
একসময় ঢাকায় সন্ধ্যা নামলেই শহর ঘুমিয়ে যেত। একবার বাসায় ঢুকলে বাসা থেকে অভিভাবকরা আর বের হতে দিতেন না। সেই সময় রাতে চলাচল করা ছিল একরকম আতঙ্ক। কিন্তু এখন আর আগের মতো নেই শহর। দিনের মতো রাতের বেলায়ও জমজমাট। সন্ধ্যার সেই ঘুমন্ত শহর এখন ক্রমেই ২৪ ঘণ্টার নগরীতে রূপান্তরিত হচ্ছে।
রাত যত বাড়ে, শহরের ব্যস্ততা ঠিক ততই বাড়তে থাকে। রাস্তায় থাকে বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার ও ব্যাটারিচালিত যানের দাপট। এরই মধ্যে শহরে গড়ে ওঠা রাতের বাজারগুলো ও আশপাশে কর্মব্যস্ত হাজারো লোকের হাঁকডাক শোনা যায়। ভবন বা যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণ ঘিরে ব্যস্ত থাকে আরও অনেক লোকজন। যদিও রাত ১টার পর খুব একটা গণপরিবহনের দেখা মেলে না। তবে বিকল্প বাহন ও অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবায় ভরসা করা যায় রাতের যাত্রায়।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মাছের আড়ত, ঠাটারীবাজার, সোয়ারীঘাট মাছের বাজার, কারওয়ান বাজার, বাদামতলী ফলের বাজারে রাতভর ব্যস্ত থাকে। মূলত এ বাজারগুলো কেন্দ্র করে প্রতিরাতে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য হয়। এ বাজারগুলো কেন্দ্র করে আরও বেশ কয়েকটি ছোট ছোট ব্যবসায়িক কর্মকা- হয়। আর যার প্রভাব রাজধানী জুড়ে দেখা যায়। আর বসুন্ধরা কুড়িল এলাকায় রাতভর খোলা থাকে দোকানপাট। বসুন্ধরার ভেতরে আবাসিক এলাকায় দোকানপাট না থাকায় রাতে জরুরি জিনিসপত্রের চাহিদা মেটানোর জন্য মূলত এ দোকানগুলো খোলা থাকে। তবে অনেক তরুণও রাতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে দেশ-বিদেশে বড় রকমের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরি করে। সেখান থেকে বড় রকমের মুনাফা আসে দেশে ফ্রিল্যান্স কাজের মাধ্যমে।
সরেজমিন গত সপ্তাহের মঙ্গল ও বুধবার রাতে গুলিস্তান এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কিছু কিছু জায়গায় তীব্র যানজট। সড়কের পাশে বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী ওঠানামার কাজ করছেন শ্রমিকরা। আর পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যাত্রাবাড়ী এলাকার সড়কে ব্যস্ত আগের চেয়ে বেড়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকায় পণ্য আসে রাতভর, দূরপাল্লার বাসগুলো শহর থেকে যাওয়া-আসা করছে বিভিন্ন গন্তব্যে। মালিবাগ আবুল হোটেলের সামনেও অনেক গার্মেন্ট রাতভর খোলা থাকে।
গুলশানেও অনেক রেস্তোরাঁ খোলা থাকতে দেখা যায়। মহাখালী এলাকায়ও গাড়ির চাপ থাকে চোখের পড়ার মতো। এর মধ্যে মেট্রোরেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসসহ শহরের উন্নয়নকাজ চলতে দেখা যায় রাতের বেলায়। আর উত্তরবঙ্গের যাত্রার প্রবেশপথ গাবতলী এলাকায় গাড়ির চাপ দেখা যায়। শহর পরিষ্কার করতে দেখা যায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের। এ ছাড়া রাতে আগের চেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংখ্যা বেশি দেখা যায়। রাজধানীর প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে জোরালো তৎপর দেখা যায় পুলিশের।
গত বুধবার রাত ১২টার পর পান্থপথ এলাকায় কথা হয় এক চা দোকানের মালিকের সঙ্গে। ‘স্মার্ট চা বিক্রেতা’ নামে বেশ পরিচিত মো. হান্নান নামে এ ব্যক্তির। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই এলাকায় রাত যত বাড়ে, আমার বেচাবিক্রি তত বাড়তে থাকে। বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এ দোকানে আসে চা খেতে। অনেকে চলার পথে একটু বিরতি নেয় এ দোকানের সামনে। তাছাড়া রাতে বেচাকেনা করতে বেশ ভালো লাগে।’
কারওয়ান বাজারের ডিম ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমাদের এ আড়তে ডিমের চালান আসে। প্রতিরাতেই আমাদের ব্যস্ততা থাকে। রাজধানীর খুচরা দোকানদার বা যারা দোকানে দোকানে সরবরাহ করে, তারা আমাদের কাছ থেকে ডিম নিয়ে যায়। রাতভরই বেচাকেনা হয়।’
একইদিন রাতে কথা হয় মো. জামান নামে এক উবার চালকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার বাসা মুগদা এলাকায়। নিজের ব্যক্তিগত একটি প্রাইভেট কার আছে। দিনের বেলায় রাস্তাঘাটে অনেক যানজট থাকে। তাই রাত ১২টার পর গাড়ি নিয়ে বের হই। এ সময় গাড়ি চালাতে বেশ ভালো লাগে। তাছাড়া রাতের বেশিরভাগ যাত্রী উবার সেবায় ভরসা করে।’ সব খরচ বাদ দিয়ে ২ হাজার মতো টাকা থাকে বলে জানান তিনি।
রাজধানীর কুড়িল এলাকায় রংপুর থেকে আসা দুলাল মিয়া নামে এক ট্রাকচালক বলেন, ‘রাত ১২টার আগে শহরে প্রবেশ করা যায় না। তাই রংপুর থেকে এসে অপেক্ষা করছি। রাত ১২টার পর শহরে প্রবেশ করব। তবে রাতে কিছু জায়গায় ট্রাক থামিয়ে কেউ কেউ চাঁদা তোলে। এ ছাড়া আর কোনো সমস্যা নেই। গাড়ির গতি স্বাভাবিকই থাকে।’
রাতের সড়কে কিছু জায়গায় আবাসিক এলাকার স্থানীয় লোকজন ভেতরের প্রবেশ গেট বন্ধ করায় কিছুটা বেগ পেতে হয় বলে জানান রাজধানীর মহানগর আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মো. রায়হান। তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়িক কাজে অনেক সময় রাত করে বাসায় ফিরতে হয়। তাছাড়া আমাদের শহর আর আগের মতো নেই। এখন দিনে-রাতে সবসময় ব্যস্ত থাকে শহর। সে হিসাবে এভাবে বন্ধ করার কোনো মানে হয় না।’ প্রয়োজনে এলাকায়গুলোতে সিকিউরিটি বাড়িয়ে গেট খুলে রাখার দাবি জানান তিনি।
রাত যত বাড়ে পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারে ভোজনরসিকদের আড্ডা বাড়তে দেখা যায়। ‘হানিফ বিরিয়ানি’র বিক্রেতা মো. শাকিল জানান, এই এলাকায় রাত ১২টার পর লোকজন আসে। দিনের বেলা থেকেও বেশি। শহরের বিভিন্ন এলাকার লোকজন আসে। যে কারণে নাজিরাবাজার দিনে-রাতে সবসময় ব্যস্ত থাকে।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ইকার সঙ্গে কথা হয় নাজিরাবাজারে। তিনি বলেন, ‘এখন রাতে ঘুরতে বেশ ভালো লাগে। একটা সময় ছিল রাতে বের হওয়া যেত না। নীরব থাকত চারপাশ। কিন্তু সেই ঢাকা আর আজকের ঢাকার মধ্যে অনেক পার্থক্য। এখন ঢাকা ক্যাপিটাল সিটিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। যার ফলে দিনের বেলার মতো রাতে পুরো শহর ঘোরা যায়। আর এতে করে আমাদের সিটি অর্থনৈতিকভাবে আরও বেশি সমৃদ্ধ হচ্ছে।’ নাজিরাবাজার সবসময় জেগে থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আসলাম খাবারের খোঁজে।’
রাত ১টার পর গণপরিবহন খুব একটা দেখা যায় না। ফলে রাতে চলাচলের জন্য ব্যক্তিগত পরিহনের পাশাপাশি ব্যাটারিচালিত যানের দাপট থাকে। মো. রাজু নামে এক চালক বলেন, ‘দিনের বেলায় রোদে গাড়ি চালাতে ভালো লাগে না। তাই রাত ১২টার পর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বের হই। ছয় ঘণ্টা চালালে গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা আয় হয়। দিনের বেলায় এত আয় করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’
রাত ২টার পর গুলশান গুদারাঘাট এলাকায় মাহাবুব ও আকাশ নামে দুজন পথচারীর সঙ্গে দেখা হয়। তারা বলেন, সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় এসেছেন কিছুক্ষণ আগে। একটা সময় ছিল রাতে এভাবে রাস্তায় হাঁটা যেত না। এখন আর আগের মতো নেই শহর। রাতের বেলায়ও চারপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা থাকেন। তাই গ্রাম থেকে ঢাকায় আসতে গভীর রাত হলেও সমস্যা নেই।
গত ১২ আগস্ট গুলিস্তান মাজারের সামনে পরিচ্ছন্নতাকর্মী রাবেয়াকে (৪০) কাজ করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, দিনের আলো ফোটার আগেই শহর পরিষ্কারের কাজ শেষ হয়ে যায়। একটা সময় সকাল বেলায় এ কাজ করলেও এখন রাত ১২টায় শুরু হয়ে যায়। তাই পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা রাতে অনেক ব্যস্ততা থাকেন। আর রাতের এ সময়টায় কাজ করতে ভালো লাগে বলে জানান তিনি।
পূর্বাচলে ভূঁইয়া হোটেলের ম্যানেজার সজীব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের হোটেল ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত বেশি চলে। কারণ শহরে প্রবেশের আগে এই এলাকায় ট্রাক দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। ট্রাকচালক ও তাদের সহকারীরা এ হোটেলে খাওয়াদাওয়া করেন। তাছাড়া অনেকেই বিভিন্ন জায়গা থেকে রাতের বেলায় এ হোটেলে খেতে আসেন।’ তিনি জানান, রাতের বেলা ব্যবসা ভালোই চলে।
