
দেশে দুর্নীতি ক্যানসারের মতো ছড়িয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। তিনি বলেন, ‘এমন না যে এটা শুধু বিচার বিভাগেই আছে। এটা সব জায়গাতেই কিছু না কিছু আছে। এটা কমানোর ইচ্ছা থাকলে কিছু না কিছু কমানো যাবে এবং আমরা চেষ্টা করব যেটা আমার পূর্বসূরিরাও করেছেন।’
গতকাল বুধবার সুপ্রিম কোর্টে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। এ সময় মামলাজটকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে বিচারপ্রত্যাশীদের সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
গত মঙ্গলবার নতুন প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। শপথ নিয়ে দায়িত্ব নেওয়ার অপেক্ষায় আছেন দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি।
বিচারালয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে উদ্যোগ নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের (গণমাধ্যম) কাছ থেকে শুনলে দুর্নীতি কমানোর ব্যাপারে আমরা আরও কিছু নতুন পথ বের করতে পারব।’
এক প্রশ্নে জবাবে ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘আস্থার ঘাটতি সব জায়গাতেই আছে। আমাদের বিচার বিভাগের ওপরে আস্থার ঘাটতি নেই, এ কথা আমি বলব না। কিন্তু এখনো অসুবিধা হলে আপনি কিন্তু আদালতেই যাবেন। যদি আস্থা না থাকত, মানুষ আদালতে আসবে কেন? আস্থা আছে বলেই মানুষ আদালতে আসছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিচার বিভাগের প্রতি আস্থার কমতিটা যেটা হয়েছে, এটা শুধু বিচারকদের জন্য, তা নয়। বিচারকদের সঙ্গে বিচারকাজের সঙ্গে অন্যরা যারা আছেন বিভিন্ন কারণে কখনো কখনো মানুষ নিজের অবস্থানের অপব্যবহার করে, সেই কারণে কোনো কোনো সময় আস্থার অভাব যে হচ্ছে না তা নয়। এখন যে কমতিটা আছে আপনাদের সহযোগিতায় সেটা বাড়াতে চাই।’
হয়রানিমূলক মামলা প্রসঙ্গে ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘আমাদের আইনে কিন্তু আছে মামলা যদি মিথ্যা প্রমাণিত হয় তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। মামলা অপ্রমাণিত হওয়া এক জিনিস আর মিথ্যা হলে সেটির কিন্তু প্রতিকার আছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। হয়রানিমূলক মামলা যে মানুষ করে না তা নয়। হয়তো করে। এর থেকে পরিত্রাণের পথ হলো সামাজিক পরিবর্তন আনতে হবে। সামাজিক পরিবর্তন না আনতে পারলে শুধু বিচার করে, আইন-আদালত, কোর্ট-কাচারি করে সমাধান হবে না।’
বিচার বিভাগ রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হচ্ছেÑ অনেকের এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘এটা যারা বলেন তারা কেন বলেন, তারাই ভালো বলতে পারবেন। রাজনৈতিকভাবে বিচার বিভাগ ব্যবহার হচ্ছে, এটা আমি মনে করি না। বিচারকরা বিচারকদের কাজ করে যাচ্ছেন তাদের মতো করেই। আমি শুধু একটি কথা বলব, যেসব আইনজীবী বন্ধুরা রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন, তারা রাজনীতিটা করুন। কিন্তু আদালত অঙ্গনে তারা যেন সহনশীলতার পরিচয় দেন। তারা যেন একে অন্যের প্রতি গ্রহণযোগ্য হন। তাহলে কিন্তু এই অসুবিধা ও উত্তাপগুলো আদালতে ছড়াবে না। আর সমাজের রাজনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের মন্তব্য করা ঠিক হবে না। এটা আমার কিংবা বিচার বিভাগের বিষয় নয়।’
মামলাজটকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই যে মামলাজট, বিচারে দীর্ঘসূত্রতা এটা একটা পুরাতন ব্যাধি। আমরা এই ব্যাধিটাকে, এটা যেন ক্রনিক (দীর্ঘস্থায়ী) না হয়ে যায় সেই চেষ্টা করব আমি। আমি চেষ্টা করব বিচার বিভাগকে আরও গতিশীল করা যায় কি না।’
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মানুষ কে কখন বিচারপ্রার্থী হবে তা কেউ বলতে পারে না। ঝামেলা এলে আমাদের আদালতের শরণাপন্ন হতে হয়। এখানে শরণাপন্ন হলে আমরা যারা আছি তাদের দিয়েই শুধু বিচার হয় না। আমাদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে আছেন আইনজীবীরা, তাদের সহকারীরা, বিচারকরা, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, সবাই যদি আন্তরিক হন তাহলে বিচারপ্রার্থী মানুষের কষ্ট লাঘব হবে।’
নতুন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এডিআর (বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা) এবং মেডিয়েশনের মাধ্যমে আমরা অনেক মামলা কমাতে পারি। আদালতের বারান্দা থেকে মানুষকে ঘরে ফেরাতে পারি এবং তারা বিচারালয়ে না গিয়ে ঘরে বসে একই রকম ফল অন্যভাবে পেতে পারেন মেডিয়েশন বা এডিআরের মাধ্যমে। আমরা চেষ্টা করব মানুষকে যেন আদালতমুখী না হতে হয়।’
২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করতে হবে। এ কাজের মূল দায়িত্ব প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর ওপর। আগে কিছু কাজ থাকলেও গত জুলাই থেকে এ প্রতিষ্ঠানের কোনো কাজ নেই। সামনেও তাদের কোনো কর্মসূচি নেই। ফলে বসে বসে বেতন-ভাতা নিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির ২৫১ কর্মকর্তা-কর্মচারী। উপরন্তু আরও ৭০৭ জনকে নিয়োগ করা হবে। এতে তাদের পেছনে মাসে সরকারের ব্যয় হচ্ছে সোয়া কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর পুরনো অর্গানোগ্রামে পদের সংখ্যা ৩৭৮। প্রধান কার্যালয়ে বর্তমানে ৫৯ কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। একজন মহাপরিচালকের নেতৃত্বে প্রধান কার্যালয়ে কর্মকর্তার পদ ১৭টি। ব্যুরোর অধীনে ৬৪টি জেলা কার্যালয় রয়েছে। সেখানে সর্বোচ্চ পদ সহকারী পরিচালক। সেসব কার্যালয়ে বর্তমানে কর্মরত আছেন ১৯২ জন। তবে ৩৪ জেলাতেই সহকারী পরিচালকের পদ শূন্য। অবসরে চলে যাওয়ায় কর্মচারীদের অনেক পদই শূন্য।
জানতে চাইলে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সাধারণত প্রকল্প বা কর্মসূচির মাধ্যমে সাক্ষরতা বাড়ানোর কাজ করে থাকি। এসবের পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও মনিটরিংয়ের কাজ করেন আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সর্বশেষ কর্মসূচি ৬৪ জেলায় মৌলিক সাক্ষরতার প্রকলল্পের মেয়াদ ২০২৫ সাল পর্যন্ত থাকা সত্ত্বেও তা এ বছরের জুনে শেষ করে দেওয়া হয়। আমরা যেসব পরিকল্পনা ও প্রস্তাব দিয়েছিলাম তার কোনোটিকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে আমাদের তেমন কোনো কাজ নেই। এখন সরকারি দপ্তর হিসেবে আমরা বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালন করি। এভাবে চললে এ দপ্তরে ডিজিরও প্রয়োজন থাকবে না।’
রাজধানীর মহাখালীতে ব্যুরোর প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, সুনসান নীরবতা। অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আছেন। তবে কাজের তাড়া নেই। অনেকে গল্পগুজব করছেন। মনখুশি চলছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস এলেই উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর কথা মনে পড়ে। দিবসটি বাবদ প্রায় ৫০ লাখ টাকার বাজেট থাকে। এ বছরও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে দিবস উদযাপনে খরচ হয়েছে ৪৭ লাখ টাকা। অন্য সময়ে মন্ত্রণালয়ও ব্যুরোর কথা ভাবে না। অথচ এর মূল কাজ দেশের সাক্ষরতার হার বাড়ানো।
ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯১৮ সালে নৈশ বিদ্যালয়ে বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রথম চালু হয়। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা অধিদপ্তর ১৯৯২ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংযুক্ত বিভাগ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৫ সালে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে বিলুপ্ত করে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো করা হয়। যারা আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেনি তাদের জন্য কাজ, শিক্ষা ও সুযোগ নিশ্চিত করাই এ প্রতিষ্ঠানের মূল কাজ।
সূত্র জানায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতায় উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর বর্তমান রুগ্্ণ দশা। মন্ত্রণালয়ের আগের দুই সচিব এ দপ্তরকে চরম অবহেলা করেছেন। মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া ব্যুরোর বিভিন্ন প্রস্তাব আলোর মুখ দেখেনি। ফলে দেশে সাক্ষরতার হার বাড়ছে না।
মন্ত্রণালয় চাইছে, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোকে পাশ কাটিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে গণশিক্ষার কার্যক্রম চালাতে। ফলে বিপুলসংখ্যক জনবলকে বসে বসে দিন পার করতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর জেলাপর্যায়ের একজন সহকারী পরিচালক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগে আমাদের বিভিন্ন কর্মসূচি থাকত। সেগুলোর মনিটরিং আমাদের মূল দায়িত্ব ছিল। এখন মাঠপর্যায়ে কোনো কাজ নেই। কোনো সার্ভে নেই। কোনো প্রকল্প নেই। আমরা বিভিন্ন সভা-সেমিনারে অংশ নিই। বিশেষ করে এনজিওদের প্রোগ্রামে গিয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করি। কিন্তু তাদেরও এ ধরনের কাজের জন্য ফান্ড নেই। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করি। এই হচ্ছে আমাদের কাজ।’
২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঘোষণা ছিল ২০১৪ সালের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করা হবে। এরপর প্রায় ১৫ বছর পার হলেও প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হয়নি। সরকারি হিসেবে বর্তমানে দেশে সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ। বেসরকারি হিসেবে আরও কম।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ সালে দেশে সাক্ষরতার হার ছিল ৭৩ দশমিক ৯, ২০১৯ সালে ৭৪ দশমিক ৭ ও ২০২০ সালে ছিল ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২১ সালেও সাক্ষরতার হার একই বলে জানানো হয়েছে। ২০২২ সালে সাক্ষরতার হার ছিল ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ।
জানা যায়, সাক্ষরতার হার বাড়ানোর মূল দায়িত্ব উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর। তাদের একমাত্র প্রকল্প ‘মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প (৬৪ জেলা)’-এর মেয়াদ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত হলেও অজ্ঞাত কারণে তা শেষ করে দেওয়া হয় এ বছরের জুনে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) সাব-কম্পোনেন্ট ২.৫-এর আওতায় ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সের বিদ্যালয়বহির্ভূত ১০ লাখ শিশুকে উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পিইডিপি-৩ থেকে আগত এক লাখ শিশুকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। বাকি ৯ লাখের প্রায় আট লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। ২৫ হাজার ৭১২টি শিখন কেন্দ্রের মাধ্যমে তাদের পাঠদান করা হচ্ছে।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর কাজকে বেগবান করতে বেশ কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠানটির অর্গানোগ্রামের আকার বাড়ানো হয়েছে। উপজেলা পর্যায়েও ব্যুরোর অফিস খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক উপজেলায় একজন কর্মকর্তা, একজন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ও একজন অফিস সহায়কের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। উপজেলা কর্মকর্তা নিয়োগে সরকারি কর্মকমিশনের কাছে চাহিদার কথা জানানো হলেও তা ঝুলে আছে। গত জুনে ২৬৫ জন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ও ৪৪২ জন অফিস সহায়ক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও তা স্থগিত রয়েছে।
বাংলাদেশ ইতিমধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খাদ্যে এ স্বয়ংসম্পূর্ণ অবস্থান বজায় রাখতে সরকার নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান আন্তর্জাতিক সংকটেও দেশে খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত আছে। এ ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও সরকার তা নিয়ন্ত্রণ ও জনগণের ওপর এর প্রভাব প্রশমনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে এ কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। সরকারদলীয় সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, কভিড অতিমারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বে খাদ্যপণ্যসহ সবক্ষেত্রে জোগানব্যবস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সংকট মোকাবিলার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সরকার প্রতিনিয়ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে। খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে সংসদনেতা বলেন, কৃষি গবেষণা, সম্প্রসারণ ও কৃষি ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উপকরণ ও নীতি সহায়তার ফলে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছে।
সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী জানান, পাবনায় নির্মাণাধীন ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ২০২৫ সালের মধ্যে চালু হবে। ভবিষ্যৎ বিদ্যুৎ চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে নির্মাণাধীন এবং দরপত্র প্রক্রিয়াধীনসহ ১৪ হাজার ৬৬৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ পরিকল্পনাগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
একই প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা জানান, বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ২৮ হাজার ১৩৪ মেগাওয়াট। ১১ হাজার ৬০৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। ২০২৩-২৬ সালের মধ্যে এগুলো পর্যায়ক্রমে চালু হবে। ২ হাজার ৪২৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে। ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে এটি চালু হবে বলে আশা করা যায়। তিনি আরও জানান, বর্তমান সরকার প্রায় ১৫ বছর ধরে দেশে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করে চলছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সারা দেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করার লক্ষ্যে জ্বালানি বহুমুখীকরণ অর্থাৎ গ্যাস বা এলএনজি, কয়লা, বিদ্যুৎ আমদানি, তরল জ্বালানি, নিউক্লিয়ার এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এ পরিকল্পনাগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়নের ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে পাঁচগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে আজ ২৮ হাজার ১৩৪ মেগাওয়াটে (ক্যাপটিভ, অফ-গ্রিড নবায়নযোগ্য ও জীবাশ্ম জ্বালানিসহ) উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে ভারত থেকে ২ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, অনেক দেশ নিজ নিজ দেশের গণহত্যাকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানায়। পরে আলোচনার মাধ্যমে ২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৯ ডিসেম্বরকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালনের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। যেহেতু ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন হয়ে আসছে, সেহেতু একই বিষয়ে আরও একটি আন্তর্জাতিক দিবস পালনের প্রস্তাবটি সমীচীন হবে না।
সরকারি দলের মামুনুর রশীদ কিরণের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা জানান, অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রস্তাবিত বিনিয়োগ এখন ২৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৪১টি কোম্পানি বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে। বিভিন্ন জোনে ৫০টি শিল্প নির্মাণাধীন রয়েছে। এসব শিল্প থেকে এ পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্য উৎপাদন হয়েছে এবং ২৯১ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ শিল্পগুলোতে প্রায় ৫০ হাজার জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
বিরোধী দল জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা জানান, বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদে ৮৫৪ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, ১২ হাজার ৪৩৪ কিলোমিটার মহাসড়ক উন্নয়ন এবং ১ লাখ ২৩ হাজার ২৫৪ মিটার দৈর্ঘ্যের ১ হাজার ১৩১টি সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ৫৭৪ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, ৪ হাজার ৬৩৪ কিলোমিটার মহাসড়ক উন্নয়ন এবং ৬৪ হাজার ৮৪৪ মিটার দৈর্ঘ্যের ৭৫০টি সেতু নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।
আওয়ামী লীগের সৈয়দা রুবিনা আক্তারের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশের ৫৫ লাখ ৬১৭টি পরিবার, অর্থাৎ প্রায় ২৮ লাখ মানুষকে ঘর প্রদানের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
বিমানের অনিয়ম রোধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে : প্রতিমন্ত্রী
বাংলাদেশ বিমানের সব ধরনের অনিয়ম রোধে শূন্য সহিষ্ণুতা (জিরো টলারেন্স) নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। গতকাল সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ তথ্য জানান।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নাসরিন জাহান রতনার প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, আকাশপথে বরিশাল বিভাগে যাতায়াতের জন্য একমাত্র বিমানবন্দর হলো বরিশাল বিমানন্দর। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে এ বিমানবন্দরের ফ্লাইট সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমেছে। আগে দৈনিক ২৮টি ফ্লাইট পরিচালিত হতো। আর বর্তমানে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে। বরিশাল বিমানবন্দর ফ্লাইট পরিচালনার উপযোগী রয়েছে। বরিশাল বিমানবন্দরের রানওয়েতে বিমান উড্ডয়ন-অবতরণের ক্ষেত্রে স্বল্প ভিজিবিলিটি-রাত্রিকালীন ফ্লাইট পরিচালনার লক্ষ্যে সিম্পল অ্যাপ্রোচ লাইটিং সিস্টেম সংস্থাপন করা হয়েছে। ফলে কোনো এয়ারলাইনস রাত্রিকালীন ফ্লাইট পরিচালনা করতে চাইলে তা পারবে।
একই সংসদ সদস্যের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুব আলী জানান, বিমান বহরে নতুন প্রজন্মের ১৯টি নিজস্ব উড়োজাহাজ সংযোজন করা হয়েছে এবং নতুন উড়োজাহাজ সংযোজনের প্রক্রিয়া চলছে। বিশ্বমানের অন টাইম পারফরম্যান্স (ওটিপি) অর্জিত হয়েছে ও তা বজায় রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধিতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অনলাইন টিকেটিং ব্যবস্থা প্রচলনের মাধ্যমে যাত্রীদের টিকিট ক্রয়ের কষ্ট লাঘব করা হয়েছে। নতুন রুট সংযোজনের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধির প্রক্রিয়া গতিশীল করা হয়েছে।
সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক পরিবেশ যে জরুরি, সেটা আগে থেকেই বলে আসছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। নির্বাচনে কমিশন আয়োজিত আলোচনা ও পর্যালোচনা সভায় সুধীজনদের সামনে এবার তিনি স্বীকার করলেন, নির্বাচন কমিশন কঠিন অবস্থায় আছে। সিইসি আরও বলেছেন, ‘সংকট আছে, সেই সংকট নিরসন করতে হবে রাজনৈতিক নেতাদের। আমরা বারবার বলেছি, রাজনীতিবিদরা যদি আমাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে না দেন, তাহলে আমাদের পক্ষে নির্বাচন করাটা কষ্টসাধ্য হবে। আর যদি পরিবেশ অনুকূল করে দেন, তাহলে কাজ সহজ হবে।’ গতকাল বুধবার ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন : প্রত্যাশা ও বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনা ও পর্যালোচনামূলক সভায় আমন্ত্রিত সুধীজনরাও বলেছেন, বর্তমানে যে বাস্তবতা বিরাজ করছে, তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন করা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে সম্ভব নয়। ইসির ক্ষমতার কথা বলা হলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ দেখা যায় না। নির্বাচন ভবনে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সমস্যা নিয়ে আলোচনা ও পর্যালোচনা চলে। এতে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব, সাবেক নির্বাচন কমিশনার, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ, সাবেক সচিব, সাবেক রাষ্ট্রদূত, গণমাধ্যম সম্পাদক, নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা অনেকে অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, অতিরিক্ত সচিব, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক, আইডিয়া দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পের পরিচালক, ইসির সিস্টেম ম্যানেজার ও যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা।
সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনটা ভালো হবে কি না, সেটা নির্ভর করছে পলিটিক্যাল উইলের (রাজনৈতিক সদিচ্ছ) ওপর। আন্তরিক পলিটিক্যাল উইল থাকতে হবে। এটা আমার থেকে আসবে না। পলিটিকস (রাজনীতি) থেকে আসতে হবে বা সরকার থেকে আসতে হবে।’ সমঝোতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি একটা সমঝোতার কথা, আপনারা চায়ের টেবিলে বসেন। কিন্তু রাজনৈতিক সংস্কৃতি এমন হয়েছে, কেউ কারও সঙ্গে বসতে চাচ্ছেন না। ইসি এ সমস্যার সমাধান করে না। দুঃখজনক হলো, সে ধরনের সিভিল সোসাইটিও দেখতে পাচ্ছি না।’
আপেক্ষ করে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আজ দলগুলো রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত।’
সুধীজনদের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা জানতে আগ্রহের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সামনের দিকে তাকাতে চাচ্ছি। আলোচনা কাজে আসুক, এ প্রত্যাশা আমাদের।’
সিইসি বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আসন্ন। এতে রাজনৈতিক দল, ভোটার, গণমাধ্যম, প্রবাসী বাংলাদেশিরা সবাই তাকিয়ে আছেন। কূটনৈতিক মহলেও ব্যাপক আগ্রহী। নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর।’ প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে কয়েকবার সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর আগে কোনো সরকার কখনো এমন প্রতিশ্রুতি দেয়নি। এই প্রথমবার সরকারপ্রধান এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এজন্য আমি বলব আস্থা রাখতে চাই।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমাদের দেশে মাস্তান ও পেশিশক্তি আছে। এর ফলে প্রিসাইডিং অফিসাররা অসহায় হয়ে পড়েন। আমরা নির্বাচন বাতিল করতে পারব। তবে যার জন্য নির্বাচন বাতিল হবে সে আর নির্বাচন করতে পারবে না।’
যেসব সমস্যা তুলে ধরলেন সুধীজনরা : সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘জামালপুরের মতো ডিসিদের (জেলা প্রশাসক) বিরুদ্ধে আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জামালপুরের ডিসি বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় আনতে হবে। এ খবর সব পেপারে দেখলাম। এদের দিয়ে ক্রেডিবল (বিশ্বাসযোগ্য) নির্বাচন হবে না। এসব ডিসির বিরুদ্ধে আপাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে কী করবেন। কীভাবে কাজ করবেন। এক জেলায় চারজন রিটার্নিং কর্মকর্তা দিয়ে নির্বাচন করাতে পারবেন। একই ডিসিদের রিটার্নিং করতে হবে বিষয়টি এমন নয়।’
সাবেক নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘কয়েক দিন আগে মালদ্বীপে ভোট হয়েছে, বড় বড় অবজারভার সেখানে ছিল। আপনাদের (ইসি) হাত-পা বেঁধে সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আপনারা একা সিদ্ধান্ত নেবেন। কোনো পলিটিক্যাল পার্টির কথা শুনবেন না। অতীত ভুলগুলো শোধরাবেন।’
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, ‘বিদেশি রাষ্ট্রগুলো আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করছে। আমরাই এদের ডেকে এনেছি। পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র আমাদের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। যদি আমরা ব্যর্থ হই, তাহলে এর মাশুল দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের হাতে ক্ষমতা থাকার পরও গাইবান্ধা নির্বাচনে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সেখানে পক্ষপাতের অভিযোগ করা হলে তা ভুল হবে না। পরামর্শগুলো গ্রহণ করেনি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে যে ক্ষমতা দেওয়া আছে, তার বাস্তবায়ন দেখতে চাই।’
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমরা মুখে শুধু বলি নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাবান, কিন্তু বাস্তবে কিছুই নেই। সংকট এতই কঠিন যে, সব দায় কমিশনের ওপর দিয়েও লাভ নেই।’ ইসির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা সবার থেকে পরামর্শ শুনছেন কিন্তু পরামর্শ বাস্তবায়ন করতে পারেননি। না পারার কারণ আপনাদের ব্যাখ্যা করা দরকার। আপনারা প্রিসাইডিং অফিসারের ক্ষমতার কথা বলছেন যে, সুষ্ঠু পরিবেশ মনে না হলে সব ফেলে তিনি চলে আসবেন। প্রিসাইডিং অফিসারের ঘাড়ে কয়টা মাথা যে তিনি সবকিছু ফেলে চলে আসবেন?’
সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেছেন, ‘বাস্তবতা আপনাদের (ইসি) অনুকূলে নেই। সরকার না চাইলে কমিশনের পক্ষে ভালো নির্বাচন সম্ভব নয়। এখনো গাইবান্ধা নির্বাচনে অনিয়মে দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, ‘এখানে প্রধান চ্যালেঞ্জ সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করা। এ ছাড়া গণতন্ত্র না থাকলে এমন নির্বাচন অর্থহীন।’
ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ‘বাস্তবে নির্বাচন ব্যবস্থা বিশ্বাসহীনতায় রয়েছে। একটা ভালো নির্বাচন হলেই যে সব সমস্যা সমাধান হবে তা নয়। তবে ভালো নির্বাচন সমাধানের সূচনা হতে পারে। রাষ্ট্রদূতদের লাই দিতে দিতে বিদেশিদের টেনে আনি। এর ফল কী, তা আমরা জানি?’
আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক আশিষ সৈকত, আরটিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশিক রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান, খবর সংযোগ সম্পাদক শেখ নজরুল ইসলাম, নাগরিক টিভির হেড অব নিউজ দীপ আজাদ, সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল, সিনিয়র সাংবাদিক অজয় দাস গুপ্ত, সময় টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ জুবায়ের, মাছরাঙা টেলিভিশনের হেড অব নিউজ রেজোয়ানুল হক রাজা, গাজী টিভির হেড অব নিউজ ইকবাল করিম নিশান, আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক বিভুরঞ্জন সরকার প্রমুখ।
সব নিরাপত্তা স্তর ফাঁকি দিয়ে পাসপোর্ট, টিকিট কিংবা বোর্ডিং কার্ড ছাড়াই ১২ বছরের শিশুর কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে উঠে যাওয়ার ঘটনার পর রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নিরাপত্তার এ ফারাকে উদ্বিগ্ন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্র্তৃপক্ষের (বেবিচক) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বিষয়টি নিয়ে গতকাল বুধবার বেবিচক চেয়ারম্যান সংস্থাটির ঊর্ধ্বতনদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। এ বৈঠকে শাহজালালসহ দেশের সবকটি বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কয়েক স্তরের নিরাপত্তার ফাঁক গলিয়ে কীভাবে ১২ বছরের শিশু জুনায়েদ উড়োজাহাজে উঠে পড়ল, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সবার মধ্যে। এ ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। গত সোমবার রাতের ওই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাতে দেখা যায়, একজন সাধারণ যাত্রী যেভাবে বিমানবন্দরে প্রবেশ করে, ঠিক সেভাবেই জুনায়েদ ঢুকেছে বিমানবন্দরে। এর আগেও সে চারবার বিমানে ওঠার চেষ্টা করেছিল। তবে বেবিচক কর্র্তৃপক্ষ বলছে, জুনায়েদ মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও বুদ্ধিমান।
এদিকে এ ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে শাহজালাল বিমানবন্দরে দায়িত্বরত বিভিন্ন সংস্থার ১০ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্র্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিশু জুনায়েদ বিমানে ওঠার ঘটনায় যাদের গাফিলতি ছিল, তাদের প্রত্যেককে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা ইমিগ্রেশন পুলিশ, এভসেক, কুয়েত এয়ারওয়েজ ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলার। এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তাদের প্রতিবেদনে পুরো ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এত নিরাপত্তার মধ্যে শিশুটি কীভাবে গেল তা নিয়ে আমাদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এটি আমরা থ্রেট (হুমকি) মনে করছি। কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এয়ারলাইনসের লোকজনও এ ঘটনার জন্য দায়ী। ঘটনাটি আমরা হালকাভাবে নিচ্ছি না। দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
শাহজালালসহ দেশের সব বিমানবন্দরে কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে মফিদুর রহমান বলেন, ‘বিমানবন্দরে নিরাপত্তার যে ফাঁক আছে, তা পূরণ করা হচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার তাই করা হচ্ছে। নিরাপত্তা সরঞ্জাম আরও আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, দেশের সবকটি আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের নিরাপত্তা আরও বাড়াতে গতকাল চিঠি পাঠিয়েছে বেবিচক। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় ও বেচিবক কর্মকর্তারা কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও বলেছে, বিমানবন্দরে নিরাপত্তার ঘাটতি আছে। ঘাটতি পূরণ করতে আরও কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে বলা হয়েছে। বর্তমানে দেশি-বিদেশি প্রায় ৪০টির মতো বিমান সংস্থা বাংলাদেশে তাদের ফ্লাইট পরিচালনা করছে এবং ৪৭টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বিমান চলাচল চুক্তি রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিমানের পাশাপাশি বেসরকারি কয়েকটি এয়ারওয়েজ যাত্রীবাহী বিমান সার্ভিস ছাড়াও ১০-১২টি বিমান সংস্থা কার্গো বিমান ও হেলিকপ্টার সার্ভিস পরিচালনা করছে। প্রতিদিন ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করে। কিন্তু বিমানবন্দরে নিরাপত্তার ঘাটতি আছে। যাত্রী আসা-যাওয়ার সময় যেনতেনভাবে তল্লাশি করা হচ্ছে। রানওয়েতেও নেই তেমন একটা নিরাপত্তা। খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে না। এসব অভিযোগ ওঠার পর নড়েচড়ে বসে বেবিচক। দেশের সব বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতনরা কয়েক দফা বৈঠক করেন। নিরাপত্তার নতুন সরঞ্জামের জন্য বেবিচক চিঠি পাঠায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। চিঠিতে নানা সমস্যার বিষয়েও বলা হয়। ইডিএস, ডুয়েল ভিউ এক্স-রে স্ক্যানিং মেশিন, ডুয়েল ভিউ এক্স-রে স্ক্যানিং মেশিন ফর কেবিন উইথ ট্রে রিটার্ন সিস্টেম, আন্ডার ভেহিকল স্ক্যানিং মেশিন, এক্সপ্লোসিভ ট্রেস ডিটেক্টর (ইটিডি), লিকুইড এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম, ডাবল ক্যাব পিকআপ, ইটিডি কনসুমাবেলস ফর এক্সপ্লোসিভ ট্রেস ডিটেক্টর মেশিনের কথা বলা হয় চিঠিতে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের রানওয়েতে নিরাপত্তা বাড়াতে বলা হয়। পুলিশের পাশাপাশি আনসারের সংখ্যাও বাড়াতে বলা হয়েছে।
বেবিচকের কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, শিশু জুনায়েদের ঘটনার পর তারা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। তাতে দেখা গেছে, সে একটি গেট দিয়ে প্রবেশ করার সময় আনসারের এক সদস্য তার দেহ তল্লাশি করেন। জুনায়েদ দুই হাত ওপরে তুলে আনসারকে সহায়তা করে। তবে এ সময় অন্য এক যাত্রীর শরীর তল্লাশি করার সময় জুনায়েদ ধাক্কা খেয়ে অন্যদিকে চলে যায়। তাকে কিছুক্ষণ ভেতরে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। তার হাতে পলিথিনের একটি ব্যাগ ছিল। ইমিগ্রেশনের প্রবেশের আগে সে দুটি গেটে যায়। ইমিগ্রেশনের প্রবেশ গেটে পুলিশ সদস্য না থাকার সুযোগে সে ইমিগ্রেশনের ভেতরে ঢুকে পড়ে। পরে ভেতরে এক নারীর পেছনে দাঁড়িয়ে নিচু হয়ে ইমিগ্রেশনের গেট পার হয়ে চেক-ইন কাউন্টারে চলে যায়। আকৃতি ছোট হওয়ায় ইমিগ্রেশন পুলিশ বিষয়টি বুঝতে পারেনি। চূড়ান্ত তল্লাশির সময়ও জুনায়েদ সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বিমানের ভেতরে প্রবেশ করে। কেবিন ক্রু তাকে একটি সিটে বসতে বলায় সে বসে পড়ে। কিন্তু যে সিটে বসেছিল তার যাত্রী আসলে বাধে বিপত্তি। কেবিন ক্রুরা জুনায়েদের কাছে গিয়ে পাসপোর্ট ও বোর্ডিং পাস দেখতে চাইলে সে দেখাতে পারেনি। পরে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের অবহিত করলে তাকে বিমান থেকে নামানো হয়। এরপর পাঠিয়ে দেওয়া হয় থানায়।
বেবিচকের এক কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বিমানবন্দরের নিরাপত্তা এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেখানে একটি পাখি গেলেও তল্লাশি ছাড়া ঢুকতে পারবে না। অথচ শিশুটি প্রতিবন্ধী হওয়ার পরও বুদ্ধি খাটিয়ে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। এতে পরিষ্কার হয়েছে বিমানবন্দরে নিরাপত্তায় ভালো ঘাটতি আছে।’
