
মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেওয়াকে কেন্দ্র করে মৃত্যুর অসত্য তথ্য দেওয়ায় মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র ও পরিচালক এএসএম নাসির উদ্দিন এলানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে দুজনকে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এএম জুলফিকার হায়াত এ রায় দেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, আসামিরা মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে অসত্য ও বিকৃত তথ্য দিয়েছেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের এ মামলায় সর্বোচ্চ সাজা ১৪ বছর ও সর্বনিম্ন সাত বছর কারাদণ্ড। কিন্তু আসামিদের সামাজিক অবস্থান, বিচারকাজের সময় আদালতকে সহযোগিতা করা এবং তাদের বিরুদ্ধে আগের কোনো ফৌজদারি মামলার তথ্য না থাকায় সাজা কম দেওয়া হয়েছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের (পরে আইনটি পরিবর্তিত) ৫৭ ধারায় দুজনকে এ দণ্ড দেওয়া হয়। ১০ বছর আগের এ মামলায় গত ২৪ আগস্ট যুক্তিতর্কের শুনানি শেষ হলে আদালত ৭ সেপ্টেম্বর রায়ের জন্য দিন ধার্য করে। তবে, ওইদিন (৭ সেপ্টেম্বর) রায়ের তারিখ পিছিয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর ধার্য করে আদালত। শুনানিকালে ২২ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন।
জামিনে থাকা আদিলুর ও এলানকে রায় ঘোষণা শেষে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। রায়ের পর আদালতের ডকে থাকা আদিলুর ও এলানকে স্বাভাবিক এবং হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়।
রায়ের সময় আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন, ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের মানবাধিকার-বিষয়ক কর্মকর্তা সোফিয়া মেউলেনব্রেগ, জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয়ের মানবাধিকার-বিষয়ক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হুমা খানসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
নূর খান লিটন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘৫৭ ধারা নিয়ে মানবাধিকারকর্মী, গণমাধ্যমসহ সবার আপত্তি ছিল। পরে ধারাটি বিলুপ্ত করা হয়। কিন্তু এই ধারাতেই বিচার করা হলো।’ তিনি বলেন, ‘এই রায়ের মাধ্যমে মানবাধিকারকর্মীদের কর্মীদের এক ধরনের শঙ্কা ও ভীতির মধ্যে কাজ করতে হবে।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী রুহুল আমিন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, তারা ন্যায়বিচার পাননি। সাজা থেকে খালাস চেয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। সাইবার ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি নজরুল ইসলাম শামীম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাছে মনে হয়েছে সাজা অপর্যাপ্ত হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে তা পর্যালোচনা করে আপিলের সিদ্ধান্ত হবে।’
উল্লেখ্য, বিভিন্ন অভিযোগে ২০২২ সালের জুনের প্রথম সপ্তাহে অধিকারের নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত দেয় এনজিওবিষয়ক ব্যুরো।
২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলে শাপলা চত্বর এলাকায় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ৬১ জনের মৃত্যুর তথ্য ওই বছরের ১০ জুন অধিকার তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। অসত্য ও বিকৃত তথ্য প্রকাশের অভিযোগে আদিল ও এলানের বিরুদ্ধে দুটি জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করা হয়। মামলার পর ওই বছরের ১০ আগস্ট আদিলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও অধিকারের কার্যালয়ে তল্লাশি করে কম্পিউটার ও ল্যাপটপ জব্দ করে পুলিশ। তদন্ত শেষে ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর দুজনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি)। এতে বলা হয়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অসত্য ও বিকৃত তথ্য প্রকাশ করে আইনশৃঙ্খলা বিঘেœর অপচেষ্টাসহ অধিকার রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। ওই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র আমলে নেয় আদালত। অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে আবেদন করা হলে ২০১৭ সালের ৯ জানুয়ারি তা খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের এ সিদ্ধান্ত আপিল বিভাগেও বহাল থাকে।
যুক্তরাষ্ট্র, অ্যামনেস্টির উদ্বেগ : আদিলুর ও এলানের দুই বছরের সাজার রায়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। গতকাল ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র মানুষের অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রচার ও সুরক্ষায় মানবাধিকারকর্মী এবং সুশীল সমাজ সংগঠনগুলোর কার্যক্রমকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। এই অবস্থায় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান এবং পরিচালক এএসএম নাসির উদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে রায়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং মনে করছে, এটি মানবাধিকারকর্মী এবং সুশীল সমাজের গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক ভূমিকা পালনের সদিচ্ছাকে আরও দুর্বল করে দিতে পারে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গণতন্ত্রের অপরিহার্য অংশ হিসেবে আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং নাগরিক সমাজকে অব্যাহতভাবে সমর্থন করি এবং মৌলিক অধিকার নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টার বিরোধিতা করি।
গতকাল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অফিসের সামাজিক মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, অধিকার ২০১৩ সালে সংঘটিত এক বিক্ষোভের ঘটনায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এর জেরে অধিকারের বিরুদ্ধে বিতর্কিত আইসিটি আইনে মামলা হয়। ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে সত্য ঘটনা তুলে ধরায় রাষ্ট্র ‘অধিকার’ ও এর নেতাদের ধারাবাহিকভাবে ধরপাকড় করছে। আদিলুর ও এলানের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়ে অ্যামনেস্টি আরও বলে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের নথিভুক্ত করা কোনো অপরাধ নয়। আমরা বাংলাদেশি কর্র্তৃপক্ষকে অবিলম্বে এবং নিঃশর্তভাবে আদিলুর রহমান খান ও নাসিরউদ্দিন এলানকে মুক্তি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
