
বিদ্রোহের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড রেখে ‘আনসার ব্যাটালিয়ন আইন, ২০২৩’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
বিদ্রোহ সংগঠন বা বিদ্রোহ সংগঠনের প্ররোচনায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড রাখা হয়েছে খসড়া আইনে। আগের আইনে বিদ্রোহের সাজার বিষয়টি ছিল না। নতুন আইনে অপরাধ বিচারের জন্য সংক্ষিপ্ত আনসার আদালত এবং বিশেষ ছাড় আদালত নামে দুটি আদালত গঠিত হবে।
২০২২ সালের ২৮ মার্চ এ আইনটি মন্ত্রিসভা নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল। বর্তমান আইনে কিছু ক্ষেত্রে শাস্তির বিধান নেই। বিদ্রোহ কিংবা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির বিষয়গুলোও সুনির্দিষ্ট নয়। সেগুলোকে সুনির্দিষ্ট করে আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
নতুন আইনের বিভিন্ন অপরাধের মধ্যে রয়েছে সরকারি বা ব্যাটালিয়ন সদস্যের সম্পত্তি চুরি করা, যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে প্যারেডে অনুপস্থিত থাকা, কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা, দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রদর্শন করা। এ ক্ষেত্রে চাকরি থেকে বরখাস্ত, চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অপসারণের শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
খসড়া আইনে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে দুটি আদালত রাখার বিধান রাখা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, একটি হবে সংক্ষিপ্ত আনসার আদালত, আরেকটি হবে বিশেষ আনসার আদালত। সংক্ষিপ্ত আদালত একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালকের নেতৃত্বে হবে। গুরুতর অপরাধের জন্য হবে বিশেষ আদালত, এ আদালতের প্রধান হবেন মহাপরিচালক। এ দুটি আদালতে কী কী অপরাধের বিচার হবে, সে বর্ণনা খসড়া আইনে আছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, এ ছাড়া শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদ-, যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ- রয়েছে। আপিল করারও ব্যবস্থা থাকবে। শাস্তি মওকুফের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির কাছেও তারা আবেদন করতে পারবেন।
আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, বিদ্রোহ সংগঠন ও এতে প্ররোচনা, বিদ্রোহের কারণ সৃষ্টি বা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বা এতে যোগদান করা, বিদ্রোহস্থলে উপস্থিত হয়ে তা দমনের জন্য যথেষ্ট প্রচেষ্টা গ্রহণ না করা, বিদ্রোহ সম্পর্কে জেনে বা ষড়যন্ত্রের কথা যুক্তিসংগতভাবে জানা সত্ত্বেও সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানানো, কোনো ব্যাটালিয়ন সদস্যকে সরকারের প্রতি তার কর্তব্য ও আনুগত্য থেকে বিরত রাখা, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিদ্রোহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাটালিয়ন সদস্য বা আনসার ব্যাটালিয়নবহির্ভূত কোনো ব্যক্তিকে অস্ত্র গোলাবারুদ বা অন্য কোনো উপায়ে সাহায্য করা, বিদ্রোহের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্য যেকোনো অপরাধ সংগঠন করা এ ক্ষেত্রে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড বা অন্যান্য ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদন্ড।
আগের ১৯৯৫ সালের আইনে বিদ্রোহের এসব বিষয় ছিল না বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
আইনের আওতায় আসবে ভুয়া সনদধারী বিদেশগামীরা : অনেকেই পেশাগত ভুয়া সনদ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাচ্ছেন। অনেকেই ভুয়া চিকিৎসক ও ইঞ্জিনিয়ার এ ধরনের সার্টিফিকেট নিয়ে যাচ্ছেন। এসব ভুয়া সনদ দেওয়ার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, আমাদের কাছে অভিযোগ আসছে অনেকেই ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে যাচ্ছেন। কীভাবে তারা এ ভুয়া সার্টিফিকেট নেন, কারা তাদের এ কাজে সহযোগিতা করেন তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন করতে নীতিমালা : প্রত্যেক বছর ইন্টার্ন করার সুযোগ দেবে সরকারি, বেসরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। মেয়াদ হবে তিন থেকে ছয় মাস। এজন্য নির্দিষ্ট হারে দেওয়া হবে ভাতা। এমন সুযোগ রেখে ‘সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ (ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ) নীতিমালা, ২০২৩’-এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
আইনের আওতায় আসছে রিক্রুটিং এজেন্সির সাব-এজেন্ট : রিক্রুটিং এজেন্সির সাব-এজেন্ট বা আন-অফিশিয়াল প্রতিনিধিরা আইনের আওতায় আসছে। এমন বিধান রেখে ‘বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন (সংশোধন), ২০২৩’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এই প্রথমবারের মতো আইনের মধ্যে রিক্রুটিং এজেন্ট হিসেবে যারা কাজ করেন, তারা সাব-এজেন্ট রাখতে পারবেন। সাব-এজেন্ট কীভাবে নিয়োগ করা হবে, কারা কারা থাকবেন, সেটি বিধির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে। সেই বিধিসংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তৈরি করবে। এখন আন-অফিশিয়ালি অনেক সাব-এজেন্ট অথবা প্রতিনিধি আছে। তাদের আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। তারা সবসময় ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আগে যেটা ছিল যে, রিক্রুটিং এজেন্সির কোনো অন্যায় পেলে লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল করতে হতো। মাঝখানে যদি ছোটখাটো অপরাধ হতো, কোনো শাস্তির সুযোগ ছিল না। সেজন্য এবার ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সরকার যদি তার বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পায়, অভিযোগ পাওয়ার পর যদি তদন্ত করে যখন দেখা যায় হয়তো খুব গুরুতর অপরাধ নয়, তখন যাতে শাস্তি দিতে পারে। আগে এটি করা যেত না।
দেশে আরও দুটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে : নতুন করে আরও দুটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। এর মধ্যে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জ’ হবে নারায়ণগঞ্জে। আর ‘সাতক্ষীরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ হবে সাতক্ষীরায়।
এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য পৃথক দুটি আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বর্তমানে দেশে ৫৪টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এ ছাড়া দেশে অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ১১৩টি।
মন্ত্রিসভা বৈঠকে শিক্ষা বিষয়ে আরও কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক (চাকরি শর্তাদি নির্ধারণ) বিধিমালা ২০১৩ সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ২০১৩ সালে জাতীয়করণ (সরকারি) করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ২৬ হাজার ১৯৩ শিক্ষকদের যোগ্যতা অর্জনের শর্ত পূরণের সময় বাড়ানো হয়েছে। নতুন সময় অনুযায়ী ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত শর্ত পূরণের সুযোগ পাবেন ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
এ ছাড়া প্রতিষ্ঠার প্রায় চার দশক পর জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) আইন, ২০২৩ অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। জাতীয় শিক্ষক দিবসের পরিবর্তে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা।
প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়নের ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে বড় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বলা যায়, লুটপাটের প্রকল্পে পরিণত হয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আওতাধীন ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি)’। সবচেয়ে বড় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে দরপত্রে ও কেনাকাটায়।
আধুনিক ব্যবস্থাপনা ও ডেইরি পণ্য উৎপাদনে খামারিদের সহায়তার জন্য কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হলেও তা প্যাকেটবন্দি অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ৯২ শতাংশ খামারি যন্ত্রপাতি পায়নি। ঘাসচাষের নামেও টাকা ভাগাভাগির অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে এ প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ জমা পড়েছে।
প্রকল্পভুক্ত ৪৬৫টি উপজেলায় ঘাসচাষের জন্য প্রতি বছর ৬৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কোথায়ও নামেমাত্র ঘাসচাষ হয়। বাকি উপজেলাগুলোতে ঘাসচাষের টাকা ভাগাভাগি করে নেওয়া হচ্ছে। একজন ডিপিডি প্রতি উপজেলা থেকে ঘাসচাষ বাবদ ৫ হাজার টাকা নেন। প্রায় ২৩ লাখ টাকা এ খাত থেকেই আত্মসাৎ করা হচ্ছে। সরেজমিনে বেশিরভাগ উপজেলাতেই ঘাসচাষের প্রমাণ মিলবে না।
প্রকল্পের ইমার্জেন্সি অ্যাকশন প্ল্যান অনুযায়ী করোনায় প্রকল্প-এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত খামারি ও খামারি সংগঠনের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ৬০০টি হস্তচালিত (ঘণ্টায় ৬০ লিটার উৎপাদনক্ষম), ৫০০টি মেশিনচালিত (ঘণ্টায় ১৬৫ লিটার উৎপাদনক্ষম) ও ৪০০টি মেশিনচালিত (ঘণ্টায় ৫০০ লিটার উৎপাদনক্ষম) মিল্ক ক্রিম সেপারেটর মেশিন কেনা হয়েছে ১০ কোটি ৮২ লাখ টাকায়। মেশিনগুলো ২০২১ সালের আগস্টে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার অফিসে পাঠানো হয়। এখনো অনেক মেশিন বিতরণ করা হয়নি। মানসম্পন্ন না হওয়ায় ৮০ শতাংশ মেশিন অকেজো হয়ে আছে।
এলডিডিপি প্রকল্পের আওতায় ৩৬০টি ডিজিটাল আল্ট্রাসাউন্ড মেশিন কেনা হয়েছে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে। নিম্নমানের হওয়ায় তা চালু হয়নি, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার অফিসেই পড়ে আছে। খামারে ভ্যাকসিনেশনের জন্য সিরিঞ্জ, নিডল, কুলবক্সসহ নানা জিনিসপত্র কেনার ২ কোটি ১০ লাখ ৬১ হাজার টাকার আদেশ হয়েছে এবং বিল মেটানো হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে সেগুলোর বড় অংশ মাঠপর্যায়ে সরবরাহ না করে কালোবাজারে বেচে দেওয়া হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে ল্যাবরেটরির জন্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের কাজের জন্য ৭৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকার কার্যাদেশ হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়েছে কি না কেউ বলতে পারে না। ওইসব ল্যাবে আগেই উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বায়োরেক্টর, ল্যাপটপ ও কম্পিউটার ছিল। প্রকল্পের আওতায় ৩০০ লিটার ক্যাপাসিটির ৫২৪টি ডিপ ফ্রিজ কেনা হয় ১ কোটি ৯৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা ব্যয়ে। ডিপ ফ্রিজগুলো সরবরাহের দুই বছর পরেই খামারে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এলডিডিপি প্রকল্পের মাধ্যমে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং সাপোর্ট অব ডিএলসির জন্য ৩০টি ল্যাপটপ ও কম্পিউটার (প্রিন্টার, স্ক্যানার ও অনুষঙ্গিক জিনিসপত্র) কেনা হয় ৪৮ লাখ ৯৫ হাজার ৫৮০ টাকা ব্যয়ে। কিন্তু সেগুলো সংশ্লিষ্টদের না পাঠিয়ে সরাসরি প্রকল্প থেকে গ্রহণ করা হয়। প্রতিটি ল্যাপটপের দাম দেখানো হয় ১ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এগুলো বাজারে কোনো অবস্থাতেই ৮০ হাজার টাকার বেশি হবে না।
করোনাকালে ইউনিয়ন পর্যায়ে সরবরাহের জন্য প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২ কোটি টাকার হেলথ সেফটি আইটেম (সার্জিক্যাল মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোভস, অ্যান্টিসেপটিক, ব্লিচিং পাউডার প্রভৃতি) কেনা হয়। সেসব সরবরাহ করা হয়েছে কি না, তার প্রমাণ নেই।
প্রকল্পের আওতায় বিভাগীয় ও জেলা দপ্তরে ব্যবহার্য দ্রবাদি কেনার জন্য প্রতি কোয়ার্টারে ৩০ হাজার টাকা করে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। অথচ একই কেনাকাটার জন্য রাজস্ব খাত থেকেও বরাদ্দ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্প বরাদ্দের অর্ধেক টাকা একজন ডিপিডির মাধ্যমে কমিশন হিসেবে নিয়ে নেওয়া হয়।
তবে উপ-প্রকল্প পরিচালক (ডিপিডি) ড. এবিএম মুস্তানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দরপত্র আহ্বান, মূল্যায়ন ও কার্যাদেশ পৃথকভাবে করা হয়। একাধিক কর্মকর্তা এর সঙ্গে জড়িত থাকেন। কোনো ব্যাপারেই আমার ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই। অনিয়মের সঙ্গেও আমি জড়িত নই।’
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) গত জুনের পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে প্রকল্পে নানা অনিয়ম ও অব্যস্থাপনার কথা। বলা হয়েছে, ৯২ শতাংশ খামারি প্রকল্প থেকে কোনো যন্ত্রপাতি পায়নি। প্রকল্প থেকে শুধু ক্রিম সেপারেটর মেশিন দেওয়া হয়েছে, যেসবের বেশিরভাগ খামারি ব্যবহার শুরু করতে পারেনি। খামারিদের মাত্র ৯.৪ শতাংশ প্রকল্প থেকে গবাদি পশুর জন্য ৫০ কেজি দানাদার সুষম খাদ্য পেয়েছে। ৭৯ শতাংশ খামারি গবাদি পশুর জন্য কৃত্রিম পদ্ধতির প্রজনন সেবা পায়। ৫০.৪ শতাংশ খামারে খুরারোগ, এফএমডি ও মুখের লালা রোগ দেখা দিয়েছে। ৯৮.২ শতাংশ খামারি স্বাস্থ্যসেবা, ৯৭.৫ শতাংশ খামারি কৃমিনাশক ও ৮৪.৭ শতাংশ খামারি ভ্যাকসিন পেয়েছে। জরিপকৃত খামারিরা প্রকল্প থেকে কোনো পোলট্রির খাদ্য পায়নি। ২৯.৮ শতাংশ খামারি প্রকল্প থেকে কভিড-প্রণোদনা পেয়েছে।
৪ হাজার ২৮০ কোটি ৩৬ লাখ টাকার এলডিডিপি প্রকল্প ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়েছে। এ প্রকল্পে ৩ হাজার ৮৮৫ কোটি ৭৩ লাখ ৭ হাজার টাকার অর্থায়ন করেছে বিশ্বব্যাংক। সাড়ে চার বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি ৪৭.০৮ শতাংশ। আগামী ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মেয়াদ আরও ২২ মাস বাড়ছে বলে সূত্র জানিয়েছে। প্রাণিজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, মার্কেট লিংকেজ ও ভ্যালু-চেইন সৃষ্টি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিদের জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, নিরাপদ প্রাণিজ খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাত ও বিপণন এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে প্রাণিসম্পদ খাতে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন এ প্রকল্পের লক্ষ্য। অনিয়মের কারণে লক্ষ্য অর্জন এখনো অনেক দূরে।
সূত্র জানায়, এলডিডিপি প্রকল্পের ডিপিপিতে অনুমোদিত প্যাকেজ ২৮৬টি। প্যাকেজ জি-৩৯-এর জন্য ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ১৭ কোটি ১২ লাখ ২৪ হাজার টাকায় দরপত্র পায় বাংলাদেশ সায়েন্স হাউজেস। ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই প্যাকেজ-২৭-এর জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। প্রায় ৪ কোটি টাকায় কার্যাদেশ পায় এমএস মাসতুরা এন্টারপ্রাইজ। একই বছরের ১৫ জুলাই মাসতুরা এন্টারপ্রাইজ ১ কোটি ২৫ লাখ ৫৭ হাজার ৯৮৭ টাকায় প্যাকেজ ডব্লিউ ৮৮-এর কাজ পায়।
আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্যাকেজের দরপত্র প্রক্রিয়া প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়নি।
নির্বাচনের আগে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি এ সময়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম না বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সেই সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমতে পারে। বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
গত ১৪ বছরে সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কারণে শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎসুবিধার আওতায় এসেছে। পাশাপাশি বিদ্যুতের যে ভয়াবহ লোডশেডিং ছিল তা এখন আর নেই। তবে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়লেও জ্বালানি সংকটের কারণে সাশ্রয়ী দামে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসেবা পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। মূলত বিদ্যুৎ খাতে টেকসই উন্নয়ন না হওয়ার কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বিদ্যুৎ নিয়ে প্রায় এক যুগ ধরে ফুরফুরে মেজাজে থাকা সরকার ধাক্কা খায় গত বছরের শেষ দিকে। ১৪ বছর আগের সেই লোডশেডিং আবার মাঝেমধ্যে ফিরে আসায় মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। নানা কৌশলে সরকার সেই পরিস্থিতি সামাল দিয়ে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক রেখেছে। নির্বাচনের আগে যাতে নতুন করে পরিস্থিতির অবনতি না হয়, সে জন্য সরকার সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা।
জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নতুন কোনো সংকট তৈরি না হলে বিদ্যুতের এই স্বাভাবিক পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে। কারণ আর কিছুদিন পরই শীতের প্রভাবের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাবে। পাশাপাশি বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা আরও বাড়বে। ইতিমধ্যে ভারতের আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোদমে উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করেছে। এ ছাড়া এস আলমসহ আরও কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। সবকিছু ঠিক থাকলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে বলে আমরা আশা করি।’
চলতি বছরের শেষ দিকে অথবা জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। যদিও নির্বাচন নিয়ে নানা রকম সংশয়, আলোচনা-সমালোচনা চলছে। তারপরও নির্বাচনের আগে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছে সরকার।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে টানা তৃতীয় মেয়াদে দেশ পরিচালনাকারী এই সরকার প্রথম মেয়াদে ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে। তখন দেশে ২৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে থেকে গ্রিডভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা বেড়ে ১৫৩ এবং বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৫ হাজার মেগাওয়াট (আমদানি ও অনগ্রিড নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ)। যদিও এখন পর্যন্ত গত ১৯ এপ্রিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। চলতি বছর দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১৭ হাজার মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, তামপাত্রা কমতে থাকার কারণে নির্বাচনের আগমুহূর্তে বিদ্যুতের চাহিদাও অনেকটাই কমে যাবে। তা ছাড়া এই সময়ে নির্মাণাধীন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে বেশ কিছু কেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। ফলে জাতীয় গ্রিডে আমদানিসহ আরও প্রায় ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হওয়ার কথা রয়েছে। নতুন উৎপাদনে আসা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে এস আলম ও ভারতের আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্রের আপাতত কয়লা নিয়ে সংকট হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রেও কয়লার সংকট থাকবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে পায়রার বকেয়া নিয়ে যে জটিলতা ছিল তা অনেকটাই কেটে গেছে। এরপরও যদি ডলার কিংবা জ্বালানি নিয়ে সংকট দেখা দেয় তাহলে এই খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে যেভাবেই হোক বিদ্যুতের উৎপাদন স্বাভাবিক রাখবে সরকার। সব মিলে লোডশেডিং তেমন একটা থাকবে না। তবে বিতরণ ও সঞ্চালন লাইনের ত্রুটির কারণে এলাকাভেদে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের আশঙ্কা রয়েছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, কিছুদিন আগে বিদ্যুতের যে লোডশেডিং ছিল তা কিছুটা সামাল দিতে পেরেছে সরকার। এর মূল কারণ হলো বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাওয়া। ঈদের আগে প্রচন্ড যে গরম ছিল তা এখন অনেক কমে গেছে। তারপরও বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ নিয়ে চলমান সমস্যার মূল কারণ হলো ডলার ও জ্বালানির সংকট। নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শীতের সময় এমনিতেই বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকবে। সরকার চাইলে তখন তিন থেকে চার মাসের জন্য যেকোনো মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পারবে। কিন্তু পরে আবার পরিস্থিতি আগের অবস্থায় চলে যাবে। কারণ বিদ্যুৎ খাতের যে উন্নয়ন তা টেকসই নয়। ফলে নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র এলেও জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। দিন দিন বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ার কারণে সাশ্রয়ী দামে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে পারছে না সরকার।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বাড়ানোর কারণে সাধারণ মানুষের মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আইএমএফের ঋণ নিতে তাদের শর্ত পূরণ করতে ভর্তুকি সমন্বয়ের নামে গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী আদেশে চলতি বছর গ্রাহকপর্যায়ে তিন দফায় বিদ্যুতের দাম অন্তত ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্যাসের দামও বাড়িয়েছে সরকার। গত জানুয়ারিতে চার শ্রেণির গ্রাহকের গ্যাসের দাম অস্বাভাবিক হারে ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এমন পরিস্থিতিতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানো হচ্ছে, যখন নিত্যপণ্যের চড়া দামে মানুষ সংকটে রয়েছে। ডলার সংকটসহ নানা কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি কমে যাওয়ার পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও কমেছে। একদিকে বিদ্যুৎ-সংকট, অন্যদিকে দাম বৃদ্ধি এসব নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপি ও নেতাকর্মী তাদের নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে বেশ অস্বস্তিতে পড়েন। সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে আগে থেকেই। নতুন করে আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত এ বছর বিদ্যুতের দাম আর না বাড়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা যাচ্ছে এখন পর্যন্ত।
এদিকে গত ২ মে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) জমা দেওয়া মিটারবিহীন আবাসিক গ্যাস গ্রাহকদের বিল পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত তিতাস গ্যাসের আবেদনের বিষয়টি স্থগিত রয়েছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন জানিয়েছে, অন্যান্য বিতরণ কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে পেট্রোবাংলা সমন্বিত প্রস্তাব জমা দিলে তারপর নিয়ম অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তিতাস গ্যাসের ওই প্রস্তাব দেওয়ার পর দেশ রূপান্তরসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। কারণ তিতাসের ওই আবদার পূরণ হলে আবাসিকে মিটারবিহীন এক এবং দুই চুলার গ্রাহকের ক্ষেত্রে অন্তত ৩৯ থেকে ৪৭ শতাংশ গ্যাসের দাম বাড়বে। আপাতত গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পদক্ষেপ থেকে সরে এসেছে সরকার।
নির্বাচনের আগে নতুন করে আবার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঝুঁকি সরকার নেবে না বলে মনে করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা।
গ্যাস-বিদ্যুতের দাম না বাড়লেও জ্বালানি তেলের দাম কমতে পারে এমন আভাস পাওয়া গেছে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতির দিকে। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত জ্বালানি তেলের দাম কমতে থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে গোল্ডম্যান স্যাকস। দাম কম থাকায় দীর্ঘ সময় ধরেই তেল বিক্রি করে লাভ করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন। পাশাপাশি জ্বালানি তেল আমদানির ওপর ৫ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আগে জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমাতে পারে সরকার।
গত ২৯ মে রাজধানীতে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ (এফইআরবি) আয়োজিত এক সেমিনারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জ্বালানির দাম কমানোর বিষয়ে ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, ‘জনগণকে স্বস্তি দিতে তেল ও কয়লার দামের সমন্বয় দরকার। এসব বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যে আলোচনা করছি।’
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। হাসপাতাল গঠিত মেডিকেল বোর্ড বারবার পরামর্শ দিচ্ছে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে। পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার আবেদন করা হলেও সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে না। এদিকে গত রবিবার খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য।
গতকাল সোমবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত মাসে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে কর্মসূচি পালন করেছি। তিনি এখন এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত মাসের ৯ তারিখে ভর্তি করা হলেও এখন পর্যন্ত তার অবস্থার উন্নতি হয়নি। চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে বারবার পরামর্শ দিচ্ছেন। দ্রুত তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে না পাঠালে এক দফার কর্মসূচির সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে কর্মসূচির ঘোষণা আসবে।’
বিএনপির ওই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে ১৬ আগস্ট সারা দেশে মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দোয়া মাহফিলের কর্মসূচি পালন করেছি। ১৭ আগস্ট খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে সারা দেশে প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছে। একই দাবিতে ১৯ আগস্ট সারা দেশে পদযাত্রা এবং ১৮ আগস্ট সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ঢাকা মহানগরসহ সব মহানগরে গণমিছিলের কর্মসূচি পালন করেছি।’
বিএনপি নেতা ও সাবেক এক আমলা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিহিংসাপরায়ণ এক নেতা। খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তার চিকিৎসায় দলের গঠিত মেডিকেল বোর্ড এমনকি এভারকেয়ার হাসপাতাল গঠিত মেডিকেল বোর্ড বারবার তাগাদা দিচ্ছে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে। পরিবারের সদস্যরা একাধিকবার সরকারের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। সরকার কোনো পাত্তা দিচ্ছে না।’ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘গত শনিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিঙ্গাপুরে চেকআপ শেষে দেশে ফিরেছেন। আগামীকাল (আজ) স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের দেশে ফেরার কথা রয়েছে। স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্য মির্জা আব্বাস আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে চলে আসবেন। সবারই চিকিৎসা হচ্ছে, শুধু হচ্ছে না বিএনপি চেয়ারপারসনের।’
এদিকে চেকআপ শেষে দেশে ফিরে গত রবিবার রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি গতকাল সোমবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভালো নেই চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দ্রুত তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন হাসপাতাল গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা। কিন্তু সরকার ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি দিচ্ছে না। হাসপাতাল গঠিত মেডিকেল বোর্ড ও ব্যক্তিগত চিকিৎসক দল অবিলম্বে চেয়ারপারসনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।’
খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপি চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য গত ৯ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল চেয়ারপারসনকে। এরপর থেকে হাসপাতাল গঠিত মেডিকেল টিমের সদস্যরা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে। কবে নাগাদ বাসায় ফিরতে পারবেন তা এখনই বলা যাচ্ছে না।’
গত রবিবার রাতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য সাংবাদিকদের বলেন, ‘খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। কয়েকটি টেস্ট করা হয়েছে তার। এসব টেস্টের ফলাফল দেখে উদ্বিগ্ন মেডিকেল বোর্ড। তিনি জানান, খালেদা জিয়ার পেটে পানি বেড়েছে। ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স দেখা দিয়েছে। এ কারণে ঘুম হচ্ছে না। অবস্থা ভালো নয়। কয়েক দিন ধরে অবনতি হচ্ছে। বোর্ড নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার লিভারের সমস্যা জটিল হচ্ছে। এটার আসলে শতভাগ চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়। বোর্ড সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু একাধিক জটিলতা থাকায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাকে বারবার মাল্টিপল ডিজিজ সেন্টারে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রেশার ও ডায়াবেটিসসহ স্বাস্থ্যের প্রায় সবকটি প্যারামিটারই ওঠানামা করছে।’
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ২০১৮ সালে কারাদ- দেওয়া হয়েছিল খালেদা জিয়াকে। কিন্তু বয়স ও অসুস্থতার কারণে এবং পরিবারের সদস্যদের আবেদন বিবেচনা করে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাকে শর্ত সাপেক্ষে জামিন দেওয়া হয়েছিল। শর্ত ছিল, তিনি কোনো রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ বা অন্য কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন না। তাকে বাড়িতে থাকতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।
এদিকে অসুস্থতার কারণে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে বিএনপি। তারা জানিয়েছে, চেয়ারপারসনকে বিদেশে নিয়ে উন্নতমানের চিকিৎসা করানো প্রয়োজন।
নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান মামলার বিচার কার্যক্রম স্থগিতের অনুরোধ জানিয়ে বিশ^নেতাদের খোলাচিঠির বিষয়ে পাল্টা প্রতিবাদ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করবেন না বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া। বিচারের নামে ড. ইউনূসকে বিচারিক হয়রানি করা হচ্ছে বলে মনে করছেন রাষ্ট্রপক্ষের এই আইন কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, ড. ইউনূসের মামলা নিয়ে বিশ্ব নেতাদের উদ্বেগ ও বিবৃতি সঠিক। তাই বিবেকের তাড়নায় এর পাল্টা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করবেন না। তবে পাল্টা বিবৃতি বা এতে স্বাক্ষরের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে আইন কর্মকর্তাদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলে দেশ রূপান্তরকে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। অন্যদিকে সাধারণ আইনজীবীদের ব্যানারে বিবৃতিতে স্বাক্ষর নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক আইন কর্মকর্তা। এদিকে গ্রামীণ টেলিকমের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় কল কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষে আরেকজন আইনজীবী নিযুক্ত করায় শুনানি না করার ঘোষণা দিয়েছিলেন এই মামলায় প্রথম নিযুক্ত আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। গতকাল সোমবার তিনি দেশ রূপান্তরকে এ কথা বললেও পরে নতুন করে শুনানিতে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমি একক আইনজীবী হিসেবে আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকে শুনানি করব।’
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জ্যেষ্ঠ প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলীকে গত সপ্তাহে নিযুক্ত করে বলে গত রবিবার দেশ রূপান্তরকে তিনি (হায়দার আলী) জানান। তবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকলে এ মামলায় শুনানিতে অস্বীকৃতি জানান অ্যাডভোকেট খুরশীদ। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।
২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা (অ্যাটর্নি জেনারেল) ছাড়াও এই মুহূর্তে উচ্চ আদালতে তিনজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, ৬০ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও ১৪৯ জন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলসহ রাষ্ট্রপক্ষে ২১৩ জন আইন কর্মকর্তা মামলা পরিচালনা করছেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত রবিবার তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের আইন কর্মকর্তাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বিবৃতিতে স্বাক্ষরের নির্দেশনা পান। এ জন্য গতকাল বিকেল ৪টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। তবে তিনি স্বাক্ষর না করে নিজেকে বিরত রাখেন। বিবেকের তাড়নায় এবং ব্যক্তিগতভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান। এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া বলেন, ‘১০৭ জনের বেশি নোবেল বিজয়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে যে বিবৃতি দিয়েছেন, তাদের সঙ্গে আমি একমত। আমার কাছে মনে হয়েছে এটা (ড. ইউনূসের বিচার) একধরনের বিচারিক হয়রানি। তাই আইনজীবীদের এ ধরনের প্রতিবাদ বিবৃতি সঠিক মনে হয়নি।’
রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘শ্রম আদালতে প্রচুর পুরাতন মামলা বিচারাধীন আছে। এটার (ড. ইউনূসের) আগেও অনেক মামলা আছে। কিন্তু এই মামলা দ্রুতগতিতে চলছে। এটা নিয়ে আমার প্রশ্ন রয়েছে। যে কারণে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করিনি।’
এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আমরা কোনো বিবৃতি দিইনি। তৈরিও করিনি। এটা উনি (এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া) কেন করেছেন তা উনিই বলতে পারবেন। তার হয়তো কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কিন্তু তাকে কি কেউ বলেছে যে স্বাক্ষর করতেই হবে? তিনি বিবৃতিটা দেখাক না। তাহলেই তার বক্তব্য সঠিক কি না, জানা যাবে। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে কেউ তো বিবৃতিই তৈরি করেনি।’
সাধারণ আইনজীবীদের ব্যানারে বিবৃতিতে স্বাক্ষর নেওয়া হচ্ছে কি না, তা তার জানা নেই বলেও জানান এ এম আমিন উদ্দিন। তবে রাষ্ট্রপক্ষের একাধিক আইন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ড. ইউনূসের মামলা নিয়ে বিশ্বনেতাদের বিবৃতির প্রতিবাদে সাধারণ আইনজীবীদের ব্যানারে বিবৃতিতে স্বাক্ষর নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক আইনজীবী তাতে স্বাক্ষর করেছেন।
ড. ইউনূসের মামলায় আইনজীবী নিয়োগের বিষয়ে অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, দুই বছর আগে এই মামলার শুরু থেকে বাদীপক্ষে তাকে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। মামলাটি এখন সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। এই পর্যায়ে এসে মামলায় একপক্ষে যদি দুজন আইনজীবী থাকেন তাহলে তিনি শুনানি করবেন না। নিজেকে প্রত্যাহার করে নেবেন।
এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘শুনেছি মন্ত্রণালয় থেকে একজন আইনজীবী দেওয়া হয়েছে। এখন যদি দুজন আইনজীবী থাকেন, তাহলে আমি মামলা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতিমধ্যে বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। তারা কী সিদ্ধান্ত দেয়, সেটি দেখব। যদি ওই সিদ্ধান্তই (দুজন আইনজীবী) বহাল থাকে, তাহলে আমি শুনানি করব না।’
গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা এবং গণছুটি নগদায়ন না করাসহ শ্রম আইনের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ এনে ড. ইউনূস, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, দুই পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার শ্রম আদালতে মামলা করে কল কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। গত ৬ জুন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর আদেশ দেয়। অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন ড. ইউনূস। গত ২৩ জুলাই অভিযোগ গঠন বাতিল প্রশ্নে রুল দেয় হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত ৩ আগস্ট আপিল বিভাগ মামলার কার্যক্রম বাতিল প্রশ্নে রুলের শুনানি করতে বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ নির্ধারণ করে দিয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুল নিষ্পত্তি করতে আদেশ দেয়। ১৭ আগস্ট হাইকোর্ট রুল খারিজ করে রায় দেয়। ২২ আগস্ট ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ড. ইউনূস ও শাহজাহানকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত।
‘কমিটি-বাণিজ্য’ ঘোরতর এ অভিযোগ গত দুই যুগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যারাই হয়েছেন তাদের সঙ্গেই জড়িয়ে থেকেছে। কিছু অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে, কিছুর মেলেনি। তবে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ ঘটার প্রমাণ ভূরি ভূরি। এ সত্য চিরন্তন সত্যের রূপ পেয়েছে গত ১৪ আগস্ট জামায়াত নেতা একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে আমৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের যে পরিমাণ নেতা শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে সামাজিক বিভিন্ন যোগাযোগমাধ্যমে বক্তব্য-বিবৃতি প্রকাশ করেছেন, তাতে ছাত্রলীগে ‘আগাছা’ ঢুকেছে এবং ছাত্রলীগে কমিটি-বাণিজ্য বর্তমান এ সত্যকেই প্রমাণ করেছে এবং করছে।
শুধু কমিটি-বাণিজ্যই ছাত্রলীগের এ অধঃপতনের মূল কারণ নয়। সংগঠনের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালনকারী নেতারা বলেন, আদেশ-নির্দেশ, অনুরোধ ও আর্থিক লেনদেনের মধ্য দিয়ে নেতা বানানোর পথ সৃষ্টি করেই ছাত্রলীগে আগাছা-পরগাছার প্রবেশ ঘটছে। তারা বলেন, নেতা হওয়ার পূর্বশর্ত মাঠের অ্যাকটিভিটিজ। নেতা হওয়ার ক্ষেত্রে এখন সেটি গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ছাত্রলীগে ভর করার সুযোগ পেয়েছে। আগাছার চাষই হয়েছে গত দুই যুগে।
সাবেক নেতারা বলেন, গত দুই যুগে অনুরোধ ও আর্থিক লেনদেনের মধ্য দিয়ে নেতা বানানোর চর্চা হয়েছে বেশি। আর নেতা হয়েই সুযোগে তারা জানান দিচ্ছে, ‘আমরা ছাত্রলীগ নই’। এ প্রসঙ্গে খেদোক্তি করেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুলতান মনসুর ও সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।
গত ২০ আগস্ট সাঈদী-অনুসারী ১৫ নেতাকে অব্যাহতি দিয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ। জেলা সভাপতি দীপঙ্কর কান্তি দে ও সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান রিপন স্বাক্ষরিত ওই অব্যাহতিপত্রে ১৫ জনকে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া জামালপুরে ১৮, চট্টগ্রামে ১৬, পাবনায় ৭, নরসিংদীতে ৬, সাতক্ষীরায় ৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লোহাগড়ায় ৯, ফরিদপুরে ৯ জনকে এবং গতকাল সোমবার কুমিল্লায় ছাত্রলীগের ২৫ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে এ সংগঠনের চার শতাধিক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কার অব্যাহত রয়েছে। আগাছা-পরগাছামুক্ত করে সুশৃঙ্খল সংগঠনে পরিণত করার জন্য একাধিকবার তাগিদ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তারপরও থেমে নেই নীতি-আদর্শে অবিশ্বাসী ছাত্রনেতাদের ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ। সাঈদীর মৃত্যুতে মুখোশের আড়াল থেকে আগাছাদের আসল চেহারা বেরিয়ে পড়েছে।
সাঈদীর পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ শুরু করে একটি বিশেষ মহল। তাদের আদ্যোপান্ত খুঁজে দেখা যায় শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির ধারায় বিশ্বাস করে যে সংগঠন, মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেছে যে সংগঠন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে সংগঠনের কর্মীরা পরিচালিত হয়েছে সে সংগঠনের কর্মীরাই কিনা যুদ্ধাপরাধের, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে দণ্ডিত সাঈদীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে! এদের পরিচয়ের মূলে তাহলে কী?
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগাছার ছাত্রলীগে ভর করার ঘটনা দুঃখজনক। বিভিন্ন সময় ওদের হাতে সুযোগ এসেছে, ওরা ঢুকে পড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘স্রোতের সঙ্গে রুই-কাতলা, বোয়াল ও পুঁটি মাছ ঢুকে পড়ে। ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্বকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, এসব আগাছা নেতাদের তালিকা করার এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার এ প্রসঙ্গে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ ঘটনাকে শুধু অনুপ্রবেশের ঘটনা হিসেবে দেখলে সংশ্লিষ্টরা দায় চাপানোর এবং খালাস পেয়ে যাওয়ার সুযোগ পান। তাতে ঠিক শিক্ষা নেওয়া হয় না। এতে খণ্ডচিত্র প্রকাশিত হয়। সাঈদীর মৃত্যুর পর যে চিত্র পাওয়া গেছে, এ সংগঠনের নেতাকর্মীদের কর্মকাণ্ডে যা দেখা গেছে তা দুঃখজনক।’
অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘পুরো ঘটনাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখলে হবে না। আমি বলতে চাই, সাধারণ শিক্ষার্থীরা সংগঠনে ঢুকেছে অতি সাধারণভাবে, আকৃষ্ট হয়ে বা পছন্দ করে। আজকের চিত্র দেখে আমি বলতে চাই, নীতি-আদর্শের চাষবাস না হওয়া একটা নেতিবাচক আবহ তৈরি করেছে ছাত্রলীগে। যারা ঢুকে পড়েছে তাদের ভেতরে নীতি-আদর্শের প্র্যাকটিস করানো হলে ফল অন্যরকমও হতে পারত।’
ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের দাবি, টানা ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষমতার প্রভাব, জানান দেওয়ার মানসিকতা, ক্ষমতা ধরে রাখার মহাযুদ্ধ। তৃণমূলে এ যুদ্ধ সবচেয়ে বেশি। ফলে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করেন সবাই। ‘নিজের লোক’কে পদ পাইয়ে দিতে আর কিছু দেখা হয় না। তারা দেখে ‘ভাইলীগ’ কতটা শক্তিশালী হলো।
প্রয়োজনে সুবিধাবাদীদের চিহ্নিত করতে ছাত্রলীগে শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা। তারা বলছেন, যুদ্ধাপরাধীর পক্ষ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সহানুভূতি প্রকাশ করে কেউ ছাত্রলীগ করতে পারবে না। সব সাংগঠনিক ইউনিটকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এ ধরনের সবাইকে বহিষ্কার করতে বলা হয়েছে।
ছাত্রলীগে এত আগাছা কেন এমন প্রশ্নে সংগঠনটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিচয় আড়াল করার চেষ্টা করে সুযোগ নেওয়ার কারণে অনুপ্রবেশ ঘটেছে। তবে আমরা সমন্বিত উদ্যোগে শক্ত বাঁধ তৈরি করছি। আমরা অভিযান শুরু করেছি। ওদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। পবিত্র ধর্মকে হাতিয়ার করা এ দেশে বেশ পুরনো। রাজনৈতিক চেতনার ওপর ধর্মচেতনা এ কথাই এরা ছাত্রদের মাথায় ঢুকিয়েছে। ছাত্রলীগে শুদ্ধি অভিযান শুরু হবে। এ ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি।’
ছাত্রলীগের শীর্ষ এ নেতা বলেন, ‘ফেইসবুক থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং বিভিন্ন তথ্য যাচাই-বাছাই হচ্ছে। সরকারি দল হওয়ায় অনুপ্রবেশকারী থাকেই। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে ছাত্রলীগ তার নৈতিক শুদ্ধতা প্রমাণ করেছে।’
সাদ্দাম আরও বলেন, ‘অতীতে সংগঠনে অনুপ্রবেশকারী ও মুখোশ পরা কাউকে চিহ্নিত করা হয়নি। এখন আমরা চিহ্নিত করছি, ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।’
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।
প্রাচীন সময় থেকে মানুষের খাদ্যতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে চীজ বা পনির। গরুর দুধের তৈরি পনিরে শরীরকে সুস্থ রাখার প্রয়োজনীয় সব উপাদান পাওয়া যায়।
বর্তমানে সময়ের সাথে সাথে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পনিরের ব্যবহার। আর তাই বিস্কিট থেকে শুরু করে পাউরুটি, পাস্তা, পিৎজা অনেক কিছুতেই পনির ব্যবহার হয়।
পনিরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের মতে, ১০০ গ্রাম পনিরের মধ্যে রয়েছে:
শক্তি - ৩৬২ কিলোক্যালরি
প্রোটিন – ৫.১৭ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট - ৫০ গ্রাম
ক্যালসিয়াম - ৬৯ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম - ১৮১ মিলিগ্রাম
স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড – ৩.৪৫ গ্রাম
কোলেস্টেরল - ৩৪ মিলিগ্রাম
এটি প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস। পনিরের বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে।
পনির ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এবং প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এটি বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অনেক উপকারি। পনিরে থাকা ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পনির খেলে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করা যায়।
পনির ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা শক্তিশালী ও মজবুত দাঁত তৈরিতে অবদান রাখে। পনিরে থাকা কেসিন ফসফোপেপটাইড উপাদান দাঁতের গহ্বর কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া চিউইং চিজ মুখের পিএইচ মাত্রা বাড়াতে পারে এবং সামগ্রিক মৌখিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
পনিরে অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড যেমন কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস। কোরিয়া ইউনিভার্সিটি এবং ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ফ্যাটি অ্যাসিডে ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ ছাড়া এই ফ্যাটি অ্যাসিড এথেরোস্ক্লেরোসিস এর বিকাশ রোধ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে।
পনিরে কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড এবং স্ফিংগোলিপিড রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে স্ফিংগোলিপিড মানুষের কোলন ক্যান্সারকে বাধা দিতে পারে।
এ ছাড়া পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে খাদ্যতালিকাগত ক্যালসিয়াম কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ উপকারি।
পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই উপকারি। এটি প্রসবের সময় সংকোচনকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া উকের দুধ পান করানোর সময় ক্যালসিয়াম পুষ্টির ঘাটতিও পূরণ করে পনির। এটি গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রূণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে।
কিছু ধরণের পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যকারিতা বাড়াতে পরিচিত। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে পনির শরীরের প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটি অসুস্থতা এবং রোগ কমাতে পারে।
প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সুরক্ষিত পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। এটি বয়স্কদেরমধ্যে ইমিউনোসেনেসেন্স (প্রতিরোধ ব্যবস্থার ধীরে ধীরে দুর্বল হওয়া) প্রতিরোধ করতে পারে।
পনির সেলেনিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা থাইরয়েড ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সেলেনিয়ামের থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করে ভাইরাসের বিকাশকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে।
চেডার পনির হল এক ধরনের হার্ড পনির। এটি খাদ্যতালিকায় যোগ করলে তা থাইরয়েড রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
পনিরের আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলির মধ্যে একটি হল মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করা। বিশেষ করে ক্যামেমবার্ট জাতের পনির এই ধরনের কাজ করে থাকে। ক্যামেমবার্ট পনির প্রদাহজনক সাইটোকাইনের মাত্রা কমাতে পারে। এটি আলঝাইমার রোগের ঝুঁকি কমায় এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।
পনির ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। এতে থাকা ভিটামিন বি কোষের বিপাক এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে এটি উজ্জ্বল ত্বকের পাশাপাশি ত্বকের দাগ কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
যাদের গরুর দুধে অ্যালার্জি আছে তাদের পনির এড়ানো উচিত। এটি অ্যালার্জি, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথার কারণ ও হতে পারে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (অতিরিক্ত পনির খাওয়া) কার্ডিওভাসকুলার রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
পনিরের স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ও রয়েছে। যেমন,
কিছু লোকের দুধের প্রোটিন যেমন কেসিনে অ্যালার্জি থাকে। এটি সারা শরীর জুড়ে একটি প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং ত্বকে ফুসকুড়ি, সাইনাস কনজেশন এবং ব্রণ জ্বলতে পারে।
অনেকের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা থাকে। সেক্ষেত্রে তাদের পনির না খাওয়াই শ্রেয়। কারণ ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা গ্যাস, পেট ফোলাভাব এবং ডায়রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। অনেক সময় এর কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে।
প্রচুর পরিমাণে পনির খাওয়ার ফলে মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথা হতে পারে। পুরনো পনিরে থাকা টাইরামিন উপাদান কিছু ব্যক্তির মধ্যে মাইগ্রেনকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
যারা মোনোমাইন অক্সিডেস ইনহিবিটরস (MOIs) গ্রহণ করছেন তাদের পনির খাওয়া এড়ানো উচিত। এই ওষুধগুলি হতাশার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এসব ওষুধ পুরনো বা বয়স্ক পনিরে থাকা উপাদান টাইরামিনের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হবে ২ নভেম্বর। পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন তা নিয়ে এখন চলছে আলোচনা, কানাঘুষা; শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ।
বর্তমান উপাচার্যই আবার দায়িত্ব পাবেন নাকি নতুন কাউকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে এ আলোচনাই চলছে এখন। আলোচিত হচ্ছে কয়েকজন শিক্ষকের নামও। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন কানাঘুষারও অবসান হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ পদে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের মধ্য থেকেই কাউকে বাছাই করার বিষয়টি একপ্রকার নিশ্চিত। বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের এ বিষয়ে আগ্রহ নেই। গুণী কোনো শিক্ষক উপাচার্যবিষয়ক আলোচনার মধ্যে নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা হবে কি না, এ বিষয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের ১১(১) ধারা অনুযায়ী, উপাচার্য নিয়োগে তিন সদস্যবিশিষ্ট প্যানেল নির্বাচনের দায়িত্ব সিনেটের। সিনেট নির্বাচিত তিনজনের মধ্য থেকে একজনকে উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এবং রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রপতি তাকে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেন।
রীতি অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের জন্য সিনেটের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা হয়। কিন্তু এবার সিনেট অধিবেশন হওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। উপাচার্য অধিবেশন ডাকবেন কি ডাকবেন না; ওপর মহলের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কেউ কিছু জানেন না। উপাচার্য নিজেও বিষয়টি খোলাসা করছেন না।
অধ্যাদেশের ১১(২) ধারা অনুযায়ী, কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যেমন অসুস্থতা, ছুটি, অপসারণ বা অন্য কোনো কারণে উপাচার্যের পদ শূন্য হলে একজনকে অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা বলছেন, অধ্যাদেশের নিয়ম অনুসরণ করে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করা হোক। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং আগামী নির্বাচনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। নতুন উপাচার্যের গ্রহণযোগ্যতাও বাড়বে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, ‘ভিসি প্যানেল নিয়ে আলোচনা নেই। উপাচার্যও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে আমাদের জানা নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট সদস্য ও শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল সবচেয়ে বেশি আলোচিত। তাদের মধ্য থেকেই কারোর পরবর্তী উপাচার্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম এ বিষয়ক আলোচনায় রয়েছেন।
অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পান। পরে প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর উপাচার্য পদে পুনর্নিয়োগ পান তিনি। সাত বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সামলাচ্ছেন তিনি। দুই মেয়াদের বেশি উপাচার্য থাকার নজির নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই তার দায়িত্ব পালনের শেষ দেখছেন অনেকে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষকদের মধ্যেও তাকে নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে পুনরায় নিয়োগ পেতে পারেন তিনি।
ইমেরিটাস অধ্যাপক বা অন্য কোনো গুণী শিক্ষক নেই উপাচার্য নিয়োগের আলোচনায়। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গুণী শিক্ষকদের সামনে আনার যে ধরনের কাঠামো থাকা উচিত তা নেই। যারা তোশামোদ করতে পারে, অন্ধ আনুগত্য প্রকাশ করতে পারে, তাদেরই প্রশাসনের শীর্ষ পদে নিয়ে আসা হয়। সত্যিকারের গুণী শিক্ষক এবং অনেক ভালো গবেষক আছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারা কখনো প্রশাসনের দায়িত্বে আসতে পারেন না। তারা ব্যক্তিত্বের জলাঞ্জলি দিতেও রাজি নন।’
অতীতে উপাচার্যদের মধ্যে অ্যাকাডেমিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে একটা ভারসাম্য ছিল। এখন তা নেই। এখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও আনুগত্যের ভিত্তিতে প্রশাসনিক পদগুলো দেওয়া হয়।
পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন বা ভিসি প্যানেল নিয়ে আগ্রহ নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের। বিএনপিঘোষিত এক দফাতেই তারা মগ্ন। যদিও সিনেটে তিনজন প্রতিনিধি থাকায় সুযোগ তাদেরও রয়েছে। সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার পরিবর্তন না হলে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিষয়ে ভাবছি না। এ বিষয়ে আমাদের ফোকাস নেই। আমাদের ফোকাস হচ্ছে এ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। জাতীয় রাজনীতিতে পরিবর্তন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও পরিবর্তন আসবে।’
শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও সাংগঠনিকভাবে আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমরা নীল দল এখনো এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করিনি। যথাসময়ে দলের সভায় এ নিয়ে কথা হবে। মনোনয়ন কে পাবেন, তার আলোচনাও সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে। বর্তমান প্রশাসনের শীর্ষ তিনজন বিশেষভাবে আলোচনায় থাকবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই দায়িত্ব দেবেন। আমরা উনাদের সমর্থন করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ীই সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।’
বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনের গতি অনুযায়ীই সব চলবে। এ বিষয়ে যাদের ভাবা প্রয়োজন তারা অবশ্যই ভাববেন।’ সিনেটের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশেষ অধিবেশন ডাকার প্রয়োজন হলে আমরা ডাকি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।