
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের ভোটাধিকার নস্যাতের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ থাকার জন্য দেশবাসীর প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ওরা (বিএনপি) গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। ওরা ভোট করতে আসে না। ওরা ভোট পাবে না, ভোট চায় না। জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে আবারও তারা ছিনিমিনি খেলতে চায়। ওরা বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চায়।’
গতকাল শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগ আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগসহ সব সংগঠনের নেতাদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। তাদের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘মনে করিয়ে দেবেন ওরা (বিএনপি) ভোট করতে আসে না। ভোট পায় না। ভোট চায় না। ভোট পাবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওরা তো (বিএনপি) লুটেরা, সন্ত্রাস। মানুষের শান্তি কেড়ে নেয়। মানুষের সম্পদ ঘরবাড়ি কেড়ে নেয়। লুটেরা সন্ত্রাস আর জঙ্গিতে বিশ্বাসী ওরা। ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি। এরা কখনো মানুষের কল্যাণ করতে পারে না। কারণ তাদের জন্ম হয়েছে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর হাতে। তারা গণতন্ত্রেও বিশ্বাস করে না। এখন তারা নাকি বলে গণতন্ত্র উদ্ধার করবে। যাদের জন্ম ক্যান্টনমেন্টে। যারা গণতন্ত্রে বিশ^াস করে না, ওরা নাকি গণতন্ত্র রক্ষা করবে। ক্ষমতা দখলকারীদের হাতে তৈরি ওই বিএনপি আর যুদ্ধাপরাধীরা এ দেশের কল্যাণ কখনো চাইতে পারে না। তারা দেশকে ধ্বংস করতে চায়।’
আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ আয়োজিত বিশাল এ ছাত্র সমাবেশে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে দেশের ছাত্রসমাজ সদা-সর্বদায় শেখ হাসিনার পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধ বলে জানান তিনি। ছাত্রলীগ সভাপতি সমবেত ছাত্রদের ‘তারুণ্য লড়বে, তারুণ্য গড়বে’ এ শপথ পাঠ করান।
ছাত্র সমাবেশে পাঁচ লক্ষাধিক লোকের সমাবেশ ঘটানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন ছাত্রলীগ সভাপতি। সারা দেশের সাংগঠনিক জেলা থেকে মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন শর্ত দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন বয়সের মানুষ সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করে। দুপুর ১২টা থেকে সমাবেশস্থলের আশপাশে ছাত্র জমায়েত হতে শুরু করে। বেলা ৩টার পর আর কাউকে মাঠে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। সবাই মাঠের চারপাশে মিছিলসহ স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে রাখে অনুষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের সরকারের উন্নয়নচিত্র সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুনসহ মেগা প্রজেক্টের ছবি সংবলিত টি-শার্ট পরা ছিল সমাবেশে আসা ছাত্র-যুবসমাজ। তাদের মুখে ছিল ‘আবারও শেখ হাসিনা’ স্লোগান। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের প্রকাশনা মাতৃভূমির বিশেষ সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করেন।
বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাকে স্বাগত জানান।
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সমাবেশে বক্তৃতা করেন। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
বিশাল ছাত্র সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।
মহাসমাবেশে শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিজেদের বর্তমানকে উৎসর্গ করার জন্য এবং আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকার পক্ষে ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে বিজয়ী হওয়ার জন্য লাখো শিক্ষার্থী অঙ্গীকার করেন।
সমাবেশের শুরুতে জাতীয় সংগীত, ছাত্রলীগের থিম সং এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎসর্গ করা একটি গান গাওয়া হয় এবং এলইডি মনিটরে জাতির পিতাকে উৎসর্গ করা আরেকটি গানও প্রদর্শিত হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ও মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী তার ৫২ মিনিটের দীর্ঘ বক্তব্যে সরকারের উন্নয়নের নানা ফিরিস্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এসব উন্নয়ন অনেকের ভালোলাগে না। অনেকের কোনো কিছুই ভালো লাগে না। তারা দেখে না যে, দেশের উন্নতি হচ্ছে। তাদের চোখ অন্ধ। উন্নয়ন চোখে না দেখাদের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অত্যন্ত আধুনিক চক্ষু ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান আমি নিজে সেখানে চোখ দেখাতে যাই। ১০ টাকার টিকিট কাটলে সেখানে চোখ দেখানো যায়। তাদের বলব সেখানে গিয়ে চোখটা দেখিয়ে আসেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসলে চোখ নয়, তাদের মনের দরজাই অন্ধকার। আর পরাজিত শক্তির পদলেহনকারী। সেজন্য মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন তারা দেখে না। হাওয়া ভবন খুলে খাওয়া খেতে পারছে না বলে তাদের যত দুঃখ।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কারণে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ হয়েছিল উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বদনাম দিয়েছিলেন। কেন দিয়েছিলেন? একটি ব্যাংকের এমডি পদের জন্য। তিনি ১০ বছর বেআইনিভাবে ব্যাংকটি চালিয়ে আবারও সেখানে থাকতে হবে। সেই লোভে। বারবার আমাদের ওপর চাপ। একটি বড় দেশ বারবার চাপ দিত। কী বলত! এমডি পদে না রাখলে নাকি পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেবে। আমাদের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে সেই ভদ্রলোক মামলাও করেছিল। কিন্তু আদালত তো তার বয়স কমাতে পারেনি। মামলায় হেরে যায়।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘হিলারি ক্লিনটন নিজে অর্ডার করে তখন বিশ্বব্যাংকের চেয়ারম্যানকে দিয়ে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করেন। তখন বলেছিলাম নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করব। কারও কাছে হাত পেতে না। আমরা সেটা করেছি। করে বিশ্বকে দেখিয়েছি। বাংলাদেশ পারে। বাংলাদেশের মানুষ পারে। এরপর কিন্তু বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বদলে গেছে।’
সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছি। বিএনপির কিছু নেতা বলছেন এটা নাকি আমাদের নির্বাচনী ফান্ড তৈরি করার জন্য। এর থেকে লজ্জার আর কী হতে পারে। নিজেরা কিছু করতে পারেনি। মানুষকে কিছু দিতে পারেনি। মানুষের ভালোর জন্য যখন আমরা কিছু করি তখন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। এ বিভ্রান্তিতে কেউ যেন কান না দেন। ছাত্রলীগকে বলব নিজের এলাকায় গিয়ে এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে।’
ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া ছাত্রদলকে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল। বলেছিল ছাত্রদল আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে যথেষ্ট। আর আমি ছাত্রলীগকে দিয়েছিলাম খাতা আর কলম। বলেছিলাম পড়াশোনা করতে হবে। অশিক্ষিত মূর্খদের হাতে দেশ পড়লে তার অগ্রযাত্রা হতে পারে না।’
ছাত্রলীগের বিভিন্ন সময়কার সামাজিক কর্মকান্ডের ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে ছাত্রলীগ কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিটি দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। গর্বে আমার বুক ভরে যায়। এভাবে তারা এগিয়ে গেলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ বন্ধ করতে পারবে না। আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে।’
ছাত্রলীগের নেতাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘যেকোনো প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলে সঠিক নেতৃত্ব দরকার। আশা করি ছাত্রলীগের নেতারা নিজেদের সেই নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে তুলবেন। যেখানে থাকবে সেখানে ছাত্রলীগ নেতৃত্ব দেবে সেটাই আমরা চাই।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘ছাত্রলীগের ছেলেমেয়েরা একচল্লিশের স্মার্ট বাংলাদেশের কান্ডারি হবে। সেটাই আমি চাই। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আর কেউ বাধা দিতে পারবে না। অতন্দ্র প্রহরীর মতো ছাত্রলীগকে সবসময় সজাগ-সতর্ক থাকতে হবে। শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বেশ কিছু দায়িত্ব দেন। তিনি বলেন, ‘নিজের প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করবা, যেখানে থাকো সেটা পরিষ্কার রাখবা, এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবা। পরিবেশ রক্ষার জন্য বৃক্ষরোপণ করতে হবে।’
বঙ্গবন্ধুর বাকশাল গঠনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) ঘুণে ধরা সমাজ ভেঙে নতুন সমাজ গড়তে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীয়করণ করতে চেয়েছিলেন। জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন, যাতে এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশ এগিয়ে যেতে পারে। তার সুফল কিন্তু মানুষ পেতে শুরু করেছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জানুয়ারিতে ঘোষণা করলেন, দুর্ভাগ্য ওই বছরের আগস্ট মাসে তাকে হত্যা করা হলো। হত্যা করে আবার সেই বাংলাদেশে মিলিটারি ডিক্টেটর। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগ্রাম আমরা করেছি। জনগণের ক্ষমতা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে বন্দি করা হয়েছিল। আমরা জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি।’
দলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত, শোভাযাত্রাসহ নানান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাজধানীসহ সারা দেশে বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। রাজধানীতে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে বিএনপি নেতারা বলেছেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। এই সরকার টিকে থাকতে পারবে না।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ও গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়সহ সারা দেশের দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের চন্দ্রিমা উদ্যানে দলের প্রতিষ্ঠাতার কবরে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করে। জুমার নামাজের পর শোভাযাত্রায় অংশ নিতে রাজধানী ঢাকাসহ পাশ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। শোভাযাত্রা শুরুর আগে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতিতে কাকরাইল মোড়, ফকিরাপুল মোড়, নয়াপল্টনসহ আশপাশের এলাকা জনারণ্যে পরিণত হয়। নেতাকর্মীরা রংবেরঙের ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, কেউ কেউ মাথায় টুপি পরে, ছোট ছোট ট্রাকে ধানের শীষ, ঘোড়ার গাড়িতে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে অংশ নেন। বেলা ২টায় মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পরও বৃষ্টিতে ভিজে নেতাকর্মীরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে আসেন। ঢাকার পাশ্ববর্তী জেলাগুলোর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুরের নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের আশপাশের এলাকায় জড়ো হয়ে মিছিল নিয়ে কার্যালয়ের সামনে শোভাযাত্রাস্থলে জড়ো হন। শোভাযাত্রার আগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একটি গানের উদ্বোধন করা হয়।
ঢাকা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত শোভাযাত্রার আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিজেদের গণতন্ত্রের প্রতিভূ বলে দাবি করলেও বাস্তবে তারা স্বৈরাচারের প্রতিভূ। অতীতে কোনো স্বৈরাচার টিকে থাকতে পারেনি। এ সরকারও পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘সরকার বলে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নাকি একজন সৈনিক ছিলেন। বাস্তবতা হলো দেশের জনগণ জানে তিনি দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। অন্যদিকে বর্তমান সরকার দেশের গণতন্ত্র, সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে শেষ করে দিয়েছে। তারা দাবি করে, তারা নাকি গণতন্ত্র দিয়েছে। দেশের মানুষ ভালো করে জানে সরকার তাদের ভোটাধিকার, মানবাধিকারসহ সব অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।’
মঈন খান বলেন, ‘কোনো স্বৈরাচার জুলুম করে টিকতে পারেনি, এ সরকারও পারবে না। আটকাতে পারবে না গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে।’
উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কিছু সময়ের জন্য একটা বিশেষ অনুষ্ঠান করব। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আমাদের মূল লক্ষ্য এক দফার আন্দোলন। এক দফার আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এই স্বৈরাচারী, বাকশালি সরকার, যারা জনগণের ওপর চেপে বসে আছে, তাদের বিদায় নিতে হবে।’
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা রাজপথে নেমেছি। রাজপথের আন্দোলনের মধ্য দিয়েই দেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনব, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব, মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনব, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনব। শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে এই অগণতান্ত্রিক সরকারকে বিদায় করে গণতান্ত্রিক সরকার ফিরিয়ে আনব।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে শোভাযাত্রাপূর্ব সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু প্রমুখ।
বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে নয়াপল্টনসহ আশপাশের এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্ক অবস্থান নেয় পুলিশ। শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টনের রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে ফকিরাপুল, নাইটিঙ্গেল মোড়, কাকরাইলসহ আশপাশের এলাকায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। ভোগান্তিতে পড়ে রাস্তায় বের হওয়া সাধারণ জনগণ। কার্যালয়ের সামনে থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে ফকিরাপুল মোড়, মতিঝিল শাপলা চত্বর, ইত্তেফাক মোড় ঘুরে রাজধানীর সুপুরা মার্কেটের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্ধারিত স্পটে শীর্ষ নেতারা : ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, প্রথম সদস্য তাবিথ আউয়ালসহ উত্তরের নেতাকর্মীরা কাকরাইল মোড়, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন গাজী ভবন এলাকায়, মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম আনন্দ ভবনের উল্টো দিকে, ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা নেছারুল হকসহ অন্য নেতারা তাদের জন্য নির্ধারিত স্পটে অবস্থান নেন।
হঠাৎ সিদ্ধান্তে আসেন ঢাকার পাশর্^বর্তী জেলাগুলোর নেতাকর্মীরা : গাজীপুর জেলা বিএনপির এক নেতা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা নিজ জেলায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ করে আমাদের জানানো হয় নিজ জেলা নয়, ঢাকার শোভাযাত্রায় অংশ নিতে হবে। কেন্দ্রের নির্দেশে নিজ জেলায় কর্মসূচি পালন না করে ঢাকায় চলে এসেছি।’ এভাবে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলার নেতাকর্মীরা ঢাকার শোভাযাত্রার কর্মসূচিতে অংশ নেন।
যে কারণে বিদেশিরা বিএনপির পাশে : সকালে জিয়ার কবরে শ্রদ্ধা জানানোর পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘দেশের জনগণ যেদিকে থাকবে, বিদেশিরা সেদিকে থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। শুধু তা-ই নয়, সরকার দেশের জনগণের ভোটাধিকার, মানবাধিকারসহ সব সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। এ অবস্থায় বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো যারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে বিধায় তারা জনগণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার চাই, তারা জাস্টিসের কথা বলছে, আমরা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে গণতন্ত্রের জন্য লড়ছি, তারা (বিদেশিরা) গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলছে। তারা চায় এ দেশে জনগণের অধিকার যাতে ভূলুণ্ঠিত না হয়। তারা মানবাধিকারের কথা বলে, খুন-গুমের বিরুদ্ধে বলে। সুতরাং আমাদের এখানে তাদের কাছ থেকে সহায়তা চাওয়ার ব্যাপার নেই। তাদের নিজস্ব বিবেচনা বোধ থেকে তারা আমাদের দেশের জনগণের পক্ষে কথা বলছে।’
যা যা কিছু করেন তার যেকোনো একটি করলেও তিনি হতে পারতেন একমেবাদ্বিতীয়ম! কিন্তু তিনি ধ্রুপদি শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় সবই করলেন। ‘আমার মনের তাগিদ থেকে আমি সবকিছু করি। আমি যখন যেটা এনজয় করি তখন সেটা করি। জীবন তো উপলব্ধি, উপভোগের জন্য। আমার সৌভাগ্য, আমি অনেকভাবে আনন্দ পেতে পারি। ছবি আঁকা, লেখা, অভিনয় আরও যা যা আমার বিশেষ পছন্দের, সবই সৃজনশীল কাজ। যে সবে উত্তেজনা আছে, ক্রমাগত নিজেকে পরীক্ষা করে নেওয়ার সুযোগ আছে বলে কোনোটা বেশি পছন্দের বা কোনোটা কম বলে ভাবা হয়নি। যখন যেটা করতে ভালো লাগে, করে আনন্দ লাভ হয় সম্পূর্ণ মন দিয়ে করি। তাতে সুখ মেলে। কর্ম এভাবেই অনুপ্রেরণা দেয়। বেঁচে থাকা অকারণ নয়, অর্থবহ মনে হয়। অভ্যাসবশত কিছু করা আমার ধাতে নেই। মূলত আমার রকমটা হচ্ছে এই।’ এভাবেই বলছিলেন অভিনয়ে একুশে পদকজয়ী নন্দিত অভিনেতা, নির্মাতা, কবি, ঔপন্যাসিক, চিত্রশিল্পী, গ্রাফিক ডিজাইনার, প্রচ্ছদশিল্পী, বিজ্ঞাপনী সংস্থা মাত্রার কর্ণধার আফজাল হোসেন।
এই যে এত শিল্পমাধ্যমে বিচরণ তা কখনো পরস্পরবিরোধী অবস্থানে কিংবা দ্বন্দ্বে ফেলে দেয় না শিল্পীকে? এমন প্রশ্নের জবাবে আফজাল বলছিলেন, ‘না, বরং সহায়তা করে, আমার লিখতে ভালো লাগে, ভালো লাগে দুনিয়া ভুলে আঁকতে। আবার কখনো কিচ্ছু না করে ভাবনায় ডুবে সাঁতরাতে ভালো লাগে। মন চাইলে গান শুনি, পড়ি, দেখি। মন আমাকে যখন যা বলে, শুনি। মাথা খাটিয়ে, অঙ্ক কষে বা লক্ষ্য ঠিক করে কোনো কিছুতে ঝাঁপিয়ে পড়া ধরনের নই আমি। তেমন হতে হবে কেন? যা যা করার সাধ্য সামর্থ্য রয়েছে সবই তো এক জীবনের বিশেষ প্রাপ্তি।’
এই ভালো লাগাগুলোর ব্যাপারে আবার নিজেকেই নানারকমভাবে জীবনের নানা পর্যায়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন আফজাল হোসেন। নাটকে প্রথম তার হাতেখড়ি হয় সাতক্ষীরার পারুলিয়ায় নিজের গ্রামে নবাব সিরাজউদ্দৌলা নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে। সপ্তম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে এলাকার বড়দের নাটককে চ্যালেঞ্জ করে নাটক করে ফেলেছেন একই বয়সী বন্ধুদের নিয়ে। অভিজ্ঞতা ছিল না কিন্তু উপায় বের করে নিয়েছিলেন। বাড়ি থেকে লুকিয়ে গ্রামোফোন বয়ে নিয়ে গিয়ে গ্রামের বাঁশবাগানের মধ্যখানে বন্ধুদের জড়ো করে রেকর্ড বাজিয়ে রিহার্সেল করা শুরু করলেন। তারপর পাড়ার মা, খালাদের চাঁদা, উৎসাহ আর নানারকম সহযোগিতায় মাটি ভরাট করা উঁচু মঞ্চে অভিনীত হলো নবাব সিরাজউদ্দৌলা। তবে তা অভিনয় বা নাটক ভালোবেসে নয়, শুধুই জেদ, ঝোঁক আর বিশেষ কিছু করার খেয়ালে। তারপর স্কুলের পাট চুকিয়ে ঢাকায় আসা। আর্ট কলেজে পড়ার সময় পুরনো খেয়াল আবার জেগে ওঠে। কলেজের রজতজয়ন্তীর নাটকে অভিনয়ের সূত্রে যোগাযোগ হয় ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে। এভাবেই অভিনয়ে পুরোপুরি জড়িয়ে পড়া। মঞ্চ থেকে টেলিভিশন, রেডিও তারপর চলচ্চিত্র ছড়িয়ে গেলেন সব মাধ্যমে। কিছুদিন আগেই ৫০ বছর পূর্তি হলো ঢাকা থিয়েটারের। তখন লিখেছেন, ‘থিয়েটার করতে এসে জীবনে যা যা মিলেছে, সবই অসামান্য।’
