
স্বাগতিক, তার ওপর আবার বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। পাল্লেকেলেতে এশিয়া কাপের আজকের ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে তাই শ্রীলঙ্কারই হেসেখেলে এগিয়ে থাকার কথা। কিন্তু লঙ্কানরা সেই স্বস্তিতে নেই, কারণ তাদের পেস বোলিং আক্রমণ যে পুরোটাই চোটের কারণে বিপর্যস্ত। সদ্যসমাপ্ত লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগের ব্যাটে-বলে সেরা ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাও হার মেনেছেন চোটের কাছে। উল্টোদিকে বাংলাদেশ দলেরও নতুন চেহারা, চোটের কারণে ইনিংসের গোড়াপত্তনে তামিম ইকবাল-লিটন দাসের কেউই নেই। সূচনায় তানজিদ হাসান তামিম-নাঈম শেখ জমানার শুরু, ওদিকে দেশ থেকে উড়াল দিয়েছেন এনামুল হক বিজয়ও। শেষ পর্যন্ত কার ভাগ্যে বিশ্বকাপের টিকিট তার ফয়সালা হয়ে যেতে পারে এশিয়া কাপেই।
কাল ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ওয়ানডে অধিনায়কত্বে নতুন করে আসীন সাকিব আল হাসান বলেছেন, সুযোগ আছে দুই দলেরই, ‘আমার মনে হয় দুই দলেরই একই অবস্থা, যারা মাঠে ভালো খেলবে তারাই জিতবে। দুই দলেরই শক্তি, দুর্বলতা একই রকম। দুদলের জন্যই সমান সুযোগ।’ সাকিবের কথাটা যৌক্তিক, কারণ শ্রীলঙ্কার যারা নতুন বলে বল করবেন এবং বাংলাদেশের যে দুই সম্ভাব্য ব্যাটসম্যান তাদের বল সবার আগে খেলবেন, দুই পক্ষই দলের প্রথম পছন্দ নন। দাঁড়িপাল্লার দুদিকেই তাই অভিজ্ঞতার অভাব। বামহাতি ফাস্ট মিডিয়াম পেসার বিনুরা ফার্নান্দো ওয়ানডে খেলেছেন ৪টি, প্রমোদ মাদুশান খেলেছেন ১টি। ১৬ ওয়ানডে খেলা কাসুন রাজিথাই লঙ্কানদের পেস আক্রমণের প্রধান কারণ চোটের কারণে দুষ্মন্ত চামিরা, দিলশান মাদুশানকা ও লাহিরু কুমারা; তিনজনই চোট পেয়ে ছিটকে গেছেন এশিয়া কাপ থেকে।
বাংলাদেশের ইনিংসের গোড়াপত্তনে কোনো শেষ মুহূর্তের চমক না থাকলে অভিষিক্ত তানজিদ হাসান তামিম আর এখন পর্যন্ত ৪ ওয়ানডেতে মাত্র ১০ রান করা নাঈমকেই দেখা যাবে। কোমরের চোটে তামিমের অনুপস্থিতির সঙ্গে যোগ হয়েছে জ্বরের কারণে লিটনের ছিটকে যাওয়া। নতুনদের নিয়ে তাই গোড়ায় গলদের আশঙ্কা থাকছে শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় সারির পেস আক্রমণের বিপক্ষেও। দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে বাদ দিলে ব্যাটিং লাইনে বাংলাদেশের পরের অধ্যায়টা বেশ সবল। ওয়ানডাউনে খেলা নাজমুল হোসেন শান্ত যদিও আফগানদের বিপক্ষে সাদা বলের দুটো সিরিজেই রানের দেখা পাননি, তবে কিছুদিন আগেই প্রথমবারের মতো বাবা হওয়ার আনন্দে ভাগ্যে বদল আসতেই পারে। তৌহিদ হৃদয় এলপিএলে শ্রীলঙ্কা মাতিয়ে গেছেন দিন কয়েক আগেই। এরপর অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটার, সাকিব আল হাসান আর মুশফিকুর রহিমের ব্যাটের দিকেই ইনিংসটা বড় করতে তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। সাতে মাহমুদউল্লাহ কেন নয় এই নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি, সেই জায়গাটাতে ক্রমশ অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা মেহেদি হাসান মিরাজ নাকি ইমার্জিং এশিয়া কাপে ভালো করা শেখ মেহেদি সেটাও দেখে নেওয়ার। সম্ভাবনা আছে টি-টোয়েন্টি দলে দ্বিতীয় দফায় ফিরে সম্ভাবনা জাগানো শামীম হোসেন পাটোয়ারীরও। এখনো ওয়ানডে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা শামীমকে দলে নেওয়ার পেছনে এটাই সম্ভাব্য কারণ।
পেস আক্রমণের নেতৃত্বে তাসকিন আহমেদ, জিম-আফ্রো টি-টেন আসরে ভালো বোলিং করে এসেছেন। এলপিএলে ডাক পেলেও তাকে ছাড়পত্র দেয়নি বিসিবি। মুস্তাফিজুর রহমানের হাঁটুতে খানিকটা সমস্যা, তিনি না খেললে আরেক বামহাতি পেসার শরীফুল ইসলাম হয়তো ঢুকে যাবেন একাদশে। হাসান মাহমুদ শ্রীলঙ্কা যাওয়ার আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও সেরে উঠেছেন, তিন পেসারে সাজানো একাদশ হলে তার দলে থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
এই বোলিং আক্রমণটা যাদের বিপক্ষে বল করবে, সেই শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং লাইনআপ কিন্তু বেশ শক্তপোক্ত। প্রায় বছর দুই পর, চলতি বছর ওয়ানডে দলে ফিরেছেন টেস্ট অধিনায়ক দিমুথ করুণারত্নে। এই বছর ১০ ইনিংসে ১টা সেঞ্চুরি আর ৫টা হাফসেঞ্চুরি, স্ট্রাইক রেট ৯০-এর ওপরে। টেস্টে বাংলাদেশকে বেশ ভুগিয়েছেন দিমুথ, ৩টা সেঞ্চুরি আর ৫টা হাফসেঞ্চুরি বাংলাদেশের বিপক্ষে। বছর দুয়েক পর ওয়ানডে দলে ফিরেছেন কুশল জেনিথ পেরেরাও। পাথুম নিসাঙ্কা, চারিথ আসালাঙ্কাদের দিয়ে বেশ লম্বা ব্যাটিং লাইনআপ শ্রীলঙ্কার, অধিনায়ক দাসুন শানাকার ব্যাটিংয়ের হাতটাও বেশ।
বাংলাদেশকে ভোগাতে পারে শ্রীলঙ্কার স্পিন আক্রমণ। যদিও লেগস্পিনার হাসারাঙ্গা নেই, তবুও দুই রহস্য স্পিনার মাথেশ পাথিরানা ও মহেশ থিকশানার ভেলকি সামলানো কঠিন হতে পারে পাল্লেকেলেতে। এই মাঠে লাসিথ মালিঙ্গার ২৪ উইকেট, থিসারা পেরেরার ১৮। দক্ষিণ আফ্রিকা এখানেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করেছিল ৭ উইকেটে ৩৬৩ রান, ৩০০ ছাড়ানো দলীয় ইনিংস আছে এক ডজন। তাই বলা যায় এই মাঠে রাজত্ব ব্যাটসম্যানদেরই।
ব্যাটিং স্বর্গে আপাতত শুরু নিয়ে শঙ্কায় বাংলাদেশ। একজন একেবারেই নতুন আর অন্যজন সুযোগ পেয়েও রান করতে ব্যর্থ, এমন দুই ওপেনারকে নিয়েই এশিয়া কাপ শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তবুও সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলঙ্কাকে তাদেরই মাটিতে হারিয়ে দেওয়ার সেরা সুযোগ এই ম্যাচটাই, সেই সঙ্গে সুপার ফোরে এক পা দিয়ে রাখারও। সবশেষ আসরে সুপার ফোরে উঠতে না পেরে আসরের বেশিরভাগ সময়েই দর্শক হয়েছিল বাংলাদেশ, এশিয়া কাপে তখন বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি আম্পায়ার মাসুদুর রহমান মুকুল! এবারও তেমনটা না হলেই হয়।
সরকারি হাসপাতালে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসাসেবার মানোন্নয়নের জন্য একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি রয়েছে। অধিকাংশ হাসপাতালে এর কার্যকারিতা নেই। মাসে অন্তত একবার বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও বছরে একবারও বসতে পারছে না তারা। সারা দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও গাছাড়া ভাব ছিল তাদের। করোনা মহামারীর মধ্যেও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির একই দশা ছিল।
সংসদ সদস্য বা মন্ত্রীর সময়ের অভাবে নিয়মিত কমিটির সভা হয় না। ফলে জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য খাতে সমন্বয়হীনতা বিদ্যমান। রোগীরা যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী প্রতি জেলার জ্যেষ্ঠ জনপ্রতিনিধি হলেন ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান।
জানা গেছে, ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক নিয়মিত না হওয়ার জন্য জনপ্রতিনিধিদের অনীহা অনেকাংশে দায়ী। কিছু বৈঠক যদিও হয়, তাতে মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যরা খুব কম সময়ই উপস্থিত থাকতে পারেন। মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে প্রতি মাসে অন্তত একবার বৈঠকে বসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যসেবা-সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জনপ্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসন-সংশ্লিষ্টদের নিয়ে গঠিত হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির উদাসীনতা ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার জন্য দায়ী। রাজধানীতে ডেঙ্গু মোকাবিলায় সিটি করপোরেশনও ব্যর্থ। এবার জেলা পর্যায়েও ডেঙ্গুতে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা রেকর্ড গড়েছে। জেলায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ওপর বর্তায়। তারা সময়মতো হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাই করতে পারে না। তাদের উদাসীনতার বিষয়টি স্পষ্ট।
কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে ডেঙ্গু বা মশা নিয়ন্ত্রণে জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয়তা দেখা যায়নি। জনসাধারণকে নিয়ে জনপ্রতিনিধিরা যদি সামাজিক আন্দোলন গড়তে না পারেন, তাহলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ বা নির্মূল সম্ভব নয়।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, হাসপাতালের সার্বিক বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এলাকায় সক্রিয় নন। মন্ত্রী, সংসদ সদস্যরা নিজ এলাকার হাসপাতাল নিয়ে সক্রিয় হলে দেশের স্বাস্থ্যসেবার পরিস্থিতি পাল্টে যেত। চিকিৎসা খাতে রাষ্ট্রের যে বাজেট তার সদ্ব্যবহার হতো।
জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এত সরকারি হাসপাতাল কেন্দ্র থেকে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয় না; সে কারণেই ব্যবস্থাপনা কমিটি। কমিটি সক্রিয় হলে হাসপাতালের সেবার মান বাড়ে এমন অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। যে বরাদ্দ হাসপাতালে দেওয়া হয়, কমিটির মাধ্যমে তার ব্যবহার যথাযথ করা যায়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের যুক্ত করে হাসপাতালের অনিয়ম দূর করা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘কমিটির ধারণাটি খুবই ভালো ছিল। কিন্তু এমপি মহোদয়রা মিটিং করেন না। ফলে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। সংসদ বা সরকারের সংশ্লিষ্ট পক্ষ কমিটিগুলো মনিটরিং করলে বড় ভূমিকা রাখা সম্ভব। তখন মানুষ হাসপাতালগুলোকে সরকারের নয়; বরং নিজেদের মনে করবে।’
অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু। এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি। সংখ্যাটি আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, জেলা পর্যায়ে চিকিৎসা-সেবাদাতা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করবে ব্যবস্থাপনা কমিটি। তারা হাসপাতালের অনুমোদিত বাজেটের মধ্যে বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে। স্বাস্থ্যসেবার মান নিশ্চিতে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং মুক্তিযোদ্ধা, হতদরিদ্র, মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ ও সুবিধাবঞ্চিতদের সেবা নিশ্চিতের দায়িত্ব কমিটির। কমিটিকে প্রয়োজনে বিশেষ দায়িত্ব পালনে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিজস্ব ও বাইরের ব্যক্তিদের নিয়ে উপকমিটি গঠন করতেও বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে উপকমিটি গঠনে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির অকার্যকারিতা অপ্রত্যাশিত। নিয়মিত কমিটির সভা হলে জেলার সার্বিক স্বাস্থ্যচিত্র সম্পর্কে জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টরা অবগত হয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে। এভাবে হাসপাতাল শুধু নয়, পুরো জেলার স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন সম্ভব। কমিটির কার্যকারিতা না থাকায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না।
ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি। হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. এনামুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি সর্বশেষ সভার তারিখ জানাতে পারেননি। সভাপতি হাসপাতালে এসেছিলেন গত বছরের ২৫ আগস্ট। এরপর আর ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়নি।
ডা. মো. এনামুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সভাপতি ছাড়া বা তার মনোনীত প্রতিনিধি ছাড়া তো সভা হয় না। এ কারণে আমাদের সভার আয়োজন করা যাচ্ছে না।’
মানিকগঞ্জের কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেরও একই অবস্থা। এই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ব্যস্ততার কারণে তাকে সভার কথা বলতে পারে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ব্যবস্থাপনা কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকাও নেই পরিচালকের কাছে। হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. আরশাদ উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি গত বছরের ২ নভেম্বর যোগ দিয়েছি। এরপর সভা হয়নি। কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকাও পাইনি।’
সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সভাপতি হলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। এই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সর্বশেষ বৈঠক হয়েছে গত ডিসেম্বরে। তার এক বছর আগে আরেকটি সভা হয়েছিল। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয় রাষ্ট্রীয় কাজে অত্যন্ত ব্যস্ত। আমাদের ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক না হলেও তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হয়। তাকে সব বিষয়ে জানিয়ে থাকি এবং তিনি তাৎক্ষণিক সমাধান দেন। কমিটির নিয়মিত বৈঠক না হলেও হাসপাতালের কার্যক্রম ঠিকমতো পরিচালিত হচ্ছে।’
বরিশাল সদর জেনারেল হাসপাতালের সর্বশেষ সভা হয়েছে ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর। রাজশাহীতে এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। এ বছর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়েছে গত ২২ জানুয়ারি। এরপর আর সভা হয়নি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সবশেষ সভা হয়েছে গত ১ এপ্রিল। মৌলভীবাজারে তিন-চার মাস আগে সর্বশেষ সভা হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। ঠিক কবে হয়েছে, সেটি অবশ্য জানাতে পারেনি। যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য। এই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সর্বশেষ সভা হয়েছে গত মে মাসে। ফেব্রুয়ারিতেও আরেকটি সভা হয়েছিল।
হাসপাতাল সূত্রগুলো জানিয়েছে, করোনা মহামারীর সময়েও ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক নিয়মিত হয়নি।
হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর প্রায় ৬০ শতাংশ ঢাকার বাইরের। গত মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে ২ হাজার ২৯১ জন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৯২০ ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ১ হাজার ৩৭১ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে। এ বছর ডেঙ্গু নিয়ে ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬২ হাজার ৮৮৬ জন। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫৬ হাজার ২৪৭ জন।
দেশের সব সরকারি হাসপাতাল কমিটির সভা নিয়মিত হয় কি না এর তদারকির দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। এ ব্যাপারে জানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ বি এম খুরশীদ আলমকে মোবাইল ফোনে কল দিয়েও পাওয়া যায়নি। অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক ডা. মো. হাবিবুল আহসান তালুকদারের বক্তব্যও পাওয়া যায়নি। তবে অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার সহকারী পরিচালক ডা. শেখ দাউদ আদনান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলোর তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে থাকা তো জরুরি না। তাদের প্রয়োজনে তারা বৈঠক করবে; বিশেষ সময়ে বা নির্দিষ্ট সময়ে বৈঠক করবে। এটা একেবারেই স্থানীয় বিষয়।’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভারত সফর নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। তিন দিনের ভারত সফর শেষে গত ২৩ আগস্ট দেশে ফিরলেও এ সফর নিয়ে দলের সর্বোচ্চ ফোরাম প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেননি।
গত মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরের এই প্রতিবেদক দীর্ঘসময় জিএম কাদেরের বনানীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে অপেক্ষা করেও তার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। এ সময় তার প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী জানান, স্যার আপাতত (জিএম কাদের) মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছেন না।
যদিও গতকাল বুধবার জিএম কাদের ইউটিউবে তার নামে অপপ্রচারের ভিডিও ছড়ানো বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি ভারত সফর নিয়েও কথা বলেছেন। তবে এর আগে তিনি যা বলেছেন ঘুরেফিরে সেটাই আবার বলেছেন। তিনি বলেছেন, ভারত সরকারের বিশ্বাস জাতীয় পার্টি একটি সম্ভাবনাময় দল, জাতীয় পার্টি আগামীতে ভালো করতে পারবে।
গত ২০ আগস্ট ভারত সফরে গিয়েছিলেন জিএম কাদের। তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী শেরিফা কাদের ও চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা মশরুর মাওলা।
ভারত থেকে ফিরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জিএম কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, ভারত বাংলাদেশে একটি সুন্দর নির্বাচন দেখতে চায়। নির্বাচনের আগে ও পরে যাতে কোনোক্রমেই সহিংসতা, অরাজকতা না হয়। তারা প্রত্যাশা করে, সবাই মিলে ওই ধরনের একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে। কার কার সঙ্গে সেখানে আলোচনা হয়েছে, কী বিষয়ে হয়েছে সে ব্যাপারে অনুমতি ছাড়া তিনি কিছু বলতে পারবেন না।
ভারত থেকে ফিরে আসার পর এক সপ্তাহ হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত জাতীয় পার্টির কোনো আনুষ্ঠানিক সভা ডাকেননি জিএম কাদের। যদিও তিন দিন ধরে তিনি বনানীর কার্যালয়ে আসছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রেসিডিয়াম সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভারত সফরে যাওয়ার আগেও জি এম কাদের দলের ফোরামে কোনো আলোচনা করেননি। তা ছাড়া তার সফরসঙ্গী হিসেবে কারা যাবেন সে বিষয়েও দলের কেউ জানতেন না। ভারতের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ দেশ সফর করে এলেও তিনি কোনো মিটিং ডেকে সেখানে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং নতুন কোনো নির্দেশনা আছে কি না তা ব্যাখ্যা করেননি। ফলে নেতাকর্মীরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন। এ নিয়ে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের প্রশ্ন রয়েছে।