বিশ্বেখাদ্যপণ্যের মূল্য দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এলেও বাংলাদেশে উল্টো চিত্র। কিছু অসৎ ব্যবসায়ী ও ফড়িয়াদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় এখন বিভিন্ন খাদ্যপণ্যে নানা সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। শুধু আমদানি পণ্যই নয়, এসব সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে এখন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কৃষিপণ্যও অস্বাভাবিক মূল্যে কিনতে হচ্ছে জনসাধারণকে। এর ফলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এক দশকের সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাজারদর নিয়ন্ত্রণে ভোজ্য তেল ও চিনির মতো খুচরা পর্যায়ে ডিম, পেঁয়াজ ও আলুর দামও নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার।
শুধু তাই নয়, সরকারের বেঁধে দেওয়া ডিমের দাম ব্যবসায়ীরা না মানলে পণ্যটি আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ডিম, আলু ও দেশি পেঁয়াজের দাম বেঁধে দেন। বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী, এখন থেকে প্রতিটি ফার্মের ডিম ১২, আলু খুচরা পর্যায়ে ৩৫-৩৬ (হিমাগার পর্যায়ে ২৬-২৭) এবং দেশি পেঁয়াজের দাম হবে ৬৪-৬৫ টাকা।
নতুন করে তিন পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ায় সরকারের প্রতি সাধুবাদ জানালেও এমন উদ্যোগ আরও আগেই নেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বাংলাদেশে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকারের কোনো সংস্থাই কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে না। এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা কমিশন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। মাঝেমধ্যে বাজারে অভিযান চালিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের নামমাত্র জরিমানা করলেও পণ্যমূল্য বাড়াতে যেসব সিন্ডিকেট প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারেনি সরকার। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন দুর্বলতার সুযোগেই পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক হারে বাড়াতে পেরেছেন ব্যবসায়ীরা। পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যোগসাজশেরও অভিযোগ উঠেছে।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, পণ্যের দাম বেড়ে গেলে সরকার একটা মূল্য নির্ধারণ করে দিতে পারে। তেমনি দাম কমে গেলেও কৃষক বাঁচাতেও একই কাজ করতে পারে। তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, সরকার পণ্যগুলোর যে দাম বেঁধে দিয়েছে তা কতটা কার্যকর হবে। অর্থাৎ সরকারের তদারকি সংস্থাগুলো তা বাস্তবায়ন করতে কতটা তৎপর হবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, অতীতে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা বরাবর ফুটে উঠেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে তারা সক্ষম না। সক্ষমতা থাকলে পণ্যের মূল্য বেঁধে দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না।’
ড. জাহাঙ্গীর আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে সিন্ডিকেট ও সরকার মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। যদিও সরকার বলছে মূল্য নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু কার্যত তা হচ্ছে না। এর জন্য সরকার ও বাজার তদারকির দায়িত্বে থাকা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও প্রতিযোগিতা কমিশন দায়ী। বাজার নিয়ন্ত্রণে তাদের মাঠে দেখা যাওয়ার কথা থাকলেও তাদের খবরের কাজেই বেশি দেখা যায়।’
ডিম উৎপাদনে কোনো সংকট না থাকলেও পোলট্রি শিল্পের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোর যোগসাজশে চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রতিটি ডিম ১৪-১৫ টাকায় বিক্রি হয়। পরবর্তী সময় সরকারের পক্ষ থেকে ডিম আমদানির হুমকির মুখে কিছুদিনের মধ্যেই প্রতিটি ডিমের দাম ১০ টাকায় নেমে আসে। তবে ডিমের এ মূল্য বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। জুলাই মাস থেকেই ফের বাড়তে শুরু করে ডিমের দাম। কয়েক ধাপে বাড়িয়ে গতকাল পর্যন্ত প্রতিটি ডিম বিক্রি হয়েছে সাড়ে ১২ থেকে সাড়ে ১৩ টাকায়। যদিও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিম বিক্রি হয় ৫ রুপিতে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় সর্বোচ্চ সাড়ে ৬ টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, করপোরেট সিন্ডিকেটের কারণে দেশে গত কয়েক মাস ধরেই ডিমের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। দেশের ডিম উৎপাদনের বেশিরভাগ অংশই তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বর্তমানে কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোলট্রি, সিপি বাংলাদেশ, ডায়মন্ড এগ ও নারিশ এগ্রোসহ ১০টি শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের প্রতিদিনের ডিম উৎপাদনের ক্ষমতা প্রায় ৫৬ লাখ। এর বাইরে প্রান্তিক খামারিদের সঙ্গে কন্ট্রাক ফার্মিংয়ের মাধ্যমেও ডিম ও পোলট্রি মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণ করে এ সিন্ডিকেট। এ ছাড়া ফড়িয়াদের মাধ্যমেও প্রান্তিক খামারিদের কাছ থেকে ডিম সংগ্রহ করে বাজার ব্যবস্থার পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা। প্রতিদিন মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে ডিমের মূল্য নির্ধারণ করে বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দেয় এ সিন্ডিকেট। এভাবেই ডিমের বাজার ও দাম নিয়ন্ত্রণ করছে সিন্ডিকেটটি।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিম যদি ১২ টাকায় বিক্রির সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ীরা না মানেন, তাহলে পণ্যটির আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে ডিম আমদানির অনুমতি চেয়ে ব্যবসায়ীদের আবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা আছে। আলুর দাম নির্ধারণ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, হিমাগার থেকে বেশি দামে আলু বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেলে নিলাম করে নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করে দেওয়া হবে।
শুধু ডিম কিংবা পোলট্রি মুরগি নয়, এখন আলুর মতো সবজি নিয়েও সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। দেশে আলুর কোনো ঘাটতি না থাকলেও দ্বিগুণেরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে খাদ্যপণ্যটি। গত বছর এ সময়টাতেও আলুর দাম ছিল সর্বোচ্চ ২০-২৫ টাকা। কিন্তু চলতি বছর এপ্রিল থেকেই সিন্ডিকেটের কল্যাণে এ পণ্যটির দাম একটু একটু করে বাড়তে শুরু করে আগস্টে ৪০ টাকায় উঠে যায়। আর চলতি মাসেই পণ্যটির দাম আরও বেড়ে গিয়ে ৫০ টাকায় উন্নীত হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনই এ পণ্যটির দাম এতটা বাড়েনি। যদিও দেশে আলুর কোনো সংকট নেই।
