
যা যা কিছু করেন তার যেকোনো একটি করলেও তিনি হতে পারতেন একমেবাদ্বিতীয়ম! কিন্তু তিনি ধ্রুপদি শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় সবই করলেন। ‘আমার মনের তাগিদ থেকে আমি সবকিছু করি। আমি যখন যেটা এনজয় করি তখন সেটা করি। জীবন তো উপলব্ধি, উপভোগের জন্য। আমার সৌভাগ্য, আমি অনেকভাবে আনন্দ পেতে পারি। ছবি আঁকা, লেখা, অভিনয় আরও যা যা আমার বিশেষ পছন্দের, সবই সৃজনশীল কাজ। যে সবে উত্তেজনা আছে, ক্রমাগত নিজেকে পরীক্ষা করে নেওয়ার সুযোগ আছে বলে কোনোটা বেশি পছন্দের বা কোনোটা কম বলে ভাবা হয়নি। যখন যেটা করতে ভালো লাগে, করে আনন্দ লাভ হয় সম্পূর্ণ মন দিয়ে করি। তাতে সুখ মেলে। কর্ম এভাবেই অনুপ্রেরণা দেয়। বেঁচে থাকা অকারণ নয়, অর্থবহ মনে হয়। অভ্যাসবশত কিছু করা আমার ধাতে নেই। মূলত আমার রকমটা হচ্ছে এই।’ এভাবেই বলছিলেন অভিনয়ে একুশে পদকজয়ী নন্দিত অভিনেতা, নির্মাতা, কবি, ঔপন্যাসিক, চিত্রশিল্পী, গ্রাফিক ডিজাইনার, প্রচ্ছদশিল্পী, বিজ্ঞাপনী সংস্থা মাত্রার কর্ণধার আফজাল হোসেন।
এই যে এত শিল্পমাধ্যমে বিচরণ তা কখনো পরস্পরবিরোধী অবস্থানে কিংবা দ্বন্দ্বে ফেলে দেয় না শিল্পীকে? এমন প্রশ্নের জবাবে আফজাল বলছিলেন, ‘না, বরং সহায়তা করে, আমার লিখতে ভালো লাগে, ভালো লাগে দুনিয়া ভুলে আঁকতে। আবার কখনো কিচ্ছু না করে ভাবনায় ডুবে সাঁতরাতে ভালো লাগে। মন চাইলে গান শুনি, পড়ি, দেখি। মন আমাকে যখন যা বলে, শুনি। মাথা খাটিয়ে, অঙ্ক কষে বা লক্ষ্য ঠিক করে কোনো কিছুতে ঝাঁপিয়ে পড়া ধরনের নই আমি। তেমন হতে হবে কেন? যা যা করার সাধ্য সামর্থ্য রয়েছে সবই তো এক জীবনের বিশেষ প্রাপ্তি।’
এই ভালো লাগাগুলোর ব্যাপারে আবার নিজেকেই নানারকমভাবে জীবনের নানা পর্যায়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন আফজাল হোসেন। নাটকে প্রথম তার হাতেখড়ি হয় সাতক্ষীরার পারুলিয়ায় নিজের গ্রামে নবাব সিরাজউদ্দৌলা নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে। সপ্তম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে এলাকার বড়দের নাটককে চ্যালেঞ্জ করে নাটক করে ফেলেছেন একই বয়সী বন্ধুদের নিয়ে। অভিজ্ঞতা ছিল না কিন্তু উপায় বের করে নিয়েছিলেন। বাড়ি থেকে লুকিয়ে গ্রামোফোন বয়ে নিয়ে গিয়ে গ্রামের বাঁশবাগানের মধ্যখানে বন্ধুদের জড়ো করে রেকর্ড বাজিয়ে রিহার্সেল করা শুরু করলেন। তারপর পাড়ার মা, খালাদের চাঁদা, উৎসাহ আর নানারকম সহযোগিতায় মাটি ভরাট করা উঁচু মঞ্চে অভিনীত হলো নবাব সিরাজউদ্দৌলা। তবে তা অভিনয় বা নাটক ভালোবেসে নয়, শুধুই জেদ, ঝোঁক আর বিশেষ কিছু করার খেয়ালে। তারপর স্কুলের পাট চুকিয়ে ঢাকায় আসা। আর্ট কলেজে পড়ার সময় পুরনো খেয়াল আবার জেগে ওঠে। কলেজের রজতজয়ন্তীর নাটকে অভিনয়ের সূত্রে যোগাযোগ হয় ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে। এভাবেই অভিনয়ে পুরোপুরি জড়িয়ে পড়া। মঞ্চ থেকে টেলিভিশন, রেডিও তারপর চলচ্চিত্র ছড়িয়ে গেলেন সব মাধ্যমে। কিছুদিন আগেই ৫০ বছর পূর্তি হলো ঢাকা থিয়েটারের। তখন লিখেছেন, ‘থিয়েটার করতে এসে জীবনে যা যা মিলেছে, সবই অসামান্য।’
৭৫-এ ঢাকা থিয়েটারে যোগ দিয়ে একই বছর যুক্ত হন টেলিভিশন নাটকের সঙ্গেও। আফজাল হোসেনের কবিতার আবৃত্তি শুনে, দেখে বিখ্যাত প্রযোজক, নাট্যকার এবং অভিনেতা আবদুল্লাহ আল মামুন ব্রেশটের রাইফেল নাটকে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন তাকে। তারপর, বিখ্যাত চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক কাজী জহিরের নতুন বউ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে যুক্ত হন রুপালি পর্দার অভিনয়ে। মাত্র কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে বিপুল সাফল্য মিললেও মন ভরেনি। মন থেকে অস্বস্তি দূর হয় না। সে জগৎ চলে পরীক্ষিত নিয়মে। সেখানে পরিবর্তনের হাওয়া লাগে না। আশাও দেখা যায় না। অভিনয় করতে চাইলে প্রচলিত নিয়ম শিরোধার্য করে টিকতে হবে। টিকতে চাননি। নিজেকে সরিয়ে নেন সেখান থেকে।
সাতক্ষীরার নলতা হাইস্কুলে লেখাপড়া। স্কুলের বাইরে আফজাল হোসেনের পড়াশোনার আরেক রকম হাতেখড়ি হয়েছে সাতক্ষীরার পারুলিয়া আর সখীপুর পাশাপাশি দুই গ্রামের দুই লাইব্রেরি থেকে। আম্মার জন্য বই আনা-নেওয়া করতেন। দস্যু বনহুর, দস্যু মোহন ইত্যাদি ডাকাতকাহিনি প্রিয় হয়ে ওঠে। সে সব পড়তে পড়তেই বন্ধুরা ভাবলেন নতুন একটা রবিনহুড ক্যারেক্টার, ভালো ডাকাত গড়ে তুলতে হবে। নিজেরা চাঁদা দিয়ে কিনলেন একটা মাদুর, যেটা প্রতি বিকেলে স্কুলের ছাদের ওপর বিছিয়ে কয়েকজন জড়ো হয়ে বসে গল্প করতে করতে গল্প লেখা হবে। সবাই যখন খেলার মাঠে তখন বন্ধুরা মিলে শুরু করলেন যৌথ ডাকাতকাহিনি লেখা। তা সফল না হলেও বুনিয়াদ হয়ে রইল পরের লেখালেখির জন্য। আফজাল হোসেনের লেখা প্রথম গল্প প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে কলকাতার বসিরহাটের একটি পত্রিকায়। তিনি আঁকতে পারেন বলেই ছবি আঁকার জন্য ওই সাহিত্য পত্রিকা দলে নিয়েছিল আফজাল হোসেনকে। এক সময় দেখেন আঁকা ছবির আকর্ষণ রয়েছে কিন্তু আলোচনা হয় লেখা নিয়ে। লিখতে চেষ্টা করেন, কিন্তু বাতিল হয়ে যাওয়ার ভয়ও সারাক্ষণ ভোগাতে থাকে। স্বীকার করলেন, প্রথম প্রকাশিত গল্পটি তিনি লিখেছিলেন নরেন্দ্রনাথ মিত্র ও বিমল করের লেখা থেকে অংশ তুলে নিয়ে টুকলিফাই করে। তিনি মনে করেন, ওই নকল করার পাপবোধই তার ভেতরে নিয়মিত লেখার তাগিদ তৈরি করে দেয়। এ পর্যন্ত আফজাল হোসেনের লেখা চারটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। ‘বিরহকাল’, ‘কানামাছি’, ‘কুসুম ও কীট’ ও ‘পারলে না রুমকি’। প্রথম প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ ‘যুবকদ্বয়’ (ইমদাদুল হক মিলনের সঙ্গে যৌথ)। আফজাল হোসেনের কবিতাগ্রন্থ পাঁচটি। ‘তিন নারীর পাঠশালা’ ও ‘শুধু একটাই পা’ (সিটি আনন্দ আলো ২০১১ সাহিত্য পুরস্কারে সম্মানিত), ‘কোনো জোনাকি এ অন্ধকার চেনে না’, ‘১৯নং কবিতা মোকাম’ এবং এ বছর প্রকাশিত হয়েছে ‘আমরা ধুলোকাদার, আমরা আদর্শলিপির।’ এ ছাড়া ২০১৪-তে প্রকাশিত হয়েছে ভিন্নমাত্রার ভ্রমণ রচনা ‘মানসভ্রমণ।’ ‘কথায় কথায় রাত’ নামে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত রচনাগুলোর সংকলন প্রকাশিত হয়েছে ২০১৮ সালে। একমাত্র প্রকাশিত গল্পগ্রন্থের নাম ‘জাহাঙ্গীর বাদশার ঘোড়া।’ প্রকাশনার তালিকায় আরও রয়েছে, একত্রে চারটি উপন্যাসের একটি সংকলনগ্রন্থ চার দরজা।
জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আফজালের তো বহু প্রতিভা, তার গল্প পড়ে আমি সত্যিকার অর্থেই মুগ্ধ হয়েছি, যুবকদ্বয় নামে আমাদের একটা বই বেরিয়েছিল ১৯৮১ সালে। সেটা ছিল নতুন ধরনের প্রকাশনা। একটি বই কিন্তু দুদিকে দুই মলাট। ‘দুই মলাটে দুজন লেখক। অভিনব ধারণা। আফজালই দারুণ প্রচ্ছদ করেছিল। ইদানীং আফজাল কবিতা লিখছে ফেসবুকে, সেগুলোও আমার খুব ভালো লাগে।’
প্রচ্ছদশিল্পী হিসেবেও আফজাল বিখ্যাত। এ পর্যন্ত হাজারখানেক বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন। ১৯৭১ সালে আর্ট কলেজে (বর্তমান চারুকলা ইনস্টিটিউট) চিত্রকলা বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। ১৯৭৪ সালে সেখান থেকে ফাইন আর্টসে স্নাতক। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন তখন শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়েছেন, তবে তার প্রতিষ্ঠিত কলেজের ছাত্র হিসেবে সাহচর্য পাওয়ার সুযোগ ছিল, পেয়েছিলেনও। সেটা দারুণ সৌভাগ্য বিবেচনা করেন। রফিকুন নবী তার সরাসরি শিক্ষক। প্রচ্ছদ রেখাচিত্র অঙ্কনের জন্য খ্যাতিমান শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, হাশেম খান, কালাম মাহমুদের বিশেষ স্নেহ পেয়েছেন। ছাত্রাবস্থায় থাকতেন নীলক্ষেতের শহীদ শাহনেওয়াজ হলে। তার আঁকা ছবির প্রশংসা করেন বড় শিল্পীরাও। সাম্প্রতিককালে তিনি একটি যৌথ শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর অডিও ভিজ্যুয়াল প্রতিবেদন তৈরি করে পোস্ট করেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তা দেখে অনুমান করে নেওয়া যাবে, মনেপ্রাণে তিনি কতখানি সংবেদনশীল।
মডেলিং ও বিজ্ঞাপনচিত্রকে ‘অর্থবহ শিল্প’ পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারে অনেক অবদান বিজ্ঞাপনী সংস্থা মাত্রার কর্ণধার আফজাল হোসেনের। একটি পণ্যকে ভোক্তার কাছে উপস্থাপন করার যে পথ তিনি দেখিয়েছেন, সে পথ ধরেই বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনচিত্রের আজ এতদূর এগিয়ে যাওয়া।
চলচ্চিত্রকার ও বিজ্ঞাপন নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের অডিও ভিজ্যুয়াল বিজ্ঞাপনের যে নান্দনিক বিশেষত্ব, সেখানে আফজাল ভাইয়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। উনি নিজে শিল্পী, লেখক, অভিনেতা হওয়ায় এই জায়গাটা সবচেয়ে বেশি সমৃদ্ধ হয়েছে উনার হাতে। বাংলাদেশের লোকাল ব্র্যান্ডকে সমৃদ্ধ করার জন্য, এখানকার স্থানীয় পুঁজিকে বড় করার জন্য আফজাল ভাইয়ের বিজ্ঞাপন মাইলস্টোনের কাজ করেছে। দেশের বিজ্ঞাপনকে জনপ্রিয় করার ব্যাপারেও উনার ভূমিকা অপরিসীম।’
আফজাল হোসেন সিনেমার পোকা। সত্তর সালে ঢাকায় পা দিয়ে প্রথম রাতেই বলাকা সিনেমা হলে তিনি দেখেছেন রাজ্জাক-কবরী অভিনীত দর্পচূর্ণ। স্কুলে থাকতে সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের ছবি কেটেকুটে অ্যালবাম বানাতেন। রাজ্জাক, কবরী, আজিম, সুজাতা, নাদিম, শাবানা, শবনম, সুচন্দা, নাসিমা খান, রানী, জেবা, ওয়াহিদ মুরাদ, মোহাম্মদ আলী থেকে উত্তম-সুচিত্রা, দিলীপ কুমার, রাজ কাপুর, দেবানন্দ, বৈজয়ন্তীমালা, মধুবালা কে ছিলেন না তার সেই অ্যালবামে।