ঢাকা মহানগর ফল আমদানি-রপ্তানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ আবদুল করীম বলেন, ‘আমাদের ঢাকা সিটি এখন ২৪ ঘণ্টার নগরীতে রূপান্তর হয়েছে। যার সুফল ভোগ করছি আমাদের বাদামতলী এলাকার ব্যবসায়ীরা। রাতভর বিভিন্ন জায়গা থেকে ফলের গাড়ি আসে। সেগুলো কেন্দ্র করে রাতভর ব্যস্ত থাকেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। সমিতির পক্ষ থেকে দিনের বেলার মতো রাতের বেলায়ও ভালোভাবে মনিটরিং করার জন্য লোকজন রাখা হয়েছে।’
দিনভর ব্যস্ত ঢাকা যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে, ঠিক তখনই এ শহরের কিছু এলাকা জেগে ওঠে। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মিরপুর বেড়িবাঁধসংলগ্ন পাইকারি কাঁচাবাজার, গাবতলী, পুরনো ঢাকার বাবুবাজার, নাজিরাবাজার, সদরঘাট, সায়েদাবাদ, মহাখালীসহ বেশ কিছু এলাকায় রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মচাঞ্চল্য শুরু হয়। ঢাকার রাতের অর্থনীতি মূলত এসব এলাকা কেন্দ্র করেই পরিচালিত হয়।
কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন মেগাসিটির রাত্রিকালীন অর্থনীতির যে চিত্র তা থেকে অনেক দূরে রয়েছে ঢাকা। আর এ দূরত্ব যে শুধু উন্নত ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রব্যবস্থার কারণে হয়েছে তা নয়, এ ক্ষেত্রে সংস্কৃতি, সরকারি নীতি, লিকার নীতি ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে একটি শহরের রাত্রিকালীন অর্থনীতি। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এসবই শহুরে রাত্রিকালীন অর্থনীতির বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনার পর রাজধানী ঢাকায় প্রায় সব দোকানপাট রাত ৮টার পর বন্ধ করে দিতে হয়। রাত ১২টার পর কোনো নাগরিক রাস্তায় বের হলে পুলিশের জেরার মুখে পড়তে হয়। সুযোগ-সুবিধা ও নানা ধরনের বিধিনিষেধের কারণে রাজধানী ঢাকার রাত্রিকালীন অর্থনীতি শুধু পণ্যের পাইকারি বাজারকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে।
লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, সান ফ্রান্সিসকো, বার্লিন, আমস্টারডাম, প্যারিস, মাদ্রিদ, সিডনিসহ বিশ্বের যেসব শহর ২৪ ঘণ্টা সচল থাকে, সেসব শহরে রাতের অর্থনীতির বড় অংশ জুড়ে রয়েছে নাইট ক্লাব, ক্যাফে, বার, স্বাস্থ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, পেশাদার পরিষেবা খাত, যা মূলত সেবা খাত হিসেবে চিহ্নিত। এগুলোই মেগাসিটিগুলোর রাতের অর্থনীতির প্রাণ।
বিশ্বব্যাপী শুধু ক্যাফে, বার এবং নাইট ক্লাব নয়, যা রাতের অর্থনীতি তৈরি করে। একটি সক্রিয় নাইটলাইফের শহরে পাব ও রেস্তোরাঁয় যাওয়া ছাড়াও, আতিথেয়তা খাতকে পরিপূরক করার জন্য বিস্তৃত কার্যক্রম বিদ্যমান। এর প্রভাবে রাজস্ব বাড়ে এবং কর্মসংস্থান তৈরি হয়। লন্ডনের মেয়রের অফিসের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৭ সালে শহরে কর্মরতদের এক-তৃতীয়াংশ বা প্রায় প্রায় ১৬ লাখ মানুষ রাতে কাজ করেছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৯১ হাজার স্বাস্থ্যে, ১ লাখ ৭৮ হাজার পেশাদার পরিষেবাগুলোতে এবং আতিথেয়তা খাতে ১ লাখ ৬৮ হাজার জন নিযুক্ত ছিল। এ ছাড়া পরিবহন, অটোমেটিভ, তথ্যপ্রযুক্তি ও শিক্ষা খাতসংশ্লিষ্ট লোকজনও রাতে কাজ করে। যুক্তরাজ্যের নাইট টাইম ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের একটি সমীক্ষা অনুসারে, করোনা মহামারী শুরুর আগে যুক্তরাজ্যের মোট রাত্রিকালীন অর্থনীতির আকার ছিল ১১২ বিলিয়ন পাউন্ড, যা দেশটির জিডিপির প্রায় ৫ দশমিক ১ শতাংশ।
আমস্টারডামের সাবেক নাইট মেয়র মিরিক মিলান একবার বলেছিলেন, রাতের সংস্কৃতি একটি শহরের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।
বাংলাদেশের রাতের সংস্কৃতি একটু আলাদা। অর্থনীতির যে অংশগুলো রাতে কাজ করতে পারে এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে যথেষ্ট মূল্য যোগ করতে পারে, তা না হওয়ার কারণ দেশের মেগাসিটির লোকেরা রাতে ঘুমাতে চলে যায়। তবে দেশে এমন কিছু পকেট রয়েছে, যেখানে রাতের অর্থনীতি একটি বিকশিত ঘটনা।
সেই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের অর্থনীতিও লাভবান হবে যদি দেশের শহরগুলোতে একটি কাঠামোগত রাত্রিকালীন অর্থনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়। যদি শপিং সেক্টরের জন্য একটি রাত্রিকালীন নীতি করা যায়, তাহলে রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তা এবং ব্যবস্থাপক পদে প্রায় ২০-২৫ শতাংশ কাজের সুযোগ বাড়তে পারে। এতে করে সংশ্লিষ্ট খাতে একই হারে রাজস্ব বাড়বে।
তবে রাজধানী ঢাকার রাত্রিকালীন অর্থনীতি কারওয়ান বাজার, সায়েদাবাদ, গাবতলীসহ পুরনো ঢাকার কিছু এলাকা ও বাসস্ট্যান্ড এলাকা ঘিরে পরিচালিত হচ্ছে। ১৮০০ শতাব্দীর শেষের দিকে যাত্রা শুরু হওয়া কারওয়ান বাজার এলাকায় রাত ১০ থেকে ১২টার পর থেকেই বড় বড় ট্রাক, পিকআপ ভ্যানে প্রায় সবরকমের শাকসবজি ও পেঁয়াজ-রসুনের মতো নিত্যপণ্য আসতে শুরু করে। এ বাজার কেন্দ্র করে হাজারো মানুষের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হয়। দেশের অর্থনীতিতেও অবদান রাখছে। তবে এখানে আয়-রোজগারের সঙ্গে সঙ্গে নানারকম দুর্ভোগও রয়েছে। নামে-বেনামে চাঁদার কারণে এ বাজারের পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে ভোক্তার ওপর।
কারওয়ান বাজারকে কেন্দ্র করে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। রাজধানীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পাইকারি ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি খুচরা ব্যবসায়ীদের রুটি-রুজির ভরসা এই বাজার। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মিষ্টিকুমড়া, লালশাক, লাউশাক, পুঁইশাক, লাউ, করলা, গাজর, টমেটো, কলাসহ সব ধরনের সবজির পাইকারির বড় বাজার কারওয়ান বাজার।
জানতে চাইলে কারওয়ান বাজার কাঁচামাল আড়ত ব্যবসায়ী মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের (আড়ত ভবন নিচতলা) সাধারণ সম্পাদক সুজন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে কারওয়ান বাজার। শুধু প্রতিবছর আড়ত ভবন নিচতলার কাঁচাবাজারে হাজার কোটি টাকারও বেশি লেনদেন হয়। এ ছাড়া এখানে আরও দুটি কাঁচাবাজার মার্কেট, ফুটপাত ও অস্থায়ী আড়ত ব্যবসা রয়েছে। সেগুলোর বিষয় সঠিকভাবে বলা না গেলে বড় অঙ্কের লেনদেন হয়। এ বাজারের ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কৃষক, মিনতি, লেবার, পাইকার, খুচরা ব্যবসায়ীসহ আরও কয়েক শ্রেণি-পেশার মানুষ।’
শুধু কারওয়ান বাজার নয়, পুরনো ঢাকার বাবুবাজার, শ্যামবাজার, বাদামতলীসহ রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত হচ্ছে দিনের ২৪ ঘণ্টা জুড়ে। এসব ব্যবসায়িক কেন্দ্র শুধু ঢাকাবাসীর চাহিদাই মেটাচ্ছে না বরং রাজধানীর আশপাশের জেলাগুলোর মানুষও অনেকাংশে নির্ভরশীল। মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুরের খুচরা ব্যবসায়ীরা এসব ব্যবসা কেন্দ্র থেকে পণ্য কিনে স্থানীয় চাহিদা মেটাচ্ছেন।
মুন্সীগঞ্জ থেকে আসা পাইকারি ক্রেতা ইদ্রিস মোল্লা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে ধরনের পণ্য পাইকারি ক্রেতাদের চাহিদা থাকে, তা পাওয়ার অন্যতম ভরসার জায়গা কারওয়ান বাজার। মৌসুম অনুসারে অনেক কিছুই অনেক জায়গায় পাওয়া যায় না। তবে কারওয়ান বাজার থেকে যত দামে পণ্য কিনতে পারি, বাজার থেকে বের হতেই বাড়তি আরও দেড় হাজার টাকা এখানে-ওখানে বিভিন্ন নামের চাঁদা দিতে হয়।’
রাজধানীর গাবতলীতে ২৪ ঘণ্টা সচল থাকে মূলত নির্মাণসামগ্রীর উপকরণ কেনাবেচায়। তবে অর্থের লেনদেন দিনের বেলায় হলেও পণ্য পরিবহন হয় রাতে। পুরো রাতের বেলায় এখান থেকে পাথর, ইট, বালু রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়।
গাবতলীর পাথর ব্যবসায়ী জিহান আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্মাণসামগ্রীর ব্যবসা কেন্দ্র করে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ব্যবসায়িক এ হাবটি ২৪ ঘণ্টা জেগে থাকলেও বিভিন্ন বিধিনিষেধের কারণে পণ্য পরিবহনের কাজটি শুধু রাতে করতে হয়।’
রাজধানীর রাতে অর্থনীতিতে আরও একটি বড় হাব রয়েছে। সেটি হলো রেস্টুরেন্ট ব্যবসা ঘিরে। পুরান ঢাকার নাজিরাবাজার, চানখাঁরপুলসহ বেশ কিছু এলাকায় প্রায় সারা রাত খাবারের দোকানগুলো খোলা থাকে। নাজিরাবাজারে বিখ্যাত খাবার হলো হাজীর বিরিয়ানি। এ ছাড়া আছে হানিফ বিরিয়ানি, মামুন বিরিয়ানি, ভাই ভাই বিরিয়ানি হাউস, মদিনা বিরিয়ানি হাউস, বিসমিল্লাহ কাবাব ঘর, মক্কা বিরিয়ানি হাউস, বোখারী কড়াই রেস্তোরাঁ। আগুনপান পাওয়া যায় নাজিরাবাজারে।
চানখাঁরপুল এলাকায় প্রায় সারা রাত খাবার দোকানগুলো জমজমাট থাকে। এখানকার নান্নার শাহি মোরগ পোলাও, মামুন বিরিয়ানি হাউস, নীরব হোটেলের মতো বিখ্যাত দোকানগুলো থাকে জমজমাট। তবে অভিযোগ আছে, রাত বাড়লেই পুলিশের হয়রানির শিকার হন এসব এলাকায় ঘুরতে আসা গ্রাহকরা।
পুরান ঢাকাসহ বেশ কিছু এলাকার বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে রাতের ব্যস্ততা চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। তবে মূল রাজধানীকে কেন্দ্র করে এ ব্যস্ততা এখন অনেক বেশি। নানা প্রয়োজন কিংবা বিনোদনেও এখন রাতে বের হতে আগ্রহী নগরবাসী। ব্যবসায়িক প্রয়োজন ছাড়াও সারা দিনের যানজটে পূর্ণ কর্মব্যস্ত নগরীতে একটু স্বস্তির প্রত্যাশায় অনেকেই বের হন রাতে। তবে ব্যবসা কিংবা অন্য প্রয়োজনে রাতের ঢাকায় চলাচলে সংকট ও নিরাপত্তাহীনতার অস্বস্তি কিন্তু থাকছে। এসব মিটিয়ে ঢাকাকে নিরাপদভাবে ২৪ ঘণ্টার নগরীতে রূপ দিলে ত্বরান্বিত হবে ঢাকার নানা কর্মযজ্ঞ। এজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয় বেশি জরুরি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময়ে রাজধানীতে প্রবেশের পরও পথে পথে চাঁদাবাজির শিকার হতে হয়। চাঁদা না দিলে নানাভাবে তাদের স্বাভাবিক চলাচলে বাধা দেওয়া হয়। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের অবগত করা হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, এ বিষয়ে তারা সক্রিয় রয়েছে। চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটলে তারা আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। সরকারের অন্য সংস্থার মদদে যদি কেউ তাদের হয়রানি করা হয় তাহলে সে দায় পুলিশের নয়। আর যদি কেউ সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করে, তাহলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে নানা প্রয়োজনে রাতে বের হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে নগরবাসীর। তবে বাইরে বের হতেই পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে পড়ে হয়রানির শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য পুলিশে বলছে, নিরাপত্তার প্রয়োজনে সন্দেহজনক মনে হলে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে থাকে। পুলিশের কোনো সদস্য যদি এ অজুহাতে কাউকে হয়রানি করে, তাহলে অভিযোগ জানালে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে ঢাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় রাতে চলাচল অনেকটা অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। ভোরে ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার পেছনে পুলিশের টহল দলের সক্রিয় না থাকার অভিযোগ রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা শহর ২৪ ঘণ্টা কর্মব্যস্ত থাকে। দিনের বেলায় যেমন অফিসে সবাই ব্যস্ত থাকে, রাতের ঢাকায় ব্যাপক হারে ট্রাক ঢোকে। কাঁচা বাজারে বিভিন্ন পণ্য যারা বিক্রি করেন, সেখানে বাজার খুবই সক্রিয় থাকে। যারা রাতের বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে বাইরে থেকে আসেন, তারা যখন গভীর রাতে চলাচল করেন তখন অপরাধীদের ফাঁদে পড়েন। এসব বিষয় বিবেচনায় বিট পুলিশ ও থানা পুলিশকে রাজধানীর অপরাধ দমনে সবসময় নির্দেশনা দেওয়া হয়। দিনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকে। তবে অপরাধীরা স্বভাবতই রাতে বেশি অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে। সেই বিবেচনায় রাতের নিরাপত্তায় ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হয়। বর্তমানে টহল, ফুট প্যাট্রলিং ও সাদা পোশাকে সদস্যদের বিভিন্ন এলাকায় মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়া গুরুত্ব বিবেচনায় বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে গোয়েন্দা কার্যক্রমও।
এ ছাড়া রাতের রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পণ্যবাহী ও দূরপাল্লার পরিবহনের জট লেগে থাকতে দেখা যায়। নিয়ম না মেনেই রাত ১০টার আগেই বহু মালবাহী পরিবহন ঢাকায় প্রবেশ করে। এসব পরিবহন চলাচল আগের তুলনায় বেড়েছে। রাজধানীর গুলিস্তানসহ বিভিন্ন এলাকায় গভীর রাতেও জট লেগে থাকতে দেখা যায়। মূলত ওই সময়ে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের সক্রিয় থাকতে দেখা যায় না। এর কারণ হিসেবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকায় পরিবহন ও সড়ক বেড়ে যাওয়ার পরও সে তুলনায় জনবল না বাড়ানোয় এ সমস্যা সৃষ্টি হয়। তবে এটি নিয়ন্ত্রণে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন।
বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির নেতা জাহাঙ্গীর আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আমাদের গাড়িগুলো থেকে প্রতিদিন রাতে নামে-বেনামে চাঁদা নেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে সিদ্দিকবাজার, গুলিস্তান, জয়কালী মন্দির, যাত্রাবাড়ী, দয়াগঞ্জ, দোলাইরপাড় এবং ধোলাইখালসহ বিভিন্ন স্থান। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী মোড়ে ফ্লাইওভারের নিচে টোলের নামে টাকা নেওয়া হয়। চাঁদা দিতে না চাইলে গাড়ির চালক ও শ্রমিকদের শারীরিকভাবে নির্যাতন এবং গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।’
মালিক সমিতির এ নেতা অভিযোগ করে বলেন, ‘এ পয়েন্টগুলো ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হয়রানির শিকার হতে হয়। আমাদের মালবাহী গাড়িগুলো বিভিন্ন এলাকায় মাল নামাতে গেলে টহল পুলিশ এসে টাকা চায়। না দিলে নানাভাবে হয়রানির চেষ্টা করে। এ ছাড়া সকালে বিভিন্ন এলাকায় গাড়ির কাগজ দেখার কথা বলে আটকে রেখে সময়ক্ষেপণ করে, পরে নির্ধারিত সময় পার হলে জরিমানা গুনতে হয় আমাদের। এসব বিষয়ে পুলিশকে আমরা জানানোর পরও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। রাতে আমাদের এ পরিবহন সেবা অব্যাহত রাখতে পুলিশের সহযোগিতা ও সমন্বয় প্রয়োজন।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মো. জাফর হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবহন মালিকরা আমাদের তাদের সমস্যার কথা জানালে আমরা সে অনুযায়ী তাদের সহযোগিতা করব। এ ছাড়া পরিবহনে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটলে আমরা অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করি। কিছুদিন আগেও আমরা এমন অভিযোগে চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার করেছি। আর পুলিশের কোনো সদস্য যদি হয়রানি করে কিংবা টাকা নেয়, তাহলে আমাদের কাছে এসে সুনির্দিষ্ট করে অভিযোগ জানাতে হবে। তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারব।’
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঢাকায় আগের তুলনায় পরিবহন বেড়েছে, সে অনুযায়ী আমাদের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। তারা বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে কাজ করছে। রাতে বিভিন্ন এলাকায় যানজটের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমরা রাতে পৃথকভাবে আমাদের সদস্যদের ওইসব এলাকার দায়িত্ব দিয়ে থাকি।’
চলতি বছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ বা নতুন বছরের মধ্য জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি এক দফা ঘোষণা করায় এক ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধান সম্মতভাবেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপির এক দফা দাবি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। সরকারি ও বিরোধী দলের এ চাওয়া নিয়ে ভোটের আগে সেপ্টেম্বর মাসকে গুরুত্বপূর্ণ ধরে নিয়েই এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। এ মাস থেকে মাঠের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা এবং আরও সোচ্চার থাকার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ক্ষমতাসীনরা। নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের একটুও ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
এ ছাড়া এই মাসে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে দেশের বাইরে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এগুলো নিয়ে জল ঘোলা করার চেষ্টা করা হবে রাজনীতির মাঠে। তাই এ মাসটি গুরুত্ব পাচ্ছে আওয়ামী লীগের কাছে। মাঠে সজাগ ও সতর্ক থাকতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি ও সমমনা দলগুলোকে অনেক ছাড় দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, বিএনপি-জামায়াত যৌথভাবে এখন আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালাবে। সেটা করতে দেওয়া যাবে না বলেই এখন আর কোনো ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ।
