সত্তরের দশকের শুরুর দিকে তিনবার ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন ডাচ কিংবদন্তি ইয়োহান ক্রুইফ। তার সমকক্ষতা অর্জন করেন লিওনেল মেসি ২০০৯ থেকে পরপর তিন বছর বর্ষসেরার মর্যাদা জিতে। ২০১২ সালে মেসির চতুর্থ ব্যালন ডি’অর জেতার আগে ক্রুইফ ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বেশিবার ব্যালন ডি’অর মেসিই জিতবে। ও যে মানের খেলোয়াড়, খুব সম্ভবত সে ৫, ৬, এমনকি ৭টি ব্যালন ডি’অরও জিততে পারে। ওর কোনো তুলনা নেই। ও সবার চেয়ে ভিন্ন।’
অবিশ্বাস্য সেই কাণ্ডটাই ঘটালেন মেসি। আর্জেন্টিনার হয়ে কোপা আমেরিকা জয়, বার্সেলোনার হয়ে গত মৌসুমে লা লিগায় সর্বাধিক গোল, কোপা দেল রে জয়ের স্বীকৃতি পেলেন সপ্তমবার ব্যালন ডি’অর জিতে। ১৯৫৬ সাল থেকে ‘ফ্রান্স ফুটবল’ ম্যাগাজিনের দেওয়া বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের এই পুরস্কার জয়ের দৌড়ে এবার ফেভারিট ছিলেন তিনি। পোল্যান্ডের রবার্ট লেভানডোস্কিকে ভাবা হচ্ছিল মেসির নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী। ১৮০ দেশের সাংবাদিকের ভোটাভুটিতে লেভানডোস্কিকে ৩৩ পয়েন্টে পেছনে ফেলে নিজের সর্বোচ্চসংখ্যক ব্যালন ডি’অর জয়ের রেকর্ডকে আরও একধাপ উঁচুতে নিয়ে গেলেন ৩৪ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন। প্যারিসে সোমবার রাতে লুইস সুয়ারেজ বন্ধুর হাতে তুলে দেন বিশ্বসেরার স্বীকৃতি।
সেরার লড়াইয়ে ৬১৩ পয়েন্ট পেয়েছেন মেসি। ৫৮০ পয়েন্টে দ্বিতীয় হয়েছেন লেভানডোস্কি। ব্যালন ডি’অর জিততে না পারলেও নতুন পুরস্কার বর্ষসেরা স্ট্রাইকারের খেতাব পেয়েছেন বায়ার্ন মিউনিখে খেলা লেভা। সেরা পাঁচের বাকি তিনজন হলেন জর্জিনহো (৪৬০ পয়েন্ট), করিম বেনজেমা (২৩৯ পয়েন্ট) এবং এনগোলো কন্তে (১৮৬ পয়েন্ট)। পাঁচবার ব্যালন ডি’অর জয়ী ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এবার হয়েছেন ষষ্ঠ (১৭৮ পয়েন্ট)। ২০১০ সালের পর এবারই শীর্ষ পাঁচের বাইরে রোনালদো।
সপ্তমবার ব্যালন ডি’অর জয়ে গর্বিত মেসি ধন্যবাদ জানান সবাইকে, ‘আবারও ফ্রান্স ফুটবলের ব্যালন ডি’অর জিতে আমি সত্যিই গর্বিত। সপ্তমবারের মতো এটি জিততে পারাটা অবিশ্বাস্য। ধন্যবাদ জানাতে চাই আমার পরিবার, বন্ধুদের এবং যারা আমাকে অনুসরণ করে (সমর্থক), আমাকে সমর্থন করে। তাদেরকে ছাড়া আমি এটি অর্জন করতে পারতাম না।’
২০০৯ থেকে টানা চারবার ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন মেসি। মাঝে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে বর্ষসেরার মর্যাদা পান ২০০৮-এর ব্যালন ডি’অর বিজয়ী ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। এরপর ২০১৫-তে তা উদ্ধার করেন মেসি। ২০১৬ ও ২০১৭-তে রোনালদো জেতেন পরপর দুবার। ২০১৮-তে জেতেন ক্রোয়েশিয়ার লুকা মদ্রিচ। ২০১৯ সালে আবার মেসি। গত বছর করোনার কারণে পুরস্কারটি দেয়নি ‘ফ্রান্স ফুটবল’। তবে সে বছর ফিফা দ্য বেস্ট পুরস্কার জয়ী লেভানডোস্কিকে ব্যালন ডি’অর দেওয়ার দাবি করেছেন মেসি নিজেই।
২১ বছরের ক্লাবকে ছেড়ে গেল আগস্টে পিএসজিতে যোগ দেন মেসি। ফলে ফ্রান্সের কোনো ক্লাবের দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ব্যালন ডি’অর হাতে নিলেন মেসি। ফ্রেঞ্চ ক্লাব মার্শেইয়ে খেলা জ্যঁ পিয়েরে পাপা প্রথমবার জিতেছিলেন ব্যালন ডি’অর ১৯৯১ সালে। মেসি মর্যাদার এই পুরস্কার জয়ের পর ফ্রান্সের বিখ্যাত আইফেল টাওয়ারে তাই বিশেষ আলোকসজ্জা করা হয়।