
ডেঙ্গুর ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেই ঢাকা মহানগর শিশু হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটে রোগী ভর্তি বন্ধ রয়েছে। পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকায় ১০০ শয্যার এ হাসপাতালে গত জুলাই থেকে রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। কিন্তু এখন পর্যন্ত চিকিৎসক সংকট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গরিবের হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত এ চিকিৎসাকেন্দ্রটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তত্ত্বাবধানে পরিচালিত।
জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে সামসুল কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২০১৬ সালের জনবল কাঠামোতে হাসপাতালের শূন্যপদে সরাসরি নিয়োগ কেটে প্রেষণ করে দিয়েছে। এজন্য ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ওই শূন্যপদ পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। আর এখানে প্রেষণে লোকবলও পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, জনবল কাঠামো সংশোধন করে সরাসরি নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করতে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সংশোধন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। জনবল কাঠামো সংশোধন হওয়ার পর দ্রুততম সময়ে হাসপাতালের শূন্যপদে জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। আপাতত বিদ্যমান জনবল দিয়ে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১৯৯০ সালে গড়ে তোলা ঢাকা মহানগর শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা শুরু হয় ১৯৯৩ সালে। লালবাগ চৌরাস্তা সংলগ্ন ৪/১, গৌর সুন্দর রায় লেনে প্রায় দেড় বিঘা জায়গার ওপর তৈরি করা হয়েছে হাসপাতালটি। চারতলা ভবনের নিচতলায় আউটডোর, প্যাথলজি বিভাগ ও ফার্মেসি রয়েছে। আর দোতলায় অপারেশন থিয়েটার, পরিচালকের দপ্তর এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যালয়। তিন ও চারতলায় রয়েছে মেডিসিন ওয়ার্ড ১ ও ২, জরুরি বিভাগ, ডেঙ্গু ওয়ার্ড এবং ডায়রিয়া ওয়ার্ড। প্রতিদিন আউটডোরে ২০০ থেকে ৩০০ রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসে। আর গত কয়েক বছরে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর গড় ৫০ থেকে ৬০ জন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা মহানগর শিশু হাসপাতালের মোট জনবল সংখ্যা ১২৪ জন। এর মধ্যে বর্তমানে কর্মরত ৭৪ জন। চিকিৎসক পদ ২২টি, তবে কর্মরত ১২ জন। নার্সের পদ ৩০টি, বর্তমানে কর্মরত ৬ জন। অন্যান্য পদে কর্মরত রয়েছেন ৫৬ জন।
হাসপাতালগুলো সাধারণ তিনটি শিফটে চলে; মর্নিং, ইভিনিং ও নাইট। কর্মরতদের অনেকে মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং অসুস্থতাজনিত ছুটিতে থাকে। এ বাস্তবতায় ঢাকা মহানগর শিশু হাসপাতালের তিনটি শিফট চালু রাখতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সময়ে ঢাকা মহানগর শিশু হাসপাতালটি সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়েছে। সে সময় ওই হাসপাতালের জনবল কাঠামোতে পদসংখ্যা ছিল ১৯৪ জন। ২০১১ সালে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন হওয়ায় ২০১৬ সালে নতুন করে জনবল কাঠামো তৈরি করা হয়। সে সময় ৭০টি পদ কমিয়ে দেওয়া হয়। আর চিকিৎসক ও নার্সের পদসংখ্যা সরাসরি নিয়োগ বাদ দিয়ে প্রেষণ করে দিয়েছে। এ কারণে হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সের পদ শূন্য হলেও ওই পদে নিয়োগ দিতে পারছে না। আর সরকারের কাছে ডিএসসিসি থেকে চিকিৎসক ও নার্স চেয়ে আবেদন করলেও তা পাওয়া যাচ্ছে না। কেননা ডেঙ্গু ও করোনা চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালগুলোয় রোগীর চাপ রয়েছে। এজন্য ডিএসসিসির শিশু হাসপাতালটি প্রায় বন্ধ হতে চলেছে। ডিএসসিসি মেয়র জনবল কাঠামো সংশোধনের জন্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে। কিন্তু তা কবে আলোর মুখ দেখবে তা জানে না কেউ।
ডিএসসিসি সূত্রে আরও জানা যায়, সাঈদ খোকন মেয়র থাকাবস্থায় ওই এলাকায় জনতার মুখোমুখি অনুষ্ঠানে হাসপাতালের সংস্কার, আধুনিকায়ন ও সেবা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছিলেন এলাকাবাসী। তার মেয়াদে তিনি ওই হাসপাতালের সেবা বৃদ্ধির কোনো কাজ শুরু করতে পারেননি। বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস দায়িত্ব গ্রহণের পর কয়েক দফা ওই হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন। এরপর পুরাতন ভবনের আধুনিকায়ন কাজ শুরু করেছেন। তবে সেবা দেওয়ার মূল কাজের জন্য চিকিৎসক ও নার্সের শূন্যপদ পূরণ করতে পারছেন না।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর শিশু হাসপাতালের পরিচালক ডা. আহমেদ কুদরতে খোদা দেশ রূপান্তরকে বলেন, চিকিৎসক সংকটের কারণে হাসপাতালটি পরিচালনা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ২০১৬ সালের জনবল কাঠামোতে চিকিৎসক ও নার্স পদগুলো প্রেষণ করে দেওয়ায় শূন্য পদে লোকবল নিয়োগ দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি প্রেষণেও জনবল পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, জুলাইয়ে দুজন চিকিৎসক ছুটিতে যাওয়ায় হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা আর সম্ভব হচ্ছে না। যারা একান্তই ভর্তি হতে চাচ্ছেন, তাদের ‘ডে-কেয়ার সিস্টেমে’ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ তারা সকালে হাসপাতালে এসে বিকেলের দিকে বাসায় চলে যাচ্ছেন। রাতের শিফট চালু রাখতে জরুরি ভিত্তিতে কয়েকজন চিকিৎসক প্রয়োজন।
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক হয়েছে। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার বিকেলে নয়াদিল্লির লোককল্যাণ মার্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে দ্বিপক্ষীয় এ বৈঠক হয়। বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় যোগাযোগ, বাণিজ্যিক সংযুক্তিসহ অন্যান্য বিষয় স্থান পেয়েছে। বৈঠকে দুই সরকারপ্রধান ঢাকা-দিল্লির মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং এ সম্পর্ক আরও জোরদার করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সম্মত হন। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার পক্ষেও একমত হন তারা। দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে।
বৈঠক শেষে এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। গত ৯ বছরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্রগতি খুবই সন্তোষজনক। আমাদের আলোচনায় কানেকটিভিটি, বাণিজ্যিক সংযুক্তি এবং আরও অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল।’ বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় আলাদাভাবে পোস্টটি দেওয়া হয়েছে।
দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক সম্পর্কে ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘উভয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান গভীর সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং এ সম্পর্ক আরও জোরদার করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়েছেন।’ তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত সমস্যা সমাধানের ওপরও জোর দিয়েছেন।
ড. মোমেন বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী তার দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিদ্যমান শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের জন্য তার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।’
এর আগে নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে গতকাল নয়াদিল্লি পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে (স্থানীয় সময়) নয়াদিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান ভারতের রেলওয়ে ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী দর্শনা জার্দোস। প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
এর আগে বেলা ১১টায় ফ্লাইটটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা তার সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখ করেছেন, গত বছর ৪-৮ সেপ্টেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে তার সফল রাষ্ট্রীয় সফরের পর দ্বিপক্ষীয় স্বার্থের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, ‘দুই প্রধানমন্ত্রী এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।’
বৈঠকে শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জিত সাফল্যের কথা জানান। ড. মোমেন যোগ করেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের অসাধারণ অগ্রগতির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।’ তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হওয়ায় ভারত থেকে আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনা ভারত সরকারকে অনুরোধ করেন।
তিনি বলেন, ‘উভয় প্রধানমন্ত্রীই রেল ও সড়ক যোগাযোগসহ ভারতের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় এবং আঞ্চলিক সংযোগ বাড়ানোর জন্য আমাদের চলমান প্রচেষ্টা এবং কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে সম্মত হয়েছেন।’
শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে নরেন্দ্র মোদির সহযোগিতাও কামনা করেন। ড. মোমেন বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে, অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে এ ফলপ্রসূ ও উন্মুক্ত আলোচনা দুপক্ষের মধ্যে অমীমাংসিত সমস্যাগুলোর নিষ্পত্তিকে ত্বরান্বিত করবে এবং উভয় দেশের জনগণ এর দ্বারা উপকৃত হবে। তিনি বলেন, ‘এ সময় উভয় প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং উভয় সরকারপ্রধান একান্ত বৈঠকেও মিলিত হন।’
শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথাও স্মরণ করেন। তিনি ‘জি-২০ নেতাদের’ শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য নরেন্দ্র মোদির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
নির্বাচন নিয়ে একান্ত বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কি না, জানি না : মোমেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনসংক্রান্ত কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি বলে ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে আসন্ন সাধারণ নির্বাচন এবং ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যু নিয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলে কেউ অস্থিতিশীলতা চায় না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ২০০১ সালের পরের খারাপ সময়ে ফিরে যেতে চায় না যখন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছিল, সারা দেশে বোমা হামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং আদালত কক্ষে বিচারকদের ওপর বোমা হামলা হয়েছিল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে অনুষ্ঠিত দুই প্রতিবেশী দেশের সরকারপ্রধানের মধ্যে একান্ত বৈঠকে নির্বাচনের বিষয় নিয়ে কথা উঠেছিল কি না, তার জানা নেই।
আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা রয়েছে উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে দেশের সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা খুশি। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী সাধারণ নির্বাচনে কেউ কারচুপির চেষ্টা করলে জনগণ প্রতিহত করবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য বিএনপির দাবির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাংলাদেশের সংবিধানে নেই এবং এটা কোনো আলোচনার বিষয় নয়। তিনি বলেন, আসন্ন সাধারণ নির্বাচন নিরপেক্ষ, বিশ্বাসযোগ্য ও সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত করতে সবাইকে অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই নেতা রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য ও সংযোগ, পানিসম্পদ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, উন্নয়ন সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক এবং মানুষে-মানুষে বন্ধনসহ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এতে আরও বলা হয়েছে, এ অঞ্চলের বর্তমান উন্নয়ন এবং বহুপক্ষীয় ফোরামে সহযোগিতা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
৩ এমওইউ সই : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের পর বাংলাদেশ ও ভারত তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে। সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
এগুলো হলো ১. বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল এবং ভারতীয় কৃষি গবেষণা পরিষদের মধ্যে কৃষি গবেষণা ও শিক্ষায় সহযোগিতার বিষয়ে এমওইউ। এর আওতায় দুই দেশের মধ্যে কৃষি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ খাতে সহযোগিতা জোরদার হবে। ২. ২০২৩-২৫-এর জন্য কালচারাল এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম (সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রোগ্রাম)। এর অধীনে শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক খাতে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও জোরদারকরণে বিভিন্ন ব্যবস্থা ও কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। ৩. ভারতের এনপিসিআই ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্টস লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) মধ্যে এমওইউ। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক লেনদেন সম্পাদন সহজতর হবে।
নরেন্দ্র মোদিকে সায়মা ওয়াজেদের স্যুভেনির উপহার : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একমাত্র কন্যা সায়মা ওয়াজেদ গতকাল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একটি স্যুভেনির উপহার দিয়েছেন।
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) থিম্যাটিক অ্যাম্বাসাডর এবং অটিজম ও নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী মোদির বাসভবনে এ স্যুভেনিরটি হস্তান্তর করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক উপস্থিত ছিলেন।
এবারের জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ নয়টি দেশকে অতিথি রাষ্ট্র হিসেবে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে আয়োজক ভারত। ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান নানা সম্পর্কের ভিত্তিতে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সম্মেলনে আমন্ত্রণ পায়। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশগুলো হচ্ছে মিসর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন শুরু হওয়ার পর আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন অধিবেশনে যোগ দেবেন এবং শীর্ষ সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’-এর অধীনে দুটি ভাষণ দেবেন।
একইদিন প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান আল সৌদ, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো অ্যাঞ্জেল ফার্নান্দেজ, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়ল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
