
ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ মানেই বাড়তি উত্তেজনা। এই দলটির বিপক্ষে জিতলে বাড়তি আনন্দ ও বাড়তি পাওয়াও তালিকায় যোগ হবে। কিন্তু আজ জিতলেও বাংলাদেশের এশিয়া কাপ অভিযান নিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলার সুযোগ আছে কি? উত্তর অবশ্যই না। তবুও শেষটা ভালো করাই লক্ষ্য বাংলাদেশের। অনেক অপূর্ণতার মধ্যে ভারতের বিপক্ষে এই ম্যাচ জিতে অর্জনের ছাপ রাখতে চান সাকিব আল হাসান। কাল ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে জোর গলায় জানিয়ে গেলেন অধিনায়ক। আজকের ম্যাচে জয় ছাড়া আর কিছুই বাংলাদেশ দলের মাথাই নেই।
দৃপ্ত শপথ সত্ত্বেও নিশ্চিন্তে থাকার সুযোগ হয়তো নেই। ইনজুরি-অসুস্থতায় এই আসরে শুরু থেকেই জবুথবু বাংলাদেশ। এশিয়া বা বিশ্বকাপের চিন্তার বাইরে থাকা ক্রিকেটারকেও ডেকে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ওপেনিং ও সাত নম্বরে নিয়ে চিন্তা তো আছেই। তার ওপর ব্যাটিংয়ে দলের পুরনো দৈন্যদশা চলছে। মাত্র এক ম্যাচে নাজমুল হোসেন শান্ত ও মেহেদী হাসান মিরাজের জোড়া সেঞ্চুরিতে তিনশো ছাড়ানো স্কোর বাদে ব্যাটারদের অর্জন সামান্য। এই অবস্থায় অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমও আজ নেই। মিডলঅর্ডারে অভিজ্ঞতার ঝাঁপি মেলে ইনিংস বড় করার দায়িত্বটা এখন কে পালন করবেন?
মুশফিক না থাকায় দলে একটা পরিবর্তন তো আসবেই। ওপেনিংয়ে ব্যর্থ নাঈম শেখ আবারও সুযোগ পান কি না সেটাও একটা প্রশ্ন। এছাড়া সাত নম্বরের একমাত্র চয়েজ মিরাজকে ওপেনিংয়ে পাঠিয়ে সাময়িক পরিত্রাণ খোঁজা হবে কি আজও? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর সত্যিই নেই সাকিবের কাছে। ঠিক তেমনি নিচের দিকে শামিম-আফিফ নাকি একজন বাড়তি বোলার কোন পথে সমাধান খুঁজবে বাংলাদেশ তাও জানেন না সাকিব। ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন, ‘আসলে পিচের ওপর সবকিছু নির্ভর করছে। যদি ভালো উইকেট হয় তাহলে তেমন কিছু নাও হতে পারে। আবার স্পিনিং উইকেট হলে হতেও পারে। আমাদের মুক্তচিন্তা নিয়ে যেতে হবে। খেলা শুরুর পরে আসলে ভালোভাবে বোঝা যাবে। এর আগে শুধু ধারণাই করা যাবে। আসলে কম্বিনেশনে স্পিন থাকবে। শেষ ৩-৪ ম্যাচে স্পিনাররা সুযোগ পাচ্ছেন।’
পিচের ওপর অবশ্যই অনেক কিছু নির্ভর করছে। কলম্বোয় সুপার ফোরে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের আগ পর্যন্ত তিন ম্যাচেই আগে ব্যাট করা দল জিতেছে। ভারতের বিপক্ষে টস জিতলে অবশ্যই আগে ব্যাট করতে চাইবে বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করলেও দলের ব্যাটিং লাইনের এই ভঙ্গুর অবস্থায় ভারতের মোকাবিলা করা কতটা কঠিন হবে তাও সঠিক বলতে পারেননি সাকিব, ‘এটা তো খেলার পরে বলতে পারব। খেলার আগে কীভাবে বলব সহজ হবে না কঠিন হবে। আমরা যাব যাতে যতটা সম্ভব ভালো খেলা যায় জেতার জন্য, বাকিটা আসলে খেলার পরে আপনারাই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন।’
ভারত শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে এমনিতেই কঠিন। তবুও গত বছর দলটির বিপক্ষে ঘরের মাঠে ২-১ এ সিরিজ জয়ের সুখস্মৃতি কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশ। সাকিবদের জন্য এই সময়ে ওই সিরিজ জয়ের সুখস্মৃতিটাই একমাত্র ভরসা। সেই ভরসাতেই জয় ছাড়া ভিন্ন চিন্তা করছেন না সাকিব, ‘আপনি নামলে কী করতেন? (প্রশ্নের জবাবে) আমরাও সেটাই করব (জয়ের জন্য)। না চাওয়া পাওয়ার আছে অবশ্যই (শেষ ম্যাচ থেকে)। যদি আমরা শেষ ম্যাচ জিতে দেশে যেতে পারি সেটা আমাদের জন্য ভালো দিক হবে। এই ম্যাচ থেকে অন্য কিছু চাই না, এই ম্যাচ থেকে শুধু জিততেই চাই।’
সাকিবরা জয়ের একমাত্র লক্ষ্য নিয়ে নামছে এই ম্যাচে। ভারতের অবশ্য এই চাপ নেই। ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করে ফেলায় এই ম্যাচে বেঞ্চের ক্রিকেটারদের সুযোগ দিতে পারে ভারত। ফাইনালের আগে তাই কিছু জায়গায় ইনজুরি থেকে ফেরা ক্রিকেটারদের বিশ্রাম দিতে চাইবে তারা। সেক্ষেত্রে আজ একাদশে নাও থাকতে পারেন জাসপ্রিত বুমরাহ ও লোকেশ রাহুল। তাদের জায়গায় মোহাম্মদ সামি ও শ্রেয়াস আয়ারের সুযোগ হতে পারে। এছাড়া কুলদীপ যাদব বা অক্ষর প্যাটেলের জায়গায় পেস বোলিং অলরাউন্ডার শার্দুল ঠাকুরকেও একাদশে রাখতে পারে ভারত।
দল যেমনই হোক এমনিতেই এগিয়ে থাকবে ভারত। বড় টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ের রেকর্ডও ভালো তাদের। তবুও দলটির বোলিং কোচ পরশ মামব্রে জানালেন বাংলাদেশকে খাটো করে দেখছেন না মোটেও। গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের কাছে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারের কথাটা নিশ্চয়ই মনে আছে মামব্রেদের। তাদের এই সম্মান কাজে লাগিয়ে এবারের এশিয়া কাপের শেষটা রাঙাতে পারেন সাকিবরা।
বিশ্বেখাদ্যপণ্যের মূল্য দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এলেও বাংলাদেশে উল্টো চিত্র। কিছু অসৎ ব্যবসায়ী ও ফড়িয়াদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় এখন বিভিন্ন খাদ্যপণ্যে নানা সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। শুধু আমদানি পণ্যই নয়, এসব সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে এখন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কৃষিপণ্যও অস্বাভাবিক মূল্যে কিনতে হচ্ছে জনসাধারণকে। এর ফলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এক দশকের সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাজারদর নিয়ন্ত্রণে ভোজ্য তেল ও চিনির মতো খুচরা পর্যায়ে ডিম, পেঁয়াজ ও আলুর দামও নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার।
শুধু তাই নয়, সরকারের বেঁধে দেওয়া ডিমের দাম ব্যবসায়ীরা না মানলে পণ্যটি আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ডিম, আলু ও দেশি পেঁয়াজের দাম বেঁধে দেন। বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী, এখন থেকে প্রতিটি ফার্মের ডিম ১২, আলু খুচরা পর্যায়ে ৩৫-৩৬ (হিমাগার পর্যায়ে ২৬-২৭) এবং দেশি পেঁয়াজের দাম হবে ৬৪-৬৫ টাকা।
নতুন করে তিন পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ায় সরকারের প্রতি সাধুবাদ জানালেও এমন উদ্যোগ আরও আগেই নেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বাংলাদেশে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকারের কোনো সংস্থাই কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে না। এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা কমিশন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। মাঝেমধ্যে বাজারে অভিযান চালিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের নামমাত্র জরিমানা করলেও পণ্যমূল্য বাড়াতে যেসব সিন্ডিকেট প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারেনি সরকার। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন দুর্বলতার সুযোগেই পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক হারে বাড়াতে পেরেছেন ব্যবসায়ীরা। পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যোগসাজশেরও অভিযোগ উঠেছে।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, পণ্যের দাম বেড়ে গেলে সরকার একটা মূল্য নির্ধারণ করে দিতে পারে। তেমনি দাম কমে গেলেও কৃষক বাঁচাতেও একই কাজ করতে পারে। তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, সরকার পণ্যগুলোর যে দাম বেঁধে দিয়েছে তা কতটা কার্যকর হবে। অর্থাৎ সরকারের তদারকি সংস্থাগুলো তা বাস্তবায়ন করতে কতটা তৎপর হবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, অতীতে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা বরাবর ফুটে উঠেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে তারা সক্ষম না। সক্ষমতা থাকলে পণ্যের মূল্য বেঁধে দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না।’
ড. জাহাঙ্গীর আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে সিন্ডিকেট ও সরকার মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। যদিও সরকার বলছে মূল্য নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু কার্যত তা হচ্ছে না। এর জন্য সরকার ও বাজার তদারকির দায়িত্বে থাকা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও প্রতিযোগিতা কমিশন দায়ী। বাজার নিয়ন্ত্রণে তাদের মাঠে দেখা যাওয়ার কথা থাকলেও তাদের খবরের কাজেই বেশি দেখা যায়।’
ডিম উৎপাদনে কোনো সংকট না থাকলেও পোলট্রি শিল্পের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোর যোগসাজশে চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রতিটি ডিম ১৪-১৫ টাকায় বিক্রি হয়। পরবর্তী সময় সরকারের পক্ষ থেকে ডিম আমদানির হুমকির মুখে কিছুদিনের মধ্যেই প্রতিটি ডিমের দাম ১০ টাকায় নেমে আসে। তবে ডিমের এ মূল্য বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। জুলাই মাস থেকেই ফের বাড়তে শুরু করে ডিমের দাম। কয়েক ধাপে বাড়িয়ে গতকাল পর্যন্ত প্রতিটি ডিম বিক্রি হয়েছে সাড়ে ১২ থেকে সাড়ে ১৩ টাকায়। যদিও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিম বিক্রি হয় ৫ রুপিতে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় সর্বোচ্চ সাড়ে ৬ টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, করপোরেট সিন্ডিকেটের কারণে দেশে গত কয়েক মাস ধরেই ডিমের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। দেশের ডিম উৎপাদনের বেশিরভাগ অংশই তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বর্তমানে কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোলট্রি, সিপি বাংলাদেশ, ডায়মন্ড এগ ও নারিশ এগ্রোসহ ১০টি শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের প্রতিদিনের ডিম উৎপাদনের ক্ষমতা প্রায় ৫৬ লাখ। এর বাইরে প্রান্তিক খামারিদের সঙ্গে কন্ট্রাক ফার্মিংয়ের মাধ্যমেও ডিম ও পোলট্রি মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণ করে এ সিন্ডিকেট। এ ছাড়া ফড়িয়াদের মাধ্যমেও প্রান্তিক খামারিদের কাছ থেকে ডিম সংগ্রহ করে বাজার ব্যবস্থার পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা। প্রতিদিন মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে ডিমের মূল্য নির্ধারণ করে বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দেয় এ সিন্ডিকেট। এভাবেই ডিমের বাজার ও দাম নিয়ন্ত্রণ করছে সিন্ডিকেটটি।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিম যদি ১২ টাকায় বিক্রির সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ীরা না মানেন, তাহলে পণ্যটির আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে ডিম আমদানির অনুমতি চেয়ে ব্যবসায়ীদের আবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা আছে। আলুর দাম নির্ধারণ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, হিমাগার থেকে বেশি দামে আলু বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেলে নিলাম করে নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করে দেওয়া হবে।
শুধু ডিম কিংবা পোলট্রি মুরগি নয়, এখন আলুর মতো সবজি নিয়েও সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। দেশে আলুর কোনো ঘাটতি না থাকলেও দ্বিগুণেরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে খাদ্যপণ্যটি। গত বছর এ সময়টাতেও আলুর দাম ছিল সর্বোচ্চ ২০-২৫ টাকা। কিন্তু চলতি বছর এপ্রিল থেকেই সিন্ডিকেটের কল্যাণে এ পণ্যটির দাম একটু একটু করে বাড়তে শুরু করে আগস্টে ৪০ টাকায় উঠে যায়। আর চলতি মাসেই পণ্যটির দাম আরও বেড়ে গিয়ে ৫০ টাকায় উন্নীত হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনই এ পণ্যটির দাম এতটা বাড়েনি। যদিও দেশে আলুর কোনো সংকট নেই।
সম্প্রতি হিমাগার মালিকদের সংগঠনও আলুর দাম সর্বোচ্চ ৩৫-৩৬ টাকা হতে পারে বলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়। বর্তমানে হিমাগারগুলোতে যে পরিমাণের আলু রয়েছে তা দিয়ে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের চাহিদা অনায়াসে মেটানো যাবে বলে হিমাগার মালিকরা জানিয়েছেন।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সরকারি সংস্থাগুলো বিভিন্ন খাদ্যপণ্য উৎপাদনের যে হিসাব দেয়, তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। যেমন পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা রয়েছে ২৬ থেকে ২৮ লাখ টন। কিন্তু কৃষি অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন হয়েছে ৩৫ লাখ টন। উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে গড়ে ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ পচলেও উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৪ লাখ টনের বেশি। অধিদপ্তরের হিসাবে সর্বোচ্চ দুই লাখ টনের ঘাটতি থাকার কথা। কিন্তু প্রতিবছর এর চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণের পেঁয়াজ আমদানি করে আনতে হয়।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের চাহিদা ও উৎপাদন নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্যও পেঁয়াজের দাম বাড়াতে ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উৎপাদন মৌসুমে চাষিরা যাতে ন্যায্য দাম পান, সেজন্য পেঁয়াজ আমদানি নিষিদ্ধ থাকে এ সময়টাতে। কিন্তু কোনো সংকট না থাকলেও চলতি বছর এপ্রিল থেকেই পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে। কৃষকের কাছ থেকে বেশিরভাগ পেঁয়াজ মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে চলে যাওয়ার পর গত মে মাসেই পেঁয়াজের দাম প্রায় তিনগুণ হয়ে যায়। এ সময় বিভিন্ন পক্ষ থেকে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে বারবার আমদানির অনুমোদন দেওয়ার দাবি জানানো হলেও কৃষিমন্ত্রী তা দেননি। বরং মে মাসে যখন পেঁয়াজের দাম ৮০ টাকা ছাড়িয়ে যায়, তখন আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। কারসাজিকারকরা আমদানি করা পেঁয়াজের দামও ৬০-৭০ টাকায় নিয়ে যায়। তিন মাসেরও বেশি সময় পেঁয়াজের উচ্চমূল্য থাকার পর এখন দেশি পেঁয়াজের দাম ৬৪-৬৫ টাকায় নির্ধারণ করে দিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তবে এ দাম কার্যকর হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
