
রাজধানীর উত্তরার আবদুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ডে নেমে হাতের ডানে বেড়িবাঁধ রোড। সেই রোড ধরে সামনে এগোলেই ফায়েদাবাদ চুয়ারিটেক এলাকা। সেই এলাকার ১৯৫ নম্বর বাড়িতে একটি একান্নবর্তী পরিবারের বাস। এই পরিবারের সদস্য সংখ্যা ২৭ জন। দুই মাসে তাদের মধ্যে ১৭ জনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ছিলেন পরিবারের বৃদ্ধ মা ও আট শিশু-কিশোরও। আক্রান্ত হয়েছেন পরিবারের ভাই ও তাদের স্ত্রীরা। বেঁচে থাকতে গত দুই মাসে ডেঙ্গুর সঙ্গে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়েছে এই পরিবারকে। চিকিৎসায় ব্যয় হয়েছে ৮ লাখ টাকা।
এই পরিবারের ডেঙ্গুর সঙ্গে যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। সবাই সেরে উঠলেও ডেঙ্গু-পরবর্তী জটিলতা এখনো রয়ে গেছে আক্রান্তদের কারও কারও মধ্যে। আক্রান্ত সদস্যদের পুরোপুরি সুস্থ করে তুলতে এখন চলছে ডেঙ্গু-পরবর্তী যুদ্ধ।
পরিস্থিতি বর্ণনা করে এই পরিবারের সেজো ছেলে সারোয়ার হোসেন খান নাহিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, শেষ দুই মাস আমাদের পরিবার রীতিমতো ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। মা অসুস্থ। তার বাচ্চা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। সেই বাচ্চাও অসুস্থ। মাকে কে সেবা করবে, বাচ্চাকে কে সেবা করবে। এমন একটা দুর্বিষহ সময় গেছে আমাদের।
বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উত্তরা ক্লাব ও ধানমন্ডি শেখ জামাল ক্লাবের সাবেক সেক্রেটারি সারোয়ার হোসেন নাহিদ নিজেও আক্রান্ত হয়েছিলেন ডেঙ্গুতে। সে সময়কার পরিস্থিতি সামলানোর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, একান্নবর্তী পরিবার হওয়ার কারণে সবাই মিলে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পেরেছি। কিন্তু খুব দুর্ভোগ গেছে আমাদের ওপর দিয়ে। মা যখন আক্রান্ত হলেন, তখন ভাইয়েরা গিয়ে সেবা করেছি। এক ভাই অসুস্থ হলে আরেক ভাই সেবা করেছে। ছোট ভাইয়ের বউ অসুস্থ হলো। তখন বোন গিয়ে সেবা করেছে। এভাবে সবাই মিলে-মিশে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি।
দুই মাসে আক্রান্ত ১৭ জন : গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে এই পরিবারে প্রথম ডেঙ্গু দেখা দেয়। প্রথম আক্রান্ত হন পরিবারের বড় মেয়ে ৫১ বছর বয়সী নাজমুন নাহার শিল্পী। এর দুদিন পর আক্রান্ত হন ৭২ বছর বয়সী পরিবারের বৃদ্ধ মা। এরপর একে একে আক্রান্ত হন পরিবারের সেজো ছেলে, তার স্ত্রী ও বাচ্চা, ছোট ছেলের স্ত্রী ও বাচ্চা, বড় মেয়ে ও বড় ভাইয়ের ছেলেমেয়েরা মিলে ১৭ জন। সর্বশেষ আক্রান্ত হয়েছিল পরিবারের ছোট ছেলের ছোট বাচ্চা ইরতেশাম। গত ১০ দিন আগে শিশুটি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।
আক্রান্তদের ১৭ জনের মধ্যে আটজনই ছিল শিশু। এর মধ্যে ছোট ছেলের তিন বাচ্চা, সেজো ছেলের এক বাচ্চা, আরেক ছেলের এক মেয়ে ও বড় ছেলের তিন সন্তান রয়েছে। এসব শিশুর বয়স সর্বনিম্ন সাড়ে চার বছর থেকে সর্বোচ্চ ২০ বছর।
এই দীর্ঘ দুই মাস ডেঙ্গুর সঙ্গে যুদ্ধে রাতের পর রাত নির্ঘুম কেটেছে পরিবারের অন্য সদস্যদের। আক্রান্তদের কারও কারও জটিলতা রীতিমতো ভয় পাইয়ে দিয়েছিল অন্যদের। সেই পরিস্থিতি তুলে ধরে সেজো ছেলে বললেন, সবচেয়ে জটিল অবস্থা ছিল আমার স্ত্রী, মা, বড় বোন ও ছোট ভাইয়ের ছেলের। তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসক বলেছিল, প্লাটিলেট লাগবে। আম্মার প্লাটিলেট নেমে এসেছিল ২৯ হাজারে। চিকিৎসকদের পরামর্শে তার জন্য রক্ত তৈরি করে রেখেছিলাম। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমত পরদিনই আম্মার প্লাটিলেট বেড়ে যায়। তখন আর প্লাটিলেট লাগেনি। আমাদের একজনেরও প্লাটিলেট লাগেনি।
চিকিৎসায় ব্যয় আট লাখ টাকা : ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যয় সংকুলান করতে গিয়েও হিমশিম খেতে হয়েছে এই পরিবারকে। সবমিলে ১৭ জনের চিকিৎসায় ব্যয় হয়েছে আট লাখ টাকার বেশি। এ ব্যাপারে সারোয়ার হোসেন খান নাহিদ বলেন, এই দুই মাস চিকিৎসা ব্যয় পরিবারের সবাই মিলেই দিয়েছি। শুধু হাসপাতালের বিলই দিতে হয়েছে সাত লাখ টাকার মতো। এর বাইরে ওষুধ, রোগীর পথ্য ও রোগীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যারা থেকেছেন, তাদের খাওয়া-দাওয়ায় একটা মোটা অঙ্কের টাকা গেছে। একটা ডাবের দাম ২০০ টাকা। একজন রোগী যদি ছয় দিন হাসপাতালে থাকে ও প্রতিদিন তাকে ছয়টা করে ডাব খাওয়ানো লাগে, তাতে খরচ পড়ে দৈনিক ১২০০ টাকা। সে হিসেবে ছয় দিন একজন রোগীর পেছনে শুধু ডাব কিনতেই গেছে সাত-আট হাজার টাকা। এর বাইরে আনার, মাল্টা, অন্যান্য খাবারও ছিল। সবমিলে ১৭ জনের চিকিৎসায় আট লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়েছে।
কীভাবে আক্রান্ত হলেন তারা : এক পরিবারের এতজন মানুষ কীভাবে আক্রান্ত হলেন জানতে চাইলে সেজো ছেলে বলেন, আমাদের বাড়িটা পরিষ্কার। উত্তরের মেয়র লোক পাঠিয়েছিলেন। তারা দেখে গেছেন। বলেছেন, এখানে ডেঙ্গু হওয়ার কোনো কারণই দেখি না। কিন্তু অন্যের পাপের বোঝা আমরা বহন করছি। আশপাশে যারা আছে তারা সচেতন না। প্রধান সড়ক থেকে নেমে এলাকার প্রবেশ মুখেই প্রচুর নোংরা আবর্জনার স্তূপ। তাতে পানি জমে থাকে। এসব ময়লা ফেলার অন্য কোনো জায়গাও নেই। ১০-১৫ দিন পরপর সিটি করপোরেশনের গাড়ি ময়লা নিয়ে যায়। কিন্তু গাড়ি দিয়ে ময়লা নিয়ে যাওয়ার সময় তিন ভাগের এক ভাগ ময়লা নিয়ে যায়, বাকি দুভাগ ময়লা পড়েই থাকে। এসব কারণেই এ এলাকায় ডেঙ্গু বেশি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এই এলাকায় অনেক ডেঙ্গু রোগী। এর আরেকটা কারণ হচ্ছে এলাকা বেশ ঘিঞ্জি, অনেক ঘনবসতি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব তো আছেই। লোকজনও অসচেতন। এ কারণেই আশপাশের থেকেই আমরা আক্রান্ত হয়েছি।
এখন ডেঙ্গু-পরবর্তী জটিলতা : ডেঙ্গু থেকে সেরে ওঠার পর এখন ডেঙ্গু-পরবর্তী জটিলতা পোহাতে হচ্ছে আক্রান্ত অনেককে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডেঙ্গু সেরে যাওয়ার পরও অনেকের জটিলতা দেখা দিয়েছে। অনেকেই দুর্বল, অনেকের কাশি আছে। বড় মেয়ের প্রচুর কাশি হচ্ছে। মা দুর্বল। কলেজে ভর্তির অপেক্ষায় থাকা সানজিদার শারীরিক অবস্থাও দুর্বল। বাচ্চাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। সে কারণেই ওদের অসুবিধা কম হয়েছে। রোগ সেরে যাওয়ার পরও জটিলতা সারাতে এখন নতুন করে চিকিৎসা করতে হচ্ছে ওই পরিবারের সদস্যদের।
