আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও সাংগঠনিক স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজীদ ও অর্থ সম্পাদক রফিক উল্লাহ্ সেলিমকে অব্যাহতি দিয়েছে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন।
শনিবার সংগঠনের কেন্দ্রীয় পর্ষদের সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে ফেডারেশনের প্রচার সম্পাদক মাসুদ আলম বাবু স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে।
দেশের তিন শতাধিক নাট্যদলের প্রতিনিধিত্ব করা ৪০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটিতে প্রথমবার কোনো সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনা ঘটলো। ১৯৮০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই সংগঠনটি।
কামাল বায়েজীদ দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, তার অনুপস্থিতিতে পর্ষদের সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সংগঠনের গঠনতন্ত্র মোতাবেক আইনের আশ্রয় নেবেন তিনি।
আনীত অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ভিত্তিহীন অভিযোগে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
কেন্দ্রীয় পর্ষদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কামাল বায়েজীদের স্থলাভিষিক্ত হবেন বর্তমান অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি চন্দন রেজা আর অর্থ সম্পাদক রফিক উল্লাহ সেলিমের স্থলাভিষিক্ত হবেন ফেডারেশনের বর্তমান আন্তর্জাতিক সম্পাদক চঞ্চল সৈকত।
গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের তিন বছরের ব্যয় হওয়া ১ কোটি ২৪ লাখ ৫১ হাজার ৩৭৩ টাকার হিসাব দিতে না পারায় এবং সংগঠনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে কেন্দ্রীয় পরিষদকে অবহিত না করে ২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট ৬৮০৬০৮২ চেকের মাধ্যমে জনতা ব্যাংক লিমিটেড থেকে সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজীদ নিজের অ্যাকাউন্টে সংগঠনের টাকা ট্রান্সফার করেন।
এতে বলা হয়, বিগত তিন বছর যাবৎ সাধারণ সম্পাদক একক সিদ্ধান্তে ফেডারেশনকে পরিচালিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন। এমনকি সংগঠনের গঠনতন্ত্রের শব্দ ধারা-উপধারা নিজের মতো করে পরিবর্তন করে সকল সদস্য সংগঠনের নিকট প্রেরণ করার মতো ধৃষ্ঠতাপূর্ণ অমার্জনীয় অপরাধ করেন। সংগঠনের গঠনতন্ত্রবিরোধী কার্যক্রমের মাধ্যমে ৪০ বছরের পুরোনো সংগঠনকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন।
চিঠিতে বলা হয়, কেন্দ্রীয় পরিষদের ৪১ জন সদস্যের লিখিত ২৯টি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার (২২ জানুয়ারি) তারিখে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় পরিষদ সভায় উপস্থিত ৪০ জন সদস্যের সকলের সর্বসম্মতিক্রমে সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজীদকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। একই সঙ্গে এই মর্মেও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, সে ভবিষ্যতে আর কখনোই গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনে কোনো দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন না।
এতে আরও বলা হয়েছে, বিগত ২৩ অক্টোবর কেন্দ্রীয় পরিষদের সভায় আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের দায়ে অর্থ সম্পাদক রফিক উল্লাহ সেলিমকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে ৩০ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় পরিষদকে অর্থের যাবতীয় হিসাব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি উক্ত হিসাব বুঝিয়ে না দেওয়ায় শনিবার কেন্দ্রীয় পরিষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে রফিক উল্লাহ সেলিমকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়।
বিগত ২০২১ সালের মার্চ থেকে কামাল বায়েজীদ ও রফিক উল্লাহ সেলিমের কাছে সংগঠনের আয়-ব্যয়ের হিসাব চেয়ে আসছিল কেন্দ্রীয় পরিষদ। কিন্তু তারা নানা অজুহাতে হিসাব দিতে গড়িমসি করে এবং চূড়ান্তভাবে অর্থের হিসাব দিতে ব্যর্থ হয়। তারই প্রেক্ষিতে এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন জানায়।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে কামাল বায়েজীদ বলেন, ‘সংগঠনের বর্তমান সভাপতি লিয়াকত আলী লাকী হুট করেই এই সভা আহ্বান করেন। আমি শারীরিক অসুস্থতা এবং করোনা পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে সভার তারিখ পেছানোর কথা বললেও তারা তারিখ না পিছিয়ে তড়িঘড়ি করে সভায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘এখন আমি সংগঠনের গঠনতন্ত্র মোতাবেক আইনের আশ্রয় নেবো। আমি এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করছি।’
অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি চন্দন রেজা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সভায় কেন্দ্রীয় পরিষদের উপস্থিত সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভা কেন্দ্রীয় পরিষদের বেশিরভাগ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। করোনার জন্য দু-একজন সদস্য উপস্থিত না থাকলেও তারা এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সম্মতি জানিয়েছেন।’
এ ঘটনায় গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রামেন্দু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই ঘটনায় আমি ভীষণ রকম মর্মাহত।’
ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘খুবই দুঃখজনক ঘটনা এটি। সংগঠনের গঠনতন্ত্রে এভাবে সাধারণ সম্পাদককে অব্যহতি দেওয়ার নিয়ম রয়েছে কি-না সেটা আমি গঠনতন্ত্রটি পড়ে মন্তব্য করবো।’
গঠনতন্ত্র পড়ে প্রতিক্রিয়া জানাবেন বলে জানিয়েছেন দেশের অগ্রজ নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদও।