
ফার্মগেট থেকে বিমানবন্দর যেতে হলে ঠিক কতক্ষণ লাগতে পারে এটা ছিল অজানা। ভাগ্যের ওপর ভরসা। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে এক ঘণ্টার মধ্যে আর বিধি যদি বাম হয় তাহলে তো ঘণ্টার পর ঘণ্টা বা দিনও লেগে যেতে পারে। বিমানবন্দর সড়কে এই যানজটের কারণে বিদেশগামী যাত্রীদের ফ্লাইট মিস হওয়ার মতো ঘটনা প্রায়ই শোনা যেত। ফলে বিমানের যাত্রীদের সকালের ফ্লাইট ধরতে ওই এলাকায় আগের দিন রাতে তল্পিতল্পা নিয়ে হোটেলে থাকতেও হতো। তবে এ বিষয়টি আজ রবিবার থেকে হয়তো অতীতই হয়ে যাবে।
আজ থেকে ঢাকা প্রবেশ করেছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের যুগে। এখন থেকে ১২ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যেই ফার্মগেট থেকে বিমানবন্দর পৌঁছানো যাবে। আর কুতুবখালী পর্যন্ত পুরোটা চালু হলে রাজধানীতে না নেমেই উত্তর-দক্ষিণ পাড়ি দেওয়া যাবে।
গতকাল শনিবার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দ্বার উন্মোচনের এই বিশেষ মুহূর্তের সাক্ষী হতে আসা নাগরিকরা এমন নির্বিঘ্ন যাতায়াত-সুবিধা পাওয়ার আনন্দ প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত প্রথম অংশের উদ্বোধন করেন। আজ রবিবার থেকে এই যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
গতকাল বিকেল ৩টা ৪২ মিনিটে রাজধানীর কাওলা প্রান্তে বোতাম চেপে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসেওয়ে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর মোনাজাতে অংশ নেন তিনি। এ সময় শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সেতু সচিব মো. মনজুর হোসেন ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এএইচএমএস আকতার।
উদ্বোধনের পর বিকেল ৩টা ৪৪ মিনিটে ছোট বোন শেখ রেহানাসহ প্রধানমন্ত্রী কাওলা প্রান্ত থেকে ফার্মগেটের উদ্দেশে রওনা হন। সরকারপ্রধান নিজ হাতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসেওয়ের টোলপ্লাজায় তার গাড়িবহরের টোল পরিশোধ করেন। গাড়িপ্রতি ৮০ টাকা হারে তিনি ২ হাজার টাকা টোল পরিশোধ করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রীকে এক্সপ্রেসওয়ের বৃত্তান্ত জানায় প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। বিকেল ৩টা ৫৮ মিনিটে ফার্মগেট প্রান্তে এসে পৌঁছায় তার গাড়িবহর। ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পার হতে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহরের লেগেছে মাত্র ১৪ মিনিট।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু হয়ে কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও হয়ে মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী এলাকায় গিয়ে শেষ হবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ঢাকা শহরের যানজট নিরসনসহ ভ্রমণে সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ের লক্ষ্যে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। পুরো প্রকল্পটি শেষ হলে ঢাকা শহরের উত্তর-দক্ষিণ করিডরের সড়কপথের ধারণক্ষমতা বাড়াবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যে উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়েছিল, সেটির পুরো কাজ শেষ হলে মূলত কাক্সিক্ষত সুফল মিলবে।
প্রকল্প সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকার যানজট নিরসনে নেওয়া সবচেয়ে বড় এই প্রকল্পের সংযোগ সড়কসহ দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়েটিতে ১১টি টোল প্লাজা থাকবে। যার পাঁচটিই এক্সপ্রেসওয়ের ওপরে। এর ওপর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার যানবাহন চলাচল করতে পারবে।
সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগে (পিপিপি) তিন ধাপে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রথম ধাপ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত। দ্বিতীয় ধাপ বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত। তৃতীয় ধাপ মগবাজার রেলক্রসিং থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামা : ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে আজ সকাল ৬টা থেকে। উত্তর থেকে দক্ষিণ অভিমুখী যানবাহনের ক্ষেত্রে ওঠার স্থান হবে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা; প্রগতি সরণি এবং বিমানবন্দর সড়কের আর্মি গলফ ক্লাব এবং নামার স্থান হবে বনানী কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ; মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে; ফার্মগেট প্রান্তে ইন্দিরা রোডের পাশে।
দক্ষিণ থেকে উত্তর অভিমুখী যানবাহনের ক্ষেত্রে ওঠার স্থান হবে বিজয় সরণি ওভারপাসের উত্তর এবং দক্ষিণ লেন; বনানী রেলস্টেশনের সামনে এবং নামার স্থান হবে মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে; বনানী কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের সামনে বিমানবন্দর সড়ক; কুড়িল বিশ্বরোড এবং বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনালের সামনে।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর প্রান্ত থেকে ফার্মগেট প্রান্ত পর্যন্ত অংশের উভয় দিকে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে দুই এবং তিন চাকার যানবাহন ও পথচারী চলাচল সম্পূর্ণ নিষেধ। এর ওপর যেকোনো ধরনের যানবাহন দাঁড়ানো ও যানবাহন থেকে নেমে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষেধ। নতুন এই উড়ালপথের মূল সড়কে সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার এবং ওঠানামার র্যাম্পের জন্য সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার। নির্ধারিত টোল পরিশোধ করে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠা-নামা করা যাবে।
বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান : এই প্রকল্পে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (এফডিইই) কোম্পানি লিমিটেড। অংশীদারদের মধ্যে আছে ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড (থাইল্যান্ড) ৫১ শতাংশ, চায়না শ্যানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপ (সিএসআই) ৩৪ শতাংশ এবং সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড ১৫ শতাংশ।
অর্থনৈতিক প্রভাব : প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা শহরের যানজট অনেকাংশে কমে যাবে এবং ভ্রমণের সময় ও খরচ কমবে। সার্বিকভাবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজীকরণ, আধুনিকায়ন হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের চুক্তি সই হয়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে শুরু করে মগবাজার হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার জন্য মোট ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩১টি র্যাম্প রয়েছে। এই র্যাম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৭ কিলোমিটার। প্রকল্পটিতে মোট ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। সে হিসাবে এই এক্সপ্রেসওয়ের প্রতি কিলোমিটার নির্মাণে খরচ হয়েছে ১৯১ কোটি টাকারও বেশি।
প্রকল্পটি ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হলে ঢাকা ইপিজেড ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের যোগাযোগ সহজতর হবে।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, যানজট নিরসন, ভ্রমণে সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ের লক্ষ্যে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাংলাদেশ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। পুরো প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে ঢাকা শহরের উত্তর-দক্ষিণ করিডরের সড়কপথের ধারণক্ষমতা বাড়াবে। তবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে এখন যে অংশটুকু চালু হচ্ছে তাতে যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই প্রকল্প করা হয়েছিল তার পুরো সুফল পাওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, এখন গাড়িগুলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে র্যাম্প দিয়ে শহরে নামবে। সেখানে আগে থেকে শহরে গাড়ির চাপ বাড়বে। আর ট্রাফিক ব্যবস্থা যদি আরও ভালোভাবে মনিটরিং করা না হয়, তাহলে বড় ধরনের ভোগান্তি হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আন্দোলন, ভিসানীতি, নিষেধাজ্ঞা বা বিদেশিদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। নৌকা সারা জীবন উজান ঠেলেই এগিয়ে যাবে। অনেকে আন্দোলনের কথা বলে। আবার ভিসানীতি বা নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখায়। আমার স্পষ্ট কথা, দেশ আমাদের, দেশ আমরা স্বাধীন করেছি। আমাদের এসব ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।
গতকাল শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পুরনো বাণিজ্যমেলা মাঠে দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন-পরবর্তী সুধী সমাবেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, আজকের বাংলাদেশের এত উন্নয়ন কেন হয়েছে? কারণ দেশে একটা গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা রয়েছে। অথচ এখন অনেকে বলেন, তারা গণতন্ত্র উদ্ধার করবেন। আমরা জানি তারা কী গণতন্ত্র উদ্ধার করবেন। এখন আবার তারা অনেকে আন্দোলনের কথা বলে। ভিসানীতি ও নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ভয় দেখায়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজকে যারা আন্দোলনের নামে রোজই আমাদের ক্ষমতা থেকে ফেলে দিচ্ছে, আমি তাদের বলব, মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে। ভয়কে জয় করে বাংলাদেশের জনগণ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে। নৌকা যেভাবে সারা জীবন উজান ঠেলে এগিয়েছে, সেভাবেই এগিয়ে যাবে। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, নৌকা মার্কা ডিজিটাল বাংলাদেশ দিয়েছে। এই নৌকাটি স্মার্ট বাংলাদেশ দেবে। আত্মবিশ্বাস রেখে জনগণের কল্যাণে কাজ করলে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন সম্ভব। এটা আমরা দেখেছি। তবে তার জন্য স্থিতিশীলতা দরকার। ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগের উন্নয়নে এলিভেটেডে এক্সপ্রেসওয়ে দেশের মানুষের জন্য তার আরেকটি উপহার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ বিশেষ আনন্দের দিন। যোগাযোগ খাতের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় যুক্ত হলো নতুন একটি মাইলফলক। আজ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন করা হয়েছে। এটা আপনাদের উপহার হিসেবে দিয়ে গেলাম। ঢাকা শহরের, বিশেষ করে এয়ারপোর্ট, কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, ফার্মগেট, মগবাজার ও কমলাপুর এলাকার যানজট নিরসন এবং যোগাযোগব্যবস্থার দ্রুত উন্নয়নে এটি তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে। এর মাধ্যমে ঢাকা মহানগরবাসীর দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন ঘটল। তিনি বলেন, ঢাকাবাসীর দীর্ঘদিনের যে একটি আকাক্সক্ষা, এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে তা পূরণ হবে। আমরা আজ যত দূর পর্যন্ত (সম্ভব) করলাম, পরবর্তী সময়ে বাকিটাও হয়ে যাবে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সময়কে বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বর্ণযুগ বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি তিনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৭ সময়কালে দেশ ছিল অন্ধকারে। এখন আর সেটা নেই। বাংলাদেশ আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে। আমরা যে ওয়াদা দিয়েছি, সেটা একের পর এক পূরণ করে যাচ্ছি। কবি সুকান্তের ভাষায়, ‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’
