
আবদুল কাদের মাসুম। পড়ালেখা করতেন সরকারি তিতুমীর কলেজের ফাইন্যান্স বিভাগে। ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর নাখালপাড়ার বাসার সামনে থেকে সাদা পোশাকে একদল লোক তাকে অপহরণ করে। বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করে আজও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। ছাত্রজীবনে মাসুম রাজনীতি করত না। নিখোঁজের বিষয়টি তার পরিবার থানায় সাধারণ ডায়েরি করে। ‘দেখছি’ বা ‘খোঁজা হচ্ছে’ এসব আশ্বাস দিচ্ছে পুলিশ। এর মধ্যেই তাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে একটি প্রতারক চক্র দুই দফায় ১ লাখ টাকা নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একইভাবে নিখোঁজ হন মিরপুরে সেলিম রেজা পিন্টু নামে ছাত্রদলের এক নেতা। পরিবারের সদস্যরা থানায় অভিযোগ দিলেও কাজ হয়নি। উল্টো প্রতারকরা তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে অর্থ। এ দুটি ঘটনার মতোই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের কাছ থেকে একশ্রেণির প্রতারক অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। মূলত তাদের ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে পুলিশের কাছে প্রতারণার বিষয়টি পরিবারের সদস্যরা জানাননি।
২০০৯ থেকে গত ১৪ বছরে সারা দেশে ৬৪৫ জনের মতো ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছে। আবার তাদের মধ্য অন্তত অর্ধশত ব্যক্তি ফিরে এসেছে। সাদা পোশাকে লোকজন তাদের ধরে নিয়ে গেছে বলে ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করেছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী। বছরের পর বছর ধরে তারা নিখোঁজ। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে। অবশ্য চলতি বছর গুমের সংখ্যা কমে এসেছে। গত সাত মাসে ১০টি গুমের ঘটনা ঘটেছে।
আজ ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস। সারা পৃথিবীতে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস পালিত হচ্ছে আজ। ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর গুম হওয়া সব ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সনদ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর প্রটেকশন অব অল পারসনস অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স এই আন্তর্জাতিক সনদ কার্যকর হয়। তাতে ৩০ আগস্টকে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা করা হয়। ২০১১ সাল থেকে প্রতি বছর ৩০ আগস্ট গুম হওয়া মানুষগুলোকে স্মরণ এবং সেই সঙ্গে তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর জন্য দিবসটি পালন করা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্যমতে, লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে ১৯৭০ ও ’৮০-এর দশকে শুধু অবৈধ অস্ত্র কারবারি ও ভিন্নমতাবলম্বীরাই গুম হতো। কিন্তু বর্তমানে নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী, মাদক কারবারি ও মানব-পাচারকারীদের মধ্যেও গুমের ঘটনা দেখা যায়। গুম দিবস সামনে রেখে ‘মায়ের ডাক’ নামে একটি সংগঠনের ঢাকায় অনুষ্ঠান করার কথা রয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে যাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাদের সন্তান, বাবা, মা, বোন বা অন্য স্বজনরা উপস্থিত থাকবেন।
নিখোঁজের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাজনৈতিক কোনো নেতাকর্মীকে গুম বা ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না। সরকারবিরোধীরা এসব প্রোপাগান্ডা চালিয়ে আসছে। অনেকেই নানা কারণে স্বেচ্ছায় নিখোঁজ থাকেন। কিছুদিন পর আবার বের হয়ে পরিবারের কাছে চলে যান। আর এসব কা- নিয়েই সরকারবিরোধীরা তৎপর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে ধরে নিয়ে মাসের পর মাস বা বছর ধরে আটকে রাখে না। কোনো মামলায় আটক করলে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যারা অপরাধী তাদেরই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
আবদুল কাদের মাসুমের মা আয়েশা আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি। প্রায় সাড়ে আট বছর ধরে সন্তানের মুখ দেখি না। আর দেখতে পাব কি না তাও জানি না। নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে এই পর্যন্ত ১ লাখ টাকা নিয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয় দিয়ে প্রতারকরা ফোন করেছিল। তারা মাসুমকে ছেড়ে দেবে বলে আশ্বস্ত করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এরকম অনেকের কাছ থেকে তারা অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়ে লাভ কী? এতদিন হয়ে গেল আমার সন্তানকে খুঁজে বের করতে পারেনি। আমার বিশ্বাস একদিন না একদিন ছেলে আসবেই! মাসুম খুবই মেধাবী ছাত্র ছিল। পড়ালেখার পাশাপাশি সে টিউশনি করত। তার টাকা দিয়ে আমাদের সংসারও চলত। মাসুমের স্বপ্ন ছিল বুয়েটে পড়ার। কিন্তু বিনা অপরাধে সে আজ নিখোঁজ। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্তাদের কাছে অনুরোধ, আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দিন।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নিখোঁজের বিষয়ে তদন্তে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়েছে আমাদের সংগঠন থেকে। গুম বা নিখোঁজ হওয়া সব ব্যক্তিকে অবিলম্বে খুঁজে বের করে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া, এ সংক্রান্ত অভিযোগ দায়েরের জন্য একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা এবং তা ব্যাপকভাবে প্রচার করা, দায়ীদের বিচারের সম্মুখীন করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া, পরিবারের যথাযথ পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, গত তিন বছর ধরে নিখোঁজ বা গুমের সংখ্যা কমে এসেছে। তবে গত ১৪ বছরে সারা দেশে ৬৪৫ জন নিখোঁজ হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী। নির্বাচন কেন্দ্র করে সামনের দিনগুলোতে নিখোঁজের ঘটনা বাড়বে বলে আশঙ্কা করছি। গুমের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলোকে অস্বীকার না করে এ ধরনের ঘটনার বিচার নিশ্চিতে বিদ্যমান আইন কাঠামোতে পরিবর্তন আনা উচিত। পাশাপাশি নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তও করা উচিত।
মিরপুর এলাকার কাঠ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বাতেনের মেয়ে আনিসা ইসলাম জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে জুন মাসে বাবা নিখোঁজ হন। এরপর থেকে তার হদিস নেই। তিনি আর আসবেন কি না, তাও জানেন না। বেঁচে আছেন নাকি মরে গেছেন, কেউ বলতে পারছেন না। বাবার খোঁজ করতে করতে প্রতারকদের অন্তত ২ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। তারপরও বাবাকে ফিরে পাননি।