ফিরে আসার দিন জিএম কাদেরকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে দেখা যায়নি দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের। মুজিবুল হক চুন্নু ছাড়া বিমানবন্দরে আর কোনো কো-চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন না। এমনকি অধিকাংশ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্যদেরও বিমানবন্দরে দেখা যায়নি।
জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যখন বিদেশ সফরে যেতেন, তখন দলে একটা কৌতূহল কাজ করত। কারা তার সফর সঙ্গী হবেন, এ নিয়ে নানা দেন-দরবারও চলত। তার সফর সঙ্গী হিসেবে অনেকেই যেতেন। অথচ নির্বাচন সামনে রেখে দলের চেয়ারম্যান ভারত সফরে গেলেও এটা ব্যক্তিগত নাকি রাষ্ট্রীয় সফর তা জানতে গণমাধ্যমের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল নেতাকর্মীদের।
জানতে চাইলে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু দেশ রূপান্তরকে বলেন, দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে কারও তুলনা করা ঠিক হবে না। এরশাদ ‘ক্যারিশমাটিক’ লিডার ছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। ফলে তার সঙ্গে অন্য কারও তুলনা হয় না। তিনি বলেন, ‘দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের অধিক মানুষ পছন্দ করেন না। তিনি দেশে ফিরলে নেতাকর্মীরা বিমানবন্দরে ফুল দিয়ে তাকে স্বাগত জানাবেন এটা তার অপছন্দ। ফলে দলের মহাসচিব হিসেবে তিনি সবাইকে নিষেধ করেন। যদিও নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করে বিমানবন্দরে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।’ কিন্তু নিষেধ উপেক্ষা করেও সেদিন বিমানবন্দরে হাজার হাজার কর্মী উপস্থিত ছিলেন বলে দাবি চুন্নুর।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জিএম কাদেরের ভারত সফর নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যাওয়ার কিছুদিন আগে ভারত সফর করেছে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জিএম কাদের নিজেই এই সাসপেন্স তৈরি করেছেন। তিনি ভারত থেকে ফিরে এক বক্তব্য দিয়ে পুরো ফোকাস নিজের দিকে কেড়ে নিতে চেয়েছেন। এই বক্তব্যের ফলে রওশন এরশাদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের চিঠি নিয়ে যে তোলপাড় ছিল তা ধামাচাপা পড়ে গেছে।
তারা মনে করেন, ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পেছনে ‘ভারতের চাপ’ ছিল। সে সময় সুষমা স্বরাজ অনেকটা বাধ্য করেন জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে অংশ নিতে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টি কী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে থাকবে নাকি বিএনপির সঙ্গে থাকবে অর্থাৎ রাজনীতির মাঠে জাতীয় পার্টির ভূমিকা কী হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট একটা নির্দেশনা ভারত দিয়েছে বলে তারা মনে করেন। ফলে আগামী দিনে জিএম কাদের সরকারবিরোধী সমালোচনা অব্যাহত রাখেন নাকি নতুন কোনো চরিত্র সামনে নিয়ে হাজির হন, এ মুহূর্তে রাজনীতিতে এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন জিএম কাদের ও রওশনপন্থিরা। এ দুই নেতার অনুসারীরা ভিন্ন ভিন্ন কার্যালয়ে তাদের কর্মতৎপরতা চালাচ্ছেন। জিএম কাদেরের অনুসারীরা বনানীর কার্যালয়ে এবং রওশন অনুসারীরা গুলশান কার্যালয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
জিএম কাদেরের অনুসারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আপাতত তারা কোনো জোটে যাবেন না। তারা বিএনপি-আওয়ামী লীগ উভয় পক্ষকে বিবেচনায় রেখে সেপ্টেম্বর মাসের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখতে চান। তাদের ধারণা, সেপ্টেম্বরে বিএনপি মাঠ দখল করতে শক্তি প্রদর্শন করবে। দলটি যদি সফল হয় তাহলে জিএম কাদেরপন্থিদের সিদ্ধান্ত হবে একরকমের। আবার সরকার যদি চলমান সংকট মোকাবিলা করতে সফল হয় তাহলে তারা সরকারের সঙ্গে দর-কষাকষি করে আসন বাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করবেন। এ ক্ষেত্রে তারা সাবধানে পা ফেলতে চান।
নির্বাচনের আগে একটা জোট গঠনের ভাবনাও আছে জিএম কাদেরের অনুসারীদের মধ্যে। এ ক্ষেত্রে তারা প্রাথমিকভাবে ইসলামি দলগুলোর কথা বিবেচনা করছেন। এ ছাড়া সম্প্রতি জাতীয় পার্টির মহাসচিবের সঙ্গে দেখা করেছেন গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নূর।
জোট গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। আমাদের দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত। যে কারও সঙ্গে জোট গঠন করা হতে পারে। তবে তিনি বলেন, ভিপি নুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাই হিসেবে দেখা করতে এসেছিলেন। সেখানে সার্বিক বিষয়ে আলাপ করা হলেও জোট গঠনের বিষয়ে আলাপ করা হয়নি।’
সরকারের অধীনে থাকবে নাকি বিএনপির সঙ্গে সমন্বয় করে জাতীয় পার্টি আন্দোলন করবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিএনপি-আওয়ামী লীগ কেউই জাপার আপন নয়। বিএনপি বিভিন্ন সময় জাপার ওপর অত্যাচার করেছে, এমনকি জেলে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকেও তারা অত্যাচার করেছে। আবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করলেও তারা আমাদের প্রাপ্য মূল্যায়ন করেনি। জাপাকে আওয়ামী লীগ দুর্বল করেছে। সুতরাং আমরা জনগণের কথা মাথায় রেখে জনগণের প্রয়োজনে নির্বাচনে অংশ নেব।’
অন্যদিকে নির্বাচন সামনে রেখে রওশনপন্থিরাও সক্রিয়। এ পক্ষের একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী নির্বাচনে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে তারা বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যে কিছু পরিকল্পনা নিয়েছেন তারা। প্রাথমিকভাবে জাতীয় পার্টি থেকে চলে যাওয়া আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জাতীয় পার্টি-জেপিকে ও কাজী জাফর আহমেদের অনুসারীদের ফিরিয়ে আনতে কাজ করছেন তারা। ইতিমধ্যে এ দুই দলের নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে তাদের। পাশাপাশি গত কয়েকটি নির্বাচনে দলটির প্রার্থী কোন কোন আসনে জয় লাভ করেছেন, তাদের ভোটের পরিমাণ কেমন ছিল, নতুন করে কোন আসনে কাকে প্রার্থী করা যায়, এ বিষয়ে পরিকল্পনা ও তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করছেন তারা। আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ বাড়ানো ও দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে কাজ করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে সেপ্টেম্বরে দলের কাউন্সিল করতে চান ম্যাডাম (রওশন এরশাদ)। এ বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতি চলছে। ম্যাডাম মনে করেন, সামনে নির্বাচন। কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীদের চাঙা করে তুলতে হবে। সর্বশেষ সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা খুব কম ভোট পাচ্ছেন, যা উদ্বেগের। এসব সংকট কাটাতে ম্যাডাম ভোটের আগে তৃণমূলকে উজ্জীবিত করতে চান।’
ভারতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জি-২০ সম্মেলন শেষে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকা সফরে আসছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। ১৯৯০ সালের পর বাংলাদেশে আসছেন ফ্রান্সের কোনো প্রেসিডেন্ট। গতকাল বুধবার দুই দেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক-সামরিক বিষয়ক ব্যুরোর আঞ্চলিক নিরাপত্তা সম্পর্কিত উপসহকারী সেক্রেটারি মিরা রেসনিক পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে আগামী সপ্তাহে ঢাকায় আসছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা। তিনি জানান, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র পরবর্তী পর্যায়ের নিরাপত্তা সংলাপ আয়োজনের প্রস্তুতি হিসেবেই আগামী ৪ সেপ্টেম্বর তার ঢাকায় পৌঁছার কথা রয়েছে।
গতকাল ম্যাক্রোঁর সফরের বিষয়টি নিশ্চিত না করলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ঢাকা সফর নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। জি-২০ সম্মেলন শেষে তিনি ঢাকা আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক অনুষ্ঠান শেষে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সফরের বিষয়ে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের অনেক ইস্যু।