৭৫-এ ঢাকা থিয়েটারে যোগ দিয়ে একই বছর যুক্ত হন টেলিভিশন নাটকের সঙ্গেও। আফজাল হোসেনের কবিতার আবৃত্তি শুনে, দেখে বিখ্যাত প্রযোজক, নাট্যকার এবং অভিনেতা আবদুল্লাহ আল মামুন ব্রেশটের রাইফেল নাটকে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন তাকে। তারপর, বিখ্যাত চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক কাজী জহিরের নতুন বউ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে যুক্ত হন রুপালি পর্দার অভিনয়ে। মাত্র কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে বিপুল সাফল্য মিললেও মন ভরেনি। মন থেকে অস্বস্তি দূর হয় না। সে জগৎ চলে পরীক্ষিত নিয়মে। সেখানে পরিবর্তনের হাওয়া লাগে না। আশাও দেখা যায় না। অভিনয় করতে চাইলে প্রচলিত নিয়ম শিরোধার্য করে টিকতে হবে। টিকতে চাননি। নিজেকে সরিয়ে নেন সেখান থেকে।
সাতক্ষীরার নলতা হাইস্কুলে লেখাপড়া। স্কুলের বাইরে আফজাল হোসেনের পড়াশোনার আরেক রকম হাতেখড়ি হয়েছে সাতক্ষীরার পারুলিয়া আর সখীপুর পাশাপাশি দুই গ্রামের দুই লাইব্রেরি থেকে। আম্মার জন্য বই আনা-নেওয়া করতেন। দস্যু বনহুর, দস্যু মোহন ইত্যাদি ডাকাতকাহিনি প্রিয় হয়ে ওঠে। সে সব পড়তে পড়তেই বন্ধুরা ভাবলেন নতুন একটা রবিনহুড ক্যারেক্টার, ভালো ডাকাত গড়ে তুলতে হবে। নিজেরা চাঁদা দিয়ে কিনলেন একটা মাদুর, যেটা প্রতি বিকেলে স্কুলের ছাদের ওপর বিছিয়ে কয়েকজন জড়ো হয়ে বসে গল্প করতে করতে গল্প লেখা হবে। সবাই যখন খেলার মাঠে তখন বন্ধুরা মিলে শুরু করলেন যৌথ ডাকাতকাহিনি লেখা। তা সফল না হলেও বুনিয়াদ হয়ে রইল পরের লেখালেখির জন্য। আফজাল হোসেনের লেখা প্রথম গল্প প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে কলকাতার বসিরহাটের একটি পত্রিকায়। তিনি আঁকতে পারেন বলেই ছবি আঁকার জন্য ওই সাহিত্য পত্রিকা দলে নিয়েছিল আফজাল হোসেনকে। এক সময় দেখেন আঁকা ছবির আকর্ষণ রয়েছে কিন্তু আলোচনা হয় লেখা নিয়ে। লিখতে চেষ্টা করেন, কিন্তু বাতিল হয়ে যাওয়ার ভয়ও সারাক্ষণ ভোগাতে থাকে। স্বীকার করলেন, প্রথম প্রকাশিত গল্পটি তিনি লিখেছিলেন নরেন্দ্রনাথ মিত্র ও বিমল করের লেখা থেকে অংশ তুলে নিয়ে টুকলিফাই করে। তিনি মনে করেন, ওই নকল করার পাপবোধই তার ভেতরে নিয়মিত লেখার তাগিদ তৈরি করে দেয়। এ পর্যন্ত আফজাল হোসেনের লেখা চারটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। ‘বিরহকাল’, ‘কানামাছি’, ‘কুসুম ও কীট’ ও ‘পারলে না রুমকি’। প্রথম প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ ‘যুবকদ্বয়’ (ইমদাদুল হক মিলনের সঙ্গে যৌথ)। আফজাল হোসেনের কবিতাগ্রন্থ পাঁচটি। ‘তিন নারীর পাঠশালা’ ও ‘শুধু একটাই পা’ (সিটি আনন্দ আলো ২০১১ সাহিত্য পুরস্কারে সম্মানিত), ‘কোনো জোনাকি এ অন্ধকার চেনে না’, ‘১৯নং কবিতা মোকাম’ এবং এ বছর প্রকাশিত হয়েছে ‘আমরা ধুলোকাদার, আমরা আদর্শলিপির।’ এ ছাড়া ২০১৪-তে প্রকাশিত হয়েছে ভিন্নমাত্রার ভ্রমণ রচনা ‘মানসভ্রমণ।’ ‘কথায় কথায় রাত’ নামে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত রচনাগুলোর সংকলন প্রকাশিত হয়েছে ২০১৮ সালে। একমাত্র প্রকাশিত গল্পগ্রন্থের নাম ‘জাহাঙ্গীর বাদশার ঘোড়া।’ প্রকাশনার তালিকায় আরও রয়েছে, একত্রে চারটি উপন্যাসের একটি সংকলনগ্রন্থ চার দরজা।
জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আফজালের তো বহু প্রতিভা, তার গল্প পড়ে আমি সত্যিকার অর্থেই মুগ্ধ হয়েছি, যুবকদ্বয় নামে আমাদের একটা বই বেরিয়েছিল ১৯৮১ সালে। সেটা ছিল নতুন ধরনের প্রকাশনা। একটি বই কিন্তু দুদিকে দুই মলাট। ‘দুই মলাটে দুজন লেখক। অভিনব ধারণা। আফজালই দারুণ প্রচ্ছদ করেছিল। ইদানীং আফজাল কবিতা লিখছে ফেসবুকে, সেগুলোও আমার খুব ভালো লাগে।’
প্রচ্ছদশিল্পী হিসেবেও আফজাল বিখ্যাত। এ পর্যন্ত হাজারখানেক বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন। ১৯৭১ সালে আর্ট কলেজে (বর্তমান চারুকলা ইনস্টিটিউট) চিত্রকলা বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। ১৯৭৪ সালে সেখান থেকে ফাইন আর্টসে স্নাতক। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন তখন শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়েছেন, তবে তার প্রতিষ্ঠিত কলেজের ছাত্র হিসেবে সাহচর্য পাওয়ার সুযোগ ছিল, পেয়েছিলেনও। সেটা দারুণ সৌভাগ্য বিবেচনা করেন। রফিকুন নবী তার সরাসরি শিক্ষক। প্রচ্ছদ রেখাচিত্র অঙ্কনের জন্য খ্যাতিমান শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, হাশেম খান, কালাম মাহমুদের বিশেষ স্নেহ পেয়েছেন। ছাত্রাবস্থায় থাকতেন নীলক্ষেতের শহীদ শাহনেওয়াজ হলে। তার আঁকা ছবির প্রশংসা করেন বড় শিল্পীরাও। সাম্প্রতিককালে তিনি একটি যৌথ শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর অডিও ভিজ্যুয়াল প্রতিবেদন তৈরি করে পোস্ট করেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তা দেখে অনুমান করে নেওয়া যাবে, মনেপ্রাণে তিনি কতখানি সংবেদনশীল।
মডেলিং ও বিজ্ঞাপনচিত্রকে ‘অর্থবহ শিল্প’ পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারে অনেক অবদান বিজ্ঞাপনী সংস্থা মাত্রার কর্ণধার আফজাল হোসেনের। একটি পণ্যকে ভোক্তার কাছে উপস্থাপন করার যে পথ তিনি দেখিয়েছেন, সে পথ ধরেই বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনচিত্রের আজ এতদূর এগিয়ে যাওয়া।
চলচ্চিত্রকার ও বিজ্ঞাপন নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের অডিও ভিজ্যুয়াল বিজ্ঞাপনের যে নান্দনিক বিশেষত্ব, সেখানে আফজাল ভাইয়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। উনি নিজে শিল্পী, লেখক, অভিনেতা হওয়ায় এই জায়গাটা সবচেয়ে বেশি সমৃদ্ধ হয়েছে উনার হাতে। বাংলাদেশের লোকাল ব্র্যান্ডকে সমৃদ্ধ করার জন্য, এখানকার স্থানীয় পুঁজিকে বড় করার জন্য আফজাল ভাইয়ের বিজ্ঞাপন মাইলস্টোনের কাজ করেছে। দেশের বিজ্ঞাপনকে জনপ্রিয় করার ব্যাপারেও উনার ভূমিকা অপরিসীম।’