আফজাল হোসেন অভিনীত ‘দুই জীবন’ সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমা। সে ছবির গান ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে’ ও ‘তুমি আজ কথা দিয়েছো’। এ দুটি গান ভুলতে পারে কোন বাঙালি? আশির দশকে তার অভিনীত দর্শকপ্রিয় নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘কূল নাই কিনার নাই’, ‘পারলে না রুমকি, ‘জোহরা’, ‘ওহ দেবদূত’, ‘রক্তের আঙ্গুরলতা’ ইত্যাদি। টেলিভিশন নাটকে তো ‘সুবর্ণা-আফজাল’ জুটি ছিল দেশের মানুষের মুখে মুখে।
আঁকা, লেখা, নির্মাণ সব কাজের কাজী আফজাল হোসেন এরই মধ্যে শিশু একাডেমির প্রযোজনায় তার প্রিয় লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনকাহিনি নিয়ে আনজীর লিটনের লেখা কিশোর উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্র ‘মানিকের লাল কাঁকড়া’। এটি আছে এখন সেন্সর বোর্ডে। দ্রুতই মুক্তি পাবে। আফজাল হোসেন মনে মনে পরিকল্পনা করে ফেলেছেন শিগগিরই নতুন চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণা দেবেন। আগামী বছরের গোড়ার দিকে হবে তার একক চিত্রকলা প্রদর্শনী।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের ভোটাধিকার নস্যাতের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ থাকার জন্য দেশবাসীর প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ওরা (বিএনপি) গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। ওরা ভোট করতে আসে না। ওরা ভোট পাবে না, ভোট চায় না। জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে আবারও তারা ছিনিমিনি খেলতে চায়। ওরা বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চায়।’
গতকাল শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগ আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগসহ সব সংগঠনের নেতাদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। তাদের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘মনে করিয়ে দেবেন ওরা (বিএনপি) ভোট করতে আসে না। ভোট পায় না। ভোট চায় না। ভোট পাবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওরা তো (বিএনপি) লুটেরা, সন্ত্রাস। মানুষের শান্তি কেড়ে নেয়। মানুষের সম্পদ ঘরবাড়ি কেড়ে নেয়। লুটেরা সন্ত্রাস আর জঙ্গিতে বিশ্বাসী ওরা। ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি। এরা কখনো মানুষের কল্যাণ করতে পারে না। কারণ তাদের জন্ম হয়েছে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর হাতে। তারা গণতন্ত্রেও বিশ্বাস করে না। এখন তারা নাকি বলে গণতন্ত্র উদ্ধার করবে। যাদের জন্ম ক্যান্টনমেন্টে। যারা গণতন্ত্রে বিশ^াস করে না, ওরা নাকি গণতন্ত্র রক্ষা করবে। ক্ষমতা দখলকারীদের হাতে তৈরি ওই বিএনপি আর যুদ্ধাপরাধীরা এ দেশের কল্যাণ কখনো চাইতে পারে না। তারা দেশকে ধ্বংস করতে চায়।’
আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ আয়োজিত বিশাল এ ছাত্র সমাবেশে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে দেশের ছাত্রসমাজ সদা-সর্বদায় শেখ হাসিনার পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধ বলে জানান তিনি। ছাত্রলীগ সভাপতি সমবেত ছাত্রদের ‘তারুণ্য লড়বে, তারুণ্য গড়বে’ এ শপথ পাঠ করান।
ছাত্র সমাবেশে পাঁচ লক্ষাধিক লোকের সমাবেশ ঘটানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন ছাত্রলীগ সভাপতি। সারা দেশের সাংগঠনিক জেলা থেকে মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন শর্ত দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন বয়সের মানুষ সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করে। দুপুর ১২টা থেকে সমাবেশস্থলের আশপাশে ছাত্র জমায়েত হতে শুরু করে। বেলা ৩টার পর আর কাউকে মাঠে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। সবাই মাঠের চারপাশে মিছিলসহ স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে রাখে অনুষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের সরকারের উন্নয়নচিত্র সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুনসহ মেগা প্রজেক্টের ছবি সংবলিত টি-শার্ট পরা ছিল সমাবেশে আসা ছাত্র-যুবসমাজ। তাদের মুখে ছিল ‘আবারও শেখ হাসিনা’ স্লোগান। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের প্রকাশনা মাতৃভূমির বিশেষ সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করেন।
বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাকে স্বাগত জানান।
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সমাবেশে বক্তৃতা করেন। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
বিশাল ছাত্র সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।
মহাসমাবেশে শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিজেদের বর্তমানকে উৎসর্গ করার জন্য এবং আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকার পক্ষে ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে বিজয়ী হওয়ার জন্য লাখো শিক্ষার্থী অঙ্গীকার করেন।
সমাবেশের শুরুতে জাতীয় সংগীত, ছাত্রলীগের থিম সং এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎসর্গ করা একটি গান গাওয়া হয় এবং এলইডি মনিটরে জাতির পিতাকে উৎসর্গ করা আরেকটি গানও প্রদর্শিত হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ও মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী তার ৫২ মিনিটের দীর্ঘ বক্তব্যে সরকারের উন্নয়নের নানা ফিরিস্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এসব উন্নয়ন অনেকের ভালোলাগে না। অনেকের কোনো কিছুই ভালো লাগে না। তারা দেখে না যে, দেশের উন্নতি হচ্ছে। তাদের চোখ অন্ধ। উন্নয়ন চোখে না দেখাদের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অত্যন্ত আধুনিক চক্ষু ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান আমি নিজে সেখানে চোখ দেখাতে যাই। ১০ টাকার টিকিট কাটলে সেখানে চোখ দেখানো যায়। তাদের বলব সেখানে গিয়ে চোখটা দেখিয়ে আসেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসলে চোখ নয়, তাদের মনের দরজাই অন্ধকার। আর পরাজিত শক্তির পদলেহনকারী। সেজন্য মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন তারা দেখে না। হাওয়া ভবন খুলে খাওয়া খেতে পারছে না বলে তাদের যত দুঃখ।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কারণে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ হয়েছিল উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বদনাম দিয়েছিলেন। কেন দিয়েছিলেন? একটি ব্যাংকের এমডি পদের জন্য। তিনি ১০ বছর বেআইনিভাবে ব্যাংকটি চালিয়ে আবারও সেখানে থাকতে হবে। সেই লোভে। বারবার আমাদের ওপর চাপ। একটি বড় দেশ বারবার চাপ দিত। কী বলত! এমডি পদে না রাখলে নাকি পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেবে। আমাদের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে সেই ভদ্রলোক মামলাও করেছিল। কিন্তু আদালত তো তার বয়স কমাতে পারেনি। মামলায় হেরে যায়।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘হিলারি ক্লিনটন নিজে অর্ডার করে তখন বিশ্বব্যাংকের চেয়ারম্যানকে দিয়ে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করেন। তখন বলেছিলাম নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করব। কারও কাছে হাত পেতে না। আমরা সেটা করেছি। করে বিশ্বকে দেখিয়েছি। বাংলাদেশ পারে। বাংলাদেশের মানুষ পারে। এরপর কিন্তু বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বদলে গেছে।’
সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছি। বিএনপির কিছু নেতা বলছেন এটা নাকি আমাদের নির্বাচনী ফান্ড তৈরি করার জন্য। এর থেকে লজ্জার আর কী হতে পারে। নিজেরা কিছু করতে পারেনি। মানুষকে কিছু দিতে পারেনি। মানুষের ভালোর জন্য যখন আমরা কিছু করি তখন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। এ বিভ্রান্তিতে কেউ যেন কান না দেন। ছাত্রলীগকে বলব নিজের এলাকায় গিয়ে এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে।’
ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া ছাত্রদলকে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল। বলেছিল ছাত্রদল আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে যথেষ্ট। আর আমি ছাত্রলীগকে দিয়েছিলাম খাতা আর কলম। বলেছিলাম পড়াশোনা করতে হবে। অশিক্ষিত মূর্খদের হাতে দেশ পড়লে তার অগ্রযাত্রা হতে পারে না।’
ছাত্রলীগের বিভিন্ন সময়কার সামাজিক কর্মকান্ডের ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে ছাত্রলীগ কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিটি দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। গর্বে আমার বুক ভরে যায়। এভাবে তারা এগিয়ে গেলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ বন্ধ করতে পারবে না। আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে।’
ছাত্রলীগের নেতাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘যেকোনো প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলে সঠিক নেতৃত্ব দরকার। আশা করি ছাত্রলীগের নেতারা নিজেদের সেই নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে তুলবেন। যেখানে থাকবে সেখানে ছাত্রলীগ নেতৃত্ব দেবে সেটাই আমরা চাই।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘ছাত্রলীগের ছেলেমেয়েরা একচল্লিশের স্মার্ট বাংলাদেশের কান্ডারি হবে। সেটাই আমি চাই। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আর কেউ বাধা দিতে পারবে না। অতন্দ্র প্রহরীর মতো ছাত্রলীগকে সবসময় সজাগ-সতর্ক থাকতে হবে। শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বেশ কিছু দায়িত্ব দেন। তিনি বলেন, ‘নিজের প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করবা, যেখানে থাকো সেটা পরিষ্কার রাখবা, এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবা। পরিবেশ রক্ষার জন্য বৃক্ষরোপণ করতে হবে।’