২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর সাজেদুল ইসলামসহ আটজন ঢাকার শাহীনবাগ এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, বিনা কারণে আমার ভাইকে গুম করে রাখা হয়েছে। কী অপরাধ করেছে তাও আজও জানতে পারলাম না। তবে আমার ভাইয়ের একটাই অপরাধ ছিল সে বিএনপির রাজনীতি করত। এখনো আমরা তাকিয়ে থাকি ভাইয়া ফিরে আসবে।
২০১০ সালের ২৪ মার্চ রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী সুজনকে সাদা পোশাকধারী লোকজন তাকে তুলে নিয়ে যায়। পুলিশ-র্যাবসহ প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে তার স্বজনরা। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল বনানী থেকে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ও তার গাড়িচালক আনসার আলীকে অপহরণ করে নেওয়া হয়। আজও তাদের সন্ধান মেলেনি। ২০১০ সালের ২৫ জুন ফার্মগেট থেকে আরেক বিএনপি নেতা চৌধুরী আলমকেও তুলে নেওয়ার অভিযোগ আছে। এখনো তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর নিখোঁজ হন খালিদ হাসান সোহেল। সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম হীরু, বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির পারভেজ, তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদল সভাপতি আমিনুল ইসলাম জাকির, জাহিদুল করিম তানভীর, পশ্চিম নাখালপাড়ার মাজহারুল ইসলাম রাসেল, মুগদাপাড়ার আসাদুজ্জামান রানা, উত্তর বাড্ডার আল-আমিন, বিমানবন্দর থানা ছাত্রদল নেতা আদনান চৌধুরী ও কাওসার আহমেদ, সবুজবাগের মাহাবুব হাসান, সম্রাট মোল্লা, জহিরুল ইসলাম, পারভেজ হোসেন, মো. সোহেল ও মো. সোহেল চঞ্চল, নিজাম উদ্দিন মুন্না, তরিকুল ইসলাম ঝন্টু, কাজী ফরহাদ, সেলিম রেজা পিন্টু, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন কুসুমসহ অনেকের সন্ধান এখনো মেলেনি।
মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নিখোঁজ ব্যক্তিরা কোথায় তা খুঁজে বের করা উচিত। এসব সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার যখন আমাদের কাছে আসে, তখন তাদের কোনো সান্ত¡নাই দিতে পারি না। সরকার এসব বিষয় গভীরে গিয়ে তদন্ত করে আসল রহস্য বের করবে তা আশা করছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারে সেটাই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে জনগণ ভালো পরিবেশে ভোট দিয়েছে, ভবিষ্যতে ভালোভাবে ভোট দিতে পারবে। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো চাপ নেই। জনগণ যাকে ভোট দেবে তারাই ক্ষমতায় আসবে।
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে চলা শ্রম আদালতের মামলার বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শতাধিক নোবলজয়ীসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তির পাঠানো চিঠি প্রসঙ্গেও কথা বলেন শেখ হাসিনা। ড. ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, নিজের প্রতি এত আত্মবিশ্বাস থাকলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়ান কেন? তাদের বিবৃতি না দিয়ে বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবী পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দলিল-দস্তাবেজ, কাগজপত্র ঘেঁটে দেখুন অন্যায় আছে কি না। এক্সপার্টরা দেখুক, অনেক কিছু পাবেন। সদ্য সমাপ্ত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের নতুন সদস্যপদ না পাওয়ার বিষয়ে শেখ হাসিনার স্পষ্ট বক্তব্য, এখনই ব্রিকসের সদস্যপদ পেতে হবে সেই ধরনের কোনো চিন্তা ছিল না। সদস্যপদ পেতে সেই ধরনের চেষ্টাও করা হয়নি।
দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দেওয়াসহ কোন কোন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন, কার কার সঙ্গে বৈঠক করেছেন, সফরের অর্জন কী এসব নিয়ে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এরপরই সাংবাদিকদের জন্য প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হয়। এ সময় তিনি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সিন্ডিকেটের ভূমিকা ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও প্রশ্নের জবাব দেন।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন : অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অংশগ্রহণ বলতে কাদের অংশগ্রহণ? যারা দুর্নীতিবাজ, খুনি, ভোট চোর, ভোট ডাকাত, গ্রেনেড হামলাকারী, জাতির পিতার হত্যাকারী, যুদ্ধাপরাধী তাদের অশংগ্রহণ? এটা কি জনগণ চায়? তারা অংশগ্রহণ করলেই নির্বাচন বৈধ হবে, অন্য কেউ করলে হবে না, এটা তো হতে পারে না। কারণ তাদের প্রতি রয়েছে মানুষের ঘৃণা।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘এটা মাথায় রাখতে হবে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ৩০টি সিট পেয়েছিল। তারপর থেকে বিএনপি তো ইলেকশন করে না। তারা শুধু বাণিজ্য করে, নমিনেশন বেচে। কিছু টাকা গুলশান অফিস পাবে, পুরানা পল্টন পাবে আর মোটা অঙ্কের টাকা যাবে লন্ডনে। এই তো তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিজেরাই নির্বাচনে গণ্ডগোল করবে, মারামারি করবে আর বলবে ইলেকশন করতে পারলাম না। বর্জন করলাম।’
বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশে যখন গেলাম, যার সঙ্গে দেখা হয়েছে বলে, কী করে বাংলাদেশ এত উন্নতি করল? আর দেশের এরা এটা বলে না। তারা পরশ্রীকাতরতায় ভোগে। আমি ওটা নিয়ে চিন্তা করি না। যতক্ষণ আছি, দেশের জন্য কাজ করে যাব।’
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা : প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। সবকিছুই আইনমতো চলে। কেউ যদি ট্যাক্স না দেয় আর যদি শ্রমিকের অর্থ আত্মসাৎ করে, শ্রমিকদের পক্ষ থেকে যদি মামলা করা হয়... আমাদের কি সেখানে হাত আছে, যে মামলা বন্ধ করে দেব? মামলা তো আমরা করিনি। এনবিআর থেকে আয়কর ফাঁকির মামলা করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত লেবাররা মামলা করেছেন।’
সরকারপ্রধান বলেন, দুর্নীতি খুঁজে বেড়াচ্ছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান করতে বলেছেন, কিন্তু দুর্নীতিবাজ পছন্দের লোক হলে আবার এগুলো নিয়ে কথা আসছে কেন? আইন তো তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
নোবেলজয়ী বলে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না এমন প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীতে এমন বহু নোবেল বিজয়ী আছেন, পরবর্তী সময়ে তাদের কাজের জন্য কারাগারে আছেন (যেতে হয়েছে)।
বিবৃতির ফলে আদালত প্রভাবিত হবে কি না, স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, পারবে না কেন? আদালত স্বাধীনভাবে চলবে। ভয় পেলে চলবে না। শ্রমিকদের পাওনা তাদের দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘এখন যদি জিজ্ঞেস করি, গ্রামীণ ব্যাংক কিন্তু সরকারি (নিয়মে চলে)। ড. ইউনূস তার এমডি। তাহলে সরকারি বেতনভুক একজন এমডি কীভাবে বিদেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেন? কীভাবে তিনি এগুলো করেন?’
