
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নপর্যায়ে চট্টগ্রামের জন্য মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হলেও এখানকার সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করেন, এই মাস্টারপ্ল্যানগুলোর একটা বিরাট অংশই বাস্তবায়িত হয়নি। এই বিশ্বাসের শক্তিশালী একটা ভিত্তি আছে। মানুষ যে আকাক্সক্ষা নিয়ে মাস্টারপ্ল্যানের কার্যক্রমে অংশ নেন এবং এর সঙ্গে জড়িত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান যেসব সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখিয়ে পরিকল্পনাটি প্রণয়ন করে, বাস্তবে তার সঙ্গে মিলের চেয়ে অমিলই বেশি দেখা যায়। এর পেছনে অবশ্যই অনেক কারণ আছে।
আমি আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় দেখেছি, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সাধারণত স্থিত অবস্থার সার্ভে বা জরিপ কাজে অনেক সময় ব্যয় করে এই কথা বলে, এ জরিপটাই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে। কথাটি একশ ভাগ সত্য। আজ পর্যন্ত যত ধরনের আধুনিক পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে তার প্রায় সবগুলোই তারা ব্যবহার করে। অথচ বাস্তবে এই জরিপের ওপর ভিত্তি করে পরিকল্পনা-সংক্রান্ত প্রস্তাব গ্রহণের সময়, বিশেষ করে জোনিং নির্ধারণের সময় দেখা যায়, স্থিত অবস্থার জরিপে প্রাপ্ত অনেক তথ্য-উপাত্তই এখানে ব্যবহার করা হয় না। নয়তো খুব কম গুরুত্ব দেওয়া হয়।
মাস্টারপ্ল্যান প্রকৃতপক্ষে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি নয়। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠানের যেমন দায়িত্ব আছে, তেমনি অংশীজন হিসেবে গণমানুষেরও অনেক দায়িত্ব থাকে। মাস্টারপ্ল্যানে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলা হয়ে থাকে, এর মধ্যে অবকাঠামোনির্ভর প্রকল্পরাস্তাঘাট, বিপণিবিতান, আবাসিক বা বাণিজ্যিক প্লট ইত্যাদি যদিওবা বাস্তবায়িত হয়, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থে পার্ক, কমিউনিটি এরিয়া, স্কুল বা হাসপাতাল-জাতীয় প্রকল্প গ্রহণের উদাহরণ খুব কম। বাস্তবায়নের উদাহরণ আরও কম। অনেক ক্ষেত্রে অর্থ সংস্থানও একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেয়। এ ধরনের প্রকল্পের জন্য যেসব জমি চিহ্নিত করা হয় প্রকল্প গ্রহণ না করায় সেসব জমি সরকার অধিগ্রহণও করতে পারে না, আবার অনুমোদন পায় না বলে জমির মালিকরা কোনো স্থাপনা নির্মাণও করতে পারেন না। এর ফলে মাস্টারপ্ল্যান সমালোচনার মুখোমুখি হয়।
ভূমি ব্যবহার প্রস্তাবের ক্ষেত্রে অনেক সময় লক্ষ করা যায়, যেসব অনুমানের ভিত্তিতে কোনো অনুন্নত এলাকার স্থিত ভূমি ব্যবহার পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছিল, বাস্তবে সেগুলোর কোনোটাই ঘটেনি। ফলে সেই এলাকা কোনোভাবেই পরিবর্তিত ভূমি ব্যবহারকে ধারণ করতে সমর্থ হয় না। অথচ মাস্টারপ্ল্যানের প্রস্তাবের কারণে সেই এলাকা অনুন্নতই থেকে যায়। মানুষ এটাকে মাস্টারপ্ল্যানের ব্যর্থতা হিসেবে দেখে।
এ ছাড়া রাজনৈতিক বা প্রভাবশালীদের কারণেও অনেক সময় মাস্টারপ্ল্যানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন কাজ করতে দেখা যায়, যা চূড়ান্ত বিচারে মাস্টারপ্ল্যানের দুর্বলতা বলে মনে করা হয়।
লেখক : সিডিএর নগর পরিকল্পনা শাখার সাবেক প্রধান