শেখ হাসিনা বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আজ একটা সাময়িক সমস্যা চলছে। আমাদের ওপর অর্থনৈতিক ধাক্কা এসেছে। এ জন্য আমি বলেছি, দেশে কোনো অনাবাদি জমি থাকবে না। নিজের ফসল নিজে ফলাব। নিজের খাবার নিজে উৎপাদন করব। কারও কাছে হাত পাতব না। জাতির পিতা বলতেন, ভিক্ষুকের জাতির উন্নতি হয় না। জাতির পিতার এই স্বাধীন দেশের একটি মানুষও গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না। তাদের ঘরবাড়ি করে দিচ্ছি। বেকারদের কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ দিয়ে কাজের সুযোগ করে দিচ্ছি। সরকারি চাকুরেদের মতো সবার জন্য সর্বজনীন পেনশন চালু করেছি। শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎও যেন আলোকিত হয়, আমরা সেই উদ্যোগই নিচ্ছি।
সরকারপ্রধান বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি, বাংলাদেশকে দাবায়ে রাখা যায় না। মেট্রোরেল, উড়ালসড়ক উদ্বোধন করলাম। এগুলো সবই জনগণের স্বার্থে। সারা দেশে যোগাযোগব্যবস্থার অভাবনীয় উন্নতি করেছি। আমরা চাই, আমাদের দেশ আরও এগিয়ে যাবে।
গতকাল বিকেল ৪টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুধী সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা। অনুষ্ঠানস্থলে তাদের স্বাগত জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সুধী সমাবেশস্থলেও প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন এবং মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় তার সঙ্গে শেখ রেহানা, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও শেখ ফজলে নুর তাপস, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি রওশন আরা মান্নান উপস্থিত ছিলেন। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা হাফেজ মুহিবুল্লাহিল বাকী মোনাজাত পরিচালনা করেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সেতু সচিব মো. মনজুর হোসেন, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এরপর ‘ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি’ প্রকল্পের বিষয়ে একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রকল্পটির বিনিয়োগকারী সংস্থার প্রতিনিধি লি গুয়াংজিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ক্ষুদে সংস্করণ উপহার দেন। তিনি তার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বক্তব্যও দেন।
দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে গতকাল শনিবার উদ্বোধন হয়েছে দেশের প্রথম দ্রুতগতির উড়ালসড়ক ‘ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’। আর এই এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন অনুষ্ঠান ও সুধী সমাবেশ ঘিরে গতকাল রাজধানীতে ব্যাপক জনসমাগম হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ বাস, ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহনে জমায়েত হয় উদ্বোধন অনুষ্ঠানস্থল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পুরাতন বাণিজ্যমেলার মাঠে। ফলে বাইরে থেকে আসা অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানীর বড় একটি অংশের সড়কগুলো।
যদিও এমন পরিস্থিতি এড়াতে আগে থেকেই রাজধানীবাসীকে আগারগাঁও এলাকা এড়িয়ে বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ। তবে এই নির্দেশনা উপেক্ষা করে বিভিন্ন গন্তব্যের পরিবহনগুলো। ফলে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত ঘণ্টার ঘণ্টার পর যানজটে আটকে থাকতে হয় প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষকে।
গতকাল কারওয়ান বাজার, ধানমণ্ডি, হাতিরঝিল ও মহাখালীসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এমন পরিস্থিতি ছিল। বেলা ১১টা থেকেই রাজধানীর বাইরে থেকে আসা বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানে হাজারো মানুষকে উদ্বোধন অনুষ্ঠানের দিকে ছুটতে দেখা যায়। এসব যানকে নিয়ম না মেনেই ব্যস্ত সড়কে পার্কিং করে রাখতেও দেখা যায়। কিছু যানকে পুলিশের সামনেই উল্টোপথে চলতে দেখা গেছে। রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায়ও বিভিন্ন রুটের বাস প্রবেশ করে জট লেগে থাকতে দেখা গেছে। ফলে সরকারি ছুটির দিন শনিবারও এসব এলাকায় অস্বাভাবিক যানজট ছিল রাত পর্যন্ত।
আল আমীন নামে এক সরকারি চাকরিজীবী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বিকেলে রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে মগবাজারের উদ্দেশে রওনা হই। বিকেল ৪টায় রওনা দিয়ে রাস্তায় তীব্র যানজটের কারণে সাড়ে ৬টায় মগবাজার পৌঁছাই।’
হাতিরঝিল এলাকার সড়ক স্থবির হয়ে পড়েছিল উল্লেখ করে আল-আমীন বলেন, ‘হাতিরঝিলে মোটরসাইকেল নিয়েও চলার মতো অবস্থা ছিল না। অনুমতি না থাকলেও বাইরের বাস ঢুকে পড়ে সড়কে।’
এর আগে বেলা ১টার দিকে রাজধানীর বাংলামোটর থেকে রামপুরা এলাকায় যান সজীব নামে এক গণমাধ্যমকর্মী। তিনি বলেন, ‘অন্যান্য দিন ২০ থেকে ৩০ মিনিট লাগলেও আজ দুই ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। রাস্তাজুড়ে গাড়ি ছিল। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে থেকে আসা বাসগুলো রাস্তার পাশে পার্কিং করায় যানজট আরও বেড়ে যায়।’
বিভিন্ন গন্তব্যে বের হওয়া এমন অসংখ্য মানুষ গতকাল যানজটের ভোগান্তিতে পড়েন। ফেসবুকে আহসান উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি লেখেন, ‘ঢাকা শহর এখন এক বিভীষিকার মতো। এক মাথায় কিছু থাকলেই পুরো শহর চাক্কা জ্যাম। একটি জরুরি কাজে বের হওয়া ব্যক্তি বা মুমূর্ষু রোগীরও রক্ষা নেই এই বিভীষিকার হাত থেকে। কই সেই আগারগাঁও মাঠে মিটিং, আর কাউলায় উদ্বোধন, অথচ শাহবাগ, নীলক্ষেতে, নিউ মার্কেট, ধানমন্ডি পুরা চাক্কা জ্যাম। এক ইঞ্চিও লড়ে না গাড়ি-ঘোড়া।’
