
দেশে চলতি বছরের এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যু ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৫ জন মারা গেছে। এ নিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৭০৬ জনের মৃত্যু হলো। আর চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম আট দিনে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১১৩ জনে। গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ঢাকায় ১১ জন ও ঢাকার বাইরে ৪ জন মারা গেছে। এ সময় ডেঙ্গু নিয়ে ১ হাজার ৮৭৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৮৪২ এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোয় ১ হাজার ১২৫ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে।
এ নিয়ে এ বছর মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ৪২ হাজার ৫৮৭ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৬৫ হাজার ১৪ এবং ঢাকার বাইরে ৭৭ হাজার ৫৭৩ জন রয়েছে।
দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছিল গত বছর ২৮১ জন। চলতি বছর অনেক আগেই সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এ ছাড়া ডেঙ্গুতে ২০১৯ সালে মৃত্যু হয়েছিল ১৭৯ জনের। ২০২০ সালে ৭ জন এবং ২০২১ সালে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয় ১০৫ জনের।
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক হয়েছে। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার বিকেলে নয়াদিল্লির লোককল্যাণ মার্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে দ্বিপক্ষীয় এ বৈঠক হয়। বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় যোগাযোগ, বাণিজ্যিক সংযুক্তিসহ অন্যান্য বিষয় স্থান পেয়েছে। বৈঠকে দুই সরকারপ্রধান ঢাকা-দিল্লির মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং এ সম্পর্ক আরও জোরদার করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সম্মত হন। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার পক্ষেও একমত হন তারা। দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে।
বৈঠক শেষে এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। গত ৯ বছরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্রগতি খুবই সন্তোষজনক। আমাদের আলোচনায় কানেকটিভিটি, বাণিজ্যিক সংযুক্তি এবং আরও অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল।’ বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় আলাদাভাবে পোস্টটি দেওয়া হয়েছে।
দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক সম্পর্কে ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘উভয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান গভীর সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং এ সম্পর্ক আরও জোরদার করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়েছেন।’ তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত সমস্যা সমাধানের ওপরও জোর দিয়েছেন।
ড. মোমেন বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী তার দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিদ্যমান শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের জন্য তার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।’
এর আগে নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে গতকাল নয়াদিল্লি পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে (স্থানীয় সময়) নয়াদিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান ভারতের রেলওয়ে ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী দর্শনা জার্দোস। প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
এর আগে বেলা ১১টায় ফ্লাইটটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা তার সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখ করেছেন, গত বছর ৪-৮ সেপ্টেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে তার সফল রাষ্ট্রীয় সফরের পর দ্বিপক্ষীয় স্বার্থের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, ‘দুই প্রধানমন্ত্রী এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।’
বৈঠকে শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জিত সাফল্যের কথা জানান। ড. মোমেন যোগ করেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের অসাধারণ অগ্রগতির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।’ তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হওয়ায় ভারত থেকে আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনা ভারত সরকারকে অনুরোধ করেন।
তিনি বলেন, ‘উভয় প্রধানমন্ত্রীই রেল ও সড়ক যোগাযোগসহ ভারতের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় এবং আঞ্চলিক সংযোগ বাড়ানোর জন্য আমাদের চলমান প্রচেষ্টা এবং কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে সম্মত হয়েছেন।’
শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে নরেন্দ্র মোদির সহযোগিতাও কামনা করেন। ড. মোমেন বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে, অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে এ ফলপ্রসূ ও উন্মুক্ত আলোচনা দুপক্ষের মধ্যে অমীমাংসিত সমস্যাগুলোর নিষ্পত্তিকে ত্বরান্বিত করবে এবং উভয় দেশের জনগণ এর দ্বারা উপকৃত হবে। তিনি বলেন, ‘এ সময় উভয় প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং উভয় সরকারপ্রধান একান্ত বৈঠকেও মিলিত হন।’
শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথাও স্মরণ করেন। তিনি ‘জি-২০ নেতাদের’ শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য নরেন্দ্র মোদির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