এভসেকের পরিচালক উইং কমান্ডার মিরান বলেন, ‘বিমানবন্দরে কর্মরত প্রতিটি কর্মী ডিউটি পাস ব্যবহার করে চলাফেরা করেন। বাকি যারা যাত্রী তারা পাসপোর্ট ও বোর্ডিং পাস দিয়ে চলাফেরা করেন। এ ছাড়া বিমানবন্দরে ঢুকে ইমিগ্রেশনসহ ১২টি ধাপ পেরিয়ে বিমানে উঠতে হয়। কোনো ধাপেই শিশুটিকে আটকানো যায়নি।’
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জুনায়েদ জানায়, তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে। একাই মুকসুদপুর থেকে রাজধানীর বসুন্ধরায় তার ফুপুর বাসায় আসে। বাসে করে প্রথমে সে গাজীপুর আসে। সেখান থেকে একটি ডাবল ডেকার বিআরটিসি বাসে করে বিমানবন্দর চলে আসে। উদ্দেশ্য বিমানবন্দর ঘুরে দেখা।
ডিবির বিমানবন্দর জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সে (জুনায়েদ) মূলত তার ফুপুর বাসায় বেড়াতে এসেছিল। যেভাবে বিমানবন্দরের ভেতরে চলে গেছে, তাকে কেউ আটকায়নি, কারও চোখে পড়েনি। তাকে না আটকানো বিমানবন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীন কাজ। থানায় নিয়ে আসার পর শিশুটির কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে তাকে ছেড়ে দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘একাধিকবার বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিল সে। পরে নিজে নিজেই বাড়িতে ফিরে যেত। তাই এবার পালানোর পর বাবা-মা আর পুলিশে খবর দেননি। এ ঘটনার আগেও বিমানে চড়তে ব্যর্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে গেছে। এবার কৌশল পাল্টে বিমানবন্দরে ঢুকে শিশুটি। একটি পরিবারের সঙ্গে কথাবার্তার মাধ্যমে মিশে যায় সে। তাই কেউ ধরতে পারেনি যে ছেলেটি সেখানে একা কিংবা তার কাছে কোনো পাসপোর্ট বা বোর্ডিং পাস নেই।’
বিমানবন্দর থানার ওসি আজিজুল হক মিয়াও একই ধরনের তথ্য জানান।
পুলিশের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা দুর্বল আখ্যায়িত করে সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিবেদন দিয়েছে। নিরাপত্তার কারণে নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট চালু করা যাচ্ছে না। সরকার ফ্লাইটটি চালু করতে নানাভাবে চেষ্টা করে আসছিল। এ ঘটনার পর আবারও প্রশ্ন দেখা দেবে।
নির্বাচনের বছরে নেই নির্বাচন কর্মকর্তা। তাহলে কারা নির্বাচন পরিচালনা করবেন। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিল। তাদের দুশ্চিন্তা দূর করে দিচ্ছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। ৪০০ নির্বাচন কর্মকর্তা বাছাইয়ের কাজ শেষ করেছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। তাদের নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হবে এ মাসেই। এসব কর্মকর্তার মধ্যে ৯০ জন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং ৩১০ জন সহকারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন অফিসারদের সুপারিশ করতে সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ লাগবে। এর বেশি সময় লাগার কোনো কারণ নেই।’
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার পদ শূন্য থাকায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ থেকে শুরু করে নির্বাচনসংক্রান্ত নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনায় সমস্যা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে পাশের উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে শূন্য জায়গায় অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। ফলে দুই উপজেলায় কাজ করতে গিয়ে ওই কর্মকর্তা কোনো অফিসেই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। নির্বাচনে জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) রিটার্নিং অফিসার এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাচন কর্মকর্তারা তাদের দাপ্তরিক কাজে সহায়তা করেন। কয়েক বছর ধরে, বিশেষ করে উপনির্বাচনে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদেরই সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন ফোরাম বা গোষ্ঠী নির্বাচন কর্মকর্তাদের দিয়েই নির্বাচন পরিচালনার জন্য চাপ দিয়ে আসছে।
সংশোধিত আরপিওতে বলা হয়েছে, একজন জেলা প্রশাসককে একটি আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হবে। এ অবস্থায় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব আরও বেড়ে যাবে।
নির্বাচন কমিশনের সুপারিশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর ৫১৭ জন সহকারী উপজেলা নির্বাচন অফিসারের পদের অনুমোদন দেয়। এরপর নানা জটিলতায় এই পদে নিয়োগ দিতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। আগে এই পদের নিয়োগবিধি ছিল না। নির্বাচন কমিশন নিয়োগবিধি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেখান থেকে প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটিতে অনুমোদন হয়। এরপর পিএসসিকে নিয়োগের জন্য চাহিদাপত্র পাঠায় নির্বাচন কমিশন।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা পদ দুটি নন-ক্যাডার শ্রেণির। এর মধ্যে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নবম গ্রেডের এবং সহকারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দশম গ্রেডের। এই দুটি পদে ৪০০ কর্মকর্তার চাহিদা পেয়ে পিএসসি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার কথা চিন্তা করেছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন পিএসসিকে জানায়, এসব পদে জরুরিভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। কারণ তারা আগামী সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করবেন। নিয়োগ দেওয়ার পর তাদের কয়েক মাসের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এ অবস্থায় পিএসসি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার চিন্তা থেকে সরে আসে। তারা ৪০তম বিসিএস থেকে এসব কর্মকর্তাকে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
বিসিএস পাস কিন্তু পদ স্বল্পতার কারণে যাদের ক্যাডার পদে সুপারিশ করা যায় না, তাদের বিভিন্ন দপ্তরের নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এতে করে একদিকে সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন মেধাবী কর্মকর্তা পায়, তেমনি পিএসসি অল্প সময়ের মধ্যে তাদের নিয়োগের সুপারিশ করতে পারে। আর চাকরিপ্রার্থীদের দিক থেকে সুবিধা হলো তারা একই পরীক্ষায় ক্যাডার পদ না পেলেও নন-ক্যাডার পদে চাকরি পাচ্ছেন।
কিন্তু ৪০তম বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করার পরও পিএসসি নন-ক্যাডারের সুপারিশ চূড়ান্ত করতে পারছিল না। নিয়ম অনুযায়ী ক্যাডার বঞ্চিতদের নন-ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রার্থীদের আবেদন চাওয়া হয়। তাদের আবেদন পাওয়ার পর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী (পুর) / উপজেলা সহকারী প্রকৌশলীর ১৫৬টি পদে নিয়োগ জটিলতা দেখা দেয়। বিষয়টি আদালতে গেলে ১৫৬ পদ রেখে অবশিষ্ট পদে নিয়োগ সুপারিশ করার অনুমতি পায় পিএসসি। মামলার কারণে এই নিয়োগ-প্রক্রিয়া আটকে যায়। কিন্তু এখন আর কোনো বাধা না থাকায় সুপারিশের কাজ শুরু করেছে পিএসসি। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ৪০০ নির্বাচন কর্মকর্তাসহ ৪ হাজার ৩২২ জনকে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এ মাসেই চূড়ান্ত সুপারিশ করবে পিএসসি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক-সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি এখনো নিশ্চিত হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাজেটস্বল্পতার যুক্তিতে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষকদল পাঠাতে পারবে না বলেছে। এখন পর্যন্ত আবেদনকারী ২১০টি দেশি সংস্থা বা সংগঠনের মধ্যে ৬৬টিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে।