বঙ্গবন্ধুর বাকশাল গঠনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) ঘুণে ধরা সমাজ ভেঙে নতুন সমাজ গড়তে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীয়করণ করতে চেয়েছিলেন। জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন, যাতে এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশ এগিয়ে যেতে পারে। তার সুফল কিন্তু মানুষ পেতে শুরু করেছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জানুয়ারিতে ঘোষণা করলেন, দুর্ভাগ্য ওই বছরের আগস্ট মাসে তাকে হত্যা করা হলো। হত্যা করে আবার সেই বাংলাদেশে মিলিটারি ডিক্টেটর। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগ্রাম আমরা করেছি। জনগণের ক্ষমতা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে বন্দি করা হয়েছিল। আমরা জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি।’
দলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত, শোভাযাত্রাসহ নানান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাজধানীসহ সারা দেশে বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। রাজধানীতে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে বিএনপি নেতারা বলেছেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। এই সরকার টিকে থাকতে পারবে না।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ও গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়সহ সারা দেশের দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের চন্দ্রিমা উদ্যানে দলের প্রতিষ্ঠাতার কবরে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করে। জুমার নামাজের পর শোভাযাত্রায় অংশ নিতে রাজধানী ঢাকাসহ পাশ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। শোভাযাত্রা শুরুর আগে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতিতে কাকরাইল মোড়, ফকিরাপুল মোড়, নয়াপল্টনসহ আশপাশের এলাকা জনারণ্যে পরিণত হয়। নেতাকর্মীরা রংবেরঙের ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, কেউ কেউ মাথায় টুপি পরে, ছোট ছোট ট্রাকে ধানের শীষ, ঘোড়ার গাড়িতে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে অংশ নেন। বেলা ২টায় মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পরও বৃষ্টিতে ভিজে নেতাকর্মীরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে আসেন। ঢাকার পাশ্ববর্তী জেলাগুলোর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুরের নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের আশপাশের এলাকায় জড়ো হয়ে মিছিল নিয়ে কার্যালয়ের সামনে শোভাযাত্রাস্থলে জড়ো হন। শোভাযাত্রার আগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একটি গানের উদ্বোধন করা হয়।
ঢাকা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত শোভাযাত্রার আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিজেদের গণতন্ত্রের প্রতিভূ বলে দাবি করলেও বাস্তবে তারা স্বৈরাচারের প্রতিভূ। অতীতে কোনো স্বৈরাচার টিকে থাকতে পারেনি। এ সরকারও পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘সরকার বলে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নাকি একজন সৈনিক ছিলেন। বাস্তবতা হলো দেশের জনগণ জানে তিনি দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। অন্যদিকে বর্তমান সরকার দেশের গণতন্ত্র, সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে শেষ করে দিয়েছে। তারা দাবি করে, তারা নাকি গণতন্ত্র দিয়েছে। দেশের মানুষ ভালো করে জানে সরকার তাদের ভোটাধিকার, মানবাধিকারসহ সব অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।’
মঈন খান বলেন, ‘কোনো স্বৈরাচার জুলুম করে টিকতে পারেনি, এ সরকারও পারবে না। আটকাতে পারবে না গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে।’
উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কিছু সময়ের জন্য একটা বিশেষ অনুষ্ঠান করব। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আমাদের মূল লক্ষ্য এক দফার আন্দোলন। এক দফার আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এই স্বৈরাচারী, বাকশালি সরকার, যারা জনগণের ওপর চেপে বসে আছে, তাদের বিদায় নিতে হবে।’
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা রাজপথে নেমেছি। রাজপথের আন্দোলনের মধ্য দিয়েই দেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনব, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব, মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনব, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনব। শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে এই অগণতান্ত্রিক সরকারকে বিদায় করে গণতান্ত্রিক সরকার ফিরিয়ে আনব।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে শোভাযাত্রাপূর্ব সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু প্রমুখ।
বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে নয়াপল্টনসহ আশপাশের এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্ক অবস্থান নেয় পুলিশ। শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টনের রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে ফকিরাপুল, নাইটিঙ্গেল মোড়, কাকরাইলসহ আশপাশের এলাকায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। ভোগান্তিতে পড়ে রাস্তায় বের হওয়া সাধারণ জনগণ। কার্যালয়ের সামনে থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে ফকিরাপুল মোড়, মতিঝিল শাপলা চত্বর, ইত্তেফাক মোড় ঘুরে রাজধানীর সুপুরা মার্কেটের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্ধারিত স্পটে শীর্ষ নেতারা : ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, প্রথম সদস্য তাবিথ আউয়ালসহ উত্তরের নেতাকর্মীরা কাকরাইল মোড়, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন গাজী ভবন এলাকায়, মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম আনন্দ ভবনের উল্টো দিকে, ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা নেছারুল হকসহ অন্য নেতারা তাদের জন্য নির্ধারিত স্পটে অবস্থান নেন।
হঠাৎ সিদ্ধান্তে আসেন ঢাকার পাশর্^বর্তী জেলাগুলোর নেতাকর্মীরা : গাজীপুর জেলা বিএনপির এক নেতা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা নিজ জেলায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ করে আমাদের জানানো হয় নিজ জেলা নয়, ঢাকার শোভাযাত্রায় অংশ নিতে হবে। কেন্দ্রের নির্দেশে নিজ জেলায় কর্মসূচি পালন না করে ঢাকায় চলে এসেছি।’ এভাবে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলার নেতাকর্মীরা ঢাকার শোভাযাত্রার কর্মসূচিতে অংশ নেন।
যে কারণে বিদেশিরা বিএনপির পাশে : সকালে জিয়ার কবরে শ্রদ্ধা জানানোর পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘দেশের জনগণ যেদিকে থাকবে, বিদেশিরা সেদিকে থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। শুধু তা-ই নয়, সরকার দেশের জনগণের ভোটাধিকার, মানবাধিকারসহ সব সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। এ অবস্থায় বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো যারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে বিধায় তারা জনগণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার চাই, তারা জাস্টিসের কথা বলছে, আমরা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে গণতন্ত্রের জন্য লড়ছি, তারা (বিদেশিরা) গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলছে। তারা চায় এ দেশে জনগণের অধিকার যাতে ভূলুণ্ঠিত না হয়। তারা মানবাধিকারের কথা বলে, খুন-গুমের বিরুদ্ধে বলে। সুতরাং আমাদের এখানে তাদের কাছ থেকে সহায়তা চাওয়ার ব্যাপার নেই। তাদের নিজস্ব বিবেচনা বোধ থেকে তারা আমাদের দেশের জনগণের পক্ষে কথা বলছে।’
দেশে চলমান বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে চলতি মাসে। এরই মধ্যে আজ শনিবার ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশ উদ্বোধন হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিকেল সাড়ে ৩টায় বহুল প্রতীক্ষিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যান চলাচলের জন্য উদ্বোধন করবেন। তবে পরদিন রবিবার থেকে বিমানবন্দর-ফার্মগেট অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এ ছাড়া আগামী কয়েক মাসে সরকারের আরও কয়েকটি মেগা প্রকল্পের মধ্যে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশ, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেল সংযোগ প্রকল্পসহ আরও কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন হবে। আর এসব মেগা প্রকল্প সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগে গতি বাড়াবে বলে মনে করছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, এসব মেগা প্রকল্প উদ্বোধন হলে তা হবে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার গেম চেঞ্জার। এসব মেগা প্রকল্পগুলোর পুরোপুরি উদ্বোধন হলে দেশের মানুষ যানজট থেকে অনেকটাই রক্ষা পাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ মেগা প্রকল্পগুলো উদ্বোধনের পর দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আসবে। এখন সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থাকা লাগলেও মেগা প্রকল্পগুলোর সব চালু হলে খুব দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় মানুষ যাতায়াত করতে পারবে। একই সঙ্গে অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল হবে। দক্ষিণের রেল যোগাযোগ চালু হলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ত্রিমাত্রিক যুগে প্রবেশ করবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। তবে এর সুবিধা শুধু ওই এলাকার মানুষই নয়, পুরো দেশ পাবে। আর যখন ট্রেন চালু হবে তখন রেলপথে ঢাকা থেকে খুলনার দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে চার-পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের যেকোনো জেলায় যাওয়া যাবে। আর মোংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে খুব সহজে যোগাযোগের ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে।
রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা মো. যুবায়ের দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি ছোট থেকে বড় হয়েছি মিরপুর এলাকায়। এই এলাকার নাম শুনলে মানুষ যানজটের জন্য ভয়ে আসতে চাইত না। এখন আগের থেকে অনেকটা কমেছে যানজট। তবে মেট্রোরেলের পুরো অংশ চালু হলে খুব সহজে মতিঝিল যেতে পারব।’ দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াতের যে স্বপ্ন ছিল, তা মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
রায়হান নামে গাজীপুরের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যখন পুরোপুরি চালু হবে তখন সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী হব আমরা। আমাদের ব্যবসায়িক মালামাল রাজধানীর নিচের সড়ক ব্যবহার না করে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় খুব দ্রুত আনা-নেওয়া করা যাবে। তবে এখন যে অংশ চালু হবে সেটি দিয়েও রাজধানীতে দ্রুত যাতায়াতে আগের থেকে ভোগান্তি কমবে।’
এ বিষয়ে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যানজট নিরসনের জন্য সরকার নানা পরিকল্পনা নিয়েও সেভাবে কোনো পরিকল্পনাই তেমন ভূমিকা রাখতে পারেনি। কিন্তু গত কয়েক বছরে সরকার যেসব মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে, সেগুলো কিন্তু কেউ কখনো ভাবেনি। আর এগুলো অনেকটা স্বপ্নের প্রকল্প মনে হলেও বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছে। এগুলো যোগাযোগের গেম চেঞ্জার হিসেবে পরিণত হতে যাচ্ছে। সব মেগা প্রকল্প উদ্বোধন হলে একদিকে যেমন যোগাযোগে গতি বাড়বে, তেমনি অন্যদিকে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ভৌগোলিক অনেক কিছুতেই পরিবর্তন আসবে।’
রাজধানীর যানজট নিরসনসহ ভ্রমণে সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ের লক্ষ্যে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে এ যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘পুরো প্রকল্পটি শেষ হলে ঢাকা শহরের উত্তর-দক্ষিণ করিডরের সড়কপথের ধারণক্ষমতা বাড়াবে। এ ছাড়া প্রকল্পটি ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হলে ঢাকা ইপিজেড ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের যোগাযোগ সহজতর হবে।’
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এএইচএমএস আকতার গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল (আজ) বিকেল সাড়ে ৩টায় শেরেবাংলা নগরের পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের পরের দিন বিমানবন্দর-ফার্মগেট অংশটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এ অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার। বোর্ডিংয়ের জন্য ১৫টি র্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে বনানী ও মহাখালীতে দুটি র্যাম্প আপাতত বন্ধ থাকবে। এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা হবে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। থ্রি-হুইলার, সাইকেল এবং পথচারীদের এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল করতে দেওয়া হবে না। এ ছাড়া মোটরবাইকও এখনই চলতে পারবে না। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ হয়েছে।’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান ঘিরে গতকাল শুক্রবার দেশের চারটি জেলায় দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এর মধ্যে নেত্রকোনার কলমাকান্দায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে সাতজন গুলিবিদ্ধসহ বিএনপির অন্তত ৩০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন দলটির নেতারা। গাইবান্ধায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি ও যুবদল নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে বিএনপির অন্তত ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হন।
বগুড়ার নন্দীগ্রামে একই দিনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে একজন গুলিবিদ্ধসহ আটজন আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
এছাড়া মাগুরার মহম্মদপুরে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে তিন পুলিশ সদস্য আহত এবং বিএনপির তিন কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে গতকাল টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালিতে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল দুপুর ১২টা থেকে কলমাকান্দার আট ইউনিয়ন থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে উপজেলা সদরের মধ্যবাজারে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। দুপুর ২টার দিকে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ মিছিল বের করেন। মিছিল শেষে বিএনপির নেতাকর্মীদের অনুষ্ঠান করতে বাধা দেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়।
কলমাকান্দা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এমএ খায়ের বলেন, ‘প্রতিষ্ঠাবর্ষিকী উপলক্ষে দলীয় কার্যালয়ে বাদ জুমা আলোচানা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের লোকেরা লগি ও বৈঠা নিয়ে সড়কে অবস্থান নেওয়ায় বাজারের পূর্ব ও পশ্চিম দিকের লোকজন অফিসে আসতে পারেনি। তাদের বাধার মুখে আমরা দলীয় পতাকাও উত্তোলন করতে পারিনি। বাজারের পশ্চিমে মারকাজ মসজিদ এলাকায় আমাদের বেশিরভাগ লোক অবস্থান করছিল। আওয়ামী লীগের লোকজন লগি-বৈঠা নিয়ে আক্রমণ করে। পাশাপাশি পুলিশও গুলি ছুড়েছে।’
হামলায় যুবদল নেতা তাইমূল, খোকন, স্বপন, মামুন, সবুজ, সোহানুর ও কাশেম গুলিবিদ্ধ এবং উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক গোলাম রসুল, সদস্য সচিব শেখ রবিন মোবারক, বদির জামাল, রিপন, মাসুদ, রুবেলসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি বিএনপি নেতা খায়েরের।
তবে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘বিএনপির লোকজন দা ও লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের লোকজনকে আক্রমণ করেছে। তারা দোকানপাট ভাঙচুর করেছে ও বোমা ফাটায়। আমাদের লোকজনকে কুপিয়েছে। সদর ইউনিয়নের সদস্য এমদাদুল হকের পেটে কোপ লেগেছে। তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমরা কোনো কিছুই করিনি। পুলিশ তাদের (বিএনপি নেতাকর্মীদের) বাধা দিয়েছে।’
কলমাকান্দা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ‘দুই দলের মুখোমুখি মিছিলে সংঘর্ষ বাধে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও জানমাল রক্ষায় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ছোড়া হয়েছে।’ সংঘর্ষের সময় এক পুলিশ সদস্য আহত হন বলেও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
গাইবান্ধায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি ও যুবদল নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং পুলিশের টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও লাঠিপেটার ঘটনা ঘটে। এতে বিএনপির অন্তত ১৫ নেতাকর্মী আহত হন বলে দাবি করেছেন দলটির নেতারা। এ সময় পুলিশ দুই বিএনপি নেতাকে আটক করে। গতকাল বিকেলে শহরের পার্ক রোডে এসব ঘটনা ঘটে। পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জেলা বিএনপি শহরের সার্কুলার রোডের দলীয় কার্যালয় থেকে শোভাযাত্রা বের করে। এটি শহর প্রদক্ষিণ করে পার্ক রোডে পৌঁছলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি-যুবদল নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ এবং নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা করে। পরে সার্কুলার রোডের দলীয় কার্যালয় থেকে পুলিশ দুই বিএনপি নেতাকে আটক করে।
গাইবান্ধা সদর থানা বিএনপির সদস্য সচিব ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই পুলিশ বিএনপির শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রায় বাধা দেয় এবং লাঠিপেটা করে।’
তবে গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মাসুদ রানা বলেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীরা শোভাযাত্রা থেকে পার্ক রোডের কয়েকটি দোকান ভাঙচুর এবং বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছয় রাউন্ড টিয়ার শেল ছোড়া হয়।’
বগুড়ার নন্দীগ্রামে একই দিনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি চলাকালে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় একজন গুলিবিদ্ধ ও ছাত্রদল সভাপতিসহ ৮ জন আহত হয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ৩০ মিনিট ধরে চলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। ৬০-৭০টি চেয়ার ভাঙচুর ও ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলা হয়। এতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রা ও সমাবেশ পন্ড হয়ে যায়।