নির্বাচন নিয়ে একান্ত বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কি না, জানি না : মোমেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনসংক্রান্ত কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি বলে ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে আসন্ন সাধারণ নির্বাচন এবং ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যু নিয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলে কেউ অস্থিতিশীলতা চায় না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ২০০১ সালের পরের খারাপ সময়ে ফিরে যেতে চায় না যখন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছিল, সারা দেশে বোমা হামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং আদালত কক্ষে বিচারকদের ওপর বোমা হামলা হয়েছিল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে অনুষ্ঠিত দুই প্রতিবেশী দেশের সরকারপ্রধানের মধ্যে একান্ত বৈঠকে নির্বাচনের বিষয় নিয়ে কথা উঠেছিল কি না, তার জানা নেই।
আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা রয়েছে উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে দেশের সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা খুশি। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী সাধারণ নির্বাচনে কেউ কারচুপির চেষ্টা করলে জনগণ প্রতিহত করবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য বিএনপির দাবির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাংলাদেশের সংবিধানে নেই এবং এটা কোনো আলোচনার বিষয় নয়। তিনি বলেন, আসন্ন সাধারণ নির্বাচন নিরপেক্ষ, বিশ্বাসযোগ্য ও সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত করতে সবাইকে অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই নেতা রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য ও সংযোগ, পানিসম্পদ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, উন্নয়ন সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক এবং মানুষে-মানুষে বন্ধনসহ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এতে আরও বলা হয়েছে, এ অঞ্চলের বর্তমান উন্নয়ন এবং বহুপক্ষীয় ফোরামে সহযোগিতা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
৩ এমওইউ সই : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের পর বাংলাদেশ ও ভারত তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে। সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
এগুলো হলো ১. বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল এবং ভারতীয় কৃষি গবেষণা পরিষদের মধ্যে কৃষি গবেষণা ও শিক্ষায় সহযোগিতার বিষয়ে এমওইউ। এর আওতায় দুই দেশের মধ্যে কৃষি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ খাতে সহযোগিতা জোরদার হবে। ২. ২০২৩-২৫-এর জন্য কালচারাল এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম (সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রোগ্রাম)। এর অধীনে শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক খাতে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও জোরদারকরণে বিভিন্ন ব্যবস্থা ও কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। ৩. ভারতের এনপিসিআই ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্টস লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) মধ্যে এমওইউ। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক লেনদেন সম্পাদন সহজতর হবে।
নরেন্দ্র মোদিকে সায়মা ওয়াজেদের স্যুভেনির উপহার : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একমাত্র কন্যা সায়মা ওয়াজেদ গতকাল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একটি স্যুভেনির উপহার দিয়েছেন।
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) থিম্যাটিক অ্যাম্বাসাডর এবং অটিজম ও নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী মোদির বাসভবনে এ স্যুভেনিরটি হস্তান্তর করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক উপস্থিত ছিলেন।
এবারের জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ নয়টি দেশকে অতিথি রাষ্ট্র হিসেবে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে আয়োজক ভারত। ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান নানা সম্পর্কের ভিত্তিতে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সম্মেলনে আমন্ত্রণ পায়। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশগুলো হচ্ছে মিসর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন শুরু হওয়ার পর আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন অধিবেশনে যোগ দেবেন এবং শীর্ষ সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’-এর অধীনে দুটি ভাষণ দেবেন।
একইদিন প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান আল সৌদ, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো অ্যাঞ্জেল ফার্নান্দেজ, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়ল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
১০ সেপ্টেম্বর জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় এবং শেষ দিনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য দেশের নেতাদের সঙ্গে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে যোগ দেবেন। সম্মেলনের শেষ দিনে ‘জি-২০ নয়াদিল্লি নেতাদের ঘোষণা’ গৃহীত হবে। ওইদিনই প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরবেন।
গ্রুপ অব টোয়েন্টি (জি২০) হলো আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রধান ফোরাম। এটি সব প্রধান আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ইস্যুতে বৈশ্বিক স্থাপত্য এবং শাসন শক্তিশালীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৯৯ সালে এশীয় আর্থিক সংকটের পর অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য জি-২০ একটি ফোরাম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