মিরপুরের কল্যাণপুর-টেকনিক্যাল এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পরিদর্শক জিন্নাত আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। এ এলাকায় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’ গতকাল রাত সাড়ে ৮টায় ট্রাফিকের এই কর্মকর্তার সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল তখন তিনি জানান, রাত ৮টা পর্যন্ত রাজধানী থেকে বের হওয়ার পথ গাবতলী-টেকনিক্যাল এলাকায় তখনো বাড়তি যানবাহনের চাপ ছিল। তিনি বলেন, ‘এ এলাকায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হতে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।’
এদিকে পুরাতন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার মাঠে এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন উপলক্ষে যানবাহন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাফিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিল ট্রাফিক পুলিশ। এতে নির্দিষ্ট ব্যানার ও স্টিকার ছাড়া অন্য সব ধরনের যানবাহন বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পুরাতন বাণিজ্যমেলা মাঠ এলাকার রাস্তা এড়িয়ে বিকল্প সড়ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।
ট্রাফিক-তেজগাঁও বিভাগের দেওয়া এই নির্দেশনায় যানবাহনের গমনাগমন ছাড়াও সুষ্ঠু পার্কিংয়ের পরিকল্পনা জানানো হয়। তবে এই নির্দেশনা মানতে দেখা যায়নি কোনো এলাকাতেই। যেসব সড়ক এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছিল সেখানেও বিভিন্ন পরিবহন প্রবেশ করতে দেখা গেছে। এসব এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও নিয়ম না মেনে চলা পরিবহনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মুনিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সমাবেশের জন্য ঢাকার বাইরে থেকে বাস শহরে প্রবেশ করেছে। তারা আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বিশেষ বিবেচনায় সমাবেশস্থলের দিকে যায়। এ ছাড়া যেসব রুটে জট সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে আমরা যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।’
বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কাজ পেতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা নানা উপায়ে লবিং করছে; বিশেষ করে তৃতীয় টার্মিনালের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর কে কাজ পাবে তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। বিমানও চাইছে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কাজটি ধরে রাখতে। আবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠান ডানাটাও চাইছে কাজ করতে। তবে কর্তৃপক্ষ চাইছে জাপানকে দিতে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ সব কটি বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কাজ করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। এরই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ইতিমধ্যে ১ হাজার কোটি টাকার সরঞ্জাম আনা হয়েছে। আরও ৭০০ কোটি টাকার সরঞ্জাম কেনার পরিকল্পনা করেছে সংস্থাটি। কিন্তু গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কাজ পেতে হলে এয়ার নেভিগেশন অর্ডার (এএনও) সার্টিফিকেট করার কথা থাকলেও বিমান তা করেনি বলে অভিযোগ করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। এতে বছরে সংস্থাটির অন্তত ১০০ কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে লাইসেন্স করতে বিমানকে চিঠি দিয়েছে বেবিচক। এরপরও লাইসেন্স করার আগ্রহ না দেখালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কাজ দেওয়া হবে অন্য কোনো সংস্থাকে। বিমানের পাশাপাশি বেসরকারি এয়ারলাইনসকেও বাধ্যতামূলক লাইসেন্স নিতে বলা হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে দেশ রূপান্তরকে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, ১৯৭২ সাল থেকে দেশের সব কটি বিমানবন্দরে এককভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কাজ করে আসছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। নিজেদের ফ্লাইটের পাশাপাশি ৩২টি ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের সেবা দিচ্ছে রাষ্ট্রের এ সংস্থাটি। তবে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসসহ বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো নিজস্বভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করে আসছে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং এবং কার্গো পরিষেবার মাধ্যমে বিমান প্রতি বছর প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকা আয় করছে। থার্ড টার্মিনালের দায়িত্ব পেলে ৪ হাজার কোটিতে গিয়ে ঠেকবে আয়ের পরিমাণ। কিন্তু সংস্থাটির কর্মকান্ড নিয়ে বেবিচক অনেকটা নাখোশ। রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানটি এএনও সার্টিফিকেট না নিলেও কোনো ব্যবস্থাও নেয়নি বেবিচক। এ জন্য বেবিচক বিমানকে একটি চিঠি দিয়েছে সম্প্রতি। পাশাপাশি ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস ও নভো-এয়ারলাইনসকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে লাইসেন্স করে ফেলতে। তবে নবনির্মিত থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা প্রদানকারীদের বেলায় বাধ্যতামূলক লাইসেন্স গ্রহণের কড়াকড়ি আরোপ করেছে বেবিচক কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেবিচকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই বিমান গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করছে। অথচ তারা লাইসেন্স নিতে টালবাহানা করছে। এতে আমাদের বছরে অন্তত ১০০ কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে। লাইসেন্স করতে বিমানকে কয়েক দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয় হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করেছি। কারণ লাইসেন্স করলেও সরকারের কোষাগারেই অর্থ আসবে। নিয়মের মধ্যে থেকেই গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করতে হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তৃতীয় টার্মিনাল কর্মকান্ড পুরোদমে হওয়ার পর আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের দায়িত্ব বিমানকে না দিয়ে জাপানকে দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি চূড়ান্ত হতে আরও দেড় বছর লাগতে পারে। এর মধ্যে বেবিচক দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠানকে সাময়িকভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের দায়িত্ব দেবে। এতে বিমানের রাজস্ব আয় কমে আসবে।