১০ সেপ্টেম্বর জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় এবং শেষ দিনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য দেশের নেতাদের সঙ্গে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে যোগ দেবেন। সম্মেলনের শেষ দিনে ‘জি-২০ নয়াদিল্লি নেতাদের ঘোষণা’ গৃহীত হবে। ওইদিনই প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরবেন।
গ্রুপ অব টোয়েন্টি (জি২০) হলো আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রধান ফোরাম। এটি সব প্রধান আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ইস্যুতে বৈশ্বিক স্থাপত্য এবং শাসন শক্তিশালীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৯৯ সালে এশীয় আর্থিক সংকটের পর অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য জি-২০ একটি ফোরাম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
জি-২০ ১৯টি দেশ (আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।
জি-২০ সদস্য দেশগুলো বিশ্বব্যাপী জিডিপির প্রায় ৮৫ শতাংশ, বিশ্ব বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশের বেশি এবং বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের প্রতিনিধিত্ব করে। বাসস
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে বিবৃতিসংক্রান্ত বক্তব্য দিয়ে আলোচিত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) এমরান আহম্মদ ভূঁইয়াকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশ অনুযায়ী তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর বিভাগ। তবে বিষয়টি জানা যায় গতকাল শুক্রবার। এদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহমেদ ভূঁইয়াকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এদিকে পদ হারানোর পর নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে স্ত্রী ও তিন কন্যাসন্তানকে নিয়ে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস প্রাঙ্গণে গিয়ে ওঠেন। তবে সেখানে দূতাবাসের কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে না পেরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ফিরে যান।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মো. শহিদুল্লাহ গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বাসায় ফিরে গেছেন।
এমরানের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মার্কিন দূতাবাসে অবস্থানের খবর প্রকাশের পর গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে ছুটে যান। সেখানে থাকা সাংবাদিকরা জানান, সন্ধ্যা ৬টা ৩৮ মিনিটে দূতাবাসের বাইরে থেকে একটি গাড়ি আসে। সেই গাড়িতে পরিবারসহ দূতাবাস ছেড়ে যান এমরান। পরে তিনি একটি গণমাধ্যমকে মোবাইল ফোনে বলেন, বাসায় ফিরে যাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে পুলিশ রয়েছে।
এমরান আহম্মদ আরও বলেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যে তিনি আশঙ্কা করেছিলেন যে তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। তাই মার্কিন দূতাবাসে গিয়েছিলেন। তবে তার কোনো ক্ষতি হবে না, সে বিষয়ে আশ্বস্ত হয়ে বাসায় ফিরেছেন।
এমরানকে অব্যাহতি দিয়ে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে তার নিয়োগ বাতিলের কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি। আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর অনুবিভাগের সলিসিটর রুনা নাহিদ আকতার স্বাক্ষরিত ৭ সেপ্টেম্বরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘দ্য বাংলাদেশ ল অফিসার্স অর্ডার, ১৯৭২ এর ৪(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া’র নিয়োগাদেশ জনস্বার্থে বাতিলক্রমে তাকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।’
পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে সাংবাদিকদের বলেন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়াকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। খালেদা জিয়াকে স্থায়ী জামিন দিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে পরিবারের আবেদন প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আইনে এমন কোনো সুযোগ নেই।’
এর আগে সকাল সোয়া ১০টায় তিনি আন্তঃনগর মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনে আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে এসে পৌঁছেন। এ সময় দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। পরে তিনি সড়কপথে নিজ নির্বাচনী এলাকা কসবার উদ্দেশে রওনা হন।
শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ঘিরে একটি বক্তব্য দিয়ে কয়েক দিন ধরে আলোচনায় আছেন এমরান আহম্মদ। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতির মামলা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি (বিবৃতি) পাঠিয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় দেড় শতাধিক ব্যক্তি। তাদের মধ্যে শতাধিক নোবেলজয়ী রয়েছেন। এ বিবৃতি ও খোলা চিঠির সপক্ষে গত সোমবার গণমাধ্যমে কথা বলেন এমরান। পাল্টা প্রতিবাদ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করবেন না বলে বক্তব্য দেন তিনি। তিনি বলেন, ‘ড. ইউনূসকে বিচারিক হয়রানি করা হচ্ছে। এ নিয়ে বিশ্বনেতাদের বিবৃতি ও উদ্বেগ সঠিক।’ এমরান দাবি করেন, পাল্টা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তার এসব বক্তব্যে তোলপাড় শুরু হয়। তবে বিবৃতিতে স্বাক্ষরের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে আইন কর্মকর্তাদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলে জানান রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এএম আমিন উদ্দিন। অন্যদিকে একাধিক আইন কর্মকর্তা বলেন, সাধারণ আইনজীবীদের ব্যানারে বিবৃতিতে স্বাক্ষর নেওয়া হচ্ছে।
পরদিন দুপুরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রেস ক্লাবে একটি অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, আইন কর্মকর্তা এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি তিনি (আইনমন্ত্রী) দেখবেন বলে জানান। একইদিন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এমরান কোনো একটি পক্ষকে খুশি করতে এমন বক্তব্য দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের নেই। এটি করতে পারে আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর বিভাগ। ওইদিন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পঞ্চমতলায় এমরানের কক্ষের সামনে থাকা নেমপ্লেট খুলে ফেলেন কয়েকজন আইন কর্মকর্তা। একইদিন আইন কর্মকর্তাদের গণমাধ্যমে বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অফিসসংক্রান্ত বিষয়ে বক্তব্য দিতে অ্যাটর্নি জেনারেলের পূর্বানুমতি নিতে হবে বলে নির্দেশনা সংবলিত বিজ্ঞপ্তি দেয় কার্যালয়ের প্রশাসনিক বিভাগ। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল এমরানের নিয়োগ বাতিল করে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত এলো।
আদালতে মামলাজট কমাতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা সম্ভাবনা জাগালেও কাক্সিক্ষত সুফল মিলছে না। ক্ষেত্রবিশেষে আদালতের বাইরে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (অলটারনেটিভ ডিসপুট রেজল্যুশন) বা এডিআর মামলা পূর্ব ও পরবর্তী বিরোধ নিষ্পত্তিতে উত্তম ও সহজ পদ্ধতি। কোনো রকম ভোগান্তি ও হয়রানি ছাড়া নিখরচার এই সমাধানেও অনেকের উৎসাহ নেই। ফলে মামলা বাড়ছে, পক্ষগণের বিরোধে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। ভুক্তভোগীর ভোগান্তি ও আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে চরমভাবে।
গত দুই দশকে অনিষ্পন্ন মামলার সংখ্যার সঙ্গে আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি হওয়া বিরোধপূর্ণ ঘটনার সংখ্যা মেলালে সেই চিত্রই দেখা যায়। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ পর্যন্ত উচ্চ ও আদালতে বিচারাধীন দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা ৪২ লাখের বেশি।
