
নড়াইল-কালিয়া জেলা মহাসড়কের ২১তম কিলোমিটারে কালিয়া এলাকায় নবগঙ্গা নদীর ওপর কালিয়া সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু নকশার ভুলে ইতিমধ্যে মাঝের দুটি পিলার দেবে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেতুর মাঝখানের দুটি অংশ। এখন তা মাঝ বরাবর ভেঙে নতুন নকশায় করতে হবে। সেতু নির্মাণে এমন ভুল নকশার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় নড়াইল-কালিয়া জেলা মহাসড়কের ২১তম কিলোমিটারে কালিয়া এলাকায় নবগঙ্গা নদীর ওপর কালিয়া সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একনেক সভায় ১৭টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, নড়াইলে সেতু নির্মাণে ভুল নকশার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ভবিষ্যতে যেকোনো প্রকল্পের নকশা নির্ভুলভাবে তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া, জমি অধিগ্রহণের সময় জমির ছবি তুলে রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। ছবি তুলে রাখলে কেউ ভূমি অধিগ্রহণের খবরে স্থাপনা বানাতে পারবেন না।
সেতুর বিস্তারিত তথ্যে দেখা যায়, প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছিল ৭৫ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৭ সালে। এর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালে। কিন্তু কয়েক দফায় ব্যয় ও সময় বাড়িয়ে এটি এই একনেক সভায় আবার সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নতুন সংশোধনীতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৬ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের সময় বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।
প্রকল্পটি সংশোধনের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, সেতুর আনুভূমিক ক্লিয়ারেন্স বৃদ্ধির জন্য সেতুর পিয়ার ৮-৯ ও পিয়ার ৯-১০ দুটি স্প্যানের দুটি স্প্যানের পরিবর্তে পিয়ার ৮-১০ একটি বড় স্প্যান অন্তর্ভুক্ত করা হবে। প্রকল্পের এই ব্যয় বাড়ানোর জন্য নতুন খাত হিসেবে পাইল ও পিয়ার রক্ষার কাজ যোগ করা হয়েছে।
নতুন করে এ পাইল ও পিয়ারের কাজেই ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ৫০ কোটি টাকার বেশি। প্রথম প্রস্তাবিত প্রকল্পটি এ পিসি গার্ডারের জন্য ব্যয় ছিল ৬৩ কোটি টাকা, অনুমোদিত দ্বিতীয় সংশোধনীতে এ ব্যয় বেড়ে হয়েছে ১১৪ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা কমিশন মতামতে জানিয়েছে, প্রস্তাবিত ২য় সংশোধিত প্রকল্পটির মোট প্রাক্কলিত ব্যয় বৃদ্ধির পরিমাণ ৬০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা এবং ব্যয় বৃদ্ধির হার ৮০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। প্রস্তাবিত ২য় সংশোধিত প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে হওয়ায় তা একনেকে পাঠানো হয়েছে।
নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দাপ্তরিক কাজ শেষে মো. জামিল ইকবাল ও মো. মঈন উদ্দিন বাঁশী নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে যৌথভাবে ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ এক বছরের মেয়াদে নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই অনুযায়ী ২০১৯ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও নকশা জটিলতা ও করোনার দোহাই দিয়ে প্রথমবার ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এক বছর সময় বৃদ্ধি করে নেয়। বর্ধিত সময়েও কাজ শেষ করতে না পারায় একইভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে আবার ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সেতুটির নির্মাণকাজের সময়সীমা বাড়িয় নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। একইভাবে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত আরও এক বছর কাজের মেয়াদ বাড়তে থাকে।
প্রকৌশলী মিনহাজুল ইসলাম জানান, নির্মাণাধীন সেতুর নবম পাইল পিলারটিতে একটি বালুবোঝাই বাল্কহেড ধাক্কা দিলে সেটি হেলে পড়ে। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে সেটিকে সোজা করে কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু বালুবোঝাই বাল্কহেড ওই পিলারটিতে আবারও ধাক্কা দিলে হেলে পানিতে ডুবে যায়।
পরে গুরুত্বপূর্ণ এই নদী দিয়ে যাতে নৌযান অবাধে চলাফেরা করতে পারে, সেদিকে বিবেচনা করে নদীর মাঝামাঝি অংশের জন্য নতুন করে নকশা প্রণয়ন করা হয়।
নড়াইল সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘নড়াইল-কালিয়া সড়কের বারইপাড়া পয়েন্টে নবগঙ্গা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে কিছু ত্রুটির কারণে নতুন করে নকশা করা হয়। সেতুটি খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ছোট-বড় অনেক নৌযান চলাচল করে। এসব নৌযান চলাচল সহজতর করতে এবং সেতুটি যাতে নৌযানের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, এসব বিবেচনা করে নতুন নকশা করা হয়েছে।’
জাতীয় নির্বাচনের আগে বিদেশিদের, বিশেষ করে পরাশক্তিগুলোর রাজনীতির ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর ‘নজিরবিহীন’ তৎপরতার কারণে সরকারও চাপে আছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশের রাজনীতি যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীনকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। ভারত ও চীন আপাতত রাজনীতি নিয়ে উল্লেখযোগ্য হস্তক্ষেপ না করলেও যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে আগামী শুক্রবার ভারত সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে সফরে যাচ্ছেন তিনি। শুক্রবার সন্ধ্যায় তার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলন।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যেকোনো অবস্থায় প্রতিবেশী ভারতকে পাশে চায় সরকার। শুধু পাশে আছে সেটাই নয়, ভারত বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে আছে এটি প্রকাশ্যে নিয়ে আসতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সাম্প্রতিককালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী সমালোচনা বেড়েছে। অন্যদিকে চীনকে ইস্যু করে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে আড়চোখে দেখছে, এমন দাবি করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন নিজেও। ভারতও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি দৃষ্টি কুঁচকে রেখেছে, এমন তথ্য জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা। তারা মনে করেন, বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতের দৃষ্টি কুঁচকে রাখার সময় এখন আর নেই।
