
মামুনুর রশীদ। বরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্ব। মুক্তিযোদ্ধা, কর্ণধার আরণ্যক নাট্যদল। টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া গ্রামে জন্ম নেওয়া স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের এই মানুষটি একাধারে অভিনেতা, নাট্যকার, নির্দেশক এবং সংগঠক। কী নন তিনি? ছিলেন, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারম্যান। ১৯৮২ সালে প্রত্যাখ্যান করেছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার। অর্জন করেছেন একুশে পদক। এই আলোকিত মানুষটি এসেছিলেন দেশ রূপান্তর অফিসে। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুনের রুমে এক পশলা আড্ডার পর, ডিজিটাল স্টুডিওতে শুরু হলো জমজমাট আড্ডা। ছিলেন সহকারী সম্পাদক তাপস রায়হান, সিনিয়র সাব-এডিটর মোহসীনা লাইজু, হেড অব ইভেন্টস অ্যান্ড ব্র্যান্ডিং শিমুল সালাহ্উদ্দিন এবং সহ-সম্পাদক এনাম-উজ-জামান বিপুল। ক্যামেরার বাইরে ছিলেন ডিজিটাল প্রযোজক লিটু হাসান। দীর্ঘ সময় নিয়ে শুরু হলো আড্ডা। গ্রন্থনা তাপস রায়হান
শিমুল সালাহ্উদ্দিন : সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আপনার দীর্ঘ পথচলা আমরা জানি। অভিনয় অঙ্গনে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে আপনার কী অবদান, তাও আমরা আন্তরিকভাবে অনুভব করি। আপনার লেখালেখির সঙ্গেও আমরা পরিচিত। কিন্তু শুরুটা করতে চাইছি, শৈশব-কৈশোর থেকে।
মামুনুর রশীদ : আমার জন্ম মাতুলালয়ে। টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া গ্রামে। এটা ১৯৪৮ সালের কথা। তখন একটা রেওয়াজ ছিল কোনো নারী সন্তানসম্ভবা হলে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হতো বাবার বাড়ি। মার বয়স তখন খুবই কম। হাসতে হাসতে বললেন আমার সঙ্গে মায়ের বয়সের পার্থক্য মাত্র ১৪/১৫ বছর। এরপর তো আমাদের আরও ৮ ভাইবোন হয়েছে। বিদেশে অনেকে বলেন, তোমরা কয় ভাইবোন? আমি বলি ৯। তখন তারা বিস্মিত হয়ে বলেন, ওয়ান মাদার! এক মায়ের এতগুলো সন্তান! হা হা হা...। আসলে এটা তো তখন ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার। আমরা দেখেছি এক মায়ের ঘরে ১৬ সন্তানও হয়েছে। আমার পৈতৃক ভিটা হচ্ছে, পাশের উপজেলা ঘাটাইল। সেখানেও আমরা যেতাম। পাহাড়ের পাদদেশে ছিল আমাদের বাড়ি। অসম্ভব সুন্দর জায়গা। পাহাড়ে থাকত মান্দি আদিবাসীরা। ওরা অনেকেই আমার বন্ধু ছিল। তখন কিন্তু সেই পাহাড়ে বাঘ, জংলি শূকর, বানরসহ অনেক প্রাণী ছিল। এখন তো সেই পাহাড় নেই। সব কেটে ফেলা হয়েছে। সেই পাহাড়ই কিন্তু গাজীপুরেরটা। তখন আমাদের ওখানে চমৎকার একটা সাংস্কৃতিক পরিবেশ ছিল। যাত্রাপালা, থিয়েটার, গান কত ধরনের যে অনুষ্ঠান! আহা...। এর মধ্যেই আমার বেড়ে ওঠা।
শিমুল সালাহ্উদ্দিন : আপনার বাবা কোন পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন?
মামুনুর রশীদ : বাবা ছিলেন পোস্ট মাস্টার। যে কারণে বিভিন্ন জেলায় ঘুরতে হতো। আমার পড়াশোনা শুরু হয়, ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলা থেকে।
শিমুল সালাহ্উদ্দিন : অভিনয় জীবন শুরু হলো কবে থেকে?
