logo
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০
বিএসএমএমইউর সেমিনার
দেশে অপরিণত শিশুর ৩০ ভাগের রেটিনায় সমস্যা
বিশেষ প্রতিনিধি

দেশে অপরিণত শিশুর ৩০ ভাগের রেটিনায় সমস্যা

দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩০ লাখ শিশু জন্মগ্রহণ করে। তাদের মধ্যে প্রায় চার লাখ অপরিণত। অপরিণত শিশুর রেটিনা স্বাভাবিকভাবেই অপরিণত থাকে। শতকরা ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে সেই রেটিনা ধীরে ধীরে পরিপূর্ণতা পায়। ৩০ ভাগ ক্ষেত্রে দেখা দেয় নানা সমস্যা। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয়ের অভাবে একসময় এসব শিশুর দৃষ্টি রক্ষা করা সম্ভব হয় না।

গতকাল রবিবার বিশ্ব রেটিনা দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আয়োজিত এক সেমিনারে চিকিৎসকরা এ তথ্য তুলে ধরেন।

এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে চিকিৎসকরা বলেন, রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচিউরিটি বা অপরিণত শিশুর রেটিনার রোগ। এটি বাংলাদেশে নতুন সমস্যা। তাই রেটিনায় সমস্যা নিয়ে জন্ম নেওয়া অপরিণত ৩০ শতাংশ শিশুকে খুঁজে বের করতে চক্ষু বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরীক্ষা (স্ক্রিনিং) দরকার। অপরিণত শিশু জন্মগ্রহণ করলে অবশ্যই সঠিক সময়ে চোখ পরীক্ষা করাতে হবে। সঠিক সময়ে যদি এ রোগ ধরা যায়, তাহলে শিশুর দৃষ্টি রক্ষা করা সম্ভব। বর্তমানে আমাদের দেশে অপরিণত শিশুদের যতœ নেওয়ার বিশেষ ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের সক্ষমতা বেড়েছে।

এতে বলা হয়, দেশে ডায়াবেটিস এখন মহামারীরূপে আবির্ভূত হয়েছে। ডায়াবেটিস চোখের সব অংশের তুলনায় রেটিনায় বেশি ক্ষতি করে। অন্ধত্বের সামগ্রিক কারণের মধ্যে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির জন্য অন্ধত্ব বরণ করে শতকরা ১২ দশমিক ৫ শতাংশ ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষ। ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী এই একই সমস্যায় ভুগতে পারেন।

সেমিনারে আরও বলা হয়, ১৫ বছর বা আরও অধিককাল ধরে যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাদের ভেতরে প্রায় ২ শতাংশ মানুষ অন্ধ হয়ে যায়। আরও ১০ শতাংশের দৃষ্টিশক্তির গুরুতর অবনতি ঘটে। ডায়াবেটিস যাদের আছে তাদের উচ্চ রক্তচাপ থাকা খুবই স্বাভাবিক। এ রোগে চোখের রেটিনার নানা সমস্যা হতে পারে। সঠিক চিকিৎসা না হলে এখান থেকেও অন্ধত্ব হতে পারে।

রেটিনা সমস্যার চিকিৎসা আছে জানিয়ে চিকিৎসকরা বলেন, চোখের ভেতরের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ রেটিনা। বিভিন্ন রকম শারীরিক ও চোখের সমস্যায় রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে একজন ব্যক্তি আজীবনের জন্য অন্ধ হয়ে যেতে পারে। দেশে রেটিনার সমস্যা বেড়েই চলেছে। কিন্তু এ নিয়ে মানুষের সচেতনতা কম। এ রোগের চিকিৎসা আছে। লেজার করা হয়, চোখের ভেতর ইনজেকশনও দেওয়া হয়। রেটিনায় রোগ প্রতিরোধ করার জন্য ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকলে বছরে একবার রেটিনা পরীক্ষা করাতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে। বয়স ৬০-এর ওপরে হলে বছরে একবার ম্যাকুলা বিষয়ে পরীক্ষা করাতে হবে।

সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ ভিট্রিও রেটিনা সোসাইটি। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সোসাইটির মহাসচিব সহযোগী অধ্যাপক ডা. তারিক রেজা আলী। সভাপতিত্ব করেন সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. জিয়াউল আহসান। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ উপ-উপাচার্য (শিক্ষা ও গবেষণা) অধ্যাপক মো. জাহিদ হোসেন ও বিশেষ অতিথি এশিয়া প্যাসিফিক একাডেমি অব অফথালমোলজির সভাপতি (ইলেক্ট) অধ্যাপক আভা হোসেন এবং বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক আশরাফ সাঈদ।

সোসাইটির সহসভাপতি বিএসএমএমইউর চক্ষু বিভাগের অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরীর সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইউভিয়া সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম, গ্লুকোমা সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক হাসান শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বাংলাদেশ সোসাইটি অব ক্যাটারেক্ট অ্যান্ড রিফ্রাকটিভ সার্জনসের সভাপতি অধ্যাপক ডা. জাফর খালেদ এবং বাংলাদেশ একাডেমি অব অফথালমোলজির অনারারি সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. মো. শওকত কবীর।