
দেশের পুরনো সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে দীর্ঘদিন ধরেই অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয় না। আর অনেক বিদ্যালয়েই এখনো রয়েছে ব্রিটিশ আমলের ভবন। দুই শিফটের এসব বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় নানা সংকটে পড়তে হচ্ছিল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। এজন্য ৩২৩টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় উন্নয়নে ৩ হাজার ২৮৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দুই দফায় প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৩৫ শতাংশ। ফলে ঢিমেতালে চলা এই প্রকল্পের উন্নয়নকাজই বেদনায় পরিণত হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাড়ে ছয় বছরে প্রকল্পটির ৩৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। বাকি ৬৫ শতাংশ শেষ হতে কত বছর সময় লাগবে তা জানাতে পারছেন না কেউ? পাঁচ বছরের একটি প্রকল্প শেষ হতে যদি ১০ বছর লেগে যায়, তখন এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার সুযোগ থাকে। এমনকি বিদ্যালয়গুলোর জন্য যেসব মডেলের কম্পিউটার ও কম্পিউটার সামগ্রী, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতিসহ নানা উপকরণ কেনার কথা ছিল, সেসব মডেল এখন অনেকটাই পুরনো হয়ে গেছে। এ ছাড়া সাত-আট বছর আগে প্রকল্পের মালামাল কেনার যে খরচ ধরা হয়েছিল, তা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এ অবস্থায় প্রকল্প বাস্তবায়ন ও এর সুফল পাওয়া নিয়েই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতে অ্যাকাডেমিক ভবন, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞান ল্যাবরেটরি, কম্পিউটার ল্যাবরেটরি, প্রার্থনার জন্য কক্ষ, হোস্টেল, শিক্ষকদের জন্য ডরমেটরি, প্রধান শিক্ষকের জন্য কোয়ার্টার ইত্যাদি নির্মাণের জন্য প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। এর মেয়াদ ধরা হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। তবে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই প্রথমবার ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। দ্বিতীয় দফায় ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এখন তৃতীয়বারের মতো ২০২৬ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
প্রকল্পটির পরিচালক অধ্যাপক মো. নাসির উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মূলত তিন কারণে প্রকল্পটির অগ্রগতি কম। প্রথমত, প্রকল্পটি দেড় বছর পর শুরু হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনার কারণে অর্থছাড় বন্ধ ছিল। তৃতীয়ত, জেলাপর্যায়ের ভবনগুলো ছয়তলা থেকে দশতলায় উন্নীতকরণের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করা। তবে এখন প্রকল্পটি ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। এ বিষয়টি একনেকে পাস হলেই প্রকল্পের কাজ জোরেশোরে শুরু হবে। আমরা আবার দরপত্রে যেতে পারব। আশা করছি, ২০২৬ সারের মধ্যেই প্রকল্পের সব কাজ শেষ হবে।’
সম্প্রতি সরকারের বাস্তবায়ন পরীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এ প্রকল্পের ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তারাই এ প্রকল্পের দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩২৩টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১২৫টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিদ্যমান ভবন ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ১০২টি বিদ্যালয়ের ভবন সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ৭৪টির কার্যক্রম পুরোপুরি সমাপ্ত হয়েছে, অবশিষ্ট ২৮টি ভবনের কার্যক্রম বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায়ে ১৪৮টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৩৭টির নির্মাণকাজ চলমান। এর মধ্যে মাত্র দুটি ভবনের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে, অবশিষ্টগুলোর কাজ চলছে।
জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের ১৭২টি নতুন ভবন নির্মাণকাজ বর্তমানে স্থগিত রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ২৪টি বিদ্যালয়ের হোস্টেল নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৮টির দরপত্র অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পণ্য হিসেবে প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিটের জন্য আসবাবপত্র ও অফিস সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। প্রকল্প অফিসের জন্য তিনটি জিপ গাড়ি ও একটি মাইক্রোবাস কেনা হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পের নির্মাণ ও পূর্তকাজের গড় বাস্তব অগ্রগতি ৩৫ শতাংশ।
প্রকল্পের দুর্বল দিকের বিষয়ে আইএমইডি বলছে, প্রকল্পটি প্রণয়নের আগে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন অবস্থায় জেলা ও বিভাগীয় শহরে বিদ্যালয়ের ছয়তলা থেকে দশতলায় রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্প পরিচালক ও অন্যান্য জনবল নিয়োগেও বিলম্ব হয়েছে। প্রকল্প প্রণয়নের সময় অনুসরণকৃত রেট শিডিউল প্রকল্প বাস্তবায়নের আগেই পরিবর্তন হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্প প্রণয়নকালে গণপূর্তের ২০১৪ সালের রেট শিডিউল অনুসরণ-পূর্বক যাবতীয় পূর্তকাজের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়। কিন্তু প্রকল্পটি প্রশাসনিক অনুমোদনপ্রাপ্ত হয় ২০১৮ সালের ২০ মে। ইতিমধ্যে গণপূর্তের ২০১৮ সালের রেট শিডিউল কার্যকর হয়ে যায়, যা প্রকল্প বাস্তবায়ন তথা পূর্তকাজ বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। এখন এই সাত বছরে প্রকল্পের ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে, যা এড়ানোর কোনো উপায় নেই।
আইএমইডি সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলেছে, ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ সাড়ে চার বছর। যেহেতু জনবল নিয়োগ ও বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়, তাই প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়। পরে নতুন স্কুল ভবন ছয়তলার পরিবর্তে দশতলায় রূপান্তরের সিদ্ধান্ত হওয়ায় আরও এক বছর বাড়ানো হয়। যদিও বলা হয়েছিল, এতে তিন বছর বেশি সময় লাগতে পারে। ফলে প্রকল্পটি সংশোধন-পূর্বক ২০২৬ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলমান।
এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী অতিমারী কভিড-১৯-এর ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের তৃতীয় কোয়ার্টার এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম কোয়ার্টারে প্রকল্পটির অর্থ বরাদ্দ স্থগিত রাখা হয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরেও প্রকল্পটির বাজেট কমানো হয়েছে। এতে পূর্তকাজের বিল চাহিদা মোতাবেক পরিশোধ করা এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী পণ্য ও সেবা কেনা সম্ভব হচ্ছে না।
প্রতিবেদনের সুপারিশে প্রকল্পটির গতি আনতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। তবে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীভূত হবে, শিক্ষার্থী ভর্তির চাহিদা পূরণ হবে, বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহ বাড়বে এবং শিক্ষার গুণগত মান বাড়বে।
সরকারি হাসপাতালে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসাসেবার মানোন্নয়নের জন্য একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি রয়েছে। অধিকাংশ হাসপাতালে এর কার্যকারিতা নেই। মাসে অন্তত একবার বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও বছরে একবারও বসতে পারছে না তারা। সারা দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও গাছাড়া ভাব ছিল তাদের। করোনা মহামারীর মধ্যেও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির একই দশা ছিল।
সংসদ সদস্য বা মন্ত্রীর সময়ের অভাবে নিয়মিত কমিটির সভা হয় না। ফলে জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য খাতে সমন্বয়হীনতা বিদ্যমান। রোগীরা যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী প্রতি জেলার জ্যেষ্ঠ জনপ্রতিনিধি হলেন ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান।
জানা গেছে, ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক নিয়মিত না হওয়ার জন্য জনপ্রতিনিধিদের অনীহা অনেকাংশে দায়ী। কিছু বৈঠক যদিও হয়, তাতে মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যরা খুব কম সময়ই উপস্থিত থাকতে পারেন। মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে প্রতি মাসে অন্তত একবার বৈঠকে বসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যসেবা-সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জনপ্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসন-সংশ্লিষ্টদের নিয়ে গঠিত হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির উদাসীনতা ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার জন্য দায়ী। রাজধানীতে ডেঙ্গু মোকাবিলায় সিটি করপোরেশনও ব্যর্থ। এবার জেলা পর্যায়েও ডেঙ্গুতে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা রেকর্ড গড়েছে। জেলায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ওপর বর্তায়। তারা সময়মতো হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাই করতে পারে না। তাদের উদাসীনতার বিষয়টি স্পষ্ট।
কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে ডেঙ্গু বা মশা নিয়ন্ত্রণে জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয়তা দেখা যায়নি। জনসাধারণকে নিয়ে জনপ্রতিনিধিরা যদি সামাজিক আন্দোলন গড়তে না পারেন, তাহলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ বা নির্মূল সম্ভব নয়।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, হাসপাতালের সার্বিক বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এলাকায় সক্রিয় নন। মন্ত্রী, সংসদ সদস্যরা নিজ এলাকার হাসপাতাল নিয়ে সক্রিয় হলে দেশের স্বাস্থ্যসেবার পরিস্থিতি পাল্টে যেত। চিকিৎসা খাতে রাষ্ট্রের যে বাজেট তার সদ্ব্যবহার হতো।
জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এত সরকারি হাসপাতাল কেন্দ্র থেকে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয় না; সে কারণেই ব্যবস্থাপনা কমিটি। কমিটি সক্রিয় হলে হাসপাতালের সেবার মান বাড়ে এমন অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। যে বরাদ্দ হাসপাতালে দেওয়া হয়, কমিটির মাধ্যমে তার ব্যবহার যথাযথ করা যায়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের যুক্ত করে হাসপাতালের অনিয়ম দূর করা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘কমিটির ধারণাটি খুবই ভালো ছিল। কিন্তু এমপি মহোদয়রা মিটিং করেন না। ফলে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। সংসদ বা সরকারের সংশ্লিষ্ট পক্ষ কমিটিগুলো মনিটরিং করলে বড় ভূমিকা রাখা সম্ভব। তখন মানুষ হাসপাতালগুলোকে সরকারের নয়; বরং নিজেদের মনে করবে।’
অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু। এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি। সংখ্যাটি আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, জেলা পর্যায়ে চিকিৎসা-সেবাদাতা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করবে ব্যবস্থাপনা কমিটি। তারা হাসপাতালের অনুমোদিত বাজেটের মধ্যে বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে। স্বাস্থ্যসেবার মান নিশ্চিতে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং মুক্তিযোদ্ধা, হতদরিদ্র, মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ ও সুবিধাবঞ্চিতদের সেবা নিশ্চিতের দায়িত্ব কমিটির। কমিটিকে প্রয়োজনে বিশেষ দায়িত্ব পালনে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিজস্ব ও বাইরের ব্যক্তিদের নিয়ে উপকমিটি গঠন করতেও বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে উপকমিটি গঠনে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির অকার্যকারিতা অপ্রত্যাশিত। নিয়মিত কমিটির সভা হলে জেলার সার্বিক স্বাস্থ্যচিত্র সম্পর্কে জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টরা অবগত হয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে। এভাবে হাসপাতাল শুধু নয়, পুরো জেলার স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন সম্ভব। কমিটির কার্যকারিতা না থাকায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না।
ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি। হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. এনামুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি সর্বশেষ সভার তারিখ জানাতে পারেননি। সভাপতি হাসপাতালে এসেছিলেন গত বছরের ২৫ আগস্ট। এরপর আর ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়নি।
ডা. মো. এনামুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সভাপতি ছাড়া বা তার মনোনীত প্রতিনিধি ছাড়া তো সভা হয় না। এ কারণে আমাদের সভার আয়োজন করা যাচ্ছে না।’
মানিকগঞ্জের কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেরও একই অবস্থা। এই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ব্যস্ততার কারণে তাকে সভার কথা বলতে পারে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ব্যবস্থাপনা কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকাও নেই পরিচালকের কাছে। হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. আরশাদ উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি গত বছরের ২ নভেম্বর যোগ দিয়েছি। এরপর সভা হয়নি। কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকাও পাইনি।’
সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সভাপতি হলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। এই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সর্বশেষ বৈঠক হয়েছে গত ডিসেম্বরে। তার এক বছর আগে আরেকটি সভা হয়েছিল। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয় রাষ্ট্রীয় কাজে অত্যন্ত ব্যস্ত। আমাদের ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক না হলেও তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হয়। তাকে সব বিষয়ে জানিয়ে থাকি এবং তিনি তাৎক্ষণিক সমাধান দেন। কমিটির নিয়মিত বৈঠক না হলেও হাসপাতালের কার্যক্রম ঠিকমতো পরিচালিত হচ্ছে।’
বরিশাল সদর জেনারেল হাসপাতালের সর্বশেষ সভা হয়েছে ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর। রাজশাহীতে এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। এ বছর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়েছে গত ২২ জানুয়ারি। এরপর আর সভা হয়নি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সবশেষ সভা হয়েছে গত ১ এপ্রিল। মৌলভীবাজারে তিন-চার মাস আগে সর্বশেষ সভা হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। ঠিক কবে হয়েছে, সেটি অবশ্য জানাতে পারেনি। যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য। এই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সর্বশেষ সভা হয়েছে গত মে মাসে। ফেব্রুয়ারিতেও আরেকটি সভা হয়েছিল।
হাসপাতাল সূত্রগুলো জানিয়েছে, করোনা মহামারীর সময়েও ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক নিয়মিত হয়নি।
হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর প্রায় ৬০ শতাংশ ঢাকার বাইরের। গত মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে ২ হাজার ২৯১ জন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৯২০ ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ১ হাজার ৩৭১ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে। এ বছর ডেঙ্গু নিয়ে ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬২ হাজার ৮৮৬ জন। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫৬ হাজার ২৪৭ জন।
দেশের সব সরকারি হাসপাতাল কমিটির সভা নিয়মিত হয় কি না এর তদারকির দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। এ ব্যাপারে জানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ বি এম খুরশীদ আলমকে মোবাইল ফোনে কল দিয়েও পাওয়া যায়নি। অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক ডা. মো. হাবিবুল আহসান তালুকদারের বক্তব্যও পাওয়া যায়নি। তবে অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার সহকারী পরিচালক ডা. শেখ দাউদ আদনান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলোর তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে থাকা তো জরুরি না। তাদের প্রয়োজনে তারা বৈঠক করবে; বিশেষ সময়ে বা নির্দিষ্ট সময়ে বৈঠক করবে। এটা একেবারেই স্থানীয় বিষয়।’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভারত সফর নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। তিন দিনের ভারত সফর শেষে গত ২৩ আগস্ট দেশে ফিরলেও এ সফর নিয়ে দলের সর্বোচ্চ ফোরাম প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেননি।
গত মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরের এই প্রতিবেদক দীর্ঘসময় জিএম কাদেরের বনানীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে অপেক্ষা করেও তার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। এ সময় তার প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী জানান, স্যার আপাতত (জিএম কাদের) মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছেন না।
যদিও গতকাল বুধবার জিএম কাদের ইউটিউবে তার নামে অপপ্রচারের ভিডিও ছড়ানো বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি ভারত সফর নিয়েও কথা বলেছেন। তবে এর আগে তিনি যা বলেছেন ঘুরেফিরে সেটাই আবার বলেছেন। তিনি বলেছেন, ভারত সরকারের বিশ্বাস জাতীয় পার্টি একটি সম্ভাবনাময় দল, জাতীয় পার্টি আগামীতে ভালো করতে পারবে।
গত ২০ আগস্ট ভারত সফরে গিয়েছিলেন জিএম কাদের। তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী শেরিফা কাদের ও চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা মশরুর মাওলা।