সম্প্রতি হিমাগার মালিকদের সংগঠনও আলুর দাম সর্বোচ্চ ৩৫-৩৬ টাকা হতে পারে বলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়। বর্তমানে হিমাগারগুলোতে যে পরিমাণের আলু রয়েছে তা দিয়ে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের চাহিদা অনায়াসে মেটানো যাবে বলে হিমাগার মালিকরা জানিয়েছেন।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সরকারি সংস্থাগুলো বিভিন্ন খাদ্যপণ্য উৎপাদনের যে হিসাব দেয়, তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। যেমন পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা রয়েছে ২৬ থেকে ২৮ লাখ টন। কিন্তু কৃষি অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন হয়েছে ৩৫ লাখ টন। উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে গড়ে ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ পচলেও উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৪ লাখ টনের বেশি। অধিদপ্তরের হিসাবে সর্বোচ্চ দুই লাখ টনের ঘাটতি থাকার কথা। কিন্তু প্রতিবছর এর চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণের পেঁয়াজ আমদানি করে আনতে হয়।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের চাহিদা ও উৎপাদন নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্যও পেঁয়াজের দাম বাড়াতে ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উৎপাদন মৌসুমে চাষিরা যাতে ন্যায্য দাম পান, সেজন্য পেঁয়াজ আমদানি নিষিদ্ধ থাকে এ সময়টাতে। কিন্তু কোনো সংকট না থাকলেও চলতি বছর এপ্রিল থেকেই পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে। কৃষকের কাছ থেকে বেশিরভাগ পেঁয়াজ মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে চলে যাওয়ার পর গত মে মাসেই পেঁয়াজের দাম প্রায় তিনগুণ হয়ে যায়। এ সময় বিভিন্ন পক্ষ থেকে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে বারবার আমদানির অনুমোদন দেওয়ার দাবি জানানো হলেও কৃষিমন্ত্রী তা দেননি। বরং মে মাসে যখন পেঁয়াজের দাম ৮০ টাকা ছাড়িয়ে যায়, তখন আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। কারসাজিকারকরা আমদানি করা পেঁয়াজের দামও ৬০-৭০ টাকায় নিয়ে যায়। তিন মাসেরও বেশি সময় পেঁয়াজের উচ্চমূল্য থাকার পর এখন দেশি পেঁয়াজের দাম ৬৪-৬৫ টাকায় নির্ধারণ করে দিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তবে এ দাম কার্যকর হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
টিপু মুনশি বলেন, ‘উৎপাদন খরচ হিসাব করে আমরা দেখেছি ডিম, আলু ও পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সেজন্য আমরা কৃষি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে এ দাম নির্ধারণ করেছি।’
পণ্যের দামে অস্থিরতা প্রসঙ্গে কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান আরও বলেন, ‘খোলা বাজারের পরিস্থিতি বলছে, পণ্যের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার পেছনে বড় কারণ ব্যবসায়ীদের কারসাজি। তা না হলে আমাদের দেশে প্রতিবছর যে পরিমাণের আলু উৎপাদন হয় তাতে প্রতি কেজি আলুর দাম ৫০ টাকা হওয়ার কথা নয়। ডিমের বিষয়টি একই রকম। কেননা, আমাদের পাশের দেশে যে দামে ডিম বিক্রি করছে তার থেকে দ্বিগুণ দামে আমাদের ডিম কিনতে হচ্ছে। তাদের দেশেও উৎপাদন খরচ বেড়েছে, কিন্তু তারা আমাদের মতো সিন্ডিকেট করছে না।’
গত বুধবার কৃষিপণ্যের মূল্য পর্যালোচনা-সংক্রান্ত একটি সভা হয়। সেখানে উপস্থাপন করা সরকারি হিসাবে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাজারে প্রতি হালি ফার্মের ডিম ৫০-৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। অন্যদিকে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৭০-৮০ টাকা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, দাম বেঁধে দেওয়া তিন কৃষিপণ্য কী দামে বিক্রি হচ্ছে, সেটি শুক্রবার (আজ) থেকে তদারকিতে নামবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
এদিকে ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ ছাড়াও গতকাল সয়াবিন তেলের দাম কমানোর ঘোষণাও দেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ৫ টাকা কমে এখন ১৬৯ টাকা হবে। তবে বাজারে এখন সয়াবিন তেলের দাম সরকারের নির্ধারণ করা দামের চেয়েও কমে পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল কারওয়ান বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৭৯০ থেকে ৮২০ টাকায়। আর বাণিজ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের মূল্য হবে ৮৪৫ টাকা।
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতিতে গভীর উদ্বেগ জানানো হয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক অধিবেশনে। এ বিষয়ে এক যৌথ প্রস্তাবও আনা হয়েছে। এতে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারচর্চায় আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুসরণের আহ্বান এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিশেষ করে অধিকারের মামলা’ শীর্ষক প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হওয়ার কথা।
এদিকে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের যৌথ প্রস্তাব সরকার আমলে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। তবে বিষয়টিতে তিনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং চক্রান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ফ্রান্সের স্ত্রাসবুর্গে
স্থানীয় সময় গত বুধবার রাতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মধ্য ডানপন্থি, সোশ্যাল ডেমোক্রেট, বামপন্থিসহ সাতটি গ্রুপ প্রস্তাবটি আনে। অধিবেশনের বিতর্কে অংশ নেন ছয় সদস্য। ওই প্রস্তাবে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, মানবাধিকারকর্মী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কাজের নিরাপদ ও অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিতের কথাও তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের প্রসঙ্গটি।
এ ছাড়া বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও বাংলাদেশে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে বল প্রয়োগের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে পক্ষগুলো। তারা ২০২৪ সালে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যা, বলপূর্বক অন্তর্ধান বা গুম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শ্রমিকদের অধিকার খর্ব করাসহ বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ওই প্রস্তাবে মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার এবং সংগঠনটির নিবন্ধন আবার চালু করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলো যেন অনুমোদিত বিদেশি অনুদান কাজে লাগাতে পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সরকারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া প্রস্তাবে জোরপূর্বক অন্তর্ধানের অভিযোগ তদন্তে একটি বিশেষ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহিত করা হয়েছে। প্রস্তাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করার জন্যও সরকারের প্রতি পুনরায় আহ্বান জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তুলে ধরতে ইউরোপীয় এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিস, ইইউ প্রতিনিধি ও বাংলাদেশে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর দূতাবাসকে অনুরোধ জানিয়েছেন পার্লামেন্ট সদস্যরা।