প্রসঙ্গত, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে চলা শ্রম আদালতের মামলার বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন শতাধিক নোবলজয়ীসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
ব্রিকস সদস্যপদ : ব্রিকসের সদস্যপদ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন, সদস্যপদ চাইলে পাব না সেই অবস্থাটা নেই। প্রত্যেকটা কাজের একটা নিয়ম থাকে। আমরা সেই নিয়ম মেনেই চলি। আমরা কাউকে বলতে যাইনি আমাদের এখনই সদস্য করেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেখানে তো আমার সব রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধানের সঙ্গে দেখা হয়েছে। কথা হয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট, ইন্ডিয়ার প্রাইম মিনিস্টার থেকে শুরু করে সবার সঙ্গে। লাঞ্চের সময় ব্রাজিল ও সাউথ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট, নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও জাতিসংঘের মহাসচিব আমার পাশে ছিলেন। ওই সময় আলোচনা হয় যে, আমরা এই কয়জন নেব। এরপর ধাপে ধাপে সদস্যপদ বাড়াবে।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে আমার দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো, আমাকে আমন্ত্রণ জানালেন ব্রিকস সম্মেলন করবেন। আমাকে আসতে বললেন এবং তখন আমাকে এও বললেন, তারা কিছু সদস্যপদ বাড়াবেন। সেই বিষয়ে আমার মতামতও জানতে চাইলেন। আমি বললাম এটা খুবই ভালো হবে।’
ব্রিকসের ব্যাংক নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে যোগদানের বিষয়ে বাংলাদেশ আগে থেকেই আগ্রহী ছিল বলে উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
ব্রিকস নিয়ে বিরোধী দলের বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘জানি যে এই প্রশ্নটা আসবে। বাংলাদেশ কিছু চেয়ে পাবে না, এটা কিন্তু ঠিক নয়। অন্তত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমরা তো দেশের মর্যাদাটা তুলে ধরেছি। সেখানে আমাদের সেই সুযোগটা আছে। তারা বলতে পারে কারণ বিএনপির আমলে ওটাই ছিল। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের কোনো অবস্থানই ছিল না। সেই সময় বাংলাদেশ মানে ছিল দুর্ভিক্ষের দেশ, ঝড়ের দেশ, ভিক্ষার দেশ। হাত পেতে চলার দেশ। এখন সবাই জানে, বাংলাদেশ ভিক্ষা চাওয়ার দেশ নয়।’
এ সফরের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে গেছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বর্তমান স্যাংশন ও কাউন্টার স্যাংশনের এ যুগে এই সফরের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণসহ বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক দক্ষিণের অবস্থানকারী দেশগুলোর ওপর আরোপিত কৃত্রিম সিদ্ধান্ত এবং বিভাজনের নীতিকে না বলার এখন উপযুক্ত সময়। সর্বজনীন নিয়ম ও মূল্যবোধকে অস্ত্রে পরিণত করার প্রচেষ্টাকে আমাদের অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করতে হবে। আমাদের নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার চক্র বন্ধ করতে হবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘দক্ষিণের দেশগুলোর ওপর আরোপিত কৃত্রিম সিদ্ধান্তের কারণে আমরা আর ক্ষতিগ্রস্ত হতে রাজি নই। সর্বজনীন নিয়মের নামে আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া অসমনীতিকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য আমি দক্ষিণের দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েছি।’
বাজারের সিন্ডিকেট : দেশে সিন্ডিকেট করে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কে কত বড় শক্তিশালী আমি দেখব। সিন্ডিকেট ভাঙা যাবে না এটা কোনো কথা নয়। সিন্ডিকেট ভাঙা যাবে না এমন কিছু বাণিজ্যমন্ত্রী বললে তাকে আমি ধরব।’ এ সময় নিত্যপণ্যের সিন্ডিকেট প্রতিরোধে পণ্য সরবরাহ ও সংরক্ষণে বিকল্প পদ্ধতি নেওয়ার কথা জানান তিনি। এ ক্ষেত্রে বাড়িতে শাকসবজি উৎপাদন ও সেগুলো নিজেরাই সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী।
দাম বাড়া প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, ‘কিছুদিন আগে ডিমের দাম বাড়ল। ডিম সেদ্ধ করে রেখে দিলে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। পরে (দাম বাড়লে) সেগুলো ভর্তা করে বা রান্না করে খাওয়া যায়।’
সর্বজনীন পেনশন নিয়ে অপপ্রচার : সর্বজনীন পেনশন নিয়ে অপপ্রচার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিমের টাকা নিয়ে ইলেকশন ফান্ড গঠন করতে হবে আওয়ামী লীগ এত দীনতায় পড়েনি। সাধারণ মানুষ নিজের খেয়ে নৌকায় ভোট দেয়, এটাই হলো বাস্তবতা। তিনি বলেন, সরকারি কর্মচারীরা পেনশন পান। কিন্তু বেসরকারি চাকরিজীবী বা সাধারণ মানুষ পেনশন পায় না। তাদের কথা চিন্তা করেই এটা করা হয়েছে। পেনশন স্কিমে স্পষ্ট বলা হয়েছে, এই স্কিমে এখন যে টাকা রাখবে পরবর্তীকালে নির্দিষ্ট বয়সসীমার পর সে টাকা পাবেন। অথবা মাঝখানে কেউ তুলে নিতে চাইলে সেটাও নিতে পারবে।
সবাই সবকিছু সহজে ভুলে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পেনশন স্কিমটি আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল, এখন সেটি বাস্তবায়ন করছি। এটা আওয়ামী লীগ সরকারের জনকল্যাণমুখী কাজ। যারা পরশ্রীকাতর, সবসময় অন্যের দোষ খোঁজে, হতাশায় ভোগে, তারাই ভালো কাজের নেতিবাচক প্রচারণা চালায়।’ জনগণকে এসব মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী।
মৌলভীবাজারের লাঠিটিলা পুরোটাই বন। এখানে নানান প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বসবাস। আছে বিরল প্রজাতিও। ভারত সীমান্তের এ বনে নির্দ্বিধায় বেঁচে থাকে তারা। কিন্তু বন্যপ্রাণীদের এ নিরবচ্ছিন্ন পথচলায় বাধা তৈরি করে মানুষের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই বনের ৫ হাজার ৬৩১ একর এলাকায় হবে সাফারি পার্ক। এতে ৩ হাজার মিটার অভ্যন্তরীণ বাউন্ডারি, ৩ হাজার বর্গমিটারে গাড়ি পার্কিং, ১ হাজার ৫৮৮ বর্গমিটারে প্রাণী হাসপাতাল ভবন, ৪ হাজার মিটারের সীমানাপ্রাচীরসহ নানা অবকাঠামো হবে। যে বন অধিদপ্তরের দায়িত্ব বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করা, সেই অধিদপ্তরই শুধু ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করার উদ্যোগ নিয়েছে।
সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে ‘বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, মৌলভীবাজার, প্রথম পর্যায়’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি পাঁচ বছরে তিন পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হবে। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ২৫ কোটি টাকা। প্রথম পর্যায়ের এ প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৮২ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, লাঠিটিলার চিরসবুজ বনভূমিকে দখলমুক্ত করে বন্যপ্রাণীর বসবাস উপযোগী প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করা। অথচ প্রকল্পের মূল কার্যক্রমগুলোর একটি হলো ৪ হাজার মিটারের বাউন্ডারি ওয়াল ও ৩ হাজার মিটারের অভ্যন্তরীণ বাউন্ডারি তৈরি করা। এ ছাড়া চিত্তবিনোদনের জন্য বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ তো আছেই। প্রশ্ন উঠেছে, বাউন্ডারির ভেতরে এত মানুষের চলাচল ও অবকাঠামোর মধ্যে বন্যপ্রাণী অবাধে বিচরণ করবে কীভাবে? বাস্তুতন্ত্র স্বাভাবিকভাবে চলবে কীভাবে? লাঠিটিলা নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করা প্রাণীবিদরা বলছেন, এ এলাকার বন ধ্বংস হওয়ার শুরু এখন থেকে নয়। আরও আগে থেকেই বন সংরক্ষণকর্মীরা সেখানে বসতি গড়েছেন, সেখানে এখন ৩ শতাধিক ঘরবাড়ি হয়েছে। সবগুলোই বনের জায়গা। সরকারের উচিত ছিল বনে সাফারি পার্ক তো নয়ই; বরং সেখানে যেসব মানুষ বসবাস করছে, তাদের উচ্ছেদ করা।