ইতিমধ্যে রাজধানী ঢাকায় সেপ্টেম্বরের প্রথম দুদিন দুটি বড় সমাবেশ করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ ও দলটির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ। এর আগে গত জুলাই বিরোধীদের আন্দোলনের জবাবে শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে ছিল আওয়ামী লীগ।
ক্ষমতাসীনদের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের আয়োজনে ছাত্রসমাবেশ ও ২ সেপ্টেম্বর পুরনো বাণিজ্য মেলা মাঠে সুধী সমাবেশ। একইদিন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একটি অংশ উদ্বোধন করা হবে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, মাসের শুরুতে বড় শোডাউন দিয়ে সরকারবিরোধী পক্ষকে হুঁশিয়ার করতে চায় আওয়ামী লীগ। মাসের দ্বিতীয় দিনও ঢাকায় বড় কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দলটি জানান দিতে চেষ্টা করবে মাঠের শক্তিতে অপরাজেয় আওয়ামী লীগ। এ দুটি কর্মসূচিতে বক্তব্য দেবেন টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বিএনপিসহ আন্দোলনরত সব দলের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে জানিয়ে দেওয়া হবে ষড়যন্ত্র, জ্বালাও-পোড়াও বাংলাদেশে হবে না।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির কর্মসূচি দেখে দেশের সাধারণ মানুষ ভীত থাকে। কখন কী হয় সেই আতঙ্ক দেখা দেয় শান্তিপ্রিয় মানুষের মধ্যে। আওয়ামী লীগ নির্বাচন পর্যন্ত কোনো ধরনের অস্থিরতা, অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনা আর দেখতে চায় না।’
দলের আরেক সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকার পরিকল্পনা নিয়েছে আওয়ামী লীগ। কারণ একটাই, মানুষকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখা।’
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা নানান চাপ সৃষ্টি করছে। এরই মধ্যে বিএনপিসহ বিরোধীরাও ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করছে। সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে বিএনপি লাগাতার কর্মসূচি পালনের ঘোষণা আগেই দিয়েছে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপি যাতে মাঠ নিয়ন্ত্রণ বা জনসম্পৃক্ততা তৈরি করতে না পারে, সেজন্য মাসের প্রথম দুদিন ঢাকায় বৃহৎ জমায়েত করে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করবে জনগণ তাদের সঙ্গেই আছে, থাকবে। এতে করে সারা দেশের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হবেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজনৈতিক মহড়ার মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রতি জনগণ যে আস্থাশীল, সেই বার্তা দেশি-বিদেশি মহলে জানিয়ে দিতে চাই আমরা। মানুষ শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় দেখতে চায় তার প্রমাণই দেখাতে চাই আগামীকাল (শনিবার) সুধী সমাবেশের মধ্য দিয়ে।’
১ সেপ্টেম্বর (আজ) ছাত্রলীগ যে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে, সেটি মূলত ৩১ আগস্টই হতো সবসময়ই। কিন্তু এবারই তা এক দিন পিছিয়ে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করা হচ্ছে। অবশ্য ছাত্রলীগ কারণ দেখিয়েছে, ৩১ আগস্ট বৃহস্পতিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত খোলা হওয়ায় তারা কর্মসূচি এক দিন পিছিয়ে শুক্রবার ছুটির দিনে করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেপ্টেম্বরে শক্তভাবে মাঠে নামার পরিকল্পনারই অংশ আজকের ছাত্র সমাবেশ। ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। একইদিন বিএনপিও ঢাকায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। ফলে উত্তাপ থাকবে আজও।
আজ বিকেল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্র সমাবেশ সফল করার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এবং তাদের অধীনে থাকা বিভিন্ন ইউনিট দফায় দফায় বৈঠক করেছে। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, সমাবেশে পাঁচ লাখের বেশি ছাত্র জমায়েত হবে। অন্যদিকে সাংগঠনিক ইউনিটগুলো থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
এ কর্মসূচি ঘিরে ছাত্রসমাজে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে পাঁচ লাখ শিক্ষার্থীর বাইরেও যারা কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতাকে ভালোবেসে এবং শেখ হাসিনার প্রতি নিরঙ্কুশ সমর্থন দেওয়ার জন্য অনেকেই ছুটে আসবে।’
আগামীকাল শনিবার বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। ওইদিন বিকেল ৩টায় পুরনো বাণিজ্য মেলা মাঠে সুধী সমাবেশ হবে। প্রথমদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের তত্ত্বাবধানে এ সুধী সমাবেশ করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা থেকে সরে এসে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এ সমাবেশের আয়োজক হয়েছে। নির্বাচন এবং বিরোধীদের আন্দোলন কর্মসূচিকে মাথায় রেখে সুধী সমাবেশ ব্যাপক পরিসরে করতে চায় আওয়ামী লীগ। সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করে মাঠ দখলে রাখার তৃপ্তি পেতে চান নেতাকর্মীরা। এ সমাবেশে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদেরও আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে বলে জানা গেছে।
সুধী সমাবেশ সফল করতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ছাড়া ও দলটির সহযোগী সংগঠনগুলো আলাদা বর্ধিত সভা করছে। এরই মধ্যে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহসহ আশপাশের জেলার নেতা ও জনপ্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। সেখানে তৃণমূলের নিজ নিজ ইউনিট থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতাকর্মী আনার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএ মান্নান কচি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস উন্নয়নের নতুন দিগন্তের উদ্বোধনে অনেকেই সাক্ষী হওয়ার জন্যই যাবেন। যেমন মেট্রোরেলের উদ্বোধনের দিনও গিয়েছিলেন। এ কারণে আলাদা উৎসাহ-উদ্দীপনাও আছে।’
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ ৪৬ বছরে পা দিচ্ছে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি। দলটি এমন একসময়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে যখন সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি আদায়ে রাজপথে চূড়ান্ত আন্দোলনে রয়েছে। দলটির নেতারা বলছেন, বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বর্তমানে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। ক্ষমতাসীন অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার দেশের রাজনীতি, অর্থনীতিসহ গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের পাশাপাশি জনগণের ভোটাধিকার, মানবাধিকারসহ সব ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দফায় দফায় জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। জনগণ এখন এ সরকারের হাত থেকে মুক্তি চায়। রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে জনগণ প্রত্যাশা করছে বিএনপি তাদের মুক্তি দেবে।’
তারা বলছেন, প্রতিষ্ঠার পর সবচেয়ে বিপদসংকুল পথ অতিক্রম করছে। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সফলতা পেতে ৯ বছর লাগলেও এবার ইতিমধ্যে ১৪ বছর চলে গেছে। বর্তমানে সরকার পতনের যে আন্দোলন চলছে, এবার সে আন্দোলনে ব্যর্থ হলে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে ছিটকে পড়তে হবে। আগামী ২০৪১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তাই চলমান আন্দোলন দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপি নেতারা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে চলমান এক দফার আন্দোলন সফল করতে নেতাকর্মীরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবেন। আগামী সপ্তাহে রাজপথে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে শরিক দলগুলোর পাশাপাশি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরাসহ দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করে আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আমাদের হাতে সময় খুবই কম।’