টিপু মুনশি বলেন, ‘উৎপাদন খরচ হিসাব করে আমরা দেখেছি ডিম, আলু ও পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সেজন্য আমরা কৃষি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে এ দাম নির্ধারণ করেছি।’
পণ্যের দামে অস্থিরতা প্রসঙ্গে কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান আরও বলেন, ‘খোলা বাজারের পরিস্থিতি বলছে, পণ্যের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার পেছনে বড় কারণ ব্যবসায়ীদের কারসাজি। তা না হলে আমাদের দেশে প্রতিবছর যে পরিমাণের আলু উৎপাদন হয় তাতে প্রতি কেজি আলুর দাম ৫০ টাকা হওয়ার কথা নয়। ডিমের বিষয়টি একই রকম। কেননা, আমাদের পাশের দেশে যে দামে ডিম বিক্রি করছে তার থেকে দ্বিগুণ দামে আমাদের ডিম কিনতে হচ্ছে। তাদের দেশেও উৎপাদন খরচ বেড়েছে, কিন্তু তারা আমাদের মতো সিন্ডিকেট করছে না।’
গত বুধবার কৃষিপণ্যের মূল্য পর্যালোচনা-সংক্রান্ত একটি সভা হয়। সেখানে উপস্থাপন করা সরকারি হিসাবে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাজারে প্রতি হালি ফার্মের ডিম ৫০-৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। অন্যদিকে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৭০-৮০ টাকা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, দাম বেঁধে দেওয়া তিন কৃষিপণ্য কী দামে বিক্রি হচ্ছে, সেটি শুক্রবার (আজ) থেকে তদারকিতে নামবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
এদিকে ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ ছাড়াও গতকাল সয়াবিন তেলের দাম কমানোর ঘোষণাও দেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ৫ টাকা কমে এখন ১৬৯ টাকা হবে। তবে বাজারে এখন সয়াবিন তেলের দাম সরকারের নির্ধারণ করা দামের চেয়েও কমে পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল কারওয়ান বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৭৯০ থেকে ৮২০ টাকায়। আর বাণিজ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের মূল্য হবে ৮৪৫ টাকা।
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতিতে গভীর উদ্বেগ জানানো হয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক অধিবেশনে। এ বিষয়ে এক যৌথ প্রস্তাবও আনা হয়েছে। এতে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারচর্চায় আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুসরণের আহ্বান এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিশেষ করে অধিকারের মামলা’ শীর্ষক প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হওয়ার কথা।
এদিকে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের যৌথ প্রস্তাব সরকার আমলে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। তবে বিষয়টিতে তিনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং চক্রান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ফ্রান্সের স্ত্রাসবুর্গে
স্থানীয় সময় গত বুধবার রাতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মধ্য ডানপন্থি, সোশ্যাল ডেমোক্রেট, বামপন্থিসহ সাতটি গ্রুপ প্রস্তাবটি আনে। অধিবেশনের বিতর্কে অংশ নেন ছয় সদস্য। ওই প্রস্তাবে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, মানবাধিকারকর্মী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কাজের নিরাপদ ও অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিতের কথাও তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের প্রসঙ্গটি।
এ ছাড়া বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও বাংলাদেশে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে বল প্রয়োগের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে পক্ষগুলো। তারা ২০২৪ সালে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যা, বলপূর্বক অন্তর্ধান বা গুম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শ্রমিকদের অধিকার খর্ব করাসহ বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ওই প্রস্তাবে মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার এবং সংগঠনটির নিবন্ধন আবার চালু করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলো যেন অনুমোদিত বিদেশি অনুদান কাজে লাগাতে পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সরকারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া প্রস্তাবে জোরপূর্বক অন্তর্ধানের অভিযোগ তদন্তে একটি বিশেষ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহিত করা হয়েছে। প্রস্তাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করার জন্যও সরকারের প্রতি পুনরায় আহ্বান জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তুলে ধরতে ইউরোপীয় এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিস, ইইউ প্রতিনিধি ও বাংলাদেশে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর দূতাবাসকে অনুরোধ জানিয়েছেন পার্লামেন্ট সদস্যরা।
প্রস্তাব আমলে নিয়েছে সরকার :পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের যৌথ প্রস্তাব সরকার আমলে নিয়েছে। এটিকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং চক্রান্ত হিসেবে দেখছে সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সরকারপ্রধানের জাতিসংঘ ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেওয়া নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের যৌথ প্রস্তাব আমলে নেওয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, একদিক থেকে এটাকে আমলে নেব, কারণ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত। এ রকম কোনো কার্যক্রম হলে আমরা চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে থাকতে পারি না। সেই আগ্রহটুকু থেকে, সেই হস্তক্ষেপ থেকে; আমলে অবশ্যই নেব।
অবশ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এই ইস্যুতে আমলে না নেওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা যে আলোচনা করেছেন, এটার লজিস্টিক কোনো অথরিটি নেই। ইট ইজ নট অ্যা মেন্ডেটরি।
মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেওয়াকে কেন্দ্র করে মৃত্যুর অসত্য তথ্য দেওয়ায় মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র ও পরিচালক এএসএম নাসির উদ্দিন এলানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে দুজনকে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এএম জুলফিকার হায়াত এ রায় দেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, আসামিরা মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে অসত্য ও বিকৃত তথ্য দিয়েছেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের এ মামলায় সর্বোচ্চ সাজা ১৪ বছর ও সর্বনিম্ন সাত বছর কারাদণ্ড। কিন্তু আসামিদের সামাজিক অবস্থান, বিচারকাজের সময় আদালতকে সহযোগিতা করা এবং তাদের বিরুদ্ধে আগের কোনো ফৌজদারি মামলার তথ্য না থাকায় সাজা কম দেওয়া হয়েছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের (পরে আইনটি পরিবর্তিত) ৫৭ ধারায় দুজনকে এ দণ্ড দেওয়া হয়। ১০ বছর আগের এ মামলায় গত ২৪ আগস্ট যুক্তিতর্কের শুনানি শেষ হলে আদালত ৭ সেপ্টেম্বর রায়ের জন্য দিন ধার্য করে। তবে, ওইদিন (৭ সেপ্টেম্বর) রায়ের তারিখ পিছিয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর ধার্য করে আদালত। শুনানিকালে ২২ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন।
জামিনে থাকা আদিলুর ও এলানকে রায় ঘোষণা শেষে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। রায়ের পর আদালতের ডকে থাকা আদিলুর ও এলানকে স্বাভাবিক এবং হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়।
রায়ের সময় আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন, ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের মানবাধিকার-বিষয়ক কর্মকর্তা সোফিয়া মেউলেনব্রেগ, জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয়ের মানবাধিকার-বিষয়ক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হুমা খানসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
নূর খান লিটন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘৫৭ ধারা নিয়ে মানবাধিকারকর্মী, গণমাধ্যমসহ সবার আপত্তি ছিল। পরে ধারাটি বিলুপ্ত করা হয়। কিন্তু এই ধারাতেই বিচার করা হলো।’ তিনি বলেন, ‘এই রায়ের মাধ্যমে মানবাধিকারকর্মীদের কর্মীদের এক ধরনের শঙ্কা ও ভীতির মধ্যে কাজ করতে হবে।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী রুহুল আমিন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, তারা ন্যায়বিচার পাননি। সাজা থেকে খালাস চেয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। সাইবার ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি নজরুল ইসলাম শামীম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাছে মনে হয়েছে সাজা অপর্যাপ্ত হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে তা পর্যালোচনা করে আপিলের সিদ্ধান্ত হবে।’
উল্লেখ্য, বিভিন্ন অভিযোগে ২০২২ সালের জুনের প্রথম সপ্তাহে অধিকারের নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত দেয় এনজিওবিষয়ক ব্যুরো।
২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলে শাপলা চত্বর এলাকায় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ৬১ জনের মৃত্যুর তথ্য ওই বছরের ১০ জুন অধিকার তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। অসত্য ও বিকৃত তথ্য প্রকাশের অভিযোগে আদিল ও এলানের বিরুদ্ধে দুটি জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করা হয়। মামলার পর ওই বছরের ১০ আগস্ট আদিলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও অধিকারের কার্যালয়ে তল্লাশি করে কম্পিউটার ও ল্যাপটপ জব্দ করে পুলিশ। তদন্ত শেষে ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর দুজনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি)। এতে বলা হয়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অসত্য ও বিকৃত তথ্য প্রকাশ করে আইনশৃঙ্খলা বিঘেœর অপচেষ্টাসহ অধিকার রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। ওই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র আমলে নেয় আদালত। অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে আবেদন করা হলে ২০১৭ সালের ৯ জানুয়ারি তা খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের এ সিদ্ধান্ত আপিল বিভাগেও বহাল থাকে।
যুক্তরাষ্ট্র, অ্যামনেস্টির উদ্বেগ : আদিলুর ও এলানের দুই বছরের সাজার রায়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। গতকাল ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র মানুষের অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রচার ও সুরক্ষায় মানবাধিকারকর্মী এবং সুশীল সমাজ সংগঠনগুলোর কার্যক্রমকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। এই অবস্থায় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান এবং পরিচালক এএসএম নাসির উদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে রায়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং মনে করছে, এটি মানবাধিকারকর্মী এবং সুশীল সমাজের গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক ভূমিকা পালনের সদিচ্ছাকে আরও দুর্বল করে দিতে পারে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গণতন্ত্রের অপরিহার্য অংশ হিসেবে আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং নাগরিক সমাজকে অব্যাহতভাবে সমর্থন করি এবং মৌলিক অধিকার নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টার বিরোধিতা করি।
গতকাল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অফিসের সামাজিক মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, অধিকার ২০১৩ সালে সংঘটিত এক বিক্ষোভের ঘটনায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এর জেরে অধিকারের বিরুদ্ধে বিতর্কিত আইসিটি আইনে মামলা হয়। ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে সত্য ঘটনা তুলে ধরায় রাষ্ট্র ‘অধিকার’ ও এর নেতাদের ধারাবাহিকভাবে ধরপাকড় করছে। আদিলুর ও এলানের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়ে অ্যামনেস্টি আরও বলে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের নথিভুক্ত করা কোনো অপরাধ নয়। আমরা বাংলাদেশি কর্র্তৃপক্ষকে অবিলম্বে এবং নিঃশর্তভাবে আদিলুর রহমান খান ও নাসিরউদ্দিন এলানকে মুক্তি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
দেশের অর্থনীতি নিয়ে বিএনপি হোমওয়ার্ক করছে। খাতওয়ারি বিশ্লেষণ করার মধ্য দিয়ে দলটি ধারণা নিতে চায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কী ধরনের পদক্ষেপ জরুরি। বিএনপির সংশ্লিষ্ট নেতারা বলছেন, জনগণের ভোটে ক্ষমতায় যেতে পারলে কীভাবে দেশের অর্থনীতিকে সঠিক পথে আনতে হবে তার কার্যপদ্ধতি তৈরি করছেন তারা।
বিএনপি নেতারা বলছেন, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সংকটজনক। এ বিষয়ে জনগণের পাশাপাশি তারাও উদ্বিগ্ন। ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ করে তারা দাবি করেন, লুটপাট ও টাকা পাচার করে দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। তারা দেশের ব্যাংকগুলো ফোকলা করে দিয়েছে। এ সরকার যত দিন ক্ষমতায় থাকবে তত দেশের অর্থনীতি খারাপ হতেই থাকবে বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা।