এই এলাকায় ডেঙ্গু রোগী বেশি : এই পরিবারের সবাই চিকিৎসা নিয়েছেন স্থানীয় আইচি হাসপাতালে। সেই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রতিষ্ঠাতা ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, উত্তরায় ডেঙ্গু রোগী বেশি। বিশেষ করে উত্তরখান ও দক্ষিণখানে প্রচুর রোগী। এই হাসপাতালে দৈনিক ১২৫-১৩০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি থাকে। এখন পর্যন্ত মাত্র একজন মারা গেছেন। তার বয়স ৮২ বছর। তিনি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ছিলেন। এ বছর এখন পর্যন্ত প্রায় সাত হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছে।
এই চিকিৎসক জানান, সম্প্রতি এখানকার রোগীরা বেশি জটিল হয়ে হাসপাতালে আসছে। অনেকেই বাসায় চিকিৎসা করতে গিয়ে প্লাটিলেট যখন একদম কমে যায় ২০-২৫ হাজারে নেমে আসে, তখন আসে। তাতে রোগীর জটিলতা বাড়ছে। তবে সেরেও উঠছে।
এই এলাকায় ডেঙ্গু রোগী বেশি বলে জানান এই চিকিৎসক। তিনি বলেন, এখানে ঘনবসতি। রোগীরা জানিয়েছে, উত্তরখান ও দক্ষিণখানের ড্রেনগুলোতে প্রচুর মশা। ড্রেনগুলো খোলা। প্রচুর বাড়িতে কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছে। যার ফলে জলাবদ্ধতা বেশি। পানি জমে থাকে। সরকারিভাবে এসব পরিষ্কার করার কোনো উদ্যোগ নেই।
বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে নতুন কৌশলগত অগ্রযাত্রা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে আমার ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফ্রান্স সরকার বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার সুরক্ষায় সরকারের কর্মকান্ডে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।
চলমান ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও ফ্রান্স বাংলাদেশের নীতি প্রণয়নের সার্বভৌমত্বকে সম্মান ও সমর্থন জানিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
গতকাল সোমবার ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার বক্তব্যের সময় ফরাসি প্রেসিডেন্ট তার প্রতি সমর্থন জানান।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ইমানুয়েল মাখোঁ এবং শেখ হাসিনার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় এবং একান্ত বৈঠক হয়। ঢাকা ও প্যারিস বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট ও বাংলাদেশের নগর অবকাঠামো উন্নয়ন বিষয়ে দুটি চুক্তি সই করে।
দুই নেতার বৈঠকের পর ‘বাংলাদেশ-ফ্রান্স যৌথ বিবৃতি : শান্তি, সমৃদ্ধি ও মানুষের জন্য অংশীদার’ ঘোষণা করা হয়। এতে বলা হয়, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার জন্য কৌশলগত অংশীদার প্রয়োজন বাংলাদেশের এবং সেই লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে আগ্রহী ফ্রান্স। অন্যদিকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব-বলয় বাড়ানোর অংশ হিসেবে নতুন অংশীদার প্রয়োজন প্যারিসের, তাই অন্য আরও অনেক দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও বেছে নিয়েছে ফ্রান্স। এ কারণে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত খাতে সহযোগিতা বাড়াতে রাজি দুই দেশ। শান্তি, সমৃদ্ধি ও জনগণের জন্য উভয় দেশের অংশীদারত্বকে কৌশলগত স্তরে নেওয়ার জন্য দুই দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব কাজ করবে বলে সম্মত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ইমানুয়েল মাখেঁাঁ।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ফরাসি প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সফররত ফ্রান্স প্রতিনিধিদলের সদস্যদের শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে পাঁচ দশকের বেশি সময়ের সম্পর্কে আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সূচনা করেছিলেন আজ তা নতুন মাত্রায় উন্নীত হয়েছে। অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে প্রেসিডেন্ট মাখোঁর সঙ্গে আমার সার্বিক বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। চলমান ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে ফ্রান্স বাংলাদেশের নীতি প্রণয়নের সার্বভৌমত্বকে সম্মান ও সমর্থন জানিয়েছে। বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের এ নতুন কৌশলগত অগ্রযাত্রা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমরা উভয়ই আশাবাদী।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেড় দশক ধরে বাংলাদেশে চলমান সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা, উন্নয়ন ও সুশাসন এ নতুন সম্পর্কের মূল ভিত্তি। ফ্রান্স সরকার বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার সুরক্ষায় সরকারের কর্মকান্ডে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির অভাবনীয় ও ধারাবাহিক অগ্রযাত্রায় ফ্রান্স সরকারের আস্থার কথা দৃঢ়তার সঙ্গে উদ্ধৃত হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সুবিধা অব্যাহত রাখার মাধ্যমে রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। এজন্য আমি প্রেসিডেন্ট মাখোঁর নেতৃত্বাধীন ফ্রান্স সরকারকে ও ফ্রান্সের জনগণকে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট মাখোঁর এ সফরে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমরা কিছু সমঝোতায় উপনীত হতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশের বিশস্ত উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে ফ্রান্স আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের কৌশলগত সুরক্ষা অবকাঠামো বিনির্মাণে উন্নত ও বিশেষায়িত কারিগরি সহায়তা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভূরাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স নেতৃস্থানীয় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় ফ্রান্সের অগ্রণী ভূমিকাকে আমরা স্বাগত জানাই। এ লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট মাখোঁর নেতৃত্বে একটি টেকসই তহবিল গঠনে ফ্রান্সের আহ্বানকে আমরা সাধুবাদ জানিয়েছি। ফ্রান্সের সঙ্গে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ভাষা বিনিময়ের বিষয়েও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।’
ঢাকা-প্যারিস দুই চুক্তি স্বাক্ষর : দুটি চুক্তির একটি হলো ‘ইমপ্রুভিং আরবান গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রোগ্রাম’ বিষয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও ফ্রান্সের ফ্রান্স ডেভেলপমেন্ট সংস্থার (এএফডি) মধ্যে ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি অ্যাগ্রিমেন্ট এবং আরেকটি হলো বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) ও বঙ্গবন্ধু-২ আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম সম্পর্কিত ফ্রান্সের এয়ারবাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস এসএএসের মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) চুক্তি।
ইআরডি সচিব শরিফা খান ও এজেন্স ফ্রান্সেইস দো ডেভেলপমেন্টের (এএফডি) কান্ট্রি ডিরেক্টর বোনুই শসেত নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রথম চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। দ্বিতীয় চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বিএসসিএল চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ ও স্পেস সিস্টেম, এয়ারবাসের সেলস ও মার্কেটিং বিভাগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট স্টিফেন ভেসভাল।
আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থার এক প্রতিবেদনের খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশে সফররত ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ সোমবার বলেছেন, ফরাসি উড়োজাহাজ নির্মাণ সংস্থার তৈরি নতুন ১০টি এয়ারবাস কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ঢাকা। বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক শেষে বিবৃতিতে মাখোঁ বলেছেন, “ইউরোপীয় মহাকাশ শিল্পে আস্থা রাখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। ‘এ ৩৫০’ মডেলের ১০টি এয়ারবাসের জন্য প্রতিশ্রুতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
ফরাসি কর্মকর্তারা জানান, ‘এ ৩৫০’ মডেলের সুপরিসর উড়োজাহাজের জন্য চুক্তি চূড়ান্ত হচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেডের সঙ্গে। এয়ারবাস কিনতে আগ্রহী বাংলাদেশ সরকার।
অংশীদার হিসেবে পরস্পরকে পাশে চায় ঢাকা-প্যারিস : যৌথ বিবৃতিতে রাজনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ়করণ, ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সহায়তা, সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনে সহায়তা, ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিভিন্ন বিষয়ে দুপক্ষের সহযোগিতা ও অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশকে ২০ কোটি ডলার সহায়তা এবং এয়ারবাস কোম্পানি থেকে একটি স্যাটেলাইট ক্রয়সংক্রান্ত দুটি চুক্তি হয়েছে। এয়ারবাস থেকে ১০টি বিমান ক্রয়ের বিষয়ে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিরও উল্লেখ আছে বিবৃতিতে।
পাঁচ পাতার যৌথ বিবৃতিতে তিন বড় ক্ষেত্রে দুই দেশের অংশীদারত্বের বিভিন্ন বিষয়গুলো বলা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ক্ষেত্র হচ্ছে সহনশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য অংশীদারত্ব, দ্বিতীয় হচ্ছে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া, শান্তি ও নিরাপত্তার অংশীদারত্ব এবং তৃতীয় ক্ষেত্র হচ্ছে মানুষে-মানুষে যোগাযোগে অংশীদারত্ব।
জলবায়ু পরিবর্তন : জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। উন্নত বিশ্বের ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সহায়তা করবে ফ্রান্স।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন তহবিল থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলো যেন দ্রুত অর্থ পায়, সেটির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা উচিত বলে মনে করে ঢাকা ও প্যারিস।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা : দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধিতে উভয় দেশ সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশের অবকাঠামো, বিশেষ করে রেলওয়েতে সম্ভাব্য বিনিয়োগ খুঁজে বের করার বিষয়ে একমত হয়েছে দুই দেশ। আগামী ২৩ থেকে ২৫ অক্টোবর ফ্রান্সের প্যারিস ও তুলোতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনেরও সাফল্য কামনা করা হয়েছে বিবৃতিতে।
ইউক্রেন যুদ্ধ : আন্তর্জাতিক আইন বিশেষ করে জাতিসংঘ চার্টার লঙ্ঘন হচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধে, এ অভিমত প্রকাশ করেছে উভয় দেশ। যুদ্ধের পরিণতির কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ওইসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উভয় দেশ তৈরি।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে আফ্রিকায় শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশে ভূমিকার প্রশংসা করেছে ফ্রান্স এবং শান্তিরক্ষা মিশনে সহায়তা করার বিষয়ে উভয় দেশ রাজি হয়েছে।
বিভিন্ন দেশে বেআইনিভাবে সামরিক সরকারের ক্ষমতা দখলকে নিন্দা জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। পাশাপাশি সংঘাত, সহিংসতা ও নৃশংসতার জন্য বাস্তুচ্যুতদের নিরবচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে গাম্বিয়া বনাম মিয়ানমার মামলায় এখন থেকে সরাসরি কাজ করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফ্রান্স।
সামরিক সহযোগিতা : ২০২১ সালে দুই দেশ সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য একটি লেটার অব ইনটেন্ট সই করেছিল। ওই সমঝোতার আলোকে বাংলাদেশের নৌ, বিমান ও টেরেস্ট্রিয়াল সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সহযোগিতা বাড়াতে চায় ফ্রান্স। এ ছাড়া অপ্রথাগত নিরাপত্তা ঝুঁকি, যেমনÑ সমুদ্র নিরাপত্তা ও অন্যান্য বিষয়েও দুই দেশের সহযোগিতার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
ঢাকায় দুটি মহানগর ও মহানগরের বাইরে সংসদীয় আসন ২০টি। তিনটি বাদে বাকি ১৭টি আসনেই সংসদ সদস্য (এমপি) আওয়ামী লীগের। এই ১৭ এমপির মধ্যে দুই-তিনজন বাদে বাকি সবাই দলীয় সভা-সমাবেশ কর্মসূচিতে অনিয়মিত। চার-পাঁচজন আছেন, যাদের মহানগর আওয়ামী লীগের দুটি অংশের কোনোটিতেই দেখা যায় না।
ঢাকা মহানগর দুটি অংশের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে কম উপস্থিতি নিয়ে একাধিক কারণ উঠে এসেছে। ঢাকার দুই মহানগরের নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব-কোন্দল, থানা, ওয়ার্ড নেতাদের ভেতরে ব্যক্তি লীগের কোন্দল রয়েছে। একটি অংশ মনে করে, সভা-সমাবেশে সময় দিলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আরেক অংশ ব্যস্ত তদবির-বাণিজ্য নিয়ে। অনেকেই মনে করেন, মাঠে থেকে লাভ হয় না, ত্যাগের ফলাফল ছিনিয়ে নেওয়া হয়। সরকারের শেষ সময় সভা-সমাবেশে না গিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ করলে শেষ সময় যদি কিছু করা যায়। তবে অনুপস্থিত না থাকার কারণ হিসেবে কেউ কেউ বলেছেন, মঞ্চে ঠাঁই পান না, বক্তব্য রাখতে পারেন না। এ কারণে কর্মসূচিতেও যান না।
ঢাকা-২ আসনের এমপি কামরুল ইসলাম নিয়মিত কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকলেও ঢাকা-১০ আসনের এমপি শফিউল ইসলাম মহীউদ্দিনকে ঢাকার কোনো কর্মসূচিতেই দেখেননি মাঠে-ঘাটে থাকা নেতাকর্মীরা। এ প্রসঙ্গে শফিউল ইসলাম মহীউদ্দিন বলেন, এমপি আর সংগঠন দুটি আলাদা।
মাঠের বিরোধী দল বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে নিয়মিতই শান্তি সমাবেশ কর্মসূচি পালন করছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিণ। এর একটি কর্মসূচিতেও উপস্থিত থাকতে দেখা যায়নি ঢাকা-৯ আসনের এমপি সাবের হোসেন চৌধুরীকে। এ প্রসঙ্গে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া ঢাকা-৫ আসনের কাজী মনিরুল ইসলাম মনু উপনির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন। তবে দলের কোনো কর্মসূচিতে তার দেখা মেলে না।
ঢাকা-৭ আসনের এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিম অসুস্থ। গত জুলাই মাসে বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে একটি শান্তি সমাবেশে তার উপস্থিতি দেখতে পেয়েছেন মাঠের কর্মীরা। এ ছাড়া ঢাকা-১১ আসনের এ কে এম রহমতুল্লাহ, ঢাকা-১৮ আসনের হাবিব হাসান, ১৩ আসনের সাদেক খান ও ১৬ আসনের ইলিয়াছ উদ্দীন মোল্লাকে কমবেশি কর্মসূচিতে উপস্থিত দেখা গেলেও ১৪ আসনের আগা খান মিন্টু, ১৫ আসনের কামাল আহমেদ মজুমদার, ১৭ আসনের (সদ্য নির্বাচিত) মোহাম্মদ এ আরাফাত, ১৯ আসনের ডা. এনামুর রহমানকে শান্তি-সমাবেশ কর্মসূচিতে দেখতে পাননি কর্মীরা। তবে দু-একটি কর্মসূচিতে ঢাকা-২০ আসনের এমপি বেনজির আহমেদকে দেখা গেছে।
সভা-সমাবেশে এমপিদের উপস্থিতি না দেখে সাধারণ নেতাকর্মীরা উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, মাঠে ঘাম-শ্রম না দিয়ে এমপি হয়ে যাওয়ার ফলে মাঠে আসেন না এমপি মশাইরা। বঞ্চিত একটি অংশও সভা-সমাবেশে আসতে কষ্ট পায়। কারণ, ঘাম-শ্রম ও অত্যাচার-নির্যাতন এবং ত্যাগ করতে হয় মাঠে থাকা নেতাদেরই। এমপি হিসেবে দলের টিকিট পেয়ে যান অপরিচিতরা।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের এক সহসভাপতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগের মাঠ দখলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ঢাকার সংসদ সদস্যই থাকেন না। আমাদের দলে এমন এমপিও রয়েছেন যাকে ওই এলাকার মানুষও চেনে না। নগরনেতা আরও বলেন, নিজের এমপিকে মিছিলে-মিটিংয়ে, সভা-সমাবেশে এক কাতারে দেখা গেলে কর্মীদের মনোবল বেড়ে যায়। না দেখলে মনোবল দুর্বল হয়, সেটাও এমপিদের বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
সর্বশেষ গত শনিবার ঢাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তি-সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে ক্ষমতাসীনরা। সেখানে ঢাকার এমপি কামরুল ইসলাম ছাড়া কোনো এমপির উপস্থিতি রাজপথের নেতাকর্মীদের চোখে পড়েনি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রত্যেক কর্মসূচিতে এমপিদের উপস্থিত থাকতে মোবাইল করা হয়। বার্তাও পাঠানো হয়। কিন্তু উপস্থিত না থাকলে আমরা কী করতে পারি?’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শফিউল ইসলাম মহীউদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এমপিরা থাকেন না এ অভিযোগ ঢালাওভাবে করা ঠিক হবে না। সব প্রোগ্রামে থাকা সম্ভবও নয়। কেউ অসুস্থ থাকতে পারে, বিদেশে থাকতে পারে, এগুলোও দেখতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘এমপি আর সংগঠন দুটি আলাদা জিনিস।’ সর্বশেষ কোন কর্মসূচিতে আপনার উপস্থিতি ছিল জানতে চাইলে ঢাকা-১০ আসনের এই এমপি বলেন, ‘হাজারীবাগের প্রোগ্রামে আমি ছিলাম।’ কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকা নিয়ে ঢাকা-১৪ আসনের এমপি আগা খান মিন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি প্রশ্ন শুনে সংসদে আছেন জানিয়ে ফোন কেটে দেন।
ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য সাদেক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি সব কর্মসূচিতেই থাকি। যারা থাকেন না তাদের এ প্রশ্ন করুন।’ অন্য এমপিরা কেন থাকেন না এ প্রশ্নে সাদেক খান বলেন, ‘কারও কারও ভেতরে রাগ-ক্ষোভ থাকতে পারে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক এমপি দেশ রূপান্তরকে বলেন, কর্মসূচিতে গেলে মঞ্চে জায়গা পান না, ধাক্কাধাক্কি করতে হয়। বক্তব্যও দেওয়ার সুযোগ মেলে না। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এসএ মান্নান কচি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কর্মসূচিতে কে মঞ্চে থাকবেন, কে বক্তব্য রাখবেন এসবই কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত। কেন্দ্র থেকেই জানিয়ে দেওয়া হয় আমাদের।’ তিনি বলেন, ‘সব এমপিকে কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করা হয়।’
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিণ একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলায় মনোনয়নপ্রত্যাশী ও থানা-ওয়ার্ডের নেতারা কর্মী নিয়ে আসতে না পারলে শান্তি সমাবেশে উপস্থিতি ঘটানো বেশ কষ্টকর হয়ে পড়ত। দুই মহানগরের দায়িত্বশীল নেতারা আরও বলেন, কিছু শান্তি সমাবেশে সেই অর্থে কর্মী জড়ো করতে পারিনি আমরা। কর্মসূচি ঘিরে এমপিরা আরও গুরুত্ব দিলে সরকারবিরোধী আন্দোলন আরও জোরদার করা, শানিত করা সম্ভব।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের (উত্তর-দক্ষিণ) দুজন সহসভাপতি ও একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তিনজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবিলা করতে মাঠের কর্মসূচিতে বেশিরভাগ এমপিই উপস্থিত থাকেন না। এমপিদের অনুপস্থিতি তাদের অনুসারীদের ভেতরেও প্রভাব পড়ে। সভা-সমাবেশে আসতে হবে এমন বোধ এমপিদের ভেতরে দেখা যায় না। শান্তি সমাবেশে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকে নেতাকর্মী না এলে কর্মসূচিতে লোক জমায়েত করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। শান্তি সমাবেশে কিছু লোকের উপস্থিতি ঘটে মূলত থানা-ওয়ার্ডের নেতারা সক্রিয় থাকেন বলে। এ নেতারা বলেন, নির্বাচন পর্যন্ত কর্মসূচিতে সব এমপিকে থাকতে হবে কেন্দ্র থেকে বাধ্যতামূলক করা না হলে সমাবেশে উপস্থিতি আরও কমতে থাকবে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনীতির মাঠ দখলে নিতে মরিয়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে বিএনপি চায় সারা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে ও মাঠ নিয়ন্ত্রণ করতে। ঢাকার মাঠও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায় সংসদ ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। অন্যদিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ফের ক্ষমতায় আসতে চাওয়া আওয়ামী লীগও মাঠ দখলে রাখতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে চলেছে। বিএনপিকে মাঠ দখলে নেওয়ার মতো ইঞ্চি পরিমাণ সুযোগও দিতে চায় না ক্ষমতাসীনরা। সারা দেশ যেমন দখলে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক একইভাবে ঢাকার মাঠও দখলে রাখতে সভা-সমাবেশ অব্যাহত রেখেছে।