অন্যদিকে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার হিসাবে ২০০৯ সাল থেকে প্রায় ১৫ বছরে সাড়ে ৮৬ হাজার বিরোধ (মামলা পূর্ব ও পরবর্তী) নিষ্পত্তি করেছে ৬৪ জেলার লিগ্যাল এইড অফিস। লাখ লাখ মামলা ও বিরোধের বিপরীতে এ পরিসংখ্যানকে হতাশাজনক বলছেন আইনবিদরা।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ওয়াকিবহাল আইন ও বিচারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেওয়ানি মামলায় দুই পক্ষের সম্মতিতে এডিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন অনেকটা সহজতর। খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি, মাদক, নারী ও শিশু নির্যাতনের মতো গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ ব্যতীত লঘু অপরাধের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি বাস্তবায়নে মামলার জট হ্রাস পায়। কিন্তু এডিআর নিয়ে ধারণা ও প্রচারের ঘাটতি, বিরোধীয় পক্ষগণের আস্থাহীনতা, মামলার প্রবণতা ও ছাড় না দেওয়ার মানসিকতা, কিছু ক্ষেত্রে আইনজীবীদের আন্তরিকতার ঘাটতি, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আদালতকে নির্ভরযোগ্য মনে করা, পক্ষগণের এডিআর মানার বাধ্যবাধকতা না থাকায় অনেক সম্ভাবনার পরেও বিকল্প হয়ে উঠতে পারছে না বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা।
মধ্যস্থতার মাধ্যমে মামলায় পক্ষগণের বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গত ২৯ আগস্ট প্রথমবারের মতো সুপ্রিম কোর্টে মেডিয়েশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির উদ্যোগে সেখানে আদালতের অনুমতি ও দুই পক্ষের সম্মতিতে বিরোধ নিষ্পত্তি করা হবে। এই উদ্যোগ প্রশংসনীয় উল্লেখ করে আইনবিদরা বলছেন, এর মাধ্যমে এডিআর পদ্ধতিটি প্রতিষ্ঠিত হবে।
এডিআর পরিস্থিতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মামলা হচ্ছে। আপিল, রিভিশন হচ্ছে। একটা মামলা থেকে চারটা-পাঁচটা মামলা হচ্ছে। যে হারে মামলা বাড়ছে এডিআর ছাড়া তো আর কোনো উপায় নেই।’ তিনি বলেন, ‘একদিকে এ বিষয়ে মানুষের ধারণা কম। অন্যদিকে মানুষকে বোঝাতে না পারা। আমরা হয়তো মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হচ্ছি না যে এটার লাভ-ক্ষতি কী? মামলা করলে কী হবে আর এডিআর করলে কী হবে এগুলো বোঝানো গেলে মানুষের আগ্রহ আরও বাড়বে।’
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আইনজীবীদের দায় আছে কি নাÑ এমন প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘অবশ্যই। আদালতেরও দায়িত্ব আছে। প্রথমত, আদালত আইনজীবীদের ডেকে নিয়ে দুই পক্ষকে সমঝোতায় আসতে তাগিদ দিলে আপসের মানসিকতা নিয়ে বসলেই সমাধান হবে।’
দেশে দেওয়ানি কার্যবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি, শ্রম আইন, অর্থঋণ আদালত আইন, পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, গ্রাম আদালত আইন, সালিস আইন, বিরোধ মীমাংসা (পৌর এলাকা) বোর্ড আইনসহ বিভিন্ন আইনে বিকল্প পদ্ধতিতে মামলা পূর্ব ও পরবর্তী বিরোধ নিষ্পত্তির বিধান রাখা হয়েছে। দেওয়ানি আইনের ৮৯ (ক) ধারায় মধ্যস্থতা, ৮৯ (খ) ধারায় সালিস ও ৮৯ (গ) ধারায় আপিলে মধ্যস্থতার বিধান রয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪৫ ধারা অনুযায়ী, ৬২টি লঘু অপরাধের ক্ষেত্রে আপস-মীমাংসার বিধান রয়েছে।
আইনবিদরা বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে মারামারি, খুনের মতো ফৌজদারি অপরাধের বড় কারণ ভূমির বিরোধ। আইন ও বিচারসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এডিআরের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি বিরোধ নিষ্পত্তির তাগিদ দেন ভূমির বিরোধের ক্ষেত্রে। এ ছাড়া অর্থঋণ আদালত মামলা এবং শ্রম আইনে মালিকপক্ষ ও শ্রমিকের বিরোধের ক্ষেত্রেও এডিআরের মাধ্যমে নিষ্পত্তির তাগিদ থাকলেও সুফল মিলছে কম।
আর্থিকভাবে অসচ্ছল ও বিচারপ্রাপ্তিতে অসমর্থ জনগণকে নিখরচায় আইনি সহায়তা দিতে ২০০০ সালে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন’ করে সরকার। এতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা রাখা হয়। ২০১৭ সালে দেওয়ানি কার্যবিধি সংশোধন করে এডিআরের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আইনের বিধান অনুযায়ী, এ পদ্ধতি বাস্তবায়নে আদালত নিজে মধ্যস্থতার উদ্যোগ নিতে পারে। পক্ষগণের আইনজীবী বা আইনজীবীর নিযুক্ত করা অন্য আইনজীবী, অবসরপ্রাপ্ত কোনো বিচারক, জেলা জজের তৈরি করা প্যানেল মধ্যস্থতার উদ্যোগ নিতে পারে। দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে যে বাদীর অভিযোগ ও বিবাদীর লিখিত জবাবের পর বিচারক শুনানি মুলতবি করে দুই পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির আহ্বান জানাবেন। এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। তবে, পক্ষগণের তা মানার ওপর বাধ্য বাধকতা নেই।
মধ্যস্থতায় (মেডিয়েশন) বিরোধ নিষ্পত্তি নিয়ে সচেতনতায় কাজ করে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল মেডিয়েশন সোসাইটি (বিমস)। সংস্থাটির চেয়ারম্যান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এসএন (সমরেন্দ্র নাথ) গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মেডিয়েশন নিয়ে কাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এখনো হয়নি। আনুষঙ্গিক প্রধান কারণ হচ্ছে ব্যাপক প্রচারণার ঘাটতি। আইনজীবীদের মধ্যে এ বিষয়ে আকুতি ও বিচারকদের মধ্যে আগ্রহ কম। তিনি বলেন, সমাধান হলো, আদালত ও আইনজীবীদের এগিয়ে আসতে হবে। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচার করতে হবে। মেডিয়েশন কার্যকর করা গেলে বিরোধ নিষ্পত্তিতে একটি আমূল পরিবর্তন আসবে।
এসএন গোস্বামী আরও বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টে একটি মেডিয়েশন সেন্টার হয়েছে। এটা একটা ভালো দিক। এখন জরুরিভাবে প্রয়োজন মেডিয়েশন-সম্পর্কিত একটি আইন।’
১৫ বছরে মাত্র ৮৬ হাজার বিরোধ নিষ্পত্তি : পক্ষগণের মধ্যে মামলা পূর্ব ও পরবর্তী কতসংখ্যক বিরোধ আলোচনা, মধ্যস্থতা ও সালিসের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয় এ-সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান আইন ও বিচারসংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে থাকে না। তবে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা তাদের নিজস্ব উদ্যোগের বিষয়টি নিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সংস্থার তথ্যমতে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মে মাস পর্যন্ত প্রায় ১৫ বছরে ৬৪ জেলার লিগ্যাল এইড অফিস এডিআরের জন্য ৯৪ হাজার ১৫২টি বিরোধ (মামলা পূর্ব ও পরবর্তী) গ্রহণ করে। এর মধ্যে এই সময়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামে শ্রমিক আইনগত সহায়তা সেল থেকে পাওয়া ৩ হাজার ২৯৩টি অভিযোগও রয়েছে। সব মিলিয়ে এই সময়ে মোট ৯৭ হাজার ৪৪৫টি অভিযোগ গ্রহণ করে লিগ্যাল এইড অফিসগুলো। এর মধ্যে এডিআরের মাধ্যমে ৮৬ হাজার ৫২৭টি বিরোধ নিষ্পত্তি হয়। এতে উপকারভোগী হয়েছেন ১ লাখ ৬১ হাজার ৩৯৬ জন। লাখ লাখ মামলা ও বিরোধের বিপরীতে এ পরিসংখ্যানকে হতাশাজনক বলছেন আইনবিদরা।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও আইন সাময়িকী ডিএলআরের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এডিআর নিয়ে অনেক কথা হয়। এটি অবশ্যই মামলাজট ও ফৌজদারি অপরাধ কমাতে একটি সহায়ক পদ্ধতি। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো এটি কাক্সিক্ষত পর্যায়ে যেতে পারেনি। মানুষের মামলার প্রতি আগ্রহ বেশি। অনেক দেশই হয়তো এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে সফল হয়েছে। আমাদের কেন হচ্ছে না, সেটি বিবেচনায় নিয়ে সেভাবেই কাজ করতে হবে।’
