
রাজনীতি ও রাষ্ট্র চালনায় অদ্বিতীয় হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৪২ বছরের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে যেমন সফল হয়েছেন, রাষ্ট্র পরিচালনায়ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন তিনি।
আজ বুধবার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুনাম কুড়ানো শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন। ১৯৪৭ সালের এই দিনে টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। শুধু রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনায় নয়, পারিবারিক জীবনেও সফল শেখ হাসিনা। রাজনীতিতে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে উচ্চশিক্ষিত করেছেন তিনি।
শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘তিনি সম্মোহনী, উদ্ভাবনী, সাহসী দিকনির্দেশক নেতা। তিনি ঘটনাক্রমে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সরকারপ্রধান। বাঙালি অনেক কিছু পেয়েছে তার কাছ থেকে।’
শেখ হাসিনার কাছে বাঙালির ঋণ অপরিশোধিত উল্লেখ করে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘তিনি না এলে কখনোই বঙ্গবন্ধুর খুনি ও মানবতাবিরোধীদের বিচার হতো না। তার সাহসী নেতৃত্বের কাছে আমরা ঋণী। শেখ হাসিনা আমাদের জন্য বিকল্পহীন নেতা এই মুহূর্তে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. অনুপম সেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০০৯ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ ও শিক্ষা খাতে ব্যাপক গুরুত্ব দেন। বিদ্যুৎ এবং শিক্ষা জাতিকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখেন। বিদ্যুৎ ঘাটতির দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলতে এক অসম সাহসী ভূমিকা গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। তাই বাংলাদেশ আজকে ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরাট অবদান রয়েছে। বিশ্বসভায় বাংলাদেশের উন্নয়নের অকল্পনীয় মডেল হিসেবে মর্যাদা পেয়েছেন শেখ হাসিনা। ডিজিটাল বাংলাদেশ স্লোগান নিয়ে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা সর্বস্তরে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন, যাকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সোপান বলা যায়। আজকে দেশের ১৩ কোটি মানুষ ইন্টারনেটের আওতাভুক্ত। আইটি শিক্ষার প্রসার ঘটছে। নতুন বছরের ১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া, নারী শিক্ষার্থীদের দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা চালু করা তার কৃতিত্ব।’
সমাজবিজ্ঞানের এ শিক্ষক বলেন, করোনা মহামারী অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে প্রায় জয় করে ফেলেছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের অর্থনীতি সংকুচিত হতে দেননি বরং প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের ওপরে ছিল। তিনি পরিবেশ উন্নয়নে আন্তর্জাতিক মহলে সোচ্চার ছিলেন। নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু (কর্ণফুলী) টানেল, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল, ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আগামী এক দশক শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্র হবে। শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে অনুপম সেন বলেন, ‘দেশরতœ শেখ হাসিনা শতায়ু হোন। বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় পরিণত হোক।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কোন্নয়ন বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সমসাময়িক বিশ্বে শেখ হাসিনার মতো নেতা পাওয়া যায় না। যেই পার্টি নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল, সেই পার্টির হাল ধরে পুনঃজনপ্রিয় করা ও ক্ষমতায় নিয়ে আসা দুরূহ ব্যাপার।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পারিবারিক ট্র্যাজেডির মধ্য দিয়ে উঠে এসে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন ১৯৮১ সালে। বিভিন্ন ধরনের ঝামেলা মোকাবিলা করতে হয়েছে তাকে। দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব দূর করতে হয়েছে। আবার ক্ষমতায় এসে দেশকে উন্নয়নমুখী করা ও দেশকে দক্ষিণ এশিয়ার মডেল হিসেবে দাঁড় করানো শেখ হাসিনার বড় অর্জন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম, সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন এবং উগ্রবাদবিরোধী লড়াইয়ে শেখ হাসিনা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এসব শেখ হাসিনার নেতৃত্বের উল্লেখযোগ্য দিক।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যার ওপর একাধিকবার প্রাণনাশের হুমকি এসেছে। আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করারও চেষ্টা হয়েছিল। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা তার উদাহরণ।’
পদ্মা সেতু নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন, দেশজুড়ে সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ ও প্রশস্তকরণ, দেশকে ইনফরমেশন টেকনোলজির আওতায় নিয়ে আসা, করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণ, জঙ্গি দমন, জলবায়ু তহবিলের সুষ্ঠু ব্যবহার, আর্থিক স্থিতিশীলতা, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মানবিক ও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে বিশ্বসভায় শেখ হাসিনা প্রশংসিত এবং তার নেতৃত্ব এখন বলিষ্ঠ। প্রভাবশালী দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা তাকে সমীহ করেন।
বাংলাদেশকে আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও উন্নত সমৃদ্ধ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে এবং সেসব বাস্তবায়ন করে তিনি সারা বিশ্বেই প্রশংসিত। তার যুগোপযোগী ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ দেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতি এনে দিয়েছে। করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ উপাধি জমা পড়েছে তার ঝুড়িতে। রাষ্ট্র পরিচালনায় তার দক্ষতার প্রশংসা করে বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানের সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি এবং বিভিন্ন সময়ে নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এসবের মধ্যে ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’, ‘চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ’, ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’, ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ উল্লেখযোগ্য।
বিশ্বের বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউট শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র সমুন্নত করা ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করেছে। দীর্ঘ দুই দশকের অস্থিরতার অবসান ঘটিয়ে পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য ইউনেস্কো তাকে ‘হুপে-বোয়ানি’ শান্তি পুরস্কার দেয় ১৯৯৯ সালে। অ্যাওয়ার্ড হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ইউনেস্কোর তৎকালীন মহাপরিচালক ফেদেরিকো মেয়র বলেছিলেন, ‘জাতি গঠনে আপনার পিতার অনুসৃত পথ অবলম্বন করে আপনি দেশকে শান্তি ও পুনর্মিলনের পথে নিয়ে গেছেন। দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আপনার উদ্যোগ ও নিষ্ঠা বিশ্বে শান্তির সংস্কৃতির দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’
রাষ্ট্র পরিচালনায় দক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে এবং সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যের (এমডিজি) বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতার পর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে (এসডিজি) এগিয়ে চলায় শেখ হাসিনা ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার’ পেয়েছেন। বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন অগ্রগতির কথা তুলে ধরে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম তার ভূয়সী প্রশংসা করেছে।
শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘এত ঘটনা-দুর্ঘটনার পরও যে আওয়ামী লীগ টিকে আছে এবং টানা ১২ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় আছে এ কৃতিত্ব নিঃসন্দেহে শেখ হাসিনার।’ তিনি বলেন, ‘এর সঙ্গে আরও দুটো জিনিস যোগ না করলে হবে না। প্রথমত, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার; দ্বিতীয়ত, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। এ কাজগুলো শেখ হাসিনার অসাধারণ কৃতিত্বের স্মারক। যারা খুঁত আবিষ্কারের বিশেষজ্ঞ তাদের অনেক রকমের কথাবার্তা থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। আমার মনে যে প্রশ্ন নেই তাও তো নয়।’
তিনি বলেন, ‘নানা সময় নানা রকমের ঝঞ্ঝার মধ্যে দিয়ে এই দল গিয়েছে। যখন শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল ধরেন এই দল আর ভাঙেনি। এর কৃতিত্ব ওনাকে দিতেই হবে।’
গত এক যুগ রাষ্ট্র পরিচালনার কয়েকটি বিষয়ে আলোকপাত করে শান্তনু মজুমদার বলেন, বৈষম্যের প্রশ্নটা আছে এ ক্ষেত্রে বলব যে, বৈষম্য হচ্ছে একটি ‘গ্লোবাল থ্রেট’। তবে গত ১০-১২ বছরে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ‘হাইলি মেনশনেবল’। রাষ্ট্রক্ষমতায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আছে, কিন্তু সমাজে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোন জায়গায়Ñ এ প্রসঙ্গে জানতে ইচ্ছে করে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার কাছে জাতির আশা, সামনে যে নির্বাচন সেটা যেন আর প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। কামনা করি, উনি আরও দীর্ঘকাল জাতিকে দেবেন। সমাজে মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধানের যে মূলনীতি তা প্রসারিত হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে এবং বৈষম্য দূর হয়েছে।’
