
প্রায় তিন বছর করোনার প্রাদুর্ভাবের পর বিশ্ব যখন ঘুরে দাঁড়াতে ব্যস্ত, তখনই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এর ফলে বৈশি^ক অর্থনীতি সংকটে পড়ে। অনেক দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাই শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছায়। উন্নত দেশগুলোও সংকটে পড়ে। অনেক দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ইতিমধ্যে অনেক দেশই মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে সক্ষম হয়েছে; ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। এ অবস্থায় আজ সোমবার বিশ্বনেতাদের উপস্থিতিতে শুরু হচ্ছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশন।
সাধারণ পরিষদের এ বছরের অধিবেশন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ করোনার মধ্যে দুটি অধিবেশন হয়েছে ভার্চুয়ালি। গত বছর সরাসরি অধিবেশন হলেও তাতে উপস্থিতি ছিল সীমিত। এ বছর বিশ্বনেতারা প্রায় সবাই অধিবেশনে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘আস্থা পুনর্গঠন ও বিশ্ব সংহতির পুনরুদ্ধার : সবার জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি ও স্থায়িত্ব ত্বরান্বিত করতে ২০৩০ এজেন্ডা এবং এর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ।’
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এ অধিবেশনে চোখ এখন বিশ^বাসীর। খারাপ অর্থনৈতিক অবস্থা কাটাতে ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এবারের অধিবেশনে যুদ্ধের বদলে সংহতি-সমঝোতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। শিক্ষা, পরিবেশ, সামাজিক উন্নয়ন, বাণিজ্য, লিঙ্গ, মানব উন্নয়ন, বিশ্বায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, তথ্যপ্রযুক্তি ও উদ্ভাবন, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন প্রভৃতি ইস্যু এ অধিবেশনের আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। বিশ্বনেতারা ২০৩০ সালের মধ্যে মানব উন্নয়নের জন্য গৃহীত সূচকগুলোর অগ্রগতি নিয়েও পর্যালোচনা করবেন। বিশ্ব জুড়ে ক্ষুধা, দারিদ্র্য প্রভৃতি নিরসনের উপায় খুঁজবেন।
অধিবেশনের প্রাক্কালে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘বিশ্বনেতাদের কাছে আমার আবেদন স্পষ্ট। এখন ভান করার বা অনড় থাকার সময় নয়; সিদ্ধান্তহীনতার বা উদাসীন থাকার সময় নয়। বাস্তব সমাধানের লক্ষ্যে এখন সময় একত্রিত হওয়ার। সুন্দর আগামীর জন্য এখন সমঝোতার সময়।’ তিনি বলেছেন, ‘রাজনীতি মানেই সমঝোতা, কূটনীতি মানেও সমঝোতা এবং কার্যকর নেতৃত্বও সমঝোতা।’
গুতেরেস বলেন, বিশ্বনেতারা এমন এক সময়ে একত্রিত হতে যাচ্ছেন যখন মানবসভ্যতা গুরুতর জলবায়ু পরিস্থিতি থেকে শুরু করে ক্রমবর্ধমান সংঘাত, ব্যয়-সংকট, ক্রমবর্ধমান বৈষম্য ও নাটকীয় প্রযুক্তিগত বাধার সম্মুখীন। তিনি বলেন, ‘মানুষ এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু ভূরাজনৈতিক বিভাজন আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা হ্রাস করছে।’
গুতেরেস বলেন, ‘বিভাজন, স্বার্থের ভিন্নতা, ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও ভিন্ন সংস্কৃতি সত্ত্বেও বিশ্বের প্রয়োজন সমঝোতা। আমরা সমতা ও সংহতির ভিত্তিতে শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ চাইলে আমাদের অভিন্ন ভবিষ্যৎ ও ভালোর জন্য নেতাদেরও বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে।’
জাতিসংঘের ২০১৫ সালের অধিবেশনে পরিবর্তনশীল বিশ্বের সমতা ও বৈষম্যহীন উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ‘রূপান্তরিত আমাদের পৃথিবী : ২০৩০ সালের জন্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)’ শিরোনামে ১৭টি ক্ষেত্রে উন্নয়নের কিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। যেমন চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূর করা, সুপেয় পানিপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা, লিঙ্গবৈষম্য দূর করা, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা, সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা প্রভৃতি। এসডিজির লক্ষ্যপূরণে সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০৩০ সাল। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানরা ওই সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন।
বিশ্ব জুড়ে নানাবিধ সংকটের কারণে এসডিজির লক্ষ্য অর্জন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। গত জুলাইয়ে প্রকাশিত জাতিসংঘের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বিপদের মধ্যে রয়েছে। ৭৮তম অধিবেশনে তাই এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে করণীয় নির্ধারণে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এবারের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের মূল বিষয়গুলো বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। বিশেষ করে আর্থিক অনিশ্চয়তা মোকাবিলা করার লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করা, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা ও টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর বৈশ্বিক উদ্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তন, নারীর ক্ষমতায়ন, টেকসই উন্নয়ন, রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী ও টেকসই সমাধান প্রভৃতি প্রসঙ্গ। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখতে এ অধিবেশন সহায়ক হতে পারে।
জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে গতকাল রবিবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন। তিনি ১৭ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে অবস্থান করবেন। ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সাধারণ পরিষদ হলে ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের প্রথম দিনের উচ্চপর্যায়ের সাধারণ আলোচনায় যোগ দেবেন। ২২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় দুপুর ১টা থেকে ২টার মধ্যে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী ১৯ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নৈশভোজেও যোগ দেবেন।
অধিবেশনে যোগদানের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), সর্বজনীন স্বাস্থ্য ও অর্থসহ বেশ কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় ও সৌজন্যমূলক বৈঠকে অংশ নেবেন।
১৮ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের রকফেলার সেন্টারে ইউএনআইডিও ও ডেলয়েট আয়োজিত ‘খাদ্য ভাবনা-খাদ্য সরবরাহ চেইন উদ্ভাবনে এসডিজিকে ত্বরান্বিত করার সহযোগিতা’ শীর্ষক সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদর দপ্তরের সিআর-১৬-এ স্পেনের প্রধানমন্ত্রী এবং ইউরোপীয় কাউন্সিল ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সভাপতির ‘টুওয়ার্ডস এ ফেয়ার ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল আর্কিটেকচার’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকেও ভাষণ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী ২০ সেপ্টেম্বর কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে ‘টেকসই উন্নয়নে সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য আন্তর্জাতিক গণ-অর্থায়ন বৃদ্ধি এবং দক্ষতা নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক উন্নয়ন অর্থায়ন (এফএফডি) বিষয়ে ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিল চেম্বারে আলোচনায় প্রধান বক্তার ভাষণ দেবেন।
তিনি ২১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ, কানাডা, গাম্বিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র আয়োজিত রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে একটি সাইড ইভেন্টের পাশাপাশি ‘সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে সৃষ্ট হুমকি মোকাবিলা’ শীর্ষক ব্রেকফাস্ট সামিট ও ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ-বিষয়ক সভায় যোগ দেবেন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
পরিকল্পনাবিদ ছাড়াই ১২টি উপজেলা শহরের (নন-মিউনিসিপ্যাল) মহাপরিকল্পনার দরপত্র মূল্যায়ন করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এ ছাড়া পছন্দের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে যোগসাজশে দরপত্রের শর্ত লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটেছে। এসব অনিয়মের বিনিময়ে প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১৩ জুলাই সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) পরিচালক বরাবর কয়েকটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ জমা পড়েছে। লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, কারিগরি প্রস্তাব মূল্যায়ন-প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অস্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। এখানে সরকারের ক্রয়নীতি পিপিআর-২০০৬ ও ২০০৮ যথাযথভাবে অনুসরণ না করে শেলটেক কনসালট্যান্টস প্রাইভেট লিমিটেডকে ৫টি প্যাকেজের সব কাজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মহাপরিকল্পনা প্রণয়নকাজের জন্য বাছাই করা প্রতিষ্ঠান শেলটেকের কারিগরি প্রস্তাবের পরামর্শকের সিভিতে প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী (পে-রোল) জনবল হিসেবে দেখানো হয়েছে। অথচ তাদের অনেকেই স্থায়ীভাবে বিদেশে বসবাস করেন। আবার অনেকে দেশে সরকারি চাকরিও করছেন। এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তারা।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, সংক্ষুব্ধ পরামর্শ প্রতিষ্ঠানগুলো সিপিটিইউর পাশাপাশি স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী, এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বরাবরও তাদের অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ন্যাচারাল রিসোর্সেস প্ল্যানার্স লিমিটেড (এনআরপি), বাংলাদেশ, আইসিএসবি কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস এলএলপি, ভারত, গ্লোবাল সার্ভে কনসালট্যান্টস (জেএসসি), বাংলাদেশ, সার্কেল টেকনোলজি লিমিটেড, বাংলাদেশ। এসব মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে ন্যাচারাল রিসোর্সেস প্ল্যানার্স লিমিটেড (এনআরপি), বাংলাদেশের পরিচালক শফিকুল ইসলাম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলজিইডির দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি শতভাগ অনিয়ম করে একটি প্রতিষ্ঠানকে ৫টি প্যাকেজের কাজ দিয়েছে। টার্মস অব রেফারেন্সে (টিওআর) মূল্যায়ন কমিটিতে পরিকল্পনাবিদ রাখার কথা থাকলেও তা রাখা হয়নি। এ ছাড়া শুরু থেকে মূল্যায়ন-প্রক্রিয়া পর্যন্ত সরকারি ক্রয়নীতি লঙ্ঘন করে শেলটেককে কাজ দেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে। তিনি বলেন, ‘এনআরপি কনসোর্টিয়াম করে মাত্র ৬৪ পয়েন্ট দিয়ে নন-রেসপনসিভ করা হয়েছে। অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে এক পয়েন্ট দেওয়া হয়েছে, যেটা পাওয়ার কথা ১০ পয়েন্ট। কর্মপদ্ধতি, ওয়ার্ক প্ল্যান, সংগঠনে পয়েন্ট পাওয়ার কথা ৩৫ এবং অভিজ্ঞ পরামর্শকের জন্য পাওয়ার কথা ৫০। এই হিসাবে আমাদের পয়েন্ট আসার কথা ৯৫। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাদের কম পয়েন্ট দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চাইলেও এলজিইডি সঠিক জবাব দেয়নি। এক প্রশ্নের আরেক জবাব দিয়েছে তারা।’