ম্যাক্রোঁর সফরে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু, নারীর ক্ষমতায়ন, বিনিয়োগ বাড়ানো ও ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোসহ আমাদের অনেক ইস্যু রয়েছে। সেই সঙ্গে নিয়মিত অভিবাসন ইস্যু থাকে। এগুলো আমাদের নরমাল ইস্যু। জলবায়ু বড় ইস্যু, বিশেষ করে ফ্রান্সের সঙ্গে। এ বিষয়ে ফ্রান্স লিডারশিপ রোল প্লে করে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে আমরা বলতে চাই, লস অ্যান্ড ডেমেজ ইস্যুটা তহবিল করার জন্য উদ্যোগ নিন। তিনি টাকা সংগ্রহে উদ্যোগ নেবেন।
তিনি জানান, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের কাছে যে জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় ইস্যু। এটি মোকাবিলায় তহবিল সংগ্রহের জন্য তাকে আমরা বলেছি। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এলে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টি বড় করে তুলব।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের নভেম্বরে প্যারিস সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সরকারপ্রধান।
জানা গেছে, ঢাকা সফরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। তিনি ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরা।
৪ সেপ্টেম্বর আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক নিরাপত্তাবিষয়ক উপসহকারী সেক্রেটারি : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র পরবর্তী পর্যায়ের নিরাপত্তা সংলাপ আয়োজনের প্রস্তুতি হিসেবে আগামী ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক-সামরিকবিষয়ক ব্যুরোর আঞ্চলিক নিরাপত্তা সম্পর্কিত উপসহকারী সেক্রেটারি মিরা রেসনিক।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রটি জানিয়েছে, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অস্ত্র স্থানান্তর ব্যুরোর অফিসের তত্ত্বাবধান করেন রেসনিক। ব্যুরোর নিরাপত্তা সহায়তা অফিসেরও তত্ত্বাবধান করেন রেসনিক। তার এ সফরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি রাশেদ চৌধুরীকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করতে পারে বাংলাদেশ। এ ছাড়া আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের হুমকি হিসেবে রোহিঙ্গা ইস্যুটিও আলোচনায় আসতে পারে।
দেশের পুরনো সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে দীর্ঘদিন ধরেই অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয় না। আর অনেক বিদ্যালয়েই এখনো রয়েছে ব্রিটিশ আমলের ভবন। দুই শিফটের এসব বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় নানা সংকটে পড়তে হচ্ছিল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। এজন্য ৩২৩টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় উন্নয়নে ৩ হাজার ২৮৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দুই দফায় প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৩৫ শতাংশ। ফলে ঢিমেতালে চলা এই প্রকল্পের উন্নয়নকাজই বেদনায় পরিণত হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাড়ে ছয় বছরে প্রকল্পটির ৩৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। বাকি ৬৫ শতাংশ শেষ হতে কত বছর সময় লাগবে তা জানাতে পারছেন না কেউ? পাঁচ বছরের একটি প্রকল্প শেষ হতে যদি ১০ বছর লেগে যায়, তখন এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার সুযোগ থাকে। এমনকি বিদ্যালয়গুলোর জন্য যেসব মডেলের কম্পিউটার ও কম্পিউটার সামগ্রী, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতিসহ নানা উপকরণ কেনার কথা ছিল, সেসব মডেল এখন অনেকটাই পুরনো হয়ে গেছে। এ ছাড়া সাত-আট বছর আগে প্রকল্পের মালামাল কেনার যে খরচ ধরা হয়েছিল, তা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এ অবস্থায় প্রকল্প বাস্তবায়ন ও এর সুফল পাওয়া নিয়েই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতে অ্যাকাডেমিক ভবন, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞান ল্যাবরেটরি, কম্পিউটার ল্যাবরেটরি, প্রার্থনার জন্য কক্ষ, হোস্টেল, শিক্ষকদের জন্য ডরমেটরি, প্রধান শিক্ষকের জন্য কোয়ার্টার ইত্যাদি নির্মাণের জন্য প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। এর মেয়াদ ধরা হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। তবে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই প্রথমবার ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। দ্বিতীয় দফায় ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এখন তৃতীয়বারের মতো ২০২৬ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
প্রকল্পটির পরিচালক অধ্যাপক মো. নাসির উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মূলত তিন কারণে প্রকল্পটির অগ্রগতি কম। প্রথমত, প্রকল্পটি দেড় বছর পর শুরু হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনার কারণে অর্থছাড় বন্ধ ছিল। তৃতীয়ত, জেলাপর্যায়ের ভবনগুলো ছয়তলা থেকে দশতলায় উন্নীতকরণের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করা। তবে এখন প্রকল্পটি ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। এ বিষয়টি একনেকে পাস হলেই প্রকল্পের কাজ জোরেশোরে শুরু হবে। আমরা আবার দরপত্রে যেতে পারব। আশা করছি, ২০২৬ সারের মধ্যেই প্রকল্পের সব কাজ শেষ হবে।’
সম্প্রতি সরকারের বাস্তবায়ন পরীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এ প্রকল্পের ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তারাই এ প্রকল্পের দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩২৩টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১২৫টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিদ্যমান ভবন ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ১০২টি বিদ্যালয়ের ভবন সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ৭৪টির কার্যক্রম পুরোপুরি সমাপ্ত হয়েছে, অবশিষ্ট ২৮টি ভবনের কার্যক্রম বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায়ে ১৪৮টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৩৭টির নির্মাণকাজ চলমান। এর মধ্যে মাত্র দুটি ভবনের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে, অবশিষ্টগুলোর কাজ চলছে।
জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের ১৭২টি নতুন ভবন নির্মাণকাজ বর্তমানে স্থগিত রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ২৪টি বিদ্যালয়ের হোস্টেল নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৮টির দরপত্র অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পণ্য হিসেবে প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিটের জন্য আসবাবপত্র ও অফিস সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। প্রকল্প অফিসের জন্য তিনটি জিপ গাড়ি ও একটি মাইক্রোবাস কেনা হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পের নির্মাণ ও পূর্তকাজের গড় বাস্তব অগ্রগতি ৩৫ শতাংশ।
প্রকল্পের দুর্বল দিকের বিষয়ে আইএমইডি বলছে, প্রকল্পটি প্রণয়নের আগে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন অবস্থায় জেলা ও বিভাগীয় শহরে বিদ্যালয়ের ছয়তলা থেকে দশতলায় রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্প পরিচালক ও অন্যান্য জনবল নিয়োগেও বিলম্ব হয়েছে। প্রকল্প প্রণয়নের সময় অনুসরণকৃত রেট শিডিউল প্রকল্প বাস্তবায়নের আগেই পরিবর্তন হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্প প্রণয়নকালে গণপূর্তের ২০১৪ সালের রেট শিডিউল অনুসরণ-পূর্বক যাবতীয় পূর্তকাজের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়। কিন্তু প্রকল্পটি প্রশাসনিক অনুমোদনপ্রাপ্ত হয় ২০১৮ সালের ২০ মে। ইতিমধ্যে গণপূর্তের ২০১৮ সালের রেট শিডিউল কার্যকর হয়ে যায়, যা প্রকল্প বাস্তবায়ন তথা পূর্তকাজ বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। এখন এই সাত বছরে প্রকল্পের ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে, যা এড়ানোর কোনো উপায় নেই।
আইএমইডি সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলেছে, ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ সাড়ে চার বছর। যেহেতু জনবল নিয়োগ ও বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়, তাই প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়। পরে নতুন স্কুল ভবন ছয়তলার পরিবর্তে দশতলায় রূপান্তরের সিদ্ধান্ত হওয়ায় আরও এক বছর বাড়ানো হয়। যদিও বলা হয়েছিল, এতে তিন বছর বেশি সময় লাগতে পারে। ফলে প্রকল্পটি সংশোধন-পূর্বক ২০২৬ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলমান।
এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী অতিমারী কভিড-১৯-এর ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের তৃতীয় কোয়ার্টার এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম কোয়ার্টারে প্রকল্পটির অর্থ বরাদ্দ স্থগিত রাখা হয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরেও প্রকল্পটির বাজেট কমানো হয়েছে। এতে পূর্তকাজের বিল চাহিদা মোতাবেক পরিশোধ করা এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী পণ্য ও সেবা কেনা সম্ভব হচ্ছে না।
