
সোমবার রাতে লিটন কুমার দাস যখন পাকিস্তানের বিমানে উঠছেন, তখনো জানা নেই তাকে দলে জায়গা করে দিতে কাকে ধরতে হবে ফিরতি ফ্লাইট। রাত ২টার দিকে হঠাৎ করেই মোবাইল ফোনে বেজে উঠল ই-মেইল অ্যালার্ট, তাতেই বিসিবি জানান দিয়েছে নাজমুল হোসেন শান্ত হচ্ছেন সেই দুর্ভাগা ক্রিকেটার। আফগানিস্তানের বিপক্ষে শতরানের ইনিংস খেলার মাঝপথেই ক্র্যাম্পে আক্রান্ত হয়েছিলেন, রান নিতে গিয়ে পড়ে গিয়েই রান আউটের শিকার হওয়া শান্তর পায়ের পেশি ছিঁড়ে গেছে। তাই বাংলাদেশকে এশিয়া কাপে টিকিয়ে রাখলেও শান্তর এশিয়া কাপ শেষ। ২ ম্যাচে ১৯৩ রান করে এখন পর্যন্ত আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক শান্তকে ছাড়াই আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
পাকিস্তান এই মুহূর্তে আইসিসির ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দল। শাহিন শাহ আফ্রিদি, নাসিম শাহ আর হারিস রউফদের নিয়ে গড়া পাকিস্তানের পেস আক্রমণ বিশ্বেরই অন্যতম সেরা। আগের ম্যাচে শাহিন যেভাবে রোহিত শর্মাকে বোল্ড করেছেন, তারপর ওয়াসিম আকরামসহ অনেক কিংবদন্তিই বলতে শুরু করেছেন যে এখন শাহিনই সাদা বলে বিশ্বের সেরা বোলার। ইনিংসের গোড়ার দিকে উইকেট তুলে নেওয়াটা অভ্যাসে পরিণত করেছেন শাহিন। অথচ তার বল সামলে নেওয়ার জন্য প্রস্তুতির সুযোগ একদমই পাচ্ছেন না সদ্যই দলের সঙ্গে যোগ দেওয়া লিটন দাস। লাহোরের তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁইছুঁই, তীব্র গরমে অনুশীলন বাতিল করেছে বাংলাদেশ দল। পার্ল কন্টিনেন্টাল হোটেল থেকে তাই কোথাও বের হননি ক্রিকেটাররা, হয়নি কোনো সংবাদ সম্মেলনও।
অন্যদিকে পাকিস্তান দল ঠিকই অনুশীলন করেছে কাল। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে বোলিং করেও ব্যাটিং না পাওয়া বাবর-রিজওয়ানরা নিশ্চয়ই আজকের ম্যাচের আগে নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছেন। অনুশীলন শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে পেসার নাসিম শাহ বলেন, ‘পাকিস্তান আর শ্রীলঙ্কার কন্ডিশন পুরোপুরি আলাদা। আমরা আসলে টেস্ট সিরিজ ও এলপিএল খেলে শ্রীলঙ্কার কন্ডিশনের সঙ্গে বেশ মানিয়ে নিয়েছিলাম। তবে ওয়ানডে ম্যাচে বোলিং লাইনআপে শৃঙ্খলা বজায় রাখাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, সেটা বিশ্বের যেখানেই খেলা হোক না কেন।’ মুলতান থেকে পাল্লেকেলে গিয়ে আবার লাহোর, এশিয়া কাপের ভ্রমণ ঝক্কি নিয়ে জানতে চাইলে তার উত্তর, ‘সত্যি বলতে, এটা সহজ নয়। তবে পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে আমাদের মানিয়ে নিতেই হবে। সূচি যা-ই হোক, আমাদের মেনে চলতে হবে। আমরা চেষ্টা করি যেন রিকভারিটা ভালো হয় আর নিজেদের খেয়াল নিজেদেরই রাখতে হয়। সূচি নিয়ে আমাদের কিছুই করার নেই।’
বাংলাদেশ দলে শান্ত না থাকায় পরিবর্তন আসছেই। লিটন দাস কি ইনিংসের গোড়াপত্তনে নিজের চেনা জায়গায় ফিরবেন, নাকি শান্তর ছেড়ে যাওয়া তিন নম্বরে খেলবেন সেটাই প্রশ্ন। হুট করে ওপেনার বানিয়ে দেওয়া মেহেদি হাসান মিরাজ বাজিমাত করে দিয়েছেন আফগানদের বিপক্ষে, শাহিন-নাসিম-রউফদের বিপক্ষে কি পারবেন? এই প্রশ্নও থাকছে।
এশিয়া কাপে দুই ম্যাচে এখন পর্যন্ত শাহিনের শিকার ৬ উইকেট, হারিসের ৫ আর নাসিমের ৪। বাংলাদেশের টপ-অর্ডার যদি এই তিনের ঝড় সামলাতেও পারে, এরপর তাদের চিরায়ত দুর্বলতা লেগস্পিন নিয়ে আছেন শাদাব খান। তারও শিকার এখন পর্যন্ত ৪ উইকেট। ব্যাটিংটাও তো কম ভয় ধরানো নয়। বিশ্বের ১ নম্বর ব্যাটসম্যান বাবর আজম তো আছেনই, মোহাম্মদ রিজওয়ান আর ইফতিখারকে নিয়েও ভয় কম নয়। এই দুজন বিপিএলের সবশেষ আসরে বাংলাদেশের বেশিরভাগ বোলারকেই খেলে বেধড়ক পিটিয়ে গেছেন।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশের অবস্থা হাত-পা বেঁধে পানিতে ছেড়ে দেওয়ার মতো। তার ওপর জলে কুমির আর ডাঙায় বাঘ। পাকিস্তানের ব্যাটিং-বোলিং দুইই ভয় ধরানো। তারা অনুশীলন করে তৈরি। অন্যদিকে বাংলাদেশ দলে সেরা খেলোয়াড়ই চোটের কারণে দেশে ফিরে গেছেন। প্রত্যাবর্তন করা লিটনের সাম্প্রতিক ফর্ম বেশ সুবিধার নয়। কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি আর এলপিএল মিলিয়ে ৯ ইনিংসে মোটে একখানা হাফ সেঞ্চুরি। পাকিস্তানের বিপক্ষে তার পরিসংখ্যানও সুবিধের নয়, ২ ম্যাচে করেছেন মোটে ৩৮ রান। এক ম্যাচে ৩২, অন্য ম্যাচে ৬।
হারলেই দেশে ফিরতে হবে না, অন্তত এই নিশ্চয়তাটুকু আছে এই ম্যাচে। বাংলাদেশের ভরসা এতটুকুই। আগে-পরে মিলিয়ে স্কোয়াডে এখন চারজন ওপেনার। তবে পাকিস্তানের পেস আক্রমণ সামলানোর মতো নেই কেউই। তাই সাকিব আর মুশফিকের অভিজ্ঞতাতেই ভরসা। সেই সঙ্গে মিরাজের ভাগ্য।