দেড় দশক ধরে তিনি টেবিল টেনিসের রাজা। বয়স পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই। অথচ এখনো তরুণদের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছেন সমানতালে। অসংখ্য তরুণের ভিড়ে পিংপং বলের রোমাঞ্চকর খেলাটিতে এখনো তার জয়রথ ছুটছে। অভিমানে ২০২১ সালে জাতীয় দল ছাড়লেও ফর্মের তুঙ্গে থাকায় খেলাটা ছাড়া হয়নি। তাই তো র্যাঙ্কিংয়ের দ্বিতীয় স্থান অনেক দিন ধরেই তার দখলে। বলছি একজন মানস চৌধুরীর কথা। চট্টগ্রাম থেকে উঠে এসে দেশের টিটি অঙ্গনে এ সময়ের সবচেয়ে আলোচিত তারকা। ভীষণ সোজাসাপ্টা মানসকে বাইরে রেখে এখনো টিটির কথা ভাবার সুযোগ নেই। সেই মানস অবশ্য এই একটা পরিচয়েই পরিচিত নন। অন্য অঙ্গনেও রয়েছে তার সফল বিচরণ; যা তাকে ক্রীড়াঙ্গনের মানুষের কাছে রেখেছে আলাদা করে। টিটি খেলোয়াড় হিসেবে শিখরছোঁয়া মানস একজন পেশাদার সংগীতশিল্পীও। যে জগতে তাকে মানুষ চেনে রঞ্জন চৌধুরী নামে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে তালিকাভুক্ত সংগীতশিল্পী হিসেবে অসংখ্য আধুনিক গানে একটা অবস্থান তৈরি করেছেন দুই দশকের বেশি সময় ধরে। প্লে-ব্যাক সিঙ্গার হিসেবেও সুনাম কুড়িয়েছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ টেলিভিশনে সংগীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এখন ওপার বাংলার জনপ্রিয় কণ্ঠ শিল্পীদের সঙ্গে গান করছেন বেছে বেছে।
মানুষের হৃদয়ের স্থান করে নিতে এই দুটি পরিচয়ই তো যথেষ্ট। তবে মানসের পরিচিতিপর্বটা এখানেই থামিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। খেলা আর গানের জগতে তার বিচরণ প্রাণের টানে। এর দুটির একটিও তার জীবিকা নয়। জীবিকা হিসেবে অসামান্য হিসেবে অসামান্য মেধাবী ছাত্র হিসেবে সুনাম কুড়ানো মেধাবী ছাত্র হিসেবে সুনাম কুড়ানো মানস বেছে নিয়েছেন চিকিৎসা পেশাকে। নিজ শহর চট্টগ্রামে দন্ত চিকিৎসক হিসেবে মানুষের হৃদয়ে গড়েছেন আস্থার জায়গা। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের কাছে তিনি একজন মানবিক ডাক্তার। অসংখ্য মানুষকে বিনা পয়সায় চিকিৎসাসেবা দিয়ে এই অঙ্গনেও মানসের স্থান সম্মানের আসনে। এত এত পরিচয়ের পরও তার আরেকটি বড় পরিচয়, তিনি প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী প্রয়াত প্রবাল চৌধুরীর ছোট ছেলে। বাবার পরিচয়ে গর্ব আছে। তবে মানস নিজ পরিচয়েই প্রতিষ্ঠিত। সেটা একজন সফল খেলোয়াড়, সংগীতশিল্পী ও মানবিক চিকিৎসক হিসেবে।
খেলাধুলা আর পেশাগত জগতে তিনি মানস চৌধুরী। সংগীত জগতে কেন রঞ্জন চৌধুরী? প্রশ্নটা শুনেই একটু হাসলেন। এ নিয়ে আর কথাটা এগোতে দিলেন না। হয়তো নামের এই রহস্যটা নিজের মধ্যেই রেখে দিতে চাইলেন। সব্যসাচীরা হয়তো একটু খেয়ালিই হন। মানসও তেমনি একজন। নির্ভীক, অকুতোভয়, ব্যক্তিত্বের প্রশ্নে এক রত্তি ছাড় না দেওয়া মানুষটির কাছে জানতে চেয়েছিলাম, এতগুলো পরিচয় একসঙ্গে কী করে বাঁচিয়ে রাখেন? এই প্রশ্নেই কথার ঝাঁপি খুলে বসলেন মানস, ‘আমার ছোটবেলা কেটেছে অনুশাসনে। মায়ের করা নির্দেশ ছিল বাসার বাইরে দূরে কোথাও একা একা যাওয়া চলবে না। কিশোরবেলায় বাড়ি থেকে বড়জোর পাশের অগ্রণী সংঘ ক্লাবে যাওয়ার অনুমতি ছিল। সেখানে অন্যান্য খেলার পাশাপাশি টিটির টেবিলও ছিল। সেখানেই টিটি খেলার শুরু। সেটা ১৯৮৬ সালে। সেখান থেকেই দুই বছর পর ঢাকায় জাতীয় শিশু প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হই। এরপর জেলাভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হই। টিটি খেলাটা ভালো পারতাম বলে বাসার একটু দূরে নবীন মেলা ক্লাবে যোগ দিলাম। সেখানে রূপম দত্ত ছিলেন আমার প্রথম কোচ। তিনিই আমাকে খেলা শিখিয়েছেন। সেখানে বেশ কজন ভালো খেলোয়াড় ছিলেন। তাদের সঙ্গে খেলতে খেলতে একটু পরিণত হয়ে ১৯৯০ সালে প্রথম জাতীয় জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে আসি ঢাকা। সেবার ১৪তম হয়েছিলাম। পরের বছর অবশ্য জুনিয়রে চ্যাম্পিয়ন হই। ১৯৯৩ সালেই সিনিয়রে খেলার সুযোগ পেয়ে যাই। তখন থেকেই সব সময় সেরা আটের মধ্যে থাকতাম। ২০০১ সালে রংপুরে সিনিয়র জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের এককের ফাইনালে হেরে যাওয়ার পর ২০০৬ সাল পর্যন্ত খেলা থেকে দূরে ছিলাম। সে সময়টায় লেখাপড়া আর পেশায় মনোযোগ দিই। ২০০৭ সালে ফের খেলা শুরু করি। ২০০৯ সালে প্রথম জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হই। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত টানা ১০টি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলে ৫টিতে জিতেছি। ফেডারেশন কাপের এককেও পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এ ছাড়া এক দশকে মহানগরী টিটি লিগে আমি যে কটি দলে খেলেছি, প্রতিটিই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এর বাইরে যতগুলো র্যাংকিং টুর্নামেন্ট হয়েছে, তার প্রায় সব কটিতেই আমি চ্যাম্পিয়ন। অথচ জানেন, এই খেলাটাকে কখনোই পেশা হিসেবে ভাবিনি।’
সেটা ভাবার সুযোগও যে তার ছিল না। তার সামনে যে আরও অনেক পথ ছিল খোলা। কেবল খেলায় নিজেকে আটকে রাখতে চাননি বলেই গানের জগতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন সেই শৈশবেই। বাড়িতে বাবার কারণেই পরিবেশটা ছিল সংগীতময়। বাবার কাছেই গানের হাতেখড়ি। সুবাদে বড় বড় সুরকার, সংগীত পরিচালকের সঙ্গে পরিচয়টাও ছোটবেলা থেকেই। যদিও পেশাদার গায়ক হয়ে ওঠার গল্পে বাবার পরিচয়টা মুখ্য হয়নি সংগীত জগতের রঞ্জন বললেন, ‘গানটা ছোটবেলা থেকেই গাইতাম। ১৯৯৭ সালে বিটিভি চট্টগ্রাম শাখার উদ্বোধন হওয়ার বছরেই অডিশন দিয়ে তালিকাভুক্ত গায়ক হয়ে যাই। দুই বছর পর ঢাকায় এসেও বিটিভিতে অডিশনে উতরে যাই। মনে আছে সেবার আমি অডিশনে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলাম। আর বাংলাদেশ বেতারেও তালিকাভুক্ত হই সে সময়। এখন তো বিশেষ গ্রেড তালিকায় আছি। আমার প্রথম একক অ্যালবাম বের হয় ২০০১ সালে। তার আগেই অবশ্য সিনেমায় প্লে-ব্যাক সিঙ্গার হিসেবে কণ্ঠ দিয়েছিলাম। বাদল খন্দকারের পরিচালনায় ‘বিশ্ব বাটপার’ সিনেমার সংগীত পরিচালক ছিলেন প্রখ্যাত আলাউদ্দিন আলী। উনি আমাকে নিজে পছন্দ করে গান করার সুযোগ দেন। সেই গল্পটা বলি, সোলো অ্যালবামের জন্য তখন আমি দুই-তিনটা গান রেকর্ড করেছিলাম। সেগুলো আমার পিসি প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী উমা খান তার বাসায় বাজিয়ে শুনছিলেন। একটি গানের রেকর্ডিংয়ের কাছে আলাউদ্দিন আলী পিসির বাসায় এসেছিলেন। এসে আমার গান শুনে জানতে চাইলেন, এটা কার কণ্ঠ? আমার কণ্ঠ তার এতই পছন্দ হয়েছিল, শুনেই বিশ্ব বাটপার সিনেমায় কণ্ঠ দেওয়ার জন্য নির্বাচিত করেন। যা-ই হোক, সে বছর প্রথম সোলো অ্যালবাম বের হয়। এখন পর্যন্ত চারটি একক অ্যালবাম, তিনটি ডুয়েট অ্যালবাম ও অসংখ্য মিক্স অ্যালবামে গান করেছি। ২০২১ সালে বিটিভির সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করছি। এ ছাড়া সে বছর থেকেই পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় শিল্পী শুভমিতা ব্যানার্জির সঙ্গে ভিডিও সং করছি। এখন পর্যন্ত তিনটি গান করেছি তার সঙ্গে; যা শ্রোতারা দারুণভাবে গ্রহণ করেছেন। এত দিন ধরে গাইছি। তবে আমার গান শেখা কিন্তু শেষ হয়নি। এখনো একজন প-িতের কাছে আধুনিক গানের তালিম নিচ্ছি।’