জি-২০ ১৯টি দেশ (আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।
জি-২০ সদস্য দেশগুলো বিশ্বব্যাপী জিডিপির প্রায় ৮৫ শতাংশ, বিশ্ব বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশের বেশি এবং বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের প্রতিনিধিত্ব করে। বাসস
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে বিবৃতিসংক্রান্ত বক্তব্য দিয়ে আলোচিত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) এমরান আহম্মদ ভূঁইয়াকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশ অনুযায়ী তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর বিভাগ। তবে বিষয়টি জানা যায় গতকাল শুক্রবার। এদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহমেদ ভূঁইয়াকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এদিকে পদ হারানোর পর নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে স্ত্রী ও তিন কন্যাসন্তানকে নিয়ে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস প্রাঙ্গণে গিয়ে ওঠেন। তবে সেখানে দূতাবাসের কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে না পেরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ফিরে যান।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মো. শহিদুল্লাহ গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বাসায় ফিরে গেছেন।
এমরানের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মার্কিন দূতাবাসে অবস্থানের খবর প্রকাশের পর গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে ছুটে যান। সেখানে থাকা সাংবাদিকরা জানান, সন্ধ্যা ৬টা ৩৮ মিনিটে দূতাবাসের বাইরে থেকে একটি গাড়ি আসে। সেই গাড়িতে পরিবারসহ দূতাবাস ছেড়ে যান এমরান। পরে তিনি একটি গণমাধ্যমকে মোবাইল ফোনে বলেন, বাসায় ফিরে যাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে পুলিশ রয়েছে।
এমরান আহম্মদ আরও বলেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যে তিনি আশঙ্কা করেছিলেন যে তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। তাই মার্কিন দূতাবাসে গিয়েছিলেন। তবে তার কোনো ক্ষতি হবে না, সে বিষয়ে আশ্বস্ত হয়ে বাসায় ফিরেছেন।
এমরানকে অব্যাহতি দিয়ে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে তার নিয়োগ বাতিলের কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি। আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর অনুবিভাগের সলিসিটর রুনা নাহিদ আকতার স্বাক্ষরিত ৭ সেপ্টেম্বরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘দ্য বাংলাদেশ ল অফিসার্স অর্ডার, ১৯৭২ এর ৪(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া’র নিয়োগাদেশ জনস্বার্থে বাতিলক্রমে তাকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।’
পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে সাংবাদিকদের বলেন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়াকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। খালেদা জিয়াকে স্থায়ী জামিন দিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে পরিবারের আবেদন প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আইনে এমন কোনো সুযোগ নেই।’
এর আগে সকাল সোয়া ১০টায় তিনি আন্তঃনগর মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনে আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে এসে পৌঁছেন। এ সময় দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। পরে তিনি সড়কপথে নিজ নির্বাচনী এলাকা কসবার উদ্দেশে রওনা হন।
শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ঘিরে একটি বক্তব্য দিয়ে কয়েক দিন ধরে আলোচনায় আছেন এমরান আহম্মদ। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতির মামলা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি (বিবৃতি) পাঠিয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় দেড় শতাধিক ব্যক্তি। তাদের মধ্যে শতাধিক নোবেলজয়ী রয়েছেন। এ বিবৃতি ও খোলা চিঠির সপক্ষে গত সোমবার গণমাধ্যমে কথা বলেন এমরান। পাল্টা প্রতিবাদ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করবেন না বলে বক্তব্য দেন তিনি। তিনি বলেন, ‘ড. ইউনূসকে বিচারিক হয়রানি করা হচ্ছে। এ নিয়ে বিশ্বনেতাদের বিবৃতি ও উদ্বেগ সঠিক।’ এমরান দাবি করেন, পাল্টা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তার এসব বক্তব্যে তোলপাড় শুরু হয়। তবে বিবৃতিতে স্বাক্ষরের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে আইন কর্মকর্তাদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলে জানান রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এএম আমিন উদ্দিন। অন্যদিকে একাধিক আইন কর্মকর্তা বলেন, সাধারণ আইনজীবীদের ব্যানারে বিবৃতিতে স্বাক্ষর নেওয়া হচ্ছে।
পরদিন দুপুরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রেস ক্লাবে একটি অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, আইন কর্মকর্তা এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি তিনি (আইনমন্ত্রী) দেখবেন বলে জানান। একইদিন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এমরান কোনো একটি পক্ষকে খুশি করতে এমন বক্তব্য দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের নেই। এটি করতে পারে আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর বিভাগ। ওইদিন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পঞ্চমতলায় এমরানের কক্ষের সামনে থাকা নেমপ্লেট খুলে ফেলেন কয়েকজন আইন কর্মকর্তা। একইদিন আইন কর্মকর্তাদের গণমাধ্যমে বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অফিসসংক্রান্ত বিষয়ে বক্তব্য দিতে অ্যাটর্নি জেনারেলের পূর্বানুমতি নিতে হবে বলে নির্দেশনা সংবলিত বিজ্ঞপ্তি দেয় কার্যালয়ের প্রশাসনিক বিভাগ। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল এমরানের নিয়োগ বাতিল করে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত এলো।
