
নির্বাচনের আগে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি এ সময়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম না বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সেই সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমতে পারে। বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
গত ১৪ বছরে সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কারণে শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎসুবিধার আওতায় এসেছে। পাশাপাশি বিদ্যুতের যে ভয়াবহ লোডশেডিং ছিল তা এখন আর নেই। তবে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়লেও জ্বালানি সংকটের কারণে সাশ্রয়ী দামে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসেবা পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। মূলত বিদ্যুৎ খাতে টেকসই উন্নয়ন না হওয়ার কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বিদ্যুৎ নিয়ে প্রায় এক যুগ ধরে ফুরফুরে মেজাজে থাকা সরকার ধাক্কা খায় গত বছরের শেষ দিকে। ১৪ বছর আগের সেই লোডশেডিং আবার মাঝেমধ্যে ফিরে আসায় মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। নানা কৌশলে সরকার সেই পরিস্থিতি সামাল দিয়ে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক রেখেছে। নির্বাচনের আগে যাতে নতুন করে পরিস্থিতির অবনতি না হয়, সে জন্য সরকার সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা।
জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নতুন কোনো সংকট তৈরি না হলে বিদ্যুতের এই স্বাভাবিক পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে। কারণ আর কিছুদিন পরই শীতের প্রভাবের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাবে। পাশাপাশি বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা আরও বাড়বে। ইতিমধ্যে ভারতের আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোদমে উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করেছে। এ ছাড়া এস আলমসহ আরও কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। সবকিছু ঠিক থাকলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে বলে আমরা আশা করি।’
চলতি বছরের শেষ দিকে অথবা জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। যদিও নির্বাচন নিয়ে নানা রকম সংশয়, আলোচনা-সমালোচনা চলছে। তারপরও নির্বাচনের আগে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছে সরকার।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে টানা তৃতীয় মেয়াদে দেশ পরিচালনাকারী এই সরকার প্রথম মেয়াদে ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে। তখন দেশে ২৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে থেকে গ্রিডভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা বেড়ে ১৫৩ এবং বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৫ হাজার মেগাওয়াট (আমদানি ও অনগ্রিড নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ)। যদিও এখন পর্যন্ত গত ১৯ এপ্রিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। চলতি বছর দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১৭ হাজার মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, তামপাত্রা কমতে থাকার কারণে নির্বাচনের আগমুহূর্তে বিদ্যুতের চাহিদাও অনেকটাই কমে যাবে। তা ছাড়া এই সময়ে নির্মাণাধীন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে বেশ কিছু কেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। ফলে জাতীয় গ্রিডে আমদানিসহ আরও প্রায় ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হওয়ার কথা রয়েছে। নতুন উৎপাদনে আসা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে এস আলম ও ভারতের আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্রের আপাতত কয়লা নিয়ে সংকট হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রেও কয়লার সংকট থাকবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে পায়রার বকেয়া নিয়ে যে জটিলতা ছিল তা অনেকটাই কেটে গেছে। এরপরও যদি ডলার কিংবা জ্বালানি নিয়ে সংকট দেখা দেয় তাহলে এই খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে যেভাবেই হোক বিদ্যুতের উৎপাদন স্বাভাবিক রাখবে সরকার। সব মিলে লোডশেডিং তেমন একটা থাকবে না। তবে বিতরণ ও সঞ্চালন লাইনের ত্রুটির কারণে এলাকাভেদে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের আশঙ্কা রয়েছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, কিছুদিন আগে বিদ্যুতের যে লোডশেডিং ছিল তা কিছুটা সামাল দিতে পেরেছে সরকার। এর মূল কারণ হলো বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাওয়া। ঈদের আগে প্রচন্ড যে গরম ছিল তা এখন অনেক কমে গেছে। তারপরও বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ নিয়ে চলমান সমস্যার মূল কারণ হলো ডলার ও জ্বালানির সংকট। নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শীতের সময় এমনিতেই বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকবে। সরকার চাইলে তখন তিন থেকে চার মাসের জন্য যেকোনো মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পারবে। কিন্তু পরে আবার পরিস্থিতি আগের অবস্থায় চলে যাবে। কারণ বিদ্যুৎ খাতের যে উন্নয়ন তা টেকসই নয়। ফলে নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র এলেও জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। দিন দিন বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ার কারণে সাশ্রয়ী দামে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে পারছে না সরকার।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বাড়ানোর কারণে সাধারণ মানুষের মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আইএমএফের ঋণ নিতে তাদের শর্ত পূরণ করতে ভর্তুকি সমন্বয়ের নামে গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী আদেশে চলতি বছর গ্রাহকপর্যায়ে তিন দফায় বিদ্যুতের দাম অন্তত ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্যাসের দামও বাড়িয়েছে সরকার। গত জানুয়ারিতে চার শ্রেণির গ্রাহকের গ্যাসের দাম অস্বাভাবিক হারে ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এমন পরিস্থিতিতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানো হচ্ছে, যখন নিত্যপণ্যের চড়া দামে মানুষ সংকটে রয়েছে। ডলার সংকটসহ নানা কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি কমে যাওয়ার পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও কমেছে। একদিকে বিদ্যুৎ-সংকট, অন্যদিকে দাম বৃদ্ধি এসব নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপি ও নেতাকর্মী তাদের নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে বেশ অস্বস্তিতে পড়েন। সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে আগে থেকেই। নতুন করে আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত এ বছর বিদ্যুতের দাম আর না বাড়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা যাচ্ছে এখন পর্যন্ত।
