
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভারত সফর নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। তিন দিনের ভারত সফর শেষে গত ২৩ আগস্ট দেশে ফিরলেও এ সফর নিয়ে দলের সর্বোচ্চ ফোরাম প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেননি।
গত মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরের এই প্রতিবেদক দীর্ঘসময় জিএম কাদেরের বনানীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে অপেক্ষা করেও তার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। এ সময় তার প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী জানান, স্যার আপাতত (জিএম কাদের) মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছেন না।
যদিও গতকাল বুধবার জিএম কাদের ইউটিউবে তার নামে অপপ্রচারের ভিডিও ছড়ানো বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি ভারত সফর নিয়েও কথা বলেছেন। তবে এর আগে তিনি যা বলেছেন ঘুরেফিরে সেটাই আবার বলেছেন। তিনি বলেছেন, ভারত সরকারের বিশ্বাস জাতীয় পার্টি একটি সম্ভাবনাময় দল, জাতীয় পার্টি আগামীতে ভালো করতে পারবে।
গত ২০ আগস্ট ভারত সফরে গিয়েছিলেন জিএম কাদের। তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী শেরিফা কাদের ও চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা মশরুর মাওলা।
ভারত থেকে ফিরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জিএম কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, ভারত বাংলাদেশে একটি সুন্দর নির্বাচন দেখতে চায়। নির্বাচনের আগে ও পরে যাতে কোনোক্রমেই সহিংসতা, অরাজকতা না হয়। তারা প্রত্যাশা করে, সবাই মিলে ওই ধরনের একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে। কার কার সঙ্গে সেখানে আলোচনা হয়েছে, কী বিষয়ে হয়েছে সে ব্যাপারে অনুমতি ছাড়া তিনি কিছু বলতে পারবেন না।
ভারত থেকে ফিরে আসার পর এক সপ্তাহ হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত জাতীয় পার্টির কোনো আনুষ্ঠানিক সভা ডাকেননি জিএম কাদের। যদিও তিন দিন ধরে তিনি বনানীর কার্যালয়ে আসছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রেসিডিয়াম সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভারত সফরে যাওয়ার আগেও জি এম কাদের দলের ফোরামে কোনো আলোচনা করেননি। তা ছাড়া তার সফরসঙ্গী হিসেবে কারা যাবেন সে বিষয়েও দলের কেউ জানতেন না। ভারতের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ দেশ সফর করে এলেও তিনি কোনো মিটিং ডেকে সেখানে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং নতুন কোনো নির্দেশনা আছে কি না তা ব্যাখ্যা করেননি। ফলে নেতাকর্মীরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন। এ নিয়ে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের প্রশ্ন রয়েছে।
ফিরে আসার দিন জিএম কাদেরকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে দেখা যায়নি দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের। মুজিবুল হক চুন্নু ছাড়া বিমানবন্দরে আর কোনো কো-চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন না। এমনকি অধিকাংশ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্যদেরও বিমানবন্দরে দেখা যায়নি।
জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যখন বিদেশ সফরে যেতেন, তখন দলে একটা কৌতূহল কাজ করত। কারা তার সফর সঙ্গী হবেন, এ নিয়ে নানা দেন-দরবারও চলত। তার সফর সঙ্গী হিসেবে অনেকেই যেতেন। অথচ নির্বাচন সামনে রেখে দলের চেয়ারম্যান ভারত সফরে গেলেও এটা ব্যক্তিগত নাকি রাষ্ট্রীয় সফর তা জানতে গণমাধ্যমের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল নেতাকর্মীদের।
জানতে চাইলে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু দেশ রূপান্তরকে বলেন, দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে কারও তুলনা করা ঠিক হবে না। এরশাদ ‘ক্যারিশমাটিক’ লিডার ছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। ফলে তার সঙ্গে অন্য কারও তুলনা হয় না। তিনি বলেন, ‘দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের অধিক মানুষ পছন্দ করেন না। তিনি দেশে ফিরলে নেতাকর্মীরা বিমানবন্দরে ফুল দিয়ে তাকে স্বাগত জানাবেন এটা তার অপছন্দ। ফলে দলের মহাসচিব হিসেবে তিনি সবাইকে নিষেধ করেন। যদিও নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করে বিমানবন্দরে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।’ কিন্তু নিষেধ উপেক্ষা করেও সেদিন বিমানবন্দরে হাজার হাজার কর্মী উপস্থিত ছিলেন বলে দাবি চুন্নুর।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জিএম কাদেরের ভারত সফর নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যাওয়ার কিছুদিন আগে ভারত সফর করেছে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জিএম কাদের নিজেই এই সাসপেন্স তৈরি করেছেন। তিনি ভারত থেকে ফিরে এক বক্তব্য দিয়ে পুরো ফোকাস নিজের দিকে কেড়ে নিতে চেয়েছেন। এই বক্তব্যের ফলে রওশন এরশাদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের চিঠি নিয়ে যে তোলপাড় ছিল তা ধামাচাপা পড়ে গেছে।
তারা মনে করেন, ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পেছনে ‘ভারতের চাপ’ ছিল। সে সময় সুষমা স্বরাজ অনেকটা বাধ্য করেন জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে অংশ নিতে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টি কী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে থাকবে নাকি বিএনপির সঙ্গে থাকবে অর্থাৎ রাজনীতির মাঠে জাতীয় পার্টির ভূমিকা কী হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট একটা নির্দেশনা ভারত দিয়েছে বলে তারা মনে করেন। ফলে আগামী দিনে জিএম কাদের সরকারবিরোধী সমালোচনা অব্যাহত রাখেন নাকি নতুন কোনো চরিত্র সামনে নিয়ে হাজির হন, এ মুহূর্তে রাজনীতিতে এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন জিএম কাদের ও রওশনপন্থিরা। এ দুই নেতার অনুসারীরা ভিন্ন ভিন্ন কার্যালয়ে তাদের কর্মতৎপরতা চালাচ্ছেন। জিএম কাদেরের অনুসারীরা বনানীর কার্যালয়ে এবং রওশন অনুসারীরা গুলশান কার্যালয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
জিএম কাদেরের অনুসারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আপাতত তারা কোনো জোটে যাবেন না। তারা বিএনপি-আওয়ামী লীগ উভয় পক্ষকে বিবেচনায় রেখে সেপ্টেম্বর মাসের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখতে চান। তাদের ধারণা, সেপ্টেম্বরে বিএনপি মাঠ দখল করতে শক্তি প্রদর্শন করবে। দলটি যদি সফল হয় তাহলে জিএম কাদেরপন্থিদের সিদ্ধান্ত হবে একরকমের। আবার সরকার যদি চলমান সংকট মোকাবিলা করতে সফল হয় তাহলে তারা সরকারের সঙ্গে দর-কষাকষি করে আসন বাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করবেন। এ ক্ষেত্রে তারা সাবধানে পা ফেলতে চান।