খেলা আর গানের জগতের এই মানুষটি পুরোদস্তুর চিকিৎসা পেশার সঙ্গে জড়িত ২০০১ সাল থেকে। ঢাকা সিটি ডেন্টাল কলেজ থেকে ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারিতে গ্র্যাজুয়েশন করে ব্যক্তিগতভাবে চর্চা শুরু করেন চট্টগ্রামে। প্রতিদিনই একটা বড় সময় কাটে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে। এর মধ্যেই বেশ কিছু কোর্সও করেছেন। জীবিকার তাগিদে চিকিৎসক পরিচয়টাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে জড়িয়ে পড়েছেন মানবকল্যাণে। তবে এ ক্ষেত্রে তিনি ঠিক তার বাবা প্রবাল চৌধুরীর মতো ভীষণ প্রচারবিমুখ। নিভৃতেই মানবসেবা করে যাচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনেক সুবিধাবঞ্চিত রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাই শুধু দেন না, প্রয়োজনে ওষুধ-পথ্যও কিনে দেন। তা ছাড়া তার চেম্বারে কর্মরতদের নিজের আয়ের একটা অংশ মাস শেষে দিয়ে দেন পারিশ্রমিক হিসেবে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের বন্যাদুর্গত অঞ্জলের বেশ কজন এইচএসসির পরীক্ষার্থীর পাশে দাঁড়িয়েছেন মানস।
এত কিছুর মধ্য দিয়ে একটা নেতৃত্ব গুণাবলিও তার মধ্যে বিকশিত হয়েছে। পাঁচ-ছয় বছর ধরে বাংলাদেশ টেবিল টেনিস খেলোয়াড় সমিতির সভাপতি হিসেবে খেলোয়াড়দের সঙ্গে ফেডারেশন কর্তাদের সব অন্যায়-অবিচারের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে যান মানস চৌধুরী। ক্রীড়াঙ্গন, সংগীতাঙ্গন, চিকিৎসা জগতের সব পঙ্কিলতা দূর করতে মানস চালিয়ে যাচ্ছেন একার লড়াই। আর এ কারণেই তিনি অনন্য।
সরকারের পদত্যাগের এক দফা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আজ শনিবার রাজধানী ঢাকায় গণমিছিল করবে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। অন্যদিকে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগ একইদিন পৃথকভাবে এ কর্মসূচি পালন করবে।
বিকেল ৩টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ ও মোহাম্মদপুর টাউন হলে আওয়ামী লীগের সমাবেশ। অন্যদিকে একই সময় রামপুরা ও কমলাপুর থেকে কর্মসূচি শুরু করবে বিএনপি।
বিএনপির গণমিছিল : বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধী দলগুলোর ঐক্যবদ্ধভাবে যে কর্মসূচি পালন করছে আজ তাদের ১৯তম কর্মসূচি। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি রাজধানীর রামপুরা বেটার লাইফ হাসপাতালের সামনে থেকে এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি রাজধানীর কমলাপুর থেকে গণমিছিল শুরু করে নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হবে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ২২ শর্তে গণমিছিলের অনুমতি দেয় বিএনপিকে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি রামপুরা বেটার লাইফ হাসপাতালের সামনে থেকে গণমিছিল শুরু করে মালিবাগ আবুল হোটেল, রেলগেট, মৌচাক মোড়, শান্তিনগর-কাকরাইল মোড়-নাইটিংগেল মোড় হয়ে নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আসবে। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজধানীর কমলাপুর থেকে গণমিছিল শুরু করবেন। মিছিলটি কমলাপুর থেকে শুরু হয়ে পীরজঙ্গি মাজার-আরামবাগ-ফকিরাপুল মোড় হয়ে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হবেন। তিনি জানান, নয়াপল্টনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ বিকেল ৪টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব সামনে থেকে গণমিছিল শুরু করবে। শেষ হবে দৈনিক বাংলা মোড় গিয়ে। একই সময়ে ১২ দলীয় জোট বিজয় নগর পানির ট্যাংকের সামনে থেকে, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পুরানা পল্টন আলরাজী কমপ্লেক্সের সামনে থেকে, এলডিপি বিকেল ৩টায় কারওয়ান বাজার এফডিসিসংলগ্ন এলডিপি অফিসের সামনে থেকে, গণফোরাম ও পিপলস পার্টি মতিঝিল নটর ডেম কলেজের উল্টো দিকে গণফোরাম চত্বর থেকে, গণ অধিকার পরিষদ কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে থেকে, গণ অধিকার পরিষদ (ডক্টর রেজা কিবরিয়া-ফারুক হাসান) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে গণমিছিল শুরু করবে। লেবার পার্টি সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে, এনডিএম দুপুর সাড়ে ১২টায় পুুরানা পল্টন ফটোসাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনের সামনে থেকে, গণতান্ত্রিক বামঐক্য সকাল ১০টায় সেগুনবাগিচা স্কুলের সামনে থেকে গণমিছিল শুরু করবে।
আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ : অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা এবারই প্রথম পৃথকভাবে শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে এবং সরকারের উন্নয়ন প্রচার করতে সরকারি দল এ কর্মসূচি দিয়েছে।
গত ১০ ডিসেম্বর থেকে বিএনপির কর্মসূচির দিন রাজধানীতে শান্তি সমাবেশ করে আসছে আওয়ামী লীগ। তবে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আগস্ট মাস জুড়ে কর্মসূচি থাকায় বিএনপির পাল্টা কোনো কর্মসূচি রাখেনি ক্ষমতাসীনরা। কিন্তু গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন ঢাকায় ছাত্র সমাবেশ করে ছাত্রলীগ। যাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। এরপর আজ শনিবার আবারও পাল্টা কর্মসূচি করবে ক্ষমতাসীনরা।
আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করেছেন, কর্মসূচির নামে বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও ঠেকাতে তারা মাঠে থাকবে। কারণ হিসেবে বলছেন, তারা মাঠে থাকলে বিএনপি সহিংসতা করার সাহস পায় না, সর্বশেষ গত ২৯ জুলাই রাজধানীর প্রবেশমুখে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির দিন আওয়ামী লীগ মাঠে ছিল না। সেদিন রাজধানীর কয়েকটি জায়গায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তাই সমালোচনা হলেও বিএনপিকে প্রতিরোধ করতে নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তাদের কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। উত্তরের দপ্তর সম্পাদক উলিয়াম প্রলয় সমাদ্দার বাপ্পি জানান, মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেরেবাংলা নগর থানার আয়োজনে শান্তি সমাবেশে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
গত ডিসেম্বর থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা সৃষ্ট হলেও বড় কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। তবে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতার আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
আল হিলালের হয়ে অভিষেকের পর চার ম্যাচ খেলেছিলেন নেইমার। কিন্তু কোনো ম্যাচে তিনি পাননি কোনো গোলের দেখা। অবশেষে আরবের ক্লাবটির হয়ে নিজের পঞ্চম ম্যাচে তিনি পেয়েছেন গোলের দেখা। তাতে দলও পেয়েছে বড় জয়ের দেখা।
এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগে ইরানের ক্লাব নাসাজি মাজান্দারানকে হারিয়েছে ৩-০ ব্যবধানে। দুই ম্যাচে চার পয়েন্ট নিয়ে ডি গ্রুপের দুইয়ে আল হিলাল। ছয় পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে নাভবাহোর।
ম্যাচের ১৮ মিনিটেই এগিয়ে যায় হিলাল। মোহাম্মদ আল বুরায়েকের বাড়ানো বলে জাল খুঁজে নেন অ্যালেক্সান্ডার মিত্রোভিজ। ৩৮ মিনিটে দুই দলই পরিণত হয় দশ জনের দলে। তর্কে জড়িয়ে লাল কার্ড দেখেন দুই দলের দুই ফুটবলার।
৫৮ মিনিটে সেই কাঙ্খিত গোলের দেখা পান নেইমার। নাসের আল দাওয়াসারির পা ঘুরে বল পেয়ে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শটে লক্ষ্যভেদ করেন এই তারকা। আর শেষ দিকে সালেহ আল সাহেরির গোলে বড় নিশ্চিত হয় আল হিলালের।
‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩’ শীর্ষক একটি প্রকল্প ২০২০ সালে অনুমোদন করিয়ে নিয়েছিলেন সংসদ সদস্যরা (এমপি)। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় তালিকা অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা তাদের চাহিদার পরিবর্তন আনেন। তারা ইউনিয়ন পর্যায়ে রাস্তা না করে সেতু তৈরির ওপর জোর দেন। কিছু ক্ষেত্রে খাতভিত্তিক ব্যয় না চেয়ে থোক বরাদ্দও চাওয়া হয়েছিল। চাহিদার জটিলতায় ধীরগতিতে চলে প্রকল্পের বাস্তবায়ন। ঠিক সময়ে প্রকল্পটি শেষ করতে না পারার শঙ্কায় ফের সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