বিএনপির একাধিক স্থায়ী কমিটির সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের আগে এক দফার দাবিতে রাজপথে দুই-একটি কর্মসূচি থাকবে। তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচি থাকবে। কর্মসূচি চূড়ান্ত করার আগে শরিক দলগুলোর লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে।
যুবদলের এক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কর্মসূচিতে যারা পরিশ্রম বেশি করে তাদেরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যতটা না টার্গেট করে, তার চেয়ে বেশি টার্গেট করে দলের কিছু নেতা। কোনো কর্মসূচি সফল করলে তাদের গা জ¦লে। আতঙ্কে থাকে এই বুঝি তার রাজনীতি শেষ হয়ে গেল। এভাবে রেষারেষি চলতে থাকলে আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ তিনি বলেন, ‘দলের কিছু জ্যেষ্ঠ নেতা চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতে। তারা নিজেরা কোনো কর্মসূচিতে সেভাবে থাকেন না। অন্য যারা থাকে তাদের বিরুদ্ধে দলের হাইকমান্ডের কাছে বিষোদ্গার করেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলন, ওয়ান-ইলেভেনের সংকটসহ বিভিন্ন সংকট মোকাবিলা করেছে। তারপর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ১৪ বছর কেটে গেছে। এর আগে দুটি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছে। এবার চলছে তৃতীয় দফার চূড়ান্ত আন্দোলন।’
সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে গত মাসে রাজধানী ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি ফ্লপ হয়। হতাশ হন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ক্ষুব্ধ তারেক রহমান ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে অব্যাহতি দেন, যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ কমিটি ভেঙে দেন। অবস্থান কর্মসূচিতে তৃণমূল নেতারা উপস্থিত থাকলেও ছিলেন না দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় রাজপথে যেভাবে অবস্থান নিয়েছিলেন, সেভাবে স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্যসহ অন্যান্য জ্যেষ্ঠ নেতা উপস্থিত ছিলেন না। যদিও রাজধানীতে বড় ধরনের সমাবেশের পরদিন রাজধানীর প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।
রাজপথে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে শরিক গণতন্ত্র মঞ্চের এক শীর্ষ নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার পতনের আন্দোলনে নানা চড়াই-উতরাই, বাঁক থাকবে। আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি সবসময় একরকম থাকবে না। তাছাড়া নানা ইস্যুতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকে। বর্তমানে যে আন্দোলন চলছে তাতেও একই অবস্থা বিরাজমান। আগামী সপ্তাহে পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির নেতাদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক রয়েছে। তার আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হবে। বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সিরিজ বৈঠক করবেন। আলোচনার মাধ্যমে কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে। ১৫ সেপ্টেম্বরের আগে দুই-একটি কর্মসূচি থাকবে। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ধারাবাহিক কর্মসূচি চলতে থাকবে।’
তিনি বলেন, বিএনপির যেমন তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি রয়েছে তেমনি গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দলগুলোর নিজস্ব রাজনীতি আছে। এর অংশ হিসেবে ৩ সেপ্টেম্বর সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে, চলমান আন্দোলনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে তাদের সঙ্গে মতবিনিময় কর্মসূচি রয়েছে ৬ সেপ্টেম্বর। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে শরিক দলগুলো বিভিন্ন ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধভাবে বিবৃতি দিচ্ছে, কর্মসূচি দিচ্ছে।
গত বছর জুলাই থেকে রাজপথের আন্দোলনে নামে বিএনপি। ১০ ডিসেম্বরে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ সামনে রেখে ৯ ডিসেম্বর অনানুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে দেওয়া হয় ২০ দলীয় জোট। সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে গড়ে তোলা হয় রাজনৈতিক জোট। শুরুতে ৩৬টি দল সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকলেও সময়ের ব্যবধানে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, জাতীয় পার্টি (মঞ্জুর)সহ আরও অনেকে যুক্ত হয়েছে চলমান এক দফার আন্দোলনে। ইতিমধ্যে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, পদযাত্রা, গণমিছিলের মতো বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছে।
চলতি সপ্তাহ জুড়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালনের পর এক দফার পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। কর্মসূচির ধরন নিয়ে দলের হাইকমান্ড স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মতামত নেবেন। পাশাপাশি সমমনা যে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করছেন তাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ কমিটির নেতারা বসবেন। সবার মতামত পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি প্রণয়ন করা হবে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির কর্মসূচি : প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চে বিএনপির উদ্যোগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া আজ সকালে নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশের কার্যালয়গুলোতে দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে কর্মসূচি। বেলা ১১টায় শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পমাল্য অর্পণ করবেন দলটির নেতাকর্মীরা। বিকেল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে র্যালি বের করবে দলটি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির বাইরে সব জেলা ইউনিট ও অঙ্গসংগঠনগুলো কর্মসূচি পালন করবে নিজেদের মতো করে।
এক যৌথসভার পর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে নিয়ে বারবার ষড়যন্ত্র হয়েছে, চক্রান্ত হয়েছে এই দলটিকে ভেঙে ফেলার, ধ্বংস করার জন্য। কিন্তু কখনোই বিএনপিকে ধ্বংস করতে পারেনি। বিএনপি একটা প্রবাহমান স্রোতঃস্বিনী নদী, সে বয়ে চলেছে। এখানে কেউ এসেছে, কেউ গেছে কখনো। কিন্তু বিএনপির গতিকে কেউ রুদ্ধ করতে পারেনি।’
সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনকে বিএনপির দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ দাবি করে তিনি বলেন, ‘আজকে বিএনপি বড় রকমের দায়িত্ব নিয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ জাতির দ্বিতীয় একটা মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছে। সেই মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার মুক্তিযুদ্ধ। বাংলাদেশের এই ৫২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে সংকটময় মুহূর্ত এখন। যারা জোর করে বিনা নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই ক্ষমতা দখল করে বসে আছে, তারা সর্বশক্তি দিয়ে রাষ্ট্র ব্যবস্থাটা ধবংস করে দিয়েছে। আজকে শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস দিয়ে জনগণের আকাক্সক্ষাগুলোকে ধবংস করছে।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্যে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান হন। ৭ নভেম্বরের সামরিক অভ্যুত্থানের পর তিনি শাসনক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন; ১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর তিনি হন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক। ১৯৭৭-এর ২১ এপ্রিল বিচারপতি আবু সাদাত সায়েমকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরে যেতে হয়, জিয়া তখন ওই দায়িত্বও নেন। সে সময় জিয়ার সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টায় একটি গণভোটের আয়োজন করা হয়, যাতে ৯৮.৯ শতাংশ ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়ে।