মামুনুর রশীদ : স্কুল জীবনেই। ‘বিজয় সিংহ’ নাটকে। অবশ্য নারী ভূমিকা বর্জিত নাটক ছিল সেটি (প্রাণ খুলে হাসলেন)। সেই সিংহলের রাজপুত্র বিজয় সিংহের ছোট ভাই সুমিত্র সিংহের ভূমিকায়। এরপর হলো কি, নাটকে আমার বড় ভাই বিজয় সিংহের বিরুদ্ধে একটা বিদ্রোহ করার চেষ্টা করেছিলাম। যদিও সেটা ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু সামনে অনেক দর্শক দেখে আমি ঘাবড়ে যাই। ডায়ালগ বেশি না। কিন্তু সামনে অনেক কালো কালো মাথা দেখে, কোনোমেেত ডায়ালগ বলে মঞ্চ থেকে পালিয়ে এলাম। হা হা হা। কিন্তু আনন্দের জায়গা হচ্ছে, মায়ের শাড়ি পরে কিন্তু তখন ধূতি বানিয়েছিলাম। এরপর শরীরে রাজপুত্রের পোশাক। মেকাপ দিয়েছিলেন, আমাদের গৌর দা। তিনি যাত্রাদলে নারী চরিত্রে অভিনয় করতেন। আমার মুখে এমন কড়া মেকাপ দিয়েছিলেন, সেটা জামা-গেঞ্জিতে লেগে যায়। সেভাবেই আমি গ্রামে ঘুরতাম। চাইতাম, কেউ জিজ্ঞাসা করুক ঐখানে দাগ কেন? যাতে বলতে পারি নাটকে অভিনয় করেছি! হা হা হা হা হা হ...। (সব আড্ডাবাজ হেসে উঠলেন)
শিমুল সালাহ্উদ্দিন : কিন্তু সিরিয়াসলি অভিনয়ের সঙ্গেই জীবন জড়িয়ে নেবেন সেটা ভাবলেন কবে?
মামুনুর রশীদ : বাল্যকালেই আমি অনেক যাত্রাপালা দেখতাম। সেখানে অভিনেতাদের যে শক্তি ছিল, সেটা কল্পনা করা যায় না। আমার একটা প্রেরণার জায়গা আছে। একবার সোহরাব-রুস্তম যাত্রাপালা দেখতে গেছি। ওটার শেষ দৃশ্যে দেখা যায় সোহরাব পিতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। কিন্তু ঘটনাক্রমে রুস্তমের সঙ্গে যুদ্ধ লেগে গেল। তো সোহরাবের মা, তার শরীরে একটা মাদুলী বা বাজুবন্দ পরিয়ে দিয়েছিল। বলেছিল তোমার বাবার সঙ্গে কখনো দেখা হলে বলবে, এটা আমার মা দিয়েছে। যাত্রার দৃশ্যে দেখা গেল তাদের মল্লযুদ্ধ হচ্ছে। একজন এসেছে ইরান থেকে আরেকজন তুরান। মল্লযুদ্ধে রুস্তম নিচে পড়ে গেল। সোহরাব ভাবল একজন বয়স্ক লোক, তাকে একটা সুযোগ দিই। দ্বিতীয় দিন যখন আবার যুদ্ধ হয়, তখন সোহরাব নিচে পড়ে গেল। কিন্তু রুস্তম তাকে খঞ্জন দিয়ে হত্যা করে। একসময় সে সোহরাবের হাতে সেই মাদুলী দেখতে পায়। মনে পড়ে, তার স্ত্রীর কথা। পরিষ্কার হয় সব। এ যে তারই সন্তান! তখন তিনি চিৎকার করে বলছেন আকাশ তুমি বিদীর্ণ হও, মাটি তুমি দুভাগ হয়ে যাও। বাতাস তুমি রুদ্ধ হও। সেই দৃশ্যটা এত চমৎকার! মিউজিক, লাইট, বিবেকের গান সব মিলিয়ে একটা করুণ আবহ। তখন ভোর হয়ে গেছে। দর্শক সব কাঁদছে। একসময় পালা শেষ হলো। কিন্তু আমার কৌতূহল হলো, এত লম্বা-চওড়া বীর এদের আমি দেখব। মেকাপ রুমে গিয়ে দেখি, তারা দুজনে পোশাক খুলে গেঞ্জি পরে বিড়ি খাচ্ছে। একজন হচ্ছে ৫ ফুট ৪ আরেকজন ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। কিন্তু মঞ্চে মনে হচ্ছিল