ডেঙ্গুর ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেই ঢাকা মহানগর শিশু হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটে রোগী ভর্তি বন্ধ রয়েছে। পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকায় ১০০ শয্যার এ হাসপাতালে গত জুলাই থেকে রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। কিন্তু এখন পর্যন্ত চিকিৎসক সংকট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গরিবের হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত এ চিকিৎসাকেন্দ্রটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তত্ত্বাবধানে পরিচালিত।
জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে সামসুল কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২০১৬ সালের জনবল কাঠামোতে হাসপাতালের শূন্যপদে সরাসরি নিয়োগ কেটে প্রেষণ করে দিয়েছে। এজন্য ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ওই শূন্যপদ পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। আর এখানে প্রেষণে লোকবলও পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, জনবল কাঠামো সংশোধন করে সরাসরি নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করতে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সংশোধন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। জনবল কাঠামো সংশোধন হওয়ার পর দ্রুততম সময়ে হাসপাতালের শূন্যপদে জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। আপাতত বিদ্যমান জনবল দিয়ে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১৯৯০ সালে গড়ে তোলা ঢাকা মহানগর শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা শুরু হয় ১৯৯৩ সালে। লালবাগ চৌরাস্তা সংলগ্ন ৪/১, গৌর সুন্দর রায় লেনে প্রায় দেড় বিঘা জায়গার ওপর তৈরি করা হয়েছে হাসপাতালটি। চারতলা ভবনের নিচতলায় আউটডোর, প্যাথলজি বিভাগ ও ফার্মেসি রয়েছে। আর দোতলায় অপারেশন থিয়েটার, পরিচালকের দপ্তর এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যালয়। তিন ও চারতলায় রয়েছে মেডিসিন ওয়ার্ড ১ ও ২, জরুরি বিভাগ, ডেঙ্গু ওয়ার্ড এবং ডায়রিয়া ওয়ার্ড। প্রতিদিন আউটডোরে ২০০ থেকে ৩০০ রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসে। আর গত কয়েক বছরে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর গড় ৫০ থেকে ৬০ জন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা মহানগর শিশু হাসপাতালের মোট জনবল সংখ্যা ১২৪ জন। এর মধ্যে বর্তমানে কর্মরত ৭৪ জন। চিকিৎসক পদ ২২টি, তবে কর্মরত ১২ জন। নার্সের পদ ৩০টি, বর্তমানে কর্মরত ৬ জন। অন্যান্য পদে কর্মরত রয়েছেন ৫৬ জন।
হাসপাতালগুলো সাধারণ তিনটি শিফটে চলে; মর্নিং, ইভিনিং ও নাইট। কর্মরতদের অনেকে মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং অসুস্থতাজনিত ছুটিতে থাকে। এ বাস্তবতায় ঢাকা মহানগর শিশু হাসপাতালের তিনটি শিফট চালু রাখতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সময়ে ঢাকা মহানগর শিশু হাসপাতালটি সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়েছে। সে সময় ওই হাসপাতালের জনবল কাঠামোতে পদসংখ্যা ছিল ১৯৪ জন। ২০১১ সালে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন হওয়ায় ২০১৬ সালে নতুন করে জনবল কাঠামো তৈরি করা হয়। সে সময় ৭০টি পদ কমিয়ে দেওয়া হয়। আর চিকিৎসক ও নার্সের পদসংখ্যা সরাসরি নিয়োগ বাদ দিয়ে প্রেষণ করে দিয়েছে। এ কারণে হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সের পদ শূন্য হলেও ওই পদে নিয়োগ দিতে পারছে না। আর সরকারের কাছে ডিএসসিসি থেকে চিকিৎসক ও নার্স চেয়ে আবেদন করলেও তা পাওয়া যাচ্ছে না। কেননা ডেঙ্গু ও করোনা চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালগুলোয় রোগীর চাপ রয়েছে। এজন্য ডিএসসিসির শিশু হাসপাতালটি প্রায় বন্ধ হতে চলেছে। ডিএসসিসি মেয়র জনবল কাঠামো সংশোধনের জন্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে। কিন্তু তা কবে আলোর মুখ দেখবে তা জানে না কেউ।
ডিএসসিসি সূত্রে আরও জানা যায়, সাঈদ খোকন মেয়র থাকাবস্থায় ওই এলাকায় জনতার মুখোমুখি অনুষ্ঠানে হাসপাতালের সংস্কার, আধুনিকায়ন ও সেবা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছিলেন এলাকাবাসী। তার মেয়াদে তিনি ওই হাসপাতালের সেবা বৃদ্ধির কোনো কাজ শুরু করতে পারেননি। বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস দায়িত্ব গ্রহণের পর কয়েক দফা ওই হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন। এরপর পুরাতন ভবনের আধুনিকায়ন কাজ শুরু করেছেন। তবে সেবা দেওয়ার মূল কাজের জন্য চিকিৎসক ও নার্সের শূন্যপদ পূরণ করতে পারছেন না।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর শিশু হাসপাতালের পরিচালক ডা. আহমেদ কুদরতে খোদা দেশ রূপান্তরকে বলেন, চিকিৎসক সংকটের কারণে হাসপাতালটি পরিচালনা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ২০১৬ সালের জনবল কাঠামোতে চিকিৎসক ও নার্স পদগুলো প্রেষণ করে দেওয়ায় শূন্য পদে লোকবল নিয়োগ দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি প্রেষণেও জনবল পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, জুলাইয়ে দুজন চিকিৎসক ছুটিতে যাওয়ায় হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা আর সম্ভব হচ্ছে না। যারা একান্তই ভর্তি হতে চাচ্ছেন, তাদের ‘ডে-কেয়ার সিস্টেমে’ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ তারা সকালে হাসপাতালে এসে বিকেলের দিকে বাসায় চলে যাচ্ছেন। রাতের শিফট চালু রাখতে জরুরি ভিত্তিতে কয়েকজন চিকিৎসক প্রয়োজন।
