিত হচ্ছে আজ। ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর গুম হওয়া সব ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সনদ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর প্রটেকশন অব অল পারসনস অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স এই আন্তর্জাতিক সনদ কার্যকর হয়। তাতে ৩০ আগস্টকে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা করা হয়। ২০১১ সাল থেকে প্রতি বছর ৩০ আগস্ট গুম হওয়া মানুষগুলোকে স্মরণ এবং সেই সঙ্গে তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর জন্য দিবসটি পালন করা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্যমতে, লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে ১৯৭০ ও ’৮০-এর দশকে শুধু অবৈধ অস্ত্র কারবারি ও ভিন্নমতাবলম্বীরাই গুম হতো। কিন্তু বর্তমানে নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী, মাদক কারবারি ও মানব-পাচারকারীদের মধ্যেও গুমের ঘটনা দেখা যায়। গুম দিবস সামনে রেখে ‘মায়ের ডাক’ নামে একটি সংগঠনের ঢাকায় অনুষ্ঠান করার কথা রয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে যাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাদের সন্তান, বাবা, মা, বোন বা অন্য স্বজনরা উপস্থিত থাকবেন।
নিখোঁজের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাজনৈতিক কোনো নেতাকর্মীকে গুম বা ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না। সরকারবিরোধীরা এসব প্রোপাগান্ডা চালিয়ে আসছে। অনেকেই নানা কারণে স্বেচ্ছায় নিখোঁজ থাকেন। কিছুদিন পর আবার বের হয়ে পরিবারের কাছে চলে যান। আর এসব কা- নিয়েই সরকারবিরোধীরা তৎপর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে ধরে নিয়ে মাসের পর মাস বা বছর ধরে আটকে রাখে না। কোনো মামলায় আটক করলে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যারা অপরাধী তাদেরই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
আবদুল কাদের মাসুমের মা আয়েশা আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি। প্রায় সাড়ে আট বছর ধরে সন্তানের মুখ দেখি না। আর দেখতে পাব কি না তাও জানি না। নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে এই পর্যন্ত ১ লাখ টাকা নিয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয় দিয়ে প্রতারকরা ফোন করেছিল। তারা মাসুমকে ছেড়ে দেবে বলে আশ্বস্ত করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এরকম অনেকের কাছ থেকে তারা অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়ে লাভ কী? এতদিন হয়ে গেল আমার সন্তানকে খুঁজে বের করতে পারেনি। আমার বিশ্বাস একদিন না একদিন ছেলে আসবেই! মাসুম খুবই মেধাবী ছাত্র ছিল। পড়ালেখার পাশাপাশি সে টিউশনি করত। তার টাকা দিয়ে আমাদের সংসারও চলত। মাসুমের স্বপ্ন ছিল বুয়েটে পড়ার। কিন্তু বিনা অপরাধে সে আজ নিখোঁজ। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্তাদের কাছে অনুরোধ, আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দিন।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নিখোঁজের বিষয়ে তদন্তে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়েছে আমাদের সংগঠন থেকে। গুম বা নিখোঁজ হওয়া সব ব্যক্তিকে অবিলম্বে খুঁজে বের করে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া, এ সংক্রান্ত অভিযোগ দায়েরের জন্য একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা এবং তা ব্যাপকভাবে প্রচার করা, দায়ীদের বিচারের সম্মুখীন করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া, পরিবারের যথাযথ পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, গত তিন বছর ধরে নিখোঁজ বা গুমের সংখ্যা কমে এসেছে। তবে গত ১৪ বছরে সারা দেশে ৬৪৫ জন নিখোঁজ হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী। নির্বাচন কেন্দ্র করে সামনের দিনগুলোতে নিখোঁজের ঘটনা বাড়বে বলে আশঙ্কা করছি। গুমের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলোকে অস্বীকার না করে এ ধরনের ঘটনার বিচার নিশ্চিতে বিদ্যমান আইন কাঠামোতে পরিবর্তন আনা উচিত। পাশাপাশি নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তও করা উচিত।
মিরপুর এলাকার কাঠ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বাতেনের মেয়ে আনিসা ইসলাম জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে জুন মাসে বাবা নিখোঁজ হন। এরপর থেকে তার হদিস নেই। তিনি আর আসবেন কি না, তাও জানেন না। বেঁচে আছেন নাকি মরে গেছেন, কেউ বলতে পারছেন না। বাবার খোঁজ করতে করতে প্রতারকদের অন্তত ২ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। তারপরও বাবাকে ফিরে পাননি।