যদিও একই রকম আরেকটি প্রকল্পের কাজ তখনো চলমান ছিল। চলমান একটি প্রকল্প শেষ না হতেই সংসদ সদস্যদের জন্য আরেকটি প্রকল্প নিয়ে তখন বেশ আলোচনা-সমালোচনাও হয়েছিল।
প্রকল্প-৩-এর মেয়াদ আছে আর এক বছর। অথচ কাজ চলছে ঢিমেতালে। নির্বাচনের আগে তাদের চাহিদার পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৬ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকার প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের পর ধীরে ধীরে এগোতে থাকে। এর বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। গত আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি ৪১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
এ প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে প্রত্যেক সংসদ সদস্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছিলেন। সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট নির্মাণে বছরে পাঁচ কোটি টাকা করে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়।
প্রতি বছর পাঁচ কোটি করে চার বছরে এ অর্থে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা তাদের। সিটি করপোরেশন এলাকার ২০ সংসদ সদস্য এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্যরা এ বরাদ্দের বাইরে রয়েছেন।
নিজ এলাকার উন্নয়নে এমন সুযোগ পেলেও সংসদ সদস্যরা কাজে লাগাতে পারেননি। প্রকল্পের মেয়াদ প্রায় শেষ। অথচ প্রকল্প বাস্তবায়ন অর্ধেকেরও কম হয়েছে। অধিকাংশ সংসদ সদস্যই তাদের প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারেননি। কিন্তু তারা বলছেন, যে চাহিদা তারা দিয়েছিলেন তার অধিকাংশ পেয়েছেন।
জানতে চাইলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার আসনে যেসব চাহিদা দিয়েছিলাম সবগুলোই পেয়েছি। কিন্তু এ মুহূর্তে এসে বাস্তবায়নের অগ্রগতি ৪১ শতাংশ বলা হচ্ছে, এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। পরিকল্পনা কমিশনে কীসের ভিত্তিতে এই সংশোধনী প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা জানি না।’
সংসদ সদস্যরা যে চাহিদা পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছেন সে বিষয়ে ইনু বলেন, ‘কোনো এমপি চাহিদা পরিবর্তন করার কথা নয়। আমার এলাকায় যা চেয়েছি তাই তো পুরোটা তারা দিতে পারেননি। প্রতি বছর পাঁচ কোটির বরাদ্দ, তার বাইরে তো তারা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না।’ পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা (পিইসি) অনুষ্ঠিত হয়েছে। পিইসি সভায় প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ রুহুল আমিন খানের কাছে সংশোধনের যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। সেখানে তিনি বলেন, এ প্রকল্পে জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে ইতিমধ্যে বেশ কিছু সড়ক ও সেতু-কালভার্ট নতুনভাবে নির্মাণের প্রস্তাব পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত স্কিমগুলোর গুরুত্ব বিবেচনায় বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। স্কিমগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পে অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রয়োজন।
পিইসি সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, এ বিষয়ে কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. ছায়েদুজ্জামান বলেন, যেসব স্কিম অতীব জনগুরুত্বপূর্ণ সেগুলোর যৌক্তিকতাসহ সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (আরডিপিপি) অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তবে, নতুনভাবে গৃহীত স্কিমগুলো বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দ ৫০ কোটি টাকার কম করতে হবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তৃতীয় দফার এ প্রকল্পের আওতায় নতুন করে উপজেলা সড়ক নির্মাণ করা হবে ৩০৫ দশমিক ২১ কিলোমিটার। ইউনিয়ন সড়ক নির্মাণ করা হবে ৬৬০ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার। গ্রাম সড়ক উন্নয়ন হবে ৫ হাজার ৭৫ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার। গ্রামীণ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ হবে ১ হাজার ৯০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার। গ্রামীণ সড়কে ১০০ মিটারের কম দৈর্ঘ্যরে সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হবে ৭ হাজার ৯৯২ দশমিক ২২ মিটার।
এসব প্রস্তাব সংসদ সদস্যদের চাহিদার ভিত্তিতেই করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবায়নের সময় ফের বাদ সাধেন তারাই। পরে মূল প্রকল্প প্রস্তাব থেকে প্রস্তাবিত প্রথম সংশোধনে ১৯৩ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক, ৮৩ দশমিক ৯১ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক, ৫০৫ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার গ্রাম সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম বাদ দেওয়ার আবদার করেছেন তারা। এর বিপরীতে ৩৯২ দশমিক শূন্য ১ কিলোমিটার গ্রাম সড়ক ও ২ হাজার ৬৭৪ দশমিক ৫১ মিটার সেতু-কালভার্টের প্রস্তাব এসেছে তাদের কাছ থেকে। সে অনুযায়ী সংশোধনী প্রস্তাব তৈরি করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ রুহুল আমিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা চিন্তা করেছি এ রাস্তাটি আজকে করব, কিন্তু দেখা গেল অন্য কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে এ রাস্তাটি হয়ে গেছে। এমপিরা যেভাবে ডিও দেন প্রকল্পটি সেভাবে চলে, আমাদের ফ্রেমওয়ার্কটিই সেভাবে তৈরি করা।’
এ মুহূর্তে প্রকল্পটি সংশোধনের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে পরিবেশের জন্য ড্রেনেজ সুবিধা রাখতে হবে। একটি রাস্তা করতে গিয়ে দেখা গেল, একটি কালভার্ট বা সেতুর প্রয়োজন হয়েছে। এটি এখন প্রথম প্রায়োরিটি (অগ্রাধিকার)। এটি প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন হিসেবে কাজ করছে।’
বাস্তবায়নের ধীরগতির কারণ হিসেবে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘যখন প্রকল্পটি অনুমোদন হয়েছিল তখন করোনা মহামারী ছিল। করোনার কারণে প্রকল্পটির কাজ দেরিতে শুরু হয়েছিল, যার ফলে এ মুহূর্তে বাস্তবায়ন অগ্রগতি এ পর্যায়ে এসেছে।
পিইসি সভায় সংশোধনের কারণ জানতে চাওয়া হলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ১১তম জাতীয় সংসদ সদস্যদের প্রাথমিক চাহিদাপত্র (ডিও) গ্রহণ করে স্কিমের তালিকা প্রণয়ন করা হয়। তবে বাস্তবায়ন পর্যায়ে বিশেষ পরিস্থিতি ও অগ্রাধিকার ক্রমপরিবর্তনের ফলে আরডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত স্কিম তালিকা পরিবর্তন করে ডিওর মাধ্যমে সংশোধিত নতুন স্কিম তালিকা করা হয়েছে। পরিবর্তিত স্কিম তালিকা অনুযায়ী গ্রাম সড়ক ও সেতু-কালভার্টের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং উপজেলা-ইউনিয়ন সড়কের পরিমাণ কমেছে।