চট্টগ্রাম মহানগরীর পতেঙ্গা স্টিল মিলস বাজারের সাগর পাড়ের খেজুরতলা থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত পুরো এলাকায় অসংখ্য আবাসিক স্থাপনা গড়ে উঠেছে। কিন্তু এসব স্থাপনার একটিও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) থেকে অনুমোদন পায়নি। এই এলাকার ভূমি কৃষি ও কমিউনিটি ফ্যাসিলিটি হিসেবে চিহ্নিত করা আছে, আগামীতে এই এলাকা পর্যটন খাত ছাড়া অন্য খাতে অনুমোদন দেওয়া হবে না বলে সিডিএর পরিকল্পনায় রয়েছে। কিন্তু অনুমোদন ছাড়াই স্থানীয় লোকজন ভবন গড়ে তুলেছে।
বাকলিয়ার বগার বিল এলাকা ছিল প্রাকৃতিক জলাধার। এই এলাকায় ব্যাপক হারে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন। ফলে পুরো বাকলিয়ায় এখন জোয়ারের পানি জমে যায় এবং বৃষ্টির পানি সহজে কর্ণফুলী নদীতে নামতে পারে না। সিডিএর মাস্টারপ্ল্যানে (মহাপরিকল্পনা) নর্দার্ন হিল (উত্তরের পাহাড়) নামে টাইগারপাস থেকে উত্তর দিকে ফয়’স লেক পার হয়ে আরও উত্তরের বিশাল পাহাড়গুলো সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে এসব এলাকার পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হয়েছে আবাসিক এলাকা।
নগরজুড়ে এমন অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। কোথাও পরিকল্পনায় ছিল এক ধরনের ভূমি ব্যবহার, বাস্তবে হচ্ছে অন্য ধরনের। এমন উন্নয়নের কারণে অপরিকল্পিত নগরায়ণ বাড়ছে এবং বাড়ছে নাগরিক দুর্ভোগ। এ বিষয়ে নগর বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নগর গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবেশকে অগ্রাহ্য করে কোনো উন্নয়ন বাস্তবসম্মত হয় না। চট্টগ্রামের আজকের পরিণতির জন্যও অপরিকল্পিত উন্নয়ন দায়ী। আর পরিকল্পনা নিশ্চিত করতে ‘প্ল্যানিং বডি’ (পরিকল্পনা সংস্থা) থাকতে হবে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও নগর সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিবেশ ও পরিকল্পনার জ্ঞানসমৃদ্ধ জনবল লাগবে। যারা পরিকল্পনা বোঝেন না, তাদের চেয়ারে বসিয়ে দিলে তো হবে না।’
মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে প্রয়োজন আলাদা পরিকল্পনা সংস্থা
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের একটি পরিকল্পনা সংস্থা থাকার কথা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছিলেন নগর-পরিকল্পনাবিদ ও ২০০৮ সালে ড্যাপ (ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান) প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত থাকা স্থপতি জেরিনা হোসেন। তিনি বলেন, ‘মাস্টারপ্ল্যান একটি চলমান প্রক্রিয়া। ১৯৯৫ সালের মাস্টারপ্ল্যান ও ২০০৮ সালের ড্যাপের (ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান) আলোকে পরবর্তী মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কথা। একই সঙ্গে শুধু মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করলেই হবে না, মাস্টারপ্ল্যানের গাইডলাইনের (মূলনীতি) আলোকে প্রকল্প গ্রহণ ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দক্ষ জনবলও প্রয়োজন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, সে ধরনের জনবল কাঠামো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নেই।’