জাতীয় নির্বাচনের আগে বিদেশিদের, বিশেষ করে পরাশক্তিগুলোর রাজনীতির ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর ‘নজিরবিহীন’ তৎপরতার কারণে সরকারও চাপে আছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশের রাজনীতি যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীনকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। ভারত ও চীন আপাতত রাজনীতি নিয়ে উল্লেখযোগ্য হস্তক্ষেপ না করলেও যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে আগামী শুক্রবার ভারত সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে সফরে যাচ্ছেন তিনি। শুক্রবার সন্ধ্যায় তার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলন।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যেকোনো অবস্থায় প্রতিবেশী ভারতকে পাশে চায় সরকার। শুধু পাশে আছে সেটাই নয়, ভারত বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে আছে এটি প্রকাশ্যে নিয়ে আসতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সাম্প্রতিককালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী সমালোচনা বেড়েছে। অন্যদিকে চীনকে ইস্যু করে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে আড়চোখে দেখছে, এমন দাবি করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন নিজেও। ভারতও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি দৃষ্টি কুঁচকে রেখেছে, এমন তথ্য জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা। তারা মনে করেন, বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতের দৃষ্টি কুঁচকে রাখার সময় এখন আর নেই।
আওয়ামী লীগের ওই নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর এ সফরেই ভারত বিনা শর্তে বাংলাদেশের পাশে থাকবে তা স্পষ্ট করতে সবরকম চেষ্টা করা হবে। ভারত প্রকাশ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে আছে, থাকবে সেই প্রত্যাশা ও প্রস্তুতি নিয়েই প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার ঢাকা ত্যাগ করবেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে চলি। এখানে নীতি ও প্রয়োজন অনুযায়ী সম্পর্ক ওঠানামা করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার পররাষ্ট্র নীতিতে অবিচল থেকে গত ১৪ বছর দেশ পরিচালনা করে আসছে।’
ভারতকে পাশে পাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারত সম্পর্ক ঐতিহাসিক ও পুরনো। যারা সম্পর্কের ওঠানামা নিয়ে কথা বলছেন, তারা হয়তো সম্পর্কের গভীরতার বিষয়ে অবগত নয়।’
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায় থেকে দাবি করা হয়, এ সফর নিয়ে দেশের রাজনীতিতে গত দুই মাস ধরেই আলোচনা চলছে। এ ছাড়া রাজনীতিতে আলোচনা আছে যে, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পরই রাজনীতি ও ক্ষমতার অনেক কিছু স্পষ্ট হবে।
প্রধানমন্ত্রীর দুদিনের ভারত সফরে শুক্রবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকটিকেই গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হচ্ছে। ওই বৈঠকে সীমান্ত হত্যা, তিস্তার পানি, ভারতীয় ঋণ, শুল্ক বাধা ও ভারতীয় পণ্যের শুল্ক বৃদ্ধিসহ নানা এজেন্ডা রয়েছে। এসব ছাপিয়ে বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভারতের অবস্থান বাংলাদেশের পক্ষে না বিপক্ষে সেটা।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, নির্ধারিত বৈঠকের আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংক্ষিপ্ত একটি বৈঠক হবে। দ্বিপক্ষীয় সেই বৈঠকে মূলত ভারতের অবস্থান বাংলাদেশের পক্ষে রাখতে বিশেষ আলোচনা হবে। এ ক্ষেত্রে দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের অতীত বর্তমান টেনে প্রধানমন্ত্রী ভারতের সমর্থন পেতে চাইবেন। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র এ প্রতিবেদককে বলেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে ভারতকে পক্ষে আনার কর্মকৌশল গ্রহণ করে সফরে যাচ্ছেন টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সূত্র আরও দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর-কষাকষিতেও ভারতের সহযোগিতা চেয়ে আসছে শেখ হাসিনার সরকার। এ চাওয়া কতটা ফলপ্রসূ হবে, সেটাও পরিষ্কার হয়ে যাবে ভারত সফরে।
এদিকে ভারতও মনে করে চীনের পকেটে ঢুকে আছে শেখ হাসিনার সরকার। তা না হলে চীনের রাষ্ট্রদূতকে তিস্তা পরিদর্শনে পাঠানো কেন? চীন থেকে সাবমেরিন কেনার বিষয়টিও ভারত ভালো চোখে নেয়নি। এ ছাড়া চীনের অতিরিক্ত সম্পৃক্ততা ও জামায়াতকে রাজনৈতিক দৃশ্যপটে আনার ব্যাপারেও ভারত বঙ্গবন্ধুকন্যার সরকারের ওপর বিরাগভাজন হয়েছেন বলে জানা গেছে। সম্পর্কের এই টানাপড়েনের মধ্যে ভারত সরকারের কতটা আস্থা অর্জন করতে পারবেন শেখ হাসিনা, সেটা সামনের দিনগুলোতে আরও পরিষ্কার হবে। তবে ভারতকে পাশে পাবেন, এ ব্যাপারে বড় প্রত্যাশা রয়েছে শেখ হাসিনার।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ও রাজনীতি নিয়ে এখনো নীরব দর্শকের ভূমিকায় আছে প্রতিবেশী দেশটি। এ নীরবতা ভাঙতে বিশেষ অনুরোধ রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরবেন তিনি। ভারতকে নিজেদের নিরাপত্তা উদ্বেগের বিষয়টি জানিয়ে বাগে আনার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। ভারতের নীরবতা ভাঙাতে প্রয়োজনে তর্কযুদ্ধেও লিপ্ত হবেন শেখ হাসিনা। দুই দেশের আবেগের যে সম্পর্ক রয়েছে, সেখানেও আঘাত করা হবে। মূলত ভারতের নীরবতা ভাঙাতে যত পদক্ষেপ ও যত কৌশল গ্রহণ করার প্রয়োজন পড়ে, সফরে তার সবকিছুই করা হবে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। সেই সম্পর্কে ঘাটতি হয়নি। কখনো কখনো ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে, কিন্তু সম্পর্কে দুই দেশ অবিচল।’