নির্বাচনের তিন মাসেরও কম সময় বাকি। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের কাছ থেকে কাক্সিক্ষত সাড়া না পেয়ে তাদের চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানোর কথা ভাবছে ইসি। তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচন নিয়ে বড় কোনো প্রশ্ন যাতে না ওঠে, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা যেন বাধাগ্রস্ত না হয়। এ লক্ষ্যে সব চেষ্টাই নির্বাচন কমিশন করবে। ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে।
অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়েছে, সেটি বোঝাতে হলে আন্তর্জাতিক মহলে বার্তা পৌঁছাতে হবে। আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে এ বার্তা পৌঁছানোর কাজটি করেন বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। ইইউ বলে দিয়েছে, তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। যুক্তরাষ্ট্র সরকার নির্বাচন-পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না, তার জন্য ক্ষেত্রসমীক্ষণে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) যৌথ প্রতিনিধিদল আসবে। ৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল ও তাদের সহায়তাকারীরা ৭ থেকে ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি এবং দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করা নিয়ে টুইটবার্তা এবং বিভিন্ন বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের ধারণা, তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত এ বার্তাই দিচ্ছে যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু না-ও হতে পারে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার কাছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত না হলে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) পর্যবেক্ষক না পাঠালেও আরও অনেক দেশ আছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোকে (আফগানিস্তান, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা) আমন্ত্রণ জানিয়ে অক্টোবরে চিঠি দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষকদের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে ভালো হয়। আমরা চাই দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা বেশি সংখ্যায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করুক। আমরা আশা করি বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি সংস্থা।
পৃথিবীতে আরও অনেক দেশ আছে।’
আপনারা তো ভোটের জন্য শতভাগ প্রস্তুত কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি নির্বাচনমুখী কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেভাবেই হোক সংবিধান অনুযায়ী জানুয়ারির ২৯ তারিখের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। না হলে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে। এতে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। নির্বাচন কমিশন সেটা হতে দিতে পারে না।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমেরিকা আসবে না বলেনি। আসলে আমরা খুশি হব। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য যেসব যোগ্যতার প্রয়োজন, সেসব থাকলে যে কেউ আসতে পারে।’
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষক দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। আশা করি নির্ধারিত সময়ের আগেই তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসবে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বদিউল আলম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে, নির্বাচনসংক্রান্ত বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামো, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে যে দলীয়করণ হয়েছে, তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অতীতেও তা হয়নি। আগামীতে হবে বিশ্বাস করা কঠিন। যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, তথ্য-উপাত্ত নিয়েই তা করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও বলেছে, তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। নেতিবাচক মনোভাবই তাদের সিদ্ধান্তে প্রকাশ পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা আসেনি। ফলে সেটি আন্তর্জাতিক মানদ-ে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। ওই দুটি নির্বাচন সব মহলেই প্রশ্নবিদ্ধ। এখন সরকার বা ইসি যে কথা বলছে, তাতে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নীতির বদল হবে বলে মনে হয় না। আস্থা তৈরি করতে হলে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সূত্রগুলো বলছে, তারা নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে কাজ করছে। ইতিমধ্যে ইইউকে ছোট পরিসরে হলেও পর্যবেক্ষক পাঠাতে ২৪ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে কমিশন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে এমন প্রতিশ্রুতি সিইসি দিচ্ছেন। সরকারও একই কথা বলছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার ও নির্বাচন কমিশন। যদিও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ফলে আস্থার একটা সংকট তৈরি হয়েছে। তা কাটানোর জন্যই ইসি নানা পরিসরে কাজ করছে।
সূত্রমতে, ইইউর নেতিবাচক মনোভাবের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষকদের সন্তেুাষজনক তথ্য তৈরির কাজ করছে ইসি সচিবালয়। মার্কিন দলের মনোতুষ্টির বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে কমিশনের। নির্বাচনী তফসিল থেকে নির্বাচনী ফল ঘোষণা পর্যন্ত সব কর্মকা-, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়গুলো তাদের কাছে তুলে ধরা হবে।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতির সুবিধা হলো তারা নির্বাচনী কাজে জড়িতদের জবাবদিহির মুখোমুখি করে। পর্যবেক্ষকদের কোনো আইনি শক্তি নেই। তবে তারা নৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এতে প্রার্থীদের সমর্থকদের আচরণও প্রভাবিত হয়। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে ভোটারদের ওপর, তারা আস্থা পান।’
তিনি বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে তাতে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা অংশ নেয় না। আগামী নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এখন পর্যন্ত সব দলের অংশ নেওয়ার বার্তা নেই। সব দলই নিজ অবস্থানে অনড়। এ কারণেই বিদেশিরা আগ্রহ প্রকাশ করছে না।’
