বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) ঘষামাজা করে বিকৃত করার অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের সুযোগ নিচ্ছে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। মাঠপর্যায়ের কার্যালয়গুলোকে এসিআর ঘষামাজাকারী এবং সংবাদপত্রে অধিদপ্তরবিরোধী সংবাদ প্রকাশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মাঠপর্যায়ের ২০টি কার্যালয়কে এ সংক্রান্ত নির্দেশ দিয়েছে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।
এর আগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি সরকারি কলকারখানা অধিদপ্তরের পদোন্নতিপ্রত্যাশী ১১ জন শ্রম পরিদর্শক শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ করে বলেছেন, যাদের নাম পদোন্নতির তালিকায় নেই তারাই এসিআর ঘষামাজা করেছেন। পদোন্নতি প্রক্রিয়া আটকে দেওয়ার জন্য তারা প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মিথ্যা মামলাও করেছেন। ৩৩তম বিসিএস থেকে নন-ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রম পরিদর্শকরা পদোন্নতির বিরোধিতা করে আসছেন। অধিদপ্তরবিরোধী এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তারা দাবি জানিয়েছেন। আইন ও বিধি মেনে পদোন্নতির নথি দ্বিতীয়বারের মতো মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে ৩৩তম বিসিএসের এসব কর্মকর্তা ফের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। ৩৩তম বিসিএস থেকে নন-ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রম পরিদর্শকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তারা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে আবেদন করেন।
১১ ফেব্রুয়ারি এ আবেদন করার পরদিন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব দিল আফরোজা বেগম কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শককে ৩৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আনুরোধ জানান। এ নির্দেশনা দিনে দিনেই অধিদপ্তরে পৌঁছে যায়। অধিদপ্তর থেকেও একই দিনে নরসিংদী, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, পাবনা, বরিশাল, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেট, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, কুমিল্লা, খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, বগুড়া, রাজশাহী, দিনাজপুর ও রংপুরের উপমহাপরিদর্শকদের চার দিনের মধ্যে তদন্ত করে মতামতসহ প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
যে ১১ জন শ্রম পরিদর্শক ৩৩তম বিসিএস থেকে নন-ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রম পরিদর্শকদের বিরুদ্ধে এসিআর জালিয়াতির অভিযোগ করেছেন তারা হলেন নঈমুল আজিজ, সুদীপ চন্দ্র দেব, মোহাম্মদ মান্নান হোসেন, ফরহাদ হোসেন, আহসান জামিল, মো. রফিকুল ইসলাম, এবিএম গোলাম পারভেজ, স্বপ্না রানী আঢ্য, মাহমুদুর রহমান, সঞ্জয় কুমার দাশ ও মোস্তাফিজুর রহমান। এসব কর্মকর্তার মধ্যে নঈমুল আজিজ, আহসান জামিল ও স্বপ্না রানী আঢ্য অভিযোগের বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তবে শ্রম পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ৩৩তম বিসিএস থেকে নন-ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রম পরিদর্শকরাই এসিআর বিকৃতির ঘটনা ঘটিয়েছেন। এ অভিযোগের প্রমাণ প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের মামলা।
এদিকে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ৩৩তম বিসিএস থেকে নন-ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত ৫০ জন শ্রম পরিদর্শকও শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে আবেদন করে এসিআর জালিয়াতি নিয়ে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তারা একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে অন্য সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ আনেন।
এদিকে জ্যেষ্ঠতা তালিকায় নাম না থাকা শ্রম পরিদর্শকরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং মহাপরিদর্শক কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কাছে ন্যায়বিচার চেয়ে বারবার ব্যর্থ হওয়ার ভুক্তভোগীরা গণমাধ্যমে দ্বারস্থ হয়েছেন। মন্ত্রণালয় এবং দপ্তরের গুরুতর বিভিন্ন অনিয়ম বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিকবার প্রকাশিত হলেও মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর এ বিষয়ে কোনো তোয়াক্কা করছেন না। অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিকে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করেছে। মিথ্যা ও সাজানো অভিযোগের মাধ্যমে ৩৩তম বিসিএস থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রম পরিদর্শকদের টার্গেট করা হয়েছে। একটি তদন্ত চলাকালীন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
এর আগে গত বছর ২৪ জুন এসব কর্মকর্তার পদোন্নতির প্রস্তাব পাবলিক সার্ভিস কমিশনে (পিএসসি) পাঠানো হয়। কিন্তু ঘষামাজা করে এসিআর জালিয়াতি করায় এবং ফিডার পদধারীদের সমন্বিত জ্যেষ্ঠতার তালিকা না থাকায় এক মাস পর পিএসসি প্রস্তাবটি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠায়। এসিআর জালিয়াতির সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ ত্রুটিপূর্ণ এসিআর সংশোধন করে পিএসসিকে অবহিত করার জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয় পিএসসি। একই সঙ্গে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ সংক্রান্ত বিধিবিধান অনুসরণ করে জ্যেষ্ঠতা তালিকা প্রণয়ন করার কথাও বলা হয়। পিএসসি শ্রম মন্ত্রণালয়কে জানায়, ৪৮ জন শ্রম পরিদর্শকের মধ্যে ১৯ জনের নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকিদের এসিআরেও ঘষামাজা রয়েছে।
বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) ঘষামাজার ঘটনা তদন্ত শেষ না করেই অভিযুক্তদের নতুন করে পদোন্নতি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম মন্ত্রণালয়। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর গত ৯ জানুয়ারি যাদের এসিআর ঘষামাজা করা হয়েছে সেই ৪৮ জন শ্রম পরিদর্শককেই সহকারী মহাপরিদর্শক পদে পদোন্নতির জন্য ফের প্রস্তাব পাঠায় শ্রম মন্ত্রণালয়ে।