২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর সাজেদুল ইসলামসহ আটজন ঢাকার শাহীনবাগ এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, বিনা কারণে আমার ভাইকে গুম করে রাখা হয়েছে। কী অপরাধ করেছে তাও আজও জানতে পারলাম না। তবে আমার ভাইয়ের একটাই অপরাধ ছিল সে বিএনপির রাজনীতি করত। এখনো আমরা তাকিয়ে থাকি ভাইয়া ফিরে আসবে।
২০১০ সালের ২৪ মার্চ রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী সুজনকে সাদা পোশাকধারী লোকজন তাকে তুলে নিয়ে যায়। পুলিশ-র্যাবসহ প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে তার স্বজনরা। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল বনানী থেকে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ও তার গাড়িচালক আনসার আলীকে অপহরণ করে নেওয়া হয়। আজও তাদের সন্ধান মেলেনি। ২০১০ সালের ২৫ জুন ফার্মগেট থেকে আরেক বিএনপি নেতা চৌধুরী আলমকেও তুলে নেওয়ার অভিযোগ আছে। এখনো তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর নিখোঁজ হন খালিদ হাসান সোহেল। সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম হীরু, বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির পারভেজ, তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদল সভাপতি আমিনুল ইসলাম জাকির, জাহিদুল করিম তানভীর, পশ্চিম নাখালপাড়ার মাজহারুল ইসলাম রাসেল, মুগদাপাড়ার আসাদুজ্জামান রানা, উত্তর বাড্ডার আল-আমিন, বিমানবন্দর থানা ছাত্রদল নেতা আদনান চৌধুরী ও কাওসার আহমেদ, সবুজবাগের মাহাবুব হাসান, সম্রাট মোল্লা, জহিরুল ইসলাম, পারভেজ হোসেন, মো. সোহেল ও মো. সোহেল চঞ্চল, নিজাম উদ্দিন মুন্না, তরিকুল ইসলাম ঝন্টু, কাজী ফরহাদ, সেলিম রেজা পিন্টু, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন কুসুমসহ অনেকের সন্ধান এখনো মেলেনি।
মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নিখোঁজ ব্যক্তিরা কোথায় তা খুঁজে বের করা উচিত। এসব সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার যখন আমাদের কাছে আসে, তখন তাদের কোনো সান্ত¡নাই দিতে পারি না। সরকার এসব বিষয় গভীরে গিয়ে তদন্ত করে আসল রহস্য বের করবে তা আশা করছি।
অনেক নাটকীয়তা ও কাদা ছোড়াছুড়ির পর আজ থেকে মাঠে গড়াচ্ছে ১৬তম এশিয়া কাপ।
প্রথমবারের মতো এই আসর হচ্ছে দুই দেশে। ১৯৮৪ সালে প্রথম আসরের পর প্রতিবারই এক দেশে আয়োজিত হয়েছিল টুর্নামেন্টটি। এবার ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতায় কাদা ছোড়াছুড়ির পর এশিয়া কাপ হচ্ছে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায়। এতে করে ২০০৮ সালে সবশেষ এশিয়া কাপ আয়োজনের পর এই প্রথম টুর্নামেন্টের আয়োজক হতে পেরেছে পাকিস্তান। এতদিনে এই প্রথম কোনো বহুজাতিক আসর বসছে দেশটিতে। এদিকে এই আসর দিয়েই এশিয়া কাপে পা রেখে ইতিহাস গড়েছে নেপাল। টুর্নামেন্ট অভিষিক্তরাই আজ উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে পাকিস্তানের বিপক্ষে। মুলতানে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সাড়ে ৩টায়।
এক যুগের বেশি সময় পর এশিয়া কাপ আয়োজক হওয়ায় পাকিস্তান উদ্বোধনী অনুষ্ঠান রেখেছে আজ। এমনিতে এশিয়া কাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয় না। এই অনুষ্ঠানে বিকাল ৩টায় সংগীত পরিবেশন করবেন অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গাইবেন খ্যাতিমান পাকিস্তানি গায়ক আতিফ আসলামও। এ ছাড়া আতশবাজি, পাকিস্তানি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও থাকবে।
আসরে সর্বোচ্চ সাতবারের জয়ী ভারত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছয়বার শিরোপা জিতেছে শ্রীলঙ্কা। আর পাকিস্তান জিতেছে মাত্র দুবার। বাংলাদেশ ২০১২, ২০১৬ (টি-টোয়েন্টি) ও ২০১৮ সালে ফাইনাল খেলেছিল। তিনবারই শিরোপা হারানোর হতাশায় থামতে হয়েছে। এই আসর সব দলের জন্যই আলাদা রকম চ্যালেঞ্জের। আর ৩৬ দিন পর ওয়ানডে বিশ্বকাপ থাকায় এবারের এশিয়া কাপ হয়ে উঠেছে দলগুলোর জন্য প্রস্তুতির মঞ্চ। যেখানে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব পাওয়ার চেয়ে বিশ্বকাপের জন্য তৈরি হওয়াটা মুখ্য।
এমন আসরের আগে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা আছে সবচেয়ে বিপদে। দলটি কাল এশিয়া কাপের তালিকা দিয়েছে সেরা ক্রিকেটারদের ছাড়াই। তার কারণ ইনজুরি। ভারতও ইনজুরির কারণে লোকেশ রাহুলকে দুই ম্যাচের জন্য পাচ্ছে না। বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটার লিটন দাস জ্বরের জন্য নেই প্রথম ম্যাচে। একমাত্র পাকিস্তান ও নেপাল পুরো দল নিয়ে নামতে পারছে ইনজুরি বিঘিœত এশিয়া কাপে।