অর্থনীতি নিয়ে হোমওয়ার্ক করার বিষয়ে তারা বলেন, এর অংশ হিসেবে গত ১৩ জুলাই ‘সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার’ এবং ‘অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে’ ৩১ দফা রূপরেখা ঘোষণা করেছে বিএনপি। এগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি দফা রয়েছে অর্থনৈতিক সংস্কারের বিষয়ে।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত আমদানি, রপ্তানি, বিদেশি ঋণ, ব্যাংক পরিস্থিতি, রেমিট্যান্স, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের আয়-ব্যয়, অর্থ পাচার, আন্তর্জাতিক ঋণ, অনুদানসহ বিভিন্ন আর্থিক খাত নিয়ে হোমওয়ার্ক চলছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুইডেন প্রবাসী শহীদুজ্জামান কাঁকন এ বিষয়ে কাজ করছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি দেশের অর্থনীতি কীভাবে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবে জানতে চাইলে শ্রীলঙ্কার ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়টি তুলে ধরেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশে চলমান অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে চিন্তিত বিএনপি। সেজন্য জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসতে পারলে কীভাবে দেশের অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে তা নিয়ে কাজ করছি আমরা।’
তিনি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছিল। কিন্তু এরই মধ্যে তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ থেকে নেওয়া ঋণ তারা পরিশোধ করেছে। কারণ শ্রীলঙ্কায় নতুন সরকার আসায় আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে এসেছে। পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার রেমিট্যান্স ও পর্যটন খাত গতিশীল হয়েছে। বাংলাদেশে জনগণের সরকার এলে বন্ধুপ্রতিম দেশ ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসবে। তখন বাংলাদেশ ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠবে। তবে সুনির্দিষ্ট করে সময় উল্লেখ করে কিছু বলা যাবে না।’
মিন্টু বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি যাতে সঠিক পথে থাকে সেজন্য বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকার কোনো কিছুকে গুরুত্ব দেয়নি। বরং মেগা প্রকল্প করে মেগা দুর্নীতি করেছে। সরকার সমর্থক ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, আমলা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসৎ সদস্য মিলে গড়ে ওঠা দুষ্টচক্র গড়ে তোলা হয়েছে। আজকে তাদের দুর্নীতি, লুটপাট ও টাকা পাচারের কথা দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে।’
গত বছরের এপ্রিল মাসে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণার ১৬ মাস পর গত ১৭ আগস্ট বাংলাদেশ থেকে নেওয়া ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণের প্রথম কিস্তি পরিশোধ করে শ্রীলঙ্কা।
মুদ্রাবিনিময় চুক্তি অনুযায়ী শ্রীলঙ্কাকে ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট প্রথম ধাপে ৫০ মিলিয়ন ডলার, ৩০ আগস্ট দ্বিতীয় ধাপে ১০০ মিলিয়ন ডলার ও ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে তৃতীয় ধাপে ৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের অর্থনীতি নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করেছিলেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। সে রিপোর্টে দেশের অর্থনীতির সার্বিক চিত্র উঠে এসেছিল। মূলত নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে ও জনগণের ভোটে ক্ষমতায় যেতে পারলে সংকটজনক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে, অর্থনীতি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে কেমন সময় লাগতে পারে তা নির্ধারণ করা হয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘তখন দেশের অর্থনীতি নিয়ে কাজ করা নেতারা দলের চেয়ারপারসনের কাছে যে রিপোর্ট দিয়েছিলেন তাতে উল্লেখ করা হয়েছিল তিন বছরের কথা।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চারদলীয় জোট সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা বরকতউল্লা বুলু বলেন, ‘দেশ অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। বিশে^র যেসব গণতান্ত্রিক দেশ বিশেষ করে বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্র যারা দেশের মানুষের ভোটাধিকার, মানবাধিকার আন্দোলনে সমর্থন দিচ্ছেন গণতন্ত্র ও মানুষের মানবাধিকার পুনরুদ্ধারে যারা এগিয়ে আসছেন তাদের সহযোগিতায় অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা হবে।’
তিনি বলেন, গত ১৩ জুলাই ঘোষণা করা ৩১ দফা রূপরেখা বাস্তবায়ন করা হবে যদি বিএনপি জনগণের ভোটে ক্ষমতায় যেতে পারে। রূপরেখায় আর্থিক খাতের অব্যবস্থাপনা দূর করতে বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। প্রথমেই বলা হয়েছে, দুর্নীতি, লুটপাট ও টাকা পাচারের কথা। এতে দুর্নীতির ক্ষেত্রে কোনো আপস করা হবে না বলে উল্লেখ করে গত দেড় দশকে অর্থ পাচার ও দুর্নীতির অনুসন্ধান করে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ ও শ্বেতপত্রে চিহ্নিত দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের বাইরে পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন ও দুর্নীতি দমন আইন সংস্কারের পাশাপাশি দুদকের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে। সংবিধান অনুযায়ী ন্যায়পাল নিয়োগ করা হবে।
বুলু বলেন, অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদ ও গবেষক, অভিজ্ঞ ব্যাংকার, করপোরেট নেতৃত্ব, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি ‘অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের নিরিখে প্রবৃদ্ধির সুফল সুষম বণ্টনের মাধ্যমে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূর করা হবে। মুদ্রাস্ফীতির আলোকে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা হবে। শিশুশ্রম বন্ধ করে তাদের জীবন বিকাশের উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও গণতান্ত্রিক ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করা হবে। পাটকল, বস্ত্রকল, চিনিকলসহ সব বন্ধ শিল্প পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রবাসী শ্রমিকদের জীবন, মর্যাদা ও কর্মের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। চা-বাগান, বস্তি, চরাঞ্চল, হাওর-বাঁওড় ও মঙ্গাপীড়িত ও উপকূলীয় অঞ্চলের বৈষম্য দূর করা হবে। শিল্প খাতের বিকাশে বিনিয়োগবান্ধব নীতি গ্রহণ করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা হবে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগে উৎসাহ, সুযোগ ও প্রণোদনা দেওয়া হবে। পরিকল্পিতভাবে দেশব্যাপী সমন্বিত শিল্প অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে।
