
মানবাধিকার সংগঠন অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান ও পরিচালক নাসির উদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে মামলা ও সাজা দেওয়ার প্রতিবাদে রাজপথে নামার চিন্তাভাবনা করছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিল শাপলা চত্বরে এ সংগঠনটির অবস্থান কর্মসূচিতে নিহতদের সংখ্যা নিয়ে অধিকার রিপোর্ট করেছিল। সে রিপোর্টে অসত্য তথ্য দেওয়ার অভিযোগে মানবাধিকার সংগঠনটির এ দুই কর্মকর্তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে।
আদিলুরকে সাজা দেওয়ার পরদিন গতকাল শুক্রবার গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামীর আমির আল্লামা শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। তিনি বলেছেন, প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে সরকার এ সাজা দিয়েছে।
হেফাজত নেতারা বলছেন, ২১ সেপ্টেম্বর হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। পাশাপাশি কর্মসূচির ঘোষণা আসবে।
শাপলা চত্বরের ঘটনার পর নেতাদের নামে মামলা, হয়রানি, নির্যাতন করার অভিযোগ তোলেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী। তিনি গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে সব ধরনের অধিকার হারা। আমরা আইনি, সাংবিধানিক, মানবাধিকারসহ সব ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। কিন্তু তা প্রকাশও করতে পারছি না। কথা বলার স্বাধীনতা নেই। নানান দিক থেকে নানানভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।’
আজিজুল হক বলেন, ‘দীর্ঘদিন আমরা ধৈর্য ধারণ করেছি। ধৈর্যেরও একটা সীমা থাকে যা ইতিমধ্যে অতিক্রান্ত হয়েছে। তাই এখন আর বসে থাকার অবস্থায় নেই আমরা।’
তিনি বলেন, ‘শুধু শাপলা চত্বরের গণহত্যাই নয়, ২০২১ সালে হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পরিকল্পিত নাটক সাজিয়ে হেফাজতের ২৩ জন প্রতিবাদী কর্মীকে পুলিশ নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছিল। প্রতিটি হত্যার তদন্ত ও বিচারও আমরা দাবি করি। এসব হত্যা-গণহত্যা বিশ্ব দরবারে সরকারকে কর্তৃত্বপরায়ণ স্বৈরাচার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এখন মানবাধিকারকর্মীদের ওপর চড়াও হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের বাকি সম্মানটুকুও ধূলিসাৎ করা হচ্ছে।’
২০১৩ সালের ঘটনার পর হেফাজতের সঙ্গে সরকারের সুসম্পর্ক তৈরি হয়। হেফাজতে প্রধানমন্ত্রীকে কওমি জননী আখ্যা দেয়। একপর্যায়ে সংগঠনটিতে অভ্যন্তরীণ বিরোধও তৈরি হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হেফাজতে ইসলামীর এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের ওপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন চলছে বছরের পর বছর ধরে। শাপলা চত্বরের ঘটনার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর কেন্দ্র করে ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ঘটনায় টানা গ্রেপ্তার অভিযানসহ নানামুখী চাপে তারা বিপর্যস্ত। এসব ঘটনায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৬৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে হেফাজতে ইসলামের চার হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে। তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দুই হাজারের বেশি। এর মধ্যে জামিন পেয়েছেন ১ হাজার ৩০০ জনের মতো।
ওই নেতা বলেন, এখনো কারাগারে আছেন হেফাজতের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, সহকারী মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হুসাইন রাজী, সাবেক অর্থ সম্পাদক মুফতি মুনীর হোসাইন কাসেমী, সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি হারুন ইজহার, মুফতি নুর হুসাইন নুরানী, রফিকুল ইসলাম মাদানী, আবদুল মান্নান ও দিদারুল আলম।
গণমাধ্যমে দেওয়া বিবৃতি : হেফাজতে ইসলামের আমির মহিবুল্লাহ বাবুনগরী বিবৃতিতে দাবি করেছেন, শাপলা চত্বরের ঘটনায় নিহতদের সংখ্যা নিয়ে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার সম্পাদক অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান কোনো মিথ্যা তথ্য দেননি। সরকারের প্রচন্ড চাপে কেউ যখন নিহতের সংখ্যা প্রকাশ করতে পারছিল না, তখন অধিকার খোঁজখবর নিয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়।
হেফাজতের আমির সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘যদি নিজেদের ভালো চান, অবিলম্বে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় কারাগারে বন্দি মাওলানা মামুনুল হক, মুফতি মুনীর হোসাইন কাসেমীসহ সব আলেম এবং অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান ও পরিচালক নাসির উদ্দিন এলানকে মুক্তি দিন। হয়রানি বন্ধ করুন।’
ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিল এখন মৃতপ্রায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে না পারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র সরে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা ঘোরানো মতিঝিলে আবাসিক ভবন, শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান তৈরি না হলে দেশের প্রধান এই বাণিজ্যিক অঞ্চল প্রাণ হারাবে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাদের মতে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় অবদান রয়েছে মতিঝিলের টাকার। শুধু তা-ই নয়, মতিঝিলে উপার্জিত অর্থে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডাসহ আরও অনেক দেশে। এখানকার উপার্জিত টাকা অনেকে জমা রেখেছেন সুইস ব্যাংকেও। শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মতিঝিলে। এ যেন মা কাঁকড়ার আত্মত্যাগের গল্প। মা কাঁকড়া বাচ্চাদের আগলে রাখে বুকের ভেতর; যেদিন বাচ্চাগুলো বের হয়ে আসে, সেদিন খোলস ছাড়া মা কাঁকড়ার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। মা কাঁকড়ার মতো দুঃখী ও ত্যাগী বাণিজ্যিক মতিঝিল।
ষাটের দশকে মতিঝিলে গড়ে ওঠে দেশের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট-সিবিডি)। সেই থেকে এখনো দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল মতিঝিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে সরকারি ৮টি, বেসরকারি ৪৫টি এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে ৮টি। এ ছাড়া ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৮১টি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের বেশির প্রধান কার্যালয় চলে গেছে কারওয়ান বাজার, গুলশান-বনানী ও উত্তরায়। নতুন করে যেসব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাচ্ছে, সেগুলোর প্রধান কার্যালয় মতিঝিলের বাইরে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মতিঝিলের আশপাশে পরিকল্পিত কোনো আবাসিক এলাকা, অভিজাত হোটেল, কাজের ফাঁকে অবসর কাটানোর মতো উন্মুক্ত স্থান, শপিং কমপ্লেক্স না থাকায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুবিধার জন্য অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়গুলোও মতিঝিলের বাইরের এলাকা, অর্থাৎ কারওয়ান বাজার, গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে গড়ে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, মধুমিতা সিনেমা হল এবং ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এবং দিলকুশা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবন এবং বঙ্গভবনের পাশের এলাকাজুড়ে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল। বিশ্বের বাণিজ্যিক অঞ্চলের ভবনগুলো সুউচ্চ হয়ে থাকে। কিন্তু মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের পাশেই বঙ্গভবন। নিরাপত্তার কারণে বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর কোনো বহুতল ভবন করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, মতিঝিলের প্লটগুলোর ‘নন-রেসট্রিকটেড’ উচ্চতা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর সাড়ে চারতলার বেশি উচ্চতার ভবনের অনুমোদন মেলে না। ফলে মূল্যবান ওই প্লটগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারছেন না মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ জরাজীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণও রয়েছে কয়েকটি ভবন। একটির সঙ্গে অন্যটি লাগানো। দুটি ভবনের মাঝখানে উন্মুক্ত জায়গা নেই বেশিরভাগ ভবনের। দিলকুশা এলাকার বঙ্গভবন লাগানো ভবনগুলোর মাঝখানেও কোনো ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, মতিঝিল এলাকার ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে। ভাঙাচোরা এবড়োখেবড়ো সড়ক। সড়ক বিভাজকগুলো শ্রীহীন। এগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়নি। প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলে মতিঝিলের আরও করুণ দশা চোখে পড়ে। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার সড়কের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে চটের ছালা দিয়ে ঘেরা খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান এবং নানা পণ্যের অস্থায়ী দোকান। সামান্য বৃষ্টিতে মতিঝিল এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে থাকে পানির নিচে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত। ডিএসসিসি এলাকার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে। খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে মূল্যায়ন করলে মতিঝিল ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। যদিও এটা মানতে নারাজ ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি।
মতিঝিল এলাকার বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিল এলাকার সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএসসিসি। পরিত্যক্ত প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মতিঝিলের সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত ও সড়ক বিভাজকের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা দরকার। পর্যায়ক্রমে এ এলাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কাজ করবে ডিএসসিসি। তবে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের মূল সংস্কার ও আধুনিকায়নের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউককে সেসব বিষয় পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কাজে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা লাগলে করপোরেশন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলে রাজউক। রাজউক সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশক থেকেই মতিঝিলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যিক অঞ্চলে শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান থাকে। আর কাছাকাছি এলাকায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা থাকে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। অভিজাত মানের হোটেল পূর্বাণী গড়ে উঠলেও আশপাশে সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লোকজন গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় থাকেন। মতিঝিলের সৌন্দর্য নিশ্চিত করতে ও আধুনিকায়নে যেসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখা দরকার ছিল রাজউক ও সিটি করপোরেশন সেটা করেনি।
রাজউক সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধরা, উত্তরা। সেই সব এলাকা থেকে মানুষ মতিঝিলে আসেন। শহরের জনসংখ্যা বাড়ায় দিন দিন যানজট বাড়ছে। ওই সব এলাকা থেকে মতিঝিলে আসতে সড়কে এক থেকে দেড় ঘণ্টা চলে যায়। দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার মধ্যে ৩০ শতাংশ সময় সড়কে নষ্ট হচ্ছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে চিন্তা করেছে, তার কর্মস্থল এমন একটা জায়গায় হবে যা তার আবাসনের কাছাকাছি। মতিঝিল থেকে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও ভূমিকা রেখেছে।
কালের বিবর্তনে গুলশান হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক এলাকা। কারওয়ান বাজার, উত্তরায়ও গেছে কিছু। এসব জায়গায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমও সেখানে চলে গেছে। এসব এলাকার আশপাশে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় তাদের বসবাস। আবাসিক এলাকা ছাড়া, পৃথিবীর কোথাও শতভাগ জায়গা শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা অথবা একই শ্রেণির কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার হয় না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, নগর পরিকল্পনায় ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়, যেকোনো জায়গার ব্যবহার হবে ২৪ ঘণ্টা। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল কর্মচঞ্চল থাকে মাত্র ১২ ঘণ্টা। এরপর ওই জায়গার ব্যবহার হয় না। রাতে নীরব ও ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়।
তিনি বলেন, যে মতিঝিলে দিনের বেলায় হাঁটা যায় না; গাড়ির কারণে, যানজটে; সেই মতিঝিলে রাত ৮টার পরে আবার একাও হাঁটা যায় না; অনিরাপদ বোধ হয়। এ জন্য যারা দিনে বাণিজ্য করতে আসেন, তারা মতিঝিল এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন না। অন্যদিকে গুলশান-বনানী এলাকায় থাকলে তারা শপিংয়ে যেতে পারেন, কফি শপে যেতে পারেন। এসব কারণে সারা বিশ্বে ভূমির মিশ্র ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, মতিঝিল এলাকা যেহেতু ইতিমধ্যে তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলেছে, এ জন্য মতিঝিলের জমির শ্রেণিকে মিশ্র ব্যবহার হিসেবে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছে রাজউক। সংশোধিত ড্যাপে সে বিষয়ে নির্দেশনা রাখা হয়েছে। পৃথিবীর নগর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৫০, ৬০ বা ১০০ বছর অন্তর সেসব ঢেলে সাজানো হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়েই মতিঝিল এলাকাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে আবাসিকের বৈশিষ্ট্য দিতে হবে; কনডোমিনিয়াম গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি, ওয়াকওয়ে থাকবে। বসার ব্যবস্থা থাকবে। মতিঝিল এলাকায় ঝিল ছিল, ওই ঝিলকে প্রাধান্য দিয়ে পার্কটি তৈরি করা হবে। বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া মতিঝিলকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিলের আধুনিকায়ন ও ভূমির মিশ্র ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাহলে মতিঝিল সচল থাকবে; তবে ঢাকা শহর বড় হওয়ায় আরও বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে ওঠা ইতিবাচক। এসব পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার ছিল; কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে সে রকম হয়নি। এটা দুঃখজনক। এ জন্য শহরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ঢাকায় এখন অনেকগুলো বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সব অঞ্চলে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় বড় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় মতিঝিলে রয়েছে। তবে ব্যবসা গুলশান, বনানী, উত্তরা, গাজীপুরে সরে যাওয়ায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ব্যবসা কেন্দ্রের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