গবেষণা বলছে, দেশের উত্তর-পূর্ব বনাঞ্চলে ৩৬টি ভিন্ন পরিবারের ১২৬টি স্থলজ স্তন্যপায়ী প্রাণীর তথ্য মিলেছে। গত দুই বছরে এই অঞ্চলে ব্যাঙের দুটি নতুন প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। ২০২১ সালে ক্যামেরায় ছোট নখযুক্ত ভোঁদড় (বিশ্বব্যাপী ঝুঁকিতে) ধরা পড়েছে। ঢোল বা বন্য কুকুর (বিশ্বব্যাপী বিপন্ন) এবং কালো ভালুক, সোনালি বিড়াল ও হগ ব্যাজার নামের এক প্রজাতির শূকরের (বিশ্বব্যাপী ঝুঁকিতে থাকা এই তিন প্রজাতি) উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এই বন নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করে আসছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ আজিজ। তার মতে, এখন যেখানে সাফারি পার্ক করার কথা বলা হচ্ছে, সেখানে মানুষের বসবাস বেড়ে গেছে। প্রতিনিয়ত সেখানে ঘরবাড়ি হচ্ছে, পাকা বিল্ডিংও করা হচ্ছে। প্রাণী যা ছিল তা আগেই বন ছেড়ে চলে গেছে। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘যেহেতু সেখানে অবৈধভাবে ঘরবাড়ি হয়ে গেছে, সেখানে বন্যপ্রাণীর আসা-যাওয়া খুব কম। আমি কখনোই চাই না কোনো প্রাণী বন্দিদশায় থাকুক। আমাদের ইতিমধ্যে দুইটা সাফারি পার্ক আছে, বিভিন্ন চিড়িয়াখানা আছে। সেখানে নানান ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। সেগুলোর ব্যবস্থাপনা ভালো নয়, প্রাণীর প্রতি যে আচরণ করা দরকার তা করতে না পারায় একপর্যায়ে প্রাণী মারা যায়। বন্দিদশায় বন্যপ্রাণী রেখে আনন্দ পাওয়ার দিন শেষ। আর সাফারি পার্ক হলে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ হবে না, শুধু বিনোদন হবে।’
তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, সরকার সেখানে সাফারি পার্কও করার দরকার নেই, মানুষের বসবাসের সুযোগ দেওয়ারও দরকার নেই, সেখানে মানুষের বসবাসের ব্যবস্থাপনা কমিয়ে তাদের পুনর্বাসন করা দরকার।
এই প্রকল্পের যখন সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়, তখন এর বিরোধিতা করে আন্দোলন করেছিল পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। লাঠিটিলার মতো উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্যপূর্ণ সংরক্ষিত বনে সাফারি পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনার বিপক্ষে পরিবেশকর্মীরা দাবি করেছিরেন, লাঠিটিলা একটি সংরক্ষিত বনভূমি। এখানে কেবল সাফারি পার্কই নয়, কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণেরই সুযোগ নেই। এখানে সাফারি পার্ক করা হলে বনের উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্য শুধু ক্ষতিগ্রস্তই হবে না, অনেক বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী হারিয়ে যাবে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, নির্মাণকাজের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত ড্রইং বা ডিজাইন ডিপিপিতে সংযুক্ত করা হয়নি। সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকা অনুযায়ী নির্মাণকাজের অনুমোদিত স্থাপত্য নকশা, প্রয়োজনীয় অন্যান্য ডিজাইন এবং প্রাসঙ্গিক বিষয় বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনাপূর্বক প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলন চূড়ান্ত করা প্রয়োজন।
তারা বলছেন, প্রকল্পটি গ্রহণের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পাদন করা হয়েছে, কিন্তু সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকা অনুযায়ী নির্ধারিত ছকে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার প্রণয়ন করে ডিপিপিতে সংযুক্ত করা হয়নি।
এর আগে গত বছরের জুনে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল সার্ভিসেস লিমিটেড (বিইটিএস) সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক করার পক্ষে মতামত দিয়েছে। বিইটিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক করা অযৌক্তিক হবে না।
এই প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ৫ হাজার ৬৩১ একর এলাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বনভূমি সুরক্ষা করে একটি আন্তর্জাতিক মানের সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠা করা। এ ছাড়া ২৭০ একর এলাকায় কোর সাফারি পার্ক ও সাফারি কিংডম স্থাপন করা; বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর জন্য বিভিন্ন মাংসাশী ও তৃণভোজী প্রাণীর জন্য পরিবেশবান্ধব বেষ্টনী নির্মাণ করা; কোর সাফারি ও সাফারি কিংডম এলাকার বাইরে লাঠিটিলার সমৃদ্ধ চিরসবুজ বনভূমিকে জবরদখলমুক্ত করে বন্যপ্রাণী, বিশেষ করে হাতি, মেছোবিড়াল, বনরুই, খাটোলেজি বানর, আসামি বানর, গন্ধগকুল, মায়া হরিণ, চশমাপরা হনুমান, ভালুক, শজারু ইত্যাদির বসবাস উপযোগী প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করে বায়োডাইভার্সিটি পার্ক স্থাপন।
এ ছাড়া বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করা; অসহায় এতিম ও উদ্ধারকৃত মহা-বিপন্ন হাতি চিকিৎসা ও সেবা প্রদানের মাধ্যমে ৮ একর এলাকায় হাতি উদ্ধার কেন্দ্র স্থাপন করা; ২৫ হেক্টর এলাকায় চারণভূমি স্থাপন; বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ প্রজাতির সংরক্ষণের জন্য ২৫ হাজারটি চারা রোপণের কার্যক্রমও রয়েছে এ প্রকল্পে।
মৌলভীবাজারের বন কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক মোহাম্মদ নাজমুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে বন কেটে সাফারি পার্ক করা হচ্ছে। কিন্তু মূল জায়গায় বনটি বনের জায়গাতেই থাকবে। আর কোর সাফারি পার্ক বলা হচ্ছে। কারণ সেটি রিজার্ভ ফরেস্টের ভেতরেই হচ্ছে। তবে পুরোটাই বন এলাকা। তিনি বলেন, যে জায়গাটি সাফারি পার্কের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানে এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যাতে গাছ কাটতে না হয়।
কিন্তু প্রকল্পের ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রকল্পের জন্য প্রায় কোটি টাকা ব্যয় হবে শুধু কাটার নিয়োগের জন্যই। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দুই ধাপে ২৬ জন বৈদ্যুতিক কাটার নিয়োগের জন্য ৬৪ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এ ছাড়া কাটারের বাকি ব্যয়গুলোর মধ্যে ঘাস কাটার ও তিন ধরনের ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ধরনগুলো স্পষ্ট করা হয়নি।
এই প্রকল্পে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের যেসব ব্যয়ের সুপারিশ করা হয়েছিল তার ধারেকাছেই নেই ডিপিপির ব্যয়। যেমন সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সুপারিশ করা হয়েছিল ৩ ধাপে বিদ্যুৎ ব্যয় প্রয়োজন হবে ২০ লাখ টাকা, কিন্তু ধরা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। সুপারিশে ছিল তিন ধাপে পেট্রোল খরচ হবে ১৫ লাখ টাকা, কিন্তু ডিপিপিতে তা ধরা হয়েছে ৪০ লাখ টাকা। তা ছাড়া সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বন্যপ্রাণীর খাদ্য সরবরাহের জন্য ব্যয়ের সুপারিশ ছিল ১ কোটি টাকা, কিন্তু ডিপিপিতে তা ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
এই প্রকল্প প্রস্তাবে কিছু ব্যয় অস্বাভাবিক দেখা গেছে। যেমন একজন ব্যক্তির জন্য বৈদেশিক প্রশিক্ষণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ লাখ টাকা, আরেক ব্যক্তির জন্য অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। শুধু দুই ধাপে দুজনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
প্রথম ধাপের এই প্রকল্পে ১৬৬ জন আউটসোর্সিংয়ের জন্য ব্যয় হবে ২২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ওই এলাকার ৩৫টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পুনর্বাসন ও স্থানান্তরের জন্য প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
এই প্রকল্পের জন্য দুই ধাপে পরামর্শক ব্যয় ধরা হয়েছে। ব্যবস্থাপনা ইউনিটের জন্য ২৪০ জনের পরামর্শক সেবা নেওয়া হবে। এতে ব্যয় হবে ৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আবার নকশা পর্যালোচনার জন্য পরামর্শক সেবার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
অধ্যাপক এম এ আজিজ বলেন, যে জায়গায় সাফারি পার্কের প্রস্তাব করা হয়েছে, সেখানে প্রায় ৩০০ মানুষের ঘরবাড়ি আছে। যারা সেখানে থাকছেন তারা একসময় ফরেস্ট ভিলেজার ছিলেন। যারা একসময় বন বিভাগকে সহযোগিতা করতেন, সেখানে এখন সত্যিকারার্থে বন বলতে যা বোঝায়, এখন তা আর নেই।