জানতে চাইলে বেসাসরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, তৃতীয় টার্মিনালের কাজ প্রায় শেষের দিকে। ৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। তবে পুরোদমে যাত্রী সেবা দেওয়া হবে আগামী বছরের মার্চ মাসে। কাজ শেষ হওয়ার পর গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে জাপানের অভিজ্ঞতা সবচেয়ে বেশি। তারাই এর দায়িত্ব পেতে পারে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস গ্রাউন্ড হ্যাল্ডেলিং করছে। তবে তারা এখনো লাইসেন্স নেয়নি। যারাই গ্রাউন্ড হ্যাল্ডেলিংয়ের দায়িত্ব পালন করবে, তাদের অবশ্যই লাইসেন্স নিতে হবে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং লাইসেন্স নেওয়ার গেজেট ২০১৮ সালে করা হয়েছে। কেউ এখনো লাইসেন্স নেয়নি। এখন থেকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করতে হলে বাধ্যতামূলক লাইসেন্স নিতে হবে। লাইসেন্স ছাড়া কেউ কাজ পাবে না। নীতিমালা অনুযায়ী আবেদন করলে বিমানও কাজ পেতে পারে।
বেবিচক সূত্র জানায়, তৃতীয় টার্মিনালের মেইনটেন্যান্স ও অপারেশনের কাজ জাপানকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের পিপিবি কর্তৃপক্ষ একটি ট্রান্সজেকশন যোগ করেছে, যার মাধ্যমে পুরো কাউন্সিল কন্ডিশন নিয়ে তারা সংযুক্ত হবে। জাপানের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিচালনার দক্ষতা রয়েছে। আর তাদের তত্ত্বাবধানেই গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং, কার্গো হ্যান্ডেলিংসহ সবই অপারেশনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ বেবিচককে জানিয়েছে, তাদের কাছে এখন অভিজ্ঞ কর্মী ও আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে, যা থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করার জন্য উপযুক্ত। সম্প্রতি গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং পরিষেবার জন্য ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন থেকে নিবন্ধন এবং স্বীকৃতির প্রশংসাপত্র পেয়েছে। বিমান এই দায়িত্ব পেলে রাজস্ব পুরোটা দেশেই থাকবে। ইতিমধ্যে এক হাজার কোটি টাকার সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। আরও ৭০০ কোটি টাকার সরঞ্জাম কেনার পরিকল্পনা আছে বিমানের। একটি উড়োজাহাজ যখন কোনো বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন ও অবতরণ করে, তখন সেটিকে পার্কিং বেতে নেওয়া, বোর্ডিং ব্রিজ না থাকলে উড়োজাহাজের দরজার সিঁড়ি লাগানো, যাত্রীদের মালপত্র ওঠানো-নামানো, নতুন যাত্রী তোলার আগে উড়োজাহাজের ভেতর পরিষ্কার করা, এমনকি চেকইন কাউন্টারে দায়িত্ব পালনও গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের অন্তর্ভুক্ত বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে বেবিচক ও বিমানের দুই কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিমানের রাজস্ব আয়ের বড় একটি অংশ আসে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং থেকে। বছরে আয় করছে ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকা। তবে সংস্থটির সেবার মান ভালো নয়। তারপরও বিমান সেটি ধরে রাখতে চাইছে। সক্ষমতা থাকলেও বিদ্যমান টার্মিনালের অবকাঠামো দুর্বলতায় কাক্সিক্ষত সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। থার্ড টার্মিনাল চালু হলে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের পুরো সক্ষমতা কাজে লাগাতে পারব আমরা। কিন্তু মনে হয় আমরা তা পাব না। জাপানকেই দেওয়া হবে। আরব আমিরাতের একটি সংস্থাও গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের দায়িত্ব পেতে নানাভাবে চেষ্টা করছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও শফিউল আজিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সঠিকভাবেই গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করছি। বেবিচক যে নিয়ম করেছে তা আবশ্যই মানা হবে। লাইসেন্স নেওয়ার চেষ্টা চলছে।’ তিনি বলেন, ‘গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ে বিমানের ৫০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিছু বিষয়ে যেসব অভিযোগ ছিল, তা বর্তমানে নেই। কর্মীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হওয়ার পর সেখানেও আমরা গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং যাতে করতে পারি, সে জন্য নীতিনির্ধারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।’
প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হেরেও বিশ্বকাপ জিতেছিল লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। সাকিব আল হাসানের বাংলাদেশও ঘুরে দাঁড়াবে এশিয়া কাপে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই তত্ত্বে বিশ^াসীর সংখ্যা কম নয়। শ্রীলঙ্কার কাছে ৫ উইকেটে হার দিয়ে বাংলাদেশের এশিয়া কাপ শুরু হলেও লাহোরে ঠিকই ঘুরে দাঁড়াবে সাকিবের দল, সব সমীকরণকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পৌঁছে যাবে সুপার ফোরে এবং এরপর ফাইনালে; ক্রিকেটসংক্রান্ত নানান ফেসবুক গ্রুপে আর মন্তব্যের ঘরে এই মতবাদে বিশ্বাসীদের দেখা মেলে। প্রশ্ন হচ্ছে, দলের ক্রিকেটাররা কতটা বিশ্বাস করেন, আফগানিস্তানকে তারা আজ হারিয়ে দেবেন হেসেখেলে?
শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় সারির বোলিং আক্রমণের সামনেই যাদের মুখ থুবড়ে পড়েছে, আফগানিস্তানের ধারালো বোলিং আক্রমণের সামনে তাদের পরিণতি কী হতে পারে তার প্রমাণ কিছুদিন আগেই দেখা গেছে চট্টগ্রামে। সিরিজের প্রথম দুটো ওয়ানডেতেই বাংলাদেশ করেছিল যথাক্রমে ১৬৯-৯ ও ১৮৯। কাল বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে যেন সেটাই মনে করিয়ে দিলেন, ‘বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলিং আক্রমণ আফগানিস্তানের, বিশেষ করে সীমিত ওভারের খেলায়। তাদের বিশ্বমানের স্পিনাররা আছে, ভালো সব সিম বোলারও আছে। আমরা তাদের ব্যাপারে ভালো করেই জানি। কারণ সম্প্রতি তাদের বিপক্ষে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছি।’
চট্টগ্রামের ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের মতো নিয়মিত ও অভিজ্ঞ দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে নিয়েও ফজল হক ফারুকির তোপ সামাল দেওয়া যায়নি। তার ওপর রশিদ খানের লেগস্পিন, মুজিব-উর-রহমানের অফস্পিন তো আছেই। পাল্লেকেলেতে মাহেশ থিকশানার অফস্পিনের বিষেই তো নীল হলো বাংলাদেশ।
আর্জেন্টিনা-তত্ত্বের বাইরে গিয়ে বাংলাদেশকে সত্যিকারের ভরসা জোগাতে পারে আফগানদের দুর্বল মিডল অর্ডার। ইব্রাহিম জাদরান আর রহমানউল্লাহ গুরবাজের উদ্বোধনী জুটিটা দারুণ। গত কয়েকটা ম্যাচে দুইবার তাদের উদ্বোধনী জুটি ২০০ ছাড়িয়েছে, বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৫৬ রানের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে ২২৭ রানের জুটি গড়েছেন এই দুজন। তবে এই দুজনের পর যারা ব্যাট করতে নামছেন, তারা ঠিক পারছেন না ছন্দটা ধরে রাখতে। পাকিস্তানের বিপক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে ৪০ ওভারে ২২৭ রান এলেও ৫০ ওভার শেষে সংগ্রহটা ৩০০ রানের বেশি হয়নি, তার আগের ম্যাচে জাদরান আর গুরবাজ অল্পতে আউট হওয়ার পর আফগানদের ইনিংসও গুটিয়ে যায় মাত্র ৫৯ রানে। চট্টগ্রামে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতেও আফগানদের টপ ও মিডল অর্ডার গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন তাসকিন-শরিফুলরা। কাল লাহোরে সেটাই করতে পারলে সুযোগ আছে বাংলাদেশের, তবে প্রতিপক্ষের রানটা বড় হয়ে গেলে রান রেট বাড়িয়ে নেওয়া এবং জেতা দুইয়ের সুযোগই কমে যাবে, যা আসরে টিকে থাকার জন্য বাংলাদেশের খুবই দরকার।
লিটনের জ¦রে দলে সুযোগ পাওয়া এনামুল হক কি একাদশে সুযোগ পাবেন? তাকে জায়গা করে দিতে কে বাদ পড়বেন, আগের দিন ক্যারিয়ার সেরা ১৬ রানের ইনিংস খেলা নাঈম শেখ নাকি অভিষেকেই শূন্য রানে আউট হওয়া তানজিদ তামিম? হাথুরুসিংহে বললেন, উইকেট দেখে আজ সকালে নেবেন সিদ্ধান্ত, ‘আসলে ওদের মতো (লিটন ও তামিম) অভিজ্ঞ দুজন যখন একসঙ্গে দলের বাইরে চলে যায়, তখন কিছুই করার থাকে না। একজনের চোট আর আরেক জন অসুস্থ, তাই আমাদের কিছুই করার নেই। যারা দলের সঙ্গে আছে, তাদের নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। ওরা প্রতিভাবান বলেই দলে জায়গা পেয়েছে। আমরা মাত্রই এখানে এলাম, এখনো উইকেটই দেখা হয়নি। নিশ্চয়ই উইকেটের চরিত্রে বদল আসবে (আগের ম্যাচ থেকে), তখন আমরা দলে পরিবর্তনের কথা ভাবব।’
আফগানদের সঙ্গে ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজে হারের পর দুটো টি-টোয়েন্টিই জিতেছে বাংলাদেশ। ব্যাটে-বলে দারুণ পারফর্ম করেছিলেন অধিনায়ক সাকিব। তখনো তিনি হয়তো জানতেন না, এশিয়া কাপে ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে তাকেই আসতে হবে। আর্জেন্টিনা-ভক্ত সাকিব আল হাসানকে তাই নিতে হবে মেসির ভূমিকা। কাতার বিশ^কাপে সৌদি আরবের কাছে হারের পর মেসির জাদুতে আর্জেন্টিনা যেভাবে একের পর এক বাধা পেরিয়ে সব সমীকরণ মিলিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, বাংলাদেশকেও এশিয়া কাপে এগিয়ে যেতে হলে লাগবে সাকিবের জাদুকরি ভূমিকা। তাহলেই আর্জেন্টিনা-তত্ত্ব প্রমাণ করে জিততে পারবে বাংলাদেশ।
অধিনায়ক হিসেবে এশিয়া কাপের ওয়ানডে সংস্করণে এখনো কোনো ম্যাচ জেতেননি সাকিব। ২০১০ সালে শ্রীলঙ্কার দাম্বুলায় হয়ে যাওয়া এশিয়া কাপের ৩ ম্যাচে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। ১৩ বছর পর পাল্লেকেলেতেও ৫ উইকেটে হার। সাকিব কি পারবেন বাংলাদেশকে জিতিয়ে, আসরে টিকিয়ে রেখে মেসি হতে? ভক্তের শক্তি কতটা লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে তারই প্রমাণ মিলবে আজ।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে চলতি বছর মে মাসে। গত শুক্রবার ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে দেশটি। নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে এ নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করার ঘোষণার তিন দিন পার হলেও কারও নাম প্রকাশ হয়নি। তবে বিভিন্ন মহলে নানা দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের নামে আলোচনা এখন সর্বত্র।