ভোগ্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে বাজারের লাগাম টেনে ধরতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিম, আলু ও পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দাম বেঁধে দেয়। এই দাম গতকাল শুক্রবার থেকে কার্যকর হলেও বাজারগুলোতে আগের অবস্থায় দেখা গেছে; বরং একেক বাজারে বা একেক এলাকায় নানা দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, সরকার অযাচিত পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করেছে। তাদের বেঁধে দেওয়া মূল্যে এই তিনটি ভোগ্যপণ্য কেনাই যাচ্ছে না। পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে পণ্য কিনে কমে বিক্রি করা সম্ভব নয়।
গত বৃহস্পতিবার সরকার ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দেয়। একটি ডিম ১২ টাকা, আলু প্রতি কেজি ৩৫-৩৬ এবং দেশি পেঁয়াজ ৬৪-৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এই দামে যাতে পণ্য বিক্রি করা হয়, সে জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজারে অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু তাতে এই তিন পণ্যের দামে কোনো হেরফের হচ্ছে না; বরং বাজারে আগের মতোই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
সরেজমিনে গতকাল রাজধানীর নিউমার্কেট, পলাশী, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল বাজারসহ আশপাশের মহল্লার দোকান ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
নির্ধারিত দামের চেয়ে ১০-১৫ টাকা বেশিতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৭৫-৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে ৪৮ টাকার ডিমের হালি পাইকারিতে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মহল্লার দোকানগুলোতে ৫ টাকা বাড়তিতে প্রতি হালি ডিম ৫৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
পলাশী বাজারেরর পেঁয়াজ বিক্রেতা আবদুল্লাহ দেশ রূপান্তরকে জানান, পাইকারি বাজার থেকে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৭৪-৭৮ টাকা দরে কিনেছেন তিনি। খরচসহ প্রতি কেজি পেঁয়াজের কেনা দাম দাঁড়ায় ৮০ টাকা। ব্যবসা করতে এসে ৮০-৮২ টাকা চালান খাটিয়ে ৮৫-৯০ টাকার কমে পেঁয়াজ বিক্রি করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানান এই বিক্রেতা।
নিউমার্কেটের ডিম বিক্রেতা রাকিব দেশ রূপান্তরকে বললেন, আড়ত থেকে ১০০টি ডিম কিনতে হয়েছে ১ হাজার ১৫৫ টাকায়। সঙ্গে অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ টাকা পড়ে যায়। তাহলে বেশি দরে ডিম কিনে কীভাবে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি করবেন, প্রশ্ন করেন তিনি।
ডিম-পেঁয়াজের মতো আলুর বাজারেও একই পরিস্থিতি দেখা যায়। পাইকারিতে আলুর কেজি ৪৫ এবং খুচরা বাজারে ৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। হাতিরপুল বাজারে এক কেজি আলু ৫৫ টাকাও বিক্রি হতে দেখা গেছে। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকা কেজি দরে।
সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে আলু প্রতি কেজিতে ৯-১২ টাকা বেশি বিক্রির কারণ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের জামাল নামের এক ব্যবসায়ী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কম দামে কিনতে না পারলে তো বেশি দামে বিক্রি করবই। কোল্ড স্টোরেজ থেকে নতুন আলু বাজারে আসেনি। তাই দাম বেশি দিয়ে আগের আলু কিনতে হচ্ছে। সরকার যে দাম বেঁধে দিয়েছে তা বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা দেখছি না।’
জানা যায়, সরকার নির্ধারিত নতুন দর কার্যকর নিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজধানীসহ দেশের জেলা শহরগুলোতে অভিযান চালাচ্ছে। এরপরও ডিম, আলু ও পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসার বিষয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছি। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত কোল্ড স্টোরেজগুলো পর্যবেক্ষণ করছি। যেসব কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলু ৩৬-৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ভোক্তা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া সরকার নির্ধারিত মূল্য বাস্তবায়ন হতে আরও কয়েক দিন সময় লাগতে পারে।’
গতকাল দুপুরে রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার এলাকায় অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ সময় আলু ও পেঁয়াজের মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করায় দুই দোকানিকে দেড় হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
রাজশাহী জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাসুম আলী বলেন, যারা আইন অমান্য করবে, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, আজকের অভিযানে আলু ও পেঁয়াজের মূল্যতালিকা না থাকায় মেসার্স টুটুল এন্টারপ্রাইজকে ৫০০ ও অমিন ট্রেডার্সকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এমন অভিযানে যে লাভ হচ্ছে না তার প্রতিফলন রাজশাহীর বাজারেই দেখা গেছে।
গতকাল রাজশাহীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম রাখা হচ্ছে ৭২-৭৫ টাকা। আর আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকা কেজি। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭৮-৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে।
তবে, ডিম সরকার নির্ধারিত দামে বা কোথাও কোথাও কিছুটা কমেই বিক্রি হচ্ছে। নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, প্রতিটি ডিম ১২ টাকা নির্ধারণ করা হলেও তারা সাদা ডিম সাড়ে ১১ টাকা দামে বিক্রি করছেন। আর লালটা বিক্রি করছেন ১২ টাকা করে।
সাহেববাজার মাস্টারপাড়া কাঁচা বাজারের পাইকারি আলু ব্যবসায়ী মিরাজ হোসেন বলেন, ‘বাজারে আলু নেই। আজও আলু আসেনি। গতকাল পর্যন্ত যা কিনেছি, তা বিক্রি করছি। সরকারের নির্ধারিত দাম বিকেলে হয়েছে। আমরা তো সকালে কিনেছি। তাই আজ বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। আগামী দিন থেকে নির্ধারিত দামের মধ্যে পেলে আমরাও বিক্রি করব। বর্তমানে কেজি প্রতি আলুর পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৪১ টাকা দরে।’
সাগরপাড়া কাঁচা বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা মনির হোসেন বলেন, ‘আমাদের তো কিছু করার নেই। আজ দাম কমার কথা। কিন্তু সকালে এ দামে তো পেঁয়াজ পাইনি। সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে কিন্তু বাস্তবে তো পাচ্ছি না। তাই যে দামে কিনছি, সেটা থেকে তো লাভ করেই বিক্রি করতে হবে।’
এদিকে বৃহস্পতিবার সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ৫ টাকা কমিয়ে ১৬০ টাকা করা হয়েছে। কিন্তু গতকালও রাজশাহীর বাজার ও দোকানগুলোতে বিক্রি হয়েছে ১৭৫ টাকা লিটার দরে। বিক্রেতারা বলছেন, তাদের কাছে যে তেল আছে, সেগুলো আগের। এখনো নতুন বোতলজাত করা তেল বাজারে আসেনি। নতুন রেট বসানো তেল না আসা পর্যন্ত আগের দামে কেনা তেল আগের দামেই বিক্রি করতে হবে।
বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপটা যেন বাংলাদেশকে নানা শঙ্কার কথাই জানান দিচ্ছিল। তবে ভারতকে হারিয়ে আসরের শেষটা রঙিন করে তুলল টাইগাররা। ব্যাটে-বলে রোহিত শর্মার দলের চেয়ে সেরা ক্রিকেট খেলে শেষ ওভারে সাকিব আল হাসানের দল পেল দারুণ এক জয়। যদিও বেলাশেষে এলো এই জয়, তবে বিশ্বকাপের আগে নিশ্চিতভাবেই তা অনুপ্রেরণা জোগাবে দলকে।
কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে গতকাল শুক্রবার রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে ভারতকে ৬ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ২৬৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে এক বল বাকি থাকতে ২৫৯ রানে অলআউট হয় আগেই ফাইনাল নিশ্চিত করা ভারত। শেষ ওভারে তাদের ১ উইকেট হাতে নিয়ে ১২ রান দরকার ছিল। কিন্তু সেই সমীকরণ মেলাতে পারেনি তারা। ৪৯তম ওভারে জোড়া উইকেট শিকার করেন মোস্তাফিজুর রহমান। শার্দূল ঠাকুরের পর ফেরান ভয়ংকর হয়ে ওঠা অক্ষর প্যাটেলকেও। তাতেই ভারতের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায় অনেকটাই। শেষ ওভারে আর পেরে ওঠেনি তারা। চলতি আসরে এই প্রথম হারের স্বাদ পেল পাঁচ পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামা ভারত। আগামী রবিবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফাইনালের আগে দলটার জন্য এটা বড় ধাক্কা হয়ে এলো কি না, সেটাই এখন দেখার।
তবে সুপার ফোরে প্রথম দুই ম্যাচ হেরে ফাইনাল থেকে আগেই ছিটকে যাওয়া বাংলাদেশ এ ম্যাচ থেকে যা যা অর্জন করার, সবাটাই কুড়িয়ে নিয়েছে বলতে হবে। যদিও টপঅর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতা দুর্ভাবনা হয়েই থেকে গেল। তবে লোয়ার অর্ডারে নাসুম আহমেদের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস এবং মেহেদী হাসান ও তানজিম সাকিবের ব্যাটিংকে প্রাপ্তির খাতায় রাখাই যায়।
আগেই ফাইনাল নিশ্চিত হওয়ায় ভারত যে এই ম্যাচে বেশ কিছু পরিবর্তন আনবে তা নিশ্চিতই ছিল। কোহলি-পান্ডিয়া-বুমরাহরা এ ম্যাচে বিশ্রামে ছিলেন। তবে শুভমন গিলকে হতভাগা বলতেই হয়। তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরিটি বৃথা গেছে। ১৩৩ বলে ৮ চার ও ৫ ছক্কায় ১২১ রান করেন তিনি। অন্যদের ব্যর্থতায় কী দুর্দান্তই না খেলছিলেন এ তরুণ। কিন্তু দলকে জয় উপহার দিতে পারলেন না। আট নম্বরে অক্ষর প্যাটেল খেলেছেন ৩৪ বলে ৪২ রানের ইনিংস। কিন্তু অন্য ব্যাটাররা নিজেদের সেভাবে মেলে ধরতে না পারায় হার মানতে হয় ভারতকে। দলটির পক্ষে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সূর্যকুমার যাদবের। ৩৪ বলে ২৬ রান করেছেন তিনি।
বোলিংয়ে প্রথমে বাংলাদেশের জয়ে ভিত গড়ে দিয়েছিলেন অভিষিক্ত তানজিম হাসান সাকিব। ইনিংসের প্রথম ওভারেই রোহিত শর্মাকে শূন্য রানে ফেরান তিনি। নিজের পরের ওভারে অভিষিক্ত তিলক ভর্মাকেও ব্যক্তিগত ৫ রানে তুলে নেন। অভিষেকে ১০ বলে জোড়া শিকার সাকিবের, তাতে ১৭ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ভারত। শেষ ওভারে যখন ১ উইকেট হাতে নিয়ে ১২ রান প্রয়োজন ভারতের, তখন (জুনিয়র) সাকিবেই আস্থা রাখেন অধিনায়ক (সিনিয়র) সাকিব। প্রথম তিন বল ডট দিয়ে ম্যাচ অনেকটাই নিজেদের দিকে নিয়ে আসেন তিনি। চতুর্থ বলে শামি বাউন্ডারি হাঁকালেও পঞ্চম বলে রান আউট হয়ে যান। তাতেই জয়ের আনন্দে মাতে বাংলাদেশ।
শুরু ও শেষে অভিষিক্ত সাকিব তো দুর্দান্তই। ৭.৫ ওভারে ৩২ রানে ২ শিকার তার। ডেথ ওভারে মোস্তাফিজও দারুণ করেছেন। ৮ ওভারে ৫০ রান খরচ করলেও ৩ শিকার ধরেছেন। এর সঙ্গে শেখ মেহেদি হাসানের কথাও বলতে হবে। সেঞ্চুরিয়ান গিলকে ফিরিয়েছিলেন তিনিই। ৯ ওভারে ৫০ রান খরচায় নেন ২ উইকেট। সেট হয়ে যাওয়া যাদবকে সাকিব যে বোল্ড করলেন, সেটাও ছিল অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট। এদিন সাকিবের শিকার এই একটিই।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে মোহাম্মদ শামি ও শার্দূল ঠাকুরের তোপে ২৮ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। টপঅর্ডার পুরোপুরি ফ্লপ। পাঁচ নম্বরে নেমে মেহেদী হাসান মিরাজও হন ব্যর্থ। এমন পরিস্থিতিতে অধিনায়ক সাকিব সর্বোচ্চ ৮০ রানের ইনিংস উপহার দেন। হৃদয়ের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে যোগ করেন ১০১ রান। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৫৫তম ফিফটি তুলে নেওয়া সাকিবের ইনিংসে ছিল ৬ চার ও ৩ ছক্কা। হৃদয়ের ব্যাট থেকে আসে ৫৪ রান। ৮১ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান পঞ্চম ওয়ানডে ফিফটি পাওয়া এ ব্যাটার। লোয়ার অর্ডারে নাসুম খেলেছেন ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস। আগের আট ওয়ানডেতে যার মোট রান ছিল ৪৪, সেই তিনিই এদিন করলেন ৪৫ বলে ৪৪ রান। ৬টি চারের সঙ্গে সেখানে ছিল দারুণ ১ ছক্কাও।
সপ্তম উইকেটে হৃদয়ের সঙ্গে ৩২ ও অষ্টম উইকেটে মেহেদির সঙ্গে ৩৬ বলে ৪৫ রান যোগ করেছেন নাসুম। মেহেদি ২৩ বলে ২৯ ও অভিষিক্ত তানজিম হাসান সাকিব ৮ বলে অপরাজিত ১৪ রান করেছেন। নবম উইকেটে দুজন অবিচ্ছিন্ন থেকে যোগ করেন ১৬ বলে ২৭ রান। সুবাদে ৮ উইকেটে ২৬৫ রানের পুঁজি পায় টাইগাররা। ভারতের পক্ষে শার্দূল ঠাকুর ৩ উইকেট নিয়েছেন। ২ উইকেট শামির। ব্যাটে-বলে আলো ছড়িয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম বাতিল হওয়ায় এবার ৩০০ আসনেই ব্যালটে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেই লক্ষ্যে ব্যালট পেপারসহ ভোটসামগ্রী কেনার প্রক্রিয়া শেষ করেছে সংস্থাটি। তফসিল ঘোষণার আগেই প্রায় ৭০ কোটি টাকার কেনাকাটা সারবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। তবে এর পরিমাণ বাড়তেও পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ক্রয়সংক্রান্ত কমিটি নিয়মিত বৈঠকে কার্যাদেশপত্রের চাহিদা অনুযায়ী কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করছে। ইতিমধ্যে ইসির চাহিদা মতো কিছু কিছু সামগ্রী তারা হাতেও পেয়েছে। ইসির লক্ষ্য নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগেই পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু প্রস্তুত রাখা।
আগামী বছর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি সম্প্রতি ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আগস্টে ইসি কমিশনার আনিছুর রহমান জানিয়েছেন, নভেম্বর মাসে তফসিল ঘোষণা করা হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সম্প্রতি বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরের শেষ অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে তারা প্রস্তুতিমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে অতীতে নির্বাচনে ৪০ থেকে ৪৫ দিন আগে তফসিল ঘোষণা হলেও এবার আরও সময় হাতে রেখে তফসিল ঘোষণা হতে পারে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব জাহাংগীর আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ইসি সচিবালয়ের সব কর্মকর্তাকে এবং আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়ে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে কাজের অগ্রগতির পাশাপাশি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী মালামাল কেনা থেকে শুরু করে ভোটকেন্দ্র স্থাপন পর্যন্ত সব বিষয় রোডম্যাপ অনুযায়ী হচ্ছে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, তারা ইতিমধ্যে কিছু কিছু নির্বাচনী উপকরণ হাতে পেতে শুরু করেছেন। তারা আশা করছেন, নভেম্বরের মধ্যে সব উপকরণ বুঝে পাবেন। তিনি বলেন, এ নির্বাচনে ব্যালট পেপারটা গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু। সেটি তৈরির জন্য কাগজ কেনার কাজ ইতিমধ্যে বিজি প্রেস শেষ করেছে। তারা টেন্ডার করেছে। সবকিছু সঠিক পথেই রয়েছে। নিয়মিত বৈঠকের মাধ্যমে এসব বিষয়ে হালনাগাদ থাকছে ইসি।
নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ব্যালটে ভোটের কাজে সুই, সুতা, মোমবাতি, দেশলাই থেকে শুরু করে অন্তত ২৩ ধরনের জিনিসের দরকার হয়। এ ছাড়া প্রয়োজন হয় বিশেষ খামসহ ১৭ ধরনের প্যাকেটের।
জাতীয় নির্বাচন পরিচালনায় ইসির যে নির্দেশিকা আছে, সেখানেও ব্যালটে ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় এসব জিনিসপত্রের বিবরণ আছে।