৭৩ বছরের প্রাচীন ও বৃহত্তম রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগ ৪২ বছর ধরেই চলছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। তিনি চারবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। একাধিকবার বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসেছেন। দারিদ্র্যের হার ৪০ ভাগ থেকে ২১ ভাগে নামিয়েছেন। শিক্ষার হার বাড়িয়েছেন। এক যুগে বাংলাদেশকে আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীনদের ভূমিসহ পাকা ঘর উপহার দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা- ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর করা শেখ হাসিনার শাসনের আরেকটি মাইলফলক।
শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করতে দলের নেতৃত্ব হাতে নেন ১৯৮১ সালে। ওই বছরের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন তিনি। সারা দেশ ঘুরে দলকে পুনর্গঠিত করেন তিনি।
১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলের নেতৃত্ব দেওয়া, ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের বিজয় লাভ এবং প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ, পাঁচ বছর রাষ্ট্র পরিচালনার পর বিনা রক্তপাতে ক্ষমতা হস্তান্তর, পরে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের রোষানলে পড়ে অবর্ণনীয় অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করা, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা থাকাকালে গ্রেনেড হামলার শিকার হওয়া, ওই হামলায় ২৪ জন নেতাকর্মীর প্রাণ হারানো এসব ঘটনার সাক্ষী তিনি। এরপর সেনা-সমর্থিত ফখরুদ্দীনের সরকার ক্ষমতায় আসে। ২০০৭ সালে গ্রেপ্তার হন তিনি। শেখ হাসিনা দমে না গিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে অনড় অবস্থান নেন। ফখরুদ্দীন সরকারের বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জনমত সৃষ্টি হয়। ২০০৮ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সেনাসমর্থিত সরকার। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় লাভ করেন শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। এরপর টানা আরও দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হন তিনি।
অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশকে উচ্চপ্রবৃদ্ধির ধারায় নিয়ে আসা এবং প্রবৃদ্ধিতে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভালো জায়গায় নিয়ে আসা তার কৃতিত্ব। পৃথিবীর আর কোনো নেতা-নেত্রীর পক্ষে তা সম্ভব হয়নি। শেখ হাসিনা এখন দক্ষিণ এশিয়ায় সিনিয়র লিডার হিসেবে পরিচিত।’
নারী উন্নয়নের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যে বাংলাদেশকে নিয়ে অনেকে হতাশ ছিল, শেখ হাসিনা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার যে স্বপ্ন, তা বাস্তবে রূপ দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর বড় অবদান আছে। আমি আশা করি, ইতিহাস শেখ হাসিনাকে সেভাবেই দেখবে। উনি যতদিন বেঁচে থাকবেন বাংলাদেশের সমৃিদ্ধ আসতে থাকবে। বিশ^শান্তিতে শেখ হাসিনার জোরালো অবস্থান ও এই অবস্থানকে আন্তর্জাতিক আলোচনায় নিয়ে আসতে পারার কৃতিত্ব তার একার।’
এ অধ্যাপক বলেন, ‘পৃথিবীতে খুব কম দেশই আছে যাদের কোনো শত্রু নেই। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শেখ হাসিনার সুনাম ও সফলতা এখানেই। এখন পর্যন্ত সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে পেরেছেন তিনি। বিশ্ব বুঝতে পেরেছে বাংলাদেশ একটি শান্তির অবস্থানে আছে। তার আরও বিচক্ষণ নেতৃত্বের প্রমাণ পাওয়া যায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সম্পর্কে তার অবস্থানে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, যুদ্ধে সমাধান নেই। কারও পক্ষে যাননি তিনি। এ অবস্থান বিশ্বের কয়জন নেতা নিতে পেরেছেন?’
২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। ‘দিনবদলের সনদ’ শিরোনামে ওই নির্বাচনী ইশতেহারে দেশকে মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুরের আদলে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার ঘোষিত ওই সনদে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান ছিল। ছিল ভিশন-২০২১।
শেখ হাসিনার দেখানো নতুন বাংলাদেশের সে স্বপ্ন মানুষকে আশাবাদী করে তোলে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে। আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনার ১৩ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেখানো সেই স্বপ্নের সুফল পেতে শুরু করেছে দেশ ও দেশের মানুষ।
নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার রূপকার বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ দেশে-বিদেশে প্রশংসিত। আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক দেশ গড়ে তোলার অভিপ্রায়ে তিনি একের পর এক পরিকল্পনা প্রণয়ন করছেন, বাস্তবায়নও করছেন।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার প্রথম মেয়াদেই দৃশ্যমান করে তোলে ডিজিটাল বাংলাদেশ। এখন গ্রামে গ্রামে পৌঁছে গেছে ইন্টারনেট ও কম্পিউটার। মানুষের হাতে হাতে স্মার্টফোন। ইন্টারনেট জগতে বাংলাদেশ চতুর্থ প্রজন্মে (৪-জি) আছে। পঞ্চম প্রজন্মে (৫-জি) প্রবেশও আর বেশি দূরে নয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার, সার্ভিস ও আউটসোর্সিংয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এ সরকারের সময়ে। লার্নিং ও আর্নিংয়ের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ১৫ কোটির ওপরে মোবাইল সিম ব্যবহার হয়। মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের সংখ্যা পাঁচ কোটি। গড়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রতিদিন ১ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। প্রায় দুই হাজার ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠান পণ্য বেচাকেনা করছে। ৫০ হাজার মানুষ এ খাতে ব্যবসা করছে।
উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শ্রমভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এখন বাংলাদেশে। ইন্টারনেট ব্যবহারে বিশ্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয়। দেশের ছয় লাখ মানুষ আউটসোর্সিং করে আয় করছে।
দেশে বিদ্যুতের বিশাল ঘাটতির বোঝা মাথায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ঘোষণা করেন উন্নয়নের পূর্বশর্ত বিদ্যুৎ। বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে শেখ হাসিনার সরকার এ খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করে গেছেন। বিদ্যুৎ উৎপাদনে তার সরকার ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। শেখ হাসিনার শাসনামলে জাদুকরী উন্নতি হয় বিদ্যুৎ খাতে। ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে শুরু করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা অর্জন করেছে। দেশে বিদ্যুতায়ন এখন শতভাগ।
আরও কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। সরকারের মেগা প্রকল্পের মধ্যে মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। মাতারবাড়ী ও ঢালঘাটা ইউনিয়নের ১ হাজার ৪১৪ একর জমিতে এ বিদ্যুৎ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হচ্ছে। কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে। নির্মাণাধীন রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ প্রায় শেষের দিকে। রামপালে এ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ করছে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। রয়েছে পায়রা বিদ্যুৎ প্রকল্প।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে তার বক্তব্যে বলেন, ‘১৯৮১ সালে যখন আওয়ামী লীগ আমাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করেছে, তখন থেকেই দেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য চিন্তা করেছি। যখন ক্ষমতায় ছিলাম না, তখনো পরিকল্পনা করেছি। ক্ষমতায় এলে কীভাবে দেশের মানুষের উন্নয়ন করা যায়, এ নিয়ে অনেক লেখাও আছে আমার। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ীই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশের উন্নয়নে নিজেদের নিয়োজিত করেছি। আজ দেশের মানুষ তার সুফল পাচ্ছে।’
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দেওয়ায় কটূক্তি শুনতে হয়েছে। সব কটূক্তির পরও ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ বাস্তব। আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজ আমরা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি।’
সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশকে আধুনিক অবকাঠামো সমৃদ্ধশালী করে তোলা হচ্ছে। তার হাত ধরেই বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে পারমাণবিক বিশ্বে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে জায়গা নিয়েছে মহাকাশে।
আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর থেকেই মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেন। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ অন্যান্য উন্নয়ন কার্যক্রমের ফলশ্রুতিতে সত্যিই মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুর আদলে এসেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন শেখ হাসিনার শত্রুর কাছেও প্রশংসিত। এ ছাড়াও হাতে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প। দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের কাজ।