ভারত থেকে ফিরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জিএম কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, ভারত বাংলাদেশে একটি সুন্দর নির্বাচন দেখতে চায়। নির্বাচনের আগে ও পরে যাতে কোনোক্রমেই সহিংসতা, অরাজকতা না হয়। তারা প্রত্যাশা করে, সবাই মিলে ওই ধরনের একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে। কার কার সঙ্গে সেখানে আলোচনা হয়েছে, কী বিষয়ে হয়েছে সে ব্যাপারে অনুমতি ছাড়া তিনি কিছু বলতে পারবেন না।
ভারত থেকে ফিরে আসার পর এক সপ্তাহ হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত জাতীয় পার্টির কোনো আনুষ্ঠানিক সভা ডাকেননি জিএম কাদের। যদিও তিন দিন ধরে তিনি বনানীর কার্যালয়ে আসছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রেসিডিয়াম সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভারত সফরে যাওয়ার আগেও জি এম কাদের দলের ফোরামে কোনো আলোচনা করেননি। তা ছাড়া তার সফরসঙ্গী হিসেবে কারা যাবেন সে বিষয়েও দলের কেউ জানতেন না। ভারতের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ দেশ সফর করে এলেও তিনি কোনো মিটিং ডেকে সেখানে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং নতুন কোনো নির্দেশনা আছে কি না তা ব্যাখ্যা করেননি। ফলে নেতাকর্মীরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন। এ নিয়ে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের প্রশ্ন রয়েছে।
ফিরে আসার দিন জিএম কাদেরকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে দেখা যায়নি দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের। মুজিবুল হক চুন্নু ছাড়া বিমানবন্দরে আর কোনো কো-চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন না। এমনকি অধিকাংশ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্যদেরও বিমানবন্দরে দেখা যায়নি।
জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যখন বিদেশ সফরে যেতেন, তখন দলে একটা কৌতূহল কাজ করত। কারা তার সফর সঙ্গী হবেন, এ নিয়ে নানা দেন-দরবারও চলত। তার সফর সঙ্গী হিসেবে অনেকেই যেতেন। অথচ নির্বাচন সামনে রেখে দলের চেয়ারম্যান ভারত সফরে গেলেও এটা ব্যক্তিগত নাকি রাষ্ট্রীয় সফর তা জানতে গণমাধ্যমের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল নেতাকর্মীদের।
জানতে চাইলে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু দেশ রূপান্তরকে বলেন, দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে কারও তুলনা করা ঠিক হবে না। এরশাদ ‘ক্যারিশমাটিক’ লিডার ছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। ফলে তার সঙ্গে অন্য কারও তুলনা হয় না। তিনি বলেন, ‘দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের অধিক মানুষ পছন্দ করেন না। তিনি দেশে ফিরলে নেতাকর্মীরা বিমানবন্দরে ফুল দিয়ে তাকে স্বাগত জানাবেন এটা তার অপছন্দ। ফলে দলের মহাসচিব হিসেবে তিনি সবাইকে নিষেধ করেন। যদিও নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করে বিমানবন্দরে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।’ কিন্তু নিষেধ উপেক্ষা করেও সেদিন বিমানবন্দরে হাজার হাজার কর্মী উপস্থিত ছিলেন বলে দাবি চুন্নুর।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জিএম কাদেরের ভারত সফর নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যাওয়ার কিছুদিন আগে ভারত সফর করেছে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জিএম কাদের নিজেই এই সাসপেন্স তৈরি করেছেন। তিনি ভারত থেকে ফিরে এক বক্তব্য দিয়ে পুরো ফোকাস নিজের দিকে কেড়ে নিতে চেয়েছেন। এই বক্তব্যের ফলে রওশন এরশাদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের চিঠি নিয়ে যে তোলপাড় ছিল তা ধামাচাপা পড়ে গেছে।
তারা মনে করেন, ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পেছনে ‘ভারতের চাপ’ ছিল। সে সময় সুষমা স্বরাজ অনেকটা বাধ্য করেন জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে অংশ নিতে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টি কী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে থাকবে নাকি বিএনপির সঙ্গে থাকবে অর্থাৎ রাজনীতির মাঠে জাতীয় পার্টির ভূমিকা কী হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট একটা নির্দেশনা ভারত দিয়েছে বলে তারা মনে করেন। ফলে আগামী দিনে জিএম কাদের সরকারবিরোধী সমালোচনা অব্যাহত রাখেন নাকি নতুন কোনো চরিত্র সামনে নিয়ে হাজির হন, এ মুহূর্তে রাজনীতিতে এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন জিএম কাদের ও রওশনপন্থিরা। এ দুই নেতার অনুসারীরা ভিন্ন ভিন্ন কার্যালয়ে তাদের কর্মতৎপরতা চালাচ্ছেন। জিএম কাদেরের অনুসারীরা বনানীর কার্যালয়ে এবং রওশন অনুসারীরা গুলশান কার্যালয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
জিএম কাদেরের অনুসারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আপাতত তারা কোনো জোটে যাবেন না। তারা বিএনপি-আওয়ামী লীগ উভয় পক্ষকে বিবেচনায় রেখে সেপ্টেম্বর মাসের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখতে চান। তাদের ধারণা, সেপ্টেম্বরে বিএনপি মাঠ দখল করতে শক্তি প্রদর্শন করবে। দলটি যদি সফল হয় তাহলে জিএম কাদেরপন্থিদের সিদ্ধান্ত হবে একরকমের। আবার সরকার যদি চলমান সংকট মোকাবিলা করতে সফল হয় তাহলে তারা সরকারের সঙ্গে দর-কষাকষি করে আসন বাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করবেন। এ ক্ষেত্রে তারা সাবধানে পা ফেলতে চান।
নির্বাচনের আগে একটা জোট গঠনের ভাবনাও আছে জিএম কাদেরের অনুসারীদের মধ্যে। এ ক্ষেত্রে তারা প্রাথমিকভাবে ইসলামি দলগুলোর কথা বিবেচনা করছেন। এ ছাড়া সম্প্রতি জাতীয় পার্টির মহাসচিবের সঙ্গে দেখা করেছেন গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নূর।
জোট গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। আমাদের দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত। যে কারও সঙ্গে জোট গঠন করা হতে পারে। তবে তিনি বলেন, ভিপি নুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাই হিসেবে দেখা করতে এসেছিলেন। সেখানে সার্বিক বিষয়ে আলাপ করা হলেও জোট গঠনের বিষয়ে আলাপ করা হয়নি।’