জানা গেছে, ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণের জন্য ক্রয়তালিকায় থাকা ব্যালট বাক্স, ব্যালট বাক্সের লক, ব্যালটের কাগজ, স্ট্যাম্প প্যাড, অফিশিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাস সিল, লাল গালা, প্যাকিং বক্স, অমোচনীয় কালি ও কলম, বিভিন্ন ফরম, প্যাকেট, সুই-সুতা, খাম, মোমবাতি, ব্যালট বাক্সের সিল, গানি ব্যাগ, অফিশিয়াল সিল ইত্যাদি উপকরণের কোনটি কী পরিমাণ ইসির ভা-ারে রয়েছে, সেগুলোর তালিকা করা হয়েছে। পর্যালোচনা করে নতুন করে প্রয়োজন অনুযায়ী কেনার টেন্ডার দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনী উপকরণের অন্যতম ব্যালট বাক্স, স্ট্যাম্প প্যাড, সিলগালা, অফিশিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাশ সিল, অমোচনীয় কালি, বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, ক্যালকুলেটর, চার্জার লাইট, বিভিন্ন ধরনের ফরম, প্যাকেট মুদ্রণ ইত্যাদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হাতে পাওয়ার সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে গত মাসের বৈঠকে।
সূত্র বলছে, ভোটার সংখ্যার তথ্যের ভিত্তিতে ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষের সংখ্যার ভিত্তিতে এবার নির্বাচন সামগ্রী কেনার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী এবার ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জন। মাঠপর্যায়ের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, বর্তমানে সারা দেশে ২ লাখ ৯৪ হাজার ৩৪৫টি স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স সংরক্ষিত আছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের নির্বাচনে ব্যালট বাক্স প্রয়োজন হবে ৩ লাখ ৬ হাজার ৬০০টি। সে হিসাবে ১২ হাজার ২৫৫টি বাক্স বেশি কিনলেই হতো। কিন্তু সারা দেশের ব্যালট বাক্সগুলো গুণগত মান, ভোটকেন্দ্রে ব্যবহার নিশ্চিত, সংসদ নির্বাচনে রিস্কফ্যাক্টরসহ নির্বাচন পরপরই কিছু উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বিষয়টি সামনে রেখে এবার ৮০ হাজার নতুন ব্যালট বাক্স কেনার টেন্ডার করেছে ইসি। এগুলোর মধ্যে চলতি সেপ্টেম্বরে ৪০ হাজার এবং অক্টোবরে ৪০ হাজার ইসির হাতে পৌঁছনোর কথা। তবে স্থান সংকুলানের কারণে এগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে না রেখে প্রয়োজন অনুযায়ী মাঠপর্যায়ে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে ইসির। আগে বিদেশ থেকে এসব ব্যালট বাক্স ও ঢাকনা আনা হলেও এবার দেশীয় প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা হচ্ছে।
কমিশনের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, এবার গানি ব্যাগ ৯০ হাজার, হেসিয়ান ব্যাগ ১ লাখ ৬৫ হাজার, মার্কিং সিল ১৪ লাখ ৩৫ হাজার, অফিশিয়াল সিল ৭ লাখ ১৫ হাজার, ব্রাশ সিল ১ লাখ, গালা ২০ হাজার কেজি, অমোচনীয় কালি ও কলম ৮ লাখ ১৫ হাজার, ব্যালট বাক্সের প্লাস্টিকের লক ৪০ লাখ, ব্যালট বাক্সের ঢাকনা ৫৫ হাজার নভেম্বরের আগেই ইসিকে বুঝিয়ে দেওয়ায় শর্তে ঠিকাদারদের কাজ দেওয়া হয়েছে। এসব নির্বাচনী মালামাল কিনতে ১৯ কোটি ৩৬ লাখ ৪৯ হাজার ৯১৫ টাকা ইসিকে খরচ করতে হচ্ছে।
ওই সূত্রমতে, এ খরচ ছাড়াও প্যাডের জন্য আরও ৪ কোটি টাকার মতো লাগবে। সব মিলিয়ে ২২ কোটি টাকা মালামালের জন্য প্রয়োজন হবে। বিজি প্রেস ইতিমধ্যে কাগজ কেনার জন্য আরও ৩৩ কোটি টাকার একটি টেন্ডার দিয়েছে। এতে ১ লাখ ৬১ হাজার রিম কাগজ অর্থাৎ ৩২ লাখ ২০ হাজার দিস্তা কাগজ কেনা হচ্ছে। এসব কাগজ দিয়ে তৈরি হবে ব্যালট পেপার, বিভিন্ন ধরনের খাম ও প্যাড। পুরোটাই বিজি প্রেস ছাপাতে সক্ষম। আর কাগজ সরবরাহ করছে কর্ণফুলী পেপার মিলস। এসব খরচের সঙ্গে যোগ হবে বিজি প্রেসে ব্যালট পেপার ছাপানোর খরচ, লেবাররা যদি অতিরিক্ত সময় কাজ করে সেই ভাতা।
ইসির রোডম্যাপের সারণি ৮ অনুযায়ী, বর্তমানে নির্বাচন কমিশন প্রার্থী ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি এবং ফলাফল ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি নামে দুটি সফটওয়্যার ব্যবহার করবে। নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা অ্যাপটি উন্মুক্ত হলে কোনো নির্বাচনে প্রার্থী কে, কাদের মনোনয়নপত্র বৈধ কিংবা অবৈধ হলো, কারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলেন, কোনো প্রার্থীর প্রতীক কী ইত্যাদি জানা যাবে। অন্যদিকে নির্বাচনী ফলাফলও পাওয়া যাবে অ্যাপটিতে। এতে ভোট চলাকালে একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর থাকবে ভোটার উপস্থিতির তথ্য। রিটার্নিং কর্মকর্তা ফলাফল ঘোষণার পরপর পাওয়া যাবে ফলাফলের হালনাগাদ তথ্য।
অশোক কুমার দেবনাথ জানান, এ বিষয়ে চলতি মাসেই কমিশন সংবাদ সম্মেলন করবে। অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থার সঙ্গে আরও ছয়টা মডিউল থাকছে এতে। ফলে স্মার্ট ফোনে অ্যাপ ডাউনলোড করে এনআইডি নম্বর দিলে প্রয়োজনীয় তথ্য জানা যাবে।
এর জন্য ১৫ কোটি টাকার মতো ব্যয় হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ৭ কোটি টাকা হার্ডওয়্যারের জন্য। আর কার্যাদেশ পাওয়া প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে ৮ কোটি টাকা। দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ নির্বাচনের জন্য অ্যাপটি তৈরি করা হচ্ছে। পরবর্তী কমিশন যদি মনে করে এটা কন্টিনিউ (চলমান) করবে, অন্যথায় সেটি তারা বাতিল করে দেবে।
সমাজে এমন কিছু মানুষ আছেন, যাদের একের মধ্যেই থাকে অনেক পরিচয়। তাদের একজন অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু। দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরীর সর্বকনিষ্ঠ সন্তান তিনি। তবে অঞ্জন চৌধুরীকে কেবল সফল শিল্পোদ্যক্তা বাবার পরিচয়েই পরিচিত করার সুযোগ নেই। বাবার দেখানো পথে ব্যবসায়ী হিসেবে সাফল্যের শিখর ছুঁয়েছেন ঠিক। তবে নিজের জগৎটা কেবল ব্যবসার বৃত্তে বন্দি করে রাখেননি। আলোকিত সমাজ গড়তে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন নানা ক্ষেত্রে। কখনো তিনি ক্রীড়াঙ্গনের পরম শ্রদ্ধেয় পিন্টু ভাই, আবার কখনো সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রসৈনিক। সুস্থধারার বিনোদন চর্চায় সম্পৃক্ত হয়ে কেবল সফলতাই পাননি, তার হাত ধরে দেশের বিনোদনপিপাসু মানুষ পেয়েছে অসংখ্য সুস্থধারার চলচ্চিত্র, আর্ট ফিল্ম, শর্ট ফিল্ম, একক নাটক, ধারাবাহিক নাটকের স্বাদ। ক্রীড়া, সংস্কৃতি, বিনোদন জগতে ব্যাপক গ্রহণযোগ্য এই মানুষটি শিক্ষাক্ষেত্রেও রেখে চলেছেন উল্লেখযোগ্য অবদান। বড় শিল্পগোষ্ঠী পরিচালনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার সুবাদে রয়েছে সহজাত নেতৃত্ব গুণাবলি। তাই তো তাকে দেখা যায় নানা পেশাদার, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃত্ব দিতে। তবে বহুমাত্রিক গুণাবলির অধিকারী অঞ্জন চৌধুরীর সব পরিচয় ছাঁপিয়ে বড় হয়ে উঠেছে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়টি। মহান মুক্তিযুদ্ধে পাবনায় ৮ নম্বর সেক্টরে মুজিব বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করার ক্ষেত্রে রেখেছেন বলিষ্ঠ ভূমিকা।
অঞ্জন চৌধুরীর সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে জানা গেল শৈশবের সংগ্রামের কথা। বলেছিলেন, তারা চার ভাই-বোন সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্মাননি। একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পেতে তার বাবা স্যামসন এইচ চৌধুরীকে দেখেছেন নিরলস পরিশ্রম করে নিজের প্রতিষ্ঠানকে তিল তিল করে গড়ে তুলতে। যোগ্য বাবার যোগ্য সন্তান হিসেবে চার ভাই-বোনই স্কয়ার গ্রুপকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রত্যেকেই সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে পারিবারিক ব্যবসার কলেবর বাড়িয়েছেন। পারিবারিক ব্যবসার গন্ডি ছাড়িয়ে প্রত্যেকেই আবার নিজেদের জড়িয়েছেন কল্যাণমূলক নানা সামাজিক উদ্যোগে। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট হলেও ব্যবসার বাইরের জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ততা অঞ্জন চৌধুরীর যেন অন্যদের চেয়েও খানিকটা বেশিই।
মিডিয়াকম, মাছরাঙ্গা কমিউনিকেশন্স লিমিটেড, অ্যাইজিস সার্ভিসেস লিমিটেড, স্কয়ার সিকিউরিটিজ ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, স্কয়ার কনজ্যুমার প্রোডাক্টস লিমিটেড, স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেড, স্কয়ার স্পিনিং মিলস লিমিটেডের মতো প্রতিষ্ঠানকে সামনে থেকে এগিয়ে নিচ্ছেন। সব মিলিয়ে স্কয়ার গ্রুপের কম-বেশি ৩১টি অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের ভালো-মন্দের দায়িত্ব তার। এসব নিয়ে ব্যস্ততার শেষ নেই। কোনোটার তিনি চেয়ারম্যান, কোনোটার আবার ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তবে পেশাগত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি নানা রকম সামাজিক, পেশাদার ও ব্যবসায়িক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত আছেন সক্রিয়ভাবে। আর এটা শুধুই প্রাণের টানেই।
অঞ্জন চৌধুরী একাধারে অ্যাভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, অ্যাসোসিয়েশন অব টিভি কোম্পানি ওনার্সের (অ্যাটকো) সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া মাইক্রো ইন্ডাস্ট্রিজ ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যান্ড সার্ভিসের (মাইডাস) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান, বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (আইইউবি) এডুকেশন, সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড কালচারাল ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্টের ট্রাস্টি, সোসাইটি ফর দ্য প্রমোশন অব বাংলাদেশি আর্টের (এসপিবিএ) চেয়ারম্যান, লুক্সেমবার্গ বিজনেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে যেমন নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছেন, ঠিক তেমনি মাটির কাছের মানুষ হিসেবে দারুণ জনপ্রিয় মানুষটি পাবনা জেলার শতবর্ষী অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির সভাপতিরও দায়িত্ব পালন করছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। এই লাইব্রেরির জীর্ণ পুরনো ভবন ভেঙে গড়ে দিয়েছেন আধুনিক ভবন। হাজার হাজার অমূল্য বই সংগ্রহের সব ধরনের ব্যবস্থাই করেছেন তিনি।
পেশাদার ও সামাজিক পরিচয়ের চেয়ে অবশ্য নিজেকে খেলার মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি আনন্দ পান অঞ্জন চৌধুরী। ক্রীড়াঙ্গনে আছে অনেক পরিচয়। বর্তমানে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) সহসভাপতি। এ ছাড়া বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কাউন্সিলর এবং সাবেক সহসভাপতি, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাউন্সিলর, আবাহনী লিমিটেডের পরিচালক ও ফুটবল কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ গলফ ফেডারেশনের নির্বাহী সদস্য ও কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের ফিন্যান্স কমিটির সদস্য এবং পাবনা জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও স্যামসন এইচ চৌধুরী টেনিস কমপ্লেক্সের উপদেষ্টা। ফুটবল ফেডারেশনে সক্রিয় ছিলেন দীর্ঘ সময়। তবে আবাহনীর সঙ্গে সম্পৃক্তটা আরও আগে। নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে পরিচালক হিসেবে যোগ দেন ঐহিত্যবাহী ক্লাবটিতে। আবাহনীর দুঃসময়ে ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যানের গুরু দায়িত্ব নিয়েছিলেন অঞ্জন চৌধুরী। তার হাত ধরে নানা প্রতিকূলতা পেছনে ফেলে প্রিমিয়ার লিগসহ একাধিক শিরোপা জিতেছে আবাহনী। শুধু ফুটবল নয়, প্রয়োজনে আবাহনী ক্রিকেট দল গঠনেও সহায়তা করেছেন তিনি। আবাহনী সমর্থক গোষ্ঠীকেও নানাভাবে সহায়তা করেন তিনি। আবাহনীর সাবেক পরিচালক ও একসময়ের তারকা ক্রিকেটার আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি অঞ্জন চৌধুরীকে রেখেছেন আবাহনীর একটি ভরসার জায়গায়, ‘ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তাকে দেখেছি অনেক কাজ করতে। এ ছাড়া আমাদের ক্রিকেট দল গঠনেও তিনি ভূমিকা রেখেছেন। আগে তো ক্রীড়াঙ্গনে নিয়মিতই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে দেখা যেত।’ আবাহনী সমর্থক গোষ্ঠীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামন বাদশা অঞ্জন চৌধুরীকে নিয়ে যেন একটু আক্ষেপই করলেন, ‘অঞ্জন চৌধুরীর মতো একজন মানুষ হতে পারেন ক্রমেই নিম্নগামী দেশের ফুটবলের ত্রাণকর্তা। আমরাও একটা সময় চেয়েছিলাম তাকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি করতে। আমাদের ক্লাবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তাকে না জানিয়েই গিয়েছিলাম বাফুফের সভাপতি করার আর্জি নিয়ে। তবে পিন্টু ভাই কখনোই কোনো কিছু চেয়ে নেওয়ার মানুষ নন। ক্লাবকে ভালোবেসে নীরবেই কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের সমর্থক গোষ্ঠীর যখন যেটা প্রয়োজন পড়েছে, তার কাছে গিয়ে নিরাশ হইনি। ক্রীড়াঙ্গনে এ রকম মানুষ পাওয়া সত্যি কঠিন।’ ক্রীড়াঙ্গনের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করার পাশাপাশি নিজ জেলা পাবনার যুব সমাজকে বিপথগামিতার হাত থেকে রক্ষা করতে বেশ কিছু স্পোর্টিং ক্লাবকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করেন অঞ্জন চৌধুরী। ক্রীড়াঙ্গনে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অঞ্জন চৌধুরী জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পান ২০০৯ সালে। এই গুণী ব্যক্তিত্বকে ক্রীড়াঙ্গন ও মিডিয়ায় অবদান রাখায় অনারারি সদস্যপদ দিয়েছে দেশের ক্রীড়া লেখক ও ক্রীড়া সাংবাদিকদের সুপ্রাচীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন।
ক্রীড়াঙ্গনের মতো দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনেও বিশেষ অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন তিনি। দেশের লোক সংস্কৃতিকে বহির্বিশ্বের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে অনেক দিন ধরে কাজ করছেন। ২০১৫ সালে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে আয়োজন করেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্টিভ্যাল। তিন দিনব্যাপী এই বিশাল আয়োজনে দেশে-বিদেশের বিখ্যাত সব লোকশিল্পী গান পরিবেশনা করেন। এরপর এ আয়োজনটি দেশের অন্যতম সেরা সাংস্কৃতিক আসর হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ফি বছর সম্পূর্ণ বিনে পয়সায় কেবল মাত্র অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করে দেশ-বিদেশের বিখ্যাত লোকসংগীত শিল্পীদের পরিবেশনা দেখতে মুখিয়ে থাকে সব শ্রেণির মানুষ। তার মালাকিনাধীন চ্যানেল মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের নিয়মিত অনুষ্ঠান রাঙা সকাল ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এই অনুষ্ঠানে সমাজের নানা অঙ্গনে অবদান রাখা সফল মানুষদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। আর ব্যতিক্রমী এই অনুষ্ঠানের পুরো ভাবনাটাই এসেছে অঞ্জন চৌধুরীর কাছ থেকে।
সুস্থধারার চলচ্চিত্র নির্মাণ করে বিভিন্ন সময় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন অঞ্জন চৌধুরী। তার মালিকানাধীন প্রযোজনা সংস্থা সান কমিউনিকেশন্স লিমিটেড আলোচিত অসংখ্য আর্ট ফিল্ম, শর্ট ফিল্ম, টেলিফিল্ম, একক নাটক, ধারাবাহিক নাটক এ দেশের বিনোদনপিপাসু মানুষকে বিনোদিত করেছে। ২০০১ সালে তার প্রযোজনায় নির্মিত হয় লালসালু চলচ্চিত্রটি। ৮টি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিল ছবিটি। এরপর তার প্রযোজনায় একই পরিচালকের লালনও জিতে নিয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। একই বছর আবু সায়ীদ পরিচালিত শঙ্খ নাদ দুটি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়। ২০০৫ সালে প্রয়াত তারেক মাসুদ ও ক্যাথেরিন মাসুদ পরিচালিত আর্টফিল্ম অন্তর্যাত্রার বাংলাদেশ অংশের স্বত্ব কিনে নেন অঞ্জন চৌধুরী। ২০০৬ প্রয়াত চিত্রনায়িকা সারাহ বেগম কবরীর প্রথম চলচ্চিত্র আয়নার প্রযোজনা করেন তিনি। ২০০৯ সালে তার প্রযোজিত চলচ্চিত্র মনপুরা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ ছয়টি শাখায় এই ছবি জিতে নেয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ২০২০ সালে তার প্রযোজিত ও চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত বিশ্বসুন্দরী দর্শকদের দৃষ্টি কেড়ে জিতে নিয়েছিল বহু পুরস্কার। ২০২২ সালে অঞ্জন চৌধুরী প্রযোজিত হাওয়া চলচ্চিত্র নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
অঞ্জন চৌধুরী বিশ্বাস করেন ব্যক্তিজীবনে প্রতিষ্ঠা পেতে সমাজের অবদান কম নয়। তাই সমাজকেও কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার দায় আছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকে তিনি অনেকগুলো মহতী উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত। নারী ও শিশুদের চিকিৎসা সহায়তায় তার উদ্যোগেই খোলা হয়েছে টোল-ফ্রি হেল্পলাইন। যেখানে বিনে পয়সায় শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা পেতে পারেন সমাজের সমস্যাগ্রস্ত নারী ও শিশুরা। গর্ভবতী ও সদ্য প্রসবা মা ও শিশুদের জন্য এই সেবা চালু রেখেছে স্কয়ার গ্রুপের মালিকানাধীন স্কয়ার হসপিটাল। ডাচ সরকারের সঙ্গে মিলে দেশের প্রায় ৩ মিলিয়ন নারী গার্মেন্টস কর্মীর যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার নিয়ে কাজ করছেন তিনি।
ক্রীড়া, সংস্কৃতির পাশাপাশি শিক্ষা প্রসারেও তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। পাবনাসহ দেশের নানা জায়গায় স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষার অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখছেন। স্কয়ার কিন্ডারগার্টেন, স্কয়ার হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, দিশারী কম্পিউটার ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। যেখানে দরিদ্র, সমস্যাগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় এই সব প্রতিষ্ঠান সরাসরি কাজ করছে।
ব্যবসায়ী অঞ্জন চৌধুরীর শো-কেসে স্বীকৃতির অভাব নেই। প্রথম কমার্শিয়ালি ইম্পোর্টেন্ট পারসন (সিআইপি) উপাধি পেয়েছেন ২০০৫ সালে। আর ২০০৮ সাল থেকে দেশের অন্যতম সর্বোচ্চ করদাতাদের একজন তিনি। বাবা স্যামসন এইচ চৌধুরীর পথ ধরে ২০১৭ সালে পোপ ফ্র্যান্সিসের কাছ থেকে বিশেষ স্বীকৃতি লাভ করেন। এর বাইরে পেশাগত নানা সংগঠনের সঙ্গে জড়িত আছেন। দেশি-বিদেশি আরও অনেক স্বীকৃতিই আছে।
তবে তার অফিসের দেয়ালে টাঙানো বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের স্মরণীয় যত বিজয়ের স্মৃতি চিহ্ন কিংবা ফিফা বিশ্বকাপে ব্যবহৃত বলের রেপ্লিকা দেখলেই বোঝা যায়, খেলাধুলা তার হৃদয়ের কতটা স্থান দখল করে আছে। তাই তো ক্রীড়াঙ্গন থেকে একটু দূরে থেকেও তিনি দূরে নন। আছেন নিজের মতো করেই। ঠিক যেমনটা আছেন সংস্কৃতি ও বিনোদন জগতে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।
প্রাচীন সময় থেকে মানুষের খাদ্যতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে চীজ বা পনির। গরুর দুধের তৈরি পনিরে শরীরকে সুস্থ রাখার প্রয়োজনীয় সব উপাদান পাওয়া যায়।
বর্তমানে সময়ের সাথে সাথে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পনিরের ব্যবহার। আর তাই বিস্কিট থেকে শুরু করে পাউরুটি, পাস্তা, পিৎজা অনেক কিছুতেই পনির ব্যবহার হয়।
পনিরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের মতে, ১০০ গ্রাম পনিরের মধ্যে রয়েছে:
শক্তি - ৩৬২ কিলোক্যালরি
প্রোটিন – ৫.১৭ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট - ৫০ গ্রাম
ক্যালসিয়াম - ৬৯ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম - ১৮১ মিলিগ্রাম
স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড – ৩.৪৫ গ্রাম
কোলেস্টেরল - ৩৪ মিলিগ্রাম
এটি প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস। পনিরের বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে।
পনির ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এবং প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এটি বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অনেক উপকারি। পনিরে থাকা ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পনির খেলে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করা যায়।
পনির ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা শক্তিশালী ও মজবুত দাঁত তৈরিতে অবদান রাখে। পনিরে থাকা কেসিন ফসফোপেপটাইড উপাদান দাঁতের গহ্বর কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া চিউইং চিজ মুখের পিএইচ মাত্রা বাড়াতে পারে এবং সামগ্রিক মৌখিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
পনিরে অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড যেমন কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস। কোরিয়া ইউনিভার্সিটি এবং ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ফ্যাটি অ্যাসিডে ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ ছাড়া এই ফ্যাটি অ্যাসিড এথেরোস্ক্লেরোসিস এর বিকাশ রোধ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে।
পনিরে কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড এবং স্ফিংগোলিপিড রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে স্ফিংগোলিপিড মানুষের কোলন ক্যান্সারকে বাধা দিতে পারে।
এ ছাড়া পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে খাদ্যতালিকাগত ক্যালসিয়াম কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ উপকারি।
পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই উপকারি। এটি প্রসবের সময় সংকোচনকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া উকের দুধ পান করানোর সময় ক্যালসিয়াম পুষ্টির ঘাটতিও পূরণ করে পনির। এটি গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রূণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে।
কিছু ধরণের পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যকারিতা বাড়াতে পরিচিত। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে পনির শরীরের প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটি অসুস্থতা এবং রোগ কমাতে পারে।
প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সুরক্ষিত পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। এটি বয়স্কদেরমধ্যে ইমিউনোসেনেসেন্স (প্রতিরোধ ব্যবস্থার ধীরে ধীরে দুর্বল হওয়া) প্রতিরোধ করতে পারে।
পনির সেলেনিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা থাইরয়েড ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সেলেনিয়ামের থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করে ভাইরাসের বিকাশকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে।
চেডার পনির হল এক ধরনের হার্ড পনির। এটি খাদ্যতালিকায় যোগ করলে তা থাইরয়েড রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
পনিরের আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলির মধ্যে একটি হল মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করা। বিশেষ করে ক্যামেমবার্ট জাতের পনির এই ধরনের কাজ করে থাকে। ক্যামেমবার্ট পনির প্রদাহজনক সাইটোকাইনের মাত্রা কমাতে পারে। এটি আলঝাইমার রোগের ঝুঁকি কমায় এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।
পনির ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। এতে থাকা ভিটামিন বি কোষের বিপাক এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে এটি উজ্জ্বল ত্বকের পাশাপাশি ত্বকের দাগ কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