আফজাল হোসেন সিনেমার পোকা। সত্তর সালে ঢাকায় পা দিয়ে প্রথম রাতেই বলাকা সিনেমা হলে তিনি দেখেছেন রাজ্জাক-কবরী অভিনীত দর্পচূর্ণ। স্কুলে থাকতে সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের ছবি কেটেকুটে অ্যালবাম বানাতেন। রাজ্জাক, কবরী, আজিম, সুজাতা, নাদিম, শাবানা, শবনম, সুচন্দা, নাসিমা খান, রানী, জেবা, ওয়াহিদ মুরাদ, মোহাম্মদ আলী থেকে উত্তম-সুচিত্রা, দিলীপ কুমার, রাজ কাপুর, দেবানন্দ, বৈজয়ন্তীমালা, মধুবালা কে ছিলেন না তার সেই অ্যালবামে।
আফজাল হোসেন অভিনীত ‘দুই জীবন’ সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমা। সে ছবির গান ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে’ ও ‘তুমি আজ কথা দিয়েছো’। এ দুটি গান ভুলতে পারে কোন বাঙালি? আশির দশকে তার অভিনীত দর্শকপ্রিয় নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘কূল নাই কিনার নাই’, ‘পারলে না রুমকি, ‘জোহরা’, ‘ওহ দেবদূত’, ‘রক্তের আঙ্গুরলতা’ ইত্যাদি। টেলিভিশন নাটকে তো ‘সুবর্ণা-আফজাল’ জুটি ছিল দেশের মানুষের মুখে মুখে।
আঁকা, লেখা, নির্মাণ সব কাজের কাজী আফজাল হোসেন এরই মধ্যে শিশু একাডেমির প্রযোজনায় তার প্রিয় লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনকাহিনি নিয়ে আনজীর লিটনের লেখা কিশোর উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্র ‘মানিকের লাল কাঁকড়া’। এটি আছে এখন সেন্সর বোর্ডে। দ্রুতই মুক্তি পাবে। আফজাল হোসেন মনে মনে পরিকল্পনা করে ফেলেছেন শিগগিরই নতুন চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণা দেবেন। আগামী বছরের গোড়ার দিকে হবে তার একক চিত্রকলা প্রদর্শনী।
দেশে চলমান বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে চলতি মাসে। এরই মধ্যে আজ শনিবার ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশ উদ্বোধন হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিকেল সাড়ে ৩টায় বহুল প্রতীক্ষিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যান চলাচলের জন্য উদ্বোধন করবেন। তবে পরদিন রবিবার থেকে বিমানবন্দর-ফার্মগেট অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এ ছাড়া আগামী কয়েক মাসে সরকারের আরও কয়েকটি মেগা প্রকল্পের মধ্যে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশ, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেল সংযোগ প্রকল্পসহ আরও কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন হবে। আর এসব মেগা প্রকল্প সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগে গতি বাড়াবে বলে মনে করছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, এসব মেগা প্রকল্প উদ্বোধন হলে তা হবে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার গেম চেঞ্জার। এসব মেগা প্রকল্পগুলোর পুরোপুরি উদ্বোধন হলে দেশের মানুষ যানজট থেকে অনেকটাই রক্ষা পাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ মেগা প্রকল্পগুলো উদ্বোধনের পর দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আসবে। এখন সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থাকা লাগলেও মেগা প্রকল্পগুলোর সব চালু হলে খুব দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় মানুষ যাতায়াত করতে পারবে। একই সঙ্গে অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল হবে। দক্ষিণের রেল যোগাযোগ চালু হলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ত্রিমাত্রিক যুগে প্রবেশ করবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। তবে এর সুবিধা শুধু ওই এলাকার মানুষই নয়, পুরো দেশ পাবে। আর যখন ট্রেন চালু হবে তখন রেলপথে ঢাকা থেকে খুলনার দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে চার-পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের যেকোনো জেলায় যাওয়া যাবে। আর মোংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে খুব সহজে যোগাযোগের ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে।
রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা মো. যুবায়ের দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি ছোট থেকে বড় হয়েছি মিরপুর এলাকায়। এই এলাকার নাম শুনলে মানুষ যানজটের জন্য ভয়ে আসতে চাইত না। এখন আগের থেকে অনেকটা কমেছে যানজট। তবে মেট্রোরেলের পুরো অংশ চালু হলে খুব সহজে মতিঝিল যেতে পারব।’ দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াতের যে স্বপ্ন ছিল, তা মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
রায়হান নামে গাজীপুরের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যখন পুরোপুরি চালু হবে তখন সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী হব আমরা। আমাদের ব্যবসায়িক মালামাল রাজধানীর নিচের সড়ক ব্যবহার না করে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় খুব দ্রুত আনা-নেওয়া করা যাবে। তবে এখন যে অংশ চালু হবে সেটি দিয়েও রাজধানীতে দ্রুত যাতায়াতে আগের থেকে ভোগান্তি কমবে।’
এ বিষয়ে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যানজট নিরসনের জন্য সরকার নানা পরিকল্পনা নিয়েও সেভাবে কোনো পরিকল্পনাই তেমন ভূমিকা রাখতে পারেনি। কিন্তু গত কয়েক বছরে সরকার যেসব মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে, সেগুলো কিন্তু কেউ কখনো ভাবেনি। আর এগুলো অনেকটা স্বপ্নের প্রকল্প মনে হলেও বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছে। এগুলো যোগাযোগের গেম চেঞ্জার হিসেবে পরিণত হতে যাচ্ছে। সব মেগা প্রকল্প উদ্বোধন হলে একদিকে যেমন যোগাযোগে গতি বাড়বে, তেমনি অন্যদিকে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ভৌগোলিক অনেক কিছুতেই পরিবর্তন আসবে।’
রাজধানীর যানজট নিরসনসহ ভ্রমণে সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ের লক্ষ্যে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে এ যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘পুরো প্রকল্পটি শেষ হলে ঢাকা শহরের উত্তর-দক্ষিণ করিডরের সড়কপথের ধারণক্ষমতা বাড়াবে। এ ছাড়া প্রকল্পটি ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হলে ঢাকা ইপিজেড ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের যোগাযোগ সহজতর হবে।’