নির্বাচনের আগে একটা জোট গঠনের ভাবনাও আছে জিএম কাদেরের অনুসারীদের মধ্যে। এ ক্ষেত্রে তারা প্রাথমিকভাবে ইসলামি দলগুলোর কথা বিবেচনা করছেন। এ ছাড়া সম্প্রতি জাতীয় পার্টির মহাসচিবের সঙ্গে দেখা করেছেন গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নূর।
জোট গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। আমাদের দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত। যে কারও সঙ্গে জোট গঠন করা হতে পারে। তবে তিনি বলেন, ভিপি নুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাই হিসেবে দেখা করতে এসেছিলেন। সেখানে সার্বিক বিষয়ে আলাপ করা হলেও জোট গঠনের বিষয়ে আলাপ করা হয়নি।’
সরকারের অধীনে থাকবে নাকি বিএনপির সঙ্গে সমন্বয় করে জাতীয় পার্টি আন্দোলন করবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিএনপি-আওয়ামী লীগ কেউই জাপার আপন নয়। বিএনপি বিভিন্ন সময় জাপার ওপর অত্যাচার করেছে, এমনকি জেলে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকেও তারা অত্যাচার করেছে। আবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করলেও তারা আমাদের প্রাপ্য মূল্যায়ন করেনি। জাপাকে আওয়ামী লীগ দুর্বল করেছে। সুতরাং আমরা জনগণের কথা মাথায় রেখে জনগণের প্রয়োজনে নির্বাচনে অংশ নেব।’
অন্যদিকে নির্বাচন সামনে রেখে রওশনপন্থিরাও সক্রিয়। এ পক্ষের একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী নির্বাচনে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে তারা বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যে কিছু পরিকল্পনা নিয়েছেন তারা। প্রাথমিকভাবে জাতীয় পার্টি থেকে চলে যাওয়া আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জাতীয় পার্টি-জেপিকে ও কাজী জাফর আহমেদের অনুসারীদের ফিরিয়ে আনতে কাজ করছেন তারা। ইতিমধ্যে এ দুই দলের নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে তাদের। পাশাপাশি গত কয়েকটি নির্বাচনে দলটির প্রার্থী কোন কোন আসনে জয় লাভ করেছেন, তাদের ভোটের পরিমাণ কেমন ছিল, নতুন করে কোন আসনে কাকে প্রার্থী করা যায়, এ বিষয়ে পরিকল্পনা ও তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করছেন তারা। আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ বাড়ানো ও দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে কাজ করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে সেপ্টেম্বরে দলের কাউন্সিল করতে চান ম্যাডাম (রওশন এরশাদ)। এ বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতি চলছে। ম্যাডাম মনে করেন, সামনে নির্বাচন। কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীদের চাঙা করে তুলতে হবে। সর্বশেষ সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা খুব কম ভোট পাচ্ছেন, যা উদ্বেগের। এসব সংকট কাটাতে ম্যাডাম ভোটের আগে তৃণমূলকে উজ্জীবিত করতে চান।’
সরকারি হাসপাতালে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসাসেবার মানোন্নয়নের জন্য একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি রয়েছে। অধিকাংশ হাসপাতালে এর কার্যকারিতা নেই। মাসে অন্তত একবার বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও বছরে একবারও বসতে পারছে না তারা। সারা দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও গাছাড়া ভাব ছিল তাদের। করোনা মহামারীর মধ্যেও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির একই দশা ছিল।
সংসদ সদস্য বা মন্ত্রীর সময়ের অভাবে নিয়মিত কমিটির সভা হয় না। ফলে জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য খাতে সমন্বয়হীনতা বিদ্যমান। রোগীরা যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী প্রতি জেলার জ্যেষ্ঠ জনপ্রতিনিধি হলেন ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান।
জানা গেছে, ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক নিয়মিত না হওয়ার জন্য জনপ্রতিনিধিদের অনীহা অনেকাংশে দায়ী। কিছু বৈঠক যদিও হয়, তাতে মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যরা খুব কম সময়ই উপস্থিত থাকতে পারেন। মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে প্রতি মাসে অন্তত একবার বৈঠকে বসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যসেবা-সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জনপ্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসন-সংশ্লিষ্টদের নিয়ে গঠিত হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির উদাসীনতা ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার জন্য দায়ী। রাজধানীতে ডেঙ্গু মোকাবিলায় সিটি করপোরেশনও ব্যর্থ। এবার জেলা পর্যায়েও ডেঙ্গুতে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা রেকর্ড গড়েছে। জেলায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ওপর বর্তায়। তারা সময়মতো হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাই করতে পারে না। তাদের উদাসীনতার বিষয়টি স্পষ্ট।
কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে ডেঙ্গু বা মশা নিয়ন্ত্রণে জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয়তা দেখা যায়নি। জনসাধারণকে নিয়ে জনপ্রতিনিধিরা যদি সামাজিক আন্দোলন গড়তে না পারেন, তাহলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ বা নির্মূল সম্ভব নয়।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, হাসপাতালের সার্বিক বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এলাকায় সক্রিয় নন। মন্ত্রী, সংসদ সদস্যরা নিজ এলাকার হাসপাতাল নিয়ে সক্রিয় হলে দেশের স্বাস্থ্যসেবার পরিস্থিতি পাল্টে যেত। চিকিৎসা খাতে রাষ্ট্রের যে বাজেট তার সদ্ব্যবহার হতো।
জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এত সরকারি হাসপাতাল কেন্দ্র থেকে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয় না; সে কারণেই ব্যবস্থাপনা কমিটি। কমিটি সক্রিয় হলে হাসপাতালের সেবার মান বাড়ে এমন অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। যে বরাদ্দ হাসপাতালে দেওয়া হয়, কমিটির মাধ্যমে তার ব্যবহার যথাযথ করা যায়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের যুক্ত করে হাসপাতালের অনিয়ম দূর করা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘কমিটির ধারণাটি খুবই ভালো ছিল। কিন্তু এমপি মহোদয়রা মিটিং করেন না। ফলে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। সংসদ বা সরকারের সংশ্লিষ্ট পক্ষ কমিটিগুলো মনিটরিং করলে বড় ভূমিকা রাখা সম্ভব। তখন মানুষ হাসপাতালগুলোকে সরকারের নয়; বরং নিজেদের মনে করবে।’
অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু। এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি। সংখ্যাটি আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, জেলা পর্যায়ে চিকিৎসা-সেবাদাতা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করবে ব্যবস্থাপনা কমিটি। তারা হাসপাতালের অনুমোদিত বাজেটের মধ্যে বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে। স্বাস্থ্যসেবার মান নিশ্চিতে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং মুক্তিযোদ্ধা, হতদরিদ্র, মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ ও সুবিধাবঞ্চিতদের সেবা নিশ্চিতের দায়িত্ব কমিটির। কমিটিকে প্রয়োজনে বিশেষ দায়িত্ব পালনে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিজস্ব ও বাইরের ব্যক্তিদের নিয়ে উপকমিটি গঠন করতেও বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে উপকমিটি গঠনে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির অকার্যকারিতা অপ্রত্যাশিত। নিয়মিত কমিটির সভা হলে জেলার সার্বিক স্বাস্থ্যচিত্র সম্পর্কে জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টরা অবগত হয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে। এভাবে হাসপাতাল শুধু নয়, পুরো জেলার স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন সম্ভব। কমিটির কার্যকারিতা না থাকায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না।
ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি। হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. এনামুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি সর্বশেষ সভার তারিখ জানাতে পারেননি। সভাপতি হাসপাতালে এসেছিলেন গত বছরের ২৫ আগস্ট। এরপর আর ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়নি।
ডা. মো. এনামুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সভাপতি ছাড়া বা তার মনোনীত প্রতিনিধি ছাড়া তো সভা হয় না। এ কারণে আমাদের সভার আয়োজন করা যাচ্ছে না।’
মানিকগঞ্জের কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেরও একই অবস্থা। এই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ব্যস্ততার কারণে তাকে সভার কথা বলতে পারে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ব্যবস্থাপনা কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকাও নেই পরিচালকের কাছে। হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. আরশাদ উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি গত বছরের ২ নভেম্বর যোগ দিয়েছি। এরপর সভা হয়নি। কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকাও পাইনি।’
সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সভাপতি হলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। এই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সর্বশেষ বৈঠক হয়েছে গত ডিসেম্বরে। তার এক বছর আগে আরেকটি সভা হয়েছিল। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয় রাষ্ট্রীয় কাজে অত্যন্ত ব্যস্ত। আমাদের ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক না হলেও তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হয়। তাকে সব বিষয়ে জানিয়ে থাকি এবং তিনি তাৎক্ষণিক সমাধান দেন। কমিটির নিয়মিত বৈঠক না হলেও হাসপাতালের কার্যক্রম ঠিকমতো পরিচালিত হচ্ছে।’
বরিশাল সদর জেনারেল হাসপাতালের সর্বশেষ সভা হয়েছে ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর। রাজশাহীতে এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। এ বছর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়েছে গত ২২ জানুয়ারি। এরপর আর সভা হয়নি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সবশেষ সভা হয়েছে গত ১ এপ্রিল। মৌলভীবাজারে তিন-চার মাস আগে সর্বশেষ সভা হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। ঠিক কবে হয়েছে, সেটি অবশ্য জানাতে পারেনি। যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য। এই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সর্বশেষ সভা হয়েছে গত মে মাসে। ফেব্রুয়ারিতেও আরেকটি সভা হয়েছিল।
হাসপাতাল সূত্রগুলো জানিয়েছে, করোনা মহামারীর সময়েও ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক নিয়মিত হয়নি।
হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর প্রায় ৬০ শতাংশ ঢাকার বাইরের। গত মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে ২ হাজার ২৯১ জন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৯২০ ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ১ হাজার ৩৭১ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে। এ বছর ডেঙ্গু নিয়ে ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬২ হাজার ৮৮৬ জন। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫৬ হাজার ২৪৭ জন।
দেশের সব সরকারি হাসপাতাল কমিটির সভা নিয়মিত হয় কি না এর তদারকির দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। এ ব্যাপারে জানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ বি এম খুরশীদ আলমকে মোবাইল ফোনে কল দিয়েও পাওয়া যায়নি। অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক ডা. মো. হাবিবুল আহসান তালুকদারের বক্তব্যও পাওয়া যায়নি। তবে অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার সহকারী পরিচালক ডা. শেখ দাউদ আদনান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলোর তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে থাকা তো জরুরি না। তাদের প্রয়োজনে তারা বৈঠক করবে; বিশেষ সময়ে বা নির্দিষ্ট সময়ে বৈঠক করবে। এটা একেবারেই স্থানীয় বিষয়।’
ভারতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জি-২০ সম্মেলন শেষে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকা সফরে আসছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। ১৯৯০ সালের পর বাংলাদেশে আসছেন ফ্রান্সের কোনো প্রেসিডেন্ট। গতকাল বুধবার দুই দেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক-সামরিক বিষয়ক ব্যুরোর আঞ্চলিক নিরাপত্তা সম্পর্কিত উপসহকারী সেক্রেটারি মিরা রেসনিক পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে আগামী সপ্তাহে ঢাকায় আসছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা। তিনি জানান, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র পরবর্তী পর্যায়ের নিরাপত্তা সংলাপ আয়োজনের প্রস্তুতি হিসেবেই আগামী ৪ সেপ্টেম্বর তার ঢাকায় পৌঁছার কথা রয়েছে।