সরকার পতনের এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনের মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির স্থায়ী কমিটির একাধিক জ্যেষ্ঠ সদস্য সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। সেখানে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেতাদের বৈঠকের গুঞ্জন ছড়িয়েছে রাজনীতিতে। বিএনপি নেতারা সিঙ্গাপুরে থাকাবস্থায় জাতীয় পার্টির এক শীর্ষ নেতা সিঙ্গাপুরে গেছেন, যিনি বিগত কয়েক মাস ধরে সরকারবিরোধী নানা বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এর আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ভারত সফর করে এসেছেন। ফলে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির ওই নেতার বৈঠকের গুঞ্জন ডালপালা ছড়াচ্ছে।
এমনও গুজব ছড়িয়েছে যে, বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে আগামীতে যে সরকার আসতে যাচ্ছে, সে সরকারে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা জিএম কাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে ভারত সরকার তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সরকারের ভিত কাঁপাতে বিএনপি-জাতীয় পার্টির এ যৌথ ‘বিদেশ মিশন’ এমন গুজবও রয়েছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের কয়েকজন কথা বললেও বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না সরকার।
অবশ্য বিএনপি নেতারা বলছেন, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রাজপথে রাজনৈতিক কর্মসূচিকেন্দ্রিক ব্যস্ততা বাড়বে। এরই ফাঁকে জ্যেষ্ঠ নেতারা আগেভাগেই শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিতে চান। এ কারণেই নেতাদের সিঙ্গাপুর-যাত্রা।
এর বাইরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আরও গুঞ্জন রয়েছে যে, সিঙ্গাপুরে তারেক রহমানের বিশেষ প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করবেন সেখানে চিকিৎসার জন্য যাওয়া বিএনপি নেতারা। এমনও গুঞ্জন চলছে যে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমানের সঙ্গে বিএনপি নেতারা বৈঠক করছেন।
আপাতত এসব গুঞ্জন চললেও হয়তো সময়ের ব্যবধানে পরিষ্কার হবে বিএনপির বৈঠকের গুঞ্জন ‘নেতাদের সিঙ্গাপুর গমন স্রেফ চিকিৎসা নাকি কোনো ষড়যন্ত্রের মিশন’।
গত ২৪ আগস্ট চিকিৎসার জন্য মির্জা ফখরুল তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম ও তার ছোট মেয়েসহ সিঙ্গাপুরে যান। সেখানে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে তার চিকিৎসা হয়। সিঙ্গাপুরের র্যাফেলস হাসপাতালে রাহাত আরা বেগমের অস্ত্রোপচার হয়েছিল। ফলোআপের জন্য তাকেও ওই হাসপাতালে যেতে হয়।
এরপর ২৬ আগস্ট সিঙ্গাপুরে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। তার আগে হঠাৎ করে মস্তিষ্কে টিউমার ধরা পড়ায় গত ২৭ জুন সিঙ্গাপুর যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সেখানে তার অস্ত্রোপচার হয়েছে। এখন চলছে রেডিওথেরাপি। সবার আগে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যান স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। সেখান থেকে লন্ডন হয়ে বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন তিনি। তার চিকিৎসা চলমান থাকায় আপাতত দেশে ফেরার সম্ভাবনা খুবই কম।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির সদস্য আবদুল আউয়াল মিন্টু বর্তমানে থাইল্যান্ডে অবস্থান করছেন। দলের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা চেকআপের জন্য সিঙ্গাপুরে যাওয়ার পর গুঞ্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে ফোনে দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘মানুষের অসুস্থতা ও চিকিৎসা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যা করছে তা নোংরামি ও অপকৌশল। খুন, গুম, হামলা, মামলা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পর এখন সরকার বিএনপি নেতাদের চরিত্র হননে নেমেছে।’
ভারতের ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে মিন্টু বলেন, ‘এখন পুরো বিশ্ব হাতের মুঠোয়। আমরা যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করি তার মাধ্যমে সারা বিশে^র সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব। এজন্য বিদেশে যেতে হয় না। দেশে বসেই ভার্চুয়ালি আলোচনা করা সম্ভব। তাছাড়া ভারতসহ বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ঢাকায় অফিস রয়েছে। তাদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত বৈঠক হয়। তারা তাদের সরকারের হয়ে বিএনপির মনোভাব জানতে চান। আমরা তাদের সর্বশেষ পরিস্থিতি অবহিত করি। বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো আগামী নির্বাচন নিয়ে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন স্পষ্টভাবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হয়ে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষাকারী প্রবাসী বিএনপির এক নেতা ফোনে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আলোচনা হতেই পারে। কিন্তু আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভারত তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। তাই তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ কিংবা জাতীয় পার্টির মতো বিদেশে বৈঠক করার প্রয়োজন নেই। তাছাড়া ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার রয়েছেন। আগামী নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থানের বিষয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বিএনপি নেতাদের দাওয়াত দিয়ে পরিষ্কার করেছেন।’
এরই মধ্যে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আজকে বিএনপি নেতারা দল বেঁধে গেছেন সিঙ্গাপুরে। আবার শুনেছি জাতীয় পার্টির এক গ্রুপও গেছে। ভালো, আলাপ-আলোচনা করুক। রাজনৈতিক আলোচনা দেশে হোক, বিদেশে হোক করবে এটা তাদের অধিকার। তবে ২০১৩-১৪ সালের মতো আগুন নিয়ে বাস পোড়ানো, মানুষ পোড়ানো, রাস্তা পোড়ানো, গাছ পোড়ানো এ রাজনীতি থেকে বিরত থাকুন।’ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি নেতারা কি আদৌ চিকিৎসা নিতে গেলেন নাকি আবার কোনো ষড়যন্ত্র করতে একসঙ্গে সিঙ্গাপুর গেলেন এটি এখন অনেকের প্রশ্ন।
আওয়ামী লীগের দুই নেতার এ বক্তব্যের জবাবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ গত ১৪ বছর ধরে বিরোধী নেতাকর্মীদের খুন, গুম, হামলা, মামলাসহ নানা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছে। এখন অসুস্থ নেতাদের চরিত্র হননে নেমেছে। আমি নিজেও অসুস্থ। গত কয়েক দিন আগে ভারতে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলাম সস্ত্রীক।’ সরকার শিগগিরই মিথ্যাবাদী রাখালের পরিণতি ভোগ করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
‘সিঙ্গাপুরে জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক হয়েছে’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এমন মন্তব্যের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উনি যদি জেনেই থাকেন সিঙ্গাপুরে জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে; তাহলে কখন, কোথায়, কার কার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে তা স্পষ্ট করুক। ছবি প্রকাশ করুক।’
এদিকে মুজিবুল হক চুন্নুসহ জাতীয় পার্টির দুই নেতা সিঙ্গাপুর গেছেন। সেখানে তাদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক হয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলছেন, চুন্নু সস্ত্রীক থাইল্যান্ড গিয়েছিলেন। সোমবার তিনি চলে এসেছেন। অবশ্য এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করে চুন্নুর বক্তব্য জানা যায়নি।
সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির কূটনৈতিক সম্পর্ক এখনো এত শক্তিশালী হয়ে ওঠেনি যে, চাইলেই সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দিতে পারবে। কূটনীতি বোঝা ও বিদেশ লবি মেইনটেইন করার নেতারও অভাব রয়েছে দল দুটিতে। তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাতারাতি পরিস্থিতি বদলে দিতে পারে যে কেউ, সেই দুর্বল পরিস্থিতিতেও নেই সরকার। তারা মনে করেন, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির বিদেশ সফর ঘিরে মূলত বিভিন্ন মহল গুজব ছড়ানোর কৌশল গ্রহণ করেছে। দল দুটির বিদেশ সফর এর বাইরে আর কিছুই নয়।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, সরকারবিরোধী সব মহলের কর্মকা-ের ওপর সরকারের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভারত সফর নিয়ে দলটির গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে এসে সফরসংক্রান্ত কোনো আলোচনা রাজনৈতিক সহকর্মীদের সঙ্গে করেননি কাদের। তবে তাকে যে মুডে দেখা যাচ্ছে তাতে তিনি যে খুবই ভালো মেজাজে আছেন সেটা বোঝা যায়।
দলটির ওই নেতারা বলেন, তারা যতটা বুঝতে পারছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও জাতীয় পার্টির অবস্থান নিয়ে ভারত সরকারের প্রতিনিধির সঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে জিএম কাদের এ নিশ্চয়তা দিয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সরকারের যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, সেটা ভারত সরকারকে অবহিত করেছেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের ভারত সফর সম্পর্কে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারাও মনে করেন, প্রতিবেশী দেশের সরকার বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতেই জিএম কাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। পাশাপাশি সংসদের বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে ভারত পরামর্শ দিয়েছে তাকে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জাতীয় পার্টিকে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতেও পরামর্শ দিয়েছে ভারত সরকার। তিনি বলেন, এটি সরকারের জন্য ইতিবাচক।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেকোনো দলের নেতা বিদেশ সফরে যেতেই পারেন। তবে সব সফরই যে অর্থবহ, এটা আমি মানি না। ফলে কারা কোথায় গেল তা নিয়ে সরকার ততটা কৌতূহলী বলে মনে করি না।’
তিনি বলেন, ‘সরকার তো এত দুর্বল নয় যে, কেউ বিদেশ গেল আর দেশে ফিরে সব ওলটপালট করে দিল। বিএনপির নেতাদের সিঙ্গাপুর সফর ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের ভারত সফর কোনোটাকে গুরুত্বপূর্ণ সফর ভাবে না আওয়ামী লীগ।’
দলটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ সফর কেন, কী, কিছুই জানি না। জানতে চাইও না।’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ছয়টি প্রস্তাব দিয়েছেন। একই সঙ্গে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করতে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে গণফোরামের উদ্যোগে ‘গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় আসুন ঐক্যবদ্ধ হই’ শীর্ষক সে্লাগানে দলের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ড. কামাল তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, ‘৩০ বছর ধরে আমরা এই সংগঠন চালিয়ে আসছি। আজকে জনগণের ঐক্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। আমার একটাই আবেদন, আজকে আমরা জাতীয় ঐক্যের জন্য সবাই একত্রে কাজ করি। ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারব। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই।’
সভাপতির লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘২০১৪ সালে ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন হয়েছে। ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়েছে। এ অবস্থায় আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জাতি চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। সংবিধানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। জনগণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তার ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকার গঠন করতে চায়। অথচ এই স্বাধীন রাষ্ট্রে জনগণের মৌলিক ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আজ সংগ্রাম করতে হচ্ছে, যা খুবই দুঃখজনক।’
তিনি বলেন, ‘জাতির জন্য আজকে সবচেয়ে বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে গণতন্ত্রহীনতা। বাংলাদেশের জন্মের মূল কথা ছিল গণতন্ত্র। কিন্তু এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্র কায়েমি স্বার্থে তা আজ বিপন্ন। এজন্য সামরিক শাসকদের দ্বারা গণতন্ত্র ধ্বংসের কর্মযজ্ঞ কম দেয় নাই। তবে মানুষ আশা করেছিল দেশের সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থা ফিরে আসবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে জাতি লক্ষ করল দেশে গণতন্ত্র না বরং “বলতন্ত্র” কায়েম হয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর মানুষ আশায় বুক বাঁধে। কিন্তু এবারও হতাশ হয়। প্রায় ১৫ বছরে দেশবাসী ক্রমহ্রাসমান গণতন্ত্র প্রত্যক্ষ করছে।’
সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে গণফোরাম যে ৬ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন সেগুলো হলো ১. একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন করা; ২. গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা; ৩. নির্বাচন সামনে রেখে বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্র, ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সব রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে বাধা না দেওয়া; ৪. নির্বাচনে লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে নির্বাচনকালীন সরকার বাধ্য থাকবে; ৫. বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা এবং ৬. নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
সভাপতির বক্তব্যের শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনী সংঘাত থেকে বের হয়ে আসার জন্য আমি এই ৬ দফা প্রস্তাব করছি।’
এর আগে বেলা ১১টার দিকে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। গণফোরামের সঙ্গে থাকার জন্য উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান ড. কামাল হোসেন। এর আগে সভাপতির লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।
স্বাগত বক্তব্যে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘৩০ বছর আগে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, কালো টাকা ও রুগ্ণ রাজনীতির বিপরীতে একটি সুস্থ ধারার রাজনীতির জন্য গণফোরাম সৃষ্টি হয়েছিল। গণফোরাম থেকে বেরিয়ে অনেক নেতা সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু ক্ষমতার প্রশ্নে ড. কামাল হোসেন কখনো আপস করেননি।’
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, ‘দেশে অসুস্থ ধারার রাজনীতি চালু হয়েছে। সারা বিশ্বের মানুষ ড. ইউনূস ও ড. কামাল হোসেনকে শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু আমাদের দেশে তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হয়।’ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বীর-প্রতীক বলেন, ‘যে গণতন্ত্রের জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, আজকে দেশে সেই গণতন্ত্র নেই।’
উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. মাহফুজুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ শাহ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান জাহাঙ্গীর, যুব ফোরামের নেতা সাইফুল ইসলাম সজল, প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, মোস্তাক আহমেদ, সভাপতি পরিষদের সদস্য মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, সভাপতি পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট এসএম আলতাফ হোসেন, মফিজুল ইসলাম খান কামাল প্রমুখ।
অনেক নাটকীয়তা ও কাদা ছোড়াছুড়ির পর আজ থেকে মাঠে গড়াচ্ছে ১৬তম এশিয়া কাপ।