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সক্ষমতা বাড়াতে সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তা দিতে রাজি আছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনৈতিক সামরিক-বিষয়ক বিভাগের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিরা রেজনিকের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। রাজধানী ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ বৈঠক হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘নির্বাচনের ব্যাপারে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) জানতে চেয়েছে, আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা বলেছি যে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে আমরা বদ্ধপরিকর। নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বাড়াতে সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) তা দিতে রাজি আছে।’
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির মধ্যে অনেক মিল আছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘উভয় দেশ চাইছে না এ অঞ্চলে নির্দিষ্ট একটি দেশ তাদের আধিপত্য বিস্তার করুক বা এখানে অবাধ চলাচলে বাধা হয়ে দাঁড়াক। আমাদের প্রত্যাশাগুলো হচ্ছে এখানে যাতে অবাধে চলাচল করা যায়, এখানে অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে পুরোপুরি ব্যবহার করা হয়। সেগুলোর বিষয়ে তারাও (যুক্তরাষ্ট্র) একমত। সুতরাং তারাও চায় না একটি নির্দিষ্ট দেশ এখানে আধিপত্য বিস্তার করুক বা অবাধ চলাচলে বাধা হয়ে দাঁড়াক।’
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গ : র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে দুপক্ষ আলোচনা করেছে। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমরা বলেছি, প্রতিটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে যে অভিযোগ আসে, সেগুলো আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করে এর উত্তর আমরা বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে দিই। আমাদের দেশে বিচারহীনতার কোনো সুযোগ রাখি না। আমাদের প্রত্যেকটি বাহিনীর একটি স্ট্যান্ডার্ড অব প্রসিডিউর আছে। একটি গুলি খরচ হলেও সেটির একটি জবাবদিহি আছে।’
গাজীপুরে শ্রমিক নেতার মৃত্যুর বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সব দুর্ঘটনার সঙ্গে যে সরকার জড়িত থাকে, বিষয়টি সেরকম নয়। কিছুদিন আগে গাজীপুরে একজন শ্রমিক নেতা মারা গেছেন। সেখানে সরকার তো কিছু করেনি। কিন্তু আমাদের শেষ পর্যন্ত জবাবদিহির একটি বিষয় থাকে। ১৭ কোটি মানুষের দেশ। একেক জায়গায় একেক রকম ঘটনা ঘটতেই পারে। সুতরাং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জড়িত থাকার কোনো খবর পেলে তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এর আগে গতকাল সকালে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নবম বার্ষিক নিরাপত্তা সংলাপ হয়। সংলাপে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (আমেরিকা) খন্দকার মাসুদুল আলম। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন মিরা রেজনিক।
বৈঠকে ইন্দো-প্যাসিফিক আঞ্চলিক সমস্যা, নিরাপত্তা ও মানবাধিকার, সামরিক সহযোগিতা, শান্তিরক্ষা, নিরাপত্তা সহায়তা ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচনা হয়।
গত বছর এপ্রিলে ওয়াশিংটনে দুই দেশের মধ্যে অষ্টম নিরাপত্তা সংলাপ হয়েছিল। এবার ঢাকায় নবম নিরাপত্তা সংলাপ হলো।
চাল থেকে পোকা বাছার মতো করে লাইন বাই লাইন পড়ে খসড়া করা হয়েছে ভূমি সংস্কার আইনের। এ খসড়াটি সরকারের বর্তমান মেয়াদের নয়, তার আগের মেয়াদের। খসড়াটি পড়েছিল ভূমি মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগেরও গরজ ছিল না। বলতে গেলে কারোর তাগাদা ছিল না।
সেই খসড়াটিই হঠাৎ অনুমোদন হয়ে গেল গত ২৮ আগস্টের মন্ত্রিসভা বৈঠকে। শুধু ভূমি সংস্কার আইনের খসড়াই নয়, সেদিন মোট ছয়টি আইনের খসড়া উঠেছিল সভায়। এগুলোর বেশিরভাগই গত কয়েক বছর ধরে করা খসড়া। দিনের পর দিন পড়ে থাকলেও সেগুলোই এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