তিনি আরও বলেন, একটি প্ল্যানিং বডি থাকতে হবে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোতেও (সিটি করপোরেশন, রেলওয়ে, ওয়াসা, বন্দর কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবিসহ সব সংস্থা) প্ল্যানিং সম্পর্কিত জনবল থাকতে হবে। এই সংস্থাগুলো প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান প্ল্যানিং বডির সঙ্গে আলোচনা করে নেবে। আর তা মনিটরিং করবে সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্ল্যানিং প্রতিনিধি। তবেই মাস্টারপ্ল্যান কার্যকারিতা পাবে।
জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ নিয়ে ভাবতে হবে
চট্টগ্রাম শহরে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। আর এজন্য এ শহরের প্রাকৃতিক জলাধারগুলো ভরাট করে আবাসন প্রকল্প নেওয়াকে দায়ী করছেন পরিকল্পনাবিদরা। এ বিষয়ে স্থপতি জেরিনা হোসেন বলেন, ‘সিডিএ বাকলিয়ার কল্পলোক ও অক্সিজেন-কুয়াইশ রোডে অনন্যা আবাসিক এলাকা নিয়েছে গত ২০ বছরে। কিন্তু এই দুই আবাসিক এলাকার ভূমি ছিল শহরের জল ধারণ করার জায়গা। তাহলে এখন বর্ষা মৌসুমে পানি কোথায় যাবে? যথারীতি মানুষের ঘরে ও রাস্তায় জমে দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে।’ তিনি আরও বলেন, এজন্য ঢাকার ধানম-ির মতো লেক তৈরি করা প্রয়োজন ছিল। যত দিন পর্যন্ত পানি ধারণের জন্য জলাধার করা না হবে, তত দিন জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ থাকবে।
চট্টগ্রাম নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করে বর্তমানে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের অন্যতম সমস্যা হলো ড্রেনেজ প্ল্যান। ড্রেনেজ প্ল্যানের সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ সমাধান করতে হবে।’
মূলত অক্সিজেন-কুয়াইশ এলাকায় কৃষিজমি ভরাট করে গড়া অনন্যা আবাসিক এলাকাটি বর্ষা মৌসুমে পানির আধার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু সিডিএ এখানে ১৭০০ প্লটের বিশাল আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলায় এখন টানা বর্ষণে অক্সিজেন-বালুচরা এলাকা জলমগ্ন থাকে। কিন্তু ১৯৯৫ সালের মাস্টারপ্ল্যানে এই এলাকায় আবাসন প্রকল্প করার প্রস্তাব ছিল না।
পাহাড় ও উন্মুক্ত স্থান রক্ষায় প্রয়োজন পরিকল্পনা
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহর ধীরে ধীরে কংক্রিটের এক পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত হচ্ছে। এখনই পাহাড় ও উন্মুক্ত স্থানগুলো রক্ষা করা না গেলে পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হবে।’
মাস্টারপ্ল্যানে পাহাড় রক্ষার কথা বলা হলেও পাহাড় কেটে গড়ে তোলা সমতল ভূমিতে ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে সিডিএ। আর এতে পাহাড় কাটাকে পরোক্ষভাবে আরও উৎসাহিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে নগর-পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশবাদীদের বক্তব্য হলো, চট্টগ্রামের পুকুর ও জলাশয়গুলো রক্ষা করতে হবে। একই সঙ্গে পাহাড়গুলো যে অবস্থায় রয়েছে সেই অবস্থায় রাখতে হবে। অন্যথায় নগর পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে। দীর্ঘদিন চট্টগ্রামের পরিবেশ এবং ১১ জুনকে পাহাড় রক্ষা দিবস হিসেবে ঘোষণার জন্য আন্দোলন করে আসছে পরিবেশকর্মী শরীফ চৌহান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের বৈচিত্র্য হলো পাহাড়। এখন এই পাহাড় যদি না থাকে তাহলে চট্টগ্রামের সঙ্গে অন্যান্য শহরের পার্থক্য কী? ২০০৭ সালের ১১ জুন পাহাড়ধসে ১২৮ জনের প্রাণহানির পর আমরা পাহাড় রক্ষার জন্য জনমত তৈরি করার পাশাপাশি প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছি। এই পাহাড়গুলো রক্ষা করা না হলে চট্টগ্রামে পরিবেশগত বিপর্যয় নেমে আসবে।’
