
দেশে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ¦রে আক্রান্ত হয়ে আরও ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৭৯০ জন। এ ছাড়া এ সময় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ১২৯ জন। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এদিকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বাড়ায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ১৪ ও ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করছে। ওই দুটি ওয়ার্ডে প্রতি সপ্তাহে ১০ জনের বেশি রোগী পাওয়ায় কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে শুক্রবার জানিয়েছেন সংস্থার মুখপাত্র মো. আবু নাছের।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ২ হাজার ১২৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৮৪৩ ও ঢাকার বাইরে ১ হাজার ২৮৬ জন। এ সময় ২ হাজার ১৩৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চারজন ঢাকায় ও আটজন ঢাকার বাইরে মারা গেছে। এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত যে ৭৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে তাদের ৫৪৭ জন ঢাকায় এবং ২৪৩ জন ঢাকার বাইরে।
এতে আরও বলা হয়, চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৬১ হাজার ৯৬৪ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৭১ হাজার ৫০৩ এবং ঢাকার বাইরে ৯০ হাজার ৪৬১ জন। এদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১ লাখ ৫১ হাজার ২৮৩ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ৬৬ হাজার ৯৪০ এবং ঢাকার বাইরে ৮৪ হাজার ৩৪৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।
ডিএসসিসির দুই ওয়ার্ড রেড জোনে : ডিএসসিসি জানায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো তালিকা, নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ফোন নম্বরসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রাপ্ত ডেঙ্গু রোগীর তথ্যাদি যাচাই-বাছাই ও পর্যালোচনা শেষে এসব ওয়ার্ডে চলতি মাসের দুই থেকে আট তারিখে ১১ জন করে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে।
ডিএসসিসি আরও জানায়, রেড জোনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আজ সকাল ১০টায় ১৪ নম্বর ওয়ার্ড এবং সকাল ১১টায় ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড পরিদর্শন করবেন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
ডিএসসিসির মুখপাত্র মো. আবু নাছের বলেন, আগামীকাল দিনব্যাপী বিশেষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও এডিস মশার প্রজনন স্থল নির্মূলে ওয়ার্ড দুটিতে ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। আর এ কার্যক্রমে ওয়ার্ড দুটিতে সাড়ে ৯৫০ পরিচ্ছন্নতাকর্মী বিশেষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এ ছাড়াও প্রতিটি ওয়ার্ডে সকালে ১৩ জন ও বিকেলে ১৩ জন করে মশককর্মী লার্ভিসাইডিং ও এডাল্টিসাইডিং কার্যক্রমে অংশ নেবে।
প্রসঙ্গত, গত মাসে ডিএসসিসির ৫,২২, ৫৩ ও ৬০ নম্বর ওয়ার্ডকে রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছিল। আর ২৬ আগস্ট মেয়র তাপসও সে সব ওয়ার্ডে জনসম্পৃক্ততা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিল।
ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিল এখন মৃতপ্রায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে না পারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র সরে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা ঘোরানো মতিঝিলে আবাসিক ভবন, শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান তৈরি না হলে দেশের প্রধান এই বাণিজ্যিক অঞ্চল প্রাণ হারাবে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাদের মতে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় অবদান রয়েছে মতিঝিলের টাকার। শুধু তা-ই নয়, মতিঝিলে উপার্জিত অর্থে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডাসহ আরও অনেক দেশে। এখানকার উপার্জিত টাকা অনেকে জমা রেখেছেন সুইস ব্যাংকেও। শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মতিঝিলে। এ যেন মা কাঁকড়ার আত্মত্যাগের গল্প। মা কাঁকড়া বাচ্চাদের আগলে রাখে বুকের ভেতর; যেদিন বাচ্চাগুলো বের হয়ে আসে, সেদিন খোলস ছাড়া মা কাঁকড়ার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। মা কাঁকড়ার মতো দুঃখী ও ত্যাগী বাণিজ্যিক মতিঝিল।
ষাটের দশকে মতিঝিলে গড়ে ওঠে দেশের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট-সিবিডি)। সেই থেকে এখনো দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল মতিঝিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে সরকারি ৮টি, বেসরকারি ৪৫টি এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে ৮টি। এ ছাড়া ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৮১টি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের বেশির প্রধান কার্যালয় চলে গেছে কারওয়ান বাজার, গুলশান-বনানী ও উত্তরায়। নতুন করে যেসব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাচ্ছে, সেগুলোর প্রধান কার্যালয় মতিঝিলের বাইরে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মতিঝিলের আশপাশে পরিকল্পিত কোনো আবাসিক এলাকা, অভিজাত হোটেল, কাজের ফাঁকে অবসর কাটানোর মতো উন্মুক্ত স্থান, শপিং কমপ্লেক্স না থাকায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুবিধার জন্য অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়গুলোও মতিঝিলের বাইরের এলাকা, অর্থাৎ কারওয়ান বাজার, গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে গড়ে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, মধুমিতা সিনেমা হল এবং ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এবং দিলকুশা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবন এবং বঙ্গভবনের পাশের এলাকাজুড়ে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল। বিশ্বের বাণিজ্যিক অঞ্চলের ভবনগুলো সুউচ্চ হয়ে থাকে। কিন্তু মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের পাশেই বঙ্গভবন। নিরাপত্তার কারণে বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর কোনো বহুতল ভবন করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, মতিঝিলের প্লটগুলোর ‘নন-রেসট্রিকটেড’ উচ্চতা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর সাড়ে চারতলার বেশি উচ্চতার ভবনের অনুমোদন মেলে না। ফলে মূল্যবান ওই প্লটগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারছেন না মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ জরাজীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণও রয়েছে কয়েকটি ভবন। একটির সঙ্গে অন্যটি লাগানো। দুটি ভবনের মাঝখানে উন্মুক্ত জায়গা নেই বেশিরভাগ ভবনের। দিলকুশা এলাকার বঙ্গভবন লাগানো ভবনগুলোর মাঝখানেও কোনো ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, মতিঝিল এলাকার ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে। ভাঙাচোরা এবড়োখেবড়ো সড়ক। সড়ক বিভাজকগুলো শ্রীহীন। এগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়নি। প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলে মতিঝিলের আরও করুণ দশা চোখে পড়ে। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার সড়কের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে চটের ছালা দিয়ে ঘেরা খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান এবং নানা পণ্যের অস্থায়ী দোকান। সামান্য বৃষ্টিতে মতিঝিল এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে থাকে পানির নিচে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত। ডিএসসিসি এলাকার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে। খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে মূল্যায়ন করলে মতিঝিল ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। যদিও এটা মানতে নারাজ ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি।
মতিঝিল এলাকার বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিল এলাকার সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএসসিসি। পরিত্যক্ত প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মতিঝিলের সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত ও সড়ক বিভাজকের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা দরকার। পর্যায়ক্রমে এ এলাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কাজ করবে ডিএসসিসি। তবে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের মূল সংস্কার ও আধুনিকায়নের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউককে সেসব বিষয় পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কাজে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা লাগলে করপোরেশন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলে রাজউক। রাজউক সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশক থেকেই মতিঝিলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যিক অঞ্চলে শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান থাকে। আর কাছাকাছি এলাকায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা থাকে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। অভিজাত মানের হোটেল পূর্বাণী গড়ে উঠলেও আশপাশে সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লোকজন গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় থাকেন। মতিঝিলের সৌন্দর্য নিশ্চিত করতে ও আধুনিকায়নে যেসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখা দরকার ছিল রাজউক ও সিটি করপোরেশন সেটা করেনি।
রাজউক সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধরা, উত্তরা। সেই সব এলাকা থেকে মানুষ মতিঝিলে আসেন। শহরের জনসংখ্যা বাড়ায় দিন দিন যানজট বাড়ছে। ওই সব এলাকা থেকে মতিঝিলে আসতে সড়কে এক থেকে দেড় ঘণ্টা চলে যায়। দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার মধ্যে ৩০ শতাংশ সময় সড়কে নষ্ট হচ্ছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে চিন্তা করেছে, তার কর্মস্থল এমন একটা জায়গায় হবে যা তার আবাসনের কাছাকাছি। মতিঝিল থেকে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও ভূমিকা রেখেছে।
কালের বিবর্তনে গুলশান হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক এলাকা। কারওয়ান বাজার, উত্তরায়ও গেছে কিছু। এসব জায়গায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমও সেখানে চলে গেছে। এসব এলাকার আশপাশে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় তাদের বসবাস। আবাসিক এলাকা ছাড়া, পৃথিবীর কোথাও শতভাগ জায়গা শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা অথবা একই শ্রেণির কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার হয় না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, নগর পরিকল্পনায় ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়, যেকোনো জায়গার ব্যবহার হবে ২৪ ঘণ্টা। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল কর্মচঞ্চল থাকে মাত্র ১২ ঘণ্টা। এরপর ওই জায়গার ব্যবহার হয় না। রাতে নীরব ও ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়।
তিনি বলেন, যে মতিঝিলে দিনের বেলায় হাঁটা যায় না; গাড়ির কারণে, যানজটে; সেই মতিঝিলে রাত ৮টার পরে আবার একাও হাঁটা যায় না; অনিরাপদ বোধ হয়। এ জন্য যারা দিনে বাণিজ্য করতে আসেন, তারা মতিঝিল এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন না। অন্যদিকে গুলশান-বনানী এলাকায় থাকলে তারা শপিংয়ে যেতে পারেন, কফি শপে যেতে পারেন। এসব কারণে সারা বিশ্বে ভূমির মিশ্র ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, মতিঝিল এলাকা যেহেতু ইতিমধ্যে তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলেছে, এ জন্য মতিঝিলের জমির শ্রেণিকে মিশ্র ব্যবহার হিসেবে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছে রাজউক। সংশোধিত ড্যাপে সে বিষয়ে নির্দেশনা রাখা হয়েছে। পৃথিবীর নগর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৫০, ৬০ বা ১০০ বছর অন্তর সেসব ঢেলে সাজানো হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়েই মতিঝিল এলাকাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে আবাসিকের বৈশিষ্ট্য দিতে হবে; কনডোমিনিয়াম গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি, ওয়াকওয়ে থাকবে। বসার ব্যবস্থা থাকবে। মতিঝিল এলাকায় ঝিল ছিল, ওই ঝিলকে প্রাধান্য দিয়ে পার্কটি তৈরি করা হবে। বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া মতিঝিলকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিলের আধুনিকায়ন ও ভূমির মিশ্র ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাহলে মতিঝিল সচল থাকবে; তবে ঢাকা শহর বড় হওয়ায় আরও বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে ওঠা ইতিবাচক। এসব পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার ছিল; কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে সে রকম হয়নি। এটা দুঃখজনক। এ জন্য শহরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ঢাকায় এখন অনেকগুলো বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সব অঞ্চলে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় বড় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় মতিঝিলে রয়েছে। তবে ব্যবসা গুলশান, বনানী, উত্তরা, গাজীপুরে সরে যাওয়ায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ব্যবসা কেন্দ্রের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
ভোগ্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে বাজারের লাগাম টেনে ধরতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিম, আলু ও পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দাম বেঁধে দেয়। এই দাম গতকাল শুক্রবার থেকে কার্যকর হলেও বাজারগুলোতে আগের অবস্থায় দেখা গেছে; বরং একেক বাজারে বা একেক এলাকায় নানা দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, সরকার অযাচিত পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করেছে। তাদের বেঁধে দেওয়া মূল্যে এই তিনটি ভোগ্যপণ্য কেনাই যাচ্ছে না। পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে পণ্য কিনে কমে বিক্রি করা সম্ভব নয়।
গত বৃহস্পতিবার সরকার ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দেয়। একটি ডিম ১২ টাকা, আলু প্রতি কেজি ৩৫-৩৬ এবং দেশি পেঁয়াজ ৬৪-৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এই দামে যাতে পণ্য বিক্রি করা হয়, সে জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজারে অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু তাতে এই তিন পণ্যের দামে কোনো হেরফের হচ্ছে না; বরং বাজারে আগের মতোই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
সরেজমিনে গতকাল রাজধানীর নিউমার্কেট, পলাশী, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল বাজারসহ আশপাশের মহল্লার দোকান ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
নির্ধারিত দামের চেয়ে ১০-১৫ টাকা বেশিতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৭৫-৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে ৪৮ টাকার ডিমের হালি পাইকারিতে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মহল্লার দোকানগুলোতে ৫ টাকা বাড়তিতে প্রতি হালি ডিম ৫৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
পলাশী বাজারেরর পেঁয়াজ বিক্রেতা আবদুল্লাহ দেশ রূপান্তরকে জানান, পাইকারি বাজার থেকে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৭৪-৭৮ টাকা দরে কিনেছেন তিনি। খরচসহ প্রতি কেজি পেঁয়াজের কেনা দাম দাঁড়ায় ৮০ টাকা। ব্যবসা করতে এসে ৮০-৮২ টাকা চালান খাটিয়ে ৮৫-৯০ টাকার কমে পেঁয়াজ বিক্রি করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানান এই বিক্রেতা।