ভারত-পাকিস্তানের বৈরী রাজনীতির জন্য এবার দলগুলোতে দুই দেশে ম্যাচ খেলতে হবে। পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপালকে গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলো খেলতে হবে দুই দেশে। শুধু আফগানিস্তান ও ভারত এক দেশে খেলার সুযোগ পাচ্ছে গ্রুপ পর্ব। গ্রুপ পর্ব শেষে আফগানদের পাকিস্তান থেকে চলে আসতে হবে শ্রীলঙ্কায়। তখন শুধু ভারতই এক দেশে খেলার সুযোগ পাচ্ছে। তাই ভারত ছাড়া বাকি সব দলেরই ভ্রমণ ক্লান্তির সঙ্গে লড়তে হবে।
বি গ্রুপে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচ খেলবে ৩১ আগস্ট শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাল্লেকেলেতে। আফগানদের সঙ্গে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে সাকিবদের লাহোর যেতে হবে ৩ সেপ্টেম্বর। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে থাকলে শ্রীলঙ্কাতে সুপার ফোর পর্বের ম্যাচ খেলতে আবার ফিরতে হবে বাংলাদেশকে। আর গ্রুপে দ্বিতীয় হলে পাকিস্তানের লাহোরেই হবে সুপার ফোরে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ। এরপর আবার শ্রীলঙ্কায় ফিরতে হবে সাকিবদের।
অভিষেকে ২৬ মিনিট খেলে দুই অ্যাসিস্টের অবদান রাখতে পেরেছিলেন নেইমার। আল হিলাল জিতেছিল। কিন্তু পর পর দুম্যাচ খেললেন পুরো সময়। তেমন কিছুই করতে পারলেন না। ড্র করেছে আল হিলাল আবার।
এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে শেষ দিকের গোলে ১-১ ড্র করে পরাজয় বাঁচিয়েছিল আল হিলাল। আজ সৌদি প্রো লিগে দামাক এফসির বিপক্ষে ম্যালকমের গোলে ৯ মিনিটে এগিয়ে গেলেও শেষপর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারেনি।
সাত ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে তবুও শীর্ষেই রইলো আল হিলাল।
বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস আজ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে দিবসটি পালিত হবে। এ উপলক্ষে ২১টি বেসরকারি সংস্থা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘স্বল্প দূরত্বে হেঁটে ও সাইকেলে চলি, ব্যক্তিগত গাড়ি পরিহার করি’।
দিবসটি উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে ২১টি আয়োজক সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগে ধানমন্ডি-২৭-এর মোড় থেকে আবাহনী খেলার মাঠ পর্যন্ত ‘স্বল্প দূরত্বে হেঁটে ও সাইকেলে চলি, ব্যক্তিগত গাড়ি পরিহার করি’ শীর্ষক র্যালি আয়োজন করা হয়েছে।
২০০৬ সাল থেকে দেশে বেসরকারি উদ্যোগে দিনটি উদযাপন করা হচ্ছে। তবে ২০১৬ সাল থেকে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে এটি পালন শুরু হয়, যেখানে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্র্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) মুখ্য সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে এসেছে। কিন্তু বিশ্বের অন্যতম যানজটপ্রবণ ঢাকা শহরে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্ত্বেও সরকারিভাবে এ দিবসটি পালনের উদ্যোগ এই বছর নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশে দিবসটি পালনের প্রায় দেড় যুগ পার হতে চললেও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ও ফলপ্রসূ পরিকল্পনা ও নীতির বাস্তবায়ন এখনো দেখা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, যানজটের বড় কারণ হলো এই ব্যক্তিগত গাড়ি। দেশে মেগা প্রকল্পগুলো ব্যক্তিগত গাড়িকে প্রাধান্য না দিয়ে গণপরিবহনকে প্রাধান্য দিয়ে করা উচিত। এখন গণপরিবহনের দিকে জোর না দেওয়ায় অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ি, যা সড়কে বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিআরটিএ একটি সূত্র থেকে জানা যায়, দিন দিন ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। চলতি বছর আগস্ট পর্যন্ত মোট যানবাহন নিবন্ধন আছে ৫৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮টি মতো। এর মধ্যে গণপরিবহনের সংখ্যা মাত্র ২ শতাংশের কম। আর বেশিরভাগই ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা গাড়ি।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বায়ুদূষণে বিশ্বে দুই বিলিয়ন শিশু প্রতিদিন বিষাক্ত বাতাসের সংস্পর্শে আসছে। এদের মধ্যে পাঁচ লাখের বেশি প্রতিবছর মারা যাচ্ছে। তবুও দেশে গণপরিবহনকে প্রাধান্য না দিয়ে বড় বড় অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। যার জন্য দেশে দিনের পর দিন ব্যক্তিগত গাড়ি বাড়ছে। এ অবস্থায় ভবিষ্যতে সড়কে নানারকম বিশৃঙ্খলার শঙ্কা থেকেই যাবে।
এদিকে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানান, প্রতি মাসের প্রথম রবিবার সব ধরনের ব্যক্তিগত গাড়ি বন্ধ করার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ প্রয়োজন। নীতিনির্ধারকরা গণপরিবহন ব্যবহার করলেই সাধারণ মানুষের যাতায়াতের দুর্ভোগ উপলব্ধি করতে পারবেন, ফলে গণপরিবহনের মান বাড়তে পারে। টেকসই পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নগর এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়াস সারা বিশ্বে বেগবান হলেও বাংলাদেশে এ প্রয়াস সীমিত। তাছাড়া ঢাকা শহরে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ব্যক্তিগত গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দিয়ে চলছে বিআরটিএ। নগর পরিকল্পনা ও পরিবহন পরিকল্পনার মধ্যে সমন্বয় নেই, কর্র্তৃপক্ষগুলোর মধ্যেও নেই কার্যক্রমের সমন্বয়। ফলে নগরে গাড়ির চাপ বাড়ছে, মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়েছে যানজট।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনা কখন যাবি জনগণ এখন আর এই কথা বলে না। বলে, এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনা এখন যাবি। আর যাবেনইবা কোথায়? এখন সেটাই দেখার বিষয়। সর্বশেষ গতকাল ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাফ বলে দিয়েছে, তারা শেখ হাসিনার অধীনে হওয়া নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবেন না। কারণ তাদের যে প্রতিনিধিরা দেশে এসেছিলেন, তারা গিয়ে বলেছেন, নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই।’ গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিএনপি আয়োজিত ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-সিলেট অভিমুখী ‘রোডমার্চ’ কর্মসূচির শুরুতে ভৈরবের বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সকালে অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির এক দফা দাবি আদায়ে এই রোডমার্চ শুরু হয়। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রোডমার্চ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন গয়েশ^র চন্দ্র রায়।
এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওয়ারেস আলী মামুন, নির্বাহী কমিটির সদস্য লায়লা বেগম ও মজিবুর রহমান ইকবাল।
ওই জনসভায় গয়েশ্বর চন্দ্র আরও বলেন, ‘বিএনপির দাবি দেশে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন, যা হতে হবে নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। যার যার ভোট সে সে দেবে। সকালের ভোট রাতে হবে না।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ব্যবসার পরিবেশ পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের লোকেরা ধ্বংস করছে। ফলে এতে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দেশের মানুষ আজ অসহায় দ্রব্যমূল্য নিয়ে। চালের দাম, তেলের দাম, আলুর দাম, বিদ্যুতের দাম হু হু করে বেড়েছে। আজকে ব্যাংকগুলোতে টাকা চুরি করে আওয়ামী লীগের লোকেরা পাচার করছে বিদেশে। রিজার্ভ কমে গেছে। সরকারদলীয় লোকের দুর্নীতির কারণে আজ রিজার্ভ কমছে, দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হচ্ছে।’
দুপুরে সিলেট অভিমুখে তারুণ্যের রোডমার্চে যাত্রাপথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে পথসভা হয়। এ সময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তৃতাকালে গয়েশ্বর বলেন, ‘তারুণ্যের যে রোডমার্চ শুরু হয়েছে, তা সরকার পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে তরুণ সমাজ আজ জেগে উঠেছে। শেখ হাসিনা সরকারকে আর কোনো অশুভ শক্তিই রক্ষা করতে পারবে না।’ এ আন্দোলন ডু আর ডাই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
রোডমার্চটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমানায় পৌঁছলে দলের কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম খোকন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মোহাম্মদ শামীম ও যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা এসএন তরুণ দেসহ দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নেতৃত্বে রোডমার্চকে স্বাগত জানিয়ে শোডাউন করা হয়।
পরে দুপুরে হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ এলাকায় পথসভা করা হয়। পথসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মালিক জনগণ। সেই মালিকানা আমরা ফেরত দিতে চাই। ক্ষমতায় আসার জন্য আমরা আন্দোলন করছি না। জনগণের অধিকার আর মানুষের ভোটাধিকার ফেরাতে আমরা রাজপথে নেমেছি।’