সামরিক আইন প্রশাসক থাকাবস্থায় জিয়াউর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে একটি ডানপন্থি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠিত হয়। তবে সে দল তখন দেশের রাজনীতিতে নাড়া দিতে পারেনি। ওই বছর ১ মে জিয়াউর রহমানকে চেয়ারম্যান করে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট’ ঘোষণা করা হয়। সেনাবাহিনী প্রধানের পদে থেকে পুরাদস্তুর রাজনীতিবিদ বনে যান জিয়া। ৩ জুন নির্বাচন দিয়ে ওই ‘জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট’ থেকে প্রার্থী হয়ে তিনি ‘নির্বাচিত’ রাষ্ট্রপতি হন। নির্বাচনের তিন মাসের মাথায় ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ঢাকার রমনা রেস্তোরাঁয় এক সংবাদ সম্মেলনে জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) সরকারের সঙ্গে না থাকার আভাস পাওয়া গেছে। চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদেরের নেতৃত্বে দলটি বিএনপির দিকে ঝুঁকছে। সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রশ্নে শেষ পর্যন্ত তারা বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যেতে পারে এবং পরিস্থিতি বুঝে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। জাতীয় পার্টির কয়েকজন শীর্ষ নেতা বলেছেন, এসব বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। তবে পুরোপুরি সিদ্ধান্ত হয়নি।
জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এতদিন এই বিষয়টি দলের ভেতর চেয়ারম্যান জিএম কাদেরপন্থি কয়েকজন শীর্ষ নেতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু জিএম কাদের নিজে গত ৫ জুন ঢাকার নবাবগঞ্জে ঢাকা জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলনে প্রথম প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে না থাকার ঘোষণা দেন। সেখানে তিনি এমনও বলেন, দলীয় প্রতীক লাঙ্গল না থাকলেও তিনি তার সিদ্ধান্ত থেকে সরবেন না।
এরপর গত তিন মাসে জাতীয় পার্টির নির্বাচনী রাজনৈতিক কৌশল আরও কিছুটা পরিষ্কার হয়েছে দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে। তারা বুঝতে পারছেন, এই সিদ্ধান্তের মূল কারণ সরকারের সঙ্গে জিএম কাদেরের দ্বন্দ্ব। তিনি কিছুতেই এবার সরকারের নিয়ন্ত্রণে থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে চাচ্ছেন না। সে কারণেই বিএনপির দিকে ঝুঁকছে দলটি বলে ওই নেতারা জানান। গত এক সপ্তাহে বিএনপির দিকে জাতীয় পার্টির ঝুঁকে পড়ার বিষয়ে বেশ গুঞ্জন ও আলোচনাও সামনে চলে আসে। বিষয়টি প্রথমে সামনে আনেন জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। গত ১৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, জিএম কাদের যেভাবে কথাবার্তা শুরু করেছেন, তাতে মনে হচ্ছে তিনি বিএনপির সঙ্গে জোট করবেন। পরে গত রবিবার সিঙ্গাপুরে বিএনপির কিছু নেতার সঙ্গে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বৈঠকের গুঞ্জন শোনা যায়। পরে অবশ্য জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে এ ধরনের বৈঠকের কথা অস্বীকার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, চুন্নু সিঙ্গাপুরে যাননি। তিনি থাইল্যান্ড গিয়েছিলেন। এমনকি কাদেরপন্থি নেতাদের মধ্যেও এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন কয়েক নেতা।
এছাড়া জিএম কাদের ভারত থেকে ঘুরে আসার পর তার সফর ঘিরে এক ধরনের কৌতূহল আছে। এর মধ্যে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে চুন্নুর বৈঠকের গুঞ্জন। এ ছাড়া জিএম কাদের বনানীর কার্যালয়ে যাচ্ছেন। আর সম্মেলন করার জন্য রওশনপন্থিদের তৎপরতা চলছে আলাদাভাবে।
জানতে চাইলে দলটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রেসিডিয়াম সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জিএম কাদের বিএনপির দিকে ঝুঁকছেন, এটার সত্যতা ৭৫ শতাংশ। কারণ আওয়ামী লীগ কখনোই জাতীয় পার্টিকে ভালোভাবে মূল্যায়ন করেনি। ২০১৪ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগের ব্যাপারে জিএম কাদের হতাশ ছিলেন। তিনি তার ঘনিষ্ঠদের বলতেন, দল সবকিছু হারিয়ে ফেলেছে।
বিএনপির দিকে ঝোঁকার কারণ হিসেবে আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, একদিকে আওয়ামী লীগ, অন্যদিকে রওশন এরশাদ উভয়পক্ষ দলকে কুক্ষিগত করতে চাইছে। আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে পরিচালনা করবে, পার্টির নিজস্ব অস্তিত্ব থাকবে না, এটা জিএম কাদের কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। অবশ্য রওশনপন্থিরা জিএম কাদেরের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নন। তারা চাচ্ছেন, এবারও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচন করুক জাপা। এতে তাদের নির্বাচনে জিতে আসা সহজ হবে।
কিন্তু সরকার জিএম কাদেরকে ছাড়তে নারাজ বলে জানিয়েছেন রওশনপন্থি নেতারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রওশনপন্থি এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রানমন্ত্রীর সঙ্গে রওশন এরশাদের একান্তে ১০ মিনিট কথা হয়েছে। ওই সাক্ষাতের বরাত দিয়ে রওশনপন্থি নেতারা জানান, জাপার ভবিষ্যৎ কমিটিতে সরকার জিএম কাদেরকে দেখতে চায়। এমনকি ইতিমধ্যেই আগামী নির্বাচনের জন্য রওশন প্রাথমিকভাবে ৪২টি আসনের তালিকা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে উপস্থাপন করেছেন। তবে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এ বিষয়ে পরে আলোচনা করার কথা বলা হয়েছে। রওশন এরশাদকে এমনও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যে, আগামী নির্বাচন কঠিন হবে এবং নিজ যোগ্যতা বলে বিজয়ী হয়ে আসতে হবে। সে ক্ষেত্রে সবাইকে বিজয়ী হওয়ার জন্য ব্যক্তিগত ও দলীয়ভাবে কাজ করতে হবে।
অন্যদিকে, ভারতও রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের মধ্যে কোনো ধরনের বিরোধ চায় না বলে দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন। তারা জানান, ভারত সফরকালে জিএম কাদেরকে দুটি বার্তা দেওয়া হয়েছে প্রথমত, রওশন এরশাদের সঙ্গে বিভক্তি তৈরি করা যাবে না। দ্বিতীয়ত, মূল জায়গায় থেকে সরা যাবে না। অর্থাৎ সরকারের সঙ্গে থাকতে হবে।
তবে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি বিএনপির দিকে ঝুঁকেছে, এমন কিছু জানা নেই। আওয়ামী লীগের দিকেও ঝোঁকেনি। যে সব কথা শোনা যাচ্ছে, সেগুলো সব গুঞ্জন। তিনি বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে সিঙ্গাপুরে বৈঠক হয়েছে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারণ দলের কে কোথায় থাকেন, সেটা রেকর্ড থাকে। ফখরুল ইমাম দেশেই ছিলেন। মহাসচিব ব্যাংকক গেছেন। এটা নিয়ে আর আলোচনা করতে চাই না।’
এই প্রেসিডিয়াম সদস্য আরও বলেন, ‘বিভিন্ন টকশো, দূতাবাসের দাওয়াতে বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ও কথাবার্তা হয়। এর বাইরে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কারোর সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, নির্বাচন বা এ সংক্রান্ত কোনো মিটিং-সিটিং এখন পর্যন্ত হয়নি। এখনো আমরা ৩০০ আসনে নির্বাচনের ব্যাপারেই কথা বলছি। নির্বাচনে কার সঙ্গে জোট করব কি করব না, সেটা আমরা সেপ্টেম্বরের পরে ঘোষণা দেব। সর্বশেষ আমাদের প্রেসিডিয়াম বৈঠকে এটাই সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমগীর সিকদার লোটন বলেন, ‘যেসব কথা শোনা যাচ্ছে, সেসবের কিছু তো সত্যতা রয়েছেই। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন মানে জনগণের ভোট দিতে পারা। তার মানে এবারও একতরফা নির্বাচনের দিকেই যাচ্ছে সরকার। কতটুকু সফল হতে পারবে, সেটা তারা জানেন। জাতীয় পার্টির ভূমিকা এখন নীরব।’
বিএনপির সঙ্গে জাতীয় পার্টির নির্বাচনী কৌশল কেমন হবে জানতে চাইলে দলটির দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, প্রথমে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যাবে। পরবর্তী সময়ে জোটের দিকে যাবে। কিন্তু একেবারে যে বিএনপির কাছে সমর্পিত হবে, তেমন না। আওয়ামী লীগকে যেভাবে সব দিয়ে দিয়েছে, সে রকম না। পার্টির অস্তিত্ব ঠিক রাখবে। সেক্ষেত্রে রওশনের সঙ্গে সুবিধাবাদী অংশ যাবে। যারা শুধু সংসদ সদস্য হতে চান। আর কাদেরের সঙ্গে তৃণমূল থেকে উচ্চ পর্যায়ের সবাই থাকবেন।
তারা বলেন, সেক্ষেত্রে বর্তমান নির্বাচন কমিশন লাঙ্গল প্রতীক রওশন এরশাদকে দিয়ে দিতে পারে। জিএম কাদের সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন ৫ জুন নবাবগঞ্জের সম্মেলনে। তিনি বলেছেন, ‘যদি লাঙ্গল চলেও যায়, তারপরও আমরা সরকারের সঙ্গে থাকব না। সুবিধাবাদীদের কারণে দলকে গোছাতে পারিনি। তারা যদি চলে যায়, আমি একা হলেও লড়ব’।