বিশ^ব্যাংক সরে যাওয়ার পরও নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে গর্বের প্রতীক হয়ে। উন্নয়নের মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে শেখ হাসিনার সরকার বিশ্বব্যাংকের চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেই এ সেতুর কাজ শেষ করে উদ্বোধনও করে ফেলেছে, যা খুলে দিয়েছে ২১ জেলার উন্নয়নের দুয়ার। এ প্রকল্পের কাজ শুরু করতে শেখ হাসিনাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এবং রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের যোগাযোগ নতুন যুগের সূচনা করেছে এবং ওই অঞ্চলের দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে।
দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে সরকারের আরেক চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প দেশের সর্ববৃহৎ এবং প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ। যা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ হাসিনা পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পারমাণবিক বিশ্বে পদার্পণ করে এবং বিশ্ব পরমাণু ক্লাবের সদস্য পদ লাভ করে। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৪ সালে। বিশিষ্টজনদের মতে, এ প্রকল্প সরকারের গত ১২ বছরের সফলতার বড় একটি দিক। স্যাটেলাইট বিশ্বে প্রবেশের পর বাংলাদেশ এখন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার ফলশ্রুতিতেই এ সবকিছু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে দ্রুত এগিয়ে নিতে কৃষি, শিল্প উৎপাদনের পাশাপাশি অবকাঠামো, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের শেখ হাসিনার দৃষ্টি রয়েছে। রাজধানী এবং রাজধানীর বাইরে বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলকে বিবেচনায় নিয়ে যোগাযোগব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো গড়ে তোলার কাজ অব্যাহত রয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং শিল্পায়নের প্রসারে সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা শেখ হাসিনার বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়কোচিত পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
রাজধানীতে যানজট দূর করতে নির্মাণাধীন মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল এ মেট্রোরেল এখন দৃশ্যমান। ঢাকার উপকণ্ঠ হেমায়েতপুর থেকে গুলশান হয়ে ভাটারা এবং বিমানবন্দর থেকে রামপুরা হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত আরও দুটি মেট্রোরেল প্রকল্প হাতে নেওয়া আছে। নির্মাণ হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ কাজও এগিয়ে চলেছে দ্রুত। এ বছরই উদ্বোধনের কথা রয়েছে এই টানেল, যা কর্ণফুলী অন্য পাড়কে চট্টগ্রাম নগরের সঙ্গে যুক্ত করবে।
বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মনে করেন, মেগা প্রকল্প বদলে দেবে বাংলাদেশের দৃশ্যপট ও অর্থনীতির গতিধারা।
শেখ হাসিনা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে আধুনিকায়ন করেছেন। ওই বন্দরের ওপর চাপ কমাতে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ায় রাবনাবাদ চ্যানেলে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণকাজ চলমান। ২০২৩ সালের মধ্যে ১৬ মিটার গভীরতায় চ্যানেল ড্রেজিং সম্পন্ন করে বন্দর গড়ে তোলা হবে। সমুদ্রপথে আন্তর্জাতিক যোগাযোগব্যবস্থাকে আরও এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা রয়েছে। সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। এ সমুদ্রবন্দরটি নির্মাণের জন্য কারিগরি ও অর্থনৈতিক সমীক্ষা শেষ করেছে জাপানের প্যাসিফিক কনসালট্যান্ট ইন্টারন্যাশনাল (পিসিআই)। গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট (জিটুজি) পদ্ধতিতে এ বন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতসহ বিভিন্ন খাতে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। একটি আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতি প্রবর্তনে শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। নারী উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে সরকার নিয়েছে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলতে বিভিন্ন কর্মসূচি তো রয়েছেই।
১৯৮১ সালে ৩৪ বছর বয়সী শেখ হাসিনা ফিরেছিলেন দল ও দেশকে বদলে দিতে। পরের ৪২ বছর বদলানোর উজ্জ্বল গল্প। সেই গল্পের কিছু ছবি
আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে ৪২ বছর। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দলটি এখন সুসংগঠিত।
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি চার মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে ১৮ বছর।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ প্রথম দফায় ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশের দীর্ঘদিনের সংঘাতপূর্ণ পার্বত্য সমস্যার সমাধান।
ক্ষমতায় থাকা ও ক্ষমতার বাইরে থাকা অবস্থায় ১৯ বার হামলা সামাল দিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মনোবল অটুট রাখা।
স্বাধীনতার প্রায় চার দশক পর একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের (যুদ্ধাপরাধ) বিচার শুরুর মধ্য দিয়ে দেশকে কলঙ্কমুক্ত করা।
২০১৭ সালে নৃশংস হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়ে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া।
১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ গণআন্দোলনে (১৯৯৬ ও ২০০৬) নেতৃত্ব দেওয়া। ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনের সময় জেলে যাওয়ার পরও দলকে সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে ক্ষমতায় আনা।
দেশি অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের মতো উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে সুদক্ষ নেতৃত্ব দেওয়া।
নারীর ক্ষমতায়নে অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন।
সাম্প্রতিক সময়ের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞাসহ বৈশি^ক বিভিন্ন ইস্যুতে জাতিসংঘের পাশাপাশি বিশ^ পরিম-লে গুরুত্বপূর্ণ ও সোচ্চার মতামত তুলে ধরা।
সরকারি হিসাবে চলতি বছরে বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন সক্ষমতা হবে প্রায় দ্বিগুণ। পরের দুই বছরে কিছু পুরনো ও অদক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা হলেও অতিরিক্ত সক্ষমতা হবে প্রায় দেড়গুণ। অথচ আদর্শ মান অনুযায়ী অতিরিক্ত সক্ষমতা সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ হওয়া উচিত। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ আমদানি ও নতুন কেন্দ্র স্থাপন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি সংকট ও সঞ্চালন-বিতরণ লাইনের সীমাবদ্ধতার কারণে সক্ষমতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় না। ফলে অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে হাজার হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে।
তাদের মতে, সরকার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে যত মনোযোগ দিয়েছে তার তুলনায় বিতরণ ও সঞ্চালন লাইন বাড়ানো হয়নি। বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাথমিক জ্বালানির সংস্থানও টেকসই করা হয়নি। অথচ কেন্দ্র ভাড়া বাড়ার পাশাপাশি সরকারের বিনিয়োগ অলস পড়ে থাকার মাত্রা বাড়ছে। এ অবস্থা চললে ভবিষ্যতে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েও লোকসান কমানো কঠিন হয়ে পড়বে। এতে বিদ্যুৎ খাতের অস্থিরতা বাড়বে।
পিডিবির সূত্রমতে, দেশে গ্রিড বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ২৩ হাজার ৪৮২ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ বিভাগ এটিকেই উৎপাদন ক্ষমতা বলে প্রচার করছে। প্রকৃত উৎপাদন ক্ষমতা ২২ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। ২০২২ সালের ১৬ এপ্রিল সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। সাধারণত গড়ে ১১-১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। বর্তমানে ভারত থেকে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির করা হচ্ছে। ভারতের আদানি গ্রুপ থেকে আরও দেড় হাজার মেগাওয়াট আমদানি করা হবে আগামী মার্চে।
বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৪০ সালের মধ্যে ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ২০৩০ সাল নাগাদ নেপাল থেকে ৫০০ মেগাওয়াট আমদানির লক্ষ্যে কাজ করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
পিডিবির পরিচালক মোহাম্মদ শামীম হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতি বছর বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। সে হিসাবে উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু উৎপাদন সক্ষমতা ও চাহিদার মধ্যে ফারাক বেশি মনে হলেও সক্ষমতা থাকার পরও জ্বালানি স্বল্পতার কারণে চাহিদার পুরো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় না। অনেক কেন্দ্র কারিগরি ত্রুটি ও মেইনটেনেন্সের কারণে বন্ধ রাখতে হয়। এসব বিবেচনায় নিলে সক্ষমতা বেশি নয়।’