গতকাল ম্যাক্রোঁর সফরের বিষয়টি নিশ্চিত না করলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ঢাকা সফর নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। জি-২০ সম্মেলন শেষে তিনি ঢাকা আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক অনুষ্ঠান শেষে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সফরের বিষয়ে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের অনেক ইস্যু।
ম্যাক্রোঁর সফরে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু, নারীর ক্ষমতায়ন, বিনিয়োগ বাড়ানো ও ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোসহ আমাদের অনেক ইস্যু রয়েছে। সেই সঙ্গে নিয়মিত অভিবাসন ইস্যু থাকে। এগুলো আমাদের নরমাল ইস্যু। জলবায়ু বড় ইস্যু, বিশেষ করে ফ্রান্সের সঙ্গে। এ বিষয়ে ফ্রান্স লিডারশিপ রোল প্লে করে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে আমরা বলতে চাই, লস অ্যান্ড ডেমেজ ইস্যুটা তহবিল করার জন্য উদ্যোগ নিন। তিনি টাকা সংগ্রহে উদ্যোগ নেবেন।
তিনি জানান, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের কাছে যে জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় ইস্যু। এটি মোকাবিলায় তহবিল সংগ্রহের জন্য তাকে আমরা বলেছি। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এলে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টি বড় করে তুলব।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের নভেম্বরে প্যারিস সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সরকারপ্রধান।
জানা গেছে, ঢাকা সফরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। তিনি ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরা।
৪ সেপ্টেম্বর আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক নিরাপত্তাবিষয়ক উপসহকারী সেক্রেটারি : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র পরবর্তী পর্যায়ের নিরাপত্তা সংলাপ আয়োজনের প্রস্তুতি হিসেবে আগামী ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক-সামরিকবিষয়ক ব্যুরোর আঞ্চলিক নিরাপত্তা সম্পর্কিত উপসহকারী সেক্রেটারি মিরা রেসনিক।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রটি জানিয়েছে, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অস্ত্র স্থানান্তর ব্যুরোর অফিসের তত্ত্বাবধান করেন রেসনিক। ব্যুরোর নিরাপত্তা সহায়তা অফিসেরও তত্ত্বাবধান করেন রেসনিক। তার এ সফরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি রাশেদ চৌধুরীকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করতে পারে বাংলাদেশ। এ ছাড়া আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের হুমকি হিসেবে রোহিঙ্গা ইস্যুটিও আলোচনায় আসতে পারে।
দেশের পুরনো সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে দীর্ঘদিন ধরেই অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয় না। আর অনেক বিদ্যালয়েই এখনো রয়েছে ব্রিটিশ আমলের ভবন। দুই শিফটের এসব বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় নানা সংকটে পড়তে হচ্ছিল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। এজন্য ৩২৩টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় উন্নয়নে ৩ হাজার ২৮৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দুই দফায় প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৩৫ শতাংশ। ফলে ঢিমেতালে চলা এই প্রকল্পের উন্নয়নকাজই বেদনায় পরিণত হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাড়ে ছয় বছরে প্রকল্পটির ৩৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। বাকি ৬৫ শতাংশ শেষ হতে কত বছর সময় লাগবে তা জানাতে পারছেন না কেউ? পাঁচ বছরের একটি প্রকল্প শেষ হতে যদি ১০ বছর লেগে যায়, তখন এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার সুযোগ থাকে। এমনকি বিদ্যালয়গুলোর জন্য যেসব মডেলের কম্পিউটার ও কম্পিউটার সামগ্রী, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতিসহ নানা উপকরণ কেনার কথা ছিল, সেসব মডেল এখন অনেকটাই পুরনো হয়ে গেছে। এ ছাড়া সাত-আট বছর আগে প্রকল্পের মালামাল কেনার যে খরচ ধরা হয়েছিল, তা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এ অবস্থায় প্রকল্প বাস্তবায়ন ও এর সুফল পাওয়া নিয়েই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতে অ্যাকাডেমিক ভবন, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞান ল্যাবরেটরি, কম্পিউটার ল্যাবরেটরি, প্রার্থনার জন্য কক্ষ, হোস্টেল, শিক্ষকদের জন্য ডরমেটরি, প্রধান শিক্ষকের জন্য কোয়ার্টার ইত্যাদি নির্মাণের জন্য প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। এর মেয়াদ ধরা হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। তবে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই প্রথমবার ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। দ্বিতীয় দফায় ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এখন তৃতীয়বারের মতো ২০২৬ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
প্রকল্পটির পরিচালক অধ্যাপক মো. নাসির উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মূলত তিন কারণে প্রকল্পটির অগ্রগতি কম। প্রথমত, প্রকল্পটি দেড় বছর পর শুরু হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনার কারণে অর্থছাড় বন্ধ ছিল। তৃতীয়ত, জেলাপর্যায়ের ভবনগুলো ছয়তলা থেকে দশতলায় উন্নীতকরণের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করা। তবে এখন প্রকল্পটি ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। এ বিষয়টি একনেকে পাস হলেই প্রকল্পের কাজ জোরেশোরে শুরু হবে। আমরা আবার দরপত্রে যেতে পারব। আশা করছি, ২০২৬ সারের মধ্যেই প্রকল্পের সব কাজ শেষ হবে।’
সম্প্রতি সরকারের বাস্তবায়ন পরীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এ প্রকল্পের ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তারাই এ প্রকল্পের দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩২৩টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১২৫টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিদ্যমান ভবন ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ১০২টি বিদ্যালয়ের ভবন সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ৭৪টির কার্যক্রম পুরোপুরি সমাপ্ত হয়েছে, অবশিষ্ট ২৮টি ভবনের কার্যক্রম বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায়ে ১৪৮টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৩৭টির নির্মাণকাজ চলমান। এর মধ্যে মাত্র দুটি ভবনের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে, অবশিষ্টগুলোর কাজ চলছে।
জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের ১৭২টি নতুন ভবন নির্মাণকাজ বর্তমানে স্থগিত রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ২৪টি বিদ্যালয়ের হোস্টেল নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৮টির দরপত্র অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পণ্য হিসেবে প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিটের জন্য আসবাবপত্র ও অফিস সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। প্রকল্প অফিসের জন্য তিনটি জিপ গাড়ি ও একটি মাইক্রোবাস কেনা হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পের নির্মাণ ও পূর্তকাজের গড় বাস্তব অগ্রগতি ৩৫ শতাংশ।
প্রকল্পের দুর্বল দিকের বিষয়ে আইএমইডি বলছে, প্রকল্পটি প্রণয়নের আগে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন অবস্থায় জেলা ও বিভাগীয় শহরে বিদ্যালয়ের ছয়তলা থেকে দশতলায় রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্প পরিচালক ও অন্যান্য জনবল নিয়োগেও বিলম্ব হয়েছে। প্রকল্প প্রণয়নের সময় অনুসরণকৃত রেট শিডিউল প্রকল্প বাস্তবায়নের আগেই পরিবর্তন হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্প প্রণয়নকালে গণপূর্তের ২০১৪ সালের রেট শিডিউল অনুসরণ-পূর্বক যাবতীয় পূর্তকাজের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়। কিন্তু প্রকল্পটি প্রশাসনিক অনুমোদনপ্রাপ্ত হয় ২০১৮ সালের ২০ মে। ইতিমধ্যে গণপূর্তের ২০১৮ সালের রেট শিডিউল কার্যকর হয়ে যায়, যা প্রকল্প বাস্তবায়ন তথা পূর্তকাজ বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। এখন এই সাত বছরে প্রকল্পের ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে, যা এড়ানোর কোনো উপায় নেই।
আইএমইডি সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলেছে, ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ সাড়ে চার বছর। যেহেতু জনবল নিয়োগ ও বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়, তাই প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়। পরে নতুন স্কুল ভবন ছয়তলার পরিবর্তে দশতলায় রূপান্তরের সিদ্ধান্ত হওয়ায় আরও এক বছর বাড়ানো হয়। যদিও বলা হয়েছিল, এতে তিন বছর বেশি সময় লাগতে পারে। ফলে প্রকল্পটি সংশোধন-পূর্বক ২০২৬ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলমান।
এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী অতিমারী কভিড-১৯-এর ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের তৃতীয় কোয়ার্টার এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম কোয়ার্টারে প্রকল্পটির অর্থ বরাদ্দ স্থগিত রাখা হয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরেও প্রকল্পটির বাজেট কমানো হয়েছে। এতে পূর্তকাজের বিল চাহিদা মোতাবেক পরিশোধ করা এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী পণ্য ও সেবা কেনা সম্ভব হচ্ছে না।
প্রতিবেদনের সুপারিশে প্রকল্পটির গতি আনতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। তবে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীভূত হবে, শিক্ষার্থী ভর্তির চাহিদা পূরণ হবে, বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহ বাড়বে এবং শিক্ষার গুণগত মান বাড়বে।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, কিছু বড় দেশ বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এখানে একটি তাঁবেদার সরকার চায়। তার ভাষ্য, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে কিছু (বড়) দেশ বাংলাদেশে এমন একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেটি তাদের চাটুকার হবে। গতকাল বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। খবর-বাসস
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের রক্ত ঝরিয়ে দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়া সত্ত্বেও যেসব দেশ বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচন খুঁজছে তাদের কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রক্তের বিনিময়ে আমরা দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি।
তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট এর আগে বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স চালুর প্রস্তাব দিয়েছিল। ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার আইন প্রণয়ন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে এবং কমিশনকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন করেছে।
তারা (কিছু বড় দেশ) গণতন্ত্র ও নির্বাচনের অতীত সম্পর্কে নাও জেনে থাকতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজ, তারা আমাদের দেশে গণতন্ত্র এবং ভোট দেওয়ার অধিকার খুঁজছে।’
সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান, যে পকেট থেকে বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, প্রথমে হ্যাঁ/না ভোট এবং রাষ্ট্রপতির ভোটের মাধ্যমে ভোট কারচুপির সংস্কৃতি চালু করে নির্বাচন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু করেন এবং এরশাদ ও খালেদা জিয়া সেই পথই অনুসরণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বড় দেশগুলো সব সময় বিশ্বের সর্বত্র মাতবরি করার চেষ্টা করে। রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের অমানবিক অবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যাদের তাদের (বড় দেশ) মতো বন্ধু আছে তাদের শত্রুর কোনো প্রয়োজন নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি রাশেদ ও নূরকে আশ্রয় দিয়েছে এবং বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে খুনি রাশেদকে ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করেছি কারণ আমাদের বিচার বিভাগের বিচারে সে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। এতে হস্তক্ষেপ করার অধিকার তাদের নেই। তারা এখন খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে।’
তিনি বলেন, খুনি ডালিম ও রশিদ পাকিস্তান ও লিবিয়ার মধ্যে তাদের আস্তানা পরিবর্তন করে চলছে, অন্য একজন খুনির হদিস এখনো পাওয়া যায়নি এবং বাকি খুনিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে।
