হৃদরোগে আক্রান্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসকদের একটি দল ঢাকায় পৌঁছেছে। তারা সেতুমন্ত্রীকে দেখার পর তার বিদেশ যাওয়া বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
এর আগে রোববার বিকেলে সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকরা বলেন, ওবায়দুল কাদের চোখ খুলছেন ও সাড়া দিচ্ছেন। তবে তিনি আশঙ্কামুক্ত নন। এভাবে ১০ ঘণ্টা যদি তিনি থাকেন তাহলে তিনি শঙ্কামুক্ত হবেন।
তারা জানান, তার অবস্থা স্থিতিশীল হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দেশের বাইরে নেওয়া হতে পারে।
জানা গেছে, রোববার ফজরের নামাজের পর হঠাৎ করে কাদের শ্বাসকষ্টে ভোগেন। অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকলে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নিয়ে আসেন ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রী ইসরাতুন্নেসা কাদের।
চিকিৎকরা জানান, তাকে দ্রুত সিসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার হার্ট অ্যাটাক হয়। পরে এনজিওগ্রাম করে দেখা যায়, তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক। এর একটি সারানো গেলেও বাকি দুটি বর্তমান অবস্থায় সারানো সম্ভব নয়। তাহলে অবস্থার অবনতি হতে পারে।
এরই মধ্যে, দুপুরে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য ওবায়দুল কাদেরকে সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। প্রস্তুতির জন্য তার স্ত্রী ইসরাতুন্নেসা বাসায় ফিরে যান। দুপুরের পরে তিনি আবার হাসপাতালে ফিরে আসেন।
বিকেলে সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিএসএমএমইউর উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া ও কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান।
কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ওবায়দুল কাদের সকালে যে অবস্থায় ছিলেন তার থেকে কিছুটা উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে এখনো শঙ্কামুক্ত বলা যাবে না তাকে। যেকোনো মুহূর্তে ছন্দপতন ঘটতে পারে।
বর্তমান অবস্থা অনেকটা ভালো জানিয়ে তিনি বলেন, হার্টবিট ৩৫-এ চলে এসেছিল। এখন ১০০’র মধ্যে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওবায়দুল কাদেরকে হাসপাতালে দেখতে এসে নাম ধরে ডাকলে তিনি মিটমিট করে তাকানোর চেষ্টা করেন। এরপর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দেখতে এলে ওবায়দুল কাদের পুরোপুরি চোখ খোলেন।
তিনি কথা বলার চেষ্টা করেছেন কিন্তু বলতে পারছেন না।
উপাচার্য বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসক দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিচ্ছেন। তারা যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে আসবেন তাতে ওবায়দুল কাদেরকে সিঙ্গাপুর নেওয়া হতে পারে। তবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আলী আহসান বলেন, ‘তার বর্তমানে শারীরিক যে অবস্থা তাতে তাকে বিদেশে নেয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। তবে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যদি প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকেন, তাহলে আমরা অ্যালাও করতে পারি।
বিদেশে নেয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর দেখছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
গতকাল রবিবার দুপুরে তার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের কার্ডিওলজির অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান জানান সেতুমন্ত্রীর তিনটি রক্তনালিতে ব্লক ধরা পড়েছে, যার একটি স্টেন্টিংয়ের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ওনার অবস্থা ওঠানামার মধ্যে আছে। দোয়া করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। যেহেতু উনি ভেন্টিলেশনে আছেন, সেহেতু উনি জীবনশঙ্কায় আছেন বলতে পারেন।
তিনি বলেন, ‘তার (ওবায়দুল কাদের) যে রক্তনালিটা সবচেয়ে বেশি ক্রিটিক্যাল ছিল, আমরা শুধু সেটাই ঠিক করেছি। কিন্তু সেটা বোধ হয় পর্যাপ্ত নয়। কারণ তিনটি নালি প্রয়োজন হয় রক্ত সরবরাহের জন্য। কিন্তু এই মুহূর্তে সেগুলো সারানো যাবে না। সেগুলো ঠিক করতে গেলে আরও বিপদ ঘটবে। যে নালিটা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছিল, ওই নালিটা ঠিক করার পর তার পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতির পর্যায়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন অবস্থার উন্নতি হয়-অবনতি হয়, এমন অবস্থা চলছে। ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা না যাওয়া পর্যন্ত তার অবস্থা স্থিতিশীল বলা যাচ্ছে না।