সরকারের অধীনে থাকবে নাকি বিএনপির সঙ্গে সমন্বয় করে জাতীয় পার্টি আন্দোলন করবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিএনপি-আওয়ামী লীগ কেউই জাপার আপন নয়। বিএনপি বিভিন্ন সময় জাপার ওপর অত্যাচার করেছে, এমনকি জেলে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকেও তারা অত্যাচার করেছে। আবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করলেও তারা আমাদের প্রাপ্য মূল্যায়ন করেনি। জাপাকে আওয়ামী লীগ দুর্বল করেছে। সুতরাং আমরা জনগণের কথা মাথায় রেখে জনগণের প্রয়োজনে নির্বাচনে অংশ নেব।’
অন্যদিকে নির্বাচন সামনে রেখে রওশনপন্থিরাও সক্রিয়। এ পক্ষের একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী নির্বাচনে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে তারা বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যে কিছু পরিকল্পনা নিয়েছেন তারা। প্রাথমিকভাবে জাতীয় পার্টি থেকে চলে যাওয়া আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জাতীয় পার্টি-জেপিকে ও কাজী জাফর আহমেদের অনুসারীদের ফিরিয়ে আনতে কাজ করছেন তারা। ইতিমধ্যে এ দুই দলের নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে তাদের। পাশাপাশি গত কয়েকটি নির্বাচনে দলটির প্রার্থী কোন কোন আসনে জয় লাভ করেছেন, তাদের ভোটের পরিমাণ কেমন ছিল, নতুন করে কোন আসনে কাকে প্রার্থী করা যায়, এ বিষয়ে পরিকল্পনা ও তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করছেন তারা। আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ বাড়ানো ও দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে কাজ করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে সেপ্টেম্বরে দলের কাউন্সিল করতে চান ম্যাডাম (রওশন এরশাদ)। এ বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতি চলছে। ম্যাডাম মনে করেন, সামনে নির্বাচন। কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীদের চাঙা করে তুলতে হবে। সর্বশেষ সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা খুব কম ভোট পাচ্ছেন, যা উদ্বেগের। এসব সংকট কাটাতে ম্যাডাম ভোটের আগে তৃণমূলকে উজ্জীবিত করতে চান।’
ভারতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জি-২০ সম্মেলন শেষে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকা সফরে আসছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। ১৯৯০ সালের পর বাংলাদেশে আসছেন ফ্রান্সের কোনো প্রেসিডেন্ট। গতকাল বুধবার দুই দেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক-সামরিক বিষয়ক ব্যুরোর আঞ্চলিক নিরাপত্তা সম্পর্কিত উপসহকারী সেক্রেটারি মিরা রেসনিক পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে আগামী সপ্তাহে ঢাকায় আসছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা। তিনি জানান, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র পরবর্তী পর্যায়ের নিরাপত্তা সংলাপ আয়োজনের প্রস্তুতি হিসেবেই আগামী ৪ সেপ্টেম্বর তার ঢাকায় পৌঁছার কথা রয়েছে।
গতকাল ম্যাক্রোঁর সফরের বিষয়টি নিশ্চিত না করলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ঢাকা সফর নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। জি-২০ সম্মেলন শেষে তিনি ঢাকা আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক অনুষ্ঠান শেষে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সফরের বিষয়ে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের অনেক ইস্যু।
ম্যাক্রোঁর সফরে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু, নারীর ক্ষমতায়ন, বিনিয়োগ বাড়ানো ও ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোসহ আমাদের অনেক ইস্যু রয়েছে। সেই সঙ্গে নিয়মিত অভিবাসন ইস্যু থাকে। এগুলো আমাদের নরমাল ইস্যু। জলবায়ু বড় ইস্যু, বিশেষ করে ফ্রান্সের সঙ্গে। এ বিষয়ে ফ্রান্স লিডারশিপ রোল প্লে করে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে আমরা বলতে চাই, লস অ্যান্ড ডেমেজ ইস্যুটা তহবিল করার জন্য উদ্যোগ নিন। তিনি টাকা সংগ্রহে উদ্যোগ নেবেন।
তিনি জানান, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের কাছে যে জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় ইস্যু। এটি মোকাবিলায় তহবিল সংগ্রহের জন্য তাকে আমরা বলেছি। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এলে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টি বড় করে তুলব।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের নভেম্বরে প্যারিস সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সরকারপ্রধান।
জানা গেছে, ঢাকা সফরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। তিনি ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরা।
৪ সেপ্টেম্বর আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক নিরাপত্তাবিষয়ক উপসহকারী সেক্রেটারি : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র পরবর্তী পর্যায়ের নিরাপত্তা সংলাপ আয়োজনের প্রস্তুতি হিসেবে আগামী ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক-সামরিকবিষয়ক ব্যুরোর আঞ্চলিক নিরাপত্তা সম্পর্কিত উপসহকারী সেক্রেটারি মিরা রেসনিক।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রটি জানিয়েছে, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অস্ত্র স্থানান্তর ব্যুরোর অফিসের তত্ত্বাবধান করেন রেসনিক। ব্যুরোর নিরাপত্তা সহায়তা অফিসেরও তত্ত্বাবধান করেন রেসনিক। তার এ সফরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি রাশেদ চৌধুরীকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করতে পারে বাংলাদেশ। এ ছাড়া আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের হুমকি হিসেবে রোহিঙ্গা ইস্যুটিও আলোচনায় আসতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, কিছু বড় দেশ বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এখানে একটি তাঁবেদার সরকার চায়। তার ভাষ্য, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে কিছু (বড়) দেশ বাংলাদেশে এমন একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেটি তাদের চাটুকার হবে। গতকাল বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। খবর-বাসস