প্রতিবেদনের সুপারিশে প্রকল্পটির গতি আনতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। তবে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীভূত হবে, শিক্ষার্থী ভর্তির চাহিদা পূরণ হবে, বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহ বাড়বে এবং শিক্ষার গুণগত মান বাড়বে।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, কিছু বড় দেশ বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এখানে একটি তাঁবেদার সরকার চায়। তার ভাষ্য, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে কিছু (বড়) দেশ বাংলাদেশে এমন একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেটি তাদের চাটুকার হবে। গতকাল বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। খবর-বাসস
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের রক্ত ঝরিয়ে দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়া সত্ত্বেও যেসব দেশ বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচন খুঁজছে তাদের কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রক্তের বিনিময়ে আমরা দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি।
তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট এর আগে বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স চালুর প্রস্তাব দিয়েছিল। ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার আইন প্রণয়ন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে এবং কমিশনকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন করেছে।
তারা (কিছু বড় দেশ) গণতন্ত্র ও নির্বাচনের অতীত সম্পর্কে নাও জেনে থাকতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজ, তারা আমাদের দেশে গণতন্ত্র এবং ভোট দেওয়ার অধিকার খুঁজছে।’
সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান, যে পকেট থেকে বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, প্রথমে হ্যাঁ/না ভোট এবং রাষ্ট্রপতির ভোটের মাধ্যমে ভোট কারচুপির সংস্কৃতি চালু করে নির্বাচন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু করেন এবং এরশাদ ও খালেদা জিয়া সেই পথই অনুসরণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বড় দেশগুলো সব সময় বিশ্বের সর্বত্র মাতবরি করার চেষ্টা করে। রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের অমানবিক অবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যাদের তাদের (বড় দেশ) মতো বন্ধু আছে তাদের শত্রুর কোনো প্রয়োজন নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি রাশেদ ও নূরকে আশ্রয় দিয়েছে এবং বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে খুনি রাশেদকে ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করেছি কারণ আমাদের বিচার বিভাগের বিচারে সে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। এতে হস্তক্ষেপ করার অধিকার তাদের নেই। তারা এখন খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে।’
তিনি বলেন, খুনি ডালিম ও রশিদ পাকিস্তান ও লিবিয়ার মধ্যে তাদের আস্তানা পরিবর্তন করে চলছে, অন্য একজন খুনির হদিস এখনো পাওয়া যায়নি এবং বাকি খুনিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে।
তিনি বলেন, খুনিদের বিচারের জন্য আমার পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমি দেশবাসী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনি ছিলেন এবং তিনি খুনিদের বিচার বন্ধ করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন এবং তাদের বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে পোস্টিং দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলাম।
ঢাকা উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মোন্নাফী এবং পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।
ঢাকা উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাদেক খান এমপি, আবদুল কাদের খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম মাজহার আনাম ও মো. আজিজুল হক রানা, পরিবার কল্যাণ সম্পাদক মেহেরুন্নেছা মেরি ও ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. দিলীপ কুমার রায়, মিজবাউর রহমান ভূঁইয়া রতন ও সাজেদা বেগম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মোরশেদ কামাল, সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তার হোসেন ও গোলাম সারোয়ার কবির প্রমুখ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকা- এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
বাংলাদেশে ফৌজদারি অপরাধে আইনের যে ধারায় শাস্তি দেওয়ার হয়, দণ্ডবিধি বা পেনাল কোড নামে আইনটি ১৬৩ বছরের পুরনো। বিচারের দিক-নির্দেশক হিসেবে ফৌজদারি কার্যবিধি (দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর বা সিআরপিসি) নামে পদ্ধতিগত আইনটিও ১২৫ বছর আগের তৈরি। এ ছাড়া ১৫১ বছরের বেশি পুরনো (১৮৭২ সাল থেকে প্রচলিত) সাক্ষ্য আইন (অ্যাভিডেন্স অ্যাক্ট)। ব্রিটিশ আমলে তখনকার প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতিতে তৈরি এ আইনগুলোর কাঠামো নিয়ে আপত্তি না থাকলেও আইন ও বিচারসংশ্লিষ্ট বেশিরভাগ মানুষের প্রশ্ন আছে সময়, পরিস্থিতি ও প্রয়োজনে আইনগুলোর সংস্কার এবং যুগোপযোগী না করা নিয়ে। বাংলাদেশসহ এ উপমহাদেশে ৭৬ বছর আগে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয়েছে। আইনের সংস্কার নিয়ে বছরের পর বছর দাবি উঠেছে জোরেশোরে। স্বাধীনতার ৫২ বছরে এসব আইনের আলোকে, অনেক বিশেষ আইন হয়েছে। সেগুলোর অনেক ধারাতেও অসংগতি ও অস্পষ্টতার বিষয়টি নানা সময়ে আলোচনায় এসেছে। কিন্তু সংস্কারের বিষয়টি এখনো উপেক্ষিত।
১৮৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত দণ্ডবিধিতে ৫১১ ধারার ৪৫৯টি শাস্তিসংক্রান্ত। এর মধ্যে আটটি ধারায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। ১৮৯৮ সালে তৈরি হওয়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬৫ ধারার বেশিরভাগই বিচারের লক্ষ্যে দিকনির্দেশনা সংক্রান্ত। এ ছাড়া ১৫১ বছরের বেশি পুরনো (১৮৭২ সাল থেকে প্রচলিত) ও ১৬৬টি ধারা সংবলিত সাক্ষ্য আইনে (অ্যাভিডেন্স অ্যাক্ট) ধর্ষণের শিকার নারীদের জন্য অবমাননাকর একটি ধারা গত বছর নভেম্বরে বাতিলসহ এ আইনে ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণ আমলে নেওয়ার সুযোগ রাখা হয় সংশোধনীতে। আইন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, সাক্ষ্য আইনটিকে আরও যুগোপযোগী ও সংস্কারের অংশ হিসেবে চলতি বছরেই তারা সুপারিশসংক্রান্ত প্রতিবেদন দেবেন।
আইনের সংস্কার প্রশ্নে পাঁচজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে তাদের মতামত নিয়েছে দেশ রূপান্তর। প্রায় অভিন্ন সুরে তারা বলেন, আইনের প্রতিষ্ঠিত নীতিবাক্য হলো ‘দশজন অপরাধী খালাস পেলেও একজন নিরপরাধ ব্যক্তি যেন সাজা না পান’। ফলে বিচারে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ এবং আইনের ভাষা হতে হয় সহজ ও অযান্ত্রিক। একই সঙ্গে বিচারপ্রত্যাশীর ভোগান্তি লাঘবে দ্রুত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হয়। তাদের মতে, প্রায় ২০০ বছরের ঔপনিবেশিক সময়ে মানুষকে প্রজা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এর প্রভাব পড়েছে ওই সময়ে তৈরি আইনগুলোতে। যেখানে শুধু শাস্তিকেই লক্ষ্য করা হয়েছে। অন্যদিকে একশ, দেড়শ বছরে অপরাধের ধরন, ভিন্নতা, অপরাধে প্রযুক্তিগত ব্যবহারসহ বদলেছে অনেক কিছু। বিপরীতে আইনগুলোতে নগণ্য কিছু সংশোধনী ছাড়া সংস্কার হয়নি।
পুরনো আইনের সংস্কার না হওয়াকে মামলাজটের কারণ উল্লেখ করে আইনজীবীরা আরও বলেন, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি, আদালতের সময়সহ বিচারপ্রত্যাশীর অর্থ ও সময় সাশ্রয়, অপরাধীর পুনর্বাসন, সংশোধন ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তেমন কিছুই নেই আইনগুলোতে। অন্যদিকে আইনের অপপ্রয়োগ কিংবা দুর্বলতায় প্রায়ই নির্দোষ ব্যক্তিকে নির্যাতন, জেলে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) ট্রাস্টি অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের জন্য আইন। কিন্তু ব্রিটিশরা কর্তৃত্ব ও নিপীড়নমূলক অনেক আইন করেছে মানুষকে শোষণ, শাসন ও লুণ্ঠন করতে। তখন তো আর নাগরিক ও মানবাধিকার নিয়ে এত কথা হতো না। তাদের লক্ষ্যই ছিল কথায় কথায় স্বাধীনতাকামীদের বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেওয়া। তিনি বলেন, ‘এখন তো আমরা ব্রিটিশদের উপনিবেশে নেই। কিন্তু ৫৪ (বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার) ১৬৭ ধারার (রিমান্ড) মতো নিপীড়নমূলক আইনগুলোসহ আরও অনেক কিছু রয়ে গেছে। ১৯৭২ সালে মাত্র কয়েক দিনে একটি ভালো সংবিধান হলে এখন মানুষের জন্য যুগোপযোগী আইন কেন হবে না?’