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নগর-পরিকল্পনাবিদ ও প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা একটি যুগোপযোগী মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করতে চাই। আর এজন্য সব সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করছি। একইসঙ্গে এই মাস্টারপ্ল্যান যাতে কার্যকর হয় সেজন্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংস্থার (সিটি করপোরেশন, রেলওয়ে, বন্দর কর্তৃপক্ষ, ওয়াসা) নিজস্ব মাস্টারপ্ল্যানগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাস্টারপ্ল্যানে যুক্ত হয়ে যাবে। এতে মাস্টারপ্ল্যান আরও কার্যকর হবে।’
কিন্তু মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন ও তা মনিটরিং কীভাবে করা হবেএমন প্রশ্নের জবাবে মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএর উপ-প্রধান নগর-পরিকল্পনাবিদ আবু ঈসা আনছারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা এজন্য জনবল কাঠামোতে পরিবর্তন আনছি। সিডিএর একটি দক্ষ জনবল টিম থাকবে। এ ছাড়া মাস্টারপ্ল্যানে কোন সংস্থার কী কাজ তা নির্ধারিত থাকবে। কোনো কাজ বাস্তবায়ন না হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থা জবাবদিহি করবে।’
উল্লেখ্য, ২০২০-৪১ সালের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের জুনে। ৩৩ কোটি ৩২ লাখ ৮৮ হাজার টাকার এই মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ আগামী বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে ১৯৯৫-২০১৫ সালের ২০ বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যানের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল ১৯৯৯ সালে।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়সাধন করে মাস্টারপ্ল্যানের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে চট্টগ্রামকে একটি টেকসই মহানগরীতে পরিণত করতে হবে।
ব্যারিস্টার মহীবুল হাসান চৌধুরী নওফেল
শিক্ষা উপমন্ত্রী
মাস্টারপ্ল্যানে কমপক্ষে ২২ শতাংশ খোলা জায়গা (খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, বনায়ন ও বিনোদনপার্ক) রাখা প্রয়োজন। একইসঙ্গে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা না গেলে এই শহর অরাজকতা এবং জীর্ণ শহরে পরিণত হবে।
এম এ লতিফ
সংসদ সদস্য, চট্টগ্রাম-১১
মাস্টারপ্ল্যান একটি শহরের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি দলিল, প্ল্যানিংকে যেকোনো কর্মকা-ের ‘হাফ অফ দ্য ওয়ার্ক’ বলা হয়। সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা এবং সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ছোট-বড় উন্নয়ন পর্যালোচনা করে জাতীয় উন্নয়নকে যুগোপযোগী করে ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে মাস্টারপ্ল্যান শতভাগ কার্যকর হয়।
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান
চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ
স্মার্ট নগরীর জন্য স্মার্ট মাস্টারপ্ল্যান প্রয়োজন। কিন্তু তা প্রণয়ন করতে গিয়ে আগের (১৯৯৫ সালের মাস্টারপ্ল্যান) প্ল্যানকে নতুন করে সংযোজন-বিয়োজন করা যেতে পারে। একই সঙ্গে তা বাস্তবায়নও নিশ্চিত করতে হবে।
মাহবুবুল আলম
প্রেসিডেন্ট, চিটাগাং চেম্বার
সাবেক চেয়ারম্যান, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম কেন্দ্র
নগরীতে অবস্থিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য স্বল্প ভাড়ার বাসস্থানের নীতিমালা মাস্টারপ্ল্যান রাখা প্রয়োজন। একইসঙ্গে পূর্ববর্তী জিআইএসের তথ্য পুনরায় পর্যালোচনা করে আরও নির্ভুল করা দরকার।
প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার
সদস্য, সিডিএ’র নগর উন্নয়ন কমিটি
টানেলের মাধ্যমে চট্টগ্রাম ‘ওয়ান সিটি টু টাউনের’ মেগাসিটিতে রূপান্তর হতে যাচ্ছে। তাই এ শহরের মাস্টারপ্ল্যান হওয়া উচিত দীর্ঘমেয়াদি। তবে দীর্ঘমেয়াদি মাস্টারপ্ল্যানের পাশাপাশি প্রয়োজনে তা পুনর্মূল্যায়নের (রিভিউ) সুযোগ রাখতে হবে।
গিয়াস উদ্দিন
প্যানেল মেয়র, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন
মাস্টারপ্ল্যানে শিশুদের বিনোদনের জন্য পর্যাপ্ত স্থান সংরক্ষণ, পাহাড় ও জলাধার রক্ষা করতে হবে। একইসঙ্গে মাস্টারপ্ল্যানের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে (চসিক) সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
মোবারক আলী
৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর
রেজাউল করিম চৌধুরী
মেয়র, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন
দেশ রূপান্তর : এবারের মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে আপনাদের (সিটি করপোরেশন) সঙ্গে কি সিডিএ বৈঠক করেছে?
রেজাউল করিম চৌধুরী : মাস্টারপ্ল্যানের কোথায় কী হবে তা নিয়ে আমাদের সঙ্গে একটি বৈঠক হয়েছে। ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সঙ্গেও মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন কমিটি বৈঠক করছে। এ ধরনের বৈঠক আগে কখনো হয়নি বলে শুনেছি। এবার তাদের (সিডিএ) এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
দেশ রূপান্তর : আগের মাস্টারপ্ল্যানে সমস্যা কোথায় ছিল বলে মনে করেন?
রেজাউল করিম চৌধুরী : একটি মাস্টারপ্ল্যান করতে গিয়ে অনেক ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। সবকিছু দেখভাল করে যে প্ল্যানটি করা হয় তা সবাইকে মেনে চলা উচিত। কিন্তু এখানে সেই প্ল্যান মেনে ভবন নির্মাণ কিংবা নগরায়ণের ব্যত্যয় ঘটেছে।
দেশ রূপান্তর : কিন্তু এই প্ল্যানে অনেক ভুল ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি খোদ সিডিএও এই প্ল্যান অনুসরণ করেনি।
রেজাউল করিম চৌধুরী : এটা একটি অন্যতম ফ্যাক্টর। বিশাল এই প্ল্যান করতে গিয়ে কিছু ভুলত্রুটি থাকতে পারে। সেই ভুলগুলো শনাক্ত হওয়ার পর সংশোধনের ব্যবস্থাও থাকতে হবে। অন্যথায় এই প্ল্যানের ওপর মানুষের আস্থা থাকবে না। তবে প্ল্যান মেনে ভবন নির্মাণে আমাদের একমত থাকতে হবে।
দেশ রূপান্তর : তবে আগামীর প্ল্যানে নগরীর পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
রেজাউল করিম চৌধুরী : আগে ইতিমধ্যে আমার মতামত সিডিএকে জানিয়েছি। নগর পরিকল্পনায় চট্টগ্রামকে বিশ্বমানের নগর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যেভাবে পরিকল্পনা করা দরকার সেভাবে পরিকল্পনা করতে বলেছি। আর তা করতে গিয়ে নগরীতে উন্মুক্ত স্থান রাখা, পাহাড় ও জলাধারগুলো রক্ষাসহ পরিবেশের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। অন্যথায় চট্টগ্রাম ইট-পাথরের জঞ্জালের একটি শহরে পরিণত হবে।
দেশ রূপান্তর : নগর পরিকল্পনায় সিডিএ’র বর্তমান রুটিন কাজের মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কপোরেশনের সঙ্গে এখনই সমন্বয় করা যায় কোন কাজটি?