দলের এমপিদের অনুপস্থিতি মাঠ দখলে রাখার পরিকল্পনা কতটা সফল করতে পারবে তা নিয়ে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের এক নেতা শঙ্কা প্রকাশ করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ ব্যাপারে কেন্দ্র দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে শান্তি সমাবেশ কর্মসূচিগুলো সেই অর্থে ‘ইমপ্যাক্ট’ তৈরি করবে না। তিনি আরও বলেন, সমাবেশে উপস্থিতি নিয়ে উত্তর-দক্ষিণ দুটি ইউনিটকেই দায়ী করা হয়। কিন্তু এমপিদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয় না।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দুটি অংশের দুই শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, বড় কর্মসূচি যখনই হাতে নেওয়া হয়, দফায় দফায় থানা, ওয়ার্ডের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকার এমপিদের ডাকা হয়। সেসব বৈঠকেই উপস্থিত থাকেন না ঢাকার এমপিরা। নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও ঘোষিত কর্মসূচি মাঠে গড়ালে প্রস্তুতি অনুযায়ী প্রতিফলন ঘটে না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক এমপি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অনেকেই বিদেশে যাওয়া-আসা করেন। অনেকের ব্যবসা রয়েছে। এসব মিলিয়ে এমপিরা কর্মসূচিতে কম উপস্থিত থাকতে পারেন। তবে কর্মসূচি থাকলে এমপিদের দাওয়াত দেওয়া হয়।’
ছাত্রলীগের তিন নেতাকে মারধরের ঘটনায় পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশে গতকাল সোমবার বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে।
জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এ প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ‘সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি পুলিশ অধিদপ্তরে সংযুক্ত থাকবেন এবং বিধি অনুযায়ী খোরপোশ ভাতা প্রাপ্য হবেন।’
এছাড়া ছাত্রলীগের দুই নেতাকে নির্যাতনের ঘটনায় শাহবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) গোলাম মোস্তফাকে থানাটি থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) কে. এন. রায় নিয়তি দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। গোলাম মোস্তফাকে শাহবাগ থানা থেকে সরিয়ে ডিএমপির কেন্দ্রীয় সংরক্ষণ দপ্তরের লাইনওআর হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। আর শাহবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগের পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেনকে।
গত শনিবার রাতে পুলিশের এক নারী কর্মকর্তার সঙ্গে অতিরিক্ত উপকমিশনার হারুনের আড্ডা দেওয়া নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে তার কথা-কাটাকাটি হয়। পরে ছাত্রলীগের দুই নেতাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। মারধরের শিকার ছাত্রলীগ নেতারা হলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং কেন্দ্রীয় বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত আনোয়ার হোসেন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এ ঘটনায় গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের সদর দপ্তরে যান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। তারা সেখানে ডিএমপি কমিশনারসহ ঊর্ধŸতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। পরে সাংবাদিকদের ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম জানান, এ ঘটনায় তারা মামলা করতে চান না। তিনি বলেন, ডিএমপি কমিশনার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে সর্বোচ্চ আইনানুগ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
পরিবার মামলা করতে চাচ্ছে কিন্তু ছাত্রলীগ মামলা করতে দিচ্ছে না এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাদ্দাম বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন তদন্ত শেষ করা হয়, আইনানুগভাবে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হয়, সে দাবি জানিয়েছি। ডিএমপি কমিশনার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।
পরে ডিএমপি কার্যালয়ে যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রলীগের দুই নেতাকে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি, কিন্তু ডিএমপি কমিশনার নিরপেক্ষ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন।
বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ঘটনার পরপরই তাকে উইড্র করে বদলি করা হয়েছে। এটি হচ্ছে প্রথম পদক্ষেপ। এ বিষয়ে তিন সদস্যের একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরাও ছাত্রলীগ নেতাদের কথা শুনেছেন। কারও পক্ষ অবলম্বন না করে পেশাদারিত্বের সঙ্গে, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে সংক্ষিপ্ত সময়ে তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, বিভাগীয় তদন্তের পর শাস্তির দুটি প্রথা, কারও গুরুদণ্ড হতে পারে, আবার কারও লঘুদণ্ড হতে পারে। বিভাগীয় শাস্তি হলে কারও চাকরিও চলে যেতে পারে, আবার কাউকে তিরস্কারও করা হতে পারে।
এর আগে গত রবিবার পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এডিসি হারুনকে রমনা বিভাগ থেকে সরিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) দাঙ্গা দমন বা পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে। একইদিন সন্ধ্যায় জানানো হয়, এডিসি হারুনকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি করা হয়েছে। ওইদিন তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ডিএমপি। ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনারকে (অপারেশনস) প্রধান করে গঠিত কমিটিকে দুদিনের মধ্যে কাজ শেষ করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এরপর গতকাল তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এদিকে এডিসি হারুনকে সাময়িক বরখাস্তের পর রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনারের (রমনা জোন) দায়িত্ব দেওয়া হয় অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলামকে। তিনি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের মতিঝিল বিভাগের খিলগাঁও জোনাল টিমের দায়িত্বে ছিলেন।
এর আগে গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গাজীপুর জেলা ছাত্র সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে ছাত্রলীগের দুই নেতার ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও অনশন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে এডিসি হারুনকে স্থায়ী বহিষ্কার ও গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলেন, তিনি ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র অধিকার কাউকেই ছাড় দেন না। এডিসি হারুন একজন মানসিক বিকারগ্রস্ত পুলিশ কর্মকর্তা। আমরা চাই তাকে চাকরিচ্যুত করা হোক এবং তাকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।