প্রস্তাব আমলে নিয়েছে সরকার :পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের যৌথ প্রস্তাব সরকার আমলে নিয়েছে। এটিকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং চক্রান্ত হিসেবে দেখছে সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সরকারপ্রধানের জাতিসংঘ ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেওয়া নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের যৌথ প্রস্তাব আমলে নেওয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, একদিক থেকে এটাকে আমলে নেব, কারণ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত। এ রকম কোনো কার্যক্রম হলে আমরা চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে থাকতে পারি না। সেই আগ্রহটুকু থেকে, সেই হস্তক্ষেপ থেকে; আমলে অবশ্যই নেব।
অবশ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এই ইস্যুতে আমলে না নেওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা যে আলোচনা করেছেন, এটার লজিস্টিক কোনো অথরিটি নেই। ইট ইজ নট অ্যা মেন্ডেটরি।
দেশের অর্থনীতি নিয়ে বিএনপি হোমওয়ার্ক করছে। খাতওয়ারি বিশ্লেষণ করার মধ্য দিয়ে দলটি ধারণা নিতে চায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কী ধরনের পদক্ষেপ জরুরি। বিএনপির সংশ্লিষ্ট নেতারা বলছেন, জনগণের ভোটে ক্ষমতায় যেতে পারলে কীভাবে দেশের অর্থনীতিকে সঠিক পথে আনতে হবে তার কার্যপদ্ধতি তৈরি করছেন তারা।
বিএনপি নেতারা বলছেন, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সংকটজনক। এ বিষয়ে জনগণের পাশাপাশি তারাও উদ্বিগ্ন। ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ করে তারা দাবি করেন, লুটপাট ও টাকা পাচার করে দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। তারা দেশের ব্যাংকগুলো ফোকলা করে দিয়েছে। এ সরকার যত দিন ক্ষমতায় থাকবে তত দেশের অর্থনীতি খারাপ হতেই থাকবে বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা।
অর্থনীতি নিয়ে হোমওয়ার্ক করার বিষয়ে তারা বলেন, এর অংশ হিসেবে গত ১৩ জুলাই ‘সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার’ এবং ‘অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে’ ৩১ দফা রূপরেখা ঘোষণা করেছে বিএনপি। এগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি দফা রয়েছে অর্থনৈতিক সংস্কারের বিষয়ে।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত আমদানি, রপ্তানি, বিদেশি ঋণ, ব্যাংক পরিস্থিতি, রেমিট্যান্স, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের আয়-ব্যয়, অর্থ পাচার, আন্তর্জাতিক ঋণ, অনুদানসহ বিভিন্ন আর্থিক খাত নিয়ে হোমওয়ার্ক চলছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুইডেন প্রবাসী শহীদুজ্জামান কাঁকন এ বিষয়ে কাজ করছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি দেশের অর্থনীতি কীভাবে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবে জানতে চাইলে শ্রীলঙ্কার ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়টি তুলে ধরেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশে চলমান অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে চিন্তিত বিএনপি। সেজন্য জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসতে পারলে কীভাবে দেশের অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে তা নিয়ে কাজ করছি আমরা।’
তিনি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছিল। কিন্তু এরই মধ্যে তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ থেকে নেওয়া ঋণ তারা পরিশোধ করেছে। কারণ শ্রীলঙ্কায় নতুন সরকার আসায় আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে এসেছে। পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার রেমিট্যান্স ও পর্যটন খাত গতিশীল হয়েছে। বাংলাদেশে জনগণের সরকার এলে বন্ধুপ্রতিম দেশ ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসবে। তখন বাংলাদেশ ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠবে। তবে সুনির্দিষ্ট করে সময় উল্লেখ করে কিছু বলা যাবে না।’
মিন্টু বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি যাতে সঠিক পথে থাকে সেজন্য বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকার কোনো কিছুকে গুরুত্ব দেয়নি। বরং মেগা প্রকল্প করে মেগা দুর্নীতি করেছে। সরকার সমর্থক ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, আমলা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসৎ সদস্য মিলে গড়ে ওঠা দুষ্টচক্র গড়ে তোলা হয়েছে। আজকে তাদের দুর্নীতি, লুটপাট ও টাকা পাচারের কথা দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে।’
গত বছরের এপ্রিল মাসে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণার ১৬ মাস পর গত ১৭ আগস্ট বাংলাদেশ থেকে নেওয়া ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণের প্রথম কিস্তি পরিশোধ করে শ্রীলঙ্কা।
মুদ্রাবিনিময় চুক্তি অনুযায়ী শ্রীলঙ্কাকে ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট প্রথম ধাপে ৫০ মিলিয়ন ডলার, ৩০ আগস্ট দ্বিতীয় ধাপে ১০০ মিলিয়ন ডলার ও ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে তৃতীয় ধাপে ৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের অর্থনীতি নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করেছিলেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। সে রিপোর্টে দেশের অর্থনীতির সার্বিক চিত্র উঠে এসেছিল। মূলত নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে ও জনগণের ভোটে ক্ষমতায় যেতে পারলে সংকটজনক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে, অর্থনীতি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে কেমন সময় লাগতে পারে তা নির্ধারণ করা হয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘তখন দেশের অর্থনীতি নিয়ে কাজ করা নেতারা দলের চেয়ারপারসনের কাছে যে রিপোর্ট দিয়েছিলেন তাতে উল্লেখ করা হয়েছিল তিন বছরের কথা।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চারদলীয় জোট সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা বরকতউল্লা বুলু বলেন, ‘দেশ অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। বিশে^র যেসব গণতান্ত্রিক দেশ বিশেষ করে বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্র যারা দেশের মানুষের ভোটাধিকার, মানবাধিকার আন্দোলনে সমর্থন দিচ্ছেন গণতন্ত্র ও মানুষের মানবাধিকার পুনরুদ্ধারে যারা এগিয়ে আসছেন তাদের সহযোগিতায় অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা হবে।’