একেকজন ৬ ফুট লম্বা। তখন আমার মাথার মধ্যে একটা বিষয় ঘুরপাক খেতে থাকল। বাস্তব জীবনে তারা কত সাধারণ। কিন্তু তারা যখন মঞ্চে উঠছে, কী অসাধারণ! যা বলছে, তাই বিশ^াস করছি। কখনো হাসাচ্ছে, কখনো কাঁদাচ্ছে। অথচ বাস্তব জীবনে কত সাধারণ মানুষ! তখনই আমি অভিনয়ের শক্তি সম্পর্কে টের পেলাম। পাশাপাশি মনে হলো, এটা লিখেছেন কে? পেছনের শক্তি তো তিনিই। তখন একদিন বাবাকে বললাম বাবা, নাটকের বিভিন্ন বই আমি পড়তে চাই। তখন বাবা কলকাতা থেকে কিছু বই এনে দেন। পড়তে পড়তে অনেকক্ষণ ভাবলাম। একসময় মনে হলো, আমিও নাটক লিখব।
মোহসীনা লাইজু : সেই সময় আপনার কত বয়স?
মামুনুর রশীদ : সম্ভবত এইট-নাইনে পড়ি। কিন্তু তখন লিখিনি। যখন ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি, তখন কলেজ বার্ষিকীতে প্রথম নাটক লিখি। একজন শিক্ষক এটা পরিচালনা করলেন। নাটকটা খুব জনপ্রিয় হলো। নামটা ছিলমহানগরীতে একদিন। মনে হলো, আমিও নাটক লিখব। এরমধ্যেই টেলিভিশন এলো। তখন এটা বিশাল বিষয়। এরপর তো পলিটেকনিকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং। তারপর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ করি। টেলিভিশনের নাটকে লেখা শুরু করলাম ১৯৬৮ সাল থেকে। ডিআইটিতে, আব্দুল্লাহ ইউসুফ ইমাম নামের একজন প্রযোজক ছিলেন। তিনি এসেছেন চলচ্চিত্র থেকে। তখন আব্দুল্লাহ আল-মামুন, মুস্তাফা মনোয়ার, কেরামত মাওলা, মহিউদ্দিন ফারুকসহ অনেকে ছিলেন। রাত-দিন তাদের সঙ্গেই থাকি। তখন আব্দুল্লাহ আল মামুন একদিন ভাবলেন, শহীদুল্লা কায়সারের ‘সংশপ্তক’ উপন্যাস তিনি প্রযোজনা করবেন। আমাকে নাট্যরূপ দিতে হবে! বয়স তখন আর কত, ২১/২২? তখন তো শহীদুল্লা কায়সার আমার কাছে একজন স্বপ্নের মানুষ। তখনো কিন্তু উপন্যাসটা পড়িনি। একদিন শহীদুল্লা কায়সারের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। দেখলাম, ছোটখাটো একজন মানুষ। এরপর আবার জহির রায়হান! সেই কায়েৎটুলির বাসায় গিয়ে দেখলাম, অতি সাধারণ একজন মানুষ। যা ভেবেছিলাম, একবারেই তার উল্টো। তখন তিনি দৈনিক সংবাদের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক। কিছুদিন আগেই জেল খেটে এসেছেন। আমার দিকে তাকালেন। হাত নাচিয়ে বললেন করো, দেখি...। এরপর তো নাটক হলো। একদিন তিনি এলেন, টেলিভিশনে। বললেন বাহ, নাটকে তোমরা এইরকমও পারো! এরপর তো নতুন করে আবার বিটিভিতে হয় এই নাটক। তখনো প্রযোজক ছিলেন আবদুল্লাহ আল মামুন। সংশপ্তক নাটকে তখন আমি অভিনয় করি। এরপর একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার উদ্দেশে আগরতলা হয়ে কলকাতায় চলে যাই। সেখানে যুক্ত হই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে।
শিমুল সালাহ্উদ্দিন : কাদের পেলেন, সেখানে?