প্রথমবারের মতো এই আসর হচ্ছে দুই দেশে। ১৯৮৪ সালে প্রথম আসরের পর প্রতিবারই এক দেশে আয়োজিত হয়েছিল টুর্নামেন্টটি। এবার ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতায় কাদা ছোড়াছুড়ির পর এশিয়া কাপ হচ্ছে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায়। এতে করে ২০০৮ সালে সবশেষ এশিয়া কাপ আয়োজনের পর এই প্রথম টুর্নামেন্টের আয়োজক হতে পেরেছে পাকিস্তান। এতদিনে এই প্রথম কোনো বহুজাতিক আসর বসছে দেশটিতে। এদিকে এই আসর দিয়েই এশিয়া কাপে পা রেখে ইতিহাস গড়েছে নেপাল। টুর্নামেন্ট অভিষিক্তরাই আজ উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে পাকিস্তানের বিপক্ষে। মুলতানে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সাড়ে ৩টায়।
এক যুগের বেশি সময় পর এশিয়া কাপ আয়োজক হওয়ায় পাকিস্তান উদ্বোধনী অনুষ্ঠান রেখেছে আজ। এমনিতে এশিয়া কাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয় না। এই অনুষ্ঠানে বিকাল ৩টায় সংগীত পরিবেশন করবেন অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গাইবেন খ্যাতিমান পাকিস্তানি গায়ক আতিফ আসলামও। এ ছাড়া আতশবাজি, পাকিস্তানি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও থাকবে।
আসরে সর্বোচ্চ সাতবারের জয়ী ভারত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছয়বার শিরোপা জিতেছে শ্রীলঙ্কা। আর পাকিস্তান জিতেছে মাত্র দুবার। বাংলাদেশ ২০১২, ২০১৬ (টি-টোয়েন্টি) ও ২০১৮ সালে ফাইনাল খেলেছিল। তিনবারই শিরোপা হারানোর হতাশায় থামতে হয়েছে। এই আসর সব দলের জন্যই আলাদা রকম চ্যালেঞ্জের। আর ৩৬ দিন পর ওয়ানডে বিশ্বকাপ থাকায় এবারের এশিয়া কাপ হয়ে উঠেছে দলগুলোর জন্য প্রস্তুতির মঞ্চ। যেখানে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব পাওয়ার চেয়ে বিশ্বকাপের জন্য তৈরি হওয়াটা মুখ্য।
এমন আসরের আগে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা আছে সবচেয়ে বিপদে। দলটি কাল এশিয়া কাপের তালিকা দিয়েছে সেরা ক্রিকেটারদের ছাড়াই। তার কারণ ইনজুরি। ভারতও ইনজুরির কারণে লোকেশ রাহুলকে দুই ম্যাচের জন্য পাচ্ছে না। বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটার লিটন দাস জ্বরের জন্য নেই প্রথম ম্যাচে। একমাত্র পাকিস্তান ও নেপাল পুরো দল নিয়ে নামতে পারছে ইনজুরি বিঘিœত এশিয়া কাপে।
ভারত-পাকিস্তানের বৈরী রাজনীতির জন্য এবার দলগুলোতে দুই দেশে ম্যাচ খেলতে হবে। পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপালকে গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলো খেলতে হবে দুই দেশে। শুধু আফগানিস্তান ও ভারত এক দেশে খেলার সুযোগ পাচ্ছে গ্রুপ পর্ব। গ্রুপ পর্ব শেষে আফগানদের পাকিস্তান থেকে চলে আসতে হবে শ্রীলঙ্কায়। তখন শুধু ভারতই এক দেশে খেলার সুযোগ পাচ্ছে। তাই ভারত ছাড়া বাকি সব দলেরই ভ্রমণ ক্লান্তির সঙ্গে লড়তে হবে।
বি গ্রুপে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচ খেলবে ৩১ আগস্ট শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাল্লেকেলেতে। আফগানদের সঙ্গে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে সাকিবদের লাহোর যেতে হবে ৩ সেপ্টেম্বর। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে থাকলে শ্রীলঙ্কাতে সুপার ফোর পর্বের ম্যাচ খেলতে আবার ফিরতে হবে বাংলাদেশকে। আর গ্রুপে দ্বিতীয় হলে পাকিস্তানের লাহোরেই হবে সুপার ফোরে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ। এরপর আবার শ্রীলঙ্কায় ফিরতে হবে সাকিবদের।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।
প্রাচীন সময় থেকে মানুষের খাদ্যতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে চীজ বা পনির। গরুর দুধের তৈরি পনিরে শরীরকে সুস্থ রাখার প্রয়োজনীয় সব উপাদান পাওয়া যায়।
বর্তমানে সময়ের সাথে সাথে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পনিরের ব্যবহার। আর তাই বিস্কিট থেকে শুরু করে পাউরুটি, পাস্তা, পিৎজা অনেক কিছুতেই পনির ব্যবহার হয়।
পনিরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের মতে, ১০০ গ্রাম পনিরের মধ্যে রয়েছে:
শক্তি - ৩৬২ কিলোক্যালরি
প্রোটিন – ৫.১৭ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট - ৫০ গ্রাম
ক্যালসিয়াম - ৬৯ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম - ১৮১ মিলিগ্রাম
স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড – ৩.৪৫ গ্রাম
কোলেস্টেরল - ৩৪ মিলিগ্রাম
এটি প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস। পনিরের বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে।
পনির ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এবং প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এটি বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অনেক উপকারি। পনিরে থাকা ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পনির খেলে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করা যায়।
পনির ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা শক্তিশালী ও মজবুত দাঁত তৈরিতে অবদান রাখে। পনিরে থাকা কেসিন ফসফোপেপটাইড উপাদান দাঁতের গহ্বর কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া চিউইং চিজ মুখের পিএইচ মাত্রা বাড়াতে পারে এবং সামগ্রিক মৌখিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
পনিরে অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড যেমন কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস। কোরিয়া ইউনিভার্সিটি এবং ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ফ্যাটি অ্যাসিডে ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ ছাড়া এই ফ্যাটি অ্যাসিড এথেরোস্ক্লেরোসিস এর বিকাশ রোধ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে।
পনিরে কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড এবং স্ফিংগোলিপিড রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে স্ফিংগোলিপিড মানুষের কোলন ক্যান্সারকে বাধা দিতে পারে।
এ ছাড়া পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে খাদ্যতালিকাগত ক্যালসিয়াম কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ উপকারি।
পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই উপকারি। এটি প্রসবের সময় সংকোচনকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া উকের দুধ পান করানোর সময় ক্যালসিয়াম পুষ্টির ঘাটতিও পূরণ করে পনির। এটি গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রূণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে।
কিছু ধরণের পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যকারিতা বাড়াতে পরিচিত। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে পনির শরীরের প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটি অসুস্থতা এবং রোগ কমাতে পারে।
প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সুরক্ষিত পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। এটি বয়স্কদেরমধ্যে ইমিউনোসেনেসেন্স (প্রতিরোধ ব্যবস্থার ধীরে ধীরে দুর্বল হওয়া) প্রতিরোধ করতে পারে।
পনির সেলেনিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা থাইরয়েড ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সেলেনিয়ামের থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করে ভাইরাসের বিকাশকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে।
চেডার পনির হল এক ধরনের হার্ড পনির। এটি খাদ্যতালিকায় যোগ করলে তা থাইরয়েড রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
পনিরের আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলির মধ্যে একটি হল মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করা। বিশেষ করে ক্যামেমবার্ট জাতের পনির এই ধরনের কাজ করে থাকে। ক্যামেমবার্ট পনির প্রদাহজনক সাইটোকাইনের মাত্রা কমাতে পারে। এটি আলঝাইমার রোগের ঝুঁকি কমায় এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।