তিনি বলেন, গত ১৩ জুলাই ঘোষণা করা ৩১ দফা রূপরেখা বাস্তবায়ন করা হবে যদি বিএনপি জনগণের ভোটে ক্ষমতায় যেতে পারে। রূপরেখায় আর্থিক খাতের অব্যবস্থাপনা দূর করতে বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। প্রথমেই বলা হয়েছে, দুর্নীতি, লুটপাট ও টাকা পাচারের কথা। এতে দুর্নীতির ক্ষেত্রে কোনো আপস করা হবে না বলে উল্লেখ করে গত দেড় দশকে অর্থ পাচার ও দুর্নীতির অনুসন্ধান করে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ ও শ্বেতপত্রে চিহ্নিত দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের বাইরে পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন ও দুর্নীতি দমন আইন সংস্কারের পাশাপাশি দুদকের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে। সংবিধান অনুযায়ী ন্যায়পাল নিয়োগ করা হবে।
বুলু বলেন, অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদ ও গবেষক, অভিজ্ঞ ব্যাংকার, করপোরেট নেতৃত্ব, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি ‘অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের নিরিখে প্রবৃদ্ধির সুফল সুষম বণ্টনের মাধ্যমে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূর করা হবে। মুদ্রাস্ফীতির আলোকে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা হবে। শিশুশ্রম বন্ধ করে তাদের জীবন বিকাশের উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও গণতান্ত্রিক ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করা হবে। পাটকল, বস্ত্রকল, চিনিকলসহ সব বন্ধ শিল্প পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রবাসী শ্রমিকদের জীবন, মর্যাদা ও কর্মের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। চা-বাগান, বস্তি, চরাঞ্চল, হাওর-বাঁওড় ও মঙ্গাপীড়িত ও উপকূলীয় অঞ্চলের বৈষম্য দূর করা হবে। শিল্প খাতের বিকাশে বিনিয়োগবান্ধব নীতি গ্রহণ করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা হবে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগে উৎসাহ, সুযোগ ও প্রণোদনা দেওয়া হবে। পরিকল্পিতভাবে দেশব্যাপী সমন্বিত শিল্প অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে।
ছয় বছরের ছেলে জিহাদকে নিয়ে হাসপাতালের নিচে দাঁড়িয়েছিলেন রহিমা। ডেঙ্গু আক্রান্ত ছেলেকে ভর্তি করেছিলেন মগবাজারের ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সাত দিন চিকিৎসা শেষে ছেলে এখন সুস্থ। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে। কিন্তু এই সাত দিনে ছেলের চিকিৎসার জন্য শুধু হাসপাতালের বিল গুনতে হয়েছে ৯৮ হাজার টাকা।
ছেলের চিকিৎসার এই ব্যয় সংকুলান করতে গিয়ে এখন সংসারের ভবিষ্যৎ খরচ সংকুলান নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়েছে জিহাদের পরিবার। বাবার দোকান ছিল বঙ্গবাজারে। এপ্রিলে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে গেছে দোকান। এখন ব্যবসা বন্ধ। গত পাঁচ মাস কোনো মতে চেয়েচিন্তে চলছে সংসার। এর মধ্যেই ছেলের ডেঙ্গুর চিকিৎসা করাতে গিয়ে আরও সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে পরিবারটি।
গত ২৭ আগস্ট হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ছেলেকে নিয়ে অটোরিকশায় ওঠার আগে কথা হয় মা রহিমার সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ছেলে চোখের সামনে মরে যাবে, কোনো বাবা-মাই তা চান না। যা কিছু জমা টাকা ছিল, তার সঙ্গে কিছু চেয়েচিন্তে ছেলের চিকিৎসা করালাম। ছেলে ভালো হয়ে গেছে। এখন ভালো লাগছে। কিন্তু ভবিষ্যৎ চলবে কী করে, সেটা নিয়ে খুব চিন্তা হচ্ছে।’
এ বছর ডেঙ্গুর চিকিৎসা করাতে গিয়ে এভাবেই হিমশিম খেতে হচ্ছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে। ধরন বদলে যাওয়ায় ডেঙ্গু জটিল হয়ে উঠেছে। রোগীদের জটিলতা বেড়েছে। হাসপাতালে দীর্ঘসময় থাকতে হচ্ছে। আইসিইউ লাগছে। ওষুধ লাগছে বেশি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা বেড়ে গেছে। সব মিলে বেড়ে গেছে চিকিৎসা ব্যয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের গবেষকরা জানান, দেশে ডেঙ্গুর গত ২৪ বছরের ইতিহাসে প্রথম ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় ২০১৯ সালে। সে বছর রাজধানীতে একটি মধ্যমসারির বেসরকারি হাসপাতালে একজন ডেঙ্গু রোগীর গড় চিকিৎসা ব্যয় ছিল ৪০ হাজার টাকা ও সাধারণ হাসপাতালে ২৭ হাজার টাকা এবং ঢাকার বাইরে সরকারি হাসপাতালে ১০ হাজার টাকা ও ঢাকায় ২০ হাজার টাকা। এবার সেই ব্যয় দাঁড়িয়েছে মধ্যমসারির হাসপাতালে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা ও সাধারণ হাসপাতালে সর্বোচ্চ ৭১ হাজার টাকার মতো। অর্থাৎ মধ্যমসারির হাসপাতালে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ প্রায় চার গুণ এবং সাধারণ হাসপাতালে সর্বোচ্চ প্রায় তিন গুণ।
একইভাবে রাজধানীর একটি সরকারি হাসপাতালে এবার ব্যক্তিগত ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা ও সর্বনিম্ন ২৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ ব্যয় বেড়ে হয়েছে সর্বোচ্চ পাঁচ গুণ।
এ বছর ডেঙ্গু জটিল আকার ধারণ করায় চিকিৎসা ব্যয় বেড়েছে বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক অধ্যাপক ড. নাসরিন সুলতানা। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডেঙ্গুতে এবার সিভিয়ারিটি বেশি। মারা যাচ্ছে বেশি। ওষুধ বেশি লাগছে। তাই এবার খরচ অনেক বেশি বেড়েছে। একদিকে ওষুধের প্রাপ্তি বেশি, অন্যদিকে ডেঙ্গুর ধরন বদলে যাওয়ায় পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যয় বেশি হচ্ছে। এ ছাড়া সাধারণ মানুষ জ্বর হলে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাচ্ছে। সেই ব্যয় হিসাবে আসছে না।’
অবশ্য জটিল অবস্থা হওয়ার আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে রোগীর যেমন জটিল অবস্থা হবে না, তেমনি চিকিৎসা ব্যয়ও কম হবে বলে জানিয়েছেন হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডেঙ্গু চিকিৎসার ব্যয় নির্ভর করে ডেঙ্গু কতটা জটিল, সেটার ওপর। প্রাথমিক পর্যায়ে ডেঙ্গু হলে খুব সাধারণ ব্যয় হয়। এজন্য রোগীকে সাবধান হতে হবে। শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শরীরে জলীয় পদার্থ, মানে ফ্লুইডের ভারসাম্য রক্ষা করা, বিশ্রাম নেওয়া, প্রচুর খাবার খাওয়া ও দেশি তাজা ফল খাওয়া জরুরি।’