রোডমার্চটি বিকেল ৪টায় সিলেটে এসে সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই রোডমার্চ সিলেটে পৌঁছে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। এরপর সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ নেতারা।
এদিকে বৃষ্টি হওয়ায় সমাবেশস্থল আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নেতাকর্মীরা সেভাবে অবস্থান নিতে পারেননি। খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে অনেকে সমাবেশস্থলে এলেও বৃষ্টির কারণে তারা আশপাশের বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নেন। অবশ্য বেশ কিছু নেতাকর্মী ছাতা, ব্যানার-ফেস্টুন ইত্যাদি মাথায় দিয়ে মাঠেই অবস্থান করছিলেন। বৃষ্টিতে ভিজে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী সরকারবিরোধী স্লোগান দেন।
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন জানান, রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে যোগ দিতে দুপুর থেকেই সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলা, পৌরসভা ও সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মী মিছিল সহকারে এসে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জড়ো হতে থাকেন। তবে বৃষ্টির কারণে মাঠে অবস্থান কষ্টকর হয়ে পড়ে। এরপরও বৃষ্টিতে ভিজে শত শত নেতাকর্মী সেখানে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ সফল করেছেন। সভা শেষে রোডমার্চ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
* প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ও নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
রাজধানীর পল্টনে ব্যাংক থেকে ব্যবসায়ীর ২০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুই পুলিশসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
জানা গেছে, আবদুল্লাহ আল মামুন নামে একজন ব্যবসায়ীর কর্মচারী আইএফআইসি ব্যাংকের পল্টন শাখায় ২০ লাখ টাকা জমা দিতে আসেন। তিনি এসে টাকা জমা দেওয়ার লাইনে দাঁড়ান। এ সময় পুলিশের ইউনিফর্ম পরা দুই ব্যক্তি তাকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যান। পরে তার কাছে থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যান তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। পরে সিটিটিভি ফুটেজ দেখে দুজন হকারকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ধারাবাহিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয় অন্যদের। এ ঘটনায় পল্টন থানায় একটি মামলা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের (ডিএমপি) উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ছিনতাইয়ের সঙ্গে দুজন পুলিশ কনস্টেবল জড়িত ছিল। তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিভিলে থাকা তিন ব্যক্তি টাকার বিষয়ে ওই দুই পুলিশকে তথ্য দেয়। এরপর ইউনিফর্ম পরা দুই পুলিশ কনস্টেবল ব্যাংকে ঢুকে ওই ব্যক্তিকে বাইরে নিয়ে আসে। তার কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। দুই পুলিশ কনস্টেবল বরখাস্ত ছিল।
জানা গেছে, পল্টন থানা-পুলিশ ও ডিবির মতিঝিল জোনাল টিম সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ব্যাংকের সামনের ফুটপাতের হকার হৃদয় ও তার সহযোগী মঞ্জুকে আটক করে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের দেওয়া তথ্যে ডেমরা পুলিশ লাইনসে ক্লোজড হয়ে থাকা পুলিশের দুই সদস্য কনস্টেবল মাহাবুব ও কনস্টেবল আসিফকে ১০ লাখ টাকাসহ আটক করা হয়। এরপর বাসাবো থেকে ছিনতাইয়ের আরও ১০ লাখ টাকা ও মোটরসাইকেলসহ সোহেলকে আটক করে পুলিশ।
এ ঘটনার ভুক্তভোগী আবদুল্লাহ আল মামুন করপোরেট আইডিয়াসের মালিক। তিনি বলেন, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই মার্কেটিং অফিসারের মাধ্যমে টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়। টাকা নিয়ে ব্যাংকের ওই শাখায় যাওয়ার পর এ ঘটনা ঘটে। এরপর দ্রুত পুলিশকে জানাই।
এ ব্যবসায়ী আরও বলেন, পুলিশের পোশাক পরিহিত দুই লোক এসে আমাদের কর্মীকে ভয় দেখিয়ে টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে এটি শুনে বিস্মিত হয়েছিলাম। এখন জানলাম এ ছিনতাইকাণ্ডে শাহজাহানসহ আরও তিনজন রয়েছে। শাহজাহান আমার দীর্ঘদিনের কর্মী। আমাদের প্রতিষ্ঠান ঠিকাদারিতে জড়িত।
পুলিশ বলছে, পুরানা পল্টনে করপোরেট আইডিয়াসের অফিস থেকে টাকা জমা দেওয়া জন্য ব্যাংকের উদ্দেশ্যে যাত্রার পরপরই শাহজাহান, হৃদয় ও রাসেল পুলিশের দুই সদস্যকে খবর দেন। তারা পল্টনের আইএফআইসি ব্যাংকে গিয়ে টাকার ব্যাগসহ আজিমকে তুলে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে দুই পুলিশ সদস্য পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিনতাইয়ে অংশ নেন। এ সময় বাকি তিনজন আশপাশে পাহারায় ছিলেন।