ঢাবির শিক্ষার্থী মাহবুবুল আলম ইমন বলেন, ‘আমরা জানি এডিসি হারুন পরকীয়ায় লিপ্ত থাকা অবস্থায় হাতেনাতে ধরা পড়ায় তিনি আমাদের দুই ভাইকে নির্মমভাবে আহত করেন। তিনি এর মাধ্যমে নিজের কুকর্ম ঢাকতে চেয়েছিলেন কিন্তু সেটা ঢাকতে পারেননি।’
গাজীপুর ছাত্রকল্যাণ সমিতির সভাপতি আশিক রব্বানী জিহান বলেন, ‘এডিসি হারুন যখন দেখেছেন ছাত্রলীগের দুই নেতা তার কুকর্ম জেনে ফেলেছেন, এজন্য তাদের থানায় এনে মধ্যযুগীয় কায়দায় পিটিয়ে আহত করেছেন। বন্দুকের বাঁট দিয়ে আঘাত করে দাঁত ভেঙে ফেলা হয়েছে। আমরা তার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাই।’
জাপানে সহকর্মীর দুই শিশু সন্তানকে বাঁচাতে গিয়ে নদীতে ডুবে এক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। তার নাম খাইরুল কবির (৩৯) এবং বাড়ি পাবনা জেলায় বলে জানা গেছে। খাইরুল কবির জাপানের একটি কোম্পানিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে টোকিওর মাসিদাতে থাকতেন।
সংবাদমাধ্যম জাপান টুডে জানায়, গত রবিবার ইয়ামানাশি প্রিফেকচারের নানবু এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, সহকর্মীসহ ১৯ জনের একটি দলের সঙ্গে সপরিবারে ফুকুশি নদীর তীরে ঘুরতে গিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। কিন্তু বেলা ১১টার দিকে তার এক সহকর্মীর ১১ ও ১২ বছর বয়সী দুই শিশু সন্তান নদীতে পড়ে যায়। তাদের উদ্ধার করতে নদীতে নেমে নিখোঁজ হন খাইরুল। এ সময় দেশটির জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইন নম্বর ১১৯-এ কল দিয়ে সহায়তা চান ওই দলে থাকা অন্যরা।
পুলিশ জানিয়েছে, দুই শিশুকে উদ্ধার করতে পারলেও তীব্র স্রোতে ভেসে যান ওই বাংলাদেশি। পরে বেলা ৩টার দিকে আড়াই মিটার গভীর ওই নদীর তলদেশ থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে নদীতে পড়ে যাওয়া দুই শিশু সুস্থ আছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ।
প্রায় আট বছর ধরে ঘুম হচ্ছিল না গাজীপুরের এক যুবকের। সমস্যা সমাধানে করণীয় কোনো কিছুই বাদ রাখেননি তিনি। ৩৬ বছর বয়সী ওই যুবক ধীরে ধীরে শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় জড়িয়ে পড়ছিলেন। ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল তার স্বাভাবিক জীবনের কার্যক্রম। এই হতাশা থেকে একপর্যায়ে বেছে নেন আত্মহত্যার পথ।
জানা গেছে, গৃহশিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের বাসায় গিয়ে পড়াতেন স্বপন কুমার রায়। ২০২০ সালে প্রতিদিনের মতো এক সন্ধ্যায় পড়ানোর উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। দুদিন নিখোঁজ থাকার পর তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে এ ঘটনার দীর্ঘ তদন্তের পর আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘুম না আসায় আত্মহত্যা করেছেন স্বপন।
পুলিশের এই তদন্ত সংস্থাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু ইউসুফ এই তথ্য জানান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, এই মামলার তদন্তে স্বপন কুমার রায় শারীরিক ও মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত থাকার কারণে আত্মহত্যার বিষয়টি প্রমাণ হয়েছে। তদন্তকালে তার লেখা চিরকুট পাওয়া গেছে। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে ঘুম না আসার সমস্যা এবং এ নিয়ে তার নানা হতাশার কথা লেখা ছিল। মামলাটি তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
অ্যাসোসিয়েশন অব সার্জনস ফর স্লিপ অ্যাপনিয়া বাংলাদেশের জেনারেল সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু জানিয়েছেন, ঘুমের সমস্যা থেকে আত্মহত্যাপ্রবণতা বাড়ে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, কারও যদি টানা তিন মাস ঘুম না হয় তাহলে তার অতিরিক্ত চিন্তা হয়, অস্থির থাকে। তার মধ্যে ডিপ্রেশন অ্যাংজাইটি, অক্সিজেন কমপ্লেক্সিটি ঘটে, সাইকিয়াট্রিক সমস্য দেখা দেয়, আত্মহত্যাপ্রবণতা বাড়ে।
পিবিআই জানায়, গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন স্বপন কুমার রায়। টঙ্গী বাজার ও মধুমিতা রোড এলাকার বাসায় গিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াতেন। তিনি ২০২০ সালের ২৮ মার্চে নিখোঁজ হন। এর দুদিন পর নিকটবর্তী এলাকার একটি জলাশয় থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর তার পরিবার একটি হত্যা মামলা করে। মামলাটি তদন্তকালে জানা যায়, ঠিকমতো ঘুম না হওয়ায় স্বপন শারীরিকভাবে দুর্বল ও রোগাটে প্রকৃতির হয়ে যাচ্ছিলেন। এজন্য সব সময় ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতেন তিনি। এতেও ঠিকভাবে ঘুম না হওয়ায় চাকরি বা কোনো কাজে মন দিতে পারতেন না। এ ছাড়া স্বপন বিয়ে করবেন বলে তার পরিবারকে জানান। কিন্তু তার পরিবার স্বপনের চাকরি না থাকায় এবং সব সময় হতাশাগ্রস্ত ও শারীরিকভাবে দুর্বল থাকায় রাজি হয়নি।
পিবিআই তদন্তে স্বপনের দুটি চিরকুট পায়। এর মধ্যে একটি চিরকুটে লেখা ছিল ‘৭/৮ বছর ধরে ঘুমের সমস্যায় ভুগছি। একদমই ঘুম হয় না। না রাতে, না দিনে। টেনশন থাকলে ঘুম আসে না, স্বাভাবিক। কিন্তু আমি টেনশন না করলেও ঘুম আসে না। আনন্দে থাকলেও ঘুম আসে না। ঘুম ঘুম ভাব আসে। রাত এলে আস্তে আস্তে চোখ থেকে ঘুম চলে যেতে থাকে। চোখের সমস্যা, মাথার সমস্যা, নাকি মানসিক সমস্যা কিছু বুঝতে পারছি না। টেনশন না করে হাসি-আনন্দে থাকলেও ঘুম আসে না। ঘুম না হওয়ার মাত্রা দিন দিন যেন আরও বাড়ছে। কঠোর শারীরিক পরিশ্রম করে দেখেছি। অনেক হাঁটি, বুকডাউন দিই, ওঠবস করি। ভাবি শারীরিক পরিশ্রম করলে রাতে ভালো ঘুম হবে। যত পরিশ্রমই করি না কেন ঘুম আসে না। দিনে ঘুমাতে চাই না। শুধু রাতে ৬-৭ ঘণ্টা ঘুমাতে পারলেই যথেষ্ট। কিন্তু আমার চোখে বিন্দুমাত্র স্বাভাবিক ঘুম আসে না। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি। ঘুমের ওষুধ দিয়েছে। খেলে কোনো দিন ঘুম হয়, কোনো দিন ঘুম হয় না। অনেক বছর ধরে তো ওষুধ খাচ্ছি। কিন্তু সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। ঘুমের ওষুধ খেতে খেতে আমি ক্লান্ত। কাউকে জিজ্ঞেস করলে বলে টেনশন করি সেজন্য ঘুম হয় না। কিন্তু আমি তো বুঝি শুধু টেনশনের জন্য নয়। অন্য কোনো সমস্যা থাকতে পারে। দুশ্চিন্তা যদি থেকে থাকে তাহলে আমি বলব, ঘুম কেন হয় না। সেটাই আমার সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ। ঘুম না হওয়া আমাকে দিন দিন ধ্বংস করে দিচ্ছে। কোনো চাকরি করতে পারি না। টাইমলি যেতে পারি না। কোনো কাজ করতে না পারার কারণে আর্থিক সমস্যায় ভুগছি।...’