মামুনুর রশীদ : সৈয়দ হাসান ইমাম, মুস্তাফা মনোয়ার, কামাল লোহানী, বাদল রহমান, আশরাফুল আলম, আলী যাকের, অজিত রায়, শাহীন সামাদ, আব্দুল জব্বারসহ অনেককেই পেলাম।
তাপস রায়হান : স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কী ধরনের কাজ ছিল?
মামুনুর রশীদ : নাটক লিখতাম, প্রযোজনা করতাম।
শিমুল সালাহ্উদ্দিন : স্বাধীন বাংলায় প্রচারিত আপনার লেখা কোনো নাটকের নাম মনে আছে?
মামুনুর রশীদ : হ্যাঁ। মৃত্যুহীন প্রাণ, চাঁদের তলোয়ার। আর মুক্তির ডায়েরি তো সিরিয়াল। শেষ হয়নি। এরমধ্যেই দেশ স্বাধীন হয়ে গেল। তখন কলকাতার নাটক দেখে আমরা বিমোহিত হলাম। উৎপল দত্ত, শম্ভু মিত্র অভিনীত নাটক দেখতে দেখতে ভাবলাম, দেশে গিয়েও আমরা এমন করব। অস্থির হয়ে উঠলাম এই ভেবে যে, দেশ কবে স্বাধীন হবে? একসময় দেশ স্বাধীন হলো। সঙ্গে পেলাম বন্ধু আলী যাকেরকে। যিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ইংরেজি সংবাদ পাঠ করতেন। আলী যাকেরকে আমি বলতাম দোস্ত।
তাপস রায়হান : স্বাধীন বাংলাদেশে আপনারাই তো প্রথম নাট্যদল গড়ে তোলেন?
মামুনুর রশীদ : হ্যাঁ। স্বাধীন দেশে এসেই আমরা নাটকের রিহার্সাল শুরু করলাম। মুনীর চৌধুরীর লেখা ‘কবর’। তখন কোন নাট্যদল থেকে হবে, কোথায় মঞ্চায়ন হবে কিছুই ঠিক হয়নি। কথায় কথায় টেলিভিশনে একদিন আবদুল্লাহ আল-মামুনকে নাট্যদলের বিষয়টা বললাম। তিনি বললেন- ‘আরণ্যক’ নাম দাও। সেটাই চূড়ান্ত হলো। ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে মঞ্চস্থ হলো কবর। নির্দেশনায় ছিলাম আমি। মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করলেন আলী যাকের। আমিও অভিনয় করলাম। এটাই ছিল আরণ্যকের প্রথম মঞ্চায়ন।
তাপস রায়হান : অনেকেই বলেন, বর্তমানে মঞ্চ আন্দোলন আগের মতো নেই। একইসঙ্গে বলতে হয় গ্রুপ থিয়েটারেও একটা অস্থিরতা চলছে। এই সংগঠনে আপনি একসময় চেয়ারম্যান ছিলেন। এ বিষয়ে কিছু জানতে চাইছি।
মামুনুর রশীদ : আমাদের দেশে দীর্ঘদিনের নাট্যঐতিহ্য আছে, নাট্য আন্দোলনের ইতিহাস আছে। আমাদের আন্দোলনের ফলেই কিন্তু নাটক থেকে সেন্সর প্রত্যাহার হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকে নাটকের বিষয় সন্নিবেশিত হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিভাগ হয়েছে। থিয়েটার কমপ্লেক্স হয়েছে। মনে রাখতে হবে, কোনো প্রতিষ্ঠানে যখন নির্বাচন প্রথা চালু হয়, তখনই সৃষ্টি হয় বিভাজনের। গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনও এটার থেকে মুক্ত নয়। সমস্যা হচ্ছে, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের যিনি চেয়ারম্যান তিনিই আবার শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক। এটা তো হয় না। তিনি সরকারের সঙ্গে কোনো বার্গেনিং করতে পারবেন না! এটা তাকে কোনোভাবেই বোঝানো যাচ্ছে না। ফলে নাট্যকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে। আমাদের অনেক ধরনের দাবি-দাওয়া আছে। অভিনয়কে পেশা করার জায়গায় আমরা যেতে পারছি না। এটা করা খুব জরুরি। এর জন্যে শুধু লিয়াকত আলী লাকী নন, সমস্ত ব্যবস্থায়ই দায়ী। নাট্যকর্মীদের বিভিন্ন সংগ্রামে তাকে আমরা পাশে পাচ্ছি না!
