আজ ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ব হার্ট দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘হৃদয় দিয়ে হৃদয়ের যতœ নিই’। একজন সুস্থ মানুষের হার্টপ্রতি মিনিটে ৫-৬ লিটার রক্ত সমগ্র শরীরে পাম্প করে থাকে। আর এই রক্ত এভাবে হার্টের প্রসারণের ফলে ধমনির মাধ্যমে শরীরের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কোষের অভ্যন্তরে পৌঁছায়। আর এভাবেই রক্তের মাধ্যমে তার ভেতরে থাকা অক্সিজেন সমগ্র শরীরে ছড়িয়ে পড়ে আর আমরা উজ্জীবিত হই।
এত ভাবনা কেন?
অসচেতনতা, অযত্ন আর অবহেলায় আমাদের রক্তনালিতে ধীরে ধীরে চর্বি জমে ওঠে। কায়িক শ্রম আর কসরতে এ বাড়তি চর্বি ঝরে পড়ার হয়তো সুযোগ থাকে। বার্ধক্যে ধমনির গাত্র ভরে উঠে ক্যালসিয়াম আর রক্তকণিকার জমাট উপাদানে। হার্টের রক্তনালি বা করোনারি আর্টারি যেসব মাংসপেশিতে নিরবচ্ছিন্ন রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে এত দিন অক্সিজেন জোগাত, দীর্ঘক্ষণ অক্সিজেনের অভাবে সে পেশিগুলো একসময় অকেজো হয়ে পড়ে। হার্টের মাংসপেশিগুলো নিস্তেজ হওয়ার আগেই, অক্সিজেনের অভাবে বুকে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে থাকে। এ অবস্থাটিকে আমরা হার্টের এনজিনার ব্যথা বলে থাকি। এ ধরনের ব্যথা হলো মাইয়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন বা হার্ট অ্যাটাকের পূর্বসংকেত। আর এর পরও যদি আমরা হার্টের প্রতি যত্নশীল না হই তখনই প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দেয়।
কারণ ও জটিলতা
অধিকাংশ ক্ষেত্রে ৬৫ বা তার ঊর্ধ্বে করোনারি হৃদরোগজনিত কারণে মানুষের মৃত্যু হয়ে থাকে। তবে সচেতন না হলে ছেলেরা ৪৫ বছর আর মেয়েরা ৫৫ বছর বয়স থেকেই এ ধরনের মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে থাকে। শুধু রক্তনালির জমাটবদ্ধতা নয়, উচ্চ রক্তচাপের কারণেও হার্টকে দুর্বল করে ফেলে। হার্টের অসুখ যে কারণে দেখা যায় তা হলো দুশ্চিন্তা, ধূমপান, মদ্যপান, আয়েশি জীবনযাপন, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, পারিবারিক হৃদরোগের ইতিহাস। অনেক সময় জন্মগত হৃদরোগজনিত কারণেও আমাদের হৃদযন্ত্র হার্ট ফেইলুরের শিকার হতে পারে। বিরল ক্ষেত্রে জিনগত কারণে হৃদপেশি দুর্বল হয়ে পড়ায় হার্ট ফেইলুর হতে পারে।
লক্ষণ
রক্ত জমাটবদ্ধতাজনিত এনজিনার কারণে যে বুকে ব্যথা হয় তার একটি নির্দিষ্ট ধরন রয়েছে। সাধারণত বুকের মাঝখানে হাড়ের পেছনে অনুভূত হয়। শরীর ধর্মাক্ত হয়ে ওঠে। ব্যথা অনেক ক্ষেত্রে বাম হাতের ভেতর বরাবর নেমে আসতে পারে। হাঁটাহাঁটি করলে বিশেষ করে সিঁড়ি বেয়ে উঠলে এ ব্যথা আরও তীব্র হয়। যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তাদের একপর্যায়ে বুকে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। সঙ্গে কিডনির সমস্যা থাকলে মুখ ফুলে যেতে পারে। হার্টের অসুখ জটিল আকার ধারণ করলে সে ক্ষেত্রে হার্ট ফেইলুর হয়ে হাত-পা-পেটে পানি আসতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ শুধু হার্টের ক্ষতি করে তা নয়, রক্তচাপের জটিলতার কারণে ব্রেনস্ট্রোক এমনকি কিডনি ফেইলুর হতে পারে। হার্টকে সুস্থ রাখতে হলে আপনাকে অবশ্যই নিয়মবিধি মেনে চলবেন। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ সেবন করুন।