এ ছাড়া এই চিরকুটে ঘুম না হওয়ার কারণে বিভিন্ন সমস্যার কথা লেখা ছিল। অন্য চিরকুটেও একই বিষয় সংক্ষেপে লেখা ছিল।
মামলার বাদী নিহত স্বপনের মা নিবেদিতা রায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ওর মৃত্যুর বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। কেন মারা গেল, কেউ কি হত্যা করেছে নাকি আত্মহত্যা করেছে। তবে ওর ঘুমের সমস্যা ছিল। বিভিন্ন সময় আমাদের বলেছে, ডাক্তার দেখিয়েছিল তবুও সমাধান হচ্ছিল না। কিন্তু এই ঘুমের সমস্যায় মারা গেছে, সেটাও আমরা একমত হতে পারছি না।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক-সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি এখনো নিশ্চিত হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাজেটস্বল্পতার যুক্তিতে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষকদল পাঠাতে পারবে না বলেছে। এখন পর্যন্ত আবেদনকারী ২১০টি দেশি সংস্থা বা সংগঠনের মধ্যে ৬৬টিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে।
নির্বাচনের তিন মাসেরও কম সময় বাকি। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের কাছ থেকে কাক্সিক্ষত সাড়া না পেয়ে তাদের চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানোর কথা ভাবছে ইসি। তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচন নিয়ে বড় কোনো প্রশ্ন যাতে না ওঠে, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা যেন বাধাগ্রস্ত না হয়। এ লক্ষ্যে সব চেষ্টাই নির্বাচন কমিশন করবে। ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে।
অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়েছে, সেটি বোঝাতে হলে আন্তর্জাতিক মহলে বার্তা পৌঁছাতে হবে। আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে এ বার্তা পৌঁছানোর কাজটি করেন বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। ইইউ বলে দিয়েছে, তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। যুক্তরাষ্ট্র সরকার নির্বাচন-পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না, তার জন্য ক্ষেত্রসমীক্ষণে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) যৌথ প্রতিনিধিদল আসবে। ৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল ও তাদের সহায়তাকারীরা ৭ থেকে ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি এবং দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করা নিয়ে টুইটবার্তা এবং বিভিন্ন বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের ধারণা, তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত এ বার্তাই দিচ্ছে যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু না-ও হতে পারে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার কাছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত না হলে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) পর্যবেক্ষক না পাঠালেও আরও অনেক দেশ আছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোকে (আফগানিস্তান, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা) আমন্ত্রণ জানিয়ে অক্টোবরে চিঠি দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষকদের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে ভালো হয়। আমরা চাই দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা বেশি সংখ্যায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করুক। আমরা আশা করি বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি সংস্থা।
পৃথিবীতে আরও অনেক দেশ আছে।’
আপনারা তো ভোটের জন্য শতভাগ প্রস্তুত কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি নির্বাচনমুখী কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেভাবেই হোক সংবিধান অনুযায়ী জানুয়ারির ২৯ তারিখের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। না হলে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে। এতে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। নির্বাচন কমিশন সেটা হতে দিতে পারে না।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমেরিকা আসবে না বলেনি। আসলে আমরা খুশি হব। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য যেসব যোগ্যতার প্রয়োজন, সেসব থাকলে যে কেউ আসতে পারে।’
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষক দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। আশা করি নির্ধারিত সময়ের আগেই তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসবে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বদিউল আলম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে, নির্বাচনসংক্রান্ত বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামো, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে যে দলীয়করণ হয়েছে, তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অতীতেও তা হয়নি। আগামীতে হবে বিশ্বাস করা কঠিন। যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, তথ্য-উপাত্ত নিয়েই তা করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও বলেছে, তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। নেতিবাচক মনোভাবই তাদের সিদ্ধান্তে প্রকাশ পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা আসেনি। ফলে সেটি আন্তর্জাতিক মানদ-ে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। ওই দুটি নির্বাচন সব মহলেই প্রশ্নবিদ্ধ। এখন সরকার বা ইসি যে কথা বলছে, তাতে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নীতির বদল হবে বলে মনে হয় না। আস্থা তৈরি করতে হলে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সূত্রগুলো বলছে, তারা নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে কাজ করছে। ইতিমধ্যে ইইউকে ছোট পরিসরে হলেও পর্যবেক্ষক পাঠাতে ২৪ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে কমিশন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে এমন প্রতিশ্রুতি সিইসি দিচ্ছেন। সরকারও একই কথা বলছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার ও নির্বাচন কমিশন। যদিও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ফলে আস্থার একটা সংকট তৈরি হয়েছে। তা কাটানোর জন্যই ইসি নানা পরিসরে কাজ করছে।
সূত্রমতে, ইইউর নেতিবাচক মনোভাবের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষকদের সন্তেুাষজনক তথ্য তৈরির কাজ করছে ইসি সচিবালয়। মার্কিন দলের মনোতুষ্টির বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে কমিশনের। নির্বাচনী তফসিল থেকে নির্বাচনী ফল ঘোষণা পর্যন্ত সব কর্মকা-, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়গুলো তাদের কাছে তুলে ধরা হবে।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতির সুবিধা হলো তারা নির্বাচনী কাজে জড়িতদের জবাবদিহির মুখোমুখি করে। পর্যবেক্ষকদের কোনো আইনি শক্তি নেই। তবে তারা নৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এতে প্রার্থীদের সমর্থকদের আচরণও প্রভাবিত হয়। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে ভোটারদের ওপর, তারা আস্থা পান।’
তিনি বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে তাতে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা অংশ নেয় না। আগামী নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এখন পর্যন্ত সব দলের অংশ নেওয়ার বার্তা নেই। সব দলই নিজ অবস্থানে অনড়। এ কারণেই বিদেশিরা আগ্রহ প্রকাশ করছে না।’