শিমুল সালাহ্উদ্দিন : একদিকে লিয়াকত আলী লাকী শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক আবার বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের মহাসচিব। তিনি তাহলে সরকারের সঙ্গে বার্গেনিং কীভাবে করবেন? আর এই বিষয়টি আপনারা মেনে নিয়েছেন?
মামুনুর রশীদ : না না, মানিনি তো (হাসি)। মানিনি বলেই সমস্যা। তরুণ নাট্যকর্মীরা সম্মিলিতভাবে যেভাবে চাইবে, সেভাবেই হবে। আমরা যারা সিনিয়র আছি, তারা তাদের সঙ্গে একমত।
এনাম-উজ-জামান বিপুল : মূল সমস্যাটা কোথায়?
মামুনুর রশীদ : আসলে ফেডারেশনের ব্যাংক সিগ্নেটরি থাকেন ৩ জন। কিন্তু তিনি এবং অর্থ সম্পাদক মিলে অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচুর পরিমাণে টাকা তুলেছেন। প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর কোনো হিসাব নেই। এটা আবার চেয়ারম্যান জানেন না। একইসঙ্গে বিস্ময় লেগেছে, তাহলে ঐ ১ বছর চেয়ারম্যান কী করলেন? এটা কী করে হয়!
তাপস রায়হান : আপনার কি মনে হয়, আমাদের সমাজে একটি সাংস্কৃৃতিক প্রতিবিপ্লব হয়েছে?
মামুনুর রশীদ : আমাদের দেশের অভ্যুদয় হয়েছে, সুদীর্ঘ আন্দোলনের মাধ্যমে। এর একটা দর্শন আছে। এর সঙ্গে গভীরভাবে মিশে রয়েছে সাংস্কৃতিক চেতনা। এটা কিন্তু সেই ভারত ভাগের পরই শুরু হয়েছে। প্রথম হচ্ছে, ভাষা আন্দোলন। এটা শুধু ভাষার আন্দোলন ছিল না, আমি যে বাঙালি এবং এর মধ্যে কত বিস্তৃত বিষয় যে রয়েছে সেটা উপলব্ধি করা। সেই ১৯৫২ থেকে ষাটের দশক, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধ এ সমস্ত রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি একেকটা প্রবল সাংস্কৃতিক আন্দোলনও ছিল। যে কারণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন বাংলাদেশ একটি সাংস্কৃতিক রাষ্ট্র। সেই সাংস্কৃতিক রাষ্ট্রের চর্চা ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। ফলে কী হলো? এইসময়ে আমরা দেখতে পাই- আমাদের সংস্কৃতিচর্চা মানে জলসা, ওয়াজ মাহফিল, বোরখা-হিজাব এবং গ্রামে গ্রামে ইসলামি জলসা। কোথায় গেল আমাদের যাত্রাপালা, গান? ধর্মীয় বিষয়কে আমি অস্বীকার করছি না। অবশ্যই এগুলোও হবে। অনেক সময় তো ঈদ-শারদীয় পূজা একসঙ্গে হতো। কই, তখন তো কোনো সমস্যা হয়নি! স্কুলে মিলাদও হতো, সরস্বতী পূজাও হতো। এই যে সব ধর্মের সমন্বয়, সেটাই তো বাঙালিত্ব। সেই বাঙালিত্বের জায়গাটা গৌণ হয়ে গেছে। প্রেক্ষাপট ভিন্ন এবং বর্তমানে সেটা প্রকাশ্যে।
এনাম-উজ-জামান বিপুল : কোনো ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করছেন?