পনির ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। এতে থাকা ভিটামিন বি কোষের বিপাক এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে এটি উজ্জ্বল ত্বকের পাশাপাশি ত্বকের দাগ কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
যাদের গরুর দুধে অ্যালার্জি আছে তাদের পনির এড়ানো উচিত। এটি অ্যালার্জি, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথার কারণ ও হতে পারে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (অতিরিক্ত পনির খাওয়া) কার্ডিওভাসকুলার রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
পনিরের স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ও রয়েছে। যেমন,
কিছু লোকের দুধের প্রোটিন যেমন কেসিনে অ্যালার্জি থাকে। এটি সারা শরীর জুড়ে একটি প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং ত্বকে ফুসকুড়ি, সাইনাস কনজেশন এবং ব্রণ জ্বলতে পারে।
অনেকের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা থাকে। সেক্ষেত্রে তাদের পনির না খাওয়াই শ্রেয়। কারণ ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা গ্যাস, পেট ফোলাভাব এবং ডায়রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। অনেক সময় এর কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে।
প্রচুর পরিমাণে পনির খাওয়ার ফলে মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথা হতে পারে। পুরনো পনিরে থাকা টাইরামিন উপাদান কিছু ব্যক্তির মধ্যে মাইগ্রেনকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
যারা মোনোমাইন অক্সিডেস ইনহিবিটরস (MOIs) গ্রহণ করছেন তাদের পনির খাওয়া এড়ানো উচিত। এই ওষুধগুলি হতাশার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এসব ওষুধ পুরনো বা বয়স্ক পনিরে থাকা উপাদান টাইরামিনের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হবে ২ নভেম্বর। পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন তা নিয়ে এখন চলছে আলোচনা, কানাঘুষা; শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ।
বর্তমান উপাচার্যই আবার দায়িত্ব পাবেন নাকি নতুন কাউকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে এ আলোচনাই চলছে এখন। আলোচিত হচ্ছে কয়েকজন শিক্ষকের নামও। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন কানাঘুষারও অবসান হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ পদে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের মধ্য থেকেই কাউকে বাছাই করার বিষয়টি একপ্রকার নিশ্চিত। বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের এ বিষয়ে আগ্রহ নেই। গুণী কোনো শিক্ষক উপাচার্যবিষয়ক আলোচনার মধ্যে নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা হবে কি না, এ বিষয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের ১১(১) ধারা অনুযায়ী, উপাচার্য নিয়োগে তিন সদস্যবিশিষ্ট প্যানেল নির্বাচনের দায়িত্ব সিনেটের। সিনেট নির্বাচিত তিনজনের মধ্য থেকে একজনকে উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এবং রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রপতি তাকে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেন।
রীতি অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের জন্য সিনেটের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা হয়। কিন্তু এবার সিনেট অধিবেশন হওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। উপাচার্য অধিবেশন ডাকবেন কি ডাকবেন না; ওপর মহলের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কেউ কিছু জানেন না। উপাচার্য নিজেও বিষয়টি খোলাসা করছেন না।
অধ্যাদেশের ১১(২) ধারা অনুযায়ী, কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যেমন অসুস্থতা, ছুটি, অপসারণ বা অন্য কোনো কারণে উপাচার্যের পদ শূন্য হলে একজনকে অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা বলছেন, অধ্যাদেশের নিয়ম অনুসরণ করে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করা হোক। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং আগামী নির্বাচনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। নতুন উপাচার্যের গ্রহণযোগ্যতাও বাড়বে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, ‘ভিসি প্যানেল নিয়ে আলোচনা নেই। উপাচার্যও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে আমাদের জানা নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট সদস্য ও শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল সবচেয়ে বেশি আলোচিত। তাদের মধ্য থেকেই কারোর পরবর্তী উপাচার্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম এ বিষয়ক আলোচনায় রয়েছেন।
অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পান। পরে প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর উপাচার্য পদে পুনর্নিয়োগ পান তিনি। সাত বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সামলাচ্ছেন তিনি। দুই মেয়াদের বেশি উপাচার্য থাকার নজির নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই তার দায়িত্ব পালনের শেষ দেখছেন অনেকে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষকদের মধ্যেও তাকে নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে পুনরায় নিয়োগ পেতে পারেন তিনি।
ইমেরিটাস অধ্যাপক বা অন্য কোনো গুণী শিক্ষক নেই উপাচার্য নিয়োগের আলোচনায়। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গুণী শিক্ষকদের সামনে আনার যে ধরনের কাঠামো থাকা উচিত তা নেই। যারা তোশামোদ করতে পারে, অন্ধ আনুগত্য প্রকাশ করতে পারে, তাদেরই প্রশাসনের শীর্ষ পদে নিয়ে আসা হয়। সত্যিকারের গুণী শিক্ষক এবং অনেক ভালো গবেষক আছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারা কখনো প্রশাসনের দায়িত্বে আসতে পারেন না। তারা ব্যক্তিত্বের জলাঞ্জলি দিতেও রাজি নন।’
অতীতে উপাচার্যদের মধ্যে অ্যাকাডেমিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে একটা ভারসাম্য ছিল। এখন তা নেই। এখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও আনুগত্যের ভিত্তিতে প্রশাসনিক পদগুলো দেওয়া হয়।
পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন বা ভিসি প্যানেল নিয়ে আগ্রহ নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের। বিএনপিঘোষিত এক দফাতেই তারা মগ্ন। যদিও সিনেটে তিনজন প্রতিনিধি থাকায় সুযোগ তাদেরও রয়েছে। সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার পরিবর্তন না হলে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিষয়ে ভাবছি না। এ বিষয়ে আমাদের ফোকাস নেই। আমাদের ফোকাস হচ্ছে এ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। জাতীয় রাজনীতিতে পরিবর্তন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও পরিবর্তন আসবে।’
শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও সাংগঠনিকভাবে আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমরা নীল দল এখনো এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করিনি। যথাসময়ে দলের সভায় এ নিয়ে কথা হবে। মনোনয়ন কে পাবেন, তার আলোচনাও সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে। বর্তমান প্রশাসনের শীর্ষ তিনজন বিশেষভাবে আলোচনায় থাকবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই দায়িত্ব দেবেন। আমরা উনাদের সমর্থন করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ীই সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।’
বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনের গতি অনুযায়ীই সব চলবে। এ বিষয়ে যাদের ভাবা প্রয়োজন তারা অবশ্যই ভাববেন।’ সিনেটের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশেষ অধিবেশন ডাকার প্রয়োজন হলে আমরা ডাকি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।