শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির এই জঘন্য মন্তব্য শুনে বিরক্তি ও ঘৃণা বোধ করেছি। তবে বিস্মিত হইনি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চপর্যায়ে আসীন তথাকথিত ‘শিক্ষিত’ মানুষদের মধ্যে অনেকেই এ রকম মানসিকতা ধারণ করেন। দুঃখজনক হলো একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের মুখ থেকে এ রকম বক্তব্য শোনা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার কেন্দ্র হবার কথা। সে জায়গায় অনাচারে-দুর্নীতিতে এমনভাবে ডুবে গেছে। সেখানে নারী শিক্ষার্থীদের কেবল বিবাহের উপযুক্ততা তৈরির জন্য যেতে হয়, এহেন ধারণাই হয়তো অনেকে লালন করেন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষ করে নারীরা সমাজের সব ক্ষেত্রে নিজেদের সাফল্যের সাক্ষর রাখছেন আজ বহু বছর ধরে।
জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষা ও আবাসিক পরিবেশ বরাবর উদার। সেখানে সফলভাবে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন সংঘটনের ইতিহাস আছে। তবে তখনো এ রকম মানসিকতার লোকেরা ধর্ষণের শিকার মেয়ের সম্পর্কে উচ্চারণ করেছিল, মেয়েটা ওই সময়ে ওখানে কী করছিল?
জাহাঙ্গীরনগরের মেয়েরা শিল্প-সংস্কৃতি, শিক্ষা, বাণিজ্যিক, সবক্ষেত্রে বা প্রতিষ্ঠানেই গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন আছেন। অথচ তারপরেও এ ধরনের মধ্যযুগীয় মন্তব্য আমাদের শ্রবণ করতে হলো। বহু শিক্ষার ক্ষেত্রে রাতভর গ্রুপ স্টাডির প্রচলন আছে, যেমন স্থাপত্য প্রকৌশল। কিন্তু সমাজে একটা মিথের মতো জাহাঙ্গীরনগরের মেয়েদের ব্যাপারে এ রকম ধারণার প্রচলন দুঃখজনক।
অন্যদিকে, মেয়েদের ‘বিয়ে হবে না’ এই দুশ্চিন্তা বাদ দিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ কাজের উদ্দেশ্যে গড়ে তোলা শিক্ষক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব হওয়া উচিত। সত্য হলো, সমাজ যখন নারীকে তার কর্মদক্ষতার পরিবর্তে কেবল বিবাহ ও সাংসারিক পরিস্থিতি দিয়ে বিচার করতে চায় তখন সেই সমাজের অন্তর্গত বেশির ভাগ ‘শিক্ষিত’ মানুষের ধারণাও তার ঊর্ধ্বে উঠতে পারে না। তবে আশা থাকবে যে একদিন এই শ্রেণির মন মানসিকতা পরিবর্তন হবে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক