পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) দায়িত্বরত এক পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন এক নারী পুলিশ পরিদর্শক। ওই নারী কর্মকর্তার অভিযোগ, ২০১৯ সালে সুদানের দারফুরে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে থাকাকালে এবং দেশে ফেরার পর তাকে কয়েক দফা ধর্ষণ করেন বর্তমানে বাগেরহাট পিবিআইর কর্মকর্তা মোক্তার হোসেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলাটির আবেদন করেন ভুক্তভোগী ওই পরিদর্শক। ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহার বাদীর জবানবন্দি শুনে অভিযোগটি সরাসরি এজাহার হিসেবে গণ্য করতে ঢাকার উত্তরা পূর্ব থানাকে নির্দেশ দেন। রাতে অভিযোগটি থানায় মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়।
ট্রাইব্যুনালের পিপি আফরোজা ফারহানা সাংবাদিকদের জানান, বাদী এবং আসামি দুজনেই সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের কর্মরত ছিলেন। অভিযুক্ত পুলিশ সুপার মিশনে পুলিশের কন্টিনজেন্টের কমান্ডার ছিলেন। তিনি বিসিএস ২৪ ব্যাচের কর্মকর্তা ও তার গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পিবিআইর প্রধান ও উপ-মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার গতকাল রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইন সবার জন্য সমান। ব্যক্তির দায় কোনো প্রতিষ্ঠান নেবে না। ওই এসপির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে আমরা শুনেছি। এখনো মামলার কপি আমাদের কাছে আসেনি।’
পিবিআইর প্রধান বলেন, ‘কপি পাওয়ার পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। অভিযোগ প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।’
বাদীপক্ষের আইনজীবী জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯-এর ১ ধারায় মামলাটি করা হয়েছে। আসামির জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। শুনানি বা মামলার পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে আদালত কোনো আদেশ দেয়নি।
মামলার আবেদনে ওই নারী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের মে মাসে পুলিশ সুপার মোক্তার হোসেন সুদানে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে পুলিশের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হন। সুদানে একই মিশনে আগে থেকে কর্মরত থাকায় মিশনসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা নেওয়ার নাম করে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন মোক্তার হোসেন। এরপর নানা অজুহাতে তার বাসায় যাতায়াত শুরু করেন তিনি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়ার কারণে তিনি এ বিষয়ে তাকে নিষেধ করতে পারেনি। কিছুদিন যেতে না যেতেই মোক্তার হোসেন শোনাতে শুরু করেন পারিবারিক কলহের গল্প। ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর অপ্রস্তুত অবস্থার সুযোগ নিয়ে তাকে প্রথম ধর্ষণ করেন এসপি। ঘটনা কাউকে না জানানোর জন্য ভয়ভীতি দেখিয়ে চলে যান। তার দুই দিন পরে ক্ষমা চাওয়ার অজুহাতে তার বাড়িতে এসে আবারও ধর্ষণ করেন। পরে মুখে মুখে কলেমা পড়ে বিয়ে করার নামে নিয়মিত তাকে ধর্ষণ করেছেন।
অভিযোগে ওই নারী কর্মকর্তা লেখেন, ছুটিতে দেশে ফিরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকার উত্তরার একটি হোটেলেও বাদীকে কয়েকবার ধর্ষণ করেন মোক্তার হোসেন। একই বছরের জুন মাসেও সুদানের খার্তুমে একটি হোটেলে ধর্ষণের শিকার হন তিনি। ওই বছরের নভেম্বরেও ঢাকার উত্তরার একই হোটেলে কয়েকবার ধর্ষণের শিকার হন তিনি। এক পর্যায়ে নিকাহ রেজিস্ট্রি করার তাগিদ দিলে মোক্তার হোসেন টালবাহানা করা শুরু করেন। ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল রাজারবাগে মোক্তারের বাসায় গিয়ে কাবিননামা করতে বললে তিনি অস্বীকৃতি জানান। এ সময় মোক্তারের স্ত্রী এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা তাকে মারধর করেন।
মামলার আবেদনে ওই নারী পরিদর্শক আরও উল্লেখ করেছেন, করোনা মহামারীর কারণে আদালত বন্ধ থাকায় মামলার আবেদনে দেরি হয়েছে। এই বিষয়ে তিনি এর আগে পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।
ডিএমপির উত্তরা ডিভিশনের উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম গতকাল রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, আদালত থেকে কাগজ পাওয়ার পর মামলা হয়েছে। এখন আসামিকে গ্রেপ্তারসহ আইনগত যত বিষয় আছে আমরা দেখছি।