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এএইচএমএস আকতার গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল (আজ) বিকেল সাড়ে ৩টায় শেরেবাংলা নগরের পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের পরের দিন বিমানবন্দর-ফার্মগেট অংশটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এ অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার। বোর্ডিংয়ের জন্য ১৫টি র্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে বনানী ও মহাখালীতে দুটি র্যাম্প আপাতত বন্ধ থাকবে। এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা হবে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। থ্রি-হুইলার, সাইকেল এবং পথচারীদের এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল করতে দেওয়া হবে না। এ ছাড়া মোটরবাইকও এখনই চলতে পারবে না। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ হয়েছে।’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান ঘিরে গতকাল শুক্রবার দেশের চারটি জেলায় দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এর মধ্যে নেত্রকোনার কলমাকান্দায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে সাতজন গুলিবিদ্ধসহ বিএনপির অন্তত ৩০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন দলটির নেতারা। গাইবান্ধায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি ও যুবদল নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে বিএনপির অন্তত ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হন।
বগুড়ার নন্দীগ্রামে একই দিনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে একজন গুলিবিদ্ধসহ আটজন আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
এছাড়া মাগুরার মহম্মদপুরে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে তিন পুলিশ সদস্য আহত এবং বিএনপির তিন কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে গতকাল টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালিতে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল দুপুর ১২টা থেকে কলমাকান্দার আট ইউনিয়ন থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে উপজেলা সদরের মধ্যবাজারে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। দুপুর ২টার দিকে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ মিছিল বের করেন। মিছিল শেষে বিএনপির নেতাকর্মীদের অনুষ্ঠান করতে বাধা দেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়।
কলমাকান্দা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এমএ খায়ের বলেন, ‘প্রতিষ্ঠাবর্ষিকী উপলক্ষে দলীয় কার্যালয়ে বাদ জুমা আলোচানা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের লোকেরা লগি ও বৈঠা নিয়ে সড়কে অবস্থান নেওয়ায় বাজারের পূর্ব ও পশ্চিম দিকের লোকজন অফিসে আসতে পারেনি। তাদের বাধার মুখে আমরা দলীয় পতাকাও উত্তোলন করতে পারিনি। বাজারের পশ্চিমে মারকাজ মসজিদ এলাকায় আমাদের বেশিরভাগ লোক অবস্থান করছিল। আওয়ামী লীগের লোকজন লগি-বৈঠা নিয়ে আক্রমণ করে। পাশাপাশি পুলিশও গুলি ছুড়েছে।’
হামলায় যুবদল নেতা তাইমূল, খোকন, স্বপন, মামুন, সবুজ, সোহানুর ও কাশেম গুলিবিদ্ধ এবং উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক গোলাম রসুল, সদস্য সচিব শেখ রবিন মোবারক, বদির জামাল, রিপন, মাসুদ, রুবেলসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি বিএনপি নেতা খায়েরের।
তবে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘বিএনপির লোকজন দা ও লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের লোকজনকে আক্রমণ করেছে। তারা দোকানপাট ভাঙচুর করেছে ও বোমা ফাটায়। আমাদের লোকজনকে কুপিয়েছে। সদর ইউনিয়নের সদস্য এমদাদুল হকের পেটে কোপ লেগেছে। তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমরা কোনো কিছুই করিনি। পুলিশ তাদের (বিএনপি নেতাকর্মীদের) বাধা দিয়েছে।’
কলমাকান্দা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ‘দুই দলের মুখোমুখি মিছিলে সংঘর্ষ বাধে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও জানমাল রক্ষায় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ছোড়া হয়েছে।’ সংঘর্ষের সময় এক পুলিশ সদস্য আহত হন বলেও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
গাইবান্ধায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি ও যুবদল নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং পুলিশের টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও লাঠিপেটার ঘটনা ঘটে। এতে বিএনপির অন্তত ১৫ নেতাকর্মী আহত হন বলে দাবি করেছেন দলটির নেতারা। এ সময় পুলিশ দুই বিএনপি নেতাকে আটক করে। গতকাল বিকেলে শহরের পার্ক রোডে এসব ঘটনা ঘটে। পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জেলা বিএনপি শহরের সার্কুলার রোডের দলীয় কার্যালয় থেকে শোভাযাত্রা বের করে। এটি শহর প্রদক্ষিণ করে পার্ক রোডে পৌঁছলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি-যুবদল নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ এবং নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা করে। পরে সার্কুলার রোডের দলীয় কার্যালয় থেকে পুলিশ দুই বিএনপি নেতাকে আটক করে।
গাইবান্ধা সদর থানা বিএনপির সদস্য সচিব ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই পুলিশ বিএনপির শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রায় বাধা দেয় এবং লাঠিপেটা করে।’
তবে গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মাসুদ রানা বলেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীরা শোভাযাত্রা থেকে পার্ক রোডের কয়েকটি দোকান ভাঙচুর এবং বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছয় রাউন্ড টিয়ার শেল ছোড়া হয়।’
বগুড়ার নন্দীগ্রামে একই দিনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি চলাকালে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় একজন গুলিবিদ্ধ ও ছাত্রদল সভাপতিসহ ৮ জন আহত হয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ৩০ মিনিট ধরে চলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। ৬০-৭০টি চেয়ার ভাঙচুর ও ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলা হয়। এতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রা ও সমাবেশ পন্ড হয়ে যায়।
গতকাল বিকেল ৪টার দিকে নন্দীগ্রাম ফিলিং স্টেশন এলাকায় বিএনপির অস্থায়ী দলীয় কার্যালয় চত্বরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সভাস্থলে হামলা ও চেয়ার ভাঙচুরের এসব ঘটনা ঘটে।