বুয়েটের অধ্যাপক ড. ম তামিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতাই যথেষ্ট। এর বেশি সক্ষমতা মানে বিপুল আর্থিক বোঝা। কাগজে-কলমে যে সক্ষমতা এখন আছে সেটা অনেক বেশি। আরও বেশি হলে কীভাবে এফোর্ড করব। এর ফলে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বাড়বে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে যেমন বিদ্যুৎ নিতে না পারলেও ৫ হাজার কোটি টাকা “ক্যাপাসিটি পেমেন্ট” দিতে হয়েছে। ভারতের আদানিকেও মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘২০২৭ সাল নাগাদ প্রায় ১২ হাজার মেগাওয়াট কয়লা ও এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। এসবের জ্বালানির পুরোটাই আমদানিনির্ভর। প্রশ্ন হলো, এ আমদানি ব্যয় কি বহন করা সম্ভব? যদি না পারি তাহলে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও এসব কেন্দ্রের জন্য ভাড়া গুনতে হবে। এ টাকা কে দেবে? গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েই কি তা সম্ভব? কার্যত নানাভাবে ভোক্তার পকেট থেকে এ টাকা যাবে।’
পিডিবির তথ্যমতে, সরকারি-বেসরকারি ও যৌথ উদ্যোগে ১৭টি কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে, যার মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট। ১০ হাজার ৮৬৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র ২০২৫ সালের মধ্যে উৎপাদনে আসবে। ১৭টি কেন্দ্রের ১৩টি বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাবে। এসবের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৬৫০ মেগাওয়াট। আরও ৬৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পাঁচটি কেন্দ্র নির্মাণের দরপত্রের আওতায় রয়েছে। পরিকল্পনাধীন কেন্দ্রের মধ্যে ৫৮৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার আটটি কেন্দ্রে উৎপাদন শুরু করার কথা রয়েছে ২০২৫ সালের মধ্যে। এ ছাড়া ভারতের আদানি গ্রুপ থেকে চলতি বছর ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে। অন্যদিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট উৎপাদন শুরু হবে ২০২৫ সাল নাগাদ। সব মিলে দুই বছর পর দেশের মোট উৎপাদন সক্ষমতা অন্তত ৩৯ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটে দাঁড়াবে। অথচ তখন বিদ্যুতের চাহিদা হবে ১৯ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট।
আগামী দুই-তিন বছরে ৭-৮ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার কিছু পুরনো ও তেলবিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা হলেও ২০২৫ সালে উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়াবে প্রায় ৩৩ হাজার মেগাওয়াটে। বিভিন্ন ধরনের কারিগরি ক্ষতি ও কেন্দ্রের নিজের ব্যবহার্য বিদ্যুৎ বিবেচনায় নিলেও চাহিদার তুলনায় তখন বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা অন্তত ৫০ শতাংশ বেশি হবে। যদিও চাহিদা এর চেয়ে কম হবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। কারণ এর আগের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী চাহিদা কমেছে।
প্রক্ষেপণ অনুযায়ী চাহিদা কমলেও উৎপাদন কিন্তু বেড়েই চলেছে। যেমন চলতি বছর পর্যন্ত বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ২৬ হাজার ৩০৮ মেগাওয়াট ধরা হলেও পিডিবির হিসাবে তা দাঁড়াবে প্রায় ৩০ হাজার মেগাওয়াট। প্রক্ষেপণ অনুযায়ী চাহিদা কমে যাওয়া ও উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ার ফলে প্রায় অর্ধেক কেন্দ্র অলস বসে থাকবে।
ড. তামিম বলেন, ‘গত চার-পাঁচ বছরে শিল্পকারখানার সম্প্রসারণ আশানুরূপ হয়নি। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে শিল্পে গ্রিডভিত্তিক বিদ্যুতের চাহিদা তেমন বাড়েনি। এ কারণে বিদ্যুতের চাহিদা কম। সরকার বিদ্যুতের যে সক্ষমতার কথা বলছে তা আসলে কতটুকু সত্য আমরা জানি না। প্রকৃত চিত্র আমাদের দেখানো হয় না।’ তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালে বিদ্যুৎ নিয়ে যে প্রক্ষেপণ করা হয়েছিল সে অনুযায়ী চাহিদা বাড়েনি। অথবা চাহিদা বেড়েছে কিন্তু সে অনুযায়ী সরবরাহ করতে না পারায় চাহিদা কম দেখানো হচ্ছে। ক্লিয়ার পিকচার আমরা পাচ্ছি না। পরিকল্পনা আরও সতর্কভাবে করা দরকার।’
নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র করার দরকার নেই এমন মন্তব্য করে ড. তামিম বলেন, ‘আমার জানামতে প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট অদক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে যেগুলো ঠিকমতো গ্যাস পেলেও উৎপাদন করতে পারবে না। এগুলো বন্ধ করে তেলবিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা কমানো দরকার। এতে বিদ্যুতের চাহিদাও মিটবে, উৎপাদন ব্যয়ও কম হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সত্যিকারের চাহিদার প্রক্ষেপণ করা। জাইকা পুরনো “জিডিপি গ্রোথ” ধরে একটা প্রক্ষেপণ করছে। আমি এটার বিরোধী। বাস্তবের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। আমরা যে “ইকোনমিক গ্রোথ”-এর কথা বলছি সেটা কিন্তু পলিটিক্যাল গ্রোথ। বাস্তব নয়। পৃথিবীর ইতিহাসে ৮-৯ শতাংশ সাসটেইনেবল গ্রোথ হয়েছে এমন নজির নেই। গত ছয়-সাত বছরে আমাদের যে সর্বোচ্চ ইকোনমিক গ্রোথ হয়েছে তা কি এনার্জি ইনটেনসিভ ইকোনমিক গ্রোথ? নাকি অন্য ফ্যাক্টর আছে এখানে? বিবেচনায় নিতে হবে। ২০১৭ সাল থেকে আমরা যে শিল্পপ্রবৃদ্ধি হিসাব করছি তা কিন্তু হয়নি। গত কয়েক বছরে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে আবাসিক খাতে। শিল্পে বেড়েছে খুবই কম।’
বিদ্যুতের চাহিদার প্রক্ষেপণ কঠিন নয় উল্লেখ করে অধ্যাপক তামিম বলেন, ‘আগামী পাঁচ বছরে কী পরিমাণ শিল্পকারখানা হবে, কত বিদ্যুৎ লাগবে তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকেই জানা সম্ভব। অন্যান্য খাতের তথ্যও জানা সম্ভব। ছড়িয়ে থাকা তথ্যগুলো একত্রিত করলেই আসল হিসাবটা পাওয়া সম্ভব। একটু সময় দিলে নিখুঁত চিত্র পাওয়া যাবে।’
বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানির বড় একটি অংশ আমদানি করতে হয়। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বাড়া বা কমার প্রভাব পড়ে দেশের বিদ্যুৎ খাতে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে না এলে বিদ্যুৎ খাত নিয়ে সমস্যা থেকেই যাবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতুল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অপরিকল্পনা, অদক্ষতা আর কিছু গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় কেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। সরকারের দাবি অনুযায়ী চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। তাহলে আমদানি কেন? বিদ্যুৎ আমদানি ও অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা দরকার। নইলে বিদ্যুতের দাম বেড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।’
তিনি বলেন, ‘উচ্চমূল্যে জ্বালানি আমদানি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে দাম বাড়তেই থাকবে। অথচ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে অনেক কম দামে টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। সরকারের কমদামি বিদ্যুতের চেয়ে বেশি দামের বিদ্যুতে আগ্রহ বেশি। কারণ গোষ্ঠী স্বার্থ।’
ইউক্রেনের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা এবং পশ্চিমা গণমাধ্যম বলছে খুব শিগগিরই বড় আকারে হামলা চালাতে যাচ্ছে রাশিয়া। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, চলতি মাসেই আরও সৈন্য ও সরঞ্জাম নিয়ে নতুন অভিযান শুরু হতে পারে। এদিকে আরও দ্রুত অস্ত্র সরবরাহের অনুরোধ নিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তর ব্রাসেলস যেতে পারেন।
ইউক্রেনের আশঙ্কা সত্য প্রমাণ করতে রাশিয়া পূর্বের অধিকৃত এলাকায় আরও সৈন্য ও সরঞ্জাম জমা করছে বলে নানা সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে। ফলে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি হামলার বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রুশ সেনাবাহিনী আরও বড় আকারের হামলা চালাতে পারে, এমন আশঙ্কা বাড়ছে। লুহানস্ক অঞ্চলের ইউক্রেন নিয়ন্ত্রিত এলাকার গভর্নর সেরহি হাইদাই বলেন, রাশিয়া থেকে রিজার্ভ বাহিনীর আরও সদস্য এবং সরঞ্জাম আসছে। নতুন ধরনের গোলাবারুদও আসতে দেখা যাচ্ছে। দিনরাত গোলাবারুদ নিক্ষেপ বন্ধ করে রুশ বাহিনী কোনো বড় অভিযানের জন্য সেগুলো প্রস্তুত রাখছে বলে হাইদাই মনে করেন। তার মতে, ১৫ ফেব্রুয়ারির পর যেকোনো সময়ে রাশিয়া আরও জোরালো হামলা শুরু করতে পারে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনীও বসন্তকালে রাশিয়া অধিকৃত আরও এলাকা ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে, এমন ধারণা জোরালো হচ্ছে। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব থেকে ব্যাটেল ট্যাংকসহ আরও অস্ত্র, সরঞ্জাম ও গোলাবারুদ ঠিক সময়ে হাতে না পেলে এমন অভিযান কতটা কার্যকর হবে, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে। ২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধে ইউক্রেন এলাকা পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে যে সাফল্য পেয়েছিল, তা বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে থমকে গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে জেলেনস্কি চলতি সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ সম্মেলনে সশরীরে যোগ দিতে পারেন বলে জল্পনা-কল্পনা চলছে। ইইউ জানিয়েছে, জেলেনস্কিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি সত্যি সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে ব্রাসেলস গেলে সেটা হবে যুদ্ধ শুরুর পর দেশের বাইরে তার দ্বিতীয় সফর। গত বছর ওয়াশিংটনে গিয়ে জেলেনস্কি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনা করেন এবং দেশটির কংগ্রেসে ভাষণ দিয়ে আরও অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের প্রতিশ্রুতি আদায় করেন। ইউরোপের কাছ থেকেও তেমন সাড়া পেতে তিনি ঝুঁকি নিয়ে ব্রাসেলস যেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চামেলী হলে শিক্ষামন্ত্রী ও সব বোর্ডের চেয়ারম্যানরা নিজ নিজ বোর্ডের ফলাফল প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