কারা যুক্তরাষ্ট্রের এ ভিসা নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন বা পড়তে যাচ্ছেন তা নিয়ে রাজনৈতিক, কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ ও ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্বকারী একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, যেহেতু নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে এর লক্ষ্য নির্বাচনী ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারাই। তারাই ভিসানীতির আওতায় পড়বেন, এটাই স্পষ্ট।
তারা আরও বলেন, ভিসানীতি প্রয়োগের কথা জানালেও যুক্তরাষ্ট্র কারও নাম প্রকাশ করেনি। তবুও বলা যেতে পারে, কাদের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ করবে পশ্চিমা এ প্রভাবশালী দেশটি।
এ ব্যক্তিরা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়ই একটা তালিকার বেশিরভাগ নামই চূড়ান্ত করে ফেলেছে। অল্পসংখ্যক বাকি থাকতে পারে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে সেগুলোরও চূড়ান্ত করা হবে। যেখানে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জড়িত প্রতিষ্ঠান, দপ্তর, অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা থাকতে পারেন।
বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে ধারণা পাওয়া গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির উদ্দেশ্যই যেহেতু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে, ফলে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা যারা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকবেন তারাই ভিসানীতির আওতায় আসবেন। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারাও থাকতে পারেন। থাকতে পারেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রাজনৈতিক নেতা, তারা যেকোনো দলের হতে পারেন। অল্পসংখ্যক ব্যবসায়ীও থাকতে পারেন।
জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন,‘ভিসানীতির বিষয়টি আমেরিকা প্রশাসন পরিষ্কার করে ঘোষণা না করলেও বুঝিয়ে দিয়েছে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারেন, এমন যে কেউ এ ভিসানীতির আওতায় পড়তে পারেন। যেমন রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাহী প্রশাসন, জুডিশিয়ারি অর্থাৎ যারাই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট থাকবেন, অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যাহত করবেন তারাই এর আওতায় আসবেন।’ তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের এর আওতায় পড়ার সুযোগ নেই। তবে হ্যাঁ, নির্বাচন ব্যাহত করার ছোট্ট সুযোগ তাদের হাতেও থাকে, তারা যদি জড়িত হন, ভিসানীতির আওতায় পড়বেন।’
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ভিসানীতির চেয়েও আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে নেগোশিয়েশন জরুরি। কে ভিসানীতির আওতায় পড়ল, কে পড়ল না এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঐক্য।’ তিনি বলেন, ‘ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়ায় কারা রয়েছেন সেটা আমেরিকা প্রশাসন ঘোষণা না করলেও বোঝা খুব জটিল কিছু নয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘আমেরিকা যেহেতু ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে তাদের ভিসানীতি, ফলে পরিষ্কার হয়ে গেছে কারা পড়তে পারেন এর আওতায়। যারা নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, নিশ্চয়ই তারাই এর আওতায়।’
বিভিন্ন পর্যায়ের ও পেশার নিয়োজিত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনৈতিক নেতারা ভিসানীতিকে তেমন আমলে না নিলেও বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা ও সিভিল প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ভেতরে আমেরিকার ভিসানীতি ভীষণ ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে এর নানা কারণ জানা গেছে। এর মধ্যে বিদেশে টাকা পাচার, ব্যবসাবাণিজ্য, পরিবারের সদস্যদের বিদেশে থাকা এসব কারণে বেশি ভীতিতে ফেলেছে তাদের। আবার একটা অংশ বিদেশে কিছু না থাকলেও ভিসানীতির আওতায় পড়লে ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়ার ভয় পাচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করায় যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে পারেন এমন দুুশ্চিন্তা যেমন কারও কারও মনে ভর করেছে, তেমনি ভিসানীতিতে পড়ার সুযোগ নেই তারাও দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। কারণ এই শ্রেণির লোকজন মনে করছেন, কখনো যদি যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান, তখন যদি ভিসা না হয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন এমন নামের তালিকাও চারদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে। আরও অগ্রসর হয়ে কোনো কোনো মহল লম্বা তালিকা হাতে নিয়ে ঘুরছে। তবে এসব নামের তালিকার উৎস বা সূত্র নিশ্চিত নয় বলে কেউ কেউ বিষয়টি গুজব মনে করছেন। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের বাইরে প্রায় সবাই ভিসানীতি আতঙ্কে ভুগছেন।
একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ভিসানীতিকে জয়-পরাজয় হিসেবে প্রচার করে এলেও ভেতরে ভীতি সবারই রয়েছে। কারণ পশ্চিমা দেশে তাদের অনেকেই ইতিমধ্যে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছেন। ফলে রাজনীতির বাইরেও ব্যক্তিজীবনের প্রয়োজনে ভিসানীতি তাদের ওপর যদি প্রভাব ফেলে, সে আশঙ্কা তো আছেই।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সব বিষয়ে আমি কথা বলি না। আমি একটাই কথা বলব, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আওয়ামী লীগ সে কাজই করছে।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘ভিসানীতি আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এর সঙ্গে গণতন্ত্র ও নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।’ তিনি বলেন, গণতন্ত্রের বিষয়ে বলতে হলে আরও অনেক বিষয় রয়েছে। এ ভিসানীতি কারা লক্ষ্যবস্তু জানতে চাইলে ইনু বলেন, ‘এটি নিয়ে মাথাব্যথা নেই আমাদের। তারাই বলতে পারবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কারও পরামর্শে সরকার কোনো প্রতিষ্ঠান অদলবদল করবে না, পরিবর্তনও আনবে না।’
আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সংস্থাটি বলছে, আজ রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ ছাড়া বর্ধিত পাঁচ দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
আজ সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সকাল ৯টা থেকে আজ রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়; ঢাকা ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুই এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত) দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে সৈয়দপুরে ২৫৯ মিলিমিটার। এ ছাড়া দেশের উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাতের মধ্যে দিনাজপুরে ১৯১, রংপুর ১৩৮, ডিমলায় ৯৯, তেঁতুলিয়ায় ৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সীতাকুণ্ডে ৩৫.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়া ও রাজারহাটে ২৩.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের উদ্যোগে আজ রাজধানীর উত্তরা ও যাত্রাবাড়ীতে দুটি শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটায় সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে যাত্রাবাড়ী মোড়সংলগ্ন শহীদ ফারুক সড়কে শান্তি সমাবেশ শুরু হবে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুরুল আমিন রুহুল এমপির সভাপতিত্বে সমাবেশে কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
বিকেল ৩টায় উত্তরা আজমপুর আমির কমপ্লেক্সের সামনে শুরু হবে আরেকটি শান্তি সমাবেশ। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের এ সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন।
এতে সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। সঞ্চালনা করবেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি।
রাজধানীর মুগদায় পৃথক ঘটনায় মিথিলা আক্তার মেঘলা (১৭) নামে এক কিশোরীসহ দুজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য আজ সোমবার সকালে মরদেহ দুটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়।
জানা গেছে সবুজবাগের বেগুনবাড়ি দক্ষিণগাঁও এলাকার আক্কাস আলী ও সুমি বেগম দম্পতির মেয়ে মিথিলা। তার মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে মুগদা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আঙ্গুরা আক্তার সীমা উল্লেখ করেন, রোববার দিবাগত রাত সাড়ে দশটার দিকে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মিথিলা লাশ উদ্ধার করেন তিনি। মিথিলার শরীরে কোথাও কোন রকমের চিহ্ন না থাকলেও তার গলায় অর্ধচন্দ্রাকৃতির কালো দাগ রয়েছে
তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত ৪-৫ মাস আগে প্রেমের সম্পর্কে বিয়ে করেন মিথিলা। তবে বিয়ের বিষয়টি তাদের দুই পরিবারেই কেউই মেনে নিচ্ছিল না। এ নিয়ে পারিবারিক মনোমালিন্য চলছিল। সেই অভিমানে মিথিলা গতকাল রোববার বাথরুমে গলায় ফাঁস দেন। বিস্তারিত তদন্ত চলছে।
এদিকে উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাহিদ হাসান জানান, গতকাল রোববার সাড়ে দশটার দিকে একই হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করা হয় অজ্ঞাতনামা (৩৪) এক ব্যক্তির মরদেহ। তিনি ভবঘুরে প্রকৃতির। গত ২১ তারিখ রাতে এক পথচারী তাকে উদ্ধার করে মুগদা মেডিকেলে ভর্তি করেন। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়। তার পরিচয় সনাক্তের চেষ্টা চলছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’