সরকারি পর্যায়ে উৎপাদিত পানি মুক্তা। সম্প্রতি এর বাজারজাতকরণ নিয়ে আক্ষেপ জানিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে ফেসবুকে শুরু হয়েছে মুক্তা পানির প্রচার। ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে, জনগণই করবে মুক্তা পানির প্রচার।
মঙ্গলবার বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসের অনুষ্ঠানে ‘মুক্তা' পানির বোতল হাতে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আক্ষেপ জানান।
বক্তৃতার একপর্যায়ে তিনি টেবিলে থাকা মুক্তা পানি চেয়ে নেন। এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, 'এই যে এই পানিটা, এটা কারা তৈরি করে জানেন? এটা প্রতিবন্ধীরা তৈরি করে।'
গাজীপুরে অবস্থিত, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিচালিত হয় মুক্তা পানির প্রকল্প। এর বিশেষত্ব হলো এ কারখানা সম্পূর্ণরূপে প্রতিবন্ধীদের দ্বারা চলে। এর পানি মাটির ভেতর থেকে তুলে আনা হয়।
তবে সরকারি অফিসে এ পানির ব্যবহার না হওয়া এবং এর বাজারজাতকরণ নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
মঙ্গলবার তিনি বলেন, 'দুর্ভাগ্য হলো, আমার অফিসে বলেও এই পানিটা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না'।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমি যখন বলি আমার জন্য হয়তো কিছু পাঠানো হয়, কিন্তু অন্য ব্রান্ডের পানি নিয়ে আসে। এই ব্রান্ডের (মুক্তা পানি) পানিটা বাজারজাতকরণে আন্তরিকতার একটু অভাব দেখি'।
এরপর থেকে ফেসবুকে এ পানি নিয়ে বিভিন্ন তথ্য ও গুণ প্রচার করা হয়। বলা হয়, মুক্তা পানির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর উৎপাদন প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ যুক্ত প্রায় তিন শ'র অধিক প্রতিবন্ধী। পানি বিক্রি থেকে যে আয় হয়, তা ব্যয় হয় প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে।
জনগণকে আশ্বস্ত করতে বলা হয়, এই পানির বিশুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন নেই, কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জাতীয় সংসদ সচিবালয় থেকে শুরু করে সরকারি/আধা-সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে অফিশিয়াল পানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় মুক্তা।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সুইডিশ কারিগরি সহায়তায় টঙ্গীতে এর কারখানা অবস্থিত।
ফেসবুক ব্যবহারকারীরা আরো বলেন, মুক্তা পানির বোতল হিসেবে কিছুটা অপরিচিত লাগতে পারে। সাধারণত রেস্টুরেন্টে, হোটেলে, দোকান এই পানির বোতল দেখা যায় না।
তারা বলেন, পরিচিত ব্র্যান্ডের পানির প্রচারে খরচ হয় কোটি টাকা। প্রতিটি শহরের মহল্লায় মহল্লায় এদের ডিলাররা পৌঁছে গেছে। দেশীয় মুক্তা সেখানে অনেক পেছনে।
আর এর সমাধান হিসেবে তারা বলছেন, এ পানির প্রচারের উপায় তারা নিজেরাই।
ফেসবুকে বলা হয়, 'আমরাই মুক্তার মার্কেটিং করব। আজ থেকে যখনই পানি কিনতে যাব, দোকানিকে জিজ্ঞেস করব মুক্তা ব্র্যান্ডের পানি আছে নাকি? রেস্টুরেন্টে কিংবা হোটেলে খেতে বসে বলব, আমাকে মুক্তা ড্রিংকিং ওয়াটার দিন। প্রথম প্রথম তাদের কাছে থাকবে না। স্বাভাবিক, কারণ বিদেশি ব্র্যান্ডের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মুক্তা এখনো বাজারে ঢুকতে পারেনি।
তারা আরো জানান, ক্রমাগত চাহিদা ও আগ্রহের ফলে একসময় মুক্তা ব্র্যান্ডের পানি নিয়ে তারা আপনার কাছে আসতে বাধ্য হবে। লাগবে না তখন কোটি টাকার মার্কেটিং।
এর যৌক্তিকতা তুলে ধরে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা বলেন, পানি যখন কিনছি, তখন আমাদের প্রতিবন্ধী ভাইবোনদের তৈরি দেশীয় ব্র্যান্ডের পানিটাই না হয় কিনি!
'আমি যখন তৃষ্ণা মিটাচ্ছি, একজন স্বাবলম্বী প্রতিবন্ধীর মুখে তৃপ্ত হাসি ফুটে উঠছে, দৃশ্যটি কতই না মায়াময় ও সুন্দর!'