ছয় বছরের ছেলে জিহাদকে নিয়ে হাসপাতালের নিচে দাঁড়িয়েছিলেন রহিমা। ডেঙ্গু আক্রান্ত ছেলেকে ভর্তি করেছিলেন মগবাজারের ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সাত দিন চিকিৎসা শেষে ছেলে এখন সুস্থ। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে। কিন্তু এই সাত দিনে ছেলের চিকিৎসার জন্য শুধু হাসপাতালের বিল গুনতে হয়েছে ৯৮ হাজার টাকা।
ছেলের চিকিৎসার এই ব্যয় সংকুলান করতে গিয়ে এখন সংসারের ভবিষ্যৎ খরচ সংকুলান নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়েছে জিহাদের পরিবার। বাবার দোকান ছিল বঙ্গবাজারে। এপ্রিলে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে গেছে দোকান। এখন ব্যবসা বন্ধ। গত পাঁচ মাস কোনো মতে চেয়েচিন্তে চলছে সংসার। এর মধ্যেই ছেলের ডেঙ্গুর চিকিৎসা করাতে গিয়ে আরও সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে পরিবারটি।
গত ২৭ আগস্ট হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ছেলেকে নিয়ে অটোরিকশায় ওঠার আগে কথা হয় মা রহিমার সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ছেলে চোখের সামনে মরে যাবে, কোনো বাবা-মাই তা চান না। যা কিছু জমা টাকা ছিল, তার সঙ্গে কিছু চেয়েচিন্তে ছেলের চিকিৎসা করালাম। ছেলে ভালো হয়ে গেছে। এখন ভালো লাগছে। কিন্তু ভবিষ্যৎ চলবে কী করে, সেটা নিয়ে খুব চিন্তা হচ্ছে।’
এ বছর ডেঙ্গুর চিকিৎসা করাতে গিয়ে এভাবেই হিমশিম খেতে হচ্ছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে। ধরন বদলে যাওয়ায় ডেঙ্গু জটিল হয়ে উঠেছে। রোগীদের জটিলতা বেড়েছে। হাসপাতালে দীর্ঘসময় থাকতে হচ্ছে। আইসিইউ লাগছে। ওষুধ লাগছে বেশি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা বেড়ে গেছে। সব মিলে বেড়ে গেছে চিকিৎসা ব্যয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের গবেষকরা জানান, দেশে ডেঙ্গুর গত ২৪ বছরের ইতিহাসে প্রথম ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় ২০১৯ সালে। সে বছর রাজধানীতে একটি মধ্যমসারির বেসরকারি হাসপাতালে একজন ডেঙ্গু রোগীর গড় চিকিৎসা ব্যয় ছিল ৪০ হাজার টাকা ও সাধারণ হাসপাতালে ২৭ হাজার টাকা এবং ঢাকার বাইরে সরকারি হাসপাতালে ১০ হাজার টাকা ও ঢাকায় ২০ হাজার টাকা। এবার সেই ব্যয় দাঁড়িয়েছে মধ্যমসারির হাসপাতালে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা ও সাধারণ হাসপাতালে সর্বোচ্চ ৭১ হাজার টাকার মতো। অর্থাৎ মধ্যমসারির হাসপাতালে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ প্রায় চার গুণ এবং সাধারণ হাসপাতালে সর্বোচ্চ প্রায় তিন গুণ।
একইভাবে রাজধানীর একটি সরকারি হাসপাতালে এবার ব্যক্তিগত ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা ও সর্বনিম্ন ২৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ ব্যয় বেড়ে হয়েছে সর্বোচ্চ পাঁচ গুণ।
এ বছর ডেঙ্গু জটিল আকার ধারণ করায় চিকিৎসা ব্যয় বেড়েছে বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক অধ্যাপক ড. নাসরিন সুলতানা। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডেঙ্গুতে এবার সিভিয়ারিটি বেশি। মারা যাচ্ছে বেশি। ওষুধ বেশি লাগছে। তাই এবার খরচ অনেক বেশি বেড়েছে। একদিকে ওষুধের প্রাপ্তি বেশি, অন্যদিকে ডেঙ্গুর ধরন বদলে যাওয়ায় পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যয় বেশি হচ্ছে। এ ছাড়া সাধারণ মানুষ জ্বর হলে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাচ্ছে। সেই ব্যয় হিসাবে আসছে না।’
অবশ্য জটিল অবস্থা হওয়ার আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে রোগীর যেমন জটিল অবস্থা হবে না, তেমনি চিকিৎসা ব্যয়ও কম হবে বলে জানিয়েছেন হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডেঙ্গু চিকিৎসার ব্যয় নির্ভর করে ডেঙ্গু কতটা জটিল, সেটার ওপর। প্রাথমিক পর্যায়ে ডেঙ্গু হলে খুব সাধারণ ব্যয় হয়। এজন্য রোগীকে সাবধান হতে হবে। শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শরীরে জলীয় পদার্থ, মানে ফ্লুইডের ভারসাম্য রক্ষা করা, বিশ্রাম নেওয়া, প্রচুর খাবার খাওয়া ও দেশি তাজা ফল খাওয়া জরুরি।’
বেসরকারিতে ভর্তি হলেই লাখ টাকা : ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া জিহাদের মা রহিমা দেশ রূপান্তরকে জানান, তারা থাকেন পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারে। তার এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলের ডেঙ্গু চিকিৎসায় সেদিন (২৭ আগস্ট) পর্যন্ত তাদের ব্যয় হয়েছে দেড় লাখ টাকার মতো। এর মধ্যে হাসপাতালে সাত দিনে বিল এসেছে ৯৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে দুদিন আইসিইউতে থাকা বাবদ বিল এসেছে ৬৪ হাজার টাকা। বাকি ৩৪ হাজার টাকা গুনতে হয়েছে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা, শয্যা ভাড়া, চিকিৎসক ফি ও নার্সিং সেবার জন্য। এর বাইরে ওষুধ কিনতে হয়েছে ২২ হাজার টাকার। এ ছাড়া ছেলের সঙ্গে থাকা মার প্রতিদিন খাওয়া ও শিশুর পরিবারের সদস্যদের হাসপাতালে আসা-যাওয়ার পেছনে ব্যয় হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। এই হাসপাতালে ভর্তির আগে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য ব্যয় হয়েছে আরও পাঁচ হাজার টাকা।
এই হাসপাতালের কয়েকশ গজ সামনেই বেসরকারি রাশমনো স্পেশালাইজড হাসপাতাল। এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ২ বছর ৯ মাস বয়সী জান্নাতুল নাইমা। সাত দিন এই হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গত ২৭ আগস্ট সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে শিশুটি। বাসা তেজগাঁওয়ের পশ্চিম নাখালপাড়ায়।
শিশুটির ভাই শামীম জানান, এই সাত দিনের মধ্যে শিশুটিকে ছয় দিনই থাকতে হয়েছে আইসিইউতে। বিল এসেছে ৬৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে আইসিইউ শয্যা ভাড়া দৈনিক চার হাজার টাকা ও চিকিৎসক ফি ১৫০০ টাকা। প্রতিদিন সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা হিসেবে ব্যয় হয়েছে ৩৩ হাজার টাকা। বাকি ৩৫ হাজার টাকা গেছে সাধারণ শয্যা ভাড়া, ওষুধ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও নার্সিংসেবা বাবদ।
এর আগে আরও তিন দিন শিশু নাইমাকে থাকতে হয়েছে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে। সেখানে ওষুধ বাবদ খরচ হয়েছে তিন হাজার টাকা। সে হিসেবে নাইমার ডেঙ্গু চিকিৎসায় ব্যয় হয়েছে ৭১ হাজার টাকা। এই ব্যয় নাইমার সঙ্গে হাসপাতালে থাকা মায়ের খাওয়া এবং ভাই ও বাবার প্রতিদিন হাসপাতালে আসা-যাওয়া খরচের বাইরে।
শিশু নাইমার ভাই সপ্তম শ্রেণির ছাত্র শামীম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের অবস্থা খুব একটা ভালো না। তার পরও বাবা ধারদেনা করে এই টাকা জোগাড় করেছেন। বোন সুস্থ হয়েছে। আমরা খুব খুশি।’