সম্প্রতি ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নিয়োগ পাওয়ার পরদিন গত ১৩ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি মামলাজটকে তার প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন। এ লক্ষ্যে আইনের সংস্কার বড় বিষয় উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘মানুষের দুর্গতি ও কষ্ট লাঘবে সরকার নিশ্চয়ই এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করবে।’ নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা।
আইন সাময়িকী ডিএলআরের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি যথার্থই বলেছেন। আমরাও আইনের সংস্কার চাই। শুধু ফৌজদারি কিংবা দণ্ডবিধি নয়, এসব আইনের আলোকে আর্থিক অপরাধ, মানি লন্ডারিংসহ এমন কিছু আইন আছে যেগুলোর অনেক কিছুর সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে।’
কিছুদিন আগে ভারত সরকার ব্রিটিশদের তৈরি ফৌজদারি আইন ব্যাপক সংস্কারে উদ্যোগ নিয়েছে।
সংস্কারের রূপরেখা আলোর মুখ দেখেনি : পুরনো ফৌজদারি আইনের সংস্কার নিয়ে ২০১১ সালে একটি রূপরেখা তৈরি করে আইন মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রতিবেদন দিয়েছিল আইন কমিশন। এতে আইনের প্রতিষ্ঠিত নীতিবাক্যটিকে একটু ভিন্নভাবে উপস্থান করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘একজন নির্দোষ ব্যক্তি যাতে সাজা না পায় এবং একজন অপরাধীও যাতে খালাস না পায়।’ আইনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে প্রশ্নের অবতারণা করে সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধানে ৩৩টি সুপারিশ করে কমিশন। এর মধ্যে তদন্ত ও বিচারের ত্রুটি কাটাতে ফৌজদারি অপরাধের তদন্ত করতে স্থায়ী, পেশাদার ও দক্ষ পৃথক তদন্ত সংস্থা গঠন, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য শুধু হাতেকলমে না লিখে টেপ রেকর্ডার, ভিডিওতে রাখা, ১৬৪ ধারায় আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সঙ্গে সাক্ষীর বক্তব্য রেকর্ড করা, মিথ্যা ও তুচ্ছ অভিযোগকারীকে জরিমানা, ক্ষতিপূরণ বা কারাদণ্ড দিতে ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি দায়রা জজকেও ক্ষমতা দেওয়া, বিচারকাজের দীর্ঘসূত্রতা কমাতে মুলতবির সময় সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া, মামলার কার্যক্রম স্থগিতের সময়সীমা ৩০ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনের তাগিদ দেয় কমিশন। এ ছাড়া কারাগারের চাপ কমানো এবং আসামিকে সংশোধনের লক্ষ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও অভিযোগ গঠনের সময় দোষ স্বীকার করলে সাজা রেয়াত দেওয়া, যুক্তিতর্কের কারণে মামলার কার্যক্রম বিলম্বিত হওয়ায় তা লিখিত আকারে জমা দেওয়া, আদালতের সংখ্যা অনুপাতে আপিল আদালত প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে কমিশন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কমিশনের ওই সুপারিশ আলোর মুখ দেখেনি।
কমিশনের মুখ্য গবেষণা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোর্শেদ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রতিবেদন দেওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে কমিশন অবহিত নয়।
দণ্ডবিধির অনেক ধারার অসংগতি ও অস্পষ্টতা নিয়ে আইন ও বিচার সংশ্লিষ্টরা বলেন, এই আইনে অনেক কিছুই আছে। কিন্তু গণপিটুনিতে মৃত্যু, অর্থনৈতিক অপরাধের মতো আরও কিছু বিষয়ে আইনে কিছু নেই। অন্যদিকে পুরনো এ আইনে এখনো ১০ টাকা, ১০০ টাকা ও ২০০ টাকার মতো অর্থদণ্ডের বিধান রয়ে গেছে। জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার তিনজন (একজন অবসরে) বিচারক এসব আইনে তাদের বিচারিক অভিজ্ঞতার বিষয়টি দেশ রূপান্তরের কাছে তুলে ধরেন। সংগতকারণে তারা তাদের নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানান। একজন বিচারক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আদালত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রসিকিউশনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার সমন্বয়ে একটি ফৌজদারি মামলার বিচার কার্যক্রম হয়। কিন্তু বিচারের দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে শুধু বিচার বিভাগকে শুনতে হয়। পুরনো আইনগুলোতে এমন অনেক কিছু আছে, যা একটু আধুনিক হলে বিচারকাজে আরও গতিশীল হবে।’ অন্য একজন বিচারক বলেন, ‘বিচারকাজের সময় টাইম (আদালত ও বিচারপ্রার্থীর সময়), কস্ট (বিচারপ্রার্থীর খরছ) এবং ভিজিট (বিচারপ্রত্যাশীর আদালতে আসা-যাওয়া) এ তিনটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আইনগুলোতে এসব বিষয়ে স্পষ্ট কিছু দিকনির্দেশনা নেই। সংগতকারণে বিচারপ্রার্থীর প্রতি সিমপ্যাথি (সহানুভূতি) ও ইমপ্যাথি (সহানুভূতির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু করা) থাকা সমীচীন।’
আইন সংস্কারের উদ্যোগ থমকে দুই বছর ধরে : ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফৌজদারি আইন সংস্কার ও আইনটি বাংলা ভাষায় প্রণয়ন করতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হককে নির্দেশ দেন। দুদিন পর ফৌজদারি আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন করে আইনটি যুগোপযোগী, আধুনিক ও বাংলা ভাষায় প্রণয়নের উদ্দেশ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এতে চেয়ারপারসন করা হয় মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব মো. মইনুল কবিরকে। কমিটিকে অন্যান্য দেশের আইন বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা করে সমস্যা চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তবে মন্ত্রণালয়ের ওয়াকিবহাল একটি সূত্রের তথ্য বলছে, দুই বছর পার হলেও এ বিষয়ে কার্যকর কোনো অগ্রগতি নেই।
এ বিষয়ে জানতে সচিব ময়নুল কবিরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল ধরেননি। সার্বিক বিষয়ে জানতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও তার সাড়া মেলেনি। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এএম আমিন উদ্দিন মনে করেন, পুরনো আইনগুলোর আমূল পরিবর্তন কিংবা পুরো সংস্কার নয়, যতটুকু করলে বিচারপ্রার্থীর দ্রুত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে সেটি হতে পারে। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আইনগুলোর প্রসিডিউরে (কার্যপ্রণালি) তেমন ভুল নেই। যেসব ক্ষেত্রে অসংগতি বা অস্পষ্টতা আছে শুধু সেগুলোই আলোচনার মাধ্যমে সংশোধন করা উচিত। এ ক্ষেত্রে অংশীজন হিসেবে অন্যদের সঙ্গে অবশ্যই আইনজীবীদের সম্পৃক্ত রাখা উচিত।’
ভারতের ভিসা পাওয়া নিয়ে পাকিস্তান দল যে জটিলতার মধ্যে ছিল সেটার অবসান হয়েছে। অবশেষে ভারতের সরকার পাকিস্তান দলের জন্য ভিসা অনুমোদন করেছে।
সোমবার ক্রিকেট বিষয়ক ভারতীয় ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ এই খবর জানিয়েছে। ভিসা অনুমোদনের ফলে বাবর আজমের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান দল এখন বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার জন্য ভারতে ভ্রমণ করতে পারবে। আগামী ৫ অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া ১০ দলের আসরে শেষ দল হিসেবে ভিসা পেয়েছে পাকিস্তান।
ওয়ানডে বিশ্বকাপ অংশ নিতে আগামী বুধবার ভারতের উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার কথা রয়েছে পাকিস্তান দলের। তবে যাত্রার ৪৮ ঘণ্টা আগেও ভিসা না পাওয়াকে 'অস্বাভাবিক দেরি' হিসেবে উল্লেখ করে উদ্বেগ জানায় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তারা বিষয়টি নিয়ে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির দ্বারস্থও হয়। এর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এসেছে ভিসা অনুমোদনের খবর।
ক্রিকবাজ জানিয়েছে, আইসিসির একটি সূত্র তাদেরকে পাকিস্তান দলের ভারতের ভিসা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ভিসা পেতে দেরি হওয়াকে স্বাভাবিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করেছে ওই সূত্র।
সবশেষ এশিয়া কাপের মূল আয়োজক ছিল পাকিস্তান। তবে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে দেশটিতে যেতে চায়নি ভারত। ওই আসরে ভারতের সবগুলো ম্যাচ হয় শ্রীলঙ্কায়। একটি বাদে সুপার ফোরের বাকি সব ম্যাচ আর ফাইনালও অনুষ্ঠিত হয় দ্বীপ দেশটিতে।
ভারত নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকায় হাইব্রিড মডেলে এশিয়া কাপ আয়োজনের প্রস্তাব আসে পাকিস্তানের কাছ থেকেই। এর আগে ভারত দল পাকিস্তানে না গেলে পাকিস্তানও ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে যাবে না বলে হুমকি দিয়েছিল পিসিবি। যদিও নিজেদের সেই সিদ্ধান্ত থেকে পরে সরে আসে তারা।
বিশ্বকাপের আগে আগামী শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে মাঠে নামবে পাকিস্তান। তিনদিন পর তাদের আরেকটি প্রস্তুতি ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপে বাবরদের প্রথম ম্যাচ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। আগামী ৬ অক্টোবর হায়দ্রাবাদে অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচটি।
