বাংলাদেশে প্রতিবছর ২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদরোগে মারা যায়, যার অন্যতম প্রধান কারণ উচ্চ রক্তচাপ। বাংলাদেশে প্রতি পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজনের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা করা না হলে বুকেব্যথা বা অ্যানজাইমা, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইল এবং হার্ট বিট অনিয়মিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আশঙ্কার বিষয় হলো, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে তরুণদের মধ্যেও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার উচ্চ প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠানপ্রজ্ঞা’র (প্রগতির জন্য জ্ঞান) ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এই তথ্য জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালের শিশু কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার বলেন, দেশে অসংক্রামক রোগ বেশি হচ্ছে। এরমধ্যে হৃদরোগ, স্ট্রোক ও সেরিব্রো কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ, ক্যানাসার, ডায়াবেটিস ও সিওপিডি বা দীর্ঘমেয়াদে শ্বাসকষ্ট রোগ বাড়ছে। এরমধ্যে কার্ডিওভাস্কুলার রোগে সবচেয়ে অর্থাৎ ৩০ শতাংশ রোগী মারা যাচ্ছে। দেশে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ অসংক্রামক রোগে মারা যায়। এরমধ্যে ২ লাখ ৭৭ হাজার মারা যাচ্ছে কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজে। এর রোগের ১৯ শতাংশ মৃত্যু হচ্ছে অকাল মৃত্যু বা ৭০ বছরের নিচে। যার অন্যতম কারণ হৃদরোগ।
এই চিকিৎসক আরও বলেন, হৃদরোগের বড় কারণ হচ্ছে তামাকের ব্যবহার, কায়িক পরিশ্রম না করা, অস্বাস্থ্যকর চর্বি, ক্যালরিযুক্ত খাদ্যগ্রহণ ও লবণ বেশি খাওয়া এবং ওজন বেড়ে যাওয়া। এতে উচ্চ রক্তচাপ অথবা ডায়াবেটিস হচ্ছে। যাদের এই রোগ হচ্ছে তাদের ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ বেশি হচ্ছে। যারা ধূমপান করছে তাদের এই ঝুঁকি দ্বিগুণ হচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের হার্ট ফেইলিউর, হার্ট অ্যাটাক চার থেকে দশগুণ পর্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে, যা অকাল মৃত্যুর বড় কারণ। তামাক-উচ্চ রক্তচাপজনিত হৃদরোগ প্রতিরোধে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের গবেষণা সমন্বয়কারী ডা. শেখ মো. মাহবুবুস সোবহান দেশ রূপান্তরকে বলেন, লবণ বেশি খেলে উচ্চ রক্তচাপ হয়। উচ্চ রক্তচাপ হার্টের ক্ষতি করে, স্ট্রোক হয় ও কিডনি নষ্ট করে। গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি লবণ খেলে মূলত এই তিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া দেশে নারীদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যে হাড় ক্ষয় দেখা দেয়, সেটার জন্য বেশি লবণ খাওয়াই দায়ী। এ জন্য আমরা হৃদরোগ থেকে মুক্তি পেতে গ্রহণযোগ্য মাত্রার লবণ খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।
এ ছাড়া বাংলাদেশে প্রতিবছর ২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদরোগে মারা যায়, যার ২৪ শতাংশের জন্য তামাক দায়ী বলে জানিয়েছে প্রজ্ঞা। গতকাল বুধবার প্রতিষ্ঠানটি গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ স্টাডি (জিবিডি) ২০১৯-এর তথ্য তুলে ধরে জানায়, বাংলাদেশে মৃত্যু এবং পঙ্গুত্বের প্রধান চারটি কারণের একটি তামাক। বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারজনিত অসুখে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মারা যায় এবং বর্তমানে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর ৩৫ শতাংশ (৩ কোটি ৭৮ লাখ) তামাক ব্যবহার করছে, যা হৃদরোগ পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলছে।
এ ব্যাপারে প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, তামাকজনিত হৃদরোগ ঝুঁকি হ্রাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আইন সংশোধনের পদক্ষেপ অত্যন্ত সময়োপযোগী। তামাক কোম্পানির অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না নিয়ে খসড়াটি দ্রুত চূড়ান্ত করতে হবে।
আজ বিশ্ব হৃদরোগ দিবস। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘ইউজ হার্ট ফর এভরি হার্ট’। দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীতে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সকাল ৭টায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের উদ্যোগে মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম থেকে একটি শোভাযাত্রা বের হবে ও সকাল ৯টায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মিলনায়তনে একটি গণমুখী সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ, জেনারেল হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের উদ্যোগে সচেতনতামূলক শোভাযাত্রা, লিফলেট বিতরণ ও আলোচনা সভা রয়েছে।