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের রক্ত ঝরিয়ে দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়া সত্ত্বেও যেসব দেশ বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচন খুঁজছে তাদের কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রক্তের বিনিময়ে আমরা দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি।
তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট এর আগে বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স চালুর প্রস্তাব দিয়েছিল। ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার আইন প্রণয়ন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে এবং কমিশনকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন করেছে।
তারা (কিছু বড় দেশ) গণতন্ত্র ও নির্বাচনের অতীত সম্পর্কে নাও জেনে থাকতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজ, তারা আমাদের দেশে গণতন্ত্র এবং ভোট দেওয়ার অধিকার খুঁজছে।’
সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান, যে পকেট থেকে বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, প্রথমে হ্যাঁ/না ভোট এবং রাষ্ট্রপতির ভোটের মাধ্যমে ভোট কারচুপির সংস্কৃতি চালু করে নির্বাচন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু করেন এবং এরশাদ ও খালেদা জিয়া সেই পথই অনুসরণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বড় দেশগুলো সব সময় বিশ্বের সর্বত্র মাতবরি করার চেষ্টা করে। রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের অমানবিক অবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যাদের তাদের (বড় দেশ) মতো বন্ধু আছে তাদের শত্রুর কোনো প্রয়োজন নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি রাশেদ ও নূরকে আশ্রয় দিয়েছে এবং বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে খুনি রাশেদকে ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করেছি কারণ আমাদের বিচার বিভাগের বিচারে সে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। এতে হস্তক্ষেপ করার অধিকার তাদের নেই। তারা এখন খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে।’
তিনি বলেন, খুনি ডালিম ও রশিদ পাকিস্তান ও লিবিয়ার মধ্যে তাদের আস্তানা পরিবর্তন করে চলছে, অন্য একজন খুনির হদিস এখনো পাওয়া যায়নি এবং বাকি খুনিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে।
তিনি বলেন, খুনিদের বিচারের জন্য আমার পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমি দেশবাসী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনি ছিলেন এবং তিনি খুনিদের বিচার বন্ধ করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন এবং তাদের বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে পোস্টিং দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলাম।
ঢাকা উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মোন্নাফী এবং পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।
ঢাকা উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাদেক খান এমপি, আবদুল কাদের খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম মাজহার আনাম ও মো. আজিজুল হক রানা, পরিবার কল্যাণ সম্পাদক মেহেরুন্নেছা মেরি ও ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. দিলীপ কুমার রায়, মিজবাউর রহমান ভূঁইয়া রতন ও সাজেদা বেগম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মোরশেদ কামাল, সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তার হোসেন ও গোলাম সারোয়ার কবির প্রমুখ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকা- এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নানামুখী চাপ দিচ্ছে। দেশগুলো নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন সবক ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেই ঢাকা সফরে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় চরম বৈরী সম্পর্কের দেশ রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর দুদিনের সফরে তিনি বাংলাদেশে আসবেন। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এখান থেকে সরাসরি যোগ দেবেন দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ সম্মেলনে।
স্বাধীনতার পর এই প্রথমবারের মতো কোনো রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর ঘিরে একদিকে যেমন প্রস্তুতি চলছে, অন্যদিকে তেমনি কিছুটা রাখঢাকও করতে চাচ্ছে সরকারপক্ষ। কারণ পশ্চিমা দেশগুলো এ সফর নজরের মধ্যে রাখছে। এমনিতেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে চীনের মন্তব্য এবং গত কয়েক বছরে দেশে চীনের অর্থায়নে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নসহ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ওয়াশিংটন ও পশ্চিমাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই মনে করা হচ্ছে, হঠাৎ করে ল্যাভরভের এ সফর নতুন কোনো বার্তা হয়ে আসতে পারে। পশ্চিমারা বিষয়টি নজরে রাখছে বলে মনে করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কূটনৈতিক সূত্রগুলো।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ল্যাভরভের সফরের বিষয়টি চূড়ান্ত। রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘ সময়ের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পাশাপাশি স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। আবার চলমান ভূরাজনৈতিক মেরূকরণে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকা নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে।
ল্যাভরভের সফরের বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সম্প্রতি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা টাইমিং নিয়ে কাজ করছি। তার সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে দেখা হয়েছে। তবে আলোচনার মতো প্রেক্ষাপট হয়নি। এখনো সময় চূড়ান্ত হয়নি।’