আওয়ামী লীগের দাবি, একজন গুলিবিদ্ধসহ তাদের দুজন আহত হয়েছে। বিএনপির দাবি, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় তাদের দলের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করে ঘটনাস্থল থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয়। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে বঙ্গবন্ধু চত্বরে গিয়ে শান্তি সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালনে ব্যর্থ হয়ে কৈগাড়ী মোড়ে বিক্ষোভ ও সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সভা করে বিএনপি।
নন্দীগ্রাম থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাসস্ট্যান্ডে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ এবং নন্দীগ্রাম ফিলিং স্টেশন এলাকায় দলীয় কার্যালয় চত্বরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভার প্রস্তুতি চলছিল। অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে ছিল। আওয়ামী লীগের একটি মিছিল হঠাৎই বিএনপির অফিস চত্বরে প্রবেশ করলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি শান্ত করে দুই দলের নেতাকর্মীদের ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।’
মাগুরার মহম্মদপুরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মহম্মদপুর বাজারে উপজেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে তিন পুলিশ সদস্য আহত এবং বিএনপির তিন কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের একটি গাড়ি ও দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিএনপি নেতাকর্মীরা জানায়, বিকেল ৪টায় দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। কর্মসূচির উদ্দেশ্যে মাগুরা-মহম্মদপুর সড়কের পল্লী বিদ্যুতের সামনে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। সেখান থেকে শোভাযাত্রা নিয়ে মহম্মদপুর বাজারে উপজেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে তাদের সভা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সেখানেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন উপলক্ষে র্যালি চলাকালে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল সকালে আগে-পিছে যাওয়াকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষ হয়। এতে তিনজন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহতরা হলেন ভূঞাপুর থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব কাজী শাহিন, গোবিন্দাসী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান জুয়েল এবং অর্জুনা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ফিরোজ। এর মধ্যে কাজী শাহিনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
* সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে প্রতিবেদনটি তৈরি
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে তরুণ অভিনয়শিল্পী নিশাত আরা আলভিদা মারা গেছেন। গত বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকার নিজ বাসায় মৃত্যু হয় এইচএসসি পরীক্ষার্থী তরুণ এ অভিনয়শিল্পীর। তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, চার দিন আগে হঠাৎ জ¦রে আক্রান্ত হন নিশাত। প্রথমে বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করলেও শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। এরপর শরীরে প্লাটিলেট বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। নিজ বাসাতেই প্রাণ হারান এ অভিনেত্রী।
জানা গেছে, চলমান এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন নিশাত। সর্বশেষ হিসাববিজ্ঞান পরীক্ষাও দিয়েছিলেন। কিন্তু বাকি পরীক্ষাগুলোতে আর অংশ নেওয়া হলো না। তার আগেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ১৯ বছর বয়সী এই অভিনয়শিল্পী। গত বৃহস্পতিবার রাতেই নিশাতের মরদেহ তার দেশের বাড়ি নাটোরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আগের ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে নতুন করে চারজনের মৃত্যু হয়েছে বলে গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে জানানো হয়। এ সময় ১ হাজার ৫৩৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের মধ্যে ঢাকা সিটির ৫৮৯ এবং বাইরে ৯৪৫ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৮ হাজার ৩৪৮ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৪২ জন। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৩৯৭ জন। মারা গেছেন ৫৯৭ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ৪৩৯ এবং বাইরে ১৫৮ জন।
সাভারে ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল স্কুলছাত্রীর : সাভারে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রওনক মৃধা (১১) নামে এক স্কুল শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে সাভারে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পেলেও এই প্রথম কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। গতকাল এ শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যুর বিষয়টি জানানো হয়। গত বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় রওনক মৃধার। সে আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের শিমুলতলা এলাকার মহসিন মৃধার মেয়ে এবং স্থানীয় সৃষ্টি সেন্ট্রাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ নাছির উদ্দিন বলেন, ‘গত ২৮ আগস্ট আইসিইউতে রওনক নামে ডেঙ্গু আক্রান্ত এক শিশুকে ভর্তি করা হয়। সে ১৪ নম্বর বেডেই চিকিৎসাধীন ছিল। পরে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।’
* প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন সাভার প্রতিনিধি
তামিম ইকবাল দলে না থাকাতে যেন অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে! আবার বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অন্তর্ভুক্তিতেও অনেকের চোখ কপালে! দল ঘোষণার পর যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা এলেন সংবাদ সম্মেলনে, তখন আলোচনায় শুধু ছিলেন এই দুজনেই। তাদের এই বিরহ বেদনায় চাপা পড়ে যায় অনেক প্রশ্ন। লিটন দাসকে বাদ দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত কেন সহ-অধিনায়ক! বাড়তি কোনো ওপেনার ছাড়া কিংবা পাঁচ পেসারকে নিয়ে কেন দল গড়া?