ফলাফল হস্তান্তরের সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।
বেলা সাড়ে ১১টা থেকে নিজ নিজ শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে ফলাফল আপলোড করা হবে। এ সময় থেকে যে কেউ রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে ওয়েবসাইট ও মোবাইলে এসএমএস করে ফল দেখতে পারবেন।
আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত ফল প্রকাশ করবে। পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অনলাইনে একযোগে ফল প্রকাশ করা হবে বেলা একটায়।
করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় গত ৬ নভেম্বর সারা দেশে অনেকটা স্বাভাবিক পরিবেশে শুরু হয়েছিল এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ড মিলিয়ে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ১২ লাখ ৩ হাজার ৪০৭ জন।
ঢাকা ডমিনেটরসের ক্রিকেটাররা ৭৫ ভাগ পারিশ্রমিক বুঝে পেয়েছেন, বাকিটা টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যেই তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি।
আজ সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন দলটির অধিনায়ক নাসির হোসেন। এবারের বিপিএলে নিজেদের শেষ ম্যাচটি খেলেছে ঢাকা। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে ১৫ রানের হার দিয়ে শেষ হয়েছে নাসিরের দলের এবারের বিপিএল মিশন।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে নাসির জানালেন, পারিশ্রমিক নিয়ে সংকট দূর হয়েছে। ‘আমার মনে হয়ে অনেক খেলোয়াড় ৭৫% পারিশ্রমিক পেয়েছে। আমিও পেয়েছি। ২৫% বাকি। চুক্তি অনুযায়ী টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যে বাকিটা পেয়ে যাওয়ার কথা। প্রথম পেমেন্টটা পেতে একটু দেরি হয়েছে। কিন্তু তারা সেজন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে।’
আসরের মাঝপথে ঢাকার খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক সংক্রান্ত জটিলতার কথা জানা গেলেও নাসির আশ^স্ত করেছেন নিয়ম মেনেই এখন তিন-চতুর্থাংশ পারিশ্রমিক পরিশোধ করেছে ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্র্তৃপক্ষ। তবে দল গঠন ও পরিচালনার ব্যপারে ফ্র্যাঞ্চাইজিকে ‘অনভিজ্ঞ’ বলে দাবি করেছেন নাসির।
তার সুপারিশ করা বেশ কয়েকজন বিদেশি ক্রিকেটারকে আনতে না পারার কথাও বলেছেন, ‘আমার কাছে মনে হয় বিদেশি খেলোয়াড়রা একটা বড় ভূমিকা রাখে। কিন্তু আমরা ভালো বিদেশি খেলোয়াড় আনতে পারিনি। তাছাড়া আমাদের টপ অর্ডার ভালো করেনি। ওরা ভালো করলে অন্যরকম হতো। আর মোমেন্টাম না পাওয়ায় আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। টিমটা শেষ মুহূর্তে হওয়ায় এরকম হতে পারে। আমার বিশ্বাস পরের বছরে এই দল থাকলে ভালো একটা দল হবে। বিদেশি লিগ চলায় খেলোয়াড় পাওয়া যায়নি। যাদের পেয়েছে তাদেরই তারা নিয়ে এসেছে। আরও কিছু বিদেশি খেলোয়াড় পেলে আমরা ভালো করতাম।’
গ্যারি ব্যালান্সের জন্মটা জিম্বাবুয়েতে। তবে স্কুলজীবনে স্বদেশ ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে। তবে মাতৃভূমির বয়সভিত্তিক বিশ্বকাপে খেলেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তার অভিষেক ইংলিশদের জার্সি গায়ে। যদিও সেখানেও অনেকদিন ধরে ব্রাত্য। তাই ক্রিকেটের টানে ঘরে ফিরেছেন তিনি। যা রাঙিয়েছেন অসাধারণ এক শতক হাঁকিয়ে।
বুলাওয়ের কুইন্স স্পোর্টস ক্লাব সাক্ষী হলো বিরল এই কীর্তির। ঘরে ফেরা গ্যারি ব্যালান্সকে কেপলার ওয়েসেলসের কীর্তি ছুঁতে দেখল কুইন্স স্পোর্টস ক্লাব। দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক ওয়েসেলসের পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে যে টেস্ট ক্রিকেটে দুটি দেশের হয়ে সেঞ্চুরি পেলেন ব্যালান্স।
বর্ণবাদী নীতির কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকা নিষিদ্ধ থাকার সময় অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্ট খেলেছেন ওয়েসলস। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ২৪ টেস্টে চারটি সেঞ্চুরি করা ওয়েসেলস পরে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ১৬ টেস্টে করেন দুটি সেঞ্চুরি। ইংল্যান্ডের হয়ে চারটি টেস্ট সেঞ্চুরির মালিক ব্যালান্স জিম্বাবুয়ের হয়ে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেই পেয়ে গেলেন সেঞ্চুরি।
স্কুলে পড়ার সময় জিম্বাবুয়ে ছেড়ে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছিলেন গ্যারি ব্যালান্স। তবে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পর্ক টিকে ছিল আরও অনেক দিন। ২০০৬ সালে তো ১৬ বছর বয়সী ব্যালান্স জিম্বাবুয়ের হয়ে খেলেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। সেই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। যে ম্যাচে ৩ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ রান করেছিলেন দলের পক্ষে।
২০১৩ সালে ওয়ানডে দিয়ে ইংল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অভিষেক ব্যালান্সের। পরের বছর ইংল্যান্ডের দুর্দশার অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্ট অভিষেক। সিডনির সেই টেস্টে ১৮ ও ৭ রান করা ব্যালান্স ক্রিকেট তীর্থ লর্ডসে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টেই পেয়ে যান প্রথম সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ারের প্রথম ১০ টেস্টের ১৭ ইনিংসেই চার সেঞ্চুরিতে ১ হাজার রান করে ফেলা ব্যালান্স খারাপ সময়টা দেখে ফেলেন তাড়াতাড়ি। পরের ১৩ টেস্টে মাত্র দুটি ফিফটি পাওয়া বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ২০১৭ সালের পর আর সুযোগ পাননি ইংল্যান্ড দলে।
ইংল্যান্ড দলে ফেরার স্বপ্ন বিসর্জন দেওয়া সেই ব্যালান্স জন্মভূমি জিম্বাবুয়ের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নিলেন গত বছর। এ বছরই জিম্বাবুয়ের হয়ে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলার পর চলমান বুলাওয়ে টেস্টেই লাল বলের ক্রিকেটে জন্মভূমির হয়ে প্রথম খেলছেন ব্যালান্স। আর প্রথমবার ব্যাট করতে নেমেই সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে জানিয়ে দিলেন তাঁকে ফিরিয়ে ভুল করেনি জিম্বাবুয়ে।
ব্যালান্স যখন ব্যাটিংয়ে নামলেন জিম্বাবুয়ের রান ৩ উইকেটে ১১৪। ঘণ্টাখানেক পরই আরও ৩ উইকেট হারিয়ে ১৪৭ রান জিম্বাবুয়ের। ফলোঅনের শঙ্কায় পড়া দলের লেজে ব্যাটসম্যানদের নিয়ে এরপর কী লড়াইটাই না করলেন ব্যালান্স। সেই লড়াইয়ে উজ্জীবিত হয়ে ইনিংস ঘোষণার মতো বিলাসিতা করে নিলেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক ক্রেগ আরভিন।
৯ উইকেটে ৩৭৯ রান তুলে জিম্বাবুয়ে যখন ইনিংস ছাড়ে ব্যালান্স অপরাজিত ১৩৭ রানে। ব্রেন্ডন মাভুতাকে নিয়ে অষ্টম উইকেটে ১৩৫ রান যোগ করা ব্যালান্স খেলেছেন ২৩১ বল, মেরেছেন ১২টি চার ও ২টি ছক্কা। ৯ চারে ৫৬ রান করেছেন নয়ে নামা মাভুতা। জিম্বাবুয়ের অবশ্য লিড নিতে পারেনি। ৬৮ রানে পিছিয়ে ছিল ইনিংস শেষে। চতুর্থ দিন শেষে সেই ব্যবধানটাকে ৮৯ রানে নিয়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দ্বিতীয় ইনিংসে বিনা উইকেটে ২১ রান তুলেছে ক্যারিবীয়রা।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা খরচের হিসাব ধরে বাজেট প্রস্তাব প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বেশি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে খরচের বেশিরভাগ অর্থ জোগাড়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৯ শতাংশ বাড়ানো হবে। আসছে জুনের প্রথমভাগে জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী বাজেট হবে জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই এখানে নেওয়া কোনো পদক্ষেপে যেন আওয়ামী লীগ সরকার সমালোচনার মুখে না পড়ে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের থাকছে বিশেষ নজর। এ ছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। তাই সংকট ও নির্বাচন দুটোই মাথায় রাখতে হচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে মোটাদাগে একটি রূপরেখা পাঠানো হয়েছে। নতুন পরিকল্পনার পাশাপাশি গত তিন মেয়াদে সরকার কী কী উন্নয়ন করেছে আগামী বাজেট প্রস্তাবে তা মনে করিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং উচ্চপর্যায়ের সরকারি নীতিনির্ধারকদের উপস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো আগামী বাজেটের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে হিসাব ধরে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট প্রস্তাব প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে তা কয়েক দফা খতিয়ে দেখা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধন, যোগ-বিয়োগ করে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার আগেও অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে।