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশে সাধারণত ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, সার্কভুক্ত দেশ, কমনওয়েলথ, ওআইসি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে এমন সংস্থা, মানবাধিকার গোষ্ঠী, ঢাকায় বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। ২০১৮ সালে দেশি ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন এবং ওআইসি ও কমনওয়েলথ থেকে আমন্ত্রিত ও অন্যান্য বিদেশি পর্যবেক্ষক ছিলেন ৩৮ জন, কূটনৈতিক বা বিদেশি মিশনের কর্মকর্তা ৬৪ জন এবং বাংলাদেশে দূতাবাস বা হাইকমিশন বা বিদেশি সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশি ৬১ জন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের সুযোগ দিতে এবার দ্বিতীয়বারের মতো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। দেড় শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে। প্রথমবার দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বাদপড়াদের মধ্য থেকেই বেশি আবেদন এসেছে বলে জানা গেছে।
গত ১৮ জানুয়ারি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের জন্য প্রথমবারের মতো আবেদন আহ্বান করেছিল নির্বাচন কমিশন। ২১১টি সংস্থা আবেদন করেছিল। গত ৮ আগস্ট প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ ৬৮টি সংস্থার তালিকা প্রকাশ করে সংস্থাটি। আপত্তি ওঠায় দুটি সংস্থাকে বাদ দিয়ে শেষপর্যন্ত ৬৬টি সংস্থাকে নিবন্ধন দেয় কমিশন। এসব সংস্থার ৪২টিই ছিল নতুন। এর আগে তারা কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজ করেনি; সংস্থাগুলোর সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে পর্যবেক্ষক সংস্থার সংখ্যা অর্ধেকের মতো কমে যাওয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো ১৫ সেপ্টেম্বর ১০ দিনের জন্য ফের আবেদন আহ্বান করে ইসি। এর সময় শেষ হয়েছে ২৪ সেপ্টেম্বর।
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগের মতোই বাছাই শেষে দাবি-আপত্তি আহ্বান করা হবে। তারপর চূড়ান্ত হবে কোন কোন সংস্থা নিবন্ধন পাচ্ছে।
ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দেড় শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে।’
২০০৮ সাল থেকে ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষক নিবন্ধন দিচ্ছে ইসি। সে সময় ১৩৮টি সংস্থা নিবন্ধন পেয়েছিল। ২০১৮ সালে ১১৮টি সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল ইসি। পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের পাঁচ বছরের মেয়াদ গত ১১ জুলাই শেষ হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য সংশোধিত নীতিমালা : আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য নীতিমালা সংশোধন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ২৬ সেপ্টেম্বর ইসি এই নীতিমালা জারি করেছে। সংশোধিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো বিদেশি নাগরিক বা সংস্থা বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে চাইলে তাদের সুশাসন, নির্বাচন, গণতন্ত্র, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সংস্থাগুলোকে সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধিত হতে হবে।
শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করা হচ্ছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, ‘ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হবে।’
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি জামায়াতে ইসলামকে ইসলামের দুশমন মন্তব্য করে বলেন, ‘যারা একাত্তরে মানুষ হত্যা করেছে, তারা মুসলমান হতে পারে না। তাদের জামাকাপড়ে মুসলমান ভাব থাকলেও অন্তরে নেই। খুনিরা মুসলমান হতে পারে না- কারণ ইসলাম শান্তির ধর্ম- যা মানবতার কথা বলে।’
এ সময় সারা দেশে মডেল মসজিদ নির্মাণসহ ইসলেমের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরেন শাজাহান খান।
অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘আশেকানে গাউছিয়া রহমানিয়া মইনীয়া সহিদীয়া মাইজভাণ্ডারীয়া’।
সংগঠনের প্রধান পৃষ্টপোষক শাহসূফি মাওলানা শাহজাদা সৈয়দ সহিদউদ্দিন আহমেদ আল-হাসানী ওয়াল-হোসাইনি মাইজভাণ্ডারী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ সা. সৃষ্টি না হলে পৃথিবী সৃষ্টি হতো না। সেই দয়াল নবীর মত ও পথকে অনুসরন করতে হবে। সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে, জীবন চালাতে হবে। এ ছাড়া আল্লাহর নৈকট্য লাভের ভিন্ন কোনো সুযোগ নেই।
আলোচনা সভা সেমিনারের পর দুপুর সোয়া ১২টায় ঈদে মিলাদুন্নবীর জশনে জুলুশ (র্যালি) বের হয়। গুলিস্তান জিরোপয়েন্ট থেকে পল্টন মোড় হয়ে র্যালিটি আবার জিরো পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়।
পরে আখেরি মোনাজাতে দেশ ও জাতির শান্তি-সমৃদ্ধি কামনা করেন সৈয়দ সহিদউদ্দিন আহমেদ মাইজভাণ্ডারী।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ইলেকশন মনিটরিং কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবেদ আলীসহ হাক্ক্বানি ওলামায়ে ক্বেরামগণ। এ সময় ভক্ত ও আশেকানবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সাত বছর পর ভারতের মাটিতে অবতরণ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তারা গিয়েছিল সেখানে। তারপর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে। টুর্নামেন্ট শুরুর এক সপ্তাহ আগে তারা পৌঁছালেন দেশটিতে। সেখানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোটেলে।
বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাবর আজমরা সেখানে পৌঁছানো মাত্রই উচ্ছ্বসিত জনতা ভিড় করেন। হায়দ্রবাদের বিমানবন্দরের বাইরে তাদের দেখে অনেকেই চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। বাবরের নাম উচ্চারণ করতও শোনা গেছে এসময়। পুলিশ উৎসুক জনতাকে আটকে রেখেছিল।
রাজনৈতিক বৈরি সম্পর্কের কারণে দুই দলের দেখা হয় না দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে। বিশ্ব মাতানো ক্রিকেটার থাকলেও পাকিস্তানিরা খেলতে পারে না আইপিএলে। কারণ ঐ একটাই। তবে বৈশ্বিক বা মহাদেশীয় ইভেন্টে তাদের ঘিরে আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। সেটা দেখা গেছে এশিয়া কাপেও।
বিশ্বকাপ খেলতে আজ বাংলাদেশ উড়াল দিয়েছে ভারতে। সেই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখে টাইগাররা। তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছাড়ার পর সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের ভার। আর আজই জানা গেল, বিশ্বকাপের পর একদিনও তিনি অধিনায়কত্ব করবেন না।
গত ১১ আগস্ট তৃতীয় দফায় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান। তখনই বলা হয়েছিল, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ও ভারত বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এই বিশ্বকাপই শেষ। এরপর একদিনও (অধিনায়কত্ব) করবো না। যে কারণে আমি এশিয়া কাপের আগে নিতে চাইনি। এরপরও এটা না। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হাসতে চাই, খেলতে চাই, পারফর্ম করতে চাই। এই একটা কারণে আমি করতে চাইনি।’
সাকিব যোগ করেন, ‘আর কোনে কারণ নেই। বেস্ট হয় যদি অধিনায়ক না থাকি। অধিনায়কত্ব কি আমার কোনো ভেল্যু এড করতেছে ক্যারিয়ারে এই স্টেজে এসে? আমি তো মনে করি না।’
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।