তিনি বলেন, খুনিদের বিচারের জন্য আমার পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমি দেশবাসী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনি ছিলেন এবং তিনি খুনিদের বিচার বন্ধ করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন এবং তাদের বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে পোস্টিং দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলাম।
ঢাকা উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মোন্নাফী এবং পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।
ঢাকা উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাদেক খান এমপি, আবদুল কাদের খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম মাজহার আনাম ও মো. আজিজুল হক রানা, পরিবার কল্যাণ সম্পাদক মেহেরুন্নেছা মেরি ও ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. দিলীপ কুমার রায়, মিজবাউর রহমান ভূঁইয়া রতন ও সাজেদা বেগম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মোরশেদ কামাল, সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তার হোসেন ও গোলাম সারোয়ার কবির প্রমুখ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকা- এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নানামুখী চাপ দিচ্ছে। দেশগুলো নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন সবক ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেই ঢাকা সফরে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় চরম বৈরী সম্পর্কের দেশ রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর দুদিনের সফরে তিনি বাংলাদেশে আসবেন। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এখান থেকে সরাসরি যোগ দেবেন দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ সম্মেলনে।
স্বাধীনতার পর এই প্রথমবারের মতো কোনো রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর ঘিরে একদিকে যেমন প্রস্তুতি চলছে, অন্যদিকে তেমনি কিছুটা রাখঢাকও করতে চাচ্ছে সরকারপক্ষ। কারণ পশ্চিমা দেশগুলো এ সফর নজরের মধ্যে রাখছে। এমনিতেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে চীনের মন্তব্য এবং গত কয়েক বছরে দেশে চীনের অর্থায়নে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নসহ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ওয়াশিংটন ও পশ্চিমাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই মনে করা হচ্ছে, হঠাৎ করে ল্যাভরভের এ সফর নতুন কোনো বার্তা হয়ে আসতে পারে। পশ্চিমারা বিষয়টি নজরে রাখছে বলে মনে করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কূটনৈতিক সূত্রগুলো।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ল্যাভরভের সফরের বিষয়টি চূড়ান্ত। রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘ সময়ের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পাশাপাশি স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। আবার চলমান ভূরাজনৈতিক মেরূকরণে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকা নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে।
ল্যাভরভের সফরের বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সম্প্রতি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা টাইমিং নিয়ে কাজ করছি। তার সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে দেখা হয়েছে। তবে আলোচনার মতো প্রেক্ষাপট হয়নি। এখনো সময় চূড়ান্ত হয়নি।’
কূটনৈতিক একাধিক সূত্র বলেছে, বৈশ্বিক সংকটময় পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের ওপর পশ্চিমাদের খড়গের মধ্যে এ সফরটি হবে ‘হাইলি পলিটিক্যাল’। ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে রাশিয়াকে ঘিরে যে পশ্চিমা বিরোধ তৈরি হয়েছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে যে শক্ত অবস্থান দেখা যাচ্ছে, তাদের কাছে বাংলাদেশও এখন গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই ঢাকা ও মস্কোর জন্য এ সফরটি সময়ের দিক দিয়ে ঐতিহাসিক বিবেচিত হলেও রাজনৈতিক ও ইন্দোপ্যাসিফিক কৌশলের কারণে আরও বেশি ঐতিহাসিক হতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাশিয়ার পক্ষ থেকেই এ সফরের প্রস্তাব এসেছে। এর আগেও ঢাকায় রাশিয়ার দূতাবাস থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছিল। এবারও রুশ দূতাবাস থেকেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢাকাও ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। যদিও সফরের সময়সূচি এখনো ঠিক হয়নি। সফরটি নিয়ে পশ্চিমাদের উদ্বেগ দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। যদিও বাংলাদেশ নিজেদের স্বার্থের বিষয়গুলোই বিবেচনা করছে। তবে দীর্ঘ সময়ের বন্ধু ও উন্নয়ন সহযোগী দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে বাংলাদেশ। এর পাশাপাশি দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ইস্যু আলোচনায় প্রাধান্য দেওয়া হবে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই তা বন্ধে শান্তি আলোচনার আহ্বান জানিয়ে আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ল্যাভরভের সফরেও বিষয়টি আলোচনায় আসবে। এ যুদ্ধের ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতি ও ভূরাজনৈতিক ইস্যুতে যেসব নেতিবাচক বিষয় তৈরি হয়েছে তাও আলোচনা করবে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে এ সফরটি ঢাকা ও রাশিয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কূটনৈতিক পর্যবেক্ষক ও কূটনৈতিক সূত্রগুলো মনে করছে, স্বাধীনতার পর এই প্রথমবারের মতো কোনো রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর অবশ্যই মাইলফলক হয়ে থাকবে। যদিও ঢাকা প্রকাশ্যে বিষয়টা সাদামাটাভাবেই নিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাশিয়া বরাবরই বাংলাদেশের মিত্র। আমাদের দেশে তো প্রায় সব দেশেরই শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা সফর করছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মতো বড় দেশের শীর্ষ ব্যক্তিরা আসছেন। যেকোনোভাবেই হোক রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের ঢাকা সফর অবশ্যই একটি বড় খবর। আবার তিনি জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে দিল্লি যাবেন ঢাকা হয়ে। আমি মনে করি ল্যাভরভের এ সফর ঘিরে অবশ্যই সরকারপক্ষের প্রস্তুতির বিষয় থাকতে হবে। কারণ মিত্র দেশ হলেও বাংলাদেশের স্বার্থ সবার আগে দেখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা সফরের পর রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিল্লি যাবেন এবং সেখানে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বৈঠক হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তৈরি বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির শিকার সবাই।