রেজাউল করিম চৌধুরী : সিডিএ ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিয়ে থাকে। কিন্তু ভবন নির্মাণের সময় আমাদের ফুটপাতও দখল করা হয়। এছাড়া ভবনের সামনের অংশ রাস্তার জন্য ছেড়ে দিয়ে (সারেন্ডার ল্যান্ড) বহুতল ভবনের অনুমোদন পেলেও সেই অংশ পরবর্তী সময়ে ভবন মালিক ব্যবহার করে। যদি ভবনের প্ল্যান স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর অবগত থাকতেন তাহলে সিটি করপোরেশনের জায়গা ভবন মালিক নিতে পারতেন না। এক্ষেত্রে সিডিএ ও সিটি করপোরেশন এখনই সমন্বয় করে কাজ করতে পারে।
দেশ রূপান্তর : আগামীর মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে আপনার পরামর্শ কী?
রেজাউল করিম চৌধুরী : অনেক কষ্ট করে এবং অর্থ খরচ করে একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন হতে যাচ্ছে। এই প্ল্যানটি যাতে বাস্তবায়ন হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
এম জহিরুল আলম দোভাষ
চেয়ারম্যান, সিডিএ
দেশ রূপান্তর : অতীতে মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠছে। এসব প্রশ্ন কি ঠিক আছে বলে মনে করছেন?
এম জহিরুল আলম দোভাষ : সঠিক। কোনো প্ল্যান যখন সঠিকভাবে করা হবে না, আর তা যখন মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হবে তখন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। চট্টগ্রাম মহানগরীর অতীতের মাস্টারপ্ল্যান নিয়েও যথারীতি এমন ঘটনা ঘটায় এখন প্রশ্ন উঠছে।
দেশ রূপান্তর : ১৯৯৫ সালে প্রণীত ২০ বছর মেয়াদি সেই মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে প্রশ্ন উঠল কেন?
জহিরুল আলম দোভাষ : আগেকার মাস্টারপ্ল্যান টেবিলে বসে বিএস শিটম্যাপ দেখে নির্ধারণ করা হয়েছিল। এই ভূমি এই কাজে, এখানে এটা করা হবে, ওখানকার ভূমি এ কাজের জন্য বরাদ্দ থাকবে। কিন্তু মাস্টারপ্ল্যান তো বিশাল একটি কাজ। সেসব এলাকার ভূমি এখন কী কাজে ব্যবহার হচ্ছে, আগামীতে ওই ভূমি ওখানকার মানুষ কীভাবে ব্যবহার চায় এর মধ্যে একটি সমন্বয় দরকার। অতীতের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে ভূমি মালিকদের যেমন মতামত নেওয়া হয়নি, তেমনিভাবে চট্টগ্রামে অনেকগুলো সরকারি সংস্থা রয়েছে, সেসব সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে পরিকল্পনা তৈরি করা হয়নি। যথারীতি তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
দেশ রূপান্তর : মাস্টারপ্ল্যান তৈরিতে এবার আপনি কোন পদ্ধতিতে এগোচ্ছেন?
জহিরুল আলম দোভাষ : মাস্টারপ্ল্যানের কার্যক্রম প্রথমে আটকে গিয়েছিল। আমি দায়িত্বে আসার পর মাঠপর্যায়ে প্লট বাই প্লট সার্ভের মাধ্যমে পরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ নিই। এজন্য উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন ড্রোন ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রামের সব সেবা সংস্থা ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করতে বলেছি। সবার সঙ্গে কথা বলে একটি বাস্তবধর্মী মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছি। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সেক্টরের বিজ্ঞজনদের সঙ্গে অংশীজন সভা করা হয়েছে। আরও ডিটেইল আকারে সভা করতে ওয়ার্ডপর্যায়েও বৈঠক করা হবে।
দেশ রূপান্তর : চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংস্থার নিজস্ব মাস্টারপ্ল্যান রয়েছে। সেসব মাস্টারপ্ল্যানের সঙ্গে আপনাদের মাস্টারপ্ল্যানের সমন্বয় কীভাবে ঘটাবেন?