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, এলজিইডির পাঁচ প্যাকেজে ১২টি উপজেলা শহরের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নকাজের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের দরপত্র আহ্বান করে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে; আর দরপত্র মূল্যায়ন-প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেছে গত জুন মাসে। এই মহাপরিকল্পনা প্রণয়নকাজটি ৫টি প্যাকেজে করা হচ্ছে। ৩টি নতুন উপজেলায় নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং দুটি উপজেলায় মহাপরিকল্পনা রিভিউ করা হবে। এখানে ৩৩টি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আবেদন করে। এলজিইডি থেকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলা হয়েছিল, একটি প্রতিষ্ঠানকে সব প্যাকেজের কাজ দেওয়া হবে না। ভাগ ভাগ করে একাধিক প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার ব্যাপারে কাজ দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও রয়েছে। এলজিইডির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সেটা অনুসরণ করার কথা বললেও বাস্তবে তা করেননি।
এলজিইডির মহাপরিকল্পনা প্রণয়নসংক্রান্ত কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘টার্মস অব রেফারেন্সে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, মহাপরিকল্পনা প্রণয়নসংক্রান্ত মূল্যায়ন কমিটিতে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ (নগর-পরিকল্পনাবিদ) রাখতে হবে। তাহলে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের কাজটি সঠিক উপায়ে করা সম্ভব হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এলজিইডি তা করেনি। অসৎ উদ্দেশ্য থেকে এলজিইডি এটা করে থাকতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মহাপরিকল্পনা নেওয়ার সময় যাচাই-বাছাই কমিটি করে তা গ্রহণ করতে পরিকল্পনাবিদদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। শুরুর তৎপরতা দেখে মনে হচ্ছে, তারা হয়তো এসবের তোয়াক্কা করবেন না।’
তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা যায়, এলজিইডির মহাপরিকল্পনা প্রণয়নসংক্রান্ত কাজের দায়িত্বপ্রাপ্তদের স্বচ্ছতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। এই কাজের দায়িত্বপ্রাপ্তরা এলজিইডির প্ল্যানিং কনসালট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন শেলটেকের গাজী শাহিনুর রহমান। এর আগে দীর্ঘদিন শেলটেকের পরিকল্পনাবিদ হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। নেপথ্যে তিনি শেলটেককে সব কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন। আর এ কাজে শেলটেকেরে পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. সাইফুদ্দিনের ব্যাপারেও।
অভিযোগ প্রসঙ্গে এলজিইডির কনসালট্যান্ট গাজী শাহিনুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এর আগে আমি শেলটেকে কাজ করেছি, তা সঠিক। তবে ১২ উপজেলার মহাপরিকল্পনার কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে শেলটেককে অনৈতিক কোনো সহযোগিতা করিনি।’ জানতে চাইলে এলজিইডির উপজেলা মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. সাইফুদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১২ উপজেলার মহাপরিকল্পনা প্রণয়নসংক্রান্ত পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা ঠিক নয়।’ সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরলে বলেন, ‘আপনি অফিসে আসেন সরাসরি কথা বলব।’ পরে তার সাক্ষাৎ পেতে তিন দিন একাধিকবার ফোন করলেও ফোন রিসিভ করেননি।
শেলটেক কনসালট্যান্টস প্রাইভেট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শেলটেক পরিকল্পনা প্রণয়নে অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান। এলজিইডিতে যথাযথ আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রতিদ্বন্দিতা করেছে। এ ক্ষেত্রে শেলটেক কোনো অসুদপায় অবলম্বন করেনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘দরপত্র মূল্যায়ন কমিটিতে পরিকল্পনাবিদ রাখা না রাখা এলজিইডির বিষয়। এ ক্ষেত্রে সেটা ছিল কি না, তা আমার জানা নেই।’
ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উপজেলা মহাপরিকল্পা প্রণয়ন পরিকল্পনা পেশাজীবীদের মুখ্য কাজ। টার্মস অব রেফারেন্সে পরিকল্পনাবিদ রাখার প্রস্তাব যৌক্তিক ছিল। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা না মানা এলজিইডির সঠিক হয়নি।’
প্রকল্পের আওতাভুক্ত উপজেলা : এলজিইডির মহাপরিকল্পনা প্রণয়নসংক্রান্ত প্রকল্পের আওতাভুক্ত উপজেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন; নেত্রকোনার আটপারা; কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ ও লালমাই; সিলেটের গোয়াইনঘাট; সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ; বাগের হাটের ফকির হাট এবং পটুয়াখালীর দুমকি। রিভিউ করা হবে ঢাকার নবাবগঞ্জ, রাজশাহীর বাগমারা, কক্সবাজারের রামু এবং গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার মহাপরিকল্পনা।
সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি আদায়ে বিএনপির নতুন কর্মসূচির ঘোষণা আসছে। বগুড়া থেকে রাজশাহী পর্যন্ত তারুণ্যের রোডমার্চ কর্মসূচি শেষ করে আজ সোমবার এই ঘোষণা দেওয়া হবে। নতুন কর্মসূচির মধ্যে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় ১১টি সমাবেশ ও পাঁচ বিভাগে পাঁচ রোর্ড মার্চ থাকতে পারে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে ১২ দিনের এই কর্মসূচি শুরু হবে। চলবে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত। এরপরও যদি দাবি মেনে না নেয় তাহলে ঘেরাও, অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। অক্টোবর জুড়েই এই কর্মসূচি থাকবে।
দলটির নেতারা বলছেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী দলগুলোকে নিয়ে যা যা করেছে সব কিছুই বিএনপি করবে ধারাবাহিকভাবে। তাদের কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ। তবে সরকার বাধা দিলেও তারা মাঠ ছাড়বেন না।
নির্বাচন কমিশন আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আভাস দিয়েছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী গত ১৪ সেপ্টেম্বর সংসদের সমাপনী অধিবেশনের ভাষণে বলেছেন, অক্টোবরে সংসদ অধিবেশন শেষ হবে। তারপর নির্বাচন।
বিএনপি চায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই এক দফা দাবির আন্দোলন শেষ করতে। তারা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না।
এক দফা দাবি আদায়ে সেপ্টেম্বরে লাগাতার কর্মসূচির ঘোষণা দিলেও তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারেনি বিএনপি। কিংবা জোরালো কোনো কর্মসূচিও দিতে পারেনি এ পর্যন্ত। সে কারণে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ১২ দিনের নতুন কর্মসূচির কঠোর আন্দোলনে নামবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলেছেন, তারুণ্যের রোডমার্চের পর আজ সোমবার নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে। এর মধ্যে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, গাজীপুর, আমিনবাজার ও রাজধানীতে ১১টি সমাবেশ করা হবে। এর মধ্যে নারী, শ্রমিক ও পেশাজীবীদের সমাবেশ হবে। এ ছাড়া খুলনা, বরিশাল, সিলেট, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগে পাঁচটি রোডমার্চ কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। শ্রমিক সমাবেশের পর পুরো অক্টোবরজুড়ে লাগাতার কর্মসূচি থাকবে। তবে দলীয় একটি সূত্র বলছে, আগামী মঙ্গলবার থেকে যে কর্মসূচি শুরু হবে তা শেষ হবে ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের মধ্য দিয়ে।
বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব কর্মসূচির পর পুরো অক্টোবরজুড়ে কর্মসূচি থাকবে। এই কর্মসূচির মধ্যে রোর্ডমার্চ, লংমার্চ থাকবে। এসব কর্মসূচিতে কাজ না হলে ঘেরাও, অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি আসতে পারে।
এক দফা দাবি আদায়ের চূড়ান্ত আন্দোলনের বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছিল। তখন বিএনপি বাধ্য হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে বাধ্য হয়েছিল। আজ বিএনপি একই পথে হাঁটবে।’
তিনি বলেন, প্রাথমিক চিন্তা হিসেবে কোনো ধরনের আক্রমণাত্মক পথে না গিয়ে একের পর এক কর্মসূচির মাধ্যমে তারাও একই পরিস্থিতি তৈরি করবেন দাবি আদায়ের জন্য, যাতে করে তার ভাষায় সরকার গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রশ্নে সমঝোতায় বাধ্য হয়। তবে বাধ্য করলে কোনো ছাড় নয়। বাধ্য করতে যা লাগে তাই করবে বিএনপি।
ওই নেতা আরও বলেন, ‘বিএনপি এক দফার দাবি আদায়ে পুরো অক্টোবরজুড়ে বিরতিহীন কর্মসূচিতে যাবে। কর্মসূচির শুরু হতে পারে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে সমাবেশ দিয়ে। এরপর রাজধানী ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলায় রোডমার্চ, লংমার্চের কর্মসূচি আসবে। সারা দেশে তৃণমূল নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করে ঢাকায় আসবে কর্মসূচি। এসব কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ। শান্তিপূর্ণ এসব কর্মসূচিতে সরকারের টনক না নড়লে পুরো অক্টোবরজুড়ে দেশব্যাপী লাগাতার ঘেরাও, অবরোধের মতো কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। তাতেও কাজ না হলে সরকার বাধ্য করলে সর্বশেষ হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি আসতে পারে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার প্রবেশপথে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে পুরো ঢাকা শহর অচল করে দেওয়া হতে পারে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী তিন মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজপথে আমরা নেমে এসেছি বিজয় অর্জন না করে আমরা ঘরে ফিরে যাব না। আগামী প্রজন্মের জন্য একটি নতুন বাংলাদেশ তাদের উপহার হিসেবে দিয়ে যেতে চাই।’
বিএনপি সূত্রগুলো বলছে, সরকারের ওপর বিদেশিদের চাপের কারণে সরকার এখন নমনীয়। কিন্তু কঠোর আন্দোলন শুরু হলে সে-রকম নাও থাকতে পারে। বিএনপির কর্মসূচিকে ঘিরে সহিংসতা হলে সরকারের ওপর বিদেশিদের চাপ বাড়বে। অন্যদিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমে আসবেন বলে তারা মনে করেন।
ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা জানিয়ে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।
নতুন কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১২ জুলাই সরকার পতনের এক দফা ঘোষণার পর থেকে ধাপে ধাপে কর্মসূচি পালন করে আসছি আমরা। আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি সব সময় একরকম থাকে না। সরকারের আচরণের ওপর নির্ভর করবে কী ধরনের কর্মসূচির ঘোষণা আসবে।’
তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন আমাদের করতে হচ্ছে তা স্বাধীনতার গত ৫০ বছরের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক দলকে করতে হয়নি। কারণ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন এবং সর্বশেষ বিচার বিভাগকে পুরোপুরি দলীয়করণ করেছে। এখন এক ব্যক্তির ইচ্ছা ও নির্দেশে দেশ চলছে। এই রেজিমের পরিবর্তন করতে হলে ভেবেচিন্তে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সে প্রক্রিয়া চলছে।’
ফখরুল বলেন, ‘সরকারকে সরে যেতে হবে কারণ আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। হামলা হলে আন্দোলনের গতিপথ পাল্টে যাবে। কঠোর কর্মসূচির দিকে যাব আমরা।’
গত শুক্রবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলে দুদিনের ‘তারুণ্যের রোডমার্চ’ শেষে সোমবার নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে। এক দফার দাবি আদায়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, এই আন্দোলনে সবাই ঐক্যবদ্ধ।’
দায়িত্বশীল নেতারা বলেন, ‘নতুন কর্মসূচির মধ্যে ঢাকার জেলার কেরানীগঞ্জে দলীয় কার্যালয়ের সামনে, গাজীপুর মহানগর ছাড়াও গাবতলীর আমিনবাজার, ঢাকা মহানগর উত্তর উত্তরায় একটি সমাবেশের আয়োজন করবে। এছাড়া শ্রমিক দলের কর্মসূচি রয়েছে ৩০ সেপ্টেম্বর।’
শ্রমিক দলের দায়িত্বশীল নেতারা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে শ্রমিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এবারের আন্দোলনেও শ্রমিকরা রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্বে থাকবেন।’ তারা জানান, কর্মসূচি সফল করতে ফরিদপুর ছাড়া ঢাকা বিভাগের সব জেলা নেতাদের নিয়ে গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রস্তুতি সভা করেছেন। সরকার পতন আন্দোলনে সারা দেশের শ্রমজীবী মানুষকে সম্পৃক্ত করতে এ কর্মসূচি।
গত বছরের ১০ ডিসেম্বর বিএনপি রাজধানীর গোলাপবাগে সরকার পতনে ১০ দফা দাবি ঘোষণা করে। এরপর সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে ৩০ ডিসেম্বর থেকে রাজপথে আন্দোলন শুরু করে। সর্বশেষ গত ১২ জুলাই নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশ থেকে সরকার পতনের এক দফার কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।
আন্দোলন-সংগ্রাম নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের শঙ্কা ও বিভিন্ন বক্তব্যের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিগত কয়েকটি আন্দোলন পর্যালোচনা করে কোথায় কোথায় ঘাটতি আছে তা বিশ্লেষণ করে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। ইতিমধ্যে সাবেক প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের (সাবেক আমলা) ব্যবহার করা শুরু হয়েছে। সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের একটা অংশ যারা বিএনপিতে যোগদান করেছেন তারাসহ অন্য যারা আছেন তাদের সবাইকে সক্রিয় করা হচ্ছে।’
বগুড়া থেকে রাজশাহী অভিমুখে তারুণ্যের রোডমার্চের উদ্বোধনকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে তারা মানুষের আস্থা হারিয়েছে। তারা সাধারণ মানুষের কথা না ভেবে লুটপাটে ব্যস্ত। চোর চোর এত বড় চোর যে চুরি করে তারা দেশকে ফোকলা করে দিয়েছে।
গতকাল রবিবার বেলা সোয়া ১১টায় বগুড়া সদরের এরুলিয়ায় এক দফা দাবিতে তারুণ্যের রোডমার্চ বগুড়া টু রাজশাহীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশের টাকা চুরি করে বিদেশে পাঠায়, বিদেশে বাড়িঘর করেছে। তাদের ব্যক্তিগত সব কর্মকান্ড বিদেশে। সবচেয়ে বড় অধিকার চুরি করেছে, আমাদের ভোটের অধিকার। ২০১৪ সালে চুরি করেছে, ২০১৮ সালে চুরি করেছে, আবারও তারা ২০২৪ সালে চুরি করে পার পেতে চায়। কিন্তু এ দেশের মানুষ এবার আর ভোট চুরি করতে দেবে না। এর আগে আমরা বলেছি, তা মানুষ বিশ্বাস করেনি, এখন সারা পৃথিবীর মানুষ তা বিশ্বাস করে। বাংলাদেশের বিগত দুটি নির্বাচন হয়নি। যদি ঠিকঠাক মতো জনগণ ভোট দিতে না পারে, তাহলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না।’
তিনি বলেন, ‘বিরোধী দল যাতে ভোটে আসতে না পারে, সে জন্য মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার হয়রানি করা আগেই শুরু করেছে। আমাদের দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, গণতন্ত্রের জন্য যিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন, সেই নেত্রীকে আজ মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দি করে তাকে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়ার কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে না। ডাক্তাররা বলেছেন তাকে বাঁচাতে হলে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করতে হবে। আর সেই চিকিৎসা আমাদের দেশে নেই। বিদেশে নিয়ে যেতে হবে। আমরা বারবার বলেছি, কিন্তু এই সরকার রাজি নয়। আপনারা দেখেছেন কীভাবে সাঈদী সাহেবকে কারাগারে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল আমাদের রোডমার্চ শুরু হয়েছে রংপুর থেকে। আমি বগুড়ার যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এই তরুণরা আসল কাজ শুরু করেছে। তারা ঘুরে ঘুরে সারা বাংলাদেশের মানুষকে জানান দিচ্ছে। তারা মানুষকে জাগিয়ে তুলতে শুরু করেছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কেউ আমাদের অধিকার দিয়ে যাবে না, আমাদের অধিকার নিয়ে নিতে হবে। তাই এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে আমাদের। পথে-ঘাটে, মাঠে-ময়দানের সবখানে তাদের পরাজিত করতে হবে। আমরা এই রোডমার্চ শুরু করেছি। আমাদের দাবি একটাই আমাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দাও আর ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করো। তা ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না, সংসদ বিলুপ্ত করো। আর নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করো। শেয়ালের কাছে মুরগি দিলে কী অবস্থা হয় তা জানেন না, তা আবার হবে। আমাদের কথা পরিষ্কার, এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনা কবে যাবি।’
গতকাল দুপুরে তারুণ্যের রোডমার্চ কর্মসূচি বগুড়া থেকে রাজশাহী যাওয়ার পথে আদমদীঘি উপজেলায় পথসভা করে। সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে সারা দেশের তরুণ সমাজ এবার জেগে উঠেছে। তাই এ সরকারের পতন ছাড়া আমরা আর ঘরে ফিরব না।’ তিনি বলেন, ‘বারবার শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের দাবিগুলো তুলে ধরেছি। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। নির্বাচন হলে জনগণ ভোট দিতে পারে না, ভোট চুরি হয়ে যায়, ডাকাতি হয়ে যায়। সেই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া যায় না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং নতুন করে নির্বাচন কমিশন গঠন না করলে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেব না আমরা।’ বাংলার মাটিতে আর কোনো পাতানো নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সেই নির্বাচন প্রতিহত করা হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।
গতকাল রাত পৌনে ৮টার দিকে রাজশাহী ঈদগাহ মাঠের সামনের রাস্তায় পৌঁছায় রোডমার্চটি। এ সময় সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সরকার আবারও নির্বাচন নিয়ে পাতানো খেলায় মেতে উঠেছে। আজকে বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রশ্ন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে কি না, তার প্রশ্ন। আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে টিকে থাকতে পারব কি না, সেই প্রশ্ন আজকে জাতির সামনে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই সরকার আমাদের সব অর্জন ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা রাষ্ট্রের যে স্তম্ভগুলো আছে আদালত, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, পার্লামেন্ট সবকিছু তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। এই দেশকে তারা সুপরিকল্পিতভাবে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, রাজশাহীর চারঘাটের ওসির বক্তব্য ভাইরাল প্রসঙ্গে এই প্রশাসনকে সরকার যে তার নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছে তার একটি নমুনা রাজশাহীর চারঘাটের ওসির বক্তব্য। ওসি নিজের মুখে বলেছেন, তাকে ভোট করার জন্য এখানে আনা হয়েছে। এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, এটি তার একটি নমুনা।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএরপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এ ছাড়া বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা প্রমুখ। গতকাল তারুণ্যের রোডমার্চ কর্মসূচির সবশেষ সমাবেশ ছিল রাজশাহীতে।
বিএনপির ‘তারুণ্যের রোডমার্চে’ অংশ নিতে বগুড়ায় যাওয়ার পথে নাটোরে একটি মাইক্রোবাসে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের ডালসড়ক এলাকায় আগুন দেওয়ার এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের একটি দল সেখানে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ছাড়া গতকাল সকালে নাটোর শহর ও সদর থানার বিভিন্ন স্থানে হামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের কমপক্ষে ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন দলটির নেতারা।
নাটোর জেলা বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের ডালসড়ক এলাকায় মাইক্রোবাসে আগুন দেওয়ার সময় গাড়িতে থাকা নেতাকর্মীদের ধারালো বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে কোপানোর পাশাপাশি মারধর করা হয়। খবর পেয়ে নাটোর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে গাড়ির আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এর আগে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে সদর থানার তেবাড়িয়া হাট এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের বহনকারী আরেকটি গাড়িতে হামলা চালিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নাটোর-ঢাকা মহাসড়কে সদর থানার সৈয়দ মোড় এলাকায় প্রায় একই সময়ে হামলা চালানো হয়। আহত হন লালপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল মজিদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আনোয়ারুল ইসলাম, কাবিল উদ্দিন ও যুবদল নেতা মজনু পাটোয়ারী।
নাটোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বগুড়ায় তারুণ্যের রোডমার্চে অংশগ্রহণের জন্য নাটোর সদরসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিল। পথে আওয়ামী লীগের লোকজন পথরোধ করে গাড়িতে আগুন জ¦ালিয়ে দেয় এবং তাদের মারধর করে।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালকুদার দুলু অভিযোগ করে বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই ভোর থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের ওপরে হামলা করা হয়েছে। হামলায় দলের ৩০-৩৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা এসব হামলা করেছে।’
তবে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, তাদের নেতাকর্মীরা কারও ওপরে কোনো হামলা বা অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়নি।
নাটোর সদর থানার ওসি নাছিম আহম্মেদ বলেন, ‘গাড়িতে আগুন লেগেছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। গাড়ির আগুন নেভানো হয়েছে। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
এদিকে পুড়িয়ে দেওয়া মাইক্রোবাসের মালিক রফিকুল ইসলামের দাবি, নওগাঁয় বিয়ের জন্য কনে দেখতে যাওয়ার কথা বলে মাইক্রোবাসটি ভাড়া করা হয়েছিল। সকালে বগুড়া হয়ে নওগাঁয় যাওয়ার সময় তার গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে গাড়িটি পুরোপুরি পুড়ে গেছে।
ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিল এখন মৃতপ্রায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে না পারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র সরে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা ঘোরানো মতিঝিলে আবাসিক ভবন, শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান তৈরি না হলে দেশের প্রধান এই বাণিজ্যিক অঞ্চল প্রাণ হারাবে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাদের মতে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় অবদান রয়েছে মতিঝিলের টাকার। শুধু তা-ই নয়, মতিঝিলে উপার্জিত অর্থে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডাসহ আরও অনেক দেশে। এখানকার উপার্জিত টাকা অনেকে জমা রেখেছেন সুইস ব্যাংকেও। শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মতিঝিলে। এ যেন মা কাঁকড়ার আত্মত্যাগের গল্প। মা কাঁকড়া বাচ্চাদের আগলে রাখে বুকের ভেতর; যেদিন বাচ্চাগুলো বের হয়ে আসে, সেদিন খোলস ছাড়া মা কাঁকড়ার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। মা কাঁকড়ার মতো দুঃখী ও ত্যাগী বাণিজ্যিক মতিঝিল।
ষাটের দশকে মতিঝিলে গড়ে ওঠে দেশের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট-সিবিডি)। সেই থেকে এখনো দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল মতিঝিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে সরকারি ৮টি, বেসরকারি ৪৫টি এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে ৮টি। এ ছাড়া ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৮১টি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের বেশির প্রধান কার্যালয় চলে গেছে কারওয়ান বাজার, গুলশান-বনানী ও উত্তরায়। নতুন করে যেসব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাচ্ছে, সেগুলোর প্রধান কার্যালয় মতিঝিলের বাইরে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মতিঝিলের আশপাশে পরিকল্পিত কোনো আবাসিক এলাকা, অভিজাত হোটেল, কাজের ফাঁকে অবসর কাটানোর মতো উন্মুক্ত স্থান, শপিং কমপ্লেক্স না থাকায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুবিধার জন্য অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়গুলোও মতিঝিলের বাইরের এলাকা, অর্থাৎ কারওয়ান বাজার, গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে গড়ে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, মধুমিতা সিনেমা হল এবং ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এবং দিলকুশা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবন এবং বঙ্গভবনের পাশের এলাকাজুড়ে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল। বিশ্বের বাণিজ্যিক অঞ্চলের ভবনগুলো সুউচ্চ হয়ে থাকে। কিন্তু মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের পাশেই বঙ্গভবন। নিরাপত্তার কারণে বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর কোনো বহুতল ভবন করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, মতিঝিলের প্লটগুলোর ‘নন-রেসট্রিকটেড’ উচ্চতা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর সাড়ে চারতলার বেশি উচ্চতার ভবনের অনুমোদন মেলে না। ফলে মূল্যবান ওই প্লটগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারছেন না মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ জরাজীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণও রয়েছে কয়েকটি ভবন। একটির সঙ্গে অন্যটি লাগানো। দুটি ভবনের মাঝখানে উন্মুক্ত জায়গা নেই বেশিরভাগ ভবনের। দিলকুশা এলাকার বঙ্গভবন লাগানো ভবনগুলোর মাঝখানেও কোনো ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, মতিঝিল এলাকার ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে। ভাঙাচোরা এবড়োখেবড়ো সড়ক। সড়ক বিভাজকগুলো শ্রীহীন। এগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়নি। প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলে মতিঝিলের আরও করুণ দশা চোখে পড়ে। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার সড়কের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে চটের ছালা দিয়ে ঘেরা খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান এবং নানা পণ্যের অস্থায়ী দোকান। সামান্য বৃষ্টিতে মতিঝিল এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে থাকে পানির নিচে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত। ডিএসসিসি এলাকার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে। খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে মূল্যায়ন করলে মতিঝিল ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। যদিও এটা মানতে নারাজ ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি।
মতিঝিল এলাকার বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিল এলাকার সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএসসিসি। পরিত্যক্ত প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মতিঝিলের সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত ও সড়ক বিভাজকের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা দরকার। পর্যায়ক্রমে এ এলাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কাজ করবে ডিএসসিসি। তবে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের মূল সংস্কার ও আধুনিকায়নের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউককে সেসব বিষয় পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কাজে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা লাগলে করপোরেশন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলে রাজউক। রাজউক সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশক থেকেই মতিঝিলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যিক অঞ্চলে শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান থাকে। আর কাছাকাছি এলাকায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা থাকে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। অভিজাত মানের হোটেল পূর্বাণী গড়ে উঠলেও আশপাশে সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লোকজন গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় থাকেন। মতিঝিলের সৌন্দর্য নিশ্চিত করতে ও আধুনিকায়নে যেসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখা দরকার ছিল রাজউক ও সিটি করপোরেশন সেটা করেনি।
রাজউক সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধরা, উত্তরা। সেই সব এলাকা থেকে মানুষ মতিঝিলে আসেন। শহরের জনসংখ্যা বাড়ায় দিন দিন যানজট বাড়ছে। ওই সব এলাকা থেকে মতিঝিলে আসতে সড়কে এক থেকে দেড় ঘণ্টা চলে যায়। দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার মধ্যে ৩০ শতাংশ সময় সড়কে নষ্ট হচ্ছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে চিন্তা করেছে, তার কর্মস্থল এমন একটা জায়গায় হবে যা তার আবাসনের কাছাকাছি। মতিঝিল থেকে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও ভূমিকা রেখেছে।
কালের বিবর্তনে গুলশান হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক এলাকা। কারওয়ান বাজার, উত্তরায়ও গেছে কিছু। এসব জায়গায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমও সেখানে চলে গেছে। এসব এলাকার আশপাশে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় তাদের বসবাস। আবাসিক এলাকা ছাড়া, পৃথিবীর কোথাও শতভাগ জায়গা শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা অথবা একই শ্রেণির কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার হয় না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, নগর পরিকল্পনায় ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়, যেকোনো জায়গার ব্যবহার হবে ২৪ ঘণ্টা। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল কর্মচঞ্চল থাকে মাত্র ১২ ঘণ্টা। এরপর ওই জায়গার ব্যবহার হয় না। রাতে নীরব ও ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়।
তিনি বলেন, যে মতিঝিলে দিনের বেলায় হাঁটা যায় না; গাড়ির কারণে, যানজটে; সেই মতিঝিলে রাত ৮টার পরে আবার একাও হাঁটা যায় না; অনিরাপদ বোধ হয়। এ জন্য যারা দিনে বাণিজ্য করতে আসেন, তারা মতিঝিল এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন না। অন্যদিকে গুলশান-বনানী এলাকায় থাকলে তারা শপিংয়ে যেতে পারেন, কফি শপে যেতে পারেন। এসব কারণে সারা বিশ্বে ভূমির মিশ্র ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, মতিঝিল এলাকা যেহেতু ইতিমধ্যে তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলেছে, এ জন্য মতিঝিলের জমির শ্রেণিকে মিশ্র ব্যবহার হিসেবে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছে রাজউক। সংশোধিত ড্যাপে সে বিষয়ে নির্দেশনা রাখা হয়েছে। পৃথিবীর নগর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৫০, ৬০ বা ১০০ বছর অন্তর সেসব ঢেলে সাজানো হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়েই মতিঝিল এলাকাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে আবাসিকের বৈশিষ্ট্য দিতে হবে; কনডোমিনিয়াম গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি, ওয়াকওয়ে থাকবে। বসার ব্যবস্থা থাকবে। মতিঝিল এলাকায় ঝিল ছিল, ওই ঝিলকে প্রাধান্য দিয়ে পার্কটি তৈরি করা হবে। বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া মতিঝিলকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিলের আধুনিকায়ন ও ভূমির মিশ্র ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাহলে মতিঝিল সচল থাকবে; তবে ঢাকা শহর বড় হওয়ায় আরও বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে ওঠা ইতিবাচক। এসব পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার ছিল; কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে সে রকম হয়নি। এটা দুঃখজনক। এ জন্য শহরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ঢাকায় এখন অনেকগুলো বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সব অঞ্চলে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় বড় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় মতিঝিলে রয়েছে। তবে ব্যবসা গুলশান, বনানী, উত্তরা, গাজীপুরে সরে যাওয়ায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ব্যবসা কেন্দ্রের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।