আওয়ামী লীগের ওই নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর এ সফরেই ভারত বিনা শর্তে বাংলাদেশের পাশে থাকবে তা স্পষ্ট করতে সবরকম চেষ্টা করা হবে। ভারত প্রকাশ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে আছে, থাকবে সেই প্রত্যাশা ও প্রস্তুতি নিয়েই প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার ঢাকা ত্যাগ করবেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে চলি। এখানে নীতি ও প্রয়োজন অনুযায়ী সম্পর্ক ওঠানামা করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার পররাষ্ট্র নীতিতে অবিচল থেকে গত ১৪ বছর দেশ পরিচালনা করে আসছে।’
ভারতকে পাশে পাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারত সম্পর্ক ঐতিহাসিক ও পুরনো। যারা সম্পর্কের ওঠানামা নিয়ে কথা বলছেন, তারা হয়তো সম্পর্কের গভীরতার বিষয়ে অবগত নয়।’
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায় থেকে দাবি করা হয়, এ সফর নিয়ে দেশের রাজনীতিতে গত দুই মাস ধরেই আলোচনা চলছে। এ ছাড়া রাজনীতিতে আলোচনা আছে যে, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পরই রাজনীতি ও ক্ষমতার অনেক কিছু স্পষ্ট হবে।
প্রধানমন্ত্রীর দুদিনের ভারত সফরে শুক্রবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকটিকেই গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হচ্ছে। ওই বৈঠকে সীমান্ত হত্যা, তিস্তার পানি, ভারতীয় ঋণ, শুল্ক বাধা ও ভারতীয় পণ্যের শুল্ক বৃদ্ধিসহ নানা এজেন্ডা রয়েছে। এসব ছাপিয়ে বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভারতের অবস্থান বাংলাদেশের পক্ষে না বিপক্ষে সেটা।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, নির্ধারিত বৈঠকের আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংক্ষিপ্ত একটি বৈঠক হবে। দ্বিপক্ষীয় সেই বৈঠকে মূলত ভারতের অবস্থান বাংলাদেশের পক্ষে রাখতে বিশেষ আলোচনা হবে। এ ক্ষেত্রে দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের অতীত বর্তমান টেনে প্রধানমন্ত্রী ভারতের সমর্থন পেতে চাইবেন। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র এ প্রতিবেদককে বলেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে ভারতকে পক্ষে আনার কর্মকৌশল গ্রহণ করে সফরে যাচ্ছেন টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সূত্র আরও দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর-কষাকষিতেও ভারতের সহযোগিতা চেয়ে আসছে শেখ হাসিনার সরকার। এ চাওয়া কতটা ফলপ্রসূ হবে, সেটাও পরিষ্কার হয়ে যাবে ভারত সফরে।
এদিকে ভারতও মনে করে চীনের পকেটে ঢুকে আছে শেখ হাসিনার সরকার। তা না হলে চীনের রাষ্ট্রদূতকে তিস্তা পরিদর্শনে পাঠানো কেন? চীন থেকে সাবমেরিন কেনার বিষয়টিও ভারত ভালো চোখে নেয়নি। এ ছাড়া চীনের অতিরিক্ত সম্পৃক্ততা ও জামায়াতকে রাজনৈতিক দৃশ্যপটে আনার ব্যাপারেও ভারত বঙ্গবন্ধুকন্যার সরকারের ওপর বিরাগভাজন হয়েছেন বলে জানা গেছে। সম্পর্কের এই টানাপড়েনের মধ্যে ভারত সরকারের কতটা আস্থা অর্জন করতে পারবেন শেখ হাসিনা, সেটা সামনের দিনগুলোতে আরও পরিষ্কার হবে। তবে ভারতকে পাশে পাবেন, এ ব্যাপারে বড় প্রত্যাশা রয়েছে শেখ হাসিনার।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ও রাজনীতি নিয়ে এখনো নীরব দর্শকের ভূমিকায় আছে প্রতিবেশী দেশটি। এ নীরবতা ভাঙতে বিশেষ অনুরোধ রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরবেন তিনি। ভারতকে নিজেদের নিরাপত্তা উদ্বেগের বিষয়টি জানিয়ে বাগে আনার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। ভারতের নীরবতা ভাঙাতে প্রয়োজনে তর্কযুদ্ধেও লিপ্ত হবেন শেখ হাসিনা। দুই দেশের আবেগের যে সম্পর্ক রয়েছে, সেখানেও আঘাত করা হবে। মূলত ভারতের নীরবতা ভাঙাতে যত পদক্ষেপ ও যত কৌশল গ্রহণ করার প্রয়োজন পড়ে, সফরে তার সবকিছুই করা হবে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। সেই সম্পর্কে ঘাটতি হয়নি। কখনো কখনো ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে, কিন্তু সম্পর্কে দুই দেশ অবিচল।’
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সক্ষমতা বাড়াতে সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তা দিতে রাজি আছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনৈতিক সামরিক-বিষয়ক বিভাগের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিরা রেজনিকের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। রাজধানী ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ বৈঠক হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘নির্বাচনের ব্যাপারে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) জানতে চেয়েছে, আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা বলেছি যে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে আমরা বদ্ধপরিকর। নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বাড়াতে সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) তা দিতে রাজি আছে।’