গতকাল বিকেল ৪টার দিকে নন্দীগ্রাম ফিলিং স্টেশন এলাকায় বিএনপির অস্থায়ী দলীয় কার্যালয় চত্বরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সভাস্থলে হামলা ও চেয়ার ভাঙচুরের এসব ঘটনা ঘটে।
আওয়ামী লীগের দাবি, একজন গুলিবিদ্ধসহ তাদের দুজন আহত হয়েছে। বিএনপির দাবি, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় তাদের দলের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করে ঘটনাস্থল থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয়। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে বঙ্গবন্ধু চত্বরে গিয়ে শান্তি সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালনে ব্যর্থ হয়ে কৈগাড়ী মোড়ে বিক্ষোভ ও সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সভা করে বিএনপি।
নন্দীগ্রাম থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাসস্ট্যান্ডে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ এবং নন্দীগ্রাম ফিলিং স্টেশন এলাকায় দলীয় কার্যালয় চত্বরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভার প্রস্তুতি চলছিল। অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে ছিল। আওয়ামী লীগের একটি মিছিল হঠাৎই বিএনপির অফিস চত্বরে প্রবেশ করলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি শান্ত করে দুই দলের নেতাকর্মীদের ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।’
মাগুরার মহম্মদপুরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মহম্মদপুর বাজারে উপজেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে তিন পুলিশ সদস্য আহত এবং বিএনপির তিন কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের একটি গাড়ি ও দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিএনপি নেতাকর্মীরা জানায়, বিকেল ৪টায় দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। কর্মসূচির উদ্দেশ্যে মাগুরা-মহম্মদপুর সড়কের পল্লী বিদ্যুতের সামনে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। সেখান থেকে শোভাযাত্রা নিয়ে মহম্মদপুর বাজারে উপজেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে তাদের সভা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সেখানেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন উপলক্ষে র্যালি চলাকালে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল সকালে আগে-পিছে যাওয়াকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষ হয়। এতে তিনজন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহতরা হলেন ভূঞাপুর থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব কাজী শাহিন, গোবিন্দাসী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান জুয়েল এবং অর্জুনা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ফিরোজ। এর মধ্যে কাজী শাহিনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
* সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে প্রতিবেদনটি তৈরি
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে তরুণ অভিনয়শিল্পী নিশাত আরা আলভিদা মারা গেছেন। গত বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকার নিজ বাসায় মৃত্যু হয় এইচএসসি পরীক্ষার্থী তরুণ এ অভিনয়শিল্পীর। তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, চার দিন আগে হঠাৎ জ¦রে আক্রান্ত হন নিশাত। প্রথমে বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করলেও শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। এরপর শরীরে প্লাটিলেট বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। নিজ বাসাতেই প্রাণ হারান এ অভিনেত্রী।
জানা গেছে, চলমান এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন নিশাত। সর্বশেষ হিসাববিজ্ঞান পরীক্ষাও দিয়েছিলেন। কিন্তু বাকি পরীক্ষাগুলোতে আর অংশ নেওয়া হলো না। তার আগেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ১৯ বছর বয়সী এই অভিনয়শিল্পী। গত বৃহস্পতিবার রাতেই নিশাতের মরদেহ তার দেশের বাড়ি নাটোরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আগের ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে নতুন করে চারজনের মৃত্যু হয়েছে বলে গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে জানানো হয়। এ সময় ১ হাজার ৫৩৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের মধ্যে ঢাকা সিটির ৫৮৯ এবং বাইরে ৯৪৫ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৮ হাজার ৩৪৮ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৪২ জন। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৩৯৭ জন। মারা গেছেন ৫৯৭ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ৪৩৯ এবং বাইরে ১৫৮ জন।
সাভারে ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল স্কুলছাত্রীর : সাভারে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রওনক মৃধা (১১) নামে এক স্কুল শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে সাভারে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পেলেও এই প্রথম কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। গতকাল এ শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যুর বিষয়টি জানানো হয়। গত বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় রওনক মৃধার। সে আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের শিমুলতলা এলাকার মহসিন মৃধার মেয়ে এবং স্থানীয় সৃষ্টি সেন্ট্রাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ নাছির উদ্দিন বলেন, ‘গত ২৮ আগস্ট আইসিইউতে রওনক নামে ডেঙ্গু আক্রান্ত এক শিশুকে ভর্তি করা হয়। সে ১৪ নম্বর বেডেই চিকিৎসাধীন ছিল। পরে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।’
* প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন সাভার প্রতিনিধি
অভিষেকে ২৬ মিনিট খেলে দুই অ্যাসিস্টের অবদান রাখতে পেরেছিলেন নেইমার। আল হিলাল জিতেছিল। কিন্তু পর পর দুম্যাচ খেললেন পুরো সময়। তেমন কিছুই করতে পারলেন না। ড্র করেছে আল হিলাল আবার।
এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে শেষ দিকের গোলে ১-১ ড্র করে পরাজয় বাঁচিয়েছিল আল হিলাল। আজ সৌদি প্রো লিগে দামাক এফসির বিপক্ষে ম্যালকমের গোলে ৯ মিনিটে এগিয়ে গেলেও শেষপর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারেনি।
সাত ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে তবুও শীর্ষেই রইলো আল হিলাল।
বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস আজ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে দিবসটি পালিত হবে। এ উপলক্ষে ২১টি বেসরকারি সংস্থা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘স্বল্প দূরত্বে হেঁটে ও সাইকেলে চলি, ব্যক্তিগত গাড়ি পরিহার করি’।
দিবসটি উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে ২১টি আয়োজক সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগে ধানমন্ডি-২৭-এর মোড় থেকে আবাহনী খেলার মাঠ পর্যন্ত ‘স্বল্প দূরত্বে হেঁটে ও সাইকেলে চলি, ব্যক্তিগত গাড়ি পরিহার করি’ শীর্ষক র্যালি আয়োজন করা হয়েছে।
২০০৬ সাল থেকে দেশে বেসরকারি উদ্যোগে দিনটি উদযাপন করা হচ্ছে। তবে ২০১৬ সাল থেকে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে এটি পালন শুরু হয়, যেখানে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্র্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) মুখ্য সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে এসেছে। কিন্তু বিশ্বের অন্যতম যানজটপ্রবণ ঢাকা শহরে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্ত্বেও সরকারিভাবে এ দিবসটি পালনের উদ্যোগ এই বছর নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশে দিবসটি পালনের প্রায় দেড় যুগ পার হতে চললেও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ও ফলপ্রসূ পরিকল্পনা ও নীতির বাস্তবায়ন এখনো দেখা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, যানজটের বড় কারণ হলো এই ব্যক্তিগত গাড়ি। দেশে মেগা প্রকল্পগুলো ব্যক্তিগত গাড়িকে প্রাধান্য না দিয়ে গণপরিবহনকে প্রাধান্য দিয়ে করা উচিত। এখন গণপরিবহনের দিকে জোর না দেওয়ায় অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ি, যা সড়কে বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিআরটিএ একটি সূত্র থেকে জানা যায়, দিন দিন ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। চলতি বছর আগস্ট পর্যন্ত মোট যানবাহন নিবন্ধন আছে ৫৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮টি মতো। এর মধ্যে গণপরিবহনের সংখ্যা মাত্র ২ শতাংশের কম। আর বেশিরভাগই ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা গাড়ি।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বায়ুদূষণে বিশ্বে দুই বিলিয়ন শিশু প্রতিদিন বিষাক্ত বাতাসের সংস্পর্শে আসছে। এদের মধ্যে পাঁচ লাখের বেশি প্রতিবছর মারা যাচ্ছে। তবুও দেশে গণপরিবহনকে প্রাধান্য না দিয়ে বড় বড় অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। যার জন্য দেশে দিনের পর দিন ব্যক্তিগত গাড়ি বাড়ছে। এ অবস্থায় ভবিষ্যতে সড়কে নানারকম বিশৃঙ্খলার শঙ্কা থেকেই যাবে।