এদিকে গত ২ মে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) জমা দেওয়া মিটারবিহীন আবাসিক গ্যাস গ্রাহকদের বিল পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত তিতাস গ্যাসের আবেদনের বিষয়টি স্থগিত রয়েছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন জানিয়েছে, অন্যান্য বিতরণ কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে পেট্রোবাংলা সমন্বিত প্রস্তাব জমা দিলে তারপর নিয়ম অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তিতাস গ্যাসের ওই প্রস্তাব দেওয়ার পর দেশ রূপান্তরসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। কারণ তিতাসের ওই আবদার পূরণ হলে আবাসিকে মিটারবিহীন এক এবং দুই চুলার গ্রাহকের ক্ষেত্রে অন্তত ৩৯ থেকে ৪৭ শতাংশ গ্যাসের দাম বাড়বে। আপাতত গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পদক্ষেপ থেকে সরে এসেছে সরকার।
নির্বাচনের আগে নতুন করে আবার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঝুঁকি সরকার নেবে না বলে মনে করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা।
গ্যাস-বিদ্যুতের দাম না বাড়লেও জ্বালানি তেলের দাম কমতে পারে এমন আভাস পাওয়া গেছে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতির দিকে। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত জ্বালানি তেলের দাম কমতে থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে গোল্ডম্যান স্যাকস। দাম কম থাকায় দীর্ঘ সময় ধরেই তেল বিক্রি করে লাভ করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন। পাশাপাশি জ্বালানি তেল আমদানির ওপর ৫ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আগে জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমাতে পারে সরকার।
গত ২৯ মে রাজধানীতে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ (এফইআরবি) আয়োজিত এক সেমিনারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জ্বালানির দাম কমানোর বিষয়ে ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, ‘জনগণকে স্বস্তি দিতে তেল ও কয়লার দামের সমন্বয় দরকার। এসব বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যে আলোচনা করছি।’
প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়নের ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে বড় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বলা যায়, লুটপাটের প্রকল্পে পরিণত হয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আওতাধীন ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি)’। সবচেয়ে বড় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে দরপত্রে ও কেনাকাটায়।
আধুনিক ব্যবস্থাপনা ও ডেইরি পণ্য উৎপাদনে খামারিদের সহায়তার জন্য কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হলেও তা প্যাকেটবন্দি অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ৯২ শতাংশ খামারি যন্ত্রপাতি পায়নি। ঘাসচাষের নামেও টাকা ভাগাভাগির অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে এ প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ জমা পড়েছে।
প্রকল্পভুক্ত ৪৬৫টি উপজেলায় ঘাসচাষের জন্য প্রতি বছর ৬৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কোথায়ও নামেমাত্র ঘাসচাষ হয়। বাকি উপজেলাগুলোতে ঘাসচাষের টাকা ভাগাভাগি করে নেওয়া হচ্ছে। একজন ডিপিডি প্রতি উপজেলা থেকে ঘাসচাষ বাবদ ৫ হাজার টাকা নেন। প্রায় ২৩ লাখ টাকা এ খাত থেকেই আত্মসাৎ করা হচ্ছে। সরেজমিনে বেশিরভাগ উপজেলাতেই ঘাসচাষের প্রমাণ মিলবে না।
প্রকল্পের ইমার্জেন্সি অ্যাকশন প্ল্যান অনুযায়ী করোনায় প্রকল্প-এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত খামারি ও খামারি সংগঠনের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ৬০০টি হস্তচালিত (ঘণ্টায় ৬০ লিটার উৎপাদনক্ষম), ৫০০টি মেশিনচালিত (ঘণ্টায় ১৬৫ লিটার উৎপাদনক্ষম) ও ৪০০টি মেশিনচালিত (ঘণ্টায় ৫০০ লিটার উৎপাদনক্ষম) মিল্ক ক্রিম সেপারেটর মেশিন কেনা হয়েছে ১০ কোটি ৮২ লাখ টাকায়। মেশিনগুলো ২০২১ সালের আগস্টে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার অফিসে পাঠানো হয়। এখনো অনেক মেশিন বিতরণ করা হয়নি। মানসম্পন্ন না হওয়ায় ৮০ শতাংশ মেশিন অকেজো হয়ে আছে।
এলডিডিপি প্রকল্পের আওতায় ৩৬০টি ডিজিটাল আল্ট্রাসাউন্ড মেশিন কেনা হয়েছে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে। নিম্নমানের হওয়ায় তা চালু হয়নি, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার অফিসেই পড়ে আছে। খামারে ভ্যাকসিনেশনের জন্য সিরিঞ্জ, নিডল, কুলবক্সসহ নানা জিনিসপত্র কেনার ২ কোটি ১০ লাখ ৬১ হাজার টাকার আদেশ হয়েছে এবং বিল মেটানো হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে সেগুলোর বড় অংশ মাঠপর্যায়ে সরবরাহ না করে কালোবাজারে বেচে দেওয়া হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে ল্যাবরেটরির জন্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের কাজের জন্য ৭৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকার কার্যাদেশ হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়েছে কি না কেউ বলতে পারে না। ওইসব ল্যাবে আগেই উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বায়োরেক্টর, ল্যাপটপ ও কম্পিউটার ছিল। প্রকল্পের আওতায় ৩০০ লিটার ক্যাপাসিটির ৫২৪টি ডিপ ফ্রিজ কেনা হয় ১ কোটি ৯৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা ব্যয়ে। ডিপ ফ্রিজগুলো সরবরাহের দুই বছর পরেই খামারে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এলডিডিপি প্রকল্পের মাধ্যমে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং সাপোর্ট অব ডিএলসির জন্য ৩০টি ল্যাপটপ ও কম্পিউটার (প্রিন্টার, স্ক্যানার ও অনুষঙ্গিক জিনিসপত্র) কেনা হয় ৪৮ লাখ ৯৫ হাজার ৫৮০ টাকা ব্যয়ে। কিন্তু সেগুলো সংশ্লিষ্টদের না পাঠিয়ে সরাসরি প্রকল্প থেকে গ্রহণ করা হয়। প্রতিটি ল্যাপটপের দাম দেখানো হয় ১ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এগুলো বাজারে কোনো অবস্থাতেই ৮০ হাজার টাকার বেশি হবে না।