পল্টন থানার ওসি সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরই ব্যাংকের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়। এরপর পুলিশের দুই সদস্যকে শনাক্তের পর অন্য তিনজনের বিষয়েও তথ্য বেরিয়ে আসে।
জানা গেছে, ব্যাংকের ওই শাখায় গিয়ে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা একটি হিসাব নম্বরে জমা দেওয়ার পরই ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ব্যাংকের বাইরে নিয়ে আসা হয়। তারা আজিমের টাকার উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। ব্যাগে থাকা টাকা হুন্ডির অর্থ বলে দাবি করেন পুলিশ সদস্যরা। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে আজিমকে ব্যাংকের বাইরে নিয়ে যান। রাস্তায় এনে তাকে মোটরসাইকেলে তুলে দ্রুত মুগদা এলাকায় নেন। সেখানে টাকার ব্যাগ রেখে ছেড়ে দেওয়া হয় আজিমকে। এরপর ঘটনা ওই প্রতিষ্ঠানের মালিককে জানানোর পর পুলিশের একাধিক দল কাজ শুরু করে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার-২০২৩। মেলার প্রথম দিনে পর্যটকদের ব্যাপক সাড়া মিলেছে। ভারত ও বাংলাদেশ ছাড়াও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের জন্য যাবতীয় বিষয় নিয়ে মেলায় বসেছে অর্ধশতাধিক স্টল। মেলায় আসা দর্শনার্থীরাও হাতের লাগালেই ভ্রমণসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য এবং ভ্রমণের ওপর অফার পাওয়ায় বেশ খুশি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে আগত দর্শনার্থী ও স্টলগুলোতে থাকা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই মিলেছে।
মেলায় স্টল বসিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসও। স্টলটিতে দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি চালু হওয়া জাপানের নারিতা রুটে যাতায়াত করতে চাইলে মেলায় আসারা পাবেন ২০ শতাংশ ছাড়। এ ছাড়া কাঠমান্ডু, কলকাতা, দিল্লি, আবুধাবি, শারজা, দুবাই, দোহা, সিঙ্গাপুর ও ব্যাংকক রুটে মিলবে ১৫ শতাংশ ছাড়। এ ক্ষেত্রে বিমানের কল সেন্টারেও (০১৯৯০৯৯৭৯৯৭) সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন আগ্রহীরা।
এদিকে মেলা উপলক্ষে র্যাফেল ড্রর টিকিটও দিচ্ছে এয়ারলাইনসটি। প্রবেশপথে টিকিট কাটলে প্রথম দিনে থাকছে ঢাকা-দিল্লি-ঢাকা কাপল রিটার্ন টিকিট, দ্বিতীয় দিনে থাকছে ঢাকা-গুয়াংজু-ঢাকা রুটে কাপল রিটার্ন টিকিট এবং তৃতীয় দিনে ঢাকা-নারিতা-ঢাকা কাপল রিটার্ন টিকিট পাবেন র্যাফেল ড্রতে বিজয়ীরা।
মেলায় আসা দর্শনার্থীদের ভাষ্য, এরকম মেলার আয়োজন প্রতি তিন মাস পরপর করা প্রয়োজন। তাহলে মানুষের ভ্রমণের ওপর ভীতি কাটবে। তথ্য জানবে খোলামনে। আর এতে দেশের পর্যটন স্পটগুলোতেও তারা সহজে ঘুরতে যেতে চাইবে।
রংপুরের ‘আলী বাবা থিম পার্কে’র আকর্ষণীয় নানা বিষয় ভ্রমণপিপাসুদের জানাতে মেলায় স্টল দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার তৌহিদুল ইসলাম তৌহিদ। তিনি বলেন, ‘আমরা অফার দিচ্ছি না, তবে আমাদের পার্কে মানুষ কেন যাবে, কী কী দেখার মতো জিনিস দিয়ে আমরা পার্ক সাজিয়েছিÑ সেটা জানাতেই মেলায় আসা।’
ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিল এখন মৃতপ্রায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে না পারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র সরে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা ঘোরানো মতিঝিলে আবাসিক ভবন, শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান তৈরি না হলে দেশের প্রধান এই বাণিজ্যিক অঞ্চল প্রাণ হারাবে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাদের মতে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় অবদান রয়েছে মতিঝিলের টাকার। শুধু তা-ই নয়, মতিঝিলে উপার্জিত অর্থে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডাসহ আরও অনেক দেশে। এখানকার উপার্জিত টাকা অনেকে জমা রেখেছেন সুইস ব্যাংকেও। শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মতিঝিলে। এ যেন মা কাঁকড়ার আত্মত্যাগের গল্প। মা কাঁকড়া বাচ্চাদের আগলে রাখে বুকের ভেতর; যেদিন বাচ্চাগুলো বের হয়ে আসে, সেদিন খোলস ছাড়া মা কাঁকড়ার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। মা কাঁকড়ার মতো দুঃখী ও ত্যাগী বাণিজ্যিক মতিঝিল।