মামুনুর রশীদ : অবশ্যই। এটা তো প্রকাশ্যে। সব দেখা যাচ্ছে, কী হচ্ছে?
তাপস রায়হান : আচ্ছা। আবার অভিনয়ে আসি। আপনি মঞ্চে একরকম অভিনয় করেন, টিভি নাটকে একরকম আবার চলচ্চিত্রে আরেক রকম। নিজেকে আর কত ভাঙবেন?
মামুনুর রশীদ : (মুচকি মুচকি হাসছেন) বললেন দেখো, গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে সবগুলোর মধ্যেই একটা ঐক্য রয়েছে। অভিনয় তো একটা শিল্প। এটা শিখতে হয়। অভিনয়ে বৈচিত্র্য থাকবেই। আমার প্ল্যাটফর্ম আলাদা। রীতিই তো অন্যরকম। মঞ্চে যেমন অভিনয় করব, সেটা ক্যামেরার সামনে করব না।
এনাম-উজ-জামান বিপুল : আপনার অভিনীত অধিকাংশ নাটকের মধ্যে বারবার শ্রেণিসংগ্রামের বিষয়টি প্রকটভাবে দেখা দেয়। ব্যক্তি আপনিও কি তাই?
মামুনুর রশীদ : অবশ্যই দর্শনটা আমার। সেই যে প্রাচীন কথা সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। এটাকেই আমি ধারণ করি। আমার শিল্প যদি মানুষের কাজেই না লাগে, তাহলে করে কী লাভ?
মোহসীনা লাইজু : নতুন নাট্যকারদের নিয়ে কিছু বলবেন?
মামুনুর রশীদ : আজাদ আবুল কালাম, মাসুম রেজা, রতন সিদ্দিকী অনেক দিন থেকে কাজ করছেন। এরা তো নতুন না। আনন জামান, শুভাশিষ সিনহাসহ অনেকেই ভালো করছেন। সবার নাম মনে পড়ছে না।
তাপস রায়হান : আপনি অভিনেতা আলী যাকেরের খালু আবার তার বন্ধু। বিষয়টা একটু পরিষ্কার করবেন?
মামুনুর রশীদ : হা হা হা হা। পরিষ্কারের কী আছে? হ, আমি তার খালু! অর খালারে বিয়া করছি হা হা হা। না না, বিষয়টা হইলো, অর মার কাজিনকে আমি বিয়ে করেছি।
এনাম-উজ-জামান বিপুল : কতদিন বেঁচে থাকতে চান?
মামুনুর রশীদ : অনন্তকাল। হা হা হা।
তাপস রায়হান : আপনি একুশে পদক পেয়েছেন। কিন্তু বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন। কেন?
মামুনুর রশীদ : আসলে তখন নাটকে সেন্সরপ্রথা ছিল। তার প্রতিবাদে করেছিলাম।
মোহসীনা লাইজু : ব্যক্তিজীবন কিছুই জানা হলো না!
মামুনুর রশীদ : আমার এক ছেলে, এক মেয়ে। আর আছে স্ত্রী। এই তো সংসার। আমার মা কিন্তু এখনো বেঁচে আছেন।
এরপর মামুনুর রশীদ আবৃত্তি এবং অভিনয় করলেন। আমরা শুনছিলাম তন্ময় হয়ে। ততক্ষণে রাত হয়ে গেছে। সাঙ্গ হলো আড্ডা।
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।