এই হাসপাতালের প্রায় তিনশ গজ দূরেই হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সেদিন বিকেলে হাসপাতালের ফটকে দাঁড়িয়েছিলেন শামীমুর রহমান শামীম। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে পাঁচ দিন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে এক বছরের শিশুসন্তান সজিব। এই পাঁচ দিনে তার চিকিৎসায় হাসপাতালের বিল এসেছে ৪৪ হাজার টাকা। এই পাঁচ দিন সজিবের সঙ্গে থাকা মা ফাতেমা ও দাদি আঞ্জুমানের খাওয়া ও বনশ্রী থেকে শামীমের আসা-যাওয়া বাবদ ব্যয় হয়েছে ২০ হাজার টাকার মতো।
সরকারিতেও ব্যক্তির খরচ হচ্ছে : বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আসা ডেঙ্গু আক্রান্ত নাসিমা আক্তার (৪৫) ও স্বামী মোশাররফ হোসেন পাঁচ দিন ভর্তি ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। গত ২৭ আগস্ট সুস্থ হয়ে বাড়ি যান তারা। এই হাসপাতালে আসার আগে এক দিন রাজধানীর সাইনবোর্ড এলাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে এক দিন ছিলেন তারা। অর্থাৎ এই ছয় দিনে দুজনের চিকিৎসায় ব্যয় হয়েছে ৫৪ হাজার ৪০০ টাকার মতো। সে হিসেবে একজনের পেছনে ব্যয় হয়েছে ২৭ হাজার টাকা করে।
ঢাকা মেডিকেলের ফটকে কথা হয় এই দম্পতির ছেলে মেহেদীর সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে জানান, এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাইরে থেকে প্রতিদিন দুজনের সিবিসি টেস্ট করতে হয়েছে। প্রতিটি পরীক্ষায় লেগেছে ৫০০ করে ৫ হাজার টাকা। রক্ত বাড়ানোর জন্য বাইরে থেকে দুটি করে চারটি স্যালাইন কিনতে হয়েছে ২৪০০ টাকায়। নিজের খাওয়া ও দুজনের পথ্য হিসেবে দৈনিক পাঁচ হাজার টাকা করে ব্যয় হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। ওষুধে লেগেছে ১৫ হাজার টাকার। এ ছাড়া এখানে ভর্তির আগে রাজধানীর সাইনবোর্ড এলাকায় এক দিন চিকিৎসা নিতে ব্যয় হয়েছে সাত হাজার টাকা।
রাজধানীর মিরপুর-১-এর বাসিন্দা ১০ বছরের শিশু ফারিয়াকে রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয় ৩ সেপ্টেম্বর। পরদিন সোমবার সন্ধ্যায় তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। পাঁচ দিন আইসিইউতে রাখার পর গত ৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তাকে কেবিনে আনা হয়। পরদিন গত রবিবার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে শিশুটি।
শিশুটির পরিবার জানায়, এই সাত দিনে সাধারণ শয্যা, আইসিইউ বেড ও কেবিন ভাড়া, রোগীর ওষুধ ও পথ্য এবং রোগীর সঙ্গে থাকা পরিবারের দুজন সদস্যের খাওয়া ও বাসা থেকে আসা-যাওয়া বাবদ দৈনিক গড়ে ১৫ হাজার টাকা হিসেবে ১ লাখ ৫ হাজার টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে প্রতিদিন আইসিইউ বেডভাড়া ছিল ৫ হাজার টাকা করে, আইসিইউতে থাকাকালে স্যালাইন ও ওষুধ লেগেছে গড়ে ৫ হাজার টাকা করে এবং ডাবের পানি, স্যুপ ও খাবারের জন্য ব্যয় হয়েছে গড়ে ৫০০ টাকা করে, রোগীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক থাকা পরিবারের দুই সদস্যের তিনবেলা খাবার বাবদ প্রতিদিন ব্যয় হয়েছে ২ হাজার টাকা করে।
যুক্তরাষ্ট্র গত মে মাসে ভিসানীতি আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল। শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় তারা ভিসানীতি ঘোষণার কার্যকারিতার কথা জানালো। এই ভিসানীতি কার্যকারিতার কথা তারা তখন জানালো যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।
আরেকটু স্পষ্ট করে বললে, নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় গত শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়ার এক বৈঠকে আবারও বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়।
ওই বৈঠকের পর আজরা জেয়া নিজেই এক্সে (সাবেক টুইটার) সচিত্র একটি পোস্ট দিয়েছেন। এতে তিনি লিখেছেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশ, কানাডা, গাম্বিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের একটি সাইড ইভেন্টের আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আবারও যুক্ত হতে পেরে সম্মানিতবোধ করছি। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, অংশীদারত্বের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছি এবং ৯ লাখ ৬০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে উদারতার সঙ্গে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছি।’
বৈঠকে আজরা জেয়া প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তারা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের জন্য ১১৬ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জেয়া রোহিঙ্গাদের উন্নত জীবিকা নিশ্চিত করতে তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর জোর দেন।
জবাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা উচিত, অন্যথায় এই অঞ্চল নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়বে। কারণ রোহিঙ্গারা ইতিমধ্যে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। যার মধ্যে রয়েছে হত্যা, আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান এবং মাদক কারবার। রোহিঙ্গারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে কারণ তাদের প্রত্যাবাসন দীর্ঘায়িত হচ্ছে এবং তারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে এবং তারা সেখানে কোনো ভবিষ্যৎ অনুভব করছে না।
একটা বিষয় খেয়াল করলে বুঝা যাবে, উজারা জেয়ার সঙ্গে বৈঠকের পর পরই বাংলাদেশের উপর যুক্তরাষ্ট্র তাদের ভিসানীতি কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছে। এতে বুঝা যাচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করেছে। তাদের দাবি ছিলো, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেছেন, তাদেরকে নিজ দেশ ফিরিয়ে নিতে যত তাড়াতাড়ি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত।এ থেকে বুঝতে কোনো অসুবিধা নেই যে, রোহিঙ্গাদের কর্মসংসস্থানের প্রস্তাব সরাসরি ফিরিয়ে দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র নাখোশ হয়েছে। এই প্রস্তাব ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আর কী কী প্রস্তাব বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছিল তা আমরা জানি না। মনে হচ্ছে, এমন কিছু প্রস্তাব হয়তো প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছিল যেগুলো তিনি নাকচ করে দিয়েছেন।এবার আসা যাক বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচন প্রসঙ্গে। বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। অনেকদিন ধরে তারা সেটি বলে আসছে। বাংলাদেশের তরফ থেকেও বার বার জানানো হয়েছে যে, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা হবে। তারপরও তারা ভিসানীতি আরোপ করে সেটি কার্যকর করতে শুরু করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- নির্বাচন তো এখনও হয়নি। তার আগেই কেন ভিসানীতি আরোপ ও কার্যকর করা হলো?