ষাটের দশকে মতিঝিলে গড়ে ওঠে দেশের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট-সিবিডি)। সেই থেকে এখনো দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল মতিঝিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে সরকারি ৮টি, বেসরকারি ৪৫টি এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে ৮টি। এ ছাড়া ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৮১টি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের বেশির প্রধান কার্যালয় চলে গেছে কারওয়ান বাজার, গুলশান-বনানী ও উত্তরায়। নতুন করে যেসব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাচ্ছে, সেগুলোর প্রধান কার্যালয় মতিঝিলের বাইরে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মতিঝিলের আশপাশে পরিকল্পিত কোনো আবাসিক এলাকা, অভিজাত হোটেল, কাজের ফাঁকে অবসর কাটানোর মতো উন্মুক্ত স্থান, শপিং কমপ্লেক্স না থাকায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুবিধার জন্য অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়গুলোও মতিঝিলের বাইরের এলাকা, অর্থাৎ কারওয়ান বাজার, গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে গড়ে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, মধুমিতা সিনেমা হল এবং ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এবং দিলকুশা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবন এবং বঙ্গভবনের পাশের এলাকাজুড়ে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল। বিশ্বের বাণিজ্যিক অঞ্চলের ভবনগুলো সুউচ্চ হয়ে থাকে। কিন্তু মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের পাশেই বঙ্গভবন। নিরাপত্তার কারণে বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর কোনো বহুতল ভবন করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, মতিঝিলের প্লটগুলোর ‘নন-রেসট্রিকটেড’ উচ্চতা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর সাড়ে চারতলার বেশি উচ্চতার ভবনের অনুমোদন মেলে না। ফলে মূল্যবান ওই প্লটগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারছেন না মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ জরাজীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণও রয়েছে কয়েকটি ভবন। একটির সঙ্গে অন্যটি লাগানো। দুটি ভবনের মাঝখানে উন্মুক্ত জায়গা নেই বেশিরভাগ ভবনের। দিলকুশা এলাকার বঙ্গভবন লাগানো ভবনগুলোর মাঝখানেও কোনো ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, মতিঝিল এলাকার ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে। ভাঙাচোরা এবড়োখেবড়ো সড়ক। সড়ক বিভাজকগুলো শ্রীহীন। এগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়নি। প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলে মতিঝিলের আরও করুণ দশা চোখে পড়ে। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার সড়কের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে চটের ছালা দিয়ে ঘেরা খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান এবং নানা পণ্যের অস্থায়ী দোকান। সামান্য বৃষ্টিতে মতিঝিল এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে থাকে পানির নিচে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত। ডিএসসিসি এলাকার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে। খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে মূল্যায়ন করলে মতিঝিল ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। যদিও এটা মানতে নারাজ ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি।
মতিঝিল এলাকার বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিল এলাকার সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএসসিসি। পরিত্যক্ত প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মতিঝিলের সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত ও সড়ক বিভাজকের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা দরকার। পর্যায়ক্রমে এ এলাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কাজ করবে ডিএসসিসি। তবে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের মূল সংস্কার ও আধুনিকায়নের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউককে সেসব বিষয় পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কাজে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা লাগলে করপোরেশন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলে রাজউক। রাজউক সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশক থেকেই মতিঝিলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যিক অঞ্চলে শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান থাকে। আর কাছাকাছি এলাকায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা থাকে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। অভিজাত মানের হোটেল পূর্বাণী গড়ে উঠলেও আশপাশে সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লোকজন গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় থাকেন। মতিঝিলের সৌন্দর্য নিশ্চিত করতে ও আধুনিকায়নে যেসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখা দরকার ছিল রাজউক ও সিটি করপোরেশন সেটা করেনি।
রাজউক সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধরা, উত্তরা। সেই সব এলাকা থেকে মানুষ মতিঝিলে আসেন। শহরের জনসংখ্যা বাড়ায় দিন দিন যানজট বাড়ছে। ওই সব এলাকা থেকে মতিঝিলে আসতে সড়কে এক থেকে দেড় ঘণ্টা চলে যায়। দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার মধ্যে ৩০ শতাংশ সময় সড়কে নষ্ট হচ্ছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে চিন্তা করেছে, তার কর্মস্থল এমন একটা জায়গায় হবে যা তার আবাসনের কাছাকাছি। মতিঝিল থেকে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও ভূমিকা রেখেছে।
কালের বিবর্তনে গুলশান হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক এলাকা। কারওয়ান বাজার, উত্তরায়ও গেছে কিছু। এসব জায়গায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমও সেখানে চলে গেছে। এসব এলাকার আশপাশে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় তাদের বসবাস। আবাসিক এলাকা ছাড়া, পৃথিবীর কোথাও শতভাগ জায়গা শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা অথবা একই শ্রেণির কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার হয় না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, নগর পরিকল্পনায় ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়, যেকোনো জায়গার ব্যবহার হবে ২৪ ঘণ্টা। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল কর্মচঞ্চল থাকে মাত্র ১২ ঘণ্টা। এরপর ওই জায়গার ব্যবহার হয় না। রাতে নীরব ও ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়।
তিনি বলেন, যে মতিঝিলে দিনের বেলায় হাঁটা যায় না; গাড়ির কারণে, যানজটে; সেই মতিঝিলে রাত ৮টার পরে আবার একাও হাঁটা যায় না; অনিরাপদ বোধ হয়। এ জন্য যারা দিনে বাণিজ্য করতে আসেন, তারা মতিঝিল এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন না। অন্যদিকে গুলশান-বনানী এলাকায় থাকলে তারা শপিংয়ে যেতে পারেন, কফি শপে যেতে পারেন। এসব কারণে সারা বিশ্বে ভূমির মিশ্র ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, মতিঝিল এলাকা যেহেতু ইতিমধ্যে তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলেছে, এ জন্য মতিঝিলের জমির শ্রেণিকে মিশ্র ব্যবহার হিসেবে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছে রাজউক। সংশোধিত ড্যাপে সে বিষয়ে নির্দেশনা রাখা হয়েছে। পৃথিবীর নগর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৫০, ৬০ বা ১০০ বছর অন্তর সেসব ঢেলে সাজানো হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়েই মতিঝিল এলাকাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে আবাসিকের বৈশিষ্ট্য দিতে হবে; কনডোমিনিয়াম গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি, ওয়াকওয়ে থাকবে। বসার ব্যবস্থা থাকবে। মতিঝিল এলাকায় ঝিল ছিল, ওই ঝিলকে প্রাধান্য দিয়ে পার্কটি তৈরি করা হবে। বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া মতিঝিলকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিলের আধুনিকায়ন ও ভূমির মিশ্র ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাহলে মতিঝিল সচল থাকবে; তবে ঢাকা শহর বড় হওয়ায় আরও বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে ওঠা ইতিবাচক। এসব পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার ছিল; কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে সে রকম হয়নি। এটা দুঃখজনক। এ জন্য শহরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ঢাকায় এখন অনেকগুলো বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সব অঞ্চলে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় বড় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় মতিঝিলে রয়েছে। তবে ব্যবসা গুলশান, বনানী, উত্তরা, গাজীপুরে সরে যাওয়ায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ব্যবসা কেন্দ্রের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।