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির মধ্যে অনেক মিল আছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘উভয় দেশ চাইছে না এ অঞ্চলে নির্দিষ্ট একটি দেশ তাদের আধিপত্য বিস্তার করুক বা এখানে অবাধ চলাচলে বাধা হয়ে দাঁড়াক। আমাদের প্রত্যাশাগুলো হচ্ছে এখানে যাতে অবাধে চলাচল করা যায়, এখানে অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে পুরোপুরি ব্যবহার করা হয়। সেগুলোর বিষয়ে তারাও (যুক্তরাষ্ট্র) একমত। সুতরাং তারাও চায় না একটি নির্দিষ্ট দেশ এখানে আধিপত্য বিস্তার করুক বা অবাধ চলাচলে বাধা হয়ে দাঁড়াক।’
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গ : র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে দুপক্ষ আলোচনা করেছে। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমরা বলেছি, প্রতিটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে যে অভিযোগ আসে, সেগুলো আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করে এর উত্তর আমরা বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে দিই। আমাদের দেশে বিচারহীনতার কোনো সুযোগ রাখি না। আমাদের প্রত্যেকটি বাহিনীর একটি স্ট্যান্ডার্ড অব প্রসিডিউর আছে। একটি গুলি খরচ হলেও সেটির একটি জবাবদিহি আছে।’
গাজীপুরে শ্রমিক নেতার মৃত্যুর বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সব দুর্ঘটনার সঙ্গে যে সরকার জড়িত থাকে, বিষয়টি সেরকম নয়। কিছুদিন আগে গাজীপুরে একজন শ্রমিক নেতা মারা গেছেন। সেখানে সরকার তো কিছু করেনি। কিন্তু আমাদের শেষ পর্যন্ত জবাবদিহির একটি বিষয় থাকে। ১৭ কোটি মানুষের দেশ। একেক জায়গায় একেক রকম ঘটনা ঘটতেই পারে। সুতরাং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জড়িত থাকার কোনো খবর পেলে তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এর আগে গতকাল সকালে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নবম বার্ষিক নিরাপত্তা সংলাপ হয়। সংলাপে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (আমেরিকা) খন্দকার মাসুদুল আলম। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন মিরা রেজনিক।
বৈঠকে ইন্দো-প্যাসিফিক আঞ্চলিক সমস্যা, নিরাপত্তা ও মানবাধিকার, সামরিক সহযোগিতা, শান্তিরক্ষা, নিরাপত্তা সহায়তা ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচনা হয়।
গত বছর এপ্রিলে ওয়াশিংটনে দুই দেশের মধ্যে অষ্টম নিরাপত্তা সংলাপ হয়েছিল। এবার ঢাকায় নবম নিরাপত্তা সংলাপ হলো।
চাল থেকে পোকা বাছার মতো করে লাইন বাই লাইন পড়ে খসড়া করা হয়েছে ভূমি সংস্কার আইনের। এ খসড়াটি সরকারের বর্তমান মেয়াদের নয়, তার আগের মেয়াদের। খসড়াটি পড়েছিল ভূমি মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগেরও গরজ ছিল না। বলতে গেলে কারোর তাগাদা ছিল না।
সেই খসড়াটিই হঠাৎ অনুমোদন হয়ে গেল গত ২৮ আগস্টের মন্ত্রিসভা বৈঠকে। শুধু ভূমি সংস্কার আইনের খসড়াই নয়, সেদিন মোট ছয়টি আইনের খসড়া উঠেছিল সভায়। এগুলোর বেশিরভাগই গত কয়েক বছর ধরে করা খসড়া। দিনের পর দিন পড়ে থাকলেও সেগুলোই এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
কারণ সবকিছু ঠিক থাকলে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যারা জিতবে তারা সরকার গঠন করবে। বর্তমান সরকার মেয়াদের প্রায় শেষ প্রান্তে চলে এসেছে। আগামী মাসে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। তফসিল ঘোষণা হলে আইনের খসড়া প্রণয়ন বা নতুন প্রকল্প নেওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। এ কারণে যেসব আইনের খসড়া পড়ে আছে, সেগুলো খুঁজে বের করে মন্ত্রিসভায় তোলার হিড়িক পড়েছে। শুধু খসড়া আইন নয়, বিভিন্ন নীতিমালাও তোলা হচ্ছে। পুরনো জমে থাকা এসব খসড়া মন্ত্রিসভায় তোলার কারণেই বৈঠকের এজেন্ডার বহর বাড়ছে। এজেন্ডার মতো মন্ত্রিসভা বৈঠকের সংখ্যাও বেড়েছে। এসবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে একনেক সভা, সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিসহ বিভিন্ন মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক।
একজন সচিব বলেছেন, বর্তমানে আমাদের টপ প্রায়োরিটি পেন্ডিং কাজ খুঁজে বের করে তা শেষ করা। কারণ নতুন মন্ত্রী এসে পুরনো এসব সিদ্ধান্তের দায়িত্ব নাও নিতে পারে। এজন্য কী কী পেন্ডিং কাজ আছে, তা খুঁজে বের করা হচ্ছে। যেগুলো কেবিনেটে নিতে হচ্ছে সেগুলো সেখানে নেওয়া হচ্ছে। আর যেগুলো মন্ত্রিপর্যায়ে নিষ্পত্তিযোগ্য, সেগুলো মন্ত্রণালয়েই নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। প্রায় সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগেই ঝুলে থাকা কাজ খুঁজে বের করা হচ্ছে বলে আমি জানি।
মন্ত্রিসভা বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে কতগুলো বিষয় থাকবে, তার কোনো বাঁধা-ধরা নিয়ম নেই। তবে সাধারণত ছয়-সাতটি বিষয় থাকে। কখনো কখনো আট-দশটি বিষয়ও থাকে। তবে তা খুব কম হয়। কিন্তু গত সোমবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে ১৯টি বিষয় ছিল। এর মধ্যে আনসার ব্যাটালিয়ন আইনের খসড়াটি ছিল। এ আইনটির খসড়াও দীর্ঘদিন ঝুলে ছিল। বৈঠকে দুটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের খসড়া ছিল।
জনপ্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানান, গত কয়েক বছরে অনেকগুলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়সংক্রান্ত আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সেগুলো পরে সংসদেও পাস হয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গঠন ও কাজ প্রায় একই ধরনের। প্রতিটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা আলাদা আইন না করে একটি আইনের মধ্যেই সব বিশ^দ্যিালয়কে আনা যেত। শুধু আইনে শিডিউলের বিধান রাখলেই হতো। কিন্তু তা না করে আলাদা আলাদা আইন করতে গিয়ে মন্ত্রণালয়কে অনেক বেশি সময় ব্যয় করতে হয়েছে।
সবশেষ মন্ত্রিসভা বৈঠকে দুটি নীতিমালা অনুমোদন করা হয়েছে। প্লাস্টিক শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ নীতিমালা নামের এ দুটি নীতিমালাও দীর্ঘদিন ধরে প্রায় চূড়ান্ত অবস্থায় পড়েছিল।
সোমবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকের আগে গত ২৮ আগস্টের বৈঠকেও ৯টি আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে। এসব খসড়ার মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়াও ছিল। এ আইনটির খসড়াও অনেক দিন আগেই প্রস্তুত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
শেষ সময়ে এসে সরকার নির্বাচনী প্রকল্প অনুমোদনেও তোড়জোড় করছে। এগুলোর বেশিরভাগই সড়ক সংস্কার কিংবা অবকাঠামোভিত্তিক। সংশ্লিষ্টরা এগুলোকে জনতুষ্টিমূলক প্রকল্প হিসেবেও অভিহিত করেছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ শীর্ষক প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকায়, শেষ সময়ে এসে এর ব্যয় বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ১৭৭ কোটি টাকায়।
গত চারটি একনেক সভায় ৭৮টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ৭৩টিই অবকাঠামো, সড়ক ও যোগাযোগ এবং প্রশিক্ষণকেন্দ্রিক। বিশ্লেষকদের মতে, এসব প্রকল্পই নির্বাচনী প্রকল্প। আর এমন প্রকল্পের ব্যয় ৬২ হাজার ৭৭৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। যেখানে মোট অনুমোদিত ৭৮টি প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৬৭ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা।
এ ছাড়া নির্বাচনের আগে বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই উদ্বোধনের তোড়জোড় দেখা গেছে। বিশেষ করে সর্বশেষ উদ্বোধন হওয়া ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ এখনো চলমান। আগামী অক্টোবরে উদ্বোধন হবে মেট্রোরেল লাইন-৫-এর উত্তরা-মতিঝিল অংশ। এটিও কাজ শেষ হতে এখনো এক বছরের বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে।
নির্বাচনের আগে চলমান প্রকল্পগুলো উদ্বোধন করার প্রক্রিয়াটি সরকারের ভোটের রাজনীতি কি না, গতকাল মঙ্গলবার একনেক সভা শেষে এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ‘আমার অবশ্যই ভোটের রাজনীতি করি। কেউ যদি এটিতে বাহবা দিয়ে থাকে, সেটি আমাদের জন্যই ভালো। যে প্রকল্পগুলো এখন অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো কোনোভাবেই নির্বাচনী প্রকল্প বলার পক্ষে নই। কারণ এগুলো এক বছর আগে থেকেই প্রক্রিয়াধীন ছিল।’
একই প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘সরকারের নির্বাচনী প্রকল্প অনুমোদন করা হচ্ছে এটা বলা ঠিক হবে না। এ সরকার রাজনৈতিক সরকার, ভোটের মাধ্যমেই রাজনীতিতে টিকে থাকতে হবে। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে গিয়ে যদি তা যথাসময়ে শেষ হয়, তা সরকারের অনুকূলেই যাবে। দুনিয়াব্যাপীই এটা হয়।’
এ ছাড়া পরিকল্পনা কমিশনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ মাসের মাঝামাঝিতে এ মেয়াদের শেষ একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে শেষ তারিখ পরিকল্পনামন্ত্রী অনুমোদনের পরই তা নির্ধারণ করা হবে।
সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত, ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ শনাক্ত, প্রতিরোধ, দমন ও ওই অপরাধের বিচার এবং আনুতোষিক বিষয়ে নতুন বিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ‘সাইবার নিরাপত্তা বিল-২০২৩’ জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কার্যক্রম স্থগিত করে আনা এই বিলে চারটি অজামিনযোগ্য ধারা রাখা হয়েছে। এই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধের শাস্তি সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বিলটি উত্থাপন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এ সময় বিলটির বিরোধিতা করে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, এটি একটি কালো আইন হচ্ছে। এই আইনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রাখেননি। বিলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটির শুধু নামের পরিবর্তন ও কিছু ধারার পরিবর্তন-পরিমার্জন হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মৌলিক যে দুর্বলতা ছিল সেগুলো এখানে রয়েছে। মানুষের মৌলিক অধিকার, যার মধ্যে বাকস্বাধীনতা, বিবেকের চিন্তার স্বাধীনতা, বিশেষ করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের মতো অনেক উপাদান সাইবার নিরাপত্তা আইনে রয়েছে।
জবাবে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তিতে যে সুবিধা হয়েছে, একই সঙ্গে সাইবার স্পেসে ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে। ২০১২ সালে রামুতে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সদস্যরা একটা মিথ্যা তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দিয়ে কীভাবে অনেক সম্পদ ও প্রাণের ক্ষতি করে। ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাইবার হামলা চালায়। সাইবার হামলা চালিয়ে হ্যাকাররা ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি করে নিয়ে যায়।
এরপর আমরা কম্পিউটার রেসপন্স টিম তৈরি করি। পদ্মা সেতু নির্মাণের শেষ দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা গুজব ছড়ানো হলো সেতুর পিলার শক্ত করতে নাকি শিশুদের মাথা দরকার। তারই ফলে রাজধানীর বাড্ডায় রেনু নামে এক নারীকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়। এ ধরনের অপরাধ বন্ধে বিলটি প্রণয়ন করা হয়েছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে যেগুলো অজামিনযোগ্য ধারা ছিল, তা জামিনযোগ্য করা হয়েছে।
পরে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন এবং অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ-সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী কর্র্তৃক ঘোষিত রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ, দমন ও ওই অপরাধের বিচার এবং আনুষঙ্গিক বিষয়ে নতুন একটি আইন প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজন বিধায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাইবার নিরাপত্তা আইন ও এ-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ রহিত ক্রমে বাস্তবতার নিরিখে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাইবার কার্যক্রমের বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে সাইবার অপরাধের প্রবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ আইনের আওতায় বিভিন্ন দেশের সাইবার নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রদান এবং সাইবার ঝুঁকি ও হুমকিগুলোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্কীকরণ ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে দেশের সাইবার স্পেসের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণই এই আইনের অন্যতম উদ্দেশ্য।
সোমবার রাতে লিটন কুমার দাস যখন পাকিস্তানের বিমানে উঠছেন, তখনো জানা নেই তাকে দলে জায়গা করে দিতে কাকে ধরতে হবে ফিরতি ফ্লাইট। রাত ২টার দিকে হঠাৎ করেই মোবাইল ফোনে বেজে উঠল ই-মেইল অ্যালার্ট, তাতেই বিসিবি জানান দিয়েছে নাজমুল হোসেন শান্ত হচ্ছেন সেই দুর্ভাগা ক্রিকেটার। আফগানিস্তানের বিপক্ষে শতরানের ইনিংস খেলার মাঝপথেই ক্র্যাম্পে আক্রান্ত হয়েছিলেন, রান নিতে গিয়ে পড়ে গিয়েই রান আউটের শিকার হওয়া শান্তর পায়ের পেশি ছিঁড়ে গেছে। তাই বাংলাদেশকে এশিয়া কাপে টিকিয়ে রাখলেও শান্তর এশিয়া কাপ শেষ। ২ ম্যাচে ১৯৩ রান করে এখন পর্যন্ত আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক শান্তকে ছাড়াই আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
পাকিস্তান এই মুহূর্তে আইসিসির ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দল। শাহিন শাহ আফ্রিদি, নাসিম শাহ আর হারিস রউফদের নিয়ে গড়া পাকিস্তানের পেস আক্রমণ বিশ্বেরই অন্যতম সেরা। আগের ম্যাচে শাহিন যেভাবে রোহিত শর্মাকে বোল্ড করেছেন, তারপর ওয়াসিম আকরামসহ অনেক কিংবদন্তিই বলতে শুরু করেছেন যে এখন শাহিনই সাদা বলে বিশ্বের সেরা বোলার। ইনিংসের গোড়ার দিকে উইকেট তুলে নেওয়াটা অভ্যাসে পরিণত করেছেন শাহিন। অথচ তার বল সামলে নেওয়ার জন্য প্রস্তুতির সুযোগ একদমই পাচ্ছেন না সদ্যই দলের সঙ্গে যোগ দেওয়া লিটন দাস। লাহোরের তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁইছুঁই, তীব্র গরমে অনুশীলন বাতিল করেছে বাংলাদেশ দল। পার্ল কন্টিনেন্টাল হোটেল থেকে তাই কোথাও বের হননি ক্রিকেটাররা, হয়নি কোনো সংবাদ সম্মেলনও।
অন্যদিকে পাকিস্তান দল ঠিকই অনুশীলন করেছে কাল। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে বোলিং করেও ব্যাটিং না পাওয়া বাবর-রিজওয়ানরা নিশ্চয়ই আজকের ম্যাচের আগে নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছেন। অনুশীলন শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে পেসার নাসিম শাহ বলেন, ‘পাকিস্তান আর শ্রীলঙ্কার কন্ডিশন পুরোপুরি আলাদা। আমরা আসলে টেস্ট সিরিজ ও এলপিএল খেলে শ্রীলঙ্কার কন্ডিশনের সঙ্গে বেশ মানিয়ে নিয়েছিলাম। তবে ওয়ানডে ম্যাচে বোলিং লাইনআপে শৃঙ্খলা বজায় রাখাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, সেটা বিশ্বের যেখানেই খেলা হোক না কেন।’ মুলতান থেকে পাল্লেকেলে গিয়ে আবার লাহোর, এশিয়া কাপের ভ্রমণ ঝক্কি নিয়ে জানতে চাইলে তার উত্তর, ‘সত্যি বলতে, এটা সহজ নয়। তবে পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে আমাদের মানিয়ে নিতেই হবে। সূচি যা-ই হোক, আমাদের মেনে চলতে হবে। আমরা চেষ্টা করি যেন রিকভারিটা ভালো হয় আর নিজেদের খেয়াল নিজেদেরই রাখতে হয়। সূচি নিয়ে আমাদের কিছুই করার নেই।’
বাংলাদেশ দলে শান্ত না থাকায় পরিবর্তন আসছেই। লিটন দাস কি ইনিংসের গোড়াপত্তনে নিজের চেনা জায়গায় ফিরবেন, নাকি শান্তর ছেড়ে যাওয়া তিন নম্বরে খেলবেন সেটাই প্রশ্ন। হুট করে ওপেনার বানিয়ে দেওয়া মেহেদি হাসান মিরাজ বাজিমাত করে দিয়েছেন আফগানদের বিপক্ষে, শাহিন-নাসিম-রউফদের বিপক্ষে কি পারবেন? এই প্রশ্নও থাকছে।
এশিয়া কাপে দুই ম্যাচে এখন পর্যন্ত শাহিনের শিকার ৬ উইকেট, হারিসের ৫ আর নাসিমের ৪। বাংলাদেশের টপ-অর্ডার যদি এই তিনের ঝড় সামলাতেও পারে, এরপর তাদের চিরায়ত দুর্বলতা লেগস্পিন নিয়ে আছেন শাদাব খান। তারও শিকার এখন পর্যন্ত ৪ উইকেট। ব্যাটিংটাও তো কম ভয় ধরানো নয়। বিশ্বের ১ নম্বর ব্যাটসম্যান বাবর আজম তো আছেনই, মোহাম্মদ রিজওয়ান আর ইফতিখারকে নিয়েও ভয় কম নয়। এই দুজন বিপিএলের সবশেষ আসরে বাংলাদেশের বেশিরভাগ বোলারকেই খেলে বেধড়ক পিটিয়ে গেছেন।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশের অবস্থা হাত-পা বেঁধে পানিতে ছেড়ে দেওয়ার মতো। তার ওপর জলে কুমির আর ডাঙায় বাঘ। পাকিস্তানের ব্যাটিং-বোলিং দুইই ভয় ধরানো। তারা অনুশীলন করে তৈরি। অন্যদিকে বাংলাদেশ দলে সেরা খেলোয়াড়ই চোটের কারণে দেশে ফিরে গেছেন। প্রত্যাবর্তন করা লিটনের সাম্প্রতিক ফর্ম বেশ সুবিধার নয়। কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি আর এলপিএল মিলিয়ে ৯ ইনিংসে মোটে একখানা হাফ সেঞ্চুরি। পাকিস্তানের বিপক্ষে তার পরিসংখ্যানও সুবিধের নয়, ২ ম্যাচে করেছেন মোটে ৩৮ রান। এক ম্যাচে ৩২, অন্য ম্যাচে ৬।
হারলেই দেশে ফিরতে হবে না, অন্তত এই নিশ্চয়তাটুকু আছে এই ম্যাচে। বাংলাদেশের ভরসা এতটুকুই। আগে-পরে মিলিয়ে স্কোয়াডে এখন চারজন ওপেনার। তবে পাকিস্তানের পেস আক্রমণ সামলানোর মতো নেই কেউই। তাই সাকিব আর মুশফিকের অভিজ্ঞতাতেই ভরসা। সেই সঙ্গে মিরাজের ভাগ্য।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক-সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি এখনো নিশ্চিত হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাজেটস্বল্পতার যুক্তিতে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষকদল পাঠাতে পারবে না বলেছে। এখন পর্যন্ত আবেদনকারী ২১০টি দেশি সংস্থা বা সংগঠনের মধ্যে ৬৬টিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে।
নির্বাচনের তিন মাসেরও কম সময় বাকি। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের কাছ থেকে কাক্সিক্ষত সাড়া না পেয়ে তাদের চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানোর কথা ভাবছে ইসি। তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচন নিয়ে বড় কোনো প্রশ্ন যাতে না ওঠে, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা যেন বাধাগ্রস্ত না হয়। এ লক্ষ্যে সব চেষ্টাই নির্বাচন কমিশন করবে। ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে।
অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়েছে, সেটি বোঝাতে হলে আন্তর্জাতিক মহলে বার্তা পৌঁছাতে হবে। আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে এ বার্তা পৌঁছানোর কাজটি করেন বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। ইইউ বলে দিয়েছে, তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। যুক্তরাষ্ট্র সরকার নির্বাচন-পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না, তার জন্য ক্ষেত্রসমীক্ষণে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) যৌথ প্রতিনিধিদল আসবে। ৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল ও তাদের সহায়তাকারীরা ৭ থেকে ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি এবং দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করা নিয়ে টুইটবার্তা এবং বিভিন্ন বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের ধারণা, তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত এ বার্তাই দিচ্ছে যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু না-ও হতে পারে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার কাছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত না হলে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) পর্যবেক্ষক না পাঠালেও আরও অনেক দেশ আছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোকে (আফগানিস্তান, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা) আমন্ত্রণ জানিয়ে অক্টোবরে চিঠি দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষকদের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে ভালো হয়। আমরা চাই দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা বেশি সংখ্যায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করুক। আমরা আশা করি বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি সংস্থা।
পৃথিবীতে আরও অনেক দেশ আছে।’
আপনারা তো ভোটের জন্য শতভাগ প্রস্তুত কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি নির্বাচনমুখী কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেভাবেই হোক সংবিধান অনুযায়ী জানুয়ারির ২৯ তারিখের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। না হলে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে। এতে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। নির্বাচন কমিশন সেটা হতে দিতে পারে না।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমেরিকা আসবে না বলেনি। আসলে আমরা খুশি হব। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য যেসব যোগ্যতার প্রয়োজন, সেসব থাকলে যে কেউ আসতে পারে।’
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষক দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। আশা করি নির্ধারিত সময়ের আগেই তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসবে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বদিউল আলম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে, নির্বাচনসংক্রান্ত বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামো, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে যে দলীয়করণ হয়েছে, তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অতীতেও তা হয়নি। আগামীতে হবে বিশ্বাস করা কঠিন। যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, তথ্য-উপাত্ত নিয়েই তা করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও বলেছে, তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। নেতিবাচক মনোভাবই তাদের সিদ্ধান্তে প্রকাশ পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা আসেনি। ফলে সেটি আন্তর্জাতিক মানদ-ে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। ওই দুটি নির্বাচন সব মহলেই প্রশ্নবিদ্ধ। এখন সরকার বা ইসি যে কথা বলছে, তাতে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নীতির বদল হবে বলে মনে হয় না। আস্থা তৈরি করতে হলে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সূত্রগুলো বলছে, তারা নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে কাজ করছে। ইতিমধ্যে ইইউকে ছোট পরিসরে হলেও পর্যবেক্ষক পাঠাতে ২৪ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে কমিশন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে এমন প্রতিশ্রুতি সিইসি দিচ্ছেন। সরকারও একই কথা বলছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার ও নির্বাচন কমিশন। যদিও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ফলে আস্থার একটা সংকট তৈরি হয়েছে। তা কাটানোর জন্যই ইসি নানা পরিসরে কাজ করছে।
সূত্রমতে, ইইউর নেতিবাচক মনোভাবের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষকদের সন্তেুাষজনক তথ্য তৈরির কাজ করছে ইসি সচিবালয়। মার্কিন দলের মনোতুষ্টির বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে কমিশনের। নির্বাচনী তফসিল থেকে নির্বাচনী ফল ঘোষণা পর্যন্ত সব কর্মকা-, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়গুলো তাদের কাছে তুলে ধরা হবে।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতির সুবিধা হলো তারা নির্বাচনী কাজে জড়িতদের জবাবদিহির মুখোমুখি করে। পর্যবেক্ষকদের কোনো আইনি শক্তি নেই। তবে তারা নৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এতে প্রার্থীদের সমর্থকদের আচরণও প্রভাবিত হয়। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে ভোটারদের ওপর, তারা আস্থা পান।’
তিনি বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে তাতে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা অংশ নেয় না। আগামী নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এখন পর্যন্ত সব দলের অংশ নেওয়ার বার্তা নেই। সব দলই নিজ অবস্থানে অনড়। এ কারণেই বিদেশিরা আগ্রহ প্রকাশ করছে না।’
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশে সাধারণত ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, সার্কভুক্ত দেশ, কমনওয়েলথ, ওআইসি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে এমন সংস্থা, মানবাধিকার গোষ্ঠী, ঢাকায় বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। ২০১৮ সালে দেশি ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন এবং ওআইসি ও কমনওয়েলথ থেকে আমন্ত্রিত ও অন্যান্য বিদেশি পর্যবেক্ষক ছিলেন ৩৮ জন, কূটনৈতিক বা বিদেশি মিশনের কর্মকর্তা ৬৪ জন এবং বাংলাদেশে দূতাবাস বা হাইকমিশন বা বিদেশি সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশি ৬১ জন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের সুযোগ দিতে এবার দ্বিতীয়বারের মতো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। দেড় শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে। প্রথমবার দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বাদপড়াদের মধ্য থেকেই বেশি আবেদন এসেছে বলে জানা গেছে।
গত ১৮ জানুয়ারি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের জন্য প্রথমবারের মতো আবেদন আহ্বান করেছিল নির্বাচন কমিশন। ২১১টি সংস্থা আবেদন করেছিল। গত ৮ আগস্ট প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ ৬৮টি সংস্থার তালিকা প্রকাশ করে সংস্থাটি। আপত্তি ওঠায় দুটি সংস্থাকে বাদ দিয়ে শেষপর্যন্ত ৬৬টি সংস্থাকে নিবন্ধন দেয় কমিশন। এসব সংস্থার ৪২টিই ছিল নতুন। এর আগে তারা কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজ করেনি; সংস্থাগুলোর সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে পর্যবেক্ষক সংস্থার সংখ্যা অর্ধেকের মতো কমে যাওয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো ১৫ সেপ্টেম্বর ১০ দিনের জন্য ফের আবেদন আহ্বান করে ইসি। এর সময় শেষ হয়েছে ২৪ সেপ্টেম্বর।
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগের মতোই বাছাই শেষে দাবি-আপত্তি আহ্বান করা হবে। তারপর চূড়ান্ত হবে কোন কোন সংস্থা নিবন্ধন পাচ্ছে।
ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দেড় শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে।’
২০০৮ সাল থেকে ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষক নিবন্ধন দিচ্ছে ইসি। সে সময় ১৩৮টি সংস্থা নিবন্ধন পেয়েছিল। ২০১৮ সালে ১১৮টি সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল ইসি। পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের পাঁচ বছরের মেয়াদ গত ১১ জুলাই শেষ হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য সংশোধিত নীতিমালা : আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য নীতিমালা সংশোধন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ২৬ সেপ্টেম্বর ইসি এই নীতিমালা জারি করেছে। সংশোধিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো বিদেশি নাগরিক বা সংস্থা বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে চাইলে তাদের সুশাসন, নির্বাচন, গণতন্ত্র, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সংস্থাগুলোকে সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধিত হতে হবে।
সাত বছর পর ভারতের মাটিতে অবতরণ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তারা গিয়েছিল সেখানে। তারপর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে। টুর্নামেন্ট শুরুর এক সপ্তাহ আগে তারা পৌঁছালেন দেশটিতে। সেখানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোটেলে।
বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাবর আজমরা সেখানে পৌঁছানো মাত্রই উচ্ছ্বসিত জনতা ভিড় করেন। হায়দ্রবাদের বিমানবন্দরের বাইরে তাদের দেখে অনেকেই চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। বাবরের নাম উচ্চারণ করতও শোনা গেছে এসময়। পুলিশ উৎসুক জনতাকে আটকে রেখেছিল।
রাজনৈতিক বৈরি সম্পর্কের কারণে দুই দলের দেখা হয় না দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে। বিশ্ব মাতানো ক্রিকেটার থাকলেও পাকিস্তানিরা খেলতে পারে না আইপিএলে। কারণ ঐ একটাই। তবে বৈশ্বিক বা মহাদেশীয় ইভেন্টে তাদের ঘিরে আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। সেটা দেখা গেছে এশিয়া কাপেও।
বিশ্বকাপ খেলতে আজ বাংলাদেশ উড়াল দিয়েছে ভারতে। সেই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখে টাইগাররা। তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছাড়ার পর সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের ভার। আর আজই জানা গেল, বিশ্বকাপের পর একদিনও তিনি অধিনায়কত্ব করবেন না।
গত ১১ আগস্ট তৃতীয় দফায় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান। তখনই বলা হয়েছিল, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ও ভারত বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এই বিশ্বকাপই শেষ। এরপর একদিনও (অধিনায়কত্ব) করবো না। যে কারণে আমি এশিয়া কাপের আগে নিতে চাইনি। এরপরও এটা না। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হাসতে চাই, খেলতে চাই, পারফর্ম করতে চাই। এই একটা কারণে আমি করতে চাইনি।’
সাকিব যোগ করেন, ‘আর কোনে কারণ নেই। বেস্ট হয় যদি অধিনায়ক না থাকি। অধিনায়কত্ব কি আমার কোনো ভেল্যু এড করতেছে ক্যারিয়ারে এই স্টেজে এসে? আমি তো মনে করি না।’
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাকে নিয়ে যারপরনাই উদ্বিগ্ন দলের নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার্থে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী, উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিতে সম্ভাব্য সব পথই অবলম্বন করছেন দলটির নেতারা। তার পরিবারের সদস্যরা সরকারের কাছে আবেদন জানানোর পাশাপাশি তার আইনজীবীরা উচ্চ আদালতে আবার রিট করার কথা ভাবছে। কূটনৈতিক উদ্যোগও অব্যাহত রেখেছে বিএনপির পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটি।
বিএনপি চেয়ারপারসনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিতে আমরা আলটিমেটাম দিয়েছি। কর্মসূচি দিচ্ছি। সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। এরপরও সরকার তৎপর না হলে, তাদের বোধোদয় না হলে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় সরকারকেই নিতে হবে।’
বিএনপি-সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক হারুণ অর রশীদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চেয়ারপারসনের শারীরিক যে অবস্থা তাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া তাকে বিদেশে নেওয়া সম্ভব নয়। তার লিভার প্রতিস্থাপন করতে হবে। এজন্য তাকে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারসমৃদ্ধ হাসপাতালে নিতে হবে। কাছাকাছি সিঙ্গাপুরে এমন হাসপাতাল রয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সে আধুনিক চিকিৎসাসেবা রয়েছে।’
আমেরিকায় অবস্থানরত খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খালেদা জিয়া এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাকে অবিলম্বে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো দরকার। তার মুক্তির মেয়াদ বাড়াতে যতবার আবেদন করা হয়েছে, ততবারই চিকিৎসকদের পরামর্শের কাগজপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে না। এখন আইনমন্ত্রী বলছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে চাইলে আবেদন করতে হবে। আমরা আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সরকারের গ্রিন সিগন্যাল পেলে আবেদন করা হবে। সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে পরিবারের পক্ষ থেকে।’
সরকার বলেছে, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়টি আদালতের এখতিয়ারভুক্ত। এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির পরিপ্রেক্ষিতে আদালত কতটা নিরপেক্ষ হয়েছে তা দেখতে আদালতে যেতে পারি আমরা। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচনা হলে এবং তারা সিদ্ধান্ত দিলে আমরা আইনজীবীরা আদালতে রিট করার প্রস্তুতি নেব। আগেও আদালতে রিট করা হয়েছিল।’
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামের লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন তিনি। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ। মেডিকেল বোর্ড মনে করে তাদের আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি।’
সেলিমা ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, পরিবার আবেদন করলে সরকার ভেবে দেখবে। আবেদন করার কথা উনি আগেও বলেছেন। আমরা আবেদন করেছি। সাড়া পাইনি। এখন সাড়া পাওয়ার নিশ্চয়তা কী? এরপরও আমরা আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে স্ব^রাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু করার নেই। খালেদা জিয়া দ-প্রাপ্ত আসামি। বিদেশে চিকিৎসার জন্য কোনো আবেদন তার পরিবার করেনি। এ বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত দেবে। খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হচ্ছে।’
খালেদা জিয়াকে গত ৯ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় তার শ্বাসকষ্ট হলে গত রবিবার রাত দেড়টার দিকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। পরদিন সোমবার তাকে আবার কেবিনে ফেরত নেওয়া হয়।
খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। মাঝখানে তাকে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। অতিদ্রুত তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া প্রয়োজন। খালেদা জিয়াকে বাঁচাতে হলে উন্নত চিকিৎসা দরকার। ডাক্তাররা বলেছেন এটা দেশে সম্ভব নয়। আমরা অনেক দিন ধরেই তাকে বিদেশে নেওয়ার কথা বলছি। কিন্তু সরকার কর্ণপাত করছে না। এখন একেবারে শেষ সময় চলে এসেছে। বিদেশে নেওয়া না হলে তাকে বাঁচানো যাবে না। সিসিইউ থেকে কেবিনে নেওয়া হলেও তার অবস্থা স্থিতিশীল বলা যাবে না।’
৭৮ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট ও চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে ২০২০ সাল থেকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তির পর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন খালেদা জিয়া।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সরকার ২০২০ সালের ২৫ মার্চ এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে গুলশানের বাসায় অবস্থান এবং দেশ ত্যাগ না করার শর্তে সাময়িকভাবে মুক্তি দেয়।
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’