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশে সাধারণত ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, সার্কভুক্ত দেশ, কমনওয়েলথ, ওআইসি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে এমন সংস্থা, মানবাধিকার গোষ্ঠী, ঢাকায় বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। ২০১৮ সালে দেশি ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন এবং ওআইসি ও কমনওয়েলথ থেকে আমন্ত্রিত ও অন্যান্য বিদেশি পর্যবেক্ষক ছিলেন ৩৮ জন, কূটনৈতিক বা বিদেশি মিশনের কর্মকর্তা ৬৪ জন এবং বাংলাদেশে দূতাবাস বা হাইকমিশন বা বিদেশি সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশি ৬১ জন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের সুযোগ দিতে এবার দ্বিতীয়বারের মতো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। দেড় শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে। প্রথমবার দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বাদপড়াদের মধ্য থেকেই বেশি আবেদন এসেছে বলে জানা গেছে।
গত ১৮ জানুয়ারি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের জন্য প্রথমবারের মতো আবেদন আহ্বান করেছিল নির্বাচন কমিশন। ২১১টি সংস্থা আবেদন করেছিল। গত ৮ আগস্ট প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ ৬৮টি সংস্থার তালিকা প্রকাশ করে সংস্থাটি। আপত্তি ওঠায় দুটি সংস্থাকে বাদ দিয়ে শেষপর্যন্ত ৬৬টি সংস্থাকে নিবন্ধন দেয় কমিশন। এসব সংস্থার ৪২টিই ছিল নতুন। এর আগে তারা কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজ করেনি; সংস্থাগুলোর সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে পর্যবেক্ষক সংস্থার সংখ্যা অর্ধেকের মতো কমে যাওয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো ১৫ সেপ্টেম্বর ১০ দিনের জন্য ফের আবেদন আহ্বান করে ইসি। এর সময় শেষ হয়েছে ২৪ সেপ্টেম্বর।
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগের মতোই বাছাই শেষে দাবি-আপত্তি আহ্বান করা হবে। তারপর চূড়ান্ত হবে কোন কোন সংস্থা নিবন্ধন পাচ্ছে।
ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দেড় শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে।’
২০০৮ সাল থেকে ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষক নিবন্ধন দিচ্ছে ইসি। সে সময় ১৩৮টি সংস্থা নিবন্ধন পেয়েছিল। ২০১৮ সালে ১১৮টি সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল ইসি। পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের পাঁচ বছরের মেয়াদ গত ১১ জুলাই শেষ হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য সংশোধিত নীতিমালা : আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য নীতিমালা সংশোধন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ২৬ সেপ্টেম্বর ইসি এই নীতিমালা জারি করেছে। সংশোধিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো বিদেশি নাগরিক বা সংস্থা বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে চাইলে তাদের সুশাসন, নির্বাচন, গণতন্ত্র, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সংস্থাগুলোকে সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধিত হতে হবে।
শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করা হচ্ছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, ‘ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হবে।’
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি জামায়াতে ইসলামকে ইসলামের দুশমন মন্তব্য করে বলেন, ‘যারা একাত্তরে মানুষ হত্যা করেছে, তারা মুসলমান হতে পারে না। তাদের জামাকাপড়ে মুসলমান ভাব থাকলেও অন্তরে নেই। খুনিরা মুসলমান হতে পারে না- কারণ ইসলাম শান্তির ধর্ম- যা মানবতার কথা বলে।’
এ সময় সারা দেশে মডেল মসজিদ নির্মাণসহ ইসলেমের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরেন শাজাহান খান।
অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘আশেকানে গাউছিয়া রহমানিয়া মইনীয়া সহিদীয়া মাইজভাণ্ডারীয়া’।
সংগঠনের প্রধান পৃষ্টপোষক শাহসূফি মাওলানা শাহজাদা সৈয়দ সহিদউদ্দিন আহমেদ আল-হাসানী ওয়াল-হোসাইনি মাইজভাণ্ডারী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ সা. সৃষ্টি না হলে পৃথিবী সৃষ্টি হতো না। সেই দয়াল নবীর মত ও পথকে অনুসরন করতে হবে। সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে, জীবন চালাতে হবে। এ ছাড়া আল্লাহর নৈকট্য লাভের ভিন্ন কোনো সুযোগ নেই।
আলোচনা সভা সেমিনারের পর দুপুর সোয়া ১২টায় ঈদে মিলাদুন্নবীর জশনে জুলুশ (র্যালি) বের হয়। গুলিস্তান জিরোপয়েন্ট থেকে পল্টন মোড় হয়ে র্যালিটি আবার জিরো পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়।
পরে আখেরি মোনাজাতে দেশ ও জাতির শান্তি-সমৃদ্ধি কামনা করেন সৈয়দ সহিদউদ্দিন আহমেদ মাইজভাণ্ডারী।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ইলেকশন মনিটরিং কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবেদ আলীসহ হাক্ক্বানি ওলামায়ে ক্বেরামগণ। এ সময় ভক্ত ও আশেকানবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সাত বছর পর ভারতের মাটিতে অবতরণ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তারা গিয়েছিল সেখানে। তারপর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে। টুর্নামেন্ট শুরুর এক সপ্তাহ আগে তারা পৌঁছালেন দেশটিতে। সেখানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোটেলে।
বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাবর আজমরা সেখানে পৌঁছানো মাত্রই উচ্ছ্বসিত জনতা ভিড় করেন। হায়দ্রবাদের বিমানবন্দরের বাইরে তাদের দেখে অনেকেই চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। বাবরের নাম উচ্চারণ করতও শোনা গেছে এসময়। পুলিশ উৎসুক জনতাকে আটকে রেখেছিল।
রাজনৈতিক বৈরি সম্পর্কের কারণে দুই দলের দেখা হয় না দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে। বিশ্ব মাতানো ক্রিকেটার থাকলেও পাকিস্তানিরা খেলতে পারে না আইপিএলে। কারণ ঐ একটাই। তবে বৈশ্বিক বা মহাদেশীয় ইভেন্টে তাদের ঘিরে আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। সেটা দেখা গেছে এশিয়া কাপেও।
বিশ্বকাপ খেলতে আজ বাংলাদেশ উড়াল দিয়েছে ভারতে। সেই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখে টাইগাররা। তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছাড়ার পর সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের ভার। আর আজই জানা গেল, বিশ্বকাপের পর একদিনও তিনি অধিনায়কত্ব করবেন না।
গত ১১ আগস্ট তৃতীয় দফায় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান। তখনই বলা হয়েছিল, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ও ভারত বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এই বিশ্বকাপই শেষ। এরপর একদিনও (অধিনায়কত্ব) করবো না। যে কারণে আমি এশিয়া কাপের আগে নিতে চাইনি। এরপরও এটা না। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হাসতে চাই, খেলতে চাই, পারফর্ম করতে চাই। এই একটা কারণে আমি করতে চাইনি।’
সাকিব যোগ করেন, ‘আর কোনে কারণ নেই। বেস্ট হয় যদি অধিনায়ক না থাকি। অধিনায়কত্ব কি আমার কোনো ভেল্যু এড করতেছে ক্যারিয়ারে এই স্টেজে এসে? আমি তো মনে করি না।’
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।