জাতীয় পার্টির নেতাদের দাবি, নিজেদের সঙ্গে রাখার জন্য সরকার দলটিকে চাপের মধ্যে রেখেছে। রওশনকে দিয়ে ট্রাম্পকার্ড খেলছে। কারণ সরকার জানে জিএম কাদের তাদের নিয়ন্ত্রণ মানতে রাজি নন। এমনকি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে কয়েকজন নেতাকে নানাভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন দলটির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য।
আগামী চেস গিল্ড স্কুল দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আইয়ান রহমান ও মনন রেজা নীড়। একক ইভেন্টের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে আইয়ান ও ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নীড়। ৭ রাউন্ডের খেলায় আইয়ান ও নীড় দুজনই পেয়েছে সাড়ে ছয় পয়েন্ট করে।
বিটজ দলগত বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এলিগেন্ট চেস একাডেমি। এই দলে খেলেছে জারিফ হক আফনান, তাসরিক সায়হান, সিয়াম চৌধুরী ও নীলাভা চৌধুরী। আজ শনিবার দাবা ফেডারেশন কার্যালয়ে শেষ হয়েছে এই প্রতিযোগিতা।
আগামী চেস গিল্ডের আয়োজনে গত ২৮ সেপ্টেম্বর শুরু হয় ‘আমরা ৯২’ আগামী চেস গিল্ড স্কুল রেটিং টুর্নামেন্ট। সুইস লিগ পদ্ধতিতে হয়েছে খেলা। একক ও দলগত দুই বিভাগে অংশ নেয় ১৪৫ জন দাবাড়ু। টুর্নামেন্টে বিজয়ীরা ট্রফি, মেডেল ও সার্টিফিকেটের পাশাপাশি পেয়েছে ৭০ হাজার টাকা।
টুর্নামেন্ট শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন গ্র্যান্ডমাস্টার রিফাত বিন সাত্তার, আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার রানী হামিদ। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম।
টানা ৬ ম্যাচ জিতে লা লিগার শীর্ষে উঠে এসেছিল জিরোনা। আগের রাতে সেভিয়াকে হারানো বার্সেলোনা সেই জিরোনাকে পেছনে ফেলে। আর রিয়াল মাদ্রিদ এবার উড়তে থাকা জিরোনাকে হারিয়ে লা লিগার কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করেছে।
শনিবার মন্তিলিভি স্টেডিয়ামে জিরোনাকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে কার্লো আনচেলত্তির দল। রিয়ালের হয়ে গোল তিনটি করেছেন জোসেলু, অঁরেলিয়ে চুয়ামেনি ও জুড বেলিংহাম।
আট ম্যাচের সাতটিতে জিতে রিয়ালের পয়েন্ট এখন ২১। সমান ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে বার্সেলোনা। আর টানা ছয় জয়ের পর রিয়ালের কাছে হেরে যাওয়া জিরোনা ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে তিনে।
সপ্তাহ খানেক আগেই আতলেতিকো মাদ্রিদে গিয়ে ৩-১ গোলে হেরেছিল রিয়াল। এবার জিরোনায় গিয়ে
প্রথমার্ধেই ২ গোলে এগিয়ে যায় আনচেলোত্তির শিষ্যরা। এর মধ্যে ১৭ মিনিটে বেলিংহামের ক্রস থেকে বল জালে পাঠান জোসেলু। আর ২২ মিনিটে টনি ক্রুসের কর্নার থেকে হেডে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন চুয়ামেনি।
রিয়াল ব্যবধান ৩-০ করে ৭১ মিনিটে। জোসেলুর শট জিরোনা গোলরক্ষক প্রতিহত করলেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি। নাগালে বল পেয়ে দারুণভাবে বল জালে পাঠান বেলিংহাম। এটি রিয়ালের হয়ে ৭ ম্যাচে তার অষ্টম গোল।
দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম ও কুমিল্লার বটগ্রাম মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা নুরুল হক। আলেমদের অবস্থান সুসংহত করাসহ জেলার মাদ্রাসাগুলোকে একতাবদ্ধ রাখা ও শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তার বিশেষ অবদান রয়েছে। সাদাসিধে চলাফেরায় অভ্যস্ত আশি বছর বয়সী এই আলেম বেশ কয়েকটি মাদ্রাসায় দীর্ঘদিন ধরে হাদিসের বিশুদ্ধতম গ্রন্থ সহিহ বোখারি শরিফের দরস দেন। তার বর্ণাঢ্য জীবন নিয়ে লিখেছেন শামসুদ্দীন সাদী
অলি-আউলিয়ার পুণ্যভূমি বারো আউলিয়ার দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ঊর্বর ভূমিতে জন্ম নিয়েছেন অসংখ্য বুজুর্গ ও গাউস কুতুব। ভিনদেশ থেকেও আগমন ঘটেছে বহু বুজুর্গের। যাদের পুণ্য পরশে পত্র-পল্লবে সেজে উঠেছে বাংলার মাটি। তাদের উদার মানবতা, চরিত্রের মাধুর্য, মহানুভবতা, মানবপ্রেম ও মহান আল্লাহর প্রতি নিষ্ঠা ভিন্নধর্মীদের আকৃষ্ট করেছে। ফলে ইসলাম এদেশের মাটির বুকে সুদৃঢ়ভাবে শেকড় গেড়েছে। এখনো সারা দেশে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য আলেম ও বুজুর্গ। তাদেরই একজন মাওলানা নুরুল হক। দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম ও কুমিল্লার প্রবীণ মুরব্বি। কুমিল্লা জেলার বটগ্রাম মাদ্রাসার মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস।
আশি বছর বয়সী প্রবীণ এই আলেমের জন্ম ব্রিটিশ ভারতে আনুমানিক ১৯৪১ সালে, কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সাতবাড়িয়া দাতামা গ্রামে। পিতা সোনা মিয়া ছিলেন অত্যন্ত দীনদার, আমানতদার ও বিশ্বস্ত মানুষ। মাতা জোবায়দা খাতুন ছিলেন দীনদার নামাজি ও পর্দানশিন নারী।
শৈশবে এক বুজুর্গের হাতে তার লেখাপড়ার হাতেখড়ি। গ্রামের মসজিদের ইমাম আমির উদ্দীন মাস্টার ছিলেন তার প্রথম শিক্ষক। প্রথাগত আলেম না হলেও আমির উদ্দীন মাস্টার শরিয়ত পালনে অত্যন্ত কঠোর ছিলেন। কোনো ধরনের অনৈসলামিক কার্যকলাপ তিনি সহ্য করতেন না। তার একান্ত চাওয়া ছিল, এলাকার মানুষ দীনের পথে ইসলামের পথে চলুক। সব ধরনের বেদআত ও পাপের কাজ থেকে দূরে থাকুক। এমন মান্যবর বুজুর্গের হাতে তিনি আলিফ বা-তা-সা ও বাল্যশিক্ষা গ্রহণ করেন।
মক্তবের বাল্যশিক্ষার পর স্কুলে ভর্তি হয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। মা-বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলেকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা না থাকায় দুই বছর পড়াশোনা বন্ধ থাকে। দুই বছর পর দাতামা পশ্চিম পাড়ার ছেলামত উল্লাহ বেপারির বাড়িতে পড়ালেখার ব্যবস্থা হয়। তিনি, তার জীবনের ঘনিষ্ঠ সঙ্গী মাওলানা আবদুল ওয়াহাব (রহ.)-সহ আরও কজন ছিলেন এখানকার সহপাঠী। এখানে তাদের শিক্ষক ছিলেন একজন বুজুর্গ ব্যক্তিত্ব মাওলানা আব্দুল হাকিম (রহ.)।
আনুষ্ঠানিক লেখাপড়া শুরু হয় জোলাই ইসলামিয়া মাদ্রাসায়। তৎকালে অত্র এলাকায় জোলাই মাদ্রাসার পড়াশোনার সুনাম-সুখ্যাতি ছিল। শরহে জামি পর্যন্ত পড়াশোনা করে ভর্তি হন চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায়। দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত হাটহাজারী মাদ্রাসাতেই পড়াশোনা করেন। দাওরায়ে হাদিস শেষ করার পর হাটহাজারী মাদ্রাসাতেই তাফসিরুল কোরআনের ওপর এক বছরের বিশেষ কোর্স সম্পন্ন করেন। এ সময় তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসায় জগদ্বিখ্যাত বহু মনীষীর শিষ্যত্ব লাভ করেন।
তার কর্মজীবনের সূচনা হয় গোপালগঞ্জে এক আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে। সেখানে পনেরো বছরের বেশি সময় শিক্ষকতা করেন। পরে সেখান থেকে ইস্তফা দিয়ে চলে আসেন নিজ জেলা কুমিল্লায়। কুমিল্লার প্রাচীন মাদ্রাসা বটগ্রাম হামিদিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের কয়েক বছর পর সহকারী মুহতামিম, এর কয়েক বছর পর ১৯৯০ সালে মুহতামিম নিযুক্ত হন। তখন থেকে অদ্যাবধি এই গুরুদায়িত্ব পালন করছেন।
আত্মশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিকতার (সুলুক-তাসাউফ) পথে বহু বুজুর্গের সান্নিধ্য পেয়েছেন। অনেকের কাছ থেকে খেলাফতও লাভ করেন। হাটহাজারী মাদ্রাসায় পড়ালেখা কালেই মেখল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হামিউস সুন্নাহ মুফতি ফয়জুল্লাহ (রহ.)-এর কাছে বায়াত (শিষ্যত্ব গ্রহণ) হন। তার ইন্তেকালের পর হাকিমুল উম্মত হজরত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর অন্যতম খলিফা তওবার রাজনীতির প্রবর্তক মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জি হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন। হাফেজ্জি হুজুর (রহ.) তখন বার্ধক্যজনিত কারণে শয্যাশায়ী। তাই তারই নির্দেশে শর্শদি মাদ্রাসার আউয়ালের কাছ থেকে সবক গ্রহণ করেন। হাফেজ্জি হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর ফেনী ওলামা বাজার মাদ্রাসার মুহতামিম বরেণ্য বুজুর্গ হজরত মাওলানা আব্দুল হালিম (রহ.)-এর হাতে বায়াত হন এবং তার থেকেই খেলাফত লাভ করেন। এছাড়া হাফেজ্জি হুজুর (রহ.)-এর অন্যতম খলিফা পলাশের হুজুরের কাছ থেকেও এজাজত লাভ করেন।