আদালতে মামলাজট কমাতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা সম্ভাবনা জাগালেও কাক্সিক্ষত সুফল মিলছে না। ক্ষেত্রবিশেষে আদালতের বাইরে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (অলটারনেটিভ ডিসপুট রেজল্যুশন) বা এডিআর মামলা পূর্ব ও পরবর্তী বিরোধ নিষ্পত্তিতে উত্তম ও সহজ পদ্ধতি। কোনো রকম ভোগান্তি ও হয়রানি ছাড়া নিখরচার এই সমাধানেও অনেকের উৎসাহ নেই। ফলে মামলা বাড়ছে, পক্ষগণের বিরোধে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। ভুক্তভোগীর ভোগান্তি ও আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে চরমভাবে।
গত দুই দশকে অনিষ্পন্ন মামলার সংখ্যার সঙ্গে আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি হওয়া বিরোধপূর্ণ ঘটনার সংখ্যা মেলালে সেই চিত্রই দেখা যায়। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ পর্যন্ত উচ্চ ও আদালতে বিচারাধীন দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা ৪২ লাখের বেশি।
অন্যদিকে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার হিসাবে ২০০৯ সাল থেকে প্রায় ১৫ বছরে সাড়ে ৮৬ হাজার বিরোধ (মামলা পূর্ব ও পরবর্তী) নিষ্পত্তি করেছে ৬৪ জেলার লিগ্যাল এইড অফিস। লাখ লাখ মামলা ও বিরোধের বিপরীতে এ পরিসংখ্যানকে হতাশাজনক বলছেন আইনবিদরা।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ওয়াকিবহাল আইন ও বিচারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেওয়ানি মামলায় দুই পক্ষের সম্মতিতে এডিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন অনেকটা সহজতর। খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি, মাদক, নারী ও শিশু নির্যাতনের মতো গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ ব্যতীত লঘু অপরাধের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি বাস্তবায়নে মামলার জট হ্রাস পায়। কিন্তু এডিআর নিয়ে ধারণা ও প্রচারের ঘাটতি, বিরোধীয় পক্ষগণের আস্থাহীনতা, মামলার প্রবণতা ও ছাড় না দেওয়ার মানসিকতা, কিছু ক্ষেত্রে আইনজীবীদের আন্তরিকতার ঘাটতি, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আদালতকে নির্ভরযোগ্য মনে করা, পক্ষগণের এডিআর মানার বাধ্যবাধকতা না থাকায় অনেক সম্ভাবনার পরেও বিকল্প হয়ে উঠতে পারছে না বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা।
মধ্যস্থতার মাধ্যমে মামলায় পক্ষগণের বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গত ২৯ আগস্ট প্রথমবারের মতো সুপ্রিম কোর্টে মেডিয়েশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির উদ্যোগে সেখানে আদালতের অনুমতি ও দুই পক্ষের সম্মতিতে বিরোধ নিষ্পত্তি করা হবে। এই উদ্যোগ প্রশংসনীয় উল্লেখ করে আইনবিদরা বলছেন, এর মাধ্যমে এডিআর পদ্ধতিটি প্রতিষ্ঠিত হবে।
এডিআর পরিস্থিতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মামলা হচ্ছে। আপিল, রিভিশন হচ্ছে। একটা মামলা থেকে চারটা-পাঁচটা মামলা হচ্ছে। যে হারে মামলা বাড়ছে এডিআর ছাড়া তো আর কোনো উপায় নেই।’ তিনি বলেন, ‘একদিকে এ বিষয়ে মানুষের ধারণা কম। অন্যদিকে মানুষকে বোঝাতে না পারা। আমরা হয়তো মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হচ্ছি না যে এটার লাভ-ক্ষতি কী? মামলা করলে কী হবে আর এডিআর করলে কী হবে এগুলো বোঝানো গেলে মানুষের আগ্রহ আরও বাড়বে।’
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আইনজীবীদের দায় আছে কি নাÑ এমন প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘অবশ্যই। আদালতেরও দায়িত্ব আছে। প্রথমত, আদালত আইনজীবীদের ডেকে নিয়ে দুই পক্ষকে সমঝোতায় আসতে তাগিদ দিলে আপসের মানসিকতা নিয়ে বসলেই সমাধান হবে।’
দেশে দেওয়ানি কার্যবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি, শ্রম আইন, অর্থঋণ আদালত আইন, পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, গ্রাম আদালত আইন, সালিস আইন, বিরোধ মীমাংসা (পৌর এলাকা) বোর্ড আইনসহ বিভিন্ন আইনে বিকল্প পদ্ধতিতে মামলা পূর্ব ও পরবর্তী বিরোধ নিষ্পত্তির বিধান রাখা হয়েছে। দেওয়ানি আইনের ৮৯ (ক) ধারায় মধ্যস্থতা, ৮৯ (খ) ধারায় সালিস ও ৮৯ (গ) ধারায় আপিলে মধ্যস্থতার বিধান রয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪৫ ধারা অনুযায়ী, ৬২টি লঘু অপরাধের ক্ষেত্রে আপস-মীমাংসার বিধান রয়েছে।
আইনবিদরা বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে মারামারি, খুনের মতো ফৌজদারি অপরাধের বড় কারণ ভূমির বিরোধ। আইন ও বিচারসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এডিআরের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি বিরোধ নিষ্পত্তির তাগিদ দেন ভূমির বিরোধের ক্ষেত্রে। এ ছাড়া অর্থঋণ আদালত মামলা এবং শ্রম আইনে মালিকপক্ষ ও শ্রমিকের বিরোধের ক্ষেত্রেও এডিআরের মাধ্যমে নিষ্পত্তির তাগিদ থাকলেও সুফল মিলছে কম।
আর্থিকভাবে অসচ্ছল ও বিচারপ্রাপ্তিতে অসমর্থ জনগণকে নিখরচায় আইনি সহায়তা দিতে ২০০০ সালে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন’ করে সরকার। এতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা রাখা হয়। ২০১৭ সালে দেওয়ানি কার্যবিধি সংশোধন করে এডিআরের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আইনের বিধান অনুযায়ী, এ পদ্ধতি বাস্তবায়নে আদালত নিজে মধ্যস্থতার উদ্যোগ নিতে পারে। পক্ষগণের আইনজীবী বা আইনজীবীর নিযুক্ত করা অন্য আইনজীবী, অবসরপ্রাপ্ত কোনো বিচারক, জেলা জজের তৈরি করা প্যানেল মধ্যস্থতার উদ্যোগ নিতে পারে। দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে যে বাদীর অভিযোগ ও বিবাদীর লিখিত জবাবের পর বিচারক শুনানি মুলতবি করে দুই পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির আহ্বান জানাবেন। এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। তবে, পক্ষগণের তা মানার ওপর বাধ্য বাধকতা নেই।