এ প্রকল্পের তথ্য-বিশ্লেষণে দেখা যায়, এতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৭৫ কিলোমিটারের গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নের জন্য। এতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪ হাজার ৬০ কোটি টাকা। ৬৬০ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক উন্নয়নের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫২৮ কোটি টাকা, ৩০৫ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক উন্নয়নের জন্য ২৯০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। তা ছাড়া ১ হাজার ৯০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক সংরক্ষণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৮১ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, এর আগে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রথম সরকার গঠনের পর প্রত্যেক সংসদ সদস্য নিজ আসনের অবকাঠামো উন্নয়নে ১৫ কোটি টাকা করে পেয়েছিলেন। সে সময় প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৪ হাজার ৮৯২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এটি ২০১০ সালের মার্চ থেকে ২০১৬ সালের জুনে শেষ হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে সংসদ সদস্যদের ২০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এ পর্যায়ে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৬ হাজার ৭৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়ন হয়েছে। এ প্রকল্পটি শেষ না করেই তৃতীয় মেয়াদে আবার ২০ কোটি টাকা করে দেওয়া হয়। এই উদ্যোগের কারণে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় প্রশ্নের মুখে পড়ে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এ প্রকল্পের আওতায় সংসদ সদস্যরা সরাসরি টাকা পাবেন না। তারা শুধু তাদের নির্বাচনী আসনে পছন্দ মোতাবেক প্রকল্পের নাম দেবেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে শোভন আচরণ এবং বিশৃঙ্খলা-সৃষ্টি করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের পাঁচ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার স্বাক্ষরিত এক পত্রে তাদের বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এইচএম আবু বকর চৌধুরী।
বহিষ্কৃতরা হলেন মোক্তারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল হেকিম, সদস্য মো. জাকির হোসেন, ওই ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আকরাম হোসেন, একই ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফয়সাল ফকির এবং ওই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জাইদুল।
তবে ঘটনার উসকানিদাতা মোক্তারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সাংগঠনিক ব্যবস্থা এখনো নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এইচএম আবু বকর চৌধুরী বলেন, পুরো বিষয়টি আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা দেখছেন। এ ব্যাপারটি তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন।
সারা দেশে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ১ হাজার ৫৭৭টি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ঢাকায় ঘটেছে ১৫৫টি, যা আগস্ট মাসের চেয়ে ২৭টি বেশি। এ সময় আগুনে ৪ জন নিহত ও ১১ আহত হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকায় ১৫৫টি আগুনের ঘটনায় ৭ জন আহত হলেও কেউ মারা যায়নি। রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, হাজারীবাগ, তেজগাঁও, বারিধারা, উত্তরা এলাকায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা বেশি ঘটেছে। এর মধ্যে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, বারিধারা এলাকায় গত মাসে ১৬টি করে অগ্নিকান্ড ঘটেছে।
সেপ্টেম্বর মাসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে ৬০৩, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৮৯, রাজশাহী বিভাগে ২২৫, খুলনা বিভাগে ১৩২, সিলেট বিভাগে ৫৭, বরিশাল বিভাগে ৬০ ও রংপুর বিভাগে ২৪৮টি আগুনের ঘটনা ঘটেছে।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, আগস্ট মাসের চেয়ে সেপ্টেম্বরে অগ্নিকাণ্ড কমেছে। আগস্টে সারা দেশে ১ হাজার ৬৬৭টি আগুনের ঘটনা ঘটেছিল।
পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সেপ্টেম্বরে সারা দেশে ৭৮৭টি বিভিন্ন দুর্ঘটনায় উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নেন। এর মধ্যে আছে ঢাকায় ১৫৯, ময়মনসিংহে ৫৫, চট্টগ্রামে ১০২, রাজশাহীতে ২০১, খুলনায় ৮৮, সিলেটে ২৭, বরিশালে ৪১ ও রংপুর বিভাগে
১১৪টি দুর্ঘটনা।
ফায়ার সার্ভিস আরও জানায়, বিভিন্ন দুর্ঘটনার মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা রয়েছে ৫৯০। এ ছাড়া রান্নাঘরের গ্যাস সিলিন্ডারজনিত দুর্ঘটনা ঘটেছে ১০, গ্যাসলাইনে ত্রুটিজনিত ঘটনা ১৩, লিফট দুর্ঘটনা ১৫, বজ্রপাতের ১৯, নদী ও পানিতে ডুবে যাওয়ার ১১৫ এবং অন্যভাবে আরও ২৫টি দুর্ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ১৮৪ জন নিহত ও ৭৭৭ জন আহত হয়েছে।
সেপ্টেম্বর মাসে শুধু ঢাকায় ৪৯টি বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত হয়েছে। রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, পুরান ঢাকা এলাকায় দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে।
ফায়ার সার্ভিসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত মাসে সারা দেশ থেকে ফায়ার সার্ভিস আগুন ও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ৪ হাজার ৩৫৪টি কলের মাধ্যমে সেবা দিয়েছে। এ ছাড়া ১ হাজার ১৫২টি কলের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৮ জন রোগী পরিবহনে অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিয়েছে।
ঢাকায় অগ্নি দুর্ঘটনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভোররাতে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। সেখানে আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট কাজ করে। আর তখন তাদের সহযোগিতা করেছেন সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা। প্রায় ৫ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। কোনো ধরনের হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও মার্কেটের বিভিন্ন দোকানের মালামাল, আসবাবসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী ওই সময় বলেছিলেন, মার্কেটের ভেতরে কোনো ফায়ার সেফটি ও ফায়ার ফাইটিংয়ের ব্যবস্থা ছিল না। এ ছাড়া মার্কেটটি অনেকটা বঙ্গবাজার মার্কেটের মতো। ফুটপাত ও সড়কে দোকান থাকা এবং মানুষের ভিড়ের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়।
এর আগে বঙ্গবাজারের চারটি মার্কেটে অগ্নিকান্ডের পর ঢাকার বিভিন্ন মার্কেটে অভিযান চালায় ফায়ার সার্ভিস। বেশিরভাগ মার্কেট আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছিল অগ্নিনির্বাপণ বাহিনী। এরপরই নিউ সুপার মার্কেটে আগুনের ঘটনা ঘটে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও লক্ষ্মীপুর-৩ শূন্য আসনের উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির তফসিল অনুযায়ী আগামী ৫ নভেম্বর এই দুই আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে কমিশন সভা ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এ তথ্য জানান।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১১ অক্টোবর (বুধবার) মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন, মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১২ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার), মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল ১৩ থেকে ১৭ অক্টোবর, আপিল নিষ্পত্তি ১৮ অক্টোবর (বুধবার), প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৯ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার), প্রতীক বরাদ্দ ২০ অক্টোবর (শুক্রবার) এবং ভোটগ্রহণ ৫ নভেম্বর।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক। সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা। লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা। সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।
এর আগে, গত ১ অক্টোবর সংসদ সচিবালয় এই দুই আসন শূন্য ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত এমপি আবদুস সাত্তার ভূঞা এবং লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত এমপি এ কে এম শাহজাহান কামাল রাজধানীর একটি হাসপাতালে গত ৩০ সেপ্টেম্বর মারা যান। এরপর আসন দুটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।