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জাতিসংঘে সোচ্চার ছিল উল্লেখ করে ওয়ালিউর রহমান বলেন, ‘তাদের বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে স্বাধীনতা ত্বরান্বিত হয়েছে। এটা মনে রাখতে হবে এবং মূল্যায়ন করতে হবে। তবে এখন প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়েছে। একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ ইউক্রেনকে রাশিয়া যেভাবে আক্রমণ করল তা মানার মতো নয়। আমি মনে করি রাশিয়াকে এটা আনুষ্ঠানিকভাবে বলা উচিত। কোনো বন্ধুরাষ্ট্র যদি ভুল করে তা তো ধরিয়ে দেওয়া যেতেই পারে।’
সরকারের ওপর আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার বৈরী সম্পর্কের মধ্যে এ সফরকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে সাবেক এ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি তা মনে করি না। বাংলাদেশ তার স্বার্থই দেখবে।’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘প্রথম থেকেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ বন্ধের তাগিদ দিয়ে আসছেন। আমি মনে করি ল্যাভরভের সফরেও যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নেওয়ার ওপর জোর দেওয়া যায়। কীভাবে যুদ্ধ বন্ধ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করা উচিত। কারণ রাশিয়া-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব পরীক্ষিত। নতুন করে এখানে পরীক্ষা দেওয়ার কিছু নেই। আর যুক্তরাষ্ট্র কী মনে করল, কী নজরদারি করল, সেটাও বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কিছু আমি দেখছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে জোরালো আলোচনা হতে হবে। কারণ ইদানীং রাশিয়ার সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক বেশ জোরালো হচ্ছে। নেপিদোর উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা মস্কো ঘুরে এসেছেন। রাশিয়াকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে চাপ দিতে হবে। কারণ ভূরাজনৈতিক কারণে রাশিয়ারও বাংলাদেশকে প্রয়োজন। সেটা রাশিয়াও জানে। ফলে নিজেদের স্বার্থ নিয়ে জোরালো আলোচনা হতে পারে।’
জানা গেছে, এ সফরে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এ ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিল এখন মৃতপ্রায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে না পারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র সরে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা ঘোরানো মতিঝিলে আবাসিক ভবন, শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান তৈরি না হলে দেশের প্রধান এই বাণিজ্যিক অঞ্চল প্রাণ হারাবে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাদের মতে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় অবদান রয়েছে মতিঝিলের টাকার। শুধু তা-ই নয়, মতিঝিলে উপার্জিত অর্থে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডাসহ আরও অনেক দেশে। এখানকার উপার্জিত টাকা অনেকে জমা রেখেছেন সুইস ব্যাংকেও। শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মতিঝিলে। এ যেন মা কাঁকড়ার আত্মত্যাগের গল্প। মা কাঁকড়া বাচ্চাদের আগলে রাখে বুকের ভেতর; যেদিন বাচ্চাগুলো বের হয়ে আসে, সেদিন খোলস ছাড়া মা কাঁকড়ার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। মা কাঁকড়ার মতো দুঃখী ও ত্যাগী বাণিজ্যিক মতিঝিল।
ষাটের দশকে মতিঝিলে গড়ে ওঠে দেশের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট-সিবিডি)। সেই থেকে এখনো দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল মতিঝিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে সরকারি ৮টি, বেসরকারি ৪৫টি এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে ৮টি। এ ছাড়া ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৮১টি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের বেশির প্রধান কার্যালয় চলে গেছে কারওয়ান বাজার, গুলশান-বনানী ও উত্তরায়। নতুন করে যেসব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাচ্ছে, সেগুলোর প্রধান কার্যালয় মতিঝিলের বাইরে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মতিঝিলের আশপাশে পরিকল্পিত কোনো আবাসিক এলাকা, অভিজাত হোটেল, কাজের ফাঁকে অবসর কাটানোর মতো উন্মুক্ত স্থান, শপিং কমপ্লেক্স না থাকায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুবিধার জন্য অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়গুলোও মতিঝিলের বাইরের এলাকা, অর্থাৎ কারওয়ান বাজার, গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে গড়ে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, মধুমিতা সিনেমা হল এবং ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এবং দিলকুশা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবন এবং বঙ্গভবনের পাশের এলাকাজুড়ে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল। বিশ্বের বাণিজ্যিক অঞ্চলের ভবনগুলো সুউচ্চ হয়ে থাকে। কিন্তু মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের পাশেই বঙ্গভবন। নিরাপত্তার কারণে বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর কোনো বহুতল ভবন করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, মতিঝিলের প্লটগুলোর ‘নন-রেসট্রিকটেড’ উচ্চতা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর সাড়ে চারতলার বেশি উচ্চতার ভবনের অনুমোদন মেলে না। ফলে মূল্যবান ওই প্লটগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারছেন না মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ জরাজীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণও রয়েছে কয়েকটি ভবন। একটির সঙ্গে অন্যটি লাগানো। দুটি ভবনের মাঝখানে উন্মুক্ত জায়গা নেই বেশিরভাগ ভবনের। দিলকুশা এলাকার বঙ্গভবন লাগানো ভবনগুলোর মাঝখানেও কোনো ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, মতিঝিল এলাকার ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে। ভাঙাচোরা এবড়োখেবড়ো সড়ক। সড়ক বিভাজকগুলো শ্রীহীন। এগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়নি। প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলে মতিঝিলের আরও করুণ দশা চোখে পড়ে। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার সড়কের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে চটের ছালা দিয়ে ঘেরা খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান এবং নানা পণ্যের অস্থায়ী দোকান। সামান্য বৃষ্টিতে মতিঝিল এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে থাকে পানির নিচে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত। ডিএসসিসি এলাকার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে। খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে মূল্যায়ন করলে মতিঝিল ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। যদিও এটা মানতে নারাজ ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি।