বেসরকারিতে ভর্তি হলেই লাখ টাকা : ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া জিহাদের মা রহিমা দেশ রূপান্তরকে জানান, তারা থাকেন পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারে। তার এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলের ডেঙ্গু চিকিৎসায় সেদিন (২৭ আগস্ট) পর্যন্ত তাদের ব্যয় হয়েছে দেড় লাখ টাকার মতো। এর মধ্যে হাসপাতালে সাত দিনে বিল এসেছে ৯৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে দুদিন আইসিইউতে থাকা বাবদ বিল এসেছে ৬৪ হাজার টাকা। বাকি ৩৪ হাজার টাকা গুনতে হয়েছে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা, শয্যা ভাড়া, চিকিৎসক ফি ও নার্সিং সেবার জন্য। এর বাইরে ওষুধ কিনতে হয়েছে ২২ হাজার টাকার। এ ছাড়া ছেলের সঙ্গে থাকা মার প্রতিদিন খাওয়া ও শিশুর পরিবারের সদস্যদের হাসপাতালে আসা-যাওয়ার পেছনে ব্যয় হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। এই হাসপাতালে ভর্তির আগে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য ব্যয় হয়েছে আরও পাঁচ হাজার টাকা।
এই হাসপাতালের কয়েকশ গজ সামনেই বেসরকারি রাশমনো স্পেশালাইজড হাসপাতাল। এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ২ বছর ৯ মাস বয়সী জান্নাতুল নাইমা। সাত দিন এই হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গত ২৭ আগস্ট সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে শিশুটি। বাসা তেজগাঁওয়ের পশ্চিম নাখালপাড়ায়।
শিশুটির ভাই শামীম জানান, এই সাত দিনের মধ্যে শিশুটিকে ছয় দিনই থাকতে হয়েছে আইসিইউতে। বিল এসেছে ৬৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে আইসিইউ শয্যা ভাড়া দৈনিক চার হাজার টাকা ও চিকিৎসক ফি ১৫০০ টাকা। প্রতিদিন সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা হিসেবে ব্যয় হয়েছে ৩৩ হাজার টাকা। বাকি ৩৫ হাজার টাকা গেছে সাধারণ শয্যা ভাড়া, ওষুধ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও নার্সিংসেবা বাবদ।
এর আগে আরও তিন দিন শিশু নাইমাকে থাকতে হয়েছে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে। সেখানে ওষুধ বাবদ খরচ হয়েছে তিন হাজার টাকা। সে হিসেবে নাইমার ডেঙ্গু চিকিৎসায় ব্যয় হয়েছে ৭১ হাজার টাকা। এই ব্যয় নাইমার সঙ্গে হাসপাতালে থাকা মায়ের খাওয়া এবং ভাই ও বাবার প্রতিদিন হাসপাতালে আসা-যাওয়া খরচের বাইরে।
শিশু নাইমার ভাই সপ্তম শ্রেণির ছাত্র শামীম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের অবস্থা খুব একটা ভালো না। তার পরও বাবা ধারদেনা করে এই টাকা জোগাড় করেছেন। বোন সুস্থ হয়েছে। আমরা খুব খুশি।’
এই হাসপাতালের প্রায় তিনশ গজ দূরেই হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সেদিন বিকেলে হাসপাতালের ফটকে দাঁড়িয়েছিলেন শামীমুর রহমান শামীম। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে পাঁচ দিন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে এক বছরের শিশুসন্তান সজিব। এই পাঁচ দিনে তার চিকিৎসায় হাসপাতালের বিল এসেছে ৪৪ হাজার টাকা। এই পাঁচ দিন সজিবের সঙ্গে থাকা মা ফাতেমা ও দাদি আঞ্জুমানের খাওয়া ও বনশ্রী থেকে শামীমের আসা-যাওয়া বাবদ ব্যয় হয়েছে ২০ হাজার টাকার মতো।
সরকারিতেও ব্যক্তির খরচ হচ্ছে : বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আসা ডেঙ্গু আক্রান্ত নাসিমা আক্তার (৪৫) ও স্বামী মোশাররফ হোসেন পাঁচ দিন ভর্তি ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। গত ২৭ আগস্ট সুস্থ হয়ে বাড়ি যান তারা। এই হাসপাতালে আসার আগে এক দিন রাজধানীর সাইনবোর্ড এলাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে এক দিন ছিলেন তারা। অর্থাৎ এই ছয় দিনে দুজনের চিকিৎসায় ব্যয় হয়েছে ৫৪ হাজার ৪০০ টাকার মতো। সে হিসেবে একজনের পেছনে ব্যয় হয়েছে ২৭ হাজার টাকা করে।
ঢাকা মেডিকেলের ফটকে কথা হয় এই দম্পতির ছেলে মেহেদীর সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে জানান, এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাইরে থেকে প্রতিদিন দুজনের সিবিসি টেস্ট করতে হয়েছে। প্রতিটি পরীক্ষায় লেগেছে ৫০০ করে ৫ হাজার টাকা। রক্ত বাড়ানোর জন্য বাইরে থেকে দুটি করে চারটি স্যালাইন কিনতে হয়েছে ২৪০০ টাকায়। নিজের খাওয়া ও দুজনের পথ্য হিসেবে দৈনিক পাঁচ হাজার টাকা করে ব্যয় হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। ওষুধে লেগেছে ১৫ হাজার টাকার। এ ছাড়া এখানে ভর্তির আগে রাজধানীর সাইনবোর্ড এলাকায় এক দিন চিকিৎসা নিতে ব্যয় হয়েছে সাত হাজার টাকা।
রাজধানীর মিরপুর-১-এর বাসিন্দা ১০ বছরের শিশু ফারিয়াকে রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয় ৩ সেপ্টেম্বর। পরদিন সোমবার সন্ধ্যায় তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। পাঁচ দিন আইসিইউতে রাখার পর গত ৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তাকে কেবিনে আনা হয়। পরদিন গত রবিবার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে শিশুটি।
শিশুটির পরিবার জানায়, এই সাত দিনে সাধারণ শয্যা, আইসিইউ বেড ও কেবিন ভাড়া, রোগীর ওষুধ ও পথ্য এবং রোগীর সঙ্গে থাকা পরিবারের দুজন সদস্যের খাওয়া ও বাসা থেকে আসা-যাওয়া বাবদ দৈনিক গড়ে ১৫ হাজার টাকা হিসেবে ১ লাখ ৫ হাজার টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে প্রতিদিন আইসিইউ বেডভাড়া ছিল ৫ হাজার টাকা করে, আইসিইউতে থাকাকালে স্যালাইন ও ওষুধ লেগেছে গড়ে ৫ হাজার টাকা করে এবং ডাবের পানি, স্যুপ ও খাবারের জন্য ব্যয় হয়েছে গড়ে ৫০০ টাকা করে, রোগীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক থাকা পরিবারের দুই সদস্যের তিনবেলা খাবার বাবদ প্রতিদিন ব্যয় হয়েছে ২ হাজার টাকা করে।
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আজ শুক্রবার জুমার পর রাজধানী ঢাকায় বিশ^ গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে সমাবেশ করবে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলো। ১২ জুলাই এক দফা ঘোষণার পর এটি হবে তাদের সপ্তম কর্মসূচি।
অন্যদিকে একই দিন বিকেলে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে শান্তি সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে ক্ষমতাসীনরা।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এই সমাবেশের আয়োজন করবে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করবে। এ ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলগুলো তাদের পূর্বনির্ধারিত স্পটে সমাবেশ করবে।
গণফোরামের একাংশ মতিঝিলের আরামবাগে, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) কারওয়ান বাজার এফডিসি গেট সংলগ্ন কার্যালয়ের সামনে, ১২ দলীয় জোট বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কের সামনে, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পুরানা পল্টন আলরাজী কমপ্লেক্সের সামনে সমাবেশ করবে।
এর আগে গত শনিবার রাজধানী ঢাকায় গণমিছিল করে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। বরাবরের মতো ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও রাজধানীতে পাল্টা সমাবেশ করে ওইদিন। গত ৬ আগস্ট বিএনপি গণমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করলে সেদিনই আওয়ামী লীগও পাল্টা কর্মসূচি দেয়।