কারণ সবকিছু ঠিক থাকলে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যারা জিতবে তারা সরকার গঠন করবে। বর্তমান সরকার মেয়াদের প্রায় শেষ প্রান্তে চলে এসেছে। আগামী মাসে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। তফসিল ঘোষণা হলে আইনের খসড়া প্রণয়ন বা নতুন প্রকল্প নেওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। এ কারণে যেসব আইনের খসড়া পড়ে আছে, সেগুলো খুঁজে বের করে মন্ত্রিসভায় তোলার হিড়িক পড়েছে। শুধু খসড়া আইন নয়, বিভিন্ন নীতিমালাও তোলা হচ্ছে। পুরনো জমে থাকা এসব খসড়া মন্ত্রিসভায় তোলার কারণেই বৈঠকের এজেন্ডার বহর বাড়ছে। এজেন্ডার মতো মন্ত্রিসভা বৈঠকের সংখ্যাও বেড়েছে। এসবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে একনেক সভা, সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিসহ বিভিন্ন মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক।
একজন সচিব বলেছেন, বর্তমানে আমাদের টপ প্রায়োরিটি পেন্ডিং কাজ খুঁজে বের করে তা শেষ করা। কারণ নতুন মন্ত্রী এসে পুরনো এসব সিদ্ধান্তের দায়িত্ব নাও নিতে পারে। এজন্য কী কী পেন্ডিং কাজ আছে, তা খুঁজে বের করা হচ্ছে। যেগুলো কেবিনেটে নিতে হচ্ছে সেগুলো সেখানে নেওয়া হচ্ছে। আর যেগুলো মন্ত্রিপর্যায়ে নিষ্পত্তিযোগ্য, সেগুলো মন্ত্রণালয়েই নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। প্রায় সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগেই ঝুলে থাকা কাজ খুঁজে বের করা হচ্ছে বলে আমি জানি।
মন্ত্রিসভা বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে কতগুলো বিষয় থাকবে, তার কোনো বাঁধা-ধরা নিয়ম নেই। তবে সাধারণত ছয়-সাতটি বিষয় থাকে। কখনো কখনো আট-দশটি বিষয়ও থাকে। তবে তা খুব কম হয়। কিন্তু গত সোমবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে ১৯টি বিষয় ছিল। এর মধ্যে আনসার ব্যাটালিয়ন আইনের খসড়াটি ছিল। এ আইনটির খসড়াও দীর্ঘদিন ঝুলে ছিল। বৈঠকে দুটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের খসড়া ছিল।
জনপ্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানান, গত কয়েক বছরে অনেকগুলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়সংক্রান্ত আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সেগুলো পরে সংসদেও পাস হয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গঠন ও কাজ প্রায় একই ধরনের। প্রতিটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা আলাদা আইন না করে একটি আইনের মধ্যেই সব বিশ^দ্যিালয়কে আনা যেত। শুধু আইনে শিডিউলের বিধান রাখলেই হতো। কিন্তু তা না করে আলাদা আলাদা আইন করতে গিয়ে মন্ত্রণালয়কে অনেক বেশি সময় ব্যয় করতে হয়েছে।
সবশেষ মন্ত্রিসভা বৈঠকে দুটি নীতিমালা অনুমোদন করা হয়েছে। প্লাস্টিক শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ নীতিমালা নামের এ দুটি নীতিমালাও দীর্ঘদিন ধরে প্রায় চূড়ান্ত অবস্থায় পড়েছিল।
সোমবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকের আগে গত ২৮ আগস্টের বৈঠকেও ৯টি আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে। এসব খসড়ার মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়াও ছিল। এ আইনটির খসড়াও অনেক দিন আগেই প্রস্তুত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
শেষ সময়ে এসে সরকার নির্বাচনী প্রকল্প অনুমোদনেও তোড়জোড় করছে। এগুলোর বেশিরভাগই সড়ক সংস্কার কিংবা অবকাঠামোভিত্তিক। সংশ্লিষ্টরা এগুলোকে জনতুষ্টিমূলক প্রকল্প হিসেবেও অভিহিত করেছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ শীর্ষক প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকায়, শেষ সময়ে এসে এর ব্যয় বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ১৭৭ কোটি টাকায়।
গত চারটি একনেক সভায় ৭৮টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ৭৩টিই অবকাঠামো, সড়ক ও যোগাযোগ এবং প্রশিক্ষণকেন্দ্রিক। বিশ্লেষকদের মতে, এসব প্রকল্পই নির্বাচনী প্রকল্প। আর এমন প্রকল্পের ব্যয় ৬২ হাজার ৭৭৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। যেখানে মোট অনুমোদিত ৭৮টি প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৬৭ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা।
এ ছাড়া নির্বাচনের আগে বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই উদ্বোধনের তোড়জোড় দেখা গেছে। বিশেষ করে সর্বশেষ উদ্বোধন হওয়া ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ এখনো চলমান। আগামী অক্টোবরে উদ্বোধন হবে মেট্রোরেল লাইন-৫-এর উত্তরা-মতিঝিল অংশ। এটিও কাজ শেষ হতে এখনো এক বছরের বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে।
নির্বাচনের আগে চলমান প্রকল্পগুলো উদ্বোধন করার প্রক্রিয়াটি সরকারের ভোটের রাজনীতি কি না, গতকাল মঙ্গলবার একনেক সভা শেষে এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ‘আমার অবশ্যই ভোটের রাজনীতি করি। কেউ যদি এটিতে বাহবা দিয়ে থাকে, সেটি আমাদের জন্যই ভালো। যে প্রকল্পগুলো এখন অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো কোনোভাবেই নির্বাচনী প্রকল্প বলার পক্ষে নই। কারণ এগুলো এক বছর আগে থেকেই প্রক্রিয়াধীন ছিল।’
একই প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘সরকারের নির্বাচনী প্রকল্প অনুমোদন করা হচ্ছে এটা বলা ঠিক হবে না। এ সরকার রাজনৈতিক সরকার, ভোটের মাধ্যমেই রাজনীতিতে টিকে থাকতে হবে। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে গিয়ে যদি তা যথাসময়ে শেষ হয়, তা সরকারের অনুকূলেই যাবে। দুনিয়াব্যাপীই এটা হয়।’
এ ছাড়া পরিকল্পনা কমিশনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ মাসের মাঝামাঝিতে এ মেয়াদের শেষ একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে শেষ তারিখ পরিকল্পনামন্ত্রী অনুমোদনের পরই তা নির্ধারণ করা হবে।
নড়াইল-কালিয়া জেলা মহাসড়কের ২১তম কিলোমিটারে কালিয়া এলাকায় নবগঙ্গা নদীর ওপর কালিয়া সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু নকশার ভুলে ইতিমধ্যে মাঝের দুটি পিলার দেবে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেতুর মাঝখানের দুটি অংশ। এখন তা মাঝ বরাবর ভেঙে নতুন নকশায় করতে হবে। সেতু নির্মাণে এমন ভুল নকশার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় নড়াইল-কালিয়া জেলা মহাসড়কের ২১তম কিলোমিটারে কালিয়া এলাকায় নবগঙ্গা নদীর ওপর কালিয়া সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একনেক সভায় ১৭টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, নড়াইলে সেতু নির্মাণে ভুল নকশার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ভবিষ্যতে যেকোনো প্রকল্পের নকশা নির্ভুলভাবে তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া, জমি অধিগ্রহণের সময় জমির ছবি তুলে রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। ছবি তুলে রাখলে কেউ ভূমি অধিগ্রহণের খবরে স্থাপনা বানাতে পারবেন না।
সেতুর বিস্তারিত তথ্যে দেখা যায়, প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছিল ৭৫ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৭ সালে। এর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালে। কিন্তু কয়েক দফায় ব্যয় ও সময় বাড়িয়ে এটি এই একনেক সভায় আবার সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নতুন সংশোধনীতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৬ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের সময় বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।
প্রকল্পটি সংশোধনের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, সেতুর আনুভূমিক ক্লিয়ারেন্স বৃদ্ধির জন্য সেতুর পিয়ার ৮-৯ ও পিয়ার ৯-১০ দুটি স্প্যানের দুটি স্প্যানের পরিবর্তে পিয়ার ৮-১০ একটি বড় স্প্যান অন্তর্ভুক্ত করা হবে। প্রকল্পের এই ব্যয় বাড়ানোর জন্য নতুন খাত হিসেবে পাইল ও পিয়ার রক্ষার কাজ যোগ করা হয়েছে।
নতুন করে এ পাইল ও পিয়ারের কাজেই ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ৫০ কোটি টাকার বেশি। প্রথম প্রস্তাবিত প্রকল্পটি এ পিসি গার্ডারের জন্য ব্যয় ছিল ৬৩ কোটি টাকা, অনুমোদিত দ্বিতীয় সংশোধনীতে এ ব্যয় বেড়ে হয়েছে ১১৪ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা কমিশন মতামতে জানিয়েছে, প্রস্তাবিত ২য় সংশোধিত প্রকল্পটির মোট প্রাক্কলিত ব্যয় বৃদ্ধির পরিমাণ ৬০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা এবং ব্যয় বৃদ্ধির হার ৮০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। প্রস্তাবিত ২য় সংশোধিত প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে হওয়ায় তা একনেকে পাঠানো হয়েছে।
নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দাপ্তরিক কাজ শেষে মো. জামিল ইকবাল ও মো. মঈন উদ্দিন বাঁশী নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে যৌথভাবে ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ এক বছরের মেয়াদে নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই অনুযায়ী ২০১৯ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও নকশা জটিলতা ও করোনার দোহাই দিয়ে প্রথমবার ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এক বছর সময় বৃদ্ধি করে নেয়। বর্ধিত সময়েও কাজ শেষ করতে না পারায় একইভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে আবার ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সেতুটির নির্মাণকাজের সময়সীমা বাড়িয় নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। একইভাবে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত আরও এক বছর কাজের মেয়াদ বাড়তে থাকে।
প্রকৌশলী মিনহাজুল ইসলাম জানান, নির্মাণাধীন সেতুর নবম পাইল পিলারটিতে একটি বালুবোঝাই বাল্কহেড ধাক্কা দিলে সেটি হেলে পড়ে। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে সেটিকে সোজা করে কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু বালুবোঝাই বাল্কহেড ওই পিলারটিতে আবারও ধাক্কা দিলে হেলে পানিতে ডুবে যায়।
পরে গুরুত্বপূর্ণ এই নদী দিয়ে যাতে নৌযান অবাধে চলাফেরা করতে পারে, সেদিকে বিবেচনা করে নদীর মাঝামাঝি অংশের জন্য নতুন করে নকশা প্রণয়ন করা হয়।
নড়াইল সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘নড়াইল-কালিয়া সড়কের বারইপাড়া পয়েন্টে নবগঙ্গা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে কিছু ত্রুটির কারণে নতুন করে নকশা করা হয়। সেতুটি খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ছোট-বড় অনেক নৌযান চলাচল করে। এসব নৌযান চলাচল সহজতর করতে এবং সেতুটি যাতে নৌযানের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, এসব বিবেচনা করে নতুন নকশা করা হয়েছে।’
সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত, ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ শনাক্ত, প্রতিরোধ, দমন ও ওই অপরাধের বিচার এবং আনুতোষিক বিষয়ে নতুন বিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ‘সাইবার নিরাপত্তা বিল-২০২৩’ জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কার্যক্রম স্থগিত করে আনা এই বিলে চারটি অজামিনযোগ্য ধারা রাখা হয়েছে। এই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধের শাস্তি সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বিলটি উত্থাপন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এ সময় বিলটির বিরোধিতা করে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, এটি একটি কালো আইন হচ্ছে। এই আইনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রাখেননি। বিলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটির শুধু নামের পরিবর্তন ও কিছু ধারার পরিবর্তন-পরিমার্জন হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মৌলিক যে দুর্বলতা ছিল সেগুলো এখানে রয়েছে। মানুষের মৌলিক অধিকার, যার মধ্যে বাকস্বাধীনতা, বিবেকের চিন্তার স্বাধীনতা, বিশেষ করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের মতো অনেক উপাদান সাইবার নিরাপত্তা আইনে রয়েছে।
জবাবে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তিতে যে সুবিধা হয়েছে, একই সঙ্গে সাইবার স্পেসে ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে। ২০১২ সালে রামুতে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সদস্যরা একটা মিথ্যা তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দিয়ে কীভাবে অনেক সম্পদ ও প্রাণের ক্ষতি করে। ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাইবার হামলা চালায়। সাইবার হামলা চালিয়ে হ্যাকাররা ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি করে নিয়ে যায়।
এরপর আমরা কম্পিউটার রেসপন্স টিম তৈরি করি। পদ্মা সেতু নির্মাণের শেষ দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা গুজব ছড়ানো হলো সেতুর পিলার শক্ত করতে নাকি শিশুদের মাথা দরকার। তারই ফলে রাজধানীর বাড্ডায় রেনু নামে এক নারীকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়। এ ধরনের অপরাধ বন্ধে বিলটি প্রণয়ন করা হয়েছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে যেগুলো অজামিনযোগ্য ধারা ছিল, তা জামিনযোগ্য করা হয়েছে।
পরে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন এবং অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ-সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী কর্র্তৃক ঘোষিত রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ, দমন ও ওই অপরাধের বিচার এবং আনুষঙ্গিক বিষয়ে নতুন একটি আইন প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজন বিধায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাইবার নিরাপত্তা আইন ও এ-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ রহিত ক্রমে বাস্তবতার নিরিখে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাইবার কার্যক্রমের বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে সাইবার অপরাধের প্রবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ আইনের আওতায় বিভিন্ন দেশের সাইবার নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রদান এবং সাইবার ঝুঁকি ও হুমকিগুলোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্কীকরণ ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে দেশের সাইবার স্পেসের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণই এই আইনের অন্যতম উদ্দেশ্য।
ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিল এখন মৃতপ্রায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে না পারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র সরে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা ঘোরানো মতিঝিলে আবাসিক ভবন, শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান তৈরি না হলে দেশের প্রধান এই বাণিজ্যিক অঞ্চল প্রাণ হারাবে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাদের মতে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় অবদান রয়েছে মতিঝিলের টাকার। শুধু তা-ই নয়, মতিঝিলে উপার্জিত অর্থে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডাসহ আরও অনেক দেশে। এখানকার উপার্জিত টাকা অনেকে জমা রেখেছেন সুইস ব্যাংকেও। শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মতিঝিলে। এ যেন মা কাঁকড়ার আত্মত্যাগের গল্প। মা কাঁকড়া বাচ্চাদের আগলে রাখে বুকের ভেতর; যেদিন বাচ্চাগুলো বের হয়ে আসে, সেদিন খোলস ছাড়া মা কাঁকড়ার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। মা কাঁকড়ার মতো দুঃখী ও ত্যাগী বাণিজ্যিক মতিঝিল।
ষাটের দশকে মতিঝিলে গড়ে ওঠে দেশের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট-সিবিডি)। সেই থেকে এখনো দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল মতিঝিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে সরকারি ৮টি, বেসরকারি ৪৫টি এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে ৮টি। এ ছাড়া ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৮১টি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের বেশির প্রধান কার্যালয় চলে গেছে কারওয়ান বাজার, গুলশান-বনানী ও উত্তরায়। নতুন করে যেসব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাচ্ছে, সেগুলোর প্রধান কার্যালয় মতিঝিলের বাইরে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মতিঝিলের আশপাশে পরিকল্পিত কোনো আবাসিক এলাকা, অভিজাত হোটেল, কাজের ফাঁকে অবসর কাটানোর মতো উন্মুক্ত স্থান, শপিং কমপ্লেক্স না থাকায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুবিধার জন্য অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়গুলোও মতিঝিলের বাইরের এলাকা, অর্থাৎ কারওয়ান বাজার, গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে গড়ে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, মধুমিতা সিনেমা হল এবং ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এবং দিলকুশা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবন এবং বঙ্গভবনের পাশের এলাকাজুড়ে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল। বিশ্বের বাণিজ্যিক অঞ্চলের ভবনগুলো সুউচ্চ হয়ে থাকে। কিন্তু মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের পাশেই বঙ্গভবন। নিরাপত্তার কারণে বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর কোনো বহুতল ভবন করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, মতিঝিলের প্লটগুলোর ‘নন-রেসট্রিকটেড’ উচ্চতা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর সাড়ে চারতলার বেশি উচ্চতার ভবনের অনুমোদন মেলে না। ফলে মূল্যবান ওই প্লটগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারছেন না মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ জরাজীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণও রয়েছে কয়েকটি ভবন। একটির সঙ্গে অন্যটি লাগানো। দুটি ভবনের মাঝখানে উন্মুক্ত জায়গা নেই বেশিরভাগ ভবনের। দিলকুশা এলাকার বঙ্গভবন লাগানো ভবনগুলোর মাঝখানেও কোনো ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, মতিঝিল এলাকার ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে। ভাঙাচোরা এবড়োখেবড়ো সড়ক। সড়ক বিভাজকগুলো শ্রীহীন। এগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়নি। প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলে মতিঝিলের আরও করুণ দশা চোখে পড়ে। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার সড়কের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে চটের ছালা দিয়ে ঘেরা খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান এবং নানা পণ্যের অস্থায়ী দোকান। সামান্য বৃষ্টিতে মতিঝিল এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে থাকে পানির নিচে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত। ডিএসসিসি এলাকার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে। খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে মূল্যায়ন করলে মতিঝিল ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। যদিও এটা মানতে নারাজ ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি।
মতিঝিল এলাকার বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিল এলাকার সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএসসিসি। পরিত্যক্ত প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মতিঝিলের সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত ও সড়ক বিভাজকের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা দরকার। পর্যায়ক্রমে এ এলাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কাজ করবে ডিএসসিসি। তবে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের মূল সংস্কার ও আধুনিকায়নের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউককে সেসব বিষয় পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কাজে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা লাগলে করপোরেশন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলে রাজউক। রাজউক সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশক থেকেই মতিঝিলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যিক অঞ্চলে শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান থাকে। আর কাছাকাছি এলাকায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা থাকে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। অভিজাত মানের হোটেল পূর্বাণী গড়ে উঠলেও আশপাশে সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লোকজন গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় থাকেন। মতিঝিলের সৌন্দর্য নিশ্চিত করতে ও আধুনিকায়নে যেসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখা দরকার ছিল রাজউক ও সিটি করপোরেশন সেটা করেনি।
রাজউক সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধরা, উত্তরা। সেই সব এলাকা থেকে মানুষ মতিঝিলে আসেন। শহরের জনসংখ্যা বাড়ায় দিন দিন যানজট বাড়ছে। ওই সব এলাকা থেকে মতিঝিলে আসতে সড়কে এক থেকে দেড় ঘণ্টা চলে যায়। দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার মধ্যে ৩০ শতাংশ সময় সড়কে নষ্ট হচ্ছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে চিন্তা করেছে, তার কর্মস্থল এমন একটা জায়গায় হবে যা তার আবাসনের কাছাকাছি। মতিঝিল থেকে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও ভূমিকা রেখেছে।
কালের বিবর্তনে গুলশান হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক এলাকা। কারওয়ান বাজার, উত্তরায়ও গেছে কিছু। এসব জায়গায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমও সেখানে চলে গেছে। এসব এলাকার আশপাশে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় তাদের বসবাস। আবাসিক এলাকা ছাড়া, পৃথিবীর কোথাও শতভাগ জায়গা শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা অথবা একই শ্রেণির কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার হয় না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, নগর পরিকল্পনায় ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়, যেকোনো জায়গার ব্যবহার হবে ২৪ ঘণ্টা। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল কর্মচঞ্চল থাকে মাত্র ১২ ঘণ্টা। এরপর ওই জায়গার ব্যবহার হয় না। রাতে নীরব ও ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়।
তিনি বলেন, যে মতিঝিলে দিনের বেলায় হাঁটা যায় না; গাড়ির কারণে, যানজটে; সেই মতিঝিলে রাত ৮টার পরে আবার একাও হাঁটা যায় না; অনিরাপদ বোধ হয়। এ জন্য যারা দিনে বাণিজ্য করতে আসেন, তারা মতিঝিল এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন না। অন্যদিকে গুলশান-বনানী এলাকায় থাকলে তারা শপিংয়ে যেতে পারেন, কফি শপে যেতে পারেন। এসব কারণে সারা বিশ্বে ভূমির মিশ্র ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, মতিঝিল এলাকা যেহেতু ইতিমধ্যে তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলেছে, এ জন্য মতিঝিলের জমির শ্রেণিকে মিশ্র ব্যবহার হিসেবে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছে রাজউক। সংশোধিত ড্যাপে সে বিষয়ে নির্দেশনা রাখা হয়েছে। পৃথিবীর নগর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৫০, ৬০ বা ১০০ বছর অন্তর সেসব ঢেলে সাজানো হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়েই মতিঝিল এলাকাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে আবাসিকের বৈশিষ্ট্য দিতে হবে; কনডোমিনিয়াম গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি, ওয়াকওয়ে থাকবে। বসার ব্যবস্থা থাকবে। মতিঝিল এলাকায় ঝিল ছিল, ওই ঝিলকে প্রাধান্য দিয়ে পার্কটি তৈরি করা হবে। বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া মতিঝিলকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিলের আধুনিকায়ন ও ভূমির মিশ্র ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাহলে মতিঝিল সচল থাকবে; তবে ঢাকা শহর বড় হওয়ায় আরও বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে ওঠা ইতিবাচক। এসব পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার ছিল; কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে সে রকম হয়নি। এটা দুঃখজনক। এ জন্য শহরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ঢাকায় এখন অনেকগুলো বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সব অঞ্চলে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় বড় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় মতিঝিলে রয়েছে। তবে ব্যবসা গুলশান, বনানী, উত্তরা, গাজীপুরে সরে যাওয়ায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ব্যবসা কেন্দ্রের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।