
দেশে ডেঙ্গুতে অর্ধেকের বেশি মারা যাচ্ছে হাসপাতালে ভর্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। আর ৮৩ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হচ্ছে ভর্তির তিন দিনের মধ্যে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের সাপ্তাহিক বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে (২৭ আগস্ট-২ সেপ্টেম্বর) সারা দেশে ডেঙ্গুতে মারা গেছে ৮১ জন। তাদের মধ্যে ৪৭ জন মারা গেছে হাসপাতালে ভর্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে, যা মোট মৃত্যুর ৫৮ শতাংশ। ২৫ শতাংশ বা ২০ জন রোগী মারা গেছে ভর্তির দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে। সে হিসেবে গত সপ্তাহে ভর্তির তিন দিনের মধ্যে মারা গেছে ৮৩ শতাংশ রোগী।
এ ছাড়া ১২ শতাংশ বা ১০ জন রোগী মারা গেছে ভর্তির ছয় থেকে ১০ দিনের মধ্যে, ৪ শতাংশ বা তিন জনের মৃত্যু হয়েছে ভর্তির চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে ও ১ শতাংশ বা একজন মারা গেছে ভর্তির ১০ তার বেশি দিনের মধ্যে।
অধিদপ্তরের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, গত সপ্তাহে মোট রোগী পাওয়া গেছে ১৫ হাজার ৫১০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশের বয়স ছিল ২১-২৫ বছরের মধ্যে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ৩৬-৪০ বছরের মধ্যে ১৪ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) দেশে নতুন করে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত ২ হাজার ৮২৩ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা গত ২৪ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে এর চেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গিয়েছিল ১৩ আগস্ট ২ হাজার ৯০৫ জন। নতুন রোগীদের মধ্যে ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৮১৮ জন ও ঢাকায় ১ হাজার ৫ জন।
এ নিয়ে এখন পর্যন্ত এ বছর ডেঙ্গুতে মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ৩৩ হাজার ১৩৪ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাইরে রোগীর সংখ্যা ৭১ হাজার ৬৪৫ জন ও ঢাকায় ৬১ হাজার ৪৮৯ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় এই প্রথমবারের মতো ঢাকার বাইরে ঢাকার চেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আরও ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকায় মারা গেছে চার জন ও ঢাকার বাইরে আটজন। অর্থাৎ ঢাকার বাইরে মৃত্যু ঢাকার চেয়ে দ্বিগুণ।
এ নিয়ে এখন পর্যন্ত এ বছর মোট মারা গেল ৬৪৬ জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় মারা গেছে ৪৬৮ জন ও ঢাকার বাইরে ১৭৮ জন। মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে বেশি নারী ৩৭৬ জন ও কম পুরুষ ২৭০ জন। অথচ আক্রান্ত বেশি হয়েছে পুরুষ ৬২ শতাংশ ও নারী ৩৮ শতাংশ।
এদিকে এ মাসের চার দিনেই ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৫০ ছাড়িয়েছে। মোট মারা গেছে ৫৩ জন। অর্থাৎ এ মাসের প্রথম চারদিনে দৈনিক গড় মৃত্যু ছিল ১৩ জন। অথচ গত আগস্টে গড় মৃত্যু ছিল ১১ জন। সে হিসেবে এ মাসে মৃত্যু বেড়েছে। এ মাসে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছে ৯ হাজার ৩১৭ জন।
গত ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে এক লাখ ২৩ হাজার ৪১৯ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৫৬ হাজার ৯৬৯ জন এবং ঢাকার বাইরের ৬৬ হাজার ৪৫০ জন।
প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়নের ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে বড় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বলা যায়, লুটপাটের প্রকল্পে পরিণত হয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আওতাধীন ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি)’। সবচেয়ে বড় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে দরপত্রে ও কেনাকাটায়।
আধুনিক ব্যবস্থাপনা ও ডেইরি পণ্য উৎপাদনে খামারিদের সহায়তার জন্য কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হলেও তা প্যাকেটবন্দি অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ৯২ শতাংশ খামারি যন্ত্রপাতি পায়নি। ঘাসচাষের নামেও টাকা ভাগাভাগির অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে এ প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ জমা পড়েছে।
প্রকল্পভুক্ত ৪৬৫টি উপজেলায় ঘাসচাষের জন্য প্রতি বছর ৬৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কোথায়ও নামেমাত্র ঘাসচাষ হয়। বাকি উপজেলাগুলোতে ঘাসচাষের টাকা ভাগাভাগি করে নেওয়া হচ্ছে। একজন ডিপিডি প্রতি উপজেলা থেকে ঘাসচাষ বাবদ ৫ হাজার টাকা নেন। প্রায় ২৩ লাখ টাকা এ খাত থেকেই আত্মসাৎ করা হচ্ছে। সরেজমিনে বেশিরভাগ উপজেলাতেই ঘাসচাষের প্রমাণ মিলবে না।
প্রকল্পের ইমার্জেন্সি অ্যাকশন প্ল্যান অনুযায়ী করোনায় প্রকল্প-এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত খামারি ও খামারি সংগঠনের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ৬০০টি হস্তচালিত (ঘণ্টায় ৬০ লিটার উৎপাদনক্ষম), ৫০০টি মেশিনচালিত (ঘণ্টায় ১৬৫ লিটার উৎপাদনক্ষম) ও ৪০০টি মেশিনচালিত (ঘণ্টায় ৫০০ লিটার উৎপাদনক্ষম) মিল্ক ক্রিম সেপারেটর মেশিন কেনা হয়েছে ১০ কোটি ৮২ লাখ টাকায়। মেশিনগুলো ২০২১ সালের আগস্টে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার অফিসে পাঠানো হয়। এখনো অনেক মেশিন বিতরণ করা হয়নি। মানসম্পন্ন না হওয়ায় ৮০ শতাংশ মেশিন অকেজো হয়ে আছে।
এলডিডিপি প্রকল্পের আওতায় ৩৬০টি ডিজিটাল আল্ট্রাসাউন্ড মেশিন কেনা হয়েছে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে। নিম্নমানের হওয়ায় তা চালু হয়নি, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার অফিসেই পড়ে আছে। খামারে ভ্যাকসিনেশনের জন্য সিরিঞ্জ, নিডল, কুলবক্সসহ নানা জিনিসপত্র কেনার ২ কোটি ১০ লাখ ৬১ হাজার টাকার আদেশ হয়েছে এবং বিল মেটানো হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে সেগুলোর বড় অংশ মাঠপর্যায়ে সরবরাহ না করে কালোবাজারে বেচে দেওয়া হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে ল্যাবরেটরির জন্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের কাজের জন্য ৭৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকার কার্যাদেশ হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়েছে কি না কেউ বলতে পারে না। ওইসব ল্যাবে আগেই উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বায়োরেক্টর, ল্যাপটপ ও কম্পিউটার ছিল। প্রকল্পের আওতায় ৩০০ লিটার ক্যাপাসিটির ৫২৪টি ডিপ ফ্রিজ কেনা হয় ১ কোটি ৯৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা ব্যয়ে। ডিপ ফ্রিজগুলো সরবরাহের দুই বছর পরেই খামারে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এলডিডিপি প্রকল্পের মাধ্যমে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং সাপোর্ট অব ডিএলসির জন্য ৩০টি ল্যাপটপ ও কম্পিউটার (প্রিন্টার, স্ক্যানার ও অনুষঙ্গিক জিনিসপত্র) কেনা হয় ৪৮ লাখ ৯৫ হাজার ৫৮০ টাকা ব্যয়ে। কিন্তু সেগুলো সংশ্লিষ্টদের না পাঠিয়ে সরাসরি প্রকল্প থেকে গ্রহণ করা হয়। প্রতিটি ল্যাপটপের দাম দেখানো হয় ১ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এগুলো বাজারে কোনো অবস্থাতেই ৮০ হাজার টাকার বেশি হবে না।
করোনাকালে ইউনিয়ন পর্যায়ে সরবরাহের জন্য প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২ কোটি টাকার হেলথ সেফটি আইটেম (সার্জিক্যাল মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোভস, অ্যান্টিসেপটিক, ব্লিচিং পাউডার প্রভৃতি) কেনা হয়। সেসব সরবরাহ করা হয়েছে কি না, তার প্রমাণ নেই।
প্রকল্পের আওতায় বিভাগীয় ও জেলা দপ্তরে ব্যবহার্য দ্রবাদি কেনার জন্য প্রতি কোয়ার্টারে ৩০ হাজার টাকা করে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। অথচ একই কেনাকাটার জন্য রাজস্ব খাত থেকেও বরাদ্দ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্প বরাদ্দের অর্ধেক টাকা একজন ডিপিডির মাধ্যমে কমিশন হিসেবে নিয়ে নেওয়া হয়।
তবে উপ-প্রকল্প পরিচালক (ডিপিডি) ড. এবিএম মুস্তানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দরপত্র আহ্বান, মূল্যায়ন ও কার্যাদেশ পৃথকভাবে করা হয়। একাধিক কর্মকর্তা এর সঙ্গে জড়িত থাকেন। কোনো ব্যাপারেই আমার ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই। অনিয়মের সঙ্গেও আমি জড়িত নই।’
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) গত জুনের পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে প্রকল্পে নানা অনিয়ম ও অব্যস্থাপনার কথা। বলা হয়েছে, ৯২ শতাংশ খামারি প্রকল্প থেকে কোনো যন্ত্রপাতি পায়নি। প্রকল্প থেকে শুধু ক্রিম সেপারেটর মেশিন দেওয়া হয়েছে, যেসবের বেশিরভাগ খামারি ব্যবহার শুরু করতে পারেনি। খামারিদের মাত্র ৯.৪ শতাংশ প্রকল্প থেকে গবাদি পশুর জন্য ৫০ কেজি দানাদার সুষম খাদ্য পেয়েছে। ৭৯ শতাংশ খামারি গবাদি পশুর জন্য কৃত্রিম পদ্ধতির প্রজনন সেবা পায়। ৫০.৪ শতাংশ খামারে খুরারোগ, এফএমডি ও মুখের লালা রোগ দেখা দিয়েছে। ৯৮.২ শতাংশ খামারি স্বাস্থ্যসেবা, ৯৭.৫ শতাংশ খামারি কৃমিনাশক ও ৮৪.৭ শতাংশ খামারি ভ্যাকসিন পেয়েছে। জরিপকৃত খামারিরা প্রকল্প থেকে কোনো পোলট্রির খাদ্য পায়নি। ২৯.৮ শতাংশ খামারি প্রকল্প থেকে কভিড-প্রণোদনা পেয়েছে।
৪ হাজার ২৮০ কোটি ৩৬ লাখ টাকার এলডিডিপি প্রকল্প ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়েছে। এ প্রকল্পে ৩ হাজার ৮৮৫ কোটি ৭৩ লাখ ৭ হাজার টাকার অর্থায়ন করেছে বিশ্বব্যাংক। সাড়ে চার বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি ৪৭.০৮ শতাংশ। আগামী ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মেয়াদ আরও ২২ মাস বাড়ছে বলে সূত্র জানিয়েছে। প্রাণিজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, মার্কেট লিংকেজ ও ভ্যালু-চেইন সৃষ্টি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিদের জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, নিরাপদ প্রাণিজ খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাত ও বিপণন এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে প্রাণিসম্পদ খাতে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন এ প্রকল্পের লক্ষ্য। অনিয়মের কারণে লক্ষ্য অর্জন এখনো অনেক দূরে।
সূত্র জানায়, এলডিডিপি প্রকল্পের ডিপিপিতে অনুমোদিত প্যাকেজ ২৮৬টি। প্যাকেজ জি-৩৯-এর জন্য ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ১৭ কোটি ১২ লাখ ২৪ হাজার টাকায় দরপত্র পায় বাংলাদেশ সায়েন্স হাউজেস। ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই প্যাকেজ-২৭-এর জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। প্রায় ৪ কোটি টাকায় কার্যাদেশ পায় এমএস মাসতুরা এন্টারপ্রাইজ। একই বছরের ১৫ জুলাই মাসতুরা এন্টারপ্রাইজ ১ কোটি ২৫ লাখ ৫৭ হাজার ৯৮৭ টাকায় প্যাকেজ ডব্লিউ ৮৮-এর কাজ পায়।
আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্যাকেজের দরপত্র প্রক্রিয়া প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়নি।
নির্বাচনের আগে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি এ সময়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম না বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সেই সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমতে পারে। বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
গত ১৪ বছরে সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কারণে শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎসুবিধার আওতায় এসেছে। পাশাপাশি বিদ্যুতের যে ভয়াবহ লোডশেডিং ছিল তা এখন আর নেই। তবে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়লেও জ্বালানি সংকটের কারণে সাশ্রয়ী দামে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসেবা পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। মূলত বিদ্যুৎ খাতে টেকসই উন্নয়ন না হওয়ার কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বিদ্যুৎ নিয়ে প্রায় এক যুগ ধরে ফুরফুরে মেজাজে থাকা সরকার ধাক্কা খায় গত বছরের শেষ দিকে। ১৪ বছর আগের সেই লোডশেডিং আবার মাঝেমধ্যে ফিরে আসায় মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। নানা কৌশলে সরকার সেই পরিস্থিতি সামাল দিয়ে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক রেখেছে। নির্বাচনের আগে যাতে নতুন করে পরিস্থিতির অবনতি না হয়, সে জন্য সরকার সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা।
জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নতুন কোনো সংকট তৈরি না হলে বিদ্যুতের এই স্বাভাবিক পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে। কারণ আর কিছুদিন পরই শীতের প্রভাবের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাবে। পাশাপাশি বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা আরও বাড়বে। ইতিমধ্যে ভারতের আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোদমে উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করেছে। এ ছাড়া এস আলমসহ আরও কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। সবকিছু ঠিক থাকলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে বলে আমরা আশা করি।’
চলতি বছরের শেষ দিকে অথবা জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। যদিও নির্বাচন নিয়ে নানা রকম সংশয়, আলোচনা-সমালোচনা চলছে। তারপরও নির্বাচনের আগে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছে সরকার।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে টানা তৃতীয় মেয়াদে দেশ পরিচালনাকারী এই সরকার প্রথম মেয়াদে ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে। তখন দেশে ২৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে থেকে গ্রিডভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা বেড়ে ১৫৩ এবং বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৫ হাজার মেগাওয়াট (আমদানি ও অনগ্রিড নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ)। যদিও এখন পর্যন্ত গত ১৯ এপ্রিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। চলতি বছর দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১৭ হাজার মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, তামপাত্রা কমতে থাকার কারণে নির্বাচনের আগমুহূর্তে বিদ্যুতের চাহিদাও অনেকটাই কমে যাবে। তা ছাড়া এই সময়ে নির্মাণাধীন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে বেশ কিছু কেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। ফলে জাতীয় গ্রিডে আমদানিসহ আরও প্রায় ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হওয়ার কথা রয়েছে। নতুন উৎপাদনে আসা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে এস আলম ও ভারতের আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্রের আপাতত কয়লা নিয়ে সংকট হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রেও কয়লার সংকট থাকবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে পায়রার বকেয়া নিয়ে যে জটিলতা ছিল তা অনেকটাই কেটে গেছে। এরপরও যদি ডলার কিংবা জ্বালানি নিয়ে সংকট দেখা দেয় তাহলে এই খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে যেভাবেই হোক বিদ্যুতের উৎপাদন স্বাভাবিক রাখবে সরকার। সব মিলে লোডশেডিং তেমন একটা থাকবে না। তবে বিতরণ ও সঞ্চালন লাইনের ত্রুটির কারণে এলাকাভেদে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের আশঙ্কা রয়েছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, কিছুদিন আগে বিদ্যুতের যে লোডশেডিং ছিল তা কিছুটা সামাল দিতে পেরেছে সরকার। এর মূল কারণ হলো বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাওয়া। ঈদের আগে প্রচন্ড যে গরম ছিল তা এখন অনেক কমে গেছে। তারপরও বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ নিয়ে চলমান সমস্যার মূল কারণ হলো ডলার ও জ্বালানির সংকট। নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শীতের সময় এমনিতেই বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকবে। সরকার চাইলে তখন তিন থেকে চার মাসের জন্য যেকোনো মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পারবে। কিন্তু পরে আবার পরিস্থিতি আগের অবস্থায় চলে যাবে। কারণ বিদ্যুৎ খাতের যে উন্নয়ন তা টেকসই নয়। ফলে নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র এলেও জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। দিন দিন বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ার কারণে সাশ্রয়ী দামে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে পারছে না সরকার।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বাড়ানোর কারণে সাধারণ মানুষের মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আইএমএফের ঋণ নিতে তাদের শর্ত পূরণ করতে ভর্তুকি সমন্বয়ের নামে গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী আদেশে চলতি বছর গ্রাহকপর্যায়ে তিন দফায় বিদ্যুতের দাম অন্তত ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্যাসের দামও বাড়িয়েছে সরকার। গত জানুয়ারিতে চার শ্রেণির গ্রাহকের গ্যাসের দাম অস্বাভাবিক হারে ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এমন পরিস্থিতিতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানো হচ্ছে, যখন নিত্যপণ্যের চড়া দামে মানুষ সংকটে রয়েছে। ডলার সংকটসহ নানা কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি কমে যাওয়ার পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও কমেছে। একদিকে বিদ্যুৎ-সংকট, অন্যদিকে দাম বৃদ্ধি এসব নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপি ও নেতাকর্মী তাদের নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে বেশ অস্বস্তিতে পড়েন। সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে আগে থেকেই। নতুন করে আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত এ বছর বিদ্যুতের দাম আর না বাড়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা যাচ্ছে এখন পর্যন্ত।
এদিকে গত ২ মে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) জমা দেওয়া মিটারবিহীন আবাসিক গ্যাস গ্রাহকদের বিল পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত তিতাস গ্যাসের আবেদনের বিষয়টি স্থগিত রয়েছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন জানিয়েছে, অন্যান্য বিতরণ কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে পেট্রোবাংলা সমন্বিত প্রস্তাব জমা দিলে তারপর নিয়ম অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তিতাস গ্যাসের ওই প্রস্তাব দেওয়ার পর দেশ রূপান্তরসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। কারণ তিতাসের ওই আবদার পূরণ হলে আবাসিকে মিটারবিহীন এক এবং দুই চুলার গ্রাহকের ক্ষেত্রে অন্তত ৩৯ থেকে ৪৭ শতাংশ গ্যাসের দাম বাড়বে। আপাতত গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পদক্ষেপ থেকে সরে এসেছে সরকার।
নির্বাচনের আগে নতুন করে আবার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঝুঁকি সরকার নেবে না বলে মনে করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা।
গ্যাস-বিদ্যুতের দাম না বাড়লেও জ্বালানি তেলের দাম কমতে পারে এমন আভাস পাওয়া গেছে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতির দিকে। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত জ্বালানি তেলের দাম কমতে থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে গোল্ডম্যান স্যাকস। দাম কম থাকায় দীর্ঘ সময় ধরেই তেল বিক্রি করে লাভ করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন। পাশাপাশি জ্বালানি তেল আমদানির ওপর ৫ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আগে জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমাতে পারে সরকার।
গত ২৯ মে রাজধানীতে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ (এফইআরবি) আয়োজিত এক সেমিনারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জ্বালানির দাম কমানোর বিষয়ে ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, ‘জনগণকে স্বস্তি দিতে তেল ও কয়লার দামের সমন্বয় দরকার। এসব বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যে আলোচনা করছি।’
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। হাসপাতাল গঠিত মেডিকেল বোর্ড বারবার পরামর্শ দিচ্ছে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে। পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার আবেদন করা হলেও সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে না। এদিকে গত রবিবার খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য।
গতকাল সোমবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত মাসে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে কর্মসূচি পালন করেছি। তিনি এখন এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত মাসের ৯ তারিখে ভর্তি করা হলেও এখন পর্যন্ত তার অবস্থার উন্নতি হয়নি। চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে বারবার পরামর্শ দিচ্ছেন। দ্রুত তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে না পাঠালে এক দফার কর্মসূচির সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে কর্মসূচির ঘোষণা আসবে।’
বিএনপির ওই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে ১৬ আগস্ট সারা দেশে মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দোয়া মাহফিলের কর্মসূচি পালন করেছি। ১৭ আগস্ট খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে সারা দেশে প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছে। একই দাবিতে ১৯ আগস্ট সারা দেশে পদযাত্রা এবং ১৮ আগস্ট সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ঢাকা মহানগরসহ সব মহানগরে গণমিছিলের কর্মসূচি পালন করেছি।’
বিএনপি নেতা ও সাবেক এক আমলা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিহিংসাপরায়ণ এক নেতা। খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তার চিকিৎসায় দলের গঠিত মেডিকেল বোর্ড এমনকি এভারকেয়ার হাসপাতাল গঠিত মেডিকেল বোর্ড বারবার তাগাদা দিচ্ছে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে। পরিবারের সদস্যরা একাধিকবার সরকারের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। সরকার কোনো পাত্তা দিচ্ছে না।’ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘গত শনিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিঙ্গাপুরে চেকআপ শেষে দেশে ফিরেছেন। আগামীকাল (আজ) স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের দেশে ফেরার কথা রয়েছে। স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্য মির্জা আব্বাস আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে চলে আসবেন। সবারই চিকিৎসা হচ্ছে, শুধু হচ্ছে না বিএনপি চেয়ারপারসনের।’
এদিকে চেকআপ শেষে দেশে ফিরে গত রবিবার রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি গতকাল সোমবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভালো নেই চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দ্রুত তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন হাসপাতাল গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা। কিন্তু সরকার ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি দিচ্ছে না। হাসপাতাল গঠিত মেডিকেল বোর্ড ও ব্যক্তিগত চিকিৎসক দল অবিলম্বে চেয়ারপারসনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।’
খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপি চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য গত ৯ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল চেয়ারপারসনকে। এরপর থেকে হাসপাতাল গঠিত মেডিকেল টিমের সদস্যরা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে। কবে নাগাদ বাসায় ফিরতে পারবেন তা এখনই বলা যাচ্ছে না।’
গত রবিবার রাতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য সাংবাদিকদের বলেন, ‘খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। কয়েকটি টেস্ট করা হয়েছে তার। এসব টেস্টের ফলাফল দেখে উদ্বিগ্ন মেডিকেল বোর্ড। তিনি জানান, খালেদা জিয়ার পেটে পানি বেড়েছে। ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স দেখা দিয়েছে। এ কারণে ঘুম হচ্ছে না। অবস্থা ভালো নয়। কয়েক দিন ধরে অবনতি হচ্ছে। বোর্ড নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার লিভারের সমস্যা জটিল হচ্ছে। এটার আসলে শতভাগ চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়। বোর্ড সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু একাধিক জটিলতা থাকায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাকে বারবার মাল্টিপল ডিজিজ সেন্টারে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রেশার ও ডায়াবেটিসসহ স্বাস্থ্যের প্রায় সবকটি প্যারামিটারই ওঠানামা করছে।’
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ২০১৮ সালে কারাদ- দেওয়া হয়েছিল খালেদা জিয়াকে। কিন্তু বয়স ও অসুস্থতার কারণে এবং পরিবারের সদস্যদের আবেদন বিবেচনা করে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাকে শর্ত সাপেক্ষে জামিন দেওয়া হয়েছিল। শর্ত ছিল, তিনি কোনো রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ বা অন্য কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন না। তাকে বাড়িতে থাকতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।
এদিকে অসুস্থতার কারণে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে বিএনপি। তারা জানিয়েছে, চেয়ারপারসনকে বিদেশে নিয়ে উন্নতমানের চিকিৎসা করানো প্রয়োজন।
নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান মামলার বিচার কার্যক্রম স্থগিতের অনুরোধ জানিয়ে বিশ^নেতাদের খোলাচিঠির বিষয়ে পাল্টা প্রতিবাদ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করবেন না বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া। বিচারের নামে ড. ইউনূসকে বিচারিক হয়রানি করা হচ্ছে বলে মনে করছেন রাষ্ট্রপক্ষের এই আইন কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, ড. ইউনূসের মামলা নিয়ে বিশ্ব নেতাদের উদ্বেগ ও বিবৃতি সঠিক। তাই বিবেকের তাড়নায় এর পাল্টা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করবেন না। তবে পাল্টা বিবৃতি বা এতে স্বাক্ষরের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে আইন কর্মকর্তাদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলে দেশ রূপান্তরকে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। অন্যদিকে সাধারণ আইনজীবীদের ব্যানারে বিবৃতিতে স্বাক্ষর নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক আইন কর্মকর্তা। এদিকে গ্রামীণ টেলিকমের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় কল কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষে আরেকজন আইনজীবী নিযুক্ত করায় শুনানি না করার ঘোষণা দিয়েছিলেন এই মামলায় প্রথম নিযুক্ত আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। গতকাল সোমবার তিনি দেশ রূপান্তরকে এ কথা বললেও পরে নতুন করে শুনানিতে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমি একক আইনজীবী হিসেবে আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকে শুনানি করব।’
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জ্যেষ্ঠ প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলীকে গত সপ্তাহে নিযুক্ত করে বলে গত রবিবার দেশ রূপান্তরকে তিনি (হায়দার আলী) জানান। তবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকলে এ মামলায় শুনানিতে অস্বীকৃতি জানান অ্যাডভোকেট খুরশীদ। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।
২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা (অ্যাটর্নি জেনারেল) ছাড়াও এই মুহূর্তে উচ্চ আদালতে তিনজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, ৬০ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও ১৪৯ জন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলসহ রাষ্ট্রপক্ষে ২১৩ জন আইন কর্মকর্তা মামলা পরিচালনা করছেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত রবিবার তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের আইন কর্মকর্তাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বিবৃতিতে স্বাক্ষরের নির্দেশনা পান। এ জন্য গতকাল বিকেল ৪টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। তবে তিনি স্বাক্ষর না করে নিজেকে বিরত রাখেন। বিবেকের তাড়নায় এবং ব্যক্তিগতভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান। এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া বলেন, ‘১০৭ জনের বেশি নোবেল বিজয়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে যে বিবৃতি দিয়েছেন, তাদের সঙ্গে আমি একমত। আমার কাছে মনে হয়েছে এটা (ড. ইউনূসের বিচার) একধরনের বিচারিক হয়রানি। তাই আইনজীবীদের এ ধরনের প্রতিবাদ বিবৃতি সঠিক মনে হয়নি।’
রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘শ্রম আদালতে প্রচুর পুরাতন মামলা বিচারাধীন আছে। এটার (ড. ইউনূসের) আগেও অনেক মামলা আছে। কিন্তু এই মামলা দ্রুতগতিতে চলছে। এটা নিয়ে আমার প্রশ্ন রয়েছে। যে কারণে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করিনি।’
এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আমরা কোনো বিবৃতি দিইনি। তৈরিও করিনি। এটা উনি (এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া) কেন করেছেন তা উনিই বলতে পারবেন। তার হয়তো কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কিন্তু তাকে কি কেউ বলেছে যে স্বাক্ষর করতেই হবে? তিনি বিবৃতিটা দেখাক না। তাহলেই তার বক্তব্য সঠিক কি না, জানা যাবে। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে কেউ তো বিবৃতিই তৈরি করেনি।’
সাধারণ আইনজীবীদের ব্যানারে বিবৃতিতে স্বাক্ষর নেওয়া হচ্ছে কি না, তা তার জানা নেই বলেও জানান এ এম আমিন উদ্দিন। তবে রাষ্ট্রপক্ষের একাধিক আইন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ড. ইউনূসের মামলা নিয়ে বিশ্বনেতাদের বিবৃতির প্রতিবাদে সাধারণ আইনজীবীদের ব্যানারে বিবৃতিতে স্বাক্ষর নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক আইনজীবী তাতে স্বাক্ষর করেছেন।
ড. ইউনূসের মামলায় আইনজীবী নিয়োগের বিষয়ে অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, দুই বছর আগে এই মামলার শুরু থেকে বাদীপক্ষে তাকে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। মামলাটি এখন সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। এই পর্যায়ে এসে মামলায় একপক্ষে যদি দুজন আইনজীবী থাকেন তাহলে তিনি শুনানি করবেন না। নিজেকে প্রত্যাহার করে নেবেন।
এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘শুনেছি মন্ত্রণালয় থেকে একজন আইনজীবী দেওয়া হয়েছে। এখন যদি দুজন আইনজীবী থাকেন, তাহলে আমি মামলা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতিমধ্যে বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। তারা কী সিদ্ধান্ত দেয়, সেটি দেখব। যদি ওই সিদ্ধান্তই (দুজন আইনজীবী) বহাল থাকে, তাহলে আমি শুনানি করব না।’
গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা এবং গণছুটি নগদায়ন না করাসহ শ্রম আইনের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ এনে ড. ইউনূস, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, দুই পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার শ্রম আদালতে মামলা করে কল কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। গত ৬ জুন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর আদেশ দেয়। অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন ড. ইউনূস। গত ২৩ জুলাই অভিযোগ গঠন বাতিল প্রশ্নে রুল দেয় হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত ৩ আগস্ট আপিল বিভাগ মামলার কার্যক্রম বাতিল প্রশ্নে রুলের শুনানি করতে বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ নির্ধারণ করে দিয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুল নিষ্পত্তি করতে আদেশ দেয়। ১৭ আগস্ট হাইকোর্ট রুল খারিজ করে রায় দেয়। ২২ আগস্ট ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ড. ইউনূস ও শাহজাহানকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত।
‘কমিটি-বাণিজ্য’ ঘোরতর এ অভিযোগ গত দুই যুগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যারাই হয়েছেন তাদের সঙ্গেই জড়িয়ে থেকেছে। কিছু অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে, কিছুর মেলেনি। তবে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ ঘটার প্রমাণ ভূরি ভূরি। এ সত্য চিরন্তন সত্যের রূপ পেয়েছে গত ১৪ আগস্ট জামায়াত নেতা একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে আমৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের যে পরিমাণ নেতা শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে সামাজিক বিভিন্ন যোগাযোগমাধ্যমে বক্তব্য-বিবৃতি প্রকাশ করেছেন, তাতে ছাত্রলীগে ‘আগাছা’ ঢুকেছে এবং ছাত্রলীগে কমিটি-বাণিজ্য বর্তমান এ সত্যকেই প্রমাণ করেছে এবং করছে।
শুধু কমিটি-বাণিজ্যই ছাত্রলীগের এ অধঃপতনের মূল কারণ নয়। সংগঠনের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালনকারী নেতারা বলেন, আদেশ-নির্দেশ, অনুরোধ ও আর্থিক লেনদেনের মধ্য দিয়ে নেতা বানানোর পথ সৃষ্টি করেই ছাত্রলীগে আগাছা-পরগাছার প্রবেশ ঘটছে। তারা বলেন, নেতা হওয়ার পূর্বশর্ত মাঠের অ্যাকটিভিটিজ। নেতা হওয়ার ক্ষেত্রে এখন সেটি গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ছাত্রলীগে ভর করার সুযোগ পেয়েছে। আগাছার চাষই হয়েছে গত দুই যুগে।
সাবেক নেতারা বলেন, গত দুই যুগে অনুরোধ ও আর্থিক লেনদেনের মধ্য দিয়ে নেতা বানানোর চর্চা হয়েছে বেশি। আর নেতা হয়েই সুযোগে তারা জানান দিচ্ছে, ‘আমরা ছাত্রলীগ নই’। এ প্রসঙ্গে খেদোক্তি করেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুলতান মনসুর ও সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।
গত ২০ আগস্ট সাঈদী-অনুসারী ১৫ নেতাকে অব্যাহতি দিয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ। জেলা সভাপতি দীপঙ্কর কান্তি দে ও সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান রিপন স্বাক্ষরিত ওই অব্যাহতিপত্রে ১৫ জনকে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া জামালপুরে ১৮, চট্টগ্রামে ১৬, পাবনায় ৭, নরসিংদীতে ৬, সাতক্ষীরায় ৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লোহাগড়ায় ৯, ফরিদপুরে ৯ জনকে এবং গতকাল সোমবার কুমিল্লায় ছাত্রলীগের ২৫ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে এ সংগঠনের চার শতাধিক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কার অব্যাহত রয়েছে। আগাছা-পরগাছামুক্ত করে সুশৃঙ্খল সংগঠনে পরিণত করার জন্য একাধিকবার তাগিদ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তারপরও থেমে নেই নীতি-আদর্শে অবিশ্বাসী ছাত্রনেতাদের ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ। সাঈদীর মৃত্যুতে মুখোশের আড়াল থেকে আগাছাদের আসল চেহারা বেরিয়ে পড়েছে।
সাঈদীর পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ শুরু করে একটি বিশেষ মহল। তাদের আদ্যোপান্ত খুঁজে দেখা যায় শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির ধারায় বিশ্বাস করে যে সংগঠন, মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেছে যে সংগঠন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে সংগঠনের কর্মীরা পরিচালিত হয়েছে সে সংগঠনের কর্মীরাই কিনা যুদ্ধাপরাধের, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে দণ্ডিত সাঈদীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে! এদের পরিচয়ের মূলে তাহলে কী?
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগাছার ছাত্রলীগে ভর করার ঘটনা দুঃখজনক। বিভিন্ন সময় ওদের হাতে সুযোগ এসেছে, ওরা ঢুকে পড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘স্রোতের সঙ্গে রুই-কাতলা, বোয়াল ও পুঁটি মাছ ঢুকে পড়ে। ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্বকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, এসব আগাছা নেতাদের তালিকা করার এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার এ প্রসঙ্গে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ ঘটনাকে শুধু অনুপ্রবেশের ঘটনা হিসেবে দেখলে সংশ্লিষ্টরা দায় চাপানোর এবং খালাস পেয়ে যাওয়ার সুযোগ পান। তাতে ঠিক শিক্ষা নেওয়া হয় না। এতে খণ্ডচিত্র প্রকাশিত হয়। সাঈদীর মৃত্যুর পর যে চিত্র পাওয়া গেছে, এ সংগঠনের নেতাকর্মীদের কর্মকাণ্ডে যা দেখা গেছে তা দুঃখজনক।’
অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘পুরো ঘটনাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখলে হবে না। আমি বলতে চাই, সাধারণ শিক্ষার্থীরা সংগঠনে ঢুকেছে অতি সাধারণভাবে, আকৃষ্ট হয়ে বা পছন্দ করে। আজকের চিত্র দেখে আমি বলতে চাই, নীতি-আদর্শের চাষবাস না হওয়া একটা নেতিবাচক আবহ তৈরি করেছে ছাত্রলীগে। যারা ঢুকে পড়েছে তাদের ভেতরে নীতি-আদর্শের প্র্যাকটিস করানো হলে ফল অন্যরকমও হতে পারত।’
ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের দাবি, টানা ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষমতার প্রভাব, জানান দেওয়ার মানসিকতা, ক্ষমতা ধরে রাখার মহাযুদ্ধ। তৃণমূলে এ যুদ্ধ সবচেয়ে বেশি। ফলে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করেন সবাই। ‘নিজের লোক’কে পদ পাইয়ে দিতে আর কিছু দেখা হয় না। তারা দেখে ‘ভাইলীগ’ কতটা শক্তিশালী হলো।
প্রয়োজনে সুবিধাবাদীদের চিহ্নিত করতে ছাত্রলীগে শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা। তারা বলছেন, যুদ্ধাপরাধীর পক্ষ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সহানুভূতি প্রকাশ করে কেউ ছাত্রলীগ করতে পারবে না। সব সাংগঠনিক ইউনিটকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এ ধরনের সবাইকে বহিষ্কার করতে বলা হয়েছে।
ছাত্রলীগে এত আগাছা কেন এমন প্রশ্নে সংগঠনটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিচয় আড়াল করার চেষ্টা করে সুযোগ নেওয়ার কারণে অনুপ্রবেশ ঘটেছে। তবে আমরা সমন্বিত উদ্যোগে শক্ত বাঁধ তৈরি করছি। আমরা অভিযান শুরু করেছি। ওদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। পবিত্র ধর্মকে হাতিয়ার করা এ দেশে বেশ পুরনো। রাজনৈতিক চেতনার ওপর ধর্মচেতনা এ কথাই এরা ছাত্রদের মাথায় ঢুকিয়েছে। ছাত্রলীগে শুদ্ধি অভিযান শুরু হবে। এ ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি।’
ছাত্রলীগের শীর্ষ এ নেতা বলেন, ‘ফেইসবুক থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং বিভিন্ন তথ্য যাচাই-বাছাই হচ্ছে। সরকারি দল হওয়ায় অনুপ্রবেশকারী থাকেই। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে ছাত্রলীগ তার নৈতিক শুদ্ধতা প্রমাণ করেছে।’
সাদ্দাম আরও বলেন, ‘অতীতে সংগঠনে অনুপ্রবেশকারী ও মুখোশ পরা কাউকে চিহ্নিত করা হয়নি। এখন আমরা চিহ্নিত করছি, ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের কারণে চলমান রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে নতুন করে উত্তাপ তৈরি হয়েছে। দুই দলের এ পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের মূল টার্গেট ঢাকা দখলে নেওয়া। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসা নিতে বিদেশ পাঠাতে রবিবার বিএনপি ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে। পাল্টা জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও একই পথে হেঁটেছে। বিএনপিকে ‘আগুন সন্ত্রাস, অপরাজনীতি ও নাশকতার রাজনীতি’ ছাড়ার জন্য সোমবার ৩৬ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এরপর পাল্টা ৩৬ ঘণ্টার হুঁশিয়ারি এসেছে বিএনপির কাছ থেকে।
তার আগে গত শনিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে আবেদন করলে অনুমতির বিষয়টি দেখা যাবে। তবে তার কাছে এরকম কোনো কাগজপত্র আসেনি। ওইদিনই খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার বলেছেন, সরকারের মনোভাব ইতিবাচক হলে তারা আবারও আবেদন করবেন।
পরদিন রবিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আলটিমেটাম দেন। ওইদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে বিএনপি বলছে, সরকার চাইলে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে পারে।
দুই দলের রাজনীতি ও ঘোষিত আলটিমেটাম মাঠের রাজনীতিতে কোনো পরিবর্তন আনবে কি না, সে সম্পর্কে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। বিএনপির আলটিমেটামের ফল কী হবে আর আওয়ামী লীগেরও দীর্ঘ ৩৬ দিনের আলটিমেটাম কেন এ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভেতর বেশ কৌতূহল দেখা দিয়েছে।
দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত রাজধানী ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এমন পাল্টাপাল্টি আলটিমেটাম। ঢাকায় বিএনপির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার কৌশলের অংশ হিসেবেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইস্যুতে দলটি আলটিমেটাম দিয়েছে। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতেই তার পাল্টা জবাব দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
দুই দলের ওই নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির রাজনীতির মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা। ঢাকার রাজনীতি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের করে আনতে না পারলে রাজনীতিতে জুতসই অবস্থান সৃষ্টি করতে পারবে না বিএনপি।
সারা দেশের নিয়ন্ত্রণে রাখা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেয়ে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রাজনৈতিক জয়-পরাজয় নির্ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিএনপির ওই শীর্ষসারির নেতারা। তাই বিএনপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসাকে ইস্যু করে নেতাকর্মীদের ঢাকায় ডেকে পাঠানোর কৌশল গ্রহণ করেছে। পর্যাপ্ত নেতাকর্মী ঢাকায় ঢুকে গেলে অবস্থা বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তাই ইস্যু খালেদার চিকিৎসা, কিন্তু লক্ষ্য ঢাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ৩৬ দিনের আলটিমেটামের পেছনে রয়েছে নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার আগপর্যন্ত ঢাকায় নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখা। সেই সঙ্গে নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে নির্দেশনা দিয়ে রাখা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে ততই ষড়যন্ত্রের নীল নকশা আঁকছে।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের শান্তি যেন বিঘিœত না হয়, সেজন্যই আমরা বিএনপির কর্মসূচির দিন মাঠে থাকি। বিএনপিকে জনগণ বিশ্বাস করে না। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে সত্যিই নিতে চাইলে আলটিমেটাম কেন দেবে বিএনপি? আইনি জটিলতা নিরসন করে বিদেশ নেওয়ার চেষ্টা করবে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘বিএনপি সন্ত্রাস-সহিংসতানির্ভর রাজনীতি করে, বিশ্বাস করে। তারা পাকিস্তানের প্রেতাত্মা।’ তিনি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করাতে চাইলে কেন বিএনপি আইনি প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে না? তার কিছু হলে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দায় নিতে হবে।’
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দুই দলের ঘোষিত আলটিমেটামকে কথার বাকযুদ্ধ হিসেবে নিয়েছেন। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এগুলো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের অবস্থান ধরে নেওয়া যায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে তাদের কোনো গা নেই। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিভিন্ন বক্তব্যে সেটাই স্পষ্ট করেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে হলে আইনগতভাবে যেতে হবে। নির্বাহী কোনো সিদ্ধান্তে এ সুযোগ দেওয়া হবে না। ফলে আলটিমেটাম মূলত নিষ্ফল হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দাবি আদায় করার জন্য জনগণ থেকে দাবি উঠতে হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণকে রাস্তায় নামাতে পারবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘এখন যেসব বক্তব্য এগুলো মঞ্চের বাকযুদ্ধ।’
বিএনপির আলটিমেটাম নিয়ে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারব না। আমি (গতকাল মঙ্গলবার) সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষ করে এসেছি।’ আলটিমেটামের পেছনে ঢাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় তো আমরা সভা-সমাবেশ করছিই।’
জানতে চাইলে বিএনপির আরেক নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আলটিমেটাম সম্পর্কে ক্লিয়ার কিছু জানি না।’
বিএনপিকে ‘অপরাজনীতি’ ছাড়তে ৩৬ দিন সময় বেঁধে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ সময়ের মধ্যে ‘সঠিক পথে’ না এলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির ‘অপরাজনীতির কালো হাত’ গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে আলটিমেটাম দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এটি বিএনপির জন্য শেষ বার্তা।’ গত সোমবার রাজধানীর উত্তরায় এবং যাত্রাবাড়ীতে পৃথক সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। উত্তরার সমাবেশে ওবায়দুল কাদের এ আলটিমেটাম দেন।
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপি দুই সপ্তাহের কর্মসূচি নিয়ে এখন রাজপথে আছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও ২১ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ঢাকায় গত সোমবার দুটি সমাবেশ হয়।
এর আগে থেকেই ঢাকায় বিএনপির কর্মসূচির দিন শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীনরা বিএনপির সভা-সমাবেশের বিষয়ে নমনীয়তা প্রদর্শন করলেও মাঠের নিয়ন্ত্রণ ছাড়েনি।
তামিম ইকবাল দলে না থাকাতে যেন অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে! আবার বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অন্তর্ভুক্তিতেও অনেকের চোখ কপালে! দল ঘোষণার পর যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা এলেন সংবাদ সম্মেলনে, তখন আলোচনায় শুধু ছিলেন এই দুজনেই। তাদের এই বিরহ বেদনায় চাপা পড়ে যায় অনেক প্রশ্ন। লিটন দাসকে বাদ দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত কেন সহ-অধিনায়ক! বাড়তি কোনো ওপেনার ছাড়া কিংবা পাঁচ পেসারকে নিয়ে কেন দল গড়া?
প্রায় মিনিট পনেরোর সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে এসেছে একই প্রশ্ন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও ঘুরেফিরে বন্দী ছিলেন একই কথার বৃত্তে। প্রশ্নোত্তর শেষে বেরিয়ে যান তিন নির্বাচক। যেতে যেতে কথা হয় তাদেরই একজন হাবিবুল বাশারের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল চাপা পড়া সেইসব প্রশ্নের উত্তর।
শুরুতেই জানতে চাওয়া হয় লিটনকে বাদ দিয়ে শান্তকে কেন সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ একটা কারণ। আর লিটনের অনাগ্রহও তাকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর একটি কারণ। লিটন নিজেও চায় না নেতৃত্বের চাপ নিতে। সে একটু ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চায়।’
বিশ্বকাপ দলে বিকল্প ওপেনার না থাকার কারণও জানা গেল এই নির্বাচকের কথায়। তিনি জানালেন, ‘আমরা ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে মিরাজকে ভাবছি।’
বিকল্প ওপেনার হিসেবে বিশেষজ্ঞ কাউকে না নেওয়ায় একজন বাড়তি বোলার দলে রাখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে শেখ মেহেদি হাসান সুযোগ পেয়েছেন সে কারণে। পাশাপাশি জায়গা হয়েছে পাঁচ পেসারেরও। এর পেছনে বাশার ভারতের কন্ডিশনের কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারতে এখন আর্লি সিজন। উইকেট সতেজ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই পাঁচজন পেসার দরকার হবে।’
যেতে যেতে আরও বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মুখোমুখি হলেন, এই দলটা বিশ্বকাপে কেমন করবে? এই প্রশ্নটা শুনেই ঘুরে দাঁড়ালেন হাবিবুল। উত্তরে মজা করে বললেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হবে এই দল।’ এরপর একটু গাম্ভীর্য ফিরিয়ে এনে যোগ করলেন, ‘আমি এদের অনেক দিন ধরে দেখছি। ওরা কয়টা ম্যাচ জিতবে জানি না। তবে বিশ্বকাপে প্রতিটি দলকে ভোগাবে, এটা জানি।’
ভারতের বিপক্ষেই খেলেছিলেন বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। এবার বিশ্বকাপটাই ভারতে, যে ধর্মশালা দিয়ে শুরু হবে বিশ্বকাপ অভিযান, সেখানেই আছে বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির কৃতিত্ব। হিমালয়ের কোলে, ছবির মতো সুন্দর সেই মাঠে আবারও খেলবে বাংলাদেশ, কিন্তু খেলবেন না তামিম ইকবাল।
অনেক নাটকীয়তার পর অবশেষে বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বরাবরের মতো সংবাদ সম্মেলনে নিরাবেগ কণ্ঠে একের পর এক নাম পড়ে শোনাননি প্রধান নির্বাচক, গভীর রাতে কোনো ইমেইলেও আসেনি খেলোয়াড় তালিকা। বিশ্বকাপগামী ১৫ ক্রিকেটারের প্রত্যেকের হাতে হাতে সুন্দর করে বাক্সবন্দি বিশ্বকাপ জার্সি তুলে দেওয়ার ভিডিও নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে ২০২৩ বিশ্বকাপের জন্য নির্বাচিতদের পরিচিত করেছে বিসিবি। এজন্য বিসিবির সংশ্লিষ্টরা বাহবা পেতেই পারেন, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড যেমনটা হৃদয় জিতে নিয়েছে ক্রিকেটারদের পরিবারের আপনজনদের দিয়ে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করিয়ে।
কারা থাকছেন আর কারা থাকছেন না, তা নিয়ে খুব বড় কোনো চমক ছিল না বিশ্বকাপ দলে। সবাই শুধু একটাই কোটি টাকার প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলেন। তামিম ইকবাল শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ দলে আছেন নাকি নেই। অবসর, প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে প্রত্যাবর্তন, ব্যক্তিগত কাজে দুবাই ভ্রমণ, ইংল্যান্ডে ইনজেকশন, দেশে অনুশীলন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক ইনিংসে ব্যাট করে ৪৪ রান এবং পরে নিজেকে আবারও পুরোপুরি ফিট নয় বলে পরের ম্যাচে বিশ্রাম। স্বভাবতই এই তামিম ইকবালকে বিশ্বকাপে দেখতে চাইবেন না কোনো কোচ এবং অধিনায়ক। সোমবার গভীর রাতে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় সাকিবের ছুটে যাওয়া এবং সিডনি থেকে নেমে তড়িঘড়ি করে বোর্ড সভাপতির বাসায় কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের পা রাখাই প্রমাণ করে, বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করতেই তাদের এ তৎপরতা।
তামিমের মতো ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা সহজ নয়। নিঃসন্দেহে দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান, ওয়ানডেতে ১৪টা সেঞ্চুরি। হুট করে অবসর নিলে যাকে ফিরিয়ে আনেন স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী। সাক্ষাৎকারেও তামিম বলেছেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগের কথাও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেশাদারির কাছে হার মেনেছে আবেগ, যুক্তির কাছে হেরে গেছে অতীত। তামিম নামটা আছে বিশ্বকাপ দলে, তবে পদবিটা ইকবাল নয়। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তানজিদ হাসান তামিমকে নিয়েই বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান, যার বয়স আর তামিম ইকবালের ক্যারিয়ারের বয়স প্রায় কাছাকাছি।
২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিবের পারফরম্যান্স ছিল অতিমানবীয়। ৬০৬ রান আর ১১ উইকেট। তবু দল হলো অষ্টম। গোটা আসর চোটজর্জর অধিনায়ককে বইল দল। প্রতিটি সকাল শুরু হতো এক অনিশ্চয়তা নিয়ে, খেলতে পারবেন তো মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা? শুরুর দিকে নতুন বলে কোনো উইকেট ফেলতে পারেনি বাংলাদেশ, প্রতিপক্ষ গড়েছে রানের পাহাড়। সেই অভিজ্ঞতা কী করে ভুলবেন সাকিব। অস্ট্রেলিয়ান জেমি সিডন্স আর অধিনায়ক সাকিব এজন্যই ২০১১ সালের বিশ্বকাপে দলে রাখেননি চোটগ্রস্ত মাশরাফীকে। হাথুরুসিংহে জাতীয়তায় শ্রীলঙ্কান হলেও অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে থাকতে হয়ে গেছেন তাদের মতোই পেশাদার। তাই তো কঠিন সিদ্ধান্তটা নেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন।
কাল বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডের পর সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন জাতীয় নির্বাচকরা। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন এবং দুই নির্বাচক হাবিবুল বাশার ও আবদুর রাজ্জাক। তামিমকে বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে মিনহাজুল শুনিয়েছেন মুখস্থ কথাই, ‘আপনারা তো এবারের বিশ্বকাপের দলটা এরই মধ্যে পেয়ে গেছেন। তামিম ইকবালের তো অনেক দিন ধরেই ইনজুরি নিয়ে চিন্তা আছে। নিউজিল্যান্ড সিরিজের পর... সবকিছু বিবেচনা করেই, সবাই আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া। বিশ্বকাপে অনেক দিনের ব্যাপার। অনেক ম্যাচ আছে।’
তামিমের চোটটা তো নতুন নয়। অনেক দিন ধরেই এ চোট নিয়ে তিনি ভুগছেন, নিজের ইচ্ছামতো ভারতের বিপক্ষে সিরিজ, আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ এসব থেকে নিজেকে সরিয়েও রেখেছিলেন। চিকিৎসাও করিয়ে আনা হয়েছে। সবকিছু জেনেশুনে কেন তাকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে সুযোগ দেওয়া এবং ম্যাচ খেলিয়ে বাদ দেওয়া এ প্রসঙ্গে মিনহাজুলের উত্তর, ‘দেখুন, কিছু কিছু ইনজুরি আছে আপনি ঝুঁকি নিতে পারেন না। টিম ম্যানেজমেন্ট কিন্তু বেকায়দায় পড়বে। আপনি দেখুন, নিউজিল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলার পর দ্বিতীয় ম্যাচে... প্রথম ম্যাচ খেলেছে, দ্বিতীয় ম্যাচটা খেলেছে... এরপর কিন্তু শেষ ম্যাচে বিশ্রাম দিতে হয়েছে।’
‘তামিম অন্যতম সেরা। কিন্তু চোটের দুশ্চিন্তা থাকলে নিজেকে মেলে ধরা কঠিন। মেডিকেলের সঙ্গে আলোচনা করেছি, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। এটা আগেই বলেছি, এখন দল ঘোষণা করা হয়েছে’বলছিলেন প্রধান নির্বাচক। বিসিবি সভাপতি বা সাকিব ও কোচের সঙ্গে আলাপ হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কী আলাপ হয়েছে সেটা তো এখানে প্রকাশ করব না।’
১০ দলের বিশ্বকাপে দশম দল হিসেবে বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। কেন এত দেরি, ফ্লাইটে ওঠার ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে বিশ্বকাপের দল দেওয়া হলো কেন এ নিয়ে হাবিবুল বাশারের ব্যাখ্যা, ‘আমাদের সঙ্গে কী হয়েছে সেটা তো আমাদের সঙ্গের ব্যাপার। দল নির্বাচন করতে যখন বসি... খেলোয়াড় হিসেবে তামিমের... আমরা সুস্থ-সবল তামিমকে পেতে... এটা নিয়ে আমাদের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত ভাবতে হয়েছে। তাই দেরি হয়েছে।’
তামিমের বাদ পড়ার ডামাডোলে হারিয়ে গেছে মাহমুদউল্লাহর ফেরাটাও। সেই ইংল্যান্ড সিরিজের পর বিশ্রামের মোড়কে বাদ পড়েছিলেন। তার বদলে অনেক বিকল্প খুঁজেও শেষ পর্যন্ত ঘুরেফিরে আবার তার কাছেই ফিরলেন নির্বাচকরা। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ৪৯ আর ২১ রানের দুটো ইনিংসেই হয়ে গেছে বিশ্বকাপের টিকিট। প্রধান নির্বাচক বললেন, ‘আগেই বলেছি, বিশ্বকাপের আগে যেকোনো খেলোয়াড়কে যেকোনো সিরিজে দেখব। ও পরিকল্পনাতেই ছিল। নিউজিল্যান্ড সিরিজে দেখেছি।’
২০১৫ সালের বিশ্বকাপের আগে, মাত্র দুই ম্যাচ দেখে সৌম্য সরকারকে দলে নিয়েছিলেন হাথুরুসিংহে। তানজিদ তামিম আর তানজিম সাকিব নিজেদের ভাগ্যবান ভাবতে পারেন। যথাক্রমে মাত্র পাঁচ আর দুই ম্যাচ খেলে তারা বিশ্বকাপ যাত্রার সঙ্গী হয়েছেন। এমন নয় যে, এ স্বল্প সময়ে দারুণ কিছু করে দেখিয়েছেন, প্রধান কারণ বিকল্পের অভাব।
শুধু তামিম ইকবালই নয়, দলের লজিস্টিক ম্যানেজারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তার বড় ভাই ও সাবেক খেলোয়াড় নাফিস ইকবালকেও। তামিমের অবসর-কা-ে তিনি বিসিবি সভাপতির মেসেজের জবাব দেননি, যা পাপন নিজে বলেছেন গণমাধ্যমে। হয়তো তারই প্রতিশোধ, সেই সঙ্গে ড্রেসিংরুমের সঙ্গে তামিমের সব সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া।
অবসর ভেঙে ফিরেছিলেন তামিম, দুটি ম্যাচ খেললেন। কিন্তু যেভাবে বাদ পড়লেন, তাতে মনে হতে পারে অবসরের সিদ্ধান্তটাই ছিল সঠিক। বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগামীতেও তামিমের দলে ফেরাটা বোধহয় অনিশ্চিতই হয়ে গেল।
তামিম প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে দলটা কেমন হয়েছে দেখা যাক। পাঁচ পেসার, দুই অফ স্পিনার, দুই বাঁহাতি স্পিনার মিলিয়ে বোলিং আক্রমণটা নেহায়েত খারাপ নয়। লিটন দাসের সঙ্গে তানজিদ তামিম অথবা মেকশিফট ওপেনার মিরাজ। সহঅধিনায়কের পদ থেকে বাদ পড়েছেন লিটন, সেটা করা হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তকে। সাকিব, মুশফিক, তাওহীদ হৃদয়দের নিয়ে মিডল অর্ডারের পর ফিনিশার রোলে মাহমুদউল্লাহ। এ নিয়েই ধর্মশালায় আফগানদের বিপক্ষে লড়াইয়ের শুরু। প্রত্যাশা অনেক বড়, প্রস্তুতি গোলমেলে। ভরসা একটাই, শুরুর আগে পরিস্থিতি এমন গোলমেলে হলেই কেন যেন ভালো করে বাংলাদেশ!
বিশ্বকাপ দল : সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন (সহঅধিনায়ক), তাওহীদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, শরীফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, মেহেদি হাসান, তানজিদ হাসান, তানজিম হাসান ও মাহমুদউল্লাহ।
নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আখেরি নবী ও রাসুল। তিনি মানবজাতির জন্য আল্লাহতায়ালার সর্বশেষ দূত। তার প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্য ছাড়া আল্লাহকে বিশ্বাস ও আনুগত্যের দাবি অর্থহীন। কোরআন মাজিদের বিভিন্ন জায়গায় এ বিষয়টি ঘোষিত হয়েছে। আল্লাহকে পাওয়ার একমাত্র পথ খাতামুন্নাবিয়ীন হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর অনুসরণ। তাই তার জন্য হৃদয়ে গভীর ভালোবাসা পোষণ করা এবং তার জন্য আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে দোয়া করা প্রত্যেক উম্মতের ইমানি কর্তব্য।
কোরআন মাজিদে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা নবী কারিম (সা.)-এর জন্য দরুদ পাঠের তথা আল্লাহর দরবারে তার জন্য দোয়া করার আদেশ করেছেন। এটা একদিকে যেমন আল্লাহর কাছে তার রাসুলের মর্যাদার প্রমাণ অন্যদিকে মুমিন বান্দার রহমত ও বরকত লাভের অন্যতম উপায়। আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানকে এই সহজ ও মূল্যবান আমলটি বেশি বেশি করার তৌফিক দান করুন। নিম্নে দরুদ ও সালামের কিছু ফজিলত উল্লেখ করা হলো-
গোনাহ মাফের আমল : দরুদ রহমত, মাগফিরাত ও দরজা বুলন্দির আমল। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, যে আমার ওপর একবার দরুদ পড়বে, বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা তার ওপর দশটি রহমত নাজিল করবেন। -সহিহ মুসলিম : ১/১৬৬
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে আমার ওপর একবার দরুদ পড়বে আল্লাহ তার ওপর দশটি রহমত নাজিল করবেন, তার দশটি গোনাহ ক্ষমা করা হবে এবং দশটি দরজা বুলন্দ হবে। -সুনানে নাসায়ি : ১/১৪৫
ফেরেশতাদের দোয়া লাভ : দরুদ পাঠকারীর জন্য ফেরেশতারা মাগফিরাতের দোয়া করেন। হজরত আমের ইবনে রবিয়া (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে খুতবার মধ্যে বলতে শুনেছি, আমার ওপর দরুদ পাঠকারী যতক্ষণ দরুদ পড়ে ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। সুতরাং বান্দার ইচ্ছা, সে দরুদ বেশি পড়বে না কম। -মুসনাদে আহমদ : ৩/৪৪৫
কিয়ামতের দিন নবীর নিকটবর্তী থাকার সুযোগ : কিয়ামতের দিন দরুদ পাঠকারী নবীজির সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন ওই ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে, যে আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পড়েছে। - জামে তিরমিজি : ১/১১০
দুনিয়া ও আখেরাতের মকসুদ হাসিল : দুনিয়া ও আখেরাতের সব মকসুদ হাসিল হবে দরুদ পাঠকারীর। হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, একবার আল্লাহর রাসুল (সা.) জিকরুল্লাহর (আল্লাহর জিকিরের) খুব তাকিদ করলেন। আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি আপনার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করে থাকি। আমি আমার দোয়ার কতভাগ আপনার জন্য নির্ধারণ করব? তিনি বললেন, তোমার যে পরিমাণ ইচ্ছা।
আমি বললাম, চার ভাগের এক ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরও ভালো। আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরও ভালো। আমি বললাম, তাহলে তিন ভাগের দুই ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা হয়। তবে বেশি করলে আরও ভালো। আমি বললাম, তাহলে কি আমার দোয়ার পুরোটাই হবে আপনার প্রতি দরুদ? তিনি বললেন, তবে তো তোমার মকসুদ হাসিল হবে, তোমার গোনাহ মাফ করা হবে। -জামে তিরমিজি : ২/৭২
দরুদ গরিবের সদকা : দরুদের আমলের মাধ্যমে গরিব পাবে সদকার সওয়াব। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে মুসলমানের দান করার সামর্থ্য নেই, সে যেন দোয়ায় বলে- এটা তার জন্য জাকাত (সদকা) হিসেবে গণ্য হবে। -ইবনে হিব্বান : ৩/১৮৫
সালাম নবীর কাছে পৌঁছানো হয় : উম্মতের সালাম নবীজির কাছে পৌঁছানো হয়। রাসুলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহতায়ালার জমিনে বিচরণকারী কিছু ফেরেশতা আছেন, তারা আমার কাছে উম্মতের পক্ষ থেকে প্রেরিত সালাম পৌঁছিয়ে থাকেন। -মুসনাদে আহমদ : ১/৪৪১
দরুদ ছাড়া দোয়া ঝুলন্ত থাকে : দরুদবিহীন দোয়া আসমান-জমিনের মধ্যে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, যে পর্যন্ত তুমি তোমার নবীর (সা.) ওপর দরুদ না পড়বে ততক্ষণ দোয়া আসমানে যাবে না, আসমান-জমিনের মধ্যে থেমে থাকবে।
নেক সন্তান আল্লাহর অপূর্ব নেয়ামত। পবিত্র কোরআনে সন্তান-সন্ততিকে জীবনের শোভা বলা হয়েছে। হাদিসের ভাষায় তাদের আখ্যা দেওয়া হয়েছে সদকায়ে জারিয়া হিসেবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন কোনো লোক মারা যায়, তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিন প্রকার আমল (জারি থাকে)। (প্রথম) সদকায়ে জারিয়া; (দ্বিতীয়) ওই ইলম, যা দ্বারা অন্য লোক উপকৃত হয়; (তৃতীয়) নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে। -সুনানে নাসায়ি : ৩৬৫১
সন্তানকে নেক সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে ছোটবেলা থেকেই তাকে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায় এই সন্তানই মা-বাবার ইহকাল-পরকালের অশান্তির কারণ হতে পারে। এখানে কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো- যা সন্তানকে সঠিকভাবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োগ করা যেতে পারে।
গোনাহমুক্ত পরিবেশ : শিশুদের নেক সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে ছোটবেলা থেকেই তার প্রতি যতœবান হতে হবে। তার মানসিক বিকাশে গুরুত্ব দিতে হবে। তার জন্য গোনাহমুক্ত পবিত্র পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদাররা! তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন থেকে রক্ষা করো।’ -সুরা তাহরিম : ৬
একটি শিশু যখন বড় হয়, তখন চারদিকের পরিবেশ তাকে অনেক বেশি প্রভাবিত করে এবং এর প্রতিফলন ঘটে তার বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে। শিশুর সামগ্রিক বিকাশের সঙ্গে পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা নিবিড়ভাবে জড়িত।
তাই তাদের সামনে কোনো ধরনের অসৌজন্যমূলক কথা ও কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তাদের সামনে ঝগড়াঝাটি, পরনিন্দা ইত্যাদি কাজ থেকেও বিরত থাকতে হবে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি রাখা : ছোটবেলা থেকেই শিশুদের পরিচ্ছন্নতার প্রতি সচেতন করে তুলতে হবে। মানুষের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য পরিচ্ছন্নতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) পরিচ্ছন্নতাকে ইমানের অঙ্গ বলেছেন। ছোট মানুষ বলে তাদের যেনতেনভাবে লালন-পালন করা উচিত নয়। কারণ এটিও ব্যক্তিত্ব গঠনে জোরালো ভূমিকা পালন করে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বলেন, ‘রাসুল (সা.) দিনের এক অংশে বের হন, তিনি আমার সঙ্গে কথা বলেননি এবং আমিও তার সঙ্গে কথা বলিনি। অবশেষে তিনি বনু কাইনুকা বাজারে এলেন (সেখান থেকে ফিরে এসে) ফাতেমা (রা.)-এর ঘরের আঙিনায় বসলেন। অতঃপর বলেন, এখানে খোকা [হাসান (রা.)] আছে কি? এখানে খোকা আছে কি? হজরত ফাতেমা (রা.) তাকে কিছুক্ষণ সময় দিলেন। আমার ধারণা হলো, তিনি তাকে পুঁতির মালা, সোনা-রুপা ছাড়া যা বাচ্চাদের পরানো হতো, পরাচ্ছিলেন (সাজিয়ে দিচ্ছিলেন)। তারপর তিনি দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং চুমু খেলেন। তখন তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি তাকে (হাসানকে) ভালোবাসো এবং তাকে যে ভালোবাসে তাকেও ভালোবাসো।’ -সহিহ বোখারি : ২১২২
সৃজনশীল খেলনা : শিশুর খেলনা হতে হবে আবিষ্কারধর্মী ও সৃজনশীল। বয়সভেদে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ উপযোগী খেলনা নির্বাচন করতে হবে গুরুত্বের সঙ্গে। ঘরে ও বাইরে দুই জায়গায়ই খেলা যায়- এমন খেলনা শিশুর মানসিক বিকাশে বেশি সহায়ক। শিশুকে এমন ধরনের খেলনা দিতে হবে, যা তার বুদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ খেলনা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
অনেকে সন্তানকে ঘরে নিরাপদে রাখতে ভিডিও গেম বা কার্টুনের প্রতি আকৃষ্ট করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিনিয়ত ভিডিও গেম খেললে শরীরে এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ হয়। এতে শিশু সব কিছু নিয়েই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। মা-বাবার অবাধ্য হয়ে যায়। মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গেমিংয়ে আসক্ত ব্যক্তি মূলত অন্য সব কিছুর প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে। এ ছাড়া কারও সঙ্গে মিশতে না পারা, ঘুম, খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম তো রয়েছেই।
দীনি ইলম শিক্ষা দেওয়া : দীনি ইলম শিক্ষা করা সব মুসলমানের ওপর ফরজ। তাই সন্তানকে তার দৈনন্দিন ইবাদতের জন্য যতটুকু ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা দরকার, কমপক্ষে ততটুকু ইলম শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতেই হবে। তাকে পবিত্রতা শিক্ষা দিতে হবে, আল্লাহ-রাসুল ও ইসলামের সাধারণ জ্ঞানগুলো অল্প অল্প করে শেখাতে হবে। কোরআন শিক্ষা দিতে হবে, প্রয়োজনীয় মাসয়ালা-মাসায়েল শিক্ষা দিতে হবে। পাশাপাশি তাকে আস্তে আস্তে বিভিন্ন গোনাহ সম্পর্কে সতর্ক করাও মা-বাবার দায়িত্ব।
নামাজে অভ্যস্ত করা : শৈশব থেকে সন্তানকে নামাজে অভ্যস্ত করে না তুললে ভবিষ্যতে সে নামাজের প্রতি যতœবান হতে পারবে না। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘তোমরা সন্তানদের নামাজের প্রতি যতœবান হও এবং তাদের ভালো কাজে অভ্যস্ত করো। কেননা কল্যাণ লাভ অভ্যাসের ব্যাপার।’ -সুনানে বায়হাকি : ৫০৯৪
উল্লেখ্য, ১০ বছর বয়সে সন্তানের বিছানা আলাদা করে দেওয়ার বিষয়টিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারা ঘুমিয়ে গেলেও তাদের অবচেতন মন বড়দের অনেক কার্যক্রমই অনুসরণ করতে পারে।
এক কথায় সন্তানকে দীনদার হিসেবে গড়ে তুলতে হলে, মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদেরও অত্যন্ত সচেতনভাবে চলতে হবে। ঘরে আমলের পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, যাতে পরিবেশের কারণে তাদের মধ্যে আমল করার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।