গত ১২ জুলাই এক দফার আন্দোলন শুরুর পর ঢাকায় মহাসমাবেশ, ঢাকার চার প্রবেশমুখে ‘অবস্থান’ কর্মসূচির পর গত দেড় মাসে কয়েক দফায় গণমিছিল ও কালো পতাকার গণমিছিল করেছে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো।
এদিকে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আন্দোলনের নামে বিএনপির সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির বিরুদ্ধে এই শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি আওয়ামী লীগের। দলটির দাবি, বিএনপি যাতে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে জনগণের জানমালের ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য তারা বিএনপির কর্মসূচির দিন মাঠে থাকছে। আজও সে কারণে শান্তি সমাবেশ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে সতর্ক অবস্থানে থাকবেন আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।
উল্লেখ্য, সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো এক দফা ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করতে নারাজ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা ঘোষণা করেছে তারা। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দুই দলের এমন অনড় অবস্থানের কারণে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে। আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে। তবে এখনো কোনো তারিখ জানায়নি।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।
প্রাচীন সময় থেকে মানুষের খাদ্যতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে চীজ বা পনির। গরুর দুধের তৈরি পনিরে শরীরকে সুস্থ রাখার প্রয়োজনীয় সব উপাদান পাওয়া যায়।
বর্তমানে সময়ের সাথে সাথে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পনিরের ব্যবহার। আর তাই বিস্কিট থেকে শুরু করে পাউরুটি, পাস্তা, পিৎজা অনেক কিছুতেই পনির ব্যবহার হয়।
পনিরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের মতে, ১০০ গ্রাম পনিরের মধ্যে রয়েছে:
শক্তি - ৩৬২ কিলোক্যালরি
প্রোটিন – ৫.১৭ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট - ৫০ গ্রাম
ক্যালসিয়াম - ৬৯ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম - ১৮১ মিলিগ্রাম
স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড – ৩.৪৫ গ্রাম
কোলেস্টেরল - ৩৪ মিলিগ্রাম
এটি প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস। পনিরের বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে।
পনির ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এবং প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এটি বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অনেক উপকারি। পনিরে থাকা ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পনির খেলে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করা যায়।
পনির ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা শক্তিশালী ও মজবুত দাঁত তৈরিতে অবদান রাখে। পনিরে থাকা কেসিন ফসফোপেপটাইড উপাদান দাঁতের গহ্বর কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া চিউইং চিজ মুখের পিএইচ মাত্রা বাড়াতে পারে এবং সামগ্রিক মৌখিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
পনিরে অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড যেমন কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস। কোরিয়া ইউনিভার্সিটি এবং ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ফ্যাটি অ্যাসিডে ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ ছাড়া এই ফ্যাটি অ্যাসিড এথেরোস্ক্লেরোসিস এর বিকাশ রোধ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে।
পনিরে কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড এবং স্ফিংগোলিপিড রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে স্ফিংগোলিপিড মানুষের কোলন ক্যান্সারকে বাধা দিতে পারে।
এ ছাড়া পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে খাদ্যতালিকাগত ক্যালসিয়াম কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ উপকারি।
পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই উপকারি। এটি প্রসবের সময় সংকোচনকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া উকের দুধ পান করানোর সময় ক্যালসিয়াম পুষ্টির ঘাটতিও পূরণ করে পনির। এটি গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রূণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে।
কিছু ধরণের পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যকারিতা বাড়াতে পরিচিত। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে পনির শরীরের প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটি অসুস্থতা এবং রোগ কমাতে পারে।
প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সুরক্ষিত পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। এটি বয়স্কদেরমধ্যে ইমিউনোসেনেসেন্স (প্রতিরোধ ব্যবস্থার ধীরে ধীরে দুর্বল হওয়া) প্রতিরোধ করতে পারে।
পনির সেলেনিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা থাইরয়েড ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সেলেনিয়ামের থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করে ভাইরাসের বিকাশকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে।
চেডার পনির হল এক ধরনের হার্ড পনির। এটি খাদ্যতালিকায় যোগ করলে তা থাইরয়েড রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
পনিরের আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলির মধ্যে একটি হল মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করা। বিশেষ করে ক্যামেমবার্ট জাতের পনির এই ধরনের কাজ করে থাকে। ক্যামেমবার্ট পনির প্রদাহজনক সাইটোকাইনের মাত্রা কমাতে পারে। এটি আলঝাইমার রোগের ঝুঁকি কমায় এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।
পনির ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। এতে থাকা ভিটামিন বি কোষের বিপাক এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে এটি উজ্জ্বল ত্বকের পাশাপাশি ত্বকের দাগ কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
যাদের গরুর দুধে অ্যালার্জি আছে তাদের পনির এড়ানো উচিত। এটি অ্যালার্জি, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথার কারণ ও হতে পারে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (অতিরিক্ত পনির খাওয়া) কার্ডিওভাসকুলার রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
পনিরের স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ও রয়েছে। যেমন,
কিছু লোকের দুধের প্রোটিন যেমন কেসিনে অ্যালার্জি থাকে। এটি সারা শরীর জুড়ে একটি প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং ত্বকে ফুসকুড়ি, সাইনাস কনজেশন এবং ব্রণ জ্বলতে পারে।