ডলার সংকটে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছেন না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পণ্যের দাম বাড়ছে। কাঁচামাল সংকটে বিপাকে শিল্প খাত। ব্যাংক খাতে অস্থিরতা। নতুন চাকরির সুসংবাদ নেই বললেই চলে। দফায় দফায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। খুব শিগগিরই এসব সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন না অর্থনীতিবিদরা। অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঋণদাতা সংস্থার কঠিন শর্তের বেড়াজালে আছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতেই আগামী অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশি^ক অস্থিরতা মোকাবিলায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবে তা আগামী বাজেটে স্পষ্ট করা হবে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও বলা হবে। তবে শত সংকটের মধ্যেও আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী যতটা সুবিধা দেওয়া সম্ভব তা দিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দিতে হিসাব কষা হচ্ছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটে আমদানি রপ্তানি প্রায় বন্ধ। ব্যবসা-বাণিজ্যে সংকটকাল চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে আমাদের দাবি অনুযায়ী নগদ সহায়তা দিতে হবে। রাজস্ব ছাড় দিতে হবে। কর অবকাশ ও কর অব্যাহতি বাড়াতে দিতে হবে।’
ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া সংস্কারের শর্ত মানার অঙ্গীকার করে সরকার ঋণ পেয়েছে। শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে ঋণের যেকোনো কিস্তি আটকে দিতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। পর্যায়ক্রমে প্রতি অর্থবছরের বাজেটে এসব সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়ন করা হবে। আসছে বাজেটে শর্ত মানার চেষ্টা থাকবে। বিশেষভাবে অতীতের মতো ঢালাওভাবে কর অব্যাহতি দেওয়া হবে না। আর্থিক খাতের সংস্কারের কিছু ঘোষণা থাকবে। বিশেষভাবে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া হবে। আইএমএফের সুপারিশে এরই মধ্যে ভ্যাট আইন চূড়ান্ত হয়েছে। আয়কর আইন মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন হয়েছে। শুল্ক আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে আছে। এ তিন আইন অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণ করা হবে। আসছে বাজেটে টেকসই অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার কথা বলা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু উদ্যোগের কথা শোনানো হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঋণদাতা সংস্থার শর্ত মানার কথা বলা হলেও সব আগামী বাজেটে একবারে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে অর্থনীতির গতি কমে যাবে।’
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত খাত এবং এনবিআর খাতের জন্য মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হতে পারে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হবে। এনবিআর এ লক্ষ্যমাত্রা কমানোর জোরালো আবেদন করেছে। কিন্তু তা আমলে আনেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হিসেবে, ৩৪ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা আয়কর হিসেবে এবং ৩১ শতাংশ বা বাকি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শুল্ক হিসেবে সংগ্রহ করার কথা বলা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার কথা শুধু বললেই হবে না। কীভাবে অর্জিত হবে, সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা না থাকলে প্রতিবারের মতো ঘাটতি থাকবে। রাজস্ব ঘাটতি হলে অর্থনীতিতে আয় ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত।’
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআর উৎসে করের আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। সম্পদশালীদের ওপর নজর বাড়ানো হবে। শুধু বেশি সম্পদ থাকার কারণে অতিরিক্ত কর গুনতে হবে। সারচার্জ বহাল রাখা হবে। সুপারট্যাক্স গ্রুপকে উচ্চহারে গুনতে হবে কর। আগামী অর্থবছরেও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা থাকবে। অর্থ পাচারোধে আইনের শাসন কঠোর করা হবে। অর্থ পাচার আটকাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে। করপোরেট কর কমানোর দাবি থাকলেও তা মানা হবে না। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে খোদ অর্থমন্ত্রী বললেও রাজস্ব আদায় কমে যাবে এমন যুক্তি দেখিয়ে এনবিআর রাজি নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। কমানো হবে শিল্পের অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি শুল্ক। ডলারের ওপর চাপ কমাতে বেশি ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হবে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমাতে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হবে। তৈরি পোশাক খাতের সব সুবিধা বহাল রাখা হবে। শিল্পের অন্যান্য খাতেও কতটা সুবিধা বাড়ানো যায় তা নিয়ে এনবিআর হিসাব করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বাজেট প্রস্তুতিবিষয়ক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং ঘাটতি ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হতে পারে। আগামী অর্থবছরে জিডিপির ৬ শতাংশ ঘাটতি ধরে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হতে পারে বলে জানা যায়। ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকলেও আগামীবার এ খাতে বেশি ব্যয় ধরা হতে পারে। এ খাতে ১ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয় আছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ অনুমোদন করে। ঋণদাতা সংস্থাটির কাছ থেকে বাংলাদেশ ছয় কিস্তিতে তিন বছরে ৪৭০ কোটি ডলার পাচ্ছে। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের দিন আইএমএফ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে পূর্বাভাস দেয়। সংস্থাটি বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা হতে পারে ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
এতে রিজার্ভ সম্পর্কে বলা হয়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ৩ হাজার কোটি ডলার। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বাড়বে এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ধারাবাহিকভাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় চলতি বোরো মৌসুমে সেচে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সরকার নানারকম প্রস্তুতি নিয়েছে বলে দাবি করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুতের যে পরিস্থিতি তাতে গ্রীষ্মে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। বেশি দাম দিয়েও কৃষক ঠিকমতো বিদ্যুৎ না পেলে উৎপাদন ব্যাহত হবে। এতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়তে পারে।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, জ্বালানি তেল, সার ও বীজের দাম বেড়েছে। এখন আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো। তার মানে চারদিক থেকে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এর ফলে কৃষকের ‘সিগনিফিকেন্ট লস’ হবে। এভাবে দাম বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বোরো উপকরণনির্ভর ফসল। কিন্তু উপকরণের দাম এভাবে বাড়তে থাকলে, কৃষক আগ্রহ হারিয়ে ফেললে; সে ঠিকমতো উপকরণ ব্যবহার করতে পারবে না। এতে উৎপাদন ব্যাহত হবে। উৎপাদন খারাপ হলে চালের ঘাটতি হবে। এমনিতেই এখন প্রায় ৭০ লাখ টন গম ও ভুট্টা আমদানি করতে হচ্ছে। এরমধ্যে যদি চাল আমদানি করতে হয়; তাহলে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
ড. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘সারাবিশ্ব নানারকম সংকটে ভুগছে। এ অবস্থায় আমাদের অন্তত খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সুযোগ রয়েছে। সেজন্য যে পরিমাণ দাম বেড়েছে সে পরিমাণ নগদ অর্থ সহায়তা দিতে হবে কৃষককে। ২০০৯-১০ সালের দিকে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে এক কোটির বেশি কৃষককে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা সরাসরি নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। এজন্য তারা ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্টও খুলেছিলেন। তাদের সেই অ্যাকাউন্ট এখনো আছে, কিন্তু সহায়তা দেওয়া হয় না। এখন যদি সেই সহায়তা দেওয়া হয় তাহলে কৃষক আবার উৎসাহ পাবে।’
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, প্রতি বছর সেচ মৌসুমে (ফেব্রুয়ারি থেকে মে) বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায়। গত মৌসুমে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। চলতি বছর সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। গত বছরের তুলনায় এ বছর সেচ সংযোগের সংখ্যা ১ হাজার ৯১টি বেড়ে মোট ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৪৫৯টি হয়েছে। এজন্য বিদ্যুৎ লাগবে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট।
সেচ মৌসুমে অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সম্প্রতি তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিদ্যুতের চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় রেখে উৎপাদনও বাড়ানো হচ্ছে। সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গ্যাস, ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল সরবরাহ বৃদ্ধি করা, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সার্বিকভাবে পরিস্থিতি ভালো হবে।’
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে প্রতিদিন ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস, ৭৭ হাজার ৪০০ টন ফার্নেস অয়েল এবং ৬৬ হাজার ১০০ টন ডিজেলের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। সূত্রমতে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের সরবরাহ করা বাস্তবে খুব কঠিন ব্যাপার। গত বছর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পিডিবির দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট ছিল। বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এ বছর জ¦ালানির ঘাটতি আরও বেশি। তবে সরকার খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানি করে ঘাটতি মেটানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু আমদানিকৃত গ্যাস দিয়ে চাহিদা অনুযায়ী কতটা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে তা নিয়ে কর্মকর্তাদের অনেকেই সন্দিহান।