নিউমার্কেটের ডিম বিক্রেতা রাকিব দেশ রূপান্তরকে বললেন, আড়ত থেকে ১০০টি ডিম কিনতে হয়েছে ১ হাজার ১৫৫ টাকায়। সঙ্গে অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ টাকা পড়ে যায়। তাহলে বেশি দরে ডিম কিনে কীভাবে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি করবেন, প্রশ্ন করেন তিনি।
ডিম-পেঁয়াজের মতো আলুর বাজারেও একই পরিস্থিতি দেখা যায়। পাইকারিতে আলুর কেজি ৪৫ এবং খুচরা বাজারে ৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। হাতিরপুল বাজারে এক কেজি আলু ৫৫ টাকাও বিক্রি হতে দেখা গেছে। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকা কেজি দরে।
সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে আলু প্রতি কেজিতে ৯-১২ টাকা বেশি বিক্রির কারণ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের জামাল নামের এক ব্যবসায়ী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কম দামে কিনতে না পারলে তো বেশি দামে বিক্রি করবই। কোল্ড স্টোরেজ থেকে নতুন আলু বাজারে আসেনি। তাই দাম বেশি দিয়ে আগের আলু কিনতে হচ্ছে। সরকার যে দাম বেঁধে দিয়েছে তা বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা দেখছি না।’
জানা যায়, সরকার নির্ধারিত নতুন দর কার্যকর নিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজধানীসহ দেশের জেলা শহরগুলোতে অভিযান চালাচ্ছে। এরপরও ডিম, আলু ও পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসার বিষয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছি। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত কোল্ড স্টোরেজগুলো পর্যবেক্ষণ করছি। যেসব কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলু ৩৬-৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ভোক্তা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া সরকার নির্ধারিত মূল্য বাস্তবায়ন হতে আরও কয়েক দিন সময় লাগতে পারে।’
গতকাল দুপুরে রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার এলাকায় অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ সময় আলু ও পেঁয়াজের মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করায় দুই দোকানিকে দেড় হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
রাজশাহী জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাসুম আলী বলেন, যারা আইন অমান্য করবে, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, আজকের অভিযানে আলু ও পেঁয়াজের মূল্যতালিকা না থাকায় মেসার্স টুটুল এন্টারপ্রাইজকে ৫০০ ও অমিন ট্রেডার্সকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এমন অভিযানে যে লাভ হচ্ছে না তার প্রতিফলন রাজশাহীর বাজারেই দেখা গেছে।
গতকাল রাজশাহীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম রাখা হচ্ছে ৭২-৭৫ টাকা। আর আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকা কেজি। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭৮-৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে।
তবে, ডিম সরকার নির্ধারিত দামে বা কোথাও কোথাও কিছুটা কমেই বিক্রি হচ্ছে। নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, প্রতিটি ডিম ১২ টাকা নির্ধারণ করা হলেও তারা সাদা ডিম সাড়ে ১১ টাকা দামে বিক্রি করছেন। আর লালটা বিক্রি করছেন ১২ টাকা করে।
সাহেববাজার মাস্টারপাড়া কাঁচা বাজারের পাইকারি আলু ব্যবসায়ী মিরাজ হোসেন বলেন, ‘বাজারে আলু নেই। আজও আলু আসেনি। গতকাল পর্যন্ত যা কিনেছি, তা বিক্রি করছি। সরকারের নির্ধারিত দাম বিকেলে হয়েছে। আমরা তো সকালে কিনেছি। তাই আজ বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। আগামী দিন থেকে নির্ধারিত দামের মধ্যে পেলে আমরাও বিক্রি করব। বর্তমানে কেজি প্রতি আলুর পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৪১ টাকা দরে।’
সাগরপাড়া কাঁচা বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা মনির হোসেন বলেন, ‘আমাদের তো কিছু করার নেই। আজ দাম কমার কথা। কিন্তু সকালে এ দামে তো পেঁয়াজ পাইনি। সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে কিন্তু বাস্তবে তো পাচ্ছি না। তাই যে দামে কিনছি, সেটা থেকে তো লাভ করেই বিক্রি করতে হবে।’
এদিকে বৃহস্পতিবার সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ৫ টাকা কমিয়ে ১৬০ টাকা করা হয়েছে। কিন্তু গতকালও রাজশাহীর বাজার ও দোকানগুলোতে বিক্রি হয়েছে ১৭৫ টাকা লিটার দরে। বিক্রেতারা বলছেন, তাদের কাছে যে তেল আছে, সেগুলো আগের। এখনো নতুন বোতলজাত করা তেল বাজারে আসেনি। নতুন রেট বসানো তেল না আসা পর্যন্ত আগের দামে কেনা তেল আগের দামেই বিক্রি করতে হবে।
বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপটা যেন বাংলাদেশকে নানা শঙ্কার কথাই জানান দিচ্ছিল। তবে ভারতকে হারিয়ে আসরের শেষটা রঙিন করে তুলল টাইগাররা। ব্যাটে-বলে রোহিত শর্মার দলের চেয়ে সেরা ক্রিকেট খেলে শেষ ওভারে সাকিব আল হাসানের দল পেল দারুণ এক জয়। যদিও বেলাশেষে এলো এই জয়, তবে বিশ্বকাপের আগে নিশ্চিতভাবেই তা অনুপ্রেরণা জোগাবে দলকে।
কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে গতকাল শুক্রবার রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে ভারতকে ৬ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ২৬৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে এক বল বাকি থাকতে ২৫৯ রানে অলআউট হয় আগেই ফাইনাল নিশ্চিত করা ভারত। শেষ ওভারে তাদের ১ উইকেট হাতে নিয়ে ১২ রান দরকার ছিল। কিন্তু সেই সমীকরণ মেলাতে পারেনি তারা। ৪৯তম ওভারে জোড়া উইকেট শিকার করেন মোস্তাফিজুর রহমান। শার্দূল ঠাকুরের পর ফেরান ভয়ংকর হয়ে ওঠা অক্ষর প্যাটেলকেও। তাতেই ভারতের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায় অনেকটাই। শেষ ওভারে আর পেরে ওঠেনি তারা। চলতি আসরে এই প্রথম হারের স্বাদ পেল পাঁচ পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামা ভারত। আগামী রবিবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফাইনালের আগে দলটার জন্য এটা বড় ধাক্কা হয়ে এলো কি না, সেটাই এখন দেখার।
তবে সুপার ফোরে প্রথম দুই ম্যাচ হেরে ফাইনাল থেকে আগেই ছিটকে যাওয়া বাংলাদেশ এ ম্যাচ থেকে যা যা অর্জন করার, সবাটাই কুড়িয়ে নিয়েছে বলতে হবে। যদিও টপঅর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতা দুর্ভাবনা হয়েই থেকে গেল। তবে লোয়ার অর্ডারে নাসুম আহমেদের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস এবং মেহেদী হাসান ও তানজিম সাকিবের ব্যাটিংকে প্রাপ্তির খাতায় রাখাই যায়।
আগেই ফাইনাল নিশ্চিত হওয়ায় ভারত যে এই ম্যাচে বেশ কিছু পরিবর্তন আনবে তা নিশ্চিতই ছিল। কোহলি-পান্ডিয়া-বুমরাহরা এ ম্যাচে বিশ্রামে ছিলেন। তবে শুভমন গিলকে হতভাগা বলতেই হয়। তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরিটি বৃথা গেছে। ১৩৩ বলে ৮ চার ও ৫ ছক্কায় ১২১ রান করেন তিনি। অন্যদের ব্যর্থতায় কী দুর্দান্তই না খেলছিলেন এ তরুণ। কিন্তু দলকে জয় উপহার দিতে পারলেন না। আট নম্বরে অক্ষর প্যাটেল খেলেছেন ৩৪ বলে ৪২ রানের ইনিংস। কিন্তু অন্য ব্যাটাররা নিজেদের সেভাবে মেলে ধরতে না পারায় হার মানতে হয় ভারতকে। দলটির পক্ষে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সূর্যকুমার যাদবের। ৩৪ বলে ২৬ রান করেছেন তিনি।
বোলিংয়ে প্রথমে বাংলাদেশের জয়ে ভিত গড়ে দিয়েছিলেন অভিষিক্ত তানজিম হাসান সাকিব। ইনিংসের প্রথম ওভারেই রোহিত শর্মাকে শূন্য রানে ফেরান তিনি। নিজের পরের ওভারে অভিষিক্ত তিলক ভর্মাকেও ব্যক্তিগত ৫ রানে তুলে নেন। অভিষেকে ১০ বলে জোড়া শিকার সাকিবের, তাতে ১৭ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ভারত। শেষ ওভারে যখন ১ উইকেট হাতে নিয়ে ১২ রান প্রয়োজন ভারতের, তখন (জুনিয়র) সাকিবেই আস্থা রাখেন অধিনায়ক (সিনিয়র) সাকিব। প্রথম তিন বল ডট দিয়ে ম্যাচ অনেকটাই নিজেদের দিকে নিয়ে আসেন তিনি। চতুর্থ বলে শামি বাউন্ডারি হাঁকালেও পঞ্চম বলে রান আউট হয়ে যান। তাতেই জয়ের আনন্দে মাতে বাংলাদেশ।
শুরু ও শেষে অভিষিক্ত সাকিব তো দুর্দান্তই। ৭.৫ ওভারে ৩২ রানে ২ শিকার তার। ডেথ ওভারে মোস্তাফিজও দারুণ করেছেন। ৮ ওভারে ৫০ রান খরচ করলেও ৩ শিকার ধরেছেন। এর সঙ্গে শেখ মেহেদি হাসানের কথাও বলতে হবে। সেঞ্চুরিয়ান গিলকে ফিরিয়েছিলেন তিনিই। ৯ ওভারে ৫০ রান খরচায় নেন ২ উইকেট। সেট হয়ে যাওয়া যাদবকে সাকিব যে বোল্ড করলেন, সেটাও ছিল অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট। এদিন সাকিবের শিকার এই একটিই।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে মোহাম্মদ শামি ও শার্দূল ঠাকুরের তোপে ২৮ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। টপঅর্ডার পুরোপুরি ফ্লপ। পাঁচ নম্বরে নেমে মেহেদী হাসান মিরাজও হন ব্যর্থ। এমন পরিস্থিতিতে অধিনায়ক সাকিব সর্বোচ্চ ৮০ রানের ইনিংস উপহার দেন। হৃদয়ের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে যোগ করেন ১০১ রান। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৫৫তম ফিফটি তুলে নেওয়া সাকিবের ইনিংসে ছিল ৬ চার ও ৩ ছক্কা। হৃদয়ের ব্যাট থেকে আসে ৫৪ রান। ৮১ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান পঞ্চম ওয়ানডে ফিফটি পাওয়া এ ব্যাটার। লোয়ার অর্ডারে নাসুম খেলেছেন ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস। আগের আট ওয়ানডেতে যার মোট রান ছিল ৪৪, সেই তিনিই এদিন করলেন ৪৫ বলে ৪৪ রান। ৬টি চারের সঙ্গে সেখানে ছিল দারুণ ১ ছক্কাও।
সপ্তম উইকেটে হৃদয়ের সঙ্গে ৩২ ও অষ্টম উইকেটে মেহেদির সঙ্গে ৩৬ বলে ৪৫ রান যোগ করেছেন নাসুম। মেহেদি ২৩ বলে ২৯ ও অভিষিক্ত তানজিম হাসান সাকিব ৮ বলে অপরাজিত ১৪ রান করেছেন। নবম উইকেটে দুজন অবিচ্ছিন্ন থেকে যোগ করেন ১৬ বলে ২৭ রান। সুবাদে ৮ উইকেটে ২৬৫ রানের পুঁজি পায় টাইগাররা। ভারতের পক্ষে শার্দূল ঠাকুর ৩ উইকেট নিয়েছেন। ২ উইকেট শামির। ব্যাটে-বলে আলো ছড়িয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম বাতিল হওয়ায় এবার ৩০০ আসনেই ব্যালটে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেই লক্ষ্যে ব্যালট পেপারসহ ভোটসামগ্রী কেনার প্রক্রিয়া শেষ করেছে সংস্থাটি। তফসিল ঘোষণার আগেই প্রায় ৭০ কোটি টাকার কেনাকাটা সারবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। তবে এর পরিমাণ বাড়তেও পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ক্রয়সংক্রান্ত কমিটি নিয়মিত বৈঠকে কার্যাদেশপত্রের চাহিদা অনুযায়ী কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করছে। ইতিমধ্যে ইসির চাহিদা মতো কিছু কিছু সামগ্রী তারা হাতেও পেয়েছে। ইসির লক্ষ্য নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগেই পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু প্রস্তুত রাখা।
আগামী বছর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি সম্প্রতি ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আগস্টে ইসি কমিশনার আনিছুর রহমান জানিয়েছেন, নভেম্বর মাসে তফসিল ঘোষণা করা হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সম্প্রতি বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরের শেষ অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে তারা প্রস্তুতিমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে অতীতে নির্বাচনে ৪০ থেকে ৪৫ দিন আগে তফসিল ঘোষণা হলেও এবার আরও সময় হাতে রেখে তফসিল ঘোষণা হতে পারে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব জাহাংগীর আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ইসি সচিবালয়ের সব কর্মকর্তাকে এবং আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়ে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে কাজের অগ্রগতির পাশাপাশি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী মালামাল কেনা থেকে শুরু করে ভোটকেন্দ্র স্থাপন পর্যন্ত সব বিষয় রোডম্যাপ অনুযায়ী হচ্ছে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, তারা ইতিমধ্যে কিছু কিছু নির্বাচনী উপকরণ হাতে পেতে শুরু করেছেন। তারা আশা করছেন, নভেম্বরের মধ্যে সব উপকরণ বুঝে পাবেন। তিনি বলেন, এ নির্বাচনে ব্যালট পেপারটা গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু। সেটি তৈরির জন্য কাগজ কেনার কাজ ইতিমধ্যে বিজি প্রেস শেষ করেছে। তারা টেন্ডার করেছে। সবকিছু সঠিক পথেই রয়েছে। নিয়মিত বৈঠকের মাধ্যমে এসব বিষয়ে হালনাগাদ থাকছে ইসি।
নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ব্যালটে ভোটের কাজে সুই, সুতা, মোমবাতি, দেশলাই থেকে শুরু করে অন্তত ২৩ ধরনের জিনিসের দরকার হয়। এ ছাড়া প্রয়োজন হয় বিশেষ খামসহ ১৭ ধরনের প্যাকেটের।
জাতীয় নির্বাচন পরিচালনায় ইসির যে নির্দেশিকা আছে, সেখানেও ব্যালটে ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় এসব জিনিসপত্রের বিবরণ আছে।
জানা গেছে, ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণের জন্য ক্রয়তালিকায় থাকা ব্যালট বাক্স, ব্যালট বাক্সের লক, ব্যালটের কাগজ, স্ট্যাম্প প্যাড, অফিশিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাস সিল, লাল গালা, প্যাকিং বক্স, অমোচনীয় কালি ও কলম, বিভিন্ন ফরম, প্যাকেট, সুই-সুতা, খাম, মোমবাতি, ব্যালট বাক্সের সিল, গানি ব্যাগ, অফিশিয়াল সিল ইত্যাদি উপকরণের কোনটি কী পরিমাণ ইসির ভা-ারে রয়েছে, সেগুলোর তালিকা করা হয়েছে। পর্যালোচনা করে নতুন করে প্রয়োজন অনুযায়ী কেনার টেন্ডার দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনী উপকরণের অন্যতম ব্যালট বাক্স, স্ট্যাম্প প্যাড, সিলগালা, অফিশিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাশ সিল, অমোচনীয় কালি, বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, ক্যালকুলেটর, চার্জার লাইট, বিভিন্ন ধরনের ফরম, প্যাকেট মুদ্রণ ইত্যাদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হাতে পাওয়ার সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে গত মাসের বৈঠকে।
সূত্র বলছে, ভোটার সংখ্যার তথ্যের ভিত্তিতে ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষের সংখ্যার ভিত্তিতে এবার নির্বাচন সামগ্রী কেনার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী এবার ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জন। মাঠপর্যায়ের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, বর্তমানে সারা দেশে ২ লাখ ৯৪ হাজার ৩৪৫টি স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স সংরক্ষিত আছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের নির্বাচনে ব্যালট বাক্স প্রয়োজন হবে ৩ লাখ ৬ হাজার ৬০০টি। সে হিসাবে ১২ হাজার ২৫৫টি বাক্স বেশি কিনলেই হতো। কিন্তু সারা দেশের ব্যালট বাক্সগুলো গুণগত মান, ভোটকেন্দ্রে ব্যবহার নিশ্চিত, সংসদ নির্বাচনে রিস্কফ্যাক্টরসহ নির্বাচন পরপরই কিছু উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বিষয়টি সামনে রেখে এবার ৮০ হাজার নতুন ব্যালট বাক্স কেনার টেন্ডার করেছে ইসি। এগুলোর মধ্যে চলতি সেপ্টেম্বরে ৪০ হাজার এবং অক্টোবরে ৪০ হাজার ইসির হাতে পৌঁছনোর কথা। তবে স্থান সংকুলানের কারণে এগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে না রেখে প্রয়োজন অনুযায়ী মাঠপর্যায়ে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে ইসির। আগে বিদেশ থেকে এসব ব্যালট বাক্স ও ঢাকনা আনা হলেও এবার দেশীয় প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা হচ্ছে।
কমিশনের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, এবার গানি ব্যাগ ৯০ হাজার, হেসিয়ান ব্যাগ ১ লাখ ৬৫ হাজার, মার্কিং সিল ১৪ লাখ ৩৫ হাজার, অফিশিয়াল সিল ৭ লাখ ১৫ হাজার, ব্রাশ সিল ১ লাখ, গালা ২০ হাজার কেজি, অমোচনীয় কালি ও কলম ৮ লাখ ১৫ হাজার, ব্যালট বাক্সের প্লাস্টিকের লক ৪০ লাখ, ব্যালট বাক্সের ঢাকনা ৫৫ হাজার নভেম্বরের আগেই ইসিকে বুঝিয়ে দেওয়ায় শর্তে ঠিকাদারদের কাজ দেওয়া হয়েছে। এসব নির্বাচনী মালামাল কিনতে ১৯ কোটি ৩৬ লাখ ৪৯ হাজার ৯১৫ টাকা ইসিকে খরচ করতে হচ্ছে।
ওই সূত্রমতে, এ খরচ ছাড়াও প্যাডের জন্য আরও ৪ কোটি টাকার মতো লাগবে। সব মিলিয়ে ২২ কোটি টাকা মালামালের জন্য প্রয়োজন হবে। বিজি প্রেস ইতিমধ্যে কাগজ কেনার জন্য আরও ৩৩ কোটি টাকার একটি টেন্ডার দিয়েছে। এতে ১ লাখ ৬১ হাজার রিম কাগজ অর্থাৎ ৩২ লাখ ২০ হাজার দিস্তা কাগজ কেনা হচ্ছে। এসব কাগজ দিয়ে তৈরি হবে ব্যালট পেপার, বিভিন্ন ধরনের খাম ও প্যাড। পুরোটাই বিজি প্রেস ছাপাতে সক্ষম। আর কাগজ সরবরাহ করছে কর্ণফুলী পেপার মিলস। এসব খরচের সঙ্গে যোগ হবে বিজি প্রেসে ব্যালট পেপার ছাপানোর খরচ, লেবাররা যদি অতিরিক্ত সময় কাজ করে সেই ভাতা।
ইসির রোডম্যাপের সারণি ৮ অনুযায়ী, বর্তমানে নির্বাচন কমিশন প্রার্থী ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি এবং ফলাফল ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি নামে দুটি সফটওয়্যার ব্যবহার করবে। নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা অ্যাপটি উন্মুক্ত হলে কোনো নির্বাচনে প্রার্থী কে, কাদের মনোনয়নপত্র বৈধ কিংবা অবৈধ হলো, কারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলেন, কোনো প্রার্থীর প্রতীক কী ইত্যাদি জানা যাবে। অন্যদিকে নির্বাচনী ফলাফলও পাওয়া যাবে অ্যাপটিতে। এতে ভোট চলাকালে একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর থাকবে ভোটার উপস্থিতির তথ্য। রিটার্নিং কর্মকর্তা ফলাফল ঘোষণার পরপর পাওয়া যাবে ফলাফলের হালনাগাদ তথ্য।
অশোক কুমার দেবনাথ জানান, এ বিষয়ে চলতি মাসেই কমিশন সংবাদ সম্মেলন করবে। অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থার সঙ্গে আরও ছয়টা মডিউল থাকছে এতে। ফলে স্মার্ট ফোনে অ্যাপ ডাউনলোড করে এনআইডি নম্বর দিলে প্রয়োজনীয় তথ্য জানা যাবে।
এর জন্য ১৫ কোটি টাকার মতো ব্যয় হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ৭ কোটি টাকা হার্ডওয়্যারের জন্য। আর কার্যাদেশ পাওয়া প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে ৮ কোটি টাকা। দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ নির্বাচনের জন্য অ্যাপটি তৈরি করা হচ্ছে। পরবর্তী কমিশন যদি মনে করে এটা কন্টিনিউ (চলমান) করবে, অন্যথায় সেটি তারা বাতিল করে দেবে।
সমাজে এমন কিছু মানুষ আছেন, যাদের একের মধ্যেই থাকে অনেক পরিচয়। তাদের একজন অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু। দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরীর সর্বকনিষ্ঠ সন্তান তিনি। তবে অঞ্জন চৌধুরীকে কেবল সফল শিল্পোদ্যক্তা বাবার পরিচয়েই পরিচিত করার সুযোগ নেই। বাবার দেখানো পথে ব্যবসায়ী হিসেবে সাফল্যের শিখর ছুঁয়েছেন ঠিক। তবে নিজের জগৎটা কেবল ব্যবসার বৃত্তে বন্দি করে রাখেননি। আলোকিত সমাজ গড়তে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন নানা ক্ষেত্রে। কখনো তিনি ক্রীড়াঙ্গনের পরম শ্রদ্ধেয় পিন্টু ভাই, আবার কখনো সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রসৈনিক। সুস্থধারার বিনোদন চর্চায় সম্পৃক্ত হয়ে কেবল সফলতাই পাননি, তার হাত ধরে দেশের বিনোদনপিপাসু মানুষ পেয়েছে অসংখ্য সুস্থধারার চলচ্চিত্র, আর্ট ফিল্ম, শর্ট ফিল্ম, একক নাটক, ধারাবাহিক নাটকের স্বাদ। ক্রীড়া, সংস্কৃতি, বিনোদন জগতে ব্যাপক গ্রহণযোগ্য এই মানুষটি শিক্ষাক্ষেত্রেও রেখে চলেছেন উল্লেখযোগ্য অবদান। বড় শিল্পগোষ্ঠী পরিচালনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার সুবাদে রয়েছে সহজাত নেতৃত্ব গুণাবলি। তাই তো তাকে দেখা যায় নানা পেশাদার, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃত্ব দিতে। তবে বহুমাত্রিক গুণাবলির অধিকারী অঞ্জন চৌধুরীর সব পরিচয় ছাঁপিয়ে বড় হয়ে উঠেছে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়টি। মহান মুক্তিযুদ্ধে পাবনায় ৮ নম্বর সেক্টরে মুজিব বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করার ক্ষেত্রে রেখেছেন বলিষ্ঠ ভূমিকা।
অঞ্জন চৌধুরীর সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে জানা গেল শৈশবের সংগ্রামের কথা। বলেছিলেন, তারা চার ভাই-বোন সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্মাননি। একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পেতে তার বাবা স্যামসন এইচ চৌধুরীকে দেখেছেন নিরলস পরিশ্রম করে নিজের প্রতিষ্ঠানকে তিল তিল করে গড়ে তুলতে। যোগ্য বাবার যোগ্য সন্তান হিসেবে চার ভাই-বোনই স্কয়ার গ্রুপকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রত্যেকেই সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে পারিবারিক ব্যবসার কলেবর বাড়িয়েছেন। পারিবারিক ব্যবসার গন্ডি ছাড়িয়ে প্রত্যেকেই আবার নিজেদের জড়িয়েছেন কল্যাণমূলক নানা সামাজিক উদ্যোগে। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট হলেও ব্যবসার বাইরের জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ততা অঞ্জন চৌধুরীর যেন অন্যদের চেয়েও খানিকটা বেশিই।
মিডিয়াকম, মাছরাঙ্গা কমিউনিকেশন্স লিমিটেড, অ্যাইজিস সার্ভিসেস লিমিটেড, স্কয়ার সিকিউরিটিজ ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, স্কয়ার কনজ্যুমার প্রোডাক্টস লিমিটেড, স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেড, স্কয়ার স্পিনিং মিলস লিমিটেডের মতো প্রতিষ্ঠানকে সামনে থেকে এগিয়ে নিচ্ছেন। সব মিলিয়ে স্কয়ার গ্রুপের কম-বেশি ৩১টি অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের ভালো-মন্দের দায়িত্ব তার। এসব নিয়ে ব্যস্ততার শেষ নেই। কোনোটার তিনি চেয়ারম্যান, কোনোটার আবার ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তবে পেশাগত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি নানা রকম সামাজিক, পেশাদার ও ব্যবসায়িক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত আছেন সক্রিয়ভাবে। আর এটা শুধুই প্রাণের টানেই।
অঞ্জন চৌধুরী একাধারে অ্যাভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, অ্যাসোসিয়েশন অব টিভি কোম্পানি ওনার্সের (অ্যাটকো) সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া মাইক্রো ইন্ডাস্ট্রিজ ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যান্ড সার্ভিসের (মাইডাস) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান, বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (আইইউবি) এডুকেশন, সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড কালচারাল ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্টের ট্রাস্টি, সোসাইটি ফর দ্য প্রমোশন অব বাংলাদেশি আর্টের (এসপিবিএ) চেয়ারম্যান, লুক্সেমবার্গ বিজনেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে যেমন নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছেন, ঠিক তেমনি মাটির কাছের মানুষ হিসেবে দারুণ জনপ্রিয় মানুষটি পাবনা জেলার শতবর্ষী অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির সভাপতিরও দায়িত্ব পালন করছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। এই লাইব্রেরির জীর্ণ পুরনো ভবন ভেঙে গড়ে দিয়েছেন আধুনিক ভবন। হাজার হাজার অমূল্য বই সংগ্রহের সব ধরনের ব্যবস্থাই করেছেন তিনি।
পেশাদার ও সামাজিক পরিচয়ের চেয়ে অবশ্য নিজেকে খেলার মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি আনন্দ পান অঞ্জন চৌধুরী। ক্রীড়াঙ্গনে আছে অনেক পরিচয়। বর্তমানে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) সহসভাপতি। এ ছাড়া বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কাউন্সিলর এবং সাবেক সহসভাপতি, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাউন্সিলর, আবাহনী লিমিটেডের পরিচালক ও ফুটবল কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ গলফ ফেডারেশনের নির্বাহী সদস্য ও কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের ফিন্যান্স কমিটির সদস্য এবং পাবনা জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও স্যামসন এইচ চৌধুরী টেনিস কমপ্লেক্সের উপদেষ্টা। ফুটবল ফেডারেশনে সক্রিয় ছিলেন দীর্ঘ সময়। তবে আবাহনীর সঙ্গে সম্পৃক্তটা আরও আগে। নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে পরিচালক হিসেবে যোগ দেন ঐহিত্যবাহী ক্লাবটিতে। আবাহনীর দুঃসময়ে ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যানের গুরু দায়িত্ব নিয়েছিলেন অঞ্জন চৌধুরী। তার হাত ধরে নানা প্রতিকূলতা পেছনে ফেলে প্রিমিয়ার লিগসহ একাধিক শিরোপা জিতেছে আবাহনী। শুধু ফুটবল নয়, প্রয়োজনে আবাহনী ক্রিকেট দল গঠনেও সহায়তা করেছেন তিনি। আবাহনী সমর্থক গোষ্ঠীকেও নানাভাবে সহায়তা করেন তিনি। আবাহনীর সাবেক পরিচালক ও একসময়ের তারকা ক্রিকেটার আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি অঞ্জন চৌধুরীকে রেখেছেন আবাহনীর একটি ভরসার জায়গায়, ‘ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তাকে দেখেছি অনেক কাজ করতে। এ ছাড়া আমাদের ক্রিকেট দল গঠনেও তিনি ভূমিকা রেখেছেন। আগে তো ক্রীড়াঙ্গনে নিয়মিতই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে দেখা যেত।’ আবাহনী সমর্থক গোষ্ঠীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামন বাদশা অঞ্জন চৌধুরীকে নিয়ে যেন একটু আক্ষেপই করলেন, ‘অঞ্জন চৌধুরীর মতো একজন মানুষ হতে পারেন ক্রমেই নিম্নগামী দেশের ফুটবলের ত্রাণকর্তা। আমরাও একটা সময় চেয়েছিলাম তাকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি করতে। আমাদের ক্লাবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তাকে না জানিয়েই গিয়েছিলাম বাফুফের সভাপতি করার আর্জি নিয়ে। তবে পিন্টু ভাই কখনোই কোনো কিছু চেয়ে নেওয়ার মানুষ নন। ক্লাবকে ভালোবেসে নীরবেই কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের সমর্থক গোষ্ঠীর যখন যেটা প্রয়োজন পড়েছে, তার কাছে গিয়ে নিরাশ হইনি। ক্রীড়াঙ্গনে এ রকম মানুষ পাওয়া সত্যি কঠিন।’ ক্রীড়াঙ্গনের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করার পাশাপাশি নিজ জেলা পাবনার যুব সমাজকে বিপথগামিতার হাত থেকে রক্ষা করতে বেশ কিছু স্পোর্টিং ক্লাবকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করেন অঞ্জন চৌধুরী। ক্রীড়াঙ্গনে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অঞ্জন চৌধুরী জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পান ২০০৯ সালে। এই গুণী ব্যক্তিত্বকে ক্রীড়াঙ্গন ও মিডিয়ায় অবদান রাখায় অনারারি সদস্যপদ দিয়েছে দেশের ক্রীড়া লেখক ও ক্রীড়া সাংবাদিকদের সুপ্রাচীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন।
ক্রীড়াঙ্গনের মতো দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনেও বিশেষ অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন তিনি। দেশের লোক সংস্কৃতিকে বহির্বিশ্বের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে অনেক দিন ধরে কাজ করছেন। ২০১৫ সালে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে আয়োজন করেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্টিভ্যাল। তিন দিনব্যাপী এই বিশাল আয়োজনে দেশে-বিদেশের বিখ্যাত সব লোকশিল্পী গান পরিবেশনা করেন। এরপর এ আয়োজনটি দেশের অন্যতম সেরা সাংস্কৃতিক আসর হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ফি বছর সম্পূর্ণ বিনে পয়সায় কেবল মাত্র অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করে দেশ-বিদেশের বিখ্যাত লোকসংগীত শিল্পীদের পরিবেশনা দেখতে মুখিয়ে থাকে সব শ্রেণির মানুষ। তার মালাকিনাধীন চ্যানেল মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের নিয়মিত অনুষ্ঠান রাঙা সকাল ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এই অনুষ্ঠানে সমাজের নানা অঙ্গনে অবদান রাখা সফল মানুষদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। আর ব্যতিক্রমী এই অনুষ্ঠানের পুরো ভাবনাটাই এসেছে অঞ্জন চৌধুরীর কাছ থেকে।
সুস্থধারার চলচ্চিত্র নির্মাণ করে বিভিন্ন সময় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন অঞ্জন চৌধুরী। তার মালিকানাধীন প্রযোজনা সংস্থা সান কমিউনিকেশন্স লিমিটেড আলোচিত অসংখ্য আর্ট ফিল্ম, শর্ট ফিল্ম, টেলিফিল্ম, একক নাটক, ধারাবাহিক নাটক এ দেশের বিনোদনপিপাসু মানুষকে বিনোদিত করেছে। ২০০১ সালে তার প্রযোজনায় নির্মিত হয় লালসালু চলচ্চিত্রটি। ৮টি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিল ছবিটি। এরপর তার প্রযোজনায় একই পরিচালকের লালনও জিতে নিয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। একই বছর আবু সায়ীদ পরিচালিত শঙ্খ নাদ দুটি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়। ২০০৫ সালে প্রয়াত তারেক মাসুদ ও ক্যাথেরিন মাসুদ পরিচালিত আর্টফিল্ম অন্তর্যাত্রার বাংলাদেশ অংশের স্বত্ব কিনে নেন অঞ্জন চৌধুরী। ২০০৬ প্রয়াত চিত্রনায়িকা সারাহ বেগম কবরীর প্রথম চলচ্চিত্র আয়নার প্রযোজনা করেন তিনি। ২০০৯ সালে তার প্রযোজিত চলচ্চিত্র মনপুরা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ ছয়টি শাখায় এই ছবি জিতে নেয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ২০২০ সালে তার প্রযোজিত ও চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত বিশ্বসুন্দরী দর্শকদের দৃষ্টি কেড়ে জিতে নিয়েছিল বহু পুরস্কার। ২০২২ সালে অঞ্জন চৌধুরী প্রযোজিত হাওয়া চলচ্চিত্র নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
অঞ্জন চৌধুরী বিশ্বাস করেন ব্যক্তিজীবনে প্রতিষ্ঠা পেতে সমাজের অবদান কম নয়। তাই সমাজকেও কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার দায় আছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকে তিনি অনেকগুলো মহতী উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত। নারী ও শিশুদের চিকিৎসা সহায়তায় তার উদ্যোগেই খোলা হয়েছে টোল-ফ্রি হেল্পলাইন। যেখানে বিনে পয়সায় শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা পেতে পারেন সমাজের সমস্যাগ্রস্ত নারী ও শিশুরা। গর্ভবতী ও সদ্য প্রসবা মা ও শিশুদের জন্য এই সেবা চালু রেখেছে স্কয়ার গ্রুপের মালিকানাধীন স্কয়ার হসপিটাল। ডাচ সরকারের সঙ্গে মিলে দেশের প্রায় ৩ মিলিয়ন নারী গার্মেন্টস কর্মীর যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার নিয়ে কাজ করছেন তিনি।
ক্রীড়া, সংস্কৃতির পাশাপাশি শিক্ষা প্রসারেও তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। পাবনাসহ দেশের নানা জায়গায় স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষার অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখছেন। স্কয়ার কিন্ডারগার্টেন, স্কয়ার হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, দিশারী কম্পিউটার ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। যেখানে দরিদ্র, সমস্যাগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় এই সব প্রতিষ্ঠান সরাসরি কাজ করছে।
ব্যবসায়ী অঞ্জন চৌধুরীর শো-কেসে স্বীকৃতির অভাব নেই। প্রথম কমার্শিয়ালি ইম্পোর্টেন্ট পারসন (সিআইপি) উপাধি পেয়েছেন ২০০৫ সালে। আর ২০০৮ সাল থেকে দেশের অন্যতম সর্বোচ্চ করদাতাদের একজন তিনি। বাবা স্যামসন এইচ চৌধুরীর পথ ধরে ২০১৭ সালে পোপ ফ্র্যান্সিসের কাছ থেকে বিশেষ স্বীকৃতি লাভ করেন। এর বাইরে পেশাগত নানা সংগঠনের সঙ্গে জড়িত আছেন। দেশি-বিদেশি আরও অনেক স্বীকৃতিই আছে।
তবে তার অফিসের দেয়ালে টাঙানো বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের স্মরণীয় যত বিজয়ের স্মৃতি চিহ্ন কিংবা ফিফা বিশ্বকাপে ব্যবহৃত বলের রেপ্লিকা দেখলেই বোঝা যায়, খেলাধুলা তার হৃদয়ের কতটা স্থান দখল করে আছে। তাই তো ক্রীড়াঙ্গন থেকে একটু দূরে থেকেও তিনি দূরে নন। আছেন নিজের মতো করেই। ঠিক যেমনটা আছেন সংস্কৃতি ও বিনোদন জগতে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক-সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি এখনো নিশ্চিত হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাজেটস্বল্পতার যুক্তিতে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষকদল পাঠাতে পারবে না বলেছে। এখন পর্যন্ত আবেদনকারী ২১০টি দেশি সংস্থা বা সংগঠনের মধ্যে ৬৬টিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে।
নির্বাচনের তিন মাসেরও কম সময় বাকি। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের কাছ থেকে কাক্সিক্ষত সাড়া না পেয়ে তাদের চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানোর কথা ভাবছে ইসি। তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচন নিয়ে বড় কোনো প্রশ্ন যাতে না ওঠে, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা যেন বাধাগ্রস্ত না হয়। এ লক্ষ্যে সব চেষ্টাই নির্বাচন কমিশন করবে। ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে।
অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়েছে, সেটি বোঝাতে হলে আন্তর্জাতিক মহলে বার্তা পৌঁছাতে হবে। আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে এ বার্তা পৌঁছানোর কাজটি করেন বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। ইইউ বলে দিয়েছে, তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। যুক্তরাষ্ট্র সরকার নির্বাচন-পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না, তার জন্য ক্ষেত্রসমীক্ষণে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) যৌথ প্রতিনিধিদল আসবে। ৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল ও তাদের সহায়তাকারীরা ৭ থেকে ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি এবং দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করা নিয়ে টুইটবার্তা এবং বিভিন্ন বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের ধারণা, তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত এ বার্তাই দিচ্ছে যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু না-ও হতে পারে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার কাছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত না হলে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) পর্যবেক্ষক না পাঠালেও আরও অনেক দেশ আছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোকে (আফগানিস্তান, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা) আমন্ত্রণ জানিয়ে অক্টোবরে চিঠি দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষকদের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে ভালো হয়। আমরা চাই দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা বেশি সংখ্যায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করুক। আমরা আশা করি বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি সংস্থা।
পৃথিবীতে আরও অনেক দেশ আছে।’
আপনারা তো ভোটের জন্য শতভাগ প্রস্তুত কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি নির্বাচনমুখী কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেভাবেই হোক সংবিধান অনুযায়ী জানুয়ারির ২৯ তারিখের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। না হলে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে। এতে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। নির্বাচন কমিশন সেটা হতে দিতে পারে না।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমেরিকা আসবে না বলেনি। আসলে আমরা খুশি হব। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য যেসব যোগ্যতার প্রয়োজন, সেসব থাকলে যে কেউ আসতে পারে।’
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষক দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। আশা করি নির্ধারিত সময়ের আগেই তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসবে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বদিউল আলম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে, নির্বাচনসংক্রান্ত বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামো, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে যে দলীয়করণ হয়েছে, তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অতীতেও তা হয়নি। আগামীতে হবে বিশ্বাস করা কঠিন। যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, তথ্য-উপাত্ত নিয়েই তা করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও বলেছে, তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। নেতিবাচক মনোভাবই তাদের সিদ্ধান্তে প্রকাশ পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা আসেনি। ফলে সেটি আন্তর্জাতিক মানদ-ে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। ওই দুটি নির্বাচন সব মহলেই প্রশ্নবিদ্ধ। এখন সরকার বা ইসি যে কথা বলছে, তাতে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নীতির বদল হবে বলে মনে হয় না। আস্থা তৈরি করতে হলে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সূত্রগুলো বলছে, তারা নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে কাজ করছে। ইতিমধ্যে ইইউকে ছোট পরিসরে হলেও পর্যবেক্ষক পাঠাতে ২৪ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে কমিশন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে এমন প্রতিশ্রুতি সিইসি দিচ্ছেন। সরকারও একই কথা বলছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার ও নির্বাচন কমিশন। যদিও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ফলে আস্থার একটা সংকট তৈরি হয়েছে। তা কাটানোর জন্যই ইসি নানা পরিসরে কাজ করছে।
সূত্রমতে, ইইউর নেতিবাচক মনোভাবের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষকদের সন্তেুাষজনক তথ্য তৈরির কাজ করছে ইসি সচিবালয়। মার্কিন দলের মনোতুষ্টির বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে কমিশনের। নির্বাচনী তফসিল থেকে নির্বাচনী ফল ঘোষণা পর্যন্ত সব কর্মকা-, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়গুলো তাদের কাছে তুলে ধরা হবে।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতির সুবিধা হলো তারা নির্বাচনী কাজে জড়িতদের জবাবদিহির মুখোমুখি করে। পর্যবেক্ষকদের কোনো আইনি শক্তি নেই। তবে তারা নৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এতে প্রার্থীদের সমর্থকদের আচরণও প্রভাবিত হয়। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে ভোটারদের ওপর, তারা আস্থা পান।’
তিনি বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে তাতে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা অংশ নেয় না। আগামী নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এখন পর্যন্ত সব দলের অংশ নেওয়ার বার্তা নেই। সব দলই নিজ অবস্থানে অনড়। এ কারণেই বিদেশিরা আগ্রহ প্রকাশ করছে না।’
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশে সাধারণত ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, সার্কভুক্ত দেশ, কমনওয়েলথ, ওআইসি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে এমন সংস্থা, মানবাধিকার গোষ্ঠী, ঢাকায় বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। ২০১৮ সালে দেশি ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন এবং ওআইসি ও কমনওয়েলথ থেকে আমন্ত্রিত ও অন্যান্য বিদেশি পর্যবেক্ষক ছিলেন ৩৮ জন, কূটনৈতিক বা বিদেশি মিশনের কর্মকর্তা ৬৪ জন এবং বাংলাদেশে দূতাবাস বা হাইকমিশন বা বিদেশি সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশি ৬১ জন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের সুযোগ দিতে এবার দ্বিতীয়বারের মতো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। দেড় শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে। প্রথমবার দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বাদপড়াদের মধ্য থেকেই বেশি আবেদন এসেছে বলে জানা গেছে।
গত ১৮ জানুয়ারি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের জন্য প্রথমবারের মতো আবেদন আহ্বান করেছিল নির্বাচন কমিশন। ২১১টি সংস্থা আবেদন করেছিল। গত ৮ আগস্ট প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ ৬৮টি সংস্থার তালিকা প্রকাশ করে সংস্থাটি। আপত্তি ওঠায় দুটি সংস্থাকে বাদ দিয়ে শেষপর্যন্ত ৬৬টি সংস্থাকে নিবন্ধন দেয় কমিশন। এসব সংস্থার ৪২টিই ছিল নতুন। এর আগে তারা কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজ করেনি; সংস্থাগুলোর সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে পর্যবেক্ষক সংস্থার সংখ্যা অর্ধেকের মতো কমে যাওয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো ১৫ সেপ্টেম্বর ১০ দিনের জন্য ফের আবেদন আহ্বান করে ইসি। এর সময় শেষ হয়েছে ২৪ সেপ্টেম্বর।
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগের মতোই বাছাই শেষে দাবি-আপত্তি আহ্বান করা হবে। তারপর চূড়ান্ত হবে কোন কোন সংস্থা নিবন্ধন পাচ্ছে।
ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দেড় শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে।’
২০০৮ সাল থেকে ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষক নিবন্ধন দিচ্ছে ইসি। সে সময় ১৩৮টি সংস্থা নিবন্ধন পেয়েছিল। ২০১৮ সালে ১১৮টি সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল ইসি। পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের পাঁচ বছরের মেয়াদ গত ১১ জুলাই শেষ হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য সংশোধিত নীতিমালা : আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য নীতিমালা সংশোধন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ২৬ সেপ্টেম্বর ইসি এই নীতিমালা জারি করেছে। সংশোধিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো বিদেশি নাগরিক বা সংস্থা বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে চাইলে তাদের সুশাসন, নির্বাচন, গণতন্ত্র, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সংস্থাগুলোকে সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধিত হতে হবে।
সাত বছর পর ভারতের মাটিতে অবতরণ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তারা গিয়েছিল সেখানে। তারপর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে। টুর্নামেন্ট শুরুর এক সপ্তাহ আগে তারা পৌঁছালেন দেশটিতে। সেখানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোটেলে।
বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাবর আজমরা সেখানে পৌঁছানো মাত্রই উচ্ছ্বসিত জনতা ভিড় করেন। হায়দ্রবাদের বিমানবন্দরের বাইরে তাদের দেখে অনেকেই চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। বাবরের নাম উচ্চারণ করতও শোনা গেছে এসময়। পুলিশ উৎসুক জনতাকে আটকে রেখেছিল।
রাজনৈতিক বৈরি সম্পর্কের কারণে দুই দলের দেখা হয় না দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে। বিশ্ব মাতানো ক্রিকেটার থাকলেও পাকিস্তানিরা খেলতে পারে না আইপিএলে। কারণ ঐ একটাই। তবে বৈশ্বিক বা মহাদেশীয় ইভেন্টে তাদের ঘিরে আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। সেটা দেখা গেছে এশিয়া কাপেও।
বিশ্বকাপ খেলতে আজ বাংলাদেশ উড়াল দিয়েছে ভারতে। সেই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখে টাইগাররা। তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছাড়ার পর সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের ভার। আর আজই জানা গেল, বিশ্বকাপের পর একদিনও তিনি অধিনায়কত্ব করবেন না।
গত ১১ আগস্ট তৃতীয় দফায় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান। তখনই বলা হয়েছিল, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ও ভারত বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এই বিশ্বকাপই শেষ। এরপর একদিনও (অধিনায়কত্ব) করবো না। যে কারণে আমি এশিয়া কাপের আগে নিতে চাইনি। এরপরও এটা না। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হাসতে চাই, খেলতে চাই, পারফর্ম করতে চাই। এই একটা কারণে আমি করতে চাইনি।’
সাকিব যোগ করেন, ‘আর কোনে কারণ নেই। বেস্ট হয় যদি অধিনায়ক না থাকি। অধিনায়কত্ব কি আমার কোনো ভেল্যু এড করতেছে ক্যারিয়ারে এই স্টেজে এসে? আমি তো মনে করি না।’
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাকে নিয়ে যারপরনাই উদ্বিগ্ন দলের নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার্থে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী, উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিতে সম্ভাব্য সব পথই অবলম্বন করছেন দলটির নেতারা। তার পরিবারের সদস্যরা সরকারের কাছে আবেদন জানানোর পাশাপাশি তার আইনজীবীরা উচ্চ আদালতে আবার রিট করার কথা ভাবছে। কূটনৈতিক উদ্যোগও অব্যাহত রেখেছে বিএনপির পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটি।
বিএনপি চেয়ারপারসনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিতে আমরা আলটিমেটাম দিয়েছি। কর্মসূচি দিচ্ছি। সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। এরপরও সরকার তৎপর না হলে, তাদের বোধোদয় না হলে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় সরকারকেই নিতে হবে।’
বিএনপি-সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক হারুণ অর রশীদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চেয়ারপারসনের শারীরিক যে অবস্থা তাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া তাকে বিদেশে নেওয়া সম্ভব নয়। তার লিভার প্রতিস্থাপন করতে হবে। এজন্য তাকে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারসমৃদ্ধ হাসপাতালে নিতে হবে। কাছাকাছি সিঙ্গাপুরে এমন হাসপাতাল রয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সে আধুনিক চিকিৎসাসেবা রয়েছে।’
আমেরিকায় অবস্থানরত খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খালেদা জিয়া এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাকে অবিলম্বে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো দরকার। তার মুক্তির মেয়াদ বাড়াতে যতবার আবেদন করা হয়েছে, ততবারই চিকিৎসকদের পরামর্শের কাগজপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে না। এখন আইনমন্ত্রী বলছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে চাইলে আবেদন করতে হবে। আমরা আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সরকারের গ্রিন সিগন্যাল পেলে আবেদন করা হবে। সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে পরিবারের পক্ষ থেকে।’
সরকার বলেছে, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়টি আদালতের এখতিয়ারভুক্ত। এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির পরিপ্রেক্ষিতে আদালত কতটা নিরপেক্ষ হয়েছে তা দেখতে আদালতে যেতে পারি আমরা। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচনা হলে এবং তারা সিদ্ধান্ত দিলে আমরা আইনজীবীরা আদালতে রিট করার প্রস্তুতি নেব। আগেও আদালতে রিট করা হয়েছিল।’
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামের লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন তিনি। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ। মেডিকেল বোর্ড মনে করে তাদের আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি।’
সেলিমা ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, পরিবার আবেদন করলে সরকার ভেবে দেখবে। আবেদন করার কথা উনি আগেও বলেছেন। আমরা আবেদন করেছি। সাড়া পাইনি। এখন সাড়া পাওয়ার নিশ্চয়তা কী? এরপরও আমরা আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে স্ব^রাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু করার নেই। খালেদা জিয়া দ-প্রাপ্ত আসামি। বিদেশে চিকিৎসার জন্য কোনো আবেদন তার পরিবার করেনি। এ বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত দেবে। খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হচ্ছে।’
খালেদা জিয়াকে গত ৯ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় তার শ্বাসকষ্ট হলে গত রবিবার রাত দেড়টার দিকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। পরদিন সোমবার তাকে আবার কেবিনে ফেরত নেওয়া হয়।
খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। মাঝখানে তাকে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। অতিদ্রুত তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া প্রয়োজন। খালেদা জিয়াকে বাঁচাতে হলে উন্নত চিকিৎসা দরকার। ডাক্তাররা বলেছেন এটা দেশে সম্ভব নয়। আমরা অনেক দিন ধরেই তাকে বিদেশে নেওয়ার কথা বলছি। কিন্তু সরকার কর্ণপাত করছে না। এখন একেবারে শেষ সময় চলে এসেছে। বিদেশে নেওয়া না হলে তাকে বাঁচানো যাবে না। সিসিইউ থেকে কেবিনে নেওয়া হলেও তার অবস্থা স্থিতিশীল বলা যাবে না।’
৭৮ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট ও চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে ২০২০ সাল থেকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তির পর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন খালেদা জিয়া।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সরকার ২০২০ সালের ২৫ মার্চ এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে গুলশানের বাসায় অবস্থান এবং দেশ ত্যাগ না করার শর্তে সাময়িকভাবে মুক্তি দেয়।
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’