মধ্যস্থতায় (মেডিয়েশন) বিরোধ নিষ্পত্তি নিয়ে সচেতনতায় কাজ করে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল মেডিয়েশন সোসাইটি (বিমস)। সংস্থাটির চেয়ারম্যান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এসএন (সমরেন্দ্র নাথ) গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মেডিয়েশন নিয়ে কাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এখনো হয়নি। আনুষঙ্গিক প্রধান কারণ হচ্ছে ব্যাপক প্রচারণার ঘাটতি। আইনজীবীদের মধ্যে এ বিষয়ে আকুতি ও বিচারকদের মধ্যে আগ্রহ কম। তিনি বলেন, সমাধান হলো, আদালত ও আইনজীবীদের এগিয়ে আসতে হবে। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচার করতে হবে। মেডিয়েশন কার্যকর করা গেলে বিরোধ নিষ্পত্তিতে একটি আমূল পরিবর্তন আসবে।
এসএন গোস্বামী আরও বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টে একটি মেডিয়েশন সেন্টার হয়েছে। এটা একটা ভালো দিক। এখন জরুরিভাবে প্রয়োজন মেডিয়েশন-সম্পর্কিত একটি আইন।’
১৫ বছরে মাত্র ৮৬ হাজার বিরোধ নিষ্পত্তি : পক্ষগণের মধ্যে মামলা পূর্ব ও পরবর্তী কতসংখ্যক বিরোধ আলোচনা, মধ্যস্থতা ও সালিসের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয় এ-সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান আইন ও বিচারসংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে থাকে না। তবে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা তাদের নিজস্ব উদ্যোগের বিষয়টি নিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সংস্থার তথ্যমতে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মে মাস পর্যন্ত প্রায় ১৫ বছরে ৬৪ জেলার লিগ্যাল এইড অফিস এডিআরের জন্য ৯৪ হাজার ১৫২টি বিরোধ (মামলা পূর্ব ও পরবর্তী) গ্রহণ করে। এর মধ্যে এই সময়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামে শ্রমিক আইনগত সহায়তা সেল থেকে পাওয়া ৩ হাজার ২৯৩টি অভিযোগও রয়েছে। সব মিলিয়ে এই সময়ে মোট ৯৭ হাজার ৪৪৫টি অভিযোগ গ্রহণ করে লিগ্যাল এইড অফিসগুলো। এর মধ্যে এডিআরের মাধ্যমে ৮৬ হাজার ৫২৭টি বিরোধ নিষ্পত্তি হয়। এতে উপকারভোগী হয়েছেন ১ লাখ ৬১ হাজার ৩৯৬ জন। লাখ লাখ মামলা ও বিরোধের বিপরীতে এ পরিসংখ্যানকে হতাশাজনক বলছেন আইনবিদরা।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও আইন সাময়িকী ডিএলআরের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এডিআর নিয়ে অনেক কথা হয়। এটি অবশ্যই মামলাজট ও ফৌজদারি অপরাধ কমাতে একটি সহায়ক পদ্ধতি। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো এটি কাক্সিক্ষত পর্যায়ে যেতে পারেনি। মানুষের মামলার প্রতি আগ্রহ বেশি। অনেক দেশই হয়তো এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে সফল হয়েছে। আমাদের কেন হচ্ছে না, সেটি বিবেচনায় নিয়ে সেভাবেই কাজ করতে হবে।’
দেড় দশক ধরে তিনি টেবিল টেনিসের রাজা। বয়স পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই। অথচ এখনো তরুণদের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছেন সমানতালে। অসংখ্য তরুণের ভিড়ে পিংপং বলের রোমাঞ্চকর খেলাটিতে এখনো তার জয়রথ ছুটছে। অভিমানে ২০২১ সালে জাতীয় দল ছাড়লেও ফর্মের তুঙ্গে থাকায় খেলাটা ছাড়া হয়নি। তাই তো র্যাঙ্কিংয়ের দ্বিতীয় স্থান অনেক দিন ধরেই তার দখলে। বলছি একজন মানস চৌধুরীর কথা। চট্টগ্রাম থেকে উঠে এসে দেশের টিটি অঙ্গনে এ সময়ের সবচেয়ে আলোচিত তারকা। ভীষণ সোজাসাপ্টা মানসকে বাইরে রেখে এখনো টিটির কথা ভাবার সুযোগ নেই। সেই মানস অবশ্য এই একটা পরিচয়েই পরিচিত নন। অন্য অঙ্গনেও রয়েছে তার সফল বিচরণ; যা তাকে ক্রীড়াঙ্গনের মানুষের কাছে রেখেছে আলাদা করে। টিটি খেলোয়াড় হিসেবে শিখরছোঁয়া মানস একজন পেশাদার সংগীতশিল্পীও। যে জগতে তাকে মানুষ চেনে রঞ্জন চৌধুরী নামে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে তালিকাভুক্ত সংগীতশিল্পী হিসেবে অসংখ্য আধুনিক গানে একটা অবস্থান তৈরি করেছেন দুই দশকের বেশি সময় ধরে। প্লে-ব্যাক সিঙ্গার হিসেবেও সুনাম কুড়িয়েছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ টেলিভিশনে সংগীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এখন ওপার বাংলার জনপ্রিয় কণ্ঠ শিল্পীদের সঙ্গে গান করছেন বেছে বেছে।
মানুষের হৃদয়ের স্থান করে নিতে এই দুটি পরিচয়ই তো যথেষ্ট। তবে মানসের পরিচিতিপর্বটা এখানেই থামিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। খেলা আর গানের জগতে তার বিচরণ প্রাণের টানে। এর দুটির একটিও তার জীবিকা নয়। জীবিকা হিসেবে অসামান্য হিসেবে অসামান্য মেধাবী ছাত্র হিসেবে সুনাম কুড়ানো মেধাবী ছাত্র হিসেবে সুনাম কুড়ানো মানস বেছে নিয়েছেন চিকিৎসা পেশাকে। নিজ শহর চট্টগ্রামে দন্ত চিকিৎসক হিসেবে মানুষের হৃদয়ে গড়েছেন আস্থার জায়গা। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের কাছে তিনি একজন মানবিক ডাক্তার। অসংখ্য মানুষকে বিনা পয়সায় চিকিৎসাসেবা দিয়ে এই অঙ্গনেও মানসের স্থান সম্মানের আসনে। এত এত পরিচয়ের পরও তার আরেকটি বড় পরিচয়, তিনি প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী প্রয়াত প্রবাল চৌধুরীর ছোট ছেলে। বাবার পরিচয়ে গর্ব আছে। তবে মানস নিজ পরিচয়েই প্রতিষ্ঠিত। সেটা একজন সফল খেলোয়াড়, সংগীতশিল্পী ও মানবিক চিকিৎসক হিসেবে।
খেলাধুলা আর পেশাগত জগতে তিনি মানস চৌধুরী। সংগীত জগতে কেন রঞ্জন চৌধুরী? প্রশ্নটা শুনেই একটু হাসলেন। এ নিয়ে আর কথাটা এগোতে দিলেন না। হয়তো নামের এই রহস্যটা নিজের মধ্যেই রেখে দিতে চাইলেন। সব্যসাচীরা হয়তো একটু খেয়ালিই হন। মানসও তেমনি একজন। নির্ভীক, অকুতোভয়, ব্যক্তিত্বের প্রশ্নে এক রত্তি ছাড় না দেওয়া মানুষটির কাছে জানতে চেয়েছিলাম, এতগুলো পরিচয় একসঙ্গে কী করে বাঁচিয়ে রাখেন? এই প্রশ্নেই কথার ঝাঁপি খুলে বসলেন মানস, ‘আমার ছোটবেলা কেটেছে অনুশাসনে। মায়ের করা নির্দেশ ছিল বাসার বাইরে দূরে কোথাও একা একা যাওয়া চলবে না। কিশোরবেলায় বাড়ি থেকে বড়জোর পাশের অগ্রণী সংঘ ক্লাবে যাওয়ার অনুমতি ছিল। সেখানে অন্যান্য খেলার পাশাপাশি টিটির টেবিলও ছিল। সেখানেই টিটি খেলার শুরু। সেটা ১৯৮৬ সালে। সেখান থেকেই দুই বছর পর ঢাকায় জাতীয় শিশু প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হই। এরপর জেলাভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হই। টিটি খেলাটা ভালো পারতাম বলে বাসার একটু দূরে নবীন মেলা ক্লাবে যোগ দিলাম। সেখানে রূপম দত্ত ছিলেন আমার প্রথম কোচ। তিনিই আমাকে খেলা শিখিয়েছেন। সেখানে বেশ কজন ভালো খেলোয়াড় ছিলেন। তাদের সঙ্গে খেলতে খেলতে একটু পরিণত হয়ে ১৯৯০ সালে প্রথম জাতীয় জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে আসি ঢাকা। সেবার ১৪তম হয়েছিলাম। পরের বছর অবশ্য জুনিয়রে চ্যাম্পিয়ন হই। ১৯৯৩ সালেই সিনিয়রে খেলার সুযোগ পেয়ে যাই। তখন থেকেই সব সময় সেরা আটের মধ্যে থাকতাম। ২০০১ সালে রংপুরে সিনিয়র জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের এককের ফাইনালে হেরে যাওয়ার পর ২০০৬ সাল পর্যন্ত খেলা থেকে দূরে ছিলাম। সে সময়টায় লেখাপড়া আর পেশায় মনোযোগ দিই। ২০০৭ সালে ফের খেলা শুরু করি। ২০০৯ সালে প্রথম জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হই। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত টানা ১০টি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলে ৫টিতে জিতেছি। ফেডারেশন কাপের এককেও পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এ ছাড়া এক দশকে মহানগরী টিটি লিগে আমি যে কটি দলে খেলেছি, প্রতিটিই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এর বাইরে যতগুলো র্যাংকিং টুর্নামেন্ট হয়েছে, তার প্রায় সব কটিতেই আমি চ্যাম্পিয়ন। অথচ জানেন, এই খেলাটাকে কখনোই পেশা হিসেবে ভাবিনি।’
সেটা ভাবার সুযোগও যে তার ছিল না। তার সামনে যে আরও অনেক পথ ছিল খোলা। কেবল খেলায় নিজেকে আটকে রাখতে চাননি বলেই গানের জগতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন সেই শৈশবেই। বাড়িতে বাবার কারণেই পরিবেশটা ছিল সংগীতময়। বাবার কাছেই গানের হাতেখড়ি। সুবাদে বড় বড় সুরকার, সংগীত পরিচালকের সঙ্গে পরিচয়টাও ছোটবেলা থেকেই। যদিও পেশাদার গায়ক হয়ে ওঠার গল্পে বাবার পরিচয়টা মুখ্য হয়নি সংগীত জগতের রঞ্জন বললেন, ‘গানটা ছোটবেলা থেকেই গাইতাম। ১৯৯৭ সালে বিটিভি চট্টগ্রাম শাখার উদ্বোধন হওয়ার বছরেই অডিশন দিয়ে তালিকাভুক্ত গায়ক হয়ে যাই। দুই বছর পর ঢাকায় এসেও বিটিভিতে অডিশনে উতরে যাই। মনে আছে সেবার আমি অডিশনে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলাম। আর বাংলাদেশ বেতারেও তালিকাভুক্ত হই সে সময়। এখন তো বিশেষ গ্রেড তালিকায় আছি। আমার প্রথম একক অ্যালবাম বের হয় ২০০১ সালে। তার আগেই অবশ্য সিনেমায় প্লে-ব্যাক সিঙ্গার হিসেবে কণ্ঠ দিয়েছিলাম। বাদল খন্দকারের পরিচালনায় ‘বিশ্ব বাটপার’ সিনেমার সংগীত পরিচালক ছিলেন প্রখ্যাত আলাউদ্দিন আলী। উনি আমাকে নিজে পছন্দ করে গান করার সুযোগ দেন। সেই গল্পটা বলি, সোলো অ্যালবামের জন্য তখন আমি দুই-তিনটা গান রেকর্ড করেছিলাম। সেগুলো আমার পিসি প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী উমা খান তার বাসায় বাজিয়ে শুনছিলেন। একটি গানের রেকর্ডিংয়ের কাছে আলাউদ্দিন আলী পিসির বাসায় এসেছিলেন। এসে আমার গান শুনে জানতে চাইলেন, এটা কার কণ্ঠ? আমার কণ্ঠ তার এতই পছন্দ হয়েছিল, শুনেই বিশ্ব বাটপার সিনেমায় কণ্ঠ দেওয়ার জন্য নির্বাচিত করেন। যা-ই হোক, সে বছর প্রথম সোলো অ্যালবাম বের হয়। এখন পর্যন্ত চারটি একক অ্যালবাম, তিনটি ডুয়েট অ্যালবাম ও অসংখ্য মিক্স অ্যালবামে গান করেছি। ২০২১ সালে বিটিভির সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করছি। এ ছাড়া সে বছর থেকেই পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় শিল্পী শুভমিতা ব্যানার্জির সঙ্গে ভিডিও সং করছি। এখন পর্যন্ত তিনটি গান করেছি তার সঙ্গে; যা শ্রোতারা দারুণভাবে গ্রহণ করেছেন। এত দিন ধরে গাইছি। তবে আমার গান শেখা কিন্তু শেষ হয়নি। এখনো একজন প-িতের কাছে আধুনিক গানের তালিম নিচ্ছি।’
খেলা আর গানের জগতের এই মানুষটি পুরোদস্তুর চিকিৎসা পেশার সঙ্গে জড়িত ২০০১ সাল থেকে। ঢাকা সিটি ডেন্টাল কলেজ থেকে ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারিতে গ্র্যাজুয়েশন করে ব্যক্তিগতভাবে চর্চা শুরু করেন চট্টগ্রামে। প্রতিদিনই একটা বড় সময় কাটে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে। এর মধ্যেই বেশ কিছু কোর্সও করেছেন। জীবিকার তাগিদে চিকিৎসক পরিচয়টাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে জড়িয়ে পড়েছেন মানবকল্যাণে। তবে এ ক্ষেত্রে তিনি ঠিক তার বাবা প্রবাল চৌধুরীর মতো ভীষণ প্রচারবিমুখ। নিভৃতেই মানবসেবা করে যাচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনেক সুবিধাবঞ্চিত রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাই শুধু দেন না, প্রয়োজনে ওষুধ-পথ্যও কিনে দেন। তা ছাড়া তার চেম্বারে কর্মরতদের নিজের আয়ের একটা অংশ মাস শেষে দিয়ে দেন পারিশ্রমিক হিসেবে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের বন্যাদুর্গত অঞ্জলের বেশ কজন এইচএসসির পরীক্ষার্থীর পাশে দাঁড়িয়েছেন মানস।
এত কিছুর মধ্য দিয়ে একটা নেতৃত্ব গুণাবলিও তার মধ্যে বিকশিত হয়েছে। পাঁচ-ছয় বছর ধরে বাংলাদেশ টেবিল টেনিস খেলোয়াড় সমিতির সভাপতি হিসেবে খেলোয়াড়দের সঙ্গে ফেডারেশন কর্তাদের সব অন্যায়-অবিচারের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে যান মানস চৌধুরী। ক্রীড়াঙ্গন, সংগীতাঙ্গন, চিকিৎসা জগতের সব পঙ্কিলতা দূর করতে মানস চালিয়ে যাচ্ছেন একার লড়াই। আর এ কারণেই তিনি অনন্য।
তামিম ইকবাল দলে না থাকাতে যেন অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে! আবার বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অন্তর্ভুক্তিতেও অনেকের চোখ কপালে! দল ঘোষণার পর যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা এলেন সংবাদ সম্মেলনে, তখন আলোচনায় শুধু ছিলেন এই দুজনেই। তাদের এই বিরহ বেদনায় চাপা পড়ে যায় অনেক প্রশ্ন। লিটন দাসকে বাদ দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত কেন সহ-অধিনায়ক! বাড়তি কোনো ওপেনার ছাড়া কিংবা পাঁচ পেসারকে নিয়ে কেন দল গড়া?