অনেকের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা থাকে। সেক্ষেত্রে তাদের পনির না খাওয়াই শ্রেয়। কারণ ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা গ্যাস, পেট ফোলাভাব এবং ডায়রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। অনেক সময় এর কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে।
প্রচুর পরিমাণে পনির খাওয়ার ফলে মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথা হতে পারে। পুরনো পনিরে থাকা টাইরামিন উপাদান কিছু ব্যক্তির মধ্যে মাইগ্রেনকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
যারা মোনোমাইন অক্সিডেস ইনহিবিটরস (MOIs) গ্রহণ করছেন তাদের পনির খাওয়া এড়ানো উচিত। এই ওষুধগুলি হতাশার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এসব ওষুধ পুরনো বা বয়স্ক পনিরে থাকা উপাদান টাইরামিনের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হবে ২ নভেম্বর। পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন তা নিয়ে এখন চলছে আলোচনা, কানাঘুষা; শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ।
বর্তমান উপাচার্যই আবার দায়িত্ব পাবেন নাকি নতুন কাউকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে এ আলোচনাই চলছে এখন। আলোচিত হচ্ছে কয়েকজন শিক্ষকের নামও। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন কানাঘুষারও অবসান হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ পদে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের মধ্য থেকেই কাউকে বাছাই করার বিষয়টি একপ্রকার নিশ্চিত। বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের এ বিষয়ে আগ্রহ নেই। গুণী কোনো শিক্ষক উপাচার্যবিষয়ক আলোচনার মধ্যে নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা হবে কি না, এ বিষয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের ১১(১) ধারা অনুযায়ী, উপাচার্য নিয়োগে তিন সদস্যবিশিষ্ট প্যানেল নির্বাচনের দায়িত্ব সিনেটের। সিনেট নির্বাচিত তিনজনের মধ্য থেকে একজনকে উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এবং রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রপতি তাকে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেন।
রীতি অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের জন্য সিনেটের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা হয়। কিন্তু এবার সিনেট অধিবেশন হওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। উপাচার্য অধিবেশন ডাকবেন কি ডাকবেন না; ওপর মহলের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কেউ কিছু জানেন না। উপাচার্য নিজেও বিষয়টি খোলাসা করছেন না।
অধ্যাদেশের ১১(২) ধারা অনুযায়ী, কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যেমন অসুস্থতা, ছুটি, অপসারণ বা অন্য কোনো কারণে উপাচার্যের পদ শূন্য হলে একজনকে অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা বলছেন, অধ্যাদেশের নিয়ম অনুসরণ করে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করা হোক। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং আগামী নির্বাচনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। নতুন উপাচার্যের গ্রহণযোগ্যতাও বাড়বে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, ‘ভিসি প্যানেল নিয়ে আলোচনা নেই। উপাচার্যও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে আমাদের জানা নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট সদস্য ও শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল সবচেয়ে বেশি আলোচিত। তাদের মধ্য থেকেই কারোর পরবর্তী উপাচার্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম এ বিষয়ক আলোচনায় রয়েছেন।
অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পান। পরে প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর উপাচার্য পদে পুনর্নিয়োগ পান তিনি। সাত বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সামলাচ্ছেন তিনি। দুই মেয়াদের বেশি উপাচার্য থাকার নজির নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই তার দায়িত্ব পালনের শেষ দেখছেন অনেকে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষকদের মধ্যেও তাকে নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে পুনরায় নিয়োগ পেতে পারেন তিনি।
ইমেরিটাস অধ্যাপক বা অন্য কোনো গুণী শিক্ষক নেই উপাচার্য নিয়োগের আলোচনায়। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গুণী শিক্ষকদের সামনে আনার যে ধরনের কাঠামো থাকা উচিত তা নেই। যারা তোশামোদ করতে পারে, অন্ধ আনুগত্য প্রকাশ করতে পারে, তাদেরই প্রশাসনের শীর্ষ পদে নিয়ে আসা হয়। সত্যিকারের গুণী শিক্ষক এবং অনেক ভালো গবেষক আছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারা কখনো প্রশাসনের দায়িত্বে আসতে পারেন না। তারা ব্যক্তিত্বের জলাঞ্জলি দিতেও রাজি নন।’
অতীতে উপাচার্যদের মধ্যে অ্যাকাডেমিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে একটা ভারসাম্য ছিল। এখন তা নেই। এখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও আনুগত্যের ভিত্তিতে প্রশাসনিক পদগুলো দেওয়া হয়।
পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন বা ভিসি প্যানেল নিয়ে আগ্রহ নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের। বিএনপিঘোষিত এক দফাতেই তারা মগ্ন। যদিও সিনেটে তিনজন প্রতিনিধি থাকায় সুযোগ তাদেরও রয়েছে। সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার পরিবর্তন না হলে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিষয়ে ভাবছি না। এ বিষয়ে আমাদের ফোকাস নেই। আমাদের ফোকাস হচ্ছে এ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। জাতীয় রাজনীতিতে পরিবর্তন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও পরিবর্তন আসবে।’
শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও সাংগঠনিকভাবে আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমরা নীল দল এখনো এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করিনি। যথাসময়ে দলের সভায় এ নিয়ে কথা হবে। মনোনয়ন কে পাবেন, তার আলোচনাও সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে। বর্তমান প্রশাসনের শীর্ষ তিনজন বিশেষভাবে আলোচনায় থাকবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই দায়িত্ব দেবেন। আমরা উনাদের সমর্থন করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ীই সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।’
বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনের গতি অনুযায়ীই সব চলবে। এ বিষয়ে যাদের ভাবা প্রয়োজন তারা অবশ্যই ভাববেন।’ সিনেটের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশেষ অধিবেশন ডাকার প্রয়োজন হলে আমরা ডাকি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।