এক সময় কুমিল্লা জেলাজুড়ে ছিল শিরক-বেদআতের গয়রহ দাপট। নানা বেদআতে সয়লাব ছিল কুমিল্লা শহর। কওমি মাদ্রাসা ও কওমি মাদ্রাসায় পড়–য়া আলেম-উলামাদের নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হতো। মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হতো মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে। কিন্তু সংঘবদ্ধতার অভাবে শিরক-বেদআত দূর করা ও কওমি মাদ্রাসার অবস্থান ও গুরুত্ব তুলে ধরার কোনো সুযোগ ছিল না। এই শূন্যতা পূরণের লক্ষ্যে জেলার চিন্তাশীল আলেমরা মিলে প্রতিষ্ঠা করেন ‘কুমিল্লা জেলা কওমি মাদ্রাসা সংগঠন।’ জেলার ছোট-বড় প্রায় সব মাদ্রাসা এই সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত। কাসিমুল উলুম মাদ্রাসার মাওলানা আশরাফ আলী (রহ.), বরুড়া মাদ্রাসার মুফতি আব্দুল ওয়াহাব (রহ.), রানীর বাজার মাদ্রাসার মাওলানা আব্দুল ওয়াহাব (রহ.) এবং বটগ্রাম মাদ্রাসা থেকে মাওলানা নুরুল হক এই সংগঠন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কুমিল্লা জেলায় কওমি আলেমদের সুসংহত অবস্থান তৈরি হয়। কওমি শিক্ষার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার ও প্রোপাগান্ডা বন্ধ হয়। জেলার প্রাণকেন্দ্রে এর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক ইসলামি মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে থাকে। দেশ-বিদেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম-উলামারা আমন্ত্রিত হন। জেলার মাদ্রাসাসমূহকে একতাবদ্ধ রাখা ও শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই সংগঠনের অবদান রয়েছে। বর্তমানে তিনি এই সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এতসব গুরুদায়িত্ব পালন করার পরও সরল জীবনের এক মূর্তপ্রতীক তিনি। বিরোধপূর্ণ বিষয় থেকে সযতেœ নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। তার চলাফেরা একেবারে সাদাসিধে। পোশাক-আশাকে বিলাসিতা নেই। সাধারণ পোশাকে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ক্ষেতখামারে কাজ করেন। পানি সেচ দেন। ইখলাস (একনিষ্ঠতা) ও লিল্লাহিয়াতের (আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সব কিছু করা) জীবন্ত নমুনা। কয়েকটি মাদ্রাসায় দীর্ঘদিন ধরে পড়াচ্ছেন হাদিসের বিশুদ্ধতম গ্রন্থ সহিহ বোখারি শরিফ।
মাওলানা নুরুল হকের জীবনের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো দাওয়াত ইলাল্লাহ তথা আল্লাহভোলা মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করা। দীনের কথা শোনানো। ইসলামের পথে চলতে উদ্বুব্ধ করা। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে আনাচে-কানাচে তিনি এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের মিশন নিয়ে ঘুরে বেড়ান। দিনরাত ছুটে বেড়ান মাহফিল থেকে মাহফিলে। কিছুটা আঞ্চলিক ভাষায় বয়ান করেন তিনি। যে কারণে সর্বসাধারণ সহজেই তার বয়ানের মর্মবাণী হৃদয়ঙ্গম করতে পারেন। আলেম থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবাই মুগ্ধমনে তার বয়ান শুনেন। তার বয়ানে খোঁজে পান জীবন পথের পাথেয়।
ইসলামের সৌন্দর্য, পারিবারিক জীবন, আখেরাতে ও আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টির পথ-পদ্ধতি হলো তার বয়ানের বিষয়বস্তু। ইসলাম যে জীবনমুখী ধর্ম, ইসলামে কোনো বৈরাগ্য নেই তার জীবনে ও বয়ানে বারবার বিষয়টি ফুটে ওঠে। দুনিয়ার কাজকর্মও যে দীনের অংশ এবং তাতেও যে অফুরন্ত সওয়াব লুকিয়ে আছে নানা উপমার মাধ্যমে তিনি সেগুলো স্পষ্ট করেন। গতানুগতিক ওয়াজ মাহফিলের বাইরে বিশেষ ইসলাহি মাহফিলও করেন। ভক্ত মুরিদানের আমল আখলাকের খোঁজ-খবর নেন। আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে মুরিদানের আমলি উন্নয়নের চেষ্টা করেন।
বহু মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সঙ্গে তিনি জড়িত। নিজ গ্রামে দাতামা মাদ্রাসা, ধনাইতরী নূরানী মাদ্রাসা, সুলতানপুর কারিয়ানা মাদ্রাসাসহ আরও অনেক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অসংখ্য মাদ্রাসার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। এখনো অনেক মাদ্রাসার নীতিনির্ধারণী কমিটি তথা মজলিসে শুরার সভাপতি ও সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অনেক মাদ্রাসার সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রেখেছেন।
প্রতিটি কাজে তিনি কোরআন-সুন্নাহর অনুসরণ করেন। নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটেন। নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কিছুটা কুঁজো হয়ে গেছেন। কথিত আছে, বেপর্দা ও গোনাহ থেকে বাঁচতেই তিনি নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটেন। অবসর সময়ে ঘরোয়া কাজে সহযোগিতা করেন। কিতাব অধ্যয়ন করেন। ধ্যানে ডুবে থাকেন। সন্তান ও নাতি-নাতনিদের সময় দেন। ১০ ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার পরিবার। ছেলেদের অনেকে আলেম হয়েছেন, বাকিরা পড়াশোনা করছেন।
একনিষ্ঠ ও দরদি মানব-দুর্ভিক্ষের এই দুঃসময়ে মাওলানা নুরুল হক আমাদের জন্য এক বটবৃক্ষ। তার ছায়া আমাদের জন্য রহমত। কেবল কুমিল্লার জন্য নয়, সারা দেশের জন্যই তিনি এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। আমাদের দুর্ভাগ্য, এমন বহু বুজুর্গ ব্যক্তিত্ব সারা দেশে ছড়িয়ে আছেন, যারা আমাদের অগোচরেই হারিয়ে যান। মৃতুর পর হয়তো সংবাদ পাই। জীবিত থাকতে তাদের থেকে উপকৃত হওয়ার সুযোগ আমাদের হয় না। এ ধারার পরিবর্তন দরকার। আল্লাহতায়ালা এই মহীরুহ ব্যক্তিত্বসহ অন্যদের ছায়া আমাদের ওপর দীর্ঘায়িত করুন।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
রাজধানীর ঢাকা কলেজের একটি আবাসিক হলে এক সাংবাদিককে আটকে রেখে ১৫ ঘণ্টা ধরে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে যান। গত বৃহস্পতিবার রাতে কলেজটির শহীদ ফরহাদ হোসেন হলে নির্যাতনের ওই ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ওবায়দুর সাঈদ।
তিনি একই কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি। কলেজ সাংবাদিক সমিতির দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্বেও আছেন ওবায়দুর। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা কলেজ প্রশাসন।
নির্যাতনের শিকার ওবায়দুর সাঈদ জানান, ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির সদস্য ফয়সাল আহমেদকে নির্যাতনের ঘটনায় প্রতিবেদন প্রকাশ করায় তাকে রাতভর আটকে রেখে নির্যাতন করে কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। কলেজ ছাত্রলীগের নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের সভাপতি রাউফুর রহমান সোহেলের নেতৃত্বে এই নির্যাতন চলে। খবর পেয়ে ১৫ ঘণ্টা পর পরিবারের সদস্যরা গিয়ে ওবায়দুরকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।
ওবায়দুর সাইদ জানান, তিনি শহীদ ফরহাদ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার পর তার কক্ষে আসে একই হলের ছাত্রলীগ নেতা রাউফুর রহমান সোহেল ও তার কয়েকজন অনুসারী। এ সময় সোহেল ওবায়দুরের বুকে লাথি মেরে মেঝেতে ফেলে দেয়। এরপর মুখে ও কানে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, ফয়সালকে নির্যাতনের খবর কোন কোন পত্রিকায় পাঠানো হয়েছে। এরপর সোহেল ওবায়দুরের গলায় পা দিয়ে চেপে ধরে তার মোবাইল ফোনের লক খুলতে বাধ্য করে। পরে ওই মোবাইলের স্ক্রিন থেকে কলেজের সাবেক ও বর্তমান সাংবাদিকদের যোগাযোগের মেসেঞ্জার গ্রুপ ও সাংবাদিক সমিতির গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে হওয়া কথোপকথনের ভিডিওচিত্র ধারণ করে।
এর আগে গত বুধবার গেস্ট রুমে (হলের অতিথি কক্ষে রাজনৈতিক বৈঠক) যেতে দেরি করায় ইংরেজি বিভাগের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং ডেইলি বাংলাদেশ ও প্রতিদিনের ক্যাম্পাসের ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি ফয়সাল আহমেদকে বেধড়ক পেটায় ছাত্রলীগ নেতারা। এ ঘটনার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর এর নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয় বিভিন্ন সাংবাদিক ও ছাত্রসংগঠন।
প্রত্যক্ষদর্শী এক ছাত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সোহেলের হাত থেকে ওবায়দুরকে বাঁচাতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু সোহেলের হিংস্র আচরণের কাছে আমরা অসহায়। বাধা দিতে গেলে সে আমাদেরও মারতে আসে। পরদিন দুপুরে ওবায়দুর বারবার জুমার নামাজ পড়তে যেতে চেয়েছে, কিন্তু ওকে নামাজও পড়তে দেওয়া হয়নি। রুমে তালা দিয়ে আটকে রাখা হয়। ১৫ ঘণ্টার বেশি সময় নির্যাতনের পর ওকে বের করে নেওয়া হয় প্রিন্সিপালের রুমে।’
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতের পর ওবায়দুরের মোবাইল ফোন এখনো ফেরত দেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামীকাল (আজ রবিবার) রিপোর্ট জমা দেবে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।