করোনাকালে ইউনিয়ন পর্যায়ে সরবরাহের জন্য প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২ কোটি টাকার হেলথ সেফটি আইটেম (সার্জিক্যাল মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোভস, অ্যান্টিসেপটিক, ব্লিচিং পাউডার প্রভৃতি) কেনা হয়। সেসব সরবরাহ করা হয়েছে কি না, তার প্রমাণ নেই।
প্রকল্পের আওতায় বিভাগীয় ও জেলা দপ্তরে ব্যবহার্য দ্রবাদি কেনার জন্য প্রতি কোয়ার্টারে ৩০ হাজার টাকা করে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। অথচ একই কেনাকাটার জন্য রাজস্ব খাত থেকেও বরাদ্দ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্প বরাদ্দের অর্ধেক টাকা একজন ডিপিডির মাধ্যমে কমিশন হিসেবে নিয়ে নেওয়া হয়।
তবে উপ-প্রকল্প পরিচালক (ডিপিডি) ড. এবিএম মুস্তানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দরপত্র আহ্বান, মূল্যায়ন ও কার্যাদেশ পৃথকভাবে করা হয়। একাধিক কর্মকর্তা এর সঙ্গে জড়িত থাকেন। কোনো ব্যাপারেই আমার ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই। অনিয়মের সঙ্গেও আমি জড়িত নই।’
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) গত জুনের পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে প্রকল্পে নানা অনিয়ম ও অব্যস্থাপনার কথা। বলা হয়েছে, ৯২ শতাংশ খামারি প্রকল্প থেকে কোনো যন্ত্রপাতি পায়নি। প্রকল্প থেকে শুধু ক্রিম সেপারেটর মেশিন দেওয়া হয়েছে, যেসবের বেশিরভাগ খামারি ব্যবহার শুরু করতে পারেনি। খামারিদের মাত্র ৯.৪ শতাংশ প্রকল্প থেকে গবাদি পশুর জন্য ৫০ কেজি দানাদার সুষম খাদ্য পেয়েছে। ৭৯ শতাংশ খামারি গবাদি পশুর জন্য কৃত্রিম পদ্ধতির প্রজনন সেবা পায়। ৫০.৪ শতাংশ খামারে খুরারোগ, এফএমডি ও মুখের লালা রোগ দেখা দিয়েছে। ৯৮.২ শতাংশ খামারি স্বাস্থ্যসেবা, ৯৭.৫ শতাংশ খামারি কৃমিনাশক ও ৮৪.৭ শতাংশ খামারি ভ্যাকসিন পেয়েছে। জরিপকৃত খামারিরা প্রকল্প থেকে কোনো পোলট্রির খাদ্য পায়নি। ২৯.৮ শতাংশ খামারি প্রকল্প থেকে কভিড-প্রণোদনা পেয়েছে।
৪ হাজার ২৮০ কোটি ৩৬ লাখ টাকার এলডিডিপি প্রকল্প ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়েছে। এ প্রকল্পে ৩ হাজার ৮৮৫ কোটি ৭৩ লাখ ৭ হাজার টাকার অর্থায়ন করেছে বিশ্বব্যাংক। সাড়ে চার বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি ৪৭.০৮ শতাংশ। আগামী ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মেয়াদ আরও ২২ মাস বাড়ছে বলে সূত্র জানিয়েছে। প্রাণিজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, মার্কেট লিংকেজ ও ভ্যালু-চেইন সৃষ্টি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিদের জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, নিরাপদ প্রাণিজ খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাত ও বিপণন এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে প্রাণিসম্পদ খাতে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন এ প্রকল্পের লক্ষ্য। অনিয়মের কারণে লক্ষ্য অর্জন এখনো অনেক দূরে।
সূত্র জানায়, এলডিডিপি প্রকল্পের ডিপিপিতে অনুমোদিত প্যাকেজ ২৮৬টি। প্যাকেজ জি-৩৯-এর জন্য ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ১৭ কোটি ১২ লাখ ২৪ হাজার টাকায় দরপত্র পায় বাংলাদেশ সায়েন্স হাউজেস। ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই প্যাকেজ-২৭-এর জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। প্রায় ৪ কোটি টাকায় কার্যাদেশ পায় এমএস মাসতুরা এন্টারপ্রাইজ। একই বছরের ১৫ জুলাই মাসতুরা এন্টারপ্রাইজ ১ কোটি ২৫ লাখ ৫৭ হাজার ৯৮৭ টাকায় প্যাকেজ ডব্লিউ ৮৮-এর কাজ পায়।
আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্যাকেজের দরপত্র প্রক্রিয়া প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়নি।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। হাসপাতাল গঠিত মেডিকেল বোর্ড বারবার পরামর্শ দিচ্ছে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে। পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার আবেদন করা হলেও সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে না। এদিকে গত রবিবার খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য।
গতকাল সোমবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত মাসে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে কর্মসূচি পালন করেছি। তিনি এখন এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত মাসের ৯ তারিখে ভর্তি করা হলেও এখন পর্যন্ত তার অবস্থার উন্নতি হয়নি। চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে বারবার পরামর্শ দিচ্ছেন। দ্রুত তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে না পাঠালে এক দফার কর্মসূচির সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে কর্মসূচির ঘোষণা আসবে।’
বিএনপির ওই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে ১৬ আগস্ট সারা দেশে মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দোয়া মাহফিলের কর্মসূচি পালন করেছি। ১৭ আগস্ট খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে সারা দেশে প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছে। একই দাবিতে ১৯ আগস্ট সারা দেশে পদযাত্রা এবং ১৮ আগস্ট সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ঢাকা মহানগরসহ সব মহানগরে গণমিছিলের কর্মসূচি পালন করেছি।’
বিএনপি নেতা ও সাবেক এক আমলা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিহিংসাপরায়ণ এক নেতা। খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তার চিকিৎসায় দলের গঠিত মেডিকেল বোর্ড এমনকি এভারকেয়ার হাসপাতাল গঠিত মেডিকেল বোর্ড বারবার তাগাদা দিচ্ছে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে। পরিবারের সদস্যরা একাধিকবার সরকারের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। সরকার কোনো পাত্তা দিচ্ছে না।’ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘গত শনিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিঙ্গাপুরে চেকআপ শেষে দেশে ফিরেছেন। আগামীকাল (আজ) স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের দেশে ফেরার কথা রয়েছে। স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্য মির্জা আব্বাস আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে চলে আসবেন। সবারই চিকিৎসা হচ্ছে, শুধু হচ্ছে না বিএনপি চেয়ারপারসনের।’
এদিকে চেকআপ শেষে দেশে ফিরে গত রবিবার রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি গতকাল সোমবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভালো নেই চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দ্রুত তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন হাসপাতাল গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা। কিন্তু সরকার ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি দিচ্ছে না। হাসপাতাল গঠিত মেডিকেল বোর্ড ও ব্যক্তিগত চিকিৎসক দল অবিলম্বে চেয়ারপারসনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।’
খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপি চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য গত ৯ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল চেয়ারপারসনকে। এরপর থেকে হাসপাতাল গঠিত মেডিকেল টিমের সদস্যরা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে। কবে নাগাদ বাসায় ফিরতে পারবেন তা এখনই বলা যাচ্ছে না।’
গত রবিবার রাতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য সাংবাদিকদের বলেন, ‘খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। কয়েকটি টেস্ট করা হয়েছে তার। এসব টেস্টের ফলাফল দেখে উদ্বিগ্ন মেডিকেল বোর্ড। তিনি জানান, খালেদা জিয়ার পেটে পানি বেড়েছে। ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স দেখা দিয়েছে। এ কারণে ঘুম হচ্ছে না। অবস্থা ভালো নয়। কয়েক দিন ধরে অবনতি হচ্ছে। বোর্ড নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার লিভারের সমস্যা জটিল হচ্ছে। এটার আসলে শতভাগ চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়। বোর্ড সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু একাধিক জটিলতা থাকায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাকে বারবার মাল্টিপল ডিজিজ সেন্টারে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রেশার ও ডায়াবেটিসসহ স্বাস্থ্যের প্রায় সবকটি প্যারামিটারই ওঠানামা করছে।’
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ২০১৮ সালে কারাদ- দেওয়া হয়েছিল খালেদা জিয়াকে। কিন্তু বয়স ও অসুস্থতার কারণে এবং পরিবারের সদস্যদের আবেদন বিবেচনা করে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাকে শর্ত সাপেক্ষে জামিন দেওয়া হয়েছিল। শর্ত ছিল, তিনি কোনো রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ বা অন্য কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন না। তাকে বাড়িতে থাকতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।
এদিকে অসুস্থতার কারণে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে বিএনপি। তারা জানিয়েছে, চেয়ারপারসনকে বিদেশে নিয়ে উন্নতমানের চিকিৎসা করানো প্রয়োজন।
নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান মামলার বিচার কার্যক্রম স্থগিতের অনুরোধ জানিয়ে বিশ^নেতাদের খোলাচিঠির বিষয়ে পাল্টা প্রতিবাদ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করবেন না বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া। বিচারের নামে ড. ইউনূসকে বিচারিক হয়রানি করা হচ্ছে বলে মনে করছেন রাষ্ট্রপক্ষের এই আইন কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, ড. ইউনূসের মামলা নিয়ে বিশ্ব নেতাদের উদ্বেগ ও বিবৃতি সঠিক। তাই বিবেকের তাড়নায় এর পাল্টা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করবেন না। তবে পাল্টা বিবৃতি বা এতে স্বাক্ষরের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে আইন কর্মকর্তাদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলে দেশ রূপান্তরকে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। অন্যদিকে সাধারণ আইনজীবীদের ব্যানারে বিবৃতিতে স্বাক্ষর নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক আইন কর্মকর্তা। এদিকে গ্রামীণ টেলিকমের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় কল কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষে আরেকজন আইনজীবী নিযুক্ত করায় শুনানি না করার ঘোষণা দিয়েছিলেন এই মামলায় প্রথম নিযুক্ত আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। গতকাল সোমবার তিনি দেশ রূপান্তরকে এ কথা বললেও পরে নতুন করে শুনানিতে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমি একক আইনজীবী হিসেবে আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকে শুনানি করব।’
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জ্যেষ্ঠ প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলীকে গত সপ্তাহে নিযুক্ত করে বলে গত রবিবার দেশ রূপান্তরকে তিনি (হায়দার আলী) জানান। তবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকলে এ মামলায় শুনানিতে অস্বীকৃতি জানান অ্যাডভোকেট খুরশীদ। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।
২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা (অ্যাটর্নি জেনারেল) ছাড়াও এই মুহূর্তে উচ্চ আদালতে তিনজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, ৬০ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও ১৪৯ জন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলসহ রাষ্ট্রপক্ষে ২১৩ জন আইন কর্মকর্তা মামলা পরিচালনা করছেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত রবিবার তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের আইন কর্মকর্তাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বিবৃতিতে স্বাক্ষরের নির্দেশনা পান। এ জন্য গতকাল বিকেল ৪টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। তবে তিনি স্বাক্ষর না করে নিজেকে বিরত রাখেন। বিবেকের তাড়নায় এবং ব্যক্তিগতভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান। এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া বলেন, ‘১০৭ জনের বেশি নোবেল বিজয়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে যে বিবৃতি দিয়েছেন, তাদের সঙ্গে আমি একমত। আমার কাছে মনে হয়েছে এটা (ড. ইউনূসের বিচার) একধরনের বিচারিক হয়রানি। তাই আইনজীবীদের এ ধরনের প্রতিবাদ বিবৃতি সঠিক মনে হয়নি।’
রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘শ্রম আদালতে প্রচুর পুরাতন মামলা বিচারাধীন আছে। এটার (ড. ইউনূসের) আগেও অনেক মামলা আছে। কিন্তু এই মামলা দ্রুতগতিতে চলছে। এটা নিয়ে আমার প্রশ্ন রয়েছে। যে কারণে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করিনি।’
এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আমরা কোনো বিবৃতি দিইনি। তৈরিও করিনি। এটা উনি (এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া) কেন করেছেন তা উনিই বলতে পারবেন। তার হয়তো কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কিন্তু তাকে কি কেউ বলেছে যে স্বাক্ষর করতেই হবে? তিনি বিবৃতিটা দেখাক না। তাহলেই তার বক্তব্য সঠিক কি না, জানা যাবে। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে কেউ তো বিবৃতিই তৈরি করেনি।’
সাধারণ আইনজীবীদের ব্যানারে বিবৃতিতে স্বাক্ষর নেওয়া হচ্ছে কি না, তা তার জানা নেই বলেও জানান এ এম আমিন উদ্দিন। তবে রাষ্ট্রপক্ষের একাধিক আইন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ড. ইউনূসের মামলা নিয়ে বিশ্বনেতাদের বিবৃতির প্রতিবাদে সাধারণ আইনজীবীদের ব্যানারে বিবৃতিতে স্বাক্ষর নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক আইনজীবী তাতে স্বাক্ষর করেছেন।
ড. ইউনূসের মামলায় আইনজীবী নিয়োগের বিষয়ে অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, দুই বছর আগে এই মামলার শুরু থেকে বাদীপক্ষে তাকে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। মামলাটি এখন সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। এই পর্যায়ে এসে মামলায় একপক্ষে যদি দুজন আইনজীবী থাকেন তাহলে তিনি শুনানি করবেন না। নিজেকে প্রত্যাহার করে নেবেন।
এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘শুনেছি মন্ত্রণালয় থেকে একজন আইনজীবী দেওয়া হয়েছে। এখন যদি দুজন আইনজীবী থাকেন, তাহলে আমি মামলা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতিমধ্যে বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। তারা কী সিদ্ধান্ত দেয়, সেটি দেখব। যদি ওই সিদ্ধান্তই (দুজন আইনজীবী) বহাল থাকে, তাহলে আমি শুনানি করব না।’
গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা এবং গণছুটি নগদায়ন না করাসহ শ্রম আইনের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ এনে ড. ইউনূস, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, দুই পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার শ্রম আদালতে মামলা করে কল কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। গত ৬ জুন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর আদেশ দেয়। অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন ড. ইউনূস। গত ২৩ জুলাই অভিযোগ গঠন বাতিল প্রশ্নে রুল দেয় হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত ৩ আগস্ট আপিল বিভাগ মামলার কার্যক্রম বাতিল প্রশ্নে রুলের শুনানি করতে বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ নির্ধারণ করে দিয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুল নিষ্পত্তি করতে আদেশ দেয়। ১৭ আগস্ট হাইকোর্ট রুল খারিজ করে রায় দেয়। ২২ আগস্ট ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ড. ইউনূস ও শাহজাহানকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত।
‘কমিটি-বাণিজ্য’ ঘোরতর এ অভিযোগ গত দুই যুগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যারাই হয়েছেন তাদের সঙ্গেই জড়িয়ে থেকেছে। কিছু অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে, কিছুর মেলেনি। তবে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ ঘটার প্রমাণ ভূরি ভূরি। এ সত্য চিরন্তন সত্যের রূপ পেয়েছে গত ১৪ আগস্ট জামায়াত নেতা একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে আমৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের যে পরিমাণ নেতা শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে সামাজিক বিভিন্ন যোগাযোগমাধ্যমে বক্তব্য-বিবৃতি প্রকাশ করেছেন, তাতে ছাত্রলীগে ‘আগাছা’ ঢুকেছে এবং ছাত্রলীগে কমিটি-বাণিজ্য বর্তমান এ সত্যকেই প্রমাণ করেছে এবং করছে।
শুধু কমিটি-বাণিজ্যই ছাত্রলীগের এ অধঃপতনের মূল কারণ নয়। সংগঠনের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালনকারী নেতারা বলেন, আদেশ-নির্দেশ, অনুরোধ ও আর্থিক লেনদেনের মধ্য দিয়ে নেতা বানানোর পথ সৃষ্টি করেই ছাত্রলীগে আগাছা-পরগাছার প্রবেশ ঘটছে। তারা বলেন, নেতা হওয়ার পূর্বশর্ত মাঠের অ্যাকটিভিটিজ। নেতা হওয়ার ক্ষেত্রে এখন সেটি গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ছাত্রলীগে ভর করার সুযোগ পেয়েছে। আগাছার চাষই হয়েছে গত দুই যুগে।
সাবেক নেতারা বলেন, গত দুই যুগে অনুরোধ ও আর্থিক লেনদেনের মধ্য দিয়ে নেতা বানানোর চর্চা হয়েছে বেশি। আর নেতা হয়েই সুযোগে তারা জানান দিচ্ছে, ‘আমরা ছাত্রলীগ নই’। এ প্রসঙ্গে খেদোক্তি করেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুলতান মনসুর ও সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।
গত ২০ আগস্ট সাঈদী-অনুসারী ১৫ নেতাকে অব্যাহতি দিয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ। জেলা সভাপতি দীপঙ্কর কান্তি দে ও সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান রিপন স্বাক্ষরিত ওই অব্যাহতিপত্রে ১৫ জনকে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া জামালপুরে ১৮, চট্টগ্রামে ১৬, পাবনায় ৭, নরসিংদীতে ৬, সাতক্ষীরায় ৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লোহাগড়ায় ৯, ফরিদপুরে ৯ জনকে এবং গতকাল সোমবার কুমিল্লায় ছাত্রলীগের ২৫ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে এ সংগঠনের চার শতাধিক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কার অব্যাহত রয়েছে। আগাছা-পরগাছামুক্ত করে সুশৃঙ্খল সংগঠনে পরিণত করার জন্য একাধিকবার তাগিদ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তারপরও থেমে নেই নীতি-আদর্শে অবিশ্বাসী ছাত্রনেতাদের ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ। সাঈদীর মৃত্যুতে মুখোশের আড়াল থেকে আগাছাদের আসল চেহারা বেরিয়ে পড়েছে।
সাঈদীর পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ শুরু করে একটি বিশেষ মহল। তাদের আদ্যোপান্ত খুঁজে দেখা যায় শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির ধারায় বিশ্বাস করে যে সংগঠন, মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেছে যে সংগঠন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে সংগঠনের কর্মীরা পরিচালিত হয়েছে সে সংগঠনের কর্মীরাই কিনা যুদ্ধাপরাধের, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে দণ্ডিত সাঈদীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে! এদের পরিচয়ের মূলে তাহলে কী?
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগাছার ছাত্রলীগে ভর করার ঘটনা দুঃখজনক। বিভিন্ন সময় ওদের হাতে সুযোগ এসেছে, ওরা ঢুকে পড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘স্রোতের সঙ্গে রুই-কাতলা, বোয়াল ও পুঁটি মাছ ঢুকে পড়ে। ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্বকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, এসব আগাছা নেতাদের তালিকা করার এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার এ প্রসঙ্গে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ ঘটনাকে শুধু অনুপ্রবেশের ঘটনা হিসেবে দেখলে সংশ্লিষ্টরা দায় চাপানোর এবং খালাস পেয়ে যাওয়ার সুযোগ পান। তাতে ঠিক শিক্ষা নেওয়া হয় না। এতে খণ্ডচিত্র প্রকাশিত হয়। সাঈদীর মৃত্যুর পর যে চিত্র পাওয়া গেছে, এ সংগঠনের নেতাকর্মীদের কর্মকাণ্ডে যা দেখা গেছে তা দুঃখজনক।’
অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘পুরো ঘটনাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখলে হবে না। আমি বলতে চাই, সাধারণ শিক্ষার্থীরা সংগঠনে ঢুকেছে অতি সাধারণভাবে, আকৃষ্ট হয়ে বা পছন্দ করে। আজকের চিত্র দেখে আমি বলতে চাই, নীতি-আদর্শের চাষবাস না হওয়া একটা নেতিবাচক আবহ তৈরি করেছে ছাত্রলীগে। যারা ঢুকে পড়েছে তাদের ভেতরে নীতি-আদর্শের প্র্যাকটিস করানো হলে ফল অন্যরকমও হতে পারত।’
ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের দাবি, টানা ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষমতার প্রভাব, জানান দেওয়ার মানসিকতা, ক্ষমতা ধরে রাখার মহাযুদ্ধ। তৃণমূলে এ যুদ্ধ সবচেয়ে বেশি। ফলে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করেন সবাই। ‘নিজের লোক’কে পদ পাইয়ে দিতে আর কিছু দেখা হয় না। তারা দেখে ‘ভাইলীগ’ কতটা শক্তিশালী হলো।
প্রয়োজনে সুবিধাবাদীদের চিহ্নিত করতে ছাত্রলীগে শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা। তারা বলছেন, যুদ্ধাপরাধীর পক্ষ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সহানুভূতি প্রকাশ করে কেউ ছাত্রলীগ করতে পারবে না। সব সাংগঠনিক ইউনিটকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এ ধরনের সবাইকে বহিষ্কার করতে বলা হয়েছে।
ছাত্রলীগে এত আগাছা কেন এমন প্রশ্নে সংগঠনটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিচয় আড়াল করার চেষ্টা করে সুযোগ নেওয়ার কারণে অনুপ্রবেশ ঘটেছে। তবে আমরা সমন্বিত উদ্যোগে শক্ত বাঁধ তৈরি করছি। আমরা অভিযান শুরু করেছি। ওদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। পবিত্র ধর্মকে হাতিয়ার করা এ দেশে বেশ পুরনো। রাজনৈতিক চেতনার ওপর ধর্মচেতনা এ কথাই এরা ছাত্রদের মাথায় ঢুকিয়েছে। ছাত্রলীগে শুদ্ধি অভিযান শুরু হবে। এ ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি।’
ছাত্রলীগের শীর্ষ এ নেতা বলেন, ‘ফেইসবুক থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং বিভিন্ন তথ্য যাচাই-বাছাই হচ্ছে। সরকারি দল হওয়ায় অনুপ্রবেশকারী থাকেই। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে ছাত্রলীগ তার নৈতিক শুদ্ধতা প্রমাণ করেছে।’
সাদ্দাম আরও বলেন, ‘অতীতে সংগঠনে অনুপ্রবেশকারী ও মুখোশ পরা কাউকে চিহ্নিত করা হয়নি। এখন আমরা চিহ্নিত করছি, ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।’
বগুড়ার শেরপুরে এক নারী পোশাককর্মীকে অপহরণের পর ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ ওঠা কয়েকজনের কাছ থেকে ‘শাস্তি’ হিসেবে এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন সমাজপতি (মাতব্বর)। পরে জরিমানার সেই টাকা ভুক্তভোগী নারীর পরিবারকে না দিয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এতে করে ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। কিন্তু গ্রামের প্রভাবশালী মাতব্বরদের ভয়ে আইনের আশ্রয়ও নিতে পারছেন না তারা। ভুক্তভোগী নারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। গ্রামের বিচার না মানলে অনেক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। এমনকি আমাদের গ্রামছাড়া করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।’
জানা গেছে, উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের কানাইকান্দর পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দা এক ব্যক্তির মেয়ে (২০) ঢাকায় একটি তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তিনি ছুটি নিয়ে গত ৩১ আগস্ট রাত সাড়ে ১২টার দিকে শেরপুর শহরের ধুনট মোড় টার্মিনালে এসে নামেন। এরপর বাড়ি যাওয়ার জন্য একটি অটোরিকশায় ওঠেন। এ সময় তার সঙ্গে যাত্রীবেশী আরও চার বখাটেও ওঠে ওই অটোরিকশায়। শেরুয়া বটতলা বাজার এলাকায় অটোরিকশাটি পৌঁছালে যাত্রীবেশী বখাটেরা পোশাককর্মী ওই নারীকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করা শুরু করে। এ সময় শারীরিকভাবেও হেনস্তা করা হয় তাকে। পরে অটোরিকশা থেকে ওই তরুণীকে নামিয়ে পাশের হাওয়াখানা নামে একটি এলাকায় নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় তারা। তখন তরুণী চিৎকার শুরু করলে পালিয়ে যায় বখাটেরা। এ ঘটনার দুদিন পর গত শনিবার রাতে ধড়মোকাম গ্রামের আব্দুল মোমিন, ছহির উদ্দিনসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও দুজনকে আসামি করে শেরপুর থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়।
এদিকে যাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, তাদের বাঁচাতে গ্রামের প্রভাবশালী তিন-চারজন মাতব্বরসহ একটি চক্র মাঠে নামে। এরই ধারাবাহিকতায় গ্রাম্য সালিশ ডেকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ ওঠা বখাটেদের কাছ থেকে এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করে তারা। কিন্তু জরিমানার টাকা ভুক্তভোগীর পরিবারকে না দিয়ে মাতব্বররা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী তরুণীর মা অভিযোগ করে বলেন, ‘শুধু দুই হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে আমার মেয়েকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর কোনো টাকা পাইনি আমরা। পাশের গ্রামের প্রভাবশালী মাতব্বর শফি কামাল ও ছহির উদ্দিন এসে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে গেছেন। এমনকি ঘটনাটি নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করার হুমকিও দিয়ে গেছেন।’ মাতব্বরদের হুমকির মুখে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জানিয়ে তিনি বলেন, তারা আইনের আশ্রয় নেবেন।
ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে মাতব্বর শফি কামাল ও ছহির উদ্দিন নিজেদের নির্দোষ দাবি করে সাংবাদিকদের বলেন, তাদের (তরুণী ও যাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ) মধ্যে একটু ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। সেটি সমাধান করে দেওয়া হয়েছে। শ্লীলতাহানির চেষ্টা বা জরিমানা আদায়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এসব গুজব বলেও উড়িয়ে দেন তারা।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) ফেরদৌস বলেন, ‘ঘটনাটি আমি শুনেছি। তবে আপস-মীমাংসার বিষয়ে আমার জানা নেই। থানায় অভিযোগ জমা পড়েছে। আইন অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা শেরপুর থানার এসআই রবিউল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগটি তদন্তাধীন রয়েছে। তাই কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে ভুক্তভোগীর মা দাবি করেছেন, তাকে বিভিন্ন কায়দায় হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। সেটি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিল এখন মৃতপ্রায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে না পারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র সরে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা ঘোরানো মতিঝিলে আবাসিক ভবন, শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান তৈরি না হলে দেশের প্রধান এই বাণিজ্যিক অঞ্চল প্রাণ হারাবে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাদের মতে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় অবদান রয়েছে মতিঝিলের টাকার। শুধু তা-ই নয়, মতিঝিলে উপার্জিত অর্থে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডাসহ আরও অনেক দেশে। এখানকার উপার্জিত টাকা অনেকে জমা রেখেছেন সুইস ব্যাংকেও। শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মতিঝিলে। এ যেন মা কাঁকড়ার আত্মত্যাগের গল্প। মা কাঁকড়া বাচ্চাদের আগলে রাখে বুকের ভেতর; যেদিন বাচ্চাগুলো বের হয়ে আসে, সেদিন খোলস ছাড়া মা কাঁকড়ার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। মা কাঁকড়ার মতো দুঃখী ও ত্যাগী বাণিজ্যিক মতিঝিল।
ষাটের দশকে মতিঝিলে গড়ে ওঠে দেশের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট-সিবিডি)। সেই থেকে এখনো দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল মতিঝিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে সরকারি ৮টি, বেসরকারি ৪৫টি এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে ৮টি। এ ছাড়া ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৮১টি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের বেশির প্রধান কার্যালয় চলে গেছে কারওয়ান বাজার, গুলশান-বনানী ও উত্তরায়। নতুন করে যেসব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাচ্ছে, সেগুলোর প্রধান কার্যালয় মতিঝিলের বাইরে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মতিঝিলের আশপাশে পরিকল্পিত কোনো আবাসিক এলাকা, অভিজাত হোটেল, কাজের ফাঁকে অবসর কাটানোর মতো উন্মুক্ত স্থান, শপিং কমপ্লেক্স না থাকায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুবিধার জন্য অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়গুলোও মতিঝিলের বাইরের এলাকা, অর্থাৎ কারওয়ান বাজার, গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে গড়ে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, মধুমিতা সিনেমা হল এবং ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এবং দিলকুশা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবন এবং বঙ্গভবনের পাশের এলাকাজুড়ে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল। বিশ্বের বাণিজ্যিক অঞ্চলের ভবনগুলো সুউচ্চ হয়ে থাকে। কিন্তু মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের পাশেই বঙ্গভবন। নিরাপত্তার কারণে বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর কোনো বহুতল ভবন করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, মতিঝিলের প্লটগুলোর ‘নন-রেসট্রিকটেড’ উচ্চতা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর সাড়ে চারতলার বেশি উচ্চতার ভবনের অনুমোদন মেলে না। ফলে মূল্যবান ওই প্লটগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারছেন না মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ জরাজীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণও রয়েছে কয়েকটি ভবন। একটির সঙ্গে অন্যটি লাগানো। দুটি ভবনের মাঝখানে উন্মুক্ত জায়গা নেই বেশিরভাগ ভবনের। দিলকুশা এলাকার বঙ্গভবন লাগানো ভবনগুলোর মাঝখানেও কোনো ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, মতিঝিল এলাকার ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে। ভাঙাচোরা এবড়োখেবড়ো সড়ক। সড়ক বিভাজকগুলো শ্রীহীন। এগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়নি। প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলে মতিঝিলের আরও করুণ দশা চোখে পড়ে। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার সড়কের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে চটের ছালা দিয়ে ঘেরা খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান এবং নানা পণ্যের অস্থায়ী দোকান। সামান্য বৃষ্টিতে মতিঝিল এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে থাকে পানির নিচে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত। ডিএসসিসি এলাকার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে। খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে মূল্যায়ন করলে মতিঝিল ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। যদিও এটা মানতে নারাজ ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি।