প্রায় মিনিট পনেরোর সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে এসেছে একই প্রশ্ন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও ঘুরেফিরে বন্দী ছিলেন একই কথার বৃত্তে। প্রশ্নোত্তর শেষে বেরিয়ে যান তিন নির্বাচক। যেতে যেতে কথা হয় তাদেরই একজন হাবিবুল বাশারের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল চাপা পড়া সেইসব প্রশ্নের উত্তর।
শুরুতেই জানতে চাওয়া হয় লিটনকে বাদ দিয়ে শান্তকে কেন সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ একটা কারণ। আর লিটনের অনাগ্রহও তাকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর একটি কারণ। লিটন নিজেও চায় না নেতৃত্বের চাপ নিতে। সে একটু ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চায়।’
বিশ্বকাপ দলে বিকল্প ওপেনার না থাকার কারণও জানা গেল এই নির্বাচকের কথায়। তিনি জানালেন, ‘আমরা ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে মিরাজকে ভাবছি।’
বিকল্প ওপেনার হিসেবে বিশেষজ্ঞ কাউকে না নেওয়ায় একজন বাড়তি বোলার দলে রাখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে শেখ মেহেদি হাসান সুযোগ পেয়েছেন সে কারণে। পাশাপাশি জায়গা হয়েছে পাঁচ পেসারেরও। এর পেছনে বাশার ভারতের কন্ডিশনের কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারতে এখন আর্লি সিজন। উইকেট সতেজ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই পাঁচজন পেসার দরকার হবে।’
যেতে যেতে আরও বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মুখোমুখি হলেন, এই দলটা বিশ্বকাপে কেমন করবে? এই প্রশ্নটা শুনেই ঘুরে দাঁড়ালেন হাবিবুল। উত্তরে মজা করে বললেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হবে এই দল।’ এরপর একটু গাম্ভীর্য ফিরিয়ে এনে যোগ করলেন, ‘আমি এদের অনেক দিন ধরে দেখছি। ওরা কয়টা ম্যাচ জিতবে জানি না। তবে বিশ্বকাপে প্রতিটি দলকে ভোগাবে, এটা জানি।’
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনে রদবদলের সুযোগ নেই সরকারের। তাই এর আগেই নির্বাচনী প্রশাসনে ধাপে ধাপে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রশাসনে চলছে পদোন্নতি ও রদবদল। ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রশাসন সাজাতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে বদলি-পদায়ন হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে বড় পদোন্নতি হয়েছে। নির্বাচনের আগে অবসরে যাওয়া কয়েকজন সচিবেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২০ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৮ জন ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিসিএসের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৫ সালে, ২৫তম ব্যাচ ২০০৬ সালে এবং ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৮ সালে।
জানা যায়, নির্বাচনের সময় ডিসিরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকেন। তাদের যে কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে বাতিলের ক্ষমতাও থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও থাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা ডিসির অধীনে। নির্বাচনের সময় সমন্বয়কারীর ভূমিকায়ও থাকেন ডিসিরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন তাদের দুটি ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে। আর সে সময় বিসিএস নিয়ে বেশ বিতর্ক ছিল। বিসিএসে ছিল নানা ধরনের তদবির। ২৪ ও ২৫তম ব্যাচ দুটি বিএনপির সময়ে নিয়োগ পেলেও ২৭তম ব্যাচ নিয়োগ পেয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। কারণ বিএনপির শেষ সময়ে ২৭তম ব্যাচের নিয়োগে বড় ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকায় তা বাতিল হয়। পরে ফের পরীক্ষা নিয়ে ২০০৮ সালে এ ব্যাচের নিয়োগ দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল ২৪তম ব্যাচের নিয়োগ নিয়ে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২৪তম ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডিসির পদ থেকে তুলে আনা হতে পারে। নির্বাচনের সময় যারা ডিসির দায়িত্বে থাকবেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তাদের সবার ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে পরিবার ও নিকট আত্মীয়স্বজনদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো যাচাই করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে আর ডিসির পদে রাখা হবে না।
এ ছাড়া নির্বাচনে অন্যতম ভূমিকা পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। বর্তমানে ৩৩, ৩৪ ও ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা রয়েছেন ইউএনও পদে, যারা আসন্ন নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এখন ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ইউএনওর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে; এ ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারের ২৯১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
জানতে চাইলে সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ইকরাম আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষা হয় যোগ্যতা, মেধা ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে। সেখানে ছাত্রজীবনে কে কোন পার্টি করেছিলেন, কোন দল ক্ষমতায় আছে তা বিবেচনা করা হয় না। বিসিএস কর্মকর্তাদের যে ফাউন্ডেশন ট্রেনিং হয়, তাতে তাকে একজন অফিসার হিসেবেই গড়ে তোলা হয়। এরপর এসিআর, সুপিরিয়রের মতামত, সুনাম, দক্ষতা, যোগ্যতার ভিত্তিতেই একজন কর্মকর্তাকে উচ্চতর পদে দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তবে সরকার যে দল পরিচালনা করে তাদের কিছু নীতিমালা ও উদ্দেশ্য থাকে। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সরকারের নেওয়া বৈধ ও জনকল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা। তিনি প্রলুব্ধ হবেন না, নিরপেক্ষ থেকে তার দায়িত্ব পালন করবেন। যদি কোনো নির্বাচনী দায়িত্বও দেওয়া হয়, সেটাও নিরপেক্ষভাবে তিনি পালন করবেন।’
গত মে মাসে অতিরিক্ত সচিব পদে ১১৪ জনের পদোন্নতি হয়। জুলাই মাসে পাঁচ বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসেই বদলি ও নতুন মিলিয়ে ৩০টি জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উপসচিব পদমর্যাদার এই ডিসি পদে এবারও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আটজন পিএসকে পদায়ন দেওয়া হয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ২২১ কর্মকর্তা। এ পদোন্নতিতে মূল বিবেচনায় এসেছে ২২তম ব্যাচ। বর্তমানে যুগ্ম সচিবের স্থায়ী পদ ৫০২টি। এর বিপরীতে পদোন্নতি পাওয়ার পর যুগ্ম সচিবের সংখ্যা হলো ৯৪৬ জন। এর আগে সর্বশেষ গত বছর ২ নভেম্বর ১৭৫ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। আর গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২৭০ জন সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই অন্তত ১০ জন সচিবের স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার কথা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন আগামী ১৩ অক্টোবর অবসরে যেতে পারেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান ১৪ সেপ্টেম্বর, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আবদুস সালামের ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে আবদুস সালামের চাকরি এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ৯ অক্টোবর, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক ৩০ অক্টোবর, ইআরডি সচিব শরিফা খান ২৪ নভেম্বর, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহসানে এলাহী ২৫ নভেম্বর এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল হোসেন ২৯ নভেম্বর অবসরে যাবেন। ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম এবং ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম। এ ১০ জনের মধ্যে কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন।
গত কয়েক বছরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মুখ্য সচিব পদে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই স্বাভাবিক অবসরের মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। সর্বশেষ সাবেক চার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মধ্যে একমাত্র কবির বিন আনোয়ার ছাড়া বাকি তিনজনই স্বাভাবিক মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। তারা হলেন মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, মোহাম্মদ শফিউল আলম ও খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।