এদিকে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানান, প্রতি মাসের প্রথম রবিবার সব ধরনের ব্যক্তিগত গাড়ি বন্ধ করার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ প্রয়োজন। নীতিনির্ধারকরা গণপরিবহন ব্যবহার করলেই সাধারণ মানুষের যাতায়াতের দুর্ভোগ উপলব্ধি করতে পারবেন, ফলে গণপরিবহনের মান বাড়তে পারে। টেকসই পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নগর এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়াস সারা বিশ্বে বেগবান হলেও বাংলাদেশে এ প্রয়াস সীমিত। তাছাড়া ঢাকা শহরে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ব্যক্তিগত গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দিয়ে চলছে বিআরটিএ। নগর পরিকল্পনা ও পরিবহন পরিকল্পনার মধ্যে সমন্বয় নেই, কর্র্তৃপক্ষগুলোর মধ্যেও নেই কার্যক্রমের সমন্বয়। ফলে নগরে গাড়ির চাপ বাড়ছে, মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়েছে যানজট।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনা কখন যাবি জনগণ এখন আর এই কথা বলে না। বলে, এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনা এখন যাবি। আর যাবেনইবা কোথায়? এখন সেটাই দেখার বিষয়। সর্বশেষ গতকাল ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাফ বলে দিয়েছে, তারা শেখ হাসিনার অধীনে হওয়া নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবেন না। কারণ তাদের যে প্রতিনিধিরা দেশে এসেছিলেন, তারা গিয়ে বলেছেন, নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই।’ গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিএনপি আয়োজিত ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-সিলেট অভিমুখী ‘রোডমার্চ’ কর্মসূচির শুরুতে ভৈরবের বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সকালে অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির এক দফা দাবি আদায়ে এই রোডমার্চ শুরু হয়। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রোডমার্চ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন গয়েশ^র চন্দ্র রায়।
এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওয়ারেস আলী মামুন, নির্বাহী কমিটির সদস্য লায়লা বেগম ও মজিবুর রহমান ইকবাল।
ওই জনসভায় গয়েশ্বর চন্দ্র আরও বলেন, ‘বিএনপির দাবি দেশে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন, যা হতে হবে নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। যার যার ভোট সে সে দেবে। সকালের ভোট রাতে হবে না।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ব্যবসার পরিবেশ পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের লোকেরা ধ্বংস করছে। ফলে এতে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দেশের মানুষ আজ অসহায় দ্রব্যমূল্য নিয়ে। চালের দাম, তেলের দাম, আলুর দাম, বিদ্যুতের দাম হু হু করে বেড়েছে। আজকে ব্যাংকগুলোতে টাকা চুরি করে আওয়ামী লীগের লোকেরা পাচার করছে বিদেশে। রিজার্ভ কমে গেছে। সরকারদলীয় লোকের দুর্নীতির কারণে আজ রিজার্ভ কমছে, দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হচ্ছে।’
দুপুরে সিলেট অভিমুখে তারুণ্যের রোডমার্চে যাত্রাপথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে পথসভা হয়। এ সময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তৃতাকালে গয়েশ্বর বলেন, ‘তারুণ্যের যে রোডমার্চ শুরু হয়েছে, তা সরকার পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে তরুণ সমাজ আজ জেগে উঠেছে। শেখ হাসিনা সরকারকে আর কোনো অশুভ শক্তিই রক্ষা করতে পারবে না।’ এ আন্দোলন ডু আর ডাই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
রোডমার্চটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমানায় পৌঁছলে দলের কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম খোকন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মোহাম্মদ শামীম ও যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা এসএন তরুণ দেসহ দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নেতৃত্বে রোডমার্চকে স্বাগত জানিয়ে শোডাউন করা হয়।
পরে দুপুরে হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ এলাকায় পথসভা করা হয়। পথসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মালিক জনগণ। সেই মালিকানা আমরা ফেরত দিতে চাই। ক্ষমতায় আসার জন্য আমরা আন্দোলন করছি না। জনগণের অধিকার আর মানুষের ভোটাধিকার ফেরাতে আমরা রাজপথে নেমেছি।’
রোডমার্চটি বিকেল ৪টায় সিলেটে এসে সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই রোডমার্চ সিলেটে পৌঁছে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। এরপর সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ নেতারা।
এদিকে বৃষ্টি হওয়ায় সমাবেশস্থল আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নেতাকর্মীরা সেভাবে অবস্থান নিতে পারেননি। খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে অনেকে সমাবেশস্থলে এলেও বৃষ্টির কারণে তারা আশপাশের বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নেন। অবশ্য বেশ কিছু নেতাকর্মী ছাতা, ব্যানার-ফেস্টুন ইত্যাদি মাথায় দিয়ে মাঠেই অবস্থান করছিলেন। বৃষ্টিতে ভিজে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী সরকারবিরোধী স্লোগান দেন।
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন জানান, রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে যোগ দিতে দুপুর থেকেই সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলা, পৌরসভা ও সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মী মিছিল সহকারে এসে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জড়ো হতে থাকেন। তবে বৃষ্টির কারণে মাঠে অবস্থান কষ্টকর হয়ে পড়ে। এরপরও বৃষ্টিতে ভিজে শত শত নেতাকর্মী সেখানে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ সফল করেছেন। সভা শেষে রোডমার্চ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
* প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ও নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
রাজধানীর পল্টনে ব্যাংক থেকে ব্যবসায়ীর ২০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুই পুলিশসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
জানা গেছে, আবদুল্লাহ আল মামুন নামে একজন ব্যবসায়ীর কর্মচারী আইএফআইসি ব্যাংকের পল্টন শাখায় ২০ লাখ টাকা জমা দিতে আসেন। তিনি এসে টাকা জমা দেওয়ার লাইনে দাঁড়ান। এ সময় পুলিশের ইউনিফর্ম পরা দুই ব্যক্তি তাকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যান। পরে তার কাছে থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যান তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। পরে সিটিটিভি ফুটেজ দেখে দুজন হকারকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ধারাবাহিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয় অন্যদের। এ ঘটনায় পল্টন থানায় একটি মামলা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের (ডিএমপি) উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ছিনতাইয়ের সঙ্গে দুজন পুলিশ কনস্টেবল জড়িত ছিল। তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিভিলে থাকা তিন ব্যক্তি টাকার বিষয়ে ওই দুই পুলিশকে তথ্য দেয়। এরপর ইউনিফর্ম পরা দুই পুলিশ কনস্টেবল ব্যাংকে ঢুকে ওই ব্যক্তিকে বাইরে নিয়ে আসে। তার কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। দুই পুলিশ কনস্টেবল বরখাস্ত ছিল।
জানা গেছে, পল্টন থানা-পুলিশ ও ডিবির মতিঝিল জোনাল টিম সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ব্যাংকের সামনের ফুটপাতের হকার হৃদয় ও তার সহযোগী মঞ্জুকে আটক করে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের দেওয়া তথ্যে ডেমরা পুলিশ লাইনসে ক্লোজড হয়ে থাকা পুলিশের দুই সদস্য কনস্টেবল মাহাবুব ও কনস্টেবল আসিফকে ১০ লাখ টাকাসহ আটক করা হয়। এরপর বাসাবো থেকে ছিনতাইয়ের আরও ১০ লাখ টাকা ও মোটরসাইকেলসহ সোহেলকে আটক করে পুলিশ।
এ ঘটনার ভুক্তভোগী আবদুল্লাহ আল মামুন করপোরেট আইডিয়াসের মালিক। তিনি বলেন, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই মার্কেটিং অফিসারের মাধ্যমে টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়। টাকা নিয়ে ব্যাংকের ওই শাখায় যাওয়ার পর এ ঘটনা ঘটে। এরপর দ্রুত পুলিশকে জানাই।
এ ব্যবসায়ী আরও বলেন, পুলিশের পোশাক পরিহিত দুই লোক এসে আমাদের কর্মীকে ভয় দেখিয়ে টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে এটি শুনে বিস্মিত হয়েছিলাম। এখন জানলাম এ ছিনতাইকাণ্ডে শাহজাহানসহ আরও তিনজন রয়েছে। শাহজাহান আমার দীর্ঘদিনের কর্মী। আমাদের প্রতিষ্ঠান ঠিকাদারিতে জড়িত।
পুলিশ বলছে, পুরানা পল্টনে করপোরেট আইডিয়াসের অফিস থেকে টাকা জমা দেওয়া জন্য ব্যাংকের উদ্দেশ্যে যাত্রার পরপরই শাহজাহান, হৃদয় ও রাসেল পুলিশের দুই সদস্যকে খবর দেন। তারা পল্টনের আইএফআইসি ব্যাংকে গিয়ে টাকার ব্যাগসহ আজিমকে তুলে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে দুই পুলিশ সদস্য পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিনতাইয়ে অংশ নেন। এ সময় বাকি তিনজন আশপাশে পাহারায় ছিলেন।
পল্টন থানার ওসি সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরই ব্যাংকের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়। এরপর পুলিশের দুই সদস্যকে শনাক্তের পর অন্য তিনজনের বিষয়েও তথ্য বেরিয়ে আসে।