ন্যায্য পারিশ্রমিক ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার সীমিত করার দাবি নিয়ে পাঁচ মাস আগে হলিউডে শুরু হওয়া হট্টগোলের অবসান হচ্ছে। আন্দোলনকারী লেখকরা প্রযোজকদের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর পর ধর্মঘট তুলে নেওয়ার কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানাচ্ছে, পাঁচ মাস আগে লেখক বা চিত্রনাট্যকারদের আন্দোলনের সঙ্গে যোগ দেন অভিনয়শিল্পীরা। যার কারণে হলিউডে একধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। বন্ধ হয়ে যায় অনেক সিনেমার নির্মাণকাজ। তবে স্থানীয় সময় গত রবিবার হলিউডের লেখক ইউনিয়ন বড় স্টুডিওগুলোর সঙ্গে একটি প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছেছে।
সিএনএন বলছে, এই চুক্তির ফলে হলিউডের ইতিহাসের বড় দুটি ধর্মঘটের মধ্যে একটি পক্ষ কাজে ফিরতে সম্মত হলো। এই ধর্মঘটের ফলে প্রায় পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে বেশিরভাগ ফিল্ম ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানের চিত্রায়ণ। ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতিতে এর প্রভাব বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের। তাই এবার আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে লেখক ও অভিনয়শিল্পীদের কাজে ফেরাতে সচেষ্ট হচ্ছে হলিউডের স্টুডিওগুলো।
লেখকদের সঙ্গে নিষ্পত্তি হলেও এখনই হলিউডের স্টুডিওগুলোর আলো জ্বলছে না। অভিনেতাদের সংগঠন এসএজি-এএফটিআরএ এখনো পারিশ্রমিক ও এআই ইস্যুতে ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছে। এসব দাবির পাশাপাশি লেখকদের পারিশ্রমিক ও লভ্যাংশ ইস্যুতে সংহতি প্রকাশ করে ২ মে থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। এসব বিষয়ে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে বার্তা সংস্থার আহ্বানে সাড়া দেয়নি দ্য অ্যালায়েন্স অব মোশন পিকচার অ্যান্ড টেলিভিশন প্রডিউসারস, ওয়াল্ট ডিজনি, নেটফ্লিক্স, ওয়ার্নার ব্রস ডিসকভারিসহ অন্যান্য প্রতিনিধিত্বকারী বাণিজ্যিক গোষ্ঠী।
চলতি বছরের ২ মে থেকে শুরু হওয়া ধর্মঘটে ১১ হাজারেরও ফিল্ম এবং টিভি লেখক অংশগ্রহণ করেন, যারা স্ট্রিমিং যুগে উচ্চ বেতন এবং আরও ভালো কাজের দাবি করছেন। তারা যুক্তি দিয়েছেন যে স্টুডিওগুলো স্ট্রিমিং প্ল্যাটফরম থেকে যে আয় করেছে, সেই তুলনায় তাদের ক্ষতিপূরণ মিলছে না। লেখকরা নতুন নিয়মও চান, যাতে এসব স্টুডিও টিভি শোগুলোর জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্টসংখ্যক লেখক নিয়োগ করতে হবে। একই সঙ্গে বড় স্টুডিওগুলোর কাছ থেকে বেশি পারিশ্রমিক চেয়ে একটি চুক্তি করতে চেয়েছিল লেখকদের সংগঠন রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা (ডব্লিউজিএ)। সেই চুক্তির চেষ্টা ব্যর্থ হওয়াতেই মূলত ধর্মঘটের ডাক দেন লেখকেরা। হলিউড আন্দোলনের কারণে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে টেলিভিশন শো ও হলিউডের নির্মাণাধীন সিনেমাগুলো।
বিশ্বকাপ যত এগিয়ে আসছে, বাংলাদেশে বিশ্বকাপ নিয়ে নাটক ততই জমে উঠেছে। একদিন পর দল বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছাড়বে, অথচ এখনো ঘোষণা হয়নি বিশ্বকাপের দল।
এমন অবস্থায় সোমবার মাঝরাতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় বৈঠকে বসেছিলেন ওয়ানডে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
বিকেলে বিসিবি সভাপতির পেশাগত কার্যালয়, বেক্সিমকোতে নির্বাচক কমিটির সদস্যসহ বিসিবির বেশ কয়েকজন পরিচালকের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন বিসিবি সভাপতি। তারপর সন্ধ্যার দিকে দেশের কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দাবী করা হয় সাকিব ও তামিম ইকবালের ভেতর নতুন দ্বন্দের খবর।
গণমাধ্যমগুলোর দাবী, তামিম ইকবাল জানিয়েছেন বিশ্বকাপে তিনি পাঁচটি ম্যাচে খেলতে পারবেন। অন্যদিকে তামিমের এই দাবী মানলে বিশ্বকাপে না খেলার হুমকি দিয়ে রাখেন সাকিব।
২০১৯ বিশ্বকাপে চোটজর্জর মাশরাফী বিন মর্তুজা দলে থাকায় এবং সবগুলো ম্যাচে খেলায় অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের পরও দলকে বিশ্বকাপে অষ্টম হতে দেখেছেন সাকিব, তাই এই শর্তে তার নেতৃত্বে না থাকার আশংকাই প্রবল। এই দুই জনকে সমঝোতা করার জন্য মাশরাফীকে পাপন দায়িত্ব দিয়েছেন এমন একটা খবরই দাবী করা হয়। যদিও এসবের পক্ষে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
ধোঁয়া থাকলে আগুন থাকবেই। তাই মধ্যরাতে, পৌনে ১২টায় সাকিবের বিসিবি সভাপতির বাসভবনে ছুটে যাওয়া আর সিডনি থেকে বাংলাদেশে পা রাখার ঘণ্টা তিনেকের মাথায় তাকে গুলশানের আইভি লেগেসিতে ছুটে আসতে দেখার মাধ্যমেই বোঝা যায়, চূড়ান্ত দল ঘোষণার আগে শেষ মুহূর্তে কোনো মারপ্যাঁচ লেগেছে।
প্রায় ৩ মাস পর আন্তর্জাতিক ম্যাচে ব্যাট করতে নেমে তামিম খেলেছিলেন ৪৪ রানের ইনিংস। পরের ম্যাচে আবার তিনি বিশ্রামে, যেটা বিসিবির মেডিক্যাল বিভাগেরই সুপারিশে।
তাই বিশ্বকাপে তামিম কতটা ফিট হয়ে খেলতে পারবেন, আদৌ খেলতে পারবেন কি না এসব নিয়েই হয়তো হয়েছে শেষ মুহুর্তে মধ্যরাতের আলোচনা।
অধিনায়ক, কোচ আর বিসিবি প্রধান মিলে মিনিট চল্লিশেক বৈঠক করেছেন। আগে বের হয়েছেন হাথুরুসিংহে, তার মিনিট দশেক পর সাকিব। কেউই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি, গাড়ির কাঁচটাও নামাননি। আর পাপনের বাসায় যখন এসব চলছে, তখন এক বন্ধুর সঙ্গে বাসায় বসে চাউমিন খাচ্ছেন তামিম!
সাকিব-তামিম একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা বলেন না, এই খবর পুরাতন। শোনা গেছে সম্প্রতি একটি মোবাইলে আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপণের কাজে দুজনের ভেতর সম্পর্কে তিক্ততা বেড়েছে। তামিমের খেলা, না খেলা এসব নিয়েও জলঘোলা হওয়ার কারণেই নাকি সাকিবের বিরক্তি বেড়েছে।
তবে দুজনের কারো কাছ থেকেই এসব নিয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তামিম অধিনায়ক থাকা অবস্থায় ইংল্যান্ড সিরিজের আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন 'নাথিং এলস ম্যাটার্স'। সাকিবও স্বভাবসুলভ ভাবেই পাশ কাটিয়ে গেছেন এসব প্রসঙ্গ।
দল ঘোষণার আগের দিনে, মাঝরাতে বিসিবি প্রেসিডেন্টের বাসভবনে কোচ ও অধিনায়কের বৈঠক হতে পারে শেষ মুহূর্তের বোঝাপড়া। যেহেতু একদিন বাদেই উড়াল দিতে হবে। অথবা তামিম সংক্রান্ত ব্যপারে চূড়ান্ত ফয়সালা। উত্তরটা পেতে অপেক্ষা মাত্র কয়েক ঘণ্টার।
২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনকেন্দ্রিক সক্রিয় অবস্থানের পর দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের বড় কোনো কর্মসূচি নেই। কর্মসূচি পালন করতে চাইলেও ছাত্রলীগের হামলার মুখে দাঁড়াতেই পারছেন না সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। মাঝেমধ্যে ক্যাম্পাসের আশপাশে ছোটখাটো ঝটিকা মিছিল করেই সারছে দলীয় কর্মসূচি। তবে বিএনপির এক দফা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আবারও ক্যাম্পাসে সরব হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।
জানা যায়, ক্যাম্পাসে সক্রিয় হওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিভিন্ন উপদলে ভাগ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত আড্ডা এবং কর্মী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা। আগামীতে ঢাবি ছাত্রদলের নেতৃত্বপ্রত্যাশী নেতারা এসব কর্মকা- পরিচালনা করছেন বলে জানা যায়। আড্ডা দিতে গিয়ে শনিবার রাতে ছাত্রলীগের হামলার শিকারও হন কয়েক জন ছাত্রদল নেতা। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ সক্রিয় দেখা যাচ্ছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের। ‘আমরা দ্রুত ফিরছি, মাত্র কয়দিনের অপেক্ষা’ লিখে স্ট্যাটাস দিতে দেখা যায় তাদের।
এদিকে রবিবার ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের দেয়ালে ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ সে্লাগান লিখে আলোচনা তৈরি করে ঢাবি ছাত্রদল। ছাত্রদল নেতা আনিসুর রহমান খন্দকার অনিকের নেতৃত্বে মধুর ক্যানটিন ছাড়াও ডাকসু ক্যাফেটেরিয়া, কলা ভবনসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দেয়ালে ২০টির বেশি দেয়াল লিখন করেছে তারা। এসব দেয়ালে ‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’, ‘ঘুরে দাঁড়াও বাংলাদেশ’, ‘তারেক রহমান বীরের বেশে আসবে ফিরে বাংলাদেশে’ সে্লাগান লেখা হয়। যদিও এদিন দুপুরের দিকে মধুর ক্যানটিনের লেখা মুছে দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ঢাবি ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশব্যাপী বিএনপির লংমার্চ শেষে অক্টোবরে ঢাকাকেন্দ্রিক টানা আন্দোলন চলবে। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও পুরোদমে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ছাত্রদল। যত বাধাই আসুক ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক কর্মসূচি ও আন্দোলন করতে চান তারা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত স্যাংশন ও বিএনপির সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি চূড়ান্ত রূপ লাভের অপেক্ষা থাকায় নেতাকর্মীরা বেশ উজ্জীবিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও তাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন বলে দাবি ছাত্রদলের নেতাদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। অক্টোবরে তা চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আপাতত বিভিন্ন ভাগ হয়ে হয়ে আড্ডা, দেয়াল লিখনসহ নানান কর্মসূচি চলছে। নতুন শিক্ষার্থীরাও আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। ছাত্রলীগের দখলদারিত্বের বিনাশ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। দেশনায়ক তারেক রহমানের চূড়ান্ত নির্দেশের অপেক্ষায় আছি আমরা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গতকালও ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমরা হামলার জবাব হামলা দিয়ে নয়, কাজের মাধ্যমে জবাব দিতে চাই। সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিনাশ করতে চাই। ক্যাম্পাস কারও একার সম্পত্তি নয়, যেকোনো সময় আমরা আসব। শুধু সময়ের অপেক্ষা। আমরা দেশনায়ক তারেক রহমানের আগমনী বার্তা দিতে চাই।’
ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেহেতু সামনে নির্বাচন, নির্বাচনকেন্দ্রিক আমাদের কর্মসূচি চলছে। সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ দিতে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসব। আমরা খুব দ্রুতই আসব। হাইকমান্ডের নির্দেশের অপেক্ষায় আছি। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল প্রস্তুত আছি। ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে, দাবি আদায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে অচিরেই ক্যাম্পাস থেকে আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে আমরা বিজয় নিয়েই ঘরে ফিরব ইনশা আল্লাহ।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ক্যাম্পাস থেকে হারিয়ে যায়নি। হামলা-মামলার শিকার হয়েও আমরা নিয়মিত পদচারণা অব্যাহত রেখেছি। আগামীতেও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এই ক্যাম্পাসে সরব অবস্থানে থাকবে। ছাত্রলীগের দখলদারিত্বের অবসান ঘটবে শিগগিরই। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পেলে আমরা চূড়ান্ত কর্মসূচিতে যাব। আমরা প্রস্তুত ইনশা আল্লাহ।’
এদিকে ক্যাম্পাস দখল ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করলে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভোররাতে এসে কেউ যদি দেয়াল লিখন করে, এটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলে আমরা মনে করি না। আদালত কর্তৃক ঘোষিত অপরাধীকে তারা দেশনায়ক বলছে, তাদের কর্মকাণ্ড দ্বারা বোঝা যায় তারা কতটা অথর্ব। বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানচর্চার একটি কেন্দ্র, এখানে দখলদারিত্বের কোনো বিষয় নেই। যেটি ছাত্রদল বলার চেষ্টা করছে দখল করবে, এই চিন্তা-ভাবনা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক যায় না। এসবে আমরা বিশ্বাস করি না। শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য যা যা করার দরকার, আমরা তা করতে রাজি আছি। ক্যাম্পাসকে কেউ অস্থিতিশীল করতে চাইলে তা প্রতিহত করা হবে।’
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনে রদবদলের সুযোগ নেই সরকারের। তাই এর আগেই নির্বাচনী প্রশাসনে ধাপে ধাপে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রশাসনে চলছে পদোন্নতি ও রদবদল। ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রশাসন সাজাতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে বদলি-পদায়ন হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে বড় পদোন্নতি হয়েছে। নির্বাচনের আগে অবসরে যাওয়া কয়েকজন সচিবেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২০ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৮ জন ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিসিএসের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৫ সালে, ২৫তম ব্যাচ ২০০৬ সালে এবং ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৮ সালে।
জানা যায়, নির্বাচনের সময় ডিসিরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকেন। তাদের যে কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে বাতিলের ক্ষমতাও থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও থাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা ডিসির অধীনে। নির্বাচনের সময় সমন্বয়কারীর ভূমিকায়ও থাকেন ডিসিরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন তাদের দুটি ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে। আর সে সময় বিসিএস নিয়ে বেশ বিতর্ক ছিল। বিসিএসে ছিল নানা ধরনের তদবির। ২৪ ও ২৫তম ব্যাচ দুটি বিএনপির সময়ে নিয়োগ পেলেও ২৭তম ব্যাচ নিয়োগ পেয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। কারণ বিএনপির শেষ সময়ে ২৭তম ব্যাচের নিয়োগে বড় ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকায় তা বাতিল হয়। পরে ফের পরীক্ষা নিয়ে ২০০৮ সালে এ ব্যাচের নিয়োগ দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল ২৪তম ব্যাচের নিয়োগ নিয়ে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২৪তম ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডিসির পদ থেকে তুলে আনা হতে পারে। নির্বাচনের সময় যারা ডিসির দায়িত্বে থাকবেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তাদের সবার ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে পরিবার ও নিকট আত্মীয়স্বজনদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো যাচাই করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে আর ডিসির পদে রাখা হবে না।
এ ছাড়া নির্বাচনে অন্যতম ভূমিকা পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। বর্তমানে ৩৩, ৩৪ ও ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা রয়েছেন ইউএনও পদে, যারা আসন্ন নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এখন ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ইউএনওর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে; এ ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারের ২৯১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
জানতে চাইলে সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ইকরাম আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষা হয় যোগ্যতা, মেধা ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে। সেখানে ছাত্রজীবনে কে কোন পার্টি করেছিলেন, কোন দল ক্ষমতায় আছে তা বিবেচনা করা হয় না। বিসিএস কর্মকর্তাদের যে ফাউন্ডেশন ট্রেনিং হয়, তাতে তাকে একজন অফিসার হিসেবেই গড়ে তোলা হয়। এরপর এসিআর, সুপিরিয়রের মতামত, সুনাম, দক্ষতা, যোগ্যতার ভিত্তিতেই একজন কর্মকর্তাকে উচ্চতর পদে দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তবে সরকার যে দল পরিচালনা করে তাদের কিছু নীতিমালা ও উদ্দেশ্য থাকে। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সরকারের নেওয়া বৈধ ও জনকল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা। তিনি প্রলুব্ধ হবেন না, নিরপেক্ষ থেকে তার দায়িত্ব পালন করবেন। যদি কোনো নির্বাচনী দায়িত্বও দেওয়া হয়, সেটাও নিরপেক্ষভাবে তিনি পালন করবেন।’
গত মে মাসে অতিরিক্ত সচিব পদে ১১৪ জনের পদোন্নতি হয়। জুলাই মাসে পাঁচ বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসেই বদলি ও নতুন মিলিয়ে ৩০টি জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উপসচিব পদমর্যাদার এই ডিসি পদে এবারও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আটজন পিএসকে পদায়ন দেওয়া হয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ২২১ কর্মকর্তা। এ পদোন্নতিতে মূল বিবেচনায় এসেছে ২২তম ব্যাচ। বর্তমানে যুগ্ম সচিবের স্থায়ী পদ ৫০২টি। এর বিপরীতে পদোন্নতি পাওয়ার পর যুগ্ম সচিবের সংখ্যা হলো ৯৪৬ জন। এর আগে সর্বশেষ গত বছর ২ নভেম্বর ১৭৫ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। আর গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২৭০ জন সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই অন্তত ১০ জন সচিবের স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার কথা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন আগামী ১৩ অক্টোবর অবসরে যেতে পারেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান ১৪ সেপ্টেম্বর, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আবদুস সালামের ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে আবদুস সালামের চাকরি এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ৯ অক্টোবর, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক ৩০ অক্টোবর, ইআরডি সচিব শরিফা খান ২৪ নভেম্বর, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহসানে এলাহী ২৫ নভেম্বর এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল হোসেন ২৯ নভেম্বর অবসরে যাবেন। ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম এবং ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম। এ ১০ জনের মধ্যে কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন।
গত কয়েক বছরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মুখ্য সচিব পদে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই স্বাভাবিক অবসরের মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। সর্বশেষ সাবেক চার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মধ্যে একমাত্র কবির বিন আনোয়ার ছাড়া বাকি তিনজনই স্বাভাবিক মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। তারা হলেন মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, মোহাম্মদ শফিউল আলম ও খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।