কূটনৈতিক একাধিক সূত্র বলেছে, বৈশ্বিক সংকটময় পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের ওপর পশ্চিমাদের খড়গের মধ্যে এ সফরটি হবে ‘হাইলি পলিটিক্যাল’। ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে রাশিয়াকে ঘিরে যে পশ্চিমা বিরোধ তৈরি হয়েছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে যে শক্ত অবস্থান দেখা যাচ্ছে, তাদের কাছে বাংলাদেশও এখন গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই ঢাকা ও মস্কোর জন্য এ সফরটি সময়ের দিক দিয়ে ঐতিহাসিক বিবেচিত হলেও রাজনৈতিক ও ইন্দোপ্যাসিফিক কৌশলের কারণে আরও বেশি ঐতিহাসিক হতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাশিয়ার পক্ষ থেকেই এ সফরের প্রস্তাব এসেছে। এর আগেও ঢাকায় রাশিয়ার দূতাবাস থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছিল। এবারও রুশ দূতাবাস থেকেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢাকাও ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। যদিও সফরের সময়সূচি এখনো ঠিক হয়নি। সফরটি নিয়ে পশ্চিমাদের উদ্বেগ দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। যদিও বাংলাদেশ নিজেদের স্বার্থের বিষয়গুলোই বিবেচনা করছে। তবে দীর্ঘ সময়ের বন্ধু ও উন্নয়ন সহযোগী দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে বাংলাদেশ। এর পাশাপাশি দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ইস্যু আলোচনায় প্রাধান্য দেওয়া হবে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই তা বন্ধে শান্তি আলোচনার আহ্বান জানিয়ে আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ল্যাভরভের সফরেও বিষয়টি আলোচনায় আসবে। এ যুদ্ধের ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতি ও ভূরাজনৈতিক ইস্যুতে যেসব নেতিবাচক বিষয় তৈরি হয়েছে তাও আলোচনা করবে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে এ সফরটি ঢাকা ও রাশিয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কূটনৈতিক পর্যবেক্ষক ও কূটনৈতিক সূত্রগুলো মনে করছে, স্বাধীনতার পর এই প্রথমবারের মতো কোনো রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর অবশ্যই মাইলফলক হয়ে থাকবে। যদিও ঢাকা প্রকাশ্যে বিষয়টা সাদামাটাভাবেই নিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাশিয়া বরাবরই বাংলাদেশের মিত্র। আমাদের দেশে তো প্রায় সব দেশেরই শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা সফর করছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মতো বড় দেশের শীর্ষ ব্যক্তিরা আসছেন। যেকোনোভাবেই হোক রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের ঢাকা সফর অবশ্যই একটি বড় খবর। আবার তিনি জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে দিল্লি যাবেন ঢাকা হয়ে। আমি মনে করি ল্যাভরভের এ সফর ঘিরে অবশ্যই সরকারপক্ষের প্রস্তুতির বিষয় থাকতে হবে। কারণ মিত্র দেশ হলেও বাংলাদেশের স্বার্থ সবার আগে দেখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা সফরের পর রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিল্লি যাবেন এবং সেখানে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বৈঠক হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তৈরি বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির শিকার সবাই।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জাতিসংঘে সোচ্চার ছিল উল্লেখ করে ওয়ালিউর রহমান বলেন, ‘তাদের বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে স্বাধীনতা ত্বরান্বিত হয়েছে। এটা মনে রাখতে হবে এবং মূল্যায়ন করতে হবে। তবে এখন প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়েছে। একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ ইউক্রেনকে রাশিয়া যেভাবে আক্রমণ করল তা মানার মতো নয়। আমি মনে করি রাশিয়াকে এটা আনুষ্ঠানিকভাবে বলা উচিত। কোনো বন্ধুরাষ্ট্র যদি ভুল করে তা তো ধরিয়ে দেওয়া যেতেই পারে।’
সরকারের ওপর আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার বৈরী সম্পর্কের মধ্যে এ সফরকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে সাবেক এ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি তা মনে করি না। বাংলাদেশ তার স্বার্থই দেখবে।’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘প্রথম থেকেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ বন্ধের তাগিদ দিয়ে আসছেন। আমি মনে করি ল্যাভরভের সফরেও যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নেওয়ার ওপর জোর দেওয়া যায়। কীভাবে যুদ্ধ বন্ধ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করা উচিত। কারণ রাশিয়া-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব পরীক্ষিত। নতুন করে এখানে পরীক্ষা দেওয়ার কিছু নেই। আর যুক্তরাষ্ট্র কী মনে করল, কী নজরদারি করল, সেটাও বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কিছু আমি দেখছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে জোরালো আলোচনা হতে হবে। কারণ ইদানীং রাশিয়ার সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক বেশ জোরালো হচ্ছে। নেপিদোর উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা মস্কো ঘুরে এসেছেন। রাশিয়াকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে চাপ দিতে হবে। কারণ ভূরাজনৈতিক কারণে রাশিয়ারও বাংলাদেশকে প্রয়োজন। সেটা রাশিয়াও জানে। ফলে নিজেদের স্বার্থ নিয়ে জোরালো আলোচনা হতে পারে।’
জানা গেছে, এ সফরে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এ ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
অপেক্ষা আর মাত্র ৩ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই।
শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে। কিং খানের ‘জাওয়ান’ কাঁপাচ্ছে পর্দা, কাটতি বাড়ছে বক্স অফিসে; বিশ্বকাপে আইসিসির পকেট ভরবে তো?