মতিঝিল এলাকার বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিল এলাকার সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএসসিসি। পরিত্যক্ত প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মতিঝিলের সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত ও সড়ক বিভাজকের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা দরকার। পর্যায়ক্রমে এ এলাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কাজ করবে ডিএসসিসি। তবে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের মূল সংস্কার ও আধুনিকায়নের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউককে সেসব বিষয় পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কাজে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা লাগলে করপোরেশন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলে রাজউক। রাজউক সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশক থেকেই মতিঝিলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যিক অঞ্চলে শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান থাকে। আর কাছাকাছি এলাকায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা থাকে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। অভিজাত মানের হোটেল পূর্বাণী গড়ে উঠলেও আশপাশে সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লোকজন গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় থাকেন। মতিঝিলের সৌন্দর্য নিশ্চিত করতে ও আধুনিকায়নে যেসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখা দরকার ছিল রাজউক ও সিটি করপোরেশন সেটা করেনি।
রাজউক সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধরা, উত্তরা। সেই সব এলাকা থেকে মানুষ মতিঝিলে আসেন। শহরের জনসংখ্যা বাড়ায় দিন দিন যানজট বাড়ছে। ওই সব এলাকা থেকে মতিঝিলে আসতে সড়কে এক থেকে দেড় ঘণ্টা চলে যায়। দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার মধ্যে ৩০ শতাংশ সময় সড়কে নষ্ট হচ্ছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে চিন্তা করেছে, তার কর্মস্থল এমন একটা জায়গায় হবে যা তার আবাসনের কাছাকাছি। মতিঝিল থেকে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও ভূমিকা রেখেছে।
কালের বিবর্তনে গুলশান হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক এলাকা। কারওয়ান বাজার, উত্তরায়ও গেছে কিছু। এসব জায়গায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমও সেখানে চলে গেছে। এসব এলাকার আশপাশে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় তাদের বসবাস। আবাসিক এলাকা ছাড়া, পৃথিবীর কোথাও শতভাগ জায়গা শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা অথবা একই শ্রেণির কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার হয় না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, নগর পরিকল্পনায় ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়, যেকোনো জায়গার ব্যবহার হবে ২৪ ঘণ্টা। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল কর্মচঞ্চল থাকে মাত্র ১২ ঘণ্টা। এরপর ওই জায়গার ব্যবহার হয় না। রাতে নীরব ও ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়।
তিনি বলেন, যে মতিঝিলে দিনের বেলায় হাঁটা যায় না; গাড়ির কারণে, যানজটে; সেই মতিঝিলে রাত ৮টার পরে আবার একাও হাঁটা যায় না; অনিরাপদ বোধ হয়। এ জন্য যারা দিনে বাণিজ্য করতে আসেন, তারা মতিঝিল এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন না। অন্যদিকে গুলশান-বনানী এলাকায় থাকলে তারা শপিংয়ে যেতে পারেন, কফি শপে যেতে পারেন। এসব কারণে সারা বিশ্বে ভূমির মিশ্র ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, মতিঝিল এলাকা যেহেতু ইতিমধ্যে তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলেছে, এ জন্য মতিঝিলের জমির শ্রেণিকে মিশ্র ব্যবহার হিসেবে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছে রাজউক। সংশোধিত ড্যাপে সে বিষয়ে নির্দেশনা রাখা হয়েছে। পৃথিবীর নগর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৫০, ৬০ বা ১০০ বছর অন্তর সেসব ঢেলে সাজানো হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়েই মতিঝিল এলাকাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে আবাসিকের বৈশিষ্ট্য দিতে হবে; কনডোমিনিয়াম গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি, ওয়াকওয়ে থাকবে। বসার ব্যবস্থা থাকবে। মতিঝিল এলাকায় ঝিল ছিল, ওই ঝিলকে প্রাধান্য দিয়ে পার্কটি তৈরি করা হবে। বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া মতিঝিলকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিলের আধুনিকায়ন ও ভূমির মিশ্র ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাহলে মতিঝিল সচল থাকবে; তবে ঢাকা শহর বড় হওয়ায় আরও বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে ওঠা ইতিবাচক। এসব পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার ছিল; কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে সে রকম হয়নি। এটা দুঃখজনক। এ জন্য শহরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ঢাকায় এখন অনেকগুলো বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সব অঞ্চলে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় বড় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় মতিঝিলে রয়েছে। তবে ব্যবসা গুলশান, বনানী, উত্তরা, গাজীপুরে সরে যাওয়ায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ব্যবসা কেন্দ্রের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।