মতিঝিল এলাকার বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিল এলাকার সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএসসিসি। পরিত্যক্ত প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মতিঝিলের সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত ও সড়ক বিভাজকের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা দরকার। পর্যায়ক্রমে এ এলাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কাজ করবে ডিএসসিসি। তবে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের মূল সংস্কার ও আধুনিকায়নের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউককে সেসব বিষয় পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কাজে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা লাগলে করপোরেশন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলে রাজউক। রাজউক সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশক থেকেই মতিঝিলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যিক অঞ্চলে শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান থাকে। আর কাছাকাছি এলাকায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা থাকে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। অভিজাত মানের হোটেল পূর্বাণী গড়ে উঠলেও আশপাশে সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লোকজন গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় থাকেন। মতিঝিলের সৌন্দর্য নিশ্চিত করতে ও আধুনিকায়নে যেসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখা দরকার ছিল রাজউক ও সিটি করপোরেশন সেটা করেনি।
রাজউক সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধরা, উত্তরা। সেই সব এলাকা থেকে মানুষ মতিঝিলে আসেন। শহরের জনসংখ্যা বাড়ায় দিন দিন যানজট বাড়ছে। ওই সব এলাকা থেকে মতিঝিলে আসতে সড়কে এক থেকে দেড় ঘণ্টা চলে যায়। দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার মধ্যে ৩০ শতাংশ সময় সড়কে নষ্ট হচ্ছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে চিন্তা করেছে, তার কর্মস্থল এমন একটা জায়গায় হবে যা তার আবাসনের কাছাকাছি। মতিঝিল থেকে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও ভূমিকা রেখেছে।
কালের বিবর্তনে গুলশান হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক এলাকা। কারওয়ান বাজার, উত্তরায়ও গেছে কিছু। এসব জায়গায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমও সেখানে চলে গেছে। এসব এলাকার আশপাশে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় তাদের বসবাস। আবাসিক এলাকা ছাড়া, পৃথিবীর কোথাও শতভাগ জায়গা শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা অথবা একই শ্রেণির কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার হয় না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, নগর পরিকল্পনায় ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়, যেকোনো জায়গার ব্যবহার হবে ২৪ ঘণ্টা। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল কর্মচঞ্চল থাকে মাত্র ১২ ঘণ্টা। এরপর ওই জায়গার ব্যবহার হয় না। রাতে নীরব ও ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়।
তিনি বলেন, যে মতিঝিলে দিনের বেলায় হাঁটা যায় না; গাড়ির কারণে, যানজটে; সেই মতিঝিলে রাত ৮টার পরে আবার একাও হাঁটা যায় না; অনিরাপদ বোধ হয়। এ জন্য যারা দিনে বাণিজ্য করতে আসেন, তারা মতিঝিল এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন না। অন্যদিকে গুলশান-বনানী এলাকায় থাকলে তারা শপিংয়ে যেতে পারেন, কফি শপে যেতে পারেন। এসব কারণে সারা বিশ্বে ভূমির মিশ্র ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, মতিঝিল এলাকা যেহেতু ইতিমধ্যে তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলেছে, এ জন্য মতিঝিলের জমির শ্রেণিকে মিশ্র ব্যবহার হিসেবে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছে রাজউক। সংশোধিত ড্যাপে সে বিষয়ে নির্দেশনা রাখা হয়েছে। পৃথিবীর নগর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৫০, ৬০ বা ১০০ বছর অন্তর সেসব ঢেলে সাজানো হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়েই মতিঝিল এলাকাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে আবাসিকের বৈশিষ্ট্য দিতে হবে; কনডোমিনিয়াম গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি, ওয়াকওয়ে থাকবে। বসার ব্যবস্থা থাকবে। মতিঝিল এলাকায় ঝিল ছিল, ওই ঝিলকে প্রাধান্য দিয়ে পার্কটি তৈরি করা হবে। বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া মতিঝিলকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিলের আধুনিকায়ন ও ভূমির মিশ্র ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাহলে মতিঝিল সচল থাকবে; তবে ঢাকা শহর বড় হওয়ায় আরও বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে ওঠা ইতিবাচক। এসব পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার ছিল; কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে সে রকম হয়নি। এটা দুঃখজনক। এ জন্য শহরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ঢাকায় এখন অনেকগুলো বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সব অঞ্চলে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় বড় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় মতিঝিলে রয়েছে। তবে ব্যবসা গুলশান, বনানী, উত্তরা, গাজীপুরে সরে যাওয়ায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ব্যবসা কেন্দ্রের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।