প্রায় মিনিট পনেরোর সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে এসেছে একই প্রশ্ন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও ঘুরেফিরে বন্দী ছিলেন একই কথার বৃত্তে। প্রশ্নোত্তর শেষে বেরিয়ে যান তিন নির্বাচক। যেতে যেতে কথা হয় তাদেরই একজন হাবিবুল বাশারের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল চাপা পড়া সেইসব প্রশ্নের উত্তর।
শুরুতেই জানতে চাওয়া হয় লিটনকে বাদ দিয়ে শান্তকে কেন সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ একটা কারণ। আর লিটনের অনাগ্রহও তাকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর একটি কারণ। লিটন নিজেও চায় না নেতৃত্বের চাপ নিতে। সে একটু ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চায়।’
বিশ্বকাপ দলে বিকল্প ওপেনার না থাকার কারণও জানা গেল এই নির্বাচকের কথায়। তিনি জানালেন, ‘আমরা ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে মিরাজকে ভাবছি।’
বিকল্প ওপেনার হিসেবে বিশেষজ্ঞ কাউকে না নেওয়ায় একজন বাড়তি বোলার দলে রাখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে শেখ মেহেদি হাসান সুযোগ পেয়েছেন সে কারণে। পাশাপাশি জায়গা হয়েছে পাঁচ পেসারেরও। এর পেছনে বাশার ভারতের কন্ডিশনের কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারতে এখন আর্লি সিজন। উইকেট সতেজ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই পাঁচজন পেসার দরকার হবে।’
যেতে যেতে আরও বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মুখোমুখি হলেন, এই দলটা বিশ্বকাপে কেমন করবে? এই প্রশ্নটা শুনেই ঘুরে দাঁড়ালেন হাবিবুল। উত্তরে মজা করে বললেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হবে এই দল।’ এরপর একটু গাম্ভীর্য ফিরিয়ে এনে যোগ করলেন, ‘আমি এদের অনেক দিন ধরে দেখছি। ওরা কয়টা ম্যাচ জিতবে জানি না। তবে বিশ্বকাপে প্রতিটি দলকে ভোগাবে, এটা জানি।’
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনে রদবদলের সুযোগ নেই সরকারের। তাই এর আগেই নির্বাচনী প্রশাসনে ধাপে ধাপে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রশাসনে চলছে পদোন্নতি ও রদবদল। ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রশাসন সাজাতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে বদলি-পদায়ন হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে বড় পদোন্নতি হয়েছে। নির্বাচনের আগে অবসরে যাওয়া কয়েকজন সচিবেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২০ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৮ জন ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিসিএসের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৫ সালে, ২৫তম ব্যাচ ২০০৬ সালে এবং ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৮ সালে।
জানা যায়, নির্বাচনের সময় ডিসিরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকেন। তাদের যে কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে বাতিলের ক্ষমতাও থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও থাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা ডিসির অধীনে। নির্বাচনের সময় সমন্বয়কারীর ভূমিকায়ও থাকেন ডিসিরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন তাদের দুটি ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে। আর সে সময় বিসিএস নিয়ে বেশ বিতর্ক ছিল। বিসিএসে ছিল নানা ধরনের তদবির। ২৪ ও ২৫তম ব্যাচ দুটি বিএনপির সময়ে নিয়োগ পেলেও ২৭তম ব্যাচ নিয়োগ পেয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। কারণ বিএনপির শেষ সময়ে ২৭তম ব্যাচের নিয়োগে বড় ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকায় তা বাতিল হয়। পরে ফের পরীক্ষা নিয়ে ২০০৮ সালে এ ব্যাচের নিয়োগ দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল ২৪তম ব্যাচের নিয়োগ নিয়ে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২৪তম ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডিসির পদ থেকে তুলে আনা হতে পারে। নির্বাচনের সময় যারা ডিসির দায়িত্বে থাকবেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তাদের সবার ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে পরিবার ও নিকট আত্মীয়স্বজনদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো যাচাই করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে আর ডিসির পদে রাখা হবে না।
এ ছাড়া নির্বাচনে অন্যতম ভূমিকা পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। বর্তমানে ৩৩, ৩৪ ও ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা রয়েছেন ইউএনও পদে, যারা আসন্ন নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এখন ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ইউএনওর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে; এ ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারের ২৯১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
জানতে চাইলে সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ইকরাম আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষা হয় যোগ্যতা, মেধা ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে। সেখানে ছাত্রজীবনে কে কোন পার্টি করেছিলেন, কোন দল ক্ষমতায় আছে তা বিবেচনা করা হয় না। বিসিএস কর্মকর্তাদের যে ফাউন্ডেশন ট্রেনিং হয়, তাতে তাকে একজন অফিসার হিসেবেই গড়ে তোলা হয়। এরপর এসিআর, সুপিরিয়রের মতামত, সুনাম, দক্ষতা, যোগ্যতার ভিত্তিতেই একজন কর্মকর্তাকে উচ্চতর পদে দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তবে সরকার যে দল পরিচালনা করে তাদের কিছু নীতিমালা ও উদ্দেশ্য থাকে। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সরকারের নেওয়া বৈধ ও জনকল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা। তিনি প্রলুব্ধ হবেন না, নিরপেক্ষ থেকে তার দায়িত্ব পালন করবেন। যদি কোনো নির্বাচনী দায়িত্বও দেওয়া হয়, সেটাও নিরপেক্ষভাবে তিনি পালন করবেন।’
গত মে মাসে অতিরিক্ত সচিব পদে ১১৪ জনের পদোন্নতি হয়। জুলাই মাসে পাঁচ বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসেই বদলি ও নতুন মিলিয়ে ৩০টি জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উপসচিব পদমর্যাদার এই ডিসি পদে এবারও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আটজন পিএসকে পদায়ন দেওয়া হয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ২২১ কর্মকর্তা। এ পদোন্নতিতে মূল বিবেচনায় এসেছে ২২তম ব্যাচ। বর্তমানে যুগ্ম সচিবের স্থায়ী পদ ৫০২টি। এর বিপরীতে পদোন্নতি পাওয়ার পর যুগ্ম সচিবের সংখ্যা হলো ৯৪৬ জন। এর আগে সর্বশেষ গত বছর ২ নভেম্বর ১৭৫ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। আর গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২৭০ জন সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই অন্তত ১০ জন সচিবের স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার কথা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন আগামী ১৩ অক্টোবর অবসরে যেতে পারেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান ১৪ সেপ্টেম্বর, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আবদুস সালামের ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে আবদুস সালামের চাকরি এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ৯ অক্টোবর, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক ৩০ অক্টোবর, ইআরডি সচিব শরিফা খান ২৪ নভেম্বর, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহসানে এলাহী ২৫ নভেম্বর এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল হোসেন ২৯ নভেম্বর অবসরে যাবেন। ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম এবং ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম। এ ১০ জনের মধ্যে কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন।
গত কয়েক বছরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মুখ্য সচিব পদে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই স্বাভাবিক অবসরের মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। সর্বশেষ সাবেক চার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মধ্যে একমাত্র কবির বিন আনোয়ার ছাড়া বাকি তিনজনই স্বাভাবিক মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। তারা হলেন মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, মোহাম্মদ শফিউল আলম ও খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।