পিডিবির তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ২২ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ১০ হাজার থেকে ১০ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। গ্যাস ও কয়লা সংকটের কারণে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। এ ছাড়া রক্ষণাবেক্ষণের কারণেও কিছু কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে।
দেশে নির্মাণাধীন ও আমদানিকৃত বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আগামী মার্চের শেষ দিকে ভারতের আদানি থেকে অতি উচ্চ দামে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ছাড়া মে মাসের দিকে চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে ৬১২ মেগাওয়াট এবং অন্যান্য কিছু ছোট বা মাঝারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৫০ থেকে ২০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হতে পারে। এপ্রিল-মে মাসের দিকে বিদ্যুতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি হবে। তখন এসব কেন্দ্র সময়মতো উৎপাদনে এলেও ১৩ হাজার মেগাওয়াটের জোগান দেওয়া সম্ভব হবে। এর বাইরে উচ্চ মূল্যের জ্বালানি আমদানির মাধ্যমে কিছু কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম মনে করেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করার সক্ষমতা সরকারের নেই। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি সরবরাহ করতে সরকারের ডলার খরচের যে সক্ষমতা দরকার তা সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘জ্বালানি খাতে সরকারের ভুলনীতি আর অন্যায্য ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয়ের কারণে দাম বেড়েই চলেছে। সেই ব্যয় মেটাতে এখন বিদ্যুৎ জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করে ভর্তুকি সমন্বয় করতে চাইছে। এই পরিস্থিতিতে উচ্চ দামে বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা অসম্ভব ব্যাপার।’
এদিকে ডলার সংকট এবং ঋণপত্র (এলসি) খোলার বিলম্বের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। সরকারের কাছে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মোটা অঙ্কের বিল পাওনা থাকলেও তারা ঠিকমতো না পাওয়ার কারণে প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানি করতে পারছেন না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর নির্মাণকাজ এবং জ্বালানি আমদানির যে অগ্রগতি তাতে চাহিদার তুলনায় আগামী গ্রীষ্মে বিদ্যুতের ঘাটতি হবে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার মেগাওয়াট। তবে সাশ্রয় নীতি অবলম্বনের মাধ্যমে ১ হাজার মেগাওয়াট এবং উচ্চ মূল্যের জ্বালানি আমদানির মাধ্যমে আরও ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণ করতে পারে সরকার। এরপরও অন্তত ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকবে।
এদিকে দাম সমন্বয়ের নামে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী আদেশে জানুয়ারি মাসে ১৮ দিনে চার দফা গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করেছে সরকার। এর মধ্যে দু’দফায় অন্তত ১০ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর আগে গত বছরের আগস্টে সেচে ব্যবহৃত ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ২৯ টাকা দাম বাড়ানো হয়। বিদ্যুৎ ও জ¦ালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে কৃষিতে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে।
কুমিল্লার নাঙলকোট উপজেলার বাসন্ডা গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম মজুমদার বলছিলেন, গত বছর এক বিঘা বা ৩৩ শতক জমিতে ধান চাষ করতে সেচের জন্য ২৭৫০ টাকা ব্যয় হয়েছে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চলতি বোরো মৌসুমে এ ব্যয় বেড়ে অন্তত ৪ হাজার টাকা হবে। এর বাইরে অন্যান্য খরচও আনুপাতিক হারে অনেক বেড়েছে। ফলে এখন ধান চাষ করলে প্রতি বিঘা জমিতে অন্তত দেড় থেকে দুই হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।
ডিজেলচালিত ইঞ্জিনের মাধ্যমে জমিতে সেচ দেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর গ্রামের শিয়ালা গ্রামের কৃষক নাঈম। শনিবার রাতে টেলিফোনে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রতিবিঘা জমিতে এ বছর সেচের ব্যয় বেড়েছে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা। সার, বীজ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণের দামও বেড়েছে।
এর আগে মূল্যবৃদ্ধির গণশুনানির সময় বিইআরসি কৃষক ও প্রান্তিক মানুষের কথা বিবেচনা করলেও নির্বাহী আদেশের সময় এসব কিছুই বিবেচনা করা হয় না।
অতীতে সামাজিক সুরক্ষার অংশ হিসেবে প্রতিমাসে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীকে লাইফলাইন বা প্রান্তিক ব্যবহারকারী হিসেবে বিবেচনা করে তাদের বিদ্যুতের দাম তুলনামূলক কম বাড়াত কমিশন। দেশে এ ধরনের গ্রাহক রয়েছে ১ কোটি ৬৩ লাখ, যাদের অধিকাংশই কৃষক। কিন্তু সর্বশেষ বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির আদেশে এ সুবিধা বাতিল করা হয়েছে।
লাইফ লাইন শ্রেণির প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিল ছিল ৩.৭৫ টাকা। গত ডিসেম্বরে তা বাড়িয়ে ৩.৯৪ টাকা করেছিল মন্ত্রণালয়। সেখান থেকে এবার আরেক দফা বাড়িয়ে ৪.১৪ টাকা করা হয়েছে। ফলে গত দুই মাসের ব্যবধানে দরিদ্র মানুষকে এখন প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ৩৯ পয়সা বাড়তি ব্যয় করতে হবে।
কৃষকের কথা বিবেচনা করে আগে সেচে ব্যবহৃত বিদ্যুতের দাম সবসময়েই তুলনামূলক সাশ্রয়ী রাখার চেষ্টা করা হতো। কিন্তু এখন কৃষকেরাও রেহাই পাচ্ছে না। গত ১২ ডিসেম্বর কৃষিতে ব্যবহৃত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ২১ পয়সা বাড়িয়ে ৪.৩৭ টাকা করা হয়। সেখান থেকে এবার আরও ২২ পয়সা বাড়িয়ে ৪.৫৯ টাকা করা হয়েছে।
রংপুরের একজন কৃষক আনোয়ার আলী খানিকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দফায় দফায় যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে তাতে চাষি তো আর বেশিদিন বাঁচতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘ধান চাষ করে এখন লাভ তো দূরের কথা খরচই ওঠে না। তাই আগের চেয়ে ধান চাষ কমিয়ে দিয়েছি। এখন সারা বছর খাওয়ার জন্য যতটুকু ধান দরকার ততটুকুই চাষ করি। তাতে লোকসান হলেও কী করব? ডাল-ভাত তো খাওয়া লাগবে।’
তাকে বলা হয় নাটকের রাণী। দীর্ঘ এক যুগের ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন। নানামাত্রিক চরিত্রে হাজির হয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন, দু’হাতে কুড়িয়েছেন দর্শকদের ভালোবাসা। বলছিলাম, সুপারস্টার, দেশের সর্বাধিক দর্শকের তারকা মেহজাবীন চৌধুরীর কথা। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে তার ওয়েব সিরিজ ‘দ্য সাইলেন্স’। সিরিজ, নাটক, সিনেমা এবং সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তাকে নিয়ে লিখেছেন ইমরুল নূর।
সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘দ্য সাইলেন্স’ সিরিজটি থেকে দর্শকদের কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
অনেক ভালো সাড়া পাচ্ছি। শুধু যে আমি-ই পাচ্ছি, এমনটা নয়। প্রত্যেকটা সেক্টরের প্রশংসা হচ্ছে যেমন- নির্মাণ, আর্ট, সিনেমাটোগ্রাফি এবং যারা অভিনয় করেছেন এখানে সবার অভিনয়ের বিষয়ে অনেক পজেটিভ মন্তব্য দেখছি, শুনছি, পড়ছি। সব মিলিয়ে পুরো টিম প্রশংসা পাচ্ছে। অনেক ভালো লাগছে।
এমন একটা চরিত্র হয়ে উঠা কতটা চ্যালেঞ্জের? তার জন্য প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছিলেন?গল্পটা এত বেশি ইন্টারেস্টিং ছিলো যে শোনার পরই কাজটি করতে রাজি হয়ে যাই। আমার চরিত্রটাও ইন্টারেস্টিং যেখানে অভিনয়ের অনেক সুযোগ ছিল। আমার কাছে মনে হয়েছে, যদি চরিত্রটা সঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারি তাহলে দর্শকদের মায়াও লাগবে আবার রাগও হবে। তখন তাদের মনে প্রশ্ন জাগবে, এরকম কেন চরিত্রটা? তাই এমন একটা চরিত্র পেয়ে সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি। পরিচালক ভিকি জাহেদ গল্পের রুবি চরিত্রটি কীভাবে দেখতে চায়, সেসব নিয়ে তার কাছ থেকে শুনি এরপর আমার মত করে চরিত্রটিকে গুছিয়ে নেই।
লুকের দিক থেকে হালকা একটু পরিবর্তন আনা হয়েছে। যারা আমাকে চেনেন তারা সেটা দেখলেই বুঝতে পারবেন।
চরিত্রটির জন্য আপনাকে আলাদা দাঁত ব্যবহার করতে হয়েছিলো। জানা মতে, মুখে অতিরিক্ত জিনিস ব্যবহার করে অভিনয় করা কিংবা এক্সপ্রেশন প্রকাশ করা খুবই কঠিন। সেটা কীভাবে সামলেছেন?
হ্যাঁ, একদমই তাই। আমি আমার মতই কিন্তু একটু আলাদা, অন্যরকম দেখানোর জন্যই এরকমটা করা হয়েছে। ফেসিয়াল স্ট্রাকচারের মধ্যে পরিবর্তন আনতে আলাদা দাঁত ব্যবহার করতে হয়েছে। এটা আসলেই অনেক কঠিন ছিল আমার জন্য। দাঁতের ওপর দাঁত ব্যবহার করে কথা বলা, এক্সপ্রেশন দেওয়া আমার জন্য সহজ ছিলো না। আমি একটু কঠিন কিছু করতেই পছন্দ করি সবসময়। তাই চেয়েছিলাম কথা বলা, এক্সপ্রেশন থেকে ভঙ্গি কিছুটা আলাদা-ই হোক। সহজ ছিলো না, কথা বলতে গিয়ে অনেক সময় জড়িয়ে যেত তারপরও যতটুকু সম্ভব ওভারকাম করার চেষ্টা করেছি।
আর এই সিরিজটিতে নিজেকে সুন্দর কিংবা পরিপাটি দেখানোর কোন ইচ্ছেই ছিলো না। চাচ্ছিলাম আমাকে যেন আমার মত না লাগে।
যতটুকু প্রত্যাশা নিয়ে কাজটি করেছিলেন, তার কতটুকু পূরণ হয়েছে ?