এ থেকে এটা স্পষ্ট যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতেই এসব ভিসানীতি, নিষেধাজ্ঞা জারি করছে। গণতন্ত্র, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক ভোট শুধুমাত্র ইস্যু। নিজের দেশেই আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের বিরোধী পক্ষকে ঘায়েল করতে নানান কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। নিজের দেশেই যেখানে বাইডেন প্রশাসন প্রশ্নবিদ্ধ সেখানে অন্যদেশের গণতন্ত্র নিয়ে তাদের এতো মাথা ব্যাথা কেন?
বাংলাদেশেই যে তারা প্রথম ভিসানীতি আরোপ বা নিষেধাজ্ঞা জারি করে তা কিন্তু নয়। সাম্প্রতিক অতীত ঘাটলে দেখা যাবে, যুক্তরাষ্ট্র আরও বহু দেশের সরকারের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদদের উপর একইভাবে ভিসানীতি এবং নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এটা নতুন কিছু নয়। যেখানেই তাদের স্বার্থ জড়িত সেখানেই তারা একই পথে হেঁটেছে। কিন্তু কোথাও তারা সফল হতে পারেনি। সব জায়গা থেকেই ফিরেছে শূন্য হাতে। আমরা যদি ভেনিজুয়েলা থেকে শুরু করে সিরিয়া, ইরান, মিশর, তুরস্ক, রাশিয়া, বেলারুশের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো এদের সবার উপরই নিষেধাজ্ঞা জারি কিংবা ভিসানীতি আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু খুব একটা ফল হয়নি।তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই সেদেশে সামরিক অভ্যূত্থান হয়েছিল। সেই অভ্যূত্থানে যুক্তরাষ্ট্র ইন্ধন দিয়েছিল। ২০২১ সালে তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমান সৌলু যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ধনের বিষয়টি স্পষ্ট করেন। ভেনিজুয়েলায় নিজেদের পছন্দের লোক গুইদুকে প্রেসিডেন্ট করতে না পেরে মাদুরোকে বার বার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।পাঠকদেরকে হালের একটা তথ্য দিয়ে রাখি। যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ভারতের মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্রের উপরও। ১৯৯২ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বহাল ছিল। বারাক ওবামা ভারত সফরের পর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। তার সফরের বেশ কিছু দিন পর ভারত নাসার সঙ্গে চুক্তি করল।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। গুজরাট দাঙ্গার কারণে তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। পরবর্তিতে নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্র তার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বাধ্য হয়।
বাংলাদেশের রাজনীতি কোন দিকে যাবে, কারা সরকার পরিচালনা করবে- সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক শুধুই বাংলাদেশের জনগণ। এখানে বাইরের রাষ্ট্র সে যুক্তরাষ্ট্র হোক কিংবা অন্য কোনো দেশ হোক কারোরই হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।
বাংলাদেশের রাজনীতি কোন দিকে যাবে, কারা সরকার পরিচালনা করবে- সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক শুধুই বাংলাদেশের জনগণ। এখানে বাইরের রাষ্ট্র সে যুক্তরাষ্ট্র হোক কিংবা অন্য কোনো দেশ হোক কারোরই হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। যখনই বাইরের কোনো রাষ্ট্র কোনো অজুহাতে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করবে তখনই বুঝতে হবে ওই দেশের বৃহত্তর স্বার্থ আছে। আর এসব নিষেধাজ্ঞা, ভিসানীতি আরোপে এদেশের সাধারণ মানুষের কিছুই যায় আসে না। কারণ বাংলাদেশের মানুষ নিজেরাই নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্ত করেছে এবং করছে।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী নিজামুল হক বিপুল
মানকাডিং আউটের সুবিধাটা দলীয় সিদ্ধান্ত। এটা নেওয়া হবে কি না তা বসে আলোচনা করে দলের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন তামিম ইকবাল। একবার আউট করে আবার ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে আনাটা ভালো দেখায় না বলেও মনে করেন এই টাইগার ব্যাটসম্যান।
মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মানকাড আউটের ঘটনা ঘটে। বল হওয়ার আগেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া ইশ সোধিকে মানকাড করেন হাসান মাহমুদ। টিভি আম্পায়ারও তাকে আউট ঘোষণা করেন। কিন্তু ড্রেসিংরুমে ফেরার আগেই অধিনায়ক লিটন দাস তাকে ফিরিয়ে আনেন। তারপরই শুরু হয়ে যায় সমালোচনার ঝড়।
স্বাভাবিকভাবেই প্রসঙ্গটা আসে সংবাদ সম্মেলেনও। দলের প্রতিনিধি হয়ে আসা তামিম ইকবালের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, তাঁকে এভাবে ফিরিয়ে আনা উচিত হয়েছে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে তামিম সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘এ আউট নিলে… আমার মনে হয়নি ওরও (সোধি) এমন করা উচিত হয়নি। ও যেভাবে বিস্মিত হয়েছে, তারও বিস্মিত হওয়া উচিত নয়। এটা আমরা নেব কি নেব না, এটা অধিনায়কের সিদ্ধান্ত। দুঃখিত, দলের সিদ্ধান্ত। নেব কি নেব না। তবে সে যেভাবে নিয়েছে, তাতে আমি অবাক হয়েছি। এটা ক্রিকেটেরই অংশ।’
এমন আউটের ক্ষেত্রে একটা কথা আসে—ব্যাটসম্যানকে সতর্ক করা। তবে সেটিকেও উড়িয়ে দিয়েছেন তামিম, ‘এখানে ওয়ার্নিংয়ের কিছু নেই। বোল্ড আউটের মতোই। হয়তো তখন অধিনায়ক ভেবেছে আমরা নেব না, এ কারণেই আমরা নেই নাই। এখানে ঠিক বা ভুল নেই। হয় আপনি করবেন, তাতেও ভুল নেই। যদি না করেন, তাতেও ভুল নেই। এটা দলের সিদ্ধান্ত। আমাদের এটা নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত, করব কি করব না। কারণ সামনে (এমন) আরও দেখা যাবে।’
এমন দ্বিপক্ষীয় সিরিজে ম্যাচের ওই পর্যায়ে না হয়ে অন্য কোনো আরও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এমন আউট বাংলাদেশ করত কি না, সে ব্যাপারে তামিম বলেছেন, ‘হয়তোবা (নিতাম)। হয়তোবা না। আমি ভুল দেখি না। নিয়ম আছে এমন। এটা যদি কেউ আমরা নিই বা আমাদের বিপক্ষেও নেয়, আমার মনে হয় না এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত। যেভাবে এখন লোকে দেখায়।’
তামিমের কথা শুনে মনে হবে, মানকাডিং না করার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত বা নিজেদের মধ্যে আলোচনা হয়নি তাঁদের। এ ব্যাপারে এখন দলের মধ্যে আলোচনা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি, ‘এটা একটা দলীয় সিদ্ধান্ত। আজকের ঘটনার পর আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করব। আমাদের যদি দলীয় সিদ্ধান্ত হয়, আমরা এ ধরনের উইকেট নেব তাহলে নেব, নইলে নেব না। কারণ এটা ভালো দেখায় না, একবার আউট করার পর আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসা।’
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’