জানা গেছে, ব্যাংকের ওই শাখায় গিয়ে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা একটি হিসাব নম্বরে জমা দেওয়ার পরই ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ব্যাংকের বাইরে নিয়ে আসা হয়। তারা আজিমের টাকার উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। ব্যাগে থাকা টাকা হুন্ডির অর্থ বলে দাবি করেন পুলিশ সদস্যরা। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে আজিমকে ব্যাংকের বাইরে নিয়ে যান। রাস্তায় এনে তাকে মোটরসাইকেলে তুলে দ্রুত মুগদা এলাকায় নেন। সেখানে টাকার ব্যাগ রেখে ছেড়ে দেওয়া হয় আজিমকে। এরপর ঘটনা ওই প্রতিষ্ঠানের মালিককে জানানোর পর পুলিশের একাধিক দল কাজ শুরু করে।
নিউ ইয়র্কের চারপাশেই বাঙালি পাবেন। ব্রুকলিন, জ্যামাইকা, কুইন্স সর্বত্রই। কিন্তু জ্যাকসন হাইটস যেন বাংলাদেশেরই কোনো এক অঞ্চল। কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকায় ঘোরাঘুরি করলেই যেমন মনে হয় পাবনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, রাজশাহী অথবা অন্য কোনো জনপদে আপনি হাঁটছেন, ঠিক তেমনি নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস পুরোপুরি এক বাংলাদেশ। আপনা বাজার ও অন্যান্য দু-একটি বিপণি সর্বভারতীয় অস্তিত্বের জানান দেয় বটে, কিন্তু বাংলাদেশের দাপটের কাছে তা কিছুই নয়। একপা, দুপা অন্তর ছোট-বড় অজস্র দোকান। একের পর এক রেস্টুরেন্ট। সাগর, বৈশাখী ও নবান্ন। ফুটপাত জুড়ে সবজি, বঙ্গসন্তানদের ফুচকা খাবার উৎসাহ দেখে বেশ মন ভালো হয়ে যায়।
বাংলাদেশের জনগণ থাকবে আর রাজনীতি নিয়ে তর্কাতর্কি থাকবে না, এ হতে পারে না। ফুটবল ওয়ার্ল্ড কাপের সময় যেমন পাড়া ভাগাভাগি হয়ে যায়, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স ও ব্রাজিলে, এখানেও তেমনি এখন তুমুল উত্তেজনা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে। কান পাততে হবে না, জ্যাকসন হাইটসের চারদিকে দু-তিন দিন হাঁটাচলা করলেই বুঝতে পারবেন যে পুরো বাংলাদেশ ভাগ হয়ে আছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে। এরশাদের জাতীয় পার্টিও যৎসামান্য আছে, কিন্তু বামদের উপস্থিতি সেভাবে চোখে পড়েনি। শুনেছি সিপিবির কালচারাল ফ্রন্টের মজবুত সংগঠন আছে। আমি এখনো টের পাইনি। পুরো আমেরিকাতেই ভারত ও অন্যান্য দেশের ইমিগ্র্যান্ট প্রচুর। কিন্তু কেউই বাংলাদেশিদের মতো রাজনীতি নিয়ে মাতামাতি করেন বলে মনে হয়নি। এখানে অনেক বাংলা ম্যাগাজিন বের হয়। সাপ্তাহিক, ত্রৈমাসিক সব। সেখানেও রাজনৈতিক বিশ্লেষণের গুরুত্ব যথেষ্ট প্রাধান্য পায়। সাধারণভাবে বাংলাদেশের জনগণ আমেরিকান মূলধারার রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামান না। ব্যতিক্রম যে নেই, বলব না। মওলানা ভাসানী অনুসারী তরুণী কাজি ফৌজিয়ার সঙ্গে আলাপ হলো। লড়াকু মেয়েটি আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ, বাংলাদেশি, লাতিন ইমিগ্র্যান্ট ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর জন্য বছরের পর বছর মাটি কামড়ে লড়াই করে চলেছেন।
শেখ হাসিনার আমেরিকা ভ্রমণ নিয়ে জ্যাকসন হাইটস সরগরম। বিকেল হতে না হতেই ছোট ছোট মিছিল চারপাশে ঘুরছে। বঙ্গদেশের কমিউনিটির মধ্যে আওয়ামী লীগের শক্তি যথেষ্ট। মহিলা লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ সব পাবেন। প্রত্যেকটি স্টেটেই আওয়ামী লীগের শাখা সংগঠনের উপস্থিতি ভালোই। পাশাপাশি বিএনপি সমর্থকদের সংখ্যাও কম নয়।
বিকেলে ছোটখাটো দোকানে খেতে খেতে সুষ্ঠু নির্বাচন, রাতের ভোট, ভারতের সঙ্গে পানি চুক্তি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে তর্কবিতর্ক, উত্তেজনা শুনতে শুনতে মনে হয় যেন ঢাকা বা বাংলাদেশের কোনো অন্য শহরে বসে আছি। এই রাজনৈতিক চাপানো উতরে এটা স্পষ্ট, কয়েক হাজার মাইল দূরে থাকলেও দেশের ভালোমন্দ নিয়ে চিন্তা কম নেই অভিবাসীদের। বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম জোগানদার কিন্তু এই অভিবাসীরাই। রেমিট্যান্স দেশের আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এ নিয়ে সরকারি-বেসরকারি মহলে কোনো সন্দেহ নেই। লক্ষ করছিলাম যে এক-একজন বাংলাদেশি কত কত বছর ধরে এখানে আছেন। নিজেরা খেটে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। বাড়ি করেছেন। গাড়ি কিনেছেন। কিন্তু মন আজও পড়ে থাকে দেশের মাটিতে।
বাংলাদেশে কয়েক মাস আগে যখন গেলাম, তখন সেখানে আমেরিকান ভিসানীতি নিয়ে বিতর্ক প্রবল। শেখ হাসিনার সরকারকে আমেরিকা নাকি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, আগামী বছর বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ না হলে এবং দেশের মধ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ যদি না থাকে তাহলে তারা বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না। আমেরিকা নিজের দেশে কতটা গণতন্ত্রকে সম্মান করে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। দিন-দুই আগে ম্যানহাটনের লাইব্রেরি চত্বরে গিয়ে দেখি জনা-পঁচিশ-তিরিশ নারী-পুরুষ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, কুড়ি বছর, তেইশ বছর ধরে বিনাবিচারে আমেরিকার বিভিন্ন জেলে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবিতে।
তাও আমেরিকা যেহেতু অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এগিয়ে, ফলে সেখানে যাওয়ার আগ্রহ অস্বাভাবিক নয়। এ ছাড়া পুঁজি যেভাবে ভোগবাদী মননকে লালন করে, সেখানে ভোগবাদের স্বর্গরাজ্যে যাওয়ার আকাক্সক্ষা বাড়বে, বাড়ছেও। গ্রিন কার্ড পেতে সক্রিয় অনেক তরুণের সঙ্গে আলাপ হলো। যারা রয়েছেন, তারাও অধিকাংশ দেশের হালচালে বিরক্ত, হতাশ। বিরাটসংখ্যক বিএনপি সমর্থকের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, তারা নিরাপত্তার অভাবেই দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তবে সরকার পরিবর্তন হলেও তারা সবাই দেশে ফিরবেন, এমন কিন্তু মনে হয়নি। ঢাকায় যত আমেরিকান ভিসানীতি নিয়ে উৎকণ্ঠা বা আলোচনা শুনেছি, তার ছিটেফোঁটাও জ্যাকসন হাইটসে শুনবেন না। এখানকার বাসিন্দাদের ধারণা, এসব বাইডেনের রাজনৈতিক হুমকি, যা আদতেই ফাঁপা। বিষয়টির কোনো সারবত্তা নেই।
সারা নিউ ইয়র্কে যত অভিবাসী আছে, তাদের সাহায্য ছাড়া আমেরিকা একপাও এগোতে পারবে না। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় ইমিগ্র্যান্টবিরোধী কিছু তৎপরতা ছিল। এখন সেসব নেই। নিউ ইয়র্ক মোটের ওপর ডেমোক্র্যাটদের ঘাঁটি। যত মানবতার পক্ষে, ইমিগ্র্যান্ট সমর্থন, অধিকার রক্ষা আন্দোলনÑ সব আজও এ শহরের অলংকার। কাজেই আমেরিকার ভিসা পলিসি নিয়ে আদৌও কেউ চিন্তিত নন। এই, অন্তত একটা ব্যাপারে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে কোথাও কোনো মতপার্থক্য নেই। আমেরিকান প্রশাসনের সত্যিই ক্ষমতা নেই লাখ লাখ অভিবাসীকে চটিয়ে সে কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়।
বাংলাদেশিদের আরও কিছু বৈশিষ্ট্য চট করে চোখে পড়ে। আর তার প্রশংসা না করে উপায় নেই। নিজেদের মধ্যে দলাদলি, গোষ্ঠী কলহ থাকলেও তারা অনেক মিশুকে, সামাজিক ও উষ্ণ। সহজেই অন্যকে আপন করে নিতে পারেন। বিপদে পড়লে বাংলাদেশের মানুষ যত ঝাঁপিয়ে পড়ে আপনার পাশে থাকবে, তত অন্য কাউকে পাবেন না। ভারতীয়দের মধ্যে বাসিন্দা হিসেবে বাঙালি যেমন আছেন, তেমনি রয়েছেন পাঞ্জাবি ও দক্ষিণ ভারতীয়রা। তাদের সম্পর্কে বিশদে পরে কোথাও লেখার ইচ্ছে থাকল।
ব্রুকলিনে পাকিস্তানি এক দোকানে চমৎকার জিলাপি ও শিঙাড়া খেলাম। দেশে থাকলে মনে হয় ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান পরস্পরের শত্রু। মুখে মিঠে মিঠে করে, যত, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি গাই না কেন, পশ্চিমবঙ্গেও হালে রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ নিয়ে বিদ্বেষ বাড়ছে। অনুপ্রবেশ, সীমান্ত হত্যা নিয়ে সত্যি-মিথ্যা মিলিয়ে দুদেশেই জনমনে অসন্তোষ বাড়ছে। বিদেশের মাটিতে আপাত শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান দেখতে বেশ লাগে। আসলে দিনভর পরিশ্রম ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হতে পারে, এখানে ধর্মীয় বিদ্বেষকে মাথা তুলতে দেয় না। জ্যাকসন হাইটসে সন্ধ্যা নামছে। আওয়ামী সমর্থকরা বলে চলেছেনÑ হাসিনার সরকার চিরকাল দরকার... পাশের সেলুনের দরজায় মওলানা ভাসানীর হাসিমুখ। আমেরিকার পক্ষ-বিপক্ষ প্রশ্নেই আওয়ামী লীগ ভেঙে আলাদা হয়ে জন্ম নিয়েছিল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বা ন্যাপ। সেসব তো ইতিহাসের পাঠ। এমন সুন্দর আবহাওয়ায় ইতিহাস চর্চা নিশ্চিত বিরক্তিকর।
লেখক : ভারতীয় প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ও লেখক
ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিল এখন মৃতপ্রায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে না পারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র সরে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা ঘোরানো মতিঝিলে আবাসিক ভবন, শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান তৈরি না হলে দেশের প্রধান এই বাণিজ্যিক অঞ্চল প্রাণ হারাবে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাদের মতে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় অবদান রয়েছে মতিঝিলের টাকার। শুধু তা-ই নয়, মতিঝিলে উপার্জিত অর্থে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডাসহ আরও অনেক দেশে। এখানকার উপার্জিত টাকা অনেকে জমা রেখেছেন সুইস ব্যাংকেও। শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মতিঝিলে। এ যেন মা কাঁকড়ার আত্মত্যাগের গল্প। মা কাঁকড়া বাচ্চাদের আগলে রাখে বুকের ভেতর; যেদিন বাচ্চাগুলো বের হয়ে আসে, সেদিন খোলস ছাড়া মা কাঁকড়ার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। মা কাঁকড়ার মতো দুঃখী ও ত্যাগী বাণিজ্যিক মতিঝিল।