জহিরুল আলম দোভাষ : অন্যান্য সংস্থার মাস্টারপ্ল্যানগুলো এই মাস্টারপ্ল্যানে যুক্ত করা হবে। তাতে তাদের পরিকল্পনাগুলোও থাকবে। পরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তাদের পরিকল্পনাকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
দেশ রূপান্তর : কিন্তু মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের চেয়ে বাস্তবায়ন তো অনেক চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আপনার প্রস্তুতি কী?
জহিরুল আলম দোভাষ : এজন্য আমরা জনবল কাঠামো অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছি। অনুমোদন পেলে জনবলের সমস্যা আর থাকবে না। তখন তা বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। পাশাপাশি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মাস্টারপ্ল্যানে পরিবর্তন আনতে পাঁচ বছর পর পর তা পর্যালোচনা করা হবে।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
অপারেশন ছাড়াই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় আব্দুল মোতালেব হোসেন (৩৫) নামের এক মানসিক রোগীর পেট থেকে ১৫টি কলম বের করেছেন চিকিৎসক।
এ কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। তাদের এই সাফল্যে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।
এ বিষয়ে আব্দুল মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, তার ছেলে মোতালেব খুব ভাল ছাত্র ছিল। ২টি লেটার মার্ক নিয়ে এসএসসি পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এরপর খারাপ সঙ্গদোষে সে আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর সময় কুড়িয়ে পাওয়া কলমগুলি খাদ্য মনে করে খেয়ে ফেলে। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। গত এক বছর ধরে তার শরীরে জ্বর ও পেটে ব্যথা শুরু হয়। অনেক চিকিৎসার পরও তা ভালো হচ্ছিল না। অবশেষে গত ১৬ মে তাকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। এখানে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার অসুখের কারণ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসকরা তার পেটের ভিতর থেকে বিনা অপারেশনে কলমগুলো বের করে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মোতালেব হোসেন প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কি সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। ফলে রোগীটিকে আমার কাছে রেফার্ড করেন। এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর ১৫টি কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই। এটা কীভাবে সম্ভব। পরে এন্ডোস্কপির মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আরও বলেন, কাজটি আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল যেন, কলমগুলোর কারণে কোনোভাবেই শ্বাসনালিতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এন্ডোস্কপি করা ব্যক্তি মানসিক অসুস্থ হওয়ায় তার কলম খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এভাবে খেতে খেতে সে অনেক কলম খেয়ে ফেলে। কলমগুলো তার পেটের মধ্যে জমা হয়েছিল। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তার পেটের ভিতর ১৫টি কলম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এবং অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেটের ভেতর থেকে একে একে ১৫টি আস্ত কলম বের করে আনি। বর্তমানে রোগীটি সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ আছেন।
তিনি আরও বলেন, এন্ডোস্কপির মাধ্যমে মানুষের পেট থেকে কলম বের করার মতো ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাও আবার একটি-দু‘টি নয় ১৫টি কলম। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে এক ব্যক্তির পেট থেকে এন্ডোসকপির মাধ্যমে একটি মোবাইল বের করেছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন ছাড়াই শুধু এন্ডোস্কপির মাধ্যমে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে ১৫টি কলম বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি। শুধু এটাই নয়, আমরা বিনা অপারেশনে পেটের পাথর, কিডনিতে পাথর থেকে শুরু করে অনেক কিছুই অপারেশন ছাড়াই সেগুলো অপসারণের কাজ করে যাচ্ছি।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।