প্রস্তুতি বলছে, ভরবে। উইকেটে হবে রান উৎসব, লড়াই হবে ধুন্ধুমার। তাতেই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে এক ব্লকবাস্টার মেগা হিট।
মাস তিনেক আগে, বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচগুলো যে ১০ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সেই ভেন্যুগুলোর কিউরেটরদের সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের একটাই মন্ত্র, রান চাই।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলেছে সেই ম্যাচগুলো যদিও বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হয়নি তবে সেই সব ম্যাচেও রানের বন্যা বয়েছে।
প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার করা ২৭৬ রান অনায়াসে তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ঠেঙিয়ে তুলেছেন ৩৯৯ রান। তিন নম্বর ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৫২ রান, যা তাড়া করে ভারতও গিয়েছিল ২৮৬ অবধি।
উদ্বোধনী ম্যাচ হবে গুজরাতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। ম্যাচে শুভমান গিল করেন সেঞ্চুরি, ভারত করে ৪ উইকেটে ২৩৪ রান আর জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৬৬ রানে।
বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের ধরন বুঝে ব্যাট করতে পারলে ৫০ ওভারে এখানে রানবন্যা হবে। বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুই দল এখানে মুখোমুখি হয়েছে বহুবার, পোশাকের রঙ কখনো রঙিন কিংবা কখনো সাদা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কমেনি। এই মাঠে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রান করে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে সবশেষ ম্যাচে।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠে সবশেষ মৌসুমে ধোনির ‘ইয়েলো আর্মি’ ৮ ম্যাচ খেলে ২০০ রানের ওপরে করেছে দুইবার, একবার জিতেছে অন্যবার হেরেছে। তবে দুই ইনিংসেই ২০০’র বেশি রান হয়েছে দুটো ম্যাচেই। অর্থাৎ চাইলে চেন্নাইকেও ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত করা সম্ভব।
বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর টানা তিন ওয়ানডে জিতে সিরিজ তো নিশ্চিত করেছেই, টানা তিন ম্যাচে ৩০০’র ওপর রান করেছে। চতুর্থ ওয়ানডেতে তো ৪০০ পার করেছে প্রোটিয়ারা। ব্যাটিং উইকেটে তারাও যে কোনো প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। হেনরিক ক্লাসেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ বলে খেলেছেন ১৭৪ রানের ইনিংস। বিধ্বংসী রূপে ফিরছেন ডেভিড মিলারও।
প্রোটিয়ারা প্রথম ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। সেখানে অবশ্য সবশেষ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচেও খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৯ রানে। দিল্লির মাঠটা হয়তো খানিকটা স্পিনারদের দিকেই ঝুঁকবে, তবে অন্য মাঠগুলোতে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবে মেতে উঠতে দেখার সম্ভাবনা জোরালো। তাই অনেক সাবেক ক্রিকেটারই প্রোটিয়াদের দেখছেন শেষ চারে।
বিশ্বকাপের আগে ক্লাসেন ছাড়াও ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস খেলেছেন ১৮২ রানের ইনিংস, দারুণ ছন্দে ইংল্যান্ডের ডাভিড মালানও। তবে সেরা ছন্দে নিঃসন্দেহে শুভমান গিল। সবশেষ ৫ ইনিংসে দুটো শতরান আর একটা হাফসেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলও আছেন দারুণ ছন্দে। দুটো হাফসেঞ্চুরি আর একটা সেঞ্চুরি সবশেষ ৫ ইনিংসে। হায়দ্রাবাদে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের ৩৪৫ রান কিউইরা তাড়া করেছে ৩৮ বল হাতে রেখে।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, এই বারের বিশ্বকাপে রানবন্যায় বোলারদের জন্য কাজটা হবে কঠিন। দেশ রূপান্তরকে আশরাফুল বলেন, ‘আমাদের পেসাররা গত এক দেড় বছর ধরে খুবই ভালো করছে। তবে যেহেতু ভারতের মাটিতে খেলা, আমরা দেখেছি যে সাড়ে ৩০০’র বেশি রান হচ্ছে প্রতিটা ম্যাচে। কেউ যদি ভালো না করে, তাকে মনে রাখতে হবে যে টুর্নামেন্টে পরের ম্যাচে ফিরে আসতে হবে। একজনের দিন খারাপ যেতেই পারে, কোনো ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান উঠেই যেতে পারে। ৯টা ম্যাচের ভেতর ৪-৫টা ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান হতে পারে। তাই বোলারদের ফিরে আসার মানসিকতা থাকতে হবে।’
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বলেছেন যে দেড় মাসের আসরে প্রস্তুত থাকতে হবে যে কোনো কিছুর জন্যই, ‘দেড় মাসের আসর, ৯টা ম্যাচ এই সময়ে খেলতে হবে বা তারও বেশি। অনেক উত্থান-পতন হবে। যে কোনো কিছুর জন্যই তৈরি থাকতে হবে।’
রান উৎসবের বিশ্বকাপ যে হতে যাচ্ছে, তার সব রসদই মজুদ। মাঠগুলোকে করা হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ, বিশ্বকাপে আসার আগে সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরাও আছেন ছন্দে। শুধু প্রশ্ন এটাই, রান উৎসবের এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রান করবেন কে? সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিংয়ের ছবিটা যে মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।