ষাটের দশকে মতিঝিলে গড়ে ওঠে দেশের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট-সিবিডি)। সেই থেকে এখনো দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল মতিঝিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে সরকারি ৮টি, বেসরকারি ৪৫টি এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে ৮টি। এ ছাড়া ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৮১টি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের বেশির প্রধান কার্যালয় চলে গেছে কারওয়ান বাজার, গুলশান-বনানী ও উত্তরায়। নতুন করে যেসব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাচ্ছে, সেগুলোর প্রধান কার্যালয় মতিঝিলের বাইরে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মতিঝিলের আশপাশে পরিকল্পিত কোনো আবাসিক এলাকা, অভিজাত হোটেল, কাজের ফাঁকে অবসর কাটানোর মতো উন্মুক্ত স্থান, শপিং কমপ্লেক্স না থাকায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুবিধার জন্য অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়গুলোও মতিঝিলের বাইরের এলাকা, অর্থাৎ কারওয়ান বাজার, গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে গড়ে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, মধুমিতা সিনেমা হল এবং ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এবং দিলকুশা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবন এবং বঙ্গভবনের পাশের এলাকাজুড়ে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল। বিশ্বের বাণিজ্যিক অঞ্চলের ভবনগুলো সুউচ্চ হয়ে থাকে। কিন্তু মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের পাশেই বঙ্গভবন। নিরাপত্তার কারণে বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর কোনো বহুতল ভবন করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, মতিঝিলের প্লটগুলোর ‘নন-রেসট্রিকটেড’ উচ্চতা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর সাড়ে চারতলার বেশি উচ্চতার ভবনের অনুমোদন মেলে না। ফলে মূল্যবান ওই প্লটগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারছেন না মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ জরাজীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণও রয়েছে কয়েকটি ভবন। একটির সঙ্গে অন্যটি লাগানো। দুটি ভবনের মাঝখানে উন্মুক্ত জায়গা নেই বেশিরভাগ ভবনের। দিলকুশা এলাকার বঙ্গভবন লাগানো ভবনগুলোর মাঝখানেও কোনো ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, মতিঝিল এলাকার ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে। ভাঙাচোরা এবড়োখেবড়ো সড়ক। সড়ক বিভাজকগুলো শ্রীহীন। এগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়নি। প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলে মতিঝিলের আরও করুণ দশা চোখে পড়ে। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার সড়কের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে চটের ছালা দিয়ে ঘেরা খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান এবং নানা পণ্যের অস্থায়ী দোকান। সামান্য বৃষ্টিতে মতিঝিল এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে থাকে পানির নিচে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত। ডিএসসিসি এলাকার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে। খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে মূল্যায়ন করলে মতিঝিল ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। যদিও এটা মানতে নারাজ ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি।
মতিঝিল এলাকার বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিল এলাকার সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএসসিসি। পরিত্যক্ত প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মতিঝিলের সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত ও সড়ক বিভাজকের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা দরকার। পর্যায়ক্রমে এ এলাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কাজ করবে ডিএসসিসি। তবে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের মূল সংস্কার ও আধুনিকায়নের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউককে সেসব বিষয় পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কাজে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা লাগলে করপোরেশন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলে রাজউক। রাজউক সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশক থেকেই মতিঝিলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যিক অঞ্চলে শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান থাকে। আর কাছাকাছি এলাকায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা থাকে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। অভিজাত মানের হোটেল পূর্বাণী গড়ে উঠলেও আশপাশে সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লোকজন গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় থাকেন। মতিঝিলের সৌন্দর্য নিশ্চিত করতে ও আধুনিকায়নে যেসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখা দরকার ছিল রাজউক ও সিটি করপোরেশন সেটা করেনি।
রাজউক সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধরা, উত্তরা। সেই সব এলাকা থেকে মানুষ মতিঝিলে আসেন। শহরের জনসংখ্যা বাড়ায় দিন দিন যানজট বাড়ছে। ওই সব এলাকা থেকে মতিঝিলে আসতে সড়কে এক থেকে দেড় ঘণ্টা চলে যায়। দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার মধ্যে ৩০ শতাংশ সময় সড়কে নষ্ট হচ্ছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে চিন্তা করেছে, তার কর্মস্থল এমন একটা জায়গায় হবে যা তার আবাসনের কাছাকাছি। মতিঝিল থেকে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও ভূমিকা রেখেছে।
কালের বিবর্তনে গুলশান হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক এলাকা। কারওয়ান বাজার, উত্তরায়ও গেছে কিছু। এসব জায়গায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমও সেখানে চলে গেছে। এসব এলাকার আশপাশে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় তাদের বসবাস। আবাসিক এলাকা ছাড়া, পৃথিবীর কোথাও শতভাগ জায়গা শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা অথবা একই শ্রেণির কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার হয় না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, নগর পরিকল্পনায় ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়, যেকোনো জায়গার ব্যবহার হবে ২৪ ঘণ্টা। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল কর্মচঞ্চল থাকে মাত্র ১২ ঘণ্টা। এরপর ওই জায়গার ব্যবহার হয় না। রাতে নীরব ও ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়।
তিনি বলেন, যে মতিঝিলে দিনের বেলায় হাঁটা যায় না; গাড়ির কারণে, যানজটে; সেই মতিঝিলে রাত ৮টার পরে আবার একাও হাঁটা যায় না; অনিরাপদ বোধ হয়। এ জন্য যারা দিনে বাণিজ্য করতে আসেন, তারা মতিঝিল এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন না। অন্যদিকে গুলশান-বনানী এলাকায় থাকলে তারা শপিংয়ে যেতে পারেন, কফি শপে যেতে পারেন। এসব কারণে সারা বিশ্বে ভূমির মিশ্র ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, মতিঝিল এলাকা যেহেতু ইতিমধ্যে তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলেছে, এ জন্য মতিঝিলের জমির শ্রেণিকে মিশ্র ব্যবহার হিসেবে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছে রাজউক। সংশোধিত ড্যাপে সে বিষয়ে নির্দেশনা রাখা হয়েছে। পৃথিবীর নগর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৫০, ৬০ বা ১০০ বছর অন্তর সেসব ঢেলে সাজানো হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়েই মতিঝিল এলাকাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে আবাসিকের বৈশিষ্ট্য দিতে হবে; কনডোমিনিয়াম গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি, ওয়াকওয়ে থাকবে। বসার ব্যবস্থা থাকবে। মতিঝিল এলাকায় ঝিল ছিল, ওই ঝিলকে প্রাধান্য দিয়ে পার্কটি তৈরি করা হবে। বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া মতিঝিলকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিলের আধুনিকায়ন ও ভূমির মিশ্র ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাহলে মতিঝিল সচল থাকবে; তবে ঢাকা শহর বড় হওয়ায় আরও বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে ওঠা ইতিবাচক। এসব পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার ছিল; কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে সে রকম হয়নি। এটা দুঃখজনক। এ জন্য শহরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ঢাকায় এখন অনেকগুলো বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সব অঞ্চলে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় বড় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় মতিঝিলে রয়েছে। তবে ব্যবসা গুলশান, বনানী, উত্তরা, গাজীপুরে সরে যাওয়ায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ব্যবসা কেন্দ্রের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।