টিমের একজন সদস্য হিসেবে কাজটি নিয়ে প্রত্যাশার চেয়ে ভয় ছিল বেশি। কারণ, এরকম একটা কনসেপ্ট নিয়ে কাজ- সেটা দর্শকরা গ্রহণ করবে কিনা, যেটা বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে সেটা বুঝবে কিনা! কি হলো, কেন হলো, কিভাবে হলো, মূল ম্যাসেজটা সবাই ধরতে পারবে কিনা এই ভয়টা ছিল।
সবার এত মন্তব্য, রিভিউ পড়ে মনে হলো যে আমরা সাকসেসফুল। দর্শকদেরকে ম্যাসেজটা বুঝাতে পেরেছি। সেই জায়গা থেকে পুরো টিম প্রশংসা পাচ্ছে। আমার মনে হয়েছিলো, কাজটা হয়তো খুব বেশি দর্শক দেখবে না কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এত এত মন্তব্য দেখছি যেটা আসলে ভালো লাগা অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। কেউ কেউ আবার এমন মন্তব্যও করেছেন যে, কিছুক্ষণ দেখার পর ভয়ে নাকি বন্ধ করে দিয়েছেন (হাহাহা)। আসলে ভয়ে বন্ধ করে দিলেই তো হবে না। আমরা চাই একদম শেষ পর্যন্ত দর্শকরা কাজটি দেখুক। এই গল্পের শেষ দেখাটা খুব জরুরি।
যার মাসের ত্রিশ দিনই সময় কাটতো শুটিং ফ্লোরে, এখন তার ব্যস্ততা কি নিয়ে?
আগে তো নাটকে নিয়মিত ছিলাম কিন্তু এখন অন্যান্য কাজের কারণে নাটকে সময় দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। নাটকের স্ক্রিপ্টের মধ্যে নতুনত্ব, আলাদা কিছু খুঁজছি। সবসময়ই যে আলাদা গল্প পাবো, এমনটাও তো সম্ভব না। তবে স্ক্রিপ্টে যেন সৌন্দর্যতা থাকে, গল্পটা সুন্দর হয় কিংবা দর্শকদের সাথে কানেক্ট হবে; এরকম স্ক্রিপ্টেই কাজ করার ইচ্ছে আছে। নয়তো বা আমার অনেক ভালো লাগতে হবে এমন গল্প হলে আবারও নাটকে দেখা যাবে।
আপনার দর্শকদের জন্য সামনে নতুন কি চমক থাকছ?
আগে থেকে বলে ফেললে সেটা তো আর চমক থাকে না। তাই আপাতত কিছু না-ই বলি।
লাক্স সুন্দরী প্রতিযোগিতা থেকে বের হওয়ার পর আপনার একটি সিনেমা করার কথা ছিলো কিন্ত সেটি আর হয় নি। এটা আসলে কেন? সিনেমা দিয়েই যার অভিষেক ঘটার কথা তার ব্যস্ততা বাড়লো নাটকে..
হ্যাঁ। লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার থেকে বের হওয়ার পরপই ‘ওয়ারিশ’ নামে একটা সিনেমার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলাম। এটাতে আমার সঙ্গে ছিলেন আরিফিন শুভ ভাইয়া। আমরা রিহার্সেলও করেছিলাম এটার কিন্তু এরপর নানা কারণে সে কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে ঐ সিনেমাটি-ই আর হয়নি।
যেহেতু সিনেমা দিয়ে অভিষেক হয়নি তাই আমি চেয়েছিলাম নাটকেই কাজ শুরু করি কারণ, এতে করে অভিনয়ের অনেক কিছু শিখতে পারবো। এরপর প্রস্তুত হয়ে নাহয় সিনেমা করবো। পরে নাটকেই ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। এরপর তো ওয়েব সিনেমা, সিরিজ করছি। যদি মেইনস্ট্রিম সিনেমা বা বড় পর্দায় কাজ এখন পর্যন্ত না করার সবচেয়ে বড় কারণ হলো, সঠিক গল্প, ভালো স্ক্রিন-প্লে এবং একটা ভালো টিম না পাওয়া। এক কথায় যদি বলি, মনের মত করে পাইনি এখনও। মনের বিরুদ্ধে গিয়ে আমি কোনো কাজ করতে চাচ্ছি না। নাটক আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। আমার পরিচিতি, দর্শকের ভালোবাসা- সবকিছুই নাটকের মাধ্যমে। নাটক দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করে আজকে আমি এই জায়গায়। আমি এই বিষয়টা অনেক বেশি উপভোগ করি। আমি শুধু ভালো কাজ করতে চাই। এটা দর্শক কোন মাধ্যমে দেখছে তার চেয়ে আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ- আমি তাদের কতটা ভালো কাজ দিতে পারছি, ভালো অভিনয় দিতে পারছি কিনা! দর্শক আমাকে ভালোবাসলে তারা নিজের মত করে দেখে নেবে। সেটা নাটকে, ওটিটিতে অনলাইন মাধ্যমে নাহয় টিকিট কেটে সিনেমাহলে দেখবে; আমার দর্শকদের প্রতি এটুক বিশ্বাস আছে।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় টেলিভিশনের প্রায় সব শিল্পীই এখন ওটিটিতে ঝুঁকছে। এতে করে টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে শিল্পী সংকট তৈরি হয়েছে বলে অনেক পরিচালকের অভিমত। তাদের ভাষ্য, সুযোগ থাকলেও প্রথম সারির শিল্পীদের এখন পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?
দেখুন, এই মুহূর্তটাতে আমি নাটকে কাজ কমিয়েছি আমার নিজের জন্য। এটা আমার নিজের সিদ্ধান্ত। নাটক ছেড়ে দিয়েছি, বিষয়টা কিন্তু তেমন না। আমি জানিয়েছি, ভালো স্ক্রিপ্ট হলে আমি অবশ্যই করবো। সে জায়গা থেকে আমার নিজের কাজ, নিজেকে আরও অনেক উপরে নিয়ে যাওয়ার জন্য এবং দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণ করার জন্য ঠিক সেরকম গল্পও তো লাগবে নাকি! তা নাহলে তো সেই একইরকমের কাজ করার পর দর্শকরাই বিরক্ত হবে আর বলবে, মেহজাবীন একইরকম কাজ করছে!
আমি নিজেকে আলাদা করার জন্য এবং দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণ করার জন্য নিজের মত করে কাজ করার চেষ্টা করছি। দর্শকরা তো এটাই চাইতো, কাজ কম হোক কিন্তু সেটা যেন ভালো হয়। আমি এখন সেটাই করছি। আর একজন শিল্পী হিসেবে আমিও তো চাইবো, আমার প্রত্যেকটা কাজ খুবই এক্সক্লুসিভ হোক, আলাদা হোক। আগের করা কোন চরিত্রের সাথে মিলে না যাক। দর্শকদের সেই প্রত্যাশা পূরণ করার চেষ্টাতেই এই সময়ে এসে কাজ কমিয়ে দেওয়া।
আর শিল্পীদের ওটিটিতে আগ্রহী হওয়ার অনেক কারণ আছে। এখানে শিল্পীরা নিজেদেরকে ফুটিয়ে তুলতে সব ধরণের স্বাধীনতা পাচ্ছে যেটা টেলিভিশনে সম্ভব হয় না। এটা একটা ক্রিয়েটিভ জায়গা। যেকোন ক্রিয়েটিভ কাজ ভালো করতে হলে সময়ের দরকার। ওটিটিতে শিল্পীরা ভালো গল্প পাচ্ছে, চরিত্র নিয়ে ভাবার সময় পাচ্ছে, সময় নিয়ে কাজ করতে পারছে। এটাই তো চায় সবাই।
তাছাড়া এখন আমাদের টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি অনেক বড়। এখানে অনেক শিল্পী রয়েছেন তাছাড়া যারা নতুন আছেন তারাও অনেক ট্যালেন্টেড। তাদের এখন সুযোগ দরকার ভালো পরিচালকদের সঙ্গে, ভালো গল্পে কাজ করার। এখন তাদেরকে সেই সুযোগটা দেওয়া হোক এবং তারা নিজেদের মত করে এগিয়ে যাক। একটা ইন্ডাস্ট্রি কিন্তু গুটিকয়েক জনের উপর নির্ভর করে চলবে না এবং উচিতও না। এখানে প্রত্যেকটা মানুষের সেই সুযোগটা পাওয়া উচিত। আবার যখন কারও মনে হবে যে আমি এখান থেকে অন্য জায়গায় যাবো, সে স্বাধীনতাও তার থাকা উচিত। কারণ, আমরা যারা শিল্পী তারা কিন্তু অভিনয়টা বেছেই নিয়েছি ভালো সুযোগ, ভালো কাজ, ভালো চরিত্রের জন্য। যেখানে সে সুযোগটা পাবে, সেটা বেছে নেওয়ার অধিকার একজন শিল্পীর আছে। এতদিন আমি নাটকে অভিনয় করেছি, এখন একটু কম করছি; এটা একান্তই আমার সিদ্ধান্ত। সেই স্বাধীনতা তো একজন শিল্পীর অবশ্যই থাকা উচিত।
যারা এখন নতুন কাজ করছে, তাদের জন্য আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভকামনা। তারা যে চেষ্টা করছে এটা খুব ভালো লাগছে। দর্শকদের উচিত তাদেরকে সাপোর্ট করা। কারণ, একটা সময় সেই সাপোর্টটুকু আমরাও পেয়েছিলাম যখন একেবারেই নতুন ছিলাম। আমাদেরকে যেই ভালোবাসাটা দিয়েছিলেন সেই ভালোবাসাটুকু এখন নতুনদেরকে দিন, এটাই আমি চাইবো।