যাদের গরুর দুধে অ্যালার্জি আছে তাদের পনির এড়ানো উচিত। এটি অ্যালার্জি, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথার কারণ ও হতে পারে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (অতিরিক্ত পনির খাওয়া) কার্ডিওভাসকুলার রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
পনিরের স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ও রয়েছে। যেমন,
কিছু লোকের দুধের প্রোটিন যেমন কেসিনে অ্যালার্জি থাকে। এটি সারা শরীর জুড়ে একটি প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং ত্বকে ফুসকুড়ি, সাইনাস কনজেশন এবং ব্রণ জ্বলতে পারে।
অনেকের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা থাকে। সেক্ষেত্রে তাদের পনির না খাওয়াই শ্রেয়। কারণ ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা গ্যাস, পেট ফোলাভাব এবং ডায়রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। অনেক সময় এর কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে।
প্রচুর পরিমাণে পনির খাওয়ার ফলে মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথা হতে পারে। পুরনো পনিরে থাকা টাইরামিন উপাদান কিছু ব্যক্তির মধ্যে মাইগ্রেনকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
যারা মোনোমাইন অক্সিডেস ইনহিবিটরস (MOIs) গ্রহণ করছেন তাদের পনির খাওয়া এড়ানো উচিত। এই ওষুধগুলি হতাশার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এসব ওষুধ পুরনো বা বয়স্ক পনিরে থাকা উপাদান টাইরামিনের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হবে ২ নভেম্বর। পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন তা নিয়ে এখন চলছে আলোচনা, কানাঘুষা; শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ।
বর্তমান উপাচার্যই আবার দায়িত্ব পাবেন নাকি নতুন কাউকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে এ আলোচনাই চলছে এখন। আলোচিত হচ্ছে কয়েকজন শিক্ষকের নামও। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন কানাঘুষারও অবসান হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ পদে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের মধ্য থেকেই কাউকে বাছাই করার বিষয়টি একপ্রকার নিশ্চিত। বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের এ বিষয়ে আগ্রহ নেই। গুণী কোনো শিক্ষক উপাচার্যবিষয়ক আলোচনার মধ্যে নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা হবে কি না, এ বিষয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের ১১(১) ধারা অনুযায়ী, উপাচার্য নিয়োগে তিন সদস্যবিশিষ্ট প্যানেল নির্বাচনের দায়িত্ব সিনেটের। সিনেট নির্বাচিত তিনজনের মধ্য থেকে একজনকে উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এবং রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রপতি তাকে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেন।
রীতি অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের জন্য সিনেটের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা হয়। কিন্তু এবার সিনেট অধিবেশন হওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। উপাচার্য অধিবেশন ডাকবেন কি ডাকবেন না; ওপর মহলের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কেউ কিছু জানেন না। উপাচার্য নিজেও বিষয়টি খোলাসা করছেন না।
অধ্যাদেশের ১১(২) ধারা অনুযায়ী, কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যেমন অসুস্থতা, ছুটি, অপসারণ বা অন্য কোনো কারণে উপাচার্যের পদ শূন্য হলে একজনকে অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা বলছেন, অধ্যাদেশের নিয়ম অনুসরণ করে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করা হোক। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং আগামী নির্বাচনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। নতুন উপাচার্যের গ্রহণযোগ্যতাও বাড়বে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, ‘ভিসি প্যানেল নিয়ে আলোচনা নেই। উপাচার্যও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে আমাদের জানা নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট সদস্য ও শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল সবচেয়ে বেশি আলোচিত। তাদের মধ্য থেকেই কারোর পরবর্তী উপাচার্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম এ বিষয়ক আলোচনায় রয়েছেন।
অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পান। পরে প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর উপাচার্য পদে পুনর্নিয়োগ পান তিনি। সাত বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সামলাচ্ছেন তিনি। দুই মেয়াদের বেশি উপাচার্য থাকার নজির নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই তার দায়িত্ব পালনের শেষ দেখছেন অনেকে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষকদের মধ্যেও তাকে নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে পুনরায় নিয়োগ পেতে পারেন তিনি।
ইমেরিটাস অধ্যাপক বা অন্য কোনো গুণী শিক্ষক নেই উপাচার্য নিয়োগের আলোচনায়। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গুণী শিক্ষকদের সামনে আনার যে ধরনের কাঠামো থাকা উচিত তা নেই। যারা তোশামোদ করতে পারে, অন্ধ আনুগত্য প্রকাশ করতে পারে, তাদেরই প্রশাসনের শীর্ষ পদে নিয়ে আসা হয়। সত্যিকারের গুণী শিক্ষক এবং অনেক ভালো গবেষক আছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারা কখনো প্রশাসনের দায়িত্বে আসতে পারেন না। তারা ব্যক্তিত্বের জলাঞ্জলি দিতেও রাজি নন।’
অতীতে উপাচার্যদের মধ্যে অ্যাকাডেমিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে একটা ভারসাম্য ছিল। এখন তা নেই। এখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও আনুগত্যের ভিত্তিতে প্রশাসনিক পদগুলো দেওয়া হয়।
পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন বা ভিসি প্যানেল নিয়ে আগ্রহ নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের। বিএনপিঘোষিত এক দফাতেই তারা মগ্ন। যদিও সিনেটে তিনজন প্রতিনিধি থাকায় সুযোগ তাদেরও রয়েছে। সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার পরিবর্তন না হলে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিষয়ে ভাবছি না। এ বিষয়ে আমাদের ফোকাস নেই। আমাদের ফোকাস হচ্ছে এ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। জাতীয় রাজনীতিতে পরিবর্তন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও পরিবর্তন আসবে।’
শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও সাংগঠনিকভাবে আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমরা নীল দল এখনো এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করিনি। যথাসময়ে দলের সভায় এ নিয়ে কথা হবে। মনোনয়ন কে পাবেন, তার আলোচনাও সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে। বর্তমান প্রশাসনের শীর্ষ তিনজন বিশেষভাবে আলোচনায় থাকবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই দায়িত্ব দেবেন। আমরা উনাদের সমর্থন করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ীই সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।’
বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনের গতি অনুযায়ীই সব চলবে। এ বিষয়ে যাদের ভাবা প্রয়োজন তারা অবশ্যই ভাববেন।’ সিনেটের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশেষ অধিবেশন ডাকার প্রয়োজন হলে আমরা ডাকি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।